মনিরুজ্জামান স্যার : আমার বিশ্ববিদ্যালয়

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে ভর্তি হওয়ার পর প্রথম বর্ষের ক্লাসেই মনিরুজ্জামান স্যারকে প্রথম দেখি। লোক888sport live football পড়াতেন আমাদের। লোক888sport live football ও এর অন্তর্ভুক্ত নানান উপকরণের সংজ্ঞার্থ পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণ নিয়ে স্যারের ক্লাস। একেকটা পারিভাষিক শব্দের ভেতর দিয়ে একটানে গভীর, জটিল ও বিমূর্ত তাত্ত্বিক আলোচনায় ঢুকে পড়তেন স্যার। মুগ্ধ ও মগ্ন হয়ে স্যারের কথাগুলো শুনতাম। আজ থেকে দুই যুগ আগের সেই ক্লাসরুমে স্যারের তীক্ষè-পরিচ্ছন্ন উচ্চারণ আর দরদি কণ্ঠ এখনো কানে বাজে। এ-বিষয়ে পরে একটা বইও লিখেছিলেন স্যার, লোক888sport live footballের ভিতর ও বাহির শিরোনামে। সম্ভবত আমাদের পরীক্ষা শুরু হওয়ার আগেই বইটির প্রথম মুদ্রণ বেরোয়। দোকান থেকে কিনে, হাতে নিয়ে আমার তো আক্কেল গুড়ুম অবস্থা – এত মুদ্রণ প্রমাদে ভরা! মনিরুজ্জামান স্যারের মতো সূক্ষ্মদর্শী মানুষের হাত দিয়ে এটা নিশ্চয়ই হয়নি! পরে শুনেছিলাম, প্রকাশনা সংস্থার কম্পিউটার থেকে ফাইলটির সংশোধিত সর্বশেষ সংস্করণের ট্রেসিং প্রিন্ট না করে আগের কোনো সংস্করণের প্রিন্ট করায় এই অবস্থা। সংশোধিত রূপে বইটির আর কোনো মুদ্রণ বেরিয়েছিল কি না মনে পড়ছে না। বেরিয়ে থাকলেও আমি দেখিনি।

মনিরুজ্জামান স্যারের চোখ-কান কতখানি সূক্ষ্মবিচারী তার প্রকৃষ্ট প্রমাণ দেখেছি তাঁর সম্পাদিত নিসর্গ পত্রিকার ভাষাতত্ত্ব 888sport free betয়। স্যার এ-পত্রিকা সম্পাদনা করেছিলেন আমার জন্মের প্রায় সাত বছর আগে, বাংলা ১৩৮০ তথা গ্রেগরিয়ান ১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দে। একে বাংলা ভাষায় ভাষাতত্ত্ব বিষয়ক প্রথম গবেষণা পত্রিকা বলে জেনেছি। সেটাকে স্বচক্ষে দেখার সৌভাগ্য হলো খুব সম্ভবত ২০০৭ সালের মাঝামাঝি কোনো সময়ে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বাসায় একদিন ওই 888sport free betর কথা জিজ্ঞেস করলে স্যার ‘আমার কাছে একটা কপিই আছে’ বলে চট করে ওটা নিয়ে এসে আমার হাতে দিলেন। উত্তেজনায়, আনন্দে আমি শিহরিত। এতদিন ধরে এর নাম শুনেছি, এতে অন্তর্ভুক্ত নানান লেখার উল্লেখ নানা জায়গায় পেয়েছি, কিন্তু পত্রিকাটি খুঁজে কোথাও পাইনি; আর আজ এর জনয়িতা নিজের হাতে ধরে একে আমার দুই হাতে তুলে দিলেন! এই স্পর্শের, এই ঘ্রাণের, এই দেখার সুখের 888sport sign up bonus অভূতপূর্ব ও তুলনারহিত। কাজটা করার সময় এর পরিকল্পনা, বিষয় নির্বাচন থেকে শুরু করে লেখা সংগ্রহ, সম্পাদনা থেকে ছাপার সময় কীভাবে দিনের পর দিন ছাপাখানায় কাটিয়েছিলেন, কীভাবে বিশেষ হরফগুলো বানিয়ে নিয়েছিলেন – এসব নিয়ে অনেককিছু বললেন স্যার। মুগ্ধ হয়ে শুনলাম। আসার সময় জিজ্ঞেস করলাম, ওটা আমি নিয়ে গিয়ে ফটোকপি করে আবার ফেরত দিয়ে যেতে পারি কি না। স্যার বললেন, ‘এটা তুমি নিয়ে যাও। তোমার কাছেই থাক। এর সদ্ব্যবহার তুমিই করতে পারবে।’ আমার মতো অতি নগণ্য এক ছাত্রের ওপর স্যারের এমন প্রগাঢ় আস্থা আমাকে বিচলিত ও বিমোহিত করলো। আজো স্যারের সেই কথাগুলো কানে বাজে। নিজেকে স্যারের সেই আস্থার যোগ্য করে তুলতে চাই।

