অনির্বাণ রায়
বিশ্বকবি গ্যোয়েটের মহাকাব্য
প্রাচী-প্রতীচীর মিলনবেলার পুঁথি
মূল জার্মান থেকে ভাষ্যসহ ভাষান্তর
অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত
যুক্ত
888sport app, ২০১২
৩৫০ টাকা
রায়হান স্কোল্ফগাঙ ফন গ্যোয়েটের জন্ম ২৮ আগস্ট ১৭৪৯, ফ্রাঙ্কফুর্ট। তাঁর বাবা য়োহান কাসপার (১৭১০-৮২) ছিলেন আইনজীবী। গ্যোয়েটের মা কাথারিনা এলিজাবেথ চেক্সটরের (১৭৩১-১৮০৮) বাবা ছিলেন ফ্রাঙ্কফুর্টের মেয়র। দাদামশায়ের কাছে বালক গ্যোয়েটে শিখেছিলেন স্বপ্নের তত্ত্ব আর প্রকৃতি-রহস্য।
প্রথমদিকে বাবার কাছেই প্রাথমিক পাঠ নিয়েছিলেন গ্যোয়েটে। গ্রিক-ল্যাটিন-ইংরেজি-ফরাসি-ইতালিয়ান ভাষায় পাঠ নিতেন গ্যোয়েটে আর তাঁর বোন কর্নেলিয়া (১৭৫০-৭৭)। পরবর্তী জীবনে গ্যোয়েটে নিজের চেষ্টায় রপ্ত করেছিলেন সংস্কৃত ও পারসিক। পারিবারিক গ্রন্থসংগ্রহ থেকে আহরণ করতেন 888sport slot game-কাহিনির আনন্দরস। বাড়িতে থাকতেন একজন ফরাসি সেনানায়ক। তাঁর কাছ থেকে গ্যোয়েটে শিখে নিয়েছিলেন ফরাসি চিত্রকলা বিষয়ে নানা তথ্য। ষোলো বছর বয়সে প্রধানত বাবার ইচ্ছাতেই, গ্যোয়েটে আইন পড়তে গেলেন লাইপৎসিগ বিশ্ববিদ্যালয়ে। একদা এখানেই আইনবিদ্যার পাঠ নিয়েছিলেন য়োহান কাসপার। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচিতে ‘বিভিন্ন যুগের ছবি ও সংগীতের বিষয়ে চূড়ান্ত জেনে নেওয়ার নির্দেশ ছিল’। গ্যোয়েটে সেসব জেনে নিলেন অল্পসময়ের ভেতর। মুশকিল হলো, আইনবিদ্যা তাঁকে একেবারেই আকর্ষণ করতো না। ফলে তিনি নিয়মিত কলেজ ফাঁকি দিতে লাগলেন। ঠিক করলেন জীবনের পড়–য়া হবেন। আর এই সময়টাতে তিনি নিবিড়ভাবে আঁকড়ে ধরলেন চিঠি লেখাকে। তাঁর সেইসব চিঠির ভেতর ধরা আছে ‘বাঁচবার পথের’ নিশানা। আইনবিদ্যায় মন বসছে না। গ্যোয়েটে খুঁজে পেতে বার করলেন 888sport live chatশিক্ষকদের। তাঁদের কাছে শিখতে লাগলেন মিনা করা, এচিং। গ্রিক 888sport live chatের রীতিনীতি।
তিন বছর পর, গ্যোয়েটের তখন উনিশ বছর, ফিরে গেলেন বাবার কাছে। আইনবিদ্যায় অকৃতকার্য পুত্রের ওপর ভীষণ চটে গেলেন কাসপার। জানতে পারলেন মেয়েবন্ধু কাথারিনাকে নিয়ে 888sport app download apk লিখেছে ছেলে। ‘সমান দোষী’ নামে একটা বেআইনি নাটকের খসড়া লিখেছে। ফল যা হয়। পিতার কাছে পুত্রকে খেতে হলো প্রবল বকুনি। তার জেরে ‘বাবা আর ছেলের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির একটা পাঁচিল উঠে গেল’।
