মানবিক দুর্দশার আলোকচিত্র

আহমেদ হাসান
রঘু রায় একজন খ্যাতনামা আলোকচিত্র888sport live chatী। ’৭১-এ মুক্তিযুদ্ধের সময়ে তাঁর ক্যামেরায় যে-ছবিকে তিনি ধারণ করেছিলেন তা হয়ে উঠেছে মানবিক বিপর্যয়ের এক বিশ্বস্ত দলিল। বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাসে এতো নির্মমতা আর দেখেনি কেউ। সে ছিল এক দুঃসময়। পাকিস্তানিরা বাঙালি নিধনযজ্ঞে মেতে উঠলে প্রাণভয়ে মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিল। বিশেষ করে কলকাতা ও পশ্চিমবঙ্গের আশেপাশে যে শরণার্থী-শিবিরগুলো ছিল, তাতে আশ্রিত মানুষের নিত্যদিনের সংগ্রাম ও বেঁচে থাকার আর্তি তাঁর ক্যামেরায় তখন বন্দি করেন তিনি। সাদা-কালো ছবিগুলো শুধু মানবিক বিপর্যয়ের দলিল হয়ে ওঠেনি, তাঁর ছবি কম্পোজিশনজ্ঞান ও বিষয়ে 888sport live chatিত হয়ে উঠেছিল। এগুলো যখন প্রকাশিত হয়েছিল কলকাতার ইংরেজি এক দৈনিকে, তখন এই ছবিগুলো দিয়েই অনেকে অনুধাবন করেছিলেন পাকিস্তানিদের নির্মমতা ও আপামর বাঙালির দুঃসহ দিনরাত্রি।
একচল্লিশ বছর পরে আমরা যখন প্রত্যক্ষ করছি মানবিক দুর্দশা, মানুষের বেঁচে থাকার আকুতির অসামান্য  আলোকচিত্র, তা নতুন করে আমাদের হৃদয়ে গেঁথে যায়। আমাদের চৈতন্যে সে-দিনগুলো যেন নতুন করে উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে। ’৭১-এ যারা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর নির্মমতা ও পীড়ন দেখেছেন, তাদের হৃদয়ে আজো অমোচনীয় হয়ে আছে সেসব দৃশ্য।
ভারত সরকার সে-সময়ে অকৃত্রিম সাহায্য করেছিল। লাখ লাখ 888sport appsের মানুষকে বাঁচিয়ে রেখে মানবিকতার যে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিল, তার নজির পৃথিবীর ইতিহাসে আর নেই। এক কোটি নিরাশ্রিত মানুষকে আশ্রয় দিয়েছিল। লাখ লাখ তরুণকে সামরিক প্রশিক্ষণ দিয়েছিল। রঘু রায় মানবিক অঙ্গীকারকে বুকে ধারণ করে শরণার্থী-শিবিরগুলোতে ঘুরে বেড়িয়েছেন এবং ছবি তুলেছেন। মানুষের দুঃখ-কষ্ট ও যাতনা প্রত্যক্ষ করে নিজেও এত কষ্ট পেয়েছিলেন যে, সে-কথা এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন।
রঘু রায়ের আলোকচিত্রে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী সাধারণ মানুষের ওপর যে নির্মম নির্যাতন চালিয়েছিল, তা  প্রকাশিত হয়েছে। মানুষের দুর্দশা ও বেঁচে থাকার আকুতি কত যে তীব্র হয়ে উঠেছিল, তা প্রতিফলিত হয়েছে। একই সঙ্গে তিনি ক্যামেরায় বন্দি করেছেন মুক্তিযুদ্ধে অসমসাহসী কিছু তরুণের প্রত্যয়দৃঢ় মুখ। এই মুক্তিযোদ্ধারাই ভারতীয় সেনাবাহিনীর সক্রিয় অংশগ্রহণ ও সহায়তায় একটি শক্তিশালী উচ্চ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর জয়লাভ করেছিলেন এবং 888sport apps পৃথিবীর মানচিত্রে স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের মর্যাদা অর্জন করে। অধিকৃত 888sport appsের হৃদয়, সেই সময়ের রক্তাক্ত আর্তনাদ, মানুষের বেদনাময় ও যাতনার অভিব্যক্তি ফুটে উঠেছে প্রদর্শনীর এসব আলোকচিত্রে।
