ইন্টারন্যাশনাল থিয়েটার ইনস্টিটিউটের (আইটিআই) ৩০তম বিশ্ব কংগ্রেসের সুবাদে মেক্সিকো যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল গত জুন মাসে। 888sport apps থেকে আমার সঙ্গী ছিলেন বিশিষ্ট নাট্যনির্দেশক নাসিরউদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু। মেক্সিকোর টামপিকোতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল আমাদের কংগ্রেস। সেখানে যাওয়ার পথে আমাদের যাত্রাবিরতি করতে হয়েছিল নিউ ইয়র্কে, মেক্সিকোর ভিসা সংগ্রহের জন্যে। আয়োজকরা আমাদের প্রয়োজনীয় ছাড়পত্র আগেই করিয়ে রেখেছিলেন। নিউ ইয়র্কে মেক্সিকো দূতাবাসের ভিসাপ্রদান-ব্যবস্থা অত্যন্ত ভদ্রজনোচিত। নিউ ইয়র্ক থেকে হিউস্টন হয়ে আমরা পৌঁছালাম টামপিকো।
মেক্সিকোর তামালিপাস রাজ্যের বন্দর ও 888sport live chatনগরী টামপিকো। ভৌগোলিক অবস্থান, প্রাকৃতিক সম্পদ ও শহরকেন্দ্রের ঐতিহাসিক স্থাপনাসমূহের কারণে টামপিকো মেক্সিকোর একটি আকর্ষণীয় নগরী। রাজপথে আমরা যেমন আশা করেছিলাম, তেমন কোলাহল নেই। ফ্রানসিস্কো হাভিয়ার মিনা
আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটি আকারে ছোট, এমনকি ব্যাগেজ স্ক্যানিং মেশিনও নেই। এখানকার প্রধান 888sport live chat হচ্ছে তেল। গত অর্ধশতাব্দী ধরে এ-888sport live chat মানুষের কর্মসংস্থানের একটি প্রধান অবলম্বন হয়ে আছে। কৃষিজাত পণ্য, গবাদি পশুপালন ও মৎস্যসম্পদও তামালিপাসের অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখছে।
আইটিআইয়ের সব কংগ্রেসেই একটি দিন বরাদ্দ থাকে এক্সকারশানের জন্যে। যে-নগরীতে কংগ্রেস হয়, তার কাছাকাছি কোনো দ্রষ্টব্য স্থানে নিয়ে যাওয়া হয় সব প্রতিনিধিকে। ইস্তামবুল কংগ্রেসের সময় আমাদের এক্সকারশানের অনেকটা সময় কেটেছে ভূমধ্যসাগরের উপর জাহাজে। অনেকটা পথ গিয়ে আমরা নেমেছিলাম এক দ্বীপে, যেখানে যন্ত্রচালিত যানবাহন নিষিদ্ধ। ঘোড়ার গাড়ি আর সাইকেল যাতায়াতের বাহন। বেশির ভাগ মানুষই অবকাশযাপনের জন্যে দ্বীপটিতে আসেন। এথেন্স কংগ্রেসের সময়ে এক্সকারশানে আমাদের নিয়ে যাওয়া হয়েছিল এপিদরাসে, যেখানে গ্রিসের সবচেয়ে প্রাচীন এরিনা মঞ্চটি সংরক্ষণ করা আছে। এপিদরাসে গিয়ে আমাদের মনে হয়েছে নাটকের তীর্থভূমিেেত এলাম।