এই অবস্থায় গ্যোয়েটে এবার চললেন স্ট্রাসবুর্গে। আইনের পাঠ শেষ করতেই হবে। এখানেই যেন নিজেকে খুঁজে পেলেন গ্যোয়েটে। স্ট্রাসবুর্গের অপরূপ ক্যাথিড্রালকে দেখলেন দুচোখ ভরে। মনে হলো, ‘এই তো আমাদের স্থাপত্য। আর সত্যি বলতে, যথার্থ এই 888sport live chatই একমাত্র সত্য।’ স্ট্রাসবুর্গের যে-বাড়িটায় গ্যোয়েটে থাকতেন সেই বাড়িতেই থাকতেন য়োহান গটফ্রিড হের্ডের (১৭৪৪-১৮০৩)। তাঁর সঙ্গে আলাপ-পরিচয় গ্যোয়েটের জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিলো। হের্ডেরের সৌজন্যে গ্যোয়েটে পরিচিত হলেন শেক্সপিয়র, হোমার, রুশোর রচনার সঙ্গে। ওল্ড টেস্টামেন্টের 888sport app download apkর সঙ্গে পরিচিত হয়ে পরবর্তীকালে অংশবিশেষ জার্মানে 888sport app download apk latest version করেছিলেন। চোখের অসুখ হের্ডেরকে শয্যাশায়ী করে রাখতো। গ্যোয়েটে তাই তাঁর পাশে বসে কথাবার্তা চালিয়ে যেতেন আর সেগুলো খাতায় লিখে রাখতেন। ‘হের্ডেরের কাছে অনেককালের পুরোনো, মানুষের 888sport sign up bonusতে মুছে-যাওয়া, লোকগীতি সংগ্রহ করে নিয়ে গ্যোয়েটে 888sport app download apk লিখতেন। সেসব 888sport app download apk, সুরে গাঁথা হওয়ার পর, জার্মানিতে এতই জনপ্রিয় হয়ে আছে যে কবির স্বরচিত সেসব 888sport app download apkকে লোকগীতির মর্যাদা দেওয়া হয়েছে।’
পঁচিশ বছর বয়সে প্রকাশিত হয় গ্যোয়েটের দুখণ্ডের 888sport alternative link তরুণ হেবর্তের দুঃখ (১৭৭৪)। 888sport alternative linkটি তাঁকে এনে দিলো জগৎজোড়া খ্যাতি। শোনা যায় নেপোলিয়ন 888sport alternative linkটি পড়েছিলেন সাত-সাতবার। এ-888sport alternative link তাঁকে নিয়ে গেল হ্বাইমারের রাজসভায়। কার্ল আউগুস্ট গ্যোয়েটেকে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বভার অর্পণ করলেন রাজসভার। আউগুস্টের রাজসভায় তখন ছিলেন গদ্যপদ্যর সব্যসাচী পণ্ডিত ক্রিস্তফ মার্টিন হ্বীলান্ড (১৭৩৩-১৮১৩)। গ্যোয়েটের সঙ্গে হ্বীলান্ডের বন্ধুতা গড়ে উঠতে সময় লাগল না। এই সময় আরো কয়েকজনের সঙ্গে গ্যোয়েটের বন্ধুতা হলো। এঁরা হলেন য়োহান ক্রিস্তফ শিলার (১৭৫৯-১৮০৫), ফ্রিডরিশ ফন শ্লোগেল (১৭৭২-১৮২৯)।
