মঞ্চনাটকের সপ্রাণ দলিল

রিদম অন দ্য স্টেজ:

কনটেম্পরারি স্টেজ

প্রোডাকশনস ইন 888sport app (১৯৯৯-২০০৩)

শাকুর মজিদ

 টোনাটুনি

888sport app, ২০০৩

স্বাধীনতা-উত্তরকালে জাতির প্রাণ জেগে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের মঞ্চনাটকের ক্ষেত্রেও প্রাণের ঢেউ জেগে উঠেছিল। সেই ১৯৭২ সালেই নাগরিক নাট্য সম্প্রদায় দর্শনীর বিনিময়ে নাটক মঞ্চস্থ করার সংস্কৃতি চালু করেছিল এবং উপযুক্ত পরিবেশ বা মঞ্চ না থাকলেও দেশের অগুনতি মানুষ তাদের প্রাণের ডাকে সাড়া দিয়ে মঞ্চনাটকে আরো প্রাণসঞ্চার করেন। দেখতে দেখতে তিন দশক পেরিয়ে গেছে। এর মধ্যে জন্ম নিয়েছে অনেক দল, তারা মঞ্চস্থ করেছে অজস্র নাটক। আর এটি কেবল রাজধানী ও প্রধান শহরগুলোতেই সীমাবদ্ধ থাকেনি – ছড়িয়ে পড়েছে দেশের দূরতম প্রান্তেও এবং জন্ম নিয়েছে ্লগ্রাম থিয়েটারশ্-এর মতো আন্দোলনের। অন্যদিকে বহির্দেশেও ছড়িয়ে পড়েছে আমাদের মঞ্চনাটক। এবং এগুলোর মধ্য দিয়ে মঞ্চনাটক হয়ে উঠেছে সংস্কৃতি-বিনিময়ের অন্যতম মাধ্যম।

ইতিহাস মাত্র তিন দশকের হলেও একে নানাভাবে সমৃদ্ধ করেছেন য।ারা – নাট্যকার, নির্দেশক, অভিনেতা-অভিনেত্রী, কলাকুশলী – ত।াদের কাজের প্রামাণ্য খুব একটা আমাদের দেশে হয়নি। বেশ দেরিতে এই কাজটির একটি বড় সূত্রপাত করলেন শৌখিন আলোকচিত্র-888sport live chatী শাকুর মজিদ। পেশায় স্থপতি এই সংস্কৃতিপ্রেমী মানুষটি যে-কাজটি করেছেন তাকে আমাদের মঞ্চের ইতিহাসচর্চার ক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য সংযোজন বলা

যেতে পারে।

রিদম অন দ্য স্টেজ শিরোনামের এই অ্যালবামে শাকুর মজিদ 888sport appsের মঞ্চের বহু উল্লেখযোগ্য নাটকের অজস্র দৃশ্য মলাটবন্দি করেছেন। শাকুর মাত্র ১৯৯৯ সালে ত।ার কাজ শুরু করেছেন, ফলে 888sport appর মঞ্চের অনেক গুরুত্বপূর্ণ নাটক ত।ার নাগালের মধ্যে ছিল না। তবে সেগুলোর মধ্যে এখনো যেগুলো মঞ্চস্থ হয়, সেগুলোকে যত্নের সঙ্গে তুলে এনেছেন।

উল্লেখ করা দরকার যে, মঞ্চ নিয়ে এ-ধরনের কাজ 888sport appsে এই প্রথম। এবং তিনি উদ্দীপ্ত হয়েছিলেন ইউরোপের বিখ্যাত মঞ্চ-আলোকচিত্রী হ্যারি জনসনের কাছ থেকে। শ্৯৯-তেই সেন্টার ফর এশিয়ান থিয়েটারের আয়োজনে হ্যারি জনসন স্টেজ-ফটোগ্রাফি-বিষয়ে ১৫ দিনের একটি কর্মশালা পরিচালনা করেন। সে-কর্মশালায় শাকুর মজিদও ছিলেন একজন অংশগ্রহণকারী। ওই প্রশিক্ষণ থেকে উদ্বুদ্ধ হয়ে মঞ্চকে তিনি বিষয় হিসেবে গ্রহণ করেন এবং এরই ফল এই অ্যালবাম। শ্৯৯ সালের শেষদিক থেকে আগস্ট ২০০৩ পর্যন্ত অ্যালবাম-প্রকাশের কিছুদিন পূর্ব পর্যন্ত সাধ্যমতো অনেক নাটকের দৃশ্য তিনি এর দুই মলাটে বন্দি করেছেন।

