মহাশ্বেতা দেবী : অগ্নিগর্ভ জীবন ও সৃষ্টি

হোসনে আরা

নিজ সংকল্পে স্থির থাকতে পারলেন না তিনি। প্রায় দুই দশক পূর্বে ১৯৯৬ সালের ডিসেম্বরে 888sport appয় আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের সঙ্গে এক আলাপচারিতায় তিনি এ-সংকল্প ব্যক্ত করেছিলেন যে, তিনি ২০২৫ পর্যন্ত বাঁচবেন এবং পরবর্তীকালের একজন প্রত্যক্ষদর্শী হবেন। প্রকৃতির অমোঘ নিয়মানুবর্তী হয়ে নয় বছর আগেই তাকে চলে যেতে হলো ২০১৬ সালের ২৮ জুলাই, বৃহস্পতিবার অপরাহ্ণে। ৯১ বছরের দীর্ঘ জীবনে অফুরন্ত দিয়েছেন তিনি বাংলা 888sport live footballকে। যদিও জীবনের শেষ তিন বছর লেখনী সচল ছিল না তাঁর জরা-বার্ধক্য-888sport sign up bonusহীনতার প্রকোপে, তবু প্রায় ছয় দশক ধরে নিপীড়িত মানুষের অলিখিত সংগ্রামী জীবনেতিহাসকে 888sport live footballের উপাদান হিসেবে গ্রহণ করে বাংলা 888sport live footballে তিনি নতুন মাত্রা যোগ করেছেন। জীবনবিচ্ছিন্ন ভাবকল্পনা বা নিছক প্রণয়ের অর্ধকল্পিত উপাখ্যান নয়, প্রবলভাবেই জীবনসম্পৃক্ত 888sport live footballিক মহাশ্বেতা সমগ্র জীবন মানুষ হিসেবে মানুষের প্রতি প্রবল দায়বোধে 888sport live football রচনা করেছেন। জল-মাটি-শস্যের গন্ধবাহী মহাশ্বেতা দেবীর কথা888sport live football বাংলা 888sport live footballে যে স্বতন্ত্র ধারার সূচনা করেছে তা বহমান আছে, থাকবে আরো বহুকাল।

১.১

১৯২৬ সালের ১৪ জানুয়ারি মকরসংক্রান্তির দিনে 888sport appর আরমানিটোলার ১৫নং জিন্দাবাহার লেনের মামাবাড়িতে মহাশে^তা দেবীর জন্ম। বাবা মণীশ ঘটকের তখন পঁচিশ বছর এবং মা ধরিত্রী দেবীর আঠারো। বাবা ছিলেন একাধারে কবি এবং 888sport live footballিক; ‘যুবনাশ্ব’ ছদ্মনামে বাংলা ছোটগল্পে এক নতুন যুগের প্রণেতা। মাও কবি ছিলেন, যদিও লিখেছেন সামান্য কিন্তু পড়াশোনার ক্ষেত্র তাঁর ছিল বিসত্মৃত। মহাশে^তা-মানসে পিতৃ ও মাতৃকুলের প্রভাব ছিল অসামান্য। মহাশে^তা দেবীর প্রমাতামহ যাদবচন্দ্র চক্রবর্তী ছিলেন রামমোহন রায়ের প্রথম জীবনীকার; দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর, কেশবচন্দ্র সেন, ঈশ^রচন্দ্র বিদ্যাসাগরের সঙ্গে তাঁর সুসম্পর্ক ও ঘনিষ্ঠতা ছিল। তাঁর কন্যা কিরণময়ীর অর্থাৎ মহাশে^তার মাতামহীর ব্যক্তিগত গ্রন্থাগার, 888sport live footballপাঠ ও উদার মানসিকতা মহাশে^তার মানসে সুদূরপ্রসারী প্রভাব রেখেছিল। ইতিহাসের প্রতি কিরণময়ী দেবীর টান ছিল অসামান্য, তাঁর গ্রন্থাগারে প্রায় প্রতিটি জেলার ইতিহাসের সংগ্রহ ছিল; পরবর্তীকালে 888sport live footballিক মহাশে^তার ইতিহাসপ্রিয়তার অন্যতম উৎস সম্ভবত তাঁর মাতামহী। শৈশবে তিনি তাঁর কাছ থেকে দেশি রূপকথা ছাড়াও শুনেছিলেন ডেভিড কপারফিল্ড ও অলিভার টুইস্টের গল্প। দিদিমা কিরণময়ী দেবীর ঔদার্যের একটি নিদর্শন মহাশ্বেতা দেবীর 888sport sign up bonusচারণায় পাওয়া যায়। কবি গোবিন্দ দাসের (১৮৫৫-১৯১৮) মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র সাহায্যের জন্য এলে তিনি নিজ হাত থেকে একগাছি বালা খুলে দিয়েছিলেন; কেননা, সে-সময়ে তাঁর হাতে কোনো টাকা ছিল না (মহাশ্বেতা ১৯৯৬ : ১৪)। কবি অমিয় চক্রবর্তী ছিলেন কিরণময়ী দেবীর ভ্রাতুষ্পুত্র।

মাতামহ নরেন্দ্রনাথ চৌধুরী পেশায় ছিলেন উকিল; স্বদেশি, রাজবন্দিদের কেস করতেন বলে যথেষ্ট পসার ছিল না তাঁর। তিনি নিজে 888sport live লিখতেন এবং ‘বঙ্গীয় 888sport live football পরিষদের’ 888sport app শাখার সম্পাদক ছিলেন। পাবনা জেলার ভারেঙ্গা গ্রামে ছিল তাঁর পিতৃনিবাস। নরেন্দ্রনাথ-কিরণময়ী দেবীর চার পুত্র ও চার কন্যার প্রায় প্রত্যেকেই যশস্বী হয়েছিলেন। বড় ছেলে শচীন্দ্রনারায়ণ ইকোনমিক অ্যান্ড পলিটিক্যাল উইকলি পত্রিকার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও সম্পাদক ছিলেন। দ্বিতীয় পুত্র পদার্থবিদ দেবনারায়ণ পশ্চিমবঙ্গের ‘ইলেকট্রনিক 888sport live chatে’র অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। তৃতীয় পুত্র হিতনারায়ণ চিত্রজগৎ ও রাজনৈতিক মানুষের খুব ঘনিষ্ঠ ছিলেন। নেহেরু, ইন্দিরা গান্ধী, সরোজিনী নাইডু, দিলীপকুমার সকলের সঙ্গেই তিনি ঘনিষ্ঠ ছিলেন। সর্বকনিষ্ঠ পুত্র নরনারায়ণ (শঙ্খ চৌধুরী) ছিলেন ভাস্কর। বিশ^ভারতীর সঙ্গে তিনি যুক্ত ছিলেন এবং ললিতকলা আকাদেমির চেয়ারম্যান হয়েছিলেন। বড় মেয়ে শান্তিময়ী গৃহবধূ, মেজ মেয়ে ধরিত্রী দেবী মহাশে^তার মা, তৃতীয় মেয়ে শকুন্তলা লীলা রায়ের সঙ্গে শ্রীসঙ্ঘজয়শ্রীতে কাজ করতেন, ছোট মেয়ে স্বপ্নময়ী শান্তিনিকেতনে সংগীতভবনের স্কলারশিপ লাভ করেন।

মহাশ্বেতার মানসে তাঁর সমগ্র পিতৃ ও মাতৃকুলের পরিবারের সাংস্কৃতিক ও ঐতিহ্য-চর্চা নিবিড়ভাবে কার্যকর ছিল। তাঁর পিতামহ সুরেশচন্দ্র ঘটক ইংরেজি ও ইতিহাস বিষয়ে কৃতিত্বের সঙ্গে ডবল এমএ পাশ করেন। পরে বেঙ্গল সিভিল সার্ভিসে এসডিও হন। তাঁর আদি বাড়ি ছিল পাবনা জেলার পুরনো ভারেঙ্গায়। পিতামহী ইন্দুবালা দেবীও ছিলেন সে-সময়ের শিক্ষিত এবং প্রবল সংস্কৃতিমনা ব্যক্তিত্ব। এ দম্পতির পাঁচ পুত্র ও চার কন্যা – মণীশ, সুধীশ, তপতী, সম্প্রীতি, ব্রততী, আশীষ, লোকেশ, ঋত্বিক ও প্রতীতি। এঁরা প্রত্যেকেই বাংলার 888sport live football-সংস্কৃতি ক্ষেত্রে স্বনামধন্য। মণীশ ঘটক কবি ও কথা888sport live footballিক। সুধীশ ঘটক লন্ডনে সিনেমাটোগ্রাফি শিখে স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবি তৈরি করেন এবং ক্যামেরাম্যান হিসেবেও খ্যাতি পান। আশীষ ঘটকের পরিচিতি ঘটে সংগীত-অনুরাগী রূপে। লোকেশ ঘটক নাবিক ও 888sport slot gameপিপাসু – সেইসঙ্গে 888sport liveকার ও 888sport app download apk latest versionক হিসেবেও পরিচিত। ঋত্বিক ঘটক গল্পকার হলেও অবি888sport app download for androidীয় live chat 888sport-নির্মাতা হিসেবেই সমগ্র বাংলায় খ্যাত। মেয়েরা সকলেই সংগীত-888sport live football অনুরাগী। অর্থ-বিত্ত নয়, মেধা-মননের মাপকাঠিতে এ-দুই পরিবার ধনী ছিল নিঃসন্দেহে। বুদ্ধদেব বসুর 888sport sign up bonusচারণাতেও এ-দুই পরিবারের 888sport live footballচর্চার পরিচয় পাওয়া যায়। দুই পরিবারেই দেশ-বিদেশের বই পঠিত ও আলোচিত হতো। (বুদ্ধদেব ১৯৭৬ :৭)

