চলমান এক অশরীরী, রহস্যময় এক প্রাণ, কখনো ছায়া, কখনো কায়া, হঠাৎ চমকে দেওয়া প্রাগৈতিহাসিক যুগের পাথরে খোদাই মুখচ্ছবি কালের ওপারে জেগে থাকা মহাকালের বাতিঘর, অযুত আলোকবর্ষ পাড়ি দিয়ে আসা কোনো ভিনগ্রহের মানুষ যেন পৃথিবীর দরজায় এসে কড়া নাড়ছেন। নক্ষত্রসমান ঔজ্জ্বল্যে ভরা জাগর অপার্থিব মুখ, অন্ধকারের আলখেল্লা পরা এক আদিম গুহামানব – এস এম সুলতান। মাটি ও নিসর্গের সঙ্গে মিশে থাকা এক মহীরুহ।
আমার বোধে এক দুরন্ত পৃথিবী মগ্ন হয়ে প্রশ্ন রাখে যখন আমি এস এম সুলতানের নাগালের মধ্যে নিজেকে ক্যামেরার ভিউ ফাইন্ডারে ব্যস্ত রাখি। আমি ও আমার ক্যামেরা তাঁকে নিঃশব্দে অনুসরণ করেছি। ভিউ ফাউন্ডারে আমার অনুসন্ধানী চোখ পরম বিস্ময়ে লক্ষ করেছে অন্ধকারের গুহা থেকে বেরিয়ে আসা এক কান্তিমান মানবসন্তানকে। হাজার বছরের পথ লহমায় পাড়ি দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন এক রহস্যময় প্রাণ। তাঁর মুখ ভেসে যাচ্ছে মৌন আলোর ধারাপাতে। অশ্বারোহী চোখ। কাল থেকে কালান্তরে ছুটে চলা। জীবন থেকে মহাজীবনে! কত বিখ্যাত মানুষের মুখে স্থির করেছি আমার ক্যামেরার লেন্স। তাক করেছি আমার মুগ্ধ দৃষ্টি। কিন্তু এই মুখ তাঁদের কারো মতোই নয়! অথচ মানুষেরই মুখ। কয়েক শতাব্দীর অলৌকিক অপার্থিব ইতিহাস কথা কয় তাঁর ধূসর জীবনের মুগ্ধ উপত্যকায়। পৃথিবীর আইনকানুনের বাইরে এই মুখ ও অবয়ব কোনো জাতপাতে ফেলা যায় না, রাখা যায় না কোনো নিরাকার পাত্রে। সে কেবলই ঘুরেফিরে আদিম গন্তব্যে আস্তানা বাঁধে। কম্পমান সমাজ তথাকথিত সভ্য মানুষদের কৃত্রিম গণ্ডিতে এস এম সুলতানকে বন্দি করতে চেয়েছিল; কিন্তু সুলতান অরণ্যের কাছেই ফিরে গেছেন বারবার।
বিংশ শতাব্দীর এক আকস্মিক মুখ আজ শর্তহীন হানা দিচ্ছে আমার বিনীত 888sport sign up bonusর আর্কাইভে। গত হয়ে যাওয়া কোনো অজানা শতাব্দীর মানুষের শৌর্যবীর্যের ইতিহাস সে জানান দিয়ে যায়। নির্বাক স্থিরচিত্র সবাক হয়ে ওঠে। দেখতে পাই পৃথিবীর পথে আজো হেঁটে চলেছেন কালান্তরের সেই গুহামানব। বর্ণিল তাঁর জীবনের সঙ্গে আমার ঐকতান হয়েছিল। কী বিচিত্র তাঁর জীবনপ্রণালি, অদ্ভুত বেশভুসা। সুলতানের শারীরিক আকার নিরাকার হয়ে যায়, যখন অনুসন্ধান চালাই মানুষের নৃতত্ত্বের ইতিহাসের মুখর পাতায়।
