ভালোবাসার ঝরা ফুল

অফিসের কাজেই শ্রীমঙ্গল যেতে হয়েছিল, অনেক ঝক্কি-ঝামেলা পেরিয়ে তারপর শ্রীমঙ্গল। দেশের অন্যতম টুরিস্ট স্পট হওয়ায়, এই শীতের সময় অনেক চাপ লক্ষ করা গেল, থাকার জন্য মোটামুটি একটা হোটেলের বন্দোবস্ত করে দিয়েছিল অফিসেরই একজন সেলস সুপারভাইজার বারেক, অত্যন্ত তেলবাজ প্রকৃতির এক লোক, বয়সের চেয়ে বয়সীদের মতো কথা বলে আরাম পান, নিজেকে জাহির করার প্রবণতা ষোলো আনা। এখানেই শেষ নয়, একবার কথা বলতে শুরু করলে সহজে থামেন না, কথায় পাকা হলেও কাজে কিন্তু মোটেও পাকা নন, অনেক খুঁজে পেতেও নাকি ভালো কোনো হোটেলের ব্যবস্থা করতে পারেননি, শেষটায় মোটামুটি গোছের হোটেলে প্রায় দুই রাত থাকতে হয়েছে নূরকে। নূর খুব নামী কোম্পানির মিড লেভেল কর্মকর্তা, উচ্চশিক্ষিত, স্মার্ট, সুশ্রী, সুঠামদেহী, দেখে যে কেউ বলবে পাত্রের বাজারে উপযুক্ত ক্যান্ডিডেট। তাছাড়া ব্যবহারে অত্যন্ত বিনয়ী ও মার্জিত, কথা ও কাজে একাগ্রতা রয়েছে বোঝা যায়। বিশ্ববিদ্যালয় পাশ করেই পাঁচ বছর আগে চাকরি শুরু করে নিজের যোগ্যতায় কোম্পানিতে নিজের জায়গা করে নিয়েছে। এ-বছর এমপ্লয়ি অফ দ্য ইয়ার অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে সে।

নির্ধারিত তিনদিনেই অফিসের কাজ গুছিয়ে ফেলেছে নূর, এবার বাড়ি ফেরার পালা, তবে এতদূরে এসে কয়েকটা দেখার মতো জায়গা না দেখলে আক্ষেপ থেকে যাবে ভেবে শেষের দিন অর্ধদিবস মতো সময় বের করে লাউয়াছড়া ন্যাশনাল পার্ক, হাম হাম জলপ্রপাত, মাধবপুর লেক, চা-বাগান দেখে মনটাকে শান্ত করেছিল। ঘুরতে ঘুরতে জায়গাগুলির নৈসর্গিক সৌন্দর্য এতটাই মুগ্ধ করেছিল যে, বারবার মনে হতে থাকে, এইখানে যদি আজীবন থেকে যাওয়া যেত! তবে পরিবার জীবন আর জীবিকার প্রয়োজনে ফিরতে তো হবেই।

শ্রীমঙ্গলে ভালো কি পাওয়া যায় জানতে চাওয়ায় বারেক বেশ বড় একটা লিস্ট ধরিয়ে দিলেন, যাকে বলে বারেকীয় লিস্ট। বারেকের মতে, এদেশে যা কিছু ভালো সবই নাকি এই শ্রীমঙ্গলে মেলে। লিস্টের তোয়াক্কা না করে বাবার জন্য শাল, মায়ের জন্য প্রায় দশ কেজির মতো সাতকড়া লেবু, বাসার অন্য সবার জন্য একগাদা স্পেশাল চা কিনে ব্যাগ ভর্তি করে ফেলল নূর। মা খুব খুশি হবেন কারণ নূরের মা আলাদা করে বলে দিয়েছিলেন এই লেবুর কথা, এই জারা সাতকড়া এই অঞ্চলের বিখ্যাত একটা লেবু যা গন্ধ আর আকৃতির জন্য বিখ্যাত সমগ্র দেশে। সাতকড়া কিনতে পেরে নূর শান্তি শান্তি বোধ করলো। এবার ফেরার পালা। তবে ফিরে যাওয়ার রাতে ডিনারটা অবশ্য বারেকের চাপাচাপিতে তার বাসাতেই করতে বাধ্য হলো নূর।

বারেকের গোছানো পরিবার।

স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে চমৎকার বোঝাপড়া। নূরকে খুব সহজেই আপন করে নিল। অল্প সময়েই পরিবারের একজন হয়ে উঠল সে। তবে একটা কথা অনস্বীকার্য যে, ময়নাভাবি তথা বারেকভাইয়ের স্ত্রী খুব ভালো রান্না করেন, বিশেষ করে গরুর মাংসটার জুড়ি মেলা ভার। কতদিন এমন সুস্বাদু খাবার খায়নি নূর, তা হিসাব করে বলা খুব মুশকিল। ভাবি এসএসসি পাশ হলেও বেশ সুন্দর গুছিয়ে কথা বলেন। তাদের একমাত্র মেয়ে বুলি ক্লাস ফোরে পড়ে। খুব ছটফটে আর আমুদে একটা মেয়ে। নূরকে পেয়ে আগ্রহ করে তার একটা আঁকার খাতা দেখাল, কী কী পড়ে কোন বিষয়ে ভালো মার্ক পেয়েছে, কোন বিষয়ে টিচার ইচ্ছে করে ভালো মার্ক দেননি ইত্যাদি বিষয় অনেকটা নালিশের সুরেই জানালো সে নূরকে। এতে মনে হতে পারে এতটুকু একটা বাচ্চা মেয়েও বোঝে কোথায় কখন তার অধিকার ফলাতে হবে। নূর অবশ্য ব্যাপারটাকে খুব উপভোগ করছিল আর কখনো কখনো হেসে উঠছিল আপনমনে। অবাক হওয়ার মতো বিষয় হলো, এতটুকু বাচ্চা মেয়ে কিন্তু কোনো কিছুতেই কোনো জড়তা নেই।

