বিদ্যাসাগর : নিঃসঙ্গ প্রমিথিউস

রাজীব সরকার

ইউরোপীয় রেনেসাঁসের যুগকে অভিনন্দন জানিয়ে এঙ্গেলস লিখেছিলেন – ‘আজ পর্যন্ত মানুষ যা দেখেছে তার মধ্যে এটি সবচেয়ে প্রগতিশীল বিপ্লব, এ যুগের প্রয়োজন ছিল অসাধারণ মানুষের এবং তার সৃষ্টিও হয়েছিল – যাঁরা ছিলেন চিন্তাশক্তি, নিষ্ঠা, চরিত্র, সর্বজনীনতা এবং বিদ্যায় অসাধারণ।’

বুর্খহার্ট তাঁর রেনেসাঁস সংক্রান্ত বিখ্যাত বইয়ে রেনেসাঁসকে ব্যক্তিপ্রতিভার বিস্ফোরণের যুগ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। উনিশ শতকের ভারতীয় রেনেসাঁসেও ব্যক্তিপ্রতিভার বিস্ফোরণের দেখা মেলে। রামমোহন রায় থেকে রবীন্দ্রনাথ পর্যন্ত শতাব্দীব্যাপী ইতিহাসে বাংলায় যে-উজ্জ্বল প্রতিভার মিছিল দৃশ্যমান, এর তুলনা সমগ্র ভারতবর্ষের ইতিহাসে আর নেই। ধর্ম ও সমাজসংস্কারে, শিক্ষা-দীক্ষায়, 888sport promo code উন্নয়নে, মানবসেবায়, জ্ঞান-888sport apkের উন্মেষে, 888sport live chat-888sport live football-সংগীতে, আধুনিক ধ্যান-ধারণায়, সর্বোপরি স্বাধীনতা আন্দোলনে – এমন বহুমুখী জাগরণ আর কখনো দেখা যায়নি ভারতবর্ষে। ‘এমন অল্পকালের মধ্যে ভারতের মাত্র একটি জাতির (বাঙালির) মধ্যে যত মনস্বীর, যত কর্মীর, যত ভাবুকের, যত 888sport live chatী ও 888sport live footballিকের আবির্ভাব ঘটেছে, ভারতের ইতিহাসেও আর ঘটেনি – অশোকের কালে নয়, গুপ্ত সাম্রাজ্যের সময়ে নয়, মোগল রাজত্বে – আকবরের দিনেও নয়, বৈষ্ণব আন্দোলনের বাঙলায়ও নয়।’ গোপাল হালদারের এই উক্তিতে কোনো আতিশয্য নেই।

উনিশ শতকের নবজাগরণের মধ্য দিয়ে ভারতীয় উপমহাদেশে আধুনিকতার সূত্রপাত ঘটে। বহু কীর্তিমান বাঙালির পদপাতে মুখরিত হয়েছে সেই সময়। এই নবজাগরণের প্রধান চরিত্র বিদ্যাসাগর। বহুমাত্রিক ব্যক্তিত্বের অধিকারী বিদ্যাসাগরের প্রধান পরিচয় তিনি রেনেসাঁস-পুরুষ। ইহজাগতিকতা, যুক্তিবাদ ও 888sport apkমনস্কতা, নতুন গদ্যরীতি, সমাজসংস্কার, 888sport promo codeশিক্ষার প্রসার, পাঠ্যসূচি থেকে অলৌকিকতার বিলুপ্তি, চারিত্রিক দৃঢ়তা এবং মানবমুখিনতার মতো বৈশিষ্ট্য, যা ইউরোপীয় রেনেসাঁসকে তুলে ধরেছিল – বিদ্যাসাগর তার জীবন্ত প্রতীক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন।

