মেয়েটির চাউনিই শুধু যৌনাবেদনময় তা নয়, বরং তার দৃষ্টির ভঙ্গিমায় কি এক রহস্যময়তা! বুলেটের শব্দ, তরঙ্গিত সাগর-ঢেউয়ের মাঝে মানুষের ক্রন্দনরত আর্তনাদ সব ছাপিয়ে কৌশিকের দৃষ্টি গেল সাগরসৈকত পেরিয়ে বয়ে চলা রাস্তার পাশে বিরাট এক বিলবোর্ডে। এই শহরের ওপর সূর্য যেভাবে কড়া আলো ছড়িয়ে, আকাশের নীলটুকু সাগর আর পামগাছের সবুজের সঙ্গে মিশিয়ে অস্পৃশ্য যে দৃশ্যকল্প তৈরি করেছে তা বিলবোর্ডের মডেলকন্যার অভিব্যক্তিতে মিশিয়ে দিয়েছে রহস্যভরা প্রাণের বন্যা। কে যেন বলল, একটু পরেই ক্যাসাব্লাঙ্কা।
তারপর মানুষের সব কণ্ঠস্বর বাতাসে মোমের মতো আটকে আটকে গেল। শুধু এক-এক করে বুলেটের শব্দে প্রকম্পিত হলো সাগরে দুলতে থাকা তাদের ট্রলার।
কৌশিকের মনে হলো, এখন যা কিছু ঘটছে তার সবই মিথ্যা। বরং স্বপ্নের মতো এই শহরে সফটওয়্যার সংক্রান্ত কাজের সূত্রে কয়েকদিন থাকার 888sport sign up bonus এবং ছোটবেলায় দেখা ক্যাসাব্লাঙ্কা সিনেমার সব দৃশ্যকল্পের ঠাসা বুননের এই শহরে তার জীবন নিশ্চিতভাবেই সুন্দর হয়ে গেল। সেজন্যই সে দেশের নিকটতম সীমান্তকে রাতের অন্ধকারে পাড়ি দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ সাগরের পথ ধরে আবার গন্তব্য হিসেবে নির্ধারণ করেছিল অপরূপা ক্যাসাব্লাঙ্কাকে। চোখের সামনে ক্যামেরার ফ্লাশের মতো রৌদ্রকরোজ্জ্বলতা নিয়ে হেসে উঠছে, দুলছে আবার হারিয়ে যাচ্ছে ক্যাসাব্লাঙ্কা।
তার মুহূর্তগুলি হয়ে গেল সপ্তাহ পেরিয়ে মাস, মাস পেরিয়ে বছরের সমান। সফটওয়্যার নিয়ে কাজ করা কৌশিকের জন্য কাজ পাওয়া বড় কোনো সমস্যা হলো না। সে নিয়মিত অফিসে যাতায়াত শুরু করল। ছুটির দিনগুলিতে মাঝে মাঝেই সে ছুটে যায় সৈকতের অদূরে যেখান থেকে বিলবোর্ডের মডেলকন্যার চাউনি তাকে আনমনা আর বিভ্রান্ত অথচ নতুন কী যেন এক অদ্ভুত স্বপ্নের মরীচিকার গোলকধাঁধায় ফেলে অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যৎ সব একাকার করে দেয়। সময়888sport sign up bonus অথবা ষড়ঋতুর ঘ্রাণ, বর্ষা-বসন্ত হয়ে শীতের আমেজ সবকিছুকে একসঙ্গে মিশিয়ে শিমুল তুলা হয়ে কখনো কখনো ঘনঘোর নির্জন মেঘলা দিনের একান্ত ক্ষণ হয়ে অনুভূতিগুলিকে অনুভবের অতলে দলাপাকা একান্ত আবেগে পরিণত করে দেয়। সে মেঘের ভেতরে লুকিয়ে থাকা কাল-কালান্তরের মানবকথন, মানুষের হারিয়ে ফেলা সময়কে খুঁজতে থাকে। খুঁজতে থাকে পূর্বাহ্ণের রোদের আলোকরশ্মির মাঝে উঁকি দেওয়া স্বপ্নের অবগাহন।
রাস্তার ওপারেই আটলান্টিক। তার ঢেউ এসে আছড়ে পড়ছে পাথরের এলোমেলো কংক্রিট দিয়ে গড়ে ওঠা সাগরতীরে। কৌশিক রাস্তার এপাশের কফিশপে বসে সাগরের ফেনিল ঢেউয়ের শব্দ-ছন্দে মগ্ন হওয়ার বদলে পোস্টারে ছবি হয়ে থাকা নয় যেন জীবন্ত 888sport promo codeটার দিকেই তাকাল। কফিশপে কর্মরত দুটি মেয়ে ছাড়া কোনো কাস্টমার নেই। বাতাসে যেন কিসের ঘ্রাণ। বয়ে চলা সময় বাতাসের পাখনায় কি মিশিয়ে দিয়েছে সাগরজলের, তার মাছেদের, তার গাঙচিলের পাখার আঁশটে ঘ্রাণ? তারপর কফিশপের কফি, চিনি, দুধ আর ক্রিমে এসে বাতাসের সেই পাখনা কি বুঁদ হয়ে বসে আছে?
নাকি এ নিছক সময়ের ঘ্রাণ? আটলান্টিকের গাঙচিলগুলোর হালকা পালকের ঘ্রাণ? 888sport apps থেকে ভেসে আসা বসন্তের ঘ্রাণ? নাকি ওই যে পোস্টারে পোস্টার হয়ে থাকা লাস্যময়ীর হাসি থেকে, চোখের দৃষ্টি থেকে, আভাময় ত্বক থেকে অমন ঘ্রাণ ছড়িয়ে পড়ছে পুরো ক্যাসাব্লাঙ্কায়?