ক্লাসরুমে বসে মনিরুজ্জামান স্যারের কাছে ভাষাতত্ত্ব পড়ার সৌভাগ্য আমার হয়নি, আমাদের সিলেবাসেও ভাষার প্রায়োগিক দিকগুলোরই প্রাধান্য ছিল। ফলে নিজের যৎসামান্য পড়াশোনার ভিত্তিতে স্যারের সঙ্গে ব্যক্তিগত আলাপের ভেতর দিয়েই ভাষা বিষয়ে নিজের কৌতূহল নিবৃত্ত করতাম ও ভাষাতত্ত্বের নানা দিক ও দিগন্তের সঙ্গে পরিচিত হতে হতে ততোধিক কৌতূহলী হতাম। স্যারকে দেখতাম সবসময় কিছু-না-কিছু লিখছেন, ভাবছেন। যে-কোনো বিষয়ে জানতে চাইলে তুমুল উৎসাহ নিয়ে সেই বিষয়ের লেখাপত্র কোথায় কী আছে বলতেন, নিজের মূল্যায়ন ও মন্তব্য জুড়ে দিতেন। বাংলাভাষার ধ্বনিগুলো নিয়ে তাঁর শিক্ষক মুহম্মদ আবদুল হাইয়ের বিশ্লেষণ, মূল্যায়ন ও বাংলা ভাষাতত্ত্বে এর অবদানের কথা ইতিহাসের তথ্যপরম্পরার সঙ্গে ভাষাতাত্ত্বিক যুক্তিপরম্পরাযোগে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন আমাকে। জন্মসূত্রে বা শৈশবকাল কাটানোর সূত্রে চাটগাঁইয়াভাষী না হয়েও এ-ভাষার ধ্বনিগুলোকে যে তিনি খাঁটি চাটগাঁইয়া লোকের মতোই উচ্চারণ করতে পারেন, সেটা শুনে যারপরনাই মুগ্ধ হয়েছিলাম শুরুতে। মনে আছে, ‘তরে আআঁই ঠাঁইয়ত মারি ফেলাইয়ুম’ (‘তোকে আমি এই জায়গায়/ এই মুহূর্তে মেরে ফেলবো’) কথাটার উদাহরণ দিয়ে এতে ব্যবহৃত ঠ-এর ধ্বনিতাত্ত্বিক বর্ণনা দিয়েছিলেন কাছাকাছি 888sport app ধ্বনির প্রতিবেশে।

বাংলাভাষার ধ্বনিতত্ত্বে আবদুল হাইয়ের অবদানের যথাযথ ভাষাতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ ও মূল্যায়ন যে হয়নি, তা নিয়ে মনিরুজ্জামান স্যারের গভীর বেদনা দেখেছি বিভিন্ন সময়ের আলাপে ও স্যারের লেখাপত্রে। আমার সহপাঠী আরমানের বড়ভাই, সুলেখক ও গবেষক নিজামুদ্দিন জামি ভাই স্যারের তত্ত্বাবধানে আবদুল হাইকে নিয়ে পিএইচ.ডি পর্যায়ের গবেষণা শেষ করার পর মনে হয় স্যারের এই বেদনা কিছুটা হলেও প্রশমিত হয়েছিল। স্যার যখন তাঁর গোষ্ঠীপত্রিকা ও সাময়িকী, নদীতে মেঘের ছায়া, ইদানীং বিপন্ন বড়ো বইগুলোর কাজ করছিলেন তখন চেরাগীর মোড়ের কাছে কদম মোবারক এতিমখানা মার্কেটে ‘শব্দ888sport live chat’ নামে জামি ভাইয়ের যে ছাপার কাজ ও বিজ্ঞাপনী প্রতিষ্ঠান ছিল, সেখানে স্যারের সঙ্গে অনেকবার দেখা হয়েছে, নানান বিষয়ে আলাপ হয়েছে। নানান আকৃতির ও ধরনের, অনেক সময় এক পিঠ আগেই অন্য কাজে ব্যবহৃত, কাগজে ছোট ছোট হরফে সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম চিহ্ন-কণ্টকিত স্যারের হস্তাক্ষর তখনই প্রথম দেখি। গোষ্ঠীপত্রিকা ও সাময়িকী বইটা ২০০৬ সালে বেরোয়।

