সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী কেমন 888sport live লেখেন? তাঁর নির্বাচিত 888sport live (আগামী প্রকাশনী, ১৯৯৯) পড়তে বসে চকিতে গত প্রায় সিকি শতাব্দীর পরিসরে প্রকাশিত স্বতন্ত্র 888sport live-গ্রন্থগুলোর শিরোনাম মনে করে দেখি চমৎকার নাম- আমার পিতার মুখ (১৯৮০), তাকিয়ে দেখি (১৯৭৪), বৃত্তের ভাঙাগড়া (১৯৮৯), আরণ্যক দৃশ্যাবলী (১৯৭৫), উদ্যানে এবং উদ্যানের বাইরে (১৯৯২), অনতিক্রান্ত বৃত্ত (১৯৭৭), বেকনের মৌমাছিরা (১৯৮৫), নিরাশ্রয় গৃহী (১৯৭৪), এর প্রাচীর ওর পথ (১৯৯৫) ইত্যাদি। শিরোনাম কেন তাঁর 888sport live থেকে কাব্যময় ভাষার উদ্ধৃতির জন্যেও যথেষ্ট শ্রম অনাবশ্যক। আসলে এটি তাঁর একটি নিজস্ব নো-নির্মোক। কাব্যিকতা তাঁর 888sport liveে আছে কিন্তু ঐ পর্যন্তই। সব মিলিয়ে অন্তিমে যা দাঁড়ায় তা 888sport live বৈ অন্য কিছু নয়, তখন তাঁর গদ্যের বিশেষ প্রসাদগুণ বা কাব্যময়তাকে ব্যক্তস্তুতির মতো লাগে, অনেকটা রঙিন ফিল্মে দুর্ভিক্ষের live chat 888sportের মতন। কথা আরও আছে। আমার পিতার মুখ, আপনজন, পিছনে ফিরে, আমাদের বাসন্তী দিদি, রাহীনের আগামীকাল— এগুলোকে কী বলা যাবে? আঙ্গিক বা গঠনশৈলীর বিচারে, প্রচলিত দৃষ্টিতে? মনে হয় যেন ছোটগল্প কিংবা 888sport alternative linkের বিচ্ছিন্ন কোনো অধ্যায়—না, এগুলো 888sport liveই। আর বিষয়বস্তু-888sport live football, 888sport live chat, সমাজ, সংস্কৃতি, রাজনীতি, স্বদেশ, সমকাল, ইতিহাস, দর্শন, পাশ্চাত্য ভাবনা, ব্যক্তিত্ব, ইংরেজি 888sport live football, বিশ্ব888sport live football— বৈচিত্র্যে ভরপুর। সঙ্গে মিশেছে তাঁর বিপুল পাঠ-অভি’তা। সামগ্রিকভাবে, সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর 888sport liveকে আমাদের দেশ জাতির বুদ্ধিবৃত্তিক নৃতাত্ত্বিক অন্বেষণ বলা যায়। কেবল আত্মপ্রকাশের ক্ষেত্র হিসেবে নয়, স্বরচিত 888sport liveকে জাতিত্বের প্রবহমানতার সঙ্গে গ্রথিত করার দুর্লভ গুণ ও কৃতিত্বের তিনি দাবিদার। শব্দজগতের সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও পর্যবেক্ষণ, জিজ্ঞাসা, দর্শন প্রভৃতির উচ্চাঙ্গ আরোহ তাঁর 888sport live- 888sport live footballকে করেছে বিশেষ গৌরবে বৃত।
888sport appsে যে স্বল্পসংখ্যক বুদ্ধিজীবী-লেখক নিজেদের চিন্তন ও রচনাকর্মের মাধ্যমে উত্তর প্রজন্মকে প্রভাবিত করতে সক্ষম হয়েছেন তাদের মধ্যে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী দৃষ্টান্তযোগ্যভাবে অন্যতম। স্বাধীনতার তিন দশককাল পেরিয়েও 888sport free betটা করুণরকম মুষ্টিমেয়। তবু তো আছেন তাঁরা। আছেন বলেই আমাদের সংগ্রামশীলতার ইতিহাস এঁদের রচনায় এক ভিন্ন দ্যোতনায় উজ্জীবিত। জাতির সংকটে, অবনতিতে আমরা খুঁজি তাদের চেতনায় আশ্রয়। আত্মনিয়ন্ত্রণ এবং স্বাধীনতালাভের দীর্ঘকাল পরেও বাঙালির অন্বেষণ অবিশ্রান্ত। স্বাধীনতা পেয়েও একে রক্ষার পথ অন্বেষণ অব্যাহত। সমাজ-রাষ্ট্র ধর্ম প্রভৃতি ক্রমশ এমন এক জটিলতার আবর্তে ঘুরপাকরত যে ব্যক্তির সুস্থ বিকাশের পথ রুদ্ধ। আবার সমষ্টিবদ্ধ মানুষও দিকনিশানাবিহীন। কখনও কখনও গডোর জন্যে প্রতীক্ষাও বুঝি হার মানে। এমন আচ্ছন্নতায় প্রকৃত বুদ্ধিজীবী লেখকেরাই পারেন পথের সন্ধান দিতে। দিতে যদি না-ও পারেন পথের অন্বেষণ সম্পর্কে সচেতন করে তুলতে পারেন; প্রতিমুহূর্তে জাগ্রত রাখতে পারেন আমাদের অন্বেষণের চেতনাকে। কেননা, বাঙালি জাতির অন্বেষণ এখনও পথের শেষে পৌঁছায়নি। সেই অন্বেষণে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী সৎ-সচেতন ও প্রথাবিরোধী বুদ্ধিজীবী শ্রেণির মুখপাত্র।
প্রথমাবস্থা থেকেই তাঁর 888sport live footballিক অবস্থানটি অননুকরণীয়ভাবে স্বকীয়। ইংরেজি 888sport live footballে উচ্চশিক্ষা এবং বিদেশবাসের প্রভূত সম্পদে ঋদ্ধ হয়েও স্বদেশের সভ্যতা সম্পর্কেই তাঁর উৎসাহ অধিক। আপন মাতৃভাষার প্রতি তাঁর দায়বদ্ধতার প্রমাণ তাঁর ক্লান্তিবিহীন বাংলা এবং প্রকাশমান 888sport liveগ্রন্থাদি 888sport liveরাজি। তাঁর ইংরেজি ও পাশ্চাত্য 888sport live footballপাঠের অভিজ্ঞতা কাজে লাগে তুলনামূলক চর্চায়। যখন বিদেশী 888sport live football-সমালোচনা তাঁর মনো- যোগের বিষয় তখনও সেটির কেন্দ্রবিন্দু স্বদেশ-স্বজাতি-স্বসংস্কৃতির মধ্যে নিহিত। যেমন: নোরা, তুমি যাবে কোথায়’। নরওয়েজিয়ান নাট্যকার হেনরিক ইবসেনের সোয়াশ বছর পূর্বেকার এই আধুনিক ট্র্যাজেডি আজও পীড়িত মানুষের প্রেরণাস্থল। এডভার্ড বায়ার সুন্দর বলেছেন, এটি সর্বনাশের মধ্য দিয়ে শেষ হয়নি, আসলে শুরু হয়েছে। আর সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর 888sport live পড়ে বুঝি যে তা শুরু হয়ে আজও থামেনি, চলছে—
