মুক্তিযুদ্ধ, কচুরিপানা ও জ্যোতিরিন্দ্র নন্দীর ‘নীলফুল’

কচুরিপানা পর্ব

KPzwicvbv GK cÖKvi fvmgvb RjR Dw™¢`| Gi Bs‡iwR bvg Water Hyacinth Avi বৈজ্ঞানিক নাম Eichornia crassipes. এটি একটি অবাধ ভাসমান গুল্ম। এর নিচে থাকে এক থোকা লম্বা গুচ্ছমূল। ওপরে খর্বিত কাণ্ডে এক থোকা সবুজ পাতা। পাতার বোঁটা খাটো ও স্পঞ্জি। মঞ্জরি ১৫-২০ সেন্টিমিটার লম্বা হয়। আর একটি ১০-১২ সেন্টিমিটার দণ্ডে থাকে একটি হালকা আকাশি রঙের দৃষ্টিনন্দন ফুল। ফুলের মাঝখানে দারুণ কারুকাজ। ফুলটি গন্ধহীন হলেও সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে। ফুল ফোটার সময় অক্টোবর থেকে জানুয়ারি। 888sport appsে কচুরিপানাকে একটা আগাছা হিসেবেই দেখা হয়। জন্মে বদ্ধ জলাশয়ে, প্রায় সর্বত্র। বর্ষাকালে এই পানা দ্রুত বংশবৃদ্ধি করে এবং প্লাবনভূমিতেও ছড়িয়ে পড়ে।

এই জলজ উদ্ভিদ কিন্তু ভিনদেশ থেকে এসে 888sport appsে ছড়িয়েছে। উনিশ শতকের শেষার্ধে জনৈক বিদেশি পর্যটক কচুরিপানার অর্কিডসদৃশ ফুলে মুগ্ধ হয়ে দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ব্রাজিল থেকে এ-উদ্ভিদটি এদেশে আনেন। বিশের দশকে এটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে সারাদেশে। এতে নৌ-চলাচলে বিঘ্ন ঘটে এবং নিচু জমিতে আমন জাতীয় ধান ও পাট চাষ কঠিন হয়ে পড়ে। ফলে দেশের অর্থনীতিতে এর বিরূপ প্রভাব পড়ে। দেশে মন্দা দেখা দেয়। সে-সময় কচুরিপানা দেশে একটা বড় ধরনের দুর্যোগের সৃষ্টি করে।

এর পরিপ্রেক্ষিতে তৎকালীন বঙ্গীয় সরকার বেঙ্গল জলপথ-বিধি, বেঙ্গল পৌরসভা-বিধি, বেঙ্গল স্থানীয় সরকার-বিধি ও বেঙ্গল গ্রামীণ স্বায়ত্তশাসন-বিধির সহায়তায় এই দুর্যোগ মোকাবিলায় একটি উদ্যোগ গ্রহণ করে। কিন্তু এতে তেমন সুফল আসেনি। অবশেষে সরকার সর্বসাধারণের স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে কচুরিপানা উৎখাতের অভিযান শুরু করে। নিজ নিজ জমি বা দখলি এলাকায় কচুরিপানা রাখা নিষিদ্ধ ঘোষিত হয় এবং সকলের সহযোগিতা বাধ্যতামূলক করা হয়। ক্ষতিগ্রস্ত জেলাগুলিতে প্রশাসকদের কচুরিপানা ধ্বংস-কর্মসূচি পালন ও স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে তা বাস্তবায়নের নির্দেশ দেওয়া হয়। এতে ব্যাপক সাড়া মেলে। এমনকি ১৯৩৭ খ্রিষ্টাব্দের নির্বাচনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মসূচিতে কচুরিপানা উৎখাতের অঙ্গীকার স্থান পায়। ফলে ১৯৩৭ খ্রিষ্টাব্দে শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হকের নেতৃত্বে অবিভক্ত বাংলায় সরকার গঠিত হলে তাতে কচুরিপানা উৎখাতের কর্মসূচি আরো জোরদার হয়ে ওঠে।