রাতের খাবার শেষে সবাই যখন ড্রয়িংরুমে বসে, ময়নাভাবি কথা বলতে বলতে মোটামুটি জেরা শুরু করে দিলেন, কতদূর পড়েছে, বাসায় কে কে আছে, বাবা কী করেন, মা কী করেন, কী পছন্দ করে-কী করে না, 888sport app কেমন লাগে, এতদিনেও বিয়ে কেন করেনি – আরো নানা প্রশ্ন। তাঁর প্রশ্নবাণে যখন নূরের নাভিশ্বাস ওঠার জোগাড় বারেক ভাই তখন ওর বেগতিক পরিণতি দেখে হেসে কুটিকুটি, আর নূর মনে মনে চিন্তা করল, বারেকভাইয়ের উপযুক্ত স্ত্রী বটে। এত কথার মাঝেও বারে বারে ঘড়ি দেখছে নূর, ‘এখন আটটা বাজতে দশ মিনিট বাকি, আটটা তিরিশ মিনিটে বাস হলে এখুনি ওঠা দরকার’ – ভাবল নূর। বারেকভাইয়ের বাসা থেকে হোটেল আবার হোটেল থেকে বাসস্ট্যান্ড যেতে হলে এক্ষুনি বেরুতে হবে, না হলে বাস মিস করব। এখানেই আটটার মতো বেজে গেছে উপায়ন্তর না দেখে নূর প্রয়োজনের কথাটা বলতেই বাকের বলল, ‘ওহ তাই তো আপনার তো আবার বাস ধরতে হবে, তবে আড্ডাটা খুব জমেছে, কী বলেন স্যার।’

নূর  বলল, ‘আড্ডাটা ছেড়ে যেতে মন চাইছে না।’ মনে মনে বলল, ‘নিকুচি করি আপনার আড্ডার’, কিন্তু মুখে কিছু না বলে শুধু সম্মতিসূচক মাথা নাড়লো। 

যাওয়ার কথা শুনে হোটেলে পৌঁছে দেওয়ার জন্য জোড়াজুড়ি করল বারেক; কিন্তু কোনোভাবেই রাজি হলো না নূর। শেষে একরকম জোর করেই বেরিয়ে এলো আর এসেই রিকশা নিয়ে সোজা হোটেলের উদ্দেশে রওনা হয়ে গেল। হোটেলের পৌঁছে যেখানে যা ছিল একরকম দলা পাকিয়ে ব্যাগের মধ্যে ঢোকাতে শুরু করল, সময় খুব কম। ব্যাগটা কাঁধে নিয়ে ফ্রন্ট ডেস্কে এসে বিল মিটিয়ে রিকশা নিয়ে ছুটল বাসস্ট্যান্ডের দিকে। এমনি খুব সময় জ্ঞান ওর; কিন্তু আজ সময়ের সঙ্গে যেন পাল্লা দিয়ে পারছে না নূর, হাতে আছে পাঁচ মিনিট। রিকশাওয়ালাকেই জিজ্ঞেস করল কতক্ষণ লাগতে পারে এখান থেকে বাসস্ট্যান্ড। রিকশাওয়ালা যা বলল এতে বাসস্ট্যান্ড যেতে লাগবে ১৫ মিনিট আর হাতে আছে ৫ মিনিট, যদি কপাল খুব ভালো হয় আর বাস লেট হয়, তবেই শুধু বাস পাওয়ার সম্ভাবনা আছে, নূর  কল্পনায় দেখতে পাচ্ছে গাড়ি ছেড়ে যাচ্ছে, শুধু মুখে বলল, ‘ভাই একটু তাড়াতাড়ি চালান।’ রিকশা যতদূর সম্ভব জোরে এগোতে লাগলো সামনের মোড় ঘুরেই রিকশা থেমে গেল, অ্যাক্সিডেন্ট – তাই জ্যাম লেগে আছে। নূর প্রায় চিৎকার করেই বলে ফেলল, ‘একেই বলে কপাল।’ ও শুধু ছটফটিয়ে উঠে রিকশাওয়ালাকে জিজ্ঞেস করলো, ‘অন্য কোনো পথ নেই? একটু ঘুরে গেলেও ওই দিক দিয়ে চলেন।’

নূরের আশা বাস তো আর অন টাইমে ছাড়বে না, কিছু দেরিতে হলেও হয়তো বাস পাওয়া যেতেও পারে; কিন্তু রিকশাওয়ালার সাফ জবাব – এছাড়া বিকল্প কোনো পথ নেই, গেলে এখান দিয়েই যেতে হবে। কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর উপায়ন্তর না দেখে ভাড়া মিটিয়ে দিয়ে রিকশা ছেড়ে জ্যামের অংশটুকু পায়ে হেঁটে আবার রিকশার জন্য হাঁটতে শুরু করলো নূর। হাঁটতে হাঁটতে বোঝা গেল যে জ্যামটা খুব ছোট না, বেশ বড়সড় জ্যাম। চলতে চলতে কানে এলো কে একজন মারা গেছে অ্যাক্সিডেন্টে।

