আবু সাঈদ তুলু
‘হামার মরণ হয়, জীবনের মরণ যে নাই।’ সত্যি কবির অমরত্বকে নতুনভাবে অনুভব করলাম – ভারত থেকে আসা কল্যাণী নাট্যচর্চা কেন্দ্রের প্রযোজনা নূরলদীনের সারাজীবন নাট্যটি দেখে। প্রায় দুঘণ্টা ব্যাপ্তিতে অভিনয়, শারীরিক ভাষা, নৃত্যগীত, ঘটনা ও কাব্যের অনবদ্য এক দৃশ্যকাব্য। এ যেন ইতিহাস, কল্পনা, নাট্য ও কাব্যের এক নান্দনিক ঐকতান। মনে হলো, সৈয়দ শামসুল হক চিরকালই বেঁচে থাকবেন কাব্য-ইতিহাসের ধ্রম্নবছায়ায়। ‘দুই বাংলার নাট্যমেলা-২০১৭’ শীর্ষক আয়োজিত উৎসবে গত ১৮ মার্চ, ২০১৭ তারিখে 888sport live chatকলা একাডেমির মূলমঞ্চে ভারতের কল্যাণী নাট্যচর্চা কেন্দ্র তাদের সম্প্রতি প্রযোজনা কবি সৈয়দ শামসুল হকের কাব্যনাটক নূরলদীনের সারাজীবন প্রদর্শন করে। প্রতিবছরই দুই বাংলার নাট্যমেলার আয়োজন করে আসছে প্রাঙ্গণেমোর নাট্যদল। এটি তাদের নবমবারের মতো আয়োজন।
দর্শক উপচে পড়েছিল সেদিন। বিকেল থেকেই 888sport live chatকলা একাডেমি প্রাঙ্গণ লোকারণ্য হয়ে উঠেছিল। নাটকটির টিকিট প্রায় দুদিন আগেই বিক্রি হয়ে গিয়েছিল। ফলে দর্শক সামলাতে আয়োজকদের বেশ হিমশিম খেতে হচ্ছিল। নানা কারণেই দর্শকের আগ্রহ ছিল প্রবল। এদেশীয় প্রথিতযশা লেখকের নাটক প্রযোজনা করেছে ভারতের নদীয়ার কল্যাণী শহরের নাট্যদল! ফলে দেখার কৌতূহল বেশ দানা বেuঁধছিল নাট্যপ্রেমী এবং সৈয়দ শামসুল হকভক্তদের মধ্যে। অবশেষে প্রবেশের দীর্ঘ লাইন পেরিয়ে সন্ধে ৬টার দিকে অডিটরিয়ামে প্রবেশ করেন দর্শক। সেদিন ছিল উৎসবের শেষ দিন। পদক প্রদানসহ নানা আনুষ্ঠানিকতার পর ঘোষণা হয় নাটকের। ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে হলের আলো নিভে গিয়ে নাটকের আলো ভেসে উঠতে থাকে, উঠতে থাকে দর্শকের কৌতূহলের পারদ। সদ্যপ্রয়াত কিংবদমিত্মতুল্য কবি ও কথা888sport live footballিক সৈয়দ শামসুল হক (১৯৩৫-২০১৬) নূরলদীনের সারাজীবন কাব্যনাটকটি ১৯৮২ খ্রিষ্টাব্দে রচনা করেন। এটি তাঁর দ্বিতীয় কাব্যনাট্য। ইতোপূর্বে মুক্তিযুদ্ধের বিষয়কে আশ্রয় করে তাঁর পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায় (১৯৭৬) অত্যন্ত সাড়া জাগানো একটি নাটক। থিয়েটার নাট্যদল এ-নাটকটি প্রথম প্রযোজনা করে। এখন পর্যন্ত নাটকটির নিয়মিত প্রদর্শনী অব্যাহত রয়েছে। নূরলদীনের সারাজীবন সৈয়দ হকের দ্বিতীয়। মাত্র চোদ্দো দৃশ্যের এ-নাটক কাব্য ও নাট্যগুণে অনন্য এক নাটক। বললে অত্যুক্তি হবে না যে, এটি তাঁর শ্রেষ্ঠ নাটক হিসেবে মূল্যায়িত হওয়ার গুণ রাখে। ওই বছর, ১৯৮২ খ্রিষ্টাব্দেই, নাগরিক নাট্যসম্প্রদায় আলী যাকেরের নির্দেশনায় নাটকটি প্রথম মঞ্চস্থ করে এবং ব্যাপক জনপ্রিয় হয়। দেশের বাইরে ভারতের কল্যাণী নাট্যচর্চা কেন্দ্রই