এই কচুরিপানা উৎখাত অভিযানের সাফল্য নিয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় গান, 888sport app download apk ইত্যাদি রচিত হয়। এমনকি বেতার কর্তৃপক্ষ ম্যালেরিয়া-পোষক কচুরিপানা ধ্বংসের গানও প্রচার করে। এমনি একটি গান লেখানো হয় আকাশবাণী কলকাতা কেন্দ্রের বিশিষ্ট গীতিকার কবি কাজী নজরুল ইসলামকে দিয়ে। গানটি ১৯৩৯ খ্রিষ্টাব্দের ৩০শে ডিসেম্বর কলকাতা বেতারের জন্য লেখা হয়। দুষ্প্রাপ্য এ-গানটি এখানে আমরা তুলে দিচ্ছি –

        ধ্বংস করো এই কচুরিপানা

এরা    লতা নয় পরদেশি অসুর-ছানা ॥

        ইহাদের সবংশে করো করো নাশ

        এদের দগ্ধ করে করো ছাইপাঁশ

এরা    জীবনের দুশমন গলার ফাঁস

এরা    দৈত্যের দাঁত রাক্ষসের ডানা ॥

এরা    ম্যালেরিয়া আনে আনে অভাব নরক

এরা   অমঙ্গলের দূত ভীষণ মড়ক

এরা   একে একে গ্রাস করে নদী ও নালা

যত    বিল ঝিল মাঠঘাট ডোবা ও খানা ॥

এমনি আরেকটি গানের সন্ধান আমরা পেয়েছি তৎকালীন পূর্ববাংলার ব্রাহ্মণবাড়িয়া মহকুমায় (বর্তমানে জেলা)। তখনকার মহকুমা প্রশাসক বা এসডিও এন.এম. খাঁ (পুরো নাম নিয়াজ মোহাম্মদ খান। তার নামে শহরে একটি হাইস্কুল বিদ্যমান, যা ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজের পাশে অবস্থিত) এর সাফল্য নিয়ে গান রচনা করেন ওই মহকুমার সরাইল থানার
ইতিহাস-খ্যাত গ্রাম কালীকচ্ছের একজন ইউনিয়ন বোর্ডের মেম্বার। গীতিকারের নাম যামিনীকুমার চক্রবর্তী। গানটিতে তিনি কচুরিপানা ধ্বংসের জন্য এসডিও সাহেবের অনেক প্রশংসা করেছেন। তাঁর গানের ভাষায় –

ধন্য ধন্য এন এম খাঁ সাব, ধন্য দেই তোমায়

ও সাহেব ধন্য দেই তোমায়

মোদের ভাগ্যগুণে এলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়।

…        …        …

দেশের লোক কষ্ট করল কুচুরি পানায়

এমন শত্রু ধ্বংস হল তোমার কৃপায়।

১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দের দিকে এই কচুরিপানার সমস্যাটি নিয়ন্ত্রণে আসে এবং পরের দশকে দেশের অনেক নদী-নালা আবার নাব্য হয়ে ওঠে। তবে অনেক সরকারি-বেসরকারি প্রচেষ্টার পরও তা পুরোপুরি ধ্বংস করা যায়নি। তাছাড়া গোখাদ্য, জ্বালানি এবং জমিতে সার হিসেবে ব্যবহারে কচুরিপানার একটা উপযোগিতা ছিল। তবে বহুলাংশে ক্ষতিকারক এবং পুরোপুরি ধ্বংস না হওয়া এই ক্ষুদ্র জলজ উদ্ভিদটি যে ২৩ বছর পর হাজার হাজার বাঙালির জীবন বাঁচাবে তা কি সেদিন কেউ কল্পনা করেছিল? এই অভিশপ্ত কচুরিপানা কীভাবে বাঙালির জীবনে একদিন আশীর্বাদ হয়ে এসেছিল সে-ঘটনাই এই লেখায় তুলে ধরার চেষ্টা করব।                          