বেশ কিছুদূর হাঁটার পর একটা রিকশা পেল নূর। রিকশা নেওয়ার পরপরই লক্ষ করল, রিকশাওয়ালা বেশ বয়স্ক, খুব জোরে টানতে পারছে না; কিন্তু একটু জোরে টানতে যে বলবে সেটি আবার অমানবিক হবে ভেবে বলা থেকে বিরত থাকল, কি আর করা মহান সৃষ্টিকর্তার হাতে সঁপে দিয়ে বাসস্ট্যান্ড পৌঁছানোর অপেক্ষায় প্রহর গুনতে লাগলো সে। বাসস্ট্যান্ডের কাছাকাছি আসতেই ভাড়া চুকিয়ে এক লাফে রিকশা ছেড়ে দিলো দৌড়। কাউন্টারে পৌঁছে জানতে পারল, গাড়ি ছেড়ে গেছে ১০ মিনিট আগে, ঘড়ির দিকে ভালোভাবে লক্ষ করে দেখলো সত্যিই অনেকটা দেরি হয়ে গেছে। কাউন্টার থেকে টিকেট মাস্টার বললেন, ‘ঠিক সময়ের ১০ মিনিট দেরি হলেও বাসটা পাওয়া যেত, কিন্তু ২০ মিনিট দেরি অনেক বেশি স্যার, আমার গাড়ির কন্টাক্টর অনেকবার আপনাকে খুঁজেছে, কিছুক্ষণ অপেক্ষাও করেছে;  কিন্তু না পেয়ে গাড়ি ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছে।’

ভাঙা হৃদয় নিয়ে নূর জানতে চাইলো, ‘এরপর আবার কখন গাড়ি ছাড়বে?’

‘আজ আর কোনো গাড়ি ছাড়বে না স্যার, সারা দেশে অবরোধ, বাস মালিকরা গাড়ি ছাড়তে পারছে না, পলিটিক্যাল চাপ আছে, ওটাই ছিল আমাদের 888sport appর জন্য শেষ গাড়ি’।

কথা শুনে হতাশা চেপে বসল যেন, স্বাভাবিকভাবে কোনো কিছুই আর চিন্তা করতে পারছে না নূর। আরো একটা দিন শ্রীমঙ্গলে। অস্ফুটে শুধু বলল, ‘অসম্ভব।’ মরিয়া হয়ে জিজ্ঞেস করলো, ‘ভাই 888sport app যাওয়ার আর কি কোনো বুদ্ধি নেই।’

বাসের লোক উত্তরে বলল, ‘না ভাই, অবরোধের জন্য আর কোনো গাড়ি ছাড়বে না, তবে ট্রাক দেখতে পারেন অথবা খুব জরুরি হলে ভেঙে ভেঙে যেতে পারেন।’

নূর উত্তরে বলল, ‘ওরে বাবা এ তো সাংঘাতিক ব্যাপার, এভাবে মানুষ যায়, এই শীতে রাস্তায়ই তো মারা পড়ব!’

পাশ থেকে আরেকজন বুদ্ধি দিলো, ‘স্যার আরেকটা উপায় আছে, চেষ্টা করে দেখতে পারেন, এখান থেকে দশটা ত্রিশে একটা ট্রেন 888sport app যায়, এখন নটা বাজে, রিকশা নিয়ে গেলে টিকিট পেয়ে যাবেন।’

নূর  আশার আলো দেখতে পেয়ে মনে মনে বলল, ‘হে আল্লাহ শুকরিয়া। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ ভাই, ট্রেনের কথাটা এতক্ষণ মাথায় কেন আসেনি কে জানে।’

একটা রিকশা ভাড়া করে ট্রেন স্টেশনের দিকে রওনা হলো নূর, খুব ঠান্ডা পড়েছে আজ, হাত-পা সব বরফের মতো হয়ে যাচ্ছে যেন, মফস্বলের আবহ আর অবরোধ মিলিয়ে শ্রীমঙ্গলের শ্রী যেন কেড়ে নিয়েছে কেউ। যে-শহর রাত একটার আগে ঘুমায় না, সে আজ নটায় মৃতপ্রায়। দু-একটা রিকশা এদিক-ওদিক ছুটছে, পথে লোকজন প্রায় নেই বললেই চলে। এই সময় মনে হতে পারে শ্রীমঙ্গল অনেক পুরনো শহর, এই পুরনো এলাকায় একটা অদ্ভুত পুরনো পুরনো গন্ধ আছে। নির্জনতা একটা আলাদা মাত্রা যোগ করেছে এর সঙ্গে। একটু ভয় ভয় অনুভূতি সৃষ্টি করে বইকি। নূর লক্ষ করল, আকাশে ঘোরলাগা চাঁদ, গতকাল বা পরশু পূর্ণিমা ছিল মনে হয়। এসব দেখতে দেখতে আর ভাবতে ভাবতে স্টেশনে পৌঁছে গেল সে।

হাতের ঘড়িটা একবার দেখে নেয়, না ঠিক আছে ঠিক সময় পৌঁছেছে ও, মনে মনে সবটা সাজিয়ে রেখেছে, 888sport app পৌঁছে প্রথমে বড় কাকার সঙ্গে দেখা করবে, জমির ব্যাপারে আলোচনা করে একটা সিদ্ধান্ত নেবে।

