বিদায়, বন্ধু হাসনাত

শুধু আমার নয়, আমাদের বন্ধু আবুল হাসনাত সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেল। ৬৪-৬৫ বছরের বন্ধুকে বিদায় জানানো কঠিন, সত্যিই বড় কঠিন। কবি, লেখক, সাংবাদিক ও সম্পাদক আবুল হাসনাত। আবার এই আবুল হাসনাত ছিল সক্রিয় ছাত্রকর্মী ও নেতা, বামপন্থী রাজনীতিক ও নেতা, সাংস্কৃতিক কর্মী ও সংগঠক। এসব কাজ এবং সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত থেকেই তার পুরো জীবনটা কেটেছে। হাসনাত ছিল বড় বইপ্রেমী। অনেক বই পড়ত। অনেক বই তার সংগ্রহে ছিল। 888sport live chatকলার প্রতি তার গভীর আগ্রহ ছিল। 888sport appsের সেরা 888sport live chatীদের 888sport live chatকলা তার সংগ্রহে ছিল। হাসনাত গান শুনতে ভালোবাসত। রবীন্দ্রসংগীতই ছিল তার প্রিয়।

বন্ধু হাসনাত 888sport app কলেজ ও 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। ছাত্রজীবনে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের পরপর তিনটি কেন্দ্রীয় কমিটিতে ছিল। ১৯৭০ সালে ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি। 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃতি সংসদের সাধারণ সম্পাদক। দীর্ঘকাল দৈনিক সংবাদের সিনিয়র সাব-এডিটর এবং 888sport live football সম্পাদক। দুই দশকের অধিক সময় ধরে খ্যাতনামা মাসিক 888sport live football পত্রিকা কালি ও কলমের সম্পাদক ছিল। বেঙ্গল পাবলিকেশন্সের বই প্রকাশনাও দেখত। কত ভালো বই সে বের করেছে। কয়েক দশক ধরে ছায়ানট সংগীত বিদ্যায়তনের সঙ্গে যুক্ত ছিল, ছায়ানটের কমিটিতেও সহসভাপতি ও উপদেষ্টা হিসেবে বিশেষ দায়িত্ব পালন করেছে। রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদের সঙ্গেও তার ঘনিষ্ঠ যুক্ততা ছিল।

মনে পড়ে, ১৯৭১ সালে যুদ্ধবিধ্বস্ত 888sport app শহর থেকে আমরা কয়েকজন – ডা. সারওয়ার আলী, ডা. ওয়াজেদুল ইসলাম খান, আবুল হাসনাতসহ বেরাইদ দিয়ে কাঞ্চন হয়ে নানাবাড়ি কাপাসিয়ায় গিয়েছিলাম। সেখানে কয়েক দিন ছিলাম। তারপর পার্টির নেতা ও কর্মীরা নরসিংদীর রায়পুর গ্রামে মিলিত হয়েছিলাম। সেখানে আলোচনা করে পরবর্তী কর্মলক্ষ্য বিষয়ে পার্টি নেতৃত্বের সিদ্ধান্তে দেশের ভেতরে-বাইরে সহযোগী এবং সহকর্মী বন্ধুরা চলে গেলাম। মুক্তিযুদ্ধের শুরুতেই হাসনাত চলে গেল আগরতলা। সেখানে কিছুদিন নানা কাজ নিয়ে ছিল। তারপর পার্টির সিদ্ধান্তে চলে যায় কলকাতায়। পুরো মুক্তিযুদ্ধের সময়ে সে কলকাতায় কমিউনিস্ট পার্টির কৈন্দ্র বা কার্যালয় সামলেছে, আমাদের নেতা কমরেড ফরহাদের পরামর্শমতো বহুমুখী কর্মকাণ্ডে যুক্ত ছিল। আমাদের সেই প্রথম যৌবনকাল থেকেই কলকাতার লেখকদের বই পড়া ও 888sport live chatীদের গান শোনার প্রতি আমাদের আগ্রহ ছিল। বিশেষ করে বামপন্থী লেখক-888sport live chatী বিষয়ে উৎসাহী ছিলাম। বন্ধু হাসনাত কলকাতায় আট মাস অবস্থানকালে মুক্তিযুদ্ধের বহুমুখী রাজনৈতিক কাজের পাশাপাশি লেখক ও কবিদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা গড়ে তোলে এবং সিনেমা-নাটক-থিয়েটার দেখাসহ নানা সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়ে যায়। এতে করে সারা জীবন তার মধ্যে কলকাতার যা কিছু ভালো, তা হৃদয়ের গভীরে প্রোথিত হয়ে যায়।