তথাকথিত প্রাতিষ্ঠানিকতাবিরোধীদের মুখে তখন মনিরুজ্জামান স্যারের এই কাজের বিরূপ সমালোচনা শুনেছি। স্যার বিশ^বিদ্যালয়ের অধ্যাপক হয়েও, প্রাতিষ্ঠানিক ও বড় কাগজের লেখক হওয়া সত্ত্বেও, ছোটকাগজ নিয়ে কেন কাজ করছেন, এটা তাঁর ক্ষেত্র না – এমন মন্তব্য সেই সময়ের, বিশেষত চট্টগ্রামবাসী, অনেক কবি-লেখক করেছিলেন। এগুলো যে স্যারকে আহত করেছে, সেটা স্যারের তখনকার কথা থেকে বুঝেছি; কিন্তু স্যার সেসব আঘাতকে স্বকর্মসম্পাদনের পথে শেষ পর্যন্ত বাধা হয়ে থাকতে দেননি। আঘাত তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্যায়তিক-প্রশাসনিক পরিবেশেও পেয়েছিলেন। তাঁর ছাত্র ও ছাত্রস্থানীয় শিক্ষকেরাও নিজেদের স্বার্থ ও খায়েশ সিদ্ধির সুবিধার্থে, বিশেষত স্যারের চাকরিজীবনের শেষদিকে, স্যারকে একেবারে কোণঠাসা করে ফেলেছিলেন। এটা স্যারকে ভেতরে ভেতরে যতই আহত করুক, আচরণে-কথায় সেইসব নঞর্থকতাকে খুব সামান্যই প্রকাশিত হতে দিয়েছেন। সত্যিকারের জ্ঞানসাধক, সমাজহিতৈষী মানুষ এমনই তো হন!  

নোয়ম চম্‌স্কির মিনিমালিস্ট প্রোগ্রাম অতি সামান্য বুঝে, ও বেশিরভাগই না বুঝে, পড়ছিলাম তখন। এ-নিয়ে, মূলত এর সমালোচনা করে, পিটার স্যুরেনের লেখা বইটা যখন পড়তে শুরু করি, মহা উত্তেজনায় স্যারকে টেক্সট মেসেজ দিয়ে সেটা জানিয়েছিলাম। কয়েক মিনিটের মধ্যে উত্তরে লিখলেন, আমি যেন পরবর্তী 888sport free bet নিসর্গের জন্য এই বইয়ের ওপর আলোচনা লিখি। নিসর্গ পত্রিকার নব পর্যায় শুরু করতে চেয়েছিলেন আমাকে সঙ্গে নিয়ে। পত্রিকায় কী কী থাকবে, কীভাবে থাকবে, এসবের লিখিত একটা খসড়া পরিকল্পনা তৈরি করে সবিস্তার আলাপও করেছিলেন; তবে শেষ পর্যন্ত এর বাস্তবায়ন করা হয়ে ওঠেনি।

মনিরুজ্জামান স্যারের সঙ্গে আমার এই যে ব্যক্তিগত নিবিড় যোগাযোগ, সেটা শুরু হয়েছিল মূলত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার ছাত্রজীবনের আর স্যারের শিক্ষকজীবনের একেবারে শেষের দিকে। প্রথম বর্ষে পড়ার সময় বছরখানেক স্যারের ক্লাসে নিয়মিত উপস্থিত থাকলেও শ্রেণিকক্ষে ছাত্র হিসেবে স্যার আমাকে তখন চিনতেন না। স্যার কখন থেকে আমাকে চিনলেন, সে এক নাটকীয় ও অবি888sport app download for androidীয় ঘটনা আমার জন্য। আমাদের দ্বিতীয় কি তৃতীয় বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষার সময়ের কথা। কী জন্য যেন লায়লা জামান ম্যাডাম আমার নাম জিজ্ঞেস করলেন। আমি নাম বলতেই ‘আরে, তোমাকে তো আমি চিনতাম না। গতকালকে মনিরুজ্জামান স্যার তোমাকে খুঁজতে খুঁজতে অস্থির! পরীক্ষা শেষ না করে কোথায় চলে গিয়েছিলে  তুমি? স্যার তো তোমাকে খুঁজতে বাথরুমের দিকে গিয়েছিলেন, মনে হয় ঝুপড়িতেও খুঁজে এসেছিলেন! আজকে তোমাকে কোনোভাবেই বেরোতে দেবো না। এইখানে রশি দিয়ে বেঁধে রাখবো!’ চেনার পর প্রথম কথাতেই স্নেহের, বাৎসল্যের এমন অধিকার ভীষণ আপ্লুত করলো আমাকে। পরীক্ষার হলে এভাবে কথা বলতে থাকলে অন্য পরীক্ষার্থীদের মনোযোগে বিঘ্ন ঘটতে পারে, আবেগের তোড়ে সেটারও যেন তোয়াক্কা করছিলেন না ম্যাডাম! ওইদিন বুঝতে পেরেছিলাম শিক্ষক ও মানুষ হিসেবে কত বড় মনিরুজ্জামান স্যার!

