মহুয়ার সঙ্গে আমার দাম্পত্য কলহের অন্তত আশি ভাগ জুড়ে রয়েছে মমতাজ মহল।
এক বা দুদিনের কলহের আশি ভাগ নয়। একত্রিশ বছর ধরে যত কলহ হয়েছে তার আশি ভাগ। ঝগড়াটা যেভাবেই শুরু হোক, এর উপসংহারে মমতাজ মহল থাকতেই হবে। আমাদের বিয়ের দ্বিতীয় বছরের শুরুতে এক রাতে খাওয়ার সময় হেঁচকি ওঠে। মহুয়া হেঁচকিটাকে খুব সিরিয়াসলি নেয়।
আমি বললাম, ও কিছু না, দু-এক মিনিটের মধ্যেই সেরে যাবে। যখন ছোট ছিলাম হেঁচকি উঠলে মা বলত, কী চুরি করে খেয়েছিস?
মহুয়া বলল, আমার শাশুড়ি তার ছেলেকে ঠিকই চিনেছেন। সেজন্যই চুরির কথা বলেছেন। এখন তুমি বলো, মমতাজ মহলের কোন 888sport sign up bonusটা তোমার হঠাৎ মনে পড়ল?
আমি বলি, কী আশ্চর্য! এখানে মমতাজ মহল আসবে কোত্থেকে? খাবারের কোনো একটা ছোট্ট পার্টিকল শ্বাসনালিতে খোঁচাটোচা দিয়েছে, তাই। একটু সায়েন্টিফিক্যালি চিন্তা করলেই পারো। হেঁচকি তো তোমারও উঠতে পারে।
মহুয়া বলল, তুমি আমাকে সায়েন্স শেখাচ্ছ। আমি তোমার এসএসসি পরীক্ষার মার্কশিট দেখেছি। বায়োলজিতে তুমি পেয়েছ ফর্টি সেভেন। আর আমি এক নম্বরের জন্যে লেটার পাইনি। আমি পেয়েছি সেভেন্টি নাইন। কাজেই আমাকে সায়েন্স শেখাতে এসো না।
আমাদের একত্রিশতম বিয়েবার্ষিকীটা প- হয়ে গেল মহুয়ার কারণেই। বলল, কেকটেক কিনে চায়নিজ খাইয়ে পয়সা নষ্ট করতে যেও না। তাতে তোমার তাজমহল তৈরির টাকায় হাত পড়ে যাবে।
আমাদের বিয়ের তৃতীয় বছরের শুরুতে জীবনে প্রথম বিদেশে যাই। আমাদের দুজনের জন্যেই প্রথম। বিদেশ মানে সুইজারল্যান্ড, কানাডা এসব নয়। আমরা ভারতে যাই। টাকা বাঁচাতে পুরো পথ পেস্ননে না গিয়ে ঠিক করি শুধু কলকাতা পেস্ননে যাব, কলকাতা থেকে পেস্ননে ফিরব, আর দিলিস্ন আগ্রা যেখানেই যাই, দূরে হলে ট্রেনে নতুবা বাসে। তাতে দেশটাও দেখা হবে।
রাজধানী এক্সপ্রেসে দিলিস্ন। 888sport app থেকে নেওয়া পরামর্শ মেনে দিলিস্ন স্টেশনে দুজনের জন্য তিনদিনের প্যাকেজ ট্যুর বুক করে নিই। শুধু বুক নয়, আগাম টাকাও পুরোটাই দিতে হয়। স্টেশনের ধারেকাছে আমরা থাকব, পরদিন সকাল ৮টায় স্টেশনের একপাশ থেকে কলম্বাস এক্সপেডিশন নামে ট্যুর অপারেটরের এয়ার কন্ডিশন্ড গাড়িতে উঠব।
প্রথম দিনটা বেশ কাটল। মহুয়া বলেই ফেলল, দারুণ লাগছে। আমি কিন্তু আর একবার দিলিস্ন আসব।
আমি বলি, আবার কিছু টাকা জমুক।
মহুয়া বলে, তুমিও তো অনেক খাটাখাটুনি করো। তোমারও তো একটু ব্রেক দরকার।
আমি বলি, কী এমন খাটুনি। সবাই বলে কলেজে মাস্টারি করাটাই নাকি সবচেয়ে আরামের। আমারটা বেসরকারি কলেজ। চাকরি হয়েছে ধরাধরিতে।