প্রথম নিয়মিত দলীয় প্রযোজনা হিসেবে এ-নাটক মঞ্চে এনেছে। ২০১৬ সালের ২৫ আগস্ট কলকাতার অকাদেমি মঞ্চে প্রথম অভিনীত হয়। নাট্যকার নাটকের বিষয়বস্ত্ত গ্রহণ করেছেন ইতিহাস থেকে। কিন্তু কল্পনা ও কাব্যের আশ্রয়ে নাটকটি পৌঁছেছে অনন্য এক 888sport live chatমার্গে। সৈয়দ শামসুল হক এ-নাটকে আঞ্চলিক ভাষাকে যে কাব্যিক 888sport live chatসুষমায় উন্নীত করেছেন তা অনবদ্য। ইতিহাসের কৃষক বিদ্রোহের নেতা নূরলদীনের জীবন চেতনা এ-নাটকের আখ্যান।
নূরলদীন রংপুর-দিনাজপুর অঞ্চলের সামন্তবাদ-সাম্রাজ্যবাদবিরোধী কৃষক নেতা। ইতিহাসে নূরলদীনের নামটি নিয়ে নানা বিতর্ক আছে। কৃষকের ওপর শোষণ-নির্যাতন, অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে ১৭৮২-৮৩ খ্রিষ্টাব্দে সংঘটিত বিদ্রোহের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন নূরলদীন। প্রসঙ্গত, ১৭৫৭ সালে পলাশীর নামমাত্র যুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হয়। ১৭৬৫ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার রাজস্ব আদায়ের ক্ষমতা গ্রহণ করে। কোম্পানি রাজস্ব আদায়ের জন্য শুরু করে অমানবিক শোষণ-অত্যাচার। ফলে ওই বছর ১১৭৬ সনে ঘটে যায় বাংলার ইতিহাসের কলঙ্কজনক ঘটনা, যা ইতিহাসে ছিয়াত্তরের মন্বন্তর নামে পরিচিত। নানা তথ্যমতে জানা যায়, এ-দুর্ভিক্ষি বাংলার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ লোক না খেয়ে মারা যায়। ইংল্যান্ডের হাউস অব লর্ডসে এ-ঘটনা ব্যাপক সমালোচিত হয়। সে-পরিপ্রেক্ষিতে ওয়ারেন হেস্টিংস ১৭৭২-৭৩ থেকে কোম্পানির রাজস্ব আদায়ের স্বত্ব চুক্তিতে বিক্রি করতে শুরু করেন। এভাবেই রাজা দেবীপ্রসাদ সিং ১৭৮১-৮৩ খ্রিষ্টাব্দে অবিভক্ত বাংলার রংপুর-দিনাজপুরের রাজস্ব আদায়ের স্বত্ব পান। ডিমলার জমিদার গৌরমোহন চৌধুরীকে সঙ্গে করে রাজস্ব আদায়ের নামে কৃষকদের ওপর শুরু করেন ভয়ংকর অমানবিক শোষণ-অত্যাচার। দরিদ্র প্রজাগণ গরু-বাছুর-সম্পত্তি এমনকি স্ত্রী-পুত্র বিক্রি করেও দেবী সিংয়ের নিষ্ঠুরতা থেকে রেহাই পান না। কৃষকদের জেলে পাঠানো হয়। সহায়-সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়। ধরে এনে চাবুক মারা হয়। কুঁড়েঘর পুড়িয়ে ছাই করে দেওয়া হয়। অনেকে মহাজনের দ্বারস্থ হয়ে ভিন্নভাবে নিঃস্ব হন, মরতে বসেন। বন-জঙ্গলে পালিয়ে যান কেউ কেউ। 