মুহম্মদ হায়দার
ব্যক্তিগত প্রেম-অপ্রেম, প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি কিংবা আনন্দ-বেদনার গান একজন কবি গাইবেন নিশ্চয়ই; তবে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর অধিকারের গান কবির উতরোল আবেগে ঢেউ না জাগালে তাঁর মানবভাবনার যথার্থ উৎসারণ সম্ভব হয় না। তাই গণচেতনার মধ্যেই লক্ষ করা যায় একজন কবির মানববীক্ষার সম্যক প্রতিফলন। পুঁজিতাড়িত সমাজে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর মুক্তিচেতনা নানাভাবে মুখ থুবড়ে পড়ছে। বিংশ শতাব্দীর সমাজতান্ত্রিককাল পুঁজিঅলাদের আরো চতুর বানিয়েছে। একবিংশ শতাব্দীতে পুঁজির চাতুর্য এতটাই সূক্ষ্ম ও নিরঙ্কুশ যে, কেবল তেত্রিশ কোটির মুখের গ্রাস কেড়ে-খাওয়া শোষকের সর্বনাশ লেখার জন্যে রক্তের অক্ষর কিংবা ‘ফুল খেলবার দিন নয়’ বলে রাজপথে নেমে এলেই শোষণমুক্তির পথ পাওয়ার আশা এখন করা যায় না। পুঁজিঅলার চাতুর্য বোঝার জন্যে মানবচরিত্রের নানা মাত্রা ও তল অনুভবের কষ্টিপাথরে নিরীক্ষণ করতে হয়। কেননা শোষক ও শোষিতের ভূমিকা অনবরত পরিবর্তিত হচ্ছে। অধিকাংশ চরিত্র এখন একক কোনো দর্শন বা নীতির অধীনে আবর্তিত নয়। চরিত্র এখন বহুমাত্রিক কিংবা বলা চলে একই অঙ্গে বহু রূপ। সমাজের সংবেদনাকে আপন অনুভবে সংশ্লিষ্ট করে একজন কবি মানবচরিত্রের সমূহ মাত্রাকে আবিষ্কার করে নিয়ে গড়ে তোলেন 888sport app download apk-সংসার। সত্তরের দশকে সদ্যস্বাধীন 888sport appsের নতুন জল-হাওয়ায় 888sport app download apkকে আশ্লেষে গ্রহণ করে বিলম্বিত লয়ে 888sport app download apkর সংসার সাজাতে থাকেন কবি মাহবুব বারী (জ ১৯৫০)। ব্যক্তি-মানুষের লালসা, সুবিধাসন্ধানী শৃগালদৃষ্টি, আপসকামিতা কিংবা সামরিক শাসক, কুলটা রাজনীতিক ও ধর্মব্যবসায়ীর কানামাছি খেলা দেখতে দেখতে তাঁর কবিসত্তার বেড়ে ওঠা। মুক্তির স্বপ্ন বারবার হোঁচট খায়, কিন্তু মরে যায় না। জীবনের প্রতি প্রবল আকর্ষণ আর বাস্তবতার প্রবল ঝাঁকুনি তাঁর বোধের জগতে তৈরি করে জৈনের নিরাসক্তি। তাঁর দৃষ্টি হয়ে ওঠে তির্যক, তাই কিছুটা ব্যঙ্গপ্রবণ। তিনি দেখেন আর আবিষ্কার করেন মানবচরিত্রের নতুন নতুন মাত্রা। কখনো বিমর্ষ হন, কখনোবা মৃদু হাসেন। কিন্তু হারিয়ে যান না হতাশার অতলে কিংবা পলায়ন করেন না জীবনের পরিবর্তমান বৃত্ত থেকে। ডুবোচরের মতো আশা জেগে থাকে তাঁর অনুভববিশ্বে। তাই জীবনের জটিল সমীকরণও তাঁর বোধের দরজায় হাজির হয় সহজিয়া ভঙ্গিমায়। উচ্চকণ্ঠ কিংবা ক্ষীণকণ্ঠ নন তিনি; মৃদু কিন্তু বলিষ্ঠ ও স্পষ্ট তাঁর কবিকণ্ঠ। অনুভবের সহজ আলোয় সহজিয়া উদ্ভাসনে তাঁর কবি-আত্মা স্বাতন্ত্র্যচিহ্নিত।
