বেলাল চৌধুরীকে নিয়ে দু-চার কথা

(কৃত্তিবাস গোষ্ঠীর কবি শরৎকুমার মুখোপাধ্যায়ের সাক্ষাৎকারভিত্তিক অনুলিখন : সুশীল সাহা)

যথাযোগ্য 888sport app download for androidসভার আয়োজন করেছে এবং করবে। আমরা তখন জোরকদমে কৃত্তিবাস পত্রিকা চালাই। হঠাৎ একদিন আমাদের আড্ডায় হাজির হলো একজন, পূর্ব পাকিস্তান থেকে আসা এক তরুণ – নাম বেলাল চৌধুরী। বেলাল প্রায় নিঃসম্বল অবস্থায় উপস্থিত হয়েছিল। সে এসেছিল পশ্চিমবঙ্গ তথা কৃত্তিবাসের আকর্ষণে। তারপর ক্রমশ সে আমাদের দলে যুক্ত হয়ে যায়। মিশে যায় আমাদের বোহেমিয়ান জীবনের সঙ্গে। কৃত্তিবাস পত্রিকায় ওঁর লেখাও বেরোয়।

সময়টা বিশ শতকের মধ্যপঞ্চাশ। ঘনিষ্ঠতা কেবল আমার সঙ্গেই হয়নি, আমাদের সবার সঙ্গেই হয়েছিল। ১৯৬২ থেকে ১৯৬৭ – এই কটা বছর আমরা এক দুরন্ত আবেগে কলকাতা শাসন করে কাটিয়েছিলাম। সেই সূত্রে যথেষ্ট নেশা এবং নিমতলা শ্মশানে যাওয়া-আসা হয়েছে। বেলাল প্রায় সব সময়েই আমাদের সঙ্গী ছিল এবং আমরা ভুলে যেতাম যে ও হিন্দু নয়। এই সম্পর্ক ছিল জাতপাতের ঊর্ধ্বে  সুমধুর। একবার আমরা চারজন – আমি, সুনীল, ইন্দ্রনাথ মজুমদার ও বেলাল পুজোর ছুটিতে মহুয়া খাওয়ার লোভে ঝাড়গ্রামের দিকে যাই। যেতে যেতে একটা সাঁওতালপল্লি দেখে বাস থেকে নেমে পড়ি। তারপর ঘুরতে ঘুরতে কোনো এক সাঁওতাল বাড়িতে ঢুকে প্রচুর মহুয়া খাই। রাতে কোনো  থাকার জায়গা না থাকায় কাছাকাছি একটা স্কুলের মাঠে গিয়ে শুয়ে পড়ি। সাঁওতালরা বেগুনের তরকারি আর রুটি এনে দেয়। তা-ই খেয়ে অনেক রাত অবধি রবীন্দ্রসংগীত গাইতে গাইতে আমরা ঘুমিয়ে পড়ি। পরদিন সকালে একদল গ্রামের লোক এসে আমাদের ঘিরে ধরে এবং অভিযোগ করে যে, আমরা পাকিস্তান ছত্রীবাহিনীর লোক। সারারাত উৎপাত করেছি, সুতরাং আমাদের থানায় যেতে হবে। অবশেষে আমাদের চারজনকে একজন কনস্টেবল ওখানকার থানায় নিয়ে যায়। সেই থানায় তখন দুর্গাপুজোর শেষে বিজয়া দশমীর উৎসব চলছিল। থানার দারোগা বললেন, এখন আমি পুজো নিয়ে ব্যস্ত আছি। যাদের ধরে এনেছ, তাদের তিনদিন লকআপে রেখে দাও। আমরা তখন তাঁকে সবিনয়ে আমাদের ছেড়ে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করি এবং বলি আমরা আনন্দবাজার পত্রিকার লোক। এসব কথা শুনে তাঁর মন একটু নরম হয়, আমাদের সঙ্গে কথা বলেন। একটু খাতিরও করেন। আমরা অবশ্য মিথ্যা বলিনি। সুনীলের সঙ্গে তখন আনন্দবাজারের যোগাযোগ ছিল। যা হোক, তিনি আমাদের ছেড়ে দিতে রাজি হন এবং বলেন আমরা যেন পুকুরে স্নান করে এসে ঠাকুরের ভোগ খাই। আমাদের পরনে ছিল পাজামা এবং পাঞ্জাবি। আমি বেলালকে স্নান করতে নিষেধ করি। তারপর – চারজনে খিচুড়ি ভোগ খেয়ে বাসস্ট্যান্ডের দিকে রওনা হই। দারোগাবাবু আমাদের এগিয়ে দিতে বাসস্ট্যান্ড অবধি আসেন এবং আমাদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করেন। কলকাতায় ফিরে আসার পর সুনীল এ নিয়ে আনন্দবাজারে ওঁর একটি লেখাও ছাপিয়েছিল। কী আনন্দেই না আমরা আমাদের দিনগুলো কাটিয়েছি!