মুক্তিযুদ্ধ পর্ব

888sport appsি জাতির জীবনে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ ঘটনা স্বাধীনতার আন্দোলন। এর অন্তিমপর্ব মুক্তিযুদ্ধ। এই যুদ্ধে লাখ লাখ বাঙালি প্রাণ হারান পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসর রাজাকার-আলবদরদের হাতে। অনেকেই বিষয়টি তেমনভাবে খেয়াল করেননি কিংবা বিদেশিরা শুনলে অবাক হবেন, ঘাতকদের হাত থেকে বাঁচার জন্য বাঙালিরা যুদ্ধের সময় কচুরিপানার সাহায্য নিয়েছেন। এই সামান্য জলজ উদ্ভিদ কচুরিপানা সেদিন হাজার হাজার বাঙালির প্রাণ বাঁচিয়েছে। মুক্তিবাহিনীর গেরিলা অপারেশন পরিচালনা এবং পাকিস্তানি সেনাদের আকস্মিক আক্রমণ থেকে প্রাণ বাঁচাতে এই কচুরিপানা এক বিরাট অনুষঙ্গ হিসেবে কাজ করেছে। কচুরিপানা ভর্তি ডোবা, পুকুর বা নদীতে লুকিয়ে বা ডুবে থেকে কত নিরীহ বাঙালি যে প্রাণ বাঁচিয়েছেন তার পরি888sport free betন করা এখন দুরূহ। বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত ও নথিপত্র ঘেঁটে এবং প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষদর্শীর সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে কচুরিপানার অবদানের বহু ঘটনা জানা গেছে। নিচে এর কয়েকটি উল্লেখ করছি –

আফসান চৌধুরী 888sport appsের একজন বিশিষ্ট মুক্তিযুদ্ধ গবেষক ও সাংবাদিক। তাঁর লেখার মাধ্যমে কচুরিপানার সহায়তায় শরণার্থীদের নদী পাড়ি দেওয়ার এক হৃদয়বিদারক ঘটনার কথা জানা যায়। ১৯৭১-এ যুদ্ধের সময় কুমিল্লার একটি নদী পার হচ্ছিল একদল হিন্দু শরণার্থী। নৌকা না থাকায় তারা কচুরিপানা দিয়ে ভেলা বানিয়ে তা ধরে ধরে নদীটি পার হচ্ছিল। একজন মা একটি ছোট শিশু নিয়ে ছিলেন এই দলে। কিন্তু যাত্রী বেশি হয়ে যাওয়ায় ভেলাটি ডুবে যাচ্ছিল। শিশুটির মা একহাতে ভেলা আরেক হাতে শিশুটিকে ধরে রেখে চিৎকার করছিল। এই চিৎকারে শত্রুপক্ষ চলে আসার সমূহ সম্ভাবনা ছিল। তাই সবাই ভয় পাচ্ছিল। মহিলাটির পাশে ছিল একটি ১৪-১৫ বছরের মেয়ে। সে বারবার শিশুটির মাকে চিৎকার করতে বারণ করছিল। কিন্তু সেই মাটি ভয় পেয়ে চিৎকার করেই যাচ্ছিল। এ অবস্থায় তার চিৎকার থামানোর জন্য পাশের মেয়েটি কচুরিপানার ভেলাটি নিঃশব্দে ছেড়ে দিয়ে নদীতে তলিয়ে গেল। যাত্রীরা সব নিরাপদে ওপারে গেলেন। 888sport apps মনে রাখলো না এই ‘নিঃশব্দ মুক্তিযোদ্ধা’কে।

বরিশালের কৃষ্ণা চট্টোপাধ্যায় (১৩) ত্রিপুরায় পালিয়ে গিয়ে আহত মুক্তিযোদ্ধাদের হাসপাতালে নার্স হিসেবে যোগ দেন। একটি শরণার্থী কাফেলার সঙ্গে পালাতে গিয়ে তাঁকে বিপদসংকুল মুন্সিগঞ্জ, চাঁদপুর, কুমিল্লার দাউদকান্দি এবং মেঘনা নদী পেরোতে হয়। রাস্তায় বারবার কাফেলাটি বিপদগ্রস্ত হয়ে ধানক্ষেতে ও ডোবার কচুরিপানায় নাক ডুবিয়ে জীবন রক্ষা করে। অনেক কষ্টে শেষ পর্যন্ত কৃষ্ণা ও তাঁর দল আগরতলায় পৌঁছায়।

