বেহুলার ভাঁটফুল

জয়গুনকে পাওয়া গেল সন্ধ্যার মুখে। চকের ভেতর পরিত্যক্ত বাড়িটার পুকুরঘাটেই ছিল সে। পুরনো আমলের বড় বড় ইটে করা ঘাটের সিঁড়ি। কোনোকালে ভূমিকম্পে ফেটে দেবে গিয়েছে মাঝখানে। সেই ফোকর থেকে উঠে এসেছে লতানো গাছ, উঁকি দিচ্ছে বটের চারা। ওর ভেতর দিয়ে সরসর করে চলে যায় ইঁদুর আর শব্দহীনভাবে মাটি ঘষে ঘষে তার পিছু নেয় হলুদ-কালোর ডোরাকাটা সাপ। তখনো আলো পুরোপুরি শেষ হয়নি। জয়গুনের অনেকরকম শাড়ি থাকলেও এমন লাল পেড়ে ঘিয়ে রঙের শাড়ি তাকে কখনো কেউ পরতে দ্যাখেনি। কয়েক বছর পর আপাতনিরীহ সোনামুখী গ্রামে আলোচনার মতো ঘটনা ঘটল জয়গুনকে নিয়ে। সাধারণত না বলে যাওয়ার জায়গা জয়গুনের বিশেষ নেই। নিখোঁজের পর লোক পাঠিয়ে কিছুক্ষণ পর নিজেও রওনা হয়েছিলেন হারুন শেখ। তার বাড়ি থেকে এলে পুকরের পূর্বদিকে পতিত বাড়িটার ভেতর দিয়ে কাছে। এমনভাবে জয়গুনকে পেয়ে উপস্থিত কারো মুখেই রা নেই।
জয়গুনের সুখ দৈর্ঘ্য-প্রস্থে সাড়ে তিনশো গজ। নকশা করা সেগুন কাঠের আলমারিতে নতুন ভাঁজের শাড়ি। বড় ঝাঁপি দেওয়া মাচার মটকায় খই-মুড়ি, ঝোলা গুড় আর গোলায় ধান। ভেতরবাড়িতে কাকচক্ষু পুকুরে উপুড় হয়ে ঝুঁকেছে শতেক গাছের ছায়া। পাশে কলমিদামের তলায় বেগুনি আভার জংলি ভাঁটফুলের গলাগলি সমাহার। ফুলের বুকের ভেতর থেকে একটানে বেরিয়ে আসা সরু চিকন চিকন বল্কিগুলো থেকে পরান ঝাঁপানো ঘ্রাণ আসে। রংটা যেখানে ঘন নিবিষ্ট ঠিক সেখান থেকে শুরু হয়েছে বৃন্তের সংযোগ। গাঢ় চোখে তাকালে জয়গুনের শরীর কেঁপে ওঠে। ফুলের বুকের কাছে আপনাতেই এগিয়ে যায় মুখ। ভাঁটের ঘ্রাণের লোভে জয়গুন ভেতরের উঠোনের একপাশে ইটের দেয়ালঘেরা চাপকল উপেক্ষা করে পুকুরে নামে। দীর্ঘসময় ঠান্ডা জলে শরীর ডুবিয়ে রাখে। ঝুঁকে থাকা বুড়ো আমগাছে হলুদ পাখি বসে লোভী চোখে দ্যাখে তাকে। জয়গুন এক আঁজলা জল ছিটিয়ে দিতে দিতে বলে, যা যা, শরম নাই পাখি? জলের ছাঁট না পৌঁছালেও পাখি উড়ে বসে আরো নিচু ডালে। শিস তুলে জানান দেয়, তার শরম নাই। নিচু পুকুরটার জলে বুক ডুবিয়ে দাঁড়ালে আকাশটা গোল হয়ে নেমে আসে মাথার ওপর। পাড়ের গাছগুলোর গোড়াটা ভালো দেখা যায় না, ওপরের ডাল-পাতা চোখে পড়ে। ওভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে জয়গুন দ্যাখে, বাতাসে থিরথির করে কাঁপছে ভাঁটফুল। একটা দমকা হাওয়া এসে ডালপালার ভেতর দিয়ে দৌড়ে গেল কিশোরীর মতো। দাঁড়িয়ে থাকা কলমিগাছগুলো দোল খায় কিন্তু ঘাড় ত্যাড়া ভাঁট মাটি বড় শক্ত করে আঁকড়ে রাখে। এসব দৃশ্য দেখতে দেখতে জয়গুন শরীর ডলে ডলে ধুয়ে নেয় সেদ্ধ ধান, পান-সুপুরি, সুবাস তেলের বাসি ঘ্রাণ, দিনরাতের সব সোহাগ আর সাংসারিক আলাপের গন্ধ।
দ্বিতীয় পক্ষ আসার পর থেকে হারুন শেখের চেহারা খোলতাই। সাদা পাঞ্জাবির পকেটে রুমাল রাখেন। পান খেয়ে মুখের কোণা মুছে নেন। সামনে ফাজলামোর সাহস কেউ পায়নি। তবে চলতিপথে বাতাসে দু-একটা কথা ভেসে আসে। জীবনের বিস্তর লড়াই তাকে নানাকিছু উপেক্ষার ক্ষমতা দিয়েছে। গত বুধবার আড়তের খবর নিতে যাচ্ছিলেন বারেকের টানা রিকশায়। নিষ্পাপ মুখে চায়ের দোকানের আড্ডাবাজ ছেলেরা শুনিয়ে দিলো, ‘আইজকাল কলপের দাম কমছে।’ হারুন শেখ কিছুই শুনলেন না শুধু একটু পানের পিচকিরি ফেললেন পথে। তিনি জানেন, আগুন পোহাতে গেলে মাঝেসাঝে একটু আঁচও লাগে। মাঝেমাঝে জয়গুনের বেহিসেবি হাসি, ঠান্ডা জলে দাঁড়িয়ে থাকার ঘটনা তিনি বোঝেন না তা নয়। তবে সব আমলে নিতে নেই, নিলে সংসার চলে না। তিনি মনকে বোঝান, জয়গুনের উত্তাপ তার আয়ু বাড়িয়েছে। জয়গুনকে সে এতটুকু দেখেছে, কখনো কখনো বাপের সঙ্গে এসে দাঁড়িয়ে থাকত। কত ঘটনার পর এখন জয়গুন তাকে চোখে চোখে শাসন করে! নীরবে সে শাসন মেনে নিয়ে তৃপ্ত হয় হারুন শেখ। আরো একটু সোহাগ করে রাতে জয়গুনের হাত থেকে পান নিয়ে মুখে দিতে দিতে বলেবুঝলা ছোট বউ, আরো দুইটা দুধের গাই দরকার।
– ছোট বউ মুখ চিপে হেসে জানতে চায়, এত দুধ দিয়া আপনি কী করবেন?

