॥ ৬ ॥

এরপর বুঢ্ঢা আমাদের একটা নৈতিক দ্বন্দ্বের মধ্যে ফেলে দিল।

এক আনোয়ারাকে খুঁজতে এসেছি, তাকে না পেলে অন্য আনোয়ারাকে সাহায্য করা হবে না কেন? সেও তো একইরকম অসহায়। সে এসে বুঢ্ঢার হাত জড়িয়ে ধরে কেঁদেছিল।

শ্রীমতী চন্দ্রভারকরও সমর্থন করলেন ওকে। তিনি জোর দিয়ে বললেন, আপনারা বেঙ্গলি, আপনাদের উচিত এই বেঙ্গলি মেয়েদের পুনর্বাসনে সাহায্য করা। এখানকার উদ্ধার-আশ্রমে বেচারিরা কত কষ্টে আছে, এখানকার ভাষা বোঝে না, বাঙালি খানা পায় না।

ভদ্রমহিলাকে নামিয়ে দেওয়া হলো তাঁর বাড়িতে।

রাহুল আমাদের নিয়ে এলো তার ক্লাবে।

ছিমছাম, সুন্দরভাবে সাজানো ক্লাব। ভিড় বেশি নেই। আমরা বসলাম কোণের দিকে একটা টেবিলে। দুঃখের বিষয়, এখান থেকে সমুদ্র দেখা যায় না। মুম্বাইতে এসে আমার এখনো সমুদ্র-দর্শন হয়নি।

জল আমাকে সবসময় টানে। যে-কোনো জায়গায় গেলেই কাছাকাছি নদী বা সমুদ্র না দেখলে আমার শান্তি হয় না। স্নান করতেও ইচ্ছে হয়। অ্যালেন গিন্সবার্গ আমাকে বলেছিল, জীবনে যত নদী দেখবে, প্রত্যেকটাতে একবার অন্তত অবগাহন করে নেবে। তাতে প্রত্যেক নদীর 888sport sign up bonus তোমার গায়ে লেগে থাকবে। বেয়ারা আসবার পর রাহুল আমাকে বললো, আমি ড্রিংক করি না। কিন্তু আপনারা অবশ্যই নেবেন। আপনারা অর্ডার দিন।

বুঢ্ঢা বললো, তুমি পুলিশের চাকরি করো, আর মদ খাও না, এ তো অত্যাশ্চর্য ব্যাপার। তাহলে ঘুসের যে-টাকা পাও, তা খরচ হয় কী করে?

রাহুল মুচকি হেসে বললো, আমার এমন দুর্ভাগ্য, এ-পর্যন্ত আমাকে কেউ ঘুস অফারই করেনি। এমনকি, ঘুস প্রত্যাখ্যান করার যে-আনন্দ, সেটাও পাওয়া হলো না।

আমি বললাম, এ দেখছি দৈত্যকুলে প্রহ্লাদ।

রাহুল বললো, সব পুলিশই যে দৈত্য, সে-ধারণাটাও ঠিক নয়। কিছু লোক যেমন অন্যায়ভাবে টাকা রোজগার করে, দু’হাতে ওড়ায়, তাতেই আনন্দ পায়; আবার এমন মানুষও আছে, যারা ব্যক্তিগতভাবে সৎ থেকে যে-গর্ব অনুভব করে, তা ওই আনন্দের চেয়েও বেশি। আমাদের সার্ভিসে আমি এ-রকম কিছু মানুষ দেখেছি।

বুঢ্ঢা বললো, যারা ঘুস নেয় না, তারা কি মন দিয়ে কাজ করে, না ফাঁকিবাজ? সাধারণত ঘুসখোররা কাজ করে বেশি।

আমি বললাম, আমার এক বন্ধু আছে, সে খুব সৎ। সে কলকাতা করপোরেশনে যে-বিভাগে কাজ করে, সেখানে একেবারে ঘুসের রাজত্ব। আমার বন্ধুটি কিন্তু কাজও করে না, ঘুসও নেয় না। তার সহকর্মীরা খুব আগ্রহের সঙ্গে তার সব কাজ করে দেয়। এ-রকম সততার কতখানি মূল্য আছে?

রাহুল বললো, এটা জটিল প্রশ্ন। তবে, এ-ব্যাপারে কোনো সাধারণ নিয়ম নেই। ব্যক্তিতে ব্যক্তিতে তফাৎ হয়ে যায়।

বুঢ্ঢা বললো, মুম্বাইয়ের এত বড় পুলিশবাহিনী, অথচ এ-শহরেই ক্রাইম সবচেয়ে বেশি। বিশেষত স্মাগলিং আর 888sport promo code-পাচারের সীমা- পরিসীমা নেই। মাঝে মাঝে লোক দেখানো রেইড করো তোমরা। আসল কালপ্রিটরা কেউ ধরা পড়ে না।

আলোচনা অন্যদিকে ঘুরে গেল।

গোটা দু’এক হুইস্কি পান করার পর বুঢ্ঢা বললো, মেয়েটা দৌড়ে এসে আমার হাত ধরে কাঁদতে লাগলো, আমি নিষ্ঠুরের মতন হাত ছাড়িয়ে নিলাম, এটা আমি কিছুতেই ভুলতে পারছি না। সুনীল, একটা কিছু তোদের করা উচিত। ওই উদ্ধার-আশ্রমে থাকলে ওর জীবনটা বরবাদ হয়ে যাবে। ওকে ওর বাড়িতে ফিরিয়ে দেওয়া যায় না?

