888sport app download apk latest version: ফারুক মঈনউদ্দীন
[এই অধ্যায়টি প্রথমে ছিল ২০০০ সালের অক্টোবরে শেম্পেইন ও আরবানা নগরীর ইলিনয় ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসে বার্ষিক টেগোর ফেস্টিভালে দেওয়া একটা বক্তৃতা। এখানেই পড়াশোনা করেছেন রবীন্দ্রনাথের পুত্র রথীন্দ্রনাথ। বক্তৃতাটির লিখিত ভাষ্য প্রকাশিত হয়েছিল প্রধান বাংলা ওয়েবসাইটগুলোর অন্যতম পরবাস ডট কম-এ, সঙ্গে ছিল কাদম্বরী দেবী, 888sport cricket BPL rate বছরের রবীন্দ্রনাথ, অমলরূপী সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ও চারুলতারূপী মাধবী মুখোপাধ্যায়ের ওয়েবসাইট অ্যাডমিনিস্ট্রেটরের দেওয়া চমৎকার সব ছবি। অনলাইনে বক্তৃতাটির সহজলভ্যতার কারণে এই সংকলনে এটি অন্তর্ভুক্ত করার বিশেষ কারণ ছিল না। ডিজিটাল মহাশূন্যের বায়বীয় দুনিয়ায় যা-ই থাকুক, সেটি কাগজে ছাপা বিষয়ের মতোই স্থায়ী, কম্পিউটার বিপ্লবের বহু আগে জন্ম নেওয়া আমার মতো মানুষের জন্য এই কথাটা বিশ্বাস করা কঠিন। সে-কারণেই বক্তৃতাটি এখানে পুনঃপ্রকাশ কিংবা কাগজে ছাপার সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমি।]
এক অর্থে সব ধরনের প্রকাশ হচ্ছে রূপান্তর, বিশেষ করে যাকে আমরা শৈল্পিক প্রকাশ বলি। একজন লেখকের ক্ষেত্রে তাঁর ভাবনাকে রূপান্তর করে লিখিত ভাষায় প্রকাশ করেন 888sport live chatী; কিংবা একজন চিত্রনির্মাতা প্রকাশ করেন চাক্ষুষ, মৌখিক এবং শ্রুতিনির্ভর উপায়ে, একজন ভাস্করের ক্ষেত্রে ঘটে চাক্ষুষ ও সম্ভবত বাস্তব প্রকাশ, একজন সুরস্রষ্টা প্রকাশ করেন শ্রবণ ও মৌখিক মাধ্যমে এবং ইত্যাদি ইত্যাদি। আরো 888sport app ধরনের 888sport live chatীর কথাও উল্লেখ করা যেত, যেমন চিত্রকর, নাট্যকার বা মৃৎ888sport live chatী – কিন্তু আমি মনে করি আমার যুক্তিটা পরিষ্কার : আমরা সৃষ্টি বলে মনে করলেও, কোনো এক দৃষ্টিকোণ থেকে সকল 888sport live chatই একধরনের রূপান্তরকর্ম। এটি হচ্ছে একটি ধারণাকে কোনো নির্দিষ্ট মাধ্যমে কোনো বোধগম্যভাবে রূপান্তর করা। শৈল্পিক প্রকাশ যদি হয় রূপান্তর, তাহলে যে-কাজটিকে আমরা সাধারণ জ্ঞানে রূপান্তর বলে উল্লেখ করি, সেটি হয়ে ওঠে একটা শৈল্পিক সৃষ্টি, কিংবা বলা যায় অন্ততপক্ষে সমমানের।
রূপান্তরের সৃষ্টিশীল বিষয়টির ওপর জোর দিচ্ছি আমি, কারণ, বর্তমান অভিধানগুলো এই কাজটি করে না। ইংরেজি translate-এর তিনটি অর্থ পাওয়া যায় আধুনিক ইংরেজি অভিধানে। সেগুলো হচ্ছে – (১) এক ভাষা থেকে অন্য ভাষায় রূপান্তর, (২) কাঠামো, অবস্থা ও চরিত্র পরিবর্তন করা এবং (৩) সহজতর ভাষায় ব্যাখ্যা করা। এই তিনটি সংজ্ঞার শেষটি ‘সহজতর ভাষায় ব্যাখ্যা করা’ – এটিকে বাদ দেব আমি, কারণ, এটির সঙ্গে শিরোনামে আমার ব্যবহৃত ‘রূপান্তর’ শব্দটির কোনো সম্পর্ক নেই। প্রথম অর্থ ‘এক ভাষা থেকে অন্য ভাষায় রূপান্তর’ সম্ভবত translating শব্দটির সবচেয়ে স্পষ্ট তরজমা এবং মনেও আসে সবার আগে। গীতাঞ্জলি নামে প্রকাশিত ইংরেজি গ্রন্থটি রচনার জন্য নিজের কিছু 888sport app download apk নিয়ে ১৯১২ সালে রবীন্দ্রনাথ যা করেছিলেন সেটা ছিল এক ধরনের রূপান্তর। আমরা সবাই ভালো করেই জানি এটির জন্যই পরের বছর 888sport live footballে নোবেল 888sport app download bd লাভ করেছিলেন তিনি। তবে দ্বিতীয় অর্থ ‘কাঠামো, অবস্থা ও চরিত্র পরিবর্তন করা’ – এই সংজ্ঞাটিকেই শিরোনামে বোঝাতে চেয়েছি আমি। translate শব্দটির দ্বিতীয় অর্থ বোঝাতে আবারো রবীন্দ্রনাথের দিকে তাকাতে পারি আমরা। ১৮৯২ সালে কেন্দ্রীয় 888sport promo code চরিত্রের নামানুসারে নাটক চিত্রাঙ্গদা রচনা করেন রবীন্দ্রনাথ। চার দশকেরও বেশি সময় পরে নাটকটির কাঠামো, অবস্থা ও চরিত্র পরিবর্তন করে সৃষ্টি করেন নৃত্যনাট্য চিত্রাঙ্গদা। কেউ বলতে পারেন যে, রবীন্দ্রনাথের মূল নাটক চিত্রাঙ্গদা হচ্ছে স্পষ্টতই মহাভারত-এর একটা গল্পের পরিবর্তিত রূপ, অন্ততপক্ষে কিছু প্রেরণা পেয়েছে গল্পটি থেকে। এসবই কোনো না কোনোভাবে শব্দটির দ্বিতীয় সংজ্ঞায় রূপান্তরের উদাহরণ। অর্থাৎ বলা যায়, রূপান্তর করা পরবর্তী কর্মটি পূর্ববর্তী কাজের কাঠামো বদলে দেয়। এছাড়া ওপরোল্লিখিত সব রূপান্তর এক অর্থে মূল শৈল্পিক সৃষ্টি, ঠিক যেভাবে সবগুলোই এক অর্থে অন্য বিষয় থেকে উৎসারিত। আরো একটি উদাহরণ দেওয়া যায়। ১৯০১ সালে প্রকাশিত রবীন্দ্রনাথের গল্প ‘নষ্টনীড়’কে রূপান্তরিত করে সত্যজিৎ রায় চারুলতা নামে ছবি তৈরি করেছেন ১৯৬৪ সালে। ছবিটি মুক্তি পেয়েছিল পরের বছর।
এখানে আমি রবীন্দ্রনাথ ও সত্যজিতের শেষ দুটো কাজের তিনটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করব – প্রথম, উভয়ের আত্মজীবনীমূলক/ জীবনীমূলক চরিত্র এবং কীভাবে সত্যজিতের রূপান্তর আমাদের সেই সত্য স্বীকারে বাধ্য করে; দ্বিতীয়, কীভাবে সৃষ্টিশীল 888sport live chatী সত্যজিৎ কিছু সংলাপ দিয়ে, কিছুটা শব্দহীনভাবে রবীন্দ্রনাথের ভাষাকে ছবিতে রূপান্তরিত করেন এবং তৃতীয়, যে-উপায়ে ছোটগল্প ও সিনেমা দুটোই রবীন্দ্রনাথের আত্মপক্ষ সমর্থন হিসেবে কাজ করে। পরে এগুলোর ওপর আরো বিস্তারিত আলোচনা থাকবে।