ঢোকার মুখে স্টেশন বিল্ডিং দেখে সহজেই অনুমান করা যায়, বেশ পুরনো একটি স্টেশন, ব্রিটিশ আমলের হয়ে থাকবে হয়তো, সংস্কারের বড়ই অভাব, ভবনের গায়ে পাকুর গাছ, বটগাছ জায়গা পাকা করে নিয়েছে। টিকিট কাউন্টারে টিকিট আছে কি না জিজ্ঞেস করতেই টিকিট মাস্টার বলল, ‘অবরোধ থাকায় যাত্রীর খুব অভাব, যত চান টিকিট দেওয়া যাবে।’

শুনে খুশি হলো নূর। টিকিট কেটে প্লাটফর্মে প্রবেশ করে দেখল নামমাত্র যাত্রী এখানে-সেখানে ঘোরাঘুরি করছেন, দু-একজন আবার বেঞ্চির ওপর কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে আছেন।

সবমিলিয়ে পাঁচ-ছয়জন লোক আছেন প্ল্যাটফর্মে। খুব পুরনো আর জবুথবু প্ল্যাটফর্মের অবস্থা। প্লাটফর্মের শেষ দুই প্রান্তে ফ্লাইওভার আছে পারাপারের জন্য। একটা চা-বিস্কুটের দোকান, বাইরে বেশ কিছু চিপস ঝুলছে, সামনের টেবিলের ওপর পানি সাজানো, একদিকে পান আর সিগারেটের ব্যবস্থা।

পান-সিগারেটের অভ্যাস করেনি নূর, দোকান থেকে দুটো চিপস আর পানি কিনল, চা আছে কি না জানতে চাইলে ঢুলুঢুলু চোখে দোকানি জানাল, ‘শ্রীমঙ্গলের সবচেয়ে ভালো চা পাবেন এখানে।’ খুব বুঝেছে এমন একটা ভাব করে বসার সিটের খোঁজে কেটে পড়লো নূর। পূর্বের দিকটা একেবারেই ফাঁকা, মনের মতো একটা বেঞ্চি খুঁজছিল সে, ভাগ্যক্রমে পেয়েও গেল। নূর ভাবল, নিরিবিলি বেশ আয়েশ করে বসা যাবে। আনমনে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে হিসাব করল, ‘দশটা ত্রিশ মিনিটে ট্রেন হলে এখন আরো এক ঘণ্টা মতো সময় বাকি, এ সময়টা কাটানোর সবচেয়ে দারুণ উপায় হচ্ছে মোবাইলে গেম খেলা, খেলতে খেলতে সময় যে কিভাবে চলে যায় বোঝার উপায় নেই।’ 

মোবাইলে টেম্পল রান খেলাটা এমন জমে গেছে যে হাই স্কোর থেকে আর মাত্র ২০০ পয়েন্ট বাকি এ-সময় কোনোভাবেই মনোযোগ নষ্ট হলেই দুর্ঘটনা ঘটতে সময় লাগবে না। ঠিক এমন সময় একটা মেয়েকণ্ঠ মিষ্টি হেসে বলল, ‘কি খুব খেলা হচ্ছে?’

888sport promo codeকণ্ঠ শুনে নূর মুখ তুলে তাকাতেই এক অনিন্দ্যসুন্দর মেয়েকে পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলো। মুখটা কম আলোতেও প্রভা ছড়াচ্ছে, পরনে সালোয়ার-কামিজ, পায়ে পাম্প সু, হাতে রোলার সুটকেস, মুখে স্নিগ্ধ হাসি। খুব সিম্পল কিন্তু এত এলিগেন্ট যে প্রথম দেখায় যে কেউ বলবে, মেয়েটির মধ্যে একটা ব্যাপার আছে। কিছুক্ষণের জন্য নূর ভুলে গেল স্কোর করার কথা, মনে পড়তেই চেয়ে দেখল ক্র্যাশ হয়েছে, যতখানি মন খারাপ হবে ভেবেছিল ঠিক ততখানি হলো না, তবে অতর্কিতে মেয়েটির কথায় একটু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে অগত্যা উত্তর দিলো, ‘টেম্পল রান ফ্যান্টাস্টিক একটা গেম।’ 

‘এখানে বসতে পারি?’ মেয়েটির সরল জিজ্ঞাসা।

নূর আশপাশে একটু দেখে নিয়ে বলল, ‘অবশ্যই। আপনার আপত্তি না

থাকলে আমার কোনো আপত্তি নেই।’

– আপত্তি কিসের, আপনি বাঘ কিংবা ভালুক তো নন, দেখে তো ভদ্রলোকই মনে হয়। আর নির্জন যাত্রাপথে মেয়েদের ভরসা আপনার মতো ভদ্রলোক, বুঝেছেন?’ মুখে মৃদু হাসি। ভর্ৎসনা আর একটু খোঁচাও অনুভব করল নূর, মনে মনে চিন্তা করল, ‘মেয়েটা একটু কেমন না? একটু পাগলাটে টাইপ।’ শুধু মুখে বলল, ‘আমি আসলে কিছু মিন করে বলিনি, ছোট শহরে মেয়েরা এমনভাবে সাধারণত বলে না তো তাই।’

– হা-হা-হা ছোট শহরে কি প্রগতিশীল মেয়েরা থাকে না? শুধু বড় শহরেই থাকে? ভুলে যাচ্ছেন কেন শ্রীমঙ্গল লন্ডনিদের আবাসস্থল।

নূর একটু যেন বিব্রত হয়ে – ‘আমি কি তাই বলেছি! আচ্ছা প্রথম পরিচয়ে না নাম জানা, না শোনা; ঝগড়া শুরু!’