আমি এবার একটু ধমক দিয়ে বললাম, দ্যাখ বুঢ্ঢা, তুই কাল না পরশু আফ্রিকায় চলে যাবি। সব দায়িত্ব বুঝি আমাদের? এ-রকম বড় বড় কথা সবাই বলতে পারে!

বুঢ্ঢা বললো, ঠিক আছে, আমি আফ্রিকায় যাবো না। চাকরি ছেড়ে দেবো। চল, কাল থেকেই লেগে পড়ি। অন্তত একটা মেয়েকেও যদি সুস্থ জীবন ফিরিয়ে দেওয়া যায়।

আমি বললাম, তুই অ্যালকোহলের ঝোঁকে এ-কথা বলছিস। তুই মোটেই চাকরি ছাড়তে পারবি না। আফ্রিকায় যাওয়াও বন্ধ হবে না! কাল সকালে মাথা ঠান্ডা হলে এইসব মহৎ ইচ্ছে উবে যাবে! আমরা সোশ্যাল অ্যাকটিভিস্ট নই। আমাদের প্রত্যেকেরই অন্য কাজ আছে। আনোয়ারার মতন হাজার হাজার মেয়ে মাংস-ব্যবসায়ীদের শিকার হয়েছে, অসহায় অবস্থার মধ্যে আছে। আমরা শুধু সহানুভূতি জানাতে পারি। কিন্তু নিজেদের কাজকর্ম সব ছেড়েছুড়ে তাদের উদ্ধারের জন্য মেতে উঠতে পারবো?

রাহুল বললো, এ এক বিরাট র‌্যাকেট। আপনারা দু’একজন মিলে চেষ্টা করলেও কিছুই বন্ধ করতে পারবেন না। বরং বেশি বাড়াবাড়ি করলে আপনারাই খুন হয়ে যেতে পারেন।

 সে-কথা গ্রাহ্য না করে বুঢ্ঢা আমার দিকে অভিযোগের আঙুল তুলে বললো, তুই শালা তাহলে অন্য একজন আনোয়ারাকে নিয়ে এত মাথা ঘামাচ্ছিলি কেন? সে তোর প্রেমিকা বলে?

আমি বললাম, হ্যাঁ, সেটাই তো স্বাভাবিক। খবরের কাগজে তো আমরা এ-রকম কত কেস হিস্ট্রি পড়ি, তাতে কি উত্তেজিত হয়ে উঠি? নিজের কোনো আপনজন বা প্রিয়জনের বিপদ হলেই আমরা ছটফট করি। তবে, এবার সত্যি কথাটা বলি। সেই আনোয়ারা মোটেই আমার প্রেমিকা নয়। মেয়েটা ঠিক প্রেম করার টাইপও নয়। সরল, সাদাসিধে। আসলে কলকাতায় সে আমাদের বাড়িতে এসেছিল, আমার স্ত্রীর কাছে একগাদা গয়না রেখে গেছে, তারপর প্রায় আমাদের চোখের সামনেই এই ভয়ংকর ফাঁদে পা দিয়েছে, সেইজন্য আমার মনে একটা অপরাধবোধ আছে।

রাহুল বললো, আমার মনে হয়, আপনার চেনা সেই মহিলাকে সৌদি আরবেই নিয়ে গেছে। ওখানে বিক্রি করলে টাকা অনেক বেশি পাওয়া যায়। শুধু শুধু মুম্বাইতে নামিয়ে নেবে কেন?

আমাদের পাশের টেবিলে এসে বসলো দুটি রমণী ও তিনজন পুরুষ। সবারই বয়েস তিরিশের কাছাকাছি। মেয়েদুটি এমন উগ্র পারফিউম মেখেছে, ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের নাকে লাগলো সেই গন্ধের ঝাপটা। তাদের পোশাকও খুবই খোলামেলা।

আমি নিচু গলায় রাহুলকে জিজ্ঞেস করলাম, ছেলেগুলোর ঠোঁট কী রকম লালচে লালচে দেখাচ্ছে কেন? কেমন যেন অস্বাভাবিক।

রাহুল বললো, আপনি জানেন না? এখন অনেক ছেলেও ঠোঁটে লিপস্টিক মাখে হালকা করে। এটা ফ্যাশন হয়েছে। আর দেখুন, ওদের একজনের কানে দুল, তাও এক কানে।