 

১.২

মণীশ ঘটক ও ধরিত্রী দেবীর নয় সন্তানের মধ্যে মহাশে^তা সবার বড়। পরের আটজন হলেন – শাশ্বতী (১৯২৯-৯৫), অনীশ (১৯৩০-৭৮), অবলোকিতেশ (১৯৩৩-৭৩), অপালা (১৯৩৫-), শমীশ (১৯৩৮-৮১), মৈত্রেয় (১৯৪১-২০০৩), সোমা (১৯৪২-), শারী (১৯৪৫-)। সহজাত 888sport live chat-888sport live football প্রবণতার অধিকারী ছিলেন এঁরা সকলেই, একা কেবল মহাশ্বেতা পেয়েছেন 888sport live footballিকের খ্যাতি। এ সম্পর্কে ব্যক্তিগত 888sport sign up bonusচারণে মহাশ্বেতা বলেছেন, ‘বাবারা সব ভাইবোন যেমন আমার ভাইবোনরাও জন্মসূত্রে আঁকার হাত, গানের গলা, অভিনয় ক্ষমতা পেয়েছিল। উত্তরাধিকারলব্ধ সম্পত্তিতে কিছু হয় না। নিরন্তর চেষ্টায় তাকে বাড়াতে হয়’ (মহাশ্বেতা মে ১৯৯৬ : ২৬)। নিজ সম্পর্কেও তিনি একই কথার পুনরাবৃত্তি করতেন; তিনি বলতেন যে, তিনি লিখতে-লিখতে লেখক হয়েছেন।

মহাশে^তার বাবা মণীশ ঘটক (১৯০২-৭৯) প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে বিএ পাশ করে আয়কর বিভাগে চাকরিতে যোগ দেন ১৯২৯ সালে। বাবার বদলির চাকরি-সূত্রে তাঁরা সপরিবারে 888sport app, ময়মনসিংহ, জলপাইগুড়ি, দিনাজপুর, ফরিদপুর, মেদেনীপুর, বহরমপুর বিভিন্ন স্থানে থেকেছেন।  তবে চাকরিতে উন্নতি করা তাঁর ধাতে ছিল না; সকলের পদোন্নতি হতো, তাঁর ঘটত পদাবনতি। স্বদেশিদের প্রতি স্ত্ততিমূলক 888sport app download apk ‘বাঙালির ছেলে’ লেখার অভিযোগে একবার তার পদাবনতি ঘটে। একাধিকবার পদাবনতি ঘটলে এবং মিথ্যে অভিযোগে সাসপেন্ড করা হলে তিনি সরকারি চাকরি ছেড়ে স্বাধীনভাবে বহরমপুরে প্র্যাকটিস শুরু করেন এবং সেখানে বাড়ি করে স্থায়ী হন। যুবনাশ^ ছদ্মনামে পটলডাঙার পাঁচালী লিখে তিনি 888sport live footballকে অবক্ষয়িত মানুষের কাছে নিয়ে আসেন। বর্তিকা পত্রিকা সম্পাদনার মধ্য দিয়ে তাঁর স্বতন্ত্র সাংস্কৃতিক ও 888sport live footballিক মানসের পরিচয় পাওয়া যায়।

 

২.১

মহাশ্বেতা দেবীর শিক্ষাজীবন শুরু হয় 888sport appর ইডেন মন্টেসরি স্কুলে মাত্র চার বছর বয়সে; কিন্তু স্কুলে তিনি নিয়মিত হননি। বাবার বদলির সূত্রে মাঝে বিদ্যালয়-জীবনে ছেদ পড়লেও বাড়িতে পড়াশোনার কোনো বিরাম ছিল না। ১৯৩৫ সালে বাবা মেদেনীপুরে বদলি হলে তিনি সেখানকার মিশন স্কুলে চতুর্থ শ্রেণিতে ভর্তি হন। পরের বছর ১৯৩৬ সালে তাঁকে ভর্তি করা হয় শান্তিনিকেতনে। মাত্র দশ বছর বয়সে মা-বাবাকে ছেড়ে শান্তিনিকেতন যেতে মহাশ্বেতা কেঁদেছিলেন; কিন্তু তিন বছর পর শান্তিনিকেতন ছেড়ে কলকাতায় আসতে কেঁদেছিলেন অনেক বেশি। পঞ্চম থেকে সপ্তম শ্রেণি – এ-দুবছর শান্তিনিকেতনে পড়ার অভিজ্ঞতা তাঁকে ঋদ্ধ করেছিল অনেকখানি। রবীন্দ্রনাথের প্রত্যক্ষ সংস্পর্শে আসাটা ও রবীন্দ্র-প্রভাবিত মামাবাড়ির বলয়ে বেড়ে ওঠা মহাশ্বেতার জীবনের বিশেষ উলেস্নখযোগ্য ঘটনা। সপ্তম শ্রেণিতে রবীন্দ্রনাথকে তিনি পেয়েছিলেন বাংলার শিক্ষক হিসেবে। এ-সময় বঙ্কিমচন্দ্রের জন্মশতবর্ষ উদযাপন করতে দেখেছেন রবীন্দ্রনাথকে। শান্তিনিকেতনের এ-দুই বছরের  888sport sign up bonusচারণ রয়েছে তাঁর দুটি বইয়ে – আমাদের শান্তিনিকেতন (২০০১) ও ছিন্ন পাতার ভেলায় (২০০৬)।

তাঁকে শান্তিনিকেতন ছেড়ে কলকাতায় ফিরতে হয় অসুস্থ মা ও ছোট পাঁচ ভাইবোনের দেখাশোনা করার জন্য। মাত্র তেরো বছর বয়সে গৃহকর্ত্রীর কঠোর দায়িত্ব তিনি পালন করা শুরু করেন সুচারুভাবে। পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক ও 888sport live football পাঠ থাকে অব্যাহত। ১৯৩৯ সালে শান্তিনিকেতন থেকে ফেরার পর তিনি বেলতলা বালিকা বিদ্যালয়ে ক্লাস এইটে ভর্তি হন। এ-সময়ে বন্ধুসম সমবয়সী কাকা ঋত্বিক ঘটকের সান্নিধ্যে তিনি ইংরেজি 888sport live football পাঠে মনোযোগী হন। দেশ-কালের অস্থিরতা ও বিশ্ব888sport live footballের সংযোগে তাঁর লেখকজীবনের প্রস্ত্ততিপর্ব ধরে নেওয়া যায় সে-সময়কে। এ-সময়ই তাঁর প্রথম লেখা প্রকাশিত হয় ১৯৪০-এ রংমশাল পত্রিকায়। রবীন্দ্রনাথের ‘ছেলেবেলা’ সম্পর্কে লিখেছিলেন তিনি এবং এটি ছিল তাঁর প্রথম প্রকাশিত লেখা।

১৯৪২-এ ম্যাট্রিক পাশ করে আশুতোষ কলেজে ভর্তি হন মহাশ্বেতা। কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য না হলেও তিনি পার্টির কর্মকা–র সঙ্গে যুক্ত হন। পার্টির মিটিংয়ে যেতেন তিনি, পার্টির মুখপত্র People’s war এবং জনযুদ্ধ বিক্রি করতেন, পাঠও করতেন। কমিউনিজমের প্রতি আস্থা গড়ে উঠেছিল সম্ভবত মানুষের প্রতি গভীর ভালোবাসার কারণেই। তবে প্রথাবদ্ধ রাজনৈতিক গ–তে আবদ্ধ তিনি হননি। দলীয় রাজনীতিতে তাঁর আস্থা ছিল না, রাজনীতির ছকেবাঁধা জীবন তাঁর অভিপ্রেত নয়, মানবতাবাদে বিশ্বাসী হলেও তত্ত্বনির্ভর হয়ে ওঠেননি তিনি।