– জানেন তো গুরুজনেরা বলেন, কোনো পরিচয় ঝগড়ায় শুরু হলে সে-সম্পর্কের গভীরতা তত বেশি হয়, ঠিক হৃদয়ের ভেতরের আবেগের মতো, যত দমন করা হয়, তত বেড়ে চলে আর ডালপালা শাখা-প্রশাখা বিস্তৃত করে।

– বাহ্, সম্পর্ক সম্বন্ধে অনেক জ্ঞান আপনার, হিউম্যান সাইকোলজি পড়েন বুঝি।

– এটুকু বোঝার জন্য হিউম্যান সাইকোলজি পড়তে হয় না মশাই।

– এটা না হয় বুঝলাম, তা পড়া হয় কিসে? 

– ইকোনমিক্সে। যদিও আমার একটুও ভালো লাগে না। 

– বেশ কঠিন সাবজেক্ট, সায়েন্স আর আর্টস মিলিয়ে ককটেল আর কি! এই দেখুন না, ডিমান্ড সাপ্লাইয়ের ইকুয়েশন আছে আবার কাস্টমারের সাইকোলজিও আছে, এই দুইয়ের মিক্সার একটু ঝামেলাপূর্ণ কি না!

– ইকোনমিক্স সম্পর্কে বিশদ জ্ঞান আছে দেখছি, আপনিও কি … 

– না, মোটেও না। আমি 888sport app বিশ^বিদ্যালয় থেকে ফিজিক্স পড়েছি। পরে অবশ্য এমবিএ করে চাকরি করছি।

– ফিজিক্স! ওরে বাবা! ভরবেগ, কোয়ান্টাম থিওরি আর শক্ত শক্ত কত কি! এগুলি রসকষহীন, কেমন করে যে মানুষ পড়ে বুঝি না।

– তা কেন এই আপনার চারপাশে যা কিছু ভালো দেখছেন সবই তো ফিজিক্স। এই যে একটু পরে যে-ট্রেনটিতে আমরা যাব সেটাও তো ফিজিক্স, তাই না? আচ্ছা যতদূর জানি শ্রীমঙ্গলে তো ভার্সিটি নেই, তাহলে কোন বিশ^বিদ্যালয়ে পড়া হয়?

– আপনার মতোই 888sport app ভার্সিটিতে।

– কী বলেন, তাই নাকি, অদ্ভুত ব্যাপার!

– কেন অদ্ভুত কেন? শ্রীমঙ্গলের কেউ কি 888sport app ইউনিভার্সিটিতে পড়তে পারে না নাকি? 

কথাটি বলে মেয়েটি মিটমিট করে হাসছে, যাকে বলে প্রকাশ্যে অপমান, যা দেখলে যে কারো গা জ্বলে যাবে, নূরেরও গা জ্বালা করছিল, শুধু প্রকাশ না করেই বলল, ‘আশ্চর্য আমি কি একবারও তা বলেছি! আমার বলার অর্থ ছিল, আমাদের তো 888sport app ইউনিভার্সিটিতেও পরিচয় হতে পারত, শেষে না এই অদ্ভুতুড়ে প্ল্যাটফর্মে আপনার সঙ্গে দেখা হলো!’

অদ্ভুতুড়ে বলতেই নূর লক্ষ করল, চারদিকের সুনসান নীরবতা, প্ল্যাটফর্মের মিটমিটে আলোয় প্রচণ্ড ঠান্ডায় দুটো কুকুর গায়ে গা ঠেকিয়ে গুটিসুটি মেরে শুয়ে আছে, দুই-একটা লোক চাদর মুড়ি দিয়ে বেঞ্চে শুয়ে আছে। বহুদূর থেকে শিয়ালের আর্তনাদ ভেসে আসছে। ঘোর লাগা চাঁদের মায়াবী আলোয় চারপাশটা কেমন যেন ঘোর ঘোর পরিবেশের সৃষ্টি করেছে – এমন কথায় ভাবছে সে। এমন সময় মেয়েটি বলে উঠলো, ‘কী হলো, একেবারে চুপ হয়ে গেলেন যে? কী ভাবছেন, আমার মতো মেয়ে ইউনিভার্সিটিতে পড়ার কথা নয়, তাই না?’

নূর আমতা আমতা করে বলে, ‘আমি কিন্তু তা বলিনি মোটেও, বলেছি ভার্সিটিতেই দেখা হতে পারত। আচ্ছা আমরা এতক্ষণ ধরে কথা বলছি অথচ আমরা একে অপরের নাম এখনো জানি না, তখন থেকে উল্টাপাল্টা কথাই হচ্ছে শুধু!’

  • বারে জানবেন কীভাবে? আপনি তো ফিজিক্স আর ইকোনমিক্স নিয়ে ব্যস্ত,  শক্ত শক্ত থিওরি আর তখন থেকে এর সুফল বোঝাচ্ছেন!

কথা বলছে আর হাসছে মেয়েটি, যেন খোঁচা দিয়ে খুব মজা পাচ্ছে।

– ও হ্যাঁ তাই তো, আমার নাম নূর, আপনার নাম?

– মুক্তি, বাবা-মা বলেন মুক্ত বিহঙ্গের মতো উড়তে ভালোবাসি বলেই আমার এমন নাম।

মুক্তির কথার ধরন দেখে নূর না হেসে পারল না। এই প্রথম সে অনুভব করল, মেয়েটার মধ্যে পাগলাটে স্বভাবের সঙ্গে সঙ্গে ছেলেমানুষিও কম নেই।

– আমি কিন্তু জানি আপনি কি ভাবছেন, আপনি ভাবছেন আমি পাগলাটে ও ছেলেমানুষ টাইপের একটা মেয়ে, তাই না? আমি কিন্তু অনেক সিরিয়াস গোছের মানুষও, বুঝেছেন?

