রূপকথার দুই গ্রিম-ভাইয়ের এক ভাই – ইয়াকুব গ্রিম – আধুনিক তুলনামূলক ও ঐতিহাসিক ভাষাতত্ত্বচর্চার ক্ষেত্রে পথিকৃৎ ছিলেন। তাঁর মতে, জাতি হচ্ছে জনগণের সেই সমগ্রত্ব যা একই ভাষায় কথা বলে। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষার্ধে জাতির সংজ্ঞানিরূপণে উত্তরোত্তর ভাষার গুরুত্বের প্রতি দৃষ্টি দেওয়া হয়। ভাষার ওপর ভিত্তি করে সম্মিলিত ইতালি ও সম্মিলিত জার্মানির জন্ম। নরওয়ে ১৯০৫ সালে সুইডেন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়। ঐতিহাসিক আর্নল্ড টয়েনবির মতে, ক্রমবর্ধমান জাতীয় চেতনা ঐতিহ্যগত সীমান্ত বা নতুন ভৌগোলিক অধিষঙ্গের সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত না করে একান্ত-ভাবে মাতৃভাষার প্রতি আসক্ত হয়। চেকোস্লোভাকিয়া, যুগোস্লাভিয়া, রোমানিয়া, হাঙ্গেরি, আলবেনিয়া, বুলগেরিয়া ও পোল্যান্ডের
মানচিত্র-নির্ণয়ে ভাষার বেশ প্রভাব থাকে। আবার ভাষার কারণে পূর্ব ইউরোপে পুরোনো রাষ্ট্র ভেঙে নতুন নতুন রাষ্ট্র হয়েছে।
মানুষের অস্তিত্ব, তার সত্তার বিকাশ ও মর্যাদার ওপর ভিত্তি করে আজ ভাষার অধিকারের কথা উঠেছে। নিঃসঙ্গতা কাটিয়ে সমাজের মধ্যে এক সেতুবন্ধন সৃষ্টি করে এবং পরস্পরের অধিকার ও কর্তব্য নির্দিষ্ট করে ভাষার সাহায্যে মানুষ সমাজ গঠন করেছে। ভাষার সাহায্যেই তার
চিন্তা-ভাবনা ও ধ্যান-ধারণা, বিশ্বের গতিবিধি ও পরিবেশ নিরীক্ষণ এবং কর্মকাণ্ডে এক শৃঙ্খলা আনয়নের চেষ্টা।
প্রকাশভঙ্গি ও প্রকাশের বিষয়বস্তুর সঙ্গে ভাষার সম্পর্ক এতই গভীর যে, মানুষের বাকস্বাধীনতা বিপন্ন বা বিনষ্ট হয় যদি তাকে তার ইচ্ছামতো ভাষাব্যবহার করতে দেওয়া না হয়। ভাষাই প্রকাশের বিষয় ও বক্তব্যকে রূপ, রস ও রঙে অর্থবহ করে তোলে। ভাষা একজন মানুষের ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য ও ব্যক্তিমানসের পরিচয় এবং একটি জাতির সাংস্কৃতিক স্বারূপ্যের নিদর্শন।
সারা পৃথিবীতে মাতৃভাষার কদর বাড়লেও জাতিবৈরিতার পাশাপাশি ভাষাবৈরিতাও বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে ভাষাবৈরিতা বৃদ্ধি পেলেও মানুষের মানবাধিকার ও ব্যক্তি-স্বাধীনতার সঙ্গে তার মাতৃভাষা ব্যবহারের প্রতি সমর্থনও বৃদ্ধি পেয়েছে।
‘জন্মভাষা’ বা ‘মাতৃভাষা’ – দুটো কথাই আলংকারিক। কোনো ভাষাবিশেষের জ্ঞান কেউ উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত হয় না, তাকে তা অর্জন করতে হয়। কোনো ভাষার প্রতি পূর্বপ্রবণতা বা পূর্বাসক্তি নিয়ে কেউ জন্মগ্রহণ করে না। ভাষাবিদ নোম চোমস্কি বলেন, শৈশবে ছেলেমেয়েরা কোনো তালিম না পেয়েই তাদের জন্মের ভাষা শেখে এবং পাঁচ বছরের মধ্যে সেই ভাষায় কর্তৃত্ব অর্জন করে। আবার ভাষার মতো জটিল জিনিস প্রাকৃতিক জগতে আর কিছু নেই। একটা ভাষা গাণিতিক দিক থেকে পাটীগণিতের চেয়েও জটিল। ভাষাবিদদের মতে, ভাষা মানুষের একটা অন্তর্নিহিত মানসিক শক্তি যার জন্যে তার মস্তিষ্কে একটা স্বকীয় বিশেষ পদ্ধতি কাজ করে। অনেকে বলেন, সেই বিশেষ ব্যবস্থাটি বারো বছর বয়সের পর বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা। আবার অনেকে বলেন, ওই বয়সেই তো ভাষার প্রতি মানুষের কৌতূহল জন্মায়।
সারা পৃথিবীতে মোট ভাষার 888sport free bet নিয়ে নানা মত। কেউ বলেন ১০ হাজার, কেউ বলেন সাড়ে ৬ হাজার। ভাষার সঙ্গে উপভাষা বা ভাষার সঙ্গে অপভ্রংশ সমভাবে বিবেচিত হবে কিনা, এ-নিয়ে মোট 888sport free betর হেরফের। এক-চতুর্থাংশ ভাষার ও কিছু উপভাষার বর্ণমালা রয়েছে। তাছাড়া আরো ভাষা থাকতে পারে ভাষাবিদরা এখনো যার হদিস পাননি। ‘এথনোলোগ : ল্যাংগুয়েজেস অব দ্য ওয়ার্ল্ডে’র ডেটাবেসে কিছুদিন আগে তালিকাভুক্ত ভাষার 888sport free bet ছিল ৬৮০৯। কমবেশি দশ লাখ লোক ৩০০ ভাষায় কথা বলে। মোট ভাষার প্রায় অর্ধেক ভাষায় কমবেশি ৬০০০ লোক কথা বলে। সাড়ে চারশ ভাষায় এতো কম লোক কথা বলে যে তাদের বিলুপ্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। মোট ভাষার ২৮% প্রায় দুই হাজার এশিয়ায়, ১৫% প্রায় এক হাজার দুই আমেরিকায়, ৩৫% প্রায় ২৪০০ আফ্রিকায়, ৩% প্রায় দুশো ইউরোপে এবং ১৯% প্রায় ১২০০ প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জ এলাকায় চালু রয়েছে। রাজনৈতিক প্রভাব, ব্যবসা-বিনিময়ের সুবিধা, 888sport live footballিক গুণ বা গবেষণার প্রয়োজনের ওপর ভাষার ব্যবহার নির্ভর করে। পৃথিবীর ৬০ ভাগ ভাষা ১০ হাজারের বেশি লোক ব্যবহার করে না এবং ১০০ জনেরও কম ১০ ভাগ ভাষা ব্যবহার করে। বিশ্বায়নের ফলে বৈশ্যপ্রভাবে ভাষার 888sport free bet হ্রাস পাবে, তবে বহুভাষিতাও বৃদ্ধি পেতে পারে। ইংরেজি ভাষার সূতিকাগৃহ বা রাজধানী লন্ডন শহরে ছেলেমেয়েরা আজ ৩০৭টি বিভিন্ন ভাষায় কথা বলে।