বিগত বছরগুলোতে হাসনাত কালি ও কলম এবং 888sport app কাজে বহুবার কলকাতায় গেছে এবং নতুন-পুরনো অনেক বন্ধুর সঙ্গে তার যোগাযোগ বেড়েছে। এককথায় বলা যায়, কলকাতায় সুভাষ মুখোপাধ্যায়, শঙ্খ ঘোষ, দেবেশ রায়সহ অনেক সেরা লেখক, কবি ও 888sport live chatীর সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা গড়ে উঠেছিল। 888sport appয় কবি শামসুর রাহমান, সৈয়দ শামসুল হক, অধ্যাপক আনিসুজ্জামান থেকে শুরু করে নতুন ও তরুণ সব লেখকেরই প্রিয়পাত্র ছিল হাসনাত। কেউ তার অনুরোধ উপেক্ষা করতে পারত না। 888sport live chatী কামরুল হাসান, কাইয়ুম চৌধুরী থেকে শুরু করে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের 888sport live chatী নিয়ে কত কিছুর আয়োজন করেছে দৈনিক সংবাদ বা মাসিক কালি ও কলম পত্রিকায়।

১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের সময় সেই কলকাতার অভিজ্ঞতা তার সারা জীবনকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছে। তার আত্মকথা, আত্মজীবনী হারানো সিঁড়ির চাবির খোঁজের শুরুতেই তার মায়ের কথা, ‘মায়ের যত্ন ও আনুকূল্য না থাকলে আমি জীবনে চলার পথ খুঁজে পেতাম না।’ তারপরই বলেছে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের সেই ভয়াবহ রাতের কথা। সারা রাত সংবাদ অফিসে কাটিয়ে খুব সকালে ভয় আর আতঙ্কের মধ্যে বাসায় ফিরেছে। তারপর ২৭ মার্চের 888sport app শহরে ধ্বংস দেখে, পরের কয়েক দিন এদিক-সেদিক যাওয়া-আসা করে, আগরতলা হয়ে কলকাতা এবং সেখানের বহুমুখী বিচিত্র কার্যক্রমের কথা। শুরু থেকে দেড়শো পৃষ্ঠাজুড়ে ’৭১-এর সব কর্মকাণ্ডের বর্ণনা লিখেছে। আসলে সেই ’৭১-এর আগে পুরো ষাটের দশক এবং তার পরের কয়েক দশকজুড়ে আমরা তো ছিলাম বামপন্থী ও প্রগতিশীল সব রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও বহুমুখী কার্যক্রমের সঙ্গে একাত্ম। সেই সময় আমাদের দিন-রাতগুলো কেটেছে বহু কাজ, তর্ক-বিতর্ক আর কত না আনন্দের মধ্য দিয়ে। সে-সময়ের কথা লিখেছে হাসনাত আবেগ নিয়ে।

আজকে ভাবলে অবাক হই, সেই ১৯৫৩  সালে নবাবপুর হাইস্কুলে ক্লাস থ্রিতে ভর্তি হয়ে হাসনাতকে আমার পাশে পাই। সেই সময়ের বিশেষ 888sport sign up bonus মনে না পড়লেও নানা কিছু মনে পড়ে। ক্লাস সেভেনের পর হাসনাত গ্র্যাজুয়েট হাইস্কুলে চলে যায়; আর আমি নবাবপুর হাইস্কুলে থেকে যাই। তখন থেকে সে এক বছর পিছিয়ে যায়। কিন্তু যেহেতু আমরা খেলার মাঠে একসঙ্গে ঘোরাফেরা করতাম, আমরা ঘনিষ্ঠ বন্ধু থেকে যাই। একসঙ্গে পল্টন ময়দান বা 888sport app স্টেডিয়ামে কত না সময় কাটিয়েছি। ১৯৫৮-৫৯ সালে ভিক্টোরিয়া স্পোর্টিং ক্লাবে ক্রিকেটের নেট প্র্যাকটিসে ছিলাম একসঙ্গে। তারপর আমরা কয়েক বছর ওই দলের হয়ে 888sport appর প্রথম ডিভিশনের ক্রিকেট খেলেছি।

