শিহাব সরকার
পঞ্চগড়ে বাস এসে থামার আগেই রকিবুলের চোখের পাতা ভারী হয়ে আসছিল। জার্নিতে ওর ঘুম হয় না, তা বাসে বা ট্রেনে হোক, বা পেস্ননেই হোক। অনেকে দিব্যি ঘুমিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পার করে দেয়। শ্যামনগর পর্যমত্ম অল্প দূরত্বের পথটা ও এসেছে অবশ্য ঘুমিয়েই।
ডাকবাংলোর পিওন স্যুটকেস আর ব্যাগটা রম্নমের ফ্লোরে নামিয়ে জিজ্ঞেস করেছিল ওগুলো কোনদিকে রাখবে। রকিবুল ওকে পরে আসতে বলে দরজা বন্ধ করে দিয়েছিল, তারপর সঙ্গে-সঙ্গে ঘুম। কাপড় ছাড়েনি। শুধু একবার ঘড়ি দেখেছিল, দশটার ওপর বাজে। এখন রাত ছোট হয়ে আসছে। তার মানে বেলা হয়েছে বেশ।
দরজায় মৃদু টোকার শব্দ পেয়ে রকিবুল চোখ মেলল। ঘোর-ঘোর লাগছিল। কোথায় শুয়ে আছে ও। অচেনা রম্নম। বিছানা। অবশ্য বাসত্মবে ফিরে আসতে ওর সময় লাগে না। আবার টোকা। দুবার। প্রতিবার দুটো করে। বাংলোর বেয়ারা হবে। ব্রেকফাস্ট করবে কিনা জানতে এসেছে হয়তো। একটা লম্বা হাই চাপতে-চাপতে রকিবুল শোয়া থেকে উঠে গিয়ে দরজা খুলল। কেউ নেই। কিন্তু জায়গাটা সুরভিতে ভুরভুর করছে। একটা চেনা পারফিউমের গন্ধ। অনেক আগে ওর এক খালা মাখতেন। দরজা খুলে রেখে রকিবুল দুদিকেই তাকাল। লম্বা করিডর। কেউ নেই। পাশের দুটো ঘরের একটাতে তালা, একটা বন্ধ। সামনে খোলা প্রামত্মর, দূরে নদী। হু-হু করে হাওয়া আসছে। কিন্তু দরজার পাশে গন্ধটা ভাসছে, কিছুটা হালকা হয়ে এসেছে যদিও। রকিবুলের ঘুম ছুটে গেছে। ও ব্যাপারটার কোনো কূলকিনারা করতে পারছে না। তবে ও স্বপ্ন দেখছিল না। এ-ব্যাপারে ও নিশ্চিত। অত গাঢ় ঘুম ছিল না ওর। তবে ব্যাপারটা কী। কেউ ওর সঙ্গে তামাশা করে গেল, তা-ও আবার একজন পারফিউম-মাখা মানুষ? কিন্তু এত দ্রম্নত জায়গাটা ছাড়ল কীভাবে মাথায় ঢুকছে না। রকিবুল দরজায় দ্বিতীয়বার নক শোনার সঙ্গে-সঙ্গেই উঠে এসে দরজা খুলেছিল। রম্নমে কলিংবেল আছে, টিপলেই লোক আসবে। নিচের রিসিপশনে ওকে তাই বলা হয়েছিল। থাক এখন। রকিবুল রম্নম থেকে সিগারেটের প্যাকেট আর লাইটার এনে রেলিং ঘেঁষে দাঁড়াল।
ইউনিভার্সিটি থেকে যেরকম বলা হয়েছিল, জায়গাটা মোটামুটি তাই। প্রচুর গাছপালা, ঘাস-ছাওয়া বিসত্মীর্ণ মাঠ, চারদিক নির্জন। পাখির কলরব আছে, সেটা ছাপিয়ে রিকশার ক্রিং ক্রিং বা অনেকক্ষণ পরপর বেবিট্যাক্সি অথবা বড় গাড়ি ছুটে যাওয়ার শব্দ। মোবাইল বাজছে। রম্নমে গিয়ে ফোনটা তুলল রকিবুল। ন্যান্সি।
হ্যাঁ বলো।
ঠিকমতো পৌঁছেছো তো? আমি তোমার ফোনের অপেক্ষায় ছিলাম।
আর বলো না। বাসে একদম ঘুমাতে পারিনি।
এখন ঘুমাচ্ছিলে?
হ্যাঁ। দরজায় টোকার শব্দ, পারফিউমের গন্ধ ইত্যাদি ব্যাপার চেপে যাওয়াই ভালো। রকিবুল ভাবল।
তানিয়া কী করে?
পড়ছে।
সকালবেলা আবার কোন টিচার?
অঙ্কের জন্য রেখেছি। এবার তো পরীক্ষায় অঙ্কে ভালো করেনি।
সেজন্য আরেকটা টিচার! ক্লাস ফোরে পড়ে মেয়ে। ইংরেজি টিচার, অঙ্কের টিচার। গলা খানিকটা চড়ে গেল রকিবুলের। ‘দ্যাখো, টিচার ঠিক করার আগে আমার সঙ্গে কথা বলবে। এভাবে টিচার দিলে কিন্তু মেয়েটার ওপর খুব প্রেশার পড়ে যাবে,’ ও বলল।
সেটা আমি বুঝব। তুমি মেয়ের পড়াশোনার কোনো খোঁজখবর রাখো? ইউনিভার্সিটি, সভা-সেমিনার আর বাসায় সারাক্ষণ বই। মেয়ের পুরোটা দেখি আমি। ন্যান্সি বলল।
সকালবেলা বুঝি ঝগড়া শুরু হয়ে গেল। রকিবুলকে এখন কমপক্ষে দু-ঘণ্টা ঘুমাতে হবে। বিকেলে সাইটে যেতে হবে। ভেবেছিল কন্যার সঙ্গে একটু কথা হবে। থাক এখন। ন্যান্সি সামান্য কথায় খেপে ওঠে। এটা ওর স্বভাব। নিজে যা করবে ওটাই ফাইনাল।
আচ্ছা ঠিক আছে। রাখি এখন। আমি একটু ঘুমাব। রকিবুল বলল।
আচ্ছা ঘুমাও। পরে ফোন করব। ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া করবে কিন্তু। ন্যান্সি ফোন কেটে দিলো। রকিবুল বাইরে মুখ রেখে কথা বলছিল। ঘুরে দেখল দরজায় পিওন ছেলেটা।
স্যার ব্রেকফাস্ট দিয়ে দিই। একটু পর বন্ধ হয়ে যাবে। ছেলেটা বলল।
কয়েক সেকেন্ড ভেবে রকিবুল বলল, ‘দাও। জলদি। আমি খেয়ে একটু ঘুমাব’, রকিবুল বলল।
জি স্যার। ছেলেটা চলে গেল।
সন্ধ্যা হয়-হয়। হাঁটতে-হাঁটতে নদীর পাড়ে চলে এসেছে রকিবুল। দারুণ বাতাস। সারাদিনের ভ্যাপসা গুমোটের পর বেশ লাগছে।
বিকেলে সাইটের কিছু এলাকা ঘুরে এসেছে। প্রচুর পাথর। রিসার্চে খুব কাজে আসবে। পঞ্চগড় রক মিউজিয়ামের অধিকাংশ শিলা এবং নুড়ি গেছে এখান থেকে। সব পাঁচ-ছয় হাজার বছর আগের। তার আগেরও আছে। গাইড জানালো শীতকালে সামান্য উত্তরে গেলে হিমালয় দেখা যায়। এ ব্যাপারটা রকিবুল জানে। পত্রিকায় শ্যামনগর থেকে তোলা ছবিও দেখেছে। নদীটা ছোট, কিন্তু বিকেলে দেখা গেছে খুব স্রোত, এবং পানি
ঘোলা। একটা জায়গায় কূল ঘেঁষে লালচে বেলেমাটি। ইতিউতি পাথর পড়ে আছে। খানিকটা এগিয়ে গিয়ে স্যান্ডেল খুলে পানিতে দাঁড়াল রকিবুল। পায়ের পাতার ওপর দিয়ে কুলকুল বয়ে যাচ্ছে পানি। কতকাল ও নদীর এ-শব্দ শোনেনি। শেষ শুনেছিল বান্দরবানের একেবারে ভেতরে এক পাহাড়ি নদীতে। ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে রকিবুল। ওপরে ঘন গাছে-ছাওয়া গ্রামের সারি একটা দীর্ঘ কালো রেখার মতো দেখায়। অন্ধকার নামছে দ্রম্নত।
গুড ইভনিং।
সুরেলা 888sport promo codeকণ্ঠ শুনে পেছনে ফিরে তাকাল রকিবুল। পানি থেকে সামান্য দূরে দাঁড়িয়ে আছে এক 888sport promo code। বয়স বোঝা যাচ্ছে না। তবে দাঁড়ানোর ভঙ্গি দেখে বোঝা যায় তন্বী; বাইশ-তেইশ হবে, উনিশ-কুড়িও হতে পারে। বাতাসে লম্বা, খোলা চুল উড়ছে। শাড়ির প্রামত্ম উড়ছে। দ্রম্নত পানি থেকে উঠে এসে স্যান্ডেল পায়ে দিলো রকিবুল। তরম্নণীর সামনে গিয়ে বলল, ‘গুড ইভনিং’।
আমি মিথিলা সুরাইয়া শবনম। বেড়াতে এসেছেন বুঝি? তরম্নণীর কাঁধে ঝোলানো একটা ব্যাগ। গোলাকার। কিসের তৈরি, এবং কী রং বোঝা যাচ্ছে না। শাড়ির রংটাও ঠাহর করা যায় না। অন্ধকার গাঢ় হচ্ছে ক্রমশ। রকিবুল আন্দাজ করল তরম্নণীর মুখখানার ধাঁচ কী রকম হতে পারে।
আমি রকিবুল হক। ইউনিভার্সিটিতে জিওলজি পড়াই।
জিওলজি মানে প্রাণিবিদ্যা?