টামপিকোর কাছাকাছি তেমন দ্রষ্টব্য স্থান কিছু ছিল না। তাই এক্সকারশানের আয়োজন হয়েছিল মিরামার সমুদ্রসৈকতে, যেখানে নাট্যাভিনয়েরও ব্যবস্থা করা হয়েছিল। বিকল্প আরেকটি ট্যুর ছিল পুরাকীর্তি-সমৃদ্ধ এল তাহিন যাওয়ার, যদিও তার জন্যে আলাদা খরচ দিতে হবে। আমরা বেশ কয়েকজন এল তাহিন যাওয়ারই সিদ্ধান্ত নিলাম যেহেতু সমুদ্রসৈকত আমাদের কাছে তেমন আকর্ষণীয় মনে হলো না। ভোরবেলা পর্যটন সংস্থার বাসে রওয়ানা দিয়ে পাঁচ ঘণ্টায় আমরা এল তাহিন পৌঁছালাম। যাওয়ার আগে কেন যে তারা সাড়ে তিন ঘণ্টার পথ বলেছিল, সেটা আমাদের কাছে রহস্যই রয়ে গেছে।
তামালিপাসের পাশের রাজ্য ভেরাক্রুজে এল তাহিন। তেল888sport live chatের অনেক স্থাপনা রয়েছে এ-অঞ্চলে। এল তাহিন মধ্য আমেরিকার হিসপানিক-পূর্ব-সংস্কৃতির এক উজ্জ্বল নিদর্শন। ৮০০ থেকে ১২০০ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে টোটনাকরা এ-সমৃদ্ধ নগরীতে বসবাস করত বলে মনে করা হয়। টোটনাকা ভাষায় এল তাহিনের অর্থ বজ্রদেবতার নগরী। টোটনাকরা মধ্য আমেরিকার এক ইন্ডিয়ান উপজাতি, যাদের মূল জীবিকা ছিল কৃষি।
দেড় বর্গকিলোমিটার জুড়ে এ-প্রত্নতাত্ত্বিক এলাকায় রয়েছে ৯টি বলগেম কোর্ট ও ১৫০টিরও বেশি দালানের ধ্বংসাবশেষ। সড়ক ও স্কোয়ার তো রয়েছেই। প্রত্নতাত্ত্বিক এলাকায় ঢোকার মুখেই একদিকে রয়েছে একটি সংগ্রহশালা, যেখানে এ-অঞ্চলের সে-সময়কার পুরো সভ্যতা সুন্দরভাবে বর্ণনা করা আছে। বিভিন্ন নিদর্শনও সাজানো রয়েছে। উলটোদিকে খাবার-জায়গা।
তবে এল তাহিনে ঢোকার মুখেই রয়েছে একটি চত্বর, যেখানে টোটনাকদের এক সাংস্কৃতিক আচারের সাথে দর্শকদের পরিচিত করানো হয়। আচারটির নাম ‘পাপানটলা থেকে উড়ন্ত ইন্ডিয়ানরা’। অনেকটা আমাদের দেশের চড়কের মতো। বিশাল উঁচু একটা পোলের উপর একে একে পাঁচজন ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরিহিত ইন্ডিয়ান উঠে একেবারে মাথায় চলে যায়। সেখানে চারজন নিজেদের কোমরে মোটা রশি জড়িয়ে নেয়। বাকি একজন সাপুড়ে বাঁশির মতো একটি বাদ্যযন্ত্র বাজায় ওই পোলের মাথায় বসে। আস্তে আস্তে কোমরে জড়ানো রশিগুলো খুলতে থাকে এবং চার ইন্ডিয়ান কোমরে বাঁধা অবস্থায় শূন্যে ঘুরতে থাকে। এভাবে মিনিট পনেরো ঘোরার পর তারা মাটিতে নেমে আসে। প্রজন্মের পর প্রজন্ম
এ-আচারটি প্রবাহিত হয়ে আজও সবাইকে বিমোহিত করে।
প্রত্নতাত্ত্বিক এলাকার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দ্রষ্টব্য হচ্ছে নিশেজের পিরামিড। মেক্সিকোর পিরামিডগুলো ভেতরে খালি নয়, পুরোটাই পাথরের উপর পাথর বসানো। এ-পিরামিডটি আকারে ছোট, ৬০ ফুটের মতো উঁচু। চতুষ্কোণ নির্মিতির মধ্যে চমৎকার সামঞ্জস্য রয়েছে। ছয়