মহুয়া বলে, তবু। ব্রেইনকেও তো একটু রেস্ট দেওয়া দরকার।
প্যাকেজের দ্বিতীয় দিনের বড় আকর্ষণ আগ্রার তাজমহল দেখা। মহুয়া কলকাতায় নেমেই আমাকে বলেছে, ইন্ডিয়ায় তো আর তোমার ফ্যামিলির মুরবিবদের সঙ্গে আমার দেখা হচ্ছে না। কাজেই শার্ট পরলে কেউ মন্দ কিছু বলবে না। দুটো শার্ট এনেছি। মেয়েদের শার্ট, বুকের কাছে দুদিক থেকে দুটো এক্সট্রা সেলাই। আমি বলি, খুব ভালো করেছ। আমিও একটা থ্রি-কোয়ার্টার প্যান্ট এনেছি, একটা হ্যাটও।
দ্বিতীয় দিনের জন্য আমরা প্রস্ত্তত। কড়া লাল ও কালোর বর্গাকার চেক শার্ট পরেছে মহুয়া, আমি থ্রি-কোয়ার্টার প্যান্ট। মহুয়া ওয়াশরুম থেকে বেরোলেই আমরা দরজা লক করে চাবিটা রিসেপশনে দিয়ে স্টেশনের দিকে এগোব। পাঁচ-ছয় মিনিটের হাঁটাপথ।
মহুয়ার বেরোতে দেরি হচ্ছে দেখে আমি ওয়াশরুমের দরজায় নক করি। সে আমলে অবশ্য ওয়াশরুম কথাটা চালু হয়নি, তখন বলা হতো বাথরুম কিংবা টয়লেট।
আমি বলি, দেরি হয়ে যাচ্ছে।
আমি অবাক হয়ে দেখি মহুয়া যখন বের হলো তার পরনে ম্যাক্সি, হাতে চেক শার্ট এবং ট্রাউজার। বলল, তুমি তোমার তাজমহলে যাও, আমি যাব না।
সে-দিনটা আমার জন্য খুবই যন্ত্রণার ছিল। আমিও রয়ে যাই। তাজমহল আমার অদেখাই রয়ে যায়।
আমাদের সকালের খাওয়া হয়নি, দুপুরও গড়িয়ে যায়। সাড়ে ১২টার দিকে মাথাটা যখন বেশ ধরে যায়, আমি প্যারাসিটামল ট্যাবলেট কেনার জন্য বেরোতে যাচ্ছি, এমন সময় মহুয়া জিজ্ঞেস করে, কোথায় চললে?
মাথা ব্যথা করছে, প্যারাসিটামলের জন্য যাচ্ছি। দেখি কাছে কোনো ফার্মেসি আছে কিনা।
মহুয়া বলল, খালি পেটে প্যারাসিটামল খেলে স্টমাক পার্ফোরেশন হয়ে যাবে। শোনো, আমার কাছে দু-পাতা প্যারাসিটামল আছে, নিয়ে এসেছি। তোমার লাগবে আমি আগে থেকেই জানতাম। চলো আগে কোথাও গিয়ে খেয়ে নিই।
এবার বেশ দ্রুতই সেই চেক শার্ট আর ট্রাউজার পরে মহুয়া তৈরি হলো, প্যারাসিটামলও সঙ্গে নিল।
প্রায় পনেরো মিনিট হেঁটে একটি রেস্তোরাঁয় ঢুকলাম। মহুয়া খেল ভেজিটারিয়ান ফুড, আমি নিলাম সি-ফিশ।
খাওয়ার পর মহুয়া বলল, ফার্মেসিতে যেতে হবে।
বললাম, প্যারাসিটামল তো পেলামই।
মহুয়া বলল, তোমারটা এনেছি, কিন্তু আমারটা ভুলে ব্যাগে ঢুকাইনি।
তোমারটা?
হু, স্যানিটারি ন্যাপকিন, দু-একদিনের মধ্যেই শুরু হবে। আমরা আরো মিনিট দশেক হাঁটি, এবার ধীর কদমে। চোখে পড়ল থিয়েটার। নামটা ভুলে গেছি – গ্যালাক্সি না মিনার্ভা – কী যেন নাম।
মহুয়া বলল, চলো দেখি ওখানে কী চলছে?