কার্ল আউগুস্টের রাজসভায় 888sport live footballবিষয়ক আলোচনা ছাড়াও হ্বাইমারের অনেকরকম কাজ সামলাতে হতো গ্যোয়েটেকে। রাজ্যের খনি, রাস্তাঘাট, জলপথ, রাজকর্মচারী নিয়োগ, অর্থবিভাগের কাজের সঙ্গে তাঁর ওপর বর্তেছিল য়েনা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাশনও। রুটিনবাঁধা কাজ। মাঝে মাঝে একঘেয়ে লাগত। একবার ঠিক করলেন কাজ ছেড়ে পালিয়ে যাবেন। গেলেনও। দুবছরের জন্য চলে গেলেন ইতালিতে (১৭৮৬)। রইলেন বন্ধু888sport live chatী য়োহান হ্বিলহেলম্ টিশ্বাইনের (১৭৫১-১৮২৯) সঙ্গে একই ছাদের নিচে। দ্বিতীয়বার ইতালি যান তিনি (১৭৯০)। দুবারের অভিজ্ঞতা ধরা আছে ইতালি সফর (১৮১৬-১৭) নামের বইতে। রোম থেকে ফিরে সংসার পাতেন গ্যোয়েটে। সহধর্মিণী ক্রিস্টিয়ানে গ্যোয়েটে অবশ্য তাঁর অনেক আগেই (১৮০৬) বিদায় নেন ধরণি থেকে। গ্যোয়েটের গুণমুগ্ধ কার্ল আউগুস্ট (১৭৫৭-১৮২৮) এবং তাঁর পুত্র য়ুলিউস আউগুস্টও (১৭৮৯-১৮৩০) একে একে বিদায় নেন গ্যোয়েটের কাছ থেকে। শেষদিকে কেমন যেন একা হয়ে গেলেন গ্যোয়েটে। সেই সময়ে শিশুরা আসত তাঁর কাছে গল্প শোনার আবদার নিয়ে। কারো কারো কাছে তিনি আবার গল্প শুনতে চাইতেন। একজন প্রত্যক্ষদর্শীর 888sport sign up bonusশ্র“তি সাক্ষ্য :
আমার ছেলেটিকে গ্যোয়েটে খুব স্নেহ করতেন। ওঁর মনে হতো ও তার বড়ো-বড়ো চোখ দুটো দিয়ে বন্ধুর মতো চাহনিতে তাকিয়ে আছে, আর ওঁর সমস্ত প্রশ্নের চটপট জবাব দিতে পারে। গ্যোয়েটে প্রায়ই ওকে গল্প শোনাতে বলতেন। একবার ওকে বললেন : ‘বেড়াল নিয়ে আমায় একটা গল্প বলতে পারিস?’ ও তক্ষুনি ধা করে বলল : ‘কীরকম বেড়াল, সাদা না কালো?’ ‘সাদা একটা বেড়ালের কথাই বল্ না হয়।’ ও তখনই একটা গল্প ফাঁদতে শুরু করল : ‘একটা বেড়াল দিঘি পেরিয়ে একটি দ্বীপে গিয়ে চড়াও হয়েছে, ইঁদুর ধরবে বলে। সাঁতরে যেই এপারে ফিরে এসেছে, এক শিকারি ওকে গুলি মেরে খতম করে দিলো।’ গ্যোয়েটে আমায় বললেন : ‘দেখলেন তো। ওর উদ্ভাবনী শক্তির দৌড় বেশির ভাগ লেখকের মতোই। গল্পের খেই খুইয়ে বসলেই তারা তাদের নায়ককে মেরে ফেলে।’
ফাউস্ট নামে দুখণ্ডের (১৮০৮, ১৮৩২) মহাকাব্য ছাড়া গ্যোয়েটে লিখেছিলেন গাছপালার আলো বদলের তত্ত্বটা বোঝানোর চেষ্টা (১৭৯০), দৃষ্টিবিদ্যা বিষয়ে কিছু কথা (১৭৯১), রঙের তত্ত্ব (১৮১০)। বইগুলোর সাহায্য এখনো কেউ কেউ নিয়ে থাকেন। তাঁর আত্মজীবনী Dichtung und wahrheit (১৮১০-৩১ পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে) প্রকাশিত হলে উপলব্ধি হয় তাঁর কাছে সত্য ছিল 888sport app download apkর চেয়েও বড়ো।
দুই
