ভারতরঙ মহোৎসবে সিএটির নাটক

আবু সাঈদ তুলু

চারদিকের বিদ্যমান সহিংসতা, জটিলতা কিংবা বিধ্বস্ত বাস্তবতায় মানবমুক্তির আকাঙ্ক্ষার জীবন্ত 888sport live chat ম্যাকাব্রে। বন্দিদশায় নানা ঘাত-প্রতিঘাত কিংবা বিধ্বস্ত প্রতিকূল বাস্তবতায়ও মুক্তির সন্ধানে অনিঃশেষ যাত্রার গল্প ম্যাকাব্রে। ভারতের নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত ‘ভারতরঙ মহোৎসব-২০১৫’তে ১০ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামার কামানি অডিটরিয়াম প্রদর্শিত হয় 888sport appsের সেন্টার ফর এশিয়ান থিয়েটারের (সিএটি) সাম্প্রতিক প্রযোজনা ম্যাকাব্রে নাটকটি। নাটকটি রচনায় আনিকা মাহিন এবং নির্দেশনায় কামালউদ্দীন নীলু। এ-উৎসবে ভারতের বিভিন্ন প্রদেশ ও পোল্যান্ড, ফ্রান্স, নেপাল, নরওয়ে, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ অংশগ্রহণ করে। উৎসবে প্রদর্শিত ম্যাকাব্রে সবার উচ্ছ্বসিত প্রশংসা অর্জন করে।

ম্যাকাব্রে উত্তরাধুনিক নাট্য-প্রযোজনার সমকালীন বৈশ্বিক ধারার প্রযুক্তিনির্ভর 888sport live chatমাত্রিক অনন্যসাধারণ প্রযোজনা। নাটকটি অভিনয়ের সঙ্গে ভিডিওগ্রাফি, মাল্টিস্ক্রিন প্রজেকশন টেকনোলজি, অ্যানিমেশন, ত্রিমাত্রিক প্রজেকশন ম্যাপিং, স্থাপনা888sport live chat ও বহুমাত্রিক শব্দ-ব্যবহারের সমন্বিত প্রয়াসে উপস্থাপিত। সাধারণত দেখা যায়, উত্তরাধুনিক তাত্ত্বিকতায় মহাকাব্যিক ব্যঞ্জনা সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম উপাখ্যান প্রকাশ করে। সত্যের কোনো একক অস্তিত্বে বিশ্বাস করে না। চারপাশের বিশ্বপ্রকৃতিই পাঠ্য এবং বিরাজমান প্রতিটি বিষয়ের মধ্যেও ইন্টার-টেক্সচুয়ালিটি বিদ্যমান, যা পরস্পর নির্ভরশীল এবং প্রভাবিত। উত্তরাধুনিকতা বিশ্বাস করে, পাঠক বা দর্শক মানেই ব্যাখ্যাকারী। উপস্থাপন-ক্রিয়াটি শুধু চিন্তনের যোগসূত্র। উত্তরাধুনিক 888sport live chat দর্শনে মনে করা হয়, 888sport live chat-উপস্থাপন এমন একটি মুক্ত   মাধ্যম, যেখানে সব মাধ্যম আয়রনি, ম্যাটাফিজিক্স ও হাইপার সাবজেক্টিভিটিকে একত্রে স্থান দেয়। বিভিন্ন বিষয় নৈর্ব্যক্তিক, সুসংহত ও ঐক্যবদ্ধ শৈল্পিক মাত্রায় প্রকাশ পায়। দলগত, ঐক্যবদ্ধ ও বিভিন্ন প্রক্রিয়া পদ্ধতির সমন্বয়ে নৈর্ব্যক্তিক-ব্যক্তিক চিত্র, ভাব বা ভাষা ইমেজ উপস্থাপন করে। দর্শককে মোহাচ্ছন্ন না রেখে তার মতো সত্য উপলব্ধির নির্দেশ করে। ম্যাকাব্রে নাটকটি উত্তরাধুনিক চিন্তন-বৈশিষ্ট্যে প্রত্যুজ্জ্বল।