– সংসার বড় হইলে খাওয়ার মুখ বাড়বে না?
– আগের পক্ষের শয্যাশায়ী স্ত্রী, দাসী-বান্দি, তাদের ছেলেমেয়ে, রাখাল-জোগাইল সব মিলে জনাকুড়ি মানুষের পাত পড়ে প্রতিবেলা। আরো সংসার বড় চায় সে! জয়গুন কথা ঘোরায়, আপনে বরং আরেট্টু জমি কিনেন। কারিগরপাড়ায় কত বাড়ির চুলায় এখন শিয়াল-কুকুর ঘুমায়। ঘরগুলা আগাছায় 888sport app পড়ছে। শুনি গৃহস্থবাড়ির দরজা দিয়া এখন ঢুড়া সাপ যাতায়াত করে। কম দামে ভিটা পাবেন। তাছাড়া চকের ভেতরের সেই পুরান বাড়িটা, ওইটাও তো নিতে পারেন। ঘাটলা বাঁধানো কত বড় পুকুরসহ কী সুন্দর বাড়ি!
হারুন শেখ বাস্তুভিটে ভালো চিনেন। চকের ভেতরের ওই পতিত বাড়িটা কেউ কিনতে চায় না। বেহিসেবি দিক করে কাটা। উত্তর-দক্ষিণমুখী না হয়ে ভিটে পূর্ব-পশ্চিমের। সে প্রসঙ্গ তুলে তিনি স্ত্রীকে খোঁটা দেন

– কী তোমার বুদ্ধি ছোট বউ, ওই বাড়িতে মানুষ থাকে?

– মানুষ থাকার দরকার নাই, আপনি মালিকানা নেন। পুকুরটা আমার খুব পছন্দের।

– তা তো জানি। বাপের বাড়ি থাকতে তো ওই ডোবায় কম দাপাও নাই। তোমার কিন্তু মাথায় একটু ছিট আছে বউ।
কথা শুনে হাসে জয়গুন। এসব বললেও হারুন শেখ স্ত্রীর সাংসারিক জ্ঞানে মুগ্ধ হয়। ম্যাট্রিক পাশ যুবতী স্ত্রীর মুগ্ধতা নিয়ে তাঁর শরীর জেগে উঠতে চায়। কিন্তু সময়কে সব মূল্য দিতেই হয় জীবনের। জয়গুন কখনো বাধা দেয়নি তাকে; কিন্তু সেটুকু পেলেই বোধহয় ভালো হতো। অনেক পথ পাড়ি দিয়ে আসা মানুষের মন আর শরীরের সংযোগ সমান তালে আগায় না এখন। একটা খুনখুনে চাপা অস্বস্তি শরীরের ভেতর ঘুরে বেড়াতে শুরু করলে হারুন শেখ স্ত্রীর কাছে আশ্রয় খোঁজেন। জয়গুন তাঁর সহমর্মী হয়ে উঠে জানান দেয়, 888sport promo code মাটির মতো। রোদ তাপ বৃষ্টির মতো খেদ খামতি অতৃপ্তিও সে বহন করতে জানে। হারুন শেখের চোখের বাসনাই এখন অধিক, সহজেই সেটুকুর অবসান ঘটলে নির্বিবাদে সে ঘুমিয়ে যায়।
অন্ধকারের জানালা খুলে দিয়ে বসে জয়গুন। পুবদিক থেকে হাওয়া আসে ভেসে। গ্রামের শুরুতেই এ-বাড়িতেও একটা ছোট্ট পুকুর আছে পেছনে। সূর্য ডুবতে শুরু করলে প্রথম আয়োজনটা হয় পুকুরের পানিতে। কমলা রং ছড়িয়ে দিয়ে গাছপালার ভেতর দিয়ে গলে মিশে ডুবে যায় ঠিক মাঝখানে। ওপাশের জংলায় শত শত ভাঁটফুল ফুটে আছে। ফাল্গুনের হাওয়া লেগে সেই গাছ থেকে ঘ্রাণ ছুটে আসে। বসে থাকতে থাকতে জয়গুন টের পায়, বাতাসের সঙ্গে ঘ্রাণ আসার ছন্দ আছে। ঢেঁকির নোটে হাত দিয়ে চালের গুঁড়ো নাড়ার সময় যেমন থেকে থেকে চুড়ির ছন্দ হয়, তেমন করে ছন্দে ছন্দে আসে ঘ্রাণ। জয়গুন সেগুনের পালঙ্কে শুয়ে থাকা ঘুমন্ত মানুষটার মুখের দিকে তাকায়। কৃতজ্ঞতায় জড়িয়ে যায় মনে মনে। বড় গৃহস্থবাড়িতে মেয়ের সংসারের স্বপ্ন পূরণ হয়েছে জয়গুনের বাবার। বছর পাঁচেক হয়ে গেল এখনো নিজের শরীরে নতুন গন্ধ টের পায় নিজের।

দুই
দুই ছেলের পর মেয়েটা সুন্দর হওয়ায় খুশি হয়েছিল বর্গাচাষি জয়নাল। একদিন বৃষ্টি হলে তাদের দক্ষিণ চকের ভেতর সেই পতিত বাড়ির রাস্তায় কাদা জমল। জয়গুনের তখন বছরদশেক হবে। বাপ তাকে সেই পুকুরে গোসল করিয়ে কাঁধে তুলে বাড়ি ফিরেছিল। ধারেকাছে থাকা 888sport promo codeরা টিপ্পনি কাটল – জয়নাল ভাই মাইয়া কান্ধে নিছ, দেশ গাঁওয়ের ক্ষতি হবেনে।