না, না। প্রাণিবিদ্যা নয়। জিওলজি মানে ভূতত্ত্ব। এই পাথর, শিলা এসবের গঠনপ্রকৃতি, মাটির ধরন, পৃথিবীর নিচের নানারকমের সত্মর এসব নিয়ে কারবার। রকিবুল সংক্ষেপে বোঝানোর চেষ্টা করল।
খটোমটো সাবজেক্ট। তরম্নণী হালকা শব্দ করে হাসল।
বাইরে থেকে তাই মনে হতে পারে। কিন্তু এর ভেতরে ঢুকলে পেয়ে বসে।
কী রকম?
এই নেশা, নেশার মতো আর কি। ছাড়া যায় না।
কিছুক্ষণ চুপ থেকে তরম্নণী বলল, ‘ও, এজন্য বুঝি পাথর দেখতে 888sport app থেকে ছুটে এসেছেন? জানেন, এই এলাকায় প্রচুর ছোট-বড় পাথর, নুড়ি এসব আছে। পঞ্চগড়ে রক মিউজিয়ামে গেছেন?’
‘যাব। কয়েকবার যেতে হবে। আসলে আমি একটা রিসার্চের কাজে এসেছি এখানে। থাকব বেশ কদিন।’
দুজন অজামেত্ম, পাশাপাশি হাঁটতে শুরম্ন করেছে। সরম্ন, পাকা রাস্তাটায় লোকজন তেমন নেই। টিমটিমে স্ট্রিটলাইটের আলোয় দেখা যাচ্ছে সাদা শার্ট বা গেঞ্জি এবং কেডস পরা এক ভদ্রলোক জগিং করতে-করতে এদিকে এগিয়ে আসছেন। খানিকটা পেছনে সালোয়ার-কামিজ পরা মোটা ধরনের এক মহিলা, হাঁটছেন ধীরে-ধীরে। এখান থেকে ডাকবাংলোটা দেখতে ভারি সুন্দর। ইউরোপীয় এবং বাঙালি স্থাপত্যের মিশেলে বানানো দোতলা বাড়ি। ওপরে চৌকোনা টালির ছাদ। আলো জ্বলছে। লাগোয়া রাস্তাটায় আলো কম। মানুষ এবং যানচলাচলও তেমন চোখে পড়ছে না। তবে রকিবুলের কেন জানি এই আলো-িআঁধারিতে হাঁটতেই ভালো লাগছে। খুব হাওয়া। শীতল এবং ঝরঝরে। 888sport appর চেয়ে অন্যরকম। পঞ্চগড়ে বাস থেকে নেমেই রকিবুল বুঝেছিল, এ এলাকার পুরো প্রকৃতি দেশের 888sport app অঞ্চল থেকে আলাদা। বাতাসে কেমন যেন হিমালয়-হিমালয় গন্ধ।
অনেকক্ষণ দুজন নীরব। অস্বস্তিকর হয়ে যাচ্ছে ব্যাপারটা। সিগারেট ধরালে কেমন হয়। কিন্তু ভদ্রমহিলার অসুবিধা হতে পারে। রকিবুল অবশ্য সিগারেট অনেক কমিয়ে দিয়েছেন ন্যান্সির পীড়াপীড়িতে। অভ্যাসবশত এক প্যাকেট কেনেন। তিন-চারদিন চলে যায়। কিন্তু এসব মুহূর্তে, এখন যেমন, ওর সিগারেট খাবার ইচ্ছা ভেতর থেকে চনমন করে ওঠে। প্যান্টের পকেটে হাত ঢুকিয়ে ও প্যাকেটের স্পর্শ নেয়। শার্টের পকেটে লাইটার।
‘কাইন্ডলি সিগারেট ধরাবেন না।’ খানিকটা তীক্ষ্ণন গলায় হঠাৎ বলে উঠল তরম্নণী।
‘না, না। ধরাচ্ছি না।’ মনে-মনে লজ্জা পায় রকিবুল। ভীষণ চমকে উঠেছে ও। মহিলা বুঝল কীভাবে ওর সিগারেট খেতে ইচ্ছা করছে? অবশ্য এটা অসম্ভব কোনো ব্যাপার নয়। এসব মুহূর্তে অধিকাংশ স্মোকার ফস করে সিগারেট ধরিয়ে ফেলে, আগপাছ কিছু না ভেবে। অনেকটা পরিস্থিতি সহজ করার জন্য। তবে কেন জানি রকিবুলের মনে হলো মহিলা খুব শার্প, সিক্সথ সেন্সও থাকতে পারে।
এবার অস্বস্তি আরো গাঢ় হচ্ছে। কথা খুঁজে পায় না রকিবুল। অথচ কথা বললে পরিস্থিতি সহজ হবে। শুরম্নতে মনে হয়েছিল তরম্নণী প্রগলভ, খুব কথা বলে। এখন সেরকম মনে হয় না।
‘আচ্ছা, মিথিলা সুরাইয়া, আপনি এদিকেই থাকেন বুঝি?’
‘তাই।’ সংক্ষেপ্ত উত্তর তরম্নণীর।
একটা কালভার্টের ওপর উঠে আসে দুজন। নিচে সম্ভবত একটা খাল। পানি আছে কিনা বোঝা যাচ্ছে না।
একটু বসি না এখানটায়। তরম্নণী রেলিঙের ওপর বসে পড়েছে। রকিবুল কয়েক হাত দূরে দাঁড়ানো। নদীর দিকটা খুব অন্ধকার দেখাচ্ছে।
‘আমার নামটা খুব লম্বা। আমাকে শুধু মিথিলা বলে ডাকবেন। সবাই তাই ডাকত।’
‘ডাকত মানে?’ মুখ ফসকে বেরিয়ে এলো রকিবুলের।
‘না, মানে বাসায়, খুব কাছের মানুষরা।’
‘ও। এখানে বুঝি আপনি নতুন এসেছেন?’