‘ভারতরঙ মহোৎসব’ ন্যাশনাল স্কুল অফ ড্রামা-আয়োজিত ভারতের সবচেয়ে বড় আন্তর্জাতিক নাট্যোৎসব। এটি ভারতের জাতীয় নাট্যোৎসব হিসেবেও পরিচিত। ধারণা করা হয়, এশিয়ার সর্ববৃহৎ নাট্যোৎসব এটিই। এ উৎসবের পৃষ্ঠপোষক ভারত সরকারের সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়। উৎসবে ভারতের বিভিন্ন প্রদেশের বিভিন্ন   ভাষার নাটকসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের উল্লেখযোগ্য নাটক প্রদর্শিত হয়।   ১৯৯৯ সালে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ‘ভারতরঙ মহোৎসব’। এবারের উৎসবটি ১৭তম। ভারতের নয়াদিল্লিতে অবস্থিত   ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামার মূল ক্যাম্পাসে উৎসবটি অনুষ্ঠিত হয়। ২০০৯ সালে প্রথমবারের মতো উৎসবটি স্যাটেলাইট উৎসব হিসেবে ভারতের লখনৌ ও ভূপালে অনুষ্ঠিত হয়। সাধারণত প্রতিবছর জানুয়ারির শেষদিকে এ-উৎসব আয়োজিত হয়ে থাকে। এবার ১ থেকে ১৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আয়োজিত উৎসবে প্রতিদিন সাতটি মঞ্চে দুপুর ২টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ভিন্ন ভিন্ন নির্দিষ্ট সময়ে নাটক প্রদর্শিত হয়। এবারের স্যাটেলাইট উৎসবের ভেন্যু  ছিল ভারতের ত্রিপুরা, জাবালপুর, আওরঙ্গাবাদ ও গোয়া। ১০ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় কামানি অডিটরিয়ামে মঞ্চস্থ হয় ম্যাকাব্রে। প্রদর্শনীর আগের দিনই অডিটরিয়ামের সব টিকিট শেষ হয়ে যায়। ফলে আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও অনেককেই নাটক দেখতে না পেয়ে ফিরে যেতে হয়। আবার কিছু দর্শক ওইদিন ভারতের রাজনৈতিক কর্মসূচির কারণে প্রদর্শনীটি দেখতে পারেননি বলে আক্ষেপ প্রকাশ করেন।  নাটকটির দর্শন, প্রযুক্তির অসাধারণ ব্যবহার, উপস্থাপনসহ নানা বিষয়ে প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে ওঠেন দর্শকরা। এবারের উৎসবে নাটক প্রদর্শনী ছাড়াও সেমিনার ও নির্দেশকের সঙ্গে কথোপকথন ছিল অত্যন্ত বৈচিত্র্যপূর্ণ। সবচেয়ে আকর্ষণীয় ছিল থিয়েটার বাজার। এ-বাজারে ভিন্ন ভিন্ন স্টলে পরিবেশনা-888sport live chatের বৈচিত্র্যপূর্ণ নানা বিষয়, উপাদান-উপকরণ বিক্রি ও প্রদর্শন হয়েছে। এ-আয়োজন বিভিন্ন দেশের উল্লেখযোগ্য নাটক দেখার সুযোগ, বিভিন্ন নিরীক্ষা কিংবা সমকালীন নতুন নতুন চিন্তা-ভাবনা সম্পর্কে অভিজ্ঞতা অর্জন, সেমিনার কিংবা বুদ্ধিবৃত্তিক নাট্যচর্চার বিকাশ, থিয়েটার বাজারসহ নাট্যচর্চাকারীদের মধ্যকার মিথস্ক্রিয়ার বৈশিষ্ট্যে অনন্য।