দেখা যাক কী কী নাট্যদৃশ্য এতে জায়গা পেয়েছে : সুবচন নির্বাসনে (প্রথম মঞ্চায়ন ১৯৭৪, আলোকচিত্র গ্রহণ শ্৯৩-এর মঞ্চায়ন থেকে), আমি গাধা বলছি (১৯৭৬ ও ২০০৩), মুনতাসীর ফ্যান্টাসি (১৯৭৬ ও ২০০২), নূরলদীনের সারা জীবন (১৯৮২, ১৯৯৯ ও ২০০২), কঞ্জুস (১৯৮৭ ও ২০০২), হাতহদাই (১৯৮৯ ও ২০০২), বিরসা কাব্য (১৯৯০ ও ২০০১), বিচ্ছু (১৯৯১ ও ২০০২), দর্পণে শরৎশশী (১৯৯২ ও ২০০২), সোনাই মাধব (১৯৯৩ ও ২০০০), যৈবতী কন্যার মন (১৯৯৩ ও ২০০২), শকুন্তলা (১৯৯৪ ও ২০০৩), মহুয়া (১৯৯৫ ও ২০০২), হয়বদন (১৯৯৫ ও ১৯৯৯), মেরাজ ফকিরের মা (১৯৯৫ ও ২০০৩), জয়জয়ন্তী (১৯৯৫ ও ২০০২), কমলা রানীর সাগর দিঘি (১৯৯৭ ও ২০০২), ভাগের মানুষ (১৯৯৭ ও ২০০০), সার্কাস সার্কাস (১৯৯৮ ও ২০০২), খামাখা খামাখা (১৯৯৮ ও ১৯৯৯), বনপাংশুল (১৯৯৮ ও ২০০০), ক্রুসিবল (১৯৯৮ ও ১৯৯৯), চ।াদ বণিকের পালা (১৯৯৯), স্বপ্নবাজ (১৯৯৯), বেহুলা সুন্দরী (১৯৯৯), তেভাগার পালা (১৯৯৯ ও ২০০২), ময়ূর সিংহাসন (১৯৯৯ ও ২০০১), গৃহবাসী (১৯৯৯ ও ২০০৩), একজন ল্কঃন্দর (১৯৯৯), বিক্রমঊর্বশী (১৯৯৯), প্রাচ্য (২০০২), আরজ চরিতামৃত (২০০০), পীরচ।ান (২০০০), অল মাই সন্স (২০০২), নিত্যপুরাণ (২০০১), কইন্যা (২০০১ ও ২০০২), আলাল দুলালের পালা (২০০১ ও ২০০২), পুতুলের ইতিকথা (২০০১ ও ২০০২), সংক্রান্তি (২০০১ ও ২০০২), তীর্থঙ্কর (২০০১ ও ২০০২), সাদি সিরাজের পালা (২০০১), দি লেসন (২০০১ ও ২০০২), এক্কাদোক্কা (২০০১ ও ২০০২), রক্তকরবী (২০০১ ও ২০০২), গোলাপ বাগান (২০০২), ন নিরামণি (২০০২), ফুলরানি- আমি টিয়া (২০০২), হাট্টিমা টিম (২০০২), গোল মাথা চোখা মাথা (২০০২), স্বপ্ন দেখো মানুষ (২০০২), বার্থ ফ্যান্টাসি (২০০২), কাল সকালে (২০০২), কালসন্ধ্যা (২০০২), বলদ (২০০২), ভুবনের ঘাট (২০০৩), কবর (২০০২), মৃচ্ছকটিক (২০০৩), প্রতিসরণ (২০০৩), ওয়েটিং ফর গডো (২০০৩), তোড়ায় ব।াধা ঘোড়ার ডিম (২০০৩)। উল্লেখ্য, যেখানে বন্ধনীর ভেতর দুটি সাল উল্লেখ করা হয়েছে, সেখানে প্রথমটি প্রথম মঞ্চায়নের এবং পরেরটি আলোকচিত্র-গ্রহণের সময়ের মঞ্চায়ন। তবে এগুলোর মধ্যে দুটি বিষয় নাটকের সঙ্গে নয়, নাচের সঙ্গে সম্পর্কিত। প্রথমটি নৃত্য888sport live chatী পৃত্থুলা প্রসূনের একক নৃত্য (২০০০), অন্যটি বর্ষাকে ঘিরে বৃন্দনৃত্য ্লখরবায়ু বয় বেগেশ্ (২০০১)। যেহেতু বিষয় মঞ্চনাটক, তাই এগুলোর অন্তর্ভুক্তি কতটা প্রাসঙ্গিক হলো, সে-বিষয়ে বিতর্কের অবকাশ থেকে যায়।