‘না, আসলে ব্যাপারটা হচ্ছে…।’ কিছু একটা বিড়বিড় করল তরম্নণী। রকিবুল পরিষ্কার বুঝতে পারে না।
হঠাৎ রকিবুলের মনে হলো হালকা সৌরভে ভরে আছে জায়গাটা। সেই গন্ধটা, যেটা ও বাংলোর রম্নমের দরজা খুলে পেয়েছিল। পুরনো দিনের পারফিউম। গন্ধটা আসছে মিথিলার গা থেকে। দারম্নণ এক হেঁয়ালিতে পড়ে যায় রকিবুল। প্রসঙ্গটা তোলার জন্য ভেতরে-ভেতরে ছটফট করে ও। অনেক কষ্টে নিজেকে সংযত করে।
‘আপনার অন্ধকার কেমন লাগে?’ আচমকা বলে উঠল মিথিলা।
‘ভালোই তো।’
‘আমার অন্ধকার খুব ভালো লাগে।’ মিথিলা মোলায়েমভাবে বলল।
‘অন্ধকার খুব ভালো। এখানে কী ঘন অন্ধকার! 888sport appয় অন্ধকার নেই। সারারাত আলো। ঘর অন্ধকার করলেও ভেতরে বাইরের আলো এসে ঢোকে। গ্রামেও অন্ধকার কমে আসছে। কারেন্ট চলে গেছে সব জায়গায়। ঘরে-ঘরে লাইট।’
‘শ্যামনগর চলে আসবেন।’ মিথিলা ছোট করে হাসল।
‘তাও আসতে হবে। আমাকে অবশ্য দেশের আনাচে-কানাচে ঘুরতে হয়। বিশেষ করে পাহাড়ি এলাকায়। ওসব জায়গায় এখনো প্রচুর অন্ধকার।’
‘অদ্ভুত আলো-িআঁধার এক…। না হলো না। ওটার অন্য মানে। আমার ভালো লাগে আদিম, প্রাগৈতিহাসিক অন্ধকার।’ মিথিলা খানিকটা টেনে-টেনে বলল।
‘আরে বাপস! 888sport app download apk লেখেন নাকি?’ উছলে ওঠা কণ্ঠে বলল রকিবুল।
মিথিলা সহসা উত্তর দেয় না। এক-দেড় মিনিট চুপ থেকে বলল, ‘আমি বাংলা 888sport live footballের ছাত্রী। রাজশাহীতে পড়েছি।’
‘এখন নিশ্চয় বাংলার টিচার। কলেজে নাকি ইউনিভার্সিটিতে?’
চুপ করে যায় মিথিলা। বেশ কিছুক্ষণ পর রকিবুল বলল, ‘কই বললেন না?’
‘কী বলব?’
‘কোথায় আপনি পড়ান?’
‘কী পড়াই?’
‘ওই যে বললেন, বাংলা।’
‘অ।’ আবার নৈঃশব্দ্য।
‘দেখুন, দেখুন রকিবুল, জোনাকি।’ মিথিলা মাথাটা সামান্য ঘুরিয়ে কালভার্টের নিচের দিকে ঝুঁকে আছে।
রকিবুলও দেখল নিচে ছোট-ছোট ঝোপ-জংলার চারদিকে অনেক জোনাকি।
‘দারম্নণ। এই দৃশ্য বহুদিন পর দেখলাম। লাস্ট দেখেছি হিল ট্র্যাক্টসে।’
‘এদিকে অনেক জোনাকি।’ মিথিলা মুখ তুলে বলল।
‘অনেক গ্রামে এখন জোনাকি নেই। গ্রামের অনেক ছেলেমেয়ে জোনাকি দেখেনি। জঙ্গল নেই, নির্জন রাস্তা নেই। ছাড়াবাড়ি নেই। ভূত নেই।’ বিড়বিড় করে বলল রকিবুল।
‘ভূত নেই, ভূতের গল্প আছে। হুমায়ূন আহমেদ পড়েন নিশ্চয়।’
‘খুব একটা না। কিছু পড়েছি। বেশ কটা ভূতের। ভালোই। আসলে আমি 888sport alternative link পড়ার সময় পাই না।’
‘খুব বিজি মানুষ আপনি। আপনার সময় নষ্ট করছি।’ মিথিলা উঠে দাঁড়াল।
‘না, না। মোটেই না। আপনার সঙ্গ আমি এনজয় করছি। এখানে প্রাণ খুলে কথা বলার লোক খুব একটা আছে বলে মনে হয় না। আপনার সঙ্গে রেগুলার দেখা হলে ভালো লাগবে।’ রকিবুলও উঠে দাঁড়িয়েছে। আসলে ওকে একটা রিপোর্ট লেখা শুরম্ন করতে হবে। আজ রাতেই।
‘আমি আপনাকে ডিস্টার্ব করব কিন্তু।’
‘নিশ্চয়। ওই যে আমার থাকার জায়গা।’ ডাকবাংলোর দিকে ইঙ্গিত করল রকিবুল।
‘জানি। হাসল মিথিলা।’ স্ট্রিটলাইটের হলদেটে আলোয় ওর মুখটা এবারও পরিষ্কার বোঝা যায় না।
‘আমি এবার যাব।’ মিথিলা ঘুরে পা বাড়ায়।
‘কোনদিকে থাকেন আপনি? চলুন এগিয়ে দিয়ে আসি।’
‘না, দরকার নেই। এটা আমার এলাকা। আপনি যান। আপনার অনেক কাজ।’
ওরা যেদিক থেকে এসেছিল, মিথিলা সেদিকে হনহন করে হেঁটে যায়। হঠাৎ পাশে কোথাও শেয়াল ডেকে উঠল। রকিবুল মুখ ঘোরাল অন্যমনস্কভাবে। এদিকে মিশমিশে অন্ধকার। হয়তো ওপাশে জঙ্গল আছে। এদিকে নদীঘেঁষা সরম্ন রাস্তাটা সুনসান। মিথিলাকে দেখা যাচ্ছে না। হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে যেন মেয়েটা।
দুই
পঞ্চগড়ের এই এলাকাটা ইন্ডিয়ান পেস্নটের ওপর পড়েছে সরাসরি। এটি ভারত উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় সচল পেস্নট। ক্রমশ উত্তরদিকে এগোতে থাকা ভূগর্ভের এই পেস্নট তিববত পেস্নটের সঙ্গে ক্রমাগত ধাক্কা খাচ্ছে। ফলে নেপাল, 888sport apps ও উত্তর ভারতে বেশ বড় কয়েকটি ভূমিকম্প হয়েছে গত তিনশো বছরে। তিন-চার মাত্রার ভূকম্পন অবশ্য এ-অঞ্চলে অনবরত হয়ে চলেছে। শ্যামনগরের মাটির প্রকৃতি এবং এর শিলা ও নুড়ির গঠন দেখে বোঝা যায়, এলাকাটি হাজার-হাজার বছর ধরে ভূমিকম্পপ্রবণ। 888sport appsের ইতিহাস জানার ক্ষেত্রেও পঞ্চগড় এলাকা এক বড় ভূমিকা রাখতে পারে।
ভোর থেকে চা বাগানের আশপাশে একটা বড় এলাকায় ঘোরাঘুরি করে ক্লামত্ম হয়ে পড়েছে রকিবুল। সঙ্গে কলেজে-পড়া স্থানীয় এক যুবক আছে। ওর লোকাল গাইড। পড়ুয়া ধরনের ছেলে। মানিক নাম। নানা বিষয়ে ওর আগ্রহ। নতুন ধনীলোকের সমত্মান। সঙ্গে ল্যাপটপ থাকে। কোনো নতুন বিষয় মনে ধরলে সঙ্গে-সঙ্গে ইন্টারনেটে সার্চ দিচ্ছে। লজ্জার ব্যাপার হলেও রকিবুল স্বীকার করতে বাধ্য, মানিকের কাছে ও সাউথ এশিয়ান জিওলজি সম্পর্কে বেশকিছু নতুন তথ্য পেয়েছে।