ম্যাকাব্রে ২০১৪ সালে মঞ্চে আনে সেন্টার ফর এশিয়ান থিয়েটার (সিএটি), 888sport appsের প্রথম সারির এবং পেশাদারি নাট্যসংগঠন। ১৯৯৪ সালে সিএটি প্রতিষ্ঠিত হলেও মাত্র কয়েক বছরেই 888sport appsের নাট্যচর্চায় যুক্ত করেছে অনন্যসাধারণ সব নাট্যপ্রযোজনা। সৃষ্টি করেছে বিশ্বনাট্যচিন্তন অনুধাবনের বিরল অভিজ্ঞতা। সেন্টার ফর এশিয়ান থিয়েটারের উল্লেখযোগ্য প্রযোজনাগুলো হচ্ছে – বুনোহাঁস, ভেলুয়া সুন্দরী, রাজা, পীরচাঁন, পুতুলের ইতিকথা, দ্য লেসন, বুকটোর কুয়া, ব্র্যান্ড, সোনাইবিবির পালা, দ্য মেটামরফসিস, রেজারেকশন, অ্যাম্পিউটেশন, দ্য লেডি ফ্রম দ্য সি, সেনাপতি, দ্য কমিউনিকেটর প্রভৃতি। সিএটি নানা সময়ে বিভিন্ন উৎসবের আয়োজন করে থাকে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য – ১৯৯৭ সালে জেন্ডার ইসুজ ইন ইবসেন্স প্লেজ, ১৯৯৯ সালে ক্লাসিক্যাল সংস্কৃত থিয়েটার সিম্পোজিয়াম অ্যান্ড ফেস্টিভল, ২০০২ সালে দি রিলিভ্যান্স অব এ ডল্স হাউস – ট্রান্সলেশন অ্যান্ড অ্যাডাপটেশন, ইন্টারন্যাশনাল ইবসেন কনফারেন্স অ্যান্ড থিয়েটার ফেস্টিভাল, এনকাউন্টার বিটুইন ইস্ট অ্যান্ড ওয়েস্ট এবং ২০০৯ সালে আয়োজন করে আন্তর্জাতিক ইবসেন সেমিনার ও নাট্যোৎসব। নিঃসন্দেহে বলা যায়, 888sport appsের নাট্যচর্চার ইতিহাসে সর্ববৃহৎ উৎসব এটি। এতে অস্ট্রেলিয়া, চীন, চেক রিপাবলিক, মিশর, ফ্রান্স, জার্মানি, ভারত, ইরান, মেক্সিকো, মরক্কো, নেপাল, নরওয়ে, পাকিস্তান, তুরস্ক, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র প্রভৃতি দেশ  অংশগ্রহণ করে।

সেন্টার ফর এশিয়ান থিয়েটারের সম্প্রতি প্রযোজনা ম্যাকাব্রে। ‘ম্যাকাব্রে’ ব্যাখ্যানটি ইউরোপীয় একটি বিশেষ কৃত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। মৃত্যুভীতির খ্রিষ্টান ধর্মীয় কৃত্যমূলক জায়গা থেকে এর উদ্ভব ঘটলেও 888sport live chat-888sport live footballে ড্যান্স ম্যাকাব্রে একটি বিশিষ্ট স্থান দখল করে আছে। কিছু মাধ্যমের পরিভাষায় ব্যঞ্জনাগত জায়গা থেকে ড্যান্স অব ডেথ   হিসেবেও পরিচিত। 888sport live chatের ক্ষেত্রে ম্যাকাব্রে ভয়ংকর বা বীভৎসতার পরিবেশকেই চিহ্নিত করে। ম্যাকাব্রের কাজগুলোর ঝোঁক মূলত জীবনের গভীরতর বাস্তব সত্যের বিধ্বংসী কিংবা ভীতিমূলক অবস্থার নৈর্ব্যক্তিক উপস্থাপনে। সেজন্য ম্যাকাব্রেতে সাধারণত কঙ্কালের ভীতিকর পরিবেশের উপস্থাপন বেশি দেখা যায়।

সেন্টার ফর এশিয়ান থিয়েটারের ম্যাকাব্রে এক মানব চরিত্রের বন্দিদশায় অবশ্যম্ভাবী মৃত্যুমুখী মানুষের মুক্তির অন্বেষণের বহুমাত্রিক চিত্র। পুরো নাটকটি এক রাতের ঘটনা। নাটকটিতে এক মানব চরিত্রের দুটি রূপের মিথস্ক্রিয়ায় সমকালীন জীবনবাস্তবতার ব্যাখ্যান আবর্তিত।

নাট্যকার আনিকা মাহিন বলেন, ‘একটি নাটকে গল্প বা কাহিনি যেমনটি থাকে, ম্যাকাব্রে নাটকে ঠিক তেমন কোনো সুনির্দিষ্ট গল্প বা কাহিনি নেই। আবার বর্ণনাত্মক কাহিনির মতোও এই নাটকে কোনো প্রথাগত বর্ণনা নেই। এটি গ্র্যান্ড ন্যারেটিভের বিপরীতে অবস্থানের মাধ্যমে নিজেকে অধিষ্ঠিত করে মেটা ন্যারেটিভের সঙ্গে। এই নাটকটি একটি অভিব্যক্তি, …মুক্তির আকাঙ্ক্ষার অভিব্যক্তি।’ (স্যুভেনির)

