নক্ষত্রের পতন। ধীরে ধীরে সূর্যের আলোয় বিচ্ছুরিত ছটা ছড়িয়ে পড়েছিল চারদিকে। আপন প্রতিভার সক্ষমতায় তিলে তিলে নিজেকে গড়ে তোলা। কি অভিনয়ে, কি নির্দেশনায়, নাট্য-রচনায় ও 888sport app download apk latest versionে, সাংগঠনিক কাজে, নাট্য-প্রশিক্ষণে, সংগীত পরিচালনায় ও পোশাক পরিকল্পনায় নিজের প্রাণমন সঁপে দিয়েছিলেন যিনি, তিনি স্বাতীলেখা সেনগুপ্ত। একেই বলে সাধনা। একটা কাজে নিজেকে ব্যাপৃত রেখেছিলেন সারাক্ষণ। কীভাবে দিন পার হয়ে গেছে টেরই পাননি। চল্লিশ বছর আগের কথা – আমি তখন কলকাতায়। নান্দীকারে একসঙ্গে কাজ করছি। আমরা প্রায় সমবয়সী। আমাদের কাজের বন্ধুত্ব। সেই দিনগুলোর কথা খুব করে মনে পড়ছে। ৪৭/১ শ্যামবাজার স্ট্রিট কলকাতা-৪, নান্দীকারের দফতর, বিবেকানন্দ রোডের বাড়ি, ঝামাপুকুরে প্রকাশ ভট্টাচার্যের বাড়ি, ৫নং এসপ্লানেড ইস্ট-এ ন্যাশনাল লাইব্রেরি – আরো কত ঠিকানা। এইভাবে দেখতে দেখতে স্বাতীলেখার বেলা শেষ হয়ে গেল, বেলা শুরু আর হলো না!
সালটা ১৯৭৮। 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ে তখন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ছাত্র আমি। এমএ শেষবর্ষ। সেই সঙ্গে ‘নাট্যচক্র’ দলের একজন নিয়মিত অভিনেতা। ‘সংস্কৃতি সংসদে’র বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত। নাট্যচক্রের সঙ্গে জড়িত থাকার সময় থেকেই জেনেছি, দলের কয়েকজন সদস্য আইসিসিআর (ICCR)-এর বৃত্তি পেয়ে ভারতের দিল্লিতে রাষ্ট্রীয় নাট্য বিদ্যালয় বা ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামাতে (NSD) পড়াশোনা করছে। আমার মনে মনেও ছিল, এনএসডিতে কীভাবে বৃত্তি নিয়ে পড়তে যাওয়া যায়। আবেদন করতেই অনেকের সঙ্গে সাক্ষাৎকার-পরীক্ষা দিয়ে মনোনীত হলাম। যথারীতি সময়মতো দিল্লিতে পৌঁছে গেলাম। সেখানে ইতোমধ্যেই আমাদের বেশ কয়েকজন 888sport appsের বন্ধু অবস্থান করছিল, আমাদের এক ক্লাস ওপরে। হারুন, সালেক ও তারেক – ওরা প্রায়ই একজন নাট্যব্যক্তিত্বের নাম করতো। যিনি ছিলেন কলকাতা নাট্যজগতের একজন পুরোধা, নান্দীকার দলের কর্ণধার – রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত। আকাশবাণী কলকাতায় বেতার-নাটকে তাঁর অভিনয় শুনে শুনে তাঁর একজন ভক্ত ও অনুরাগী ছিলাম। এনএসডিতে তিনি ছিলেন অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সদস্য। 888sport appsের সবার সঙ্গেই ছিল তাঁর ভীষণ ঘনিষ্ঠতা। অনেকটা বন্ধুর মতো মিশতেন সবার সঙ্গে। গল্প করার জন্য, আড্ডা দেওয়ার জন্য গেস্ট হাউসে না উঠে তিনি আমাদের ছেলেদের হোস্টেলে, আমাদের ঘরেই উঠতেন। তাঁর জন্য আমাদের নিজেদের জায়গাও ছেড়ে দিতাম। শুধু তাঁর সঙ্গ পাওয়ার জন্য এবং তাঁর গল্পের শ্রোতা হতে। আমাদের আড্ডা ভীষণ জমে উঠতো। দু-একদিন থেকেই, অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের মিটিং শেষ করে আবার তিনি কলকাতায় ফিরে যেতেন। আমার তিন বছরের দিল্লি অবস্থানকালে তাঁর সঙ্গে আমার সম্পর্কটা খুবই মধুর ছিল। আমার পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন ডিপ্লোমা শেষ হলো। রুদ্রদা আমাকে অনেক আগে থেকেই রাজি করিয়েছিলেন কোর্স শেষ হওয়ার পর কলকাতায় গিয়ে নান্দীকারের সঙ্গে এক বছর কাজ করার জন্য। যদিও আমি পাশ করার পর আবেদন করেছিলাম থিয়েটার এডুকেশনের ওপর এক বছর স্পেশালাইজেশন করার জন্য। আবেদন মঞ্জুর হলো। বৃত্তি পেলাম; কিন্তু রুদ্রদার আত্যন্তিক আগ্রহে কলকাতায় নান্দীকার দলের সঙ্গে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলাম। এই প্রেক্ষাপট বা এই তথ্যগুলো না জানালে স্বাতীলেখা সেনগুপ্ত এবং নান্দীকার দলের সঙ্গে আমার কাজ করার সূত্র যুক্ত করা হয়তো যেতো না।