‘মানিক, কোথাও একটু বসলে হয় না? চা বাগানে এসে চা না খেয়ে থাকব?’ রকিবুল আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারছিল না।
‘স্যার, সামনেই চায়ের দোকান। শিঙাড়া, সমুচাও আছে।’ মানিক বলল।
এই এক ঝামেলা হয়েছে। রকিবুলকে ও স্যার বলবেই। প্রথম আলাপের দিনই রকিবুল বলেছিল মানিক যেন ওকে ভাই বলে ডাকে। ও কিছুতে রকিবুলকে ভাই ডাকবে না। রকিবুল ওর কাছে স্যার। কারণ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক।
‘স্যার, সামনের গোডাউনটার পাশ দিয়ে বাঁয়ে টার্ন নিলেই চায়ের দোকান। তবে স্যার, এখানে কিন্তু বাজারের চা। যেগুলো আপনারা 888sport appয় খান। বাগানের চা সব বাইরে এক্সপোর্ট হয়ে যায়।’ মানিক কয়েক কদম এগিয়ে গেল।
রাস্তার পাশে মুদিদোকানের সামনে দুটো বেঞ্চি পাতা। এক ধারে বড় কেটলি চুলোর ওপর। ওরা দুজন একটা বেঞ্চির ফাঁকা জায়গায় বসল। কজন লোক চা-শিঙাড়া খাচ্ছে।
অর্ডার দেওয়ার সঙ্গে-সঙ্গে চা এসে গেল। ছোট পেস্নটে শিঙাড়া।
‘স্যার, আসেত্ম খাবেন। চা কিন্তু খুব গরম।’
ফুঁ দিয়ে চা ঠান্ডা করে মানিক। দুটো চুমুক দেওয়ার পর কাপ বেঞ্চিতে নামিয়ে রাখে ও।
খুব খিদে লেগেছে রকিবুলের। চোখের পলকে দুটো শিঙাড়া শেষ করে ফেলল। পানির গস্নাসটা হাতে নিয়ে বসে থাকে।
‘স্যার, এদিকে একটা বধ্যভূমি আছে। একাত্তরে এখানে পাকিস্তানি আর্মির একটা ক্যাম্প ছিল। আমার আববা ছিলেন এই অঞ্চলের একজন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার। পুলিশে চাকরি করতেন। এখানে পাকিস্তানি আর্মি ক্যাম্পের ওপর মুক্তিযোদ্ধারা অ্যাটাক করেছিল। প্রথমবার ওরা পারেনি। পাকিস্তানি বাহিনীর আক্রমণে অনেক মুক্তিযোদ্ধা শহিদ হয়েছিল। ওদের অনেককে আর্মি একটা জঙ্গলে লাইন ধরিয়ে গুলি করে মেরেছিল।’
‘আমি জানি। পঞ্চগড় এলাকায় খুব যুদ্ধ হয়েছিল। শেষদিকে মুক্তিবাহিনী পুরো অঞ্চল দখল করে ফেলেছিল।’ রকিবুল একটা সিগারেট ধরাল।
‘স্যার, দেখবেন না বধ্যভূমিটা? ওখানে একটা ছোট টাওয়ার আছে।’
‘অবশ্যই দেখব।’
‘তাহলে স্যার, এখনই চলুন। এদিকটায় আমরা আপাতত আসছি না।’
শ্যামনগরের মুক্তিযুদ্ধ-888sport sign up bonusসৌধের সামনে দাঁড়িয়ে রকিবুলের মনে হলো সারাদেশের ছোট-ছোট শহরগুলোর প্রায় প্রতিটিতে এমন শহিদ মিনার আছে। স্থাপত্যকলার দিক থেকে প্রায় সবই সুন্দর। তবে অনেক জায়গায় ও দেখেছে, ওগুলো বড় অযত্নে দাঁড়িয়ে আছে। হয়তো ঝোপজঙ্গলে ছেয়ে আছে, নয়তো চুন-বালি খসে পড়ছে। এ-সৌধটা বেশ ঝকঝকে। ডিজাইনটাও ভিন্ন ধরনের।
একটা বেদির ওপর মাঝারি আকারের 888sport sign up bonusসৌধটা দাঁড়ানো। চারদিকে ইস্পাতের রম্নল বসানো বাউন্ডারি। ভেতরে নানা জাতের ফুলগাছ। রকিবুল ঘুরে-ঘুরে জায়গাটা দেখে। একটা খেলার মাঠের একপাশে ওটা দাঁড়ানো।
‘স্যার, এখানে একাত্তর সালে একটা ডোবা ছিল। চারদিকে জঙ্গল। মুক্তিযোদ্ধাদের মেরে ডোবায় ফেলে রেখেছিল। তারপর গ্রামের লোক ডেকে এনে লাশগুলো মাটিচাপা দেয়।’
মানিক রকিবুলের সঙ্গে সৌধের চারদিকে ঘুরতে-ঘুরতে বলল।
রকিবুল কিছু না বলে 888sport sign up bonusসৌধটার একটা থামের খুব কাছে গিয়ে দাঁড়াল। ওখানে একটা চৌকোনা সাদা মসৃণ জায়গা। এক খ- কালো পাথর বসানো। ওদের দীর্ঘ নামের তালিকা। সাদা রঙে খোদাই করা। পড়ার চশমা বের করে রকিবুল নামগুলো পড়ে। নামের ধরন দেখে বোঝা যায় অধিকাংশই গ্রামের সাধারণ মানুষ। লেখাগুলো বেশ ছোট। রকিবুলের পড়তে কষ্ট হচ্ছিল, চশমা পরা সত্ত্বেও। কজনের নামই বা তালিকায় থাকে। বহু মুক্তিযোদ্ধার নাম তালিকায় ওঠেনি, ওদের কোনো হদিসও পরে পাওয়া যায়নি। ওরা চিরকালের জন্য হারিয়ে গেছে। এটা ভেবে রকিবুল সবসময় কষ্ট পায়।
‘স্যার, এখানে কিছু মহিলার নামও আছে।’ আচমকা বলে উঠল মানিক।
‘তাই নাকি? এখানে 888sport promo code মুক্তিযোদ্ধাও ছিল?’ রকিবুল ঘুরে তাকাল।
‘জি স্যার। শ্যামনগর মহিলা কলেজে একজন সাহসী লেডি টিচার ছিলেন। নতুন জয়েন করেছিলেন। তিনি ইন্ডিয়ায় যুদ্ধের ট্রেনিং নিতে গিয়েছিলেন। ফিরে এসে একজন ছাত্রীকে নিয়ে তিনি সাইক্লোস্টাইল মেশিনে একটা সাপ্তাহিক পত্রিকা বের করেন।’
‘তাই নাকি?’ রকিবুল দুই পা সরে এসে মানিকের মুখোমুখি দাঁড়াল।
‘পত্রিকার নাম ছিল সূর্যকন্যা। আমার আববার কাছে পুরনো কপি আছে।’
‘পরে কী হলো ওই মহিলার?’
