মধুময় জীবনের পরিব্রাজক

দ্বিজেন শর্মা দীর্ঘ জীবন পেয়েছিলেন। দীর্ঘ জীবন সুখের হয় না – তিনি বলতেন : অনেক দিন বেঁচে থাকলে অনেক মৃত্যু দেখতে হয়। আটাশি বছরের জীবনে তিনি অনেক মৃত্যু দেখেছেন। মৃত্যুর সবচেয়ে বেদনাদায়ক দিক হলো বিচ্ছেদ। সে বিচ্ছেদ স্থায়ী, চূড়ান্ত, অপ্রতিকার্য। বন্ধুবৎসল মানুষটি বিচ্ছেদকে বড্ড ভয় পেতেন; তবু সেই ভয়ের ব্যাপারটাই তাঁর জীবনে বারে বারে ঘটেছে। একের পর এক বন্ধুর মৃত্যু দেখতে দেখতে তাঁর বয়স বেড়েছে। পঁচাশি পেরোলে চারপাশে তাকিয়ে দেখতে পেয়েছেন, সমবয়সী ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের কেউই আর নেই। এমনকি অনেক কম বয়সী, স্নেহভাজন ছাত্র কিংবা অনুরাগীর মধ্য থেকেও কেউ কেউ অকালে চলে গেছেন।

দ্বিজেন শর্মার লেখা শেষ বই মধুময় পৃথিবীর ধূলি হাতে নিয়ে প্রথমেই আমার মনে আসে মৃত্যুর কথা। কারণ, বইটি আলোর মুখ দেখার মাসচারেক আগে মৃত্যু এসে তাঁকে আমাদের মাঝ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে গেছে। যে-বিচ্ছেদকে তিনি ভয় পেতেন, তাঁর সঙ্গেই আমাদের সেই বিচ্ছেদ ঘটে গেছে। বইটি পড়তে পড়তে বারবার মনে হচ্ছিল নিজের জীবনের 888sport sign up bonus লিখতে বসে তিনি আসলে লিখেছেন তাঁর বন্ধুদের কথা। মা-বাবা ও ভাইবোনদের কথা বাদ দিলে তাঁর এই আত্মজীবনীর যতটা না নিজেকে নিয়ে, তার চেয়ে অনেক বেশি বন্ধুদের নিয়ে, অন্য মানুষদের নিয়ে। তাঁর বন্ধুদের নিয়ে বলা কথার মধ্যেই বলা হয়েছে সমাজের কথা, দেশের কথা, রাষ্ট্র ও রাজনীতির কথা।

১৯২৯ সালের ২৯ মে সিলেটের মৌলভীবাজারের বড়লেখার শিমুলিয়া গ্রামে তাঁর জন্ম। গত বছর ১৫ সেপ্টেম্বর গভীর রাতে 888sport appর এক হাসপাতালে তাঁর জীবনাবসান ঘটে। ৮৮ বছরের সুদীর্ঘ জীবনে তিনি অনেক কিছু দেখেছেন; অনেক রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ঘটনার তিনি প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণকারী ও নিবিড় পর্যবেক্ষক। তাঁর বিচরণ ও সক্রিয়তা বিস্তৃত ছিল সিলেট, করিমগঞ্জ, আগরতলা, কলকাতা, বরিশাল, 888sport app ও মস্কো পর্যন্ত। তাঁর জীবনের দীর্ঘ দুই দশক কেটেছে সোভিয়েত ইউনিয়নের রাজধানী মস্কো মহানগরে। সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক সমাজের সুখী ও সচ্ছল সত্তরের দশক থেকে শুরু করে নব্বইয়ের দশকের শুরুতে চূড়ান্ত ভাঙন পর্যন্ত তিনি মস্কোতে ছিলেন। তাঁর জীবনের শেষ পর্ব কেটেছে 888sport appয়, বিপুল কর্মযজ্ঞের মধ্য দিয়ে।

