মঞ্জু সরকারের ছোটগল্প এবং রূপান্তরের গল্পগাথা

আমির মুহম্মদ খসরু

গল্পকার মঞ্জু সরকারের প্রথম গল্পগ্রন্থ অবিনাশী আয়োজন পাঠ করার সৌভাগ্য আমার হয়েছিল গত শতকের মধ্য আশির দশকে, যখন আমি সদ্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছি। প্রভূত আনন্দের সঙ্গে আমি একথা স্বীকার করি, অবিনাশী আয়োজন পড়ার মধ্য দিয়ে পাঠক হিসেবে আমার বড় একটি উত্তরণ ঘটেছিল। এতে আমার ভেতরে তাঁর সম্পর্কে যেরকম প্রচন্ড আগ্রহ আর কৌতূহলের সঞ্চার হলো, সেই কৌতূহল থেকে আমি তাঁর দ্বিতীয় গল্পগ্রন্থ মৃত্যুবাণ প্রকাশিত হওয়ার প্রথম  দু-একদিনের মধ্যেই কিনে নিয়েছিলাম এবং বাসায় ফিরে একরাতেই পড়া শেষ করেছিলাম। অসম্ভবরকমের ভালো লেগেছিল এর গল্পগুলো। পরপর দুবার পড়েছিলাম ‘ভূতের সাথে যুদ্ধ’ গল্পটা। উত্তরবঙ্গীয় মঙ্গা, ভূমিহীন প্রান্তিক মানুষ, তার ঘর-গেরস্থালি এবং মধ্যবিত্ত জীবনে নিহিত সত্যগুলো তাঁর শাণিত গদ্যে যেরকম ঝলসে উঠেছে, আমাদের নিয়ত উপেক্ষার আড়াল থেকে আমাদের ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনের এই অনধীত লজ্জারাশি – সোজাসাপ্টা যদি বলি, যা একরকম প্রতারক কারসাজিতে অহরহ আমরা লুকিয়ে যাচ্ছি – যেরকম নির্মমতার সঙ্গে এবং প্রগাঢ় ভালোবাসায় তিনি উন্মোচিত করেছেন, এবং তা করেছেন 888sport live chatের দাবিকে বিন্দুমাত্র অগ্রাহ্য বা অবজ্ঞা না করেই, বাংলা 888sport live footballের অন্য কোথাও অদ্যাবধি সেরকম আর দেখা যায়নি।

প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে অবিনাশী আয়োজন বিদগ্ধজনের ভূয়সী প্রশংসা অর্জনের পাশাপাশি জিতে নেয় জাতীয় 888sport app download bd। স্বদেশের চৌহদ্দি ছাড়িয়ে প্রতিবেশী দেশ ভারতের 888sport live footballবোদ্ধাদেরও সমীহ আদায় করে নিয়েছিলেন এই শক্তিমান লেখক। শুধু ছোটগল্প নয়, তমস, নগ্ন আগন্তুক, প্রতিমা উপাখ্যান, আবাসভূমি প্রভৃতি 888sport alternative linkেও তাঁর অনন্যসাধারণ মেধা ও 888sport live chatশক্তির যে পরিচয় আমরা পেয়েছি, তাতে একথা নিঃসন্দিগ্ধচিত্তে বলা যায়, তিনি সমকালীন বাংলা 888sport live footballের গুটিকয় শ্রেষ্ঠ কথা888sport live chatীর একজন।   কথা888sport live footballে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ইতোমধ্যে পেয়েছেন বাংলা একাডেমি ও ফিলিপ্স্ 888sport live football 888sport app download bdসহ অনেক 888sport app download bd। তবে 888sport live footballের প্রচল পন্থা এড়িয়ে যাওয়া এই লেখকের সৃষ্টিকর্ম যে কোনো 888sport app download bd, পদক বা সম্মাননার তুলনায় বহুগুণ উঁচু।

এ-প্রসঙ্গে এবার এ-কথাটা বলা জরুরি, এদেশে 888sport live chat888sport live football জগতের হালফিল খবর যাঁরা রাখেন এবং সাদা চোখে এর দিকে দৃকপাত করে দেখেছেন, 888sport app download bd এবং 888sport live footballকৃতি তাঁদের কাছে প্রায় ক্ষেত্রেই এখন আর তুল্যমূল্য বলে বিবেচিত নয়। রাজনীতির মতো এখানেও সম্প্রতি ঢুকে পড়েছে অনেক ছোট-বড় মাস্তান ও চতুর ধান্ধাবাজ, যারা আবার জায়গামতো 888sport app download bd বাগাতে পদলেহন এবং অন্যসব অশালীন কর্মে যথেষ্ট পারঙ্গম। 888sport app download bd প্রদানকারী সংস্থা এবং বিচারকদের নিরপেক্ষতাও বিভিন্ন কারণে প্রশ্নবিদ্ধ। দাপ্তরিক পদবি, প্রাতিষ্ঠানিক পদমর্যাদা এবং সামাজিক-রাজনৈতিক-ব্যক্তিগত-গোষ্ঠীগত নানান সম্বন্ধ-সংযোগ-প্রভাব নেপথ্যে কাজ করছে। অতএব, বাজারে ‘888sport live football’ নামের যে-আবর্জনা বিকোচ্ছে, সেগুলোর অনেকের কপালে আবার 888sport app download bdের বিজয়-তিলক; সত্যিকার 888sport live chatমূল্য ধারণ করে এমন লেখার মুখ ঢেকে গেছে ওইসব অখাদ্য আবর্জনার চোখ-ধাঁধানো বিজ্ঞাপনে। 888sport live chatের মুখোশপরা সন্ত্রাসের নিচে চাপা পড়ে যাচ্ছে অমূল্য সৃষ্টির বিমল আবেদন। বেঙ্গল ফাউন্ডেশন থেকে প্রকাশিত মঞ্জু সরকারের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক 888sport alternative link অন্তর্দাহ নিয়ে কোনো আলোচনা এ-যাবৎ কোনো পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে বলে আমার জানা নেই। এর কারণ, মঞ্জু সরকার তথাকথিত সম্বন্ধ-সংযোগ-প্রভাবের বলয় থেকে দূরে অবস্থান করছেন। অথচ এটি একটি চমৎকার 888sport alternative link। সম্প্রতি যে-কয়েকটি 888sport app download bdের আসর থেকে এটি বাদ পড়েছে, চূড়ান্ত ও নিরপেক্ষ বিবেচনায় তার সবকটিতেই এটি ছিল 888sport app download bdযোগ্য শ্রেষ্ঠ লেখা। 888sport live footballের নামে যাঁরা আসলে বুজরুকি, ভাঁড়ামি বা আত্মকূন্ডয়নের নোংরা শিক্ষা দিয়ে চলেছেন, 888sport app download bd যাচ্ছে তাঁদেরই হাতে। আর এজন্য 888sport app download bdের আয়োজক সংস্থা ও বিচারকদের ধন্যবাদ না দিয়ে পারছি না।

