মৃত্যুঞ্জয়ী মনজুর

সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম দালিলিকভাবে আমার চাইতে পাঁচ বছরের ছোট। ‘দালিলিক’ শব্দটি ব্যবহার করছি
এ-কারণে যে, আমরা একই বিশ্ববিদ্যালয়ে, অর্থাৎ 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ে, একই বিভাগে পাঁচ বছরের তফাতে পড়াশোনা করেছি। আমি 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি স্নাতক সম্মানে ভর্তি হই ১৯৬৩ সালে আর মনজুর ওই একই বিভাগে ভর্তি হন ১৯৬৮ সালে। ফলে তাঁর সঙ্গে আমার বিশ্ববিদ্যালয় পাঠকালে পরিচয় ছিল না। পরিচয় হয়েছে অনেক পরে – সম্ভবত ১৯৭২ সালে। ‘সম্ভবত’ বলছি, কারণ তাঁর সঙ্গে পরিচয়ের ঘটনাটি আমার স্পষ্ট মনে আছে, কিন্তু সালটা সঠিক 888sport app download for android করতে পারছি না। তবে এটা ঠিক, সময়টা ছিল মুক্তিযুদ্ধের অব্যবহিত কোনো একটি বছর, যখন আমরা নিদারুণ আর্থিক টানাপড়েনে কালাতিপাত করেও সদ্য স্বাধীন দেশে উদার 888sport live chat-888sport live football চর্চার উন্মাদনায় প্রতিটি দিন কাটাতাম।

১৯৭২ সালের কোনো একদিন আমি আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বা সায়ীদভাইয়ের বিশ্ব888sport live footballে কেন্দ্রের (তখন বর্তমান কেন্দ্রটি ছিল না, কিন্তু ভাসমানভাবে কেন্দ্রের কার্যক্রম ছিল) কোনো একটি অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম, যেখানে মনজুরও উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠান শেষে পরিচিতদের সঙ্গে আলাপচারিতার সময় মনজুর আমার সঙ্গে কথা বলেন। জানতে চান আমি আবদুস সেলিম কি না। আমার ইতিবাচক উত্তরে তিনি বলেন, আমার এবং আবদুল মান্নান সৈয়দের যৌথ সম্পাদনায় প্রকাশিত 888sport live chatকলা পত্রিকা তিনি নিয়মিত পড়েন এবং ওই সময়কালে প্রকাশিত আমার লেখা দুটি 888sport live পাঠ করে তিনি বেশ চমৎকৃত হয়েছেন। 888sport live দুটি হলো ‘লরেন্সীয় স্বাতন্ত্র্য’ এবং ‘ই. এম. ফস্টার’। এছাড়াও তিনি মান্নানের জীবনানন্দ দাশকে নিয়ে লেখা ‘শুদ্ধতম কবি’ 888sport liveটি খুব মনোযোগ দিয়ে পড়েছেন। 888sport live chatকলা লিটল ম্যাগাজিনের তিনি মোটামুটি নিয়মিত পাঠক। এভাবেই আমাদের পরিচয়।

888sport live chatকলা পত্রিকার পরিকল্পনা এবং প্রকাশ সিলেটে – আমি এবং মান্নান যখন মুরারিচাঁদ সরকারি কলেজে শিক্ষকতা করতাম। এখন যখন অতীতের দিকে ফিরে তাকাই, দেখতে পাই সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের সঙ্গে আমার একটি কাকতালীয় সম্পর্ক ছিল, যদিও সে-অর্থে নিয়মিত ঘনিষ্ঠতা ছিল না। বলা যায় আমাদের সম্পর্কটা ছিল অনিয়মিত অথচ সুষম। মনজুর সিলেট মুরারিচাঁদ সরকারি কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক সম্পন্ন করেন ১৯৬৮ সালে, আর আমি ওই কলেজেই পূর্ব পাকিস্তান সরকারি কর্ম কমিশন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে প্রভাষক পদে প্রথম সরকারি চাকরিতে যোগদান করি ১৯৬৮ সালের ডিসেম্বরে। ফলে আমি তাঁর শিক্ষক হওয়ার সুযোগ পাইনি, যদিও