বি888sport sign up bonusর ফটোগ্রাফ যেন মূর্ত হয়ে ওঠে ইতিহাসের বিচ্ছিন্ন প্রান্তরে। রহস্যময়তার ফ্রেমে বন্দি দুর্বোধ্য মুখাবয়ব সুলতানের, যার বন্য উদার দুটি চোখে অথই নীলিমা খেলা করে। নিহত হয়ে যাওয়া কোনো এক শতাব্দী আমার মনের আলোছায়ার অরণ্যে মুখ লুকায়। 888sport apk ভুল হয়ে যায় আমার, ১৯৭৬ সালে 888sport appয় সুলতানের একক চিত্রপ্রদর্শনী দেখে। প্রায় দুই যুগ স্বেচ্ছানির্বাসনে থাকার পর এই 888sport live chatী সংবাদ শিরোনাম হয়ে গেলেন। এতদিন কোথায় ছিলেন সুলতান? ভ্যান গঘের মতো বোহেমিয়ান জীবনের এক রূপকার গ্রামের 888sport free betগরিষ্ঠ মানুষের শক্তি ও সৌন্দর্য তুলে ধরলেন। অনেকেই ভড়কে গেলেন তাঁর ছবি দেখে। ‘চরদখল’ চিত্রটির সামনে দাঁড়িয়ে দেখতে পাই আমার পূর্বপুরুষদের জীবনের অবিকল আদিম সংগ্রাম। এই গ্রহের আদি মানব আদমের আসল সুরত যেন প্রত্যক্ষ করি ‘প্রথম বৃক্ষরোপণ’ চিত্রটি দেখে। কঠিন দুই হাতের অন্তরালে ছোট্ট একটি চারাগাছ মাটিতে প্রোথিত হচ্ছে পৃথিবীর প্রথম মানুষের পক্ষে, বিস্ময়কর দৃশ্যটি ফোকাসে রেখে আমি হারিয়ে যাই বিশাল চিত্রগুলোর বিষয়বস্তুর সম্মিলিত প্রান্তরে। অনেক চিত্র অসমাপ্ত অবস্থায় দেখি। সেগুলোও চোখ ধাঁধিয়ে দিলো। দ্রোহী চেহারার বলিষ্ঠ মানুষ কাত হয়ে পড়ে আছেন, সুলতান তাঁর মুখে এঁকে দিয়েছেন একটি রক্তজবা।
হঠাৎ দেখি, গত হয়ে যাওয়া শতাব্দীর একটি মুখ ঢুকে পড়ল 888sport apps 888sport live chatকলা একাডেমির গ্যালারিতে। আমার সব ইন্দ্রিয় দেখল ভিনসেন্ট ভ্যান গঘের মতো অসুখী এক মুখ। কালো আলখেল্লায় ছিপছিপে দেহকে আড়াল করে রেখেছেন। খ্যাপাটে লম্বা চুলগুলো কাঁধের ওপর আছড়ে পড়েছে। সীমাহীন অযত্নের সার্থক চিত্র ফুটে উঠল তাঁর চেহারায়। দেয়ালে টাঙানো ছবিগুলো থেকে কাঁচা তেলরঙের ঘ্রাণ পালিয়ে যায়, যখন সুলতান কালো আলখেল্লার নির্ভেজাল পকেট থেকে বের করেন এক টুকরো পোড়া কাঠ এবং ছোট বাঁকানো চাকুর মতো দেখতে এক ধাতব বস্তু, তারপর ঠোঁটে উঠে আসে কলকি। গাঁজার টানে মাতাল গন্ধে উধাও হয়ে যায় প্রকৃতিপ্রদত্ত বিশুদ্ধ বায়বীয় সম্পদ। রীতিমতো গবেষণার বিষয় হয়ে উঠলেন ঈর্ষণীয় এস এম সুলতান। তখন কাছে গিয়ে পরিচিত হওয়ার সাহস অর্জন করিনি। অদ্ভুত শব্দে হেসে উঠলেন অস্থিরমতি সুলতান। গ্যালারির দেয়ালে প্রদর্শিত তাঁর চিত্রকলার শক্তিশালী কৃষকদের কলরব শতাব্দীর ইতিহাসের প্রান্তরে ইথারে মিলিয়ে যায়। আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে সুলতানের চিত্রের ক্যানভাস থেকে এক ব্যাকুল শিশু সুঠাম মায়ের বাহুতে জড়ানো। চোখে তাকানো যায় না শিশুটির; সে যেন ফ্রেম থেকে বেরিয়ে আসতে চায় 888sport apkী বিংশ শতাব্দীতে। আমার কেবলই মনে হতে লাগল, এক্ষুনি শিশুটিকে স্থির ক্যানভাস থেকে উদ্ধার করে নিয়ে আসি, নইলে পেশিবহুল