এই বিপুল বর্ণাঢ্য জীবনের অভিজ্ঞতা ও উপলব্ধির বয়ান রচনা করা সহজ নয়। তবু ছিয়াশি বছর বয়সে তিনি সেই কঠিন কাজে হাত দিয়েছিলেন; পৃথিবী ছেড়ে চলে যাওয়ার আগে কাজটি সম্পন্ন করেছেন। মধুময় জীবনের ধূলি নামে তাঁর জীবন888sport sign up bonus প্রকাশিত হয়েছে ২০১৮ সালের 888sport cricket BPL rateের বইমেলায়।

২০৪ পাতার বইটিতে যেন শিলায়িত হয়েছে তাঁর সুদীর্ঘ জীবনের বিপুল বিচিত্র অভিজ্ঞতা ও উপলব্ধি। বইটির প্রথম ষাট পৃষ্ঠা জুড়ে রয়েছে লেখকের শৈশব ও কৈশোরের কথা। এই অংশটি পড়ে মনে হয়, কৈশোর ছিল তাঁর জীবনের সবচেয়ে প্রিয় সময়। এ-কথার পক্ষে সমর্থন পাই তাঁর পূর্বপ্রকাশিত বই মম দুঃখের সাধনের একটি 888sport live থেকে। তিনি লিখেছেন : ‘তুরীয়ানন্দ অন্বেষী সাধু-সন্তরা যে জন্য প্রাণপাত করেন, তা সম্ভবত কৈশোরজীবনের মায়াবী সায়রে পুনঃগাহনের সহজসাধ্যতা, কেন না গোটা জীবদ্দশায় আর কখনই জগৎ আমাদের কাছে এতটা বর্ণময়-গন্ধময় স্বচ্ছ ও সমুজ্জ্বল থাকে না। আমাদের মতো সাধারণ মানুষেরাও বারেক সেই ভুবনে ফেরার আকাক্সক্ষায় তাড়িত হই, দৈবাৎ মুহূর্তকালের জন্য ফিরিও-বা, এবং তা জপতপ কিংবা নেশাদ্রব্য ছাড়াই, নেহাৎ সাদামাটা কোনো আলম্ব আঁকড়ে, কেন না ওই জীবনের কিছুটা জের তো আমাদের সত্তায় থেকেই যায় কোনো না কোনোভাবে।’ কিন্তু মধুময় পৃথিবীর ধূলিতে দ্বিজেন শর্মার আপন ‘কৈশোরজীবনের মায়াবী সায়রে পুনঃগাহন’ শুধু তাঁর ব্যক্তিগত আবেগ-অনুভূতি প্রকাশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। ভারতবর্ষের ইতিহাসের একটি নির্দিষ্ট কালপর্বে একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রা, বিশ্বাস, সংস্কার, সম্পর্কের ছবিও তাতে ফুটে উঠেছে। বিভাগপূর্ব ভারতবর্ষের আসাম রাজ্যের প্রত্যন্ত এক গ্রামে জন্মগ্রহণ ও বেড়ে ওঠার গল্প বলতে গিয়ে তিনি যে পরিবার ও গ্রামের ছবি এঁকেছেন, তা ক্ষুদ্র পারিবারিক ও গ্রামীণ পরিম-লের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেনি, তাতে ধরা পড়েছে সেই সময়ের সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আবহ।