আমাদের বাংলা বিভাগের প্রায় সকল শিক্ষকের শিক্ষক ছিলেন মনিরুজ্জামান স্যার। যতদূর মনে পড়ে, প্রথম বর্ষের পরের বছরগুলোতে তাঁর ক্লাস আমাদের ব্যাচ আর পায়নি। তবে স্যারের বক্তৃতা শুনতাম নানা সভা-সেমিনারে। একবার অধ্যাপক উইলিয়াম রাদিচেকেও নিয়ে এসেছিলেন আমাদের ক্লাসে। যতটুকু মনে পড়ে, অধ্যাপক রাদিচে তখন শ্রীচৈতন্যের বিষয়ে কিছু একটা কাজ করছিলেন এবং সেই বিষয়ে আমাদের বলেছিলেন। সম্ভবত ২০০৩ সালের প্রথমার্ধে অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী তাঁর সম্পাদিত নতুন দিগন্ত পত্রিকার প্রথম বর্ষ দ্বিতীয় 888sport free betয় ‘বাংলা বানানে অন্যায় হস্তক্ষেপ’ নামে একটা 888sport live লেখেন। ওটা পড়ার পর কয়েক সপ্তাহের মধ্যে এর একটা সমালোচনা লিখি ‘বাংলা বানানে অন্যায় হস্তক্ষেপ : একটি পাঠ’ শিরোনামে। নানান প্রতিকূলতা পেরিয়ে অবশেষে লেখাটা ছাপা হয় বিভাগের প্রিয় বড় ভাই রুদ্র অনির্বাণ-সম্পাদিত আগুনখোলা কাগজে, ২০০৫ সালের মার্চ মাসে। সপ্তাহখানেকের মধ্যে এর একটা কপি স্যারের হাতে দেওয়ার জন্য স্যারের বাসায় গিয়েছিলাম। সেটাই ব্যক্তিগতভাবে স্যারের কাছে প্রথম যাওয়া। ছাত্র হিসেবে নিজের পরিচয় দিয়ে লেখাটার কথা বলে পত্রিকাটা স্যারের হাতে দেওয়া আর টুকটাক স্যারের দুয়েক কথার উত্তর দেওয়া – মাত্র এটুকুর ভিত্তিতে মনিরুজ্জামান স্যার যে আমাকে শুধু মনেই রাখেননি, আমাকে পরীক্ষার হলে না দেখে এতখানি উদ্বিগ্ন হয়েছিলেন, আমাকে খুঁজতে রীতিমতো কলাভবন, ঝুপড়ি চষেছেন, সেই ঘটনা আমার মনে গভীরভাগে দাগ কেটে আছে।