যাঁরা বাংলা জানেন না, তাঁদের জন্য রবীন্দ্রনাথের গল্পের বিষয়বস্তুটা পুনরাবৃত্ত করতে চাই আমি। গল্পটি বিশোর্ধ্ব তরুণী চারুলতার। বাল্য বয়সে ওর বিয়ে হয়েছিল দশ-পনেরো বছরের বড় ভূপতির সঙ্গে। স্বামীর নির্দোষ উপেক্ষার মধ্যেই স্বামীর বাড়িতে বড় হয় সে। বিভিন্ন বিষয়ে আগ্রহ ছিল ভূপতির, তার মধ্যে ছিল ঔপনিবেশিক কলকাতায় একটা ইংরেজি রাজনৈতিক পত্রিকা প্রকাশ করার সর্বগ্রাসী নেশা। ঘরে যে একজন স্ত্রী আছে, তার প্রতি প্রায় উদাসীন ছিল বলে মনে হয় সে। গল্পটা যখন শুরু হয়, স্ত্রীটি পরিপূর্ণ 888sport promo codeতে পরিণত হয়েছে ততদিনে। সে-বাড়িতে আরো থাকত ভূপতির কলেজপড়ুয়া পিসতুতো ভাই অমল। ওর ইচ্ছা একজন লেখক হওয়া। স্বামীর সঙ্গে বয়সের পার্থক্যের তুলনায় অনেক বেশি কাছাকাছি চারু আর অমলের বয়স। এই দুই প্রায় সমবয়সীর মধ্যকার বন্ধন বহুবিধ, যেমন – ভাইবোনের মতো, বুদ্ধিবৃত্তিক সমকক্ষের মতো, প্রাপ্তবয়স্ক তরুণের মতো উত্তেজিত এবং তৎকালীন কলকাতার 888sport live footballের হালচাল নিয়ে কখনো অভিভূত। চলমান প্রথায় আবদ্ধ থাকলেও দেবরের কারণেই যথেষ্ট বড়লোকি সাজসজ্জাসহ বাড়িটির একাংশের প্রতিনিধিত্ব নিয়ে ছিল চারু। এই দেবরটিই তার জীবনে এনে দেয় বুদ্ধিবৃত্তি পরিপূর্ণ বাইরের দুনিয়ার কিছু রোমাঞ্চ। অবশেষে একসময় অমলের কাছে এটা স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে, বৌঠানের সঙ্গে তার সম্পর্কটা আবেগের গণ্ডি পেরিয়ে একটা নিষিদ্ধ সীমানায় ঢুকে পড়তে পারে। নিজেকে সংযত করে ফেলে অমল, আর চারু হয়ে পড়ে ভগ্নহৃদয়, বিধ্বস্ত। বিষণ্ন ভূপতি বুঝতে পারে, সে প্রতারিত। এখানেই গল্পটির সমাপ্তি।
এখানে 888sport live football থেকে জীবনে এসে একইভাবে রবীন্দ্রনাথের পারিবারিক নির্বাচিত ঘটনাবলির একটা সংক্ষিপ্ত বর্ণনা পুনরাবৃত্ত করব, যা গল্পটির সঙ্গে সম্পর্কিত বলে মনে হবে। রবীন্দ্রনাথের বড়ভাইদের একজন জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের বালিকাবধূ হিসেবে কাদম্বরী দেবী ঠাকুর পরিবারে এসেছিলেন নিতান্ত অল্প বয়সে। বাবা-মায়ের জীবিত সন্তানদের মধ্যে রবীন্দ্রনাথ ছিলেন চতুর্দশতম এবং সর্বকনিষ্ঠ। জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ছিলেন তাঁর তেরো বছরের বড়। সমবয়সী কাদম্বরী দেবী এবং রবীন্দ্রনাথের বিষয়ে সবচেয়ে দায়িত্বশীল জীবনীকার প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায় লিখেছেন, কাদম্বরীর ‘বিয়ের পর থেকেই তিনি [রবীন্দ্রনাথ] ছিলেন তাঁর খেলার সঙ্গী ও সহচর।’১ বাইশ বছরের রবীন্দ্রনাথ নিজেও এগারো বছরের এক বালিকাকে বিয়ে করেন ১৮৮৩ সালের ৯ ডিসেম্বর তারিখে। এই নববধূর আদি নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় মৃণালিনী, যাঁর ঘরে জন্মেছিল রবীন্দ্রনাথের পাঁচটি ছেলেমেয়ে। পাঠকদের অনেকেই জানেন, তাঁদের একজন রথীন্দ্রনাথ পড়াশোনা করেছিলেন ইলিনয় ইউনিভার্সিটিতে। ১৯০২ সালে মৃণালিনীর অকালমৃত্যুর আগ পর্যন্ত রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে সুখের সংসার ছিল তাঁর। জীবনীকার প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়ের ভাষায়, ১৮৮৩ সালের শেষের দিকে রবীন্দ্রনাথের বিয়েটা ছিল ‘আকস্মিক ও অপ্রত্যাশিত।’২ পরের বছরের এপ্রিলের শেষে এই বিয়ের চার মাসের কিছুদিন পর আত্মহত্যা করেন কাদম্বরী দেবী। কেন তিনি আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছিলেন, সেটা জানা গেলেও প্রকাশ করা হয়নি কখনোই। কাদম্বরী দেবীর মৃত্যু সম্পর্কে প্রভাতকুমার লেখেন : ‘কারণগুলো রহস্যে 888sport app। তবে কিছু পারিবারিক ভুল বোঝাবুঝি ছিল, এতে সন্দেহ নেই।’৩ রবীন্দ্রনাথের নাতজামাই কৃষ্ণ কৃপালনী তাঁর লেখা রবীন্দ্রজীবনীতে সরাসরি বলেন, আত্মহত্যার ঘটনাটা নিয়ে আমরা যাতে জল্পনা না করি।
কাদম্বরী দেবীর মৃত্যুটা যে গভীরভাবে স্পর্শ করেছিল রবীন্দ্রনাথকে, সেটি তাঁর নিজের ভাষায় সরাসরি প্রমাণ করা যায়। পরবর্তী সময়ে রবীন্দ্রনাথের সচিব নিযুক্ত হয়েছিলেন যে অমিয় চক্রবর্তী, তাঁর বয়স যখন ১৬ বছর, তাঁর কাছে ১৯১৭ সালের এক চিঠিতে রবীন্দ্রনাথ লেখেন :
এক সময়ে যখন আমার বয়স তোমারই মতো ছিল তখন আমি যে নিদারুণ শোক পেয়েছিলুম সে ঠিক তোমারই মতো। আমার যে-পরমাত্মীয় আত্মহত্যা করে মরেন শিশুকাল থেকে আমার জীবনের পূর্ণ নির্ভর ছিলেন তিনি। তাই তাঁর আকস্মিক মৃত্যুতে আমার পায়ের নীচে থেকে যেন পৃথিবী সরে গেল, আমার আকাশ থেকে আলো নিভে গেল। আমার জগৎ শূন্য হল, আমার জীবনের সাধ চলে গেল।৪
জীবন888sport sign up bonus (১৯১১-১২) নামের 888sport sign up bonusকথাতেও একই সুরে লিখেছেন রবীন্দ্রনাথ। তিনি আমাদের জানান, অনেক ছোট বয়সে তাঁর মায়ের মৃত্যু খুব বেশিরকম নাড়া দেয়নি তাঁকে। তার আংশিক কারণ হচ্ছে কাদম্বরী দেবী, তাৎক্ষণিকভাবে মাতৃরূপী ভূমিকা পালন করেছিলেন তিনি। অথচ কাদম্বরী নিজেও তখন ছোট বালিকা, ওপরে জীবনীকারও লিখেছেন, রবীন্দ্রনাথের খেলার সাথি ছিলেন তিনি। তাঁর প্রস্থান আঘাত দিয়েছিল তরুণ রবীন্দ্রনাথকে। তিনি লেখেন, ‘কিন্তু আমার চব্বিশ বছর বয়সের সময় মৃত্যুর সঙ্গে যে-পরিচয় হইল তাহা স্থায়ী পরিচয়।’৫ কাদম্বরী দেবীর মৃত্যুর সময় নিজের বয়স চব্বিশ বছর লিখলেও আসলে তখন তাঁর বয়স ছিল বাইশ বছর, তাঁর তেইশতম জন্মদিনের কয়েক সপ্তাহ কম, চব্বিশ নয়।
রবীন্দ্র রচনাবলীর সম্পাদক আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন যে, তাঁর বেশ কিছু 888sport app download apk আছে যার কিছু মৃতা কাদম্বরী দেবীর উদ্দেশে লেখা, আর কিছু তাঁর মৃত্যুসম্পর্কে। এই মৃত্যুর অল্প কিছুদিন পর, যন্ত্রণাবিদ্ধ কবি একটা 888sport app download apkয় আহ্বান করেন তাঁকে। রবীন্দ্রনাথের বয়স তখন মধ্য বিশ এবং ত্রিশের মাঝামাঝি। ‘কোথায়’ শিরোনামের 888sport app download apkটিতে তিনি লেখেন :
হায় কোথা যাবে!