রবীন্দ্রনাথের মতে, বিদ্যাসাগর বাংলা ভাষার প্রথম যথার্থ 888sport live chatী ছিলেন। বাংলা গদ্যের জনক বিদ্যাসাগর সম্পর্কে সুকুমার সেনের মন্তব্য যথার্থ – ‘তিনি প্রচলিত ফোর্ট-উইলিয়মি পাঠ্যপুস্তকের বিভাষা, রামমোহন রায়ের পণ্ডিতি ভাষা এবং সমসাময়িক সংবাদপত্রের অপভাষা কোনটিকেই একান্তভাবে অবলম্বন না করিয়া তাহা হইতে যথাযোগ্য গ্রহণবর্জন করিয়া 888sport live footballযোগ্য লালিত্যময় সুডৌল যে গদ্যরীতি চালাইয়া দিলেন তাহা 888sport live footballের ও সংসারকার্যের সব রকম প্রয়োজন মিটাইতে সমর্থ হইল।’ পরবর্তীকালে বাংলা গদ্যের যে সুরম্য অট্টালিকা তৈরি হয়েছে এর ভিত্তি স্থাপন করেছেন বিদ্যাসাগরই। 888sport live, 888sport app download apk latest version, মৌলিক রচনার লেখক হিসেবে অসাধারণ কৃতিত্বের অধিকারী বিদ্যাসাগরের অন্যতম অবদান অসাধারণ শিশুপাঠ্য গ্রন্থ প্রণয়ন। তাঁর বর্ণপরিচয়, বোধোদয় ও বিভিন্ন 888sport apkী মনীষীর জীবনীগ্রন্থ শিশুদের মনে নীতিবোধ ও 888sport apkমনস্কতার বীজ বপন করেছিল। পাশ্চাত্য শিক্ষা ও প্রাচ্যশিক্ষার মধ্যে মেলবন্ধন ঘটিয়েছিলেন তিনি। তাঁর বলিষ্ঠ ভূমিকার কারণেই ইংরেজি ভাষা আয়ত্তের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের আধুনিক জ্ঞান-888sport apkের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার পথ সুগম হয়। এজন্য মাতৃভাষা বাংলাকে তাঁর অবজ্ঞা করতে হয়নি। সংস্কৃত কলেজে কী ধরনের শিক্ষা-সংস্কার প্রয়োজন সে-বিষয়ে 888sport world cup rate তৈরি করতে গিয়ে প্রথমেই অগ্রসর বাংলা 888sport live football সৃষ্টির কথা বলেছিলেন। শুধু 888sport live football সৃষ্টির কথা তিনি বলেননি, বাংলাকে শিক্ষার অবলম্বন অর্থাৎ মাধ্যম করার কথাও বলেছেন। শিক্ষা প্রচারকদের তিনি 888sport app download for android করিয়ে দিয়েছিলেন যে, বাংলা ভাষার বিকাশ ও চর্চা অত্যন্ত জরুরি।

বিদ্যাসাগরের নামের সঙ্গে ঈশ্বর ছিল। কিন্তু ঈশ্বর সম্পর্কে তিনি সম্পূর্ণ নিস্পৃহ ছিলেন। শিশুপাঠ্য বইয়ে তিনি ঈশ্বর ও অলৌকিকতার প্রসঙ্গ আনেননি, চাপের মুখে যখন আনলেন তখন সেটি এলো দায়সারাভাবে। ইহজাগতিক, মানবকেন্দ্রিক জীবনসাধনার দৃষ্টিভঙ্গিই তিনি আমৃত্যু ধারণ করেছেন। বলিষ্ঠ যুক্তিনির্ভর আদর্শের ভিত্তিতে বিদ্যাসাগরের ব্যক্তিত্ব বিকশিত হয়েছিল। শিক্ষা-সংস্কার প্রশ্নে ড. ব্যালেন্টাইনের সুপারিশের তিনি বিরোধিতা করেছেন। রাষ্ট্রীয় শিক্ষা কাউন্সিলের সেক্রেটারির কাছে প্রেরিত চিঠিতে তিনি বেদান্ত ও সাংখ্যকে ভ্রান্ত দর্শন বলেছেন। এর বিপরীতে ইংরেজি পাঠ্যসূচিতে ভিন্ন দর্শনের পাঠ দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করেছেন। ব্যালেন্টাইন প্রস্তাব করেছিলেন বিশপ বার্কলের দর্শন পড়ানোর। বিদ্যাসাগর প্রতিবাদ করে বললেন, বার্কলের ভাববাদী দর্শন বেদান্ত ও সাংখ্যের মতোই ভ্রান্ত। ব্রিটিশ দার্শনিক বার্কলে মনে করতেন, মনই সব, বস্তু অসার। মন দেখছে বলেই বস্তুর অস্তিত্ব রয়েছে, এর বাইরে বস্তুর কোনো অস্তিত্ব নেই। আর বস্তুর এই অস্তিত্ব সম্ভব হয়েছে ঈশ্বরের অস্তিত্বের কারণে। এই দর্শন প্রত্যাখ্যান করে বিদ্যাসাগর বলেছেন, বার্কলের বদলে পাঠ্য হওয়া উচিত জন স্টুয়ার্ট মিলের যুক্তিবিদ্যা। এভাবেই ভারতীয় শিক্ষাব্যবস্থায় তিনি যুক্তিবাদের বীজ শক্ত হাতে রোপণ করেছিলেন।