‘মহিলা তাঁর কোয়ার্টারের বাসায় নিজেই পত্রিকার লেখাগুলো তৈরি করতেন। হেল্প করত ওই ছাত্রী। কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা বিভিন্ন বেশ ধরে এসে তাকে যুদ্ধের খবর সাপস্নাই করে যেত। মহিলা বাসার একটা বাতিল বাথরম্নমে ছোট ছাপার মেশিনটা বসিয়েছিলেন। ভীষণ সাহস ছিল।’
রকিবুল অজানা-অচেনা তরম্নণী অধ্যাপিকার চেহারাটা কল্পনা করার চেষ্টা করল। নিশ্চয় দেশকে স্বাধীন করার উদ্দীপনায় সারাক্ষণ টগবগ করতেন। ওই সময় দেশের প্রায় পুরোটা যখন পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর কবলে, রাজাকার-আলবদররা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে – তখন দেশের মাটিতে বসে পত্রিকা বের করা! ভাবাই যায় না। মহিলা নিজেই ছিলেন সূর্যকন্যা। পত্রিকার নামও দিয়েছিলেন তাই।
‘এই সাহসী মহিলার নাম আছে এই লিস্টে?’ রকিবুল তাকাল তালিকাটার দিকে।
‘জি স্যার। ওনার নাম আছে, আরো দুজন মহিলার নাম আছে। এঁরা ছিলেন খুবই সাধারণ। দুজন মুক্তিবাহিনীর ক্যাম্পে খাবার সাপস্নাই দিতেন। বন্দুক চালানো শিখেছিলেন।’
‘তিনজনই শহিদ হয়েছিলেন নিশ্চয়। মানে ওই ছাত্রীটাসহ।’ রকিবুল কিছুটা দ্বিধার সঙ্গে বলল।
‘হ্যাঁ, গ্রামের মহিলা দুজনকে ক্যাম্পে রেখে খুব টর্চার করে মিলিটারি। তারপর মারে। ছাত্রীটাকেও ধরে নিয়ে গিয়েছিল। টর্চার করেছে। কিন্তু ওর লাশ পাওয়া যায়নি।’
‘আর সূর্যকন্যা?’
‘তাকেও মারে। তবে কাহিনি আছে। ওটা খুব করম্নণ।’ আরেকদিন বলব স্যার।
রকিবুল তালিকাটার সামনে গিয়ে নামগুলো পড়ার চেষ্টা করল। সব পুরম্নষের নাম। ও একটা-একটা করে নামগুলো পড়তে থাকে। কিন্তু চোখে রোদ লাগছে। মেলে রাখা যাচ্ছে না।
‘চলো মানিক। আরেকদিন এসে নামগুলো পড়ব। এখন পড়া যাচ্ছে না। গরমও লাগছে।’
দুজন রাস্তায় এসে উঠল।
তিন
কারেন্ট চলে গেল হঠাৎ। বাংলোর লোক এসে দুটো বড় আকারের মোমবাতি দিয়ে গেছে। বলে গেছে, ওদের জেনারেটর আছে। অপারেটর জরম্নরি কাজে বাইরে গেছে। ও ফিরে এলেই জেনারেটর চালু হবে। ফ্যান বন্ধ। রকিবুলের গরম লাগছে। কিন্তু মোমবাতির আলোতে হলেও, ওর আজকের জরিপের রিপোর্টটা রাতেই শেষ করতে হবে। নইলে অনেক পয়েন্ট ভুলে যাবে ও। সব টেকনিক্যাল শব্দ। মোমবাতির আলোয় বাংলোর রম্নমটা খুঁটিয়ে-খুঁটিয়ে দেখে রকিবুল।
দরজায় মৃদু টোকা। ঠিক দুপুরেরটার মতো। সূক্ষ্ম একটা তাল আছে। টেবিল থেকে উঠে দাঁড়িয়ে কয়েক মুহূর্ত ভাবল রকিবুল। ও জানে ওখানে কেউ নেই। তবু দরজার সামনে পৌঁছে বলল, ‘কে?’
‘আমি।’ 888sport promo codeকণ্ঠ। খুব নামানো গলা। কিছুটা চমকে উঠল রকিবুল।
‘আমি কে?’ রকিবুল গলা ভারি করে বলল।
কিছুক্ষণ শব্দ নেই। তারপর, ‘খুলুন না। বললাম তো আমি। ভয় নেই।’
হঠাৎ রকিবুলের মনে হলো, আরে, এ তো সেই মহিলার গলা, যার সঙ্গে কাল সন্ধ্যায় দেখা হয়েছিল নদীর পাড়ে। কী যেন নাম?
দরজায় আবার টোকা। দরজা খুলল রকিবুল।
ওর আন্দাজ ঠিক। নদীর পাড়ে আলাপ হওয়া সেই তরম্নণী। একই দাঁড়াবার ভঙ্গি, শাড়ি পরা। ডান কাঁধে লম্বা স্ট্র্যাপে ঝোলানো গোলাকার বটুয়াটা। বিদ্যুৎ-ঝলকের মতো নামটা খেলে গেল রকিবুলের মাথায়। মিথিলা। মিথিলা। আরো দুটো শব্দ আছে, এ-মুহূর্তে মনে পড়ছে না।
‘আসতে পারি?’ মিথিলা নিচু গলায় বলল।
‘ও হ্যাঁ। অবশ্যই। এত রাতে কোত্থেকে?’ রকিবুল একপাশে সরে গিয়ে জায়গা করে দিলো।
মিথিলা ঢুকল ঘরে। সঙ্গে-সঙ্গে রকিবুলের নাকে এসে লাগল সৌরভটা। যেটা মিথিলার গা থেকে আসছিল নদীর পাড়ে। গতকাল সন্ধ্যায়। গন্ধটা সেদিন দুপুরেও পেয়েছিল দরজায়। কেউ ছিল না সেখানে।
‘বসুন পিস্নজ।’ রকিবুল পড়ার টেবিল-লাগোয়া চেয়ারটায় বসে মিথিলাকে সোফার দিকে ইঙ্গিত করে। ঘরে একটাই ডাবল সোফা।
‘ইদানীং এদিকে খুব কারেন্ট যাচ্ছে।’ মিথিলা বসতে-বসতে বলল।
‘888sport appর বাইরে সব জায়গায়ই তাই।’ রকিবুল বলল।
‘এদিকে অবস্থা ভালোই ছিল। সপ্তাহে-দুসপ্তাহে এক-আধবার যেত। এখন তো নিয়ম করে যায়।’
‘শ্যামনগর এখন নিশ্চয় ইমপরট্যান্ট জায়গা। প্রচুর ট্যুরিস্ট আসে। এদিক দিয়েই তো ল্যান্ডরম্নটে নেপাল যাওয়া যায়।’
‘হ্যাঁ।’ ঘরটার চারদিকে একবার চোখ বুলিয়ে মিথিলা বলল।
‘চা বলি, কেমন?’ রকিবুলের মনে হলো তরম্নণী ওর সঙ্গে কিছুক্ষণ গল্প করতে এসেছে। তাহলে আপাতত কাজ বন্ধ। যদিও কাজটা আজ রাতেই শেষ করতে হবে।
‘পিস্নজ না। আমি এদিকে আমার এক আত্মীয়ের বাসায় এসেছিলাম। ভাবলাম আপনার সঙ্গে কিছুক্ষণ গল্প করে যাই। কিন্তু মনে হচ্ছে আপনাকে ডিস্টার্ব করলাম।’ উঠে দাঁড়ানোর ভঙ্গি করল মিথিলা। মোমের আলোতেও ওকে বিব্রত দেখায়।
‘না, না। আপনি বসুন। তেমন কোনো কাজ না। এটা আমার রম্নটিন কাজ। তাছাড়া এখন বসেই থাকতে হবে। মোমবাতি দিয়ে সিরিয়াস কাজ হয় না। আমার পড়তে কষ্ট হয়।’
‘জেনারেটর আছে তো এখানে। ছাড়ছে না কেন?’