– মাইয়ার পায়ে কাদা লাগবেনে ভাওসাব, তাতেও ক্ষতি কম না আমার।

– অত সোহাগ কইরো না। সোহাগের মানুষ আঘাত বেশি দিবেনে।

– তুমরা চোখ দিও না।

– মাইয়ারে কালির টিপ দিয়া রাইখো।
চলতি পথের কথা বেশি আগায় না। জয়নাল মেয়েকে আরো একটু ঠিকঠাক করে কাঁধে বসিয়ে বলে, আম্মা তুমার কিন্তু পড়ালেখা করা লাগবি। বাপের মাথার ঘন চুলগুলো দু-হাতের ছোট ছোট মুঠিতে ধরে মাথা নাড়লেও জয়গুনের চোখ তখন তালগাছে। সে অবাক হয়ে দ্যাখে, বাবুই পাখি ঘরের ভেতর থেকে বেরিয়ে ফুড়ুৎ করে উড়ে গেল। জয়নালের চোখে তখন মেয়ের ভবিষ্যতের নিশ্চিত সুখের মাছ সাঁতার কাটছে। জয়গুন চমকে দিয়ে জানতে চায়, বাবুইপাখির ঘরে জোনাকি পোকা আলো দেয় আব্বা? মেয়ের কথা শুনে অবাক হয় জয়নাল। ম্যাট্রিক পাশ করিয়ে মেয়েকে সে বড় গৃহস্থবাড়ি বিয়ে দেবে। সে-বাড়িতে খাওয়ার পর খাওয়া আর দাওয়ার পর শোয়ার আতিশয্য থাকবে। এসব ভাবতে ভাবতেই জয়গুনের বাপ বর্গায় পাওয়া ধান মাড়াই করে। মাঝেমধ্যে ফেরার পথে দুটো শাপলা তুলে মালা বানিয়ে আনে মেয়ের জন্য। তিন চার জ্যৈষ্ঠে আমের বোল আসতে আসতে জয়গুনের রূপ খুলে। ইদানীং বাপ আর তার পুকুরে যাওয়া পছন্দ করে না। জয়গুন পাশের বাড়ির মামি বা বান্ধবীদের সঙ্গে চকের পুকুরে রওনা হয়। কাউকে না পেলে একাই হাঁটে। স্কুল থেকে ফিরে একবার না ঝাঁপালে ঠিক আরাম হয় না মনের। মাঝেমধ্যে নিষেধ শোনে তবু ওই জয়গুনের আনন্দ। বড় বাড়ির কতদিনের বাঁধানো পুকুর। চারপাশে গাছপালা। বাড়ির মানুষজন বহু আগে ফেলে রেখে গেছে। ভেতরের দিক দিয়ে ঘাটলা। উলটো দিকে মাঠে গাছপালার ভেতর দিয়ে একসময় গ্রামের মানুষ গোসল করতে আসত। এদিকটায় বড় বড় গাছ খুব ছায়া করে রাখে। কেউ সাধারণত একা এদিকে আসে না। গভীর এই পুকুরে নেমে সে অবাক হয়ে উলটো দিকে থাকা বাড়িটা দ্যাখে। ভেতর দিকে একটা ছোট ভাঙা মন্দিরের আভাস পাওয়া যায়। ক্ষয়ে যাওয়া মাথার কাছটায় এখনো সাপের নকশার মতো কিছু একটা আছে। একসময় নিশ্চয়ই অনেক সরব ছিল। বাড়ির 888sport promo codeরা ঘাটলায় এলে নিশ্চয়ই গ্রামের মানুষজন উঠে যেত। গাছপালায় ছেয়ে ফেলা পতিত বাড়িটার প্রতি কী এক টান জয়গুনের। মাঝেমাঝে ঘুরে দেখতে ইচ্ছে করলেও একা সাহস পায়নি কখনো। একদিন এমন দুপুরে সহযাত্রী না পেয়ে একাই রওনা হয়েছিল সে। একা হলে মানুষ এমন অনেককিছু খেয়াল করে যা অন্যের উপস্থিতিতে উপেক্ষিত থাকে। চলতি পথে জয়গুন দেখল, বাজ পড়ে মাথা মরে যাওয়া মেহগনি গাছটার এক অংশ আবার সতেজ হয়েছে। টানা পথের মাঝামাঝি ডানদিকে নাজমাদের বাড়িতে গরু রাখার ঘরটা সারাই হচ্ছে, পরের বাড়ির উঠোনে টাইম ফুলগুলো কটকটে গোলাপি হয়েছে। আপনমনে এসব দেখতে দেখতে সে মাঠের ভেতরের ওই একলা পুকুরে একটা মাটির দলা ছুড়ে ঢেউ তুলে দেয়। তাকে দেখে টুপ করে ডুব দেয় শাপলা পাতার ওপর উঠে বসা রুপালি মাছ। সরসর করে আঁকাবাঁকা দাগে পানি কেটে যায় একটা মেটে সাপ। এসব সাপ মানুষ দেখলে ভয় পায়। জয়গুন এপাশের এজমালি ঘাটের কাছে কাপড় রেখে আস্তে আস্তে পা ভিজিয়ে নেমে যায় পুকুরে। এক একদিন পানিতে ভাসিয়ে রাখা বাঁশটা ধরে খানিকটা সাঁতরায়। আজ একটু বেশি দেরি করে ফেলল জয়গুন। দুপুর গড়িয়ে গেলে কোলাহলটা চারপাশে কমতে থাকে। পরিচিত এটুকু পথই কেমন অপরিচিত লাগছিল তাঁর। ফেরার পথে গাছের ঝাড় ফেলে মেঠোপথে পা রাখতেই মনে হলো, কেউ অনুসরণ করছে তাকে। দ্রুত পা চালায় জয়গুন। বাড়ি ঢুকে স্বস্তি হলেও মনে হচ্ছে অপরিচিত মানুষটা এ পর্যন্ত পিছু এসেছে। মুখ ভালো করে দ্যাখা হয়নি। কাপড়চোপড়ের ধরনটা শহুরে। পরদিন স্কুলে যাওয়ার পথে মনে হলো, একই মানুষ হাঁটছে পেছনে। ফেরার পথে খালেক কাকার দোকানে বসে থাকা লোকটাকে স্পষ্ট দেখল সে। এ-গ্রামের মানুষ না নিশ্চিত।
আকাশি জামার সঙ্গে সাদা স্কার্ফের ওপর দুলছে জয়গুনের কালো ফিতের দুই বেণি। দোকানটার সীমানা শেষ হতেই হাঁটার সরু পথ শুরু। মেয়েদের মন কিছু ঘটনা নিশ্চিত জানে। বলতে হয় না, এ অপেক্ষা তারই জন্য। এই নিয়ে মোট তিনবার দেখল। এরপরই যেন হাওয়ায় মিলিয়ে গেল। কদিন পর স্কুলে যাওয়ার পথেই টের পেল, সব থমথমে হয়ে আছে। আকস্মিক ছুটি দিয়ে স্কুল থেকে সবাইকে দ্রুত বাড়ি ফিরে যাওয়ার নোটিশ দিয়েছে দপ্তরি। স্কুলের পাশে কারিগরপাড়ার মন্দিরে কারা আগুন দিয়েছে গতরাতে। সেখান থেকে দুই ঘর মানুষ বাক্স-প্যাঁটরা নিয়ে চলে গেছে। ওই পাড়ায় হিন্দু-মুসলমান কয়েক ঘর মানুষ থাকে। ফেলে যাওয়া বসতভিটের বাড়ির দরজার কপাট বাতাসে খটাস খটাস শব্দ করছে। এসব ডামাডোলের ভেতরও জয়গুনের মাথার ভেতর ঘুরছে অচেনা একজনের উপস্থিতি ও অনুপস্থিতি। ছুটির পর বাড়ি ফেরার পথে সে দোকানের সামনে দাঁড়ায়।

– কাকা তুমার দুকানে যে কুঁকড়া চুলের একটা লোকরে দেখি মাঝেমধ্যে, আমাগের গিরামের?

– কারে দেখছস কেমনে বলব? গিরামের অবস্থা ভালো না। বাড়ি যা।

– ও মা, এট্টা অপরিচিত মানুষ দেখে জানতে চাইলাম আর তুমি অবস্থা বুঝাইতেছ।

– কতজনই তো আইসে বসে। খবরদার এখন টইটই করবি না। বাপরে কিন্তু খবর দিবানি।
সদুত্তর না পেয়ে জয়গুন ফিরে আসে ঠিকই কিন্তু মনটা কেমন করে। লোকটা যে কে ছিল জানা হলো না। লসাগু-গসাগু অংক এমনিও তাঁর কোনোদিন মাথায় ঢোকেনি। স্কুল কয়েকদিনের জন্য বন্ধ হলেও সামনে পরীক্ষার দুশ্চিন্তা আছে। এর মধ্যে পরিস্থিতি আরো একটু খারাপ হয়েছে। সোনামুখীর নিরীহ মানুষেরা বোঝে না, আগুনের ঘটনাটা কাদের কাজ। রাত হলে কয়েক ঘরের পুরুষ উঠোনে বসে গোল হয়ে। পরবর্তী শংকা নিয়ে ঘুরেফিরে এক কথা। জয়নাল মিয়া জয়গুনের চলাফেরা নজরে রাখলেও ছেলেদের নিয়ে বিশেষ ভাবেনি। বড়টা লেখাপড়া করল না, বাপের সঙ্গে মজুর দেয়। ছোটটা রোজ বাইসাইকেলে যাতায়াত করে কলেজে পড়ে। এবার দুই ছেলের বাড়ির বাইরে যাওয়ায় নিষেধ আরোপ হলো। সহপাঠীদের সঙ্গে বিকেলে পাশের গ্রামেই স্কুলের অংক শিক্ষকের বাড়ি যাওয়া ছাড়া জয়গুনের এখন বের হওয়ার অনুমতি নেই। এতদিনের চেনা গ্রামই এখন অচেনা লাগে। কারিগর পাড়ার ঘটনাটা তুষের আগুনের মতো। বাইরে দিয়ে হলকা নেই কিন্তু ভেতরে ভেতরে জ্বলছে। বিস্তর আসামির নাম দিয়ে সপ্তাহখানেক পর নতুন মামলা করেছে পুলিশ।