স্তর-বিশিষ্ট এ-পিরামিডের একদিক দিয়ে সরু সিঁড়ি আছে পিরামিডের শীর্ষে পৌঁছার জন্যে।
এল তাহিনের অধিবাসীরা সে-সময়ে বলগেম নিয়ে খুব মেতে থাকত। এ-ক্রীড়ার সাথে নরবলি ও মৃত্যুর একটা যোগসূত্র খুঁজে পেয়েছিল মেসো আমেরিকানরা। বলগেমের কোর্টগুলো প্রায় ২০০ ফুট পর্যন্ত লম্বা, দুদিকে খাড়া দেয়াল। এখনো দেয়ালের গায়ে রিলিফের কাজে বলগেমের বিভিন্ন পর্যায়ের ছবি উৎকীর্ণ আছে। এক পর্যায়ে বিজয়ী দল পরাজিত দলের অধিনায়ককে দেবতার উদ্দেশে বলি দেয়। জীবনমৃত্যুর মাঝখানে দাঁড়িয়ে এ-খেলাকে বীরত্বের সঙ্গেই গ্রহণ করত টোটনাকরা।
যদি আগে জানতাম যে আমরা মেক্সিকো সিটিতে যাব, তবে হয়তো এতটা দূরের পথ এ-পিরামিড দেখার জন্যে আমরা এল তাহিন আসতাম না। কংগ্রেসের শেষের দিকে আমি আর বাচ্চু ভাবলাম, মেক্সিকো এলাম অথচ মেক্সিকো সিটিতে যাব না এটা কেমন কথা। কবে আবার আসার সুযোগ হবে। এদিকে আমাদের ফেরার টিকেট টামপিকো থেকেই, যা বদল করার উপায় নেই। তাই আমরা দুজন কংগ্রেস শেষ হওয়ার পরদিন ভোরবেলা টামপিকো থেকে মেক্সিকো সিটির ফ্লাইট ধরলাম। পঞ্চাশ মিনিটের মতো লাগে সেখানে পৌঁছাতে। দুদিন একরাত মেক্সিকো সিটি দেখে আবার টামপিকো এলাম দেশে ফেরার জন্যে।
মেক্সিকোর সবচেয়ে বড় আকর্ষণ ছিল তেওতিহান। দেবতাদের নগরী বলে খ্যাত আমেরিকা মহাদেশের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন তেওতিহান। মেক্সিকো সিটি থেকে ৪০ কিলোমিটার উত্তরপূর্বে প্রশস্ত সড়ক ধরে ৪৫ মিনিটেই আমরা পৌঁছে গেলাম এ-অপূর্ব সুন্দর জায়গাটিতে।
তেওতিহানের পত্তন শুরু হয়েছিল সেই ৫০ খ্রিষ্টাব্দে। ৩৫০ থেকে ৪৫০ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও ধর্মীয় ব্যবস্থাদি প্রবর্তন করে রাষ্ট্রকাঠামো গড়ে তোলা হয়। পরবর্তী আরো একশ বছর ধরে তেওতিহানের অর্থনীতি সমৃদ্ধ হয়, রাজ্যের সীমানা
বিস্তৃত হয়। সামাজিক ও ধর্মীয় বিধি-ব্যবস্থার চিত্র অঙ্কিত হয় মুরাল চিত্রকলায়। এরপরই জন888sport free betবৃদ্ধির সূত্র ধরে নানা জটিলতায় নগরী-রাজ্যের অবক্ষয় শুরু হয়। ৭৫০ থেকে ৮০০ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে অভ্যন্তরীণ সংঘাতের ফলে তেওতিহানের অবলুপ্তির সূচনা হয়। ঐতিহাসিক ও প্রত্নতাত্ত্বিকরা ২৫০ থেকে ৯০০ খ্রিষ্টাব্দকে চিহ্নিত করেছেন ক্লাসিক পিরিয়ড হিসেবে। সে-সময়কালে মেক্সিকো আর মায়া অঞ্চলের অধিবাসীরা সমৃদ্ধ সভ্যতা গড়ে তুলেছিল।