888sport promo codeদের ওপরও চালানো হয় অকথ্য অত্যাচার। অনেককে জেলে পাঠানো হয়। কৃষককুল তাদের লাঙল, বলদ, বাড়িঘর – একে একে সব হারাতে থাকেন। এমন নির্মম পরিস্থিতিতে নূরলদীনের নেতৃত্বে তারা ঐক্যবদ্ধ হন। ঐক্যবদ্ধ কৃষকরা নূরলদীনের নেতৃত্বে প্রথমে দেবী সিংহের অত্যাচার বন্ধ ও 888sport app দাবি পূরণের জন্য রংপুর কালেক্টরেট গুডল্যান্ডের কাছে দাবি জানান। গুডল্যান্ড দাবি না মানায় নিপীড়িত কৃষকদের মধ্যে বিদ্রোহ দানা বাঁধে। কৃষকনেতা নূরলদীনের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়, দাবি মেনে না নিলে দেবী সিংকে খাজনা দেবেন না কৃষক। শুরু হয় বিদ্রোহ। অনেকে নূরলদীনকে নবাব হিসেবেও আখ্যায়িত করতে থাকেন। জাতপাত নির্বিশেষে রংপুরের কাজিরহাট, কাকিনা, ফতেপুর, ডিমলা প্রভৃতি স্থানের গরিব মানুষ নুরুলদীনের নেতৃত্বে বিদ্রোহ চালিয়ে যান। দেবী সিং ও গুডল্যান্ড সেনাপতি ম্যাকডোনাল্ডের নেতৃত্বে রংপুরে সেনা পাঠান। এই বাহিনী পথে পথে বিদ্রোহীদের বাধার সম্মুখীন হন এবং রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ লিপ্ত হয়ে গ্রামের পর গ্রাম পুড়িয়ে দেয়। এ-বিদ্রোহ টিকে ছিল মাত্র পাঁচ সপ্তাহ। নূরলদীনের বাহিনী মোগলহাটের ইংরেজ ঘাঁটিতে আক্রমণ চালায়। মোগলহাট ও পাটগ্রামের অসম লড়াইয়ে লেফটেন্যান্ট ম্যাকডোনাল্ডের নেতৃত্বাধীন কোম্পানি বাহিনীর হাতে ২১ ফেব্রম্নয়ারি শহিদ হন নূরলদীন। নূরলদীন ব্রিটিশ বাহিনীর সামনে বেশিদিন টিকতে পারেননি সত্য; কিন্তু নূরলদীন যে মুক্তি, জাগরণের বীজ বপন করে গিয়েছিলেন তা ব্রিটিশ উপনিবেশের শাসন থেকে আজকের স্বাধীনতা অর্জনে প্রেরণা জুগিয়েছে।
নাট্যকার সৈয়দ শামসুল হক বলেন, ‘যে জাতি অতীত 888sport app download for android করে না, সে জাতি ভবিষ্যৎ নির্মাণ করতে পারে না। এই কাব্যনাট্যটি লিখে ফেলবার পর আমার আশা এই যে, এই মাটিতে জন্ম নিয়েছিলেন এমন যে সব গণনায়কদের আমরা ভুলে গিয়েছি তাদের আবার আমরা সম্মুখে দেখব এবং জানব যে, আমাদের গণআন্দোলনের ইতিহাস দীর্ঘদিনের ও অনেক বড় মহিমার, সবার ওপরে, উনিশ শো একাত্তরের সংগ্রাম কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। ইতিহাস থেকে আমি পেয়েছি নূরলদীন, দয়াশীল ও গুডল্যাডকে; কল্পনায় আমি নির্মাণ করে নিয়েছি আববাস, আম্বিয়া, লিসবেথ, টমসন ও মরিসকে। নূরলদীনের আত্মা ও প্রেরণা আমি ইতিহাসের ভেতর থেকে সংগ্রহ করেছি, তাঁর ব্যক্তিগত জীবন ও মানসিক সংকট আমি সম্ভবপরতার ক্ষেত্র থেকে আবিষ্কার করে নিয়েছি।’ (‘নাট্যগ্রন্থের ভূমিকা’)
নূরলদীনের সারাজীবন নাটকটি কল্যাণী নাট্যচর্চা কেন্দ্রের সাম্প্রতিক প্রযোজনা। কল্যাণী নাট্যচর্চা কেন্দ্র কলকাতা থেকে প্রায় ছাপান্ন কিলোমিটার দূরে ‘কল্যাণী’ শহরের অবস্থিত একটি নাট্যদল। দলটি ইতোপূর্বে 888sport appsে আরো দুবার এসেছিল। গতবছর উপস্থাপন করে তাদের মেয়েটি নাটক। নাটকটি দর্শকের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা অর্জন করে। এবার তারা নিয়ে এসেছে নূরলদীনের সারাজীবন। দলটি ইতোপূর্বে চিলেকোঠার