আহা, ক্যাসাব্লাঙ্কা! পৃথিবীতে অনেক শহরে গিয়েছে কৌশিক। কিন্তু এমন অমোঘ টানে তাকে আর কোনো শহরই টানতে পারেনি। পারে না। কেন? এই যে আকাশের নীল, অসীম নীলটুকুতে ভেসে থাকে ক্যাসাব্লাঙ্কার কড়া রোদ আর বাতাসে একে অন্যের সঙ্গে মরীচিকার ঝিকিমিকি খেলা, তার মাঝে কৌশিক কি একটা প্রজাপতি খুঁজে বেড়ায়? নাকি এই শহরটা নিজেই এক প্রজাপতি, যার গায়ের নীল নীল রঙের মাঝে সাগরের জলছাপ আঁকা থাকে? বাতাসের ছন্দের ভাঁজগুলো সোনালি এক একটা ক্যানভাস হয়ে যায়? না, না, এখন কৌশিকের মনে পড়ছে – এই শহর সেই প্রজাপতি ঠিক নয়। তবে, সে সেই প্রজাপতিটাকেই এই শহরে খুঁজছে। যার শরীরে আঁকা আছে সোনালি রঙের উচ্ছলতার 888sport sign up bonus, নীল ডানার বেদনা, চোখের বিধুর দৃষ্টিতে দূর-দিগন্তে যে প্রজাপতি রেখে দিয়েছে অনন্ত বি888sport sign up bonus। নাকি এই সেই শহর, যার সাগরতীর থেকে যাত্রা শুরু করে সে যেতে পারে তার প্রিয় এক চিলতে স্বপ্নভূমিতে? কোথায় সেই দেশ?
তার ঠিক মনে পড়ে না। শুধু মনে পড়ে – সেই দেশটায় দিগন্তজোড়া সবুজ শস্যক্ষেতে বাতাস এলোমেলো খেলায় মেতে থাকে। দুই পাশে সারি সারি তাল অথবা শিমুল গাছগুলি নিয়ে একটা সিঁথির মতো পথ সেই মাঠটার বুক চিড়ে বয়ে যায় ছবির মতো একটা গ্রাম। সিঁথি? আহা, কী একটা শব্দ তার মনে পড়ল! সিঁথিতে সিঁদুর রাঙিয়ে এই শহরের প্রজাপতি বিলবোর্ডকন্যার চেয়েও মায়াবতী কেউ পথ শেষের সেই ছবিগ্রামে অপেক্ষা করে। চোখে তার বিকেলের এক চিলতে রোদের মতো ছলনার হাসি, ঠোঁটে কামনার বেদনায় থরথর অপেক্ষা। কী নাম তার? কৌশিকের মাথার মধ্যে সব জট পাকিয়ে যাচ্ছে।
এইসব জট পাকালেও আন্তর্জাতিক একটা চেইন শপের কম্পিউটার ডাটা অ্যানালিসিস করতে তার কোনো সমস্যা হয় না। সে বুঝতে পারে, তার বর্তমান মাথাটা অতীতের মাথার একটা চিপস বহন করছে – যার সফটওয়্যার ঠিকমতো কাজ করছে না। নাকি, এখন যে-মাথা সেটাই ঠিক নেই বলে সে অতীতের মস্তিষ্কটাকে নিয়ে খুবই আবেগতাড়িত?
হ্যাঁ, ঠিক তাই। এই রকম একটা প্রজাপতি পৃথিবীর আর কোথাও না হলেও নিশ্চয়ই এই শহরে আছে বলেই সে এই শহরে থিতু হয়েছে। কিন্তু প্রজাপতিটা খোঁজার সঙ্গে পোস্টারের মডেলকন্যার কী সম্পর্ক সে ঠিক বুঝতে পারে না। নাকি যাকে সে খুঁজছে এই এই বিলবোর্ডে ছবি হয়ে ওভাবে তার দিকে তাকিয়ে আছে – ঠিক এই কফিশপ বরাবর? পোস্টারের অনিন্দ্যসুন্দর মডেলকন্যাটিকে তার জানতে ইচ্ছে করে। সিঁথিতে তার লাল সিঁদুর নেই, কপালে নেই ফোঁটা। হাতে নেই চুড়ি, পরনে নয়তো ওটা শাড়ি তবু কেন এই মডেলকন্যা তার এত চেনা যেন মনে হয় অনেক অনেক দিন তার চোখে সে চোখ রেখে অনন্য আর অবারিত স্বপ্নপ্রান্তরে পথ হারিয়েছে। 888sport promo codeর অভিব্যক্তিতে যে 888sport sign up bonus-বি888sport sign up bonusর অভিব্যক্তি তা কৌশিকের জন্যই অমন ভাষাময়তার ভাষাহীন অপেক্ষায় বিভোর। বিলবোর্ডের মেয়েটি তার এত এত অচেনা জগৎ অতিক্রম করে এত এত চেনা হয়ে ওঠে যে, কৌশিকের মনে হয়, অনেক অনেক বসন্তের শিহরণ জাগা অনুভব সে তার মাঝেই ঢেলে দিয়েছিল। হ্যাঁ, ঠিক তাই। তার হাতের লম্বা, কোমল আঙুলগুলিতে বসন্তবিকেলের আভা, ঠোঁটে শিমুল তুলার স্নায়ুতন্ত্র, চোখে বর্ষাস্নাত চাঁদের রুপালি আলো জেগেই তো আছে যা তার খুব চেনা!
২.
