॥ ৪ ॥

কয়েকদিনের মধ্যেই মেয়ে-পাচারকারীদের সম্পর্কে আমার অনেক কিছু জানা হয়ে গেল। কয়েকজনকে দেখলামও স্বচক্ষে।

সাধারণ চোর-ডাকাতদের সঙ্গে এদের কোনো মিল নেই। এরা ছুরি-ছোরা, বন্দুক- পিস্তলের কারবার করে না। সঙ্গে কোনো অস্ত্রই রাখে না বলতে গেলে। সমাজের নানাস্তরে এরা অন্যপরিচয়ে মিশে থাকে। সামান্য বিপদের সম্ভাবনা দেখলেই এরা আস্তানা বদল করে, কখনো দুঃসাহসিক কোনো কাণ্ড করার ঝুঁকি নেয় না। চোর-ডাকাত কিংবা খুনি কিংবা রাজনৈতিক মাস্তানদের

সঙ্গেও এরা সংশ্রব রাখে না বলে এদের চেনা খুব শক্ত।

পুলিশের সঙ্গে এদের সম্পর্ক ভালো। নিচুস্তরের পুলিশরা এদের কাছ থেকে নিয়মিত ঘুস খায়, চুপচাপ থাকে। অনেক ডাকাতের দল বা পেশাদার খুনিকেও পুলিশ চেনে, তাদের কাছ থেকেও ঘুস খায়, কিন্তু মাঝে মাঝে দায়ে পড়ে তাদের গ্রেফতারও করতে হয়। কারণ, ডাকাতি বা খুন নিয়ে হইচই হয় খুব, খবরের কাগজে প্রথম পাতায় হেডলাইন হয়, সাধারণ মানুষও বিক্ষোভ দেখায়। তাই ওপর মহলের চাপে পুলিশকে কিছুটা তৎপরতা দেখাতেই হয়। সেই তুলনায় 888sport promo code-পাচার হয় প্রায় নিঃশব্দে। বহু যুগ ধরে এই কারবার চলে আসছে, কিন্তু পুরুষশাসিত সমাজ তা নিয়ে খুব একটা মাথা ঘামায় না। মাঝে মাঝে সামান্য তরঙ্গ ওঠে, অচিরেই তা মিলিয়ে যায়। যারা ধরা পড়ে, প্রমাণ-অভাবে আদালতে তাদের শাস্তি হয় না। নিচের তলার পুলিশরা ইচ্ছে করেই দুর্বল কেস সাজায়। এই মতিবিবি আগে দু’বার ধরা পড়েও ছাড়া পেয়ে গেছে। জেলখানাগুলোতে 888sport promo code-পাচারকারীর 888sport free bet প্রায় শূন্য বলা যেতে পারে।

রাজনৈতিক দল কিংবা বিমা কম্পানির মতন এক-একটি 888sport promo code-পাচারকারী দলের বহু এজেন্ট ছড়ানো থাকে সারা দেশে। তাদের মধ্যে পুরুষ যেমন আছে, মেয়েও কম নেই। এরা ঘুরে ঘুরে খবর নেয়, কোথায় রয়েছে কত অসহায় মেয়ে। এর জন্য বেশি তৎপরতারও প্রয়োজন হয় না। আমাদের মতন গরিব দেশে অসহায় মেয়ের 888sport free betই তো বেশি। অধিকাংশ সংসারেই কন্যাসন্তান অবাঞ্ছিত। মেয়ে একটু ডাগর হলেই তার বিয়ের  চিন্তায় গরিব ঘরের বাবা-মায়ের ঘুম ঘুচে যায়। মেয়ের বিয়ে দিতেই হবে, নাহলে সর্বনাশ হয়ে যাবে, এই সংস্কার আমাদের সমাজে বদ্ধমূল। যারা দু’বেলা খেতে পায় না, তাদেরও আছে কলঙ্কের ভয়!

এক সময় কলেজ স্ট্রিট কফি হাউজের সামনে দু’তিনটি বাচ্চা মেয়েকে ভিক্ষে করতে দেখতাম। তার মধ্যে একটি মেয়েকে দেখে চমকে চমকে উঠেছি। এককালের হলিউডের বিখ্যাত অভিনেত্রী অড্রে হেপবার্নের সঙ্গে তার মুখের আশ্চর্য মিল, ঠিক যেন সেই মুখটি বসানো। অড্রে হেপবার্ন আমার প্রিয় নায়িকা ছিল, গ্রেগরি পেকের সঙ্গে তার রোমান হলিডে ছবিটি অলটাইম ক্লাসিকের পর্যায়ে পড়ে। সেই ভিখারিনি বালিকাটির বয়েস বড়জোর নয়-দশ, এত সরল মুখখানি আর সুরেলা রিনরিনে গলা যে তাকে দেখলেই গাল টিপে আদর করতে ইচ্ছে করতো।

একদিন মেয়েটিকে জিজ্ঞেস করলাম, তোর নাম কী রে!

সে বলেছিল, আইমা।

অন্য একটি মেয়ে, সে হয়তো এক বছরের বড়, দেখতে তেমন ভালো নয়, সে কাছে এসে দাঁড়িয়ে ছিল। ওরা দুই বোন। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে প্রশ্ন করে জেনেছিলাম, ওরা সারাদিন ভিক্ষে করে, আর সন্ধের পর শিয়ালদা স্টেশনে গিয়ে শুয়ে থাকে। সেখানে ওদের ভিক্ষের সব টাকা এক মাসিকে দিয়ে দিতে হয়। না দিলে কেড়ে নেয় আর মারে। সেখানে ওরা খেতে পায় দু’বেলা।

আইমা নামটা শুনে আমার খটকা লেগেছিল। এরকম নাম কখনো আগে শুনিনি। কোনো নামের ভগ্নাংশ? তা মেয়েটি জানে না। ওর দিদির নাম রহিমা। হয়তো মুসলমান বাড়ির মেয়ে। অবশ্য, যারা সারাদিন ভিক্ষে করে আর রাত্তিরে রেলস্টেশনে শুয়ে থাকে, কোনো ধর্মকর্মের সঙ্গে সম্পর্কই নেই, তারা আবার হিন্দু কিংবা মুসলমান কী? তবু, এদেশে জন্মপরিচয় কিছুতেই মুছে ফেলা যায় না।

শিয়ালদা স্টেশনে থাকে, কিন্তু ওরা এলো কোথা থেকে? স্টেশনে তো আর জন্মায়নি!

আইমা কথাই বলতে চায় না, শুধু বড় বড় চোখ মেলে চেয়ে থাকে। সেই তুলনায় রহিমা কিছুটা টরটরে। সে বললো, ওদের জন্ম অনেক দূরের এক গ্রামে। রেলে চেপে এসেছে সেখান থেকে।

কত দূর বা কোন জেলায় সে গ্রাম, তা জানে না। ওরা ছিল এগারোটি ভাই-বোন। কিছুদিন আগে ওদের মা মারা যাবার পর বাবা ওদের দু’বোনকে নিয়ে একসঙ্গে ট্রেনে চেপে বেড়াতে এসেছিল। তারপর দু’জনকেই শিয়ালদা স্টেশনে ছেড়ে দিয়ে ওদের জনক অদৃশ্য হয়ে যায়। ওদের অন্য বোনেরা কোথায় ছড়িয়ে ছিটকিয়ে গেছে, তাও ওরা জানে না।

কয়েকমাস পরেই আইমা ও রহিমাকে আর দেখা যায়নি। একদিন কয়েকজন বন্ধু মিলে রাত্তিরবেলা শিয়ালদা স্টেশনেও খুঁজতে গিয়েছিলাম ঝোঁকের মাথায়। সেখানে বেশ কয়েকটি ভিখিরিগোষ্ঠী মৌরসিপাট্টা গেড়ে আছে, সেখানে ওই মেয়েদুটি নেই। সম্ভবত তাদের শরীরে 888sport promo codeত্বের চিহ্ন ফুটে উঠতে না উঠতেই কোনো অন্ধকার জগৎ তাদের টেনে নিয়ে গেছে।

আইমাকে নিয়ে আমি আগে একবার লিখেছি। তবু এতদিন পরেও সে আমার মন থেকে মুছে যায়নি। যখনই অড্রে হেপবার্নের কোনো পুরোনো ছবি দেখি, সেই ভিখারিনি বালিকাটির কথা আমার মনে পড়ে, একটু একটু ব্যথার অনুভূতি হয়।

এখন কিছু কিছু সংস্থা পথশিশুদের নিয়ে নানারকম কাজ করছে। তাদের লেখাপড়া শেখানো ও কিছু কিছু জীবিকার ব্যবস্থা হচ্ছে, তাদের নিয়মিত স্বাস্থ্যপরীক্ষা করে ওষুধও দেওয়া হয়। আইমারা সে-সুযোগ পায়নি।

সন্তোষকুমার ঘোষের একটি মর্মস্পর্শী ছোটগল্প আছে, ‘রাণু যদি না হতো’। রাণু একটি সুশ্রী, সদ্য যুবতী, তার বাপ-মায়ের খুব আদরের। কিন্তু রাণু জানে না, তার জন্মের আগে তার বাবা-মা দু’জনেই          সন্তান চাননি, গর্ভনিরোধের সবরকম ব্যবস্থা নিয়েছিলেন, তবু কোনোক্রমে শিশুকন্যাটি জন্মে যায়। অর্থাৎ সেই সময় ওই দুর্ঘটনাটি না ঘটলে পৃথিবীতে এই সুন্দরী, নিখাত যুবতীটির কোনো অস্তিত্বই থাকতো না। এই কথাটা এখন রাণুকে জানিয়ে দিলে কেমন হয়?