ছাত্রজীবনে ভাইদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে গাছে চড়া, সাইকেল চালানো, সাঁতার কাটার স্বতঃস্ফূর্ততায় মহাশ্বেতা ছিলেন প্রাণবন্ত। দৈহিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার প্রত্যয়ে হাজরা পার্কে তিনি লাঠিখেলা, ছোরাখেলা শিখতেন। অবশ্য মহাশ্বেতার মাতামহের গৃহে এর প্রচলন ছিল বহু আগে থেকেই। তাঁর ছোটমামা শঙ্খ চৌধুরীর ম্মৃতিচারণে জানা যায় যে, তাঁদের বাড়িতে মেয়েদের আত্মরক্ষার জন্য ছোরাখেলা, লাঠিখেলার ক্লাস হতো (শঙ্খ ২০০২ : ৮-৯)। সুতরাং প্রথাবহির্ভূত কর্মকা–র জন্য বাইরে সমালোচিত হলেও মহাশ্বেতা বরাবর মা-বাবার পূর্ণ সমর্থন পেয়েছেন মুক্তচিন্তা ও স্বাধীন জীবন গঠনে। আর্তের সেবা যেমন তিনি করেছেন, সাংসারিক দায়িত্বও পালন করেছেন। মায়ের পুরনো সেলাই মেশিন চালিয়ে তৈরি করেছেন জামাকাপড়, মশারি, বালিশের কভার। রান্নাবান্নাও করেছেন। ছাত্রীজীবনেই অর্থনৈতিকভাবে স্বনির্ভর হওয়ার অভীপ্সায় ১৯৪২ সালে সহপাঠিনীদের সহযোগিতায় ‘চিত্ররেখা’ নামে কাপড় ছাপানোর দোকান খুলেছিলেন। দোকানের মূলধন হিসেবে প্রদত্ত তিরিশ টাকাও তাঁর নিজের উপার্জনের। হ্যান্ডবিল দেখে ভাই অবলোকিতেশের বুদ্ধি ও মায়ের সক্রিয় সমর্থনে 888sport app থেকে কাপড় রং করার সাবান ভিপি করে আনিয়ে কলেজে বিক্রি করতেন। সেই ব্যবসা থেকে জমেছিল ওই তিরিশ টাকা। এ ব্যবসা অবশ্য তিনি স্বল্পসময়ই চালিয়েছেন এবং তারপর আবারো ব্যস্ত হয়েছেন পড়াশোনা ও বুদ্ধিবৃত্তিক কর্মকাণ্ড।

বাবার বদলিসূত্রে ১৯৪৪-এ মহাশ্বেতা চলে আসেন রংপুরে। সেখানে প্রখ্যাত কণ্ঠ888sport live chatী বিনয় রায় ও রেবা রায়চৌধুরীর সান্নিধ্যে এসে তিনি ভারতীয় গণনাট্য সংঘের নৃত্যগীতের অনুষ্ঠানে যোগ দেন। তাঁর এ-অভিজ্ঞতা সম্ভবত পরবর্তী জীবনে তাঁকে নাটক রচনায় উদ্বুদ্ধ করেছিল। পুনর্বার তিনি শান্তিনিকেতনে বিএ পড়তে যান ১৯৪৪-এর শেষের দিকে, সাংসারিক দায়িত্ব থেকে কিছুটা অব্যাহতি পেয়ে, ছোট বোন মিতুল সে-দায়িত্ব নেওয়ায়। এবার শান্তিনিকেতন তাঁকে প্রথমবারের মতো আপস্নুত করতে পারেনি, জীবনের রূঢ় বাস্তবতা, পঞ্চাশের মন্বন্তর তাঁর মানস-গঠনকে পাল্টে দিয়েছিল অনেকখানি। দ্বিতীয়বারে শান্তিনিকেতনে পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি সামাজিক দায়বদ্ধতায় প্রতিবাদ-সংগ্রামে সক্রিয় অংশ নিয়েছেন। গান্ধী দিবসে স্বাধীনতা-সংগ্রামীদের, কৃষক-শ্রমিকদের নিয়ে পোস্টার এক্জিবিশন করেছেন। এসবই তাঁর সংগ্রামী চেতনাকে আরো উজ্জীবিত করেছে এবং পরবর্তী সময়ে বিদ্রোহের কাহিনি রচনার পূর্বসূত্র হিসেবে ক্রিয়াশীল থেকেছে। শান্তিনিকেতনে থার্ড ইয়ারে পড়ার সময় দেশ পত্রিকার সম্পাদক সাগরময় ঘোষের কথায় তিনি ছোটগল্প লেখা শুরু করেন। সে-সময়ে তাঁর তিনটি ছোটগল্প দেশ পত্রিকায় ছাপা হয়। প্রতিটি গল্পের জন্য তিনি পারিশ্রমিক হিসেবে দশ টাকা করে পান; লেখাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করার প্রেরণা তৈরি হয় এ-সময়টাতে।

১৯৪৬ সালে ইংরেজি অনার্সসহ বিএ পাশ করে শান্তিনিকেতন থেকে কলকাতা ফিরে আসেন মহাশ্বেতা এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে এমএ (ইংরেজি) ক্লাসে ভর্তি হন। কিন্তু ১৯৪৬ সালের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার পরিণামে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সাময়িকভাবে তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়ের লেখাপড়া স্থগিত হয়ে যায়। অবশ্য তাই বলে তিনি থেমে থাকেননি, নানা কাজে যুক্ত থেকেও প্রায় সতেরো বছর পর ১৯৬৩-তে তিনি এমএ পাশ করেন।

 

২.২

প্রখ্যাত নাট্যকার ও 888sport live footballিক বিজন ভট্টাচার্যের সঙ্গে পারিবারিকভাবে তাঁর বিয়ে হয় ১০ ফেব্রম্নয়ারি ১৯৪৭ সালে। সে-সময়ে কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য হিসেবে বিজন ভট্টাচার্য কোনো অর্থনৈতিক কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। সংসার চালানোর পুরো দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে মহাশ্বেতা ১৯৪৮ সালে পদ্মপুকুর ইনস্টিটিউটে শিক্ষকতার কাজে যোগ দেন। জীবিকার তাগিদে তিনি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পেশায় নিযুক্ত হন; যথেষ্ট সংগ্রামসংকুল ছিল তাঁর কর্মজীবন। ১৯৪৯ সালে ইনকাম ট্যাক্সের অফিসে চাকরি পেলেও তা করা হয়নি, বড় অফিসার বাবা মণীশ ঘটকের কন্যার কেরানি পদে যোগ দেওয়া সামাজিকভাবে নিন্দনীয় বলে। এ-বছরই তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের পোস্টাল অডিটে আপার ডিভিশন ক্লার্ক হিসেবে চাকরি পান; কিন্তু এক বছরের মধ্যেই তাঁকে চাকরিচ্যুত করা হয় রাজনৈতিক সন্দেহের বশবর্তী হয়ে বা স্বামী কমিউনিস্ট হওয়ার অপরাধে। প্রখ্যাত আইনবিদ অতুল গুপ্তের চেষ্টায় অস্থায়ীভাবে পুনর্বহাল হলেও ১৯৫০-এ তাঁর ড্রয়ারে মার্কস ও লেনিনের বই পাওয়ার অপরাধে তাঁকে দ্বিতীয়বার চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়। এরপর আর সরকারি চাকরিতে ফেরার চেষ্টা করেননি তিনি।

চাকরি যাওয়ার পর তিনি সংসার চালাতে বাড়ি-বাড়ি ঘুরে কাপড় কাচার সাবান বিক্রি এবং সকাল-বিকেল টিউশনি শুরু করেন। একমাত্র সন্তান নবারুণের (২৩.০৬.৪৮-৩১.০৭.১৪) আগমন তাঁর জীবনযুদ্ধকে আরো কঠিন করে তোলে। ১৯৫৭ সালে রমেশ মিত্র বালিকা বিদ্যালয়ে শিক্ষকতার কাজ পাওয়ার পর কিছুটা স্থিতি আসে জীবনে। ১৯৬৩-তে এমএ পাশ করার পর ১৯৬৪-তে বিজয়গড় জ্যোতিষ রায় কলেজে ইংরেজি অধ্যাপক  হিসেবে যোগ দেন তিনি। লেখাকে পেশা হিসেবে নেওয়ার পর ১৯৮৪ সালে তিনি সেখান থেকে স্বেচ্ছায় অবসর নেন। জীবনের এ উত্থান-পতন, বিচিত্র পেশা ও মানুষের সঙ্গে সংযোগ এবং দারিদ্রে্যর কণ্টকময় দীর্ঘ দিনগুলো ব্যক্তি মহাশ্বেতাকে ঋদ্ধ করেছে, জীবন ও মানুষের কথাকার হওয়ার পথ সুগম করেছে। নিদারুণ দারিদ্র্য নিবারণের উপায় হিসেবে নানা পেশার পাশাপাশি 888sport live football রচনা চলতে থাকে এ-সময়ে পুরোদমে। দেশ পত্রিকায় তাঁর প্রথম জীবনীগ্রন্থ  ঝাঁসীর রাণী  ৬ আগস্ট ১৯৫৫ থেকে ৩১ ডিসেম্বর ১৯৫৫ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়। ১৯৫৬ সালে পুস্তকাকারে গ্রন্থটি মুদ্রিত হয় নিউ এজ প্রকাশনা সংস্থা থেকে। দেশ পত্রিকাতেই ‘যশবমত্মী’ নামে একটি গল্প প্রকাশিত হয় ১৯৫৮ সালে। এর আগে ১৯৫১ থেকে ১৯৫৬-এর মধ্যে শ্রীসুমিত্রা দেবী/ শ্রীমতী সুমিত্রা দেবী ও সুমিত্রা দেবী ছদ্মনামে তিনি অনেক গল্প লেখেন সচিত্র ভারত পত্রিকায়।