নিজের ভাষার আধিপত্য রক্ষাকল্পে কর্তৃত্ববাদীরা প্রায়শ আস্ফালন করে থাকেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ষড়্বিংশতিতম প্রেসিডেন্ট থিওডোর রুজভেল্ট বলেছিলেন, ‘এখানে আমাদের কেবল একটি ভাষার স্থান রয়েছে এবং তা হচ্ছে ইংরেজি, কারণ আমরা চাই মূষা থেকে আমাদের জনগণ বহুভাষী বোর্ডিংহাউসের বাসিন্দাদের মতো নয়, বরং আমেরিকান জাতীয়তার ভেতর থেকে আমেরিকান হয়ে বেরিয়ে আসবে।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের একটিই পতাকা থাকতে হবে। আমাদের ভাষাও একটি থাকতে হবে। সেই ভাষা হবে স্বাধীনতার ঘোষণার ভাষা, ওয়াশিংটনের বিদায়ী ভাষণের ভাষা, লিনকনের গেটিসবার্গ বক্তৃতার ভাষা এবং তাঁর উদ্বোধনীর ভাষা।’
প্রায় অনুরূপ বক্তব্যে বিশ্বাস করে পাকিস্তানের প্রথম গভর্নর-জেনারেল মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ্ বলেছিলেন, ‘পাকিস্তানে উর্দুই হবে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা।’ ২৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৪৮ যখন ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ইংরেজি ও উর্দুর সঙ্গে বাংলা ব্যবহারের জন্য পাকিস্তান গণপরিষদের সংসদ-বিধির এক সংশোধনী প্রস্তাব উত্থাপন করেন, তখন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান মন্তব্য করেন, ‘মাননীয় সদস্য প্রস্তাবটি পেশ না করলেই ভালো করতেন। মাননীয় সদস্যের বোঝা উচিত, পাকিস্তান একটি মুসলিম রাষ্ট্র এবং সেই রাষ্ট্র যে ১০ কোটি মুসলমানের জন্য তৈরি হয়েছে তাঁদের ভাষা উর্দু।’
ভাষা-জাতীয়তাবাদীরা মনে করেন, দেশের প্রধান ভাষা সকলের শেখা উচিত, ঘরে সে যে-ভাষাতেই কথা বলুক-না কেন। অনেকে মনে করেন, ভাষা-গবেষণার বিকৃতরূপ সংকীর্ণ জাতীয়তাবাদের বিকাশ ঘটায় এবং বিদেশী পণ্ডিতেরা অনেক সময়ে অসাবধানে স্থানীয় ভাষাকে বিকৃত করে ফেলছেন।
দেশী ভাষার পুনরুদ্ধার বা সম্প্রসারণ ঘটতে পারে। ইন্দোনেশিয়ায় বাহাসা ইন্দোনেশিয়া, পাপুয়া নিউগিনিতে নিওমেলানেশিয়া, ইসরায়েলে হিব্রু, ফিলিপাইনে তাগালোগ এবং পেরুতে কেচুয়া ভাষার নবায়ন ঘটছে। আবার বিদেশী ভাষা যেমন ইংরেজি ভারত, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর ও পাপুয়া নিউগিনিতে সরকারি কাজকর্মে, শিক্ষায় বা ভাষায় আত্তীকৃত হয়েছে।
পৃথিবীর যে-কোনো দেশে 888sport free betলঘুদের মধ্যে ভাষার অধিকারের দাবি সর্বপ্রথমে উচ্চারিত হয়। যখন কোনো 888sport free betলঘু সম্প্রদায়ের ভাষার ব্যবহার নিষিদ্ধ বা নিরুৎসাহিত করা হয় তখন সেই ভাষার মর্যাদা হ্রাস পায়। আবার সরকারি কর্মকাণ্ডে অব্যবহৃত ভাষার ব্যবহার যখন অনুমোদন লাভ করে তখন সে-ভাষার মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। একটি বিশেষ ভাষাকে লালন করার জন্য এবং অনেক সময় অন্য ভাষার ব্যবহার নিরুৎসাহিত করার জন্য সরকারের ভাষা-পরিকল্পনার প্রয়োজন দেখা দেয়। যে-কোনো দেশে ভাষার ব্যবহারে সামান্য পরিবর্তনও তুলকালাম অবস্থার সৃষ্টি করতে পারে।
ভাষার ব্যাপারে ইউনেস্কোর একটা প্রশংসনীয় উদ্যোগী ভূমিকা রয়েছে। ১৯৯৬ সালের মার্চ মাসে সংস্থার মহাপরিচালক ফ্রেডেরিকে মাইওর জারাগোজা (ঋৎবফবৎরপড় গধুড়ৎ তধৎধমড়ুধ) পৃথিবীর ভাষার মানচিত্র প্রণয়নের জন্য এক প্রস্তাব দেন। দুনিয়ার ভাষার শ্রেণীবিভাগ সম্পর্কে ইউনেস্কোর লিঙ্গুয়াপ্যাক্স নামে একটা প্রজেক্ট রয়েছে। বিভিন্ন দেশের ভাষা-গবেষণা কেন্দ্রের সঙ্গে ইউনেস্কো সংযোগ রক্ষা করছে। এদের মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠান হলো লিঙ্গুয়াস্ফেয়ার অবজারভেটরি।
ইউনেস্কো কর্তৃক প্রকাশিত এবং স্টিফেন এ উর্ওম (Stephen A. Wurm) কর্তৃক সম্পাদিত অ্যাটলাস অব দ্য ওয়ার্ল্ড’স ল্যাঙ্গুয়েজস ইন ডেনজার অব ডিসঅ্যাপিয়ারেন্সে (বিপন্ন ভাষার মানচিত্র) বলা হয়েছে, বিভিন্ন কারণে ষোড়শ ও সপ্তদশ শতাব্দীতে ভাষার এক দারুণ দুর্ভাগ্যের সূত্রপাত হয়। ভৌগোলিক আবিষ্কার ও ঔপনিবেশিক আগ্রাসী তৎপরতা এবং গুটি বসন্তের মতো মহামারী উত্তর আমেরিকা, সাইবেরিয়া ও অস্ট্রেলিয়ায় মারাত্মক বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে।
স্থানীয় অধিবাসীরা ও তাদের ভাষাসমূহ বড় বিপদের সম্মুখীন হয়।
পৃথিবীর মোট ভাষার প্রায় অর্ধেকসংখ্যক ভাষা আজ বিলুপ্তির পথে। কোনো কোনো সময়ে খরা, বন্যা, গর্কি, সুনামি, ভূমিকম্প, অগ্ন্যুৎপাত, দুর্ভিক্ষ, যুদ্ধ, গণহত্যাজনিত দুর্ভোগ এবং 888sport app দুর্গতির জন্য হঠাৎ একটা ভাষাগোষ্ঠী লোপ পেয়ে যেতে পারে। ব্যাপক দেশত্যাগ বা ভিন্নদেশ থেকে শরণার্থী বা অভিবাসীদের আগমনেও ভাষার বিড়ম্বনা বৃদ্ধি পেতে পারে।