এমনি মুক্তিযুদ্ধের দুই বীরাঙ্গনা কুমিল্লার নাঙ্গলকোটের আফিয়া বেগম (১৭) ও ময়মনসিংহের রাজিয়া খাতুন। আফিয়া কচুরিপানায় লুকিয়েও নিজেকে বাঁচাতে পারেননি। কিন্তু বাংলার হাজার হাজার মা-বোন কচুরিপানার সহায়তায় তাঁদের ইজ্জত বাঁচিয়েছেন – এমন বহু ঘটনা গ্রামবাংলার লোক এখনো 888sport app download for androidে রেখেছেন। রাজিয়াকে রাজাকাররা ফাঁদে ফেলে ক্যাম্পে আটকে রেখে নির্যাতন করে। তারা তাঁকে একদিন নদীতে কাপড় কাচতে পাঠায়। নদীতে নেমে কচুরিপানা মাথায় দিয়ে রাজিয়া খাতুন পালিয়ে যান। পরে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে যোগ দিয়ে তাঁদের গোয়েন্দা হিসেবে কাজ করেন রাজিয়া। এমনি আরেকজন কিশোরী মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন গাজীপুরের কালীগঞ্জের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী রাবেয়া খাতুন। তিনিও মুক্তিযোদ্ধা-গোয়েন্দা হিসেবে কাজ করেন। খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে পাকিস্তানি সেনাদের সামনে পড়ে যাওয়ায় পুবাইলের বালু নদীতে নেমে কচুরিপানা মাথায় দিয়ে কয়েক ঘণ্টা লুকিয়ে থেকে প্রাণে রক্ষা বাংলা888sport live footballের এক ব্যতিক্রমী কথাকার জ্যোতিরিন্দ্র নন্দী (১৯১২-৮২)। তিনি ৫৫টিরও বেশি 888sport alternative link লিখেছেন। গল্পগ্রন্থ ২৬টি প্রায়। এত লিখেও এই 888sport live footballিক ছিলেন অজনপ্রিয় ও অবাণিজ্যিক। কারণ আর দশজন লেখকের মতো তিনি ছিলেন না। তাঁর লেখা স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত।

১৯৭১-এর ১৫ই আগস্ট পরিচালিত হয় মুক্তিযোদ্ধাদের নৌ-কমান্ডো বাহিনীর প্রথম অভিযান ‘অপারেশন জ্যাকপট’। এদিন রাতে নৌ-কমান্ডোরা একযোগে মংলা, চট্টগ্রাম, চাঁদপুর ও নারায়ণগঞ্জ বন্দর আক্রমণ করে এবং পাকিস্তানি বাহিনীর ২৬টি পণ্য ও সমরাস্ত্রবাহী জাহাজ এবং গানবোট ডুবিয়ে দেয়। অত্যন্ত গোপনে পরিচালিত হয় এ-অপারেশন। এর সফলতা তখন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বুকে কাঁপন ধরিয়ে দেয়। বাঙালি নৌ-কমান্ডোরা এ-অপারেশনের মাধ্যমে যুদ্ধের গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে বহির্বিশ্ব¦কে একটা ধারণা দিতে সক্ষম হন।

১৫ই আগস্ট রাতের অপারেশনের ব্যাপক সফলতার পরদিন ১৬ই আগস্ট ১৯৭১ রাতে আক্রমণ করা হয় কুমিল্লার দাউদকান্দি ফেরিঘাটে। সেখানে ফেরি, বার্জ ও পন্টুন ডুবিয়ে দেন বীর নৌ-কমান্ডোরা। কমান্ডোদের সফলভাবে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সহায়ক হিসেবে কাজ করে কচুরিপানা – এমন তথ্য উঠে এসেছে দাউদকান্দি অপারেশনের কমান্ডার বীরবিক্রম শাহজাহান সিদ্দিকীর সাক্ষাৎকারে। এখানে সাক্ষাৎকারের কিয়দংশ তুলে ধরা হলো –