সেপাই, নক্সীকাঁথার মাঠ মঞ্চস্থ করে কলকাতায় বেশ আলোচিত হয়ে উঠেছিল। তাদের নূরলদীনের সারাজীবন নাটকটি কোরিওগ্রাফিনির্ভর। হাজার বছরের বাংলার ঐতিহ্যধারার নাট্যরীতির প্রয়োগে প্রত্যুজ্জ্বল। কুচকাওয়াজের মতো অর্থহীন শারীরিক ক্রিয়া প্রদর্শন নয়, কিংবা সস্তা বিনোদনের খেমটা নাচ-গানের আড়ম্বরও নয়। ধ্রপদী 888sport live chatবোধে অনন্য এ-নাটক। শারীরিক ভাষা, শৈল্পিক নৃত্য-গীত, অভিনয় ও গল্পবন্ধনীর এক ঐকতানে অনবদ্য নাট্যভাষা তৈরি করেছে কল্যাণী। নাটকটির আলোয় দীপক মুখোপাধ্যায়, মঞ্চ ও 888sport live chatকর্মে হিরণ মিত্র, সংগীত ও আবহে ময়ূখ মৈনাক, রূপসজ্জায় দেবব্রত সেনগুপ্ত, মুখোশ নির্মাণে দীপঙ্কর ঘোষাল এবং সম্পাদনা ও নির্দেশনায় কিশোর সেনগুপ্ত।
মঞ্চে আলো জ্বলে ওঠে। দর্শকের অধীর অপেক্ষার পালা শেষ হয়। খোলা মঞ্চ। পেছনে ছোট ছোট তিনটি বাক্স। পেছনে লাল রঙের চাঁদ বা সূর্যের প্রতীক। মঞ্চসজ্জায় কোনো বাহুল্য নেই। লেখক সৈয়দ শামসুল হক প্রকৃত অর্থে নিরাভরণ মঞ্চবিন্যাসই চেয়েছিলেন। সেজন্যে পূর্ণিমার আলোকে অত্যন্ত গুরুত্ব প্রদান করেছেন। মঞ্চের সামনের অংশ খোলা উন্মুক্ত প্রান্তর। বাক্স তিনটি বিভিন্ন দৃশ্যে নানা ভূমিকায় ব্যবহৃত হয়েছে। মঞ্চদৃশ্যের বর্ণনায় লেখক বলেন, ‘এই কাব্যনাট্য লেখা হয়েছে খোলা আকাশের নিচে যে-কোনো শাদামাটা চত্বরে অভিনীত হবার উপযুক্ত করে। নাট্যশালা বা মিলনায়তনে অভিনয় যদি করতে হয়, মঞ্চ অন্ততপক্ষে দর্শকের ভেতর পর্যন্ত প্রসারিত হওয়া জরুরি। প্রতিভাবান নির্দেশক যে-কোনো ধরনের মঞ্চ এই কাব্যনাট্যের জন্যে ব্যবহার করতে পারেন। তিনি আর যা-ই করুন, আমার পরামর্শ, ছবির ফ্রেমের মতো মঞ্চ যেন কল্পনা না করেন।’ (‘নাট্যগ্রন্থের ভূমিকা’) এ-প্রযোজনাটিতে পেছনে লাল রঙের চাঁদের সিম্বল কেন ব্যবহার করা হয়েছে, তার যৌক্তিকতা স্পষ্ট করা প্রয়োজন ছিল কল্যাণীর।
888sport appsের নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়-প্রযোজিত নাটকে প্রস্তাবনা অংশটি সূত্রধর বর্ণনা করতেন। কিন্তু কল্যাণীর এ-প্রযোজনায় প্রস্তাবনা বা ভূমিকা অংশটি অডিওতে বাজানো হয়। একজন কোরাস চরিত্র মঞ্চে প্রবেশ করে শারীরিক অভিনয়ের মাধ্যমে আবৃত্তির সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতিগুলো দৃশ্যায়ন করতে থাকেন। তখন ধীরে ধীরে 888sport app কোরাস চরিত্র মঞ্চে প্রবেশ করেন। বর্ণনার সঙ্গে সঙ্গে দৃশ্যমান হতে থাকে – কৃষকের জীবন, কৃষকের যন্ত্রণা, অত্যাচার, শোষণ-বঞ্চনার চিত্র। ভেসে আসে শিঙার ধ্বনি। আর ঢাকের বাদ্য বাজতে থাকে। এক জাগরণের ধ্বনিতে ভরে ওঠে প্রেক্ষালয়। নূরলদীনের সেই আবাহনের ধ্বনিতে মঞ্চ কম্পিত হয়ে ওঠে – ‘জাগো, বাহে, কোনঠে সবায়?’