এমন সময় একজন তার পাশে এসে বসে। পাতলা গোঁফ আর হালকা শরীর দেখে কৌশিকের মনে হয় যুবকের বয়স বেশ অল্প। কিন্তু তার ইঙ্গিতপূর্ণ কথা যত এগুলো তত স্পষ্ট হতে থাকল যে, সে পরিপূর্ণ একজন মানুষ যার বয়স পঁচিশ অতিক্রম করেছে। ওই বয়সটার আগে পর্যন্তই মানুষের আত্মা কিছুটা সুস্থ এবং পবিত্র থাকে। তারপর থেকেই পুরুষ মানুষগুলি এক একজন আত্মাহীন, বধির, অর্থলিপ্সু হায়েনা হয়ে উঠতে থাকে। আর পঁচিশের পর 888sport promo codeদের কী হয়? তারা কি তাদের সুন্দর মন-মনন হারিয়ে এক-একটা ডাইনিতে পরিণত হয়? নাকি এই শহরের আকাশ থেকে ভূমি হয়ে মর্ত্যলোকে ছড়ানো নীল, রোদের সোনালি এবং জোছনার মেটে মেটে রুপালি আস্তরের মতো রংগুলি মেখে তারা এক একটা প্রজাপতি হয়ে যায়? তারপর হারিয়ে যায়? কোথায় যায় তারা? এই ক্যাসাব্লাঙ্কায়? অসীম সাগরের পাশে পাম আর খেজুরগাছের মাথাগুলিতে রহস্যময়তা লেগে থাকে যেসব শহরে, তারা কি হারিয়ে যায় সেইসব শহরের উদ্দেশে? কিন্তু সব পুরুষই কি পঁচিশের পর অমন লোভকাতর পাষণ্ড হয়? নিজের বয়স কত হলো? সাঁইত্রিশ নাকি সাতচল্লিশ তা ঠিক মনে করতে পারছে না কৌশিক।
যুবকটাকে বিলবোর্ডের মডেলকন্যাকে নিয়ে প্রশ্ন করতেই সে জানাল, মডেলকন্যার মতো সুন্দর মেয়েদের নিয়ে তার কারবার আছে। কৌশিক চাইলেই তাদের যে-কোনো একজনকে জুটিয়ে দিতে পারে। মেয়েগুলির বুক উন্নত, নিতম্ব এই মরুদেশের বিপরীতে যে-কোনো সুজলা-সুফলা দেশের ফল-ফুলে ভরা টিলার চেয়ে কম কিছু নয়। প্রয়োজন কিছু দিরহাম অথবা ডলার। ঘণ্টায় মাত্র পঞ্চাশ ডলার দিলে 888sport promo code এবং শীতাতপ-নিয়ন্ত্রিত ঘর সবই জুটবে।
আমি তোমার কারবার নিয়ে জানতে চাইছি না। বিলবোর্ডের মডেলকন্যার ব্যাপারে জানতে চাইছি? কোন দেশের সে?
তুমি কি পাগল? অন্য দেশের মেয়ে এই মরক্কোর রাজধানীর সব বিলবোর্ড দখল করে বসবে? আর তুমি ওকে নিয়ে ভাবছ কেন? তাকে চাইলেই তো কেউ এনে দিতে পারবে না, তাই না। সে অনেক ডলার কারবারিদের ব্যাপার।
কৌশিক মনে হয় তার কথাগুলি খুব একটা শুনল না। বলল, ঠিক। প্রজাপতিদের চাইলেই মানুষ ধরতে পারে না। বিশেষ করে অন্য কোনো ভূমি থেকে পালিয়ে আসে।
অন্য কোনোখানে, অন্য কোথাও, অনেক দূরে নিক্ষিপ্ত, গভীর এবং গম্ভীর দৃষ্টির দিকে যুবকটি বিরক্তিকর মনোযোগের সঙ্গে তাকাল। এই পূর্বাহ্নে দিনের শুরুতে এমন একজন পাগলের সঙ্গে দেখা হওয়ায় যুবকটি ভীষণ ক্রুদ্ধ এবং নিজের ওপর বিরক্ত হয়ে উঠল। অথচ অদূরেই তার দোতলার ডেরা থেকে মানুষটাকে একা বসে থাকতে দেখে ভালো একজন খদ্দের জুটেছে ভেবে সে সকালের নাস্তা না সেরেই এখানে চলে এসেছিল। এমন পাগলগোছের মানুষ এই কফিশপে কমই আসে। এখানে আসে সব শিকারি, ধুরন্ধর আর শয়তানের সঙ্গে গাট্টিবাঁধা বিদেশি পর্যটক। কফিশপটাও তার এইসব কারবারের সঙ্গে জড়িত, তা শহরের লোকজন জানে। জানে পুলিশ স্টেশনের কর্তাগণ এবং শহরের প্রশাসকগণ। এই ভদ্রগোছের সুদর্শন মানুষটা কফিশপটার নাম কি খেয়াল করেনি? পঁচিশ বছরের পরও তার চোখ এখনো ভাবাবেগে ভোগা কিশোরের মতো কেন সে ভেবে পেল না। এই বয়সী পুরুষ তো হয় ভণ্ড নয়তো হায়েনা। যুবক বিরক্তির সঙ্গে বলল, সকালটা নষ্ট করলে। দেখো না, কফিশপটার কী নাম? এর অর্থ হলো দর-কষাকষির সঙ্গে এক কাপ কফি হোক শুভ সূচনার। এখন আমাকে এক কাপ কফি খাওয়াও। আমার সময়ের তো দাম আছে। সেটা অন্তত মেটাও।
কফি খেয়ে যুবকটা চলে গেল। কাপ-প্লেট, চেয়ার-টেবিল গোছাতে ব্যস্ত পরিচারিকা দুজনের একজন কৌশিককে বারবার দেখছিল। সে এবার তার কাছে এলো। বাঁপাশের চেয়ারটায় বুক এলিয়ে বলল, হ্যালো, হ্যান্ডসাম।
হ্যালো।
অনেকক্ষণ ধরে বসে আছো। এর আগেও একবার তুমি এই কফিশপে ঠিক ওপেনিং সময়টায় এসে বসে ছিলে। তোমাকে আমি ভুলিনি।
হ্যাঁ, ঠিক তাই। এই সময় সে মনে হয় এখানেই এসেছিল, কফিশপটার নাম তো মাত্র সে আজ জানল! তার আর কী দোষ? মেয়েটা বলল, এখানে সবাই আসে বিকেল থেকে রাতে। আমি অবশ্য রাত দশটায় চলে যাই।
কোথায় যাও?
বাড়িতে?
কীভাবে যাও? একটা ট্রলারে করে? যে ট্রলার মৃত্যুকে ছন্দ বানিয়ে সাগরে ভীষণ দুলতে থাকে?
মেয়েটা ভয় পাওয়া ভঙ্গিতে বলল, না, আমি হেঁটেই যাই। খুব বেশি দূরে নয় তো আমার ঘর?
তোমার ঘর? সেখানে আর কে থাকে?
কেউ না। ভাড়া নিয়ে থাকি। আমি তো আর এই শহরের, এই দেশের না?
তুমি যে-দেশের সেই দেশটা কি তোমার পাসপোর্ট ব্লক করে দিয়েছে? খুনের একটা মিথ্যা মামলা দিয়েছে?