নান্দীকারপর্ব শুরু হলো। কেয়াদির মৃত্যুর পর নান্দীকারে ওই মাপের একজন অভিনেত্রীর বড় সংকট চলছিল। ১৯৭৮ সালে স্বাতীদি নান্দীকারে যোগ দিলেন। সেখান থেকেই রুদ্রদার সঙ্গে প্রেম-পরিণয়, অর্থাৎ বিয়ে। স্বাতীলেখার জীবন আবর্তিত হতে লাগলো নান্দীকার, রুদ্রদার সংসার, নাটকের শো, মহড়া, কর্মশালা – এইসব নানাবিধ নাট্যিক কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে।
আমি যখন দিল্লি থেকে কলকাতায় এলাম, সে-সময়টা মে মাসের শেষ, ১৯৮১। আমার সঙ্গে স্বাতীদির নানা কাজের মধ্য দিয়ে একটা চমৎকার বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছিল। তাঁর জীবনের নানান গল্পের সঙ্গে পরিচয় ঘটছিল আমার।
স্বাতীদির মঞ্চের জীবন শুরু হয়েছিল উত্তর প্রদেশের এলাহাবাদ থেকে, ১৯৭০ সালে। এই সময় কলকাতা থেকে নামকরা সব নাট্যব্যক্তিত্ব এলাহাবাদ গেছেন, নাটকের কর্মশালা করেছেন, নাটকের শো করতে গেছেন দলের সঙ্গে। তাঁর এলাহাবাদের মঞ্চজীবনে তিনি বি ভি করন্থ, তাপস সেন, খালেদ চৌধুরীর মতো নাট্যব্যক্তিত্বদের সংস্পর্শে এসে নিজেকে মেলে ধরার সুযোগ পেয়েছেন। স্বাতীদি নান্দীকারে যোগ দেওয়ার পর দুটি নাটকে অভিনয় করার সুযোগ পান। পিটার টারসনের জিগার জ্যাগার (Zigger Zagger) অবলম্বনে ফুটবল এবং নাট্যকার চিত্তরঞ্জন ঘোষ-রূপান্তরিত জাঁ আনুইয়ের আন্তিগোনে (Antigone) নাটকের নিয়মিত শো চলছে কলকাতার মঞ্চে। মাঝে মাঝে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জায়গা থেকে ‘কল শো’-এর আমন্ত্রণ। আমিও ফুটবল ও আন্তিগোনে নাটকে অভিনয়ের সুযোগ পেলাম। জ্যোতি দত্ত নামে একজন নিয়মিত অভিনেতার জায়গায় এ-সুযোগ এলো। কারণ জ্যোতি দত্ত তখন চাকরিতে বদলি হয়ে অন্য কোনো প্রদেশে চলে গিয়েছিলেন। ফুটবল তখন কলকাতা শহরে মারমার-কাটকাট চলছে। প্রতিটি শো-ই হাউসফুল, দর্শকনন্দিত। রুদ্রদার অসাধারণ অভিনয়, সেইসঙ্গে তখনকার তরুণ অভিনেতা অচিন্ত্য দত্ত এবং একঝাঁক প্রতিভাবান অভিনেতার মঞ্চকাঁপানো উপস্থিতি দর্শকদের হৃদয় ছুঁয়ে যায়। টুকরো টুকরো দৃশ্যের অসাধারণ মুন্শিয়ানায় কোরিওগ্রাফি ও নির্দেশনা দিয়েছিলেন রুদ্রদা। নাটকের চরিত্র হিসেবেই তিনি তখন সবার গুরু। এরপর আন্তিগোনে নাটকে স্বাতীদি আন্তিগোনে, রুদ্রদা ক্রেয়ন এবং আমি ক্রেয়নপুত্র হেমন চরিত্রে অভিনয় করতাম। আন্তিগোনে ও হেমনের ভালোবাসা, ক্রেয়নের সঙ্গে আন্তিগোনে ও হেমনের দ্বন্দ্ব নাটকটিকে এক অন্য মাত্রা দিয়েছিল, একটা টানটান উত্তেজনার সৃষ্টি হতো। একটা করুণ পরিণতির মধ্য দিয়ে নাটকের সমাপ্তি হতো। আমি অভিনয়ের সময় এবং অভিনয়ের অবসরে রুদ্রদা ও স্বাতীদির অসাধারণ অভিনয় প্রত্যক্ষ করতাম আর ক্ষণে ক্ষণে চমৎকৃত হতাম। কী সুন্দর সংলাপের খেলা, উত্তর-প্রত্যুত্তর, রুদ্রদার মতো একজন দক্ষ অভিনেতার সঙ্গে সমান তালে টক্কর দিয়ে অভিনয় করে যাওয়া – প্রত্যেক দর্শক রুদ্ধশ্বাসে উপভোগ করতেন তা। একটা জিনিস তো খুবই সহজ সমীকরণ, অভিনয় ভালো হলেই নাটক চলবে। অনেকদিন ধরেই চলবে, নাটকের নামডাক হলে কল শো-রও ডাক পড়বে। যে-কারণে দলগুলোর প্রাণপণ চেষ্টা থাকে ভালো নাটক নির্বাচন এবং ভালো অভিনয়গুণে ভরা একটি নাট্য-প্রযোজনা। এরপরেই চলে আসে ব্যতিক্রম নাটকের কথা। ব্রেখটের The Exception and the Rule নাটকের 888sport app download apk latest version। এই নাটকটির 888sport app download apk latest version রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্তের। এই 888sport app download apk latest versionের কাজে আমিও রুদ্রদার সঙ্গে যুক্ত থেকেছি। নাটকটিতে প্রধান দুটি চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন পাঁচু গোপাল দে এবং সলিল (সোমনাথ মুখোপাধ্যায়)। একজন ধনী ব্যবসায়ীর আচরণ তার মাল বহনকারী কুলির সঙ্গে কতটা নিষ্ঠুর হতে পারে ব্রেখট এই নাটকের মধ্য দিয়ে তা দেখিয়েছেন। কুলিটি মাল কাঁধে নিয়ে মরুভূমি পার হচ্ছে। ধনী ব্যবসায়ী পিপাসার্ত কুলিটিকে তার কাছে রক্ষিত জল দিতে যায়; কিন্তু পরক্ষণেই সে তাকে জল না দিয়ে পিস্তল দিয়ে গুলি করে মেরে ফেলে। আদালত সেই ধনী ব্যবসায়ীর পক্ষেই রায় দেন। এটা যে কত মর্মান্তিক ছিল! ব্রেখটের অধিকাংশ নাটকেই alienation effect গানের মধ্য দিয়ে, সংগীতের মধ্য দিয়ে। গানের দল মঞ্চেই থাকতো, গাইতো, ধ্বনি আবহ তৈরি করতো একটা কোণে জায়গা নিয়ে। এই গানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল তখনকার পশ্চিমবঙ্গের নাট্য-প্রযোজনাগুলোর সংগীত পরিচালক দেবাশিস দাশগুপ্তকে। তিনি ছাড়াও আরো কয়েকজন নাট্য-সংগীত পরিচালক এবং নাটকের গানের গীতিকার ছিলেন। তাঁদের মধ্যে মুরারী রায় চৌধুরী অন্যতম। দেবাশিসদা গানের অসাধারণ সুর করলেন। গানের দলে আমি, স্বাতীদি ও দেবাশিসদা। আমরা একসঙ্গে গানে গলা দিতাম। তখনই স্বাতীদির সংগীতের জ্ঞান, গাইবার দক্ষতা, সুর করার ক্ষমতা দেখে বিস্মিত হয়েছি। পরে জেনেছিলাম, তিনি লন্ডনের Trinity College থেকে মিউজিক নিয়ে পড়াশোনা করেন এবং Beethoven Piece বাজানোতে অংশ নিয়েছিলেন। তিনি খুবই ভালো পিয়ানো এবং বেহালা বাজাতে পারতেন। মেঘনাদ বধ নাটকে তিনি মঞ্চের ওপরে এক কোনায় বসে যে-সংগীতায়োজনের ব্যবস্থা করেছিলেন, তা ছিল অনন্য, অনবদ্য। একা হাতে বেহালায় Prelude, Interlude, Effect ও Mood তৈরি করতেন এমনভাবে যে, একক অভিনেতা গৌতম হালদারের অভিনয় অনন্য মাত্রা পেতো। মাইকেল মধুসূদন দত্তের মহাকাব্য তৎসম শব্দসমৃদ্ধ প্রায় দুর্বোধ্য এই মেঘনাদ বধকে নাট্যাকারে সাজিয়ে দৃশ্য থেকে দৃশ্যান্তরে যাওয়া এবং অভিনয়ের বৈচিত্র্য আস্বাদন একমাত্র সম্ভব হয়েছে স্বাতীলেখার এই অসাধারণ সংগীতায়োজনের কারণেই। নির্বাক বিস্ময়ে দর্শক এই অভিনয় উপভোগ করতেন। অভিনয়শেষে অভিনেতা ও সংগীত পরিচালক দর্শক-প্রশংসাধন্য হতেন তাদের মুহুর্মুহু করতালির অভিনন্দনের মাধ্যমে। নান্দীকারের পরের অধিকাংশ নাটকেই সংগীতের কাজটা স্বাতীলেখাই করেছেন।
তাঁর এই সংগীতপ্রীতি, অনুরাগ এবং জ্ঞানের কথা জেনেই সত্যজিৎ রায় ঘরে বাইরে live chat 888sportে তাঁকে নির্বাচন করেছিলেন। অবশ্য তার আগে থিয়েটারে গিয়ে তাঁর অভিনয় দেখে এসেছিলেন সত্যজিৎ। এই প্রসঙ্গে সত্যজিৎপুত্র চিত্রপরিচালক সন্দীপ রায় তাঁর 888sport sign up bonusচারণায় বলেছেন – ‘স্বাতীলেখা পিয়ানো বাজাতেন শুনেই বাবা ওকে ‘ঘরে বাইরে’তে নিয়েছিলেন। সত্যজিতের খুব পছন্দের অভিনেত্রী ছিলেন স্বাতীলেখা। একসময় অপর্ণা সেনকেও বিমলা চরিত্রে অভিনয়ের কথা সত্যজিতের চিন্তায় ছিল। বাবা দীর্ঘদিন বসে ছিলেন। এই ছবিতে হাত দিতেও পারেননি চরিত্র পছন্দ হয়নি বলে। নাটক দেখতে গিয়ে স্বাতীলেখার অভিনয় দেখে ভাল লাগে। সত্যজিৎ তাঁর বিমলাকে খুঁজে পান। সত্যজিৎ জেনেছিলেন স্বাতীলেখা পিয়ানো বাজাতে পারেন এবং গান গাইতে পারেন। তাঁর আরো অনেক গুণের জন্য সত্যজিৎ তাঁকে পছন্দ করেছিলেন এবং ছবি তৈরিতে উৎসাহ পেয়েছিলেন। নাট্যজগৎ থেকে আসা অভিনেত্রী সত্যজিৎ খুবই পছন্দ করতেন। স্বাতীলেখার কঠোর নিয়মানুবর্তিতা মনে রাখার মত ছিল। কোন কারণে স্বাতীলেখার জন্য শুটিং পিছিয়েছে বা কাজে দেরি হয়েছে – এমনটা হয়নি। সত্যজিৎ বিমলাকে পেয়ে ভীষণ খুশি ছিলেন।’