“নোরা ত্যাগ করেছে, কিন্তু নোরাকে তো গড়তেও হবে। কেবল গৃহ নয়, সমাজও। নোরা, একা তুমি এ কাজ পারবে কি? তোমার তো সংগঠন চাই, চাই আন্দোলন এবং রাজনীতি।’ (পৃ: ৫৮)
888sport liveকারের সিদ্ধান্ত সোয়াশ বছর আগেকার নাটকটিকে 888sport appsের বিরাজমান অবস্থার সঙ্গে রচনা করে চমৎকার যোগসূত্র। নোরার শত্রু পুঁজিবাদ, নোরার সমস্যার সমাধান পুঁজিবাদে নেই, আছে সমাজতন্ত্রে- লেখকের এ-মূল্যায়ন আমাদের দেশের 888sport promo codeদের পাদপীঠে, আমাদের রাজনৈতিক সংগ্রামের বৃত্তে সংযুক্তি পেয়ে যায়। তা-ই নয়, বঙ্কিমচন্দ্র, টলস্টয় প্রভৃতি রবীন্দ্রনাথ, ঐতিহাসিক আবর্তন সমকালীন 888sport promo code অবস্থানকে স্পষ্টতা দেয়। বুঝতে পারি, সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর পাশ্চাত্য 888sport live football-সমাজ-সংস্কৃতি বিষয়ক পাঠ জ্ঞান বিতরণের উদ্দেশ্যসাধিত নয়, এর বৃহত্তর অন্বিষ্ট-সামাজিক। তাঁর একটি বড় গুণ হলো তাঁর বৃহত্তর জীবনচেতনার আভিমুখ্য। ঐ বৃহত্তর জীবনচেতনার বৈভবে তাঁর ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার রচনাও এনে দিতে পারে সামাজিকতার আস্বাদ- এমনকি আত্ম888sport sign up bonusচারণাও। আমার পিতার মুখ, আপনজন, পিছনে ফিরে, আমাদের বাসন্তী দিদি, রাহীনের আগামীকাল- 888sport liveগুলোর কথাই ধরা যাক। এইসব রচনার শুরুতে পাই আবেগজড়িত রচয়িতাকে। ক্রমশ এগোতে থাকলে দেখি কৌশলে সরে পড়ছেন লেখক, চলে যাচ্ছেন আড়ালে এবং যাকে নিয়ে রচনা তার সবটা অবয়ব চলে আসে সামনে। আমার পিতার মুখ ব্যক্তিগত প্রসঙ্গ নিয়ে লেখা একটি 888sport live। ‘আমার পিতা’ মানে লেখকের পিতার কথা এত মনোযোগ দিয়ে পড়ার আবশ্যকতা কোথায়? এখানেই যে তিনি কেবল একজন মানুষের পিতার ফ্রেমে বাঁধা পড়ে থাকেন না, হয়ে ওঠেন প্রতিনিধি—সময়ের, সমাজের, রাষ্ট্রের, সংকটের। 888sport liveকারের মেদহীন-অপ্রগলভ গদ্যে প্রতিনিধি পিতা উঠে আসেন কালের গর্ভ থেকে—
‘সাধারণ গুণনীয়ক তিনি। মধ্যবিত্ত জীবনের অঙ্ক—দেখতে সে যতই জটিল হোক, হোক কঠিন ও বিস্তৃত—সেই অঙ্কের সরল ও সাধারণ গুণনীয়ক তিনি—আমার পিতা।’ (পৃষ্ঠা-১২)
তেমনি নাজমা তাঁর ‘স্ত্রী’ থেকে ব্যক্তিত্বে পরিণত হন। গল্প কিংবা 888sport alternative linkের ঢংয়ে নির্মিত যে- নাজমাকে আমরা পাই তিনি এক অর্থে শিক্ষিত মধ্যবিত্ত বাঙালি রমণী’ বলেই একটু ভিন্ন রকম, ‘পুরুষ’ হলে রচনাটির গুরুত্ব হতো অন্য ধরনের। লেখকের নিকট নাজমা যতটা না স্ত্রী, তার চাইতেও অধিক বন্ধু, কিন্তু 888sport appsের ‘নাজমা’দের ইতিহাস অজস্র প্রতিকূলতায় কণ্টকিত। ব্যক্তিগত 888sport sign up bonusচারণাতেও তাই চৌধুরী সেই পটভূমি ভোলেন না। নাজমার বেদনা সঞ্চারিত হতে থাকে পাঠকের মধ্যে—যেমনটি সঞ্চারিত হয় বিদ্যাসাগরের প্রভাবতী হতে।
অথবা আমাদের বাসন্তী দিদি – শহীদ জ্যোতির্ময় গুহ ঠাকুরতার স্ত্রী। এতেও শুনতে পাই ব্যক্তির আশ্রয়ে সামাজিকতার কাহিনী। ‘নাজমা’র সঙ্গে বাড়তি যুক্ত হয় বাসন্তী দিদির 888sport free betলঘুত্বের বোধ উৎসারিত বেদনা। গেন্ডারিয়ার কাঠের পুল পেরিয়ে এসে এক সময়ে বাসন্তী নিজে শিক্ষিত হন, শিক্ষাকে ছড়িয়ে দেন সমাজে। আর, তাঁর অসাধারণ জ্যোতির্ময় স্বামীর সঙ্গে একটি স্বপ্নময় জীবনের অংশীদারী হন। আমাদের ইতিহাস নির্মম ও হিংস্র। এর প্রতিটি মিলনদৃশ্যের অব্যবহিত পরেই অপেক্ষা করে থাকে একটি করুণ বিয়োগের কাহিনী। বাসন্তীর স্বামী জ্যোতির্ময়ের আত্মত্যাগের কাহিনী যেমন 888sport apps ও বাঙালি জাতির অর্জনের ইতিহাসের উপাদান, তেমনি বাসন্তীও ‘আমাদের সকলের’ মানুষ হয়ে ওঠেন। সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর ভাষা ও শৈলীর গুণে পরিচিত এইসব মানুষজন হয়ে যান ইতিহাসের মানুষজন। আমরা চমকে উঠি, তাই তো একে তো চিনতাম, কিন্তু এভাবে জানতাম না তো! পিতা, স্ত্রী, কিংবা বাসন্তী দিদি এঁরা ছিলেন সর্বদাই; রয়েছেন, থাকবেন- বাস্তবে একদিন না থাকলেও চৌধুরীর রচনায় থেকে যাবেন। যে রকম পোলিশ গ্রাম ও সেখানকার ইহুদি মানুষেরা ভূমি থেকে উৎখাত হয়ে আজও রয়ে গেছেন শোলোম আলাইখেম কিংবা সিঙ্গারের রচনায়। একই সঙ্গে সংযুক্তি ও নৈর্ব্যক্তিকতার এমন দৃষ্টিক্ষেপ দুর্লভ। সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর এ- ধারার 888sport liveগুলো বাংলা 888sport live-888sport live footballে নতুন মাত্রা এনেছে। প্রসঙ্গত আনিসুজ্জামানের শাওনের সঙ্গে সংলাপ, মুষিক বিষয়ক সংবাদ কিংবা রাজভিষগগণের ব্যবস্থাপত্র প্রভৃতি 888sport liveের কথা বলা যায়। এসব 888sport live প্রচলিত 888sport live রচনার রীতি- বিরোধী। এতে থাকে নকশার ঢং ও ব্যঙ্গের ঝাঝা। আনিসুজ্জামানের 888sport live যেখানে ব্যঙ্গ প্রধান, চৌধুরীর 888sport live সেখানে ব্যক্তিগত 888sport sign up bonusচারণার বাণীভঙ্গিনির্ভর।..