পাঁচটি কাব্যগ্রন্থ : হ্যাঙ্গার (১৯৮৫), ঈশ্বরের ছবির ওপর (১৯৯১), অধরা (১৯৯৭), অনির্বাচিত (২০০৫), জড়ো করি ঝড়ো রাতের তারা (২০১০) এবং কিছু অগ্রন্থিত 888sport app download apk মাহবুব বারীর অর্ধশতাব্দীর কাব্য-ফসল। প্রকাশিত পাঁচটি কাব্যগ্রন্থ থেকে বাছাই করে বাষট্টিটি 888sport app download apkর সঙ্গে পরবর্তীকালের অগ্রন্থিত উনচল্লিশটি যোগ করে মোট একশ একটি 888sport app download apk নিয়ে ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছে মাহবুব বারীর 888sport app download apk। প্রায় পাঁচ দশকের উৎকৃষ্ট ফসল একশ একটি 888sport app download apkর এই সংকলন-গ্রন্থটি আমাদের জন্য যুগপৎ মাহবুব বারীর কবিসত্তা এবং 888sport appsের 888sport app download apkর চারিত্র্য অনুধাবনের সুযোগ সৃষ্টি করেছে নিঃসন্দেহে।
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা, পঁচাত্তরের নির্মম হত্যাকা-, সামরিক শাসন, ধর্মীয় মৌলবাদের উত্থান এবং স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তির দাম্ভিক পদচারণাকালের সমান্তরালে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের উত্তপ্ত সময়ের সারথি কবি মাহবুব বারী। প্রত্যেক ঘটনার নিবিড় স্পর্শ তাঁর অনুভবে। তাঁর চেতনার বলয়ে গভীর ক্ষত সৃষ্টি করে বাঙালির জাতিবৈরী বিশ্বাসঘাতকতা। তিনি নড়ে ওঠেন কিন্তু স্থিরতা হারান না। সময়ের সাতকাহন তাঁর চৈতন্যে মজুদ থাকলেও কোনো ঘটনা সরাসরি তাঁর 888sport app download apkর বিষয়বস্তু হয় না। কারণ ঘটনা নয়, প্রধানত ঘটনার প্রতিক্রিয়া তাঁর 888sport live chatের জমিনে ফসলের ফরমান নিয়ে হাজির হয়। সংকলনভুক্ত প্রথম 888sport app download apkটিই তাঁর স্বতন্ত্র 888sport live chatচেতনার পরিচয়বাহী :
আমি ধীবরের মতো জাল ফেলে বসে আছি সারা রাত।
উঠে আসে পৃথিবীর ছাইভস্ম
কাদা-বালি-মাটি
জলের গুঁড়োর সাথে ক্লান্তভেজা চাঁদের আলো,
লাজুক শামুকের মন, লতাগুল্ম, বিবর্ণ তামার পয়সা,
কৃষকের পুরাতন কাস্তে
ছোটোবড়ো নুড়ি আর পাথরের কয়লা
উঠে আসে পুরাতন ভাতের থালা, জং-ধরা বাঁকা তার,
লোহার টুকরো, মাছের নরম কঙ্কাল
কার যেন বুকের ভাঙা বোতাম, ঘড়ির সময়ের কাঁটা
উঠে আসে সোনার আংটি, নাকফুল, কানের মাকড়ি।
আমি ধীবরের মতো জাল ফেলে বসে আছি সারা রাত।
(‘ধীবর’, হ্যাঙ্গার)