ধীরে ধীরে দর্শক নাটকের কাহিনিতে প্রবেশ করেন। কোরাস উঠে দাঁড়ায়। দৃশ্যমান বিধ্বস্ত জনপদ যেন আবার জেগে ওঠে। নূরলদীনের গণবাহিনী লালকোরাস উৎকণ্ঠিত কণ্ঠে বলতে থাকে – ‘হয় হয়, মৈষের শিঙার ধ্বনি হয় বুঝি হয়।’ ধীরে ধীরে আবহে যুক্ত হতে থাকে শিঙার ধ্বনি, তারপর ঢাক এবং কণ্ঠস্বরের ঐকতানে মুখরিত হয়ে ওঠে মিলনায়তন। নূরলদীনের গলা শুনতে পাওয়া যায়। সাম্রাজ্যবাদী কোম্পানি শক্তি নীলকোরাস পেছন থেকে অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে। দুই কোরাসের পোশাকগুলোই সাজেস্টিক। শুধু মুখোশ ব্যবহারে আলাদা চিহ্নিত হয়। নীল কোরাস লালকোরাসকে ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ করতে থাকে। নীল কোরাস বোঝাতে চায়, নূরলদীন আর নেই। সংগ্রামের মৃত্যু হয়েছে। মোগলহাট, দেবী সিংয়ের ডেরা, কাজীরহাট, পাংশা, পাটগ্রাম, ডিমলা – কোনো স্থানেই নূরলদীন নেই। কিন্তু মুক্তিকামী লাল কোরাস নূরলদীনেরই প্রত্যাশী। ‘নাই যদি তো বাদ্য বাজায় কাঁই? নাই যদি তো শিঙা ফুঁকায় কাঁই?’ একটু পরেই মঞ্চে গামছা দিয়ে 888sport app নূরলদীনকে মৃতের মতো পড়ে থাকতে দেখা যায়। নূরলদীন উঠে বসে, যেন আবার জেগে উঠেছে। ‘কাঁই কইলে নাই? কাঁই কইলে নাই? নূরলদীন কি সামনে তোমার নয়?’ নূরলদীন আবার সংগঠিত হওয়ার, জেগে ওঠার আহবান জানান সবাইকে।
কল্যাণী নাট্যচর্চা কেন্দ্র-প্রযোজিত এ-নাটকে প্রস্তাবনা অংশে সূত্রধরের আলাদা চরিত্র ছিল না। কোরাসই প্রেক্ষাপটসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। কোরাসের সাত্ত্বিক অভিনয় ও ভাবপ্রকাশে বিস্মিতই হতে হয়। আঙ্গিক ও বাচিক অভিনয়ের অনবদ্য মেলবন্ধন ঘটেছিল। কোনো কোনো কোরাস চরিত্রের অভিনয় 888sport app অধিক গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রের অভিনয়কেও হার মানিয়েছে। গণবাহিনী লাল কোরাস এবং কোম্পানি বাহিনীর নীল কোরাস অনন্য 888sport live chatোচ্চতায় উদ্ভাসিত। সার্জেটিক টাইপের পোশাকে রং ব্যবহারে 888sport live chat তৈরির প্রচেষ্টা লক্ষ্য করা গেছে। শুধু চোখ থেকে নাক পর্যন্ত মুখোশের নীল ও লাল রং দিয়ে আলাদা করা হয়েছে। তাদের শারীরিক নাট্যক্রিয়ায় বিস্মিত না হয়ে পারা যায় না। শারীরিক ক্রিয়ার সঙ্গে নৃত্যকলার অদ্বৈত বন্ধন ঘটেছে। অভিনয়ে কোনো ভান ছিল না। উচ্চমার্গের নাট্যক্রিয়াপ্রসূত ছিল চলনশৈলী।
যখন বলে ‘হামার মরণ হয়, জীবনের মরণ যে নাই।’ তখন নূরলদীন মুক্তির প্রতীক হয়ে দাঁড়ান। কৃষক নেতা নূরলদীন চরিত্রে দীপঙ্কর দাস অসাধারণ প্রাণবন্ত অভিনয় করেছেন। সংলাপ প্রক্ষিপণ অত্যন্ত স্পষ্ট। মডুলেশনও খুবই অর্থবহ। সাত্ত্বিকভাব সত্যি সত্যিই নূরলদীনের স্পর্শ এনে দিয়েছে। অত্যন্ত স্বতঃস্ফূর্ত চলন ছিল মঞ্চে। অনেক সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম অনুভব প্রকাশ করা হয়েছে খুবই সাবলীল ভঙ্গিতে। কৃষকনেতা নূরলদীন চরিত্রের পোশাকও ছিল 888sport live chatসৌন্দর্যের। সে-সময়ের লেঙট ও কুর্তা এবং মাথায় একটি কাপড় বাঁধার মাধ্যমে 888sport app চরিত্র থেকে আলাদা করা হয়েছে। তবে সেটা উচ্চকিত নায়কসুলভও নয়, কিংবা অতিবাস্তবতার ধাঁচে বিবর্ণেরও নয়। নূরলদীনের স্ত্রী আম্বিয়া চরিত্র পরেছে গ্রামীণ সবুজ শাড়ি।