সমাজবিশ্লেষণ সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর 888sport liveে বক্তব্য প্রকাশের মূল হাতিয়ার। তাঁর বিশ্বাস, সামাজিক কার্যকারণ ব্যতিরেকে ইতিহাসের ব্যাখ্যা সম্ভব নয়। সে 888sport alternative link-সৃষ্টির পটভূমিই হোক কিংবা হোক ঔপনিবেশিক পরিপ্রেক্ষিতে মানবতাবাদ আন্তর্জাতিকতাবাদের প্রচার। 888sport live football-888sport live chat-সঙ্গীত কোনো কিছুই নিরেট সুন্দরের বাহন নয় এবং সুন্দরও নয় কোনো বিমূর্ত বিষয়। চৌধুরীর মতে, সুন্দরের ব্যাখ্যাও হতে পারে সমাজনিরপেক্ষ ‘সামাজিক কার্যকারণ বুঝলে সুন্দরের রূপ ও রস শুকিয়ে যায় না, বর’ বৃদ্ধি পায়, গাঢ় হয়।’ (888sport alternative linkের আকাঙ্ক্ষা) পুঁজিবাদের প্রসারের প্রেক্ষাপটে ব্যক্তির বিকাশের মধ্যে 888sport alternative linkের জন্মের ঘটনাকে 888sport liveকার প্রত্যক্ষ করেন দূরদৃষ্টি দিয়ে। যেজন্যে বলতে পারেন, 888sport alternative link যে-অর্থে পুঁজিবাদের অবদান, ঠিক সেই অর্থেই পুঁজিবাদ বিরোধী। কেননা, 888sport alternative link আসলে ‘মানুষের পূর্ণতা’-সন্ধানী, পঙ্গু বা অসম্পূর্ণ মানুষে সে তৃপ্ত নয়। 888sport alternative link-সম্পর্কিত সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর সমাজবীক্ষা স্পেন-ইংল্যান্ড- রাশিয়া-ভারত পর্যটন করে সেই সত্যের সন্ধানে যে ‘888sport alternative link হচ্ছে আধুনিক যুগের মহাকাব্য’। এখন কথা উঠতে পারে আধুনিকতার শুরু নিয়ে। কেউ বলতে পারেন ১৪৫৩ খ্রিস্টাব্দে তুর্কিদের হাতে কনস্টান্টিনোপাল পতনের মধ্যে আধুনিকতার সূত্রপাত, কেউ বলতে পারেন ১৪৯২-এ আমেরিকা আবিষ্কার আধুনিকতার সূচক। ১৫৪৩- এ কোপার্নিকাস-এর রিভল্যুশন্স অব দ্য স্ফিয়ারসের প্রকাশ কী আধুনিকতার উদগাতা ? হয়ত এর সবগুলোই এক এক ভাবে সত্য কিন্তু আরো বড় সত্য হচ্ছে ১৬০৫-এ দোন কিহোতে যখন তাঁর গ্রাম ছেড়ে অন্য এক পৃথিবীর দিকে যাত্ৰা শুরু করলেন তখন শুরু হলো এক সম্পূর্ণ নতুন যুগ- আধুনিকতার যুগ। (কার্লোস ফুয়েন্তেস, মাইসেল্ফ উইথ আদারস) 888sport alternative link আধুনিক যুগের মহাকাব্য, কিংবা মহাকাব্যের ভগ্ন থেকে 888sport alternative linkের উত্থান যা-ই বলি না কেন এর ভাষা ও ভঙ্গি এর নিজস্ব জগতে যে-মানুষজনকে গড়ে তুলল তারা সমাজের দ্বন্দ্ব-সংকট-সম্পর্কের প্রভূত জটিলতাসহ উপস্থিত হলো। বস্তুত 888sport alternative linkের বিস্তৃতির মধ্যে সমাজের বিবর্তনের একটি চমৎকার ছবি পরিদৃষ্ট হয়। ইয়ান ওয়াট-এর দ্য রাইজ অব দ্য নভেল গ্রন্থে একটি কৌতূহল উদ্দীপক তথ্য সন্নিবেশিত হয়েছে।
১৭০০ থেকে ১৭৪০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ইংল্যান্ডে বছরে গড়ে প্রকাশিত 888sport alternative linkের 888sport free bet ৭; ১৭৪০ থেকে ৩ দশক ধরে বছরে গড়ে ২০টি এবং ১৭৭০ থেকে ১৮০০ পর্যন্ত বছরে গড়ে ৪০টি করে। এতেই বোঝা যায় কনস্টান্টিনোপাল, মার্কিন মহাদেশ বা কোপার্নিকাস ইত্যাদিকে ছাড়িয়ে সমষ্টিবদ্ধ মানুষের কাহিনীর উপজীব্যতায় একমাত্র 888sport alternative linkই পারে বহুদূর চলে যেতে। গেছেও। তাই সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর 888sport alternative link-সম্পর্কিত বিশ্লেষণ ‘তার নায়ক- নায়িকা রাজা-বাদশাহ নয়, সাধারণ মানুষ। আর ওই যে তার আকাঙ্ক্ষা মিলিত হবার সেখানে সে সমাজতান্ত্রিক।’ 888sport alternative linkের সম্ভাবনাকে এবং আধুনিকতার সূত্রপাতের পর থেকে আরো দীর্ঘকাল বহু ব্যবহৃতির পরেও সমাজ-সংগঠনে এর বৈপ্লবিক ভূমিকার দিকটাকেই শনাক্ত করে।
এতক্ষণ ধরে যে বাগবিস্তার ঘটল তাতে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর নন্দনতত্ত্ব সম্পর্কে খানিকটা ধারণা হয়েছে আশা করি। ঐতিহাসিক ও আর্থসামাজিক-রাজনৈতিক বিবেচনা তাঁর নন্দনতত্ত্বের প্রাণপঙ্ক। 888sport sign up bonusকথার মতো ব্যক্তিগত রচনার দৃষ্টান্ত উত্থাপিত হয়েছে ইতোপূর্বে। ভারতবর্ষ কিংবা 888sport appsের 888sport live football-সমাজ- সংস্কৃতি-রাজনীতি-ইতিহাস-দর্শন প্রভৃতিনির্ভর রচনায় তা প্রত্যক্ষ। 888sport liveকারের ব্যক্তিগত রাজনৈতিক বিশ্বাস বা দর্শনের বিষয়টিও আড়ালে থাকে না। বিদ্যাসাগর, বেগম রোকেয়া, ইলা মিত্র কিংবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কিত ব্যক্তিত্বনির্ভর 888sport liveগুলোতেও দেখি তাঁর বিশ্লেষণ রাষ্ট্রীয় সামাজিক প্রেক্ষাপটকে বাদ দিয়ে নয়। বিদ্যাসাগরের শ্রেষ্ঠ অবদান তাঁর গদ্যের প্রসঙ্গে তিনি বলেন-তাঁর ‘গদ্য ছিল রাষ্ট্রবিরোধী’- বিদ্যাসাগরের গদ্য সম্পর্কে এটি একটি আপাত সাদামাটা বাক্য কিন্তু এতে নিহিত বৃহত্তর সত্যস্বরূপ। বিদ্যাসাগরের ইহজাগতিকতা, সাম্প্রদায়িকতাবিরোধিতা, সামন্তবাদবিরোধিতা এবং বাঙালি জাতিত্বের প্রতি বিশ্বস্ততার অঙ্গীকারের স্বরূপটি উন্মোচিত হয় চৌধুরীর অনবদ্য ভাষা- বিশ্লেষণে। আমরা লক্ষ করি বিদ্যাসাগরের চিন্তা ও কর্মের সূত্রে খুলে গেল এক মুক্তচিন্তার অর্গল। যদিও সেই সময়ে মুক্তচিন্তার ধারণাটি জাতীয়তাবাদের অনুপস্থিতিতে, ঔপনিবেশিকতার পরিপ্রেক্ষিতে তত অর্থবহ ও সুস্পষ্ট রূপ পায়নি। জেবি বিউরির এ হিস্ট্রি অব ফ্রিডম অব থট গ্রন্থের এপিলগে এইচ জে ব্ল্যাকহ্যাম বলেছিলেন মুক্তচিন্তার সঙ্গে সমাজে এর গ্রহণযোগ্যতা থাকা চাই। মুক্তচিন্তাকে ভাগাভাগি করে নিতে হবে একসঙ্গে অনেককে এবং একে অন্যের অভিজ্ঞতার আলোকে আলোকিত হবে। বিদ্যাসাগরের সমকালে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বিশ্লেষিত এতগুলি বৈশিষ্ট্যের আকর এক বিদ্রোহী সত্তা সে-কারণেই জ্বলজ্বল করে দ্বীপ-নিঃসঙ্গতায়।