তাঁদের পরিবারটি ছিল ব্রাহ্মণ, কিন্তু সে-পরিবারে ধর্মীয় গোঁড়ামির লেশমাত্র ছিল না। পঠন-পাঠনের প্রতি আগ্রহ ছিল। দ্বিজেন শর্মা লিখেছেন : ‘বাবার লাইব্রেরিতে গোটাপাঁচেক আলমারিতে বই ও পত্রপত্রিকা ঠাসা ছিল। রবীন্দ্র রচনাবলি সম্ভবত তখনও বেরোয়নি। বঙ্কিমচন্দ্র ও শরৎচন্দ্রের রচনাবলির সঙ্গে তাঁদের একক বইগুলিও ছিল। মীর মশাররফ হোসেনের বিষাদ সিন্ধু দেখেছি। মেঘদূত, রুবাইয়াত-ই-ওমর খৈয়াম, গীতিগোবিন্দ, দেওয়ান-ই-হাফিজ বইগুলি উজ্জ্বল ছবির জন্য ছিল আমার অদম্য আকর্ষণের কেন্দ্র। ডিটেকটিভ বইয়ে আগ্রহ ছিল বাবার। প্রতি মাসে একটি করে দীনেন্দ্র কুমার রায়ের রচনালহরীর বই আসত। এ ছাড়া আরও সিরিজ ছিল। সেগুলির দুটি বইয়ের কথা মনে আছে : নীলবসনা সুন্দরী ও রূপসী মরুবাসিনী। পত্রপত্রিকার মধ্যে উল্লেখ্য : সাপ্তাহিক দেশ, মাসিক প্রবাসী, ভারতবর্ষ, বসুমতী, ভারতী। বঙ্গদর্শন, আর্যাবর্ত, শনিবারের চিঠি এবং সাধনাও দেখেছি। নিজের জন্য একাধিক আয়ুর্বেদী পত্রিকা, মায়ের জন্য পুণ্য, বড়দার জন্য শিশুসাথী। আরও পত্রিকা ছিল, নাম মনে নেই। বাবা মৃত্যুর আগে পড়েছিলেন ওমর পাশা, বিশাল এক রহস্যোপন্যাস, শেষ করতে পারেননি, যতটুকু পড়েছিলেন সেটা আমি চিহ্নিত করে রেখেছিলাম।’

বাবা চন্দ্রকান্ত শর্মা ছিলেন ওই অঞ্চলের বিখ্যাত ভিষক; তাঁদের শিমুলিয়ার বাড়িটি আজো কবিরাজ বাড়ি নামে পরিচিত।

হিন্দু-মুসলমান, ধনী-দরিদ্র সকল শ্রেণির মানুষের কাছে অত্যন্ত প্রিয় ছিলেন কবিরাজ চন্দ্রকান্ত শর্মা। দ্বিজেন শর্মা লিখেছেন : ‘হিন্দু-মুসলমান, স্ত্রী-পুরুষ, ধনী-নির্ধন সব ধরনের রোগীই বাবার কাছে আসতেন। গাংকুলের এক মুসলমান রোগীকে দেখে বড়ই অবাক হতাম। মনে হতো, নরেন্দ্র দেব অনূদিত রুবাইয়াত-ই-ওমর খৈয়াম কাব্যের পাতা থেকে উঠে এসেছেন। মুখে ওই ছাঁদের সাদা লম্বা দাড়ি, তেমনি ধবধবে ফর্সা গায়ের রঙ, তখনকার খানদানি ঘরানার কেউ হবেন হয়তো। বোরখা পরা এক রোগী আসতেন সুজানগর থেকে পালকিতে। তাঁকে সুজানগরের বুবু বলে ডাকতাম। এসে সোজা চলে যেতেন ভেতরবাড়ি। আমাদের মাকে মা ডাকতেন। একবার তাঁর বাড়ি গিয়েছিলাম। খুব আদর করে নিজের বিরাট পালঙ্কে বসতে দিয়েছিলেন, নিজের তৈরি কেক খাইয়েছিলেন। বাবার মৃত্যুর পর বড়দার কাছেও আসতেন (তিনিও কবিরাজ হয়েছিলেন)। ততদিনে আমাদের আত্মার আত্মীয় হয়ে উঠেছেন।’

বইটির শুরুর দিকের কয়েকটি অধ্যায়ে লেখক তাঁর পরিবার, গ্রাম, আশপাশের জনপদ, সেখানকার মানুষের জীবনপ্রণালি, হিন্দু-মুসলমান সম্পর্ক ইত্যাদি কিছুটা বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেছেন। হিন্দু-মুসলমান সম্পর্ক, তাদের সম্প্রীতি দ্বিজেন শর্মার বিশেষ মনোযোগের বিষয় ছিল। এক জায়গায় তিনি লিখেছেন : ‘রশিদ আলীর বাড়ির পশ্চিমে ছিল গ্রামের একমাত্র মসজিদ। সকালে ছেলেমেয়েরা সুরেলা কণ্ঠে কোরান আবৃত্তি করত। আমি মুগ্ধ হয়ে শুনতাম। ওই সুরের একটা স্থায়ী যোগ ঘটে যায় আমার সত্তায়। এখন মনে হয়, ওই সুর আমার শ্রুতি ও মনন নির্মাণে একটা ভূমিকা রেখেছে।’