সে-রাতে প্রচুর স্রোত ছিল। প্রায়ই কচুরিপানা ভেসে যাচ্ছিল। তো আমরা নাকটা জাগিয়ে কচুরিপানা মাথায় দিয়ে ভেসে যাওয়ার মতোই যাচ্ছিলাম। রাতের অন্ধকারে শত্রু পাহারাদারেরা বুঝতেই পারেনি যে কচুরিপানার নিচে মানুষ আছে। এমনি করে টার্গেট পয়েন্টে পৌঁছে যাই। …

নীলফুল পর্ব

বাংলা888sport live footballের এক ব্যতিক্রমী কথাকার জ্যোতিরিন্দ্র নন্দী (১৯১২-৮২)। তিনি ৫৫টিরও বেশি 888sport alternative link লিখেছেন। গল্পগ্রন্থ ২৬টি প্রায়। এত লিখেও এই 888sport live footballিক ছিলেন অজনপ্রিয় ও অবাণিজ্যিক। কারণ আর দশজন লেখকের মতো তিনি ছিলেন না। তাঁর লেখা স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত। ছোটগল্পে এক নতুন সাম্রাজ্যের নির্মাতা এই লেখক ছিলেন দলছুট ও প্রচারবিমুখ। 888sport alternative linkের চেয়ে ছোটগল্পেই তাঁর সিদ্ধিলাভ। বাংলা ছোটগল্পে যদি ১০ জন লেখকের একটি নিরপেক্ষ তালিকা হয় নিঃসন্দেহে জ্যোতিরিন্দ্র নন্দীকে এ-তালিকা থেকে বাদ দেওয়া যাবে না। এই নির্লিপ্ত লেখক তাঁর গল্প-888sport alternative linkে সমসাময়িক ঘটনাবলি কিংবা রাজনীতিকে ধারণ করেননি। কিন্তু পূর্ববঙ্গের মানুষ হিসেবে ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধকে তিনি এড়িয়ে যেতে পারেননি। তাই ওই সময়ের প্রেক্ষাপটে লেখা তাঁর একটিমাত্র গল্পের সন্ধান পাওয়া যায়। গল্পের নাম ‘নীলফুল’। যে-গল্পের নায়ক একটি নীল কচুরিপানা ফুল। যে-ফুলটি 888sport appsের সমার্থক। যার মধ্যে তিনি ‘সত্যিকারের 888sport apps’কে খুঁজে পেয়েছেন। গল্পটি কলকাতার শারদীয় উল্টোরথ-এ ১৩৭৮ বঙ্গাব্দ 888sport free betয় প্রকাশিত হয়েছিল। বহু বছর অগ্রন্থিত থাকার পর কলকাতার ‘অভিজাত প্রকাশনী’ থেকে অগ্রন্থিত জ্যোতিরিন্দ্র-১ নামক পুস্তকে গল্পটি গ্রন্থবদ্ধ হয় ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দে।

‘নীলফুল’ গল্পের ঘটনা যেভাবে এগোয়, তা এরকম – মুক্তিযুদ্ধের সময় দুই বাংলার সীমানায় যখন কোনো বর্ডার ছিল না, তখন কলকাতার ছেলে মলয়, চন্দন এবং ওদের বন্ধুরা ট্রেনে চড়ে বারাসাত-হাসনাবাদ পৌঁছে। ওখান থেকে নৌকোয় করে ইছামতী নদী পার হয়ে 888sport appsে ঢুকে পড়ে।