প্রিয়ব্রত সান্যালের বাড়িতে আমি যতবার যাই, ওই গল্পটির কথা বারবার মনে পড়ে। সামান্য ভাড়াবাড়িতে থাকেন, পরিবারটি তেমন সচ্ছল নয়। ওঁদের দু’টি মেয়ে। তার মধ্যে একেবারে ছোট মেয়েটিকে সবসময় পুরুষের মতোই প্যান্ট-শার্ট পরিয়ে রাখা হয়, মাথায় চুলও ছাঁটা। ছেলে-সাজা এ মেয়েটি তার বাবা-মায়ের ব্যর্থ সাধের প্রতীক।

প্রথম দু’টি কন্যাসন্তান জন্মাবার পর প্রিয়ব্রতদা ভেবেছিলেন, তৃতীয়টি নিশ্চয়ই ছেলে হবে। হলো না। চতুর্থবারেও সেই আশা। আবার ব্যর্থ হলো আশা। ষষ্ঠবারের পর ক্ষান্ত দিতেই হলো। অর্থাৎ শেষের দিকের চারটি মেয়েই অবাঞ্ছিত। সেই মেয়েরা কিন্তু এখন বেশ স্বাস্থ্যবতী হয়ে সারাবাড়ি ঘুরে বেড়ায়। তারা জানে না, তারা নিজেদের অধিকারে আসেনি।

পুত্রসন্তানের জন্য এই ব্যাকুলতা অতি বিশ্রী ব্যাপার। এই আধুনিককালে মেয়েরা তো সব ব্যাপারেই ছেলেদের সমান হতে পারে, যদি সুযোগ পায়। তারা লেখাপড়া শিখে চাকরি-বাকরি কিংবা জীবিকার ব্যবস্থা করে নিতে পারে, শেষ বয়েসে ছেলের তুলনায় মেয়েরাই বাবা-মাকে দেখবে আশা করা যায়। তবু বাবা-মায়েরা এটা মানতে চায় না। তাদের ধারণা, ছেলে না জন্মালে বংশরক্ষা করা যায় না। এই বংশরক্ষা কিংবা রক্তের সম্পর্ক ইত্যাদিও কুসংস্কার। বংশরক্ষা করতেই বা হবে কেন? রবীন্দ্রনাথ কিংবা শেক্সপীয়ারের কোনো বংশধর নেই, কত মহাপুরুষও তো নিঃসন্তান, তাতে পৃথিবীর কী ক্ষতি হয়েছে? আবার অনেক মহাপুরুষ কিংবা সৎ, ভদ্র মানুষেরও বংশধর হয় অতি কুলাঙ্গার। এ তো আমরা প্রায়ই দেখি। অনেক গুণধর ছেলে, নিজের বউয়ের প্ররোচনায় বৃদ্ধ বাবা-মাকে কষ্ট দেয়। এ উদাহরণও তো অসংখ্য! তবু বংশরক্ষার এত মায়া।

রশিদের সঙ্গে সেদিনই বিকেলে রয়াল জর্ডন এয়ারলাইন্স অফিসে গিয়ে একটা অদ্ভুত ঘটনা জানা গেল। তাদের কলকাতার ফ্লাইট মুম্বাইতে গিয়ে কিছুক্ষণ থামে বটে, কিন্তু সেখানে কোনো যাত্রী নামে না কিংবা নতুন যাত্রীও তোলা হয় না। সেরকম নিয়ম নেই। শুধু তেল ভরে নেয় বিমানে। কিন্তু সেই বিশেষ দিনটিতে মুম্বাই পৌঁছোবার পর বিমানটি আর ছাড়েনি। যান্ত্রিক গোলযোগের জন্য বিমানটিকে বসিয়ে দেওয়া হয় আঠারো ঘণ্টার জন্য, নামিয়ে দেওয়া হয় সব প্যাসেঞ্জারকে। পরদিন পুরোনো যাত্রীরা সবাই আবার ফিরে এসেছিল কিনা, তা এখানকার অফিস বলতে পারবে না। এরকম ক্ষেত্রে কিছু লোক যাত্রা বাতিল করতেই পারে।

অর্থাৎ আনোয়ারাকে মুম্বাই নামিয়ে নেওয়া হয়েছে কিংবা পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে সৌদি আরবে, তা জানা গেল না।

রশিদ অবশ্য অফিসে ফিরে এসে মুম্বাই পুলিশকে জানালো সব ঘটনা। তারা ‘দেখছি’ ‘দেখছি’ বলে ফোন ছেড়ে দিল। বিশেষ গুরুত্ব দিল না।

আমি রশিদকে বললাম, তুমি নিজে একবার মুম্বাই যেতে পারো না? তোমরা তো এনকোয়ারির জন্য দিল্লি, মুম্বাই, এমনকি কাশ্মীরেও যাও, কাগজে দেখি। এই তো ক’দিন আগে পাঞ্জাবের পুলিশ কলকাতায় এসে একজন ক্রিমিনালকে ধরে নিয়ে গেল!

রশিদ বললো, কী মুশকিল, আমার অফিস আমাকে না পাঠালে আমি যাবো কী করে? নিজের ইচ্ছেতে যাওয়া যায়? তাছাড়া, তোমরা তো এখানে কোনো থানায় এফ আই আর করোনি!

এখন করে দেবো? তুমি বলে দাও, কী করে করতে হবে?

আরে ইয়ার, তুমি এফ আই আর করাবার কে? হাউ ইউ আর রিলেটেড উইথ হার? মহিলার স্বামী কিংবা ভাই-টাই যদি করে,… তাছাড়া ব্যাপারটা অরিজিনেট করেছে 888sport appsে। 888sport apps সরকার আমাদের অনুরোধ জানালে আমরা এনকোয়ারি স্টার্ট করতে পারি। তাছাড়া তো আমরা কিছু করতে পারি না!

অনেক নিয়মকানুনের ঝামেলা আছে?

অফ কোর্স! তাছাড়া তুমি বলেছো, সে মহিলা নিজের ইচ্ছেতে গেছেন। তিনি আবার প্রাপ্তা, নো, প্রাপ্তবয়স্কা! দেখো, কীরকম বাংলা বলছি! প্রাপ্তবয়স্কা! তাকে টাচ করা যাবে না! তিনি যদি বলেন, সৌদি আরবে যাচ্ছি, আমার ইচ্ছে হয়েছে, আপনাদের তাতে কী?

কিন্তু তুমি বুঝতে পারছো না! তাকে ভুল বোঝানো হয়েছে। সেও রাগের চোটে, ঝোঁকের মাথায় … কিন্তু বোঝাই যাচ্ছে সে একটা র‌্যাকেটের মধ্যে পড়েছে।

শোনো সুনীল, তোমরা ভাববিলাসী, তোমরা ফ্যাক্ট অব লাইফ অনেক কিছুই জানো না। অধিকাংশ মেয়েই স্বেচ্ছায় যায়। লোভের বশে, উজ্জ্বল ভবিষ্যতের আশায়। সেইজন্যই তো মেয়ে-পাচারের কারবারটা এমন রমরমিয়ে চলে। তাদের বাবা-মায়েরাও অনেক সময়ই স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে। মেয়েটা গেছে তো গেছে, আপদ গেছে। মেয়ে চুরি হলেও থানায় রিপোর্ট করে না। তুমি একটা জিনিস লক্ষ করোনি? খবরের কাগজে যে নিরুদ্দেশের বিজ্ঞাপন বেরোয়, সবই তো ছেলেদের জন্য! কোনো মেয়ের নামে বিজ্ঞাপন দেখেছো? খুবই রেয়ার! মেয়েরা কি বাড়ি ছেড়ে যায় না? প্রচুর, প্রচুর! তারপর ধরো, একটা ছেলে বাড়ি থেকে পালালো, আবার ফিরে এলো ছ’মাস কী এক বছর পরে, তার কত আদর-যত্ন হবে, তাকে দুধ-ভাত খাওয়াবে! কোনো মেয়ে বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে গিয়ে ছ’মাস বাদে ফিরে এলে কী হবে? তাকে বাড়িতে ঢুকতেই দেওয়া হবে না! মারতে মারতে গলাধাক্কা দিয়ে বের করে দেওয়া হবে! এই হচ্ছে আমাদের সোসাইটির আসল চেহারা। মেয়েটিকে আলটিমেটলি স্ট্রেট যেতে হবে কোনো ব্রথেলে!

