জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান জীবন-সায়াহ্নে একখানি অভিধান রচনা করে নাম দিয়ে গেছেন আমার অভিধান। পরিকল্পনা করেছিলেন একশ শব্দ দিয়ে এর কলেবর সাজানোর। পরে আশিতে নামেন, কিন্তু তাও বাস্তবায়ন করতে পারেননি, বাষট্টিতে থামতে হয়েছে তাঁকে। শেষতক তাই বাষট্টি শব্দ দিয়েই সম্পন্ন হয় নিজের সর্বশেষ পরিকল্পনার এই বই। ‘ছোট্ট এই বই, সম্ভবত বাংলা ভাষার ক্ষুদ্রতম অভিধান।’
বাংলা ভাষায় অভিধান রচনার ইতিহাস দীর্ঘ, যার সূত্রপাত বিদেশিদের হাতে। প্রথমটি রচনা করেন ম্যানোএল দ্য আস্সুম্পসাঁউ, নাম ভোকাবুলারিও এম ইদিওমা, বেনগলা ই পর্তুগিজ (১৮৪৩)। পরে ফ্রস্টার, মোহনপ্রসাদ, কেরি, রামকৃষ্ণ, জগন্নাথপ্রসাদ, হটন, রামকমল, ডি রোজারিও, দেবীপ্রসাদসহ অনেকেই এ-পথে হাঁটেন। সে-পথ আরো প্রশস্ত হয় মথুরানাথ তর্করত্নের শব্দসন্দর্ভসিন্ধু (১৮৬৩), শ্যামাচরণ চট্টোপাধ্যায়ের শব্দদীধিতি অভিধান (১৮৬৪), ঈশ^রচন্দ্র বিদ্যাসাগরের শব্দ-সংগ্রহ, সুবলচন্দ্র মিত্রের সরল বাঙ্গালা অভিধান (১৯০৬), জ্ঞানেন্দ্রমোহন দাসের বাঙ্গালা ভাষার অভিধান (১৯১৬), হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বঙ্গীয় শব্দকোষ (১৯৩৪) প্রভৃতি অভিধানের মাধ্যমে।
পূর্ববঙ্গ তথা 888sport appsে অনেকেই অভিধান
সংকলন-সম্পাদনা করেছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য অভিধানগুলি হলো : ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্-সম্পাদিত বাংলা একাডেমী : 888sport appsের আঞ্চলিক ভাষার অভিধান (১৯৬৫), ড. মুহম্মদ এনামুল হক ও 888sport app সম্পাদিত বাংলা একাডেমী : ব্যবহারিক বাংলা অভিধান (১৯৭৪), জামিল চৌধুরীর বাংলা একাডেমী : বাংলা বানান অভিধান (১৯৯৪), বাংলা একাডেমী : আধুনিক বানান অভিধান (২০১৬) প্রভৃতি। এছাড়া নরেন বিশ^াসের বাংলা একাডেমী : বাংলা উচ্চারণ অভিধান, মুহাম্মদ হাবিবুর রহমানের যথাশব্দ, গোলাম মুরশিদের বাংলা একাডেমী : বিবর্তনমূলক বাংলা অভিধান (১-৩ খণ্ড), মাহবুবুল হকের খটকা বানান অভিধান বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এরই ধারাবাহিকতায় সংযোজিত অনতিবৃহৎ অভিধান আনিসুজ্জামানের আমার অভিধান।
এই অভিধানে স্থান পাওয়া শব্দগুলি হলো : অত্র, অনিরাপদ, অন্যতম, 888sport app, অপস্রিয়মাণ, অভাগী, অভ্যন্তরীণ, অলকনন্দা, আঙ্গিক, আলতু-ফালতু, ইতিপূর্বে, ইন্দ্রজালিক, ইষ্টিপত্র, উৎকর্ষ, উপজাতি, উপর্যুক্ত, ওলামা, একমত, ঐতিহাসিক, ওষধি, কার্যকর, কি না, কী, কৃতি, ক্রীত, খরচে, গয়রহ, চাকচিক্য, চারিত্র, জবাবদিহি, জয়ন্তী, তবু, দারিদ্র্য, দার্শনিক, দেখাশোনা, দ্বৈধ, ধূম্র, নিন্দুক, পরকীয়া, পরবর্তী, পর্যাপ্ত, পূর্বাহ্ণ, প্রস্তাবনা, প্রেক্ষিত, ফলশ্রুতি, বাধ্যগত, ব্যক্তিত্ব, মৌন, দার্শনিক, রুচিমান, লজ্জাকর, 888sport apk download apk latest versionঞ্জলি, সংশোধন, সখ্য, সঠিক, সময়, সমৃদ্ধ, সর্বোচ্চ, সহজিয়া, সহসা, সাথে, সামান্য, স্বৈরাচার এবং হতে।