বেগম রোকেয়া, ইলা মিত্র কিংবা শেখ মুজিবুর সম্পর্কেও একই কথা খাটে। ‘রোকেয়ার করতালি পাওয়া না পাওয়ায় পাই রোকেয়ার অমসৃণ যাত্রাপথের বিবরণ। সংস্কৃতির জগৎ থেকে বাংলাকে উদ্ধার যেমন বিদ্যাসাগরের সংগ্রাম ছিল তেমনি রোকেয়ার ছিল উর্দু থেকে বাংলাকে উদ্ধারের। আশ্চর্য, ইংরেজিতে পারদর্শী হয়েও রোকেয়া ইংরেজ পক্ষাবলম্বন করেন না। এখানেই রোকেয়ার স্বাজাত্যবোধ ও 888sport live chatীসত্তার দার্ঢ্য। 888sport live chatী রোকেয়ার সৃজনশীল জগতের সূত্রে 888sport liveকার তাঁর মৌলিকতার অনুসন্ধান করেছেন। ইলা মিত্রও ছিলেন আরেক বেগম রোকেয়া। শিক্ষাবিস্তারের মাধ্যমে দরিদ্র-নিরক্ষর মানুষকে শিক্ষিত করে তুলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি হননি বেগম রোকেয়া, হয়েছেন ইলা মিত্র, আর কে না জানে ইলা মিত্র মানে প্রতিরোধ এবং লড়াই–
‘আমাদের ইতিহাসে আত্মসমর্পণ আছে, আর আছে প্রতিরোধ। আত্মসমর্পণের ইতিহাসটাকেই গৌরবের বলে প্রচার করা হয়। প্রতিরোধের ইতিহাসটা হারিয়ে যায় অন্ধকারে। ইলা মিত্র একা নন, আরো অনেকে ছিলেন, এখনও আছেন। তাঁদের ইতিহাসটাই আসলে আলোর, যদিও কাজ করেছেন তাঁরা অন্ধকারে। অন্ধকারের বিরুদ্ধেই লড়াই তাঁদের। ভাই চম্পার, বোন পারুলের। জীবন ও মৃত্যুর, আলো ও অন্ধকারের এই দ্বন্দ্ব চলেছে, চলবে। এখানে আপোসের কোনো জায়গা নেই। আসলেই।’ (ইলা মিত্র, পৃষ্ঠা-১০৩)
888sport liveটি মালেকা বেগমের ইলা মিত্র সম্পর্কিত গ্রন্থের সমালোচনাসূত্রে রচিত হলেও এটি স্বল্পায়ত অপিচ একটি সারবত্তাপূর্ণ 888sport live। সাধারণ গৃহবধূ থেকে ইলা মিত্রের সংগ্রামী কৃষক-নেত্রীতে রূপান্তর বাঙালি 888sport promo codeর প্রচলিত অবলা -স্বরূপের ধারণাকে যেমন বদলে দেয় তেমনি মেহনতি মানুষের সংগ্রামেও যোগ করে অমল মহিমা। গ্রন্থসূত্রে রচিত এরকম 888sport live আরো আছে এ-গ্রন্থে।
বেগম রোকেয়া ও ইলা মিত্রের মতন বাঙালির ইতিহাসে আরেক সংগ্রামমুখর ব্যক্তিত্ব শেখ মুজিবুর রহমান বাঙ্ময় হয়ে ওঠেন সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর লেখনীতে। শেখ মুজিবকে নিয়ে 888sport live রচনা এমনিতে ঝুঁকিপূর্ণ। তাঁর সুপরিসর রাজনৈতিক জীবন, ইতিহাসের ওঠানামায় তার অবস্থান, 888sport appsের মুক্তিসংগ্রাম ও স্বাধীনতালাভ এবং তাঁর ট্র্যাজিক হত্যাকাণ্ড সবটা বৃত্তান্ত মাত্র সাড়ে পাঁচ পৃষ্ঠার রচনায় ধরা আরো কষ্টের কাজ। ‘মহাকাব্যের নায়ক’ ব্যক্তি বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক চরিত্র বিশ্লেষণে এবং তাঁর দলের স্বরূপ উন্মোচনে 888sport liveকার ইতিহাসের প্রতি বিশ্বস্ত থাকেন। তাঁর শ্রেণি দৃষ্টিকোণ থেকে বাংলার ইতিহাসে বঙ্গবন্ধুর সঠিক অবস্থানটি চিহ্নিত হয়েছে—
‘শেখ মুজিবের মতো সাহস আর কারো মধ্যে দেখা যায়নি।…তিনি দাঁড়িয়েছিলেন একটি পরিচিত দুর্বৃত্তের বিরুদ্ধে, রাষ্ট্রের বিপক্ষে। …… তার সাহস জনগণের আকাঙ্ক্ষাকে মূর্ত করার জাতীয়তাবাদী সাহস।’ (শেখ মুজিবের অঙ্গীকার, পৃষ্ঠা: ২৪১
বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডে 888sport appsের গৌরবময় করে ইতিহাস প্রবেশ এক কাপুরুষোচিত উপাখ্যানের বৃত্তে। এতে সংগ্রাম ও ত্যাগের গর্বে গর্বিত জাতির প্রভূত দেউলিয়াত্বই প্রকাশ পায়। এই দেউলেপনার বৃত্ত ব্যাসে-ব্যাসার্ধে-পরিধিতে বেড়েছে বৈ কমেনি। অথচ স্বাধীন বাঙালি জাতির সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনায় উকি দিয়েছিল স্বাধীনতা, সহিষ্ণুতা, সমান অধিকার ও সমাজতন্ত্রের—বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে এ সমস্ত কিছুর কবর রচিত হয়। যদিও এটা সত্য, লেখকের সঙ্গে দ্বিমতের অবকাশ নেই, ‘মহাকাব্যের এই নায়কের মৃত্যু নেই।’ কিন্তু তাঁর মৃত্যুর পর বাঙালি জাতির যে পর্বে-পর্বে বিবিধ মৃত্যু ঘটছে সেই মৃত্যুর গতি ঠেকাবে কে!
কে তা আমাদের অজানা কিন্তু 888sport liveটির শেষে জনগণের দ্বারা সাধিত ‘গণতান্ত্রিক সমাজ ও সংস্কৃতি গড়ে উঠবার যে-প্রত্যাশা ব্যক্ত হয় তা অমূলক বা ভিত্তিহীন নয়। বলাবাহুল্য সেটা গড়ে ওঠেনি এখনও কবে গড়ে উঠবে বলা মুশকিল। অথচ ইতিহাসের গতি অনুসরণ করলে দেখা যাবে, সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীও আমাদের দেখান যে সমাজের মধ্যে নিত্য ক্রিয়মাণ দ্বন্দ্বের ভেতর দিয়েই সাধিত হয় সামাজিক বিপ্লব। সেটা এমন যে একে ঠেকিয়ে রাখা যায় না। ‘অ্যারিস্টটল কি ভ্রান্ত ছিলেন’, ‘রাক্ষসদের রাজ্য শাসন’, ‘লিঙ্কনের বিষণ্ণ মুখ’, *উদারনীতির অভদ্রতা’, ‘888sport apkের সামাজিকতা’, ‘দার্শনিক দারিদ্র’ প্রভৃতি 888sport liveে ‘গণতান্ত্রিক সমাজ ও সংস্কৃতি’ ধারণাটার একটা তাত্ত্বিক ভিত্তি পাওয়া যেতে পারে।
সোয়া দুই হাজার বছর আগে গ্রিক পণ্ডিত দার্শনিক অ্যারিস্টটল রাষ্ট্র ও সমাজের চরিত্র বিশ্লেষণ করেছিলেন। তাঁর সময়ে গ্রিসের সাংস্কৃতিক পরিচয় ছিল ঈর্ষণীয় কিন্তু জনগণের সংস্কৃতি এবং রাষ্ট্রের সংস্কৃতি ছিল পৃথক। অ্যারিস্টটল জনগণ শোষণমুক্ত সমাজ চায়, সাম্য চায়। তত্ত্বীয় দিক থেকে তা সমাজতান্ত্রিক মতবাদ নয় হয়ত কেননা তা পুঁজির সর্বগ্রাসী বিকাশের বহুকাল পূর্বের ঘটনা। অ্যারিস্টটল অঙ্কিত রাষ্ট্র-সমাজের স্বরূপ থেকে দেখা যায় সেখানে জনসংস্কৃতির সঙ্গে রাষ্ট্রীয় আচরণ বিরোধপূর্ণ। পুঁজিবাদের বিকাশে সেই বিরোধ বেড়েছে। অ্যারিস্টটল বর্ণিত উচ্চ, মধ্য, নিম্নশ্রেণি আরো স্পষ্টবিভাজিত হয়েছে এবং একে অন্যের কাছ থেকে বহু দূরে ছিটকে পড়েছে। আর এর মাঝখানে ঢুকে পড়েছে আরো নানারকম শ্রেণিবিভেদ। রাক্ষসদের রাজ্য শাসন’-এ সমাজবাস্তবতার ভিন্ন মাত্রা পাই সমাজে 888sport promo codeর অবস্থার বিশ্লেষণে। রামায়ণ থেকে শুরু করে মার্লো, শেক্সপিয়র, বঙ্কিম সর্বত্র এক উদ্ধত পুরুষাচারের