কবি মাহবুব বারী ধীবরের মতো জাল ফেলে তুলে আনেন মানুষের ঐতিহ্যিক সম্পদরাশি। তাঁর চেতনালোকে জমা হয় মানুষের কর্মের প্রতীক কাস্তে, লোহার টুকরা, ভাতের থালা, তামার পয়সা, ঘড়ির সময়ের কাঁটা প্রভৃতি উপকরণ। মানুষের আনন্দময় 888sport live chat-উপকরণ আংটি, নাকফুল ও কানের মাকড়ি যেমন তাঁর নজরে আসে, তেমনি প্রকৃতির রোমান্টিক উপাদান চাঁদের আলো কিংবা লাজুক শামুকের মনও তাঁর দৃষ্টি এড়িয়ে যায় না। বস্তুত মানুষের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও প্রতœ-সময়ের ধারাকে কবি আত্মস্থ করতে থাকেন অবিরাম। 888sport app download apkর প্রথম পঙ্ক্তিটি শেষে পুনর্বার উচ্চারিত হওয়ার ফলে প্রলম্বিত হয় কবির মানবঐতিহ্যে অবগাহনের আকাক্সক্ষা। শিকড়-অভিমুখী এই অনুচিন্তনের মধ্যে ফুটে ওঠে তাঁর জীবন-অভীপ্সা এবং 888sport live chatবীক্ষার অনুরণন।
মানুষের একটা জীবনদর্শন থাকে বলেই মানুষ অন্য প্রাণী থেকে আলাদা। এই জীবনদর্শনই মানুষকে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত জীবনমুখী এবং মানবমুখী নানা কাজে প্রেরণা জোগায়। কিন্তু চারপাশের নানা প্রলোভন অধিকাংশ মানুষকে জীবনদর্শনে স্থির থাকতে দেয় না। কবি মাহবুব বারী আপন দর্শনে অটল থাকার সাধনা করেন এবং মর্মর মূর্তির চেয়েও স্থির থাকার আকাক্সক্ষা ব্যক্ত করেন :
অনেক সাধনা করে এইভাবে দাঁড়িয়ে থাকা শিখেছি।
যেভাবে পাথর দাঁড়াতে পারে যেভাবে পাহাড় দাঁড়াতে পারে
কিংবা বলা যেতে পারে পাথর-পাহাড়ও পারে না।
স্থির নিশ্চল মহানিশ্চল দাঁড়িয়ে থাকা –
এইভাবে দাঁড়িয়ে থাকার মধ্যে মহাকালের নীরবতা আছে
অনেক দিনের 888sport live chat ইতিহাস সংস্কৃতি – এইসব লুকিয়ে আছে।
(‘মর্মর মূর্তি’, ঈশ্বরের ছবির ওপর)
জাতির ইতিহাস ও সংস্কৃতিকে অঙ্গীকার করে 888sport live chatক্ষেত্রে বিচরণশীল কবি মাহবুব বারী তীব্রভাবে অনুভব করেন মানুষের জৈবনিক আকাক্সক্ষার স্বরূপ। চারপাশে
ব্যক্তি-মানুষের সম্পদ দখলের প্রতিযোগিতা। এই প্রতিযোগিতা কবিকেও গ্রাস করতে চায়। এই প্রতিযোগিতার ইঁদুরদৌড়ে অনিবার্য শামিল প্রতিটি মানুষ মহাসত্যের দিকে কিংবা স্বপ্নের দিকে এগিয়ে যাওয়া ভুলে যায়। তার সামনে সব বস্তুই খাদ্যের মতো অবশ্য প্রয়োজনীয়। বস্তু-আহরণের এই ক্ষুধা জীবনের কাছে মহার্ঘ হিসেবে আজ প্রতিভাত। কবি মাহবুব বারী তাই মনে করেন, খাদ্যের অন্বেষণই যেন মানুষের প্রধানতম উপাসনা। তিনি অত্যন্ত নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে জীবনের এই নির্মম সত্যকথন তৈরি করেন :
আমার এই দেহের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ক্ষুধা, অমানবিক অন্ধ
তীব্র তীক্ষè ক্ষুধা। এইসব জয় করে কেমন করে যাই প্রভু
তোমার কাছে, স্বপ্নের কাছে।
আমার চোখে ধুলোবালি খড়কুটো স্বপ্ন নেই প্রভু,
বিশ্বাস ভেঙেছে পথে পথে,
