ওদের বরাদ্দ ছিল দুটো ঘর আর একটা বারান্দা। বারান্দায় খাওয়ার ব্যবস্থা। এক ঘরে বাবা-মা, আরেকটায় ওরা তিন ভাইবোন। ভাইয়ের জন্য একটা আলাদা খাট, খাটের পাশে পড়ার টেবিল। আলোর জন্য বাবা এক শীতে নতুন লাল কার্ডিগান কিনে দিলো, ছায়ার জন্য নীল রঙের সেকেন্ডহ্যান্ড। ওরা দুই বোন সেগুলি পরে বাইরে গোল্লাছুট খেলতে গেলে ছায়া খেলার সাথিদের গর্বভরে বলতে লাগলো –
‘আলোরটা নতুন আর আমারটা সেকেন্ডহ্যান্ড।’
সেকেন্ডহ্যান্ড শব্দটা ইংরেজি, উপরন্তু শব্দটা তখনো সবার কাছেই নতুন, তাই ছায়ার নীলটার প্রতিই সবাই আগ্রহ দেখালো। একমাত্র আলোই জানতো ইংরেজিটার মানে। সে মুখ খোলেনি। ছায়া ভেবেছিল, তারটাই অভিজাত। ইংল্যান্ডের জিনিসও হতে পারে।
একটু বড় হয়ে যখন ওরা দু-বোন এক টেবিলে হারিকেনের আলোয় স্কুলের পড়া করতো তখন আলো বসতো চেয়ারে আর ছায়ার জন্য টুল। টুলে বসে পড়তে গিয়ে ছায়া তিনদিন ঘুমে ঢলে মেঝের ওপর পড়ে গিয়েছিল। আলো একবারও ওর চেয়ার ছাড়েনি। ওদিকে বিচ্ছু ভাইটা হেসে কুটিকুটি। কেবল মাসে তিনদিন আলোর পেট ব্যথা হলে চেয়ারে বসে পড়তে পারতো না, তখন ছায়া চেয়ার দখল করে পড়ার বইয়ের নিচে গল্পের বই রেখে শেষ করতো। আলো কোনোদিন হারিকেনের কাচ মুছতো না। অথচ আলো জানতো না ছায়া কেবল চোখ বন্ধ করে কেরোসিনের গন্ধ নেওয়ার জন্য কাজটা একা করতেই ভালোবাসতো। ক্লাস এইটে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পাওয়া আলো ঝলমলে মেয়ের জন্য ছায়া সুনিবিড় মেয়েটা তার হাতের কাছে সব গুছিয়ে দিত। একে সুন্দরী তার ওপরে ভালো ছাত্রী বলে আলোকে মা-বাবা লেখাপড়া ছাড়া আর কিছু করতে দিত না। এমন কি সে গোসলখানায় ভেজে কাপড় ফেলে রেখে শুকনো কাপড় পরে বেরিয়ে যেত। মা বলতো, ‘ছায়া, আলোর কাপড়গুলো কেচে গোসল সেরে আয়।’ একদিন আলোর পাজামা কাচতে গিয়ে রক্তের দাগ পায় ছায়া। বলেছিল, অমন নোংরা কাপড় সে ধুতে পারবে না। ‘কেন? চেয়ারের পেরেকে লেগে পাছা কেটে গিয়েছিল। অসুবিধা কী?’ বলে বইয়ে মুখ গুঁজে দিয়েছিল আলো। একবার ওদের এক জাঁদরেল ফুপু বেড়াতে এসেছিলেন। কদিন মা-চাচিদের ঘুম হারাম। তিনি ব্লাউজ ছাড়া খালি গায়ে দরদালানের তেল কুচকুচে চৌকিতে কাত হয়ে শুয়ে থাকতেন। পাশে ঝাঁ-চকচকে পানের বাটা। ছায়াকে ওর বাবা ওই ফুপুর পিঠে তেল মালিশ করে দিতে বলেছিল। উপুড় হয়ে শুয়ে ফুপু আরাম নিচ্ছিল আর ছায়া নীরবে কেঁদেছিল। সেদিন ওর খুব মনে হয়েছিল, ও অন্য, আলাদা। বাবা-মা যে ওকে ভালোবাসতো না তা নয়। বরং ওর মনে হতো, বাবা যেন ওকেই বেশি ভালোবাসে। একদিন ওর খাতায় লেখা একটা 888sport app download apk পড়ে ফেলেছিল বাবা। বাবা লুকিয়ে ওটা স্থানীয় একটি পত্রিকায় প্রকাশের জন্য দিয়ে এসেছিল। যেদিন ওটা প্রকাশিত হলো বাবা একসঙ্গে ওই পত্রিকা পাঁচটা কিনে এনেছিল। সঙ্গে এক হাঁড়ি মিষ্টি। বাবা যখন প্রতিবেশীসহ বাড়ির সবাইকে ডেকে জোরে জোরে 888sport app download apkটা পড়ছিলেন তখন ছায়া লজ্জায় ঘরের কোণে লুকিয়ে ছিল। কোনায় ঝুলিয়ে রাখা আয়নায় ও তখন নিজেকে দেখছিল আর বলছিল –
‘ওগো আয়না বলে দাও না, সবার সেরা সুন্দরী কে?’