আশার কথা, প্রকৃত পাঠকদের কাছে 888sport live footballিক সততার কদর আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। বিজ্ঞাপনের মোহজাল ছিন্ন করে তাঁদের কৌতূহলী চোখ খাঁটি 888sport live chatকর্মগুলো আবিষ্কার করে নিতে সমর্থ। বিজ্ঞাপনী ডামাডোল আর সন্ত্রাসের কাছে তাঁরা পরাস্ত নন।

ভেবে খুব অবাক হই, আমাদের 888sport live football-সমালোচনার ক্ষেত্রটিও কী সাংঘাতিক দৈন্যে ভরা। সত্যিকার 888sport live chat-সমঝদারির সঙ্গে 888sport live footballকর্মের মুক্ত ও নিরপেক্ষ সমালোচনা আজ আর তেমন চোখে পড়ে না, যা পাঠ করে পাঠকেরা লেখক ও তাঁর সৃষ্টিকর্ম সম্পর্কে প্রকৃত ধারণা পাবেন। প্রিন্ট আর ইলেকট্রনিক মিডিয়া ঘিরে যে দুষ্ট হানাদার চক্র গড়ে উঠেছে, তাদের হাতে চালু হয়েছে          888sport live chat-888sport live footballের একরকম ঠিকাদারি ব্যবসা। একচেটিয়া টেন্ডারে এরা একচ্ছত্র এক 888sport live footballের বাজার কায়েম করেছে, যেখানে তৈরি হয়েছে একটা তথাকথিত 888sport live footballিক এলিট শ্রেণি এবং একটা ভন্ড সমালোচক গোষ্ঠীও গড়ে উঠেছে এদের সঙ্গে। এই তথাকথিত 888sport live footballিক ‘সেলিব্রেটি’দের স্থূল সৌন্দর্যধারণার গুণকীর্তনে লিপ্ত এসব সমালোচকের হাতে প্রকৃত অর্থে সমালোচনার কবর রচিত হয়েছে। এই প্রবণতা যেখানে রাজত্ব করছে, সেখানে মঞ্জু সরকারের গল্প ও 888sport alternative link সম্পর্কে কোথাও কোনো আলোচনা না হলে আর অবাক হবো কেন! কিন্তু 888sport live footballের একজন উৎসাহী পাঠক হিসেবে অবাক না হয়ে পারছি না এই ভেবে যে, 888sport live football কখনো ব্যক্তিগত স্বার্থ বা সম্বন্ধের পরিপ্রেক্ষিতে মূল্যায়িত হতে পারে না। এর একটা সর্বজনীন আবেদন আছে, যা নিজে থেকেই পৌঁছে যায় সবার কাছে। কিন্তু তা গ্রহণ ও স্বীকার করার মতো সত্যবোধ ও খাঁটি সমঝদারি তো থাকা দরকার।

বিশ্ব888sport live footballের পাঠকমাত্রেই জানেন, রুশ ও ফরাসি 888sport live footballে সমালোচনার ধারাটা কত শক্তিশালী। কিন্তু আমাদের এখানে 888sport live football-সমালোচনা 888sport live footballের একটা ধারা হিসেবে আজো গড়ে ওঠেনি। এটা খুবই লজ্জার বিষয় এবং এই লজ্জা স্বীকারের কাজটি কাউকে না কাউকে তো করতেই হবে। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বলেছিলেন, ‘বাঙালির ইতিহাস লেখা দরকার। কে লিখিবে?’ জবাব দিয়েছিলেন তিনি নিজেই, ‘তুমি লিখিবে।’ এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এই ‘তুমি’টা কে? আসলে তিনি একটা প্রতীক ব্যবহার করে বোঝাতে চেয়েছেন, বাঙালির ইতিহাস একজন বাঙালিই লিখবেন, যিনি সচেতন, উদ্দীপ্ত এবং প্রস্ত্তত; যাঁর দায়বোধ আছে; যিনি বাঙালিকে স্বপরিচয়ে অভিষিক্ত করবেন; তাকে নিয়ে যাবেন আত্ম-অবলোকনের গভীরে। অতএব, সত্য-সংবেদী যে-কোনো মানুষ, যিনি একই সঙ্গে 888sport live footballের একজন তন্বিষ্ঠ পাঠক, আজ এই দায়ভার মানবেন যে, সমালোচনার দায়িত্বটুকু তাকে নিজ হাতে তুলে নিতে হবে।