অনন্ত অজানা দেশ, নিতান্ত যে একা ভূমি,
পথ কোথা পাবে!
‘হায়, কোথা যাবে!৬
মোরা কেহ সাথে রহিব না,
মোরা কেহ কথা কহিব না,
মোরা বসে কাঁদিব হেথায়,
শূন্যে চেয়ে ডাকিব তোমায়;
মহা সে বিজন মাঝে হয়তো বিলাপধ্বনি
মাঝে মাঝে শুনিবারে পাবে,
হায়, কোথা যাবে!
তারপর প্রায় তিরিশ বছরেরও বেশি সময় পরে একইরকম মর্মভেদী 888sport app download apkটা রচনা করেন। নিচে কবির নিজের অনূদিত শিরোনামহীন 888sport app download apkটা উদ্ধৃত করছি :
I was walking along a path overgrown with grass, when suddenly I heard from some one behind, ‘See if you know me?’ I turned round and looked at her and said, ‘I cannot remember your name.’ She said, ‘I am that first great Sorrow whom you met when you were young.’ Her eyes looked like a morning whose dew is still in the air. I stood silent for some time till I said,’ Have you lost all the great burden of your tears?’ She smiled and said nothing. I felt that her tears had had time to learn the language of smiles. ‘Once you said,” she whispered, “that you would cherish your grief forever.’ I blushed and said, ‘Yes, but years have passed and I forget.’ Then I took her hand in mine and said, ‘But you have changed.’ ‘What was sorrow once has now become peace,’ she said.৭
888sport app download apkটির মূল বাংলা প্রকাশিত হয়েছিল ১৯১৯ সালে সবুজপত্র ম্যাগাজিনে, তারপর গদ্য888sport app download apk ও ছোটগল্প সংকলন লিপিকা (১৯২২) গ্রন্থে। এই গ্রন্থে উদ্ধৃত 888sport app download apkটির শিরোনাম ‘প্রথম শোক’। মূল 888sport app download apkর বেশ কিছু পঙ্ক্তি বাদ দেওয়া হয়েছে ইংরেজি ভাষ্যে। মূলত প্রায় অর্ধেক অংশই বাদ পড়েছে। নিচে সম্পূর্ণ উদ্ধৃত 888sport app download apkটির সঙ্গে ওপরের ইংরেজি ভাষ্যের তুলনা করলে পাঠক সহজেই বুঝতে পারবেন ইংরেজি 888sport app download apk latest versionে কতখানি অংশ বাদ দেওয়া হয়েছে।
বনের ছায়াতে যে পথটি ছিল সে আজ ঘাসে 888sport app।
সেই নির্জনে হঠাৎ পিছন থেকে কে বলে উঠল, ‘আমাকে চিনতে পার না?’
আমি ফিরে তার মুখের দিকে তাকালেম। বললেম, ‘মনে পড়ছে, কিন্তু ঠিক নাম করতে পারছি নে।’
সে বললে, ‘আমি তোমার সেই অনেক কালের, সেই পঁচিশ বছর বয়সের শোক।’
তার চোখের কোণে একটু ছল্ছলে আভা দেখা দিলে, যেন দিঘির জলে চাঁদের রেখা।
অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেম। বললেম, ‘সেদিন তোমাকে শ্রাবণের মেঘের মতো কালো দেখেছি, আজ যে দেখি আশি^নের সোনার প্রতিমা। সেদিনকার সব চোখের জল কি হারিয়ে ফেলেছ।’
কোনো কথাটি না বলে সে একটু হাসলে; বুঝলেম, সবটুকু রয়ে গেছে ঐ হাসিতে। বর্ষার মেঘ শরতে শিউলিফুলের হাসি শিখে নিয়েছে।
আমি জিজ্ঞাসা করলেম, ‘আমার সেই পঁচিশ বছরের যৌবনকে কি আজও তোমার কাছে রেখে দিয়েছ।’
সে বললে, ‘এই দেখো-না আমার গলার হার।’
দেখলেম, সেদিনকার বসন্তের মালার একটি পাপড়িও খসে নি।
আমি বললেম, ‘আমার আর তো সব জীর্ণ হয়ে গেল, কিন্তু তোমার গলায় আমার সেই পঁচিশ বছরের যৌবন আজও তো ম্লান হয় নি।’
আস্তে আস্তে সেই মালাটি নিয়ে সে আমার গলায় পরিয়ে দিলে। বললে, ‘মনে আছে? সেদিন বলেছিলে, তুমি সান্ত্বনা চাও না, তুমি শোককেই চাও।’
লজ্জিত হয়ে বললেম, ‘বলেছিলেম। কিন্তু, তার পরে অনেক দিন হয়ে গেল, তার পরে কখন ভুলে গেলেম।’
সে বললে, ‘যে অন্তর্যামীর বর, তিনি তো ভোলেন নি। আমি সেই অবধি ছায়াতলে গোপনে বসে আছি। আমাকে বরণ করে নাও।’
আমি তার হাতখানি আমার হাতে তুলে নিয়ে বললেম, ‘এ কী তোমার অপরূপ মূর্তি।’
সে বললে, ‘যা ছিল শোক, আজ তাই হয়েছে শান্তি।’৮
মূল ভাষ্যে কথক তার পঁচিশ বছরের যৌবনের কথা বলে এবং জিজ্ঞেস করে সেই যৌবন নিজের কাছে রেখে দিয়েছে কি না সে [নায়িকা]। নায়িকা তার গলার মালাটি দেখিয়ে বলে যে, সেটি আগের মতোই তাজা রয়ে গেছে। কথকেরটি এই বছরগুলোতে শুকিয়ে গেছে। নায়িকা তখন নিজের গলার তাজা মালাটি কথকের গলায় পরিয়ে দেয়।
ওপরে আমি আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলাম যে, রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, তাঁর বৌঠান যখন মারা যান তখন তাঁর [রবীন্দ্রনাথের] বয়স চব্বিশ, প্রকৃতপক্ষে তখন তাঁর বয়স ছিল বাইশ, কিছুদিন পরই তেইশে পা দেবেন। জীবন888sport sign up bonus লেখার প্রায় এক দশক পরে, ১৯১৯ সালের একটি লেখায় তিনি উল্লেখ করছেন যে, কাদম্বরী দেবী যখন আত্মহত্যা করেছিলেন, তখন তাঁর (রবীন্দ্রনাথ) বয়স পঁচিশ। তারিখের এই ভিন্নতার দুটো সহজ ব্যাখ্যা হতে পারে। এক হচ্ছে, সেই প্রবচনের পুনরাবৃত্তি করা, মানুষ মাত্রেরই ভুল হয়। আরেকটি হচ্ছে, বঙ্গদেশে তখন ও বর্তমানে প্রচলিত কাল গণনার বিভিন্ন পদ্ধতি। তাছাড়া জন্ম সনদ দেওয়া হতো না সেসময়, যার উৎপত্তি অতি সাম্প্রতিক কালে।