ভাষার জাদুঘরে বিপন্ন ভাষার 888sport sign up bonus নিদর্শন রক্ষা করার জন্য বেশ কিছু উদ্যোগী ভাষাবিদ কাজ করছেন। ফ্রান্সের নরম্যান্ডি, কানাডার কুইবেক এবং ইংল্যান্ডের ওয়েলসের ভাষাপ্রেমীদের উদ্যোগে লিঙ্গুয়াস্ফেয়ার অবজারভেটরি প্রতিষ্ঠানটি গড়ে ওঠে। এর প্রতিষ্ঠাতা-প্রেসিডেন্ট ছিলেন সেনেগালের প্রেসিডেন্ট কবি লেওপোল্ড সেদার সেঙ্ঘর এবং প্রতিষ্ঠাতা-পরিচালক ভাষাবিদ ড. ডেভিড ড্যালবি। লিঙ্গুয়াস্ফেয়ার রেজিস্ট্রার সারা বিশ্বের ভাষা ও উপভাষার শ্রেণীবিভাগ ও নির্ঘণ্ট তৈরি করেছে। ভারতে বরোদার ভাষা রিসার্চ সেন্টার এবং পুনার সেন্টার ফর কমিউনিকেশন উক্ত লিঙ্গুয়াস্ফেয়ার অবজারভেটরির সঙ্গে সংযোগ রক্ষা করে কাজ করছে।
এখনো ইন্দোনেশিয়ায় সংগীত, সংস্কৃতি ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে পাঁচশরও বেশি লোকে স্থানীয় ভাষা ব্যবহার করছে। বাহাসা ইন্দোনেশিয়ার প্রসার এবং ইদানীংকালে ইংরেজির প্রতাপে বেশির ভাগ আঞ্চলিক ভাষা আজ বিপন্ন।
গত পাঁচশ বছরে উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার সহস্রাধিক আমেরিন্ডিয়ান ভাষা এবং গত দুশ বছরে অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসীদের বহু ভাষা হারিয়ে গেছে। এখন কোনো কোনো আমেরিন্ডিয়ান ভাষা মাত্র পাঁচ বা দশজন লোক ব্যবহার করে।
ইউরোপীয় উপনিবেশের পূর্বে অস্ট্রেলিয়ায় শত শত আঞ্চলিক ভাষাসহ ২৫০টির ওপর প্রধান ভাষা ছিল। এখন মাত্র ১৭টি আদিবাসী ভাষা বেঁচে আছে অর্থাৎ সকল বয়সের আদিবাসীরা ওই ভাষাগুলো ব্যবহার করে থাকে। পঞ্চাশ হাজার আদিবাসীর বেশির ভাগই বাস করে ক্ষুদ্র, প্রান্তিক ও অর্থনৈতিকভাবে অসুবিধাজনক অবস্থায়। কিম্বারলি ল্যাংগুয়েজ রিসোর্স সেন্টারের প্রধান কর্মকর্তা জুন অস্কার বলেন, ‘আপনি নিজের অনুভূতি যেভাবে নিজের ভাষায় প্রকাশ করতে পারেন সেভাবে ইংরেজিতে প্রকাশ করতে পারবেন না। আপনি অনুভব করতে এবং বুঝতে পারছেন কী বলা হচ্ছে, কিন্তু ঠিক তা মাথায় ঢুকছে না। যখন দেশে আমরা নিজেদের ভাষা বলি তখন আমাদের মনে হয় সেই দেশ সেই সময়ের শুরু থেকে আমাদের কথা শুনে আসছে এবং আমরা তখন এমন ভাবতে চেষ্টা করি যেন সময়ের গোড়ায় আমরা ফিরে গেছি এবং এই দেশটা যেন সেই একটিমাত্র ভাষাই জানে।… যখন আমরা দেশে যাই এবং লোকে দেশের কথা বলে, তখন মনে হয় আমরা কেবল দেশের সঙ্গে কথা বলছি না বরং এই দেশের যেসব মানুষ এই পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছে, তাঁদের আত্মাও যেন ফিরে এসেছে এবং আমরা যেন তাঁদেরও সঙ্গে কথা বলছি।’
সারা পৃথিবীতে প্রতি বছর প্রায় বারোটি ভাষা হারিয়ে যাচ্ছে। পৃথিবীতে এখন যে-অবস্থা তাতে অনেক ভাষা এমনভাবে মারা যাবে যে তাদের কোনো চিহ্ন থাকবে না এই ধরাধামে। আফ্রিকায় দেড়-দু’হাজার ভাষা এবং প্রশান্ত মহাসাগর উপকূল অঞ্চলের প্রায় অনুরূপ 888sport free betর ভাষার মধ্যে বহু ভাষারই অচিরেই মৃত্যু ঘটবে।
ব্রিটেনের দুটো কেল্টিক ভাষা ম্যাংক্স ও কর্নিশ হারিয়ে গেছে। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর ম্যাংক্সের মৃত্যু ঘটে। আর কর্নিশ ভাষার নাকি মৃত্যু হয় ১৭৭৭ সালে যখন কর্নিশভাষী শেষ ব্যক্তিটি ইহলোক ত্যাগ করেন। চ্যানেল দ্বীপপুঞ্জের জার্সি, র্গেন্সি ও সার্কের ফরাসি উপভাষার দিন ঘনিয়ে আসছে। স্কটিশ গেইলিক (Scottish Gaelic) ভাষায় এখন প্রায় পঞ্চাশ হাজার লোক কথা বলে। বাইবেল ছাড়া তাঁদের অন্য কোনো বই গেমফলিকে লেখা হয় না এবং ও-ভাষা বাঁচিয়ে রাখার জন্য তেমন উৎসাহও নেই।
একটি ভাষা মরে গেলেও অর্থাৎ সেই ভাষায় কেউ কথা না-বললেও কোনো কোনো ভাষার ক্ষেত্রে তার প্রভাব থেকে যায়। ইউরোপের বিভিন্ন ভাষাচর্চায় ক্ল্যাসিক্যাল গ্রিক ও ল্যাটিন, উত্তর ভারতের বিভিন্ন ভাষার ক্ষেত্রে সংস্কৃত, জাপানি, কোরিয়া ও বর্তমান চৈনিক ভাষার সম্পর্কে ক্ল্যাসিক্যাল চীন ভাষার কথা আসে। পূর্বপুরুষের সঙ্গে উত্তরপুরুষের যেমন সম্পর্ক থাকে মধ্যপ্রাচ্যে ও উত্তর আফ্রিকায় প্রচলিত আরবির সঙ্গে ক্ল্যাসিক্যাল আরবির তেমনি একটা সম্পর্ক রয়েছে।
ক্যাথলিক ধর্মগুরু পোপের রাজধানী ভ্যাটিক্যানের সরকারি ভাষা ল্যাটিন। ক্যাথলিক গির্জার উপাসনায় তার ব্যবহার তেমন আর হচ্ছে না। অক্সফোর্ডে যেসব বিষয়ের পাঠ্যসূচিতে ল্যাটিন শেখা আবশ্যকীয় ছিল সেখানে ল্যাটিন বাদ দেওয়ার কথা উঠেছে। আবার ল্যাটিনকে আধুনিকীকরণের এক মজার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দীর্ঘ আট বছর ধরে কাজ করার পর ভ্যাটিক্যানের বেশ কয়েকজন পণ্ডিতের যৌথ প্রচেষ্টায় ল্যাটিনের একটা সর্বাধুনিক অভিধান প্রকাশিত হয়েছে। মনসিনইয়র কার্লো এগের অভিধানটি সম্পাদনা করেন। আজকালকার এরোসল, স্প্রে, মোটরবাইক, ট্যাক্সি, এয়ারপোর্ট, হর্ন, ট্রাফিক জ্যাম, মোবাইল ফোন, ডিপার্টমেন্ট স্টোর, জ্যাকেট, শার্ট, ট্রাউজার, জুতো, মোজা, আন্ডারওয়্যার, হ্যামবার্গার, স্ট্রিপার ইত্যাদি নানান শব্দের ল্যাটিন রূপ রয়েছে অভিধানে।