বুঢ্ঢা বললো, হোমো। রিসেন্টলি, এদেরও উৎপাত বেড়েছে খুব।

রাহুল বললো, কানে দুল পরলেও সবাই কিন্তু হোমো হয় না। ওটাও একটা ছদ্মবেশ। মনে করুন, একজন লোক কোনো মেয়েকে ধর্ষণ করেছে, তারপর ধরা পড়ার ভয়ে সে কানে দুল পরে ঘুরে বেড়ায়। যাতে মনে হয়, মেয়েদের সম্পর্কে তার কোনো আগ্রহই নেই। সত্যিকারের হোমোরা কিন্তু শান্তিপ্রিয়ই হয়।

রাহুল প্রচুর খাবারের অর্ডার দিয়ে চলেছে, হুইস্কিও আসছে আমাদের গেলাশ শেষ হতে না হতেই। আমার থেকে বয়েসে ছোট যদি কেউ আমার জন্য পয়সা খরচ করে, তাতে আমার খুব অস্বস্তি হয়।

কমলকুমার মজুমদারকে দেখেছি, যখন তাঁর বেশ আর্থিক দুরবস্থা চলছে, সেই সময়েও আমাদের সঙ্গে কোথাও পানাহার করতে গেলে, জোর করে নিজে সব পয়সা দিতেন। তিনি কখনো পার্স ব্যবহার করেননি। টাকা রাখতেন বইয়ের ভাঁজে। সবসময় তাঁর হাতে একটা-না-একটা ফরাসি 888sport app download apkর বই থাকতো। সেই বইয়ের পাতা উলটে উলটে ম্যাজিকের মতন এক-একটা কুড়ি টাকা বা পঞ্চাশ টাকার নোট বের করে আনতেন।

কমলদা আরও বলতেন, অল্পবয়েসিরা মদের দাম দিলে সে-মদের দাম ফিকে হয়ে যায়।

এখানে আমি দাম দিতে চাইলেও রাহুল কিছুতেই রাজি হবে না। সুতরাং খানিক বাদেই আমি বললাম, চলো, এবার ওঠা যাক। কাল সকাল থেকেই আমাকে আবার কাজে বসতে হবে।

রাহুল বললো, না, না, আর একটু বসুন।

বুঢ্ঢা বোধহয় আমার মনোভাবটা বুঝতে পারলো। এককালে সেও দারুণ পয়সা খরচ করতো।

 সে বললো, আমি ভাই কালকেই দেশ ছেড়ে বহুদূরে চলে যাচ্ছি। আজ আমি তোমাদের একটু খাওয়াতে চাই। এরপরে যা অর্ডার হবে, আমি দাম দেবো।

রাহুল আপত্তি করলেও বুঢ্ঢা কিছুতেই শুনলো না। পরপর অর্ডার দিয়ে যেতে লাগলো।

যখন আমরা উঠলাম, তখন অনেক রাত এবং যথেষ্ট নেশা হয়ে গেছে।

বুঢ্ঢা তখনো থামতে চায় না। বললো, চল, আর এক জায়গায় যাই। আমার চেনা একটা বার আছে, মাঝরাত পর্যন্ত খোলা থাকে।

আমি জোর দিয়ে বললাম, না! আর থাক!

বাইরে এসে বুঢ্ঢা হঠাৎ থমকে দাঁড়িয়ে আমার একটা হাত চেপে ধরে কাতর গলায় বললো, সুনীল, তুই আমাকে ধরে রাখতে পারিস না? আমি যেতে চাই না আফ্রিকায়। তুই আমাকে জোর করে কলকাতায় নিয়ে চল।

আমি চুপ করে রইলাম। বুঢ্ঢার বউ-ছেলেমেয়ে আছে, তাদের নিরাপত্তা ও সুখ-শান্তি, ইচ্ছে-অনিচ্ছে আছে, সেসব ভুলে গিয়ে আমি কী করে বুঢ্ঢাকে কলকাতায় নিয়ে যাবো?

রাহুল ওর গাড়িটা ডাকতে গেল।

আমি আর বুঢ্ঢা কিছুক্ষণ নীরব। তারপর আমি বললাম, দ্যাখ, হয়তো আফ্রিকায় গিয়ে তোর খুব ভালোও লেগে যেতে পারে।

বুঢ্ঢা বললো, না!

তারপর আবার দৃঢ় গলায় বললো, তোর সঙ্গে আমার আর কখনো দেখা হবে না।

আমি বললাম, যাঃ! যারা বিদেশে চাকরি করতে যায়, তারা কি মাঝে মাঝে দেশে আসে না? তুই আসবার আগে একটা খবর দিবি, আমি নিজেই তোর সঙ্গে দেখা করবো।

বুঢ্ঢা আবার বললো, না, দেখা হবে না!

রাহুলের গাড়িতে লিফ্ট নিতে চাইলো না বুঢ্ঢা। হঠাৎ একটা ট্যাক্সি ডেকে তাতে ওঠে পড়লো।

সত্যিই সে-ই আমার বুঢ্ঢার সঙ্গে শেষ দেখা।

পরে খবর পেয়েছিলাম, তার ক্যানসার হয়েছে। মানসিক বিষাদের জন্যও মানুষের ক্যানসার হতে পারে না?