হ্বাইমারের রাজসভার থিয়েটারঘরের প্রযোজক-পরিচালকরূপে সাতাশ বছর কাজ করতে গিয়ে গ্যোয়েটেকে 888sport app দেশের নাটকের খোঁজও রাখতে হচ্ছিল। ভূপর্যটক গেয়র্গ ফস্টারের (১৭৯৪) 888sport app download apk latest version সৌজন্যে এবং বন্ধু হের্ডেরের সহায়তায় গ্যোয়েটে পড়ে ফেললেন কালিদাসের শকুন্তলা। তারপর একে একে পড়লেন মেঘদূত, নলদময়ন্তীর উপাখ্যান, দক্ষিণ ভারতে প্রচলিত পরশুরামের বৃত্তান্ত। অধ্যাপক লুডহ্বিগ থেয়োবুল কোসেগার্টেনের (১৭৫৮-১৮১৮) কাছে শিখলেন দেবনাগরী লিপি। অধ্যাপক ফ্রিডরিশ শ্লোগেলের প্রভাবে শিখতে শুরু করলেন ভারতীয় ভাষা। অস্ট্রিয়ান প্রাচ্যবিদ য়োসেফ ফন হামার-পুর্গস্টালের (১৭৭৪-১৮৫৬) 888sport app download apk latest versionে পড়লেন পারস্যের মহাকবি হাফিজের (১৩২৫-৯০) কাব্যগ্রন্থ দিভান। পড়ে কেবল ক্ষুব্ধই হলেন না, পারসিক ভাষা শেখবার জন্য পাগল হয়ে উঠলেন। ‘মুম্বাইতে কে থাকেন, এ-বিষয়ে কিছু হদিশ দিতে পারেন, হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন অধ্যাপক ঐ লিপিতে তাঁর হাতেখড়ি ঘটিয়ে দিতে পারবেন,’ এই নিয়ে মেতে রইলেন গ্যোয়েটে। কলকাতায় টিপু সুলতানের গ্রন্থসংগ্রহ থেকে দিভান সংক্রান্ত 888sport free bet login তাঁর দরকার হয়ে পড়ল। এসবের পাশাপাশি গ্যোয়েটে মন দিয়ে পড়তে লাগলেন মোহম্মদের জীবনী, বিখ্যাত ইরানি কবিদের কাব্য, সাদির গুলিস্তান, শাহনামা ইত্যাদি। শুনতে গেলেন কবি ফেরদৌসি বিষয়ে সেরেনিসিমার ভাষণ। গ্যোয়েটের সমকালীন প্রাচ্যবিদ ডিয়েজ, লর্সবাক, সিলভেসটার দ্য স্যাসির সঙ্গে এই বিষয়ে কিছু মতবিনিময়ও হলো। এসবই পরবর্তীকালে প্রাচী-প্রতীচীর দিভান রচনার সময় তাঁর কাজে লেগেছিল। হাফিজের দিভান পাঠ করে বিশেষভাবে মুগ্ধ হয়েছিলেন গ্যোয়েটে। দিনলিপিতে (৭ জুন ১৮১৪) লিখেছেন তিনি :
ইতিপূর্বে, পত্রিকায় প্রকাশিত এই মূল্যবান 888sport app download apkর কিছু 888sport app download apk latest version পড়েছিলাম তবে ঠিকমতো অনুধাবন করতে পারিনি। এখন, তাঁর সমগ্র কাব্য পাঠ করে এমন মোহিত হয়ে গিয়েছি যে প্রত্যুত্তরে কিছু 888sport app download apk রচনায় ব্যাপৃত হই। আসলে না লিখে থাকতে পারছিলাম না। এই 888sport app download apkগুলো আমাকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে।
হাফিজের দিভানকে গ্যোয়েটে বলেছিলেন ‘গ্রন্থের গ্রন্থ’। হাফিজের উদ্দেশে গ্যোয়েটে একটি 888sport app download apkয় বলেছেন :
দুনিয়া ধ্বংস হয়ে যাক বা থাক
হাফিজ! একমাত্র তোমাকে আমার
প্রতিদ্বন্দ্বীরূপে চাই।
সুখ-দুঃখ, আমাদের দুজনের কাছে,
দুই সমান।
আমার গৌরব আর জীবন হোক এই যে
তোমার মতো আমিও
সুরাপ্রেমী আর সুরা পান করি।