যে-ভাষা মুমূর্ষু তাকে মরে যেতে দেওয়াই ভালো – এমন ভেবে পিতামাতা সন্তান-সন্ততিদের মুমূর্ষু ভাষা শিক্ষা দিতে চায় না। যেখানে 888sport free betগরিষ্ঠের ভাষার মর্যাদা কম সেখানে সেই ভাষা লোকে পরিহার করার চেষ্টা করে। আলাস্কায় বিশ বছর আগে Yupik-সমাজের সবাই Yupik ব্যবহার করত। এখন কমে গেছে।
একবিংশ শতাব্দীর শেষে কোনোরকমে তিনশ ভাষা টেনেটুনে বেঁচে থাকতে পারে। ইংরেজি, ফরাসি, স্প্যানিশ ও চৈনিক ভাষার রথের তলায় নিষ্পেষিত হয়ে বিলীন হয়ে যাচ্ছে বহু ভাষা। এ ব্যাপারে কোনো দেশ বা কোনো ভাষাকে দোষ দিয়ে লাভ নেই। ভাষার পূর্ণ স্বাতন্ত্র্য বলে কিছু নেই। সকল ভাষার মধ্যেই যাতায়াত ঘটে।
ভাষার বিলুপ্তির ব্যাপারে দুটো পরস্পরবিরোধী মত রয়েছে। একটি মতের ভাব, ‘জন্মিলে মরিতে হবে, অমর কে কোথা কবে?’ আর তাছাড়া বিভিন্ন ভাষার মধ্যে পার্থক্য এমন নয় যে, একটি ভাষার বিলুপ্তি ঘটলে মানবসমাজের অপূরণীয় ক্ষতি হবে। অন্যদের মত হচ্ছে, প্রত্যেক ভাষার একটি নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি, চিন্তাধারা, বাক্ভঙ্গিমা এবং বিশ্ব-ধারণা রয়েছে। ভাষার মধ্যে উন্নত বা অনুন্নত ভাষা বলে কিছু নেই। একটি ভাষার নৈপুণ্য বা গুণ বিচারের জন্য নির্ভরযোগ্য কোনো মাপকাঠি নেই। প্রত্যেকটি ভাষা অমূল্য, বিদগ্ধ ও স্বয়ংসম্পূর্ণ এবং সংস্কৃতির স্বারূপ্যের চেয়েও বেশি। ভাষা একটা সমাজধারা, আত্মবিশ্বাস এবং এক বিশেষ ধরনের দর্শনের মেরুদণ্ডবিশেষ। এ শুধু প্রাচীনকালের পুরা888sport sign up bonus নয়, এ ভবিষ্যতের এক দিকনির্দেশনাও বটে। গত চার দশকে এই মতের গ্রহণযোগ্যতা বেড়েছে এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক দলিলে তা প্রতিফলিত হয়েছে। গত পনেরো বছরে বিলুপ্ত ভাষার ওপর কানাডা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, নেদারল্যান্ডস, মেক্সিকো, সুইডেন, স্পেন ও হংকংয়ে বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন হয়েছে।
ইউনেস্কো 888sport cricket BPL rateে ফেব্রুয়ারিকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে ঘোষণা দেওয়ার পর বিশ্বের সমস্ত ভাষার উন্নয়ন, সংরক্ষণ এবং বিভিন্ন ভাষার মধ্যে সুসম্পর্ক স্থাপনের লক্ষ্যে 888sport appয় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট স্থাপিত হয়েছে।
দক্ষিণ-পূর্ব ইরিয়ান-জায়ার একজন অস্ট্রেলিয়ান পণ্ডিত এক হাজার লোকের ইয়াই (Yei) ভাষা, তিনশ বিশজনের কানুম ভাষা এবং পঞ্চাশজনের মোরাওরি (Moraori) ভাষার ব্যাকরণ তৈরির কাজ করছেন। Endangered Languages Foundation (ELF)-এর মতো প্রতিষ্ঠান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি ও নেদারল্যান্ডসে এ-ব্যাপারে উল্লেখযোগ্য কাজ করে যাচ্ছে।
এডওয়ার্ডসভিলের দক্ষিণ ইলিনোয়া ইউনিভার্সিটির ইংরেজি ভাষা ও 888sport live footballের অধ্যাপক রনশেফের (Ronschaefer) দু’হাজার বছরের পুরনো Emai ভাষাকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করছেন। দক্ষিণ-মধ্য নাইজেরিয়ার এক গহিন অঞ্চলে স্থানীয় ভাষা ইয়োরুবা, ইগবো ও বিনির দূরাত্মীয় ওই ভাষায় প্রায় ত্রিশ হাজার লোক এখনো কথা বলে। সেই ভাষার লিপি, ব্যাকরণ বা অভিধান ছিল না। গ্রামপ্রধান, বয়েতি বা কথকদের কাছ থেকে ওই ভাষাবিদ সংগ্রহ করেন সত্তরাধিক লোককাহিনী এবং তা টেপরেকর্ড করেন। একটা লিখনপদ্ধতিও দাঁড় করান। যে-ত্রিশ হাজার লোক ঊসধর ভাষায় এখনো কথা বলে আগামী পঞ্চাশ বছর পর তাঁরা বেঁচে না থাকলে তাঁদের ভাষার মৃত্যু ঘটবে।
১৯৬৬ সালের আন্তর্জাতিক নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারের চুক্তির ২৭ ধারায় বলা হয়েছে : ‘যদি কোনো দেশে আঞ্চলিক, ভাষাভিত্তিক বা ধর্মীয় এমন জনগোষ্ঠী থাকে যারা ওই দেশে 888sport free betলঘিষ্ঠ তবে তাদের ক্ষেত্রে এই অধিকার অস্বীকার করা যাবে না; 888sport free betগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠীর সঙ্গে সংগতি রক্ষা করে তাদেরকে নিজস্ব সংস্কৃতি উপভোগ, নিজস্ব ধর্ম অবলম্বন ও প্রচার এবং নিজস্ব ভাষা ব্যবহারের অধিকার থেকেও বঞ্চিত করা যাবে না।’