ব্যক্তিগত জীবনে এ-সময় বিপর্যয়ের সূত্রপাত হয়; ১৯৬১-৬২ সালে বিজন ভট্টাচার্যের সঙ্গে বিবাহ-বিচ্ছেদ ঘটে। ১২-১৩ বছরের নবারুণকে ফেলে চলে আসতে হয় তাঁকে। এ-যন্ত্রণা তাঁকে দীর্ণ করে তীব্রভাবে। অতিমাত্রায় ঘুমের ট্যাবলেট খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা চালান তিনি, কিন্তু ডাক্তারদের প্রচেষ্টায় বেঁচে যান। বেদনা ভোলার জন্যই যেন দ্বিতীয়বার বিয়ে করেন ১৯৬৩-৬৪ সালে অসিত গুপ্তকে। কিন্তু সে-বিয়েও সুখের হয়নি; ১৯৭৫-৭৬ সালে আবার বিবাহ-বিচ্ছেদ। এরপর থেকে একাকী নিঃসঙ্গ জীবন। কাজকে সঙ্গী করে এগিয়ে যাওয়া জীবনের পথে এবং সে-পথে সঙ্গী হিসেবে পাওয়া নিরন্ন, নিপীড়িত-অবহেলিত জনগোষ্ঠীকে।

১৯৭৯ সালে পিতার মৃত্যুর পর মণীশ ঘটক-সম্পাদিত বর্তিকা পত্রিকার সম্পাদনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন মহাশ্বেতা এবং এ-পত্রিকাকে পরিণত করেন ক্ষুদ্র কৃষক, কৃষিমজুর, আদিবাসী, 888sport live chat-শ্রমিক তথা সমাজের ব্রাত্য শ্রেণির মুখপত্রে। বর্তিকার স্বতন্ত্র চরিত্র নির্মাণের মাধ্যমে বাংলা 888sport live footballে একটি নতুন বৈপস্নবিক দিগন্ত উন্মোচনে গুরুত্বপূর্ণ প্রয়াস মহাশ্বেতাকে বাংলা লিটল-ম্যাগাজিন আন্দোলনে বিশিষ্ট স্থান দিয়েছে। সাংবাদিকতা তাঁর 888sport live football-রচনার অন্তরায় হয়নি, বরং সহায়ক হয়েছে। ১৯৮২-৮৪ সালে তিনি যুগান্তরে ভ্রাম্যমাণ সাংবাদিক হিসেবে যোগ দেন কলেজ থেকে দুই বছরের ছুটি নিয়ে; আদিবাসী এবং ব্রাত্য শ্রেণির মানুষের জীবনসংগ্রামের প্রত্যক্ষদর্শী হয়ে তাদের প্রতি সহমর্মিতা ও ভালোবাসায় 888sport live footballের আসরে উপস্থাপিত করেন সে-জীবনকে।

 

৩.১

ঝাঁসীর রাণী তাঁকে লেখক হিসেবে খ্যাতি এনে দেয়। ভূগোল, ইতিহাস ও লোকসংস্কৃতি তাঁর লেখার অন্যতম উপাদান হয়ে ওঠে এ-সময় থেকেই। ইতিহাস-আশ্রিত এ-কাহিনি লেখার ইতিহাসও বেশ উপভোগ্য। হিন্দি ফিল্মের চিত্রনাট্য লেখার জন্য বিজন ভট্টাচার্য মুম্বাই যান ১৯৫২ সালে, মহাশ্বেতা তাঁর সহযাত্রী হন। মুম্বাইয়ে  বড়মামা, Economic and Political weekly-এর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক শচীন চৌধুরী থাকতেন। মামার কাছ থেকে তিনি ইতিহাসের, বিশেষত সিপাহি বিদ্রোহের কাহিনি পড়েন অখ- অবসরে। এ-বিষয়কে গ্রহণ করে তিনি ঝাঁসীর রাণীর জীবনীগ্রন্থ রচনায় ব্রতী হন এবং অল্প সময়ে চারশো পাতা লিখে ফেলেন; কিন্তু তাতে তৃপ্ত হতে না পেরে রচনার কাজ স্থগিত রেখে বন্ধুদের কাছ থেকে টাকা ধার করে ১৯৫৪ সালে বুন্দেলখ–র উদ্দেশে বেরিয়ে পড়েন। কয়েক মাস একা-একা বুন্দেলখ–র আনাচে-কানাচে ঘুরে সংগ্রহ করেন রানি-সম্পর্কিত আঞ্চলিক লোকগীতি এবং লোককাহিনি। রানির জীবনীকার বৃন্দাবনলাল ভার্মা ও রানির ভাইপো গোবিন্দ চিন্তামণির সঙ্গে যোগাযোগ করে ঝাঁসির সঙ্গে সম্পর্কিত আরো কিছু স্থান নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করে কলকাতায় ফিরে এসে নতুন করে লেখেন ঝাঁসীর রাণী। এ-সময় থেকেই তাঁর পেশাদারি লেখকের পথ সুগম হয়।  লেখকজীবনে সর্বদাই তিনি তথ্য, উপাত্ত, লোকজ উপাদান সংগ্রহ করে এবং বিষয়টিকে নিবিড়ভাবে অধ্যয়ন করে 888sport live football রচনায় ব্রতী হয়েছেন; 888sport live football-সৃষ্টি তাঁর কাছে শৌখিন মজদুরি নয়, বরং মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতার প্রকাশ।

ইতিহাস-আশ্রিত জীবনীগ্রন্থ ঝাঁসীর রাণী 888sport live footballিক হিসেবে মহাশ্বেতার অবস্থানকে একটি শক্ত ভিত্তি দেয়। সেই ভিত্তিতেই তাঁর পরবর্তী জীবনের সুউচ্চ 888sport live football-পিরামিড স্থাপিত। ১৯৫৭ সালে প্রকাশিত তাঁর প্রথম 888sport alternative link নটীর পটভূমি ১৮৫৭-এর মহাবিদ্রোহ; এ-বিদ্রোহের ঝঞ্ঝাসংকুল পটে খোদাবক্স ও মোতির প্রণয়ের আখ্যানে নটী ঐতিহাসিক 888sport alternative linkের শর্তপূরণ করেছে। মহাবিদ্রোহের পটভূমিতে এ-সময় তিনি আরো লিখেছেন 888sport alternative link অমৃত সঞ্চয়ন (১৯৬২) ও গল্প ‘চম্পা’ (১৯৫৯); আঠারো শতকের বর্গি আক্রমণকে উপজীব্য করেছেন আঁধার মানিক (১৯৬৬) 888sport alternative linkে। এ-কাহিনিগুলোতে তিনি আঠারো ও উনিশ শতকের বিদ্রোহ ও সাধারণ মানুষের সামাজিক জীবনকে একবিন্দুতে মিলিয়েছেন। তাঁর ঐতিহাসিক কথা888sport live football রাজবৃত্ত নয়, লোকবৃত্তকে প্রাধান্য দিয়েই রচিত। ইতিহাসকে ভিন্নভাবে দেখার তাঁর যে প্রবণতা তা আঁধার মানিক গ্রন্থের ভূমিকায় স্পষ্ট করেছেন তিনি – ‘ইতিহাসের মুখ্য কাজই হচ্ছে একই সঙ্গে বাইরের গোলমাল, সংগ্রাম ও সমারোহের আবর্জনা এবং ধ্বংসসত্মূপ সরিয়ে জনবৃত্তকে অন্বেষণ করা, অর্থ ও তাৎপর্য দেওয়া। আর তখনি, এই ভিতরপানে চোখ মেলার দরুনই অনিবার্যভাবে বেরিয়ে আসে সমাজনীতি ও অর্থনীতি; বেরিয়ে আসতে বাধ্য। কেননা, সমাজনীতি ও অর্থনীতি শেষ পর্যন্ত রাজনীতির পটভূমি তৈরি করে, তার সিদ্ধি ও সাফল্য এনে দেয়। এই সমাজনীতি ও অর্থনীতির মানে হলো লোকাচার, লোকসংস্কৃতি, লৌকিক জীবনব্যবস্থা’ (মহাশে^তা ২০০২/৫ : ১৯)। মহাশে^তার ইতিহাসচর্চা তাই পূর্বাপর সাধারণ মানুষের অস্তিত্বের ঘোষণার বার্তা বহন করে।