তিন
জয়নাল মিয়া গঞ্জ থেকে বাড়ি এসে বড় ছেলের কাপড় গুছিয়ে, পকেটে দুশো টাকা দিয়ে পাঠিয়ে দেয় দুই গ্রাম পর নানাবাড়িতে। কেউ কিছু জানতে না চাইলেও বোঝে যে, মামলায় নাম উঠেছে। সেদিন রাতেই পুলিশ এসে ধরে নিল ছোট ছেলেকে। ছাড়িয়ে আনার খেসারতে দুই সপ্তাহের ভেতরই মায়ের হাতের দু-গাছা সোনার চুরি গেল উকিলের পেছনে তবুও বিফল হলো চেষ্টা। মৃত বাড়ির ভেতর জয়গুন বসে থাকে। মাঝে মাঝে চোখ যায় চকের দিকে কিন্তু উঠোন থেকে বিশেষ দেখা যায় না। বড়জন বাড়ি নেই, ছোটজনের চালান হয়েছে সদরে।
ঘটনার প্রাথমিক আঘাতও একসময় থিতু হয়। প্রয়োজনেই মানুষের জীবন স্বাভাবিক ছন্দের দিকে ধাবমান হতে চায়। গ্রামের আরো ১৮ জনকে নিয়েছে একইসঙ্গে। সবার যা হয় ছোটজনেরও তাই হবে বলে প্রায় হাল ছেড়ে দিয়েছে সবাই। স্কুল বন্ধ হলে নোটপত্র গুছিয়ে আনতে একবার অংক স্যারের বাড়ি যাওয়া দরকার ছিল জয়গুনের। কয়েকদিনের কামাইয়ে বই খুলে সরল অংকটা করতে বসে মনে হলো কিছুই নেই মাথার ভেতর। অথচ পরীক্ষার আর মাস-দেড়েক আছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে হয়তো আর বের হওয়া হবে না। সেদিন বিকেলে অংক স্যারের বাড়ি যাওয়ার অনুমতি পেলে জয়গুন একটু নিশ্বাস নিল। বান্ধবীরা পাশাপাশি হাঁটছে, আগের মতো কোনো মুখেই আর কথার ঝড় নেই। কারো চাচা, কারো ভাই সে-ঘটনায় এখনো সদরের কারাগারে। পরীক্ষা নিয়েও আর যেন তেমন ভাবনা নেই কারো। মাইল দুই হবে বড়জোর। মাঠের আইল শেষ করে সোজা রাস্তায় পা দিতেই হঠাৎ হাওয়ার ভেতর থেকে উদয় হলো একজন। এক মুহূর্তে জয়গুনের নিশ্বাস আটকে আসার উপক্রম। সেই ঢিলেঢালা প্যান্ট আর বুকের ওপর 888sport appsের মানচিত্র আঁকা গেঞ্জি গায়ে মানুষটা। চুলগুলো যথারীতি আগের মতোই এলোমেলো। চোখটা কেমন উদ্ভ্রান্তের মতো মনে হলো একবার তাকিয়ে। জয়গুনের পা ভারি হয়ে ওঠে। পথ দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে আশঙ্কা করতে করতেই লোকটা কাছে এলো। নিজের অজান্তে জয়গুনও যেন গতি কমিয়েছিল। বান্ধবীরা এগিয়ে গিয়েছে। সাদা গেঞ্জি ঠিক তার পাশে এসে পড়েছে। – তুমার নাম জয়গুন?

– জি।

– জরুরি কথা ছিল। আমি তারা মন্ডল।

– আপনি পিছু নিছেন কেন?

– পিছু নিয়েছি? খালেক কাকার দোকানে তুমি আমার খোঁজ নিলে কেন?

– কেন খুঁজব?

– জিজ্ঞেস করার সময় আমার বন্ধু বসা ছিল।
জয়গুন বইগুলো আরো চেপে ধরে পায়ের বুড়ো আঙুল দিয়ে মাটি খুঁটতে শুরু করে।

– কারিগরপাড়ায় আমাদের ঘর তবে আমি থাকি শহরে। টিউশনি করি, অনার্সে পড়ি। তোমার ভাই ছাড়া পাইছে?

– না চেষ্টা চলতেছে; কিন্তু আপনার কী কথা?

– শোনো জয়গুন, আগুন কে দিছে আমরা কেউই জানি না তবে সামনে নির্বাচনের জন্য এই আয়োজন এটুকু জানি। বিপদ আরো বাড়বে। আমার হয়তো আর সহসা গ্রামে আসা হবে না। তোমাকে একটা কথা বলতে আসছি।
হাঁটাপথেই কথা হচ্ছিল। মানুষটা দ্রুত কথা বলে যাচ্ছে তবে গলার স্বরে কী যেন একটা আছে। জয়গুনের ভেতরে ভেতরে একটু অভিমানও হচ্ছে। এই লোকটা তো তাকে পরিস্থিতি অস্বাভাবিক হওয়ার আগে থেকেই খেয়াল করছিল। সব খবরও জানে, তাহলে এতদিন কোথায় ছিল। যদিও এসব মনের কথা, জয়গুন মুখ নিচু করে হেঁটে চলেছে পাশে পাশে।

– কী বলতে আসছেন?

– একটা জিনিস দিব বলে অপেক্ষা করছি। দামি কিছু না, হাতটা পাতো।

– আপনার সঙ্গে আমার পরিচয় নাই।

– জয়গুন আমার হাতে সময় বেশি নাই। কালকেই আবার শহরে ফিরব শুধু তোমাকে একটা জিনিস দিব বলে অপেক্ষা করছিলাম। এর মধ্যে এত ঘটনা ঘটে যাওয়ায় আমি হোস্টেলে ফিরেছিলাম। আবার কবে আসা হবে জানি না। হাতটা দাও জয়গুন।
জয়গুন এতক্ষণে যাও একটু সাহস নিয়ে কথা বলছিল এবারে কুঁকড়ে গেল। চারপাশ দিয়ে চেনাজানা মানুষের যাতায়াত। বান্ধবীরা এগিয়ে গিয়ে আবার মুখ ফিরিয়ে তাকিয়ে আছে। যদিও চারপাশের আতংকে আটজনের দল এখন তিনজনে এসেছে। এই লোকটা কেন এমন করছে জয়গুন বুঝতে পারছে না। তবে এ-কয়দিন ধরে ঘরবন্দি থাকতে থাকতে নানা ঘটনার আঘাতের ভেতর সেও যে আরো একা হয়েছে তা টের পেয়েছে। একা হলে মানুষের অনেক কিছুতে মন যায়। কখন থেকে যেন থেকে থেকে মনে পড়ত তার। সামনে এসে কথা বললে হয়তো এমন হতো না। সেই যে মানুষটা দুদিন তার জন্য বসেছিল আর দেখল না। সে হাত না বাড়িয়ে বইগুলো আরো শক্ত করে ধরে রইল। জয়গুনের মনে হচ্ছে মাঠঘাট-পুকুর সবকিছু এর সাক্ষী হয়ে রইল। তারা মণ্ডল জয়গুনের সামনে নিজের হাতের মুঠো খুলল। ষোলো বছরের জীবনে এমন বিস্ময় আর তার হয়নি। মানুষটার বাড়িয়ে দেওয়া হাতে কয়েকটা সামান্য ফুল শুকিয়ে কাগজের মতো হয়ে আছে।

– তুমি সেদিন পুকুর থেকে উঠে বাড়ি ফেরার পথে এই ফুল ছিঁড়ে গন্ধ নিলে তারপর কানে গুঁজে রাখলে। তোমার চুল থেকে জল ঝরছিল টুপটুপ করে!