গ্যোয়েটে তাঁর দিভান লেখা শুরু করেন ১৮১৪-য়, শেষ করেন ১৮১৯-এ। ‘একই সময়ে এবং ১৮২৭ পর্যন্ত তিনি দিভানের তত্ত্ব পাঠককে আয়ত্ত করানোর জন্য অনুপুঙ্খ গদ্যময় টিকাটিপ্পনি লিখেছেন’ কিন্তু তাতে করে কাব্যাস্বাদনে বিশেষ কিছু যোগ হয় না। পারসিক ‘দিওয়ান’ থেকে ‘দিভান’ শব্দটির জন্ম। মূল অর্থ ‘কোনো কবির লিরিক এবং স্তুতিপ্রশংসামূলক 888sport app download apkর সংকলন’। ‘গ্যোয়েটে তাঁর সত্তর বছরের জন্মদিনে, তাঁরই ভাষায়, একে ‘বন্ধুদের জন্য পুঁথি’ (Manuskript für Freunde) বলে নির্ণীত করে তাঁর কিছু প্রিয়জনের হাতে এ-বই যখন তুলে দিয়েছিলেন, তাঁর অভিলাষ ছিল জগৎ ও জীবনের জন্য সপ্রশংস এই লিরিকসংকলনের দৌলতে তাঁর বন্ধু888sport free bet বাড়িয়ে নেওয়া।’
অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত মূল জার্মান থেকে গ্যোয়েটের এই দিভান বাংলায় ভাষান্তর করেছেন। আর কী আশ্চর্য, এই 888sport app download apk latest versionের নেপথ্যে ক্রিয়াশীল সেই অনির্বচনীয় বন্ধুতা, যার সৌজন্যে ধূলিও হয়ে উঠতে পারে সোনা; বদলে যেতে পারে গোটা দুনিয়া। অলোকরঞ্জন দাশগুপ্তের লেখনীমুখে শুনে নিই এই ভাষান্তরের উদ্দীপক কাহিনি।
বছর পনেরো আগে এক শরৎসন্ধ্যায় হাইডেলবার্গে ইকবালের নামাঙ্কিত সৈকত ধরে হাঁটছি, এমন সময় এক তরুণ যুগলের সঙ্গে হঠাৎ আলাপ। মেয়েটির জন্মশহর লক্ষেèৗ, ছেলেটির ভিয়েনা। ওরা শুধু ইকবাল-সৈকত দেখতেই এসেছে। ওরা জানে, এই শহরে কবি কিছুদিন পড়াশোনা করেছেন এবং তার 888sport sign up bonusর মর্যাদা আজও এখানে তাই কেমন অপরিম্লান রয়ে গেছে। ওদের হাতে ইকবালের উর্দু 888sport app download apkর বই ‘পয়াম-ই-মশ্রিক’ (প্রাচ্যবাণী/ ১৯২৩), গ্যোয়েটের দেশকালজয়ী প্রাচী-প্রতীচীর দিভান (West-ostriches Divan/ 1819) ) কাব্যগ্রন্থের অনুরণিত সাড়া। অল্প বিনিময়েই ঘনিষ্ঠ পরিচয় ঘটে গেল। ওদের, বাড়িতে ডেকে এনে, গ্যোয়েটের বইটি থেকে মুখে-মুখে বেশ-কিছু গীতি888sport app download apk তরজমা করে শোনালাম। যাবার সময় ওরা অনুরোধ করে গেল : ‘এ বই আপনি বাংলা ভাষায় আমাদের মতো 888sport app আরো নবীন যুগলের জন্য 888sport app download apk latest version করুন।’
তারপর থেকে প্রায় প্রতিদিনই ভেবেছি তাদের সম্মানে দিভান 888sport app download apk latest versionে হাত দেব। ভেবেছি, ভারি দুলকি চালে তৈরি হয়ে উঠবে এই রূপান্তর। এক-একবার বিচ্ছিন্ন উদ্যমের ঝোঁকে এই কাজে নেমে পরক্ষণে পিছিয়ে গেছি। প্রেম ও সকল বেড়াভাঙা বিশ্বপ্রেমের চাহিদায় সম্পন্ন এই কবিকর্মের হাতছানি আমার কাছে হয়তো তখনো তেমন অনিবার্য বলে মনে হয়নি। তারপর একদিন শুনলাম পরিণয়ের মুখে এক দাঙ্গা মেটাতে গিয়ে ওরা প্রাণ দিয়েছে। তখনি মনে হলো, আর একতিল দেরি করলে চলবে না, এই কাজে নেমে পড়তে হবে।