আম-কাঁঠাল-সুপুরির বাগান-ঘেরা সুজলা-সুফলা-শস্য-শ্যামলা 888sport apps দেখে ওরা মুগ্ধ হয়। ওরা সঙ্গে করে নিয়ে গিয়েছিল কয়েক গ্যালন পেট্রোল, কয়েক টিন কেরোসিন, কয়েক শিশি গান অয়েল (বন্দুক সাফ করার তেল) আর কয়েক পেটি পেনিসিলিন। যুদ্ধের সময়ে ওগুলি প্রয়োজনীয় সামগ্রী। ওগুলি পেয়ে অবরুদ্ধ 888sport appsের মানুষেরা খুশি হয়েছিল। তারা মলয়, চন্দন এবং ওদের বন্ধুদের খুলনার খাঁটি বাদশাভোগ মিষ্টি আর প্রচুর ডাব খাইয়েছিল। মলয় ফিরে আসার সময় সঙ্গে করে নিয়ে আসে 888sport appsের একটি পতাকা। মলয়ের আনা পতাকাটা এখনো তাদের বারান্দায় অর্কিডের টবের গায়ে পত্ পত্ করে উড়ছে। লাল-সবুজে সোনায় আঁকা এ-পতাকাটা পাড়ার কত মানুষ দেখে গেছে।

মলয়ের বাবা বিরাজবাবু সেদিন সল্টলেক ঘুরে ‘888sport apps’ দেখে এসেছেন। মানুষ নিয়েই তো দেশ। 888sport apps মানে ওখানকার লক্ষ লক্ষ মানুষ। ভিটেমাটি ফেলে জীবন নিয়ে পালিয়ে এসেছেন সেসব মানুষ। লবণ হ্রদ-এর দিগন্তপ্রসারী বালুর উপর ছড়িয়ে আছেন তারা। পাতায় ডেরা বেঁধে আছে কত। বিরাজবাবুর স্ত্রী মানে মলয়ের মা ‘888sport apps’ দেখতে পারেননি বলে তার অনেক দুঃখ। তাই মন খারাপ করে আছেন। খালি রেডিওতে 888sport appsের যুদ্ধের খবর শুনছেন। বৃষ্টির দিন শুরু হয়ে গেছে। এখন শরণার্থীরা তাদের কাচ্চা-বাচ্চা নিয়ে কোথায় যাবেন? এখন ওদের এদিকেই আসতে হবে। তাই বিরাজবাবু গিন্নিকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন, ‘কাজেই 888sport apps তুমিও দেখবে।’

একটা সকালের মধ্যে বিরাজবাবুর স্ত্রী অতিষ্ঠ হয়ে উঠলেন। শরণার্থীরা দলে দলে আসতে শুরু করেছেন। কেউ রুটি চাচ্ছেন আবার কেউবা চান দুমুঠো চাল। কেউ চাচ্ছেন পরনের কাপড়। মলয়ের মা বাক্স খুঁজে পুরনো ছেঁড়াকাপড় বের করে শরণার্থীদের দিচ্ছেন। একটু পর আরেকজন এসে বলছেন, ‘এট্টু তেল দেবেন মা, তেলের অভাবে ভেইজে টেইজে কিছু খেতে পারইছি না।’ উত্ত্যক্ত হয়ে গেলেন গিন্নি। মলয়ের মা মলয়ের বাবাকে উদ্দেশ করে বলছেন, ‘এ যে দেখছি আবার সেই শেয়ালদার রিফুইজির ব্যাপার, তুমি 888sport apps 888sport apps করছ, আমি তো 888sport appsের কিছু দেখছি না। কেবল কান্না, ক্ষুধার হাহাকার।’

‘না না, এরা তা নয়।’ মলয়ের বাবা মাথা নাড়লেন। ‘রিফুইজি বোল না, শরণার্থী – সরকার এদের সেই চোখে দেখছে। সেভাবে রাখতে চাইছে। বললাম তো এদের সাহায্যের জন্য কত ছুটোছুটি, কত ক্যাম্প খোলা হচ্ছে, রেডিওতে খবর শুনছ, কাগজে দেখ – ’

‘জানি না বাপু।’ – মলয়ের মা একটা গাঢ় নিশ্বাস ফেললেন।

এবার ‘নীলফুল’ গল্পের বাকি অংশ গল্পের জাদুকর জ্যোতিরিন্দ্র নন্দীর জাদুকরী ভাষায় হুবহু শোনা যাক –