গরিবদের মধ্যে এরকম হয় ঠিকই। কিন্তু এ মেয়েটি বিবাহিত ও ভদ্র পরিবারের, তার স্বামী হিস্ট্রির প্রফেসর, খুবই উদারমনস্ক। এমনিতে হ্যাপি ফ্যামিলি, হয়তো দু’একবার ঝগড়া হয়েছে, সব ফ্যামিলিতেই হয়, মেয়েটি একটু বেশি রাগী, ভেবেছে, সৌদি আরবে গিয়ে অনেক টাকা রোজগার করে ফিরে এসে স্বামীকে জব্দ করবে। পুরোটাই ইলিউশান!

মহিলার কত যেন বয়েস বলেছিলে?

খুব বেশি না। বত্রিশ-তেত্রিশ।

দেখতে ভালো?

হ্যাঁ, বেশ ভালোই তো। সুন্দরীই বলতে পারো।

হুঁ, 888sport appsের এক মহিলার ব্যাপারে তুমি এত ইনভল্ভড হয়ে পড়ছো কেন? কোনো অ্যাফেয়ার-ট্যাফেয়ার হয়েছে নাকি?

আমি হাসলুম।

এরকম প্রশ্ন উঠবেই। একটি নিখোঁজ বাচ্চা ছেলে কিংবা অসুস্থ বৃদ্ধের ব্যাপার হলে সবাই সহানুভূতি দেখাবে। কিন্তু কোনো যুবতীকে নিয়ে উদ্বেগ দেখালে অনেকেরই মনে হবে, আমার নিজস্ব কোনো গভীর কারণ আছে।

কারণ কি সত্যিই নেই, না আছে? একটি শিশু কিংবা বৃদ্ধ হলে কি একটি এতটা সময় ব্যয় করতাম? খবরের কাগজে কোনো অচেনা তরুণীর গায়ে আগুন লাগিয়ে আত্মহত্যার খবর পড়লে যতটা দুঃখিত বোধ করি, কোনো যুবকের সেরকম ঘটনায় মনে ততটা দাগ কাটে না। এটাই প্রকৃতির খেলা।

সৌদি আরবে গিয়ে আনোয়ারার কোন ধরনের বিপদের কথা আমি ভাবছি? অন্য পুরুষরা তার শরীর নিয়ে ছিনিমিনি খেলবে, এটাই তো প্রধান উদ্বেগের বিষয়। এটা কি এক ধরনের ঈর্ষা নয়? আনোয়ারার সঙ্গে আমার কোনো অ্যাফেয়ার হয়নি, সে প্রশ্নই ওঠে না, তবু এই সুপ্ত ঈর্ষাবোধ কাজ করছে আমার মনে। এটাও প্রকৃতির খেলা।

চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বললুম, চলি এবার রশিদ!

রশিদ বললো, আমার কথায় রাগ করলে নাকি! আরে বাবা, আমি তো জানিই, মোসলমান মেয়েদের সম্পর্কে হিন্দুদের মধ্যে একটু ছুঁকছুঁকুনির ভাব আছে। মনে করে, ইজিলি অ্যাভেইলেব্ল!

আর হিন্দু মেয়েদের সম্পর্কে মুসলমানদের সেরকম কোনো ভাব নেই, তাই তো?

নেই মানে? ডাব্ল! ডাব্ল ছুঁকছুঁকুনি! যেমন আমার।

এরপর রশিদ হাসতে শুরু করলো। তার সেই বিখ্যাত হাসি। সারা শরীরটা কাঁপে, আর থামতেই চায় না। অতবড় জোয়ান পুরুষটিকে এরকম হাসির সময় মনে হয়, একেবারে যেন একটি শিশু!

এই সময় ওর কাঁধে চাপড় মেরে থামাতে হয়।

হাসি থামলে রশিদ বললো, কোথায় যাব? দাঁড়াও না, সন্দীপন ব্যাটাকে ডাকি। তারপর পার্ক স্ট্রিটে গিয়ে বসবো!

আমি বললুম, না, আজ আর হবে না। আজ এক জায়গায় 888sport app download apk পড়তে যেতে হবে।

রশিদ বললো, তোমরা বাংলা কবিরা হ্যাংলার মতন যেখানে-সেখানে 888sport app download apk পড়তে যাও কেন? বিনা পয়সায়? রানিগঞ্জে একটা উর্দু পোয়েট্রি ফেস্টিভ্যালে গিয়েছিলাম গত মাসে, আমাকে দু’হাজার টাকা দিয়েছে! তোমাদের কী দেয়, ঠান্ডা সিঙ্গাড়া আর ভাঁড়ের চা!

আমি বললুম, আজকাল আর সিঙ্গাড়াও দেয় না। শুধু চা। তুমি এতক্ষণ অফিসে বসে আছো। তোমার যে আবার প্রমোশান হয়ে যাবে, তখন আরও বিপদে পড়বে!

রশিদ বললো, ধুর, আমি তো এ চাকরি ছেড়েই দিচ্ছি। এই শীতকালেই আমার ছবির শুটিং শুরু করবো। সামনের বছর কান ফেস্টিভ্যালে আমার ছবি যাবে। ক্যামেরায় কে থাকছে জানো? কে সে মহাজন, মৃণালদার সব ছবি যে করে। আমার সঙ্গে কথা হয়ে গেছে, রাজি আছে। গ্রেট ক্যামেরাম্যান।

সিনেমার কথা শুরু করলে অনেকক্ষণ চলবে। ওর উৎসাহে খানিকটা জল ঢেলে দিয়ে আমি বললুম, তোমার তো ক্যামেরাম্যান ঠিক হয়ে গেছে। নায়ক-নায়িকা, সব কাস্টিং রেডি। শুধু একটা সামান্য জিনিস বাকি আছে। ফিনান্স! টাকাটা কে দেবে?

খানিকটা চুপসে গিয়ে রশিদ বললো, হয়ে যাবে। টাকার ব্যবস্থা হয়ে যাবে!

দু’জনেই বেরুলাম এক সঙ্গে। রশিদ ওর গাড়িতে আমাকে রবীন্দ্র সদন পর্যন্ত লিফ্ট দিল।

এক-এক সময় এমন কিছু ঘটনা ঘটে, যা অল্পসময়ে খুব সাধারণ মনে হলেও সেই বিশেষ সময়ে মনে হয়, সব ঘটনার মধ্যে একটা যোগসূত্র আছে। যেন একটা নির্দিষ্ট ছক মেনে ঘটে যাচ্ছে। 888sport alternative linkের মতন।

মাঝে মাঝে আমাকে দিল্লি যেতে হয়, 888sport live football আকাদেমির আমন্ত্রণে। আসাম, উড়িষ্যাতেও যাই। বিহার থেকে কখনো ডাকে না। মুম্বাই যাওয়া হয় কদাচিৎ। শেষ গেছি চার বছর আগে।

বাড়িতে এসে একটা চওড়া খামের চিঠি পেলাম। জাতীয় live chat 888sport উন্নয়ন পর্ষদের আমন্ত্রণ। দু’বছর আগে ওরা সাতটি ভারতীয় ভাষায় চিত্রনাট্য প্রতিযোগিতা আহ্বান করেছিল। এতদিন বাদে তার ফলাফল ঘোষিত হবে। তার মধ্যে বাংলা চিত্রনাট্যগুলোর বিচারক হবার জন্য আমাকে অনুরোধ করা হয়েছে। যেতে হবে মুম্বাই। প্লেনভাড়া, হোটেলভাড়া সব দেবে। মোট একচল্লিশটি বাংলা চিত্রনাট্যের বিচার করতে হবে পাঁচদিনে। দু’বছর ফেলে রেখে এখন পাঁচদিনের মধ্যে দেখে দিতে হবে তাড়াহুড়ো করে।

ঠিক এই সময়ে মুম্বাই যাওয়ার আমন্ত্রণ কি কাকতালীয় বলা যায়?

স্বাতীকে জিজ্ঞেস করলাম, যাবে নাকি মুম্বাই বেড়াতে? হোটেলের খরচ লাগবে না। ওরা আমাকে কিছু ফি দেবে, তাতে তোমার প্লেন ভাড়াটা হয়ে যাবে।

বেড়াবার নাম শুনলে স্বাতী সবসময় নেচে ওঠে। কিন্তু এখন হতাশভাবে বললো, যাবো, এই সাতাশ তারিখ? ওরা আর একটু পরে ডাকতে পারলো না!