নীলবাহিনী বিদ্রোহী নূরলদীনকে খুঁজতে থাকে। সে-সময় লাঠির ব্যবহার অনন্য ভালোলাগায় ধরা দেয়। চাষা, জালুয়া, যোগী, তেলি, চ্যাংড়া, সুতার, কামার, কুমার যেন নূরলদীনের ডাকে জেগে ওঠে। মাথায় ছাতার মতো নূরলদীন। নানা প্রতীকে নানাভাবে নূরলদীনের চেতনা ফুটে ওঠে। অন্যদিকে নীলদল আসলে আটকেপড়া মানসিক বন্দি। নীলদের জীবনচিত্র দুটো চরিত্রের মধ্যে দিয়ে অত্যন্ত চমৎকারভাবে তুলে ধরেন নির্দেশক। প্রতীকায়িত ইমেজ অভিনয়ে অনবদ্যভাবে ফুটে ওঠে কৃষকদের জীবনযন্ত্রণা ও সংগ্রাম।
ইংরেজ চরিত্রগুলোর পোশাক রিয়েলিস্টিক। রংপুরের কালেক্টর গুডল্যাডের চরিত্রের অভিনয় অত্যন্ত প্রাণবন্ত, বিশ্বাসযোগ্য। রেভিনিউ সুপারভাইজার মরিসের সংলাপগুলো সামনের সারিতে বসে থাকা দর্শকও শুনতে পাননি সেদিন। সংলাপ প্রক্ষিপণে তার জোর দেওয়া প্রয়োজন ছিল। শুধু পোশাকি বিশ্বাস নয়, অন্তরের বোধ-বিশ্বাসও অত্যন্ত জরুরি।
এ যেন ইতিহাসকে আশ্রয় করে অনবদ্য এক দৃশ্যকাব্য। কোরাসগুলো কখনো বোরিং লাগেনি। তবে ইংরেজদের দৃশ্যের অভিনয়গুলো মাঝে মাঝে বিরক্তি সৃষ্টি করেছে। মঞ্চব্যবহারও চমৎকার। মঞ্চের যখন একপাশে পরামর্শ করে আববাস আর অন্যপাশে নূরল। চিত্রকলার দৃশ্যের মতোই মনে ভাসতে থাকে। মানসিক দাসত্ব ও কুঠির জীবনের পরাধীনতা বোঝাতে একটি ফিতাকে কেন্দ্র করে বন্দি প্রতীকের কোরিওগ্রাফি অত্যন্ত উঁচু 888sport live chatমার্গের। ফোক ধাঁচের আলেখ্যে গ্রামীণ ছড়ার ব্যবহার হয়েছে নাটকে। লাল কোরাস ও নীল কোরাসের সংঘর্ষ অত্যন্ত নাটকীয় শৈল্পিক। যদিও নীল কোরাস আববাস ও তার দলকে নিজেদের দলে ভেড়াতে চেষ্টা করে। নাটকে বিভিন্ন ক্রিয়া ও কোরাসের মধ্য দিয়ে অনুভূতি প্রকাশগুলো ভালোলাগা তৈরি করেছে। বিভিন্ন ক্রিয়ার মাধ্যমে তাৎপর্য সৃষ্টিগুলো অসাধারণ। এলানের দৃশ্যও শৈল্পিক। প্রচ- পরিশ্রম আছে নাটকে। উপস্থাপনে নতুনত্ব আছে।
নূরলদীনের বাল্যবন্ধু আববাস চরিত্রের অভিনয়ও প্রাণবন্ত। সাত্ত্বিকভাব ও বাচন অসাধারণ। মঞ্চে চলনও অত্যন্ত স্বতঃস্ফূর্ত। আববাসের পোশাকে গৃহী একটি ছাপ স্পষ্ট ছিল। রং থেকে শুরু করে সমস্তই ভালোলাগার মতো। পোশাকে যেন যুগযন্ত্রণা লক্ষ্য করা গেছে। গণবাহিনীর দেওয়ান দয়াশীল। দয়াশীল অল্প দৃশ্যে উপস্থিত হলেও নাটকের গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। দয়াশীলের অভিনয়ও অনন্য। নাটকে সব চরিত্রের পোশাক পরিকল্পনায় অন্তর্নিহিত একটি ঐক্য লক্ষ্য করা গেছে।