 সেই রাত্রে শেষ দেখার সময়, আমাদের অল্পবয়েসের হিরো, আমাদের রাজকুমার, বুঢ্ঢার তীব্র বিষাদমাখা মুখখানার ছবি কিছুতেই ভুলতে পারি না।

মুম্বাই থেকে কাজ সেরে কলকাতার প্লেনে চাপার আগে আমার সমুদ্র-দর্শনও হলো না। সময় পাইনি।

ফেরার কয়েকদিন পরেই যেতে হলো শান্তিনিকেতন। আমার লেখালিখির চাপ পড়ে গেছে। কলকাতায় সভা-সমিতির উপদ্রব এত বেড়েছে যে, নিরিবিলি সময় পাবার উপায় নেই। আসলে আমাদের মাথার ওপরে যেসব বয়স্ক লেখকরা ছিলেন, তাঁরা অনেকেই চলে গেছেন, তাই টানাটানি হয় আমাদের নিয়ে।

শান্তিনিকেতনের বাড়িতে আমি টেলিফোন বা টিভি, কিছুই রাখবো না ঠিক করেছিলাম। বেশ কয়েক বছর সেভাবেই চালিয়ে এসেছি। তারপর গত বছরে স্বাতীর হঠাৎ মনে হয়েছে, কোনো বিপদ-আপদ হলে কারুকে খবর দেওয়া যাবে কী করে? আমরা থাকি প্রায় মাঠের মধ্যে, খুবই নির্জন জায়গায়। সুতরাং টেলিফোন দরকার।

আজকাল তো চাইলেই টেলিফোন পাওয়া যায়। এবং নম্বরটাও গোপন রাখার উপায় নেই। কী করে যেন অনেক অনেক লোকও নম্বরটা জেনে যায়।

টিভি অবশ্য এখনো কেনা হয়নি।

তবে মাঝে মাঝেই কাগজ দেখতে দেখতে স্বাতী আফসোসের সুরে বলে ওঠে, ইস্, আজ একটা ডাস্টিন হফ্ম্যানের সিনেমা ছিল! কিংবা, আজ হিস্ট্রি চ্যানেলে ক্লিওপেট্রা!

অর্থাৎ টিভিও এলো বলে!

এখানে আমি লেখার বদলে অনেকক্ষণ চুপ করে বসে থাকি। পাশের ছোট পুকুরটার দিকে চেয়ে। কতরকম পাখি আসে। বক ও মাছরাঙার প্রতিযোগিতা দেখতে বেশ মজা লাগে।

এক একদিন আমার বাল্যকালের পূর্ববঙ্গীয় অভ্যেসে একটা ছিপ নিয়ে মাছ ধরতে বসি। বক ও মাছরাঙারা সেদিন আমার ওপর খুব বিরক্ত হয়।

প্রথম যে-দিন হ্যাঁচকা টান দিয়ে একটা আমেরিকান-পোনামাছ তুললাম, সেদিন কী উত্তেজনা। প্রায় তিরিশ-পঁয়তিরিশ বছর পর আমার মৎস্য-শিকার!

প্রায় তখুনি সাগরময় ঘোষ এসে সাইকেল-রিকশা থেকে নামলেন।

তিনি মাছটা দেখে উল্লাসের সঙ্গে বললেন, এক্ষুনি মাছটাকে ভাজতে বলো, ভদকা দিয়ে খাই। এ-দেশের কোনো হোটেলই এত টাটকা মাছ খাওয়াতে পারবে না।

এক-একদিন অবশ্য মাছ ধরার জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঠায় বসে থাকতে হয়। মাছেরা সেইসব দিন বোধহয় উপোস করে, টোপের ধারেকাছে ঘেঁষে না।

 লেখার থেকে না-লেখার সময় আমি বেশি উপভোগ করি। তখনই মাথার মধ্যে লেখার অনেক উপাদান তৈরি হয়।

আনোয়ারার প্রসঙ্গ নিয়ে আমরা আর আলোচনা করি না। যদিও ভুলে যাইনি মোটেই। কিন্তু আমাদের সাধ্যের সীমারেখা টানা হয়ে গেছে। ওর গয়নাগুলো স্বাতী জমা রেখে দিয়েছে ব্যাংকের লকারে। সুতরাং ডাকাতি হয়ে যাবার ভয় নেই।

এর মধ্যে একদিন কামাল টেলিফোন করেছিল।

কামালকে সুকুমার রায়ের ভাষায় বলা যায় গেছোবাবা। সে যে কখন মালয়েশিয়া কিংবা কখন ক্যানাডায় থাকবে, তার কোনো ঠিক নেই। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সে যখন-তখন আমাদের টেলিফোন করে। কোনো কারণ থাকে না, এমনিই। কখনো এক মাসের মধ্যে কামালের টেলিফোন না পেলে আমরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ি। কী হলো কামালের? ঠিক পরের দিনই ফোন বাজার পর কামালের গলা শুনতে পাই। এটা শুধু টেলিফোন না, টেলিপ্যাথি।