সাতাশ তারিখে ওর এক মাসির মেয়ের বিয়ে। সেই বিয়ের সময় ওকে থাকতেই হবে!

সারা ভারত live chat 888sport 888sport app download bdে আমি বারদুয়েক জুরি হয়েছি। প্রথমবারে বেশ উৎসাহের সঙ্গে গেলেও দ্বিতীয়বার ভালো লাগেনি। খুবই বিরক্তিকর কাজ। প্রতিদিন সাত-আট ঘণ্টা ধরে পরপর ফিল্ম দেখে যেতে হয়, বিভিন্ন ভাষার। চোখ টনটন করে। হিন্দি আর ইংরিজি ছাড়া অন্য ভাষায় ছবির সাব-টাইট্ল পড়তে হয়। আগে এক প্রস্থ প্রাথমিক নির্বাচন হয়ে গেলেও যেসব ছবি বিবেচ্য হয়, তারও অধিকাংশই অখাদ্য! মনে হয়, শুধু শুধু সময় নষ্ট!

গত বছর আমি জুরি হবার আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করেছিলুম।

এবারেও মুম্বাই শহরে গিয়ে হোটেলের ঘরে বসে বসে একচল্লিশখানা চিত্রনাট্য পড়ার কাজটা মোটেই সুখকর নয়। এবারেও প্রত্যাখ্যান করতে পারতাম, কিন্তু ক’দিন ধরে মুম্বাই শহরের কথা আমার বারবার মনে পড়ছে। এসে গেল অপ্রত্যাশিত সুযোগ। এরকম একটা উপলক্ষ না থাকলে মুম্বাই যাওয়া হতো না।

মুম্বাই শহরের কেন্দ্রস্থলে, চার্চগেটের কাছে আকবর হোটেলে আমাদের থাকার ব্যবস্থা হয়েছে। এগারোতলার ওপরে ঘর, জানলা দিয়ে সুদূরে চোখ চলে যায়। কিন্তু সমুদ্র দেখা যায় না।

এ শহরে আমার কিছু পরিচিত মানুষজন আছে। তাদের মধ্যে একটি মারাঠি দম্পতি আমাকে খুবই ভালোবাসে। স্বামীর নাম বলবš্—, সে বাংলা জানে না, কিন্তু চমৎকার রবীন্দ্রসংগীত গায়। শুধু গায় না, তার বাড়িতে শনি-রবিবার গানের ক্লাস হয়, সেখানে বলবন্ত্ বাঙালি ছেলেমেয়েদেরও রবীন্দ্রসংগীত শেখায়। সে বাংলা ভাষায় কথা বলতে পারে না। কিন্তু গানের উচ্চারণ নিখুঁত। তার স্ত্রী নলিনী জন্মসূত্রে গুজরাতি, সে বাংলা শিখেছে বাংলা 888sport live football ভালোবেসে। গুজরাতিদের মধ্যে অনেকেরই বাংলাপ্রীতি আছে। গুজরাতের প্রখ্যাত কবি উমাশঙ্কর যোশী বাংলা বলতেন মাতৃভাষার মতন। নলিনী বাংলা 888sport app download apk গুজরাতিতে 888sport app download apk latest version করে।

আমার ওপর এই দম্পতিটির এমনি অধিকারবোধ যে এর আগে আমি যে ক’বার মুম্বাই এসেছি, ওরা উপস্থিত থেকেছে এয়ারপোর্টে। কোনো হোটেলে থাকার ব্যবস্থা নির্দিষ্ট থাকলেও ওরা জোর করে নিয়ে গেছে নিজেদের বাড়িতে। ওরা নিরামিষাশী হলেও আমার জন্য দোকান থেকে আনিয়েছে চিংড়ি মাছ আর কষা মাংস।

আকস্মিক হৃদরোগে বলবš্— চলে গেছে এক বছর আগে।

এখানে আসার আগে কলকাতা থেকে ফোন করে নলিনীকে আমি জানিয়েছিলাম। নলিনী জিজ্ঞেস করেছিল, আপনি আমাদের বাড়িতেই থাকবেন তো? সব ব্যবস্থা করে রাখবো। আপনার কোনো অসুবিধে হবে না।

আমি বলেছিলাম, না, কিছু মনে করো না। কাজের জন্য আমাকে হোটেলেই থাকতে হবে। এন এফ ডি সি-র লোকেরা দেখা করতে আসবে। তোমার বাড়িতে আমি এমনিই চা খেতে যাবো!

নলিনী হতাশভাবে বলেছিল, আপনি আমাদের বাড়ি থাকবেন না? বলবন্তের আত্মা খুশি হতো।

আমি যে আত্মা-টাত্মা কিছু মানি না, তা এক সদ্য বিধবাকে বলা যায় না। ওদের বাড়িতে অনেক ঘর আছে ঠিকই। তবু ওখানে আমার রাত্রিবাস করা এখন ঠিক শোভন নয়।

নলিনীকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেছি, চা খেতে তো যাবোই। তোমার মেয়ে কেমন আছে? তুমি দারুণ হালুয়া বানাও, সেটা খাওয়াতে হবে কিন্তু।

আর আছে আমার বাল্যবন্ধু সুনন্দ গুহঠাকুরতা। যার ডাক নাম বুঢ্ঢা। তাকে অবশ্য আগে কিছু জানানো হয়নি।

পৌঁছেছি শেষ বিকেলে। একটু পরেই এন এফ ডি সি-র লোক এসে তিন বান্ডিল চিত্রনাট্য দিয়ে গেল। একটা-দুটো শুধু উলটে-পালটে দেখলাম। কাল থেকে কাজ শুরু হবে। সন্ধের পর আর লেখাপড়া করি না। এটা আমার বহুদিনের অভ্যেস।

হরিদাস সিদ্ধান্তবাগীশ নামে প্রখ্যাত পণ্ডিত বলেছিলেন, সূর্যাস্তের পর লেখাপড়ার কাজ করা উচিত নয়, তখন মানুষের মেধা একটু একটু করে ঘুমিয়ে পড়ে। আমি তাঁর নির্দেশ মেনে চলি, কিন্তু পুরোটা মানি না। অর্থাৎ গল্প-888sport alternative link বা গদ্যজাতীয় রচনা সন্ধের পর লিখিনা কখনো। কিন্তু এক-একদিন মাঝরাত্রে, এমনকি হঠাৎ জেগে উঠেও 888sport app download apk লিখে ফেলি। 888sport app download apk লেখার সময় মেধা ঘুমন্ত থাকলেও চলে, শুধু আবেগ ও অনুভূতি তীক্ষè থাকা দরকার। আবেগ প্রবল নাহলে 888sport app download apk লিখতেই বা যাবো কেন?

সন্ধেবেলা কী করা যায়? হোটেলের ঘরে একা বসে থাকার কোনো মানে হয় না। মুম্বাই শহরে প্রচুর বেড়াবার জায়গা। সবচেয়ে বড় কথা, এ শহরের একেবারে গায়েই রয়েছে একখানা সমুদ্র। কলকাতা শহরের পাশে রয়েছে গঙ্গা নদী, এতবড় একখানা নদী পাওয়াও ভাগ্যের কথা, কিন্তু আমাদের প্রতিদিনের জীবনের সঙ্গে গঙ্গার কোনো যোগ নেই। অনেকদিনদেখাই হয় না। কিন্তু মুম্বাই শহরে ঘুরতে-ফিরতেই সমুদ্র চোখে পড়ে। সমুদ্রের ধার দিয়ে অনেকটা হাঁটা যায়। মালাবার হিলস থেকে, আলো জ্বলে ওঠার পর, শহরের দৃশ্য অপূর্ব। ঠিক যেন এক বিশাল বৈদূর্যমনির নেকলেস।

বেরুবার উদ্যোগ করতে গিয়ে, মনে হলো, মুম্বাইতে এসেছি, আর বুঢ্ঢাকে জানাবো না?