ঐতিহাসিক কাহিনির পাশাপাশি নিজ বৃত্তের মধ্যবিত্ত সামাজিক জীবনকেও 888sport live footballের বিষয় হিসেবে গ্রহণ করেছেন মধুরে মধুর (১৯৫৮), এতটুকু আশা (১৯৫৯), তিমির লগন (১৯৫৯), তারার আঁধার (১৯৬০), লায়লী আশমানের তারা (১৯৬২) প্রভৃতি 888sport alternative linkে। তবে মধ্যবিত্তের পারিবারিক ঘাত-প্রতিঘাতময় জীবন নয়, জীবনদর্শনের অভিনব সংজ্ঞায়ন ও প্রতিশ্রম্নতি নিয়ে ‘উজ্জ্বল মধ্যাহ্নদীপ্তির পূর্বাভাস’ যেন প্রতিভাসিত হয় এ-কালপর্বের 888sport live footballে।

পরবর্তীকালে কবি বন্দ্যঘটী গাঞির জীবন ও মৃত্যু (১৯৬৭), হাজার চুরাশির মা (১৯৭৪) ও অরণ্যের অধিকার (১৯৭৭) 888sport live footballিক হিসেবে তাঁর অবস্থানকে ভিন্ন এক উচ্চতায় পৌঁছে দেয়। কবি বন্দ্যঘটী গাঞির জীবন ও মৃত্যু 888sport alternative linkের পটভূমি হিসেবে তিনি গ্রহণ করেছেন ষোড়শ শতকের চৈতন্য-প্রভাবিত রাঢ়বাংলার সামন্তবাদী সমাজ ও আরণ্যক কৌম গোষ্ঠীজীবনকে। উচ্চাকাঙক্ষী এক চুয়াড় যুবক কলহণের নাম-পরিচয় গোপন করে কবি বন্দ্যঘটী হয়ে ওঠা এবং সত্য প্রকাশের অন্তিমলগ্নে সব হারিয়ে ট্র্যাজিক পরিণতির সম্মুখীন হওয়ার ইতিবৃত্তে এ-888sport alternative link অনবদ্য। ময়ূরের পুচ্ছধারী কাকের উপকথার যেন নবরূপায়ণ হয়েছে বন্দ্যঘটীর জীবনকথায়। পার্থপ্রতিম বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে, ‘মহাশ্বেতা যেন রচনা করেন একটা অ্যালিগরি, একটা রূপক, ঔপনিবেশিক ও উত্তর ঔপনিবেশিক মানসজগতের একটি প্যারাবেল যেন। আমাদের ইংরেজ হওয়া ইংরেজিভাষার হাত ধরে দ্বিতীয় জগৎ সৃষ্টির ঔপনিবেশিক উচ্চাকাঙক্ষার এলিট স্বপ্নের ট্র্যাজেডিই এই প্যারাবেলে দেখানো হয়’ (উদ্ধৃত, মহাশে^তা ২০০২/৬)। মহাশে^তা তাঁর কথা888sport live footballে সর্বদা ‘ইতিহাসের তাৎপর্যে প্রত্যক্ষ করতে চান সমকালকে’; এ-888sport alternative linkেও তাই ঘটেছে। ব্রাহ্মণ্য-শাসিত সমাজে অমত্ম্যজ-জনের অসিস্তহীনতা ও অসিস্তবাদী হয়ে-ওঠার সংগ্রাম কেবল সেকালের নয়, একালেরও।

নকশালবাড়ি আন্দোলনের পটভূমিতে রচিত হাজার চুরাশির মা 888sport alternative linkটি মহাশে^তা-কথা888sport live footballের এক মাইলফলক বলে বিবেচিত হয়, যদিও এর আগে ‘রং নাম্বার’, ‘শরীর’, ‘প্রাত্যহিক’ গল্পেও একই বিষয় অবলম্বিত হয়েছিল। ‘রং নাম্বার’ গল্পে নকশাল আন্দোলনে নিহত দীপঙ্করের বাবা তীর্থবাবুর মানস জগতের উন্মোচনের মতো হাজার চুরাশির মা 888sport alternative linkে নকশালপন্থী নিহত তরুণ ব্রতীর মা সুজাতার অন্তর্দহনকে বিসত্মৃতি দিয়ে সত্তরের উত্তাল সময়কে
ধারণ করা হয়েছে। জাতীয় জীবনের রক্তাক্ত এক অধ্যায়কে 888sport live footballের দলিলীকরণের মধ্য দিয়ে এ-888sport alternative linkে লেখক মধ্যবিত্তের আত্মতৃপ্তি ও মুগ্ধ সংকীর্ণতার প্রাকারে তীব্র আঘাত হানেন। গোর্কির মায়ের মতোই ব্রতীর মা সুজাতার অরাজনৈতিক সত্তা রূপান্তরিত হয় বিপস্নবী চেতনাসমৃদ্ধ সত্তায়।

অরণ্যের অধিকার 888sport alternative linkটি মহাশে^তার 888sport live footballিক জীবনের দিক পরিবর্তিত করে প্রবলভাবে। মুন্ডা বিদ্রোহের আখ্যানকে 888sport alternative linkের কলেবরে স্থান দিয়ে, বীরসা মুন্ডাকে নায়কোচিত মহিমা দানে সৃষ্ট এ-888sport alternative link যখন 888sport live football আকাদেমি 888sport app download bd পায়, মুন্ডারা একমাস ধরে মেলা করে, ঢোল বাজিয়ে নেচে-গেয়ে উৎসব করেছিল তাদের নিয়ে রচিত কাহিনি 888sport app download bd পেয়েছিল বলে এবং লেখক মহাশে^তাকে আক্ষরিক অর্থেই দেবী হিসেবে গ্রহণ করেছিল। এ 888sport alternative link প্রকাশের পরই লেখক আদিবাসীদের ‘মারাং দাই’ বা বড়দিদিতে পরিণত হন এবং তাঁদের জীবনের অন্দরমহলে প্রবেশাধিকার পান।

১৯৭৪ সালে শান্তি চৌধুরীর অনুরোধে live chat 888sportের জন্য বীরসা মুন্ডার ওপর লিখেছিলেন মহাশ্বেতা – পরবর্তীকালে অবশ্য চরিত্রটি তাঁকে আকর্ষণ করে এবং তিনি কুমার সুরেশ সিংয়ের Dust Storm and Hanging Mist বই ও এ-প্রসঙ্গিত আরো ইতিহাস-গ্রন্থ এবং আদিবাসী এলাকায় গিয়ে বহু অজানা তথ্য ও গান সংগ্রহ করে অরণ্যের অধিকার 888sport alternative linkটি লেখেন। 888sport alternative linkটি শুরু হয়েছে সিনেমার ফ্ল্যাশব্যাক বা 888sport live footballের analepsis পদ্ধতিমতো, শেষের কথা সামনে নিয়ে। বীরসার মৃত্যুঘোষণার মধ্য দিয়ে 888sport alternative linkের সূচনা, তারপর সময়কে এগিয়ে-পিছিয়ে নিয়ে এই মহানায়কের জীবন তথা বিদ্রোহের ইতিবৃত্তকে অক্ষরের মালায় সাজিয়েছেন ঔপন্যাসিক। অসাধারণ আঙ্গিক-বৈশিষ্ট্যে রচিত 888sport alternative linkটির কাহিনি তিনটি স্তরে গ্রথিত (সোহিনী ২০১২ : ১১৪)। এক. বীরসার পূর্বপুরুষের কাহিনি, যেখানে মুন্ডাদের প্রাচীন সমাজব্যবস্থা, গ্রামব্যবস্থা এবং উৎখাত হবার ঘটনা; দুই, বীরসার কাহিনি, যেখানে উলগুলানের উৎস ও তার প্রকাশের ঘটনা; এবং তিন, অমূল্যের ডায়েরি, যেখানে মুন্ডা সমাজের বাইরে থেকে দেখা, জানা ও বোঝা বীরসাকে ও উলগুলানকে। লক্ষণীয়, কাহিনির
তিনটি স্তরেই আদিবাসী জীবনব্যবস্থা, লোকাচার, সংস্কৃতি, স্বপ্ন ও সাধ-সাধ্যের নানা তথ্য ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। চোট্টি মুন্ডাকে বীরসার উত্তরসূরি নির্বাচিত করে ভিন্ন ধরনের সংগ্রামের আখ্যান রয়েছে মহাশে^তার চোট্টি মুন্ডা এবং তার তীর (১৯৮০) 888sport alternative linkে। চোট্টি চরিত্রকে কেন্দ্রে রেখে পৌনে শতাব্দীর কালপরিসরে এ-888sport alternative linkে তিনি রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পরিপ্রেক্ষিতে অমত্ম্যজ ও আদিবাসী জীবনের বঞ্চনার প্রান্তগুলো উন্মোচন করেছেন।