বেলাল ছিল একেবারে বেপরোয়া নির্ভীক প্রকৃতির লোক। একদিন, ১৯৬৭ সালে, তখন সবেমাত্র আমি বিয়ে করেছি – অনেক রাত অবধি নেশা করে যখন বাড়ি ফিরছি তখন জানা গেল সেই রাতে বেলালের কোনো শোবার জায়গা নেই। তখন ওঁকে বললাম, চলো আমার বাড়িতে, আমরা একসঙ্গে আজ শোব। বাড়িতে যখন আমরা শুতে যাচ্ছি, তখন টের পেলাম আমার বিছানায় একজন মহিলা শুয়ে আছেন। তিনি তখন পাশের ঘরে চলে গেলেন। বেলালকে ঘরের মেঝেতে শুইয়ে আমি ঘুমিয়ে পড়ি এবং ভোরবেলায় উঠে দেখি চটিজোড়া খুলে রেখে বেলাল পাঁচিল টপকে উধাও হয়ে গেছে। কলকাতা শহরের এমন কোনো দিশি মদের ঠেক ছিল না, যেখানে বেলাল যায়নি। ওঁর বন্ধুত্ব ছিল বহু লোকের সঙ্গে।

একসময় ওঁ 888sport appয় ফিরে যায়। 888sport appয় 888sport app download apk উৎসবে বেলাল আমাদের দুজনকে আমন্ত্রণ করে। সেখানকার দামি হোটেলে রাখে এবং নানান অনুষ্ঠানে আমাদের নিয়ে যায়। 888sport appর সব কবির সঙ্গে আমাদের আলাপ-পরিচয় বেলালই ঘটিয়ে দেয়। তখন ওখানে তসলিমা নাসরিনের খুব নাম-ডাক। আমরা একদিন তসলিমার বাড়িতেও যাই বেলালের আয়োজনে। বেলালই আমাদের সঙ্গে কবি আল মাহমুদের সাক্ষাৎ করিয়ে দেয়। বেলাল 888sport appস্থ ভারতীয় দূতাবাসের ভারত বিচিত্রা পত্রিকায় সম্পাদনার কাজ করত। ওঁ আমাদের দুজনের লেখা ওই পত্রিকায় ছাপে। বলতে গেলে 888sport appয় বেলাল কলকাতার কবিদের দূত হিসেবে কাজ করেছে।

ওঁর অকাল প্রয়াণে আমি অত্যন্ত কষ্ট পেয়েছি। প্রিয়জন বিয়োগের ব্যথা অনুভব করেছি। এই কষ্ট দুরপনেয়। আশা করি, 888sport appsের কবিরা বেলালের যথাযোগ্য 888sport app download for androidসভার আয়োজন করেছে এবং করবে। দূর থেকে বেলালের জন্য আমার শোকগাথাটুকুই জানাই। ওঁ বেঁচে থাকবে ওঁর কাজের মধ্যে, ওঁর চির আনন্দময় স্বভাবের নানান 888sport sign up bonusর মধ্যে।