মানুষগুলো ওকে পিষে মেরে ফেলবে। ওই পরিবেশে আজব সুলতানকে আমার অসহ্য মনে হলো। আরো মনে হতে লাগল, খুন করে পালিয়ে যাই নিষিদ্ধ নগরে। কিন্তু দেয়ালে ঝোলানো পেশিবহুল মানুষগুলোকে আমার জীবন্ত মনে হতেই নির্বোধ বনে যাই। মনকে সায় দিতে থাকি অন্য কোনো বিষয়ে। ক্যানভাসে অচেনা বিষয়গুলোর দুর্দান্ত মুখ দেখে ভয় পেয়ে যায় আমার শরীরের ঠিকানা। সুপ্ত মনের ক্যানভাসে জানা-অজানার নিভৃত 888sport live chatের ঝড় বইতে থাকে।
‘সুলতান’ অনুসন্ধানে গভীর মমতায় প্রায় এক বছর পার করে উঁকি মারল আরেক নতুন বছর, ১৯৭৭ সাল। সামরিক শাসনে বিপর্যস্ত 888sport appsে 888sport live football ও 888sport live chatকলার বিপন্ন দশায় কম্পমান আমাদের পৃথিবী। প্রায়ই বিভিন্ন ক্ষেত্রের খ্যাতিমান ব্যক্তিদের আলোকচিত্র গ্রহণ করি। তখন আমার কোনো উপার্জন নেই, বিশিষ্ট বেকার আমি। কিন্তু সবই অর্থের বিনিময়ে-ফিল্ম না হলে আমার কারবার চলে না। বিশাল পৃথিবীতে ক্ষুদ্র আমি সূর্যের ঝলমলে আলো পাই বিনিময় ছাড়া। উদার আকাশের ক্যানভাসে নানা রঙের ও বর্ণের টেক্সচার দেখে বিস্মিত হই। আবার নিসর্গ আমাকে জড়িয়ে ধরতে চায়; মায়ায় বন্দি করে ফেলে কখনো-সখনো নিসর্গের মোহনীয় নীরব আর্তি। সবকিছু থেকে পরিত্রাণ পেয়ে আমি ছুটে যাই নক্ষত্র মানবদেহের খোঁজে। প্রকৃতি আমাকে আকর্ষণ করতে পারে না। মানুষের সৃষ্টিশীলতায় মোহিত আমি মৌলিক মানুষদের বিমূর্ত পথে পা ফেলি।
দরিদ্র বিশে^ উৎপাদন যার পরিশ্রমে – দুর্ভাগ্য – খাদ্য তার নাগালের বাইরে। সমাজের এই উপেক্ষিত সরল জনগোষ্ঠীকে সত্যিকার মহান নিষ্ঠায় যোগ্য মর্যাদায় চিহ্নিত করে গেছেন সুলতান তাঁর অমর চিত্রকলায়। কে বলবে আমাদের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনে এস এম সুলতানের স্বাক্ষর ছিল না? অষ্টাদশ ও ঊনবিংশ শতাব্দীর ফরাসি ইম্প্রেশনিস্টদের মতো তাঁর বিচিত্র জীবন তাঁকে বোঝার জন্য আমাদের মেধাকে দুর্বোধ্য করে দেয়। তাই তাঁর ছবির গভীরে খুব সীমিত থেকে যায় আমাদের দেখা। সুলতানের ছবিকে আমরা প্রশ্ন করে দেখি না।
দার্শনিকের মতো মগ্ন চেহারার এস এম সুলতানের সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয় হয় ১৯৭৭ সালে। মুখরা দিনের 888sport sign up bonus কি মুছে ফেলা যায়? আমার ক্যামেরায় তোলা সুলতানের ফটোগ্রাফ দেখে মনে হয়, পাথরে খোদাই করা কোনো আদম সুরতের বঞ্চিত মুখচ্ছবি। তাঁর স্থির ফটোগ্রাফগুলো যেন মুহূর্তেই অস্থির হয়ে ওঠে। এই ফটোগ্রাফই তো পিতা মেছের শেখের পারিবারিক বন্ধন উপেক্ষা করে কিশোর বয়সে 888sport live chat-সমালোচক শাহেদ সোহরাওয়ার্দীর স্নেহ অর্জন করেছিল। 