আমরা এগিয়ে যাই। আধঘণ্টার মধ্যে শুরু হতে যাচ্ছে দ্য সোর্ড অব টিপু সুলতান। মহুয়া নাটক দেখবে।
সবচেয়ে সস্তার টিকিট কিনি। থিয়েটারের বাইরে এক ভ্যানওয়ালা কফি বিক্রি করছে। মহুয়া বলল, কড়া এক কাপ কফি খাও, মাথাব্যথা কমে যাবে।
আমারটা বস্ন্যাক, মহুয়ারটা দুধ-চিনিসহ।
হলের শেষ কাতারের ঠিক সামনেরটাতে আমাদের সিট। কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে ঝিম মেরে বসে থাকলে মাথাব্যথাটা কমে যাবে, আমি জানি।
আমি তাই করলাম। মহুয়ার হাতের ছোঁয়া এবং ঠান্ডা ও সুগন্ধী একটি মালিশ আমাকে জাগিয়ে দিলো। মহুয়া বলল, ব্যাগে বামের কৌটাটাও ঢুকিয়েছিলাম। প্যারাসিটামল বের করার সময় এটা সঙ্গে নিয়ে এসেছি। একটু মালিশ করে দিই, ভালো লাগবে।
আধো আঁধারে এই থিয়েটার হলে চুমোর বেশি কিছু করলেও কেউ মাথা ঘামাবে না। পরিচিত কেউ দেখবেও না যে আমাদের বিব্রত হতে হবে। মহুয়া আমার কপালের দুপাশে বাম মালিশ করল, নাকে দুই ছিদ্রের ভেতর একটু ছোঁয়া দিলো, বন্ধ চোখের ওপরও।
টিপুর তরবারি প্রায় পুরোটাই দেখেছি; তবে আমি একটু ঘুমিয়েও নিয়েছি।
মহুয়া বলল, একটু নয়, ভালোই নাক ডেকেছ।
যখন থিয়েটার থেকে বেরোই, মাথাব্যথা নেই; আমার হাত তার দুই বাহুতে আঁকড়ে মহুয়া যেভাবে হাঁটছে কেউই ভাববে না আজ সকালেই তাজমহল আমাদের জন্য ভয়ংকর যন্ত্রণার একটি কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
আমার আর তাজমহল দেখা হয়নি, এ-পর্যন্ত কখনোই আর সে-সুযোগ আসেনি। ঠিক বলিনি, একবার এসেছিল। দিলিস্ন থেকে মস্কোর একটি কানেক্টিং ফ্লাইট যান্ত্রিক গোলযোগের কারণে বাতিল হয়ে যায়। পরবর্তী ফ্লাইট ঠিক ২৪ ঘণ্টা পর। অ্যারোফ্লোট দিলিস্ন শহরে আমাদের হোটেল দিয়েছিল, খাবারও। আমার ইন্ডিয়ান ভিসাও ছিল। আটকেপড়া যাত্রীদের একটি দল দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে তাজমহল দেখতে বেরিয়ে পড়ে, আমিও যেতে পারতাম। মহুয়া ব্যাপারটা ভালোভাবে নেবে না, ইচ্ছে থাকার পরও আমি আগ্রার তাজমহল-যাত্রীদের দলে ভিড়িনি।
আমি যে যাইনি এটাও তাকে বলা ঠিক হবে না। কারণ আমি ততদিনে আমার স্ত্রীকে অন্তত কিছুটা তো চিনেছি – আমার কথা শেষ না হতেই বলবে, অন্তরে সারাক্ষণ থাকাটাই তো উত্তম, 888sport sign up bonusসৌধে গিয়ে একবার 888sport app download for android করে কী লাভ। তুমি ঠিক কাজটাই করেছ সম্রাট শাহজাহান।
মহুয়া তাদের বাড়িতে তার বড় বোন ছোট বোন এবং ভাই দুটোর কাছে সাগ্রহে বলেছে আমার হাজব্যান্ডের নাম বাদশাহ শাহজাহান। ওই যে তাজমহল বানিয়েছিল সেই শাহজাহান। বিশ হাজার শ্রমিক বাইশ বছর খেটে কিংবা বাইশ হাজার শ্রমিক বিশ বছর খেটে সপ্তম আশ্চর্যের অন্যতম 888sport sign up bonusসৌধ বানিয়েছিল, সেই তাজমহল।
মহুয়ার বড় বোন জিনিয়া তাকে বলেছে, তোর তো হেভি কপাল, একেবারে মোগল সম্রাট পেয়েছিস। আমারটা যদি সুবাদার-টুবাদার কিছু একটা হতো তবু কথা ছিল। আমি বাবর থেকে বাহাদুর শাহ পর্যন্ত ঘেঁটে দেখেছি তাদের কারো দরবারেই হোসেন আলী নামে একটা পিয়নও ছিল না।
হোসেন আলী দুলাভাই আমার খুব পছন্দের মানুষ। সুন্দরের প্রতিযোগিতায় জিনিয়া যে সে-সময়ের অঘোষিত মিস রোকেয়া হল – এই সুন্দরী 888sport promo codeর পাশে তার মতো খাটো ও মোটা এবং সেইসঙ্গে টেকো একজন মানুষ যে বড্ড বেমানান এটা তিনি আমলেই নেন না। জিনিয়ার সৌন্দর্যও তার কাছে কিছু নয়।
আমাকে কাছে ডেকে নিয়ে ঠিক ফিসফিস করে নয়, শব্দ করেই বলেছেন, ব্রাদার পৃথিবীতে সবচেয়ে সুন্দরী হচ্ছে নেইবার্স ওয়াইফ। আরো বলেছেন, নিজের স্ত্রী কাঁদলে মেজাজ খারাপ হয়ে যায় কিন্তু প্রতিবেশীর স্ত্রীর কান্না কানে পৌঁছলে দেখবে বুক ভেঙে খানখান হয়ে যাচ্ছে। তা তোমার মমতাজ মহলটি কি জীবিত? আমার জবাব দিতে হয়নি, তিনিই বলেছেন, জীবিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। মহুয়া যখন তাজমহলের খোঁটা দিচ্ছে, ততদিনে তো তোমার মমতাজের মরে ভূত হয়েই যাওয়ার কথা।
মহুয়ার ছোট বোন ডেইজি তখন কেবল ক্লাস এইট থেকে নাইনে উঠেছে, আমাকে ফিসফিস করে প্রশ্ন করল, দুলাভাই, আপনার কাছে মমতাজ মহলের কোনো ফটো আছে? দেখি মহুয়া কার কথা বলছে। খুব সুন্দর নাকি?