আকাশের কালো মেঘটার মতন ঠান্ডা মাজাঘষা শ্যামলা রঙের মেয়ে। যুবতী। কোলে দুবছর আড়াই বছরের একটা ছেলে।

‘কি চাইছ বাছা?’ গলার স্বর রুক্ষ করতে গিয়েও মলয়ের মা করুণ চোখে মেয়েটিকে দেখলেন। পরনে জীর্ণ জেলজেলে একটা শাড়ি। মুখখানা ভারি শুকনো।

কিন্তু তাহলেও মেয়েটি হাসল। মেঘের রুপালি পাড়ের মতন কালো শীর্ণ ঠোঁটের ফাঁকে মুক্তোর মতন দাঁত ঝলক দিয়ে উঠল।

‘কিছু চাইছি না মা, আপনার ওই বাল্তির নীল ফুলখানা দেখছি।’

চমকে উঠলেন মলয়ের মা। বালতি মানে বারান্দায় মাটির টবে কচুরিপানার ফুল ফুটেছে। 888sport apps দেখে ফেরার সময় মলয় ইছামতীর জল থেকে এক টুকরো পানা এনে টবে লাগিয়েছিল। সবুজ ডাঁটার আগায় নীল ফুল ফুটেছে।

‘এই ফুল তুমি চেন?’

‘হা, চিনি না মা! আমাগো দ্যাশে বিলে হাওরে ঝাঁক দিয়্যা এই ফুল ফোটে, আমরা কই জার্মানি ফেনা।’

তা-ও বটে, কচুরিপানা জার্মানি পানা, ছেলেবেলায় ঠাকুমা-টাকুমার সাথে মলয়ের মা শুনত, হঠাৎ এখন মনে পড়ল, সেই প্রথম বড় লড়াইয়ের সময়, ইংরেজ-জার্মান যুদ্ধের সময়, এ-দেশে এই ফুলের আমদানি।

‘তুমিও কি লবণহ্রদ থেকে এসেছ?

‘হি মা’, যুবতী ঘাড় কাত করল। ‘পথ দিয়া যাইতাছি, আপনার ওই বালতির ফুলখানা দেইখ্যা আমার খোকা চিনল।’

‘তোমার ছেলে এটি?’

‘হি মা।’ মুক্তোর মতন সাদা দাঁতের হাসির ঝলকটা আর দেখা গেল না। উদোম গা, বুকের হাড়পাঁজরা বেরিয়ে আছে, বড় বড় দুটো চোখ মেলে মা-র কোল থেকে প্রায় ঝুঁকে পড়ে অবোধ শিশু টবের ফুলটার দিকে তাকিয়ে সেদিকে হাত বাড়িয়ে
হি-হি করে হাসছে।

‘খোকার বাবা কোথায়?’ মলয়ের মা আচমকা প্রশ্ন করল।

‘ওই যে মা, আমাগো উত্তরের বিলের ধারে ওরে রাইখ্যা আইলাম।’ আঁচলের কোণা দিয়ে যুবতী চোখ মুছল। ‘সব মাইয়া ছাইলাদের সাথে আমি পালাইয়্যা আইছি।’

ছেলেটা ক্রমাগত ফুলটা দেখছিল, হি-হি হাসছিল।

এবার বোঁটা-সুদ্ধ ফুলটা ছিঁড়ে মলয়ের মা শিশুর হাতে তুলে দিলেন। দিয়ে তাঁর ভাল লাগল।

চোখের কোণা মোছা শেষ করে যুবতী বলল, ‘আপনারে কমু কি, বিলের ধারে কাতারে কাতারে খান সৈন্য নামছিল সেদিন মা, গেরামের আর দশটা জোয়ানের সাথে দাও বল্লম তীরধনু লইয়া আমাগো খোকার বাবাও ঝাঁপাইয়া পড়ল, কামানের সামনে বেশি লড়তে পারল না, রক্তে লাল অইয়া গেল উত্তরের বিল।’