ফুলের মালার উল্লেখ রবীন্দ্রনাথের ইংরেজি 888sport app download apk latest versionে পাওয়া যায় না, তবে সেটি বাঙালি সমাজে বিভিন্নভাবে ব্যবহৃত হয়। যেমন, কোনো গণ্যমান্য ব্যক্তিকে সম্মান দেখানোর জন্য মালা দেওয়া হয়। হিন্দু বিবাহরীতিতে বরকনের মধ্যে বিনিময়ের জন্যও ব্যবহৃত হয় এই মালা। 888sport app download apkর 888sport promo codeটি যখন নিজের গলা থেকে মালাটি তুলে নিয়ে কথকের গলায় পরিয়ে দেয়, তখন বলে, ‘মনে আছে? সেদিন বলেছিলে, তুমি সান্ত্বনা চাও না, তুমি শোককেই চাও।’৯ আমাদের কথক মর্মবেদনার সঙ্গে স্বীকার করে যে, একদা কথাটা বলেছিল সে, তারপরের কালপরিক্রমায় ভুলে গেছে। তখন 888sport promo code চরিত্রটি বলে, ‘যে অন্তর্যামীর বর, তিনি তো ভোলেন নি। আমি সেই অবধি ছায়াতলে গোপনে বসে আছি। আমাকে বরণ করে নাও।’
‘সতেরো বছর’ নামে লিপিকা গ্রন্থের আরেকটি লেখা, যেটি রবীন্দ্রনাথের 888sport app download apk latest versionে শিরোনামহীন, শুরু হয় এভাবে :
আমি তার সতেরো বছরের জানা।
কত আসাযাওয়া, কত দেখাদেখি, কত বলাবলি; তারই আশেপাশে কত স্বপ্ন, কত অনুমান, কত ইশারা; তারই সঙ্গে সঙ্গে কখনো বা ভোরের ভাঙা ঘুমে শুকতারার আলো, কখনো বা আষাঢ়ের ভরসন্ধ্যায় চামেলিফুলের গন্ধ, কখনো বা বসন্তের শেষ প্রহরে ক্লান্ত নহবতের পিলুবারোয়াঁ; সতেরো বছর ধরে এই-সব গাঁথা পড়েছিল তার মনে।
আর, তারই সঙ্গে মিলিয়ে সে আমার নাম ধরে ডাকত। ঐ নামে যে মানুষ সাড়া দিত সে তো একা বিধাতার রচনা নয়। সে যে তারই সতেরো বছরের জানা দিয়ে গড়া;…।১০
১৯১৯ সালে রবীন্দ্রনাথের নিজের ইংরেজিতে উল্লিখিত কে এই 888sport promo code, যে বলে, ‘সে যে তারই সতেরো বছরের জানা দিয়ে গড়া?’ অর্থাৎ সতেরো বছর হচ্ছে, ঠাকুরবাড়িতে বালিকাবধূ হিসেবে ঢোকা এবং ১৮৮৪ সালে আত্মহত্যার মধ্যকার বছরগুলো। এই প্রশ্নের আংশিক জবাব পাওয়া পাওয়া যায় রবীন্দ্রনাথের ছদ্মরূপ হিসেবে লেখা ছোটগল্প ‘নষ্টনীড়’-এ। বাস্তব জীবন, রূপান্তরিত বাস্তব চরিত্র এবং বাস্তব ঘটনার ভিত্তিতে একটা গল্প এটা। এখানে অবশ্য কল্পিত কাহিনি এবং বাস্তব চরিত্র ও গল্পটির মিলে যাওয়া প্রকৃত ঘটনাবলির মধ্যে পুরোপুরি মিল নেই। সংগত কারণেই বদলে গেছে নামগুলো। পারিবারিক সম্পর্কগুলোও কিছুটা পরিবর্তিত। ‘নষ্টনীড়’ গল্পে জ্যোতিরিন্দ্রনাথের সঙ্গে মিলে যাওয়া ভূপতি হচ্ছে রবীন্দ্রনাথের প্রতিরূপ অমলের মাসতুতো ভাই, বাস্তবের মতো সহোদর নয়। নিঃসন্দেহে আরো কিছু অমিল আছে, কিন্তু একটা মৌলিক প্রশ্ন থেকে যায় : কেন আমরা ‘নষ্টনীড়’ গল্পটিকে জ্যোতিরিন্দ্রনাথ, রবীন্দ্রনাথ ও কাদম্বরী দেবীর জীবনের ঘটনাবলির ছদ্মরূপ হিসেবে পড়ব? এটার সহজ উত্তর হচ্ছে, সত্যজিৎ রায় তাঁর চারুলতা সিনেমায় সেটাই করেছেন। ছবিটি যাঁরা একবার দেখেছেন, রবীন্দ্রনাথের ছোটগল্পটি তাঁদের আরো গভীর ও বৃহত্তর তাৎপর্যের দিকে টেনে নিয়ে যায়। তাহলে রবীন্দ্রনাথের গল্পটিকে এভাবে রূপান্তরিত করার যুক্তি কী?
সত্যজিৎ রায়ের ওপর ১৯৭১ সালে প্রকাশিত পোর্ট্রটে অফ এ ডিরেক্টর : সত্যজিৎ রায় গ্রন্থে মারি সেটন১১ লিখেছেন যে, ১৯৫০-এর দশকে যখন ‘নষ্টনীড়’ গল্পটির live chat 888sportরূপ দেওয়ার জন্য রবীন্দ্রনাথের ওপর যখন গবেষণা করছিলেন সত্যজিৎ, তখন গল্পটির পাণ্ডুলিপির মার্জিনে সেটনের ভাষায় ‘গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র চারুর সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের বৌদির নাম যুক্ত করে চিহ্ন বা স্কেচ দেখতে পেয়েছিলেন’১২ তিনি। বন্ধনীর মধ্যে সেটন যুক্ত করেন যে, 888sport appsের মানুষ বিশ^াস করত, ‘রবীর বিয়ের পর আত্মহত্যা করেছিলেন’ তাঁর বৌদি।১৩ সত্যজিৎ রায় : দি ইনার আই (১৯৮৯) বইতে সেটনের আবিষ্কার ও বর্ণনার পুনরাবৃত্তি করে অ্যান্ড্রু রবিনসনও১৪ লেখেন যে, ‘নষ্টনীড়’ গল্পের বেশ আগের পাণ্ডুলিপির মার্জিনে বহুবার ‘হেকাটি’ নামটি দেখেছিলেন সত্যজিৎ, এই নাম কাদম্বরীকে দিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ।১৫ চন্দ্রের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত গ্রিক দেবী হেকাটির নাম পাওয়া যায় আর্টেমিসসহ অন্য গ্রিক দেবীদের সঙ্গে। দেবী পারসিফোনির১৬ সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন তিনি, আর সেভাবে যুক্ত ছিলেন পাতাললোক, তন্ত্র-মন্ত্র আর জাদুবিদ্যার সঙ্গে। দেবীর শেষোক্ত এই বৈশিষ্ট্যের কারণেই শেক্সপিয়রের নাটকে হেকাটির উপস্থিতির কথা বলা হয় একাধিকবার। কাদম্বরীকে দেওয়া এই নামটিই বলে দেয় বৌদির সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের ঠাট্টার সম্পর্কের কথা, তাঁর পাণ্ডিত্যও নিশ্চিত প্রমাণিত হয় এই নামকরণে। রবিনসনকে সত্যজিৎ জানান, যে পাণ্ডুলিপি তিনি দেখেছিলেন, সেটিতে কাদম্বরী দেবীর স্কেচ ছিল। এটাই সত্যজিৎকে নিশ্চিত করে যে ‘নষ্টনীড়’ লেখার সময় বৌদির কথা মাথায় ছিল রবীন্দ্রনাথের।