২০০৪ সালের ২৭শে ফেব্রুয়ারি রাতে 888sport appয় বাংলা একাডেমির বইমেলা থেকে বাসায় ফেরার পথে আমাদের প্রিয় লেখক অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদের ওপর ভয়ঙ্কর আক্রমণ হয়। হুমায়ুন আজাদ বাঁচা-মরার সন্ধিক্ষণে ছিলেন, প্রায় সবাই ধরে নিয়েছিলেন তিনি বাঁচবেন না। খবর পেয়ে রুদ্র ভাইয়ের নেতৃত্বে মূলত আমাদের নিয়মিত 888sport live football আড্ডার সাথিরা মিলে তৎক্ষণাৎ আমাদের আক্রান্ত হৃদয়ের আর্তনাদ ও ক্ষোভ জানিয়ে ছোট ছোট লেখা লিখি ও একপাতার কারক পত্রিকার দ্বিতীয় 888sport free bet বের করি। সকালে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে একটা প্রতিবাদ মিছিল বের হয়। থমথমে, আতঙ্কভরা সেই পরিস্থিতিতে প্রগতিশীল হিসেবে পরিচিত অনেক শিক্ষককেই দেখেছি কুণ্ঠিত, দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে গুটিয়ে যেতে। মনিরুজ্জামান স্যারকে দেখলাম নির্ভয়ে, নিঃসংকোচে, দৃপ্ত পায়ে হেঁটে এসে ব্যানার ধরে দাঁড়াতে। এর আগ পর্যন্ত জ্ঞানতাপস, পণ্ডিত ও শিক্ষক হিসেবে স্যারের প্রতি ছিল 888sport apk download apk latest version, আর সেদিনের সেই মুহূর্ত আমার ভেতরে সেটাকে পরিণত করলো ভক্তিতে।

হুমায়ুন আজাদের ভাষাতাত্ত্বিক কাজগুলো নিয়ে স্যারের সঙ্গে কথা হয়েছে বেশ কয়েকবার। চম্‌স্কীয় রূপান্তরমূলক সঞ্জননী ব্যাকরণের তত্ত্বীয় ধারায় বাংলাভাষায় সর্বনামীয়করণের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে হুমায়ুন কবির (‌‘হুমায়ুন আজাদ’ নাম নেওয়ার আগের নাম, পিএইচ.ডি থিসিসে এই নামই ব্যবহার করেছিলেন) যে এ-তত্ত্বের বিকল্প হিসেবে উত্থাপিত ফিলমোরীয়
কারক-তত্ত্বেরও শরণ নিলেন – সে-ব্যাপারে মনিরুজ্জামান স্যারের কাছেই প্রথম জেনেছি। যতদূর মনে পড়ে, এ-ব্যাপারের মূল আলাপটা স্যার তুলেছিলেন আলম খোরশেদ-সম্পাদিত বিশদ সংবাদ পত্রিকার ‘বিশদ আড্ডা’ বিভাগের জন্য, যখন স্যারের সাক্ষাৎকার নিচ্ছিলাম তখন। এ-পত্রিকার সাক্ষাৎকারগুলো মূলত আলম ভাই-ই নিতেন, আমি দুয়েকটার বেশি প্রশ্ন করতাম না; কিন্তু মনিরুজ্জামান স্যারের সাক্ষাৎকারটা নেওয়ার জন্য আলম ভাই আমাকে একা পাঠালেন এবং কারণ হিসেবে বলে দিলেন, এর জন্য ‘তুমিই যোগ্যতম’! এটাকে আলম ভাইয়ের মহানুভবতা ও স্বভাবসুলভ অচিকিৎস্যরূপ সদর্থক আশাবাদিতা বলেই চিহ্নিত করি। মনিরুজ্জামান স্যারের সেই সাক্ষাৎকার ‌‘বিশদ বাঙলা’র ঘরোয়া কাগজ বিশদ সংবাদ-এর সপ্তম 888sport free betয় ছাপা হয়, ২০০৭ সালের নভেম্বরে। কয়েক মাস পরে হুমায়ুন আজাদের ৬১তম জন্মদিনকে সামনে রেখে আলম ভাই ‘বিশদ বাঙলা’য় ‘হুমায়ুন আজাদ স্মারক বক্তৃতা’র আয়োজন করলেন। ২৪শে এপ্রিল ২০০৮ তারিখে দেওয়া মনিরুজ্জামান স্যারের সেই বক্তৃতা মাসখানেকের মধ্যে ভাষা, সংস্কৃতি, প্রগতি শিরোনামে বিশদ বাঙলা থেকে পুস্তিকা আকারে প্রকাশ করি।

মনিরুজ্জামান স্যারের সুগভীর পাণ্ডিত্য, উপভাষা গবেষণায় মৌলিক অবদানের কারণে ভাষা888sport apkের জগতে তাঁর বিশ্বজোড়া খ্যাতি, 888sport live footballিক ও 888sport live football-বিশ্লেষক হিসেবে বাংলাভাষার 888sport live footballজগতে তাঁর দিগন্তবিস্তারী সুনাম – এতকিছুর ভেতরে আমার মতো অকিঞ্চিৎকর এক ছাত্রের নেওয়া একটুখানি সাক্ষাৎকার আর আলম ভাইয়ের উদ্যোগে বিশদ বাঙলা থেকে স্যারের বক্তৃতার ওই এক চিলতে পুস্তিকা প্রকাশ – আমাদের এইটুকু প্রয়াসও স্যারকে যে কতখানি খুশি করেছিল, সেটা দেখে বুঝেছিলাম সত্যিকারের মহৎ ব্যক্তিত্ব শিশুসুলভ সারল্য ও চাঞ্চল্যকে কখনোই হারান না।