এখন আর ওকে অফিসে পাওয়া যাবে না, বাড়িতে ফোন করতে হবে।

ফোনটা তোলার পর বুকটা দুরু-দুরু করতে লাগলো। কে ফোন ধরে, বুঢ্ঢা না ওর বউ? ওর বউকে আমি ভয় পাই।

নিজের ঘনিষ্ঠ বন্ধুর স্ত্রীকে যদি ভয় পেতে হয়, তবে সেটা বড় দুঃখের কথা। বন্ধুপত্নীর সঙ্গে ইয়ার্কি-ঠাট্টা-মজা হবে, এটাই তো স্বাভাবিক। বুঢ্ঢা স্বাতীর সঙ্গে সেরকমই ব্যবহার করে। কিন্তু ওর স্ত্রী সাবিত্রীর সঙ্গে আমি সহজ হতে পারি না।

একটা ভুল বিয়ে যে মানুষের জীবনের গতি কতটা ঘুরিয়ে দিতে পারে, বুঢ্ঢার জীবনই তার জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত।

বুঢ্ঢার জীবনে কিছুরই অভাব ছিল না। যেমন ফর্সা রং, তেমনই সুঠাম গড়ন শরীরের, প্রথম যৌবনে বন্ধুরা কেউ কেউ তাকে বলতো, গ্রিক গড, কেউ বলতো, আমাদের রাজকুমার। লেখাপড়াতেও ব্রিলিয়ান্ট, প্রত্যেক পরীক্ষায় প্রথম হয়েছে, অসাধারণ তার 888sport sign up bonusশক্তি। অত্যন্ত সচ্ছল এবং সংস্কৃতিমান পরিবারের সন্তান, ভদ্র এবং বিনীত। ক্লাসিক্যাল গান শিখতে শুরু করে কয়েক বছরেই সব রাগ-রাগিণী আয়ত্ত করে ফেললো, অনেকটা ফৈয়াজ খাঁ-র মতন দরাজ গলা। ভাষাশেখার ঝোঁকে শিখে ফেললো দশ-বারোটা ভাষা। শুধু একটাই ছিল বুঢ্ঢার অযোগ্যতা। মেয়েদের সঙ্গে মিশতে জানতো না। অথচ ইচ্ছা ছিল প্রবল। আমিই দু-তিনটে মেয়ের সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিয়েছি, তাদের সামনে মিনমিন করেছে, কিংবা চুপ করে চেয়ে থেকেছে অন্যদিকে। আমার খুবই প্রিয় বন্ধু, আমার অর্ধেক জীবন-এ ওর সম্পর্কে অনেকটা লিখেছি।

বুঢ্ঢা সিগনেট প্রেসের বাড়ির ছেলে। 888sport appর বিখ্যাত গুহঠাকুরতা পরিবারের সবাই উচ্চশিক্ষিত। ওর বাবা ছিলেন সারা ভারতের সর্বকনিষ্ঠ পিএইচ ডি, তারপর অক্সফোর্ডেরও ডক্টরেট। ওর মা-ও খুব বিদুষী, জওহরলাল নেহরুর বোন বিজয়লক্ষ্মী পণ্ডিত ছিলেন ওর মায়ের সহপাঠিনী। ওর মা নীলিমা দেবীই শুরু করেছিলেন সিগনেট প্রেস, বাংলা ভাষায় তখন হয়ে উঠেছিল শ্রেষ্ঠ প্রকাশন-প্রতিষ্ঠান এবং ওর জামাইবাবু দিলীপকুমার গুপ্তই বাংলা বইয়ের প্রকাশনায় ছাপা, বাঁধাই, মলাট ইত্যাদিতে এনেছিলেন আধুনিকতা, বলতে গেলে বিপ্লব ঘটিয়ে দিয়েছিলেন। এখনকার সব প্রকাশক তাঁর কাছে ঋণী।

বুঢ্ঢা সিগনেট প্রেসের এক-চতুর্থাংশের মালিক হয়ে দোকানে বসতে শুরু করেছিল। তখন আমরা সেখানে অবিরাম আড্ডা দিতাম। বুঢ্ঢা সিগনেট প্রেসকে আরও অনেক বড় করতে পারতো, কিন্তু কেউ কেউ বলতে লাগলো, কলেজ স্ট্রিটের দোকানে রোজ বসে থেকে ওর প্রতিভার অপচয় হচ্ছে। অন্য কিছু উপার্জনের পথে গিয়েও ও অবসর-সময়ে প্রকাশনার কাজ দেখলেই তো পারে।

বুঢ্ঢা জলের মতন ফরাসি ভাষা বলতে পারতো, তাই ও খুব সহজেই কাজ পেয়ে গেল এয়ার ফ্রান্স নামে বিমান-সংস্থায়। কলকাতায় তখন এরকম অনেক আন্তর্জাতিক বিমান-পদবী ছিল। সেখানে সে জীবনে প্রথম, একটি অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান মেয়ের প্রেমে পড়লো, কিংবা সেই মেয়েটিই ওকে প্রেমে পড়ালো। সব বড় বড় অফিসেরই স্টেনোগ্রাফার কিংবা অফিসারদের সেক্রেটারি হতো অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান। অবিলম্বে সেই মেয়েটিকে বিয়ে করে ফেললো বুঢ্ঢা।

অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান মেয়েকে বিয়ে করলে আপত্তির কী আছে? কিচ্ছু না। বিয়ে হলো খুব ধুমধাম করে। মেয়েটির নাম স্যালি বা ওইরকম কিছু, বুঢ্ঢাদের বাড়ি থেকে নতুন নাম দেওয়া হলো সাবিত্রী। অনেক হিন্দু বাড়িতেই বিয়ের পর মেয়েদের নতুন নাম হতো। ঠাকুরবাড়ি থেকে এই প্রথা চালু হয়। সাবিত্রীরা রোমান ক্যাথলিক, তাই সব নিয়ম মেনে বিয়ে হলো গির্জায়। তারপর বুঢ্ঢাদের বাড়িতে হিন্দুমতে শুধু বউ-ভাত। সেই দিনটায় নতুন বউ বেনারসি শাড়ি আর একগাদা গয়না পরে, কপালে চন্দনের ফোঁটা এঁকে লাজুক মুখে বসে থাকে, আর অতিথিরা এসে তার হাতে উপহার দেয়।

হঠাৎ একসময় দেখলুম, নতুন বউ সিগারেট খাচ্ছে।

মেয়েদের সিগারেট খাওয়ার ব্যাপারে আমার বিন্দুমাত্র আপত্তি নেই, বরং পছন্দই করি। যার ইচ্ছে খাবে, যার ইচ্ছে নেই সে খাবে না। এর মধ্যে ছেলে আর মেয়ের বৈষম্য আনতে হবে কেন? তবে সবকিছুরই একটা সাংস্কৃতিক দিক আছে। নতুন বউয়ের হাতে জ্বলন্ত সিগারেট দেখে আমি পর্যন্ত চমকে উঠেছিলাম। কালচার শক বলতেই হবে। অতক্ষণ পুতুল সেজে বসে থাকতে বিরক্ত লাগে ঠিকই, তাছাড়া যার সিগারেট টানা অভ্যেস, তার একসময় গলা শুকাবেই। একটু উঠে গিয়ে বাথরুমে সিগারেট ধরালেই পারত।

আসলে সাবিত্রীরা ঠিক অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান নয়। দু-তিন পুরুষের বাঙালি ক্রিশ্চান। কিন্তু ওরা বাঙালিত্ব মুছে দিয়ে পুরোপুরি অ্যাংলো-ই্িন্ডয়ানই হতে চেয়েছিল, যদিও ওর বাবা-কাকারা ফর্সা নয়। ওরা বাংলা ভাষা ও বাঙালির পোশাক ত্যাগ করেছিল। সাবিত্রীও বাংলা বলে না। যদিও ওদের বাড়ি হাওড়ায়, পুরো বাঙালি পল্লীতে।

বুঢ্ঢাদের বাড়ি আবার বাঙালি সংস্কৃতির কেন্দ্র। জীবনানন্দ দাশ থেকে সত্যজিৎ রায়, নীহাররঞ্জন রায় থেকে আবু সয়ীদ আইয়ুব, এইসব মহীরুহসদৃশ বাঙালিরা আসেন সে-বাড়িতে। আমার মনে আছে, আমাদের বিয়ের সময় বুঢ্ঢাদের বাড়ি থেকে উপহার পাঠানো হয়েছিল পুরো বাঙালি কায়দায়, একটা বড় কাঁসার থালার ওপর সাজানো একটি খিরের তৈরি মাছ, দুটি বই বাংলার ব্রতকথা এবং মৈমন সিংহ গীতিকা, এবং একটি লক্ষ্মীর ঝাঁপি।

এ-বাড়িতে এসে সাবিত্রী এই বাঙালি-সংস্কৃতির বিরুদ্ধে পুরোপুরি বিদ্রোহ করে বসলো। সে মেমসাহেব হয়ে থাকতে চায়। কিছুদিনের মধ্যেই অতবড় বাড়ি ছেড়ে এই দম্পতি উঠে গেল বেকবাগানের এক ফ্ল্যাটে।

সেখানে ছুটির দিনে আড্ডা দিতে যেতাম আমরা কয়েকজন। বুঢ্ঢার ব্রিজ খেলার নেশা ছিল, ও নিজেই ডাকাডাকি করতো। কয়েকদিনের মধ্যেই বুুঝতে পারলাম, সাবিত্রী তার স্বামীর এই বাঙালি বন্ধুদের পছন্দ করছে না। ঠিক খারাপ ব্যবহার যে করতো, তা নয়, তবু কিছু একটা বোঝা যায়। কিছুতেই বাংলা বলবে না আমাদের সঙ্গে। যেখানে মানুষের শৈশবের অনেকগুলো বছর কাটে, সেখানকার ভাষা সব মানুষ শিখে যেতে বাধ্য। হাওড়ার মেয়ে বাংলা জানে না, এটা হতেই পারে না। সে বুঢ্ঢাকে ভালোবেসেছে, কিন্তু বাংলাকে ভালোবাসতে পারেনি।