তৎকালীন পশ্চাৎপদ সমাজের অন্ধকারকে ভেদ করে বিদ্যাসাগর 888sport promo codeশিক্ষার প্রসারে পথিকৃতের ভূমিকা পালন করেছেন। একই বছরে মেয়েদের জন্য ৩৫টি বিদ্যালয় খুলেছেন। বহু বছর আগেই তিনি উপলব্ধি করেছিলেন 888sport promo codeকে অশিক্ষার অন্ধকারে নিমজ্জিত রেখে সমাজ অগ্রসর হতে পারবে না। তাঁর পূর্বসূরি রামমোহন রায় ‘সতীদাহ প্রথা’ রদ করে 888sport promo codeর জীবন রক্ষা করেছিলেন। বিদ্যাসাগর বিধবাবিবাহ প্রবর্তন করে 888sport promo codeকে জীবন্মৃত অবস্থা থেকে রক্ষা করেছিলেন। বহুবিবাহ বন্ধের আন্দোলন করেছিলেন। বিধবাবিবাহকে তিনি জীবনের শ্রেষ্ঠ কাজ বলে মনে করতেন। কাজটি মোটেও কুসুমাস্তীর্ণ ছিল না।

বিধবাবিবাহকে আইনসংগত করার জন্য ১৮৫৫ সালে যে-আবেদনপত্র দাখিল করা হয়েছিল তাতে স্বাক্ষর করেছিলেন ৯৮৭ জন ব্যক্তি। সর্বশেষ স্বাক্ষরটি ছিল স্বয়ং বিদ্যাসাগরের। আর এই আবেদনের বিরোধিতাকারী পালটা আবেদনপত্রে স্বাক্ষর করেছিলেন প্রায় ৩৬,০০০ ব্যক্তি। বিধবাবিবাহের বিরুদ্ধে এই অভিযানে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন রাধাকান্ত দেব। দুই আবেদনের সমর্থকদের 888sport free betর বিশাল তারতম্য দেখে সেই সময়ের ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ চিত্র পাওয়া যায়। বোঝা যায় কী প্রতিকূল পরিস্থিতি ডিঙিয়ে বিদ্যাসাগরকে অগ্রসর হতে হয়েছিল। শুধু বিধবাবিবাহ নয়, জীবনের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ কাজে বিদ্যাসাগরকে প্রবল বিরোধিতার সম্মুখীন হতে হয়। তবে 888sport free betয় কম হলেও কিছু সহযোগীও তিনি পেয়েছিলেন।

উনিশ শতকীয় নবজাগরণের অন্যতম স্তম্ভ ইয়ং বেঙ্গল। ধূমকেতুর মতো আলোড়ন সৃষ্টিকারী শিক্ষক ডিরোজিও একদল যুক্তিবাদী ও 888sport apkমনস্ক ছাত্র তৈরি করেছিলেন, যাঁরা প্রচলিত বিশ্বাস ও সংস্কারকে টলিয়ে দেওয়ার জন্য সর্বশক্তি নিয়োগ করেছিলেন। ‘ইয়ং বেঙ্গল’ নামে পরিচিত এই যুবকরা ছিলেন বিদ্যাসাগরের অন্যতম ভরসাস্থল। দক্ষিণারঞ্জন মুখোপাধ্যায়, কৃষ্ণমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়, রামগোপাল ঘোষ, প্যারীচাঁদ মিত্র, রাধানাথ সিকদার, রসিককৃষ্ণ মল্লিক, হরচন্দ্র ঘোষ, শিবচন্দ্র দেব, রামতনু লাহিড়ীর মতো ইয়ং বেঙ্গলরা বিধবাবিবাহ আন্দোলন ও 888sport promo codeশিক্ষা প্রসারে বিদ্যাসাগরকে সক্রিয় সহযোগিতা করেছেন। উগ্র পাশ্চাত্য আধুনিকতার কারণে সমাজ তাঁদের গ্রহণ করতে চায়নি। ধনী সমাজপতিদের পৃষ্ঠপোষকতা পাওয়া প্রাচীন পণ্ডিত সমাজের মোকাবিলা করা তাঁদের পক্ষে সম্ভব ছিল না। বিদ্যাসাগরের মতো বটবৃক্ষতুল্য ব্যক্তিত্বের আশ্রয়ে ইয়ং বেঙ্গল জ্বলে উঠেছিল। রাজা-জমিদারদের কাছে, সরকারি প্রশাসনের কাছে বিদ্যাসাগর ছিলেন সমীহ-জাগানিয়া ব্যক্তিত্ব। অকাট্য যুক্তি ও শাস্ত্রীয় পাণ্ডিত্য দিয়ে তিনি নির্বাক করে দিয়েছিলেন গোঁড়া ও যুক্তিবিমুখ পণ্ডিতদের। ১৮৫৬ সালের ৭ ডিসেম্বর প্রথম বিধবাবিবাহ অনুষ্ঠিত হয়। এই বিয়ের আয়োজনে ইয়ং বেঙ্গলরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।