সে-সম্ভাবনা ছিল।

পরিচয়ের পরবর্তী সময়ে জানতে পারি, মনজুর 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে যোগদান করেছেন। ওই সময় বেশ কয়েকজন তরুণ ইংরেজি বিভাগে যোগদান করেন যাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, সদরুল আমিন, ফকরুল আলম এবং কায়সার হক। আমি ১৯৭৬ সালে দেশের বাইরে পড়তে যাই, ফিরি ১৯৭৮ সালে এবং দুই বছর পর আবার বিদেশে চলে যাই, ফিরি ১৯৮৪ সালে। মনজুরও ইতোমধ্যে কানাডায় গেছেন উচ্চশিক্ষার জন্য, সম্ভবত ফিরেছেন ১৯৮১ সালে। দেশে ফেরার পর বিভিন্ন সময়ে ওই তরুণ শিক্ষকদের সঙ্গে আমার সংযোগ হয়েছে, বিশেষ করে মনজুরের সঙ্গে।

আমি ১৯৯১ সালের শেষের দিকে যখন ইউনেস্কো ন্যাশনাল কমিশনের সচিব পদে ছিলাম, মনজুর তখন, যতদূর মনে পড়ে, 888sport apps টেলিভিশনে কোনো অনুষ্ঠান করতেন। আমাকে তিনি কয়েকবার সেই অনুষ্ঠানে ডেকেছিলেন, বিশেষ করে 888sport app download apk latest version এবং নাট্যানুবাদ নিয়ে আলোচনা করার জন্য। অবশ্য টেলিভিশনে বিভিন্ন সময়ে তাঁর সঙ্গে আমি অনেক অনুষ্ঠান করেছি। মনে পড়ছে, একবার ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি-আয়োজিত 888sport app download apk latest version সেমিনারে আমি যখন প্রসঙ্গক্রমে আমার 888sport app download apk latest versionকৃতির বক্তব্যে বলেছিলাম যে, আমি তখন পর্যন্ত প্রায় বাইশটি বিদেশি নাটক 888sport app download apk latest version করেছি এবং তার ভেতর উনিশটিই মঞ্চে অভিনীত হয়েছে, মনজুর তাঁর স্মিতহাস্য মুখে দাঁড়িয়ে সজোরে হাততালি দিয়ে উঠেছিলেন এবং তাঁর সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন সমবেত সকলে। আমি এখনো তাঁর সেই স্বতঃস্ফূর্ত স্মিত হাস্যোজ্জ্বল অবয়বটি মনে করি।

১৯৯২ সালে আমি 888sport apps উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করি। সে-সময় আমরা একটি নিয়মিত ইংরেজি কথোপকথনের অনুষ্ঠান করতাম ঐবষষড় ঞযবৎব শিরোনামে, যেটি প্রতি সপ্তাহে একবার করে 888sport apps টেলিভিশনে প্রদর্শিত হতো। মনজুর যদিও English Language Teaching (ELT)-এ বিশ্বাস করতেন না, এই অনুষ্ঠানে ব্যবহার করার জন্য আমার কাছে প্রায়শ 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের বেশ কিছু উজ্জ্বল ছেলেমেয়েকে পাঠিয়ে দিতেন। এছাড়া ব্রিটিশ কাউন্সিলে ইংরেজি ভাষা সেমিনারেও আমি তাঁকে পেয়েছি অনেকবার। ফলে এটা স্পষ্ট হয় যে, মনজুর কোনো বদ্ধ ধারণার বশবর্তী হয়ে নিজের চিন্তা-চেতনাকে বন্দি করে রাখতেন না।

এরপর আমি ১৯৯৬ সালে নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দিই এবং সেখানে দীর্ঘ বাইশ বছর একটানা শিক্ষকতা করি। এই সময়কালে মনজুর আমার কাছে একাধিক পিএইচ.ডি গবেষককে পাঠিয়েছেন আমার সাক্ষাৎকার নেওয়ার জন্য, বিশেষ করে ভাষাতত্ত্ব, 888sport app download apk latest version ও মঞ্চনাটক নিয়ে যারা গবেষণা করত তাদের।