বাহ, তা কেন? আচ্ছা, তুমি ঠিক আছো তো? তুমি বড্ড অসংলগ্ন কথা বলছো। আমার ধারণা আমি বেশ সুন্দরী। একজন সুন্দরী 888sport promo code যে আগ বাড়িয়ে একজন পুরুষের কাছে এগিয়ে আসে, তার সঙ্গে তুমি দর-কষাকষি বাদ দিয়ে অপ্রাসঙ্গিক কথা বলছো।
আমি, দুঃখিত।
আমি জানি, আমার জন্য তুমি এই সময়টায় এখানে আসো। কিন্তু কিছু বলতে পারো না। তুমি খোলাখুলি তোমার ইচ্ছার কথা আমাকে বলতে পারো।
একটা ট্রলার কি এই সাগর হয়ে পূর্বদিকে যাবে, যেখানে শস্যভরা দিগন্ত আছে অথবা নদীভরা মাছ আছে। পাহাড়ি এলাকার ভেতর দিয়ে যেখানে নদীর মতো খালগুলি আঁকাবাঁকা হয়ে বয়ে গেছে, দূর দূর পর্যন্ত?
কৌশিকের বলার ভঙ্গিমায় এত মায়ার আকুতি ঝরে পড়ল যে কফিশপের পরিচারিকা গোছের মেয়েটা এবার কৌতূহলের পাশাপাশি তার প্রতি দয়াপরবশ হয়ে উঠল। সে-ও ফিরে যেতে চায় নিজের শহরে। নিজের পায়ে দাঁড়ানোর মতো কিছু টাকা কামাই হলেই সে আর এমন জীবন কাটাতে চায় না। সন্ধ্যায় আর রাতে নিজের ভাড়া করা একটা ঘিঞ্জি ঘরে ফিরে মাঝে মাঝেই অচেনা পুরুষের সঙ্গে রাত কাটাতে তার আর ইচ্ছা করে না। এই ছেলেটাকে নিরাপদ এবং পছন্দের একটা শিকার মনে হলেও তার এলোমেলো কথা তাকে ভাবিয়ে তুলছে। সে এবার চেয়ার টেনে তার মুখোমুখি বসল, তুমি কি তোমার দেশে ফিরতে চাইছো?
দেশ? হ্যাঁ, কিন্তু আমার কোনো দেশ নেই।
হা, হা। দেশ ছাড়া কি মানুষ আকাশ থেকে জন্মে?
মানে, দেশটা ছিল। কিন্তু ওরা সেখানে যাওয়ার অধিকার মানে আমার সীমান্তটুকু কেড়ে নিল। আর ওই যে বিলবোর্ডে ওকে দেখছো, ওর কাছেও আমার আর যাওয়া হচ্ছে না।
কারা তা করতে দিচ্ছে না?
যারা মিথ্যা মামলা দেয়। তোমার কি বিশ্বাস হয়, আমি খুন করতে পারি?
তুমি তা মোটেও পারো না। তোমার বউ আছে?
বউ? এই প্রশ্নে কৌশিকের সব স্নায়ুতন্ত্র যেন একসঙ্গে কেঁপে উঠল। সিঁথির মতো একটা পথ চোখের সামনে ভেসে উঠল। দুইপাশে তালগাছের সারি নিয়ে দিগন্তের বুক চিড়ে যে পথটা একটা ছবির মতো সবুজ গ্রামে গিয়ে মিশেছে। মাথায় সিঁদুর পরা, আঁচলের ভেতর লাজুক তবু হাসিমাখা একটা মুখ ভেসে উঠল। সেই মেয়েটার নাম কী ছিল? যার লাজুক মুখটা আলো হয়ে উঠত। তারপর অন্ধকারে আলো হয়ে জ্বলে ওঠা তার আভাময় ত্বকের শরীর সে কৌশিকের বুকের ভেতর সঁপে দিত? তার নামটা মনে করার এত এত চেষ্টা করতে গিয়ে সে ভুলে গেছে দেশ-শহর-ভূমি সব। শুধু মনে হয় শরীরে আঁকা সোনালি রঙের উচ্ছলতার 888sport sign up bonus, নীল ডানার বেদনা, চোখের বিধুর দৃষ্টিতে দূর-দিগন্তে অনন্ত বি888sport sign up bonus নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা একটা প্রজাপতির কথা। কৌশিকের ধারণা, এই ক্যাসাব্লাঙ্কার সঙ্গে সেই প্রজাপতির একটা সম্পর্ক আছে। কেননা, এখানে আটলান্টিক এসে মিশেছে, যে-পথে ফরাসিরা এসেছিল। সে-ও কি এই পথে আসতে গিয়ে পথ হারায়নি? তার মতো যারা দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়, তারা সবাই কি পথ খুঁজতে গিয়ে পথ হারায়? কৌশিকের ভাবনায় ছেদ পড়ে। মেয়েটা প্রশ্ন করে, বুঝেছি। তোমাকে বলতে হবে না। 888sport promo code-সংক্রান্ত ব্যাপারে পুরুষের চোখের ভাষা মেয়েদের চেয়ে আর কে ভালো বোঝে? আমি নিশ্চিত, তুমি, তোমার শরীর-আত্মা-মন সবই কোনো একজন 888sport promo codeর গভীর সংস্পর্শে এসেছে। তার কথা এত ভেবো না। কোনো না কোনোভাবে জগতের সব 888sport promo code এই জগতের শিকড়ের সঙ্গে গাঁথা। আমার মধ্যে ডুব দিয়ে তুমি তাকে পেতেই পারো।
পেতে পারি? সত্যিই পেতে পারি?
তুমি কী করতে, তোমার দেশে?
এ-প্রশ্নে এলোমেলো হয়ে গেল কৌশিকের সব চিন্তা। হ্যাঁ, মনে পড়ছে, সে সিঁথির মতো মেঠোপথ ধরে স্কুলে যেত। তার পরনে স্কুলের ড্রেস এবং হাফপ্যান্ট পরা থাকত। নির্জন পথটা ধরে যেতে যেতে সে সকালের আলোকরশ্মির মাঝে মাঝে কীভাবে প্রকৃতি-স্নান করে, বাড়ি ফিরতে ফিরতে দুপুরের ঘ্রাণ কেমন, সময় কীভাবে তার কানে ফিসফিস করে নতুন সব স্বপ্নের উন্মেষ ঘটায় – এসবই সে উপলব্ধির চেয়ে অনুভব করেছিল। পথের পাশের ছোট্ট বনের পাতারা যে ধ্বনি তুলত তা কেন ‘মর্মর’ তা সে ভেতর থেকে টের পেয়েছিল। সেই অনুভবের বাইরে এই জীবনে আর কী করার থাকতে পারে?