‘অপারেটর নাকি বাইরে গেছে। ও এলেই ছাড়বে।’ রকিবুল বলল।
মিথিলা কিছু বলল না। ঘরের আলো-িআঁধারিতে দুজন মানুষ নিঃশব্দে বসে আছে। মিথিলাকে রহস্যময় দেখায়। মুখের আদলটা পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে না। কিন্তু ওর চেহারার আউটলাইন দেখে রকিবুলের মনে হলো, ওর সামনে একটি সুঠাম 888sport promo codeমূর্তি বসে আছে। যেন ওটা মিথিলা নয়। একটা ভাস্কর্য।
সিগারেটের প্যাকেটে হাত দিয়েও রকিবুল সরিয়ে আনল। সেটা বোধহয় লক্ষ করল মিথিলা। কিছু বলল না।
বড় জানালাটা খোলা। ওপাশে ঘন অন্ধকার। দিনের বেলা রকিবুল দেখেছে ওটা একটা বড় বাগান। বড়-বড় গাছ আছে। আম, লিচু, কিছু শাল-তমাল, আরো কী-কী যেন।
মিথিলা সোফা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে ধীরে-ধীরে গেল জানালাটার কাছে। খানিকটা বাইরের দিকে ঝুঁকে দাঁড়িয়ে থাকে ও।
কয়েক মিনিট পর, ‘আমার অন্ধকার ভালো লাগে। মনে হয় সারাক্ষণ অন্ধকারে ডুবে থাকি। অন্ধকারে আমার শামিত্ম।’ যেন কথাগুলো নিজেকেই বলল মিথিলা।
‘কী বলছেন?’ রকিবুল বলল।
মিথিলা পেছন ফিরে তাকাল, ‘না কিছু না। অন্ধকারের কথা বলছিলাম। শ্যামনগরে বাতি থাকলেও অন্ধকার আছে। এখনো অন্ধকার।’
‘হ্যাঁ, সেটা সমস্যার কথা। ছোট শহর হলেও তো বাতি ছাড়া চলে না। 888sport appয় গরমের দিন ঘনঘন কারেন্ট যায়। মানুষের দুর্দশার অমত্ম থাকে না।’
কথাগুলো মিথিলা শুনল কিনা বোঝা যায় না। ও আবার বাইরে মুখ রেখেছে। কিছু বলছে না। রকিবুলের মনে হলো, মিথিলা সম্পর্কে ও আসলে কিছুই জানে না। প্রথমদিন বলেছিল রাজশাহী ইউনিভার্সিটিতে পড়েছে। পরে ওর কথায় মনে হলো কোনো কলেজে বাংলা পড়ায়। এলাকার কোনো কলেজ হবে। কিন্তু বাসা কোথায়? শ্যামনগরে হতে পারে, শহরের বাইরেও হতে পারে, রকিবুল কিছুই জানে না।
রকিবুল ছোট করে কেশে গলা পরিষ্কার করল। তারপর কয়েক মুহূর্ত থেমে বলল, ‘যদি কিছু মনে না করেন, আপনার বাসাটা এগজ্যাক্টলি কোন জায়গায়? শহরের মধ্যেই নিশ্চয়।’
মিথিলা আবার মুখ ঘুরিয়ে তাকাল। মোমবাতিটা অনেকখানি নেমে এসেছে। তবে একটা লালচে-হলুদ আলো ঘরের ওপাশটায় ছড়িয়ে আছে। জানালার দিকে আলো কম। মিথিলার মুখ পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে না। ঘাড়টা একদিকে সামান্য কাত করে দাঁড়িয়ে আছে ও।
‘আমার জন্য আপনার চিমত্মা হচ্ছে?’ মিথিলা একই ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে থেকে বলল।
‘আসলে এমনও হতে পারে, কারেন্ট আসতে দেরি হলো। অনেকক্ষণ হয়ে গেল তো। জেনারেটরের লোকটার এতক্ষণে এসে যাওয়া উচিত।’ রকিবুল বলল।
‘শ্যামনগরে এটা স্বাভাবিক। এমনও হয়, সারা রাত বিদ্যুৎ এলোই না।’
‘চিমত্মার কথা।’
‘আমার জন্য ভাববেন না। আমি আপনার কথা ভাবছি। বুঝতে পারছি জরম্নরি কাজ নিয়ে বসেছিলেন।’ মিথিলা বলল।
‘বাদ দিন। খুব ইমপরট্যান্ট কিছু না। সকালে করলেই চলবে।’ রকিবুল কথা শেষ করে কলিংবেল টিপল। ওহহো, কারেন্ট তো নেই। ও মোবাইলে রিসিপশন ডেস্ক ধরল। বাংলোর একজন স্টাফ কাঁচুমাচু গলায় বলল, জেনারেটর অপারেটরের বাসায় একটা দুর্ঘটনা হয়েছে। ওর আসতে আরেকটু দেরি হবে। রকিবুল দুকাপ চায়ের কথা বলে ফোন কেটে দিলো।
‘আমি চা খাই না।’ এক কাপ বললেই পারতেন।
‘এদের স্ন্যাক্সের মেন্যুতে দেখলাম মিল্কশেকের কথা আছে। এই গরমে ঠান্ডা ভালো লাগত।’
‘পিস্নজ, আমি কিছুই খাই না।’
‘মানে?’
মিথিলা সামান্য শব্দ করে হাসল। তারপর বলল, ‘আমি কিছু নিয়ম মেনে চলি। বাইরে কিছু খাই না।’
‘অ।’ রকিবুল কথা বাড়াল না।
রম্নম সার্ভিসের ছেলেটা এসে দুকাপ চা রেখে গেল। দুটো মোমবাতিও রেখে গেল।
‘লক্ষণ তো ভালো না। এত সুন্দর ডাকবাংলো। তার এমন অব্যবস্থা?’ রকিবুল বিড়বিড় করে বলল। তারপর চায়ের কাপ তুলে চুমুক দেয়। এমন সময় বাইরে বড়-বড় ফোঁটায় বৃষ্টি নামল। সঙ্গে বাতাসও আছে। শীতল হাওয়ার দমক খোলা জানালা দিয়ে ঘরে ঢোকে।
‘বাহ, বৃষ্টি। এরকম বিনা নোটিশে? ভালোই হলো। সারাদিন খুব গরম গেছে।’ রকিবুল বলল। তারপর মিথিলার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘আপনার সমস্যা হয়ে গেল। বাসায় যাবেন কীভাবে?’
মিথিলা বৃষ্টির শব্দ শুনেই চলে গেছে জানালার কাছে। রকিবুল বুঝতে পারল খোলা জানালা দিয়ে বাতাসের সঙ্গে-সঙ্গে বৃষ্টির ছাঁট আসছে ভেতরে। মিথিলার চুল উড়ছে। ও দুহাত দিয়ে মুখে-পড়া বৃষ্টির ছাঁট মুছছে।
রকিবুলের ইচ্ছে হলো ওঠে গিয়ে মিথিলার পাশে দাঁড়ায়। সঙ্গে-সঙ্গে ভাবল ওটা খারাপ দেখাবে। কিন্তু একই সঙ্গে ওর মনে হলো তরম্নণীর আচরণ পুরোপুরি স্বাভাবিক নয়। মাত্র একদিনের পরিচয়ে এ-বয়সের কোনো 888sport promo code অচেনা পুরম্নষের ঘরে এভাবে আসে না। একটা রহস্যের আবহ আছে ওকে ঘিরে। প্রথমেই আসে সুগন্ধির ব্যাপারটা। তার ওপর, ও নিজের সম্পর্কে খুলে কিছু বলছে না।
‘আসুন না এদিকে। অন্ধকারে বৃষ্টির শব্দ বেশ লাগে। ঠান্ডা বাতাস।’ মিথিলা ঘাড় ঘুরিয়ে বলল।
‘থাক। গায়ে বৃষ্টি লাগলেই আমার ঠান্ডা লাগে। আপনি ভেতরে চলে আসুন। বেশিক্ষণ ওখানে থাকলে আপনারও ঠান্ডা লাগবে।’
মিথিলা বলল, ‘আমার ঠান্ডা লাগে না। আমার কোনো অসুখ নাই। আমি এসবের বাইরে।’
‘মানে?’ রকিবুল চমকে ওঠে বলল।
‘না, কিছু না।’ ফান করছিলাম।
রকিবুল একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকে তরম্নণীর দিকে। কী বলবে বুঝতে পারছে না।
‘জানেন, একটা ব্যাপার হয়েছে গতকাল। সকাল দশটা-এগারোটার দিকে। বাংলোর রম্নমে ঢুকে আমি একটু শুয়েছি। কাপড় ছাড়িনি। 888sport app থেকে নাইটকোচের জার্নি। বিধ্বসত্ম হয়ে ছিলাম। ঘুম পাচ্ছিল খুব। হঠাৎ দরজায় নকের শব্দ। ঘুমের মধ্যে প্রথমবার ভালো শুনিনি। পরে পরিষ্কার শুনলাম। আমি গিয়ে দরজা খুলি।’ রকিবুল থামল। মিথিলার মুখ ওর দিকে ফেরানো।
‘তারপর?’ কয়েক মুহূর্ত পর মিথিলা বলল।
‘দরজা খুলে দেখি কেউ নেই। তাজ্জব ব্যাপার! নেই তো নেই। আশপাশের রম্নমগুলো বন্ধ। একটাতে আবার তালা। লম্বা করিডর ফাঁকা।’
‘ভয় পেলেন?’