প্রাণভয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের আশায় ছুটে চলছে যখন লাখ লাখ মানুষ, তখন তাঁদের অভিব্যক্তিতে ফুটে উঠেছিল মৃত্যুভয়। বৃদ্ধ, শিশু ও 888sport promo codeদের দুর্দশা এই সময় চরম পর্যায়ে পৌঁছেছিল। যতক্ষণ না নিরাপদ আশ্রয়ে পৌঁছেছিল সেসব মানুষজন, ততক্ষণ হতাশাপীড়িত মানুষের মৌন মিছিলে বেঁচে থাকার আকুতি তীব্র হয়ে উঠেছিল। রঘু রায় মানবিক বিপর্যয়ের এসব দৃশ্য ও মানুষের দুর্দশার, মৃত্যুভয়তাড়িত মানুষের অভিব্যক্তিকে যেমন তুলে ধরেছেন তাঁর ক্যামেরায়, একইসঙ্গে কিছু ছবিতে মুক্তিযোদ্ধাদের দৃঢ়তাকে ক্যামেরায় বন্দি করেছেন। তিনি ক্যামেরাবন্দি করেন সেই দৃশ্যেরও, যা ঐতিহাসিক মূল্যে কম গুরুত্ববহ নয়। রেসকোর্স ময়দানে  পাকিস্তানি জেনারেলরা যখন আত্মসমর্পণ করছে সে-মুহূর্তেও তিনি নানা বিপত্তির মধ্যে 888sport app চলে এসেছিলেন। সেই যৌথ বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণের ঐতিহাসিক মুহূর্তটিকেও তিনি বন্দি করেছেন তাঁর ক্যামেরায়।
রঘু রায়ের আলোকচিত্র সেদিক থেকে মুক্তিযুদ্ধের এক বলিষ্ঠ 888sport live chat হয়ে উঠেছে।
২০১২ সালের বিজয় দিবস ১৬ ডিসেম্বরকে সামনে রেখে 888sport appsের মুক্তিযুদ্ধের সময় তোলা আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ভারতীয় আলোকচিত্রী রঘু রায়ের ছবির প্রদর্শনী 888sport appয় হয়ে উঠেছিল একটি উল্লেখযোগ্য সাংস্কৃতিক ঘটনা। মুক্তিযুদ্ধের সময় রঘু রায়ের তোলা এসব আলোকচিত্র নিয়ে এই প্রথমবারের মতো 888sport appয় প্রদর্শনীর আয়োজন করেছিল 888sport appস্থ ভারতীয় হাইকমিশন, ইন্দিরা গান্ধী কালচারাল সেন্টার ও বেঙ্গল গ্যালারি অব ফাইন আর্টস। প্রদর্শনীর শিরোনাম 888sport apps : দ্য প্রাইস অব ফ্রিডম। প্রদর্শনীতে মুক্তিযুদ্ধের সময় বাঙালির আত্মত্যাগ ও পাকিস্তানিদের নিমর্মতার ৫৬টি আলোকচিত্র ছিল।
রঘু রায় 888sport appsের মুক্তিযুদ্ধ, উদ্বাস্তু, পাকিস্তান বাহিনীর আত্মসমর্পণ ইত্যাদি নিয়ে কাজ করার জন্য ১৯৭২ সালে ভারত সরকার কর্তৃক পদ্মশ্রী পদকে ভূষিত হন। তার জন্ম ১৯৪২ সালে। তিনি সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়াশোনা শেষ করার পর ১৯৬৫ সালে মাত্র ২৩ বছর বয়সে আলোকচিত্রী হিসেবে কাজ শুরু করেন। ১৯৬৬ থেকে ‘৭৬ সাল পর্যন্ত দ্য স্টেটসম্যান পত্রিকায় চিফ ফটোগ্রাফার এবং ১৯৭৭ থেকে ’৮০ সাল পর্যন্ত কলকাতার সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন সানডেতে পিকচার এডিটর হিসেবে কাজ করেন। তিনি ১৯৮২ থেকে ১৯৯১ পর্যন্ত ভারতের শীর্ষস্থানীয় ম্যাগাজিন ইন্ডিয়া টুডেতে বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক বিষয়ের ওপর কাজ করেন। তিনি ১৯৯২ সালে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিতে প্রকাশিত হিউম্যান ম্যানেজমেন্ট অব ওয়াইল্ড লাইফ ইন ইন্ডিয়া শীর্ষক কাজের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে ফটোগ্রাফার অব দ্য ইয়ার 888sport app download bd লাভ করেন। টাইম, লাইফ, জিও, লে ফিগারো, দি নিউইয়র্ক টাইমস, দি টাইমস-লন্ডন, নিউজ উইক, ভোগ, জিকিউ, দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্টসহ পৃথিবীর প্রায় সব বিখ্যাত ম্যাগাজিন এবং পত্রিকায় তাঁর আলোকচিত্র প্রকাশিত হয়েছে। তিনি ওয়ার্ল্ড প্রেস ফটো কনটেস্ট আমস্টার্ডামের একজন বিচারক ছিলেন। সম্ভবত তিনি একমাত্র আলোকচিত্রী, যাঁর বিভিন্ন বিষয়ের ওপর ৩০টিরও বেশি বই প্রকাশিত হয়েছে। ১৯৭১ সালে প্যারিসের গ্যালারি ডেলপিয়েরেতে অনুষ্ঠিত রঘু রায়ের প্রদর্শনীর আলোকচিত্র দেখে মুগ্ধ হয়ে বিশ্বখ্যাত আলোকচিত্রী হেনরি কার্টার ব্রেসন তাঁকে আলোকচিত্রীদের নিয়ে পৃথিবীর সবচেয়ে সম্মানজনক প্রতিষ্ঠান ম্যাগনাম ফটোসের জন্য নির্বাচিত করেন। বর্তমানে তিনি নয়াদিল্লিতে বসবাস করছেন এবং ম্যাগনাম আলোকচিত্রী হিসেবে কাজ করছেন।