ভালো গল্প-888sport alternative linkের পাঠক888sport free bet এদেশে অনেক কম, একথা যেমন সত্য, তেমনি এও সত্য যে, পাঠকের মনে সামান্যতম অাঁচড় কাটতে অসমর্থ, শূন্যগর্ভ পান্ডিত্যের অহমিকা-ভরা এমনসব লেখাতেও কেউ কেউ জোর করে 888sport live footballের তকমা সেঁটে দিচ্ছেন। সমাজের নিচুতলার মানুষের কথা লিখতে গিয়ে কেউ কেউ তাদের কীটে পরিণত করেছেন। এর উদ্দেশ্য কী? পাঠকের মনে যে-কোনো ভালো লেখার একটা ইতিবাচক প্রভাব তৈরি হতে বাধ্য। আমি বিশ্বাস করি, লেখালেখির প্রক্রিয়ায় একজন লেখকের যেমন ক্রমিক উত্তরণ ঘটে, তেমনি উত্তরণ ঘটে একজন পাঠকেরও। পাঠ প্রক্রিয়ায় এই যে উত্তরণ বা বিবর্তন, সেখানে একজন শক্তিমান লেখকের ভূমিকা অনেক বড়। রূপকথা আর গোয়েন্দাকাহিনির চৌহদ্দি পেরিয়ে পাঠক একসময় ক্ল্যাসিক 888sport live footballের রাজ্যে প্রবেশ করে। এ হলো পাঠকের একধরনের উত্তরণ। একটা সার্থক গল্প পড়ে পাঠকের অনুভূতি একটা গাঢ়তর ব্যঞ্জনা, গভীর ও ব্যাপ্ত একটা মাত্রা লাভ করে। সেই সঙ্গে এ প্রক্রিয়ায় গল্পপাঠে পাঠক কখনো চোখের জল ফেলে, কখনো আনন্দে উদ্বেল হয়। এবং এটা হলো 888sport live footballের প্রচলিত তত্ত্ব যে, লেখকসৃষ্ট চরিত্রগুলোর সঙ্গে পাঠক একাত্ম হবে, অর্থাৎ ওই চরিত্রগুলোর হাসি-আনন্দ আর বেদনার সঙ্গে তার আননদ ও বেদনাবোধের জাগরণ ঘটবে।

ফিরে আসি মঞ্জু সরকারের গল্পে। তাঁর সামাজিক বীক্ষা এবং গভীর মনঃসমীক্ষণ গল্পকাঠামোর মধ্য দিয়ে পাঠকের মনে যে-আবেদন, যে-বার্তা পৌঁছে দেয়, তার গভীরতার ভেতরেই তাঁর লেখার 888sport live chatমূল্য আপনা থেকেই একটা স্বতঃস্ফূর্ত স্বীকৃতিচিহ্ন তৈরি করে। তবে তাঁর গল্প 888sport live footballের প্রচলিত ক্ল্যাসিক তত্ত্বের সঙ্গে তেমন মেলে না। তাঁর গল্পের পাঠ পাঠককে দাঁড় করিয়ে দেয় নিজের মুখোমুখি। মৃত্যুবাণের কিছু কিছু গল্পে তিনি মধ্যবিত্ত চরিত্রের যে অনুপুঙ্খ বিশ্লেষণ করেছেন – তার ভঙ্গুর স্বভাব, তার দোলাচল, ভীরুতা, মিথ্যাচার, পলায়নপরতা আর ভন্ডামি – সবকিছু মিলে তার শ্রেণি আর ব্যক্তি-বৈশিষ্ট্যের যে নির্দয় নির্মোহ ব্যবচ্ছেদ, তা পাঠ করতে করতে আমি দেখলাম,            গল্পে বর্ণিত চরিত্রগুলোর সঙ্গে পাঠকের আনন্দ-বেদনার প্রচলিত সমীকরণ একবারে ধূলিসাৎ হয়ে গেছে। একবারেই দুর্বল হয়ে পড়েছে সেই তত্ত্ব প্রভাব, পানসে হয়ে গেছে তার স্বাদ। দেখলাম, 888sport live chatের সহনীয় মাত্রায় এবং তার তাবৎ ঔজ্জ্বল্যে ধৃত হয়েও বর্ণনা কত ভয়ানক আগ্রাসী, আক্রমণাত্মক হয়ে উঠতে পারে। চাবুকের ঘা খেতে খেতে, রক্তাক্ত হতে হতে আয়নায় নিজের চেহারাটা দেখে নিলাম। আমি যে ভন্ড, প্রতারণা আর অসমর্থ ভীরুতায় ভরা আমার চরিত্র, আমার যাবতীয় খোলস ভেঙে দিয়ে, প্রসাধনচর্চিত মুখের সব প্রসাধন ধুয়েমুছে দিয়ে ভেতরের সেই আসল আমিকে নগ্ন করে দিলো এবং বিমূঢ়, স্তম্ভিত আমি অমিত শক্তিধর অদৃশ্য কোনো হাতের এক হ্যাঁচকা টানে প্রায়ান্ধকার গুহা থেকে হঠাৎ বেরিয়ে এলাম দুচোখ ঝলসে-দেওয়া ঝলমলে আলোর রাজ্যে, আপাদমস্তক ন্যাংটো, হতচকিত এবং সেই সঙ্গে অবাক এক মুক্তির বিস্ময় আনন্দে শিহরিত।