রাজ্য। রাষ্ট্রের ভেতরে রাষ্ট্রের শাসনের মতো যুক্ত হয় আরেক শাসন-888sport promo codeশাসন। এ-888sport live পাঠে দেখতে পাবো পৃথিবীর দেশে-দেশে সভ্যতা যতই উন্নত হয়েছে বলে দাবি করা হোক না কেন 888sport promo codeর অবস্থান সেখানে খুব বৈপ্লবিকভাবে বদলায়নি। ‘লিঙ্কনের বিষণ্ণ মুখ’-এ গৃহযুদ্ধের পটভূমিতে আব্রাহাম লিঙ্কনের গণতন্ত্রের আকাঙ্ক্ষা বেশিদিন আগেকার কথা নয়-১৮৬৩ সালের। সেই দেশে গণতন্ত্রের হাল আমরা মর্মে মর্মে উপলব্ধি করছি নানারকমের যুদ্ধ, কোল্ডওয়ার পরবর্তী সোভিয়েত সাম্রাজ্যের পতন ও সমাজতন্ত্রের বিপর্যয়, মধ্যপ্রাচ্যের সংকটগ্রস্ততা প্রভৃতি বৈশ্বিক বাস্তবতায়; সর্বোপরি মার্কিন দেশের অভ্যন্তরীণ নানা সমস্যায়। সাদা-কালো, সাদা আরো সাদা, পুরুষ-888sport promo code, জন্মনিয়ন্ত্রণবাদী নিয়ন্ত্রণবিরোধী ইত্যাদি বিচিত্র বিভাজনে। লিঙ্কনের গণতন্ত্র-কামনা আজও খোদ আমেরিকাতেই উপহাসের মতন শোনায়। 888sport appsের মতো দরিদ্র-সমস্যাপীড়িত রাষ্ট্রে ‘গণতান্ত্রিক সমাজ ও সংস্কৃতি’র বাস্তবতা কি হতে পারে সেটি কেবল কল্পনাই করা সম্ভব—একই সঙ্গে তা অকল্পনীয়ও বটে। 888sport promo codeর অবস্থান আরো পরের বিষয়।
888sport apps তৎসন্নিহিত মানচিত্রের ঐতিহাসিক-সামাজিক-রাজনৈতিক স্বরূপ বিশ্লেষিত হয়েছে ‘উপর কাঠামোর ভেতরেই’, ‘যে-রোগের নাম আল-বদর’, ‘রাষ্ট্রের মুখচ্ছবি’, ‘বাইরে বুর্জোয়া ভেতরে সামন্ত’, ‘দ্বিজাতিতত্ত্বের সত্য-মিথ্যা’ প্রভৃতি 888sport liveে। 888sport liveগুলোর সম্মিলিত যোগফল এক আশাভঙ্গের কাহিনী ও জাতিগত ধরনের অধঃপতনের ছবি। অথচ বাঙালি জাতির রাষ্ট্রীয় ঊষালগ্ন থেকে বিদ্যমান ছিল একটি সম্পন্ন জাতিগত চেতনার কামাতা। এদেশের একজন বুদ্ধিজীবী-লেখকের ভাষায়-
‘… ১৯৫২ সাল থেকে আমাদের সংগ্রাম বাঙালি হবার। ১৯৭১-এ বাঙালি মানেই পাকিস্তানিদের চোখে অপরাধী। ১৯৭২-এ সেই বাঙালি হবার গৌরব অর্জন করি আমরা অর্জনের পর বিসর্জন। এখন কেউ কেউ বলছেন, আমরা বাঙালি নই, বাঙালি হতে চাই না।
এই যে একে একে মিলনের ভিত্তিভূমি আমরা বিনষ্ট করে ফেললাম, এর পরিণাম কী?” (আনিসুজ্জামান, সকলের এবং কতিপয়ের’, মুক্তিযুদ্ধ এবং তারপর, পৃষ্ঠা : ৬৮)।
পরিণাম যে ভয়ঙ্কর তা সন্দেহাতীত। বাইরের কাঠামোর ভেতরে অন্তঃসারশূন্যতা। রাষ্ট্র-সমাজের সমস্ত আয়োজনে কেবলই জনতার ভোগান্তির কাহিনী। ১৯৫২ থেকে ১৯৭১ যে-সংগ্রাম অনিবার্য করে তুলেছিল একটি জাতিগত রাষ্ট্রের ভূমিকা মাত্র তিন দশকের মধ্যেই তার ভিত্তি এমন নড়বড়ে হয়ে যাওয়ার কারণ কী! ১৯৭৪ সালে রচিত 888sport liveেই ভবিষ্যৎদ্রষ্টা সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর চোখে সে- রোগ ধরা পড়েছিল—
*এরা এখন পালিয়েছে। আপাতত। কিন্তু যে- রোগের নাম আল-বদর সেটা এত সহজে শেষ হবে মনে করলে আমরা মস্ত বড় ভুল করবো। রোগটা শক্ত, তার বয়স অনেক, তদুপরি তার চিকিৎসা হয়নি। কাজেই তাকে মৃত মনে হলেও সে আসলে মরেনি, লুকিয়ে আছে, যদি সুযোগ পায় আবার সে আক্রমণ করবে 888sport appsের বিবেককে, তার বুঝবার শক্তিকে, দেখবার দৃষ্টিকে, অনুভব করবার ক্ষমতাকে।’
(যে-রোগের নাম আল-বদর, পৃষ্ঠা: ১৯১)
রোগ এটা মারাত্মক এবং রোগ আরো উদ্ভূত হয়। গণতান্ত্রিক সমাজ ও সংস্কৃতির অনুপস্থিতিতে এই বাস্তবতা অপ্রত্যাশিত হলেও অবিশ্বাস্য নয়। পাকিস্তান তো বটেই এমন যে গণতন্ত্র ও জাতীয় বুর্জোয়া’র শক্তিতে সমৃদ্ধ ভারত সেখানেও প্রকৃতপক্ষে সংকটের আবর্ত চলছে। বাইরে বুর্জোয়া ভেতরে সামন্ত’ 888sport liveে (এটি তাহমিনা দূররানী’র মাই ফিউডাল লর্ড গ্রন্থসূত্রে রচিত) তাহমিনার অবস্থান থেকে স্বৈরাচারী পাকিস্তানের আমলা-সামরিক স্বৈরাচার-সামন্তপ্রভু শাসিত পাওয়ার পলিটিক্স, অভ্যুত্থান এসব চালচিত্র আসে এবং 888sport live পড়ে এ উপলব্ধি জাগে যে আসলেই ‘জন’ বলে পাকিস্তানে কিছু আছে কি! থাকলে সেটা কীরকম— পঞ্চাশাধিক বছরেও তা একটি মানবিক সম্পর্কপ্রধান রাষ্ট্রের নির্মাণ সম্ভব করতে পারল না।
শেক্সপিয়রের কিং লিয়র নাটকে উচ্চারিত হয়েছিল এক বৃহৎ সত্য “No, no, no, no Come, let’s away to prison!” জঁ জেনে, থিওডোর অ্যাডোর্নো, ওয়ালটার বেনজামিন, গাড স্টাইন, এঁদের বহু রচনায় রাষ্ট্রের ভিন্ন এক মাত্রা উন্মোচিত হয় জেলখানার আয়তনের মধ্যে। এক অবদমিত জীবনের কাহিনী এসব রচনায় লিপিবদ্ধ হয়ে আছে। নকশালবাড়ি আন্দোলনের নেতা অমলেন্দু সেনের বিদেশী স্ত্রী মেরী টাইলার রচিত মাই ডেজ ইন ইন্ডিয়ান প্রিজন গ্রন্থপাঠের অভিজ্ঞতা ‘রাষ্ট্রের মুখচ্ছবি’ 888sport live-
“ভারতে গণতন্ত্র আছে বলে লোকপ্রসিদ্ধি রয়েছে, কিন্তু সেই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের আসল চেহারাটা কি তা ধরা পড়ে তার জেলখানাতেই। এটা সব রাষ্ট্র সম্পর্কেই সত্য। কারাগার হচ্ছে রাষ্ট্রের দর্পণ। সর্বাধিক নির্ভরযোগ্য। রাষ্ট্রকে চিনতে হলে তার জেলখানায় যাও, এ খুবই খাঁটি পরামর্শ। (পৃষ্ঠা: ২১৬) সন্দেহ কী সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর 888sport liveসমূহে এই উপমহাদেশের সামগ্রিক যে-রূপ উৎকীর্ণ তা তা আসলে কারাসংলগ্ন। অর্থাৎ সেখানকার মানুষ ছোট-আবদ্ধ এবং বৃহৎ-উন্মুক্ত এই দুই ধরনের কারাগারের বাসিন্দা।