ছোটবেলাটায় কৌশিক এত আটকা পড়ে আছে যে, বড় হয়ে সে বড় একটা কোম্পানির সফটওয়্যার ডাটা অ্যানালিস্ট নামের এক চাকরি করত, তা তার মনেই পড়ে না। চাকরিটার জন্য কোম্পানির মালিকপক্ষ তাকে এত কেন সন্দেহ করত, কেন এত আষ্টেপৃষ্ঠে বন্দি করে ফেলেছিল যে, সে সিঁথিপথটার শেষ প্রান্তে মাথায় সিঁদুর পরা, আঁচলের ভেতর লাজুক তবু হাসিমাখা মুখটা সে দেখতেই পেত না বলে অস্থির হয়ে উঠত। অফিস আর অফিস-লাগোয়া ঘরটা ছিল পৃথিবীর নিষ্ঠুরতম এক বন্দিশালা। এত অনুভব নিয়ে, সারাজীবন ভালো ফলাফল করলে বুঝি অমন বন্দিত্বই জোটে কারো কারো ভাগ্যে! সিঁথিপথটাকে যে রাতের অপার্থিব আর সাদা কুয়াশামাখা চাঁদের আলো আরো নির্জন এক মূর্ত অপেক্ষার প্রতীক করে তুলেছিল – সেদিন সে আর সহ্য করতে পারল না। সেই সিঁথিপথ আর সিঁথিতে সিঁদুরমাখা সেই 888sport promo code, তাকে আকুল হয়ে ডাকতেই থাকল। গার্ডকে অনেক ঘুষ দিয়ে সে পালাতে থাকল। কিন্তু পৌঁছা হলো না সেখানে। তার আগেই পুলিশ তার বাড়ি ঘিরে ফেলল। কেউ একজন খুন হয়েছে – তার দায় যে কৌশিকের নয় অথবা কোম্পানির সব ডাটা লুট করে সে পালাতে পারে না – 888sport promo codeটার সেই বিশ্বাস ছিল। সে তাকে সাগরপথে দেশ ছাড়তে বলেছিল। আকাশ আর স্থলপথ কোথাও আর কৌশিক নিরাপদ নয় বলে তার হাসিমাখা মুখের কণ্ঠস্বরে রক্ত জমেছিল এত যে, সে কাঁদতেও ভুলে গিয়েছিল। বলেছিল, তুমি যেখানেই থাকো, ভালো আর সুস্থ থাকলেই আমি ভালো থাকব। আমি প্রজাপতি হয়ে উড়ে উড়ে তোমার কাছে চলে আসব।
সে-ও কি সাগরপথে এখানেই এসে এই বিলবোর্ডের ছবিতে ছবি হয়ে গেল? তার পাখনায় এত শক্তি সে কোথায় পেল?
কার কথা বলছ?
বিলবোর্ডটার দিকে ইঙ্গিত করল কৌশিক। পরিচারিকা মেয়েটা এবার নিশ্চিত হলো, যুবকটি অনেকটাই পাগল অথবা ঘোরতর মানসিক সমস্যাগ্রস্ত এক মানুষ। সে চেয়ার থেকে উঠল এবং হতাশভঙ্গিতে তার সহকর্মী মেয়েটার কাছে গিয়ে বলল, হলো না। একটা পাগলের সঙ্গে রাত কাটানো অনেকটাই ঝুঁকিপূর্ণ। সময়টা নষ্ট হলো।
৩.
ঠিক তখনই সাগরসৈকতে কিছু লোকের জটলা তৈরি হলো। তাদের চেঁচামেচিতে চমকে উঠল কৌশিক। সে দ্রুতগতিতে সৈকতের কাছে বড় বড় পাথরের চাঁই মাড়িয়ে গেল। কৌশিক দেখল একটা গুলিবিদ্ধ লাশ। এবার কৌশিক লাশটার দিকে ভালো করে তাকাল। কী আশ্চর্য, সে নিজেই লাশ হয়ে শুয়ে আছে। তার বুকের ডানপাশটার গুলিবিদ্ধ স্থানটুকুতে রক্তটুকু ধুয়ে মিশে গেছে সাগরে। তপ্ত রোদে বুকের রক্ত শুকিয়ে গেছে। তার ট্রলার দুলছে। তার নিজের কানের পাশ দিয়ে একটা বুলেট সাঁই সাঁই শব্দ তুলে সাগর অথবা আকাশ কোথাও চলে গেল। তার বুক ধরে এলো। অনেকগুলি লাশের সঙ্গে সেও সাগরে পড়ে গেল। না, না এসব মিথ্যা স্বপ্নের প্রহসন। সত্যি হলো, সে এক অমীমাংসিত সীমান্তের কাছাকাছি এসেছে। একটু পরেই সব মীমাংসা হয়ে যাবে এবং রৌদ্রকরোজ্জ্বল আলোর আভায় আলোকিত কন্যাটির মুখচ্ছবিতে সন্ধ্যার ছায়া ঘনিয়ে আসার আগেই তার স্বপ্নটুকু সত্যি হবে। আকাশের কোলে একটি-দুটি তারা জেগে ওঠার আগেই তার স্বপ্নবিন্দুতে জেগে থাকা বিলবোর্ডকন্যা নেমে এসে এই সীমান্তের জটলা, ভুল শহরের মানচিত্র ঠিকঠাক করে দেবে। একজন যুবকের কাছে জগতের সব স্বপ্ন তো মিশে থাকে প্রিয় এক 888sport promo codeর চোখের নিমীলিত ভাষার কাছে।
অথচ কী অদ্ভুতভাবে সেই নিমীলিত চোখের ভাষার সঙ্গে নিজের চোখের ভাষা বিনিময়ের আগেই সে এখন দেখছে তার নিজেরই লাশ যার চোখের ভাষা আর কখনোই জাগবে না! না, না, এটা তার লাশ হতেই পারে না। চারপাশের মানুষগুলি বারবার বলছেই, ডলফিনটাকে যে শিকারি গুলি করেছে – তার শক্ত বিচার হোক। লঙ্কানরা বীর জাতি। তারা এসব অনাচার মানতে চায় না। ডলফিনের আবার কিসের সীমান্ত? কলম্বোর সামনের এই মহাসাগর আর তার অবারিত দিগন্ত কি এই নগরবাসীকে এতটা উদার এখনো করেনি যা দিয়ে তারা অন্য সাগরের একটা ডলফিনকে অনায়াসেই তাদের সাগরে স্বাগত জানাতে পারে?