এবং এইসঙ্গে আমি এও অনুভব করেছি, নিজেকে জানা যদি মানুষ ও মানব সভ্যতার অন্বিষ্ট হয়, তবে 888sport live chat-888sport live football নিঃসন্দেহে সেই অন্বেষার সর্বোত্তম পথ। কারণ, 888sport live chat হলো মানবীয় সৃজনক্ষমতার এমন এক রহস্য রসায়ন, যা এর শুদ্ধতম অর্থে অফুরান অগ্নি ও আলোকসঞ্চারী; মানবাতমার অন্তরতম প্রদেশে তা তীব্র ও গভীরতম আলোড়ন জাগাতে সমর্থ, যা অন্য কোনো মাধ্যমে সম্ভব নয়। সমাজ ও পরিপার্শ্বের আন্তরসত্তা হিসেবে যে ক্রিয়াশীল ‘আমি’কে দেখা যায়, নিজের কাছ থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে সেই ‘আমি’র পূর্ণ অনুধাবন আত্মমুক্তির প্রথম ও প্রধান পূর্বশর্ত এবং সমাজকে মুক্ত করতে হলে এই আত্মমুক্তির প্রক্রিয়ায় নিজেকে নিরন্তর নিয়োজিত রাখতে হবে। আর এজন্য চাই মুক্ত 888sport live chat-888sport live footballের চর্চা ও পাঠ, যা তথাকথিত ধর্মচর্চার চেয়ে যে কোনো বিবেচনায় বহুগুণে উত্তম, যা মানুষকে ‘নৈতিকতা’র জোয়াল থেকে মুক্ত করে নান্দনিক এক সত্তায় উত্তীর্ণ করবে। নান্দনিক মানুষ তাঁর মুক্ত আতমার প্রেরণায় অবশ্যই নীতি মেনে চলেন, শুধু নৈতিকতার জোয়ালটা তাঁর ঘাড়ে নেই। নিজেকে রক্তাক্ত করা আর আগুন-ছেঁকা দেওয়া ছাড়া শিক্ষিত হওয়ার অন্য কোনো মোক্ষম পন্থা নেই। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কয়েকটি দীনহীন ডিগ্রি কি মানুষকে সেই শিক্ষা দিতে পারে! ব্যক্তিসত্তার গভীর গহনলোকে নিগূঢ় উজ্জ্বল এই রক্তক্ষরণ ঘটিয়ে দেওয়া এবং তার মধ্যে আত্মশুদ্ধির অবিরাম অগ্নি-প্রজ্বালনই 888sport live chatের কাজ। আগুনের পোড় খেতে খেতে যে-মানুষ জীবনের পথ চলেছে, তাকেও অগ্নিশুদ্ধ হতে হবে 888sport live chatের স্পর্শে, কারণ 888sport live chatের ওই আগুনই তাকে প্রকৃত জীবনদান করবে, যে 888sport live chatিত আগুন মানবাত্মার বেঁচে থাকার মন্ত্র, যা ছাড়া মানুষ আসলে মৃত।

বাংলা কথা888sport live footballে মঞ্জু সরকারের ছোটগল্পের মধ্যে সেই আগুনের দেখা মেলে। তাঁর গল্পগুলো আসলে পাঠককে একধরনের আত্মপঠন প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত করে দেয়। আনন্দ-বেদনার কাব্য নয় তাঁর লেখা। আনন্দিত শিস কিংবা দুঃখজল উদ্গত করায় বিশ্বাসী নন তিনি। তাঁর গল্প পড়ে বুকের ভেতর ধকধকিয়ে ওঠে অদৃশ্য আগুন, নির্দয় কশাঘাতে নড়েচড়ে ওঠে ভাবনা ও বোধ। পাঠককে মনে করিয়ে দিচ্ছি ‘গৃহবন্দীর ঘরদুয়ারে’র (অবিনাশী আয়োজন) প্রধান চরিত্র হেলেনার কথা, শোচনীয় দারিদ্র্য এবং সেই সঙ্গে অল্প বয়সে পরপর সন্তান জন্ম দেওয়ার ধকল সইতে না পেরে যার শরীর শুকিয়ে কাঠ; মুক্ত আর সুন্দর জীবনের স্বপ্ন, শরীরী সৌন্দর্য ফিরে পাওয়ার সাধ তবু উঁকি দেয় তার ভেতরে! যখন লম্পট স্বামী আরেকটি নিকাহ করার জন্য মনে মনে তৈরি হয়ে ওঠে, পুনরায় গর্ভবতী হেলেনা তখন ‘…দুপুরবেলা …ঘরের দরজা বন্ধ করে। গাছের শিকড়টা যথারীতি খাওয়া হয়েছে, এবার বাতাসীর মার পরামর্শ অনুযায়ী একখন্ড সুঁচালো বাঁশের কাঠি খুব সাবধানে একবার, দুবার, তৃতীয়বারে হাতে একটু জোর পড়তেই জরায়ুর বদ্ধ কপাট ভেদ করে… তীব্র ব্যথার সঙ্গে গলগল করে রক্ত বেরিয়ে আসে…।’ কিন্তু স্বামী মেহের আলীসহ শ্বশুরবাড়ির অন্য আত্মীয়-স্বজন কেউ বিষয়টিকে পাত্তা দেয় না। এভাবে তিনদিন পেরিয়ে যায়। চতুর্থ দিনে মেহের আলী ‘ঘরে ঢুকে বেজায় চমকে ওঠে… মেঝেতে রক্তের দাগ, বিছানায় রক্ত, কাঁথাভরা রক্ত। এত রক্ত ছিল হেলেনার শরীরে!… ক্ষীণ শরীর বিছানায় আছে কি নেই, মেহের আলী বিছানার কাছে দাঁড়ালে যেন সম্পূর্ণ অন্য এক জগৎ থেকে হেলেনার কোটরগত চোখ দুটি তাকে বিদ্ধ করে রাখে। সে চোখে রাগ নেই, ঘৃণা নেই, প্রতিবাদ নেই, প্রতিরোধ নেই, তবে কী বলতে চায় হেলেনা? দশ বছর ঘর করার পরেও স্ত্রীর চোখের ভাষা বুঝতে না পারার জন্য নিজেকে তার অপরাধী লাগে এবং আশ্চর্য যে উপস্থিত সংকট মুহূর্তেও আফাজের বোনটা (মেহের আলীকে মাতাল করেছে যে) মনে উঁকি দেয়…।’ গল্পের শেষ দৃশ্যে হেলেনার একটি ছেলেকে তার ঘরে ঢুকতে দেখা যায় এবং ‘ছেলেটি মুখে আঙুল আর দৃষ্টিতে বিশাল আতঙ্ক নিয়ে মায়ের শিয়রে থমকে দাঁড়ায়। হেলেনা চোখ দুটি ছেলের দিকে অপলক মেলে রাখে, দুফোঁটা লোনা জলের তৃষ্ণায় চোখের মণি থির থির কাঁপতে থাকে, তারপর অতি কষ্টে কাঁথার নিচ থেকে শীর্ণ হাতখানা বের করে চেপে ধরে আত্মজের হাত…।’