বিদ্রোহের তরঙ্গবিক্ষুব্ধতা মহাশে^তাকে আকর্ষণ করেছে সবসময়। মানুষের সংগ্রামশীলতাকে 888sport apk download apk latest versionর দৃষ্টিতে নিরীক্ষণ করে তা কথা888sport live footballের বিষয়ে অঙ্গীভূত করে মহাশে^তা রচেছেন একাধিক গল্প-888sport alternative link। শালগিরার ডাকে (১৯৮২) ও হুলমাহা (১৯৮২) 888sport alternative linkদ্বয়ে তিনি ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে সাঁওতাল বিদ্রোহের মহিমাকীর্তন করেছেন। শালগিরার ডাকে 888sport alternative linkে  বাবা তিলকা মাঝির নেতৃত্বে প্রথম সাঁওতাল বিদ্রোহ (১৭৮০-৮৫) এবং হুলমাহা 888sport alternative linkে সিধু-কানুর নেতৃত্বে ১৮৫৫-৫৬ খ্রিষ্টাব্দের সাঁওতাল বিদ্রোহকে উপজীব্য করা হয়েছে। ইংরেজ ঔপনিবেশিক শক্তির শাসন, দেশীয় সামন্ততান্ত্রিক শোষণের মূলোৎপাটন, সর্বোপরি স্বাধীন সাঁওতাল রাজ্য কায়েম করার জন্য সাঁওতালরা কেবল তীর-ধনুক এবং বর্শা-টাঙ্গির সাহায্যে যে-যুদ্ধ করেছে আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত, সমরে দক্ষ ইংরেজ সেনাবাহিনির বিরুদ্ধে – ইতিহাসে তা অনন্য। সাঁওতাল বিদ্রোহের কারণ, তাদের শোষণ-বঞ্চনার স্বরূপ এবং সাঁওতালজীবনের নীতি-নৈতিকতা ও তাদের স্বপ্ন-সাধ-আকাঙক্ষার অনুপম জীবন-ভাষ্যে বিদ্রোহের পটভূমি এবং তাদের বিদ্রোহের সম্পূর্ণ ইতিবৃত্ত নির্মাণ করেছেন মহাশ্বেতা দেবী অসাধারণ মমত্ব ও আন্তরিক ভালোবাসায় এবং ইতিহাসের প্রতি প্রায় পুরোপুরি আনুগত্য স্বীকার করে।

ঔপনিবেশিকদের বিরুদ্ধে আরেক সংগ্রামের ইতিবৃত্ত পাওয়া যায় তিতুমীর (১৯৮৪) 888sport alternative linkে। শালগিরার ডাকে 888sport alternative linkের কাঠামোবিন্যাস অনুসরণে এ-888sport alternative linkে তিতুমীরের জীবন ও মৃত্যুর আখ্যানে ইংরেজবিরোধী সংগ্রামকে যেমন ধারণ করা হয়েছে, তেমনি একাদশ-দ্বাদশ শতকের কৈবর্ত বিদ্রোহের পটভূমিতে রচিত হয়েছে কৈবর্ত  খ- (১৯৯৪)। কৈবর্ত ভীমের সঙ্গে শাসক রামপালের লড়াই, অবধারিতভাবে সপরিবারে ভীমের মৃত্যুর আখ্যানে এ-888sport alternative linkে লেখক লোকায়ত জীবনের অলিখিত ইতিহাসকে বি888sport sign up bonusর আড়াল থেকে স্পষ্ট করে তুলেছেন। স্বাধীন ভারতে প্রশাসনিক বৈরীর প্রতিকূলে অমত্ম্যজ-আদিবাসী জনগোষ্ঠীর সংগ্রামমুখর জীবনকে উপজীব্য করেছেন মহাশে^তা বহু 888sport alternative linkে। বসাই টুডু (১৯৭৮), মাস্টার সাব (১৯৭৯), অক্লান্ত কৌরব (১৯৮২), সুরজ গাগরাই (১৯৮৩), টেরোড্যাকটিল, পূরণ সহায় ও পিরথা (১৯৮৯), প্রথম পাঠ (১৯৮৯), ক্ষুধা (১৯৯২) প্রভৃতি 888sport alternative linkে অমত্ম্যজ-প্রান্তিক জনগোষ্ঠী বিদ্রোহের স্ফুলিঙ্গকে ধারণ করেছে কখনো ন্যূনতম মজুরির দাবিতে, কখনো বাঁধ তৈরির সরকারি সিদ্ধান্তে নিজ ভূমি হারাবার প্রতিবাদে, শিক্ষাকে মৌলিক অধিকার হিসেবে পাওয়ার প্রত্যয়ে, কখনো নিরন্তর অবহেলার শিকার হয়ে বেঁচে থাকার অধিকারকে প্রতিষ্ঠিত করতে, কখনোবা উচ্চবর্গীয়দের অমানুষিক অব্যাহত শোষণ-নিপীড়নের প্রতিকারে।

888sport alternative linkের মতো ছোটগল্পেও মহাশে^তা প্রতিবাদ-প্রতিরোধ-সংগ্রামকে উপজীব্য করেছেন অনায়াস দক্ষতায়। ‘দ্রৌপদী’, ‘জাতুধান’, ‘শিকার’, ‘শিশু’, ‘সাগোয়ানা’, ‘লাইফার’, ‘মাছ’, ‘বিছন’ প্রভৃতি গল্পে সমাজের নানা অবিচার-অন্যায়ের বিরুদ্ধে নিপীড়িত জনতার প্রতিবাদের 888sport live chatভাষ্য নির্মিত হয়েছে।

‘দ্রৌপদী’ (১৯৭৭) রচনার মধ্য দিয়ে মহাশে^তা এক অবি888sport app download for androidীয় আদিবাসী নকশাল 888sport promo codeচরিত্র গড়ে তোলেন। নকশাল আন্দোলনের পটভূমিতে গল্পটির কাহিনি বিসত্মৃত হয়েছে এবং একই সঙ্গে আদিবাসীদের জীবনের নানা বঞ্চনা ও সংস্কার এবং গৌরবের প্রান্ত কাহিনি-সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। 888sport promo codeর চিরন্তন দুর্বলতা নগ্নতাকে শক্তি হিসেবে, বিদ্রোহ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে এ-গল্পে। বিষয়বিন্যাসে, ভাষার সূক্ষ্ম বয়নে এবং এক্সপ্রেশনে ‘দ্রৌপদী’ সমগ্র বাংলা 888sport live footballে অনবদ্য স্বাতন্ত্র্যের দাবিদার।

‘জাতুধান’ ও ‘সাঁঝসকালের মা’ গল্পদ্বয়ে জীবনের দাবির কাছে ধর্মীয় কিংবা সামাজিক সংস্কারের পরাজয়কে চিহ্নিত করা হয়েছে। ‘জাতুধান’ গল্পের সাজুয়া ও ‘সাঁঝসকালের মা’ গল্পের সাধন উভয়েই ভাত অমত্মঃপ্রাণ। বন্যায় সাজুয়ার মৃত্যু হয়েছে ভেবে সকলে তার শ্রাদ্ধের জন্য যে চাল দেয়, জীবিতাবস্থায় ফিরে সে চালের বস্তা কাঁধে নিয়ে অন্ধকারে পালায়। আর সাধন ঘরে ফেরে তার মায়ের শ্রাদ্ধের চাল নিয়ে, ভাতের গন্ধে সে মাকে অনুভব করতে চায়। নিরন্ন মানুষের স্বপ্ন-সাধের এমন সামান্যতার বিবরণে লেখক প্রতিমুহূর্তে পাঠককে কেবল চমকিত করেন না, বরং তাদের তাড়িত করেন প্রবল দায়বোধে।

শাল বনাম সেগুনের লড়াইকে উপজীব্য করে মহাশে^তা রচেছেন ‘সাগোয়ানা’, ‘শূন্যস্থান পূর্ণ করো’ প্রভৃতি গল্প। শহরের ইটভাটায় আদিবাসী 888sport promo codeদের কেবল ক্রীতদাসী নয়, যৌনদাসী হিসেবে ব্যবহৃত হবার মর্মস্পর্শী বাস্তব কাহিনি নিয়ে রচিত হয়েছে ‘ইটের পরে ইট’, ‘শনিচরী’ প্রভৃতি গল্প। ঋণের দায়ে ক্রীতদাস হয়ে জীবনপাত করার আখ্যানভিত্তিক গল্প ‘দৌলতী’, ‘ভাতুয়া’, ‘আজীর’, ‘রাজাবাসার রূপকথা’, ‘পালামৌ’, ‘গোহুমণি’ প্রভৃতি। ‘জল’, ‘শিশু’, ‘নুন’, ‘জগমোহনের মৃত্যু’ গল্পগুলোতে প্রান্তিক জীবনের অসহায়ত্ব প্রকটিত হয়েছে।