888sport sign up bonusর শহরে হারিয়ে যাওয়া এই বিরল মুখ চল্লিশের দশকের শুরুতে কলকাতা আর্ট স্কুলে চিত্র888sport live chatী অধ্যক্ষ মুকুল দে-র ছাত্র এবং জয়নুল আবেদিন, কামরুল হাসান, রাজেন তরফদার এবং সফিউদ্দীন আহমেদের সতীর্থ হতে পেরেছিল, যাঁরা একসময় আমার ক্যামেরার বিষয় হয়েছিলেন। তারপর আমার স্থির ফটোগ্রাফের মানুষটি আর্ট স্কুলের তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষা শেষে আগ্রার তাজমহল দেখতে গিয়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলেন এই পৃথিবীর পোশাকি কোলাহল থেকে। আর ফিরে আসেননি নিয়মের কোনো কারাগারে। নিজেই রচনা করলেন ভবঘুরে এক বৈচিত্র্যময় প্রথাবিরোধী জীবন। ভারত উপমহাদেশের কোনো চিত্র888sport live chatীর চিত্রকলার সঙ্গে মেলে না সুলতানের কাজ। নিজস্ব ঘরানায় ছবি আঁকায় নিমগ্ন থেকেছেন তিনি।
ফিরে যাই নিখুঁত অরণ্যে। অপরিকল্পিত নিসর্গের আচমকা আবরণে আবৃত এক দ্বিতল বাড়ি দীর্ঘকাল পরাধীন হয়ে পড়েছিল। নড়াইলের রূপগঞ্জ থানার মাছিমদিয়া গ্রাম এবং ১৯৭৯ সালের চিত্রা নদী ধাবমান। দুঃখ সেখানে কেবলই লিখে নাম অবিরাম।
লাবণ্যের ঘ্রাণমাখা ফুল ফোটে সেখানে প্রতিদিন।
প্রকৃতির অরণ্যলাগা নিভৃত অংশে নাগরিক মানুষদের পদচারণ প্রায় নেই। বিলুপ্ত সব নাগরিক কোলাহল, পূর্ব বাংলার 888sport app 888sport apkশূন্য জনপদের মতো এই নিঃসঙ্গ পল্লি যেন পৃথিবীর বাইরে কোনো এক বিবর্ণ নগর। এই অঞ্চলের প্রতাপশালী হিন্দু জমিদাররা ব্রিটিশ আমলে ইউরোপ থেকে খণ্ডিত রেনেসাঁস আমদানি করে সভ্যতার রুপালি সুতোয় নড়াইলকে গেঁথে দিয়েছিলেন। বাল্য ও কৈশোরে অনুসন্ধানী চোখে লাল মিয়া (এস এম সুলতানের ডাকনাম) জমিদারবাড়ির অন্দরমহলে পাশ্চাত্যের চিত্রকলার জীবন্ত আর্কাইভ দেখে তাঁর মেধার গন্তব্য নির্ধারণ করতে পেরেছিলেন।
১৯৭৯ সালে নড়াইলে এস এম সুলতানের জন্মস্থান মাছিমদিয়া গ্রামে আমি 888sport live chatীর ছবি তুলতে যাই। তাঁর নিঃসঙ্গ ভৌতিক বাড়ির আঙিনায় এক ক্যামেরা888sport live chatী ছায়া ফেললে আর্তনাদ করে ওঠে বিরহ শতাব্দী। কতকাল ওই পরিত্যক্ত বাড়িতে ছবি কেউ তুলতে আসেনি। আমার আগমনে ঊনবিংশ শতাব্দীর ঘুমন্ত বাড়ি যেন হল্লা করে উঠল। ওই ক্ষয়িষ্ণু ভবনের অনেক চমকপ্রদ গল্প একদা আমাকে মোহিত করেছিল। বিপন্ন জমিদারবাড়িটি তার আত্মকথা বলার জন্য হাহাকার করে ওঠে। ছোট, বড় ও মাঝারি রকমারি ফুলের গাছে নগ্ন বাড়ি যেন মুখ লুকিয়ে রেখেছিল। টবে