দুই
আমাদের যমজ সন্তান হলো। দুটোই ছেলে। মহুয়া বলল, নাম ঠিক করেছ?
ঠিক করিনি, তবে মাথায় দুটো নাম এসেছে, তুমি ভেবে দেখতে পারো।
কী নাম শুনি।
তোমার নাম তো ম দিয়ে। সেজন্য সিজার করে যেটাকে আগে বের করা হয়েছে ওটা হবে মন্ময়। আর মন্ময়ের সঙ্গে মিল দিয়ে অন্যটা হবে তন্ময়।
সিজারের স্টিচ দেওয়ার সুতো কেটে বের করা হয় না, এমনিতেই শরীরের সঙ্গে একসময় মিশে যায়। কিন্তু স্টিচ তখনো কাঁচা। মহুয়া খুব শুদ্ধ করে নদিয়া-শান্তিপুরের ভাষায় বলল, দারুণ নাম রেখেছ দেখছি। এমন চমৎকার নাম পেলে কোথায়? বুঝতে পেরেছি কদিন তোমাকে খুব অভিধান ঘাঁটতে হয়েছে।
আমি খুশিই হই। বলি, অভিধান ঘাঁটিনি। এমনিই ভাবছিলাম কী নাম হলে ভালো, শ্রম্নতিমধুরও তো হতে হবে।
তার মানে অনেকদিন ধরেই ভাবছিলে? যে-দিন সনোলজিস্ট বললেন টুইন বেবি, আর খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে আমি জেনে নিলাম দুটোই ছেলেবাবু। ঠিক তখন থেকে। তাই না?
আমি বেশ বুঝতে পারছি আমাদের কথোপকথনের ডিরেকশন পালটে যাচ্ছে।
মহুয়া এবার চিৎকার করে বলল, তুমি একটা আস্ত শয়তান। ‘ম’টা আমার, না মমতাজ মহলের। মন্ময় আর তন্ময়। ম আর ত। মানে তোমার ওপর মমতাজ মহল এমনই ভর করেছে যে ছেলেদের নামের মধ্যেও মমতাজ বোঝাতে হবে।
মেয়ে হলে কী করতে? মমতাজ মহল জুনিয়র! যদি বাবুদের নাম না পালটাও আমি এদের ফার্স্ট বার্থ ডে-র দিন গলাটিপে দুটোকেই মেরে ফেলব।
আমি থতমত খেয়ে যাই, তবুও বলি, বাবুদের নাম তুমিই রাখো, তুমি অনেক ফিকশন পড়েছ, তুমিই সুন্দর নাম বের করতে পারবে।
অবশ্যই পারব। বাবুদের নাম আমিই রাখব। তোমার মাথায় কী, অন্তরে কী সেটা বের করার জন্যই নাম রাখার কথা তোমাকে বলেছিলাম। বের হয়ে গেল তোমার বিড়াল। থলের মুখটা বন্ধ রাখতে পারলে না?
আমাদের ছেলেদের নাম হলো আদ্রিয়ান ও জুলিয়ান। মহুয়ার রাখা নাম আমার পছন্দ হয়েছে। আমাদের দুটো আইডেন্টিক্যাল টুইন। কোনোটাকে খুব কাছে থেকে কিছুদিন না দেখলে শনাক্ত করা মুশকিল। আমি টুইন প্যারাম্বুলেটর কিনেছি, টুইন কট কিনেছি, কাপড়-চোপড়, ফিডার, দোলনা সবই জোড়ায় জোড়ায় এবং একই রকম। এ-লেভেল করার সময় আদ্রিয়ান ও জুলিয়ান কলেজের অডিটরিয়ামে নাটক করেছে – কমেডি অব এরর্স। শেক্সপিয়রের ভ্রান্তিবিলাস। নুসরাত এবং নূজহাত নামে আরো একটি আইডেন্টিক্যাল টুইন এসে তাদের সঙ্গে নাটকে যোগ দিয়েছে।
ছেলেদের নাটক দেখতে আমরা দুজনই যাই। আমাদের মানে আমার পাশেই বসেন নুজহাত ও নুসরাতের মা। তিনি বলেন, গস্ন্যাড টু মিট ইউ। আমাকে ও মহুয়াকে তার বিজনেস কার্ড এগিয়ে দেন, তিনি র্যাডিয়েন্ট বিউটি পার্লারের প্রোপ্রাইটার, মানে মালিক। আমার কোনো বিজনেস কার্ড নেই। তিনি বলেন, ইটস ওকে।
তিনি মহুয়াকেও একটি কার্ড দিয়ে বলেন, আসবেন আমাদের পার্লারে, আমরা অর্গানিক প্রোডাক্ট বেশি ব্যবহার করি, ফেইস আপ-লিফটে আমরা দেশের প্রথম তিনটি পার্লারের একটি। আমরা উত্তরায়ও নতুন ব্রাঞ্চ খুলতে যাচ্ছি।
মহুয়া আবার কার্ডটা পড়ল। কী পড়েছে আমি জানি। নামটা। তার নাম অ্যানি মমতাজ খান।
মহুয়া জিজ্ঞেস করল, মেয়েদের নাটক দেখতে খান সাহেব এলেন না। খুব ব্যস্ত নাকি!