তেওতিহানের অধিবাসীরা যেসব দেবদেবীকে মান্য করত, তাদের মধ্যে রয়েছে বৃষ্টির দেবতা, জাগুয়ার, জলদেবী, অগ্নিদেব, সূর্যদেব, চন্দ্রদেবী এবং পালকওয়ালা সাপ, যাকে পরবর্তীকালে আজটেকরা কোয়াটজেকোল বলে অভিহিত করত। এই কোয়াটজেকোলই ছিল আমাদের কংগ্রেসের প্রতীক, কারণ এই দেবতা শিক্ষা ও 888sport live chatকলার প্রবর্তন করেছিলেন। পুরাণে কথিত আছে প্রাচীন তেওতিহানে দেবতারা মিলিত হতেন। তাদের সংগীতে আছে :
যদিও তা ছিল রাত্রি
যদিও তা ছিল না দিন
যদিও ছিল না কোনো আলো
তাঁরা মিলিত হয়েছিলেন
দেবতারা মিলেছিলেন
সেই তেওতিহানে।
দেবতাদেরই একজন হয়ে গেলেন সূর্য। অন্যরা আর দেবলোকে ফিরে গেলেন না, মানবের কল্যাণে নিজেদের উৎসর্গ করলেন। সেখানে সরকার প্রতিষ্ঠিত হলো। তেওতিহানের নৃপতিরা ছিলেন জ্ঞানী ও জ্যোতিষশাস্ত্রজ্ঞ। যখন তাঁরা দেহত্যাগ করতেন, তাঁদের দেহাবশেষের উপর নির্মাণ করা হতো পিরামিড। পিরামিডগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় সূর্য ও চন্দ্রের পিরামিড, যা অতিকায় মানবের হাতে তৈরি বলে মনে করা হয়। নইলে এত বিশাল বিশাল পাথরের উপর পাথর বসিয়ে কী করে নির্মিত হলো এসব পিরামিড?
সূর্যদেবতার পিরামিড পাশে ৭০০ ফুট চওড়া ও ২০০ ফুট উঁচু। একদিকের সিঁড়ি বেয়ে এখনো পর্যটকরা পিরামিডের শীর্ষে আরোহণ করতে পারেন। চন্দ্রদেবীর পিরামিড আকার ও উচ্চতায় কিছুটা ছোট। আজটেকরা বিশ্বাস করে যে সূর্য, চন্দ্র ও পৃথিবীর সৃষ্টি হয়েছিল এই তেওতিহানেই। ৬০০ খ্রিষ্টাব্দে তেওতিহান ছিল পৃথিবীর ষষ্ঠ বৃহত্তম নগরী। এখনো এখানে প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণা ও খননকাজ চলছে।
তেওতিহানের ৪০ মিটার প্রশস্ত সবচেয়ে বড় রাস্তার নাম এভিনিউ অব দ্য ডেড। এর একপ্রান্তে চন্দ্রের পিরামিড। এখনো দুই কিলোমিটারের মতো দীর্ঘ এ-সড়কটি। চমৎকারভাবে জ্যামিতিক আকারে সাজানো অন্য সব ঘরবাড়ি, মন্দির ও পিরামিড। মাঝে মাঝেই প্লাজা বা স্কোয়ার। আরো দুটো দর্শনীয় নিদর্শন হচ্ছে কোয়াটজেকোলের প্রাসাদ এবং জাগুয়ারদের প্রাসাদ।
এভিনিউ অব দ্য ডেড জুড়ে রয়েছে বিভিন্ন হস্ত888sport live chat ও ভাস্কর্যের ফেরিওয়ালাদের উৎপাত। তারা আপনার সঙ্গে হাঁটতে থাকবে এবং আস্তে আস্তে দাম কমাতে শুরু করবে। তাদের 888sport live chatকর্মের প্রতি একটু আগ্রহ দেখালেই বিপদ। নাছোড়বান্দার মতো আপনার সঙ্গে লেগে থাকবে। তাছাড়াও আছে নানা জায়গায় সারি সারি দোকান। প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটক এখানে আসেন। সুতরাং তাদের কথা মনে রেখে এখানে গড়ে উঠেছে বিশাল পর্যটন-বাণিজ্য।