পার্থক্য এটুকুই। কারাগারের শৃঙ্খল দৃশ্যমান। 888sport apkচেতনা কোশলের অ-কারাগারের শৃঙ্খল অদৃশ্য অথচ উপস্থিতিসম্পন্ন। ‘অবনতের আত্মোন্নতি’, ‘বেকনের মৌমাছিরা, ‘লোকসংস্কৃতির ভদ্র চর্চা’, ‘অন্তঃপুরচারিণী প্রতিহিংসা, ‘উদারনীতির অভদ্রতা’, ‘888sport apkের সামাজিকতা’ ‘দার্শনিক দারিদ্র্য’ 888sport liveগুলো পাঠ করলে 888sport apps নামক আজাবের ব্যক্তিক- সামাজিক-রাষ্ট্রিক অবস্থার একটা ছাইরঙা ছবি ভেসে ওঠে। গলদ ছিল আসলে গোড়াতেই-ব্রিটিশ শাসনামলে। ব্রিটিশ শিক্ষাব্যবস্থা যে-মধ্যবিত্তের জন্ম দেয় তার দর্শন ছিল নত হওয়া ও কুরনিশ করার ( কবি রফিক আজাদের পঙক্তি ধার করে) দর্শন। তাই উক্ত 888sport liveে দেখি এক বিপুল মধ্যবিত্ত শ্রেণিসমাজের সর্বত্র কেবল নত হওয়ার চর্চা করছে। সেখানে সাধারণ শিক্ষিত মধ্যবিত্ত থেকে শুরু করে উচ্চশিক্ষার পবিত্র পীঠস্থানের কর্ণধার একই রকমের আচরণে অভ্যস্ত। এমনকি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ব্যাঘ্রসুলভ উপাচার্যও এই অনাকাঙ্ক্ষিত আনুগত্য তথা অবনতির দায়মুক্ত থাকতে পারেন না। ব্রিটিশ প্রচলিত শিক্ষায় মধ্যবিত্ত শ্রেণির গণবিচ্ছিন্নতার মূল্যেই পরবর্তীতে উপমহাদেশে পরজীবী, নাক উঁচু, আত্মম্ভরী, পাতিবুর্জোয়া, আধা সামন্তবাদী আমলা শ্রেণির উদ্ভব-বিকাশ।
এরকম সমাজে অভদ্রতার সংস্কৃতিরই রাজত্ব। একদিকে বিপুল মানুষের অপরিমেয় ক্রমঃদুর্গতি, অন্যদিকে একটি মুষ্টিমেয় শ্রেণির ফুলে-ফেঁপে ওঠা। এমন অমানবিক রাষ্ট্রে সমাজে যে উদারনীতি চলতে পারে না, চলা উচিত নয় তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। কেননা, উদারনীতি শ্রেণিকে মেনে নেয়, উৎখাত করে না। যেখানে সবকিছু শ্রেণিবিভাজিত এবং শোষণ প্রক্রিয়ায় রাষ্ট্রের সম্পদ লুণ্ঠিত হয়ে স্তূপীকৃত হতে থাকে এমন এক কোণে যেটি সম্পূর্ণরূপে শ্রম- উৎপাদনের স্পর্শশূন্য। ফলে, বুর্জোয়া বিকাশের পথও বন্ধ হয়ে যায়। পৃথিবীর ইতিহাসে আছে, এক সময়ে রেনেসাঁর যুগে ফ্লোরেন্সে 888sport live chatসংরক্ষণে প্রচুর অর্থ ব্যয় করতেন রাজনৈতিক ক্ষমতার নিয়ন্ত্রক ধনবান লোকেরা। এদেশের ধনবান ভোগ ছাড়া অন্য কোনো বোধের সঙ্গে পরিচিত নয়। 888sport apk এখানে অসামাজিক, দর্শন জীবনবিচ্ছিন্ন। 888sport apkের শিক্ষক হন অদৃষ্টবাদ, কুসংস্কার ও ধর্মীয় গোঁড়ামির দাসত্বে বন্দি। দর্শনের লেখাপড়া আছে যথেষ্ট, নেই প্রকৃত দার্শনিকতা যা সমাজ-রাষ্ট্রকে দেবে মুক্তির সন্ধান।
“888sport apkের সামাজিকতা’ 888sport liveে এদেশে 888sport apkের জনকল্যাণকর দিকটির শূন্যতা চিহ্নিত হয়েছে। 888sport apk এখানে বন্দি, কিন্তু সামাজিক মুক্তির জন্যে 888sport apkেরও মুক্তি আবশ্যক। আসলে 888sport apk মানে এ দেশে বর্তমানে ব্যবসায়ের 888sport apk, দর্শনের 888sport apk নয়। বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতিতে দেশ সয়লাব কিন্তু বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি অনুপস্থিত। এমনও শুনতে পাই আমাদের কোনো কোনো বিদ্যায়তনের 888sport apk-গবেষণাগারে শিক্ষক রাসায়নিক বিক্রিয়ায় দেখান যে হাইড্রোজেন-অক্সিজেনের সমন্বয়ে পানি হয় এবং উপসংহার টানেন এই বলে-‘সৃষ্টিকর্তার কী লীলা, দেখলে?’ ফলে 888sport apk দর্শন না হয়ে অদৃষ্টমুখী হয়েছে। উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন 888sport apk-গ প্রায়োগিক বৃদ্ধি ঘটলেও 888sport apkচেতনা বাড়েনি। আমাদের দেশে অর্থের মালিক যে, 888sport apkেরও মালিক সে। চৌধুরীর 888sport app download for androidীয় মন্তব্য: শ্রেণিবিভক্ত সমাজে 888sport apkের নিরপেক্ষতা অস্ত্রের নিরপেক্ষতা থেকে ভিন্নতর হয় না, হতে পারে না।” (পৃষ্ঠা: ১১২),
পৃথিবীর ইতিহাসেও দেখি, 888sport apkের ওপর কর্তৃত্বের ফলেই ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, স্পেন প্রভৃতি দেশ অপেক্ষাকৃত অনুন্নত ও 888sport apkে পশ্চাৎপদ দেশসমূহকে উপনিবেশিত করতে পেরেছে। এখনও তা-ই চলছে—উন্নত বিশ্ব 888sport apkের কর্তৃত্ব বজায় রেখে নিয়ন্ত্রণ করে চলেছে দরিদ্র বিশ্বকে। সেজন্যেই সামাজিক মুক্তি ও 888sport apkের মুক্তির সমান্তরালতা প্রয়োজনীয়। প্রসঙ্গত উল্টো রকম একটি ঘটনার কথা বলা যায়। মার্ক টোয়েনের ‘এ কনেকটিকাট ইয়াংকি ইন কিং আর্থারস কোর্ট’ 888sport alternative linkের নায়কের 888sport apkমনস্কতা কীভাবে তাকে মৃত্যুর হাত থেকে উদ্ধার করেছিল। সূর্যগ্রহণের তথ্য ও জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে সে তার মৃত্যুদণ্ডের মুহূর্তটিকে প্রার্থনা করে সূর্যগ্রহণের ক্ষণে। জল্লাদ তাকে মারতে উদ্যত হলে সে রাজাকে জানায়, তাকে হত্যা করা হলে সে পৃথিবীকে ঢেকে দেবে অন্ধকারে, কেননা, তার আদেশে সূর্যের আলো যাবে নিভে। সূর্য গ্রাসিত হয় নিজের নিয়মেই। কিন্তু নায়ক বেঁচে যায় মৃত্যুর হাত থেকে। এটি হয়ত বানোয়াট গল্পই। কিন্তু এতে সাধারণ মানুষের জীবনে সামান্য 888sport apkমনস্কতারও বিরাট ইতিবাচক প্রভাবের দিকটিকে লক্ষ্য করা যায়।
যে কারণে 888sport apk সামাজিক হতে পারেনি, সে- কারণেই দর্শন জীবনঘনিষ্ঠ হতে পারেনি 888sport appsে। দর্শনের এ দুরবস্থার কারণ অন্বেষণে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর যুক্তি অভ্রান্ত ও সমাজতাত্ত্বিক—
“যাঁরা দর্শনচর্চা করেন তাঁদের শ্রেণি-চরিত্রই দর্শনে প্রতিফলিত হয়েছে। সেই শ্রেণির আলস্য ও পরিবর্তনভীরুতাই বড় হয়ে ফুটে আছে দর্শনে। আরোহণের বন্ধুর পথে না গিয়ে দর্শন যে চলেছে অবরোহণের মসৃণ পথ ধরে তার প্রধান কারণ বোধ করি শ্রমবিমুখতা; দ্বিতীয় কারণ সব সময়ে উপরমুখো তাকানোর অতি পুরাতন সমাজসমর্থিত অভ্যাস। যুক্তির দারিদ্র্য 888sport appর চেষ্টা হয় কাব্যের পোশাক গায়ে চড়িয়ে।’ (পৃষ্ঠা: ১২২)