শান্তিনিকেতনেও কামাল টেলিফোন করে অনেক কথার মধ্যে জানিয়ে দিল, তার এক আমেরিকান বন্ধু শিগগিরই সৌদি আরবে যাচ্ছে, তাকে সে আনোয়ারার খোঁজ নিতে বলবে।

একদিন মাছধরায় বিফল মনোরথ হয়ে ছিপ গুটিয়ে ফিরেছি দুপুরে। টেলিফোন বাজলো।

কামাল নয়, শান্তিনিকেতনেরই এক বন্ধু, ইন্দ্রনাথ। তার বইয়ের দোকান আছে।

ইন্দ্রনাথ বললো, ভাই, আমার দোকানে দু’জন 888sport appsি মহিলা এসেছেন, তোমার খোঁজ করছিলেন। কলকাতা থেকে শুনে এসেছেন, তুমি এখন এখানে। তোমার বাড়িতে পাঠাতে পারি?

গরমকালে আমি বাড়ির মধ্যে সবসময় খালি গায়ে থাকি। কোনো অতিথি এলে জামা পরতেই হয়। কোনো মহিলা এলে তো জামার সঙ্গে চুল আঁচড়ানোও আবশ্যিক।

 কোনো মহিলা দেখা করতে চাইলে না বলে দেবো, এমন বেরসিক পাষণ্ড আমি এখনো হয়নি।

ইন্দ্রনাথকে বললাম, এই ভরদুপুরে নয় ভাই, বিকেলের দিকে আসতে বলে দাও।

দুপুর থেকেই ঘনিয়ে এসেছে মেঘ।

দিবানিদ্রা থেকে ওঠার পরই শুনতে পেলাম বজ্র গর্জন, তার পরেই বৃষ্টি। শান্তিনিকেতনে বৃষ্টির তেজ সবসময়েই কলকাতার চেয়ে বেশি হয়। সুতরাং 888sport appsি মহিলাদুটি আজ আর আসতে পারবেন না, বোঝাই গেল।

বৃষ্টির দিনে বারান্দায় বসে অনেকক্ষণ ধরে চা খাওয়া এখানকার বিশেষ বিলাসিতা। কলকাতায় এমন চোখ ভরে বৃষ্টি দেখার সুযোগ কম। সেখানে থাকি দশতলায় ওপরে। বৃষ্টি দেখতে পাই বটে, কিন্তু শব্দ শুনতে পাই না।

বৃষ্টির মধ্যেই একটা সাইকেল-রিকশা থামলো একটা গেটের সামনে। দুটি যুবতী মেয়ে তার থেকে নেমে হেঁটে আসতে লাগলো ধীর পায়ে।

 গেট থেকে বারান্দা পর্যন্ত আসতেই বেশ ভিজে গেল ওরা। দৌড়ে এলে কম ভিজতো, কিন্তু আমাদের সামনে দৌড়ে আসাটা বোধহয় সম্ভ্রমপূর্ণ নয়।

দু’জনেরই বয়েস তিরিশের আশেপাশে। শাড়ি-পরা, গায়ের রং ফর্সা, মুখের ভাব দেখলেই বোঝা যায় উঁচু পরিবারের কন্যা এবং যথেষ্ট লেখাপড়া জানে। দু’জনেই বেশ সুশ্রী। তবে একজনের চোখ দর্শনীয়ভাবে টানাটানা। অনেকটা যামিনী রায়ের আঁকা রাধাকৃষ্ণ ছবির রাধার মতন।

সেই রাধা-চক্ষু মেয়েটি নম্রস্বরে বললো, অসময়ে এসে আপনাদের বিরক্ত করলাম।

আমি বললাম, আমাদের অসময় কেন হবে? তবে আপনারা এত ভিজলেন, একটু অপেক্ষা করে এলে পারতেন।

স্বাতী তাড়াতাড়ি ভেতর থেকে তোয়ালে নিয়ে এলো ওদের মাথা মুছবার জন্য।

শাড়ি বদলে নেবে কিনা তাও জিজ্ঞেস করলো। ওরা কুণ্ঠিতভাবে বললো, তার দরকার নেই।

ওদের জন্য চায়ের অর্ডার দেওয়া হলো।

রাধা-চক্ষু মেয়েটিই আবার বললো, আমরা আসলে হেঁটে আসছিলাম, এতটা দূর বুঝতে পারিনি। ভেবেছিলাম, বেড়াতে বেড়াতে, দেখতে দেখতে আসবো। এদিককার বাড়িগুলো খুব সুন্দর, হঠাৎ বৃষ্টি এসে গেল। কোথাও দাঁড়াবার জায়গা নেই, তাই ভিজে গেলাম, তারপর একটা রিকশা পেয়ে – 

অন্য মেয়েটি বললো, আসার সময় দেখি, রাস্তার ওপর দুটা আম পড়ে আছে। মজার ব্যাপার। আগে কখনো দেখিনি।

আমি বলালাম, ঝড়ে পড়ে গেছে। তোমরা বুঝি গ্রামে থাকোনি কখনো?