নাটকে বিরতি ঘোষণা হলেও সময় স্বল্পতায় তা দেওয়া হয়নি। তারপর রাতের দৃশ্য। সবাই যখন ঘুমিয়ে আববাস তখন জেগে। পরিস্থিতি উপস্থাপনে নতুনত্ব আছে। ভাবনা আছে। পারসপেক্টিভ চিমত্মা আছে। জোছনারাত। ঘুমানোর মধ্যেও বৈচিত্র্য সৃষ্টি করেছেন নির্দেশক। নির্দেশকের মাত্রাজ্ঞান, পরিমিতিবোধ অসাধারণ। নাটকে চরিত্রায়ণও দেখার মতো। নূরলদীনের স্ত্রী আম্বিয়া; নাটকে অল্পবিস্তর উপস্থিত হলেও অভিনয়ে দর্শকের হৃদয় স্পর্শ করেছে। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও আবেগী স্থান দখল করে আছে সে। অভিনয় ও চলনে অত্যন্ত সহজ-সরল এক শুভ্রতা যেন ছুঁয়ে গেছে। ভাবপ্রকাশগুলো অসাধারণ নৈপুণ্যের।
নীলবাহিনী অতর্কিত আক্রমণ করে। নীল কোরাসের ‘তালাশ কর তালাশ কর’ বহুমাত্রিক দ্যোতনা তৈরি করে। অপরদিকে আম্বিয়া নূরলদীনের বিরহে অস্থির। গুনগুন করে বিরহের গান গায় সে। ধীরে ধীরে গানের আবহ বাড়তে থাকে। আগুন পাড়ের শাড়ি ছাড়া আর কী চাইবে আম্বিয়া। কথার ঘোর তৈরিতে লাইটের কাজগুলো অসাধারণ।
ইংরেজ চরিত্রগুলোর অনেকের অভিনয়েই বিশ্বাসযোগ্যতা খুব কমই লক্ষ করা গেছে। টমসনের স্ত্রী লিসবেথ চরিত্রে আভিজাত্যের ভাবটি ভালোলাগার মতো। এদেশে ব্রিটিশ প্রতিষ্ঠায় ঐকামিত্মকতায় নেতিবাচক অর্থে হলেও নজর কেড়েছে। অভিনয়ের আলাদা স্টাইল আছে। কোম্পানির কুঠিয়াল টমসনের অভিনয় ছিল বিশ্বাসযোগ্য। কোম্পানির ফৌজি অফিসার ম্যাকডোনাল্ডের মঞ্চে চলন আরো স্বতঃস্ফূর্ত হওয়ার দাবি রাখে।
তখন চারদিক থেকে হাজার হাজার জনতা আসতে থাকে। কোরাসের মাধ্যমে অনবদ্যভাবে উপস্থাপন করেছেন নির্দেশক। নূরলদীনের আশ্রয়ে; নূরলদীনের সঙ্গে যোগ দিতে। দিনাজপুর, কুচবিহার প্রভৃতি অঞ্চল থেকে। নূরলদীনকে নবাব হিসেবে অভিহিত করতে চায়। আববাসের প্রশ্নের জবাবে নূরলদীন জানায়, সে নবাব হতে চায় না। প্রকৃতপক্ষে শোষণ, নির্যাতন নিপীড়ন, অত্যাচারের হাত থেকে বাঁচতে ও বাঁচাতে চায়।
শিঙা, ঢাক, জনকোলাহলে মুখরিত হয়ে ওঠে। ‘এক এ নূরলদীন যদি চলি যায়। হাজার নূরলদীন আসিবে বাংলায়। এক এ নূরলদীন যদি মিশি যায়। অযুত নূরলদীন য্যান এসে যায়। নিযুত নূরলদীন য্যান বাঁচি রয়।’ নূরলদীন দেশের মানুষের মুক্তির প্রতীকে রূপান্তরিত হয় নূরলদীনের 888sport sign up bonus জাগে। নূরলদীনের বাবার গরু ছিল না। নিজেই গরু হয়ে হাল টানতেন। একদিন হাল টানতে গিয়ে নূরলদীনের বাবা মারা যান। মারা যাওয়ার সময় বাবার মুখে যেন মানুষের ডাক ছিল না। গরুর হাম্বা রব ছিল। সেই হাম্বা রব যেন নূরলদীনকে তাড়া করে ফেরে। হাম্বা সিম্বলের মাধ্যমে নূরলদীনের চেতনা অনবদ্যভাবে তুলে ধরেন নির্দেশক। নূরলদীন ও তার দল মোগল হাট ইংরেজদের ঘাঁটি আক্রমণ করে। অসাধারণ কোরিওগ্রাফির মাধ্যমে উপস্থাপন করেছেন নির্দেশক। যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। নূরলদীনের চেতনা সর্বত্র বিরাজমান। হিমালয়, সমুদ্র, ব্রহ্মপুত্র নদীর রূপকল্প তৈরি অত্যন্ত 888sport live chatসুষমায় উপস্থাপিত। যুদ্ধ চলতে থাকে। আববাস দৃঢ় কণ্ঠে উচ্চারণ করে, ‘ধৈর্য সবে – ধৈর্য ধরি করো আন্দোলন। লাগে না লাগুক, বাহে, এক দুই তিন কিংবা কয়েক জীবন।’ এ আহবানের মধ্য দিয়ে নাটকের পরিসমাপ্তি ঘটে।