আর যেসব নাট্যদল এগুলো মঞ্চে এনেছে, সেগুলো হলো : থিয়েটার, 888sport app ড্রামা নাট্যদল, 888sport app থিয়েটার, নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়, লোক নাট্যদল, দেশ নাটক, নাট্যকেন্দ্র, নৃত্যাঞ্চল, আরণ্যক নাট্যদল, 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গীত ও নাট্যকলা বিভাগ, সময়, প্রাচ্যনাট, থিয়েটার (নাটক সরণি), নাগরিক নাট্যাঙ্গন আনসাম্বল, সেন্টার ফর এশিয়ান থিয়েটার, নাট্যজন, শৈবাল নাট্যচক্র, 888sport app পদাতিক, সুবচন নাট্য সংসদ, 888sport apps থিয়েটার, টোনাটুনি।

যদিও শাকুর 888sport appর মঞ্চেই নিজেকে সীমাবদ্ধ রেখেছেন, কিন্ত্ত তাতে বৈচিত্র্যে ঘাটতি পড়েনি। উল্লিখিত তালিকা থেকে বোঝা যায় প্রাচীন সংস্কৃত নাটক থেকে শুরু করে আধুনিক নাটক, লোকনাটক, আদিবাসী নাটক, বিশ্বনাটক সবকিছুকে এক পঙ্ক্তিতে এনে হাজির করেছেন তিনি। এবং এর ফলে 888sport appsের মঞ্চনাটকের ধারাবাহিক অগ্রগতি বা বিবর্তনের ব্যাপারটিও এখান থেকে অনেকটা অ।াচ করে নেওয়া যেতে পারে। এই অ্যালবামের ভেতর দিয়ে আমরা বর্তমান সময়ের নাটকে একটি দীর্ঘ 888sport slot gameে লিপ্ত হই। কেননা রং, দৃশ্য, 888sport live chatীর দেখার চোখ সব মিলিয়ে আমাদের ভেতরে এক অন্যতর অনুভূতির জন্ম হয়, যা মঞ্চে দেখার সময়ে আমরা হয়ত অনেক ক্ষেত্রেই উপলব্ধি করতে পারিনি। পাশাপাশি পরিশিষ্ট অংশে সবগুলো নাটকের মঞ্চায়ন-তথ্য তথা নাট্যকার, নাট্যদল, নির্দেশক, মঞ্চসজ্জা, মঞ্চায়নকাল, আলোকচিত্রগ্রহণের সময় ইত্যাদি সন্নিবেশ করা হয়েছে। তবে কোথায় মঞ্চস্থ হয়েছে সেটা এবং বিভিন্ন পর্বের অভিনেতা-অভিনেত্রীদের নাম থাকলে এটি আরো পূর্ণ হতো। বইটির ভাষা ইংরেজি, তবে নাটকের নামগুলো বন্ধনীর ভেতর বাংলায় থাকলে ভালো হতো। তাছাড়া এগুলোর প্রতিবর্ণিকরণ অনেক ক্ষেত্রে বিভ্রান্তিও তৈরি করে। নাট্যদৃশ্য-নির্বাচন, আলোছায়ার কম্পোজিশন, নাটকীয়তা, গতি, উপযুক্ত মুহূর্ত, নাটকের বিষয় থেকে তার ছন্দটুকু খু।জে নেওয়া, এমন সব বৈশিষ্ট্যের কারণে এই আলোকচিত্রগুলো কেবল নাটকের দৃশ্য হয়ে থাকেনি, তৈরি