১৯৮১ সাল থেকেই ঘরে বাইরের কাজ, চরিত্র-নির্বাচন শুরু হয়েছিল। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, ভিক্টর ব্যানার্জী ও স্বাতীলেখা সেনগুপ্ত এবং জেনিফার কেন্ডেল (Jennifer Kendal) – শশীকাপুরের স্ত্রী – অভিনীত এই ছবিটি ১৯৮৪ সালে মুক্তি পায় এবং শ্রেষ্ঠ বাংলা live chat 888sport হিসেবে জাতীয় live chat 888sport 888sport app download bd লাভ করে। ১৯৮৪ সালে কান live chat 888sport উৎসবে Plame d’or প্রতিযোগিতা বিভাগে স্থান করে নেয়। মূলত নিখিলেশ, বিমলা এবং সন্দীপ – এই তিন চরিত্রের ত্রিমুখী দ্বন্দ্বের চিত্রায়ণই রবীন্দ্রনাথের এই অসামান্য 888sport alternative link। বিমলা চরিত্রে স্বাতীলেখার অভিনয় সর্বমহলে উচ্চ প্রশংসিত হয়। টাইমস অব ইন্ডিয়া পত্রিকায় যদিও একটি বিরূপ সমালোচনা বেরিয়েছিল, যেখানে স্বাতীলেখাকে বলা হয়েছিল ‘miscast’। এটা পড়ার পর তিনি প্রচণ্ড মনোকষ্টে ভুগতে থাকেন। তবে বিদেশে, বিশেষ করে কান live chat 888sport উৎসবে, ছবিটি প্রদর্শিত হওয়ার পর পত্রপত্রিকায় সৌমিত্র, ভিক্টর ও স্বাতীলেখার অভিনয়ের প্রশংসা করে অনেক রিভিউ বেরিয়েছিল, যা পরবর্তীকালে তাঁকে কিছুটা স্বস্তি দিয়েছিল।
১৯৮৫ সালে সৌমিত্র এবং ভিক্টর ব্যানার্জীর সঙ্গে live chat 888sportের পর্দায় যাত্রা শুরু স্বাতীলেখার। সত্যজিৎ রায়ের ঘরে বাইরেতে বিমলা চরিত্রে তাঁর অভিনয় নিয়ে আজো প্রশংসায় পঞ্চমুখ মানুষ। দীর্ঘ বিরতির পর, প্রায় ৩০-৩১ বছর পর, সৌমিত্রের সঙ্গেই বড়পর্দায় ফেরেন তিনি, প্রযোজক-পরিচালক নন্দিতা রায় ও শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের বেলাশেষে live chat 888sportে। তাঁদের জুটিকে আবার live chat 888sportে দেখে আপ্লুত দর্শক। তাই বেলাশুরু live chat 888sportেও অভিনয় করেন তাঁরা। কিন্তু ছবিটি মুক্তি পাওয়ার আগে চলে গেলেন দুজনে। ২০২০ সালের নভেম্বরে মারা যান সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় আর স্বাতীলেখা চলে গেলেন এই বছর, ২০২১-এর ১৬ই জুন।
ঘরে বাইরেতে স্বাতীলেখার সেই সময়ের বাংলা ছায়াছবিতে ব্যতিক্রমী এবং সাহসী এক কাজ ছিল সৌমিত্রের সঙ্গে একটি চুম্বনদৃশ্য। দৃশ্যটি ঠিকমতো ধারণের জন্য সাত-আটটি টেক দিতে হয়েছিল। পরে অবশ্য দুজনের সহযোগিতায় সেই পরীক্ষায় চমৎকারভাবেই উতরে গিয়েছিলেন স্বাতীদি।
আবার নাটকের প্রসঙ্গে ফিরি। নান্দীকার প্রসঙ্গে বলতে গেলে, ১৯৬০ সালের ২৯শে জুন অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়, অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে এই নাট্যদলের যাত্রা শুরু। পরবর্তীকালে এই দলে যোগ দেন কেয়া চক্রবর্তী, বিভাস চক্রবর্তী, অশোক মুখোপাধ্যায়, রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত, চিন্ময় রায় প্রমুখ। দলটির প্রথমদিককার অসাধারণ সব প্রযোজনার গল্প এখনো লোকমুখে, ইতিহাসের পাতায় মুদ্রিত। শুরু হয়েছিল সেই-নাট্যকারের সন্ধানে ছ’টি চরিত্র, মঞ্জরী আমের মঞ্জরী, শেষ আফগান, যখন একা ইত্যাদি মঞ্চকাঁপানো প্রযোজনা দিয়ে। এখনো সেই ধারা অব্যাহত আছে। অবশ্যই কেউ কেউ দলত্যাগ করেছেন, প্রয়াত হয়েছেন। নতুন নতুন অভিনেতা-পরিচালক-নাট্যকারের সমন্বয়ে তৈরি হয়েছে নতুন নতুন প্রযোজনা। চমৎকারিত্বে, অভিনয়ে, আয়োজনে এসব প্রযোজনা ছিল একটু ভিন্ন স্বাদের ও নিরীক্ষাধর্মী। রুদ্রপ্রসাদ ও স্বাতীলেখার হাত ধরে নান্দীকার তার ষাট বছর পার করে একষট্টিতে পা দিয়েছে।