‘দৌলতী’ গল্পে বনডেড লেবার নাগেসিয়া মেয়ে দৌলতী সমগ্র জীবন ধরে বাবার তিনশো টাকা ঋণ শোধ করে যৌনদাসী হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে; ‘ভাতুয়া’ গল্পের অমত্ম্যজ শ্রেণিভুক্ত পবন তার বাবার ঋণকৃত আটশো টাকা শুধতে সাত বছর বয়স থেকে বিয়াল্লিশ বছর পর্যন্ত বিনা পারিশ্রমিকে শ্রম দিয়ে অন্ধ হয়ে যায়, তবু ঋণ শোধ হয় না। ভীষণ আক্রোশে পৃথিবীর আলো হারানো প্রায়ান্ধ দৃষ্টি নিয়ে সে মহাজনের ধানের টালের চাল কেটে ধান বিনষ্ট করে, যেন এ-ধান দিয়ে মহাজন গরাইবাবু গ্রামের আর কাউকে ঋণগ্রস্ত করে ক্রীতদাসে পরিণত করতে না পারে। ‘আজীর’ গল্পটি গভীর দ্যোতনাবাহী; আত্মবিক্রয়কারী ক্রীতদাসের বংশধর পাতন নিজেকে দাস হিসেবে মনে করে, আজীরপাট্টা বা স্বাধীনতা পাওয়ার জন্য সে মনিবপত্নীকে খুন করে, যদিও সে স্বাধীন। এ-গল্পে লেখক বলতে চেয়েছেন যে, যে নিজেকে স্বাধীন বলে জানে না, তার দাসত্ব থেকে মুক্তির কোনো পথ নেই।

‘জল’ গল্পের অশীতিপর মঘাই ডোম পাতালের জলের সন্ধান জানে। তার এই গুণের প্রকাশে রুক্ষপ্রান্তরে কুয়ো হয়; কিন্তু সে-জলে তার বা তার গোষ্ঠীর অধিকার থাকে না। এ এক পরিহাস, জলের সন্ধানদাতা নিজেই জলবঞ্চিত। এ-বঞ্চিত মানুষের জীবন লেখক তীব্র ব্যঙ্গের অন্তরালে চিত্রিত করেছেন। ‘নুন’ গল্পে বিহারের পালামৌ অঞ্চলের ঝুঝার গ্রামের আদিবাসীদের ভাতে নয়, নুনে মারার সিদ্ধান্ত নেয় মহাজন উত্তমচাঁদ। নুনের মতো সামান্য উপাদানে বঞ্চিত আদিবাসীরা সংরক্ষেত জঙ্গলের বন্যপ্রাণীর জন্য বরাদ্দ লবণ চুরি করতে গিয়ে হাতির পদপিষ্ট হয়ে মারা যায়। ‘শিশু’ গল্পের আগরিয়রা খেতে না পেয়ে শিশুর মতো আকৃতিতে পরিণত হয়। মহাশে^তার গল্পে বঞ্চিত মানুষের জীবনবাস্তবতা পাঠককে যেন এক অজানা মহাদেশে নিয়ে যায়; হতবিহবল পাঠক মানস জাগরণের তীব্র বেদনাকে ধারণ করে নতুন করে এ-ভূখ–র অনাবিষ্কৃত মানবজীবনের প্রতি সহানুভূতিতে সিক্ত হয়।

ইতিহাসভিত্তিক গল্প, যেমন – ‘দেওয়ানা খইমালা ও ঠাকুরবটের কাহিনি’, ‘রোমথা’ প্রভৃতিতেও মানুষের অসহায়ত্ব ও নিপীড়িত হওয়ার ইতিবৃত্তকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। ‘দেওয়ানা খইমালা ও ঠাকুরবটের কাহিনি’ গল্পে সতীদাহ প্রথার নির্মমতা উঠে এসেছে। ‘রোমথা’ গল্পে এসেছে সামন্তযুগের ভয়ংকর রোমথা প্রথার আলেখ্য। নীহাররঞ্জন রায়ের বাঙালীর ইতিহাস পড়ে মহাশে^তা একাদশ শতকের এই নির্মম প্রথাকে নিয়ে লেখেন ‘রোমথা’। লক্ষ্মণ সেনের সময়ে সুস্থ নীরোগ দেহের রাজবন্দি বা মৃত্যুদ-প্রাপ্ত আসামিদের ফুটন্ত তেলে ভেজে ‘মহামাস ঘৃত’ তৈরি হতো, যা সর্বরোগের মহৌষধ বলে কথিত ছিল। এ বিশেষ বন্দিদের রোমথা বলা হতো এবং বুকের ওপর উত্তপ্ত লোহার পাত দিয়ে ‘রোমথা’ শব্দটি লিখে দেওয়া হতো। শরণ নামে এক যুবকের ‘রোমথা’ হওয়া এবং বীভৎস মৃত্যু এড়ানোর প্রচেষ্টায় এ-গল্পের অবয়ব গড়ে উঠেছে এবং মানুষের চিরন্তন মুক্তির আকাঙক্ষাকে প্রতীকায়িত করা হয়েছে।

আদিবাসীদের মধ্যেও অবহেলিত লোধা-শবরদের নিয়ে মহাশে^তা একাধিক গল্প লিখেছেন। ‘কুড়োনির বেটা’, ‘চোর’, ‘অর্জুন’, ‘উদ্ধবের জীবন ও মৃত্যু’, ‘তারপর’ প্রভৃতি গল্পে শবরজীবনের নানাপ্রান্ত 888sport live chatরূপ পেয়েছে। ‘ডাইনি’ ও ‘প্রেতোৎসব’ গল্পে  আদিবাসী জীবনে ডাইন-ডাইনি বিশ^াসের স্বরূপ এবং তার সূত্র ধরে উচ্চশ্রেণির সুবিধাবাদী মানুষের স্বার্থসিদ্ধির কৌশল বিশেস্নষণ করা হয়েছে।

স্বাধীন ভারতে যারা আজ ন্যূনতম নাগরিক সুবিধাটুকু থেকেও বঞ্চিত; ভূমি, শস্য এমনকি জলেও যাদের অধিকার নেই,  মূলধারার মানুষ যাদের ‘অপর’ বলে প্রান্তে ঠেলে রেখেছে; মহাশ্বেতা দায়বোধ করেছেন তাদের প্রতি এবং তাদের বঞ্চনা-শোষণ ও প্রতিবাদ-সংগ্রামের মুখপাত্র হয়ে 888sport live footballে তাদের স্থান দিয়েছেন অপার মমতা ও গভীর আন্তরিকতায়। 888sport cricket BPL rate শতকের প্রান্তে এসে কৃষিপ্রধান, ধান্যবহুল অঞ্চলের যে-সমস্ত মানুষের জীবনে ‘ভাত’ স্বপ্নমাত্র, বেঁচে থাকা যাদের অভ্যাস – অধিকার নয়; জলটুকুও যারা রেশন করে খায় – সে-সমস্ত অবহেলিত, প্রান্তিক মানুষের জীবন বারবার উঠে এসেছে মহাশ্বেতার কথা888sport live footballে। 888sport live footballিক হিসেবে প্রবল দায়বোধে তাড়িত হয়ে সমাজ ও সভ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তিনি 888sport live footballকে সমাজবদলের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছেন এবং নতুন নান্দনিকতায় তাঁর সৃষ্টিকে উপস্থাপিত করেছেন পাঠকের দরবারে।

 

৪.১

মহাশ্বেতা দেবী অর্ধশতক ধরে গল্প, 888sport alternative link, 888sport live, শিশু888sport live footballসহ নানাবিধ ধারায় সক্রিয় থেকে বাংলা 888sport live footballকে দান করেন অফুরন্ত। কেবল বাংলা 888sport live football নয়, তাঁর 888sport live footballকর্ম বিভিন্ন প্রাদেশিক ও বিদেশি ভাষায় অনূদিত হয়ে তাকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দিয়েছে প্রভূত পরিচিতি। পেশাগত কারণে বেশকিছু বাণিজ্যিক রচনা করতে হয়েছে; কিন্তু তিনি কালজয়ী হয়েছেন ভারতবর্ষীয় ব্রাত্য মানুষ, বিশেষত আদিবাসী জীবনের কথাকার হিসেবে। সাংবাদিক হিসেবে দায়িত্ব পালন, ইতিহাসপ্রিয়তা ও প্রকৃত অর্থে মানবতাবাদী চেতনা তাঁকে আদিবাসী জীবনের সঙ্গে সংযুক্ত করেছে এবং প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার আলোকে রচিত তাঁর আদিবাসী-সম্পর্কিত রচনাগুলো বাংলা 888sport live footballে অভিনবত্বের আস্বাদ এনেছে।