আর এক জায়গায় লিখেছেন, ‘নদীর ওপারের মুসলমান পরিবারগুলোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার মূলে ছিল নানা কারণ এবং মায়ের ভূমিকা। তিনি ভাবতেন মুসলমান সমাজ অধিক রক্ষণশীল ও শুদ্ধাচারী। মেজদা পাড়ার হিন্দুদের সঙ্গে, বিশেষত সাঝিপাড়ার ছেলেদের সঙ্গে মিশে সিগারেট খাওয়া শিখেছিলেন যা আমাদের পরিবারে নিষিদ্ধ। এ নিয়ে মা অনেক কষ্ট পেয়েছেন। আমাদের জমিজমার সবই ছিল নদীর ওপারে। শীতকালে ওখানকার গোঠেই আমাদের গরুগুলি দেওয়া হতো। মুসলমান পাড়ার ছেলেরা ছিল পাঠশালায় আমার সহপাঠী ও বন্ধু। এভাবেই ওখানকার মুসলমান পরিবারগুলির সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। মৌলভীবাড়ির মোস্তফা ছিল আমার সহপাঠী, তাদের রসুইঘরে আমার অবাধ যাতায়াত।’

ভারতবিভাগ ছিল দ্বিজেন শর্মার একটি বিশেষ মনোযোগের বিষয়। সেই প্রসঙ্গেও তিনি এ-বইতে আলোচনা করেছেন। বিভাগের ফলে করিমগঞ্জসহ পুরো আসাম ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়, কিন্তু তাঁদের গ্রাম ও আশপাশের অঞ্চল পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হয়। কিন্তু ১৯৪৭ সালে তাঁর অঞ্চলের মানুষের তেমন দেশান্তর ঘটে না। সেটা শুরু হয় ১৯৫০ সালে। এই সময় ‘ভৈরব পুলের ওপর কে বা কারা ট্রেন থামিয়ে হিন্দুদের মেরে মেঘনায় লাশ ফেলে দিল এবং ট্রেনটি করিমগঞ্জ পৌঁছলে শহরে হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গা বাধল। কেউ মারা গেল না, কিছু দোকানপাট পুড়ল। আমাদের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে বসবাসের ধারণাটি মুহূর্তে তছনছ হয়ে গেল। শুরু হয়ে গেল দেশান্তর যাত্রা। আমাদের গোটা গ্রাম দেশান্তরী হলো ত্রিপুরার ধর্মনগরে।’