হ্যাঁ। নেমে তিনি পড়লেন একদিন ভাষান্তরের কাজে। ‘কবির অভিপ্রেত হালকা চলনের মাধ্যমেই তাঁর উচ্চাকাক্সক্ষার’ মুখোমুখি হয়েছেন 888sport app download apk latest versionক কবি অলোকরঞ্জন। বলেছেন তিনি : ‘এই বই আমার পরিচিত সেই প্রেমিকযুগলের উত্তরসূরিদের জন্যই তাদের মিলনবেলার পুঁথি, শুভবিবাহের নিঃশর্ত উপহার।’ এক-একটি সৃষ্টিকর্মের নেপথ্যে রয়ে যায় কত না অশ্র“জল (ভাষান্তর কি সৃষ্টি নয়?)।
গ্যোয়েটের প্রাচী-প্রতীচীর মিলনবেলার পুঁথি বারোটি অধ্যায়ে বিভক্ত। এগুলো হলো : গায়েন পুঁথি, হাফিজনামা, ইশ্ক্নামা, অবলোকনের পুঁথি, অসন্তোষের পুঁথি, প্রবচনমঞ্জুষা, তৈমুরনামা, জুলেখার পুঁথি, সাকী-নামা, রূপকপুঁথি, পারসিক পুঁথি, বেহেশ্তের পুঁথি। এই বারোটি পুঁথিকে চারটি গুচ্ছে ভাগ করা যায়। প্রথম তিনটিতে উদ্দিষ্ট ব্যক্তি হাফিজ। পরের তিনটির বিষয় চিন্তন; সাত-আট-নয়ের বিষয় ব্যক্তি। আর শেষ তিনটির কেন্দ্রীয় বিষয় ধর্ম সমস্যা।
গ্যোয়েটের এই সৃষ্টিকর্মটি স্বল্পকালে সম্যক অনুধাবন দুরূহ। আমরা সে কারণে আমাদের পাঠকে ভালোলাগার আংশিক নিগড়ে আবদ্ধ রাখব।
প্রবচনমঞ্জুষা
পুঁথির ষষ্ঠ বিভাগ। দু-চার ছত্রের ‘মিতকথন’ ‘কোনো-না-কোনো প্রাচ্য প্রবচনের দ্বারা প্রাণিত। নির্দিষ্ট তারিখহীন কথনকণিকাগুলি ১৮১৫-র কোনো সময় লেখা হয়েছে।’
দু-একটি আস্বাদ করা যেতে পারে এই মিতকথনগুলি থেকে।
তোমরা যদি যীশুর গাধাটাকে
পাঠাতে চাও সটান মক্কায়
মানুষ করতে পারবে না তো তাকে,
সেই গর্দভ গাধাই থেকে যায়।
গাধা নামক এই নিরীহ প্রাণীটির সঙ্গে মানুষের কত কালের সহাবস্থান। মানুষকে হেয় করতে, অন্যের তুলনায় নিজেকে বড়ো করতে এই প্রাণীটির সাহায্য নিই। ভালো লাগছে গ্যোয়েটেরও দৃষ্টি এড়িয়ে যায়নি এই প্রাণীটি। এই চতুর্পঙ্ক্তির যোদ্ধা বাণী : প্রাণী তার স্বধর্ম ত্যাগ করে না যতই তার স্থান পরিবর্তন হোক না কেন। বাংলা প্রবাদ বলে ‘হাঁচি-টিকটিকির বাধা, যে মানে না সে গাধা’, ‘সময়গুণে আপ্ত পর, খোঁড়া গাধার ঘোড়ার দর’। রবীন্দ্রনাথের ‘কণিকা’ থেকে চারটি ছত্র প্রসঙ্গত উদ্ধার করা যায় –
তৃষিত গর্দভ গেল, সরোবর তীরে,
‘ছি ছি কালো জলা’ বলি চলি এল ফিরে।
কহে জল, জল কালো জানে সব গাধা,
যে জন অধিক জানে বলে জল সাদা।
সত্যকে ঠিকঠাক প্রকাশ করতে তাহলে গর্দভ গাধার ডাক পড়ে।
পৌরসভা জমজমাট বেশ!