আয়না জবাব দিলো – ‘শোনো শোনো ছায়ারানি, তোমারেই সেরা সুন্দরী মানি।’
‘তাহলে যে লোকে আমাকে কালো বলে ঘেন্না করে?’
‘তোমার মতো একজোড়া চোখ আর কার আছে বলো তো?’
‘খালি চোখে কি আর চিড়ে ভেজে?’
‘অমন পিঠভরা চুল, কাটা চিবুক, ঢেউ তোলা ঠোঁট …’
‘আ ম’লো যা! মানুষ কালো ছাড়া এসব দেখে?’
‘যার চোখ আছে সে দেখবে।’
888sport app download apk প্রকাশের দিন থেকে ছায়ার মনে হতে লাগলো, ও একটা সম্পূর্ণ মানুষ। যে তার নিজের সঙ্গে কথা বলতে পারে। যার আর কাউকে দরকার নেই। ওর এই মুহূর্তে দরকার একখানা আলাদা ঘর। ঘর নেই তাতে কী? মায়ের সব বাক্স খাটের ফাঁকে বেশ খানিকটা জায়গা পড়ে আছে। পরিবার পরিকল্পনায় চাকরি করা মেজো চাচির বারান্দায় ওষুধের খালি কাঠের লম্বা বাক্স পড়ে ছিল। ওটার ওপর পা মুড়িয়ে শোয়া যেত। ছায়া চাচিকে বলে ওদের ঘরের চৌকোনা খালি জায়গাটাতে একা টানতে টানতে বাক্সটা নিয়ে এলো। ওটা জায়গামতো ঢোকাতে ওর ভাই অবশ্য সাহায্য করেছিল। মায়ের একটা পুরনো কাঁথা লম্বালম্বি চার ভাঁজ করে বিছিয়ে দিলো। মায়ের সব বাক্স 888sport app দু-ভাঁজ করা মাঝখানে ছেঁড়া নীল চেক বিছানার চাদরের একটা অংশ কেটে ওর নিজের তথাকথিত খাটে পেতে দিলো। ভাঁড়ার ঘর থেকে এক পা ভাঙা টি-টেবিলটা বের করে ধুয়েমুছে ভাঙা পায়ের নিচে আধলা ইটের সারি বসিয়ে ওর এক চিলতে খাটের পাশে রাখলো। ভাই বললো –
‘ছায়াপু, চেয়ার বসানোর তো জায়গা নেই। পড়বা কীভাবে?’
‘আমার খাটে বসেই পড়বো’ – বলে ছায়া ভাইয়ের কানে কানে অনুরোধ করলো –
‘মায়ের একটা ছোট্ট বেতের সুটকেস আছে না? মা সেলাইয়ের সুই-সুতো-কাঁচি, ফ্রেম, ফটো বাঁধাইয়ের কাপড় রাখে। এখন তো সেলাইয়ের আর সময়ই পায় না। তুই বলবি ওটা তোর চাই। পেনসিল, স্কেল, খাতা এসব রাখবি। দিলে আমাকে দিবি।’
‘তুমিই চাও না আপু।’
‘আমি চাইলে দেবে না। তুই ছেলে, তোকে ভালোবাসে বেশি।’
‘কী রাখবা ওটাতে লুকিয়ে?’