১৯৮১-তে যখন ফুটবল, আন্তিগোনে ও ব্যতিক্রম নাটকের প্রযোজনায় যাঁদের সহযোগ এবং সহ-অভিনেতা হিসেবে পেয়েছিলাম তাঁদের নাম 888sport sign up bonus হাতড়ে মনে করার চেষ্টা করেছি। তাঁরা হলেন – পশুপতি বসু, পরিমল মুখোপাধ্যায়, সুমৌলিন্দ্র আচার্য, জ্যোতি দত্ত, অচিন্ত্য দত্ত, প্রকাশ ভট্টাচার্য, বিমল চক্রবর্তী, পিনাক বিশ্বাস, দীপংকর বসু, বাবলু দাশগুপ্ত, সুমিত দাশগুপ্ত, অশোক, অলোক, সবিতা, পাঁচু গোপাল দে, ছায়া ঘোষ, নন্দিতা রায় চৌধুরী, নন্দ, সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়, কল্যাণব্রত বিশ্বাস, সলিল (সোমনাথ মুখোপাধ্যায়), অলোক ব্যানার্জী, সুব্রত পাল, বাদল, জগাদা, কমলেশ প্রমুখ। আমি যে-একটা বছর নান্দীকারে কাজ করেছি, তখন এসব মানুষের সঙ্গে নিয়মিত মহড়ায়, কর্মশালায়, দলের নাটকের শোতে, দফতরে নিয়মিত হাজিরায় দেখা-সাক্ষাৎ হতো, গল্পগুজব-আড্ডা চলতো। রুদ্রদা আর স্বাতীদি থাকতেন দলের মধ্যমণি হয়ে।
এত গুণের সমন্বয় ঘটেছে যাঁর মধ্যে, সেই স্বাতীলেখা সেনগুপ্ত কাজ ছাড়া কি চুপচাপ বসে থাকতে পারেন? রুদ্রদা নাটক নির্দেশনা ছাড়াও নাটকসম্পৃক্ত নানান প্রকল্প তৈরি করেছিলেন। ১৯৮০ সালে তিনি নতুনদের জন্য Theatre with the Youth প্রজেক্ট শুরু করলেন। CRESSIDA-র সঙ্গে নান্দীকার আরো একটি প্রজেক্ট শুরু করে Socio Economic Context on Significance of Group Theatre Movement in West Bengal sponsored by Indian Council for Social Science Research। আমরা কয়েকজন Research Investigator হিসেবে যোগ দিয়েছিলাম – আমি, স্বাতীলেখা সেনগুপ্ত, দেবাশিস মজুমদার (শূদ্রক), তন্ময় এবং নির্বাহী হিসেবে ছিলেন দ্বিজেনদা (অর্থনীতিবিদ) আর প্রজেক্ট ডিরেক্টর ছিলেন রুদ্রদা। আমরা বিশেষ অনুমতি নিয়ে ৫নং এসপ্লানেড ইস্ট-এ ন্যাশনাল লাইব্রেরির দৈনিক পত্রিকার আর্কাইভ লাইব্রেরিতে প্রতিদিন গবেষণার তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করতাম। এই কাজের মধ্যে ১৯৫০ সাল থেকে পত্রিকায় পাবলিক বোর্ডের থিয়েটার, বাণিজ্যিক থিয়েটার, গ্রুপ থিয়েটার এবং যাত্রার আন্তঃসম্পর্ক, সেকাল ও একালের তুলনামূলক অবস্থান সম্পর্কে পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত বিজ্ঞাপন, আলোচনা-সমালোচনা, 888sport liveের ভিত্তিতে গবেষণার কাজ চলতো। আমরা প্রতিদিন অফিস করার মতো সকাল ১১টা থেকে বিকেল পর্যন্ত ওইসব পুরনো পত্র-পত্রিকা ঘেঁটে তথ্য-উপাত্ত জোগাড় করতাম। প্রধান যে-পত্রিকাগুলো নিয়ে কাজ করতাম সেগুলো হলো – আনন্দবাজার, যুগান্তর, অমৃতবাজার (ইংরেজি) ও স্টেটসম্যান (ইংরেজি)। আমি ও স্বাতীদি গভীর মনোযোগে এ-কাজ করে আনন্দ পেয়েছিলাম। দেবাশিস মজুমদার ও তন্ময়ের ক্ষেত্রটা একটু আলাদা ছিল আমাদের থেকে। আমি আসার আগে, অর্থাৎ ১৯৮২-তে দেশে ফেরার আগে, গবেষণা 888sport live তৈরি করে দিয়ে এসেছিলাম। দ্বিজেনদা ও রুদ্রদা আমাদের কাজের খুবই প্রশংসা করেছিলেন।
আমার এক বছর অবস্থানকালে নান্দীকার দলের মধ্যে In house workshop করতাম তরুণ নাট্যকর্মীদের জন্য। আমি পড়াতাম পশ্চিমা নাটক, ভারতীয় নাটক, নাট্যশাস্ত্র, থিয়েটার গেমস ও ইমপ্রোভাইজেশন; রুদ্রদা অভিনয় ও অভিনয়তত্ত্ব এবং তার প্রয়োগের বিষয়ে। জামিল আহমেদ তখন কিছুদিন এই প্রজেক্টের কাজে 888sport app থেকে এসে যোগ দিয়েছিলেন। তিনি ক্লাস নিতেন প্লে অ্যানালিসিস, ইমপ্রোভাইজেশন, থিয়েটার গেমস, পশ্চিমা নাটক ইত্যাদি বিষয়ে। স্বাতীদি সংগীত, ভয়েস ট্রেনিং, স্বরের পরিচিতি ও তার প্রয়োগের দিকটি দেখতেন। এভাবেই নান্দীকার দফতরের মহড়াকক্ষে আমাদের প্রশিক্ষণের কাজ চলতো। আমরা ক্লাস নিতাম, সেগুলো মূল্যায়ন ও আলোচনাও চলতো। নান্দীকারের তরুণ নাট্যকর্মীদের মধ্যে তখন এই নাটকের ক্লাস ও ব্যবহারিক প্রয়োগের চর্চা এক উদ্দীপনা ও উজ্জীবন ঘটিয়েছিল। সবাই বিকেলে ক্লাসের আগেই হাজির হয়ে যেতো। এটা ছিল তাদের কাছে এক অতীব আনন্দের বিষয়। আমরাও এই নতুন তরুণ নাট্যশিক্ষার্থীদের কাজ করিয়ে আনন্দ পেতাম।