আন্তঃব্যঞ্জনার নিরিখে নাটকটির নামকরণ করা হয় ম্যাকাব্রে। এক মানব চরিত্রের দুটি সত্তার মিথস্ক্রিয়ামূলক বন্দিদশায় অবশ্যম্ভাবী মৃত্যুমুখী মানুষের মুক্তির অন্বেষণের সমকালীন    জীবনবাস্তবতার নিরিখে বহুমাত্রিক চিত্র। মঞ্চে পাঁচটি স্ক্রিনে সৃষ্ট গৃহাভ্যন্তরে এক বেহালা-বাদকের মধ্য দিয়ে নাটকটি শুরু হয়। পাঁচটি স্ক্রিনের মধ্য দিয়ে গৃহের আবহ সৃষ্টি; অত্যন্ত সুনিপুণভাবেই সত্যাশ্রয়ী মায়া সৃষ্টি হয়। তার মুখোশ 888sport apkী আইনস্টাইনের। পাশে আবেগী স্ত্রী-চরিত্র। আইনস্টাইনের প্রকৃতি-দর্শন ব্যাখ্যানের মধ্য দিয়ে নির্দেশক উপস্থাপনার চিন্তনে প্রবেশ করেন। তারপর হঠাৎ দুম শব্দে স্ক্রিনে ঘরের আবহ ভেঙে যায়। ভেসে ওঠে হাসপাতালের করিডোর। নাটকটির প্রতিটি দৃশ্যই চিত্রকলার মতো সজ্জিত একেকটি ইমেজ। প্রজেকশন নৈর্ব্যক্তিকতা, স্ক্রিনে অ্যানিমেশন, বাস্তব চরিত্র, মিউজিক সবকিছু মিলিয়ে একেকটা দৃশ্য ইমেজ। প্রতিটি ইমেজে জীবনবাস্তবতা কিংবা জীবন-জটিলতার অসংখ্য শৈল্পিক রূপ চিত্রায়িত। স্ক্রিনে দেখা যায় হৃৎস্পন্দন দৃশ্য; শুরু হয়   এ-পৃথিবী বাস্তবতায় একটি মানব চরিত্রের দুটি রূপের মৃত্যুমুখী অবশ্যম্ভাবী যাত্রা। পাশে গানের আবহে দৃশ্যমান হয়ে ওঠে শোষিত শ্রমিকের শ্রমলব্ধ জীবনের অতীত। মনে হয়, মানব চরিত্রের এ-দুটি রূপের শোষিত-বঞ্চিত জীবনের দর্শনজনিত ব্যাখ্যানই এ-নাটক। পেছনের স্ক্রিনের শ্যাডোতে পরিস্ফুট হয়ে ওঠে দুজনের পালানো। একের পর এক দৃশ্য ইমেজের মধ্য দিয়ে বিশ্লেষিত হয়ে ওঠে জীবনসংগ্রাম, হত্যা-গণহত্যা, বীভৎসতার নানা চিত্র। পৃথিবী বাস্তবতায় মানব জীবনযাত্রায় ব্যক্তি-সমাজ কিংবা রাষ্ট্রীয় জীবনের জটিলতাগুলো অত্যন্ত সুনিপুণভাবে তুলে ধরেন নাট্যকার-নির্দেশক। মুক্তিকামী চরিত্রের জেলখানার সিম্বলের মধ্য দিয়ে বন্দিত্ব প্রকাশিত হয়ে ওঠে। মৃত্যু ও মুক্তির অনিবার্য প্রসঙ্গ ফুটে ওঠে চরিত্রের উক্তি-প্রত্যুক্তির পরতে পরতে। মানুষ তো নিয়ত  বন্দিই সমাজের কাছে; রাষ্ট্রের কাছে কিংবা তত্ত্ব, দর্শন, রাজনীতি কিংবা মতাদর্শের কাছে। নতুন দৃষ্টিভঙ্গিকে উপস্থাপন করে আমাদের সমকালীন বৈশ্বিক সময় ও কালের ভেতরের বাস্তবতার শৈল্পিক অভিব্যক্তি।