888sport app কলেজে ভর্তি হয়ে গোপনে কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে যুক্ত হই ১৯৬১-এর শেষে। সহজাতভাবে হাসনাতকেও আমার সঙ্গে ভেড়াই। এভাবে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের কর্মী হয়ে ষাটের দশকের শেষ পর্যন্ত একই সঙ্গে দিনরাত ছাত্রসংগঠন আর আন্দোলনের কাজ, মিছিলে অংশ নেওয়া, 888sport cricket BPL rateে সংকলন প্রকাশ এবং বহুমুখী সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হয়ে থাকি। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সংগঠনের নেতৃত্বে আমি যুক্ত হয়েছি। হাসনাতও হয়েছে পরপর। সংস্কৃতি সংসদের সাধারণ সম্পাদকও হয়েছি ষাটের দশকের মাঝামাঝি। তার পরের মেয়াদে হয়েছে বন্ধু হাসনাত। ষাটের দশকে আমি 888sport app download apk লেখার চেষ্টা করেছি। হাসনাতও লিখেছে। দৈনিক সংবাদের 888sport live football সাময়িকীতে আমার 888sport app download apk বের হয়েছে, হাসনাতেরও। সে কবি হয়েছে। আমি ব্যর্থ কবি হয়েছি। এখন মনে পড়ে, ১৯৬২ সালে একসঙ্গে নর্থব্রুক হল রোডের তিনতলায় গিয়ে সৃজনী লেখক ও 888sport live chatীগোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলাম। ১৯৬৩ সালে কার্জন হলে 888sport cricket BPL rateের অনুষ্ঠানে হাসনাত ও আমি 888sport app download apk পড়েছি। ষাটের দশকে ছায়ানটের নানা অনুষ্ঠানে গান শুনতে গিয়েছি দুজনে।

এদিকে ষাটের দশকের 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক সবচেয়ে বড় ও ভালো গানের অনুষ্ঠান, নৃত্যনাট্য, নাটক বা 888sport cricket BPL rateে ফেব্রুয়ারির অনুষ্ঠান আবুল হাসনাত, আসাদুজ্জামান নূর, মফিদুল হকসহ আমরা কয়েকজন সামনে-পেছনে থেকে করেছি। সে এক সময় গেছে। এখন আরো কতজনের কথা মনে পড়ে।

স্বাধীনতার আগে এবং পরে আমি একতায় সাংবাদিকতা করেছি, আর হাসনাত দৈনিক সংবাদে। আমি রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলাম, সে-ও ছিল। আশির দশকের শুরু থেকে হাসনাত 888sport live chatকলা সংগ্রহ শুরু করে। তখন আমিও শুরু করি। সব সময় সবকিছুতেই এভাবেই আমরা দুজনে একে অপরকে অনুসরণ করেছি। কখনো একজন আগে, কখনো অন্যজন আগে। জীবনে যা কিছু ভালো, যা কিছু সুন্দর, আমরা দুজনে ভাগ করে নিয়েছি। সে আমাকে আমার আগ্রহের নানা বই দিয়েছে। কখনো বাজারে পাওয়া না গেলে ফটোকপি করে পাঠিয়েছে। আমিও দিয়েছি নানা বই বন্ধুকে। করোনাকালেও এই বই-বিনিময় এবং বেশ কয়েকবার সুন্দর সময় কাটিয়েছি। এই দুঃসময়ে আমাদের মধ্যে নিয়মিত যোগাযোগ ছিল।

বন্ধু আবুল হাসনাতের আত্ম888sport sign up bonus হারানো সিঁড়ির চাবির খোঁজেতে (২০২০) আমার কথা কোথাও কোথাও বিশেষভাবে উল্লেখ করেছে। তার এই বই নিয়ে অনেক কথা হতো। তার আগের বছর তার বই প্রত্যয়ী 888sport sign up bonus 888sport app অনেক দেশের, বিশেষত 888sport app ও কলকাতার গুণী লেখক, কবি ও 888sport app বিশিষ্টজনকে নিয়ে লিখেছে। আমার আকাশভরা সূর্যতারা বইয়ের আলোচনা লিখেছিল এবং সেটা লিখতে গিয়ে সে আমার প্রসঙ্গেও কিছু কথা বলেছে।

বন্ধু হাসনাত আমাদের সময়ের সেরা মানুষ, সবার প্রিয় মানুষ। অত্যন্ত বন্ধুবৎসল, সব লেখক ও 888sport live chatীর ঘনিষ্ঠজন শুধু নয়, অত্যন্ত সজ্জন আর বিনয়ী মানুষ ছিল হাসনাত। কোনো সময়ে কারো প্রতি কোনো ক্ষোভ বা রাগ প্রকাশ করতে দেখিনি।