– এগুলা ঘেঁটু ফুল না? দুনিয়ার এত ফুল থাকতে এই ফুলের গন্ধ নিব কেন!

– ঘেঁটু না, বলো ভাঁটফুল। বইয়ের নাম ভাঁট। তুমি আপনমনেই তুলেছিলে। জয়গুন, কয়েকটা ফুল দিব বলেই আমি সেদিন থেকে অপেক্ষা করছি।

– আপনি সত্যি অদ্ভুত মানুষ।

– ঘটনার পেছনের কারণ না জানলে অনেক কিছুই অদ্ভুত মনে হতে পারে কিন্তু আমি অদ্ভুত না। তুমি ফুলগুলো নিলে আমার আর কিছু চাওয়ার থাকবে না। কিছু প্রত্যাশা করাও সম্ভব না। শুধু এটুকু দিতেই আমি আজ তোমার স্যারের বাড়ি পর্যন্ত যেয়ে অপেক্ষা করেছি ফেরার। আবার কখনো দেখা হলে বলব, এই সামান্য শুকিয়ে যাওয়া ফুলগুলো কেন অমূল্য আমার কাছে। হাতে না নাও, বইটা দাও।
বইয়ের মাঝখানে তারা মন্ডল রাখলো কয়েকটি শুকনো ভাঁটফুল। ফিরিয়ে দিতে দিতে বলল, জগতে এত ফুল থাকতে কোনো 888sport promo code মনের আনন্দে ভাঁটফুল তুলে কানে গুঁজে রাখতে পারে যেমন ভাবিনি তেমনি সে-ঘটনা আমার 888sport app download apkটা পড়ার পরই ঘটতে পারে এখনো অবিশ্বাস্য মনে হয়। আবার কখনো দেখা হলে সেদিন না হয় বলব গল্পটা। তুমি স্নান করে ফেরার পথে আপনমনে গান গাইতে গাইতে চকের পাশের রাস্তা থেকে ভাঁটফুল তুলে নিয়েছিলে। এবার বাড়ি ফের, বান্ধবীরা অপেক্ষা করছে।
এমন আশ্চর্য ঘটনায় জয়গুন ঝড়ের পর মুহূর্তের মতো স্তব্ধ হলো।

– তোমাকে এগিয়ে দিয়ে আসতে পারি কিন্তু তা ভালো দেখাবে না। এবার এসো জয়গুন।
এরপর তারা মন্ডলের সঙ্গে জয়গুনের আর একবারই দেখা হয়েছিল। তার বিয়ের মাত্র পনেরো দিন আগে। তারা মন্ডল অপেক্ষা করেছিল চকের পুকুরের পাশে। এর মধ্যে চারপাশের পরিবেশ আরো বদলেছে। পরীক্ষা শেষ হয়েছে। পাশ-ফেলের সুযোগ সমান সমান। এ নিয়ে আর সে এখন বিশেষ ভাবে না। আচমকা জীবন এমন সবকিছুতে বদলে যাওয়ায় স্বাভাবিক ইচ্ছেগুলোও পালটে গেছে। ছোটভাই বাড়ি ফিরেছে অন্য মানুষ হয়ে।

চার
হঠাৎ আসা এ-বিপদে শুধু জয়নাল মিয়া নয়, গ্রামের সরল কয়েকটি পরিবারই টের পেয়েছে যে, বন্দুক তাদের কাঁধে রাখা। মামলায় অজ্ঞাতপরিচয় আসামির 888sport free bet শতাধিক। সকলেই যার যার মতো পরিত্রাণের পথ খুঁজতে উকিল-মোক্তার, মুরুব্বিদের কাছে গেল। জয়নাল সময়ে সময়ে হারুন শেখের নুন খেয়েছে। হারুন শেখ মানুষ ভালো। না-হলে এত সহায়-সম্পদ থাকতেও বাতাস লেগে শয্যাশায়ী স্ত্রী নিয়ে কেউ পঁচিশ বছর সংসার করে না। জয়নালের ছোট ছেলের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলার সুরাহা করতে সে উকিলের সঙ্গে কথা বলেছে। তালিকা থেকে আসামির নাম কাটা না গেলেও জামিন হয়েছে। ছেলে বাড়ি ফিরে আসায় সে সম্ভব হলে হারুন শেখের পায়ে উপুড় হয়ে থাকে। প্রশ্রয় পেলেই মানুষ আশ্রয়ও খোঁজে। বড় বিপদ কেটে গেলে জয়নাল হারুন শেখের কাছে মেয়ের প্রসঙ্গ তুললে। – গাঁও-গেরামের অবস্থা তো জানেন সবই। মেয়েটা বড় হইছে। আপনি একটা ব্যবস্থা করে দেন।

– তোমার মেয়ে না এইবার পরীক্ষা দিলো? পড়াবা না আর?

– অনেক পড়ছে। এইবার ভালো একটা ছেলে পাইলে হাতে তুলে দিয়ে নিশ্চিন্ত হই।
‘আচ্ছা ভাবতে সময় দাও’ বলে হারুন শেখ বাড়ির ভেতরে উঠে গেলেন।
সপ্তাহখানেক পর প্রস্তাবটা আনল শেখের গোমস্তা। জয়নাল ঘটনায় হতভম্ব হয়ে বুদ্ধির জন্য স্ত্রীর শরণাপন্ন হলেন। বর্গাচাষীর অভাবের সংসারের 888sport promo codeমনের দ্বিধা চাপা রেখেই মুখে বললেন, আলহামদুলিল্লাহ। পুরুষের বয়স নাই। জয়গুন এ-প্রস্তাব শুনে প্রথমে হেসে গড়িয়ে পড়ল। হাসতে হাসতে তার চোখে পানি এলো। সেই পানি লুকোতে সে আরো খানিকক্ষণ হাসল। তার বাপ মেয়ের সামনে আসতে পারছে না। মা অসহায় মুখ করে চেয়ে রইল। শহরের সেই ফুলওয়ালা মানুষটার আর দেখা পাওয়া যায়নি মাস-দুয়েকের মধ্যে। জয়গুনের কানের ভেতর দুটো শব্দ মৌমাছির মতো গুনগুন করে। ভাঁটফুল আর স্নান। প্রথম শব্দটি যুক্ত হওয়ার আভাস দিলেই যুক্তাক্ষরের স্নান শব্দটি জানান দেয়, অপরিমাপযোগ্য দূরত্বের। এদিকে, হারুন শেখের গোমস্তা আরো কয়েক দফা যাতায়াত করল এ-বাড়িতে। অবশেষে একদিন মুখোমুখি হতে হলো জয়গুনকে। কোনোরকম ভনিতা ছাড়াই সে সিদ্ধান্ত নিয়ে একটা শর্ত আরোপ করল।