Theatre with the Youth – এই প্রজেক্টের মাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলার তরুণ নাট্যকর্মীদের নাট্য-প্রশিক্ষণের কর্মশালার আয়োজন করা হতো। স্বাতীদি, জামিল, আমি এবং কর্মশালা পরিচালক রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্তের সমন্বয়ে একটি দলের মাধ্যমে এই কর্মশালাগুলো পরিচালিত হতো। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত তিন-চারদিনের কর্মশালার আয়োজন করা হতো। আসানসোল, দুর্গাপুর, বর্ধমান, শিলিগুড়ি, বহরমপুর ও শ্রীরামপুরে এই ধরনের কর্মশালা হয়েছিল। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সঙ্গে আমরাও এসব কর্মশালা বেশ উপভোগ করতাম। স্বাতীদি সবাইকে গল্প, হাসি-ঠাট্টা-তামাশায় মাতিয়ে রাখতেন।
আমরা যখনই বাইরের কল শোতে অভিনয় করতে যেতাম, এই যাত্রা এবং অবস্থান ও শো ছিল অত্যন্ত আনন্দের। হইচই করে যাওয়া, গল্প-আড্ডা, খাওয়া-দাওয়া – সবকিছুই দারুণ উপভোগ করতাম। শো-এর আগে থেকেই সবাই যার যার কাজের প্রতি মনোযোগী। মুখে কোনো শব্দ নেই। কাজ ভাগ করা থাকতো। কার কী দায়িত্ব বুঝে নিয়ে নিঃশব্দে কাজ করে যেতো সবাই। এটা একটা দেখার মতো জিনিস ছিল। এটিই শিক্ষণীয় বিষয় নাটকের সবার জন্য। একাডেমি, গিরীশ মঞ্চ, মধুসূদন মঞ্চে – সেই একই দৃশ্য। নাটকের কত লোকের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ, নামী-গুণী দর্শকদের সঙ্গে মতবিনিময় – সে এক দুর্লভ অভিজ্ঞতা। নাটক দেখতে আসা – এ যেন ছিল সাধারণ শিক্ষিত সংস্কৃতিমনা মানুষের নিত্যকর্ম।
নান্দীকারের প্রায় প্রতিটি প্রযোজনায় স্বাতীলেখার ভূমিকা ছিল – কখনো অভিনয়ে, কখনো নির্দেশনায়, কখনো পোশাক-পরিকল্পনায়; আবার কখনোবা প্রযোজনায়, সংগীত পরিচালক হিসেবে অসামান্য মুনশিয়ানার পরিচয় দিয়েছেন। এসব প্রযোজনার মধ্যে রয়েছে মানুষ, আলিফা, পাঞ্চজন্য, নাচনি, মাধবী, পৃথিবী রাস্তা শব্দ, বাহনের বায়নাক্কা, মৃত্যুঞ্জয়, ব্যতিক্রম, আন্তিগোনে, রাণী কাদম্বিনী, বিপন্নতা, অজ্ঞাতবাস, যাহা চাই, বড়দা, চোখ গেল, বাপ্পাদিত্য, দুলিয়া, আঁধারমণি, সোজন বাদিয়ার ঘাট, ফুটবল, এই শহর এই সময়, মরমিয়া মন, ব্রেখটের খোঁজে, শানু রায়চৌধুরী, হনন মেরু, শঙ্খপুরের সুকন্যা, নানা রঙের দিন, অন্ত-আদি-অন্ত, কানু, পাতা ঝরে যায় প্রভৃতি।
নাটকের জীবন, অভিনয়ের জীবন, live chat 888sportের জীবন, ঘর-সংসার – এই নিয়ে স্বাতীলেখা এক পরিপূর্ণ কর্মজীবন অতিবাহিত করেছেন।
সারাজীবন থিয়েটারে অবদান রাখার জন্য, বিশেষ করে থিয়েটারে অভিনয়ের জন্য, সংগীত নাটক একাডেমি 888sport app download bd (২০১১), পশ্চিমবঙ্গ ফিল্ম জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন 888sport app download bd এবং পশ্চিমবঙ্গ নাট্য একাডেমি 888sport app download bd (২০১০) লাভ করেন তিনি।
live chat 888sportে অভিনয় করেছেন সত্যজিৎ রায়ের ঘরে বাইরে (১৯৮৫), নন্দিতা রায় ও শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের বেলাশেষে (২০১৫) ও বেলাশুরু (২০২১), সুদীপ চক্রবর্তীর বরফ (২০১৯), রাজ চক্রবর্তীর ধর্মযুদ্ধ (২০২১), রোল্যান্ড জোফির City of Joy (১৯৯২) ইত্যাদিতে। বেলাশেষে ছবিতে অসামান্য অভিনয়ের জন্য তিনি জননন্দিত হন। শিবপ্রসাদের গুরু ও শিক্ষিকা ছিলেন স্বাতীলেখা। এই ছবি মুক্তি পাওয়ার পর দুশো সতেরো দিনের বক্স অফিস রেকর্ড গড়েছে। পরবর্তীকালে এরকমই আরো একটা কাজের জন্য প্রস্তাব দেন নন্দিতা ও শিবপ্রসাদ। শুটিং শেষ, ছবি তৈরি শেষ। কিন্তু করোনা অতিমারির কারণে হলে মুক্তি দিতে দ্বিধান্বিত ছিলেন নন্দিতা-শিবপ্রসাদ। তাই আর মুক্তি পায়নি বেলাশুরু। এদিকে live chat 888sportটি মুক্তি পাওয়ার আগেই চিরতরে চলে গেলেন সৌমিত্র ও স্বাতীলেখা।