মানব চরিত্রের দুটি সত্তা রূপে অভিনয় করেছেন – সেতু আজাদ ও মেহমুদ সিদ্দিকী। অসাধারণ অভিনয়। অভিনেতাদ্বয়ের শারীরিক ভঙ্গি, মুভমেন্ট ও ভাবপ্রকাশ অসাধারণ। মঞ্চে সৃষ্ট  বাস্তবতায় অভিনেতাদ্বয়ের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়াগুলো অসাধারণ।  মঞ্চের কাল্পনিক বাস্তবতায় অভিনেতাদ্বয়ের ঘটনাপ্রবহমানতাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দক্ষতা অনেক ঊর্ধ্বে। চরিত্রদ্বয়ের পোশাক কালো।  এ-কালো পোশাক নানাবিধ ইতিবাচক কিংবা নেতিবাচক ইঙ্গিত বহন করে। নির্দেশক যদি স্থান-কাল-পাত্র উপেক্ষা করে মানব জীবনপ্রবহমানতায় মানব অস্তিত্ব দেখাতে চান, তাহলে মাত্রাহীন পোশাক হিসেবে এটি অসাধারণ। কিন্তু কালো রংটি আমাদের নান্দনিক ব্যাখ্যানে ভিন্ন অর্থ পোষণ করে। সে পরিপ্রেক্ষিতে নির্দেশকের আরো ভাবার সুযোগ রয়েছে। এমনকি, ডিজিটালি সৃষ্ট পরিবেশ বাস্তবতায় ভিন্ন রঙের ব্যবহার করে চরিত্র দুটো আরো হাইলাইট হতো বলে সহজেই অনুমেয়। আলো-পরিকল্পনা অসাধারণ।

বহুমাত্রিক নানা সিম্বলে 888sport appsের ১৯৭১ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত নানা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা স্থান পায়। সঙ্গে সমকালীন বিশ্ববাস্তবতার চিত্র বিধৃত হয়। ব্যাখ্যা হতে থাকে সমকালীন জীবনের জটিলতা; অসারতা কিংবা সৃষ্ট বলয়ে মানববিধ্বংসী রূপ। মুক্তিকামী এ-দুজনকেই সৈনিকরা ধরে নিয়ে যায়। ঈশ্বরের দোহাইয়েই সবকিছু করা     বৈধ নয়।

নির্দেশক কামালউদ্দীন নীলু বলেন, ‘আনিকা মাহিনের লেখা এই পারফরম্যান্সটির ভাবনা সূত্রবদ্ধ করে বিষয়বস্ত্তর আন্তঃসম্পর্ককে। ভৌগোলিক সীমারেখার ঊর্ধ্বে অবস্থানের মাধ্যমে এটি ধারণ করে মুক্তিকে – এটি  প্রকাশ করে জাতিগোষ্ঠী ও সামাজিক অবস্থান নির্বিশেষে সকল মানুষই এক, এবং প্রত্যেকেরই সম্মানের সঙ্গে জীবনধারণের অধিকার রয়েছে। মূল বিষয়বস্ত্তটি তাই সর্বজনীন এবং আমাদের বর্তমান সমাজব্যবস্থার ক্ষেত্রে অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। এই পারফরম্যান্সটির মূল বিষয় হলো মৃত্যুর অনুপ্রবেশ, যেটি dystopia-এর একটি অংশ, যেখানকার সমাজব্যবস্থা, মানুষের দুর্দশা, যন্ত্রণা, নিপীড়ন, ব্যাধি এবং নোংরা পরিবেশে   একসঙ্গে অনেক মানুষের থাকাকে চিহ্নিত করে।’ (স্যুভেনির)

নাটকের কাহিনিতে রাত্রির দ্বিতীয় প্রহর ঘনিয়ে আসে। তবু মুক্তির সন্ধানে ছোটে দুজন। কল্পনা ও বাস্তবতার অপূর্ব সমন্বয় ঘটেছে উপস্থাপনাটিতে। ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ কিংবা খাঁচার সিম্বল বা বন্দিত্বের চিত্রের মধ্য দিয়ে জীবন সার্কাস ভিন্ন আর কিছুই মনে হয় না।  স্ক্রিন-দুটোতে কঙ্কালের নৃত্যদৃশ্য ভেসে ওঠে। প্রতীকী তাৎপর্যে ম্যাকাব্রের তাত্ত্বিক ব্যঞ্জনা প্রকাশ পায়। বুদ্ধিবৃত্তিক প্রতিনিধি প্রতীকায়নের মধ্য দিয়ে সমকালীন জাতীয়-জাতীয়তা বিতর্ক, রাজনীতি-অপরাজনীতি-সংস্কৃতি অর্থনীতি প্রভৃতি ফুটে ওঠে।