‘888sport app download apkর খাতা।’
‘888sport app download apk লুকাতে হয় কেন?’
‘ও তুই বুঝবি না। 888sport app download apk মনের কথা।’
ওই ঘরের মধ্যে ঘর ছিল ছায়ার বেশ কিছুদিন। স্কুল বাদে দিনের বাকি সময় ও ওখানেই থাকতো। কাঠের বাক্সের বিছানায় পা ধরতো না বলে শুতে পারতো না। রাতে বড় বোনের সঙ্গে বড় খাটে ঘুমাতে হতো। কিছুদিন পর ভাই বায়না ধরলো ঘরটি ওর চাই। মায়ের কাছে কান্নাকাটি করাতে মা জায়গাটা ভাইকে ছেড়ে দিতে বললে ছায়া বেতের বাক্সটা নিজের কাছে রাখার শর্তে ওটা ছাড়লো। ছাড়তেই হতো কারণ ওদের মা একটা কাঠের আলমারি বানাতে দিয়েছিল। আলমারিটা রাখার জন্য ওই ঘরের মধ্যে ঘরটা ছাড়া আর কোনো জায়গা ছিল না।
একান্ত নিজের ঘর বলতে শৈশবের সেই ঘরের মধ্যে ঘরটিই পেয়েছিল কদিনের জন্য ছায়া। ফর্সা সুন্দরী বলে উচ্চ মাধ্যমিকের পরপরই ধনী ঘরে বিয়ে হয়ে গেল আলোর।
ছায়ার রেজাল্ট ভালো হলে বাবা হোস্টেলে রেখে ছায়াকে ডিগ্রি পড়তে পাঠালো। একেকটা রুমে পাঁচজন করে ছাত্রী। তিনটা করে বেড। প্রথম বর্ষের চারজন দুটো বেডে ডাবলিং আর ফাইনাল ইয়ারের একজনের একটা। নিজস্ব রুম তো দূরঅস্ত, বিছানাও ভাগাভাগি। স্টাডি রুম ছিল বলে ছায়া একা এক কোণে বসে পড়াশোনার পাশাপাশি 888sport app download apk লিখতো। বিভিন্ন পত্রিকায় পাঠাতো। টানা দু-বছরেও কেউ ছাপেনি। পরীক্ষার আগে বেশ জনপ্রিয় দুটো দৈনিকের 888sport live football পাতা পরপর দু-সপ্তাহে দুটো 888sport app download apk ছাপে ওর। ছায়া ততদিনে সিঙ্গেল বেড পেয়ে গেছে। ঘরের মধ্যে আবার ঘর। টেবিল ল্যাম্প খাতায় আড়াল করে সারারাত ওর প্রকাশিত 888sport app download apk পড়ে। ওর একলা বিছানা কখন যেন ওর একান্ত নিজের ঘর হয়ে ওঠে। পরীক্ষার আগে ক্লাস বন্ধ হয়ে গেলে বাড়ি ফিরতে হয়।
যে মামাটা ছায়াকে কুড়িয়ে পাওয়া মেয়ে বলে ক্ষেপাতো সে একদিন একটা বিয়ের প্রস্তাব আনলো। বিএ পাশ হয়ে গেলে আর বিয়ে হবে না। পরীক্ষার আগে আগেই বিয়েটা সেরে ফেলা জরুরি। মামা পাত্র আর পাত্রের বন্ধুকে নিয়ে হাজির। কালো রং দেখে পাত্র গোড়াতেই চুপসে গেল। বন্ধুটি অতি উৎসাহী।
‘আমি আপনার 888sport app download apk পড়েছি। আপনার দুঃখবোধ খুবই সংক্রামক।’
‘কোথায়?’
‘সে পত্রিকা আমারও একটা 888sport app download apk ছেপেছে।’
‘কি নাম আপনার?’
‘আসল নাম মো. সাইফুদ্দিন। লিখি সাইফ উদাস নামে। পড়েছেন আমার 888sport app download apk?’
‘জি।’
‘কেমন লাগে?’