বিধবাবিবাহ প্রবর্তন করতে গিয়ে বিদ্যাসাগর জীবনের ঝুঁকি নিয়েছিলেন। তাঁকে হত্যা করার ষড়যন্ত্র হয়েছিল এবং  কিছুদিন পথে চলাচল করার সময় তিনি লাঠিয়াল রেখেছিলেন। বিধবাবিবাহ ব্যয় নির্বাহে অকাতরে অর্থ ব্যয় করেছেন তিনি। বিদ্যাসাগরের তেজস্বী চরিত্রের অন্যতম দিক হচ্ছে, কোনো প্রতিকূলতাই তাঁকে সংকল্পের অটলতা থেকে বিচ্যুত করতে পারেনি। তাঁর একমাত্র পুত্র নারায়ণ বিধবাবিবাহের সিদ্ধান্ত নিলে আত্মীয়েরা সম্পর্ক ছেদের ভয় দেখিয়েছিলেন। সহোদর শম্ভুচন্দ্রের চিঠিতে একথা জানতে পেরে বিদ্যাসাগর লিখেছিলেন – ‘আমি বিধবাবিবাহের প্রবর্ত্তক; আমরা উদ্যোগ করিয়া অনেকের বিবাহ দিয়াছি, এমন স্থলে আমার পুত্র বিধবাবিবাহ না করিয়া কুমারীবিবাহ করিলে, আমি লোকের নিকট মুখ দেখাইতে পারিতাম না। ভদ্রসমাজে নিতান্ত হেয় ও অশ্রদ্ধেয় হইতাম। নারায়ণ স্বতঃপ্রবৃত্ত হইয়া এই বিবাহ করিয়া, আমার মুখ উজ্জ্বল করিয়াছে এবং লোকের নিকট আমার পুত্র বলিয়া পরিচয় দিতে পারিব, তাহার পথ করিয়াছে। বিধবাবিবাহ প্রবর্ত্তন আমার জীবনের সর্ব্বপ্রধান সৎকর্ম। এ জন্মে যে ইহা অপেক্ষা অধিকতর আর কোন সৎকর্ম্ম করিতে পারিব, তাহার সম্ভাবনা নাই। এ বিষয়ের জন্য সর্ব্বস্বান্ত হইয়াছি এবং আবশ্যক হইলে প্রাণান্ত স্বীকারেও পরাঙ্মুখ নহি। সে বিবেচনায় কুটুম্ববিচ্ছেদ অতি সামান্য কথা। … আমি দেশাচারের নিতান্ত দাস নহি; নিজের বা সমাজের মঙ্গলের নিমিত্ত যাহা উচিত বা আবশ্যক হইবে, তাহা করিব; লোকের বা কুটুম্বের ভয়ে কদাচ সঙ্কুচিত হইব না।’

যুক্তিকে অবলম্বন করে তিনি কুসংস্কার ও দেশাচারের দুর্গে আঘাত করেছেন। শাস্ত্রের অন্ধ বিরোধিতা নয়, শাস্ত্রের ভেতর থেকে যুক্তি আহরণ করে শাস্ত্র দিয়ে শাস্ত্র মোকাবিলা করার অব্যর্থ উপায় বিদ্যাসাগর আমাদের দেখিয়েছেন। নিজে ব্রাহ্মণ ছিলেন, অথচ ব্রাহ্মণ-অব্রাহ্মণ সকলের জন্য তিনি শিক্ষার দ্বার উন্মুক্ত করেছিলেন। সংস্কৃতে অগাধ পাণ্ডিত্য ছিল তাঁর, কিন্তু ইংরেজিকে শিক্ষাগ্রহণের বাহনে পরিণত করেছিলেন। বিদ্যাসাগরের চরিত্র সম্পর্কে মাইকেলের মূল্যায়ন অবি888sport app download for androidীয় – ‘প্রাচীন ঋষিদের মতো প্রতিভা ও জ্ঞান, ইংরেজদের মতো প্রাণশক্তি আর বাঙালি মায়ের হৃদয়।’ মাইকেলই তাঁকে প্রথম বলেছিলেন ‘করুণাসাগর’ আর বলেছিলেন ‘First man among us’।