বেলাশেষে live chat 888sportে স্বাতীলেখার অভিনয় দেখে অভিনন্দন জানিয়ে অমিতাভ বচ্চন বিবেকানন্দ রোডের বাড়ির ঠিকানায় চিঠি দিয়েছিলেন – ‘এই চিঠি এক 888sport live chatীর প্রতি আর এক 888sport live chatীর শুভেচ্ছা।’ স্বাতীলেখা ভাবতেই পারেননি যে, তাঁর অভিনয় দেখে অমিতাভ বচ্চনের মতো একজন অভিনেতা তাঁকে শুভেচ্ছা জানিয়ে চিঠি দেবেন। স্বাতীলেখা চিঠিটি পাওয়ার পরে যে-উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছিলেন তা ছিল এমন – ‘আমার কোনো ভাষা নেই এ-চিঠি পাওয়ার পর। আমার জীবনের এক বড় 888sport app download bd হয়ে রইলো এই চিঠি। আমার ভাবনারও অতীত। ছোটবেলা থেকেই ওঁর সব ছবি দেখেছি। উনি অভিনয়ের ঈশ্বর। ওঁর আশীর্বাদ পাওয়া যে কতখানি আমার কাছে তা বলে বোঝাতে পারবো না। ভাষা হারিয়ে ফেলেছি আমি।’
এই স্বাতীলেখা সেনগুপ্তকে কত কাছ থেকে দেখেছি – নাটকের অভিনয়ে, নির্দেশনায়, সংগীত পরিচালনায়, গানে, পোশাক পরিকল্পনায়, সাংগঠনিক দক্ষতায় এবং সর্বোপরি live chat 888sportে অভিনয়ে – এত প্রতিভার সমাবেশ যাঁর মধ্যে ছিল, তাঁর এত তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া আমাদের সবার জন্যই অত্যন্ত কষ্টের। তাঁর এই শূন্যতা কে পূরণ করবে? এই জায়গা তৈরি করতে তাঁকে দিনের পর দিন শ্রম দিতে হয়েছে; মনোযোগ, সাধনা ও চর্চার মধ্য দিয়ে প্রতিভার বিকাশ ও স্ফূরণ ঘটেছে, শাণিত ও পরিশীলিত হয়েছে। একজন প্রকৃত 888sport live chatীর এটাই প্রকৃত সাধনা। তাঁর এই প্রতিভার পুরোটাই অন্যভাবে প্রকাশ পেয়েছে তাঁর কন্যা বাবুয়ার (সোহিনী সেনগুপ্ত) মধ্যে। আজকের সোহিনী সেনগুপ্তকে এই একইভাবে দিনে দিনে তৈরি হতে হয়েছে। আজ থেকে চল্লিশ বছর আগে স্কুলপড়ুয়া বাবুয়াকে দেখেছি সহজাত প্রতিভা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। মা পিয়ানো বাজাচ্ছে আর বাবুয়া গান গাইছে, নাচছে। মঞ্চে ওর নাচ, গান, অভিনয় মিলেমিশে এখনো এক অনন্য প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে চলেছে। বাবা-মায়ের মতো সাংগঠনিক দক্ষতা এবং নাট্য-নির্দেশনায় সে এখন একজন পরিণত নাট্যব্যক্তিত্ব। সোহিনী ১৯৯৯ সালে অপর্ণা সেন-পরিচালিত পারমিতার একদিন ছবিতে সহযোগী অভিনেত্রী হিসেবে ভারতের জাতীয় live chat 888sport 888sport app download bdে ভূষিত হয়েছে। এছাড়াও তার ঝুলিতে জমা হয়েছে নাটকে অবদানের জন্য সংগীত নাটক একডেমি-প্রবর্তিত ওস্তাদ বিসমিল্লাহ খান 888sport app download bd, এবিপি আনন্দ (আনন্দবাজার পত্রিকা) 888sport app download bd ‘সেরা বাঙ্গালী’ অভিনয়ের জন্য এবং নাটকে অবদানের জন্য দ্য টেলিগ্রাফের ঝযব অধিৎফ। দলের অনেক নাটকে অভিনয় করে এবং নির্দেশনা দিয়ে পুরো ভারতেই সোহিনী এখন পরিচিত-জনপ্রিয় মুখ। ১৯৯৩ সালে Bernardo Bertolucci-র Little Buddha ছবিতেও অভিনয় করেছে সে।
এদিকে রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত সারা ভারতের মধ্যে অন্যতম স্বীকৃত ও জনপ্রিয় নাট্যব্যক্তিত্ব। নির্দেশক, অভিনেতা, নাট্য-সংগঠক, লেখক ও নাট্য-888sport app download apk latest versionক – এত গুণের সমাহার একটা মানুষের মধ্যে বিরল। এক বছর তাঁর সান্নিধ্যে ছিলাম। প্রতিমুহূর্তে শিখেছি তাঁর কাছ থেকে। তিনি শুধু আমারই নন, অনেকেরই নাট্যগুরু। কলকাতায় প্রথম বড় ধরনের প্রযোজনাভিত্তিক নাট্য কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয় ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামা ও নান্দীকারের যৌথ আয়োজনে, ১৯৮১-৮২ সালে। দুই মাসব্যাপী অনুষ্ঠিত এই নাট্য-কর্মশালার সংগঠক ছিলেন রুদ্রদা। রতন থিয়াম ছিলেন কর্মশালার পরিচালক। স্বাতীদি, আমি, জামিল, রুদ্রদাসহ এনএসডিতে আমার ব্যাচমেট জয়তীর্থ যোশী (প্রয়াত) এবং বিজয় দলভী (প্রয়াত) ছিলেন এই কর্মশালার প্রশিক্ষক। কলকাতার গ্রুপ থিয়েটারের সদস্যদের সঙ্গে এই কাজের অভিজ্ঞতা ছিল অসাধারণ। আমরা সবাই খুব উপভোগ করেছি। নাট্য-কর্মশালার প্রধান সমন্বয়কের কাজটি করেছিলেন রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত। তাঁর মতো এত বড় গুণী মানুষের কথা অন্য কোনো সময়ে লেখার ইচ্ছা রইলো।