১৭ তাই, রবীন্দ্রনাথের রূপান্তরিত গল্পটির পটভূমি এমন এক সময়ে (১৮৭৯-৮০) তৈরি করেন, যখন রবীন্দ্রনাথের চরিত্রে গল্পের অমল এক তরুণ কলেজছাত্র, সময়টা ১৮৮৩ সালে লেখকের বিয়ের কয়েক বছর আগের। ১৮৮০ দশকের সেই পটভূমিতে সত্যজিৎ তাঁর ধারণায় আবারো নিশ্চিত হন যে, ‘নষ্টনীড়’ মূলত রবীন্দ্রনাথ, তাঁর বৌদি ও তাঁর স্বামী তথা লেখকের ভাইয়ের বাস্তব জীবনের ছদ্মকাহিনি। কাদম্বরী দেবীর পরিণতি সম্পর্কে আমরা যা জানি তাতে বলা যায়, ছদ্মরূপ হিসেবে বিবেচনা করলে লিখিত এবং live chat 888sportরূপ – উভয় মাধ্যমেই গল্পটি হয়ে ওঠে অনেক বেশি শক্তিশালী।
সত্যজিৎ কীভাবে রবীন্দ্রনাথের ভাষাকে ছবিতে রূপান্তরিত করেছিলেন, আলোচনার এই বিষয়টিতে যাওয়ার আগে আমি নিজের ভাষায় বলার চেষ্টা করব, গল্পটি মোটের ওপর কী বিষয়ে, কী ঘটেছে সেটা নয়। ‘নষ্টনীড়’ গল্পটি একদিক দিয়ে একটা সংকটাপন্ন বিয়ের কাহিনি। অনুমিতভাবে বিয়ের মাধ্যমে সৃষ্ট রূপকাশ্রিত গল্পটি একটি নীড় বা আশ্রয়ের কাহিনি, স্বামী-স্ত্রী উভয়ের নিজ নিজ কর্মকাণ্ডে ভেতরে ভেতরে নষ্ট হয় সম্পর্কটা। গল্পটা সম্পর্কের, অর্থাৎ সাধারণ মানব সম্পর্কের, বিশেষ করে ১৮৮০-এর দশকের কলকাতার পটভূমিতে বর্ধিষ্ণু উচ্চবিত্ত বাঙালি পরিবারের মধ্যকার সম্পর্কের। মানুষের সঙ্গে মানুষের যোগাযোগ এবং মানুষে মানুষে ব্যর্থ যোগাযোগের একটা গল্প। এক ব্যতিক্রমী প্রতিভাবান, এমনকি বলা যায় আবেগ ও বুদ্ধিবৃত্তিক সাহচর্যবুভুক্ষু এক 888sport promo codeর গল্প এটা। তার রুদ্ধ সৃজনশীলতার গল্প। সন্তানহীনা ছিল বলে এটাকে আংশিকভাবে বলা যায় মাতৃক, অন্যদিকে বলা যায় শৈল্পিক, যেহেতু চারুর একমাত্র সৃষ্ট 888sport live footballকর্মে অমলের চেয়ে তাকে উন্নততর দেখিয়েছি আমরা।
‘নষ্টনীড়’ গল্পে যে-সম্পর্কটা দেখানো হয় সেটা বৌঠান ও ঠাকুরপোর অর্থাৎ যথাক্রমে বড়ভাইয়ের স্ত্রী ও স্বামীর ছোট ভাইয়ের মধ্যকার। ঠাকুরপো অর্থ দেবর। চারু অমলের বৌঠান, আরো আধুনিক বাংলায় বলা হয় বৌদি, অমল তার ঠাকুরপো বা দেবর। হিন্দু বাঙালি সমাজে বৌঠান-ঠাকুরপো সম্পর্কটা পুরোপুরি জায়েজ এবং অত্যন্ত মধুরও বটে। এরকম অবস্থায় একটা গতানুগতিক পরিবারে একজন বিবাহিত 888sport promo code স্বামী ছাড়া পরিবারের অন্য পুরুষের সামনে না-ও আসতে পারে, বাইরের পুরুষের সামনে আসার তো প্রশ্নই ওঠে না। অথচ সেখানে ঠাকুরপোর সঙ্গে খোলাখুলি মেশা যায়, এ-বিষয়ে বরং উৎসাহও দেওয়া হয়। তবে এরকম সম্পর্ক বিপজ্জনকও বটে। বাংলা ভাষায় ভালোবাসার তিনটি মৌলিক শ্রেণি আছে, যা বোঝানো হয় তিনটি শব্দ দিয়ে : স্নেহ, ভালোবাসা ও প্রেম। প্রথমটি স্নেহ। এক্ষেত্রে সেই ধরনের ভালোবাসা বোঝায়, যা সন্তানের জন্য অনুভব করে বাবা-মা। তৃতীয়টি হচ্ছে প্রেম। এটা দিয়ে বোঝানো হয় রোমান্টিক ধরনের প্রণয়াকুল ভালোবাসা। তবে এটি দিয়ে যদি কোনো দেবতা-প্রেম বোঝানো না হয়। এই তিনটি শব্দের মধ্যে ভালোবাসা হচ্ছে সবচেয়ে কম সুনির্দিষ্ট, যা স্নেহ বা প্রেম – দুটোকেই বোঝাতে পারে এবং আরো নির্দিষ্ট অর্থে গভীর অনুকূল আবেগকেও বোঝায়। সমাজ-অনুমোদিত বৌঠান-ঠাকুরপো সম্পর্কের একটি হতে পারে স্নেহ, বিশেষ করে দেবরের প্রতি বৌঠানের অনুভূত আবেগ। এই সম্পর্কের বিপদ হচ্ছে এটি স্নেহ থেকে উদ্ভূত হয়ে প্রেমে পরিণত হতে পারে, যা ‘নষ্টনীড়’ গল্পে ঘটেছে চারুর ক্ষেত্রে। চারু বা অমল এবং অবশ্যই ভূপতি বুঝতে পারে না যে, তাদের অজান্তে সীমা লঙ্ঘন করে গেছে স্নেহ। গল্পের এই পর্যায় পর্যন্ত সম্পর্কটা আগাগোড়াই ছিল ঠাট্টা-তামাশার। ভ্রাতৃবধূ মন্দা ও অমলের মধ্যে উল্টাপাল্টা কিছু একটা অনুমান করতে পারলেও নিজের সঙ্গে অমলের সম্পর্কটা আদৌ দেখতে পায় না চারু। তাদের দুজনের মধ্যে সম্পর্কটা কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে অমলের উপলব্ধি ঘটার আগ পর্যন্ত সেটা দেখতে পায় না কেউই। সে বুঝতে পারে, চারুর সঙ্গে তার সম্পর্কের মধ্যে মারাত্মক কিছু একটা ঘটে গেছে। এটাই ছিল তার আবিষ্কার ও গল্পটির সন্ধিক্ষণ।
এই পর্যায়ে আরো কয়েকটা পারিবারিক বিপর্যয় ঘটে, তার সবই সরাসরি আঘাত করে ভূপতিকে। এগুলোর দুটো রবীন্দ্রনাথ নিজেই জানান উপমার মধ্য দিয়ে, দাঁড়ানোর মতো শক্ত মাটির উপস্থিতি কিংবা তার অভাবের কথা জানানো হয় একই ধরনের উপমা দিয়ে। প্রথমটিতে ভূপতি আবিষ্কার করে যে, চারুর ভাই উমাপতি তার টাকা আত্মসাৎ করছিল। ভূপতির মুখোমুখি হলে নিজের নামে শপথ করে প্রতিটি পাই পয়সা ফিরিয়ে দেওয়ার প্রতিজ্ঞা করে উমাপতি। ভূপতির প্রতিক্রিয়া ছিল এরকম :
তাহার নামের ব্যত্যয়ে ভূপতির কোনো সান্ত্বনা ছিল না। অর্থের ক্ষতিতে ভূপতি তত ক্ষুণ্ন হয় নাই, কিন্তু অকস্মাৎ এই বিশ^াসঘাতকতায় সে যেন ঘর হইতে শূন্যের মধ্যে পা ফেলিল।১৮