বিচিত্র সব পাতাবাহার গাছ এমন ঠাসাঠাসিভাবে অবস্থান নিয়েছে, যেন এক্ষুনি শোরগোল বাঁধিয়ে ফেলবে। বাতাসের কাঁপনে এ-গাছের ডাল ও পাতা অন্য গাছের শরীরে আছড়ে পড়ে মিতালি করছিল দেখে ভারি আনন্দ হলো। মানুষের হানাহানি থেকে যেন এক শান্তিনিকেতনে দাঁড়িয়ে আছি। শ্যাওলাপড়া ভবনের শরীরে ফাটল ধরেছে বহু আগে, তাতে নানান জাতের জংলি বৃক্ষ দখল নিয়েছে। গাছের পাতা মাড়িয়ে কাঁকর-বিছানো মিনি পথ, তারপর চার ধাপ সিঁড়ি ভাঙতেই আমার 888sport apkমনস্ক পা গিয়ে পড়ল ঊনবিংশ শতাব্দীতে। নড়াইল জমিদারদের বাহাদুরি বিলুপ্ত হয়েছে সেই কবে, তাঁদের আশ্রিত রাজমিস্ত্রি মেছের শেখের পুত্র লাল মিয়া বরেণ্য চিত্র888sport live chatী এস এম সুলতান তখন ওই ভবনে বসবাস করছেন। তাঁর মুখোমুখি হতেই অস্থির হয়ে ওঠে আমার ক্যামেরা; সচল হয়ে যায় ডান হাতের নির্দিষ্ট আঙুলটি, যা ক্যামেরার শাটারে সঠিক সময়ে টিপ দিতে ভুল করে না। সুলতানের ছবি তোলা আমার জন্য সহজ ছিল না। প্রায় দীর্ঘ দশ বছর তাঁর মেজাজ-মর্জিমাফিক আমার ক্যামেরা সচল রাখতে হয়েছে। ক্যামেরায় তাঁর জীবন থেকে নেওয়া কিছু বাস্তব ভঙ্গি ধরতে চেষ্টা করেছি মাত্র। ছবি তোলার জন্য কৃত্রিম আলো ব্যবহার করিনি, আর ক্যামেরায় নরমাল লেন্স ব্যবহার করেছি সব সময়। আমার ক্যামেরায় বন্দি শতাধিক সাদা-কালো আলোকচিত্রের মধ্য থেকে তাঁর সারাংশ প্রকাশ পেয়েছে এবং তাঁর কিছু ড্রয়িং ও পেইন্টিং প্রকাশিত হয়েছে, যা আমার ব্যক্তিগত সংগ্রহশালা থেকে বিভিন্নজনের ব্যক্তিগত সংগ্রহের হার অনেক। আর কয়েকটি পেইন্টিংয়ের আলোকচিত্র সুলতানের ছবি আঁকার পরপর অরিজিনাল চিত্র থেকে স্ন্যাপ নেওয়া হয়েছিল।
তাঁকে অনুসরণ করা ছিল অনেকটা ছায়ার পেছনে ছোটার শামিল। চিত্রকলায় এবং জীবনযাপনে ব্যত্যয়ী হওয়ায় তাঁর প্রতি আমার আগ্রহ জাগে। পৃথিবীর বেশ কিছু বিরল মানুষের সঙ্গে সাক্ষাৎ ও ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্য ঘটেছে আমার দৈবক্রমে। তাঁদের সান্নিধ্য আমার জীবনের ধারাকেই পাল্টে দিয়েছে। সুলতান ছবি আঁকতেন ক্যানভাসে বা কাগজে, সাহায্য নিতেন রংতুলির। আর আমি ছবি আঁকি খ্যাতিমান মানুষদের মুখের, সাহায্য নিই ক্যামেরার। ক্যামেরা আমার কাছে কখনো তুলি ও কলমের মতো মনে হয়। যাঁরা সৃষ্টির পেছনে ছুটে বেড়ান হন্যে হয়ে, আমি ছুটে বেড়াই তাঁদের পেছনে।