ঘণ্টাতিনেক গাইডের সঙ্গে তেওতিহান ঘুরে আমরা ক্লান্ত হয়ে এলাম এক রেস্টুর্যান্টে। পরম তৃপ্তির সঙ্গে লাঞ্চ খেয়ে আবার ফিরে এলাম মেক্সিকো শহরে। আমরা শনিবার আর রবিবার মেক্সিকোতে ছিলাম বলে ভিড়ের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযোগ পাইনি। তবে বায়ুদূষণ আমাদের 888sport appর চেয়ে বেশি বলে মনে হলো না। য়ভোরবেলা পর্যটন সংস্থার বাসে রওয়ানা দিয়ে পাঁচ ঘণ্টায় আমরা এল তাহিন পৌঁছালাম। যাওয়ার আগে কেন যে তারা সাড়ে তিন ঘণ্টার পথ বলেছিল, সেটা আমাদের কাছে রহস্যই রয়ে গেছে।
তামালিপাসের পাশের রাজ্য ভেরাক্রুজে এল তাহিন। তেল888sport live chatের অনেক স্থাপনা রয়েছে এ-অঞ্চলে। এল তাহিন মধ্য আমেরিকার হিসপানিক-পূর্ব-সংস্কৃতির এক উজ্জ্বল নিদর্শন। ৮০০ থেকে ১২০০ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে টোটনাকরা এ-সমৃদ্ধ নগরীতে বসবাস করত বলে মনে করা হয়। টোটনাকা ভাষায় এল তাহিনের অর্থ বজ্রদেবতার নগরী। টোটনাকরা মধ্য আমেরিকার এক ইন্ডিয়ান উপজাতি, যাদের মূল জীবিকা ছিল কৃষি।
দেড় বর্গকিলোমিটার জুড়ে এ-প্রত্নতাত্ত্বিক এলাকায় রয়েছে ৯টি বলগেম কোর্ট ও ১৫০টিরও বেশি দালানের ধ্বংসাবশেষ। সড়ক ও স্কোয়ার তো রয়েছেই। প্রত্নতাত্ত্বিক এলাকায় ঢোকার মুখেই একদিকে রয়েছে একটি সংগ্রহশালা, যেখানে এ-অঞ্চলের সে-সময়কার পুরো সভ্যতা সুন্দরভাবে বর্ণনা করা আছে। বিভিন্ন নিদর্শনও সাজানো রয়েছে। উলটোদিকে খাবার-জায়গা।
তবে এল তাহিনে ঢোকার মুখেই রয়েছে একটি চত্বর, যেখানে টোটনাকদের এক সাংস্কৃতিক আচারের সাথে দর্শকদের পরিচিত করানো হয়। আচারটির নাম ‘পাপানটলা থেকে উড়ন্ত ইন্ডিয়ানরা’। অনেকটা আমাদের দেশের চড়কের মতো। বিশাল উঁচু একটা পোলের উপর একে একে পাঁচজন ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরিহিত ইন্ডিয়ান উঠে একেবারে মাথায় চলে যায়। সেখানে চারজন নিজেদের কোমরে মোটা রশি জড়িয়ে নেয়। বাকি একজন সাপুড়ে বাঁশির মতো একটি বাদ্যযন্ত্র বাজায় ওই পোলের মাথায় বসে। আস্তে আস্তে কোমরে জড়ানো রশিগুলো খুলতে থাকে এবং চার ইন্ডিয়ান কোমরে বাঁধা অবস্থায় শূন্যে ঘুরতে থাকে। এভাবে মিনিট পনেরো ঘোরার পর তারা মাটিতে নেমে আসে। প্রজন্মের পর প্রজন্ম