তিনি বললেন, খান সাহেব একচুয়ালি আমার বাবা ফতেহ আলী খান। নুসরাত-নুজহাতের বাবা মানে আমার এক্স-হাজব্যান্ড খান নয়, সিদ্দিকী। নেই। মেয়েদের নামের সঙ্গেও সিদ্দিকী নেই, মমতাজ আছে – নুসরাত মমতাজ ও নুজহাত মমতাজ।
আসন্ন দুর্যোগ এড়াতে আমি মহুয়াকে বলি, তুমি ম্যাডামের পাশে বসো, আমি এদিকটায় বসি।
মহুয়া বলল, তা কেন, তুমিই বসো।
আমাদের ছেলেদের একজন অ্যান্টিফোলাস অব এফেসাস এবং একজন অ্যান্টিফোলাস অব সিরাকিউস। আদ্রিয়ানার চরিত্রে নুসরাত আর নুজহাত লুসিয়ানো। এরাও ইংলিশ মিডিয়ামে পড়া, ইংলিশ উচ্চারণে আমার মতো বাংলার টান নেই।
তিনি কিছুক্ষণ পরপর বললেন, দারুণ মানিয়েছে, দারুণ।
নাটকের অর্ধেক না যেতেই মহুয়া জানাল, অসুস্থ বোধ করছে। বমি হবে। এক্সকিউজ মি বলে আমরা বেরিয়ে যাই।
বেরোতে বেরোতে মহুয়া বলল, মমতাজ মহলের সঙ্গে তো বেশ জমিয়ে ফেলেছ দেখছি।
কার কথা বলছ? মিসেস খান? মানে ওই মেয়ে দুটোর মা?
ভনিতা ছাড়ো। মিসেস খান আবার কি? মমতাজ নাম মুখে নিতে পারো না?
কী বলছ যা-তা। মিসেস খানের সঙ্গে জীবনে আমার এই প্রথম দেখা, তাও তোমার সামনে।
কেন, আমার আড়ালে হলে ভালো হতো, তাই না। তোমার কার্ডটা যত্ন করে রেখে দিও বলেই মহুয়া তাকে দেওয়া বিজনেস কার্ডটা টেনে ছিঁড়ে রাস্তায় ছুড়ে ফেলল।
আমি বললাম, ছেলেরা নাটক শেষ হলে আমাদের খুঁজবে। তাহলে তুমি যাও, আমি থেকে যাই।
মহুয়া বলল, আমি আমার একটা অ্যাজাম্বশন টেস্ট করার জন্যই বের হয়েছি। আমার বমিটমি কিছুই পাচ্ছে না। আমি শুধু এটাই দেখতে চেয়েছিলাম, আমাকে বিদায় করে ছেলেদের চোখের সামনে তুমি মমতাজ মহলের গা ঘেঁষে বসেছ। আমার অসুস্থতার কোনো গুরুত্ব নেই তোমার কাছে, ছেলেদের অভিনয়েরও কোনো দাম নেই। তুমি এই থিয়েটারে এসেছ ওই প্রস্টিটিউটটার পাশে বসার জন্য।
তুমি কাকে প্রস্টিটিউট বলছ?
কাকে মানে? ওই মমতাজ মহলকে।
তার নাম মমতাজ মহল নয়। তাছাড়া এরকম কেউ এখানে আসবে এটা আমার আগে থেকে জানাও ছিল না।
বুঝতে পেরেছি, জানা থাকলে আমাকে আনতে না?