চোখের জ্বলজ্বলে নাটা দিয়ে যা কিছু দেখি তোমার পৃথিবীতে
সবকিছু আমার কাছে মহার্ঘ খাদ্যবস্তু
(‘খাদ্য’, হ্যাঙ্গার)
পৃথিবীর কল্যাণকামী মানুষের বিশ্বাস যুগে যুগে পথে পথে ভাঙনের মুখে পড়েছে। কারণ চারপাশের অধিকাংশ মানুষ পাশব লোভের বশবর্তী। তবু স্বপ্নবান মানুষেরা স্বপ্নের সুরক্ষাব্যবস্থা দৃঢ় করার জন্যে আজীবন লড়াই চালিয়ে যান। কবি মাহবুব বারী মানুষের লালসাকে চিনে ফেলেন অনায়াসে। তিনি নিজের বাড়ন্ত জিহ্বার যে-চিত্রকল্প নির্মাণ করেন, তার মাধ্যমে সুচিহ্নিত হয় মানুষের অপরিমেয় লালসার 888sport live chatভাষ্য :
সকালে খাবার সময়
সেই যে জিহ্বা বের করেছিলাম
তার পর থেকে আর ভেতরে যাচ্ছে না
উপরন্তু ক্রমশ বড়ো হচ্ছে বড়ো হচ্ছে বড়ো হচ্ছে
ভেতরে যাচ্ছে না।
লাল, গাঢ় লাল তৈলাক্ত জিহ্বা
সারা দিনে দড়ির মতো বাড়তে লাগল
সারা দিনে দড়ির মতো বাড়তে লাগল
তৈলাক্ত লাল দড়ি গাঢ় লাল দড়ি –
গলার কাছে ফাঁসের মতো।
(‘জিহ্বা’, ঈশ্বরের ছবির ওপর)
পুঁজি-নিয়ন্ত্রিত ভোগলিপ্সু মানুষের বাইরের
পরিপাটি অবয়বের অন্তরালে যে-কালিমা তা দেখে কবি পাথর হয়ে যান। মানুষের এই ভণ্ডামি আবিষ্কার করতে করতে তাঁর এগিয়ে যাওয়া। তিনি জানেন, জীবনের অর্থ থেমে যাওয়া নয়। তাই ‘অনাহূত অনাদৃত’ হয়েও তিনি পাথরের মতো গড়াতে গড়াতে জীবনকে সামনের দিকে চালনা করেন এবং অন্তরে তীব্র ঘৃণা নিয়ে ভণ্ডামির ছবি আঁকেন :
যাদের প্রকৃত মানসম্মান আছে বলে লোকে মনে করে
তাদের অনেক ভণ্ডামি আমি শেষ পর্যন্ত আবিষ্কার করেছি।
এসব মূলতই ভুয়া কথাবার্তা গালগল্প আর মানুষমাত্রই
এ ধরনের ভুয়া গালগল্পে বিশ্বাসী, শুধু আকারে-প্রকারে
তারা পৃথক হয়ে একে অন্যকে শাসন করতে চায়
প্রভুত্ব করতে আগ্রহী
তাদের সকলেরই অদ্ভুত অন্ধকার এক মন, সেখানে সকলেই
অকৃত্রিম বদমাশের এক অনন্য সহোদরমাত্র –
(‘ঘৃণা’, হ্যাঙ্গার)
কবি মাহবুব বারী পৃথিবীর মানুষকে বারুদ ও গন্ধকের ভেতর দিয়ে এগিয়ে যেতে দেখেন। কেননা মানুষই তার বাসযোগ্য পৃথিবীকে ধ্বংস করছে। বনভূমি উজাড়, বায়ুস্তর ক্ষয়িষ্ণু, ঋতুর বৃত্ত পরিবর্তমান, এমনকি ‘জীর্ণ দেয়ালের পাশে পুরনো পেরেকে হরিণের শিংয়ের মতো ঝুলে আছে মানুষের হৃদয়’। পাহাড়ের মতো ভারী অন্ধকার সামনে দেখেও কবি পথ হারান না। তিনি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের হাতে তুলে দিতে চান আত্মরক্ষার উপযুক্ত সমিধ। তাই তাঁর সামনে চাঁদ ওঠার চিত্রকল্প তৈরি হয় এভাবে :
আমাদের মাথার উপর ফিলিস্তিনি বালিকার মতো
যুদ্ধের সমস্ত সরঞ্জাম পিঠে নিয়ে হামাগুড়ি দিতে দিতে
আকাশের বুকে উঠছে রাত্রির চাঁদ।
(‘পৃথিবীর মানুষ’, হ্যাঙ্গার)