‘না, ভয়ের কী আছে? তবে একটা ধন্দে পড়েছিলাম। ভাবছিলাম নকের শব্দটা ভুল শুনেছি কিনা। কিন্তু দরজার পাশটা ভুরভুর করছিল একটা পারফিউমের গন্ধে। মেয়েদের সেন্ট। তার মানে কোনো মহিলা এসেছিল।’ রকিবুল বলল।
‘তাহলে গেল কোথায়। বাতাসে মিলিয়ে গেল?’ মিথিলা হাত বাড়িয়ে বৃষ্টিতে ভেজানোর চেষ্টা করছে।
‘তাই তো মনে হচ্ছে। মিস্ট্রিয়াস ব্যাপার হচ্ছে, ওই পারফিউমটার ঘ্রাণ আপনার গা থেকেও আসে। আমি নদীর ধারেই বুঝেছিলাম।’
‘বলেননি কেন?’
‘বলিনি, আমি তো পুরোপুরি শিওর না। অবিশ্বাস্য ব্যাপার না!’ রকিবুল গলাটা পরিষ্কার করে ধীরে-ধীরে বলল।
‘অবিশ্বাস্য কেন হবে? ওই পারফিউমটা আমি মাখতে পারি না?’
‘কিন্তু এটা তো অনেক পুরনো দিনের পারফিউম। ‘ইন্টিমেট’ নাম। আমার খালা মাখতেন। অনেকদিন আগে উনি মারা গেছেন। উনি বলতেন গন্ধটা তাঁর খুব প্রিয়। উনি প্রথম ইউজ করেন কত সাল হবে, বাহাত্তর কি তিয়াত্তর? বৃদ্ধ বয়সেও মাখতেন।’ রকিবুল মেজো খালার মুখটা ভাবল। দারম্নণ স্মার্ট মহিলা ছিলেন ইয়াং বয়সে। 888sport appর কালচারাল ওয়ার্ল্ডে খুব পপুলার ছিলেন। অভিনয় করতেন, গান গাইতেন। আবার সাইকেলও চালাতেন।
বেশ কিছুক্ষণ ধরে মিথিলা চুপ। হঠাৎ খেয়াল হলো রকিবুলের।
‘সরি, আমিই বকবক করে যাচ্ছি।’ ও বলল।
‘বলুন, আমার শুনতে ভালো লাগছে।’
‘কী বলব আমি।’
‘আমি বোধহয় আপনাকে হার্ট করেছি। আপনার দরজায় আমিই নক করেছিলাম। আমি এদিকেই থাকি।’ কণ্ঠ হঠাৎ ভারি হয়ে এলো মিথিলার।
‘নক করলেন, তারপর?’ ঘোরের মধ্যে উঠে দাঁড়িয়ে গেল রকিবুল। ‘তার মানে পারফিউমটা ওইদিন আপনি মেখেছিলেন?’ ও বলল।
‘ওটা আমার গায়ে মাখাই থাকে। ঊনসত্তর-সত্তর থেকে মাখি।
অভ্যাস হয়ে গিয়েছিল। না মাখলে মাথা ধরত।’
সব গুলিয়ে যেতে শুরম্ন করেছে রকিবুলের। এমন একজন টগবগে তরম্নণী, মানে মিথিলা – কীসব বলছে? ওর বয়স কত? মাথায় ছিট আছে বোধহয়। রকিবুল একটানা তাকিয়ে থাকে মিথিলার দিকে।
‘ভাবছেন আমার বয়স কত? বেঁচে থাকলে আমার বয়স সত্তরের কাছে হতো।’
একটা অস্ফুট শব্দ বেরিয়ে এলো রকিবুলের মুখ থেকে। সেটা ভয়, না প্রচ- বিস্ময়ের ও বুঝতে পারছে না। বুকের ভেতরটা খুব ধুকপুক করছে। ভূতটুতে ওর বিশ্বাস নেই। মানেও না। এ কী তাহলে?
মিথিলা ধীরপায়ে এগিয়ে এলো সোফাটার কাছে। না বসে সাবেকি আমলের বিশাল সোফার গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকে। ভয়-ভয় লাগে রকিবুলের।
‘রকিবুল, আমি বেঁচে নেই। আমি ১৯৭১ থেকে শ্যামনগরের বাতাসে আছি। আমার লাশ পড়ে ছিল নদীর ধারে। অর্ধেক পানিতে, অর্ধেক ডাঙায়। পিসত্মলের গুলি খাওয়া লাশ। আগস্টের শুরম্নর দিকে। পুরো শ্যামনগর এলাকায় আর্মি, রাজাকার। আমার লাশ পড়ে ছিল দিনের পর দিন। শহর ফাঁকা, গ্রামের পর গ্রাম ফাঁকা। কেউ আসেনি। একসময় ওখানেই আমি মিশে গেছি মাটিতে, নদীর পানিতে, বাতাসে।’
মিথিলার কথা শুনতে-শুনতে কয়েকবার ঢোক গিলল রকিবুল। ওর জিভ পুরো আড়ষ্ট। কথা বলতে পারছে না। কিঞ্চিৎ বিস্ফারিত চোখে তাকিয়ে আছে মিথিলার দিকে।
‘রকিবুল, বিশ্বাস হচ্ছে না? মিথিলা ওর বটুয়ায় হাত ঢুকিয়ে একটা লাল-সবুজ রঙের দুভাঁজ করা ছোট ফোল্ডার বের করে রকিবুলের দিকে এগিয়ে দিলো। রকিবুল নিশিগ্রসত্ম মানুষের মতো হাতে নিল ওটা। মোমবাতির কাছে নিয়ে দেখল একটা আইডেন্টিটি কার্ড। বহুকাল আগে এরকম কার্ডের চল ছিল। এখন নেই। দুভাঁজ করা কার্ডের একপাশে মিথিলার সাদা-কালো ছবি। অন্যপাশে টাইপ করা ওর পুরো নাম মিথিলা সুরাইয়া শবনম। লেখা অস্পষ্ট হয়ে আসছে। অনেক কষ্টে পড়তে পারে রকিবুল। পরিচয়ের জায়গায় লেখা মুক্তিযোদ্ধা, সম্পাদক সূর্যকন্যা। মুখ হাঁ হয়ে গেছে রকিবুলের। ও একবার কার্ডের দিকে, একবার মিথিলার দিকে তাকায়।
‘তুমি নিশ্চয় অতৃপ্ত আত্মা, ভূত এসব মানো না। তার ওপর আমাকে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছো। ধন্দ লাগছে না?’ মিথিলা বলল।
রকিবুল কী বলবে, ও বোবা হয়ে গেছে। ওর সামনে সত্তরছোঁয়া এক 888sport promo code। কিন্তু ও দেখছে একজন তরম্নণীকে।
‘আপনার আত্মা কেন অতৃপ্ত?’ যন্ত্রের মতো বলল রকিবুল।
‘আমাদের কোনো স্বীকৃতি নেই। 888sport promo code মুক্তিবাহিনীর পুরো স্বীকৃতি আজও মেলেনি। তুমি পুরম্নষ, তুমি বুঝবে না। ভেবে দেখো, কী রকম দেশপ্রেম থাকলে একজন 888sport promo code তার সংসার, মানসম্ভ্রমের কথা ভুলে যুদ্ধে নামতে পারে। তাও নিজের দেশের ভেতর। চারদিকে শত্রম্ন। হিংস্র, ক্ষুধার্ত শত্রম্ন। আমরা যারা ধরা পড়েছিলাম শত্রম্নর হাতে, জানো কী নরক নেমে এসেছিল আমাদের ওপর? গ্রামের দুজন অশিক্ষেত মহিলা মুক্তিবাহিনীর একটা গোপন ক্যাম্পে খাবার সাপস্নাই দিত। ওদের ট্রেনিং ছিল। সঙ্গে পিসত্মল রাখত। কিন্তু একসময় ওরা ধরা পড়ল। পাকিস্তানি বাহিনীর আস্তানায় রাখল দিনের পর দিন। ওদের কী রকম অত্যাচার করেছে নিশ্চয় বুঝতে পারছ। তারপর নদীর পাড়ে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে গিয়ে ব্রাশফায়ার করে ওদের মারে। লাশ ভাসিয়ে দেয় পানিতে। আহা, জমিলা মেয়েটা ছিল কালো কুচকুচে। হাসলে সাদা দাঁত ঝকঝক করত। আর টুনি ছিল গোলগাল, খুব হাসিখুশি ছিল। শেষদিকে ও হাসত না। কোমল মুখটা কঠিন হয়ে গিয়েছিল। আমার নাম শ্যামনগর মুক্তিযুদ্ধ সৌধে খোদাই করা আছে।’