আমি রেগে যাই, আর একটা কথাও বলবে না।
ঠিকই আছে, সত্য বললে গায়ে জ্বালা ধরবেই।
আমরা আবার গিয়ে বসি। ততক্ষণে মিসেস খানের পাশের চেয়ারটা মোটা ও কুৎসিত একজন পুরুষের দখলে চলে গেছে। আমরা পেছনে চলে আসি।
নাটক শেষ হলে আমাদের আদ্রিয়ান নুসরাতের এবং জুলিয়ান নুজহাতের হাত ধরে মঞ্চের সামনে এসে বাও করে। আমরা তালি দিই।
তিন
আমাদের আইডেন্টিক্যাল টুইন আদ্রিয়ান ও জুলিয়ান ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া বার্কলেতে আন্ডারগ্রেড করার জন্য চলে গেছে। অনেক খরচ। পঁচাত্তর লাখ টাকায় কেনা আমাদের আড়াই হাজার স্কয়ার ফুটের অ্যাপার্টমেন্টটা দু-কোটি টাকায় বেচে অল্পকিছু আমাদের জন্য রেখে বাকিটা ছেলেদের জন্য ট্রান্সফার করে দেওয়ার বন্দোবস্ত করেছি। মহুয়াকে দাম বলেছি, দেড় কোটি। আমরা অভিজাত এলাকার বাইরে পনেরো হাজার টাকা ভাড়ায় একটা ছোট অ্যাপার্টমেন্টে উঠেছি। ছেলেদের ভর্তির কাজ শেষ করে ডরমিটরিতে উঠিয়ে আমাদের দ্রুতই ফিরতে হয়েছে। আমরা থাকতে চাইলেও ছেলেরা আমাদের চায়নি। তারা বলেছে, তোমরা নিউইয়র্ক চলে যাও, অনেক বাঙালি পাবে। ঘনঘন আমাদের সঙ্গে দেখা করতে এলে মামিস বয় খেতাব জুটে যাবে। আমরা ছেলেদের বিব্রত করতে চাই না, তাদের মঙ্গল চাই। আমরা দু-সপ্তাহের বদলে তিনদিন নিউইয়র্কে কাটিয়ে দেশে ফিরে আসি।
এক জোড়া আইডেন্টিক্যাল যমজ মেয়ের জন্য আমাদের ছেলেরা বসে ছিল। পেয়েছে। ক্যারিবিয়ান সামান্থা ও আমান্থা। সাড়ে তেরো বছর পর আমেরিকায় একই দিনে তাদের দুজনের বিয়েতে হাজির হয়ে আমরা 888sport appয় ফিরেই শুনলাম একজন উকিল কদিন ধরে আমাদের খোঁজ করছেন, খুব জরুরি। বাড়ির কেয়ারটেকার একই সঙ্গে একটি চিঠি ও ফোন নম্বর দিলো। চিঠি উকিলের, তাতে লেখা, অতিজরুরি যোগাযোগ করুন। যোগাযোগ করলাম। ফোনে উকিল সাহেব চেঁচিয়ে বললেন, কী ব্যাপার বলুন তো? আমাদের ম্যাডামের সঙ্গে আপনাদের কী সম্পর্ক?
আমি শুধু বললাম, আপনজন।
তিনি বললেন, তাই তো হওয়ার কথা। নতুবা এমনিতে কেউ ছাই-ও দেয় না।
পরদিন উকিলের চেম্বারে গেলাম।
তিনি একটি খামবন্ধ চিঠি দিলেন। আর এগিয়ে দিলেন একটি উইল। উত্তরায় কবি জসিমউদ্দীন অ্যাভিনিউর পস্নাজা রোজের অ্যাপার্টমেন্ট সিক্স ডি আনিসুর রহমান এবং সাবিকন নাহার মহুয়াকে দানসূত্রে লিখে দিয়ে গেছেন। উকিল বললেন, বাসাটা খালি। ম্যাডাম মমতাজ মহল এই উইলটা তাকে দিয়েই করিয়েছেন। আর সিক্স বি, মুখোমুখি অ্যাপার্টমেন্টটি দিয়ে গেছেন তার একমাত্র মেয়ে, সেও প্রবাসী, সিডনিবাসী অন্তরা ইসলামকে। সিক্স বিতে টেনেন্ট আছে, ভাড়ার টাকাটা অন্তরার অ্যাকাউন্টে জমা হতে থাকবে। উকিল সাহেব কম কথা বলতে পছন্দ করেন। তিনি বলে যাচ্ছেন, ম্যাডাম উইল করেছেন একশ দিন হলো, মারা গেলেন বারোদিন আগে। নয়দিনের গ্যাপ। নিজের মৃত্যুর আগাম খবর পেয়েছিলেন নিশ্চয়ই। বনানী কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। মেয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল। বলেছে, প্রেগন্যান্সির শেষ স্টেজে, নড়াচড়া সম্ভব নয়।
পস্নাজা রোডের অ্যাপার্টমেন্ট লুকিয়ে রাখার কোনো সুযোগ নেই। তাছাড়া ফিফটি পার্সেন্ট মালিক তো মহুয়াও।
আমি উইলটা মহুয়ার হাতে দিয়ে বলি, পড়ো।
মহুয়া কিছুক্ষণ থ হয়ে থেকে বলল, মানে আমাকেও।
হ্যাঁ সাবিকন নাহার মহুয়াকে।
তোমাকেও। কিন্তু আমাকে কেন? কত, কত হবে ওই অ্যাপার্টমেন্টের দাম?
আমি চললাম, আড়াই কোটির বেশিই হবে।
মহুয়া বলল, ওহ মাই গড। অর্ধেক মানে এক কোটি পঁচিশ লাখ আমাকে!