মানুষ ধরা খেলে যেমন পাংশু বর্ণ হয়ে যায় নূরের ঠিক সেই অবস্থা। একবার নিজের হাতে চিমটি কেটে দেখলো, স্বপ্ন দেখছে না তো? অবাক হয়ে ভাবল, মেয়েটা মনের কথা পড়তে পারে নাকি? পরক্ষণে এই ভাবনা উড়িয়ে দিয়ে মনে মনে বলল, সব কাকতালীয় হবে হয়তো। ভাবনাটা চাপা দিয়ে জিজ্ঞেস করল, ‘তোমার বাসায়, মানে আপনার বাসায়, কে কে আছেন?’ 

– হা হা হা, চাইলে আপনি আমাকে তুমি বলতে পারেন, আমি অবশ্য আপনার চেয়ে বেশ খানিকটা ছোটই হবো।

– না মানে হঠাৎ করে বেরিয়ে গেল আর কি! তবে আপনার আপত্তি না

থাকলে তুমি বলতে স্বচ্ছন্দ বোধ করব।

– কোনো অসুবিধা নেই, বরং ‘আপনি’ কথাটা অনেক পরপর শোনায়, যাই হোক আমার বাসায় এক ভাই আর বাবা-মা আছেন, ভাই ক্লাস এইটে পড়ে আর আপনার? 

– আমরা দুই ভাই আর বাবা-মা। ভাই 888sport app ইউনিভার্সিটিতে কেমিস্ট্রিতে অনার্স করছে আর বাবা প্রাণিবিদ্যার শিক্ষক, মা গৃহিণী।

– বাহ পুরো পরিবার সায়েন্স পরিবার। আমাদের অবশ্য মিক্সড –  মা স্কুল টিচার, বাবা সরকারি চাকুরে আর ভাইয়ের বিষয়ে তো আগেই শুনলেন। 888sport appতে কোথায় থাকেন আপনি? 888sport appয় খুব জ্যাম, আমরা যারা ভার্সিটির হলে

থাকি তারা জ্যামটা ঠিক বুঝতে পারি না।

– আমরা থাকি লালমাটিয়ায়। ওই এলাকা থেকে যেদিকেই যাই না কেন জ্যাম আর জ্যাম – দুই কিলো যেতে চাইলে এক ঘণ্টা, এই দেখো না বাসা থেকে আমার অফিস গুলশান যেতে সময় লাগে প্রায় দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা, ভাবা যায়? কী যে অবস্থা হচ্ছে দিন দিন দেশে? থাকা দায় হয়ে পড়েছে। সেই

সকাল-সকাল গোসল করে তারপর ফিটফাট হয়ে অফিসে যাও, বিরক্ত লাগে।

– তা অবশ্য ঠিক। 888sport appয় জ্যাম অসহ্য বটে, কিন্তু আমার ক্যাম্পাসে বেশ ভালো লাগে, এত এত গাছ, সন্ধ্যা হলে পাখি; অনেকটা শ্রীমঙ্গলের মতোই। তবে চাকরি করলে তো আপনাকে এসব করতেই হবে। ইস্ কবে যে পাশ করব আর চাকরি করে নিজের পায়ে দাঁড়াবো। আচ্ছা আপনি কি সত্যি সত্যি দেশ ছেড়ে বিদেশে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করে ফেলবেন নাকি? আহ! আমি একটা শুভাকাক্সক্ষী হারাবো তাহলে।

কথাটা বলে মুক্তি মুখটা ফিরিয়ে নিয়ে একটু কি উদাস হলো? কেন যেন নূরের মনে একটা অচেনা শিহরণ খেলা করে গেল, মুক্তির জন্য কোথায় যেন একটা মায়া অনুভব করল সে, কথার মধ্যে কোথাও কি একটা টান ছিল? ভ্রম নয় তো? মুক্তি মুখ ফেরাতেই ওর ছলছল চোখটা ঠিক চোখে পড়ল নূরের। এই ক্ষণিকের দেখা তবু কত আপন মানুষটা, একটা ভালো লাগার শিহরণ যেন খেলা করে গেল সমস্ত শরীরে।

– দেশের বাইরে যাব যে তা এখনো ঠিক হয়নি। মনে মনে ভাবি আমাদের আর্থসামাজিক অবস্থা রাজনৈতিক পরিমণ্ডল দেশে গণতান্ত্রিক কাঠামো আমলাতান্ত্রিক সামন্তবাদ, এসবই আমাকে ভাবিয়ে তোলে মুক্তি, আমাদের এ সমাজ বাসের অযোগ্য হয়ে গেছে।

– আচ্ছা এভাবে দেখলেও তো হয়, একটা দেশ একবার একটা তলাবিহীন ঝুড়ি থেকে অর্থনৈতিকভাবে ক্রমাগত শক্তিশালী হতে হতে ৪০টি শক্তিশালী অর্থনৈতিক দেশের একটি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এদেশ আপনার আমার মতো মেধা চায়। আমাদের প্রজন্মই এগিয়ে নেবে এদেশ, আমরাই হবো আগামী প্রজন্মের মুক্তির গান।

– ‘মুক্তির গান’ কী সুন্দর বললে কথাটা! আমার কানে সুধার মতো ভেসে এলো, মুক্তি তুমি আজ আমাকে আমার আয়না দেখালে, কংক্রিটের শহরে

থাকতে থাকতে এই বোধটাই ভোঁতা হয়ে গিয়েছিল যে, এ-দেশকে আমারও কিছু দেওয়ার আছে, তোমাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। 

– ধন্যবাদ কিসের জন্য? আমি যা বিশ^াস করি তাই বলেছি, আপনার ভালো লাগলে ভালো, না লাগলে আমার কি বা করার আছে!