উমাপতির প্রতারণায় বিপদাপন্ন হয়ে কাগজটাকে বাঁচানোর জন্য মতিলাল নামে পরিচিত একজনের কাছে যায় ভূপতি। কিছুদিন আগে বেশ কিছু টাকা ধার নিয়েছিল মতিলাল। টাকাটা ফেরত চায় ভূপতি। প্রথমে মতিলাল ভান করে যেন এই ঋণের কথা মনেই করতে পারছে না সে। খানিক পর মনে করতে পারলেও বলে যে, এতদিনে ধারটা তামাদি হয়ে গেছে। ভূপতির প্রতিক্রিয়াটা ছিল এরকম :
ভূপতির চক্ষে তাহার চতুর্দিকের চেহারা সমস্ত বদল হইয়া গেল। সংসারের যে অংশ হইতে মুখোশ খসিয়া পড়িল সে দিকটা দেখিয়া আতঙ্কে ভূপতির শরীর কণ্টকিত হইয়া উঠিল। হঠাৎ বন্যা আসিয়া পড়িলে ভীত ব্যক্তি যেখানে সকলের চেয়ে উচ্চ চূড়া দেখে সেইখানে যেমন ছুটিয়া যায়, সংশয়াক্রান্ত বহিঃসংসার হইতে ভূপতি তেমনি বেগে অন্তঃপুরে প্রবেশ করিল, মনে মনে কহিল, ‘আর যাই হোক, চারু তো আমাকে বঞ্চনা করিবে না।’১৯
তবে বিশেষ করে এই সময়ে ছোট হলেও তার সঙ্গে প্রতারণা করে চারু। লেখার সময় স্বামীকে ঘরে ঢুকতে দেখে সঙ্গে সঙ্গে প্রায় সহজাতভাবে লেখার খাতাটা লুকিয়ে ফেলে সে। খাতাটা তার ছোট 888sport live footballজগৎ, যা কেবল অমলের সঙ্গেই ভাগ করে নেওয়া চলে। রবীন্দ্রনাথ লেখেন :
মনে যখন বেদনা থাকে তখন অল্প আঘাতেই গুরুতর ব্যথা বোধ হয়। চারু এমন অনাবশ্যক সত্বরতার সহিত তাহার লেখা গোপন করিল দেখিয়া ভূপতির মনে বাজিল।২০
তার অল্প কিছুক্ষণ পর বাড়ি ফেরে অমল। ভূপতির সঙ্গে দেখা হয়ে যায় তার। অমল বলে যে, তার মাসতুতো দাদাটিকে সুস্থ মনে হচ্ছে না। একথায় আবেগে ভূপতির কণ্ঠ রুদ্ধ হয়ে আসে, অশ্রুসজল হয় চোখ। অমল চারুকে জিজ্ঞেস করে, কী হয়েছে। চারু বলে যে, কিছু বুঝতে পারেনি সে, তারপর সাগ্রহে অমলকে নিয়ে তাদের নিজস্ব 888sport live footballের জগতে প্রবেশ করতে চায়। ঠিক এই সময় বোধোদয় ঘটে অমলের।
রবীন্দ্রনাথের ভাষায়, এই বোধোদয়ের কথাটি জানানো হয় একটা পরিমিত ও বর্ধিত উপমা দিয়ে। যে-কোনো বর্ধিত উপমা যেরকম হয়ে থাকে, এই উপমাটি সেরকম খুব দীর্ঘ ও বিস্তৃত না হলেও, কিছুক্ষণের জন্য থামিয়ে দেয় কাহিনিটির গতি। বর্ধিত উপমার বিষয়টি মূল আখ্যানের তাৎক্ষণিক ঘটনার বাইরের একটা অতি ক্ষুদ্র অপ্রাসঙ্গিক জগতে সরিয়ে দেয় পাঠককে। তবে এটা বিবৃত করার সময় আরো বেশি গুরুত্ব পায় ক্ষণিক থমকে যাওয়া মূল ঘটনাটি। এটি এমনভাবে করা হয়, যেন সেই স্থগিত করা মুহূর্তটি দীর্ঘায়িত হয়, আর তার ফলে আখ্যানের চরিত্রও পাঠকের কাছ আরো বেশি মনোযোগের দাবিদার হয়ে ওঠে। সেই মুহূর্তটি রবীন্দ্রনাথের ভাষ্যে এরকম :
চারু নিশ্চয় স্থির করিয়াছিল, তাহার নূতন লেখাটা দেখিবার জন্য অমল পীড়াপীড়ি করিবে। সেই অভিপ্রায়ে খাতাখানা একটু নাড়াচাড়াও করিল। কিন্তু, অমল একবার তীব্রদৃষ্টিতে কিছুক্ষণ চারুর মুখের দিকে চাহিল – কী বুঝিল, কী ভাবিল জানি না। চকিত হইয়া উঠিয়া পড়িল। পর্বতপথে চলিতে চলিতে হঠাৎ এক সময়ে মেঘের কুয়াশা কাটিবামাত্র পথিক যেন চমকিয়া দেখিল, সে সহস্র হস্ত গভীর গহ্বরের মধ্যে পা বাড়াইতে যাইতেছিল। অমল কোনো কথা না বলিয়া একেবারে ঘর হইতে বাহির হইয়া গেল।
চারু অমলের এই অভূতপূর্ব ব্যবহারের কোনো তাৎপর্য বুঝিতে পারিল না।২১
এ-পর্যন্ত গল্পটির দুই-তৃতীয়াংশের কাছাকাছি পৌঁছেছি আমরা। পরবর্তী এক-তৃতীয়াংশে অমলকে পাওয়া যায় মোট দুবার এবং তা-ও ভূপতির উপস্থিতিতে, কেবল একবার খুব সংক্ষিপ্ত এবং আনুষ্ঠানিকভাবে বৌদির কাছ থেকে বিদায় নেওয়ার সময়টুকু ছাড়া কখনোই চারুর সঙ্গে একান্তে দেখা যায়নি তাকে। তারপর চিরদিনের মতো এই সংসার ছেড়ে চলে যায় অমল।
রবীন্দ্রনাথ তাঁর সর্বজ্ঞ কথকের ভাষ্যে আমাদের জানান যে, অমলের অনুভূতিটা ছিল এক পা গভীর গিরিখাদের ওপর বাড়ানো পাহাড়ি পথে চলা কোনো পথিকের মতো। তবে মজার বিষয়, পুরোপুরি সর্বজ্ঞ ছিল না কথক। সত্যজিৎ রায় একটা দৃশ্য আমাদের দেখান, যেখানে অমলের ভাবনার ভাষা প্রাসঙ্গিকতা পায়। এই দৃশ্যের আগে নিউজপ্রিন্ট সরবরাহকারীর কাছে ভূপতি জানতে পেরেছে যে, উমাপতি এতদিন তার সঙ্গে প্রতারণা করে আসছিল। গল্পের মতিলাল চরিত্রটা সত্যজিৎ রায়ের ছবিতে সম্পূর্ণ অনুপস্থিত। তবে ছবিতে ভূপতিকে দেখানো হয়েছে বেশ মনমরা অবস্থায়। বোধোদয়ের মুহূর্তে, যখন অমলের মধ্যে একধরনের উপলব্ধি জন্মায়, তখন প্রথমে অমলের, তারপর চারুর একটা শট আমাদের দেখান সত্যজিৎ। ক্যামেরার দৃশ্যপথ তৈরি করা হয়েছে অমলের ঘাড়ের ওপর দিয়ে। আমরা দর্শকরা চারুকে দেখতে পাই অমলের চোখ দিয়ে। তাকে দেখা যাচ্ছে একটু দূরে, তারপর আমাদের এবং অমলের দৃষ্টিপট থেকে সরে যায়। চারুর দৃষ্টি ছিল অমলের দিকে, মনে হচ্ছিল সম্প্রতি ভূপতির ওপর যে দুর্যোগ নেমে এসেছে, সে সম্পর্কে কিছুই জানা নেই তার। আসলেই জানা ছিল না। গিরিখাদের ওপর পা দিতে যাওয়া পাহাড়ি পথে পথিকের দৃশ্যটি নেই সত্যজিতের ছবিতে। তার