ওরা বললো, না।

888sport apps শুনলেই আমাদের গ্রামবাংলার কথা মনে পড়ে। সেখানে ঝড়ের আম কুড়োনো অতি স্বাভাবিক ঘটনা। কিন্তু 888sport appয় যারা জন্মেছে, বড় হয়েছে, তারা এসব দেখবে কী করে?

এর আগে একবার একটি 888sport appsি পরিবার আমাদের এখানে এসে থেকেছিল কয়েকটা দিন। ওদের একটা দশ-এগারো বছরের ছেলে বাগানে জোনাকিদের উড়াউড়ি দেখে অবাক হয়ে গিয়েছিল। 888sport appর ছেলে, আগে কখনো জোনাকি দেখেনি।

প্রথম মেয়েটি বললো, আমার নাম নীলোফার আর এই আমার বন্ধুর নাম করবী।

এই নাম আমার কানে কোনো পরিচয়ের ধ্বনি দিল না।

888sport appsের ছেলেমেয়েরা মাঝে মাঝে আমার সঙ্গে দেখা করতে আসে। শুধুই দেখা করার জন্য। কেউ কেউ বই-টই সই করায়। তাদের কাছ থেকে 888sport appsের খবরাখবর নিতে আমার ভালো লাগে।

জিজ্ঞেস করলাম, তোমরা কি ছাত্রী?

নীলোফার বললো, আমার বন্ধু একটা স্কুলে গান শেখায়। আমি এখন চাকরি খুঁজছি।

করবী বললো, নীলু এই মাসেই পিএইচ ডি করেছে।

নীলু বললো, আমি শামীম স্যারের আন্ডারে রিসার্চ করেছি। ওনাকে তো আপনি চেনেন?

আমি বললাম, শামীম, মানে ইতিহাসের অধ্যাপক?

নীলু সম্মতি জানালো।

আমি আর স্বাতী চকিতে একবার দৃষ্টিবিনিময় করলাম।

এই নীলু তাহলে আমাদের পরিচিত একটি কাহিনীর অন্যতম নায়িকা। একটি চতুর্ভুজ প্রেম-কাহিনীর একটি বাহু।

একাধিক পুরুষের এমন স্নিগ্ধ স্বভাবের রূপসীর প্রেমে পড়া খুবই স্বাভাবিক। এর কণ্ঠস্বরটি পর্যন্ত খুবই মার্জিত এবং মিষ্টি।

নীলু বললো, আমরা শান্তিনিকেতনে বেড়াতে এসেছি। আগে কখনো আসিনি এখানে।

স্বাতী বললো, এই বর্ষাকালটা শান্তিনিকেতনে খুবই সুন্দর। তবে খুব বেশি ঘোরাফেরা করা যায় না। তোমরা কোথায় উঠেছো?

পূর্বপল্লী গেস্ট হাউজে।

বৃষ্টি থামবার লক্ষণ নেই। তোমরা এখানেই খেয়ে যাও। রাত্তিতে এখানে থেকে যেতেও পারো। আমাদের একটা একস্ট্রা ঘর আছে।

করবী বললো, না, না, আমাদের ফিরতেই হবে। আমাদের সঙ্গে আমার আম্মুও এসেছেন। পায়ে হঠাৎ একটা ব্যথা হয়েছে বলে বের হতে চান নাই।

আমি মনে মনে ঠিক করলাম, আনোয়ারার প্রসঙ্গ ওরা নিজে থেকে যদি না তোলে, তাহলে আমি কিছু বলবো না।

 কেউ নতুন আলাপ করতে এলে যা হয়, এলোমেলো টুকিটাকি কথা। আমি একটা সিগারেট ধরাতেই নীলু বললো, আপনি এখনো স্মোক করেন? ছেড়ে দিন, আজ থেকেই ছেড়ে দিন।

এ-রকম অনুরোধ আমি অনেকের কাছ থেকেই শুনেছি। শুনতে বেশ ভালো লাগে, প্রত্যেকবার মনে হয়, সত্যিই আমার ছেড়ে দেওয়া উচিত, তবু কিছু একটা রহস্যময় কারণে ছাড়া হয় না। নাঃ, রহস্যময়টয় কিছু না। স্রেফ মনের জোরের অভাব।

এ-মেয়েটির অনুরোধের মধ্যে বেশ আন্তরিকতা আছে।

আমি মাত্র দু’টান-দেওয়া প্রায় আস্ত সিগারেটটা সামনের বাগানে ছুড়ে দিয়ে বললাম, এই তো ছেড়ে দিলাম তোমার কথা শুনে।

স্বাতী বললো, আবার তুমি বাগানে ফেলছো? বাজে অভ্যেস! জানি তো, এরা চলে গেলেই আবার খাবে!