তাঁর 888sport live chatকর্ম ও জীবনযাপনের যৌথ দৃশ্য ধরে রাখার জন্য আমার ছিল প্রাণপণ চেষ্টা। তাঁর জীবনের রহস্যে ঢুকে পড়ে একাত্ম হওয়ার চেষ্টা করেছি। সুলতানের নড়াইলের বাড়ি, নিবিড় নিসর্গ, 888sport promo code, বেড়াল, কুকুর, খরগোশ, বেজি, টিয়া, দাঁড়কাক, সাপ, গাছগাছালি, 888sport appর নাগরিক জীবনের পলায়নপর অবসরে – সবকিছুর মধ্যে অদৃশ্য হয়ে মিশে থেকেছি আমি। তিনি নেশায় বুঁদ হয়ে ছবি আঁকতেন। কোলে বসা কয়েকটি বেড়াল তন্ময় হয়ে ছবি আঁকা দেখত। বিদ্যুৎবিহীন মাছিমদিয়ায় হারিকেনের অস্পষ্ট আলোয় সুলতানের এমন অনেক দুর্লভ মুহূর্ত বন্দি করেছি আমার ক্যামেরায়। সব ছবিই তাঁর বাস্তব জীবন থেকে নেওয়া। নিজেকে অদৃশ্য রেখে আমি দৃশ্যগুলো ধারণ করেছি সেটা শাটার স্পিডে। তিনি যেন হ্যামিলনের সেই বাঁশিওয়ালা। তাঁর বাঁশির সুরে ছুটে আসতো পশুপাখি, ছুটে আসতো নিসর্গ। আমার আলোকচিত্রে ছড়িয়ে আছে তাঁর একাকিত্বের গহন নির্জনতা। নিসর্গের প্রতি ছিল তাঁর অপার ভালোবাসা। নীরবতা ভেঙে একসময় সুলতান আমাকে বলেছিলেন, ‘গোধূলি আমার প্রিয়। এর মধ্যে আমি বিচ্ছেদ এবং বেদনার মুখ দেখতে পাই। যে-জীবনে বিষাদ ও দুঃখ নেই, সে-জীবন বৈচিত্র্যময় হতে পারে না। প্রেম আর বিরহ 888sport live chatীর জন্য অপরিহার্য। প্রেম উত্তরাধিকারসূত্রে কেউ পায় না। এটা মনের সচল অনুভূতি দিয়ে অর্জন করে নিতে হয়। জীবজন্তুর জন্য ভালোবাসা না থাকলে মানুষ মানুষকে অন্তর দিয়ে ভালোবাসতে পারে না। আমি বৃক্ষের কথা শুনি এবং বুঝি। অরণ্য আমার জন্য নীরবে কাঁদে। শহরের মানুষদের চোখ নেই, তারা বৃক্ষের চাওয়া-পাওয়া অনুভব করতে পারে না। শহরের গর্বিত মানুষরা বৃক্ষ কেটে সাফ করে ফেলে দিচ্ছে, তাদের আপনারা বাধা দিচ্ছেন না, কিন্তু একটা ক্ষুধার্ত পশুকে তাড়া করে তার ন্যায্য খাদ্য থেকে ভাগ বসাচ্ছেন। এই পৃথিবী আপনাদের একার নয়। মানুষ, বৃক্ষ, জীবজন্তু এমনকি একটা ক্ষুদ্র পিঁপড়েও বাঁচতে চায়, বাঁচার অধিকার সবার সমান।
‘ছবি আঁকায় যারা আমাকে উজ্জীবিত করে, তারা গ্রামবাংলার খেটে খাওয়া কৃষক। তাদের নিরন্ন রেখে গোটা দেশের খাদ্য উন্নয়ন বা কৃষি উন্নয়ন সম্ভব নয়। ওদের অন্ন আপনারা লুট করছেন। একদিন এমন হবে – গ্রামের কৃষকরা শহরে এসে বড়লোকদের সব তথাকথিত কীর্তি ভেঙে ফেলে দেবে। আমার কৃষক মোটেও দুর্বল নয়। তাদের শক্তি সম্পর্কে আপনাদের কোনো ধারণাই নেই। গ্রামবাংলায় কৃষি888sport live chatে পুরুষের চাইতে 888sport promo codeর শ্রম কম কিসের। আমার ছবিতে পুরুষের পাশাপাশি 888sport promo codeর সৌন্দর্য ও শক্তিকে দেখানো হয়েছে। ভালোবাসতে পারলেই আমাদের সব অভাব দূর হযে যাবে।’
আপনার ছবিতে কৃষকদের পেশিবহুল দেখা যায়। শারীরিক শক্তি দেখানোর ওপর এত জোর দিলেন কেন?