বুঢ্ঢা বেচারি শাক-চচ্চড়ি, মাছের ঝোল খেতে ভালোবাসতো। সেসব উঠে গেল তাদের নতুন সংসারে। সুপ আর স্যান্ডউইচ। বুঢ্ঢা মাঝে মাঝে অফিসফেরত চলে আসে আমাদের কারো বাড়িতে, প্রাণ যা চায় তাই খায়, বাড়ি ফিরতে দেরি করে, তাতে সাবিত্রী চটে যায়। বছর ঘুুরতে না ঘুরতেই সাবিত্রী ঠিক করলো, স্বামীকে সে এই বাঙালি-পরিবেশ থেকে সরিয়ে নিয়ে যাবে। সে নিজে একটা চাকরি ঠিক করে নিল মুম্বাইতে। তারপর বুঢ্ঢাকে বাধ্য করলো চাকরি বদলাতে। ওরা চলে গেল মুম্বাই।

বুঢ্ঢা যেহেতু অত্যন্ত ভদ্র ও বিনয়ী, তাই স্ত্রীর ওপর নিজের মতামত চাপিয়ে দিতে চায়নি। বরং ওর সব ইচ্ছেই মেনে নিয়েছে। বছরকয়েক পরে শুরু হলো দ্বন্দ্ব। তার মধ্যে ওদের দুটি ছেলেমেয়ে জন্মে গেছে। বুঢ্ঢা কখনো কখনো সাবিত্রীকে ছেড়ে চলে আসার কথা ভাবলেও ছেলেমেয়েদের প্রতি তার খুব স্নেহ। ক্যাথলিকদের মধ্যে বিবাহ-বিচ্ছেদ সম্ভব নয়। সুতরাং সাবিত্রী বুঢ্ঢাকে ডিভোর্সও দেবে না, ছেলেমেয়েদেরও ছাড়বে না।

সাবিত্রী মেয়েটি মোটেই খারাপ নয়, তার অনেক গুণ আছে। দ্বন্দ্বটা কালচারের। খ্রিষ্টান হিসেবে সে পশ্চিমী সংস্কৃতির অনুরক্ত, বাংলার সংস্কৃতি সে মেনে নিতে পারে না। বুঢ্ঢা আবার ইংরেজিতে খুব দক্ষ হলেও পারিবারিক সূত্রে মনেপ্রাণে বাঙালি। কলকাতায় থাকলে যে হতে পারত সংস্কৃতি-জগতের একজন উল্লেখযোগ্য পুরুষ, হতে পারতো বিশ্ববিদ্যালয়ের খ্যাতিমান অধ্যাপক, প্রকাশনা-জগতের কর্ণধার, সে হয়ে বসলো মুম্বাই শহরের এক অফিসার। কেউ তাকে চেনে না। আগে দু’বার মুম্বাই এসে বুঢ্ঢাকে দেখেই বুঝেছিলাম, কী অসুখী মানুষটা! চেহারাও খুব খারাপ হয়ে গেছে। অমন গৌরবর্ণ মুখে কালো কালো ছাপ। তার সংসারে অভাবের ছায়া। এখন আর যোগাযোগ নেই-ই বলতে গেলে। যা ভয় পেয়েছিলাম তাই। সাবিত্রী ধরেছে ফোন।

সঙ্গে সঙ্গে ভাবলুম, কথা না বলে রেখে দেবো নাকি? তারপরে মনে হলো, এত ভয় কিসের? ও তো আমার সঙ্গে কখনো ঝগড়া করেনি কিংবা খারাপ কথা কিছু বলেনি। শুধু অন্তরঙ্গ হতে অস্বীকার করেছে। না-ই বা হলো অন্তরঙ্গতা। তা বলে আমি আমার বন্ধুকে হারাবো কেন?

ইংরেজিতে বললুম, গুড ইভনিং সাবিত্রী। আমি সুনীল, কলকাতা থেকে এসেছি, চিনতে পারছ?

গলায় যথেষ্ট উষ্ণতা এনে সাবিত্রী বললো, সুনীল! কেন তোমায় চিনতে পারবো না। তুমি কোথায়, এয়ারপোর্টে? আমাদের বাড়ি আসছো?

না, তোমাদের বাড়িতে এখন যাওয়া হবে না। আকবর হোটেলে উঠেছি। তোমাদের বাড়িতে পরে একবার যাবো। এখন শুধু জাস্ট হ্যালো বলার জন্য-

সাবিত্রী বললো, আকবর হোটেল? ওহ্ মাই, মাই! কোনোদিন ওই হোটেলে যাইনি। তুমি এখন খুব রিচ ম্যান হয়ে উঠেছো তাই না।

আমি নিজের পয়সায় থাকছি না। একটা কাজে এসেছি।

ঠিক কী কাজের জন্য এসেছি, তা সাবিত্রী শুনতে চাইলো না। বাংলা ভাষায় লেখালেখি করে কেউ পাঁচতারা হোটেলে উঠতে পারে, এটা ওর কাছে ঠিক বিশ্বাসযোগ্য নয়। অন্য কিছু একটা ভেবে নিল বোধহয়। আবার বললো, কতদিন থাকবে? ওই হোটেলে আমাদের একদিন লাঞ্চ খাওয়াও। ওখানকার বিফ ভিন্ডালু খুব বিখ্যাত শুনেছি।

হ্যাঁ। নিশ্চয়ই খাওয়াবো। এসো একদিন। তোমার স্বামীরত্নটি কি অফিস থেকে বাড়ি ফিরেছে?

ফিরেছে। তুমি কথা বলবে? ধরো, দেখছি!

একটুক্ষণ পরে আবার বললো, সুনন্দ তো বাথরুমে ঢুকে বসে আছে। কতক্ষণ লাগবে কে জানে! তুমি পরে আবার ফোন করে চান্স নিও।

মিথ্যে কথা বললো নাকি? বুঢ্ঢার সঙ্গে আমাকে কথা বলতে দিতে চায় না! কে জানে! আমার ফোন নম্বরও নিল না। সাধারণত লোকে সেটাই জানতে চায়।

মিনিট পাঁচেক পরেই ঝনঝন করে বেজে উঠলো টেলিফোন। এখনই আমাকে কে ফোন করতে পারে?

রিসিভার তুলতেই, বুঢ্ঢার কণ্ঠস্বর। সুনীল, তুই কখন এসে পৌঁছোলি?

আমি বললুম, এই তো মিনিট চল্লিশেক আগে। তুই এখানকার ফোন নম্বর জানলি কী করে?

আকবর হোটেলে উঠেছিস শুনলাম। সেখানকার নম্বর জোগাড় করা কী আর শক্ত! রিসেপশনে তোর ঘরের নাম্বার জেনে নিলাম। বল, তোর প্রোগ্রামটা কী?

আমি এন এফ ডি সি-র একটা কাজে এসেছি। কয়েকদিন থাকতে হবে।

এন এফ ডি সি মানেটা কী? আজকাল এ বি সি ডি দিয়ে এত নাম হয়, কোনটা কী, বোঝাই যায় না।

ন্যাশনাল ফিল্ম ডেভেলপমেন্ট করপোরেশান। আমি ওদের একটা স্ক্রিপ্ট কমপিটিশানের জাজ হয়েছি। প্রচুর খাটাখাটনির ব্যাপার আছে। তুই কাল সন্ধেবেলা ফ্রি আছিস? একবার আসতে পারবি? তাহলে কিছুক্ষণ আড্ডা দিতে পারব। ফর ওল্ড টাইম্স সেক!

বুঢ্ঢা বললো, কাল? এক মিনিট ধর তো। আমার নোট বইটা একটু দেখে নিই।

তারপর শুনতে পেলাম, হাঁক দিয়ে বলছে, গৌর, গৌর, আমার নোট বইটা নিয়ে আয় তো। আর সিগারেটের প্যাকেটটা দে!

বুঢ্ঢা ওর ছেলেমেয়ের বাংলা নাম রেখেছে, গৌর আর গৌরী। আমি অনেক ইংরেজি শব্দ ব্যবহার করছি, বুঢ্ঢা তার চেয়ে বাংলা বলছে বেশি।

মিনিটকয়েক বাদে বুঢ্ঢা বললো, সুনীল, তুই আমাকে কাল আসতে বললি কেন রে? আজ বুঝি তুই খুব ব্যস্ত!