করবী স্বাতীকে জিজ্ঞেস করলো, ভাবি, আপনি কিছু বলেন না?

স্বাতী বললো, আমি হাল ছেড়ে দিয়েছি!

নীলু বললো, তবু আমাদের কথা শুনে উনি জ্বলন্ত সিগারেটটা ফেলে দিয়ে আমাদের কথার মান দিলেন। এটাই আমাদের বড় পাওনা।

এই সামান্য ঘটনাতেই যেন অনেকটা অন্তরঙ্গতা হয়ে গেল।

এরপর নীলোফার অপ্রত্যাশিতভাবে বললো, আনোয়ারা ভাবি রাগ করে বিদেশে চলে গেলেন, অথচ আমারই তো যাবার কথা!

আমি বললাম, তোমার যাবার কথা? কোথায়?

সে বললো, আমি 888sport app ছেড়ে চলে যেতে চাচ্ছিলাম। লন্ডনে আমার বড়ভাই থাকে। সেখানে আমি একটা কাজও পেয়ে যেতে পারি। আমি কারুর সংসার ভাঙতে তো চাই না।

করবী বললো, শামীমভাই ওর জন্য পাগল হয়ে উঠেছিলেন।

নীলোফার মাথা নিচু করে রইলো। তার শরীরটা কাঁপছে। বোঝা গেল, সে কাঁদছে নিঃশব্দে।

হঠাৎ বদলে গেল পরিবেশ। এতক্ষণ হালকা চালে কথাবার্তা হচ্ছিল, এর মধ্যে এসে পড়লো কান্না।

আমার একটা বাজে দোষ আছে। অন্য কারুকে কাঁদতে দেখলে আমারও কান্না এসে যায়।

স্বাতী নীলোফারের পিঠে সান্ত্বনার হাত রাখলো।

একটু পরে নীলোফার মাথা তুলে আঁচলে মুখ মুছলো।

ধরা গলায় বললো, আমি খুব দুঃখিত। আপনাদের কাছে এসে… সময় নষ্ট করা… আমি চেয়েছিলাম আপনাদের সব কথা জানাতে… কিন্তু পারছি না… আমরা এখন যাই বরং …

স্বাতী বললো, বসো, বসো।

যারা ধূমপায়ী, এ-রকম আবেগের মুহূর্তে তাদের সিগারেট ধরাবার খুবই ইচ্ছে হয়। কিন্তু একটু আগে আমি সিগারেট ছুড়ে ফেলেছি, এখনি আর একটা ধরালে খুবই নির্লজ্জতা হবে। নিজেকে দমন করতে হলো।

করবী বললো, শামীমভাই আনোয়ারা ভাবিকে তালাক দিয়ে নীলুকে বিয়ে করতে চেয়েছিলেন।

নীলোফার বললো, আমি কিছুতেই রাজি হইনি। আমি তো     আনোয়ারা ভাবিকে খুবই ভালোবাসি। এত সরল, সুন্দর মানুষ, উনিও আমাকে খুব পছন্দ করতেন। বাড়িতে গেলেই জড়িয়ে ধরে বুকে     টেনে নিতেন। তাঁর আমি ক্ষতি করতে পারি? মানুষ কি এত নিমকহারাম হয়!

করবী বললো, একটা সংসার ভেঙে সেই পুরুষকে বিয়ে করলে কোনো মেয়ে শেষ পর্যন্ত সুখী হতে পারে না। তাছাড়া আনোয়ারা ভাবির তো কোনো দোষ নেই।

নীলোফার বললো, আমি শামীম ভাইকে বলে দিয়েছিলাম, আমি বিদেশে চলে যাবো, আর কোনো যোগাযোগ থাকবে না। উনি কখনো বিদেশে যেতে চান না।

আমি বললাম, হাবিব নামে একটি ছেলে এসে খুব রাগারাগি করছিল, তার কী ভূমিকা বলো তো?

করবী বিরক্তির মুখভঙ্গি করে বললো, ওটা একটা খোদার খাসি!

স্বাতী জিজ্ঞেস কলো, তার মানে কী?

আমি বললাম, আল্লার ষাঁড় বলে একটা কথা আছে জানো? প্রায় সে-রকমই।

করবী বললো, ওই হারামজাদা যে কত মাইয়ার সাথে প্রেম করছে, তার ঠিক নাই! এমনকি আমার সাথেও চেষ্টা করছিল। সে হঠাৎ একদিন নীলুর কাছে গিয়ে বিয়ের প্রস্তাব দিল। একেবারে সরাসরি। তার দাবি, সে নীলুরে বিয়ে করলে তার বড় ভাইয়ের সংসার ভাঙবে না। তার বড়ভাই নীলুর উপর থিকা মন উঠিয়ে নেবে। একেবারে জোর জুলুম করার অবস্থা। নীলুর তো বাড়ি থিকা বাইরাইনোই বন্ধ হয়ে গেল। রাস্তাঘাটে ধরে। এখন অবশ্য সে জেলে আটক।

– জেলে?