আনিসুজ্জামান সহজ ভাষায় শব্দগুলির গঠন, উৎপত্তি এবং ব্যবহারের ক্ষেত্র নিয়ে আলোচনা করেছেন। এসব শব্দের অপপ্রয়োগের দিক যেমন তুলে ধরেছেন, তেমনি ব্যাকরণ-অভিধানগত এবং ব্যবহারিক দিক সম্পর্কে আলোকপাত করেছেন। বহুল ব্যবহৃত এসব শব্দের কীভাবে অশুদ্ধ প্রয়োগ হচ্ছে, সময় সময় তাও নির্দেশ করেছেন। ‘অত্র’ শব্দটি সম্পর্কে বলেছেন, এর মানে এই স্থানে, এখানে। তাই কেবল এই বোঝাতে শব্দটি ব্যবহার করা ঠিক নয়। যেমন অনেকে ব্যবহার করেন অত্র পত্র, অত্র বিজ্ঞপ্তি, অত্র পুস্তক প্রভৃতি। আনিসুজ্জামান লিখেছেন, এমন প্রয়োগ অশুদ্ধ। একইভাবে তিনি লিখতে বলেছেন অভ্যন্তরীণ, পরিত্যাজ্য করতে বলেছেন আভ্যন্তরীণকে। ইতিপূর্বে অভিধানে অশুদ্ধ হলেও ইতঃপূর্বে অপেক্ষা ইতিপূর্বে প্রচলিত ও শ্রুতিসুখকর বিধায় তা ব্যবহারে ক্ষতি নেই বলে জানিয়েছেন। একইভাবে উৎকর্ষ শুদ্ধ, অশুদ্ধ উৎকর্ষতা; উপর্যুক্ত বা উপরিউক্ত শুদ্ধ, অশুদ্ধ উপরোক্ত; শুদ্ধ ওলামা, অশুদ্ধ আলেম-ওলামা; শুদ্ধ জয়ন্তী, অশুদ্ধ জন্মজয়ন্তী; শুদ্ধ দরিদ্রতা, অশুদ্ধ দারিদ্র; শুদ্ধ পরবর্তীকালে, অশুদ্ধ পরবর্তীতে; শুদ্ধ মৌন, অশুদ্ধ মৌনতা; শুদ্ধ লজ্জাকর, অশুদ্ধ লজ্জাস্কর; শুদ্ধ 888sport apk download apk latest versionঞ্জলি, অশুদ্ধ 888sport apk download apk latest versionঞ্জলী; শুদ্ধ সখ্য, অশুদ্ধ সখ্যতা।
আনিসুজ্জামান বিচিত্রপথে লেখনী সঞ্চালন করলেও বাংলা ভাষার প্রমিত ব্যবহার নিয়ে তাঁর ভাবনা ছিল। সময় সময় ভাষা নিয়ে গভীর অনুসন্ধিৎসা চালিয়েছেন। মুহাম্মদ হাবিবুর রহমানের সঙ্গে মিলে রচনা করেছিলেন আইন-শব্দকোষ (অন্যপ্রকাশ, ২০০৬)। একদা ফ্রাঁস ভট্টাচার্যের সঙ্গে যৌথভাবে সম্পাদনা করেন ওগুস্তে ওসাঁর বাংলা-ফরাসি শব্দকোষ (888sport live football প্রকাশ, ২০০৩)। 888sport appsের সংবিধানের বাংলা ভাষ্য রচনা এবং পুরনো বাংলা গদ্যের সুলক-সন্ধানেও তিনি মেধা খাটিয়েছেন। নানা বক্তৃতা এবং লেখায় বাংলা শব্দের শুদ্ধ ও সংযত ব্যবহার সম্পর্কে নানা যুক্তি তুলে ধরেছেন। মানুষের বলায় এবং লেখায় শব্দের যে বিচ্যুতি ঘটেছে, তা তিনি সহজ ও সরস ভাষায় ধরিয়ে দিয়েছেন। বাষট্টি শব্দের এই অভিধান তাঁর সে-প্রয়াসেরই ফসল। অন্য অনেক লেখার মতো এ-গ্রন্থেও তাঁর রসবোধের পরিচয় মেলে। যেমন – 888sport apk download apk latest versionঞ্জলী শব্দটির বানান দীর্ঘ ঈ-কার দিয়ে লেখা প্রসঙ্গে বলেছেন : ‘888sport apk download apk latest versionঞ্জলী লিখলে বেশি 888sport apk download apk latest version প্রকাশ পায় না, যা প্রকাশ পায় তা অজ্ঞতা।’ তিনি সমৃদ্ধ শব্দের সঙ্গে শালী ব্যবহারের ভুল চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়ে লিখেছেন, সমৃদ্ধ অর্থে সম্পদশালী ব্যবহারে সাবধান হয়ে লিখতে হবে সমৃদ্ধ পরিবার, সমৃদ্ধ নগর, সমৃদ্ধ দেশ। কোনোভাবেই সমৃদ্ধশালী দেশ লেখা যাবে না। তবে শ্যালিকা অর্থাৎ – ‘শালীর প্রতি অত টান থাকলে বলতে হবে সমৃদ্ধিশালী!’
আশি পৃষ্ঠার ক্ষুদ্র কলেবর আমার অভিধান বইটি আর দশটি সাধারণ বইয়ের মতো নয়, পাঠক তা পড়লেই অনুভব করতে পারবেন।

Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.