মানুষের প্রতি ভালোবাসা ও দায়িত্ববোধে 888sport live football-রচনার পাশাপাশি তিনি জড়িয়ে পড়েন বিভিন্ন জনকল্যাণমুখী কাজের সঙ্গে। ফলে সুবিধাবঞ্চিত প্রান্তিক মানুষের সাহচর্যে তাদের জীবনকেই তাঁর পরবর্তী জীবনের 888sport live football-উপাদান হিসেবে গ্রহণ করেছেন। ব্রাত্যজন ও আদিবাসী জীবনকে কেবল কথার মালা গেঁথে মহিমান্বিত করেছেন মহাশ্বেতা, তা নয়; বরং সক্রিয় থেকেছেন তাদের নানা অধিকার-দাবি আদায়ে। অসংখ্য সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন তিনি এবং সক্রিয়ভাবে অমত্ম্যজ মানুষের বেঁচে থাকার সংগ্রামে শামিল হয়েছেন; প্রতিষ্ঠা করেছেন ‘আদিম জাতি ঐক্য পরিষদ’ – পশ্চিমবঙ্গের আটত্রিশ গোষ্ঠীসহ সকল আদিবাসীর মিলনমঞ্চ।

 

৪.২

888sport live footballে স্বীকৃতিস্বরূপ মহাশে^তা বহু 888sport app download bd পেয়েছেন। তন্মধ্যে উলেস্নখযোগ্য – চৈতন্য লাইব্রেরি 888sport app download bd (১৯৫৮), শিশিরকুমার ও মতিলাল 888sport app download bd (১৯৬৮), কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রদত্ত লীলা 888sport app download bd, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শরৎচন্দ্র 888sport sign up bonusপদক (১৯৭৮), 888sport live football আকাদেমি 888sport app download bd (১৯৭৯), নিখিল ভারত বঙ্গ888sport live football সম্মেলন কর্তৃক শেফালিকা স্বর্ণপদক (১৯৮১), কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রদত্ত ভুবনমোহিনী দেবী পদক (১৯৮৩), ভারত সরকারের ‘পদ্মশ্রী’ (১৯৮৬), জগত্তারিণী স্বর্ণপদক (১৯৮৯), বিভূতিভূষণ 888sport sign up bonus সংসদ 888sport app download bd (১৯৯০), জ্ঞানপীঠ 888sport app download bd (১৯৯৬), ম্যাগসাইসাই 888sport app download bd (১৯৯৭), সাম্মানিক ডক্টরেট রবীন্দ্রভারতী (১৯৯৮), ফেলোশিপ : বোম্বে, এশিয়াটিক সোসাইটি (১৯৯৮), ইয়াসমিন 888sport sign up bonus 888sport app download bd, দিল্লি (১৯৯৮), সাম্মানিক  ডি.লিট ছত্রপতি শাহুজি মহারাজ ইউনিভার্সিটি, কানপুর (২০০০), সাম্মানিক  ডি.লিট বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় (২০০১), ভারতীয় ভাষা পরিষদ সম্মাননা (২০০১), ইতালির ‘প্রিমিও নোনিনো রিসিট ডি আউর’ (২০০৫) এবং সমগ্র 888sport live football রচনার জন্য ফরাসি সরকার কর্তৃক ‘অফিসার অব দি অর্ডার অব আর্টস অ্যান্ড লেটারস’ সম্মানে ভূষিত হয়েছেন।

 

একজন দায়িত্ববান 888sport live footballিক হিসেবে অন্যায়-অবিচার-অনাচারের বিরুদ্ধে ‘সূর্য-সম ক্রোধ’ নিয়ে মহাশ্বেতা দেবী সমগ্র জীবন ‘মানুষের কথা’ লিখেছেন। 888sport live chatের চেয়ে মানবিকতার দাবিকে প্রাধান্য দিয়েছেন তিনি সর্বদা; তবে তাতে 888sport live chat নিষ্প্রাণ হয়নি বরং মানবতার রসে জারিত হয়ে সপ্রাণ হয়েছে। বহুপ্রজ এই লেখক 888sport free betয় নয়, বিষয়বিন্যাস এবং নির্মাণ-কৌশলের অভিনবত্বে বাংলা 888sport live footballকে ঋদ্ধ করেছেন এবং নিজেকে পরিণত করেছেন এ-অঙ্গনের এক অপরিহার্য ব্যক্তিত্বে। জীবনের শেষ পর্যন্ত তিনি মানুষের কাছে নিজেকে নিঃশেষ করে দিতে চেয়েছেন এবং যতদিন আদিবাসীরা বেঁচে থাকবে ততদিনই তিনি তাদের মাঝে বেঁচে থাকবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। প্রকৃতপক্ষে মহাশে^তা বেঁচে থাকবেন তাঁর 888sport live footballের মধ্য দিয়ে; তাঁর অগ্নিগর্ভ জীবন ও সৃষ্টি স্মরিত হবে বহুকাল; ভবিষ্যৎকাল হয়তো নতুন মূল্যায়নে নতুন দৃষ্টিকোণে তাঁর 888sport live footballপাঠ করবে – কালের গর্ভে তা হারিয়ে  যাবে না।

 

গ্রন্থপঞ্জি

১.     ‘ছায়া দর্পণে মহাশ্বেতা’, কণিকা বিশ্বাস, এবং মুশায়েরা, কলকাতা, ২০১১।

২.     মহাঅরণ্যের মা, কৃপাশংকর চৌবে, ভাষান্তর : শংকর ঘোষ, প্রথম প্রকাশ, প্রমা প্রকাশনী, কলকাতা, ১৯৯৯।

৩.    মহাশ্বেতা, তাপস ভৌমিক (সম্পাদিত), কোরক, কলকাতা, ২০০৩।

৪.     মহাশ্বেতা দেবী অপরাজেয় প্রতিবাদী মুখ, নির্মল ঘোষ, করুণা, কলকাতা, ১৯৯৮।

৫.    বাঙ্গালীর ইতিহাস (আদিপর্ব), নীহাররঞ্জন রায়, পঞ্চম সংস্করণ, দে’জ পাবলিশিং, কলকাতা, ১৪১২।

৬.    কথা888sport live chatীর অ্যালবাম, নিতাই বসু, অভিজাত প্রকাশনী, কলকাতা, ১৯৯৯।

৭.     ‘মহাশ্বেতা দেবী : ব্যক্তি ও ইতিহাসের মেলবন্ধন’, পার্থপ্রতিম বন্দ্যোপাধ্যায়, এবং মুশায়েরা, ৩য়-৪র্থ 888sport free bet, ১৪০৩, গ্রন্থভুক্ত মহাশ্বেতা দেবী রচনাসমগ্র, ষষ্ঠ খ-, ২০০২, দে’জ পাবলিশিং, কলকাতা।

৮.    মহাশ্বেতা দেবীর 888sport alternative linkে ইতিহাস ও রাজনীতি, পম্পা মুখোপাধ্যায়, দে’জ পাবলিশিং, কলকাতা, ২০১৩ ।

৯.     আমার যৌবন, বুদ্ধদেব বসু, সিগনেট প্রেস, কলকাতা, ১৯৭৬।

১০. মহাশ্বেতা দেবী ও আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের আলাপ, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস স্মারকগ্রন্থ, সমীরণ মজুমদার-সম্পাদিত, অমৃতলোক 888sport live football পরিষদ, মেদেনীপুর, ১৯৯৭।

১১.   মহাশ্বেতা দেবী, ‘এক জীবনেই’, প্রমা, সম্পাদক সুরজিৎ ঘোষ, মে-জুন, কলকাতা, ১৯৯৬; ‘বকলমে’, কলেজস্ট্রিট, মে, কলকাতা, ১৯৮৭; ‘বকলমে’, কলেজস্ট্রিট, এপ্রিল, কলকাতা, ১৯৮৮; মহাশ্বেতা দেবী রচনাসমগ্র, প্রথম থেকে বিংশখ-, প্রথম প্রকাশ, দে’জ পাবলিশিং, কলকাতা, ২০০২-০৮।

১২.   888sport sign up bonus বি888sport sign up bonus, শঙ্খ চৌধুরী, সুবর্ণরেখা, কলকাতা, ২০০২।

১৩.   গল্পসরণি, মহাশ্বেতা দেবী বিশেষ 888sport free bet, অমর দে-সম্পাদিত,

ষোড়শ বর্ষ, বার্ষিক সংকলন, ১৪১৮, কলকাতা।

১৪. মহাশ্বেতা দেবীর অরণ্যের অধিকার : বাস্তবতার সন্ধান, সোহিনী ঘোষ (সম্পাদিত), অক্ষর প্রকাশনী, কলকাতা, ২০০৫।