২০১৭ সালে প্রকাশিত বন্ধু হাসনাতের নির্বাচিত 888sport app download apkর বই উৎসর্গ করেছিল মালেকা আর আমাকে। উৎসর্গপত্রে আমাদের বন্ধু লিখেছিল, ‘আমার দুই অভিন্ন হৃদয় বন্ধুকে/ 888sport sign up bonus, 888sport sign up bonusকাতরতা ও 888sport sign up bonus মেদুরতার পথ থেকে’। শুরু থেকেই হাসনাত 888sport app download apk লিখত ‘মাহমুদ আল জামান’ নামে। কবি, লেখক ও প্রকাশক তারিক সুজাত বন্ধু হাসনাতের এই তিনটি বই প্রকাশ করে আমাদের গভীর কৃতজ্ঞতাপাশে আবদ্ধ করেছেন।

আসলে আমার বন্ধু হাসনাত আমার জীবনের বড় অংশজুড়ে ছিল, অনেক ঘটনা ও বহু 888sport sign up bonusর সঙ্গে জড়িয়ে আছে, আমৃত্যু সঙ্গে থাকবে। এখন তো মনে হয় কত কথা বলার ছিল, অনেক কথা বলা হলো না। বিগত কিছু সময় ধরে কবি তারিক সুজাতের সঙ্গে কথা হচ্ছিল, আমরা দুজনে মিলে তার জন্য একটি বিশেষ সন্ধ্যার আয়োজন করব। পরিচিতজনদের আমন্ত্রণ জানাব। হাসনাতকে সাক্ষী রেখে তারিক সুজাতকে কৌতুক করে বলতাম, সে-অনুষ্ঠানে আমি একমাত্র বক্তা হব। আমিই শুধু কথা বলব। তার জীবনের কথা বলব। তার সংগ্রামের কথা বলব। দুঃখ-বেদনা আর ভালোবাসার কথা বলব। সেটা তো আর হলো না!

বন্ধু হাসনাত আমাদের সময়ের সেরা মানুষ, সবার প্রিয় মানুষ। অত্যন্ত বন্ধুবৎসল, সব লেখক ও 888sport live chatীর ঘনিষ্ঠজন শুধু নয়, অত্যন্ত সজ্জন আর বিনয়ী মানুষ ছিল হাসনাত। কোনো সময়ে কারো প্রতি কোনো ক্ষোভ বা রাগ প্রকাশ করতে দেখিনি। আর সব সময়ই সবকিছু করত পেছন থেকে, কিছুটা সংকোচ নিয়ে যেন। দুই সপ্তাহ আগে হঠাৎ করেই খবর পেলাম, বন্ধু হাসনাতের স্ত্রী ও আমাদের বহুদিনের বন্ধু নাসিমুন আরা মিনু জানাল, হাসনাত হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। তারপর থেকে নিয়মিত কথা হতো চিকিৎসক ডা. কাহার আর মিনুর সঙ্গে। গত শুক্রবার রাতে মিনুর সঙ্গে কথা বলার পর হাসনাতের সঙ্গেও কথা বললাম। সে পরিষ্কার কণ্ঠে কথা বলল। ভালো আছে জানাল। দ্রুত বাসায় ফিরতে চায়। খুশি হলাম, কিন্তু মনে শঙ্কা ছিল। গত শনিবার রাতে মিনুর সঙ্গে কথা হলো, বলল, শরীরটা ভালো না হাসনাতের। গতকাল রোববার সকালে মিনু কান্নাভরা কণ্ঠে জানাল, সব শেষ হয়ে গেছে। তখনই হাসপাতালে গিয়ে আমার প্রিয় বন্ধু, সারা জীবনের বন্ধু, তাকে দেখলাম হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছে। তার কপালে আর গালে হাত বোলালাম। হায়, এই তো জীবন! হাসপাতালে থাকতেই মোবাইলে দেখি হাসনাত আর মিনুর একমাত্র কন্যা দিঠি হাসনাত আমাকে মেসেজে লিখেছে, ‘কাকা, আমার বাবা ঠিক হয়ে যাবে তো, তাই না?’ দিঠিকে আর জবাব দেওয়ার কিছু ছিল না। তার আগেই আমার বন্ধু হাসনাত বিদায় নিয়ে চলে গেছে।