– আমার কোনো আপত্তি নাই কিন্তু একটা শর্ত আছে। নিজের সংসার হইলে আমাকে কেউ দেখতে যাবা না আর আমিও আসব না এ-বাড়ি। আমার মৃত্যুর খবর পাইলেও না।
জয়গুনের মা স্বামীকে বোঝালেন, এসব অভিমানের কথা। সুখের নদীতে পড়লে দেইখেন মেয়ে বাপ-মায়েরে কদমবুচি করবে। মেয়েরে এখন আহ্লাদ দিয়েন না। তবুও জয়নাল মিয়ার মন কেমন করে আবার এতবড় সুযোগ হাতছাড়াই বা করে কেমন করে। স্ত্রী তাকে ভবিষ্যৎ আশংকার ভয় দেখায়। আপনের ছেলের কিন্তু জামিন হইছে, নাম কাটে নাই। আবার ধইরা নিলে আপনি এইবার কোন মুরুব্বির কাছে যাবেন? মেয়েরে আশকারা দিয়েন না। কাউকে না কাউকে এগিয়ে এসে কঠোর হতেই হয়। জয়গুনের মা সে-ভূমিকা পালন করলেও মেয়ের মুখের দিকে তাকালে তার বুক কাঁপে। প্রয়াত শাশুড়ির কথা মনে পড়ে। নাতনির জন্মের সময় বলছিল, তুলা রাশির হইছে। সাবধানে বড় কইরো বউ। জয়গুনের ভাবগতিও তার ঠিক ভালো লাগে না। মেয়ে যদি সরাসরি না করত তাহলেও সে নিশ্চিন্ত হতো। অস্বাভাবিক সেই হাসি তারপরই রাজি হয়ে শর্তারোপ করায় কেমন যেন লাগে জয়গুনের মায়ের। মনে হয়, যত দ্রুত হয়ে যায় ভালো। সপ্তাহ-দুই সময় পাওয়া গেল সামান্য আয়োজনের। জয়গুনের সুখের কপাল নিয়ে এখন সবাই নিশ্চিন্ত। চলাফেরায় বিধিনিষেধও শিথিল হয়েছে।

পাঁচ
অবহেলাভরে তুলে নেওয়া ভাঁটফুলগুলো কোন গাছটার ছিল মনে করতে পারে না সে। বইয়ের ভেতর ঘুমিয়ে থাকা শুকনো পাঁপড়িগুলোকে একবার স্পর্শ করে জয়গুন। তারপর চুলো থেকে আগুন নিয়ে পুড়িয়ে দেয় উঠোনে। জয়গুনের মা হায় হায় করে ছুটে এলে জয়গুন জানায়, ফেল করলে এই অংকেই করব। কিন্তু আর পরীক্ষা দিব না আমি, তাই দিলাম ছাই কইরা। অদ্ভুত দৃষ্টিতে মেয়ের দিকে তাকিয়ে থাকে সে। আর মাত্র কয়েকটা দিন গেলেই অজানা আতঙ্ক থেকে রেহাই হয়। পুরুষ মানুষের বয়স নাই বলতে বলতে বিয়ের তদারকি শুরু করে মেয়ের। নিয়ম শিথিলের সুযোগে চকের পুকুরে দু-একবার যেয়ে বসে থাকলেও আর নামতে ইচ্ছে করে না জয়গুনের। আর মাত্র কয়েকটা দিন এ-বাড়িতে থাকবে সে। ঘাটের পাশে বসে ছোটবেলায় দাদির কাছ থেকে পান নিয়ে খাওয়ার 888sport sign up bonus মনে করে; কিন্তু ভবিষ্যৎ নিয়ে কোনো দৃশ্যই তার কল্পনায় আসে না। আচমকা পেছনে কারো ছায়া নড়ে ওঠে। পানিতে সে-ছায়া পড়ে। – জয়গুন তুমি বিয়েতে রাজি হয়েছ না?

– আপনি আবার আসছেন গ্রামে?

– তোমাকে গল্পটা বলা হয়নি তাই এলাম। হয়তো আর কখনো দেখা হবে না, তুমিও জানো, তাই মনে হলো গল্পটা বলে যাই।

– বলেন আপনার গল্প শুনি।

– বেহুলার নাম শুনেছ?

– দাদির কাছে বাসরঘরে সাপ ঢোকার পালা শুনছি। আপনার গল্প বলেন। শুনে বাড়ি ফিরব।

– এই চকের শেষ মাথায় আমার বন্ধুর বাড়ি। সেবার ওদের বাড়ি গিয়েছিলাম। এখান দিয়ে ফেরার পথে এই পুকুরে একটু হাত-পা ধুয়ে নেব ভেবেছিলাম। কাছে যেতেই মনে হলো একটা গুনগুন সুর ভেসে আসছে। এগিয়ে দেখি এক 888sport promo code আপনমনে গান গাইতে গাইতে স্নান করছে।

– আর আপনে তাই দেখলেন?

– না জয়গুন। জলের কাছে না যেয়ে সরে গাছতলায় বসলাম। ভাবলাম উঠে যাওয়ার অপেক্ষা করি। দেখলাম তুমি আপনমনে স্নান করতে করতে একা একা হাসছ, পাখিকে ধমকালে। আমি আমোদ পাচ্ছিলাম শুনে শুনে। বিশ্বাস করো তোমার স্নানের সময় তাকাইনি। গাছের তলায় বসে আকাশ-বাতাস দেখতে দেখতে ভাবলাম, কত রকম পাগল আছে। সে-সময় তীব্র ঘ্রাণ পাচ্ছিলাম ফুলের। পুকুরের পাশে ভাঁটফুলের ঝোপ। আর সেই 888sport app download apkটা তখন আমার মাথায় ঘুরছে। মনে হলো, তুমিও বেহুলার মতো পাগল। পাগল না হলে কোনো মেয়ে এই ভরদুপুরে একা মাঠের ভেতরের এই পুকুরে আসে!

– বেহুলা কী করছিল?

– স্বামীকে সাপে কাটার পর ইন্দ্রর সভায় গিয়েছিল স্বামীর প্রাণভিক্ষা চাইতে।

– তারপর?

– তাকে ইন্দ্রর সভায় নাচতে হয়েছিল। এটুকু গল্প কিন্তু জীবনানন্দ দাশ সেই গল্পটাকে কল্পনা করেছেন নিজের মতো করে। অমরার সেই সভায় ছিন্ন খঞ্জনার মতো নেচেছিল বেহুলা। বাংলার নদী মাঠ ভাঁটফুল ঘুঙুরের মতো তার পায়ে কেঁদেছিল। ‘রূপসী বাংলা’ 888sport app download apkটা পড়ালেন আমাদের একজন বাংলার শিক্ষক। কেন যেন কল্পনাটা আমার মাথার ভেতর ঢুকে গেল। তার পরদিনই ছুটিতে বাড়ি এলাম।
জয়গুন, আমি ভেবেছিলাম তুমি উঠে গেলেই হাত-পা ধুয়ে নেব। অথচ তোমার যেন স্নান শেষই হতে চায় না। আবার হাঁটা শুরু করব ভাবছি তখন তুমি উঠলে। গায়ে ভেজা কাপড় নিয়েও কোনো হেলদোল নেই জ্বর-ঠান্ডার। এরপর দেখি, এতক্ষণ যে ফুলগুলোর ঘ্রাণ পাচ্ছিলাম তুমি আপনমনে সেই বেগুনি ফুলই তুললে তারপর নিজের কানে গুঁজে নিয়ে হাঁটতে শুরু করলে। আমিও সেখান থেকে ফুল তুলে নিলাম। যে-ফুলগুলো দেব বলে কয়েক মাস ধরে অপেক্ষা করেছি।

– আমি বইসহ সব পুড়ায় ফেলছি।

– ভালো করেছ। তাই হয়তো উচিত ছিল। তারপর তোমার পেছনে গেলাম। দেখলাম কোন বাড়ির মেয়ে তুমি।

– আপনি তো আমার নাম শুনছেন আগেই তবুও কেন ফুল দিতে আসছিলেন?