ছায়া কিছু বলার আগেই পাত্রটি উঠে দাঁড়ায়। একে কালো তার ওপরে পদ্য লেখে। এসব মেয়ে ভালো হয় না। ছায়ার মামাকে ডেকে বলে –
‘আমরা উঠি আজ। পরে জানাবো’।
পরে সাইফ উদাস বিনয়ের সঙ্গে নিজের প্রস্তাব রেখেছিল। একজন পুলিশ অফিসার হয়েও 888sport app download apkর কোমলতা যে লালন করে ছায়া তো তাকেই চায়। এক ভাই এক বোন ওরা। বড় বোনের অনেক আগেই বিয়ে হয়ে গেছে। বিধবা মাকে নিয়ে থাকে সাইফ। মফস্বল শহরে দুই কামরার বাসায় সংসার শুরু করলো ছায়া। প্রথম প্রথম কিছুদিন তুমুল প্রেমে দুই কবির কাব্যকলাময় কাটলো জীবন। অনেকদিন বাদে ছায়া তার একান্ত বাক্স খুলে দিনলিপি, 888sport app download apk, চিঠিপত্র, হাবিজাবি বের করলো। ওর প্রাণের সই বিজু একটা দশ পাতার চিঠি লিখেছিল। আবার নতুন করে সেটা পড়লো। একটা 888sport app download apk লেখার চেষ্টাও করলো। রাতে সাইফ ফিরে ওর একান্ত বাক্সের চাবি চাইলো।
‘বারে ওটা তো একান্ত আমার। ভীষণ ব্যক্তিগত।’
‘সোনা, বিয়ের পর স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কোনো ব্যক্তিগত বিষয় রাখতে নেই। আমি তোমার শরীরের কোথায় কী আছে সব জানি। তোমার ডান স্তনের নিচে খয়েরি তিল, বাম ঊরুর ওপরে কাটা দাগ, চুমু রাখলে তুমি চোখ বোজো, আমার তলপেটে 888sport appsের ম্যাপের মতো জরুল – আমিও জানি, তুমিও। 888sport app download apkগুলো দেখি, চাবিটা দাও।’
অনেকদিন বাদে সেদিন আবার ছায়ার মনে হলো ওর একটা ঘর চাই। ওর তোয়ালেটা পর্যন্ত ওর ব্যক্তিগত নেই। আলমারির একটা ড্রয়ার ওর নিজের নেই। খাটের নিচে রাখা একটা ছোট বাক্স সেটাও নিজের থাকবে না? তার ওপর স্বামীর বাড়িতে নিজের আলাদা ঘরের স্বপ্ন? হায় ছায়া!
অভিমানে কেটে যাচ্ছিল দিন ওদের। সাইফ কদিন অনুরোধ করার পর আর কিছু বলে না। অফিসের কাজে ভীষণ ব্যস্ত। ওরই মধ্যে শাশুড়ি মেয়ের বাড়ি বেড়াতে গেলে ছায়া শাশুড়ির ঘরটা দিনের বেলা নিজের মতো করে গোছায়, টেবিলের ওপর কিছু পছন্দের বই রাখে, ফুলদানিতে পানি দিয়ে রাখে পুরবীলতা। পুরনো ক্যালেন্ডার থেকে রবীন্দ্রনাথের ছবি কেটে দেয়ালে সেঁটে দেয়। 888sport app download apkর খাতা নিয়ে বসে। ওরই মধ্যে দুটো 888sport app download apkও পত্রিকায় পাঠিয়েছে। একেকবার মনে হয়, ননদ যদি শাশুড়িকে আর না আসতে দেয় তাহলে এ-ঘরটা ও নিজের মনের মতো সাজাবে। একটা বুকশেলফ কিনে দিতে বলবে সাইফকে। ওর পছন্দের নীল রঙের পর্দা ঝুলিয়ে দেবে জানালাগুলোয়। যখন-তখন দরজা বন্ধ করে চিত হয়ে শুয়ে আকাশ-কুসুম ভাববে। টেবিল ল্যাম্পের গোল আলো ঘিরে ওর 888sport app download apkর খাতা ঝলমল করবে। আর একটা নকশি কাটা কাঠের ডিভাইডার। একবার মুক্তাগাছার জমিদার বাড়ি দেখাতে নিয়ে গিয়েছিল আলো আর দুলাভাই। ছায়ার সবচেয়ে ভালো লেগেছিল একটা ঝরকাকাটা ডিভাইডার। ওর বাবাকে ওরকম একটা বানিয়ে দেওয়ার অসম্ভব আবদারটা মিনমিন করে ও জানিয়েও ছিল। বাবা বলেছিল – ‘ওসবে অনেক খরচ। মেহগিনি গাছটা বড় হোক, তখন যদি পারি। তার আগে একসেট সোফা দরকার। কিন্তু রাখারই তো জায়গা নেই’।
বই ছাড়া ছায়া সাইফের কাছে অন্য কোনোকিছুর আবদার করে না। কিন্তু কথায় কথায় একদিন ও একটা নকশি কাটা বিভাজকের বায়না করেছিল।
‘ওটা আবার কী জিনিস?’