– না ভালো লেগেছে, খুব ভালো লেগেছে। তোমার মতো করে অনেকদিন কেউ বলেনি আমাকে।

কথাটি বলতে বলতে উত্তেজনায় উঠে দাঁড়ায় নূর, পরক্ষণেই মনে পড়লো সে আবেগতাড়িত হয়ে গেছে, মুড পাল্টানোর জন্য ঝটপট বলল, ‘চা খাবে? এখানে নাকি স্পেশাল চা পাওয়া যায়। চিপস চাইলে আমার কাছে অলরেডি চিপস আছে।’

– না, চিপস খেতে ইচ্ছে করছে না। তবে চা চলতে পারে, স্পেশাল হলে তো কথাই নেই।

ঠিক এই মুহূর্তে নূর লক্ষ করলো এই প্রচণ্ড শীতেও মুক্তি কোনো গরম কাপড় পরেনি। অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, ‘কী ব্যাপার তুমি গরম কাপড় পরোনি যে, তোমার কি ঠান্ডা লাগে না, আমি

তিন-চারটা গরম কাপড় পরেও শীতে কাবু আর তুমি কি না একটা ব্যাগ হাতে গরম কাপড় ছাড়া দিব্যি গল্প চালিয়ে যাচ্ছো!’

খিলখিল  করে হেসে মুক্তি বলে, ‘আমরা গ্রামের মানুষ, শহরের মানুষের মতো আমাদের শীত এত বেশি না, হিসেবে একটু কমই আর শীত তাড়ানোর জন্যই তো স্পেশাল চা খেতে চাইলাম! কি এমন অবাক হলেন যে চায়ের কথা রীতিমতো ভুলেই গেলেন?’

– না মোটেও ভুলিনি। একটু বসো, নিয়ে আসছি তোমার দেশের স্পেশাল চা।

নূরের যাওয়ার পথের দিকে মুক্তি মিটমিট হাসছে, নূর তা  অনুভব করে পুলকিত বোধ করলো কিছুটা, ছুটে  গিয়েই দোকানির কাঁচা ঘুম ভাঙিয়ে দুটো চা অর্ডার করল, দু-হাতে দু-কাপ চা নিয়ে আবার বেঞ্চে ফিরে এলো, নূরের চা নিয়ে যাওয়া দেখে মনে হতে পারে সে মুক্তির সঙ্গ এক মুহূর্তের জন্যও নষ্ট করতে চাইছে না। চা নিয়ে এসে নূর মুক্তিকে বলল, ‘তুমি কিছু না মনে করলে একটা অনুরোধ করতে চাই।’

– কী সেটা।

– একটি সেলফি নিতে চাই তামার সঙ্গে, আমাদের প্রথম দেখার 888sport sign up bonus হিসেবে রেখে দেবো।

– এতে মনে করার কী আছে, একটা সেলফিই তো?

নূর দেরি না করে বেঞ্চিতে চায়ের কাপ দুটো রেখে ঝটপট একটা সেলফি তুলে নিল, মুখে বিজয়ের হাসি, যেন এইমাত্র কোনো যুদ্ধ জয় করল। সেলফি তোলা শেষে মুক্তিকে চা বাড়িয়ে দিলো।

– আহা স্পেশাল চা খেয়ে পাগল না হয়ে যাই। 

– তোমার দেশের চা, তোমার সইবে, পাগল হলে তো আমার হওয়ার সুযোগ আছে।

– তাহলে তো চুকে গেল আর 888sport app গিয়ে কাজ নেই, এই শ্রীমঙ্গলেই পাগল হয়ে ঘুরবেন।

– চা নাও। কী যে বলো না, চায়ের এমন গুণের কথা আগে শুনিনি। 

– শুনবেন কী করে, সব জায়গায় তো আর শ্রীমঙ্গল নেই।

মুক্তির স্নিগ্ধ হাসিতে সবদিক আলো করে আনন্দ ছড়ালো। সেই হাসিতে নূরের মনের অন্ধকার দূর করে আলোকিত করে তুলল যেন। নূর মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে মুক্তির সরল কথা আর হাসিতে অভিভূত হয়ে গেল, নূরের স্বরূপ বুঝতে পেরে মুক্তি যেন একটু ভ্রু নাচিয়ে চোখ পাকিয়ে মজা নিতে চাইল, তবে মুখ যতদূর সম্ভব স্বাভাবিক রেখে জিজ্ঞেস করল – ‘আমাদের কি আর কখনো দেখা হবে?’

– কেন হবে না? 888sport appয় গিয়ে আমার প্রথম কাজ হবে তোমার সঙ্গে দেখা করা।

– যদি খুঁজে না পান তাহলে?