হেলেনার পরিণতি দেখে পাঠকের স্তম্ভিত হওয়ার কারণ লেখকের বর্ণনভঙ্গি; গল্পের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত চরিত্রগুলোর উপস্থাপনায় দ্বান্দ্বিক বাস্তবতার আবহজাল তৈরি। জলশূন্য হেলেনার চোখ পাঠকের চোখকেও জলহীন উত্তপ্ত করে দেয়। সভ্য এক পৃথিবীর কেন্দ্রে মেয়েটির প্রতিপক্ষ হিসেবে তার চারপাশ ঘিরে যে অনুভূতিশূন্য জান্তব বাস্তবতার পরিমন্ডল মঞ্জু সরকার তৈরি করেছেন তা এতটাই বিশ্বাসযোগ্য যে, ওই পরিবেশ এবং পরিবেশের ভেতরের মানুষগুলোকে গল্পের প্রয়োজনে সৃষ্ট বলে মনে হয় না কখনো। পাঠকের দৃষ্টির সামনে গল্পবইয়ের সাদাকালো পাতাগুলো হেলেনার জরায়ুর তাজা রক্তে টকটকে লাল হয়ে ওঠে। একই গ্রন্থের ‘গো-জীবন’, ‘কানাইয়ের স্বর্গযাত্রা’, ‘নগ্ন আহবান’ প্রভৃতি গল্পেও আছে নিষ্করুণ সত্যের নির্মেদ বয়ান; আছে সংহত মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ, যা কাহিনির বুনোটকে ঘন আর মজবুত করে তুলতে অপরিহার্য বলে মনে হয়। একটা পরিণতির দিকে চরিত্র এবং পাঠক যেন একই গতিতে অগ্রসর হতে থাকে। ক্ষুব্ধ কানাইয়ের সঙ্গে পাঠকও ‘স্বর্গযাত্রা’ করে; ঘরে-বাইরে নিরাশ্রয় এবং শত্রুর-জান্তব-থাবায়-ছিন্নভিন্ন লাঞ্ছিত হাজরার পক্ষে সশস্ত্র দাঁড়িয়ে যায়।

তাঁর মৃত্যুবাণ গল্পগ্রন্থের ‘ভূতের সাথে যুদ্ধ’ গল্পটি বিশ্ব888sport live footballের অন্যতম সেরা গল্প। সমাজের একজন প্রান্তিক মানুষ মফিজ এই গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র। ‘লে-অফ ঘোষিত কারখানার মতো বিপর্যস্ত প্রকৃতি বেকার করেছে’ তাকে। তিনদিন ধরে একটানা বৃষ্টি। ‘তিনদিন ধরে কোনো কাজ পায়নি মফিজ। মেঝের উপর পিঁড়িতে বসে আদিগন্ত অন্ধকারে উদাসীন তাকিয়ে আছে…।’ ‘বৃষ্টি থেমে যাওয়ায় হঠাৎ তার অন্তর্দৃষ্টি তীব্র আলো ফেলল প্রান্তরের নিথর জলে। চোখ বুজে জলের ভেতর তাকাল সে এবং দেখতে পেল, বিল থেকে উঠে আসা সমস্ত মাছ এখন ধানক্ষেতের হাঁটুপানিতে ঘুরে বেড়াচ্ছে…। সারাদিনের আলস্য আর উপবাসে এই মুহূর্তে যখন সে আধমরা, তখন প্রান্তরে মাছেদের প্রাণবন্ত চলাফেরা দেখে লাভ-ক্ষতির হিসেব না করেই তড়াক করে উঠে দাঁড়াল সে।’ ধনুকের ছিলার মতো টানটান গদ্যে বর্ণিত হয়েছে মাছুয়া মফিজের আত্মরক্ষা ও তার পরিবারের সদস্যদের বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা। জলভরা ধানক্ষেতে মাছেদের বিচরণ, পাটখড়ির আগুন হাতে মফিজের তীক্ষ্ণ সন্ধানী ব্যগ্র দুটি চোখ ও তার সতর্ক চলাফেরা এবং প্রকৃতির অপ্রত্যাশিত বিরূপতায় তার মাছশিকার প্রচেষ্টার ব্যর্থতার বর্ণনা এতটাই ঘনিষ্ঠ ও নিপুণ যে, গল্পটি পড়তে পড়তে পাঠক নিজেই অলক্ষ্যে রূপান্তরিত হয়ে যায় একজন মাছুয়া মফিজে। গল্পের একটা অংশ এখানে হুবহু উদ্ধৃত করার লোভ সংবরণ করতে পারছি না। ‘বড় একটা শোল মাছকে ধানগাছের গোড়া কামড়াতে দেখে নিশানা তাক করল মফিজ। কিন্তু হানবার আগেই মাছটা চক্কর মেরে ধানগাছটাকে প্রবল নড়িয়ে সোজা এগুতে লাগল। বকের মতো থপ থপ পা ফেলে মফিজও মাছটার পিছু ছুটল। হঠাৎ হাতের মধ্যে ক’ফোঁটা বৃষ্টি পড়ায় চমকে উঠল সে। তাকাল আকাশের দিকে। মেঘের অপ্রত্যাশিত শত্রুতা টের পাওয়ার আগেই নিথর পানিতে লক্ষ লক্ষ বল্লম বেঁধার তুমুল শব্দে প্রান্তর ভরে গেল। হাতের আগুনটা কিছুক্ষণ বৃষ্টির সাথে যুদ্ধ করে নিভে যেতেই আদিগন্ত অন্ধকার গ্রাস করল মফিজকে।…’