পরিবর্তে ওপরে উদ্ধৃত অমিয় চক্রবর্তীকে লেখা রবীন্দ্রনাথের কথাগুলো সত্যজিৎ বলান ভূপতির মুখ দিয়ে যে, পায়ের তলা থেকে মাটি সরে যাচ্ছে তার। এই উপমা দিয়ে কাদম্বরীর মৃত্যুর পর নিজের আবেগের কথা জানাতে চেয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। চারুর ভাই তার সঙ্গে প্রতারণা করেছে জানার পর ভূপতির অনুভূতি প্রকাশ করতে একই চিত্রকল্প ব্যবহার করেছেন সত্যজিৎ। সেই মৌখিক ভাবমূর্তির প্রকৃতি রবীন্দ্রনাথের গল্পের বোধোদয় প্রকাশের বর্ধিত উপমার সঙ্গে তুলনীয়। ভূপতির বলা মৌখিক বাণীটা অমলের কাছে গিয়ে হারিয়ে যায়নি। অমলের মনের অবস্থা বোঝার জন্য যা জানতে চাইছিলাম আমরা সেটা জানিয়ে দেওয়া হয় অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের চেহারার অভিব্যক্তির মাধ্যমে। রবীন্দ্রনাথের ভাষা যা বোঝাতে পেরেছে, সম্ভবত তার চেয়ে ভালোভাবে বোঝানো গেছে এই অভিব্যক্তিতে। তারপর থেকে রবীন্দ্রনাথের মূল গল্পের মতো সত্যজিতের রূপান্তরিত দৃশ্যেও অমলের উপস্থিতি ঘটে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য, এমনকি গল্পকার যতক্ষণ রেখেছিলেন তাকে, ছবিতে তার চেয়েও কম সময় পাওয়া যায় তাকে। ভূপতির কাছে লেখা চিঠি পড়ার কণ্ঠ ছাড়া ছবির বাকি অংশে পুরোপুরি অদৃশ্য থাকে অমল।২২
যদিও সত্যজিৎ রায়ের ছবিটিতে রয়েছে খুব উন্নত সংলাপ, তাঁর রূপান্তরের শৈলীটি ব্যাপকভাবে নির্ভর করেছে শব্দহীন দৃশ্যের ওপর। চারুলতা live chat 888sportটি যাঁরা দেখেছেন, শেষ দৃশ্যটির কথা তাঁদের 888sport app download for androidে আছে নিশ্চয়ই। দৃশ্যটি কিছু স্থিরচিত্রের ধারাবাহিকতা, যেমন – বিষণ্ন ভূপতির বাড়ি ফেরা, চারুর হাত বাড়িয়ে দেওয়া – এসবই আপাতত তার সংসার ও বিবাহিত জীবনের ফিরে আসার সূচনা। স্থিরচিত্রগুলোর ফ্রিজ হয়ে যাওয়াটা ভালোভাবেই জানান দেয় তাদের মানসিক অবস্থার ভাবাবেগ, শীতল ও অবিচল, তবে বরফ গলার সম্ভাবনাপূর্ণ। রবীন্দ্রনাথ যেভাবে গল্পটির সমাপ্তি টেনেছেন, সেটির অর্থ সুনির্দিষ্ট। চারুকে কলকাতায় একা রেখে দক্ষিণে চলে যাচ্ছে ভূপতি। আতঙ্কিত হয়ে তাকেও সঙ্গে নিয়ে যেতে অনুরোধ করে চারু। ভূপতি প্রথমে না বলেছিল। চারুর মিনতিতে শেষ পর্যন্ত নরম হয় ভূপতি, স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে যেতে রাজি হয়। কিন্তু উদাসীন অভিব্যক্তিহীনভাবে চারু কেবল বলে – ‘থাক।’ সত্যজিতের সমাপ্তিটা নাটকীয় এবং একভাবে দ্ব্যর্থক, সিদ্ধান্তমূলক নয়। স্থিরচিত্রগুলো ঠিক কী বার্তা দেয় সেটা তিনি নিজেও নিশ্চিতভাবে জানেন না, যদিও শেষটা ঠিক বলেই মনে হয়েছে তাঁর কাছে। সত্যজিতের মতে, সংলাপ দিয়ে সমাপ্তি টানার বিষয়টা গল্পে ঠিক থাকলেও ছবিতে রূপান্তরের ক্ষেত্রে ভুল হতো। তাই তিনি বলেন, ‘কোনো ছবিতে প্রকৃত গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তগুলো শব্দহীন হওয়া উচিত।’২৩
সবশেষে, আমার তৃতীয় প্রসঙ্গ হচ্ছে রবীন্দ্রনাথের গল্পটি একধরনের আত্মপক্ষ সমর্থন। এই শব্দ দিয়ে আমি কি বোঝাতে চাইছি তাতে যাতে কোনো সংশয় না থাকে, বাপারটা খোলসা করা উচিত। কোনো বিশেষ কর্মকাণ্ডের জন্য দুঃখ প্রকাশ করা বোঝানোর জন্য শব্দটা ব্যবহার করছি না আমি, যদিও আপাতদৃষ্টিতে শব্দটির প্রাথমিক অর্থে মনে হয় যেন কোনো অপরাধ ইত্যাদি থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য দেওয়া একটা বক্তব্য। এমন স্পর্শকাতরভাবে লেখা এবং দক্ষভাবে কারুকাজ করা এই গল্পটির মাধ্যমে রবীন্দ্রনাথ নিজের ওপর জোর দিয়ে গোটা দুনিয়াকে যেন বলতে চাইছেন, তাঁকে অপবাদ দেওয়া যায় না, গল্পটিতে বর্ণিত পরিণতিতে তাঁর কোনো হাত নেই। আমার মনে হয়, গল্পটিকে গুণীনের এক ধরনের তুকতাক হিসেবে বিবেচনা করা যায়। বৌঠান কাদম্বরী দেবীর জন্য দুই দশক আগে থেকে বিশ শতকের প্রথমদিক পর্যন্ত যে-যন্ত্রণা অনুভব করেছিলেন তিনি, গল্পটা ছিল সেটা উপশমের একটা চেষ্টা। এখানে চিরদিনের জন্য রবীন্দ্রনাথের নিজেকে সন্তুষ্ট করার একটা প্রয়াসও ছিল যে, কাদম্বরীর আত্মহত্যার জন্য প্রকৃতপক্ষে শাস্তিযোগ্য নন তিনি, সম্মানজনক সম্পর্কই ছিল তাঁর সঙ্গে। সত্যজিতের রূপান্তরেও গল্পের এই বিষয়টিকে অক্ষুণ্ন রাখা হয়েছে যথাযথভাবে।
ছোটগল্প ও live chat 888sport – উভয় মাধ্যমে অমল চরিত্রটির এই উপলব্ধি ও সচেতনতা ঘটে, যে-কোনো উপায়েই হোক সামাজিক আদর্শ লঙ্ঘিত হয়েছে। এই উপলব্ধি আসার পর চারু ও ভূপতির পরিবার থেকে সে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় দ্রুত। উপরন্তু অনবধানে তার দ্বারা প্রতারিত বয়োজ্যেষ্ঠ মাসতুতো দাদাটির পাশে থাকার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করে। রবীন্দ্রনাথের গল্প ও সত্যজিতের রূপান্তর – উভয় ক্ষেত্রে এই কল্পিত চরিত্রটি যেন বলতে চায়, ‘দেখো, আমার কোনো দোষ নেই। এছাড়া আর কি-ই বা করতে পারতাম আমি?’