মানুষের হিংসা, লোভ, রিরংসা, ভণ্ডামি প্রভৃতির দাপটে আলোহীন এই পৃথিবীকে দেখতে দেখতে কবি ক্লান্ত হলেও হতাশ হন না। মানুষেরই শ্রমে ও ত্যাগে অন্ধকার খুঁড়ে বের-করে-আনা স্ফটিক ভোর তাঁকে আশাবাদী করে তোলে। ‘শামুকের মতো নিমগ্ন’ এবং ‘ঘাসের ভেতর নিবিড় পোকামাকড়ের মতো একনিষ্ঠ’ কিছু মানুষের কল্যাণী প্রচেষ্টা এই পৃথিবীকে অন্ধকার থেকে আলোর পথে নিয়ে যেতে পারবে বলে তিনি ভোরের দিকে তাকিয়ে থাকেন :
এইভাবে খুঁড়তে খুঁড়তে
যুদ্ধযাত্রার ভেতর থেকে তুলে আনছ সন্ধি ও শান্তি
মানুষের প্রেম কাম ক্রোধ হিংসা দ্বেষ ও লোভের ভেতর থেকে
একজন পরিপূর্ণ মানুষ
এইভাবে খুঁড়তে খুঁড়তে ভোর, স্ফটিকের মতো সাদা ভোর। (‘ভোর’, হ্যাঙ্গার)
১৯৫২ সালের 888sport cricket BPL rateে ফেব্রুয়ারি বাঙালি জাতির সংগ্রামী চেতনার অফুরন্ত প্রেরণাভাণ্ডার। বাংলা ভাষাভিত্তিক সেকুলার ঐক্যবোধের আঁতুড়ঘর এই 888sport cricket BPL rateে ফেব্রুয়ারি আমাদের মুক্তিযুদ্ধ ও পরবর্তী সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও সংগ্রামের প্রেরণাভূমি। তাই বাঙালির কাছে ‘888sport cricket BPL rate মানে মাথা নত না করা’। কবি মাহবুব বারী বাঙালির এই আপসহীনতার চেতনাকে বিপ্রতীপ ভাবনার সমান্তরালে স্থাপন করে সে-চেতনার তীব্রতাকে অনুভব করার প্রয়াস গ্রহণ করেন। কারণ আমাদের জীবনের পদে পদে আপস আর মাথা নত করার বাধ্যবাধকতা। একমাত্র 888sport cricket BPL rateে ফেব্রুয়ারিই আপসহীন সংগ্রামী চেতনা আমাদের :
সেই যে সকালবেলা জুতার ফিতা
লাগাতে গিয়ে মাথা নিচু করেছিলাম
তার পর থেকে আর মাথা তুলে দাঁড়াতে পারছি না
এইভাবে সারা দিন কেটে গেল
সন্ধেবেলা আবার জুতা খুলতে গিয়ে মাথা নিচু করেছিলাম।
কিন্তু ‘888sport cricket BPL rate মানে মাথা নত না করা’।
(‘888sport cricket BPL rate মানে’, অগ্রন্থিত)
সমাজ-প্রতিবেশের প্রভাব মানুষের জীবনের বিভিন্ন পর্ব বা ঘটনাকে গুরুত্বপূর্ণ করে তোলে। কবি মাহবুব বারীর আবেগময় অনুচিন্তনে ধরা পড়ে এসব ঘটনার নিগূঢ় অর্থ। এ-ধরনের অর্থময় ভাবনাকে কেন্দ্র করে তিনি তৈরি করেন নতুন নতুন সংজ্ঞার্থ। নিজস্ব বোধজাত সংজ্ঞার কিছু উদাহরণ উল্লেখ করা যায় :
১. আমার পায়ে পায়ে পথ, পথে পথে
পা
পথ এবং পায়ের এই আশ্চর্য মিল
কেউ আবিষ্কার করতে পারেনি
পায়ে পায়ে পথ পথে পথে পা।
মানুষের অজ্ঞাতে মানুষ তাই
মূলত পথিক, মানুষের প্রাণ তাই পথিকের প্রাণ
(‘আমার না-থামা পথ’, অনির্বাচিত)
২. হাত ধরে ধরে চলতে শিখেছিলাম –
এখন অভ্যস্ত হয়ে গেছি
এখন একা একা যেতে পারি শহরে
পথ-ঘাট চিনে তোমাদের বাসায়;
তুমি না থাকলে আবার একা একা ফিরে আসতে পারি।