চার
সে-রাতে মহুয়ার অজ্ঞাতে আমি মমতাজ মহলের চিঠিটি পড়ি।
প্রিয় আনিস,
অনেক দিন আগে অন্তরা যখন সিডনি থেকে ফোন করে বলল তুমি তার অ্যাকাউন্টে 888sport appsি পঞ্চাশ লক্ষ টাকার সমান অস্ট্রেলিয়ান ডলার পাঠিয়েছ, আনন্দে আমার চোখ ঝাপসা হয়ে এসেছিল। আমি জানি তোমার সম্পদের মধ্যে কেবল ওই একটাই অ্যাপার্টমেন্ট। বেচে দিয়েছ?
অন্তরা জিজ্ঞেস করেছে, মা এটা কি কখনো সম্ভব – এক-দেড় লাখ টাকা হলে একটা কথা – পাঁচ মিলিয়ন টাকা কেউ কাউকে দেয়? তুমি আনিস আঙ্কলকে জিজ্ঞেস করো। বাবাও তো কখনো আমাকে এক হাজার টাকার বেশি দেয়নি। সব মিলিয়ে হয়তো অনেক হবে কিন্তু একবারে এক হাজার, একবারই, যখন হাজার টাকার নোট বের হয় তখন দিয়েছে।
নুরু নেই এগারো বছর। তোমার সঙ্গেও যোগাযোগ কমে গেছে। আমার ভেতর মৃত্যুভয় ঢুকেছে। মনে হচ্ছে যে-কোনো দিন চলে যাব। খোঁজ নিয়েছি তুমি নেই, ফোন বন্ধ। তুমি কি সব বেচে দিয়ে রাস্তায় নেমেছ?
আনিস, আমার অ্যাপার্টমেন্টটা তোমাকে আর মহুয়াকে দিচ্ছি, তুমি যে-টাকা অন্তরাকে দিয়েছ তাতে মহুয়ারও তো হক ছিল। অন্তরার হাজব্যান্ড ক্রিস্টোফার লেভিন অন্তরাকে বলেছে, তুমি হচ্ছো ‘গ্রেটেস্ট সান্তাক্লজ এভার’।
মহুয়ার ওপর রাগ করো না, তার জায়গায় আমি হলে হয়তো তোমার জীবন আরো দুর্বিষহ করে ফেলতাম।
অন্তরাকে সেই সত্যটি আমি যেমন জানাইনি, তুমিও গোপনই রেখো। নতুবা নুরু কষ্ট পাবে।
আদ্রিয়ান ও জুলিয়ানের জন্য আদর। ওরা বিয়েশাদি করবে না? তোমাকে দেখতে ইচ্ছে করে, তবুও মনে হয় আর দেখা না হওয়াই ভালো।
তোমার
মমতাজ মহল
আমাদের ফার্স্টবয় নুরুল ইসলাম, পেছনদিকের আমি আর মাঝামাঝি পর্যায়ের মমতাজ মহল – আমরা একটি কো-এডুকেশন স্কুল থেকে এসএসসি পাশ করেছি। নুরু স্ট্যান্ড করেছে, মমতাজ মহল ফার্স্ট ডিভিশন, আমি সেকেন্ড ডিভিশন। পরীক্ষার এক্সামিনার আমার ওপর অবিচার করেছেন – এমন অভিযোগ কখনো করব না। মমতাজ মহলের বাঁ-চোখ ভীষণ ট্যারা ছিল বলে স্কুলে সে ট্যারা মমতাজ নামেই পরিচিত ছিল।
নুরু মেডিক্যাল, ইঞ্জিনিয়ারিং দুটোতেই চান্স পেয়ে শেষ পর্যন্ত পড়েছে পদার্থ888sport apk; আইনস্টাইন ধরনের 888sport apkী হবে। মমতাজ মহল রোকেয়া হলে থেকে সমাজ888sport apk পড়ল। আমি ইউনিভার্সিটিতেও চান্স পাইনি। মিরপুর বাঙলা কলেজ থেকে বিএসসি করেছি। পরে এমএসসি। নুরুল ইসলাম লেকচারার হিসেবে ইউনিভার্সিটিতে আজ জয়েন করে কি কাল জয়েন করে এমন একটি অবস্থায় অনেকদিন পর আমাকে ডেকে বলল, তোকে সাক্ষী হতে হবে।
কিসের?
বিয়ের, আমার বিয়ের।
কবে?
আজই।
কে?
তোর এতকিছু জানার কী দরকার?
না জানলে কিসের সাক্ষী হবো?
মিনিট দশকের মধ্যে বোরকা পরা এক মহিলা এসে আমাদের সামনে পুরো বোরকাটাই খুলে ফেলল।
আমি বললাম, ট্যারা মমতাজ তুমি? মানে তোমরা? প্রেমট্রেম কবে করলে? কিছুই টের পেলাম না।
নুরু বলল, তোকে টের পাইয়ে আমাদের সবকিছু করতে হবে নাকি?