১৯৯২ সালের জাতীয়তা বা জাতিগত, ধর্মীয় এবং ভাষাভিত্তিক 888sport free betলঘুদের অধিকারের ঘোষণায় বলা হয়েছে, রাষ্ট্রসমূহ 888sport free betলঘুদের অধিকার সংরক্ষণ করবে, তাদের স্বারূপ্যের উন্নয়নের জন্য তৎপর হবে এবং তার জন্য যথোপযুক্ত আইনপ্রণয়ন বা ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
১৯৯৫ সালের আদিবাসীদের অধিকারসমূহের খসড়া ঘোষণায় বলা হয়েছে যে, সংস্কৃতি ও সংস্কৃতির বৈচিত্র্য ও সমৃদ্ধিতে বিভিন্ন জাতি যে অবদান রাখে তা মানবজাতির এক যৌথ উত্তরাধিকার।
৬-৯ জুন ১৯৯৬ বার্সিলোনা সম্মেলনে ভাষা অধিকারের একটি সর্বজনীন ঘোষণায় কয়েকটি রাষ্ট্র অনুস্বাক্ষর করে।
২০০১ সালের ইউনেস্কো জেনারেল কনফারেন্সের ৩১তম অধিবেশনে সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের ওপর একটি সর্বজনীন ঘোষণা গৃহীত হয়। ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০০২ জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ৫৬/২৬২ নম্বর প্রস্তাবটি পাস করে ভরসা দেয় যে-জাতিসংঘ রক্ষণ ও সংরক্ষণের উপায় হিসেবে বহুভাষিতা অনুসরণ করবে।
ওই ঘোষণায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং যাঁরা ভাষা নিয়ে কাজ করছেন তাঁদেরকে নিয়ে ভাষার অধিকারের ওপর একটি বিশ্ব কমিশন গঠনের সুপারিশ করা হয়। সেই পরিপ্রেক্ষিতে ১০-১২ মার্চ ২০০৩ বিপন্ন ভাষা রক্ষাকল্পে ইউনেস্কো তার ভূমিকা নির্ণয়ের জন্য আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের একটি সভার আয়োজন করে। সেই সভায় কর্মপন্থা নির্ধারণকল্পে ইউনেস্কোর জন্য কিছু সুপারিশ করা হয়।
দলিলে ভাষার নিবন্ধীকরণ ছাড়াও ভাষা888sport apkীদের একটা বড় কাজ হলো একটি ভাষা যাতে মরে না যায় তার জন্য আত্মরক্ষামূলক কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করা। কোনো কোনো ভাষার পুনরুজ্জীবন ঘটছে। পাঁচ লাখ লোকের ওয়েলস ভাষা এখন বেশ শক্তি অর্জন করেছে।
আন্তর্জাতিক জাইঅ্যানিজম ও ইসরেইলের বদৌলতে হিব্রু ভাষার প্রচলন বেড়েছে।
কানাডায় আমেরি-ইন্ডিয়ানদের ভাষা শুসওয়াপ (Shuswap) ও স্কোয়ামিশের (Squamish) ওপর প্রাথমিক 888sport free bet login লেখা হচ্ছে। স্লাভিক ভাষাবিদ এয়ার্ট কুইপার্স (Aert Kuipers) কাজ করছেন এ-নিয়ে। লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব ওরিয়েন্টাল অ্যান্ড অ্যাফ্রিকান স্টাডিজের জর্জ হেউইটের (George Hewitt) অফিসে তেওফিক হাসানের (Tevfik Hasan) ফটো রয়েছে। হাসান সেই শেষ ব্যক্তি যিনি উবায়েখ (Ubykh) ভাষায় কথা বলতে পারতেন। হাসান জর্জিয়ার এক মুসলিম গোষ্ঠীর সদস্য হিসেবে ১৮৬৪ সালে ওসমানি সাম্রাজ্যে আশ্রয় নেন। ককেসাস অঞ্চলে প্রায় চল্লিশটি ভাষা-উপভাষার এখন মুমূর্ষু অবস্থা। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ইংরেজি রোগে পুরাতন ভাষাগুলো মারা যাচ্ছে।
একটি সমাজের ভাষা শুধু ধ্বনি বা কণ্ঠস্বর নয়, সে এক অনন্য অভিজ্ঞতা, এক অনন্য সংস্কৃতি এবং আঙুলের ছাপের মতো তা এক অদ্বিতীয় নিদর্শন। একটি ভাষার মৃত্যু হলে একটি সংস্কৃতির মৃত্যু ঘটে, এই ভেবে ভাষাবিদরা বিপন্ন ভাষাকে বাঁচিয়ে রাখার চিন্তা করছেন।
একটি ভাষার মৃত্যু হলে তার সঙ্গে ওই ভাষার ইতিহাস, সমাজ, সংস্কৃতি ও সংহতিও লোপ পায়। ভাষা হারিয়ে গেলে সেই ভাষার মানুষ স্বকীয়তা, স্বারূপ্য, সমাজচেতনা, ঐতিহ্যগত ধ্যানধারণাও হারায়। লৌকিক নিরাময়-পদ্ধতি হারিয়ে জীবনধারণে উৎসাহ পায় না এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে মানুষ আত্মহত্যাও করতে পারে। ভাষাবিদরা মনে করেন অতিরিক্ত যত্ন ও সাহায্য-সহযোগিতা ছাড়া মেরু অঞ্চলে, আমাজোনিয়া, অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ-আফ্রিকার অনেক ভাষা পিগমি ভাষার মতো হারিয়ে যাবে।
নাইজেরিয়ায় ও ক্যামেরুনের এক সীমান্তবর্তী গ্রামে ড. ডেভিড ড্যালবি ৮৭ বছরের এক বৃদ্ধাকে বিকইয়া ভাষায় নিজের মনে কথা বলতে দেখেন। যে-ভাষা তিনি মা-বাবার কাছে শিখেছিলেন, তা শোনার বা শেখার আর কেউ ছিল না বলে তিনি কাঁদতেন। সীমান্ত-বরাবর আরেক গ্রামে বিশুয়ো ভাষা হারিয়ে যাচ্ছে এবং বাবা আর ছেলে, যাঁরা ওই ভাষায় কথা বলতে পারতেন, তাঁরা এখন নতুন ভাষায় কথা বলছেন। ভাষাদুটো হয়তো একেবারে নিশ্চিহ্ন নাও হতে পারে।
পৃথিবীর যত ভাষা বা উপভাষা আছে তার একটা রেজিস্টার এবং পৃথিবীর সমগ্র ভাষার কম্পিউটারকৃত এক মানচিত্র ড. ড্যালবি তৈরি করে গেছেন। তাঁর মতে, একভাষিতা বৈচিত্র্যকে অস্বীকার করে এবং তা নিরক্ষরতার মতোই মন্দ। তিনি মনে করেন, যেহেতু পৃথিবীর আর সব মানুষ তাঁর ভাষা ইংরেজি শিখেছে সেহেতু তাঁর অবশ্যকর্তব্য হচ্ছে অন্যদের ভাষা শেখা। তিনি বলেন, ‘আমার জাতীয় সংগীত ÔLand of My fathersÕ -এর শেষ পঙ্ক্তি হচ্ছে – ÔMay the old language live foreverÕ.