ঠিক ওই সময় মনজুরের এক ছাত্রের অনুরোধে, যে 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী ছিল এবং নিউ এজ ইংরেজি দৈনিকে খণ্ডকালীন কাজ করত, আমরা দুজন সাপ্তাহিক কলাম লিখতাম। মনজুরের কলামের শিরোনাম ছিল The Cutting Edge এবং আমারটির ছিল Proscenium Arch। মনজুর লিখতেন সমসাময়িক সামাজিক, রাজনৈতিক, পরিবেশিক এবং 888sport live chat888sport live footballের বিষয় নিয়ে, যার ভেতর পরিহাস, ব্যঙ্গ এবং বাস্তব সমস্যা তুলে ধরা হতো আর আমি লিখতাম শুধু মঞ্চনাটক বিষয়ে। যদিও দীর্ঘদিন আমরা কলাম লিখেছি কিন্তু আমাদের মধ্যে এ-বিষয় নিয়ে সরাসরি কোনো আলাপচারিতা হয়নি কখনো। তবে আমরা পরস্পরকে স্পর্শ করেছি একই পত্রিকায় কলাম লেখার সুবাদে।

মনজুরের সঙ্গে বাংলা একাডেমিতে 888sport live উপস্থাপনের জন্য একাধিক সাক্ষাৎ ছাড়াও বিভিন্ন সময় কলকাতার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনামূলক 888sport live football বিভাগের আমন্ত্রণে এবং দিল্লিতে অজিত কাউরের তত্ত্বাবধানে সার্ক লিটারারি ফেস্টিভ্যালে যোগ দিয়েছি। মনে আছে, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা একসঙ্গে একদল অতিথি গিয়েছিলাম 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অফ বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্র্রেশনের প্রয়াত অধ্যাপক ড. মোজাফফর আহমদের নেতৃত্বে। এই সফরে আরো অনেকের সঙ্গে ছিলেন আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ এবং প্রয়াত live chat 888sport নির্মাতা তারেক মাসুদ। তারেক মাসুদের মাটির ময়নার পূর্ণপ্রেক্ষাগৃহ প্রদর্শনী হয়েছিল কলকাতার ম্যাক্সমুলার হাউসে। প্রদর্শনী শেষে আলোচনা সঞ্চালন করেছিলাম আমি, মনজুরেরই বিশেষ উপরোধে। মনজুরকে আরো ঘনিষ্ঠভাবে চিনতে পেরেছিলাম, যখন আমাদের দুজনকে একই ঘরে থাকতে দেওয়া হয়েছিল ওই সফরে। মনে আছে, রাতের খাবারের পর মনজুর ঘরে এসে বললেন, ‘সেলিমভাই, আপনি নিশ্চিন্তে শুয়ে পড়েন। আমি একটু রাত জাগবো কারণ কাল সকালে প্রথম আলোতে একটা লেখা দিতে হবে। তবে আমি আপনার ঘুমের কোনো ব্যাঘাত ঘটাবো না। টেবিল ল্যাম্পে ঢাকনা দিয়ে নেবো।’   

এই ‘সেলিমভাই’ ডাকটি আমি ভীষণ মিস করবো। কারণ এই তো সেদিনই ইউনিভার্সিটি অফ লিবারেল আর্টস 888sport apps-এ দেখা হলে মনজুর তাঁর স্বভাবসুলভভাবেই আমাকে সম্বোধন করেছিলেন, ‘সেলিমভাই, ক্লাস?’ আমি গত দুই সেমিস্টার ইউল্যাবে দুটি কোর্স পড়িয়েছি – পোস্ট-কলোনিয়াল লিটারেচার এবং সেভেনটিন্থ সেঞ্চুরি অ্যান্ড রেস্টোরেশন লিটারেচার। আমাকে মনজুরের পাশের ঘরেই বসতে দিয়েছিল ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে। প্রতিদিন যে দেখা হতো তা নয়, তবে সপ্তাহান্তে একবার অন্তত দেখা হতো – দেশ, 888sport live football, 888sport live chat নিয়ে কথা হতো। তাঁর মৃত্যুর কদিন আগেই করিডোরে তাঁর ‘সেলিমভাই’ ডাক আমি শুনেছি এবং এখনো এক ধরে-নেওয়া কল্পনায় মনে হয়, কখন যেন মনজুর ডেকে বলবে, ‘যাক, সেলিমভাই, আপনি এখানে আছেন, একজন মুরুব্বি থাকলে অনেক ভরসা বেড়ে যায়।’ আমি কল্পনা করে বলছি না, এ-কথা মনজুর আমাকে বলেছিলেন গতবার যখন দিল্লি গেলাম সার্ক লিটারারি ফেস্টিভ্যালে। আমি একদিন আগে পৌঁছেছিলাম। মনজুরের সঙ্গে দেখা পরদিন নাস্তার টেবিলে আর তখনই ওই সংলাপ।