এভাবে গিয়ে যে ফিরে আসতে শিখেছে
সেই তো প্রকৃত পথিক
(‘পথিক’, ঈশ্বরের ছবির ওপর)
পৃথিবীর মানুষ বহু তত্ত্ব ও আদর্শ অনুসরণ করে চলে বলেই মানবসংসারে বিভক্তির সীমা নেই। মানবকল্যাণের অনেক তত্ত্বকে ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর স্বার্থে ব্যবহার করা হয়েছে। ফলে কল্যাণী তত্ত্ব পরিণত হয়েছে মানববিধ্বংসী তত্ত্বে। কবি মাহবুব বারী ইতিহাসের পাতায় এ-ধরনের অনেক ঘটনা জেনেছেন। তাই কোনো তত্ত্ব বা আদর্শ নয়, জীবন থেকে গ্রহণ করে জীবনকে সাজানোর পক্ষপাতি তিনি। এ-বিষয়ে তাঁর উচ্চারণ অত্যন্ত ঋজু ও সহজ :
কোনো তত্ত্বে আমি নেই বন্ধু
আমি তত্ত্বশূন্য
আর যা-কিছু শিখেছি এই জীবনের কাছে
তার চেয়ে ভুলেছি অনেক
আমি জ্ঞানশূন্য
(‘আমার তত্ত্ব আমার জ্ঞান’, অগ্রন্থিত)
কবি তত্ত্বশূন্য থাকতে চাইলেও কিছু কিছু দার্শনিক-ভাবনা তাঁকেও আঁকড়ে ধরে। অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ, ঈশ্বর, শূন্য, মানুষের গন্তব্য প্রভৃতি বিষয় কবির করোটির মধ্যেও খেলা করে। অন্য দশজন মানুষের মতো তিনিও একটা মীমাংসায় পৌঁছতে চান। মৃত্যুর পর মানুষ শূন্যে হারিয়ে যায় নাকি ঈশ্বরের কাছে চলে যায়! কবি মনে করেন ঈশ্বর মানে সেই শূন্য, যে-শূন্যে মানুষ মিশে যায় :
তোমার ভেতর দিয়েই যেতে হবে শূন্যে মহাশূন্যে ঈশ্বরে
উপাস্য তিনি আমাদের, ঈশ্বর মানে এক প্রকার শূন্য,
শূন্য সেখানে আছেন শূন্যে ভাসমান।
তোমার ভেতর দিয়েই যেতে হবে সেই শূন্যে
শূন্য কোনো লক্ষ্য নয়
তবে অলক্ষ্যে শূন্যই লক্ষ্য
ইচ্ছা অনিচ্ছায় সেই শূন্যেই যেতে হয়
আমরা সেই শূন্যের যাত্রী
(‘শূন্য’, ঈশ্বরের ছবির ওপর)
মানুষের জীবন বহু কথার সমষ্টি। কথার পিঠে কথা বলে জীবনের সময়গুলো শেষ করে দেওয়াই যেন মানুষের নিয়তি। একমুখী জীবন মানুষের। পেছনে ফেলে আসা জীবনের অনেক কিছুই ফিরে পেতে ইচ্ছে করে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বলে যাওয়া কথাগুলো ফিরে পাওয়ার আকাক্সক্ষার মধ্যে কবি মানুষের অমরত্বের আকাক্সক্ষা ব্যক্ত করেন। হারিয়ে যাওয়া কথা ফিরে পাওয়ার জন্যে মানুষের আকুল আর্তি ফুটে ওঠে কবির লেখায় :
আমরা ভোরবেলা থেকেই কথা বলতে শুরু করেছিলাম,
সন্ধ্যা অবধি আমরা অনেক কথাই বলেছি।
… … …
এখন আমাদের হারিয়ে যাওয়া কথাগুলো
পুনর্বার উচ্চারণের মতো করে ফিরে পেতে চাই
যা যা করলে সেই কথাগুলো ফিরে পাওয়া সম্ভব
আমরা তাই করব – যুদ্ধ শান্তি সন্ধি যেভাবে সম্ভব
সম্ভাব্য সব উপায়ে আমরা আমাদের কথাগুলো ফিরে পেতে চাই।
(‘আমাদের জীবন’, অধরা)