‘পুরাতন ভাষাটি চিরকাল বেঁচে থাক’। পৃথিবীর সব জীবন্ত ভাষা সংরক্ষণের প্রতি যাঁরা যত্নবান তাঁদের জন্য এর চেয়ে ভালো আর কোনো সড়ঃঃড় বা আদর্শবাণী আমরা জানি না।’
একটি ভাষা একটি সংস্কৃতির বাহক। সেই সংস্কৃতির মানুষ সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় যখন তার ভাষা হারিয়ে যায়। অনন্য অনুভব ও ঘটনার সমাবেশে যে-সংস্কৃতির জন্ম তা তার ভাষা হারালে অনেক সময়ে তার স্বারূপ্য বিনষ্ট না হলেও তার জন্য বড় ধরনের একটি সংকট সৃষ্টি হয়।
সাধারণত মানুষ তার ধর্ম ও ভাষার সঙ্গে নিজের স্বরূপতা নির্ণয় করে থাকে। আবার ভাষার নামকরণের ব্যাপারে রাষ্ট্রের গুরুত্ব অনেক। যুগোশ্লাভিয়া ভেঙে যাওয়ার পর একই ভাষা সার্বো-ক্রোয়েশিয়ান ভাষা ক্রোশিয়া, বসনিয়া-হার্জেগোভিনা, সার্বিয়া ও মন্টিনিগ্রোতে রাষ্ট্রের নামে পরিচিত হতে শুরু করেছে।
একটি শব্দের বিভিন্ন অর্থ থাকে যা রাজনৈতিক পালাবদলে পরিবর্তিত হয়। রুশ শব্দ ‘মির’-এর তিনটি অর্থ : গোষ্ঠী, জগৎ ও শান্তি। রাশিয়ায় একসময় মানুষ যে ‘মির’-এ ‘শান্তি’তে বাস করত তা-ই ছিল তাদের ‘জগৎ’। বিদেশী হামলায় শান্তি বিঘ্নিত হলে মানুষ বনে পালিয়ে যেত। ভাষা হারিয়ে গেলে শব্দের এ ধরনের বহ্বার্থক দ্যোতনা এমনভাবে বিনষ্ট হবে যা আর ফিরে পাওয়া যাবে না। একটি ভাষা হারিয়ে গেলে যে শুধু তার 888sport app download apk ও ছন্দ হারিয়ে যায় না, মানুষের সর্বজনীন ব্যাকরণ তৈরির ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় অথচ বিরল উপাদানও লুপ্ত হয়ে যেতে পারে। হারিয়ে যেতে পারে চিকিৎসা-888sport apkের নিরাময়বিধান, ওষুধ-অনুপান।
যে-মাতৃভাষায় কথা বলে তাঁরা অবজ্ঞা বা উপহাসের পাত্র হয়েছিলেন বা কর্মক্ষেত্রে অসুবিধায় পড়েছিলেন, পিতামাতা সেই ভাষা শিখতে ছেলেমেয়েদের নিরুৎসাহিত করতে পারেন। যেখানে 888sport free betগরিষ্ঠদের ভাষা শিখলে 888sport free betগরিষ্ঠদের সুযোগ-সুবিধা ভোগের সম্ভাবনা বেশি থাকে সেখানে 888sport free betলঘিষ্ঠরা সেই ভাষা শিখতে উৎসাহিত বোধ করবে।
ছেলেমেয়েরা ভালো করে কেবল একটিমাত্র ভাষা শিখতে পারে এই ভেবে পিতামাতারা তাদেরকে অনেক সময়ে
মাতৃভাষার চেয়ে অধিকতর মর্যাদাবান ভাষা শিক্ষা দিয়ে থাকেন। ভাষাবিদরা বলছেন, এটা ঠিক না। শিশু-কিশোরদের একাধিক ভাষা শেখার বেশ ক্ষমতা রয়েছে। শেখার জন্য শৈশব-কৈশোর হচ্ছে প্রশস্ত সময়।
স্কুলে ভাষার শিক্ষার ধরন বা বিশেষ ভাষাকে প্রাধান্যদান মাতৃভাষা বা দ্বিতীয় ভাষার ওপর অনুকূল বা প্রতিকূল প্রভাব ফেলতে পারে। যখন কোনো ভাষা জাতীয় বা রাষ্ট্রভাষা হিসেবে মর্যাদা পায় তখন তার বেশ উন্নতি ঘটে। কোনো কোনো দেশে সরকার সরাসরিভাবে 888sport free betলঘুদের ভাষার ব্যবহার নিষেধ করে থাকে। গ্রিসে ম্যাসিডোনিয়ান ভাষায় কথা বলা বা গান করা নিষিদ্ধ ছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আমেরিন্ডিয়ানদেরও এমন দুর্ভোগ পোহাতে হয়। যেখানে দ্বিতীয় ভাষার মর্যাদা বেশি সেখানে পরিবার ছাড়া অন্য কোনোখানে যখন মাতৃভাষা বলা হয় না, তখন সেই ভাষা বিপন্ন হয়ে পড়ে।
স্কুলে মাতৃভাষায় শিক্ষাদান, সাংস্কৃতিক অঙ্গনে রেডিও-টেলিভিশনে মাতৃভাষার ব্যবহার, মাতৃভাষায় অভিধান, কোষগ্রন্থ ইত্যাদি প্রণয়ন এক বিপন্ন মাতৃভাষাকেও সঞ্জীবিত করতে পারে। এ-ব্যাপারে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে পিতামাতা যদি তাঁদের সন্তানসন্ততির সঙ্গে মাতৃভাষায় কথা বলে এবং তাদেরকে তাতে সবক দেয়।
ইন্টারনেটে ইংরেজির দোর্দণ্ডপ্রতাপে অন্যভাষা কোণঠাসা। টেলিযোগ ও তথ্যপ্রকৌশলের বদৌলতে প্রধান প্রধান ইউরোপীয় ও এশীয় ভাষার প্রচার ও প্রসার যেমন সহজ হয়েছে তেমনি বিচ্ছিন্ন এবং ক্ষুদ্রতর জনগোষ্ঠীর মধ্যে জাতিগত বৈশিষ্ট্য ও চেতনা-সংরক্ষণে ভাষাভিত্তিক সংযোগরক্ষায় এই তথ্যবিপ্লব আজ বড় সহায়ক। কেলটিক ভাষা দক্ষতার সঙ্গে ওয়েবপেজ ব্যবহার করছে।
সারা বিশ্বে ভাষাবিদদের অক্লান্ত পরিশ্রমের বদৌলতে পরভাষা বা অ-মাতৃভাষার প্রতি আকর্ষণ বৃদ্ধি পেয়েছে। আবার 888sport free betগরিষ্ঠ ভাষাভিত্তিক সম্প্রদায়ের দাপটে 888sport free betলঘিষ্ঠ ভাষাগোষ্ঠীরা নিজেদেরকে বড় বিপন্ন মনে করেছ। বহুভাষী রাষ্ট্রে বিভিন্ন ভাষাভাষীদের বিরোধ সৃষ্টি হয়েছে এবং সর্বোচ্চ আদালতে ভাষা নিয়ে মামলার 888sport free bet বৃদ্ধি পেয়েছে।