ঈশ্বরের টেবিল ঘিরে বন্ধু এবং শত্র“সমাবেশ।
পুর বা নগরের দেখভাল করার জন্য পৌরসভার (এখনকার নামে পুরসভা) জন্ম। সেখানকার কর্তা ঈশ্বরের সমতুল্য কারণ ঈশ্বর সর্বশক্তিমান। ক্ষমতাকে ঘিরে থাকে বন্ধু এবং শত্র“র দল। স্বাভাবিক। সেই স্বাভাবিকতা অমর। গ্যোয়েটের ছত্রদুটির সূত্রে সেই সত্য মনে পড়ে গেল।
খুদে খুদে পাখি জলসায় ওই গলা সেধে নেয়,
বিতৃষ্ণা দিয়ে দূর করো প্রভু সেই অন্যায়।
এ ওকে শুধু ডিঙিয়ে যেতে চায়,
এটাই শুধু এই দুনিয়ার রীতি,
দস্যিপনা করে না কেন হায়
যার যেখানে বুদ্ধির পরিধি।
খুব ঠিক কথা। এ-দুনিয়ায় আমরা একে অপরকে ফেলে এগিয়ে যেতে চাই তাতে অন্যজন মরল কি বাঁচল তাতে বয়েই গেল। এখান থেকেই যত অশান্তির জন্ম। পৃথিবী যে আরো একটু সুন্দর শান্ত হতে পারল না, গ্যোয়েটের কথাগুলো সেই কথা মনে করিয়ে দেয়। ওই ‘ডিঙিয়ে’ যাওয়ার প্রসঙ্গটি আছে আরেকটি গ্যোয়েটে-প্রবচনে :
গণ্যমান্য হতে গেলে পায়াভারি
অশোভন হতে হবেই লোকসমাজে,
এই ক্রমঅগ্রসরমান 888sport apkের যুগে কথাটা কতখানি মর্মে মর্মে সত্য নিজেদের চারপাশে তাকালেই মালুম হবে। কবিরা যে কতদূর পর্যন্ত দেখতে পান। কবি ভারতচন্দ্র রায়ের মতো, গ্যোয়েটে তাঁর উজ্জ্বল সাক্ষ্য। প্রবচনমঞ্জুষার শুরুতে গ্যোয়েটে বলেছেন, ‘মন ভালো হবে সুন্দর প্রবচনে।’ সত্যি। এই প্রবচনগুলিতে অবগাহন করে মন ভারি ভালো হয়ে গেল।
হাফিজনামা
এখানে আছে দশটি 888sport app download apk। ‘ডাকনাম’, ‘ফরিয়াদ’, ‘ফতোয়া’, ‘জার্মান কবির ধন্যবাদ’, ‘ফতোয়া’, ‘সীমাশূন্য’, ‘নকলনবিশি’, ‘বিশদ রহস্য’, ‘চাহনি’, ‘হাফিজ সমীপে’। ‘ডাকনাম’ 888sport app download apkটি সংলাপধর্মী। কবি এবং হাফিজের মধ্যে কথা চলছে। কবি জানতে চান কেন লোকেরা তাঁকে হাফিজ নামে অলংকৃত করে। হাফিজ উত্তরে জানান, ‘পয়গম্বরের আবহমান/ মন্ত্রবীজ পালন করা যাদের ব্রত’ তারা তাঁর নাম দিয়েছে হাফিজ কেননা প্রতিদিনের মালিন্য তাঁকে ছুঁতে পারে না এবং কোরানীয় বিধান তিনি রেখেছেন অপরিবর্তনীয়। এই কারণে কবি তাই মগ্ন থাকেন হাফিজে। হাফিজের প্রতি কবির অনুরাগ এই 888sport app download apkর পরতে পরতে। ‘সীমাশূন্য’ 888sport app download apkয় দেখা যায় হাফিজের সঙ্গে কবি নিজেকে অভিন্ন মনে করছেন : ‘আমরা দুজন সত্যিকারের যমজ’। আর একটি 888sport app download apk, ‘বিশদ রহস্যে’ দেখা যায় হাফিজ সম্পর্কে তাঁর খোলা অভিমত : ‘ধর্মধ্বজ না হয়েও তুমি এক/ সিদ্ধ পুরুষ, বোঝার মানুষ নেই।’ নিজেকে জানা-বোঝা ভারি কঠিন। হাফিজের মতো মরমিয়া কবিকে বুঝে ওঠা কঠিনতর হবে এ আর নতুন কথা কী। তবে সত্য এই যে, এইসব 888sport app download apk থেকে উঠে আসে কী গভীরভাবেই না গ্যোয়েটে ডুব দিয়েছিলেন ‘সন্ত হাফিজে’।
অবলোকনের পুঁথি
এখানে শিরোনামযুক্ত দুটি 888sport app download apk ‘পঞ্চোপচার’, ‘আরো পঞ্চক’। শেষেরটিতে আছে আঠারোটি 888sport app download apk নামহীন। এগুলি পড়তে ভালো লাগে। সহজ সরল। তত্ত্বের হাতছানি নেই। জীবনের সারসত্য – অভিজ্ঞতা যার জন্মভূমি – 888sport app download apkয় রূপান্তরিত। এই যেমন : ‘কিসে কেটে যায় সময় সহজে?/ কাজের গরজে!/ কিসে মনে হয় সময়টা শ�থ?/ আলসেমি ব্রত!’ হাতে যখন কাজ আছে অথচ আলসেমি যখন ঘাড়ে ভর করেছে গল্পের সেই বুড়োর মতো সময় তো তখন কাটতেই চায় না। এই পুঁথির যে-888sport app download apk ছত্রগুলি প্রাণে খুশির তুফান তুলেছে তারই কয়েকটি।
নিজেকে যখন আর কারো হাতে দাও
নিজের মতোই খাতির করবে তাকে।
মনের খুশিতে ঢেলে দাও সব কড়ি,
সোনার আড়ত মজুর করে কী হবে?