স্নাতকোত্তর উত্তীর্ণ হওয়ার পরে, ২০০৮ সালের শেষার্ধে, ভাষা নিয়ে গবেষণা করার জন্য যখন নানা বিষয়ের কথা ভাবছি, কার তত্ত্বাবধানে করতে পারবো সেসব নিয়ে জল্পনা-কল্পনা করছি, তেমন সময়েও মনিরুজ্জামান স্যারের সঙ্গে ভাষাতত্ত্বের অনেক বিষয়ে আলাপ করেছি, সাক্ষাতে ও টেলিফোনে। একদিন খুব আবেগাপ্লুত হয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেছিলেন, ‘আমার খুব ইচ্ছা ছিল তোমাকে দিয়ে গবেষণাকাজ করানোর, কিন্তু 888sport appsে আমাদের এমনই দুর্ভাগ্য দেখো, যেই সময়ে আমার গবেষণা তত্ত্বাবধান করার অফুরন্ত অবসর, সেই সময়েই আমি আর সেটা করাতে পারছি না!’ স্যারের তত্ত্বাবধানে ভাষাতত্ত্বের কোনো সুনির্দিষ্ট বিষয়ে কোনো গবেষণাকাজ করা আমার হয়নি, কিন্তু পরের এক দশকে স্যার শুধু ভাষাতত্ত্বেরই নন, 888sport live footballসহ সকল মানবিকী ও সামাজিকী বিদ্যার বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে উঠেছিলেন। অধ্যাপক মনিরুজ্জামান তাই আমার এক বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম।  

আমার আরেক বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম মনসুর মুসা। কম্পিউটারে বাংলাভাষা প্রক্রিয়াকরণ বিষয়ে কাজ করবো বলে মোটামুটি ঠিক করার পর মনিরুজ্জামান স্যারকে ফোন করলাম এক রাতে। আমার কথা মোটামুটি শেষ হওয়ার পর স্যার সিদ্ধান্ত দিলেন এ-বিষয়ে মনসুর মুসাই হতে পারবেন যোগ্যতম তত্ত্বাবধায়ক। তখন পর্যন্ত মনসুর মুসা স্যারকে ব্যক্তিগতভাবে চিনি না, শুধু তাঁর লেখা পড়েছি আর নানাজনের কাছ থেকে তাঁর সম্পর্কে শুনেছি। ‘মনসুর মুসা তোমাকে আধুনিক ভাষা888sport apkের পুরো জগৎটা ঘুরিয়ে নিয়ে আসতে পারবে’ বলে মিষ্টি কৌতুকের সুরে যোগ করলেন, ‘তুমি মনসুর মুসাকে ফোন করো। তোমার প্রস্তাব শোনার পরেও যদি সে তোমার সুপারভাইজার না হতে চায়, তাহলে বলবে তুমি চাটগাঁর ছেলে, তাতেও রাজি না হলে বলবে তুমি মনিরুজ্জামানের ছাত্র – এরপর দেখি সে রাজি না হয়ে কই যায়!’ সম্ভবত ওই রাতেই মনসুর মুসা স্যারের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছিলাম এবং পরবর্তী কয়েক বছরে মনসুর মুসা স্যার হয়ে উঠলেন আমার আরেক বিশ্ববিদ্যালয়।

কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারের পাশ ঘেঁষে 888sport app বিশ^বিদ্যালয়ের শহিদ মিনার আবাসিক এলাকার যে-বাসায় মনসুর মুসা স্যার থাকতেন, ২০০৯-১০ সালে যেখানে আমার নিয়মিত যাতায়াত শুরু হলো স্যারের তত্ত্বাবধানে পরিকল্পিত গবেষণাকাজের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে, সেই একই বাসায় যে একসময় মনসুর মুসা স্যারের শিক্ষক, মনিরুজ্জামান স্যারেরও শিক্ষক, ও পরবর্তীকালে শ্বশুর, ধ্বনি888sport apkী আবদুল হাইও থাকতেন, সেই কথা মনসুর মুসা স্যার পরম আবেগের সঙ্গে বলেছিলেন এক সকালে। কিছুদিনের মধ্যে এক সন্ধ্যায় কী একটা ব্যাপারে অল্প সময়ের জন্য মনিরুজ্জামান স্যার ওখানে এলেন। গুরুর গুরুসহ তাঁদেরও গুরুর ভূতপূর্ব নিবাসে আমার দুই বিশ্ববিদ্যালয়কে একসঙ্গে কাছে পাওয়ার সেই 888sport sign up bonus অমূল্য, জীবন ও জগতের আর কোনো কিছু দিয়ে তা প্রতিস্থাপনযোগ্য নয়।