একটি ভাষা মৃত বলে বিবেচিত হয় যখন সেই ভাষায় কথা বলার কেউ থাকে না। বিপন্ন ভাষা শনাক্ত করার সুনির্দিষ্ট কোনো সূত্রনির্দেশনা না থাকলেও কতগুলো উপাত্ত প্রাসঙ্গিক বলে ধরে নেওয়া হয় : যে-ভাষায় লোকে কথা বলে তাদের 888sport free bet, দেশী ভাষায় যারা কথা বলে বা স্বচ্ছন্দে কথা বলে তাদের গড় বয়স ও সর্ববয়ঃকনিষ্ঠ প্রজন্ম যারা সেই ভাষায় কথা বলতে শিখেছে তাদের একটি শতকরা হিসাব।
যে-ভাষায় মাত্র শ’খানেক লোক কথা বলেন এবং যাঁদের সকলেরই বয়স ৯০-এর উপরে এবং কোনো কিশোর-যুবক সেই ভাষা আর শিখছে না সেই ভাষা বিপন্ন বটে। মারাত্মকভাবে বিপন্ন ভাষা হচ্ছে সেই ভাষা যে-ভাষায় যারা কথা বলে তাদের বেশির ভাগের বয়স বা দাদার দাদার বয়স সত্তরের ওপর। বড় বিপন্ন ভাষায় কথা বলে চল্লিশ বছর ও তার চেয়ে বয়সে বেশি দাদা-দাদি বা নানা-নানিরা। ২০ বছর বা তার চেয়ে বেশি বয়সের পিতামাতারা কেবল বিপন্ন ভাষায় কথা বলে।
জাপানের ভাষা আইনু (Ainu) একটি বিপন্ন ভাষা। প্রায় ৩০০ জন মানুষ সেই ভাষায় কথা বলে। শতকরা ১৫ জন সেই ভাষায় সক্রিয়ভাবে কাজকর্মে ব্যবহার করেন। সামান্য কয়েকজন যুবক সেই ভাষায় পারদর্শিতা অর্জন করেছে।
ইন্দোনেশিয়ায় এমন ভাষা রয়েছে যে-ভাষায় দশ হাজারের বেশি লোক কথা বলে, কিন্তু শিশু-কিশোরেরা তা আর শিখছে না। সেই ভাষায় যাঁরা এখনো কথা বলেন তাঁরা সরকারি বা জাতীয় ভাষা শিখতে বেশি উদ্যোগী। একশ জনের ভাষাও সহিসালামতে বেঁচে আছে ধরা যাবে, যদি তা সমাজের প্রাথমিক ভাষা হিসেবে বিবেচিত হয় এবং সকল শিশু-কিশোরের তা প্রথম বা একমাত্র ভাষা হয়ে থাকে। যে-ভাষায় একটি সমাজের শিশুরা ও অন্যরাও প্রত্যাশিতভাবে কথা বলে সেই ভাষা বিপন্ন নয়।
আসলে একটি ভাষায় কতজন কথা বলে, তার চেয়ে যারা সেই ভাষায় কথা বলে তাদের বয়স কত, তা অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ এবং একটি নৃগোষ্ঠীর কত লোকের মধ্যে কতজন সেই ভাষায় কথা রাখার জন্য বেঁচে আছে। পঞ্চাশ বছরের ওপর পাঁচ হাজার লোক এখন ইৎবঃড়হ ভাষায় কথা বলতে পারে, কিন্তু যেহেতু ২৫ বছরের নিচে দুই হাজারেরও কম লোক সে-ভাষা ব্যবহার করে, সেখানে আগামী পঞ্চাশ বছরে তা লুপ্ত হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যেখানে ৩০ হাজার লোক একটি ভাষা বলে এবং প্রায় সব শিশু-কিশোর সেই ভাষা মাতৃভাষা হিসেবে তালিম করে একবিংশ শতাব্দীতে সে-ভাষা মরে যাওয়ার সম্ভাবনা কম।
এক প্রজাতির প্রাণী বা উদ্ভিদ লুপ্ত হলে পরিবেশবিদরা দুঃখ করেন। একটি মুমূর্ষু ভাষা আমাদের অনেক কাছের। এর মৃত্যু হলে মানুষের এক অনন্য সৃষ্টি বিলুপ্ত হবে। একটা সমাজে মানুষের চিন্তাধারা ও কর্মকাণ্ডকে ঘিরে একটা ভাষার জন্ম হয়। প্রত্যেক ভাষার মধ্যে শব্দ, খণ্ডবাক্য, বাক্যাংশের একটি জটিল কাঠামো রয়েছে। প্রত্যেক ভাষায় বৈপরীত্য, পার্থক্যবিচার ও মতৈক্য প্রকাশ থেকে সাধারণ কথাবার্তায়, আলাপ-আলোচনায় ও সংলাপে একটা বিশেষ ও বৈচিত্রময় ধারা ও ঢং লক্ষ করা যায়। নানাধরনের বর্গীকরণে, প্রতিশব্দ, বিপরীত শব্দ, মিল-অমিল, ব্যতিক্রম, বিরল-প্রয়োগ ও নিপাতনে সিদ্ধি ইত্যাদির ব্যবহারে একটি ভাষা স্বকীয়তা লাভ করে। স্বাতন্ত্র্য লাভ করে এক বিশেষ লিপিমালার আধারে।
আমরা অনেকে জানি না, ভাষাবিদরা বলছেন, পৃথিবীতে নতুন ভাষার জন্ম হচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও নতুন ভাষার জন্ম হবে। ভাষার সব হদিস আমরা জানি না।
মানুষ ভাষা ব্যবহার করে নিত্যকার দৈনন্দিন নানা কথা চালাচালির জন্য। অতীত বর্ণনা, কল্পিত কাহিনী, বর্তমানের জিজ্ঞাসা ও সমস্যা এবং তার উত্তর ও সমাধান, ভবিষ্যতের স্বপ্ন বাস্তবায়নের পরিকল্পনায়, 888sport app download apkর আবৃত্তি, কাহিনীর আখ্যানে এবং সংগীতের সুর ও ছন্দে ভাষার নানান ব্যবহার। ভাষার মৃত্যুর আগে তিনটি উপসর্গ দেখা যায়। আগের চেয়ে কম লোকে ওই ভাষা কথা বলছে, কম লোকে ওই ভাষা ব্যবহার করছে এবং ওই ভাষার কাঠামোগতভাবে সরলীকরণ ঘটছে। যেখানে অপেক্ষাকৃত কমসংখ্যক লোক ভাষা ব্যবহার করে সেখানে সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক বা ধর্মগত প্রয়োজনের তাগিদে পিতামাতার কাছ থেকে সন্তানসন্ততিদের মাঝে ভাষার পাঠান্তর ঘটে।