আমি আমতা আমতা করে বললুম, না, আজও সেরকম কিছু করার নেই।

বুঢ্ঢা হুংকার দিয়ে বললো, তাহলে আজ কেন আসতে বলছিস না, শালা!

আমি লজ্জা পেয়ে গেলুম। এমন একটা সময় ছিল, যখন এই প্রাণের বন্ধুটির সঙ্গে প্রতিদিন দেখা না হলে ভাত হজম হতো না। আর আজ আমি সেই বন্ধুর সঙ্গে ফর্মাল ব্যবহার করছি। জীবন এমনই বিচিত্র।

আসলে, অবচেতনে একটা ভয় কাজ করছিলো। বুঢ্ঢাকে আজই আসতে বললে ও বাড়ি থেকে বেরিয়ে ফিরতে রাত করলে সাবিত্রী সব দোষটা আমার কাঁধে চাপাবে, ভেবেছি। কাল অফিসফেরত সাবিত্রীকে না জানিয়েই চলে আসতে পারে।

আমি অনুতপ্ত গলায় বললুম, না রে, বুঢ্ঢা। আমি ভাবছিলাম, তুই-ই হয়তো ব্যস্ত থাকবি। এখন যদি আসতে পারিস, আমি হাজার কাজ থাকলেও সব ফেলে তোর জন্য বসে থাকবো!

বুঢ্ঢা বললো, গুড! আমি এক্ষুনি বেরুচ্ছি। ইস্ট আ›েদ্ধরি থেকে ট্রেনে যেতে বড়জোর আধ ঘণ্টা লাগবে। আটটার মধ্যে পৌঁছে যাচ্ছি। তোর কাছে বোতল-টোতল আছে? নইলে, এক বোতল হুইস্কি আনিয়ে রাখ। রুম সার্ভিসে বড্ড বেশি পয়সা নেয়।

বড়লোকের ছেলে ছিল বুঢ্ঢা। দারুণ দিলদরিয়া। এক সময় সে-ই সবসময় আমার মতন বন্ধুকে খাওয়াতো। আমার জীবনের প্রথম মদ্যপানের দীক্ষাও দিয়েছিল বুঢ্ঢা। তাও যে-সে জায়গায় নয়, গ্র্যান্ড হোটেলে।

এখন দিনকাল বদলে গেছে। সাধারণত এইরকম সময়ে বাইরে থেকে এলে কোনো বন্ধু বলে, আমি একটা বোতল নিয়ে আসছি।

আমার সুটকেসে এক লিটার একটা হুইস্কির বোতল আছে অবশ্য। বুঢ্ঢা আমাদের এত বেশি খাইয়েছে যে, কোনোদিন তার ঋণ সিকিমাত্র শোধ হবে না।

ঠিক এক ঘণ্টার মধ্যেই পৌঁছে গেল বুঢ্ঢা। আমি ততক্ষণ টিভিতে এটা-সেটা দেখছিলাম। স্থানীয় খবরে এক ঝলক দেখা গেল, এখানকার পুলিশ কয়েক জায়গায় হানা দিয়ে একদল নাবালিকাকে উদ্ধার করেছে। তাদের দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আনা হয়েছে অসৎ কাজের জন্য। গ্রেফতার করা হয়েছে মোহন সিং নামে মেয়ে-পাচারকারীদের এক পাণ্ডাকে। তার মুখ কালো কাপড়ে 888sport app।

বুঢ্ঢার চেহারা আরও খারাপ হয়ে গেছে। এককালে সে পোশাকের ব্যাপারে খুব সৌখিন ছিল; এখন সাদামাটা জামা-প্যান্ট। মাথার চুল একটু পাতলা হয়ে গেছে।

ঘরে ঢুকেই বুঢ্ঢা জিজ্ঞেস করলো, তুই সিনেমার ব্যাপারে কী করে ঢুকলি রে? ছবি পরিচালনা করছিস?

আমি বললুম, না, না, ওসব না। কয়েকখানা ছবির চিত্রনাট্য লিখেছি শখ করে। তার মধ্যে দু’একটা 888sport app download bd পেয়ে গেছে বাই চান্স। তাই এ লাইনের অনেকে চেনে।

বুঢ্ঢা বললো, তোর গল্পেরও তো ছবি হয়। মানিকদা একটা করেছিলেন। হিন্দিতে হয়েছে কিছু? একটিমাত্র। তাও কমার্শিয়াল ছবি নয়। কিন্তু প্রাইজ পেয়েছে। সেটার নাম শোধ।

নাম শুনিনি। এখানে রিলিজ করেছিল?

ঠিক জানি না। রিলিজ করলেও এক সপ্তাহের মধ্যেই উঠে গেছে হয়তো। হিন্দি ছবি। কিন্তু তাতে একটাও গান নেই। নাচ নেই। মারদাঙ্গা নেই।

গেলাশে হুইস্কি ঢালার পর বুঢ্ঢা প্রবল তৃষ্ণার্তের মতন বড় একটা চুমুক দিয়ে একটা সিগারেট ধরালো। শস্তা দামের সিগারেট।

তারপর বললো, তুই আর কয়েকদিন পরে এলে আর দেখা হতো না। আগামী সপ্তাহেই আমরা আফ্রিকায় চলে যাচ্ছি। নতুন চাকরি নিয়ে।

আফ্রিকা? কোথায়?

সিয়েরা লিওন! মুম্বাইতে খুব খরচ। ওখানে খুব বড়ো বাংলো দেবে, গাড়ি, ছেলেমেয়েদের পড়ার খরচ ফ্রি। সাবিত্রীর খুব পছন্দ হয়েছে। বাবুর্চি-আয়া রাখা হবে, তারা সবসময় সাবিত্রীকে মেমসাহেব, মেমসাহেব বলে সেলাম দেবে-

আর এক চুমুকে গেলাশ শেষ করে বুঢ্ঢা বললো, কলকাতায় আমার প্রাণ পড়ে আছে, সুনীল। কলকাতাতেই যখন থাকতে পারলাম না, তখন দেশ ছেড়ে চলে গেলেই বা ক্ষতি কী? আমার কাছে আর সব জায়গাই সমান!

তুই কলকাতায় ফিরে যেতে পারিস না, বুঢ্ঢা? চাকরি করবার দরকার কী, তোদের ব্যবসাটা যদি দেখতি, ওটা তো ছিল সোনার খনি।

হতাশার নিশ্বাস ফেলে ও বললো, নাঃ, তা আর সম্ভব নয়। মা আর নেই। কলকাতার সঙ্গে আমার সব সম্পর্কও ছিঁড়ে গেছে।

এর মধ্যে আর ক’টা ভাষা শিখলি?

উনিশ-কুড়িটা হবে সব মিলিয়ে। ইউরোপের মধ্যে সবচেয়ে শক্ত ভাষা কোনটা জানিস? হাঙ্গেরিয়ান। সেটাও আমি লিখতে-পড়তে পারি।

এতগুলো ভাষা শিখেছিস, আমাদের সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় ছাড়া আর কেউ এত ভাষা জানে না। তুই ইচ্ছে করলেই কত বড় লিঙ্গুইস্ট হতে পারতি!

বুঢ্ঢা একটা সিগারেট শেষ করে সঙ্গে সঙ্গে আরেকটা ধরিয়ে বললো, ‘আমি রবো নিষ্কলের হতাশের দলে’। এমনিই শিখেছি, শখে। গানও তো শিখেছিলাম। আর গাই না!

খানিকক্ষণ নানান গল্পের পর ওকে জিজ্ঞেস করলুম, বুঢ্ঢা তুই এখানকার পুলিশের কোনো অফিসারকে চিনিস?

ও বললো, পুলিশ! কেন, তোর কিছু চুরি-টুরি গেছে?

না, সেজন্য নয়। একটা ব্যাপারে খোঁজ-খবর নিতে চাই।

কী ব্যাপার, আগে আমাকে বল!

888sport appsের একটি মেয়েকে আমি খুব পছন্দ করি। আমার প্রেমিকাও বলতে পারিস। সে একটা র‌্যাকেটে পড়েছে। চাকরির লোভ দেখিয়ে ওকে সৌদি আরবে নিয়ে যাবার চেষ্টা করেছে একটা দল। খুব সম্ভব, ওকে মুম্বাইয়ে প্লেন থেকে নামিয়েও নিতে পারে। সেই ব্যাপারে খোঁজ নিতে চাই।

888sport appsের কিছু কিছু মেয়ে কী দারুণ সুন্দর হয়। মনে হয়, ওদের কারুর একটু ছোঁয়া পেলে জীবনটা ধন্য হয়ে যেত! তুই শালা খুব লাকি!

একটি মেয়ের প্রসঙ্গ তুললে সে আমার প্রেমিকা কিনা, এ প্রশ্ন উঠতোই। সেইজন্য আগে থেকে ওই কৌতূহলটা মিটিয়ে রাখা ভালো।

আবার প্রশ্ন করলাম, তুই পুলিশের কারুকে চিনিস!