জাতির সামগ্রিক দেউলিয়াত্ব সর্বগ্রাসী হয়ে উঠলে দর্শনের মতো অত্যন্ত কঠিন সাধনার বিষয়ও জীবনের কাছ থেকে দূরত্বে সরে যায়। জীবনের যে বড় দাবি ইহজাগতিকতা, একমাত্র সামাজিক সাম্যাবস্থার প্রেক্ষাপটেই তার বিকাশ সম্ভব। এটাও বলতে হয়, দর্শনচর্চা আমাদের দেশে এখনও জীবনের মৌলিক দাবিসমূহের প্রসঙ্গে এষণা- নিয়োজিত হয়নি। দর্শনচর্চার জীবনবিমুখতা কখনও কখনও দেশে বুদ্ধিজীবী শ্রেণির সুবিধাভোগী, বিপ্লববিমুখ ও আগোসকামী চেতনার প্রতিফলক। জীবনের সমগ্রতার দিকে দৃষ্টিক্ষেপের দর্শন ব্যতিরেকে সমাজ-রাষ্ট্র কোনোকিছুর উন্নতিই অকল্পনীয়। তাই 888sport liveকারের অনুসিদ্ধান্তটিকে মেনে উপায় নেই—’দার্শনিক দারিদ্র্য না মুচলে অর্থনৈতিক দারিদ্র্য ঘুচবার নয়।
“সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর 888sport liveের উল্লেখযোগ্য দিক এবং বিষয়বৈচিত্র্য। বিচিত্র সব বিষয়ে তাঁর উৎসাহ এর সে উৎসাহের ভিত্তিটিও মজবুত। প্রাচীন গ্রীস দেশের দার্শনিকদের যেমন একমুখী নয় সিরাজুল বহুদিকে মনোনিবেশ দেখা যেতো তেমনি ইসলাম চৌধুরীও বহু বিষয়ে মনোযোগী। বিষয়বৈচিত্র্য তাঁর শক্তিমত্তার স্বাক্ষর। যখন তিনি। ‘আপনজন’ কিংবা ‘পিছনে ফিরে’র রচয়িতা তখন মনে হয় তিনি কথা888sport live footballিক; আবার ‘নোরা, তুমি যাবে কোথায়’ কিংবা ‘বিদ্যাসাগরের কাক’-এর রচয়িতাকে মনে হয় নিখুঁত 888sport live football-সমালোচক। ‘অবনতের আত্মোন্নতি কিংবা ‘বেকনের মৌমাছিরা’র লেখককে তুলনা করতে পারি সৃজনশীল গবেষকের সঙ্গে। ‘যে-রোগের নাম আল- বদর’ বা ‘দ্বিজাতি তত্ত্বের সত্য-মিথ্যা’র রচয়িতাকে বলতে হয় প্রাজ্ঞ সমাজ888sport apkী। ‘লোকসংস্কৃতির ভদ্র চর্চা’, ‘দেশী সাহেবদের উত্তেজনা’ কিংবা ‘ঋণ এবং জীবনযাপন’-এর লেখক হলেন প্রথাবিরোধী বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গিসম্পন্ন বুদ্ধিজীবী-লেখক।
এইসব বিভিন্নমুখী রশ্মিকে শেষ পর্যন্ত একটি কেন্দ্রবিন্দুতে (ফোকাল পয়েন্ট) ধরা সম্ভব- সে হলো সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর সমাজতন্ত্রে আস্থা। সমাজের বৃহত্তর মানবগোষ্ঠীর মঙ্গলের ভাবনায় চালিত তাঁর দর্শন। ফলে মানবতাকামী, উপনিবেশ ও পুঁজিবাদবিরোধী তাঁর বুদ্ধিজীবী-লেখকসত্তার আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু প্রচলিত অব্যবস্থা। তাঁর ক্ষোভ ও দ্রোহ সেসব স্থানে প্রত্যক্ষ। কোনোরকম ভান- ভনিতার আশ্রয় কিংবা ধরি মাছ না ছুঁই পানি গোত্রের বক্তব্যে তাঁর আস্থা নেই। তাঁর 888sport live কেবল সমালোচনার লক্ষ্যেই সাধিত নয়, এর পশ্চাতে রয়েছে সামাজিক রূপান্তর প্রত্যাশী বুদ্ধিজীবীর কল্যাণকামিতা। তাই তাঁর বক্তব্যে আসে ঋজুতা, ভাষা ও আবেগহীন। তাঁর হয় নির্মেদ কাব্যগুণসম্পন্ন ভাষাও যুক্তির নিরিখ ত্যাগ করে না। খানিকটা উদ্ধৃতি অনুসরণ করা যাক-
‘সামনাসামনি আমি তাঁকে দেখিনি কখনো, এমন কি ছবিতেও নয়। এই বইতে দেখার আগে, তবু এক সময়ে, সেই আমাদের কিশোর বয়সে, পঞ্চাশের দশকের শুরুতে মনে হতো তাঁকে চিনতাম। মুখে মুখে ছিল তাঁর নাম—বিশেষ করে
তরুণদের।
একজন তরুণ—শহীদ সাবের 888sport app download apk লিখেছিলেন তাঁকে নিয়ে, ‘শোকার্ত মায়ের প্রতি’, জেলে বসেই। সেকালে মুখে মুখে ছিল বনলতা সেনের নামও নাটোরের। নাচোল তো কাছেই নাটোরের, ইলা মিত্রও সেন-ই ছিলেন আদিতে, ইলা সেন—তবু দুজন অনেক দূরেরই, পরস্পরের আলো তাঁরা দুজনেই— কিন্তু দুই বিপরীত অন্ধকারে।’ (ইলা মিত্র, পৃষ্ঠা ৯৯)
অথবা,
‘বঙ্কিমচন্দ্রও বাবু ছিলেন, তবু চন্দ্র ছিলেন, সি ছিলেন না, নীরদ সি. চৌধুরীর মতো, কায়মন- বাক্য সমর্পণ করেননি সাহেব-হওয়ার সাধনায়।’ (দেশী সাহেবদের উত্তেজনা, পৃষ্ঠা: ২০৪)
তাঁর উদ্ধৃতিযোগ্য রচনার পরিমাণ যথেষ্ট। তাতে প্রবচনতুল্য মন্তবাও সুপ্রচুর।
এবারে কয়েকটি 888sport liveের অবতারণা করা যাক যেখানে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর ক্ষোভ-দ্রোহ ও প্রথা বিরোধিতাকে অধিকতর স্পষ্টতায় চেনা যায়। তার আগে তাঁর 888sport liveের সঙ্গে আপাত সম্পর্কশূন্য কিন্তু অন্তিমে প্রাসঙ্গিক একটি বিষয়ের উত্থাপনা। সম্প্রতি তাঁর সম্পাদনায় ‘নতুন দিগন্ত’ নামক একটি পত্রিকার আত্মপ্রকাশ ঘটেছে। নিঃসন্দেহে একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা এটি। তাঁর বুদ্ধিজীবিতা ও লেখকসত্তার মুকুটে যুক্ত হলো আরেকটি নতুন পালক। পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন তিনি পূর্বেও কিন্তু বর্তমান পত্রিকায় তাঁর নিজস্বতার ছাপ এরই মধ্যে সুমুদ্রিত দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। ষাটের দশকে আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ সেই সময়কার প্রকাশোন্মুখ তারুণ্যের ভাষাকে প্রকাশ করেছিলেন ‘কণ্ঠস্বর’-এর মাধ্যমে। কিন্তু যে সমাজের নানামাত্রিক ছবি তাঁর 888sport liveরাজিতে মূর্ত হয়ে উঠেছে সেখানে নতুন দিগন্ত’ কতখানি প্রত্যাশিত; বিশেষ করে সেই শ্রেণির কাছে যারা প্রকৃত বুর্জোয়া (বুর্জোয়া আছে নাকি 888sport appsে) মনোভাবাপন্ন। টি এস এলিয়টের ‘ক্রাইটেরিয়ানের’ কথা ধরি। এটি নানাদিক থেকেই ছিল যুগান্তকারী। ১৯২২ সাল থেকে শুরু করে ১৭ বছর ধরে পত্রিকাটি প্রকাশমান ছিল। এর প্রথম 888sport free betয় মুদ্রিত হয় এলিয়টের “ওয়েস্ট ল্যান্ড’। অনেকে এই পত্রিকার প্রকাশকালকে আধুনিকতার সূচনাকাল বলে গণ্য করেন। (মাইকেল এইচ লেভিনসন, பி জিনিয়ালজি অব মডার্নিজম) গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হচ্ছে এলিয়টের পত্রিকাটির সংলগ্নতায় ছিল প্রয়োজনীয় অর্থ, বুদ্ধিজীবিতা এবং একটি সুসংস্কৃত পরিমণ্ডল। ‘নতুন দিগন্ত’ নিরবচ্ছিন্নভাবে অন্তত একটি যুগ প্রকাশিত হতে পারলে বোঝা যাবে যে হ্যাঁ, 888sport appsে বুর্জোয়া শ্রেণির অস্তিত্ব ক্রমশ দৃশ্যমান। তবে দিগন্ত আরো চাই।