এই দিকচিহ্নহীন ঘুটঘুটে নিঃসীম অন্ধকারে মাছুয়া মফিজ এখন কোন দিকে যাবে? ঝড়-বৃষ্টি, অন্ধকার আর জলকাদাভরা প্রান্তরে একাকী লড়াইরত দুর্বল ক্ষুধার্ত মফিজ বারবার পথ হারায়। হাঁটুজল থেকে কোমরজলে গিয়ে পড়ে। আবার পথ বদলায়। কিন্তু বাড়ি ফেরার পথটি কিছুতেই খুঁজে পায় না। এভাবে নিশ্ছিদ্র অাঁধারের মধ্যে পথ খোঁজার মরিয়া চেষ্টা মফিজের যাপিত জীবনের প্রতীক হয়ে ওঠে। ‘কাঁয় কোন্ঠে আছেন বাহে-এ-এ-এ, আগুন দেখান’ কিংবা ‘কাঁয় কোন্ঠে আছেন বাহে-এ-এ-এ, আগায় আইস’ – প্রান্তর-বিদীর্ণ-করা মফিজের কণ্ঠের এই চিৎকার যখন কারো কাছেই পৌঁছায় না, যখন কারো কাছ থেকেই কোনো মানবিক সাড়া পাওয়া যায় না, তখন কল্পনায় সন্তানের ‘বাবা’ ডাক শুনে মফিজ তুমুল বেগে দৌড়াতে শুরু করে। ঝড়-বৃষ্টির আওয়াজ ছাপিয়ে জেগে ওঠে তার উদ্দীপ্ত ধাবমান পায়ের শব্দ। একজন সাধারণ গল্পকথকের হাতে ঘটনার সাদামাটা আনুপূর্বিক বর্ণনায় যা একটি সাধারণ গল্প হিসেবেই শেষ হতে পারত, কথনভঙ্গির অমেয় ঐশ্বর্যে মঞ্জু সরকারের কলমে তা-ই হয়ে উঠল এক অসামান্য সৃষ্টিকর্ম। এই ধরনের গল্প তার স্রষ্টাকে নিঃসন্দেহে নিয়ে গেছে সেই শৈল্পিক উচ্চতায়, যেখানে পৌঁছতে হলে দরকার মানুষের প্রতি সুগভীর মমত্ববোধ, সুতীক্ষ্ণ মেধা আর ভাষার পান্ডিত্যরহিত সেই সরল কারুকর্ম, যা আমাদের চারপাশের চেনা প্রকৃতির মতো সহজ, স্বতঃস্ফূর্ত এবং একই সঙ্গে বিস্ময়কর রকমের শক্তিশালী আর রহস্যময়। মফিজ আর কেবল গল্পের একটি চরিত্র হয়ে থাকে না, সে হয়ে ওঠে সব সংগ্রামী মানুষের জীবনচেতনার অংশ।

ঝুঁকিপূর্ণ 888sport slot gameে প্রমোদসঙ্গী গ্রন্থের (প্রকাশকাল ২০১২, বিদ্যাপ্রকাশ) ‘মরা নদীর ময়না’ আরেকটি অসাধারণ গল্প। সমাজ প্রচলের কলুষধারায় ব্যক্তিসত্তার নিপীড়ন ও বিচূর্ণী, অরক্ষিত ও বিপন্ন ব্যক্তিস্বাধীনতা এবং সেই সঙ্গে অন্ধ সামষ্টিক শক্তি, অপ্রশম্য উন্মত্ত জনতার হাতে ব্যক্তির সদাশয় ভাবালুতা ও অপরিণামদর্শী উপচিকীর্ষার করুণ পরিণতি বর্ণনা করা হয়েছে গল্পটিতে। দ্বান্দ্বিকতার চমৎকার ব্যবহার হয়েছে গল্পে। বহিরঙ্গের দিক থেকে প্রায় একই রকম আরেকটি গল্প ‘ছেলেধরা’ (মৃত্যুবাণ)। দুটি গল্পেই সামাজিক ভেদজ্ঞানহীন ভালোমানুষি ও পরোপকারের পরিণতি হয়ে ওঠে ভয়ঙ্কর। চরিত্রগুলো তাদের কথাবার্তা, চলাফেরা এবং ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ায় এতটাই জীবন্ত যে মনে হয় পাঠকের চোখের সামনেই ঘটনাগুলো ঘটছে। তবে দুই গল্পের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। এবং প্রকরণ ও বিভঙ্গে ‘মরা মাটির ময়না’ অবশ্যই ‘ছেলেধরা’র চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী। গল্পকারের অনন্য সমাজভাবনা ও তীক্ষ্ণ পর্যবেক্ষণশক্তির পরিচয় মেলে এ-দুটি গল্পে।

এবার আসি তাঁর সদ্য প্রকাশিত গল্পগ্রন্থ রূপান্তরের গল্পগাথা প্রসঙ্গে। বইটি সম্পর্কে পাঠকের তীব্র আগ্রহ ও কৌতূহলবোধ থাকা খুবই স্বাভাবিক। এটি তাঁর একাদশতম গল্পগ্রন্থ। এতে গল্প আছে মোট দশটি। শহর এবং গ্রাম, এ দুই পটভূমিতেই লেখা। বইটি হাতে নিয়ে প্রথম নয়টি গল্প টানা পড়ে নিলাম। শেষ গল্পটি, আয়তনে একটু বড়, পরের দিন পড়তে হয়েছে। মঞ্জু সরকার সিরিয়াস লেখক। তাঁর গল্পের প্লট উঠে আসে তাঁর সমাজভাবনার জমিন থেকে। এ-কারণে তাঁর লেখা পাঠকের ভাবনাকে উসকে দেয়। নতুন এই গ্রন্থটিতেও এসেছে সমকালীন সমাজের নানান সমস্যা ও সংকটের ছবি।