– সেটা অইন্য ব্যাপার। গোঁয়ার তো। শামীমভাইয়ের সঙ্গে নীলুর অ্যাফেয়ার নিয়া একজন ঠাট্টা করেছিল, তাই হাবিব তাকে এমন মেরেছে যে তার একটা চক্ষু নষ্ট হয়ে গেছে। তাতে জেল হবে না?

– শামীমের এখন কী অবস্থা?

– খুবই মুষড়াইয়া পড়ছেন। মানুষটা তো ভালো। আনোয়ারা ভাবি ওইভাবে চলে যাবার পর খুব রিগ্রেট করতেছেন। কারুর সাথে কথা বলেন না। দ্যাখেন দেখি, কী হয়ে গেল ফ্যামিলিটা। আনোয়ারা     ভাবি যদি আর-কয়েকটা দিন অপেক্ষা করতেন, তাহলেই সবকিছু মিটে যেত।

নীলোফার বললো, আমি নিজে আনোয়ারা ভাবিকে গিয়ে সব বুঝিয়ে বলবো ঠিক করেছিলাম। হাবিবের উৎপাতে কিছুদিন ও-বাড়িতে যাওয়া যাচ্ছিল না। ভাবি যে বিদেশে চলে যাওয়ার জন্য তলে তলে তৈরি হচ্ছেন, তা কেউই বুঝতে পারেনি!

করবী বললো, ইস্, কত অভিমান নিয়ে চলে গেছেন। উনি তো শামীম ভাইকে প্রচণ্ড ভালোবাসতেন। এমনিতে রাগ দেখাতেন বটে।

আমি বললাম, আনোয়ারার উচিত ছিল একদিন ওর স্বামীটিকে ধরে খুব মারধোর দেওয়া। এটা স্ত্রী-শক্তির যুগ।

নীলোফার বললো, আনোয়ারা ভাবির যদি কোনো বিপদ হয় বিদেশে গিয়ে, তাহলে আমি কোনো দিন নিজেকে ক্ষমা করতে পারবো না। আমিই তো দায়ী!

করবী বললো, তুই কেন দায়ী হবি?

নীলোফার স্বাতীর দিকে ফিরে বললো, আপনি কি মনে করেন, আমি দায়ী না?

স্বাতী বললো, দ্যাখো, আমি তো তোমাকে আগে দেখিনি। আনোয়ারা আর শামীমকে চিনি। আমার মনে হতো, ওরা আইডিয়াল কাপ্ল। শামীমকে মনে হতো অতি মাটির মানুষ। ওদের দু’জনের ভালোবাসা কত গভীর তা বোঝা যেত! এখন বুঝতে পারছি, আমারই বোঝার ভুল। শামীম যে আনোয়ারকে ছেড়ে দেবার কথা ভেবেছিল, বাবাঃ, মানুষ-চেনা কত শক্ত! না, তোমার কোনো দোষ নেই।

নীলোফার আমার দিকে তাকিয়ে কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই আমি বললাম, আমার কিন্তু মনে হয়, তুমি অনেকটা দায়ী!

নীলোফার ব্যথাতুর গলায় বললো, বিশ্বাস করুন, আমি কিন্তু ওঁকে কোনোদিন কোনো ইঙ্গিত দিইনি। ওঁকে 888sport apk download apk latest version করেছি।

আমি বললাম, সেজন্য নয়। কারণটা হচ্ছে, তুমি কেন তোমার মতন? আমার যদি বয়েস কম হতো, আর তোমার মতন রূপসী আর মধুর স্বভাবের মেয়ে যদি আমার ছাত্রী হতো, তাহলে আমিও নির্ঘাৎ তোমার প্রেমে পড়তাম!

স্বাতী আমাকে কিল মারার জন্য হাত তুলে বললো, দেখেছো, দেখেছো, পুরুষমানুষ কেমন হয়?

আমি কৃত্রিম ভয়ে খানিকটা সরে গিয়ে বললাম, আমার কথাটার মধ্যে দুটো যদি আছে। যদি আমার বয়েস কম হতো, যদি ওর মতন ছাত্রী পেতাম, আর একটাও যদি বাদ গেছে, যদি অবিবাহিত হতাম!

স্বাতী বললো, মোটেই না। তুমি এখনো ওরকম করতে পারো।

আমি বললাম, এটা আমার সম্পর্কে একটা কমপ্লিমেন্ট। এই বয়েসেও প্রেমে পড়তে পারি। আর আগে যা বললাম, সেটা এই মেয়েটার প্রতি একটা কমপ্লিমেন্ট। ওর মন খারাপ হয়ে আছে, তাই ওকে একটা কমপ্লিমেন্ট দিলাম। আসলে মেয়েরা তো কখনো প্রেমে পড়ে না। পুরুষরাই শুধু প্রেম করে বেড়ায়!  (ক্রমশ)