করেছে আলাদা ব্যঞ্জনা। 888sport live chatীর কৃৎকৌশলের কারণে মাঝে মাঝে এগুলোকে মনে হয় কোনো 888sport live chatীর ক্ষিপ্র ব্রাশে টানা বিচিত্র রঙের লেখা বা তুলির নিবিড় টান। যেমন : বনপাংশুল ও পৃত্থুলা প্রসূনের নৃত্যদৃশ্য, আরজ চরিতামৃতে আলোর লেখা, ওয়েটিং ফর গডোর ছায়াদৃশ্য কিংবা তীর্থঙ্করে রঙের প্রয়োগকৌশলে এগুলোকে চিত্রকলা বলে ভ্রম হয়। প্রকৃত প্রস্তাবে, শাকুর ছন্দ খু।জেছেন মঞ্চের এইসব দৃশ্যের আড়ালে এবং ক্যামেরার চোখ দিয়ে তাকে স্থিরচিত্রে রূপ দিয়েছেন। এ-বিষয়ে ভালো মানের আলোকচিত্র খুব সহজ ব্যাপার নয়। আর 888sport appsের মঞ্চগুলোও অনেকাংশে ঠেকা কাজ চালানোর মতো; কিন্ত্ত এর মধ্যে থেকেও শাকুর ত।ার আরাধ্য খু।জে নিতে পরিশ্রমী প্রচেষ্টা চালিয়েছেন।

তবে বইটির মুদ্রণমান ও ছবিবিন্যাস যথেষ্ট উপযুক্ত হয়নি। যারা গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে একই বিষয়ের ওপর জাতীয় জাদুঘরে টোনাটুনি উৎসবের প্রদর্শনী দেখেছেন, তারা অনেকেই হয়তো হতাশ হবেন, কারণ আলোকচিত্রগুলো যথেষ্ট সমৃদ্ধ হলেও ছাপার মানের কারণে সেগুলোর সৌন্দর্য অনেক ক্ষেত্রে ক্ষুণ্ন হয়েছে। তাছাড়া ছবির পৃষ্ঠাবিন্যাস আরো পরিচ্ছন্নতার দাবি করে। ছবি বরং কিছু

কম দিয়ে পৃষ্ঠাগুলোকে আরো সুবিন্যস্ত করলে চোখের জন্যেও তৃপ্তিদায়ক হতো।

প্রথম কাজ হিসেবে অবশ্য এগুলোকে বড় করে না-দেখাই ভালো। কিছু না-পাওয়ার চেয়ে এটুকু পাওয়া নিশ্চয়ই কম

কিছু নয়।

শাকুর শখের আলোকচিত্রী হলেও ইতোমধ্যে ত।ার যৌথ ও একক কয়েকটি প্রদর্শনী হয়েছে দেশে ও দেশের বাইরে। বেশ কিছু 888sport app download bdও তিনি পেয়েছেন। আর বর্তমান কাজটির ভেতর দিয়ে আলোকচিত্রী হিসেবে নিজেকে সমৃদ্ধ করার পাশাপাশি, আমাদের সংস্কৃতির ইতিহাসচর্চায়ও একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন করেছেন তিনি। ভবিষ্যতের গবেষক ও নাট্যপ্রেমীদের জন্য এই অ্যালবামটি একটি মূল্যবান দলিল হিসেবে কাজ করবে বলে আমাদের বিশ্বাস।