কিন্তু দ্বিজেন শর্মার পরিবার দেশত্যাগ করল না। এ-বিষয়ে তিনি লিখেছেন, ‘মা গেলেন না। তাঁর কাছে চিঠি আসতে লাগল : চলে আসুন, মুসলমানের একটা ভালো বাড়ি আপনাদের জন্য আগলে রেখেছি, দেরি করলে হাতছাড়া হয়ে যাবে। মা এসব চিঠি পেলে হাসতেন এবং ছুঁড়ে ফেলে দিতেন। আমি তখন আমার স্কুল বড়লেখা পি সি হাইস্কুলে শিক্ষকতায় ঢুকে পড়েছি। নিজের স্কুলে 888sport apk পড়াই। স্টাফ রুমে শিক্ষকদের সঙ্গে চেয়ারে বসতে লজ্জা বোধ করি। যাতায়াতের সময় দেখি মানুষের ঢল, চলেছে সীমান্তের দিকে, মুখে কোনো উদ্বেগের চিহ্ন নেই, যেন যাচ্ছে আত্মীয়বাড়ি। যোগেশ পণ্ডিত, দিগিন্দ্র বাবু আমাকেসহ বাড়ি বাড়ি গিয়ে দেশে থাকার জন্য বোঝাতে লাগলেন। সবাই বলে যাবে না, কিন্তু পরদিনই লাপাত্তা। কেউ কিছু সঙ্গে নেয় না, গরু-ছাগল ছেড়ে, ঘরে জিনিসপত্র রেখে শেষরাত্রে উধাও হয়। মুসলমান প্রতিবেশীরা সেগুলি আগলে রাখেন। ইন্ডিয়া থেকেও মুসলমান উদ্বাস্তু আসা শুরু হয়ে যায়। বড় একটা দল কাঁঠালতলীতে পৌঁছায়। সাহায্যের জন্য গঠিত কমিটিতে আমি সেক্রেটারি। তাদের থাকার ও খাওয়ার যথাসাধ্য ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু বেশিদিন তাঁরা এদেশে থাকেননি। হিন্দুরাও ইন্ডিয়ায় না। নেহরু-লিয়াকত চুক্তির ফলেই 888sport free betলঘুরা যার যার দেশে ফিরে আবার থিতু হয়। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই শুরু হয় বিশেষত সীমান্ত এলাকায় সম্পত্তি বিনিময়ের হিড়িক। কিন্তু বিনিময়ের ব্যাপারটা আইনসিদ্ধ হলেও আদতেই ছিল অস্বাভাবিক ও জটিল। স্থানীয়রা চাইত না গ্রামে বিদেশিরা আসুক। উপরন্তু সম্পত্তির মালিকানায় নানা ফাঁকফোকর থাকত। ফলে সম্পত্তির দখল পাওয়া সহজ হতো না। স্থানীয়দের বিবাদ ও মামলা-মোকদ্দমার ঝামেলা শুরু হতো।’

দ্বিজেন শর্মা আগরতলার মহারাজা বীরবিক্রম কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করার পর কলকাতা যান চিকিৎসা888sport apk পড়ার উদ্দেশ্যে। কিন্তু ভর্তির সময় পেরিয়ে যাওয়ার ফলে তা সম্ভব হয়নি, তিনি কলকাতা সিটি কলেজে 888sport apkে স্নাতক পড়েন। এই সময়ের কলকাতার অভিজ্ঞতা তিনি একটি অধ্যায়ে বর্ণনা করেছেন। স্নাতক পাশ করার পর তিনি অল্প কিছু সময় করিমগঞ্জ কলেজে উদ্ভিদ888sport apkের ডেমোনস্ট্রেটর হিসেবে কাজ করেন। তারপর সংবাদপত্রে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখে বরিশাল চলে যান এই আশায় যে, সেখানে গেলে বঙ্গোপসাগর দেখতে পাবেন। কিন্তু বরিশাল গিয়ে জানতে পারেন, সাগর সেখান থেকে বহু দূরে। তবু তিনি আর সেখান থেকে ফেরেন না, কারণ বরিশাল শহরটা তাঁর ভালো লেগে যায়। তিনি ব্রজমোহন কলেজে উদ্ভিদ888sport apk বিভাগে ডেমোনস্ট্রেটর হিসেবে যোগ দেন।

বরিশালপর্ব তাঁর জীবনের খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা অংশ; সেখানেই তাঁর সাক্ষাৎ, মৃদু প্রণয় ও পরিণয় ঘটে দেবী চক্রবর্তীর সঙ্গে। ব্রজমোহন কলেজে ডেমোনস্ট্রেটরের চাকরি তাঁর ভালো লাগে না, কারণ ডেমোনস্ট্রেটরদের কাজ শুধু প্র্যাকটিক্যাল করানো, ক্লাসে পড়ানো নয়। এটুকু অতৃপ্তি ছাড়া তাঁর জীবনের বরিশালপর্ব ছিল আনন্দময়। তবে যেহেতু তরুণ ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গ তিনি পছন্দ করতেন এবং তাঁদের জ্ঞানের পথে উদ্বুদ্ধ করার আগ্রহ ছিল প্রবল, সেহেতু এক পর্যায়ে তিনি সিদ্ধান্ত নেন মাস্টার্স পড়বেন, পরিপূর্ণ শিক্ষক হবেন। তিনি উচ্চতর শিক্ষার জন্য 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ে উদ্ভিদ888sport apkে মাস্টার্স পড়তে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। সে-উদ্দেশ্যে বরিশাল ছাড়ার আগে বিএম কলেজের কর্তৃপক্ষ তাঁকে বলে, তিনি যেন মাস্টার্স শেষ করে বরিশালেই ফিরে যান এবং একই বিভাগে প্রভাষক পদে যোগ দেন। এজন্য কর্তৃপক্ষ তাঁকে পড়াশোনা চলাকালে বৃত্তি দেওয়ার প্রস্তাব করে। তিনি সে-প্রস্তাব গ্রহণ করেন এবং 888sport appয় চলে আসেন।