‘কবি যে বাংলা বোঝেন না তা তো জানতাম না। আরে, হোটেল-মোটেলে দেখো না, ডিভাইডার।’
‘তাই বলো। তা হঠাৎ বিভাজন সৃষ্টির ইচ্ছা কেন কবি?’
‘হঠাৎ না, অনেকদিনের শখ।’
খুব দ্রুতই স্বপ্নভঙ্গ হলো। ছায়ার শাশুড়ি ফিরে এলেন। তার ঘরের উল্টোপাল্টা সাজসজ্জায় একটু বিরক্তই হলেন।
‘নামাজের ঘর থেকে ছবি-টবি সরিয়ে নাও বউমা। ওসব তোমাদের ঘরে টাঙাও গিয়ে।’
‘সরি মা, এক্ষুনি সরাচ্ছি।’
অফিসের কাজ নিয়ে সাইফের কয়েকদিন যাবত খুব দৌড়াদৌড়ি। ছায়ার লুকানো বাক্স নিয়ে তেমন আর জোরাজুরি করে না। একদিন অফিস থেকে ফিরে খাটের ওপর পত্রিকা ছুড়ে দিয়ে বললো –
‘ওহে ছায়াসঙ্গী, দুটো ভালো খবর আছে।’
ছায়া কোনোকিছু জিজ্ঞাসা না করেই পত্রিকা খুলে ফেলে। হয় ওর না-হয় সাইফের 888sport app download apk নিশ্চয়। ঠিক, কদিন আগে পাঠানো ছায়ার 888sport app download apk ‘বিমগ্ন উদাসী’ বেরিয়েছে। কারো সামনে ও নিজের 888sport app download apk পড়তে পারে না। পত্রিকা হাতে দ্রুত বারান্দায় চলে যাচ্ছিল। সাইফ পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলে –
‘আরো একটা ভালো খবর না শুনেই পালাচ্ছো যে?’
‘তোমারও একটা নিশ্চয়?’
‘নাহ। এক ঘরমে দো পির চলবে না। পির উড়াল দিচ্ছে সামনের মাসের সাত তারিখে।’
‘মানে?’
‘বিদেশ মিশন পেয়ে গেছি একটা। আমাদের মতো নির্লোভ উদাস কবি মানুষের জন্য এর চেয়ে বড় 888sport app download bd আর কিছু নেই। চাকরির শুরুতেই এ-চান্স পাওয়া মনে হয় তোমার ভাগ্যেই। দু-বছরের জন্য এই পির উধাও। খুশি?’
‘দু-বছর থাকবে না তুমি? এটা আমার জন্য খুশির খবর?’
‘আরে, মাঝে তো দু-একবার আসবোই। ফিরে এসে তোমার জন্য দক্ষিণমুখো একটা খোলামেলা ফ্ল্যাট বুকিং দেব। একটা ঘর কেবল তোমার স্টাডি হবে।’
ছেলে চলে যাওয়াতে শাশুড়ি কেঁদেকেটে বুক ভাসালো। ছায়া শূন্য ঘরে সাইফের রেখে যাওয়া অধোয়া শার্টে নাক ডুবিয়ে শুয়ে থাকলো কদিন। পরে একদিন সকালে উঠে ওর মনে হলো, আরে, ও তো একান্ত নিজের একখানা কামরা পেয়ে গেছে!