কলকাতায় আমি থাকতাম নান্দীকারের একজন সক্রিয় কর্মঠ সংগঠক-সদস্য প্রকাশ ভট্টাচার্যের (বর্তমানে তিনি নান্দীপট দলের কর্ণধার) বাসায়। ঝামাপুকুর লেনে তিনতলার ছাদের ঘরে আমি, প্রকাশ ও তাঁর ভাইয়েরা থাকতেন। এই বাড়িতে কোজাগরি লক্ষ্মীপূজার পূর্ণিমা রাতে চমৎকার গান-বাজনা-আবৃত্তির অনুষ্ঠান হতো। আমি সেখানে থাকাকালে একবারই এই অনুষ্ঠান পেয়েছি। রুদ্রদা, স্বাতীদি, বাবুয়া, প্রকাশ – আমরা সবাই অংশগ্রহণ করেছিলাম সে-অনুষ্ঠানে। প্রকাশের বোন আলটু, ভালো নামটা মনে নেই এখন, সে তখন রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীতের ছাত্রী। চমৎকার গাইতো। মাতিয়ে তুলেছিল কোজাগরির সেই সম্মিলন রাতকে। এরকম আরো কত 888sport sign up bonus।
সে-বছর কলকাতা live chat 888sport উৎসব প্রথম অনুষ্ঠিত হয। এটি একটি আন্তর্জাতিক উৎসব। আমি যথারীতি 888sport appsের পক্ষে ডেলিগেট পাশ পেলাম। স্বাতীদিও পাশ পেলেন। আমি, স্বাতীদি ও প্রকাশ কত যে ভালো ভালো ছবি দেখেছি তার ইয়ত্তা নেই। নন্দন, রবীন্দ্র সদন এবং আরো কয়েকটি প্রেক্ষাগৃহ ঘুরে ঘুরে ছবি নির্বাচন করে সিনেমা দেখতাম। বাইরেই খাওয়া-দাওয়া, আড্ডা – সে এক দারুণ সময় কাটিয়েছি। সবই 888sport sign up bonusর মনিকোঠায় জমা হয়ে রয়েছে। সেজন্যেই রবীন্দ্রনাথের 888sport app download apkর চরণ মনে আসে – ‘আমাদের গেছে যে দিন, একেবারেই কি গেছে, কিছুই কি নেই বাকী।’
সেবার হোলির দিনের কথা খুব মনে পড়ে। সেদিন ছুটির দিন। গবেষণার কাজে যাওয়া নেই, দফতর নেই। আমি আর প্রকাশ বিবেকানন্দ রোডের বাড়িতে গিয়ে ভাবলাম, কী করা যায়? প্রকাশকে বললাম, স্বাতীদিকে বললাম, শুধু রুদ্রদাকে বলিনি। বাইরে থেকে সিদ্ধির শরবত কিনে নিয়ে এলো প্রকাশ। আমরা তিনজনে চুপিচুপি খেলাম। রুদ্রদা বুঝতে পারেননি। আমাদের অবস্থা কাহিল। কী যে হচ্ছে মস্তিষ্কে-দেহে-মনে বুঝতে পারছি না। স্বাতীদির কী হলো – সে খবর আর নেওয়া যায়নি। সন্ধেবেলায় ৪৭/১ শ্যামবাজার স্ট্রিটে নান্দীকারের দফতরে গেলাম। দেখলাম রুদ্রদা বসে আছেন। ভাব দেখালাম যেন কিছুই হয়নি। রুদ্রদা চুপচাপ। রুদ্রদার রুদ্রমূর্তি দেখে বুঝলাম, ঘটনা কিছু ঘটেছে। এইসব নানান ঘটনা নিয়েই ছিল কলকাতার দিনরাত্তির। এখন এসব শুধুই কথার কথা। গল্পকথা। আকাশের ওপারে আকাশ। তারপর আকাশ। মহাশূন্য, বিশ্ব-ব্রহ্মাণ্ড এক মহাজাগতিক নিয়মে আবর্তিত হয়ে চলেছে। এরও কি কোনো শেষ আছে? সে এক অপার বিস্ময় – রহস্যাবৃত হয়ে রয়েছে। সেই মহাজাগতিক মহাবিশ্বের এক ক্ষুদ্র গ্রহের বাসিন্দা আমরা এই মানব প্রজাতি। জীবনের নিয়ম – জন্ম এবং মৃত্যু। সেই নিয়মেই স্বাতীলেখা সেনগুপ্ত তাঁর বেলাশেষে আরব্ধ কর্মকাণ্ড শেষ করে ঊর্ধ্বলোকে অনন্তের পথে যাত্রা করেছেন। ‘স্বাতী তারার কোল ঘেঁষে নীল হাওয়ার সমুদ্রে শাদা বকের মত উড়ছে সে’ – জীবনানন্দ দাশের 888sport app download apkর মতোই হয়তো স্বাতীদি বলছেন, ‘যখন মৃত্যুর ঘুমে শুয়ে রবো – অন্ধকারে নক্ষত্রের নিচে; … ঘুমায়ে পড়িব আমি একদিন তোমাদের নক্ষত্রের রাতে … কোথায় চলিয়া যাবো একদিন, তারপর রাত্রির আকাশ অসংখ্য নক্ষত্র নিয়ে ঘুরে যাবে, কতোকাল জানিব না আমি …।’ কর্মময় এক বর্ণাঢ্য জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটলো বেলাশেষে। স্বাতীদি – যেখানে থাকো, ভালো থেকো।


Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.