হায়, পৃথিবীর মানুষগুলি এখন ডলফিন খুনের বিচার আন্তরিকভাবেই চায়। বুকে বিদ্ধ বুলেটের চেয়ে কি কৌশিকের মূল্যও এত কম যে, কেউ আর তার জন্য কারো কাছে বিচার তো পরের কথা, না আকাশ না সাগরের জল – কাউকেই একটা মানুষের মৃত্যুর জন্য তারা অভিসম্পাত দিচ্ছে না। কিন্তু মানুষগুলি এত ভুলভাল কথা বলছে কেন? এটা তো ক্যাসাব্লাঙ্কা, কলম্বো নয়। সাগরের কাছাকাছি সেই কফিশপটা তো মিথ্যা নয়! মিথ্যা নয় তার দেখা বিলবোর্ড। আর বিলবোর্ডের মডেলকন্যা তো ঠোঁটের কোণে লুকিয়ে রাখা এক চিলতে হাসিতে তাকে বলছেই – এই হলো তার স্বপ্ন-সীমান্ত। তাহলে?
না, নিজের লাশ এভাবে দেখা যায় না! নিজের চোখ-মুখ, হাত-পা – এসবের জন্য কেমন মায়া লাগে! ওই যে তার নিথর হাত – সেটা দিয়ে সে ঝড়ে পড়া একটা পাখির ছানাকে তার মায়ের বানানো বাসায় পৌঁছে দিয়েছিল। আর চোখ দুটো? বিকেলের ম্লান আলোর মাঝে কত স্বপ্নকে দুলতে দেখেছিল। রোদের সঙ্গে বাতাস কীভাবে কথা বলত, খালের ঠান্ডা হিমজলে গাছপালার ফাঁক-ফোকর অথবা ভেতর দিয়ে রোদের আলোকরশ্মি কীভাবে উষ্ণতা নামের মায়ার স্পর্শ বুলিয়ে দিত – তা তার চোখদুটোর মতো করে জগতের আর কে দেখেছে? আর সেই চোখদুটোতে বাবা-মায়ের কত চুমো জ্বলজ্বল করছে – এই মানুষগুলি কেউ কি তা দেখতে পায় না?
তারা কি সত্যি দেখতেই পাচ্ছে না যে, কৌশিক তার নিথর দুই ঠোঁট দিয়ে একটা প্রজাপতিকে কত আদর করেছিল? নিজের লাশটা নিজের চোখের সামনে দেখতে কেমন অসহ্য যন্ত্রণা আর বেদনায় তার নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছিল। এই পৃথিবীর আর কোনো মানুষ এমন যন্ত্রণার ক্রুশে বিদ্ধ হয়েছে যে, সে নিজের মৃতদেহের প্রতিটি অঙ্গের 888sport sign up bonus, 888sport sign up bonusর অতলে লুকিয়ে থাকা মায়াটুকু জীবিত হয়ে অনুভব করতে গিয়ে উপলব্ধি করে যে, তার সেই অঙ্গটুকু নিস্পন্দ! হায়, তুমুল ব্যক্তিপরিচয়ের এই জগতে দুর্বিনীত, আকণ্ঠ দুর্নীতি আর মিথ্যায় নিমজ্জিত মানুষ নামের হায়েনাদের হাত থেকে পরিচয় লুকাতে পালাতে হয়। তারপর তার পরিচয় এবং ভূমির সীমান্ত এতটুকুই সে হারিয়ে ফেলে যে, এই পৃথিবীর মানুষ একজন মানুষের মৃতদেহকে আর ‘মানুষ’ না বলে, ‘ডলফিন’ বলে সম্বোধন করে।
এই ভালো হয়েছে, মৃত্যুকালে এই পরবাসে মানুষের লাশ হয়ে পড়ে থাকলে মানুষের তো আর মায়া জন্মাত না! পরিচয়হীন কৌশিককে, (হ্যাঁ, কৌশিক এবার নিশ্চিত হলো লাশটা কৌশিকেরই) তো সবাই মৃত ডলফিন ভেবে একটু হা-হুতাশ করছে। ঘন-কালো মেঘ চুলের ভেতর সিঁদুর-অঙ্কিত একটা পথ উন্মোচিত হতে থাকল তার দৃষ্টির সামনে। সেই পথের শেষপ্রান্তে একজোড়া অশ্রুভেজা চোখ রোদেলা পূর্বাহ্নকে কেমন কালো মেঘের দিনে পরিণত করছে।
আহা, প্রজাপতি আমার – তুমি কেন কান্না করছো? তোমার অশ্রুভেজা দৃষ্টি আমার বুকে বুলেট নামের প্রোথিত ক্রুশটাকে আরো ধারালো করে তুলছে। সাগর আমার শরীরের সব রক্ত শুষে নিয়েছে বলে সেই বেদনার প্রবল লাল প্রবাহটুকু কেউ দেখতে পাচ্ছে না। দেখতে না পেলেই মানুষ মনে করে – সবকিছুই স্বাভাবিক আছে, কিন্তু যারা ভালোবাসে তারাই শুধু অদৃশ্য এই রক্তক্ষরণের তুমুল প্রবাহ দেখতে পায়, বুঝতে পারে। তুমি তো আমাকে আর ডলফিন ভাবছ না! সেজন্যই তোমার চোখে অমন অশ্রুজল – আমি তা এখনো উপলব্ধি করতে পারি। তুমি পরিচয় লুকাতে বলেছিলে, দেখো পরিচয় লুকাতে লুকাতে, সীমান্তের পর সীমান্ত পাড়ি দিতে দিতে আমি একটা ডলফিন হয়ে গিয়েছি। ওরা তো জানে না, ডলফিন হলেও আমার শ্বাসতন্ত্র মানুষের বলে আমি সাগরে টিকতে পারলাম না।
যাকে সে কথাগুলি বলল, আজ বহুদিন পর কৌশিকের মনে পড়ল, অভিব্যক্তিতে লজ্জা আর ঠোঁটের কোণে মিষ্টি আর স্মিত হাসির রেখার ভাঁজ পরিচয় লুকানো 888sport promo codeর নাম অদিত্রি। নিজে সে চিৎকার করে পালাতে চাইল। উচ্চস্বরে বলেই চলল, অদিত্রি, আমি আসছি। আমি আর পরিচয় লুকাতে চাই না। আমি তোমার কৌশিক, আমি ডলফিন নই!