এ-কক্ষের মালিক ও এখন। ওর নিজের খুশিমতো সাজাতে লাগলো ঘরটা। একা একা খাট টানাটানি করতে
পারলো না, কিন্তু ঠেলে ঠেলে টেবিল, চেয়ার, ড্রেসিং টেবিল, ওয়ারড্রোবের জায়গা বদল করে ঘরটার চেহারা পাল্টে দিলো। নির্দ্বিধায় টেবিলের ওপর খুলে রাখলো 888sport app download apkর খাতা। লুকানো বাক্স খুলে পুরনো লেখার খাতা আর ওর প্রকাশিত 888sport app download apkর পেপার কাটিং টেবিলে গুছিয়ে রাখলো। অনেক রাত অবধি টেবিল ল্যাম্প জ্বালিয়ে সাইফকে বড় করে চিঠি লিখলো। সে-রাতে ঘুরে ঘুরে নিজের ঘর দেখে ওর আশ মিটছিল না। সাইফের অনুপস্থিতি আর পীড়া দিচ্ছিল না।
বরং মনে হচ্ছিল, কদিন নিজের একটা ঘরের শখ মিটুক না। শুতে শুতে রাত ভোর।
কে যেন জোরে দরজায় টোকা দিচ্ছিল। ছায়া চোখ খুলে দেখে সকাল দশটা। ছি ছি শাশুড়ি কী ভাবছেন? খোলার আগেও আর একবার মুগ্ধ চোখে নিজের ঘরটায় চোখ বুলিয়ে নেয় ছায়া। খুলতেই দেখে ননদের মেয়ে বাক্স-পেঁটরা হাতে একগাল হাসি নিয়ে ওর নানির সঙ্গে দাঁড়িয়ে।
‘ভালোই হলো বউমা, তোমাকে আর একা থাকতে হবে না। ভালো কলেজে ভর্তির জন্য টুনকি এখানে থেকে কোচিং করবে আর ভর্তি হতে পারলে তো সোনায় সোহাগা’ – বলে ছায়ার শাশুড়ি বিগলিত হয়ে টুনকিকে ঘরের ভেতরে ঠেলে দেয়।
ছায়া দেখলো ওর শাশুড়ি ছায়ার গুছিয়ে রাখা টেবিলের খাতাপত্র একদিকে সরিয়ে রেখে টুনকিকে ওর 888sport free bet login টেবিলে রাখতে সাহায্য করছে। ছায়া কিছুতেই মুখে কোনো মিথ্যা হাসিও আনতে পারছিল না। ওর স্বপ্নের ঘর, ওর একা থাকা মুহূর্তে খানখান হয়ে গেল।
কোচিংয়ে সুন্দরী টুনকি প্রচুর রোমিও জুটিয়ে ফেললে ওর বাবা এসে দেড় মাসের মাথায় ওকে নিয়ে গেল। ছায়া আবার পূর্ণোদ্যমে ঘর গোছালো। এবার আর সহজে ঘর হারানোর সেরকম কোনো সম্ভাবনা ও খুঁজে পেল না। মাঝে মাসখানেকের জন্য সাইফ আসবে। তারপরেও এক বছরের মতো ছায়া মনের সুখে 888sport app download apk লিখবে। তাকের পূরবীলতা ঝুলে পড়ে বাতাসে দোল খাবে। 888sport app download apkর আরো পেপার কাটিং যোগ হয়ে পুরনো ফাইলের পেট মোটা হবে। সাইফকে নিয়ে লেখা 888sport app download apk অদৃশ্য সাইফকে সামনে বসিয়ে শোনাতে থাকে। সাইফ বলে –
‘ওগো শ্যামাবতী, কবে তোমার ঘাড়ের চুলের অভয়ারণ্যে নাক ডুবিয়ে আমি আমার শ্যামল মাটির ঘ্রাণ পাবো?’
আহা! কালো ছায়াকে এমন ভালো কেউ তো বাসেনি। ছোটবেলায় ওকে যখন ওর মামা এসে ‘কুড়িয়ে পাওয়া মেয়ে’ বলে ডাকতো তখন ওর ঘরের মধ্যে ঘরে বসে একটা পুরনো ফ্রক পরে ভাঙা বাটিতে মুড়ি নিয়ে খেত আর কাঁদতো। ও ভাবতো, ও আসলেই এ-বাড়ির মেয়ে নয়। ও মনে হয় কাজের মেয়ে। ওর এখনো মনে আছে ওর ফুপাতো বোন ধবধবে বাচ্চা কোলে নিয়ে নানির বাড়ি বেড়াতে এসেছিল। সবাই বাচ্চাটাকে একবার করে কোলে নিচ্ছিল। ছায়াও একবার চেয়েছিল; কিন্তু ওর ফুপু বলেছিল – ‘বাবু এখন ঘুমাবে।’ ও কি কিছুই বোঝেনি?