মুমূর্ষু ভাষা হচ্ছে সেই ভাষা যেখানে ছেলেমেয়েরা সেই ভাষাকে মাতৃভাষা হিসেবে ব্যবহার করে না। যে-ভাষা শুধু সামাজিকভাবে নিঃসঙ্গ বৃদ্ধ, সন্তান-সম্ভাবনার বয়স অতিক্রম করেছেন এমনসব ব্যক্তি কেবল কথা বলার জন্য ব্যবহার করেন, সেই ভাষার দিন ফুরিয়ে এসেছে। অনেক সময়ে লোকাভাবের জন্য বিপন্ন ভাষায় লোকে কথাবার্তা পরিবার বা অনুষ্ঠান-উৎসবে সীমাবদ্ধ রাখে।
সেই ভাষা বিপন্ন যা ছেলেমেয়েরা এখনো শেখে, কিন্তু বর্তমান অবস্থা চলতে থাকলে সেই ভাষা আর কেউ শিখবে না। যে-ভাষা রাষ্ট্রের আনুকূল্য পায় এবং বহুলোকে ব্যবহার করে সে-ভাষা নিরাপদ বটে।
কিছু ভাষাবিদ মনে করেন, ভাষা যদি মরে যায়, কান্নাকাটি করে লাভ নেই। ভাষার যে-পরিবর্তন ঘটে তাকে ঠেকানো সহজ নয়। মুমূর্ষু ভাষা সম্পর্কে ভাষাবিদরা সুপারিশ করছেন, যতদূর সম্ভব সেই ভাষার সব তথ্য আহরণ করে তা রেকর্ড করা হোক।
888sport apps সরকারের পক্ষ থেকে 888sport cricket BPL rateে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা দেওয়ার জন্য প্রস্তাব পেশ করলে আরও ২৬টি দেশ সেই প্রস্তাবে শরিক হয়। 888sport cricket BPL rateে ফেব্রুয়ারি কেবল 888sport appsের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে সেই দিনটি আন্তর্জাতিক দিবস হিসেবে পালনের জন্য কয়েকটি পশ্চিমা দেশ তেমন কোনো যৌক্তিকতা খুঁজে পায়নি। ১৮৮৬ সালের ১ মে শিকাগো শহরে শ্রমিক-অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য যাঁরা প্রাণোৎসর্গ করেছিলেন তাঁদের 888sport sign up bonusর উদ্দেশে যে সারা পৃথিবীতে মে-দিবস পালিত হচ্ছে সেই নজির উত্থাপন করা হলে প্রস্তাবের বিরুদ্ধে কোনো আপত্তি আর তেমন জোর পায় না। ১৭ নভেম্বর ১৯৯৯ সর্বসম্মতভাবে ইউনেস্কোর প্রথম ও দ্বিতীয় কমিশন 888sport appsের প্রস্তাব মেনে নেয়।
888sport cricket BPL rateে ফেব্রুয়ারির আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির ফলে আমাদের দায়িত্ব বেড়েছে। পৃথিবীর 888sport app দেশে মাতৃভাষার ব্যবহার ও স্বীকৃতির জন্য যাঁরা কাজ করছেন তাঁদের কর্মকাণ্ডে এক গভীর কর্তব্যবোধে আমরা সহযোগিতা করব। ইউনেস্কোর ভাষাবিষয়ক প্রকল্প ও পৃথিবীর 888sport app ভাষা-গবেষণা কেন্দ্রের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। আমাদেরকে শুধু বাংলা ভাষা নয়, 888sport appsের সীমানায় অন্তর্ভুক্ত সকল ভাষার উন্নয়নের জন্য চেষ্টা করতে হবে।
আমাদের দেশের ভাষার একটা জরিপ হওয়া দরকার। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে দক্ষিণ এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং হিমালয় অঞ্চলের ভাষা শেখার একটা প্রাথমিক উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। ইউনিভার্সিটি গ্রান্টস কমিশন এ-ব্যাপারে কিছু দিকনির্দেশনা দিলে রাজশাহীতে উত্তরাঞ্চলের, চট্টগ্রামে দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের, সিলেটে উত্তরাঞ্চলের এবং খুলনায় দক্ষিণাঞ্চলের ভাষার ওপর কিছু কাজ করা যেতে পারে।
বাংলা একাডেমী ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ সংকলিত আঞ্চলিক ভাষার অভিধান প্রকাশ করে একটি বড় কাজ করে। নানা কারণে শব্দের জন্ম ও মৃত্যু হয়। অনাদর তার মধ্যে অন্যতম। আঞ্চলিক ভাষার একটা সংক্ষিপ্ত পুস্তিকায় শিক্ষাবিদ মোহাম্মদ ফেরদাউস খান দেশের বারোটি অঞ্চলের ১৫৫০টির অধিক শব্দ নিয়ে ১৯৯২ সালে দ্যুতিময় এই শব্দগুলো শীর্ষক একটি পুস্তিকা প্রকাশ করেন। যেসব শব্দ কালক্রমে হারিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে লিখিতভাবে তা নিবদ্ধ করতে গিয়ে খান সাহেব একটি বড় দরদের 888sport app download apk লেখেন :
ওরা কারা?
আবছা আলোর মাঝে আলো তমসায়
অনাদরে ওই কারা ঘুরিয়া বেড়ায়?
মুক্তার ছটা বুকে, তনু মধুময়;
তবু ভয় তিলে তিলে পাবে তারা লয়।
তারা বলে : ‘ভেবে দেখ, করো হে বিচার,
যদি মোরা ঝরে যাই, বেশী ক্ষতি কার?
আমাদের তুলে নাও, করো সমাদর;
দ্যুতি দেব চিরদিন হইয়া অমর।’
পরভাষার প্রতি এক পরম আত্মীয়তা ও সহিষ্ণুতায় আমরা সমস্বরে বলতে চাই, ‘ভাষার নীহারিকার প্রতিটি বর্ণ এক একটি উজ্জ্বল নক্ষত্র।’
* এই লেখাটি কালি ও কলমের দ্বিতীয় বর্ষ প্রথম 888sport free betয় (ফেব্রুয়ারি ২০০৫/ ফাল্গুন ১৪১১) প্রকাশিত হয়েছিল।


Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.