সত্যি বলতে, সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম প্রথাগত অর্থে যেমন একজন আদর্শ শিক্ষক ছিলেন, তেমনি আধুনিকও ছিলেন। দেশে-বিদেশে ছড়িয়ে থাকা তাঁর অসংখ্য ছাত্র তাঁকে যেমন মনে রাখবে, তেমনি আমার মতো অনেক সহযাত্রী, বন্ধু-সুহৃদ তাঁকে 888sport apk download apk latest versionভরে 888sport app download for android করবে, ভুলতে পারবে না কখনো। মনজুর ছিলেন একজন শুদ্ধ াবৎংধঃরষব, তাঁর বহুমুখিতা, বিচিত্রগামিতা, কুশলী বুদ্ধিমত্তা এবং তাৎক্ষণিক সকৌতুকতা তুলনাহীন। 888sport live chat888sport live footballের এমন কোনো স্থান নেই, যেখানে তাঁর বিচরণ ছিল না – গল্প, 888sport alternative link, চিত্রকলা, live chat 888sport, নাটক, এমনকি সামাজিক, রাজনৈতিক, পরিবেশিক চিন্তাচেতনা – সকল ক্ষেত্রেই তাঁর দৃপ্ত পদচারণা আমরা স্পষ্ট অনুভব করেছি যে, পায়ের আওয়াজ এখনো স্পষ্ট পাওয়া যায়।

মৃত্যু বড়ই রহস্যাবৃত অনিবার্যতা মানুষের কাছে। এই অলৌকিক অনিবার্যতা নিয়ে ধর্মানুগত এবং দার্শনিক ব্যাখ্যা অনেক আছে – 888sport live chat-888sport live football চর্চাও। এই মুহূর্তে মনে পড়ছে অনেক বছর আগে মৃত্যু নিয়ে রচিত মেক্সিকোর বিখ্যাত

কবি-কূটনীতিক অক্তাভিও পাসের একটি কথা, যেটি আমি 888sport app download apk latest version করেছিলাম সম্ভবত পনেরো বছর আগে। আনুমানিকভাবে তাঁর বক্তব্যটি ছিল এমন : মৃত্যু যেমন অনিবার্য তেমনি অবিবেচক। মনজুরের মৃত্যু বক্তব্যটির যথার্থতা আমাকে উপলব্ধি করাতে সক্ষম হয়েছে। মনজুর আমার চাইতে পাঁচ বছরের বয়ঃকনিষ্ঠ, অথচ মৃত্যু অবিবেচকের মতো তাকেই নির্বাচন করল আমার আগে। 

তবে এ-কথা নিশ্চয় করে বলতে পারি, সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম মৃত্যুকে জয় করেছেন, তিনি চিরঞ্জীব – তাই তিনি দৃঢ়কণ্ঠে বলত পারবেন তাঁর আত্মা জগতের অন্তহীন জাগরণে (‘wake eternally’) :

Death, be not proud, though some have called thee

Mighty and dreadful, for thou art not so;

For those whom thou thinkÕst thou dost overthrwo

Die not, poor Death, nor yet canst thou kill me.

…       …       …

One short sleep past, we wake eternally

And death shall be no more; Death, thou shalt die.

                           – John Donne r