আপাতদৃষ্টিতে যা সামান্য এবং আমাদের দৃষ্টি এড়িয়ে যায়, বড় লেখকের চোখ তার মধ্যেও একটা গল্প আবিষ্কার করতে পারেন; সেই গল্পের মধ্য দিয়ে পাঠকের মনে একটা গুরুত্বপূর্ণ বার্তাও পৌঁছে যায় হয়তো। গ্রন্থভুক্ত প্রথম গল্প ‘টাকার উপরে মেয়েটি’ এরকমেরই একটি গল্প। ব্যাংকে ক্যাশ কাউন্টারে বসে যে মেয়েটি টাকা গোনে, ক্ষুদ্র ফার্নিচার ব্যবসায়ী আজমল টাকা জমা দিতে এসে কাজের প্রতি তার একাগ্র মনোযোগ দেখে এবং তার মধ্যে মেয়েটির প্রতি একধরনের ভালো লাগার বোধ তৈরি হয়। মিষ্টির প্যাকেট হাতে একদিন সে ওই মেয়েটির বাসায় গিয়ে হাজির। কৌতূহলী পাঠকদের জন্য গল্পের একটা অংশ এখানে উদ্ধৃত করছি।

‘স্বামী বেরিয়ে যাওয়ার পর মিষ্টির প্যাকেটগুলি নিয়ে ভিতরে যায় রেহানা। অসুস্থ লোকটা (রেহানার বাবা) আবার যন্ত্রণাকাতর চোখমুখ আজমলের দিকে একাগ্র করে। তাকে সান্ত্বনা-সহানুভূতি দেখানোর ভয়েই যেন আজমল অন্যদিকে তাকিয়ে থাকে। টাকা দিতে চাওয়ার আকস্মিক মহত্ত্বটা ভুল হলো কি না ভাবে। ভেতরের ঘর থেকে ভেসে আসা শিশুর কান্না শুনে চমকে ওঠে। – স্বামী, তার ওপর আবার বাচ্চাও আছে মেয়েটার? আশ্চর্য! দেখে তো একবারও মনে হয় নি।…’

গল্পকার এখানে কৃত্রিম কোনো পরিণতি সৃষ্টি করেননি। স্বভাবসুলভ শ্লেষ ও পরিহাসমূলক বর্ণনার মাধ্যমে যা হতে পারে বা হয় তাই তিনি বলেছেন; পাঠকের কাছে গল্পটা তাতে যথেষ্ট বিশ্বাসযোগ্য হয়ে ওঠে। তবে একজন সচেতন পাঠক গল্পপাঠশেষে এ-গল্পের নামকরণের মধ্যে একটা প্রতীকী বিষয় আবিষ্কার করতে চাইবেন বোধ করি। তাঁর ভেতরে এরকম প্রশ্ন জাগা অস্বাভাবিক নয় যে, মেয়েটি কি আসলে টাকার ওপরে উঠতে পেরেছে? তার মানে, সে কি অর্থের বা বিষয়-আশয়ের প্রলোভনকে ডিঙাতে পেরেছে, ব্যবসায়ী আজমলের কাছে যা মনে হয়েছিল? গল্পের শেষ দিকে আজমলের বিদায় নেওয়ার সময় তার উদ্দেশে মেয়েটির মৃদু সূক্ষ্ম হাসি এবং তাকে ‘মনে পড়লে আবার’ আসার আহবানের মধ্যে কোনো ইঙ্গিত কি লুকিয়ে আছে?

‘অশ্বশক্তি’ গল্পে দরিদ্র ভ্যানচালক, নাম হেকু, স্বপ্ন দেখে, ছেলেকে বিয়ে দিয়ে যৌতুকের টাকায় ব্যবসা করে সচ্ছল হবে। কিন্তু ছেলে বিয়েতে রাজি নয়। এখানে দুই প্রজন্মের মধ্যে চিন্তা-ভাবনার দ্বন্দ্ব ফুটিয়ে তোলা হয়েছে, যে-দ্বন্দ্বে পিতা পুত্রের কাছে হার মানে। কারণ পুত্রের স্বপ্ন আরো বড়। পিতার সামান্য সাধ পূরণে সে নিজের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাকে জলাঞ্জলি দিতে নারাজ। সময় ও সমাজের রূপান্তরে এভাবেই দুই প্রজন্মের মধ্যে দূরত্ব ও দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। ‘অশ্বশক্তি’ নিঃসন্দেহে এ-বইয়ের সেরা গল্প।

‘জান্তব’ গল্পে পারিবারিক সম্পর্কের যে-ছবি আমরা পাই, তা আমাদের পরিবারকেন্দ্রিক স্বপ্ন ও আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে কোনোভাবেই মেলে না। ভয়ানক স্বার্থপরতা, হিংসা, ঘৃণা আর অ888sport apk download apk latest version পারস্পরিক সম্পর্ককে একটা জান্তব রূপ দিয়েছে। পরিবারের ভেতরে পারস্পরিক অবিশ্বাস এবং সম্পর্কের ভাঙন-বর্ণনায় পারিবারিক মূল্যবোধের অবক্ষয়-চিত্র স্পষ্ট, যা বর্তমানের গুরুত্বপূর্ণ একটি সামাজিক সংকটের দিকে পাঠককে মনোযোগী করার চেষ্টা।

‘বিলবোর্ডে হুমায়ুন’ রাজনীতির বিসর্পিল পথে ক্ষমতাবান ও  দ্রুত ধনী হওয়ার চেষ্টায় সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে বিষ ছড়ানোর গল্প। ‘আত্মসমর্পণ’ গল্পের বিষয়-ভাবনাটা চমৎকার। স্বপ্নের দেশ আমেরিকা গমনের সুখস্বপ্নে বিভোর এক তরুণের স্বপ্নের ফানুসে উড়তে উড়তে হঠাৎ মাটিতে পতনের গল্প ‘স্বপ্নযাত্রা’ যথেষ্ট পরিহাস ও শ্লেষ মেশানো।