– ভার্সিটিতে খুঁজে না পাওয়ার কোনো কারণই নেই, এতটুকু তো জায়গা, এখানে হারানোটাই একটা কঠিন বিষয়।

– তা বটে। ওই যে ট্রেন আসছে। 

ট্রেনের লাইট দেখা যাচ্ছে, একটা ট্রেন প্ল্যাটফর্মের দিকে এগিয়ে আসছে, ঘড়ির কাঁটা দশটা তিরিশ ছুঁই ছুঁই, ট্রেন হুইসেল দিয়ে এসে থেমে যায়, প্ল্যাটফরম কিছুক্ষণের জন্য প্রাণ ফিরে পায় যেন। মুক্তি নূরের উদ্দেশে কী যে বলার চেষ্টা করছিল ট্রেনের শব্দের জন্য নূরের কান পর্যন্ত সে-কথা পৌঁছাল না। সে প্রাণপণ মুক্তির কথা শোনার চেষ্টা করল কিন্তু পারল না আর কিছুক্ষণ পরই ট্রেন ছেড়ে দেবে। মুক্তির উদ্দেশে নূর বলল, ‘চলো, যাবে না? চা-ওয়ালাকে টাকা দিয়ে চলো একসঙ্গে উঠি, আর তোমার বগি নম্বর  কত? দরকার পড়লে টিটিকে দিয়ে টিকিট চেঞ্জ করে পাশাপাশি বসে 888sport app ফিরতে পারি, গল্প করতে করতে যাওয়া যাবে, কী বলো?’

এর কোনো জবাবই মুক্তি দিলো না, শুধু ছলছল চোখে নূরের দিকে তাকিয়ে রইল। নূর উঠে দাঁড়ালে মুক্তিও উঠে দাঁড়াল। নূর মুক্তিকে লক্ষ করে বলল, ‘আমি এক মিনিটে চায়ের দামটা দিয়ে আসছি, তুমি রেডি হয়ে নাও।’ বলেই হন্তদন্ত হয়ে টাকা দিতে গেল।

টাকা দিয়ে মুখ ফিরিয়ে মুক্তিকে ডাকতে চাইল, এমন সময় সে লক্ষ করল মুক্তি যে-জায়গায় দাঁড়িয়ে ছিল সেখানে   কেউ নেই। নূর অবাক হয়ে গেল। প্রথমে ভাবল, ট্রেনের দিকে গেছে বোধহয়; কিন্তু তা কী করে হয়! এত অল্প সময় যাবেই বা কতদূর? এদিক-ওদিক দেখে শেষটায় চা-দোকানিকে জিজ্ঞেস করল, ‘ভাই এখানে বেঞ্চিতে আমার সঙ্গে একটা সালোয়ার-কামিজ পরা মেয়ে বসেছিল, কোথায় গেল দেখেছেন তাকে?’

– মেয়ে! আরে স্যার এত রাতে একাকী মেয়ে কেন প্ল্যাটফর্মে আসবে আর আপনি তো যখন থেকে এসেছেন একাই বসে আছেন, আমি আপনাকে একবার বাতাসে হাত ছুড়ে কথা বলতে দেখলাম, ভাবলাম, আপনি কোনো সেøাগান প্র্যাকটিস করছেন মনে হয়।’ এই কথা বলার সময়ই দোকানির চোখে ভয় স্পষ্ট বোঝা গেল, সেজন্য কি না একটু তোতলাচ্ছে সে, মনে হচ্ছে ভয়ে বা  ঠান্ডায়, স্পষ্ট করে বলা খুব কঠিন, তবে সে যে ভয় পেয়েছে এ-ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। দোকানিকে

থামিয়ে দিয়ে নূর বলল, ‘আরে আপনারা কি অন্ধ না পাগল! একটা জলজ্যান্ত মেয়ে আমার সঙ্গে সোয়া এক ঘণ্টা ধরে বসে কথা বলল, চা খেল অথচ আপনারা কেউ দেখেননি, এটা কোনো ভূতের কাণ্ড যে মুক্তি কর্পূরের মতো উড়ে যাবে!’

– ‘স্যার খুব ভালোভাবে দেখেছি, আপনি একা ছিলেন। তবে এ ঘটনা আগেও ঘটেছে, এখানে ওই মেয়েটাকে প্রায়ই দেখা যায়। গত বছর হঠাৎ করে দুর্বৃত্তদের হাতে খুন হয় মেয়েটি, মুক্তি না কী নাম যেন নাম মেয়েটির। ওই যে দেখেন’ – বলে, দোকানের অদূরে একটি ম্যুরাল দেখিয়ে বলল, ‘ওই মেয়েটির 888sport sign up bonusতে মূর্তি তৈরি হয়েছে, নিচে কী যেন লেখা আছে।’

নূর অবিশ্বাসের ভঙ্গিতে বলল, ‘কী আবোল-তাবোল যে বলেন! এসব ভূতটূতের গল্প কোথায় যে পান’, বলে পকেট থেকে মোবাইল বের করে কিছুক্ষণ আগে তোলা ছবিটা দোকানিকে দেখাতে গেল; কিন্তু যা দেখল তাতে সে নিজের চোখকেই বিশ^াস করতে পারছিল না। মেয়েটি নেই ছবিতে, শুধু তার একার ছবি, দেখে মুখ হাঁ হয়ে গেল নূরের।

সে এসে ম্যুরালের সামনে দাঁড়ালো, মুর‌্যৃাল দেখে সে আরো হতভম্ভ হয়ে গেল, এ যেন অবিকল মুক্তি। নিচে লেখা আছে – ‘সাদিয়া হোসেন মুক্তির সম্মানে’।

নূরের মাথায় যেন বাজ পড়ল, সমস্ত পৃথিবী বন বন ঘুরছে, মাথা ভোঁ-ভোঁ করছে, যেন কিছুই আর চিন্তা করতে পারছিল না, শুধু নিষ্পলক দৃষ্টিতে ম্যুরালের দিকে তাকিয়ে রইল। ট্রেনে চড়ার কথা একেবারেই ভুলে গেল, ভুলে গেল সময় বলেও পৃথিবীতে কিছু আছে।