‘কোনো অলৌকিক শক্তির ওপর আমি ভরসা রাখি না। বাংলার কৃষক আসলেই শক্তিশালী ও কর্মঠ। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, শহরের মানুষদের মুনাফাভিত্তিক শোষণ, যুদ্ধ, মহামারি ও অভাবে জর্জরিত কৃষক সমাজ যুগ যুগ ধরে ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে গেছে। তাছাড়া ধনীরাকৌশলেও এদেরকে শক্তিহীন করার চেষ্টা করেছে। আমার কৃষক সত্যিকার অর্থে আমার ছবির বিষয়বস্তুর মতোই শক্তিশালী এবং পেশিবহুল। প্রতিকূলতার মধ্যে টিকে থাকার জন্য আমি তাদের বলশালী দেখতে চেয়েছি। অনেকেই আমাকে বলেছেন অমন ফিগার পৃথিবীর কোথাও নেই। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি, পেশিবহুল ফিগার আমার কৃষকের মধ্যে লুকিয়ে আছে, যা আপনারা দেখতে পান না।’
একজন কবি যেমন একটি মহার্ঘ্য পঙ্ক্তির জন্য অপেক্ষা করেন, একটি জুতসই শব্দের পেছনে ছুটে বেড়ান উ™£ান্তের মতো, আমাকেও তেমনই অপেক্ষা করতে হয় দুর্লভ মুহূর্তের জন্য, আমাকেও তেমনই ছুটে বেড়াতে হয় যথার্থ মুখভঙ্গির পেছনে। যে-মুহূর্তে ধরা দেয় সেই শব্দমালা, সেই মুখভঙ্গি – পত্রপাঠ শাটারে চাপ দিই। অদৃশ্য যাতনায় টান পড়া মাত্র মনের বড়শিতে গেঁথে আনা কবির শব্দের মতোই আমার এসব মনোহর মুহূর্ত সযত্নে সঞ্চয় করি। ১৯৮০ সালে সুলতানের নড়াইলের বাড়িতে, যার কোনো দরজা-জানালা ছিল না, সেখানে এক অভাবনীয় দুর্লভ মুহূর্ত আমার জন্য অপেক্ষা করে। সুলতান যখন হাতে তুলে নিয়েছেন কাগজ, কলম ও পেনসিল, আমি খুঁজছিলাম সুলতানের মুখচ্ছবি। কিন্তু আমার আগেই ব্যতিক্রমী 888sport live chatী খুঁজে পেয়েছেন তাঁর ছবির বিষয়। আমি মুখোমুখি বসেছিলাম একটা ভাঙা চেয়ারে। সুলতানের চোখ আমার মুখে ফোকাস করল আর তাঁর ডান হাতের কলম নড়েচড়ে সাদা কাগজে দাগ কাটছিল। কয়েক মিনিটের মধ্যে টের পেলাম সুলতানের হাতে জন্ম নিচ্ছে আমার মুখের স্কেচ। হতবাক আমি নিজেই এক স্থিরচিত্রে পরিণত হয়ে যাই। সেই মুহূর্তে আমি বিস্মিত। এ-ও কি সম্ভব! যাঁর খ্যাতি ঈর্ষণীয়, যিনি কিংবদন্তিতুল্য, শত অনুরোধ আর অর্থলোভ দেখিয়েও যাঁকে দিয়ে কেউ মুখের স্কেচ করাতে পারেননি, সেই এস এম সুলতানের হাতে চিত্রিত হচ্ছি আমি! আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ মুহূর্তগুলোর একটি এই অভিজ্ঞতা।
দীর্ঘকাল আমার ক্যামেরার ফোকাসে থাকা এস এম সুলতান ও আমি একসময় বন্ধু হয়ে যাই।


Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.