সেদিন বিকেলে শাশুড়ি ছায়াকে ডেকে বললেন, কী একটা জিনিস নিয়ে দুজন লোক দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। জিনিসটা না টেবিল না খাট না আলমারি। ছায়া ছুটে গিয়ে দেখে তার অনেক শখের সেই নকশিকাটা বিভাজক। ও ঠিক যেমনটা চেয়েছিল তারও চেয়ে মনোহর। সাইফ বিদেশে যাওয়ার আগেই ওটা অর্ডার করে গিয়েছিল। ছায়াকে বলেওনি। ছায়া শাশুড়িকে বুঝিয়ে দিলো জিনিসটা কী। শাশুড়ি বললেন –
‘বাপের কালে দেখিনি বাছা। তবে নকশাটা ভারি সুন্দর। আমার খোকার পছন্দ বটে!’
ছায়া ওটা নিজের ঘরের মধ্যে নিয়ে গেল। খাটের পাশে যেখানে টেবিল তার মাঝমাঝি দাঁড় করিয়ে দিলো। ঘর অন্ধকার করে টেবিল ল্যাম্প জ্বালিয়ে দিয়ে দেখলো সারাঘর আলপনা আঁকা। ছোটবেলার সেই বাক্সের বিছানার ঘর আড়াল করার জন্য ছায়া ওদের বড় খাটের মশারির আড়ার ওপর দিয়ে মায়ের পুরনো শাড়ি ঝুলিয়ে দিত। আহা! এমন একটা ডিভাইডার যদি থাকতো তখন! ওদের ডাইনিং আর ড্রইং স্পেসের মাঝখানে দিয়ে দেবে কাল ভোরে। শাশুড়ি খুশি হবেন।
ভোরে নামাজ পড়ে শাশুড়ি অনেকক্ষণ ঘুমান। ছায়াও দেরি করে ঘুম থেকে ওঠে। ডিভাইডার আসার পরদিন সকালে আবার দরজায় টোকা। এই টোকা ছায়ার কাছে ট্রমার মতো। না জানি কে আবার তার ঘর দখল করতে এলো। ভয়ে ভয়ে দরজা খুলে শাশুড়ির মুখের দিকে তাকিয়ে ছায়ার বুক কেঁপে ওঠে। ওর বাবা মা ভাই বোনরা ভালো আছে তো?
‘খোকার কজন কলিগ এসেছে। তোমার সঙ্গে কথা বলতে চায়।’
কালো মেয়ের ভালোবাসার মানুষটি আর নেই। মিশনের দেশের বিদ্রোহীদের হাতে গুলি খেয়ে সে মারা গেছে। লাশ আসবে সাতদিন পর।
সাতদিন ছায়া শাশুড়িকে, শাশুড়ি ছায়াকে জড়িয়ে ধরে রাখলো। রাতে ডিভাইডারের নকশি কাটা আলো-ছায়ার মাঝে দাঁড়িয়ে ছায়া সাইফকে নিয়ে লেখা 888sport app download apk পড়লো। ছায়াকে নিয়ে লেখা সাইফের শেষ 888sport app download apk ‘বিভাজন চাই না, মেয়ে’ পড়লো আর কাঁদলো। আত্মীয়স্বজনে বাসা ভরে উঠলো। সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ হলে ছায়ার বাবা মেয়েকে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব দিলেন। ও-পক্ষের কারো না করার কোনো কারণ ছিল না। ছায়ার শাশুড়ি বিভাজকটা নিয়ে যেতে অনুরোধ করলেন। ছায়ার ছোট চাকুরে বাবার দু-কামরার বাড়ির একটা বড় হয়ে ওঠা ভাইয়ের দখলে। আর একটাতে বাবা-মা। বাকি থাকে বারান্দাটুকু। ছায়া ভেবে পেল না বিভাজকটা বসাবে কোথায়?


Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.