কবি মাহবুব বারী রোমান্টিক প্রেমের কথা বলেন অকপটে। স্কুলফেরত প্রিয়তমার ‘গালের ভাঁজে হাসি’ দেখার জন্যে তিনি প্রতিদিন রেলগেটে অপেক্ষা করেন (রেলগেট)। প্রিয় 888sport promo code হালিদা বেগমকে দেখার প্রবল ইচ্ছে নিয়ে তিনি বিদ্যাগঞ্জে যেতে চান। সেখানে এখন সেই 888sport promo code থাকেন কি না তা অজানা। তবু তিনি সেখানে যাওয়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে ওঠেন। কালিদাসের যক্ষের মতো প্রেমে-কাতর কবির উচ্চারণ :
হয়তো তুমি বিদ্যাগঞ্জে নেই হয়তো আছ
তাতে কী? তবু যাব, যদি তোমাকে পাই
মানুষের তো কতকিছু দেখার সাধ
আমার শুধু তুমি।
(‘বিদ্যাগঞ্জ’, অনির্বাচিত)
বাস্তবতার কঠোর অভিঘাতে কখনো কখনো প্রেম হারিয়ে যায়। অভ্যাসের দৈনন্দিনতার ফাঁকে তবু প্রেম জেগে ওঠে বারবার। ‘ভালোবাসা চাই আমাদের হৃদয়ের সংগীতগুলো আবার শুনতে চাই’ বলে কবি নৈঃশব্দ্যের বলয় ভাঙতে চান। ‘যে নক্ষত্রের নিচে রক্তপাত ধ্বংস মৃত্যু ও উদ্বাস্তু মানুষের ভিড়’, ‘সারাদিন ঘুঙুরের মতো বেজেছে জীবন’ যেখানে, সেই বাস্তবতার জমিনে দাঁড়িয়ে কবি মাহবুব বারী পুনঃপুন ব্যক্ত করেন প্রেমের অমৃত কথা।
নশ্বরতার ব্যাপক আয়োজনের মধ্যে অবিনশ্বর প্রেমের প্রতি অবিচল কবি জীবনের বহু ব্যর্থতা সত্ত্বেও প্রেমের ক্ষেত্রে প্রবল আত্মবিশ্বাসী। কীভাবে প্রেমবন্ধন তৈরি করতে হয় তা তিনি ভালোই জানেন :
ইতিহাস পড়িনি আমি
দুই বিশ্বযুদ্ধের খবর আমার জানা নেই
… … …
জানি না ভূগোল আর অঙ্কও
আমাকে যদি জিগ্যেস করতে চাও তো, করো যে
কীভাবে প্রেম করতে হয়।
(‘কীভাবে প্রেম করতে হয়’, অগ্রন্থিত)
কামগন্ধী প্রেমকে কতটা নান্দনিকভাবে প্রকাশ করা যায়, তারও উৎকৃষ্ট উদাহরণ মাহবুব বারীর 888sport app download apkয় রয়েছে। নদী ও প্রাকৃতিক দৃশ্যের সঙ্গে প্রিয়তমা 888sport promo codeর সুকুমারী শরীরের বৈপরীত্য সৃষ্টি করে, সেই বিপরীতকে সামঞ্জস্যে মিলিয়ে দেওয়ার মুনশিয়ানা তাঁর কবিকৃতির উল্লেখযোগ্য স্মারক হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে :
কোনো দৃশ্য দেখতে গেলেই মনে পড়ে তোমার কথা
কোনো দৃশ্যই তোমার মতো ছিল না
কোনো নদী দেখতে গেলেই মনে পড়ে তোমার কথা
কোনো নদীই তোমার মতো ছিল না
আমি তোমার মধ্যে দৃশ্য এবং নদী দেখতে দেখতে
যখন পৌঁছে গেছি সোনালি শীর্ষে
তখন তুমিই হয়ে গেলে দৃশ্য এবং নদী।
(‘দৃশ্য এবং নদী’, হ্যাঙ্গার)
প্রেমে সমর্পিত এবং প্রেমের ক্ষেত্রে আত্মবিশ্বাসী কবি প্রেমকে পাথেয় করে 888sport promo codeর প্রতি উদাত্ত আহ্বানের যে পাঁচালি তৈরি করেন, তা প্রেমের মহাকাব্য হয়ে ওঠে :
হে 888sport promo code, তোমার কাছে আমিই শ্রেষ্ঠ পুরুষ
বহুত্বের পৌত্তলিকতা তোমার সাজে না