সমকালীন বৈশ্বিক উপস্থাপনা ম্যাকাব্রে। এটি বর্ণনায় সংকুলানযোগ্য নয়। দেখার অভিজ্ঞতাই আলাদা। নাটকে উঠে আসে, নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়েও মানুষ ভালোবাসে ইউটোপিয়ায় বিভোর থাকতে। অত্যন্ত চমৎকার শৈল্পিক কৌশলে নির্দেশক তুলে ধরেছেন বাস্তবতাকে। বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গিতে ব্যাখ্যাও করেছেন। স্বপ্নচারী সমুদ্রের ঢেউয়ের সাঁতারে নতুন জীবনের স্বপ্নকে তুলে ধরেন। সমুদ্রের পানিপ্রবাহ কিংবা সাঁতারদৃশ্যের উপস্থাপন অসাধারণ। দাবার ঘুঁটি, হাইকমোড প্রভৃতিতে জীবনের নেতিবাচক নানা ইঙ্গিত ফুটে ওঠে। সমূহ নোংরামির জীবন মানুষের কাম্য নয়। তবে নির্দেশকের এ-সিম্বল ব্যবহারে আরো সচেতন থাকা উচিত ছিল। বাঙালির সমাজজীবনে দাবা ঐতিহ্যগত জায়গা থেকে অত্যন্ত সম্মানজনক অবস্থানে রয়েছে। সচেতন মানব চরিত্র মানেই মুক্তির সন্ধানে। চারদিকের স্যাঁতসেঁতে নোংরা বন্ধ দেয়ালে এ যেন মুক্তির খোঁজে অনিঃশেষ যাত্রা। জীবন যেন সার্কাসতুল্যই। সার্কাসের দর্শকশূন্যতা জীবনকেই সাদৃশ্যমন্ডিত করে। নিউজ, ওবামার ভাষণ কিংবা হিউম্যান পাওয়ার প্রসঙ্গের মধ্য দিয়ে সমকালীন বিশ্বরাজনীতিতে বীভৎসতা ছাড়া আর কিছুই লক্ষ করা যায় না। চারদিকের যন্ত্রণা, নিয়ন্ত্রণ, দমন, পরাধীনতা এবং রাজনৈতিক যন্ত্রের হাতে মানবের অনিবার্য মৃত্যু। এ মানব চরিত্র সমাজের অদৃশ্য কারাগারে বন্দি মানুষের প্রতিমূর্তি। অভিনয়, ভিডিওগ্রাফি, মাল্টিস্ক্রিন প্রজেকশন, অ্যানিমেশন, ত্রিমাত্রিক প্রজেকশন ম্যাপিং, স্থাপনা888sport live chat, বহুমাত্রিক শব্দ ব্যবহারের সমন্বিত প্রয়াসে অসাধারণ 888sport live chat-কৌশলে তা-ই তুলে ধরেন নির্দেশক।

জীবনবাস্তবতার নানা জটিলতা, সহিংসতা, বিধ্বস্ততার মধ্যেও মানুষ সুন্দরের স্বপ্ন দেখে। গাছের রঙিন পাতা ঝরায় মানুষ নবজীবনের সন্ধানেই ব্যাপ্ত থাকে। গাছের রঙিন পাতার সিম্বলের মধ্য দিয়ে নতুন জীবনস্বপ্নের ব্যাখ্যানের প্রতীকী উপস্থাপন অসাধারণ। কিন্তু পৃথিবীর বাস্তবতাই বিধ্বংসী। সবকিছুকেই গ্রাস করে চলে ক্রমশ মায়াবী রাক্ষসী। চারদিকে সর্বত্রই অশুভতা। ধ্বংস হয়ে যায় মানব সভ্যতা। সাদা চুলের এক 888sport promo codeচরিত্রের প্রাপ্ত কফিনের লাশের মোড়ক জীবনের জয়গানের ইঙ্গিত বহন করে। বিধ্বংস নয়, জীবনের জয়গান জরুরি। সমকালীন সমাজ কিংবা বিশ্বসভ্যতার মুখোশের আড়ালে আধিপত্য, সহিংসতা ও মানুষের অসহায়ত্বের জীবনবাস্তবতার গভীর ব্যাখ্যান ম্যাকাব্রে।