‘নতুন দিগন্ত’ পত্রিকার সূত্রে ওপরের কথাগুলো এলো বটে, একটি সুসংগঠিত বুর্জোয়া শ্রেণির বিকাশ 888sport appsের জন্যে জরুরি। যে শ্রেণির পৃষ্ঠপোষকতায় শ্রম ও উৎপাদনের শক্তি হবে বিকশিত। এছাড়া দেশীয় পুঁজি বাইরে স্তূপীকৃত না হয়ে দেশের অভ্যন্তরেই সংযুক্ত হবে উৎপাদন ব্যবস্থার সঙ্গে। শ্রম ও উৎপাদনের সম্পর্কশূন্য পরাশ্রিত চেতনায় বিপ্লব নয় আপোস ভৃত্যমানসিকতার জন্ম হয় যা সামাজিক বিপ্লবকামী বুদ্ধিজীবী সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর কাম্য নয়। পরবর্তীতে আলোচিতব্য 888sport liveসমূহে তারই ছায়াপাত উজ্জ্বল। ‘লোকসংস্কৃতির ভদ্র চর্চা’ এবং দেশী সাহেবদের উত্তেজনা’ 888sport live দুটি যদি হয় উত্তর মেরুকে নিয়ে তবে ‘আরজ আলী মাতুব্বরের জীবন জিজ্ঞাসা’ দক্ষিণ মেরুকে নিয়ে। ‘লোকসংস্কৃতির ভদ্র চর্চা’ 888sport liveে দেখি লোকজীবন যেখানে শ্রমের জয়গানে মুখর, আবার অভাবজর্জরিত, ঋণগ্রস্ততায় অসহায় সেখানে শ্রমের ফলভোগী ভদ্র শ্রেণির লোকসংস্কৃতির চর্চাকে লেখক ‘ভণ্ডামি’ হিসেবেই দেখতে পান। কেননা, এই চর্চার ফলে লোকজীবনের অভাব কাটে না। সে চর্চার শেকড় যদি আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও বিস্তৃতি পায় তবু যাদের জীবনোথিত সংস্কৃতি তাদের নিঃস্বতা দূর হয় না তাদের জীবন পায় না উঠে দাঁড়াবার ভাষা ও গতি। এখানেও এক ধরনের কায়েমি স্বার্থের উপস্থিতি দেখতে পান ‘লোকসংস্কৃতির ভদ্র চর্চা’ যাঁরা করার পক্ষপাতী তাদের অসহ্য লাগলেও একথা শুনতেই হবে-
‘ব্রতচারী নৃত্য নিজ নিজ গৃহে যিনি যত খুশি করুন, কিন্তু আমাদের সবাইকে ডেকে যেন বলবেন না, আসুন নৃত্য করি, কেননা তখন আমাদেরকে বলতেই হবে, মাফ করবেন, আমাদের করবার মতো আরো অনেক জরুরি কাজ আছে বাকি পড়ে। নক্সী কাঁথা তৈরি করবার মতো অখণ্ড অবসর যাঁদের আছে তাঁরা তা করুন, কিন্তু সবাইকে প্ররোচিত করবেন না ওই কাজে, কেননা আমাদের দরকার হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ শীতবস্ত্র, একটি দু’টিতে কুলাবে না।’ (পৃষ্ঠা ১৭১-১৭২)
‘দেশী সাহেবদের উত্তেজনা’ 888sport liveটি সৎসাহস, প্রতিবাদ ও প্রথাবিরোধিতার অসাধারণ প্রকাশ। মূলত নীরদ সি. চৌধুরীর ব্যক্তিত্ব ও সৃষ্টির উপজীব্যতায় 888sport liveটি রচিত। ইংরেজসৃষ্ট মধ্যবিত্ত শ্রেণি স্বদেশ স্বজাতিচ্যুত উল্লম্ফনের আত্মম্ভরিতায় কতটা প্রতিক্রিয়াশীল হতে পারে তারই ব্যক্তিক রূপ নীরদ সি. চৌধুরী। অনুকরণ, আত্ম-নতি ও আত্মবিক্রয়ে আত্মোন্নয়নই যে তাঁর জীবনসর্বস্ব তা সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী নীরদ সি. চৌধুরীর রচনাবলির আশ্রয়ে প্রমাণ করেছেন 888sport liveটিতে। বস্তুত নীরদ চৌধুরীর জ্ঞানের ভারে যে তাঁর জাতিই নয় সমস্ত ভারতবাসীই চাপা পড়েছে সেদিকে তাঁর কোনো ভ্রূক্ষেপ ছিল না। উপনিবেশের বিরুদ্ধে সংগ্রামকারী মানুষের লড়াই-সংগ্রামকেই নয় মানবতার ধারণাটাই ব্যঙ্গের শিকার হয়েছে নীরদ সি. চৌধুরীর চিন্তায়। ১৯৩২ সালে রচিত একটি আত্মসাক্ষাৎকার-এ ই. ই. কামিংস বলেছিলেন, (যা তাঁর দ্য ইনরমাস রুম গ্রন্থের ভূমিকা)
‘When nationalists hate, they hate by merely killing and maiming human beings; when international- ists hate, they hate by categorizing and pigeon-holing human beings.” নীরদ সি চৌধুরী ইন্টারন্যাশনালিস্ট সেজেছিলেন কিন্তু আসলে তিনি “স্থিতাবস্থার সমর্থক’, ‘বিদেশীদের স্তাবক’ এবং ‘পরিবর্তনের বিরোধী। সমস্যা হলো, ইনি একা নন, একটি মানসিকতার প্রতিনিধি, যে মানসিকতা বর্তমানে আমাদের দেশেই যথেষ্ট পত্রেপুষ্পে পল্লবিত হয়ে আছে। এ হিস্ট্রি অব রিডিং গ্রন্থে আলবার্তো ম্যাংগুয়েল লিখেছেন, “দাসদের কাছে লেখাপড়া জানাটা ছিল কেবল দাসত্ব থেকে মুক্তিই নয় বরং অত্যাচারীদের একটি শক্তিশালী হাতিয়ার পুস্তকের (শব্দের পৃথিবীতে) জগতে ঢোকা।’ একই গ্রন্থে তিনি লিখেছেন, ‘শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে স্বৈরাচারী শাসকেরা জানতো যে অশিক্ষিত জনতাকে শাসন করা-ই সবচাইতে সহজ।’ আরজ আলী মাতুব্বর ছিলেন অশিক্ষা এবং কুসংস্কারাচ্ছন্ন সমাজের দাসত্বে বন্দি এবং তাঁর সমকালে (পাকিস্তানি নয়া উপনিবেশকালে) অন্য অনেকের মতন ‘শেষতন্ত্রে’র নাগরিক। কিন্তু জীবন সম্পর্কে জিাসা তাঁকে করেছে উদ্যমী, বিদ্রোহী এবং দার্শনিক। জীবন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা ও কৌতূহল অনেকেরই থাকে কিন্তু আরজ আলী মাতুব্বরের জিজ্ঞাসা মৌলিক এবং অস্তিত্বের ভিত্তিমূল-আলোড়িত। ব্যক্তি মাতুব্বর কীভাবে সমাজ-রাষ্ট্র ধর্ম প্রভৃতির প্রতিপক্ষরূপে উত্থিত হন তারই বিশ্লেষণ এ 888sport live। 888sport appsের গ্রামের মাটিসংলগ্ন মানুষ সকাল- বিকেল লাঙল-জমি-পশুর মানুষ আরজ আলী সম্পূর্ণ অশিক্ষাবস্থা থেকে এক মহান দার্শনিকে পরিণত হন। তাঁর মধ্যে জীবনকে জগৎকে আত্মকে চিরে চিরে বিশ্লেষণের দার্শনিক প্রত্যয় ছিল যেজন্যে তিনি, সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর মতে, ‘অন্ধকার- জীবনরসহীন কাঠামোর সঙ্গে নয়, জনগণের বিরোধী বুদ্ধিজীবী’। তাঁর যোগ প্রতিষ্ঠানের উত্তাপময় জীবনের সঙ্গে। ভূমি থেকে তাঁর উত্থান, কিন্তু দৃষ্টি আরো ওপরে বিস্তীর্ণ পরিধিতে ধাবমান। প্রথাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা, অভ্যাসকে অস্বীকার করা এবং নতুনকে জীবনের গতির সঙ্গে সংযুক্ত করা—এসবের সাধনা করে গেছেন আরজ আলী মাতুব্বর। সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীও এ পক্ষেরই মানুষ। আরজ আলী মাতুব্বর সমাজতন্ত্রের সমর্থক না হলেও সমাজতন্ত্রের জন্যে তাকে প্রয়োজন। গণতন্ত্রের জন্যেও। সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর যেমন, তেমনি আমাদের সকলেরই তাঁকে প্রয়োজন। কেননা, আমাদের সকলেরই ‘আলো চাই এবং ঐক্য চাই’।

Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.