চারুর কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে অমল চরিত্রটি যদিও মহত্ব দেখিয়ে পিছু হটে যায়, বাস্তব জীবনে লেখায়, নন্দলাল বসুর২৪ মতে, এমনকি চিত্রকলাতেও আবেগাক্রান্ত হয়ে বারবার ফিরে এসেছেন রবীন্দ্রনাথ, চমৎকার উদ্দীপনাময়ী ও স্নেহশীলা কাদম্বরী দেবীর কাছে, বিনিময়ে যাঁকে অত্যন্ত ভালোবাসতেন তিনি। কাদম্বরীকে নিয়ে লেখা তাঁর আরেকটি 888sport app download apk দিয়ে শেষ করব আমি :
ভোরবেলায় সে বিদায় নিলে।
আমার মন আমাকে বোঝাতে বসল, ‘সবই মায়া।’
আমি রাগ করে বললেম, ‘এই তো টেবিলে সেলাইয়ের বাক্স, ছাতে ফুলগাছের টব, খাটের উপর নাম-লেখা হাতপাখাখানি – সবই তো সত্য।’
মন বললে, ‘তবু ভেবো দেখো -’
আমি বললেম, ‘থামো তুমি। ঐ দেখো-না গল্পের বইখানি, মাঝের পাতায় একটি চুলের কাঁটা, সবটা পড়া শেষ হয় নি; এ-ও যদি মায়া হয়, সে এর চেয়েও বেশি মায়া হল কেন।’
মন চুপ করলে। বন্ধু এসে বললেন, ‘যা ভালো তা সত্য, তা কখনো যায় না; সমস্ত জগৎ তাকে রত্নের মতো বুকের হারে গেঁথে রাখে।’
আমি রাগ করে বললেম, ‘কী করে জানলে। দেহ কি ভালো নয়। সে দেহ গেল কোন্খানে।’
ছোটো ছেলে যেমন রাগ ক’রে মাকে মারে তেমনি করেই বিশ্বে আমার যা-কিছু আশ্রয় সমস্তকেই মারতে লাগলেম। বললেম, ‘সংসার বিশ্বাসঘাতক।’
হঠাৎ চমকে উঠলেম। মনে হল কে বললে, ‘অকৃতজ্ঞ!’
জানলার বাইরে দেখি ঝাউগাছের আড়ালে তৃতীয়ার চাঁদ উঠছে, যে গেছে যেন তারই হাসির লুকোচুরি।
তারা-ছিটিয়ে-দেওয়া অন্ধকারের ভিতর থেকে একটি ভর্ৎসনা এল, ‘ধরা দিয়েছিলেম সেটাই কি ফাঁকি, আর আড়াল পড়েছে এইটেকেই এত জোরে বিশ্বাস?’২৫
অবশেষে, আরেকবার :
হায়, কোথা যাবে!
যাবে যদি, যাও যাও, অশ্রু তব মুছে যাও,
এইখানে দুঃখ রেখে যাও।
যে বিশ্রাম চেয়েছিলে, তাই যেন সেথা মিলে –
আরামে ঘুমাও।
যাবে যদি, যাও।২৬
* লেখাটি ক্লিনটন সিলির বরিশাল অ্যান্ড বিয়ন্ড বইয়ের প্রকাশিতব্য বাংলা সংস্করণ থেকে উদ্ধৃত।
তথ্যসূত্র ও টীকা
১. . Probhat Kumar Mukherji, Life of Tagore, trans. by Sisirkumar Ghosh (Thompson, Connecticut : Inter Culture Associates, 1975), 35.
২. প্রাগুক্ত, ৪৫।
৩. প্রাগুক্ত।
৪. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, রবীন্দ্র রচনাবলী, (কলকাতা : বিশ্বভারতী, ১৯৩৯, ১৯৬৯), ১৭ : ৪৮৪ (মূল চিঠিটি প্রকাশিত হয়েছিল 888sport app download apk পত্রিকা কার্তিক ১৩৪৮ 888sport free betয়)।
৫. প্রাগুক্ত, ৪২৩।
৬. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, রবীন্দ্র রচনাবলী, (কলকাতা : বিশ্বভারতী, ১৯৩৯, ১৯৬৯), ২ : ৪৬ (কড়ি ও কোমল থেকে)।
৭. The Fugitive and Other Poems নামে প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল ম্যাকমিলান থেকে এবং পরবর্তী সময়ে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল A Tagore Reader, ed. Amiya Chakravarty (Boston : Beacon Press, 1966), 332.
৮. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, রবীন্দ্র রচনাবলী, (কলকাতা : বিশ্বভারতী, ১৯৪৮, ১৯৫৯), ২৬ : ১০৬-১০৭।
৯. রবীন্দ্রনাথের ইংরেজি 888sport app download apk latest version থেকে বাংলা ভাষ্যের পার্থক্য দেখা যায় এখানে : তুমি সান্ত্বনা চাও না, তুমি শোক চাও।
১০. Chakravarty, ed., A Tagore Reader, 331.
১১. মারি সেটন (১৯১০-১৯৮৫) : ব্রিটিশ অভিনেত্রী, 888sport live chat, নাটক ও live chat 888sport-সমালোচক। সের্গেই আজেনস্টাইন, পল রবসন, জওহরলাল নেহরু, সত্যজিৎ রায় প্রমুখের জীবনীও রচনা করেছেন তিনি।
১২. . Marie Seton, Portrait of a Director : Satyajit Ray (Bloomington and London : Indiana University Press, 1971), 180.
১৩. প্রাগুক্ত।
১৪. অ্যান্ড্রু জর্ড রবিনসন (১৯৪২) : আমেরিকান অভিনেতা ও সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটির মাস্টার্স অব ফাইন আর্টস অ্যাক্টিং প্রোগ্রামের সাবেক পরিচালক।
১৫. London : Andre Deutsch, 1989; Kolkata, Allahabad, Bombay, New Delhi : Rupa, 1990, 159.
১৬. প্রাচীন গ্রিক ধর্ম ও কিংবদন্তিতে পাতাললোকের রানী ও মৃত্যুর দেবী।
১৭. Andrew Robinson, Satyajit Ray : The Inner Eye.
১৮. Rabindranath Tagore, The Broken Nest (Nashtanir), tr. Mary M. Lago and Supriya Sen, intro. by Mary M. Lago (Columbia : University of Missouri Press, 1971), 59.
১৯. প্রাগুক্ত, ৬৩।
২০. প্রাগুক্ত।
২১. প্রাগুক্ত, ৬৪।
২২. রবীন্দ্র উৎসব উপলক্ষে চারুলতা থেকে ছয় মিনিটের একটা ভিডিও ক্লিপ দেখানো হয়েছিল দর্শকদের। আমার
বক্তৃতার ডিজিটাল প্রকাশনায় এ-পর্যায়ে একটা ভিডিও ক্লিপ রয়েছে https://parabaas.com/rabindranath/articles/pClinton1. html.
২৩. Quoted in Robinson, Satyajit Ray : The Inner Eye, 169.
২৪. Robinson, Satyajit Ray : The Inner Eye, 159.
২৫. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, রবীন্দ্র রচনাবলী, ষড়বিংশ খণ্ড, (কলকাতা : বিশ্বভারতী, ১৩৬৫ বঙ্গাব্দ ‘কৃতঘ্ন শোক’, লিপিকা, ১০৫।
২৬. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, রবীন্দ্র রচনাবলী, (কলকাতা : বিশ্বভারতী, ১৯৩৯, ১৯৬৯), ২ : ৪৬ (কড়ি ও কোমল থেকে)।


Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.