মন্থর 888sport sign up bonusপুঞ্জে মন না দিয়ে
চকিতে ডুবে যা মুহূর্তবৈভবে।
মান্য কোরো অচেনা যদি অভিবাদন করে!
… … …
প্রথম অভিবাদনখানি অনির্বচনীয়।
যে-কেউ তোমায় কুর্নিশ দিক প্রত্যুত্তর দিয়ো।
বিবেক যদি থাকে বুকের ঘরে
বাজিয়ে নিস সেটাকে ঈশ্বরে :
যেজন জ্বলে ভালোবাসার জ্বরে
মঙ্গলময় তাকেই গণ্য করে।
যখন ছিলাম নিতান্তই সৎ
ছিল নিছক ফাঁড়ার পর ফাঁড়া,
বছর বছর এখন একটানা
নিজেকে শুধু করেছি ছেঁড়া-ফাড়া।
কারু কাছেই পাই নি স্বীকৃতি,
কী এর মানে কেউ কি সেটা বোঝে?
… … …
তাই তো ভাবি সৎ রাস্তায় থাকো
সেটাই বুঝি দারুণ শুভংকরী,
যদিও তার নিষ্করুণ দশা
প্রাণের মধ্যে তাকেই পোষণ করি।
(গ্যোয়েটের 888sport app download apk মনে করিয়ে দিলো কপালকুণ্ডলা আর ওই 888sport alternative linkের অমর মানব নবকুমারকে। এজন্যই কি বলা হয়েছে কবিরা দেখতে পান অনেকটা দূর পর্যন্ত!)
এই দুনিয়ার অন্যরকম ধাত,
অগ্রগামী সবাই ধেয়ে যায়,
কেউ যদি হয় পিছলে কুপোকাৎ
পিছন ফিরে দেখার কার দায়!
তোমরা যারা মহত্তম প্রাণ
ঈশ্বরের সকাশে দীন জন
খাটো ও জ্বলো, বরাতে যেটা থাকে
ফুর্তিবাজ থেকো অনুক্ষণ।
আনন্দময় জগৎ। আনন্দ থেকে জীবের উৎপত্তি। কবিকথিক বৈভবময় মুহূর্তগুলি আনন্দে-ফুর্তিতে উদ্যাপন করাই শ্রেয়। প্রাচী-প্রতীচীর মিলনবেলার পুঁথি ‘মৌলবাদের বিরুদ্ধে,/ প্রেমের সপক্ষে’ উৎসর্গীকৃত। কবি গ্যোয়েটেও বলেছেন :
পৃথিবীর যত শ্রেষ্ঠ পুঁথির সার
প্রেমের গ্রন্থখানি;
পৃথিবীর তাবৎ কাব্যপ্রেমিক বাঁধা পড়–ক এই অনুপম গ্রন্থটির পাতায় পাতায়। সুচারু সুমুদ্রিত ‘888sport app download apkসূচি ও অনুষঙ্গ’ যুক্ত এই গ্রন্থের কথা শতমুখেও শেষ করা যাবে না। আনন্দ অনুভববেদ্য। অসম্ভব তাকে ভাষায় প্রকাশ। ‘হাফিজনামা’য় কবিকথন :
গানে ধরে রাখো আজকের এই দিন,
কালকেও গেয়ো এ গান অতঃপর;
এই জীবনের কর্কশ মসৃণ
পথজুড়ে রাখো সারথ্য সুন্দর।
কবির অভিপ্রায় মনোধার্য করে তাঁরই সৌজন্যে এই বলে বিদায় চাই
আমার প্রিয় গানেরা তবে ঘুমেতো যাও
আমাদের দেশের মানুষজনের গহন বুকে।

Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.