888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স পড়ার সময় তিনি দেশের বুদ্ধিবৃত্তিক জগতের মূলধারার সঙ্গে সম্পৃক্ত হন, প্রচুর বন্ধুবান্ধব জুটে যায়, যাঁরা সেকালে এবং পরবর্তীকালে খ্যাতি লাভ করেন। মাস্টার্স পাশ করার পর তিনি প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী আবার বরিশালে ফিরে গিয়ে ব্রজমোহন কলেজে যোগ দেন এবং শিক্ষক হিসেবে অচিরেই বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। ১৯৬২ সালে হামুদুর রহমান শিক্ষা কমিশনের বিরুদ্ধে দেশজুড়ে যে ছাত্র-আন্দোলন শুরু হয়, তিনি তাতে শরিক হন এবং একপর্যায়ে গ্রেফতার হয়ে যান। কিছু সময় কারাগারে কাটানোর পর তিনি বরিশাল ত্যাগ করেন, শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন 888sport appর নটর ডেম কলেজে। এই কলেজে তিনি সত্যিকারের শিক্ষকতার আনন্দ লাভ করেন।

১৯৭৪ সালে তিনি নটর ডেম কলেজের চাকরি ছেড়ে দিয়ে চলে যান মস্কো। সোভিয়েত সরকারের প্রকাশনা সংস্থা প্রগতি প্রকাশনের 888sport app download apk latest versionক হিসেবে সে-দেশে প্রায় দুই দশক অতিবাহিত করেন। তাঁর সক্রিয় কর্মজীবনের সবচেয়ে বড় অংশই কাটে সোভিয়েত ইউনিয়নে। আমার বিবেচনায় এটিই তাঁর জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পর্ব।

সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের সময় তিনি মস্কোতে ছিলেন। সোভিয়েত ব্যবস্থা সম্পর্কে তাঁর জানা ও বোঝার সুযোগ হয়েছে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে। এ-বিষয়ে তিনি একটি পূর্ণাঙ্গ বই প্রকাশ করেন সমাজতন্ত্রে বসবাস নামে। সম্ভবত সে কারণেই মধুময় পৃথিবীর ধূলি বইতে তিনি সোভিয়েতপর্ব নিয়ে বিস্তারিত লেখেননি।

দ্বিজেন শর্মা নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে এক দীর্ঘ জীবন অতিবাহিত করে গেছেন। দুঃখজনক ও হতাশাব্যঞ্জক অনেক কিছুই ঘটেছে সেই জীবনে। কিন্তু তিনি ছিলেন একজন শুভবাদী মানুষ; সব দুঃখ-বেদনা, স্বপ্নভঙ্গ ও হতাশা সত্ত্বেও এই পৃথিবী তাঁর কাছে মধুময় ছিল। যাঁরা তাঁকে শুধু প্রকৃতিবিদ হিসেবে জানেন, তাঁরা এ-বই থেকে তাঁর চিন্তা ও মনের আরো নানা দিকের খবর পাবেন। কিন্তু এ-বই শুধু তাঁর একক জীবনের গল্প নয়, আমাদের জাতীয় ইতিহাসের এক দীর্ঘ কালপর্বের নিবিড় বয়ানও বটে। আত্মজীবনীমূলক লেখায় সাধারণত যে আত্মকেন্দ্রিকতা লক্ষ করা যায়, দ্বিজেন শর্মার এ-বই তা থেকে অনেকাংশেই মুক্ত।