মাঝে আমি 888sport app থেকে মেলবোর্নে স্থানান্তরিত হলে মনিরুজ্জামান স্যারের সঙ্গে যোগাযোগে বেশ কিছুদিনের জন্য ছেদ পড়ে। 888sport appয় যখনই যাই চেষ্টা করি স্যারের সান্নিধ্যে যতটা পারি সময় কাটাতে। আমার 888sport appর ডেরা মনজুর সাকলায়েন ভাইয়ের বসুন্ধরা আবাসিকের বাড়ি থেকে ফোন করে স্যারের ধানমন্ডির বাড়ির ঠিকানা যেদিন নিলাম, সেদিনের কথাও কানে বাজে। বলেছিলাম, ‘স্যার, এই যে আমি এতদিন আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করি নাই, এইটার কী শাস্তি দেবেন আমাকে?’ স্যার বললেন, ‘তুমি আজকে দুপুরে আমার বাড়িতে এসে আমার সঙ্গে খাবে, এটাই তোমার শাস্তি!’ সেদিন দুপুরে ধানমন্ডি ৯/এ সড়কের সেই বাড়িতে স্যার আর স্যারের জীবনসঙ্গিনী – হাসিন জাহান, বাংলাভাষার শ্রেষ্ঠ ধ্বনিতত্ত্ববিদ আবদুল হাইয়ের বড় মেয়ে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের নিপবন শিশু বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষিকা ছিলেন – দুজন দুপাশে বসে, আমাকে মাঝখানে বসিয়ে, নানান গল্প-খুনসুটি সহযোগে, পরম মমতাভরে যেভাবে খাইয়েছিলেন, সেই দৃশ্য আজ চোখের জলে ভাসছে। এরও অনেক বছর পরে জেনেছি, এই দম্পতির বিয়ে পড়িয়েছিলেন স্বয়ং ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্‌!

২০১৮ সালের মে মাসের ১০ তারিখে সাকলায়েন ভাইয়ের ছেলে দিহান সাকলায়েন ও তরুণ live chat 888sport-নির্মাতা বায়েজিদ নিলয়কে সঙ্গে নিয়ে প্রথমবারের মতো যাই নরসিংদীর রায়পুরার আদিয়াবাদ গ্রামের সেই বাড়িতে, যে-বাড়িতে আমার জন্মের বহু বছর আগে মনিরুজ্জামান স্যারেরই হাতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ‘আদিয়াবাদ 888sport live footballভবন ও ভাষাতত্ত্ব কেন্দ্র’, যে-বাড়িকে ঘিরে ফি-বছর আয়োজিত হতো মণি মেলাসহ কত কত সামাজিক-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, যেসবের শুরু স্যারেরই হাতে গড়া ‘পাইওনিয়ার্স ক্লাব’ থেকে, যে-ক্লাবের লোগো নিসর্গ পত্রিকায় খচিত দেখেছি বহুবছর আগে, যে-ক্লাবের কথা উঠলেই স্যারের দু-চোখ উজ্জ্বল হয়ে উঠতো, স্বপ্নালু হয়ে উঠতো! নিজে যেতে পারেননি, কিন্তু বাড়ির ভাতিজা-ভাতিজি, নাতি-নাতনি, আর পাশের প্রাথমিক বিদ্যালয় ও সামান্য দূরের মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বলে সব ব্যবস্থা করে রেখেছিলেন। আমাদের স্যারের প্রতিষ্ঠা করা 888sport live footballভবন ও পার্শ্ববর্তী রেড ক্রিসেন্ট দাতব্য চিকিৎসাকেন্দ্রসহ আদিয়াবাদের স্কুলগুলো ঘুরে দেখানোর দায়িত্ব দিয়েছিলেন প্রিয়তমা নাতনি, বাড়িতে তাঁর নিত্যসহচরী সামান্তাকে, যে কি না স্বর্ণকিশোরীর পোশাক পরা অবস্থায় জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে সংবর্ধনা নেওয়া শেষ করে দৌড়াতে দৌড়াতে হাঁপাতে হাঁপাতে হাজির। স্যার যেদিন আমাদের ছেড়ে চিরতরে চলে গেলেন (২৭ শে আগস্ট ২০২৪ খ্রি.) সেদিন এই রিদ্ধিয়া অর্ষা সামান্তার সঙ্গেই কথা হচ্ছিল স্যারকে নিয়ে, হোয়াট্‌স্‌অ্যাপে। অনেক কথার শেষে আপাতত বিদায় নেওয়ার আগে লিখেছিলাম, ‘মাসখানেকের মধ্যে দেশে আসবো। স্যার যেন তখনো থাকেন!’ এর ঠিক পনেরো মিনিট পরে সামান্তা লিখলো, ‘আংকেল, দাদা মারা গেছে।’ এই কথাটার সঙ্গে স্বাভাবিক হতে এখনো পারিনি। হয়তো পারবো না কোনোদিন!