‘দয়ার সাগর’, ‘করুণার সাগর’ বিদ্যাসাগর তাঁর জীবনের সিংহভাগ ব্যয় করেছেন শিক্ষাবিস্তারে। নিজ গ্রাম বীরসিংহে ১৮৫৩ সালে অবৈতনিক ও আবাসিক বিদ্যালয় স্থাপন থেকে শুরু করে ১৮৯০ সাল পর্যন্ত ৩৭ বছর ধরে তিনি একটি নর্মাল স্কুলসহ ২০টি মডেল বিদ্যালয়, ৩৫টি বালিকা বিদ্যালয় ও একটি কলেজ স্থাপন করেছিলেন। আজকের শিক্ষা ব্যবসায়ীরা হয়তো জানেন না বিদ্যাসাগরের এই প্রচেষ্টা ছিল শিক্ষাবিস্তারের লক্ষ্যে, বিত্ত অর্জনের জন্য নয়। ইতালীয় রেনেসাঁসের সঙ্গে প্রায়ই বাংলার নবজাগরণের তুলনা করা হয়। ইতালীয় রেনেসাঁসের নায়কদেরও ছাড়িয়ে গিয়েছে বিদ্যাসাগরের কীর্তি। বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা, বিধবাবিবাহ, দুস্থ-পীড়িতকে সেবাদান প্রভৃতি সমাজহিতৈষী কাজের জন্য বিদ্যাসাগর যে শ্রম, অর্থ ও বিদ্যা ব্যয় করেছেন এর কোনো তুলনা ইতালীয় রেনেসাঁসের ইতিহাসে নেই। ইতালীয় রেনেসাঁসের হিউম্যানিস্টরা ছিলেন সমাজবিচ্ছিন্ন আত্মকেন্দ্রিক মানুষ। বিদ্যাসাগর ছিলেন মানবসেবায় উৎসর্গীকৃত প্রাণ। তিনি ছিলেন পরাধীন দেশের স্বাধীন নাগরিক। প্রখর আত্মমর্যাদা ও অসামান্য তেজস্বিতায়, বিপন্ন মানুষের দুর্দশা মোচনে, শিক্ষাবিস্তারে, 888sport promo code অধিকার রক্ষায় খাঁটি হিউম্যানিস্ট বিদ্যাসাগর ছিলেন অতুলনীয়। রবীন্দ্রনাথ যথার্থই বলেছিলেন, ‘ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের চরিত্রে প্রধান গৌরব তাঁহার অজেয় পৌরুষ, তাঁহার অক্ষয় মনুষ্যত্ব।’ সমাজ সংস্কারে আধুনিকতার জাজ্জ্বল্যমান প্রতীক বিদ্যাসাগর ধর্মীয় অনাচার ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন ইহজাগতিকতাকে প্রাধান্য দিয়ে। উপমহাদেশে ও বিশ্বের নানা স্থানে যখন সাম্প্রদায়িকতা ও ধর্মীয় উগ্রবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে তখন বিদ্যাসাগরের মানবকেন্দ্রিক ইহজাগতিকতাকে 888sport app download for android করা একান্ত জরুরি। গ্রিক পুরাণের বিদ্রোহী মহানায়ক প্রমিথিউস। তিনি স্বর্গ থেকে আগুন এনে মানুষকে দিয়েছিলেন। মানবপ্রেমিক প্রমিথিউসকে এজন্য যন্ত্রণা ও নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে। ঊনবিংশ শতাব্দীর ভারতবর্ষে রেনেসাঁসের আলোকবর্তিকা হাতে প্রমিথিউসের ভূমিকাই পালন করেছেন বিদ্যাসাগর। রেনেসাঁসের নায়কদের মধ্যে তিনি ছিলেন অনন্য, একক ও নিঃসঙ্গ।