অফকোর্স চিনি। আমার কাজের জন্য প্রায়ই পুলিশের কাছে যেতে হয়। আমি জানি, এই শহরটায় মেয়ে-পাচার আর ব্রথেলের ব্যবসা কী ঢালাওভাবে চলে। হাজার হাজার মেয়েকে আফ্রিকা আর আরব দেশে পাঠায়। বাচ্চা ছেলেদেরও পাঠায়। কেন জানিস? উটের পিঠে চাপিয়ে দৌড় করানোর খেলার জন্য। অধিকাংশ বাচ্চাই সেই সময় মারা যায়। সেইজন্য নিজের দেশের বাচ্চাদের নিয়ে ওই খেলা ওরা খেলে না! 888sport apps কিংবা ভারতের মতন গরিব দেশ থেকে আড়কাঠির মারফত বাচ্চাদের ধরে নিয়ে যায়! অনেক সময় বাবা-মায়ের কাছ থেকে কিনেও নেয়। মানুষ যে কত নিষ্ঠুর হতে পারে!

যারা এইসব বাচ্চাদের মৃত্যুর মুখে পাঠায়, তাদের নিজেদের ছেলেমেয়ে থাকে না?

তা থাকে কিনা জানি না। কিন্তু বিবেক বলে কিছু যে থাকে না, তা বোঝা যায়! পৃথিবীতে কত পার্সেন্ট মানুষের বিবেক আছে বলতো!

যাদের আছে, তারাও মাঝে-মধ্যে বিবেককে ঘুম পাড়িয়ে রাখে। তখন যুদ্ধ বাধায়, কিংবা ধর্মীয় দাঙ্গা, হাজার হাজার মানুষ খুন হয়।

তুই পুলিশ অফিসারের কথা জিজ্ঞেস করছিলি। হ্যাঁ, চিনি কয়েকজনকে। ও, তাদের মধ্যে একজন তো বাঙালি। অমল লাহিড়িকে মনে আছে তো, সে আলাপ করিয়ে দিয়েছিল। ডি আই জি র‌্যাঙ্কের। তার নাম রাহুল মুখোপাধ্যায়। সাধারণত মুখোপাধ্যায়, বন্দ্যোপাধ্যায়, গঙ্গোপাধ্যায়রা বাংলার বাইরে এসে মুখার্জি, ব্যানার্জি, গাঙ্গুলি হয়ে যায়। এ কিন্তু মুখার্জি লেখে না, লেখে মুখোপাধ্যায়। ওর সহকর্মীরা সংক্ষেপ করে নিয়ে বলে উপাধ্যায়বাবু। আমাকে কী বলে জানিস? গুহঠাকুরতা এত বড় নাম বলতে পারে না। শুধু বলে ঠাকুর সাহাব! ঠিক আছে, চলে গা!

ওই রাহুল মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে কী করে যোগাযোগ করা যায়?

ফোন করা যেতে পারে। এখনই কর না! ও আমাদের থেকে বয়সে ছোট।

বুঢ্ঢা গড়গড় করে লোকটির ফোন নাম্বার বলে দিল একটু চোখ বুঁজে। এই হচ্ছে ওর 888sport sign up bonusশক্তি। পৃথিবীর কারুর ফোন নাম্বার ও লিখে রাখে না। একবার শুনলেই মনের কম্পিউটারে স্থায়ী হয়ে যায়।

সেই নাম্বারে ফোন করে রাহুলকে পাওয়া গেল না বটে, তবে কেউ একজন অন্য একটা নাম্বার দিয়ে বললো, ওখানে ফোন করুন।

দ্বিতীয় জায়গায় ব্যক্তিটিকে ধরা গেল। বুঢ্ঢা প্রথমে রিসিভারটা নিয়ে বললো, রাহুল, আমি গুহঠাকুরতা বলছি। একটা বিশেষ ব্যাপারে, তুমি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়কে চেন? আমার বিশেষ বন্ধু। সে তোমার সঙ্গে একটা দরকারে কথা বলতে চায়।

ওদিক থেকে গলা শুনতে পেলাম, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় মানে, যিনি লেখক? তিনি আপনার বন্ধু? মুম্বাইতে এসেছেন!

হ্যাঁ, আমার পাশে বসে আসে। নাও, একটু কথা বলো।

আমি রিসিভারটি নিয়ে বললুম, নমস্কার। আপনাকে একটু বিরক্ত করছি, বিশেষ প্রয়োজনে।

সে বললো, মোটেই বিরক্ত করেননি। আমাকে আপনি বলবেন না, তুমি বলুন। আমি এক সময় নীললোহিতের লেখার খুব ভক্ত ছিলাম।

এখন আর নেই, তাই তো? আমি জানি, আমার ভক্ত888sport free bet দিন দিন হু হু করে কমে যাচ্ছে।

 সে হাসতে হাসতে বললো, না, না, তা নয়। এখন বই পড়ার বিশেষ সময়ই পাই না। তাছাড়া এখানে বাংলা বই তো তেমন পাওয়াও যায় না চট করে। আমি আপনার সম্পর্কে অনেক কিছু জানি। আমাদের পুলিশ লাইনেও তো আপনার আর শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের অনেক বন্ধু আছে।

হ্যাঁ, রশিদ খান, রথীন ভট্টাচার্য, তুষার তালুকদার, তাইয়েব খান, এদের সঙ্গে নিয়মিত আড্ডা দিই।

তুষার তালুকদার তো আই পি এস-এ আমারই এক ব্যাচের। রশিদ খানের সঙ্গেও আমার ভালো পরিচয় আছে। কী কারণে আমাকে 888sport app download for android করেছেন বলুন।

একটি মহিলা সম্পর্কে কিছু খোঁজ-খবর নিতে হবে।

এরপর আমি ঘটনাটি তাকে সবিস্তারে জানালুম।

সব শুনে রাহুল বললো, হয়তো আপনারা অকারণে বেশি দুশ্চিন্তা করছেন। সৌদি আরবে যাওয়া মানেই তো বিপদের মুখে পড়া নয়। আমি সেদেশে গেছি দু’বার। অনেকটা ফিউডাল হলেও মোটামুটি একটা সমাজব্যবস্থা তো আছে। যে ভদ্রমহিলার কথা বলছেন, তিনি যদি খানিকটা লেখাপড়া জানেন, তাহলে ওখানে গিয়ে একটা ভদ্রগোছের চাকরিও পেয়ে যেতে পারেন। মাইনে ভালো। অনেক মেয়ে নার্সের ট্রেনিং নিয়ে গিয়ে হাসপাতালে কাজ করে। আবার একথাও ঠিক, র‌্যাকেটিয়াররা ভালো চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে অনেক মেয়েকে নিয়ে যায়, তারা আলটিমেটলি ওখানে বড় বড় শেখদের বাড়িতে ঝি-চাকরানির কাজ করে। তাদের ওপর নানারকম অত্যাচার করা হয়, ইনক্লুডিং সেক্সুয়াল ভায়োলেন্স। সেখান থেকে তাদের উদ্ধার করা খুব কঠিন।

আমি বললুম, একদিন সৌদি আরবের ফ্লাইটে গণ্ডগোল ছিল। এমন কি হতে পারে যে তাকে মু¤¦াইতেই নামিয়ে নেওয়া হয়েছে! তারপর এখানে কাজে লাগানো হচ্ছে!

রাহুল বললো, সে-সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। কালকেই তো অনেকগুলো জায়গায় রেইড করে প্রায় তিন ডজন মেয়েকে রাউন্ড আপ করা হয়েছে। তাদের রাখা হয়েছে উদ্ধারাশ্রমে। কয়েকজন পালের গোদা ধরাও পড়েছে। আপনার চেনা মহিলার কী নাম বললেন? আনোয়ারা! যতদূর মনে হচ্ছে, ভিকটিমদের মধ্যে এই নামের একজন আছে। একবার চেক করে দেখা যেতে পারে।

আমি কি যেতে পারি?

অবশ্যই পারেন। আপনার হোটেলের না¤¦ার আমি লিখে নিচ্ছি। কাল দুপুরে যে-কোনো সময়ে আপনার সঙ্গে আমি যোগাযোগ করবো। চেষ্টা করবো, নিজেই যেতে। একদিন আমাদের বাড়িতে খেতে আসতে হবে কিন্তু।

ফোন ছেড়ে দেবার পর আমি বললুম, ভাগ্যিস, এখানে একজন বাঙালি পুলিশ অফিসারকে পাওয়া গেল, যে আমাকে চেনে। নইলে কী আর কেউ পাত্তা দিত! বুঢ্ঢা বললো, কাল আমিও তোর সঙ্গে যাবো। তোর 888sport appsী প্রেমিকাকে আমি একবার দেখতে চাই। (ক্রমশ)