– ফুল দিলে কী হয় জয়গুন?
জয়গুনের মুখ নিচু হয়ে চিবুক প্রায় বুক স্পর্শ করতে চাইছে। তার চোখ ছলছল করছে। কোনোমতে শুধু বলল, অপেক্ষা শুরু হয়।

– বেহুলাকেও তার স্বামীর প্রাণ ফিরে পেতে বহুদিন অপেক্ষা করতে হয়েছে জয়গুন। যে-আগুনে হিন্দুদের মন্দির পুড়েছিল সে-আগুন মুসলমানও কি পোহায়নি? অথচ আমরা কেউ জানি না আগুন সত্যি কারা দিয়েছিল। ফুলের যেমন কোনো ধর্ম নেই, তেমনি মানুষের বিশেষ আবেগেরও পৃথক কোনো ধর্ম হয় না। ওই অনুভবই সে-আবেগের পরিচয়। তাকে বাস্তবায়ন করতে গেলেই তখন ব্যক্তিমানুষটির ধর্ম আসে। তাই মনে হয়েছিল অন্তত ফুলগুলো তোমাকে দিতে চাই আমি।

– দিয়ে ভারমুক্ত হতে চাইছিলেন আপনি। আপনার কাছে বইয়ের 888sport app download apk পইড়া যা শুধু আনন্দ-কল্পনা তা আরেকজনের কাছে আরো বিশেষ কিছু হইতে পারে, সে-কথাটা আপনার মনে হয় নাই। ভালোই হইছে মনে হয় নাই।

– এভাবে কেন বলছ? তোমাকে দেখেই আমার বেহুলার কথা মনে হয়েছিল জয়গুন; কিন্তু আমি জানি এ-কতটা অসম্ভব কল্পনা। শুধু ফুলটুকুই দিতে চেয়েছি।

– আমিও শুধু ফুলই নিছি আর বইসহ পুড়ায়েও দিছি। আপনি বেহুলার আত্মত্যাগে মুগ্ধ হইছেন, আমি হই নাই। যদি বাসরঘরে সাপ বেহুলারে কাটত তাইলে কি করত লখিন্দর? আর আপনার কবি কী লিখত তাই ভাবলাম।

– ফুলগুলো পুড়িয়ে দিয়ে ভালোই করেছ। বেহিসেবি 888sport sign up bonus মনে রেখে বরং বোঝা বাড়ানো।

– আর কিছু বলার না থাকলে আমি উঠব। সন্ধ্যা হইতেছে।

– এসো। আর সিদ্ধান্ত যখন নিয়েই ফেলেছ, সতত সুখে থাকো প্রার্থনা করি।

– আমার জন্য আপনারে আর কিছু প্রার্থনা করতে হবে না। আপনার সঙ্গে আমার আর দেখা হবে না।

– যেন দেখা না হয়।

ছয়
বৈষয়িক বিষয়ে পরিবর্তন আসতে সবসময় দীর্ঘ অপেক্ষা প্রয়োজন হয় না। হারুন শেখ ছোটবউয়ের কথা শুনেই কারিগরপাড়ার কিছু জমি কিনেছিলেন। চকের ভেতর পতিত বাড়িটা নিয়ে দ্বিধায় আছেন। জয়গুনও জেদ ছাড়ছে না। অগত্যা চেয়ারম্যানের সঙ্গে
কথা বলে বায়না করলেন বাড়ির। কতদিন আগে কারা না কারা বানিয়েছিল এমন অলক্ষুণে উত্তর-দক্ষিণমুখী বাড়ি! সেজন্যই হয়তোবা কেউ নেই বহুদিন। ফেলে রেখে চলে যেতে হয়েছে অথবা কোনো অসুখে সবাই একসঙ্গে গত হয়েছে। সময়-সুযোগমতো এ-বাড়ি ভেঙে নতুন কিছু করা যাবে ভেবে তিনি বায়না করে ফেলে রাখলেন বছরখানেক। পুকুরের উলটোদিকের সে-বাড়িতে জয়গুন একবারই গিয়েছে। হারুন শেখ বিস্মিত হয়েছিলেন বউয়ের কথায়। লতাপাতা জন্মানো বাড়িটা পরিষ্কার করানো হবে শুনে একরাতে জয়গুন বেশ গা ঘেঁষে বসল। নিচু স্বরে আব্দার করে বলল – নতুন ঘর তুললে গাছগাছালিগুলা কাইটা ফেলতে হবে না?- তা তো কাটতেই হবে। আমি তো আর ওইরকম রাখব না।

– একপাশে কতগুলা জংলা গাছ আছে ঘেঁটু ফুলের সেইগুলাও কাটবেন?

– এত গাছ রাইখা তুমি ঘেঁটু গাছগুলার কথা ভাবতেছ? ওইগুলা কাটা লাগবে না। কাজ শুরু হইলে মিস্ত্রি জোগাইলগো পায়ের তলায় এমনি মইরা যাবে।

– ও আচ্ছা।

– তবে বাড়ি ওইখানে হবে কি না আমি বুঝতেছি না।

– কেন?

– বাড়ি তো পতিত ছোটবউ। চেয়ারম্যানের সঙ্গে কিছু টাকা-পয়সা খরচ কইরা কাগজপত্র আগায় রাখছি। এখন শুনি কারিগরপাড়ার এক ছেলে আবার লেখাপড়া শিখা তাবড় হইছে। সে ওই জমি নিতে চায়। এর মধ্যে খবর পাঠাইছে, সে দাম বেশি দিয়া হইলেও ওই জমি নিবে। তোমার কথা শুইনা লাভই হইছিল বউ। হাজার-পঞ্চাশেক টাকা খরচ কইরা এখন লাখ তিনেকের দাঁও মারতে পারলে কত হইল লাভ?