ঊর্ধ্বশ্বাসে কৌশিক অদিত্রির দিকে দৌড়াতে থাকল। টন টন ওজনের পাথরের বড় বড় উঁচু-নিচু চাঁই তার পায়ের তলায় সমতল ভূমি হয়ে গেল। পাথরে কয়েকবার তার পা পিছলে গেল। পড়ে গেলেও ব্যথা অথবা যন্ত্রণার কোনো আর্তি তার কণ্ঠনিঃসৃত হলো না। যতই মায়া, অনুভব আর 888sport sign up bonus থাকুক স্পন্দনহীন শরীর তো ব্যথা পায় না! একসময় শিক্ষকদের তুখোড় মেধাবী প্রিয় ছাত্র, পরিবারের অহংকার একজন মানুষকে সীমান্ত কীভাবে ডলফিন বানিয়ে দেয়? আশ্চর্যজনকভাবে মানুষ সাগর-মহাসাগরকেও সীমান্ত দিয়ে ভাগ করে ফেলেছে। অচেনা ট্রলার দেখলেই সেজন্য মানুষের রক্তের জন্য তৃষ্ণার্ত সীমান্তরক্ষীদের বন্দুকের নল জ্বলন্ত ধোঁয়া আর বুলেট ছুটিয়ে দেয়। সাগরের প্রবল ঢেউয়ের দোলা সেইসব লক্ষ্যভেদী বুলেটের হাত থেকে কাউকে কাউকে লুকিয়ে রক্ষা করে। কেউ কেউ নিহত ডলফিন হয়ে সাগরে ভাসতে থাকে।
এসব ভেবে তার কাজ নেই। অদিত্রির কোলে রয়েছে বিরাট এক পৃথিবী। দুই বাহু আর কোল নামের সেই পৃথিবী পেতে অদিত্রি তার জন্য অপেক্ষা করছে – এর চেয়ে বড় আশ্রয় তার আর কোথায় আছে? কিন্তু অদিত্রি কোথায়? অদিত্রির নাম যতবার মনে হচ্ছে ততবার একটা করে বুলেটের শব্দে সাগরের গাঙচিলগুলি দলবেঁধে পালাচ্ছে। কারা গুলি করে? এই অনন্ত, অবারিত প্রকৃতি আর পৃথিবীর সীমানা মানুষকে ‘সীমান্ত’ হিসেবে চিহ্নিত করার অধিকার কে দিলো? অন্তত সেই ধরনের মানুষকে উদ্দেশ করে কেন গুলি ছুড়তে হয় যারা সীমানার পর সীমানা পেরিয়ে এই মহাবিশে^ পিঁপড়ার মতো এক টুকরা মাত্র আশ্রয় খুঁজছে? হায়, মানুষ! জগতের সবচেয়ে ফ্যাসাদ সৃষ্টিকারী প্রাণী। তার চেয়ে একটা প্রজাপতি অনেক মহৎ যে প্রজাপতির চোখে জেগে থাকে বি888sport sign up bonus অথবা একটা দিগন্তের অনন্ত 888sport sign up bonus…
অদিত্রির নাম ধরে সে চিৎকার করে পালাতে থাকল। অথবা ডলফিন হয়ে লাফ দিয়ে দিয়ে পড়তে থাকল বিশাল বিশাল পাথরের ওপর। কিন্তু তার শরীর থেঁতলে গেল না। কোনো এক অদৃশ্য বায়ুস্তর তার শরীরকে ওজনহীন করে তুলেছে। এটা কি সেই বায়ুস্তর যা আত্মাকে বয়ে যায় অদিত্রি নামে এক স্বর্গলোকে। যার কোলে ধরা থাকে প্রান্তরের বুক চিড়ে বয়ে চলা এক সিঁথিপথ?
সাগরতীরের শুরুতে সে পৌঁছাল। বিরাট এক উঁচু পাথরের দেয়াল টপকে কীভাবে সে রাস্তাটা পার হয়ে আবার কফিশপে যেতে পারবে তা নিয়ে ভাবতে গিয়েই কৌশিক অবাক হয়ে দেখল, বিলবোর্ডের নিচ থেকে ধীরে ধীরে তার দিকে এগিয়ে আসছে বিলবোর্ডকন্যা। তার হৃদয় চঞ্চল হয়ে উঠল। মেয়েটির এক একটা পদক্ষেপ যেন এক একটা স্বপ্নের দ্যোতনা হয়ে উঠছে। একসময় মেয়েটি তার হাত ধরে তাকে তুলে নেয় বেড়িবাঁধের মতো করে নির্মাণ করা কংক্রিটের উঁচু দেয়ালে। তার উদ্ভিন্ন সৌন্দর্যে কৌশিকের দৃষ্টি থেমে যায়, হৃদয় থমকে চমকে উঠে। সে তাকে না চিনলেও কৌশিক স্পষ্ট উপলব্ধি করে – এই সেই প্রজাপতি, এই শহরের আত্মা – যার অমোঘ টানে সে এখানেই থিতু হতে চেয়েছিল। বেড়িবাঁধ পার হয়ে মেয়েটি শক্ত করে তার ডান হাতের আঙুলগুলি দিয়ে কৌশিকের বাম হাতের আঙুলকে জড়িয়ে নেয়। শান্ত আর ধীর পদক্ষেপে বিলবোর্ডের দিকে এগিয়ে যেতে যেতে প্রশ্ন করে, তুমি ভুল জায়গায় বসে আমার দিকে তাকিয়ে থাকো কেন?
আমার জন্য সঠিক জায়গা কোনটা?
তা তো জানি না। যাকে তুমি পেতে চাও তার জন্য সঠিক সময় এবং স্থান তোমাকেই ঠিক করতে হবে, তাই না?
তুমি কীভাবে জানো, আমি তোমাকে পেতে চাই? আমি কি তোমার সঙ্গে আগে কথা বলেছি, কখনো?