নির্দেশক কামালউদ্দীন নীলু আরো বলেন, ম্যাকাব্রে একটি প্রথাবিরুদ্ধ থিয়েটার পারফরম্যান্স, যেখানে ব্যবহৃত হয়েছে বিভিন্ন ধরনের প্রযুক্তি, বিশেষ করে ভিডিওগ্রাফি, মাল্টিস্ক্রিন প্রজেকশন টেকনোলজি, অ্যানিমেশন, ত্রিমাত্রিক প্রজেকশন ম্যাপিং, স্থাপনা 888sport live chat এবং সেই সঙ্গে পূর্ব-পশ্চিমের লিভিং আর্ট। এটি আন্তঃসাংস্কৃতিক এবং           আন্তঃসাংস্কৃতিক থিয়েটার পারফরম্যান্সের একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গিকে উপস্থাপন করে এবং আমাদের সমকালীন বৈশ্বিক সময় ও কালের ভেতরে এটি একটি     পরিপূর্ণ শৈল্পিক অভিব্যক্তি। এই পারফরম্যান্সটির সামগ্রিক নিরীক্ষাটি হলো, কেমন করে কল্পনাশ্রিত জগৎ ও উপলব্ধিজাত জগৎ এবং  পরবর্তীকালে ভার্চুয়াল জগতের মধ্যে রূপান্তরের মাধ্যমে ‘স্বতঃপ্রণোদিত ছন্দোময় প্রতিক্রিয়া’ সংঘটিত হতে পারে। ম্যাকাব্রের অন্যতম একটি উদ্দেশ্য হলো দর্শকদের জন্য একটি রঙ্গভূমি তৈরিকরা

যেখানে তারা একটি ক্রস-কালচারাল দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে সমকালীন থিয়েটার চর্চার অভিজ্ঞতা নেওয়ার  সুযোগ পেতে পারেন।’ (স্যুভেনির)

ম্যাকাব্রে নাটকটিতে মানুষের মুক্তির অনিষ্টতায় সমকালীন জীবন বাস্তবতাই দার্শনিক ব্যাখ্যানে তুলে ধরেছেন নির্দেশক। নাটকটি স্থান-কালকে ছাড়িয়ে ভিন্ন এক বিশেষ উপলব্ধ   মাত্রায় উন্নীত। প্রযুক্তির কাছে যেন অভিনয় তুচ্ছ হয়ে না যায়। অসাধারণ অভিনয়। আলো অসাধারণ। অসাধারণ মাল্টিমিডিয়ার ব্যবহার। 888sport appsে  এত প্রযুক্তিনির্ভর প্রযোজনা বোধহয়   এই প্রথম। ইউরোপীয় প্রসেনিয়াম মঞ্চধারার উপস্থাপন ম্যাকাব্রে। সেন্টার ফর এশিয়ান থিয়েটারের প্রায় প্রতিটি প্রযোজনাই অসাধারণ। সংগঠনটির উত্তরোত্তর সাফল্যই কাম্য। তবে মনে রাখা উচিত, ভিন্ন দেশের কোনো উৎসবে নাটক প্রদর্শনীর ক্ষেত্রে দেশীয় ধারার 888sport live chat কিংবা পরিবেশনাকে অধিকতর গুরুত্ব দেওয়া উচিত। সাধারণে নাট্য কিংবা সংস্কৃতি দর্শনের মধ্য দিয়ে সে-দেশীয় পরিচয় খুঁজতে তৎপর  থাকে। আমরা চাই দেশীয় 888sport live chatের বিশ্বজনীন বিকাশ ঘটুক। ম্যাকাব্রে উপস্থাপনাটির মঞ্চে –  সেতু আজাদ, মেহমুদ সিদ্দিকী, মেজবাউল করিম,  বাপ্পি আমিন, শিপ্রা দাস, আনিকা  মাহিন, চন্দ্র বর্মণ, মুনা মর্জিনা, হোসেন ইসমাইল; নেপথ্যে : মাল্টিমিডিয়া – আহসান রেজা খান, আলো – নাসিরুল হক, রোকেয়া রফিক বেবী, মোশারফ  হোসেন টুটুল এবং রচনায় আনিকা মাহিন ও নির্দেশনায় রয়েছেন কামালউদ্দিন নীলু।