করোনাভাইরাসজনিত লকডাউনের সময়ে আদিয়াবাদে নেওয়া মনিরুজ্জামান স্যারের সামাজিক উদ্যোগগুলোর সঙ্গে সাংগঠনিকভাবে আরো বেশি একাত্ম হই। স্যার 888sport appয়, আমি মেলবোর্নে। আমাদের ডাকে সাড়া দিয়ে 888sport live football ও ভাষার প্রতি প্রেম ও দায়বোধ আর স্যারের জ্ঞানের ও কর্মের প্রতি 888sport apk download apk latest version-ভক্তি থেকে আদিয়াবাদ 888sport live footballভবন ও ভাষাতত্ত্ব কেন্দ্র পরিবারের সক্রিয় সদস্য হন অস্ট্রেলিয়ানিবাসী বাংলা 888sport live football ও ভাষাসেবী আমার বন্ধু-স্বজনেরা: বর্ণালী সাহা, জহিরুল মল্লিক জুয়েল, ওয়াসিম আতিক কিশোর, মোয়াজ্জেম আজিম, প্রভাত ঘোষ, মুক্তিব্রত দাশ আর আশরাফুল আজাদ। দীর্ঘ দীর্ঘ ফোনালাপের আর গুগল টকের আঙিনার আনুষ্ঠানিক সভাসমূহের মারফতে স্যারের সঙ্গে বাড়তে থাকে 888sport live footballভবন পরিবারের উদ্যোগ-আয়োজনের আলাপ। একসময় নিজের ‘ব্রেইন চাইল্ড’ (এই শব্দবন্ধ তাঁরই) ‘আদিয়াবাদ 888sport live footballভবন ও ভাষাতত্ত্ব কেন্দ্রে’র সমস্ত দায়িত্ব আমার ওপর ন্যস্ত করেন। কী সুন্দর করেই না বলেছিলেন, ‘আজকে থেকে 888sport live footballভবনের পক্ষে তুমি যা বলবে, সেটাই আমার কথা। তোমাদের নেওয়া সিদ্ধান্তই আমার সিদ্ধান্ত।’

মনিরুজ্জামান স্যারের মৃত্যুর দিনকয়েকের মধ্যেই স্যারের ছেলে মুহাম্মদ শামীমুজ্জামান তাঁর পিতার হোয়াট্‌স্‌অ্যাপ থেকে মেসেজ দিয়ে জানালেন, আদিয়াবাদ 888sport live footballভবন ও ভাষাতত্ত্ব কেন্দ্রকে ঘিরে যে-স্বপ্নগুলোকে স্যার আমৃত্যু লালন করেছেন, সেগুলো বাস্তবায়ন করতে চান তিনি। সামান্তাও জানিয়েছে তার দাদার অন্তত নিসর্গবার্তা পত্রিকাটা চালিয়ে যেতে চায় সে। বিলম্বে হলেও স্যারের পিএইচ.ডি থিসিস গ্রন্থাকারে প্রকাশ চাই আমি। সকলের আন্তরিক সহযোগে স্যারের সমাপিত কর্মের যোগ্য মূল্যায়নের সুযোগ সৃষ্টি, আর অসমাপিত থেকে যাওয়া কর্মের সুষ্ঠু সম্পাদনার মাধ্যমেই সম্ভবপর হবে স্যারের 888sport sign up bonusর প্রতি আমাদের সত্যিকারের 888sport apk download apk latest versionর্ঘ্য নিবেদন।