নাটকের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক ছিল চিত্রকল্প বা দৃশ্যকল্প তৈরি। দৃশ্য অনুষঙ্গের পাশাপাশি কোরাসগুলো বিভিন্ন ইমেজ তৈরির মাধ্যমে নাটকের অন্তর্নিহিত ব্যঞ্জনা ও তাৎপর্য ব্যাখ্যা করেছে। সাজেস্টিকের সঙ্গে রিয়েলিজমের সমন্বয় ঘটেছে।
কোনো 888sport live chatকর্মই সমালোচনার ঊর্ধ্বে নয়। নানা বিষয় ও ঝামেলা থাকেই। এ-নাটকটি সর্বাঙ্গ সুন্দর হয়ে উঠেছে তা বলবো না, তবে দর্শককে ফাঁকি দেওয়ার কোনো উদ্দেশ্য তাদের ছিল না। যুদ্ধ, সংঘাত, আক্রমণ অত্যন্ত নাটকীয়তায় উপস্থাপিত। নাট্যকার নাটকে আঞ্চলিক ভাষাকে যেমন কাব্যিক 888sport live chatসুষমায় অনন্য করে তুলেছেন, তেমনি কল্যাণীর প্রযোজনাতে নানা মাধুর্য নানা ব্যঞ্জনাদীপ্ত অনুরণনেই উপস্থাপিত হয়েছে। ‘হয় হয় হয়’ ‘নাই নাই নাই’ ‘ক্যাঁই ‘ক্যাঁই’ ‘অবধান’ ‘সাবোধান’ ইত্যাদি নানা উক্তির বহুপ্রয়োগেও বিরক্তির পরিবর্তে ভাবনার স্রোতেই ভাসিয়েছে।
অবশ্য এ-ধরনের কোরিওগ্রাফিনির্ভর কাজ 888sport appsে নতুন নয়। মনে রাখতে হবে, 888sport app ক্রিয়ার আড়ালে যেন নাটকের গল্প বা বিষয়ের মূলশক্তি ক্ষুণ্ণ না হয়। কল্যাণী নাট্যচর্চা কেন্দ্রের নাটকটি উপস্থিত দর্শকদের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা অর্জন করে। তবে, এ-ধরনের নাটক কলকাতায় কতটুকু গ্রহণযোগ্যতা পাবে তা ভাবার বিষয়। দর্শনগত ভিন্নতাই প্রধানরূপে বিদ্যমান। 888sport appsে হাজার বছরের বাংলার ঐতিহ্যের ধারায় গান-নাচ, গল্প-অভিনয়সহ নানা 888sport live chatকৌশলের অদ্বৈতনিক উপস্থাপনাই বেশি গুরুত্ব পায়।
নাটকটিতে টিমওয়ার্ক এককথায় অসাধারণ। প্রযোজনাটি মূলত দলগত কাজ। দলগত ঐক্য যতো ভালো থাকবে, এ-নাটক ততো বেশি সর্বাঙ্গ সুন্দর হয়ে উঠবে। নাটকটি নির্মাণে কঠোর ভাবনা ও শ্রমের অপরিসীম সাধনার পরিচয় পাওয়া যায়। মিউজিক তো এককথায় অনবদ্য। ইতিহাসের সঙ্গে কল্পনা, নাট্য ও কাব্যের সমন্বয়ে এক অপূর্ব দৃশ্যকাব্য। আমরা নাটকটির উত্তরোত্তর মঞ্চসাফল্য কামনা করি।
নাটকটিতে অভিনয় করেছেন – দীপঙ্কর দাস, অনিরুদ্ধ বিশ্বাস, স্বপন পাল, অনুপম চক্রবর্তী, মধুলেখা দত্ত, উত্তম ঘোস, অতনু সরকার, সুপর্ণা দাস, সৌমী আচার্য, সুনীতা পোদ্দার রাম, পায়েল চক্রবর্তী, অভিজিৎ মণ্ডল, শৌমিক দে, রণিক মুন্সী, মহেশ কৈরি, পপি রায়, অর্পিতা ম-ল, শর্মিষ্ঠা দে, রাখী সেন, অনিন্দ্য বন্দ্যোপাধ্যায়, দীপঙ্কর তলাপাত্র, নিলয় নাথ, দীপ্তেশ্বর ম-ল ও কিশোর সেনগুপ্ত। r

Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.