– আপনি জমিটা ছাইড়েন না।

– আমি তো সেই লোকরে কালকে দুপুরে আসতে বলছি কথা বলতে। একটু দেখাও দরকার। কারিগরপাড়ার ছেলে রহিম শেখের কাছে জমি কিনতে চায়! এরে বলে দুনিয়া বদলায় যাওয়া। তুমি ভাইব না। যা বলছে, কথা ঠিক রাখলে এই টাকা দিয়া আরো ভালো জমি কিনা দিব। মন খারাপ রাইখ না, তুমি বরং ভালো একটা খাওয়ার ব্যবস্থা কইরো। লেখাপড়া জানা লোক হাতে রাখা ভালো।

পরদিন দুপুরের আগে আগেই মেহমান এলে খবর গেল ভেতরের বাড়ি। আয়োজন দেখে স্বয়ং রহিম শেখ চমকে উঠলেন। তাকে আরো চমকে দিয়ে কিছুক্ষণ পর উপস্থিত হলো জয়গুন। ততক্ষণে বিষয়-আশয়ের কথা শুরু হয়েছে। জয়গুন ঘরে ঢুকেই জানতে চাইল, কেমন হয়েছে রান্না। হারুন শেখ অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলেন স্ত্রীর দিকে। সপ্রতিভ কণ্ঠেই জয়গুন জানাল – এই বাড়িটা আমার খুব পছন্দের। শুনলাম আপনি কিনবেন। পুকুরের ঘাটলাটা ভাঙবেন কি না খুব জানতে ইচ্ছা করল। – তেমন কিছু এখনো ভাবিনি। আপনি নিষেধ করছেন?

– আপনার জমি আপনি যা খুশি করবেন। আমরা নিষেধ করব কেন, তবে আপনি ঘাটলাটা ভাঙলে আমি একবার তার আগে ঘুইরা দেইখা আসতে চাই।

– আপনার যখন ইচ্ছা যাবেন। সেসব নিয়ে ভাবার এখনো অনেক দেরি।

– পুকুরটা কত বড় মাপে?

– ওই গ্রামেরই মেয়ে, আপনি তো দেখেছেন। সাড়ে তিনশো গজের মতো হবে হয়তো।
মেহমানের সঙ্গে স্ত্রীর কথোপকথনের ধরনে কিছুটা বিস্মিত হলেন রহিম শেখ। মধ্যস্থতা করতে এগিয়ে এলেন।

– আসলে হইছে কি, আমার স্ত্রী ছোটবেলায় ওই পুকুরে অনেকবার গেছে। তার একটা মায়া পড়ে গেছে। আপনি কিছু মনে কইরেন না।

– জীবনের কোনো কোনো 888sport sign up bonus অমূল্য আবার অনেকে তা সহজে নষ্টও করতে পারে।
রহিম শেখ কথা আর আগালেন না। শিক্ষিত মানুষের সামনে স্ত্রীকে হাত ধোয়ার পানি দেওয়ার কথাও বলতে পারলেন না বরং নিজেই বারান্দায় গেলেন হাঁক দিতে।
জয়গুনের স্বামীর বড় কাছারিঘরে মুখোমুখি বসে থাকা অতিথি শুধু দুটো কথা বললেন।

– একটা প্যাকেট রেখে যাবো তোমাদের পেছনের পুকুরের আমগাছটার কাছে। সম্ভব হলে কাল সকালে একবারের জন্য আসবে চকের পুকুরে?

– আপনি জমি কিনতে আসছেন জমি কিনেন।
রহিম শেখ ফিরে এলে বিদায় নিয়ে চলে এলো জয়গুন। এঁটো বাসন-কোসন ধুতে দিয়ে নিজেই হাত লাগিয়ে পরিষ্কার করল মেহমানের খাওয়ার প্লেটটা। ঘরের কাজ গুছিয়ে জয়গুন গেল বাড়ির পুকুরে। আজ আর নামতে ইচ্ছে হলো না। আমগাছটার কাছে যেয়েও অভিমানে একবার ফিরে আসতে ইচ্ছে করল তার। কিছুদূর ফিরে এসে আবার গেল। নিয়ে এলো প্যাকেটটা। ঘরে ফিরে কপাট দিয়ে খুলল সে-প্যাকেট। একটা শাড়ি। কাল সকাল হতে এখনো দুটো বেলা আছে। জয়গুন আর কোনোদিন মুখ দেখবে না বলেছিল কিন্তু মানুষটা এ-কথাটাও রাখল না। কত আর দূর চকের পতিত বাড়িটা! এই তো তার বাপের বাড়ির পাশেই। রহিম শেখের ভাতঘুম গাঢ় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বেরিয়ে গেল জয়গুন।
আজ সে বাড়িটার ঘাটলায় বসে থাকবে একা। পরে ভাবা যাবে কাল সকালের কথা। কেনই বা সে রাজি হবে দেখা করার প্রস্তাবে! সে-ই তো পালিয়ে যাওয়া মানুষ। বই মুখস্থ করে বড় বড় কথা শুধু। কত দ্রুত জয়গুন হেঁটে এসেছিল তা শুধু জানে পথের ঘাস আর গাছপালা। কেউ কেউ তাকিয়ে দেখেছে, নতুন বউয়ের মতো এক 888sport promo code ঝড়ের বেগে হেঁটে যাচ্ছে চকের ভেতর। ঘোরাপথে পৌঁছে সে পতিত বাড়িটার পাশের জংধরা টিনের গেট দিয়ে ঢুকেছিল। আলো নরম হয়ে আসছে দ্রুত। এভাবে আসতে যেয়ে শাড়ির পাড়ে ধুলোর মাখামাখি হয়েছে। চুলগুলো লেপ্টে গেছে কপালের সঙ্গে। ঘাটের সিঁড়ি দিয়ে নেমে সে যখন পা ধুয়ে নিচ্ছে তখন আলো আকাশের কোলের ভেতর গুটিয়ে যাচ্ছে। ওপাশের গাছগুলো আরো গাঢ় হয়ে আসছে। কিছুক্ষণ সে একা বসবে এইখানে। এক পা ধুয়ে আরেক পা নামিয়ে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাটা ঘটল। একটা মুহূর্ত শুধু। কী যেন একটা পেছন থেকে এসে সরসর করে আবার এগিয়ে গেল পুকুরের দিকে। জয়গুনের গোড়ালির কাছে সমান মাপের দুটো দাগ হলো। সিঁড়িতে বসে পড়ল জয়গুন। যন্ত্রণা শুরুর আগে একবার পেছনে ফিরে তাকাল মনসা মন্দিরের দিকে। কিছুক্ষণের মধ্যে তার 888sport sign up bonus এলোমেলো হতে শুরু করল। একবার মনে হলো, বাপের কাঁধে বসে এই পুকুর থেকে বাড়ি ফিরছে সে। বাবুই পাখিটা ঘরের সামনে মুখ বের করে দেখছে তাকে। ঘেমে উঠতে উঠতে জয়গুন দেখল, দূরে চলে যাচ্ছে একটা মানুষ। যেতে যেতে মানুষটা ভাঁটফুল হয়ে মিশে গেল গাছপালার ভেতর। কাউকে ডাকতে ইচ্ছে করল না জয়গুনের। কেউ শুনতেও পেত না তার ডাক। মনে হলো বেহুলার মাথা কোলে নিয়ে বসে কাঁদছে লখিন্দর।
খুঁজতে-আসা মানুষেরা শুধু দেখল, পতিত বাড়ির ঘাটের সিঁড়িতে শুয়ে আছে নীল হয়ে যাওয়া জয়গুন। লাল পাড়ের ঘিয়ে ঘিয়ে শাড়ির জয়গুনের চুল লেপ্টে আছে মুখে। ভিড়ের ভেতর দাঁড়িয়ে থাকা একজন মানুষ শুধু দেখল, চারপাশে ফুটে উঠছে হাজার হাজার ভাঁটফুল। তাদের তীব্র গন্ধে সে উদ্‌ভ্রান্ত হয়ে যেতে যেতে বলল … এ-বাড়ির নাম ভাঁটফুল, ভাঁটফুল।