‘আমি জানি।’ রকিবুল বলল।
‘জমিলা, টুনির নামও আছে। ওতেই সব শেষ? যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর আমাদের বাবা-মা সমাজে মুখ দেখাতে পারত না। জমিলার স্বামী মানুষের অপমান সহ্য করতে না পেরে তিন বছরের সমত্মানকে পানিতে ডুবিয়ে মারে। তারপর চলমত্ম ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দেয়। আমার বাবা পাগল হয়ে যান। পাগলাগারদে মারা যান। আম্মা কুড়ি বছর কথা বলেননি। আমার আদরের ছোটভাইটা আন্ডারগ্রাউন্ড পার্টিতে যোগ দেয়। মারাও যায়।’
রকিবুল কয়েকবার কেশে গলা পরিষ্কার করল। ওর এখন কোনো আড়ষ্টতা বা ভয় নেই। ও বলল, ‘দেখুন, তখন সমাজ বা সরকার – কে-ই বা আপনাদের তেমন কী করতে পারত? নতুন দেশ। কত সমস্যা।’
‘আর দেশের জন্য লাখো 888sport promo code প্রাণ দিয়েছে, ইজ্জত দিয়েছে। এটাও তো বড় বিষয়। নয় কি? আমারও তো স্বাধীন দেশের স্বপ্ন ছিল। জীবন বাজি রেখে সূর্যকন্যা বের করেছিলাম। কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না। পাকিস্তানি বাহিনীর এক অফিসার আমাকে গুলি করে মেরেছিল নদীর ধারে। সাতদিন, দশদিন ধরে আমার লাশ ওখানে পচেছে। তারপর আমি মিশে গেছি কাদামাটিতে। আমার দেশের মাটি। তুমি জিওলজিস্ট। তুমি হয়তো বলতে পারবে মানুষের মাংস মাটিতে পচে গেলে, মিশে গেলে নতুন মাটির সৃষ্টি হয় কিনা। কত লাশ মিশে গেছে 888sport appsের মাটিতে। তারপর থেকে এ-মাটি নতুন। এটা স্বাধীনতার মাটি।’
‘কিন্তু মিথিলা, আপনাদের স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। বীরের স্বীকৃতি।’ ‘কিন্তু আমি চাই এই বীর888sport promo codeদের জন্য সম্পূর্ণ ভিন্ন এক 888sport sign up bonusসৌধ। ওতে কার নাম আছে, কার নাম বাদ পড়ল – সেটা বড় বিষয় নয়। 888sport sign up bonusসত্মম্ভটা হলো কিনা সেটাই বড় কথা। রকিবুল, কবে হবে সেই 888sport sign up bonusসত্মম্ভ? তুমি পুরম্নষ মানুষ। তুমি বুঝবে না, যুদ্ধে পুরম্নষের শহিদ হওয়া আর একজন 888sport promo codeর শহিদ হওয়া এক বিষয় নয়। 888sport promo codeরা তাদের পুরো সত্তা বিসর্জন দিয়েছিল রণাঙ্গনে, পুরম্নষ দিয়েছিল শুধু তার সাহস। তুমি বুঝবে না 888sport promo codeর দেশপ্রেম কী তীব্র। এটা বানের মতো। সব ভাসিয়ে নিয়ে যায়। কিন্তু আমরা শেষ পর্যমত্ম হার মেনেছি।’
হঠাৎ চুপ হয়ে গেল মিথিলা, তারপর উঠে দাঁড়াল। ‘হার মেনেছি? আমি হার মেনেছি? সূর্যকন্যার সম্পাদক মিথিলা শবনম হার মেনেছে? আমার ছাত্রীটার লাশ পাওয়া যায়নি। কোথায় আছে ও? ও কি কবর পেয়েছে? নাকি আমার মতোই মাটিতে মিশে গেছে। হাওয়ায় ভাসছে কোথাও? ও আছে 888sport appsেরই বাতাসে। মিশে আছে চুয়ালিস্নশ বছর ধরে। আমি ওকে চাই। ওকে নিয়ে আবার বের করব সূর্যকন্যা। হাঃ, এসব প্রলাপ।’ লম্বা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল মিথিলা। তারপর ধীরে-ধীরে চলে গেল জানালাটার কাছে। বৃষ্টি পড়েই চলেছে। ঘরে মোমবাতি নিবুনিবু।
‘কী করছেন মিথিলা? এদিকে আসুন। স্থির হয়ে বসুন। আমি আপনাকে যেখানে বলবেন, পৌঁছে দিয়ে আসব। বাতিটা আসুক।’ রকিবুল এগিয়ে যেতে চাইলে মিথিলা হাতের ইঙ্গিত করে থামিয়ে দেয়।
‘রকিবুল, আমি এখন অন্ধকারের মানুষ। আমরা যুদ্ধের 888sport promo codeরা সবাই অন্ধকারের অধিবাসী। কোথায় আলো? বাইরে এই যে অন্ধকার, এটাই আমাদের স্বদেশ। আমি যাই।’
মাত্র এক লহমার ব্যবধান। মিথিলা মিশে যাচ্ছে জানালার বাইরে আবছায়া অন্ধকারে।
‘চলি রকিবুল। আবার কোনোদিন হয়তো দেখা হবে। না-ও হতে পারে।’ অন্ধকারে হারিয়ে গেল মিথিলা সুরাইয়া শবনম।
তীব্র আলোর ঝলকে ঘুম ভেঙে গেল রকিবুলের। ঘোর-ঘোর লাগছে। জানালা দিয়ে মিথিলা অন্ধকারে মিলিয়ে গেল? বাতি ফিরে এসেছে। টেবিলে মাথা রেখে রকিবুল ঘুমাচ্ছিল।
সারাদিন ঘোরাঘুরির পরিশ্রম এবং ভ্যাপসা গরমে ও ঘুমিয়ে পড়েছিল। চোখ খুলতে কষ্ট হচ্ছে। তীব্র আলোয় চোখ ধাঁধিয়ে যাচ্ছে। অদ্ভুত স্বপ্ন। কিন্তু স্বপ্নই বা হয় কীভাবে। সমসত্ম ঘরে মিথিলার গায়ে-মাখা সুরভিটা ম-ম করছে।


Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.