মলয়ের মা স্তব্ধ হয়ে শুনছিলেন।

‘সব মাইর‌্যা শেষ কইর‌্যা দুশমনের দল আগুন জ্বাইল্যা ঘর বাড়ি খেত খামার গাছপালা পুড়াইয়া দিল, বিলের বেবাক কচুরিফেনা পুইড়া কালা আংরা অইয়া গেল মা।’

নীল ফুলটা মুখের কাছে তুলে ধরে মায়ের কোলে থেকেই আহ্লাদে ছেলেটা যেন নাচতে আরম্ভ করল।

‘চলি মা।’ আঁচলের খুঁট দিয়ে যুবতী আবার চোখের কোণা দুটো মুছল।

‘তবে কিনা আবার বর্ষা অইব মা, পানির ছিটা পড়লে আবার আমাগো বিলে জার্মানি ফেনা গজাইয়া ঝাঁক দিয়া ফুল ফুটব, হু ফুটব।’ আশায় উত্তেজনায় উৎসাহে যুবতীর দুচোখ বুঝি হঠাৎ উজ্জ্বল হয়ে উঠল। রুপোলি ঝিলিক হয়ে কালো সুঠাম ঠোঁটের ফাঁকে মুক্তোর মতন দাঁতের হাসিটাও চকিতে ভেসে উঠল। ‘তখন যদি আবার দিন ফির‌্যা আইয়ে।’

মলয়ের মা কেমন বিমূঢ় হয়ে গিয়ে দেখছিলেন।

কথাগুলি শুনছিলেন। বারান্দা ছেড়ে যুবতী নেমে গেল। ‘এই বুঝি সত্যিকার 888sport apps।’ অস্ফুট শব্দ করে তিনি একটা গাঢ় নিশ^াস ফেললেন। বাচ্চা নিয়ে মেয়েটা ধীরে ধীরে সল্টলেকের দিকে হেঁটে চলে গেল। রোদ নিভে যাচ্ছিল।

হাড়পাঁজরা বেরোনো, উদোম গা, ক্ষুধার্ত অবোধ শরণার্থী-শিশুটি কলকাতা শহরে টবে লাগানো কচুরিপানা ফুলটি চিনতে পেরেছে। চেনা ফুলটি দেখে সে খুশি হয়, হাসে এবং এটিকে নিজের করে পেতে চায়। সে জানে না তার বাবা যুদ্ধে নিহত হয়েছে, সে জানে না তার দেশ নেই, ঠিকানা নেই, খাবার নেই, থাকার ঘর নেই। সে শুধু নীল কচুরিপানা ফুলটিকে চিনেছে এবং এর মধ্যে চেনা মাটির গন্ধ পেয়েছে।

তথ্যসূত্র

১. বাংলাপিডিয়া, খণ্ড-২, প্রধান সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম। 888sport apps এশিয়াটিক সোসাইটি কর্তৃক প্রকাশিত। প্রকাশকাল ২০০৩ খ্রিষ্টাব্দ, 888sport app।

২. নজরুল-জীবনী, অরুণকুমার বসু, পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি, কলকাতা ২০০০ খ্রিষ্টাব্দ।

৩. ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে পূর্ববাংলা, সঞ্জীব কুমার দেবনাথ, প্রকাশক মেলা, প্রথম প্রকাশ ‘888sport cricket BPL rateে বইমেলা’ ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দ, 888sport app।

৪. প্রতিচিন্তা, জানুয়ারি-মার্চ ২০১৯ 888sport free bet। সম্পাদক ও প্রকাশক মতিউর রহমান, ‘প্রথমা প্রকাশন’, 888sport app।

৫. অগ্রন্থিত জ্যোতিরিন্দ্র-১, সম্পাদক ড. নিতাই বসু, অভিজাত প্রকাশনী, কলকাতা, ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দ।

৬. জ্যোতিরিন্দ্র নন্দী, স্নিগ্ধা বন্দ্যোপাধ্যায়, পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি, প্রথম প্রকাশ ২০০৮ খ্রিষ্টাব্দ, কলকাতা।