সকল পূজাপার্বণে উৎসবে অনুষ্ঠানে
প্রসাদের সকল ফলমূল তুমি আমাকেই দেবে
নইলে ভীষণ পাতকী হবে
নইলে বেশ্যা হয়ে যাবে।
(‘নইলে বেশ্যা হয়ে যাবে’, হ্যাঙ্গার)
888sport app download apkর আঙ্গিকে মিল-বিন্যাস বা প্রচলিত ছন্দ-প্রয়োগে অনাগ্রহী কবি মাহবুব বারী গদ্যছন্দে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। কবি সমর সেনের পর গদ্যছন্দ ব্যবহারের ক্ষেত্রে দক্ষ ও সফল কবিদের কাতারে মাহবুব বারীর নামও উল্লেখ করা সমীচীন বলে মনে হয়। এ-বিষয়ে মাহবুব বারীর 888sport app download apk গ্রন্থের মলাট-ফ্ল্যাপে যা লেখা হয়েছে, তার সঙ্গে সহমত পোষণ করে বলা যায় : ‘তাঁর গদ্যছন্দ 888sport app download apkয় যে স্ফূর্তি পেয়েছে, তা যেন নিশ্চল উপলখ-ের উপর দিয়ে, সবুজ ঢাল বেয়ে সাবলীল গড়িয়ে যাওয়া অমুখর ঝর্নাধারা।’
শব্দ-ব্যবহারেও কবি স্বচ্ছন্দ ও সাবলীল। মূলত চলিতরীতির শব্দ, এমনকি আঞ্চলিক শব্দও যেন তাঁর বিষয় ও চিন্তাকে প্রকাশ করার জন্য পূর্বেই প্রস্তুত থাকে। জীবনপ্রণালির প্রাত্যহিকতা থেকে বেছে নেওয়া শব্দের ব্যবহারে তিনি প্রকাশ করেন তাঁর বক্তব্যের প্রত্যক্ষতা।
উপমা সৃষ্টির ক্ষেত্রে কবি মাহবুব বারীর স্বাতন্ত্র্য সহজেই দৃষ্টিগোচরে আসে। স্বীয় উপলব্ধিজাত উপমা ও চিত্রকল্প সৃষ্টিতে তিনি অসামান্য দক্ষতার পরিচয় দেন। ‘মৃত ফলের মতো পড়ে আছে আমার ঘুম’, ‘মহিষের আলস্যের মতো ধীরে ধীরে নেমে গেলে দুপুর’, ‘ঘুমের ভেতর স্বপ্নের মতো সম্পৃক্ত’, ‘আমার হৃদয়ের ভেতর সবুজ জালার মতো রোপণ করেছিলাম একটি বিশ্বাস’, ‘তাদের পায়ে কালো লোমের মতো লেগেছিল খরা দুর্ভিক্ষ বন্যা’ প্রভৃতি অযুত উপমা তাঁর একান্ত অনুভবজাত সৃষ্টি। তিনি আপন অনুভবের আলোয় এমন কিছু বাক্যবন্ধ তৈরি করেন, যা অলংকারহীন হয়েও সালংকারা বলে প্রতীয়মান হয়। যেমন : ‘হাসি দিয়ে মানুষ হাসি ফিরে পেলে/ পরে আর হাসতে পারে না’।
কবি মাহবুব বারীর 888sport app download apkয় জীবনের নানা তলস্পর্শী অনুভবের প্রতিভাস 888sport live chatবোধসম্পন্ন পরিমিতি নিয়ে আত্মপ্রকাশ করে। তিনি জীবনকে দেখেন গভীর অভিনিবেশ নিয়ে। উচ্ছ্বসিত বা ম্রিয়মাণ – কোনোটাই নন তিনি। তাঁর 888sport app download apkর অন্তর্গত ব্যাকরণ হলো সহজ সাবলীলতা। ভাব, ভাষা, শব্দ, ছন্দ, অলংকার প্রভৃতি সকল ক্ষেত্রেই তিনি উদযাপন করেন আপন উপলব্ধিজাত উদ্ভাবনার সজীব সত্যকে। বক্তব্যের প্রাতিস্বিকতায় এবং হিমায়িত আবেগের ইন্দ্রিয়স্পর্শী তীব্রতায় তাঁর 888sport app download apk পৌঁছে যায় নির্বিশেষ সহৃদয়তার গভীর সান্নিধ্যে।

Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.