বিয়েটা হলো রায়েরবাজার কাজী অফিসে। আমি সাক্ষী, কাজী অফিসের অপরিচিত একজনও সাক্ষী হলেন। এক লাখ এক টাকা দেনমোহরে অর্ধেক উসুলে আমাদের ‘বুককীট’ নুরু ও ট্যারা মমতাজের বিয়ে হয়ে গেল। নুরু মাসতিনেকের মধ্যে ইউনিভার্সিটিতে জয়েন করল। বছর দুয়েক পর কমনওয়েলথ স্কলারশিপ পাবে এটা নাকি নিশ্চিত। পিএইচ.ডি করতে চলে যাবে ব্রিটেন কিংবা অস্ট্রেলিয়ায়।
কিন্তু ছ-মাসের মাথায় মমতাজই ফোন করে বলল, তাড়াতাড়ি এসো, নুরুর অবস্থা খারাপ। নুরুর মাথা আউলে গেছে, উদ্ভট দুর্বোধ্য সব কথা বলছে, গায়ের কাপড়ও খুলে ফেলছে।
ডাক্তার নাজিমউদ্দৌলা চৌধুরীর অধীনে হসপিটালে ভর্তি করা হলো। ডাক্তার বললেন, ঘুম হচ্ছে বড় ওষুধ। টানা তিন মাস হাসপাতালে থেকে বাড়ি ফিরে জিজ্ঞেস করল, আমার কী হয়েছিল?
ট্যারা মমতাজ সচ্ছল পরিবারের মেয়ে হওয়ায় তার সঙ্গে হাসপাতালে ডিউটি করা দিনগুলোতে মমতাজ মহল পয়সাকড়ি দিয়ে আমাকে চালিয়েছে। মাসতিনেক পর নুরু আবার আইনস্টাইন হয়ে গেল। আবার হাসপাতালে নিতে হলো। আমি তখন মিরপুর শেওড়াপাড়ার পাট চুকিয়ে নুরুর সোবহানবাগের বাসাতেই থাকতে শুরু করি। আমরা শিফটিং ডিউটি করি, কোনোদিন আমি রাতে, কোনোদিন মমতাজ মহল। হঠাৎ আবিষ্কার করি, সুযোগ পেলেই আমি মমতাজ মহলের দিকে তাকিয়ে থাকছি। মমতাজ চোখ নামিয়ে নিচ্ছে। যেদিন আমাদের মধ্যে ব্যাপারটা ঘটে গেল, মমতাজ বলল, তুমি যাও, আমি একাই নুরুকে সামলাতে পারব। যাই যাই করেও প্রায় এক মাস কেটে গেল, ব্যাপারটা বারবার ঘটতে থাকল। ততদিনে আমি শুক্রাবাদ মেসে থাকতে শুরু করি, নুরু এবার বেশ সুস্থ হয়ে ফিরে আসে। ইউনিভার্সিটিতে ক্লাসেও যোগ দেয়। ছুটির দিন আমাকে ডাকে, একসঙ্গে ভাত খাই।
নুরু ও মমতাজ মহলের মেয়ে হলে আমি সোনার চেইন নিয়ে দেখতে আসি। নুরু বলে, আমি জানি, তুই অনেক টাকা ধার করে এটা কিনেছিস। অন্তত কিছু টাকা নিয়ে যা।
আমি বলি, তোর মেয়ে তো আমারও মেয়ে।
মমতাজ মহল বলল, ট্যারা না হলেই হয়। মেয়ের জন্য তোমরা দুজন পাঁচটা করে নাম জমা দাও। আমার পছন্দমতো একটা রাখব।
একটু দেরিতে হলেও নুরু ম্যানচেস্টার থেকে পিএইচ.ডি করেছে। ইউনিভার্সিটিতে কোয়ার্টার পেয়েছে। লিয়েন নিয়ে প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে পড়িয়ে ভালো টাকা কামিয়ে দুটো অ্যাপার্টমেন্ট কিনেছে।
মেয়েটার নাম অন্তরা। ডক্টর নুরুল ইসলাম ও মমতাজ মহলের মেয়ে অন্তরা ইসলাম। নামটা আমারই দেওয়া। আমি একটা নামই দিয়েছিলাম।
পাঁচ
আমরা পস্নাজা রোজে অ্যাপার্টমেন্ট সিক্স ডি-র দখল নিয়েছি। থাকব, না ভাড়া দেবো, ভাবছি। মহুয়া বলল, এবার দেড় হাজার ডলারের মতো বেঁচে গেছে। ছেলেরা আমাকে খরচ করতে দেয়নি। চলো না একটু কোথাও ঘুরে আসি।
কোথায়?
ইন্ডিয়ায়, আগ্রা যাব। চলো তাজমহল দেখে আসি।
মহুয়ার দিকে মুগ্ধ চোখে তাকাই। মমতাজ মহলকে এবার ভালোবাসা জানিয়ে আসব, নিশ্চিত। আমার মমতাজ মহলকে, বনানীতে নয়, আগ্রায়।


Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.