‘সাবিত্রী বালার শত্রুমিত্র’ গল্পে নিঃসঙ্গ বিধবা সাবিত্রী বালার অসহায়ত্বের সুযোগ গ্রহণে তৎপর যারা, ব্যক্তিস্বভাব ও সামাজিক অবস্থানভেদে তাদের উদ্দেশ্যের মধ্যে আছে বৈচিত্র্য। সবার ভেতরে ক্রিয়াশীল যে-লালসার তাড়না, তার মূল চারিত্র্য এক হলেও প্রকাশভঙ্গি নানান রকমের। সাবিত্রী যাদের শুভাকাঙ্ক্ষী মনে করে, তাদের মধ্যেও আছে সংগুপ্ত কিছু অভিলাষ। গোপন এসব শরীরী বাসনা বাস্তব প্রতিবন্ধকতার দেয়ালের সামনে দাঁড়িয়ে নানান সব ছিদ্রপথ খুঁজে বেড়ায় এবং ব্যর্থ হয়ে অপ্রত্যাশিত উদারতার আবরণে নিজেদের আসল চেহারা আড়াল করতে সচেষ্ট হয়।

‘ইব্রাহিম দারোগার শৌর্যবীর্য’ পুলিশ বিভাগে কর্মরত লোকদের দুর্নীতি, লাম্পট্য ও ভ্রষ্টাচারের কাহিনি। কর্মসূত্রে পরিবার থেকে দূরে অবস্থানকালে কাজের মেয়ের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তোলে ইব্রাহিম দারোগা। তার নিয়মিত গোপন যৌনাচারের প্রায় অবধারিত ফলাফল-প্রতিক্রিয়া থেকে পলায়ন বা নিজেকে রক্ষার জন্য ওই মেয়েটিকে ঘিরে সে যে-নাটক তৈরি করে, সেই নাটকের পটভূমি, পূর্বাপর এবং তার কুশীলব ও দর্শকদের নিয়ে লেখা গল্পটি বর্তমান সামাজিক দূষণের আরেকটি সত্যপাঠ।

‘নবিতুন বেওয়ার দুই আনা’য় নবিতুনের ছেলেমেয়েদের কাছে তার দাম তার হাতে-থাকা সম্পত্তির দামের সমান। ওই সম্পত্তির ভাগ নিয়ে তাদের ভেতর যে রেষারেষি চলে, তা প্রকাশ পায় মায়ের প্রতি তাদের প্রত্যেকের কৃত্রিম ভালোবাসা প্রদর্শনের প্রতিযোগিতার মধ্যে। এতে তাদের আসল উদ্দেশ্যটা আরো উৎকটভাবে প্রকাশ পায়। সম্পত্তির দখল নেওয়া এবং অন্যসব হিস্যাদারকে বঞ্চিত করার নিজ নিজ লক্ষ্যে ছেলেমেয়েদের প্রত্যেকে যখন তাকে প্ররোচিত করতে সচেষ্ট, ক্রুদ্ধ নবিতুন ঘোষণা দেয়, সম্পত্তি সে কাউকে দেবে না। কেবল নাতি আকরামের ব্যাপারে তার মন খানিকটা নরম। গল্পের এ-জায়গাটিতে লেখক যে-বক্রাঘাত ও পরিহাসের আশ্রয় নিয়েছেন, তা সিরিয়াস গল্পটির সঙ্গে সরস নতুন একটা মাত্রা যোগ করেছে। ‘সাবিত্রী বালার শত্রুমিত্র’, ‘জান্তব’ এবং ‘আত্মসমর্পণ’ গল্পে বর্ণনাত্মক ভঙ্গির ব্যবহার কাহিনিকে কিছুটা ধীরগামী করলেও এসব গল্পে কৌতূহলী পাঠকের জন্য যথেষ্ট উপাদান রয়েছে।

সমাজের ভেতরে রূপান্তরের প্রক্রিয়ায় যে নেতিবাচক উপাদানসমূহ প্রকট হয়, একজন সমাজ-সচেতন লেখক তাঁর লেখায় সেসবের ছবি তুলে না ধরে পারেন না। বর্তমান গ্রন্থভুক্ত গল্পগুলোয় মঞ্জু সরকারের কলমে এসব উপাদান ধৃত হয়েছে অনেকটা ফটোগ্রাফিক ইমেজে; এইসঙ্গে রূপান্তরের প্রক্রিয়ায় উদ্ভূত ব্যষ্টিক ও সামষ্টিক গরলের কিছু সরল চিহ্ন-ছবি ফ্রেমবন্দি হয়ে উঠল পাঠকদের জন্য।

পুনশ্চ : ছোটগল্প ও 888sport alternative link, কথা888sport live footballের এ দুই প্রধান শাখাতেই মঞ্জু সরকার সমান নৈপুণ্যে ক্রিয়াশীল রয়েছেন। অবিনাশী আয়োজন থেকে শুরু করে ঝুঁকিপূর্ণ 888sport slot gameে প্রমোদসঙ্গীর মতো অসাধারণ সব ছোটগল্পগ্রন্থের স্রষ্টা তিনি। তমস থেকে সদ্যসাম্প্রতিক অন্তর্দাহ – সমাজবাস্তবতার  নির্দয় ব্যবচ্ছেদ-ঘটানো অত্যুজ্জ্বল সব 888sport alternative linkের মধ্যেও তাঁর প্রণম্য শৈল্পিক সামর্থ্যের চিহ্ন এঁকেছেন।

তাঁর ছোটগল্প নিয়ে আরো বিশদ আলোচনা করার প্রয়োজন আছে। বিস্তারিত আলোচনা হওয়া দরকার তাঁর 888sport alternative linkগুলো সম্পর্কেও। বেঙ্গল পাবলিকেশন্স থেকে সম্প্রতি প্রকাশিত তাঁর মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক 888sport alternative link অন্তর্দাহ (বাংলা 888sport live footballের কৌতূহলী সব পাঠকের জন্য যা একটি অবশ্যপাঠ মনে করি) নিয়ে আলাদাভাবে অচিরেই আলোচনা করব।