কথা বললেই যদি সব বলা হতো! তুমি তো একটা কোম্পানির সফটওয়্যার উন্নত করতে কাসাব্ল্যাঙ্কায় ছিলে, বেশ কিছুদিন। তুমি একটা হারিয়ে যাওয়া প্রজাপতি খুঁজছো যার ডানায় সাগর জলের ঘ্রাণ মিশে আছে, তাই না?
কী আশ্চর্য! তুমি কি…
আমি তোমার মনের কথাটা শুধু জানি।
কে তুমি?
আমি তোমার দিগন্তের মাঝের সিঁথিপথ পেরিয়ে সিঁথিতে সিঁদুরমাখা সেই 888sport promo code, যে তোমার অপেক্ষায় তোমাকে আকুল হয়ে খুঁজে ফেরে।
ক্যাসাব্লাঙ্কা শহরের বাইরে এখানে মরু, তবু শস্যক্ষেত আর এখানে-সেখানে ছড়ানো-ছিটানো গাছের মতো প্রান্তর থাকলেও সবুজ দিগন্ত তো নেই … সবুজ দিগন্ত ছাড়া লাল সিঁদুর আর লাল টিপ নিয়ে কেউ অপেক্ষা করতে পারে?
আমি তোমাকে সেখানে নিয়ে যেতে এসেছি।
অদিত্রি! তুমি আমার অদিত্রি?
কৌশিক … আমি তোমার অদিত্রি!
তাহলে তুমি রাস্তা পার হয়ে কোথায় যাচ্ছ?
সেখানে যেখানে তোমাকে কেউ ‘ডলফিন’ বলে আর কষ্ট দেবে না। ভুল সীমান্তের কাছে এলেই মানুষ ডলফিন হয়ে যায়, কৌশিক।
আমি কি ভুল সীমান্তের কাছে এসেছি, অদিত্রি? আমি তো এসেছি আমার সেই স্বপ্ন-শহরে যেখানে একটা শহরটার প্রাণ নামের প্রজাপতিই শুধু নয়, বিলবোর্ডেও তোমার ছবি যত্ন করে ঝুলিয়ে রেখেছে। তুমি যেখানে আছো, তা কি আমার ভুল সীমান্ত হতে পারে? মানুষ যেখানে থাকতে পারে তা কি মানুষের জন্য ভুল সীমান্ত কখনো হতে পারে?
আমরা চিরদিনের জন্য সীমান্ত পাড়ি দিয়েছি।
হ্যাঁ, তুমি যেখানে থাকবে সেটাই আমার পৃথিবী। কিন্তু সত্যি করে বলো, এখন আমাদের গন্তব্য কোথায়?
বিলবোর্ডের ভেতর ঢুকে গেলেই কেউ আমাদের আর সন্দেহ করবে না। মানুষকে মানুষ একবার পণ্য হিসেবে ব্যবহার করতে পারলেই তার আর পাসপোর্ট, ভিসা লাগে না। এরপর আমরা পালিয়ে যাব। কেউ আমাদের আর ধরতে পারবে না।
আবার পালাব? কিন্তু যদি আবার ওরা বুলেট ছোড়ে। সাগর ধরে পালাতে পালাতে আমি তো ডলফিন হয়েই গেছি, তোমাকেও যদি ডলফিন হিসেবে শনাক্ত করে – তাহলে আমি আর কার কোলে আশ্রয় নেবো? অদিত্রি!
তাদের কথা শেষ হয় না। মানুষের পরিচয় বিলীন হওয়ার আগ পর্যন্ত একে অন্যকে গভীর ভালোবাসায় মগ্ন দুই আত্মা পালানোর পথ খোঁজে। এই পৃথিবীর সব সাগর-মহাসাগর ছেড়ে, মরুভূমি অথবা সবুজ দিগন্ত সব ছেড়ে এমন এক শূন্য অথবা মর্ত্যলোকে, চন্দ্র-সূর্যের বাইরে যেখানে বাতাসের স্তরগুলি এক একটা ভাসমান সাগর হয়ে তার অসীম ডানা বিস্তৃত করে রেখেছে।
এসো … এ … সো, কৌশিক।
কৌশিক দেখে অদিত্রি তার দিকে হাত বাড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সে চারদিকে ভালো করে দেখার চেষ্টা করে এবার। নীল নীল বাতাসের স্তরের মহাসাগর, অথচ তার নিশ্বাস নিতে কষ্ট হয়। তবু সে আর একটু এগিয়ে যায়। তার শরীর ওজনহীন হতেই থাকে। নিশ্বাস বন্ধ হতে থাকে।
ওখানে যেতে আমার নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে অদিত্রি।
হ্যাঁ, বিলবোর্ডের জগৎ এবং সব অমীমাংসিত সীমান্ত পেরিয়ে এসেছি আমরা, কৌশিক। আর একটু এসো, এইপাশে শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ার কোনো বালাই নেই। তুমি না বলেছ, আমি যেখানে থাকব সেটাই তোমার পৃথিবী। আমি তোমাকে পালাতে বলেছিলাম, আমার কাছে ফিরে আসার জন্য। তোমার ডলফিন হয়ে যাওয়ার খবরে আমি এই প্রশ^াসহীন জগৎকেই বেছে নিয়েছি … এসো …
কৌশিক এবার দ্বিধাহীনভাবে অদিত্রির হাত ধরে। অনন্ত বায়ুস্তরের ভেতর দিয়ে তারা ভেসে চলছে কোনো এক অজানা জগতে যেখানে অক্সিজেন-কার্বন ডাই-অক্সাইড নামের কোনো শ্রেণিবিন্যাস নেই বলে মানুষ আর ডলফিন নামে কোনো
প্রজাতি-বৈষম্য নেই, মাছ অথবা মানুষের কোনো সীমান্ত নাই। বায়ুস্তরের ভেতর ভাসতে ভাসতে কৌশিককে এবার আলতো করে টেনে নেয় অদিত্রি। অদিত্রির সাগরকোলের মাঝে কৌশিকের নিস্পন্দ, শ্বাস-প্রশ্বাসহীন শরীরটা মিশে যায়, মিলিয়ে যায়।
শৈশব-কৈশোরের স্কুলের পথে ছুটে চলা হাফপ্যান্ট পরা কৌশিক হারিয়ে যায় সবুজ প্রান্তরে বয়ে চলা সিঁথির মতো লালচে মেঠোপথে …


Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.