এ-আচারটি প্রবাহিত হয়ে আজও সবাইকে বিমোহিত করে।
প্রত্নতাত্ত্বিক এলাকার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দ্রষ্টব্য হচ্ছে নিশেজের পিরামিড। মেক্সিকোর পিরামিডগুলো ভেতরে খালি নয়, পুরোটাই পাথরের উপর পাথর বসানো। এ-পিরামিডটি আকারে ছোট, ৬০ ফুটের মতো উঁচু। চতুষ্কোণ নির্মিতির মধ্যে চমৎকার সামঞ্জস্য রয়েছে। ছয়
স্তর-বিশিষ্ট এ-পিরামিডের একদিক দিয়ে সরু সিঁড়ি আছে পিরামিডের শীর্ষে পৌঁছার জন্যে।
এল তাহিনের অধিবাসীরা সে-সময়ে বলগেম নিয়ে খুব মেতে থাকত। এ-ক্রীড়ার সাথে নরবলি ও মৃত্যুর একটা যোগসূত্র খুঁজে পেয়েছিল মেসো আমেরিকানরা। বলগেমের কোর্টগুলো প্রায় ২০০ ফুট পর্যন্ত লম্বা, দুদিকে খাড়া দেয়াল। এখনো দেয়ালের গায়ে রিলিফের কাজে বলগেমের বিভিন্ন পর্যায়ের ছবি উৎকীর্ণ আছে। এক পর্যায়ে বিজয়ী দল পরাজিত দলের অধিনায়ককে দেবতার উদ্দেশে বলি দেয়। জীবনমৃত্যুর মাঝখানে দাঁড়িয়ে এ-খেলাকে বীরত্বের সঙ্গেই গ্রহণ করত টোটনাকরা।
যদি আগে জানতাম যে আমরা মেক্সিকো সিটিতে যাব, তবে হয়তো এতটা দূরের পথ এ-পিরামিড দেখার জন্যে আমরা এল তাহিন আসতাম না। কংগ্রেসের শেষের দিকে আমি আর বাচ্চু ভাবলাম, মেক্সিকো এলাম অথচ মেক্সিকো সিটিতে যাব না এটা কেমন কথা। কবে আবার আসার সুযোগ হবে। এদিকে আমাদের ফেরার টিকেট টামপিকো থেকেই, যা বদল করার উপায় নেই। তাই আমরা দুজন কংগ্রেস শেষ হওয়ার পরদিন ভোরবেলা টামপিকো থেকে মেক্সিকো সিটির ফ্লাইট ধরলাম। পঞ্চাশ মিনিটের মতো লাগে সেখানে পৌঁছাতে। দুদিন একরাত মেক্সিকো সিটি দেখে আবার টামপিকো এলাম দেশে ফেরার জন্যে।
মেক্সিকোর সবচেয়ে বড় আকর্ষণ ছিল তেওতিহান। দেবতাদের নগরী বলে খ্যাত আমেরিকা মহাদেশের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন তেওতিহান। মেক্সিকো সিটি থেকে ৪০ কিলোমিটার উত্তরপূর্বে প্রশস্ত সড়ক ধরে ৪৫ মিনিটেই আমরা পৌঁছে গেলাম এ-অপূর্ব সুন্দর জায়গাটিতে।
তেওতিহানের পত্তন শুরু হয়েছিল সেই ৫০ খ্রিষ্টাব্দে। ৩৫০ থেকে ৪৫০ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও ধর্মীয় ব্যবস্থাদি প্রবর্তন করে রাষ্ট্রকাঠামো গড়ে তোলা হয়। পরবর্তী আরো একশ বছর ধরে তেওতিহানের অর্থনীতি সমৃদ্ধ হয়, রাজ্যের সীমানা
বিস্তৃত হয়। সামাজিক ও ধর্মীয় বিধি-ব্যবস্থার চিত্র অঙ্কিত হয় মুরাল চিত্রকলায়। এরপরই জন888sport free betবৃদ্ধির সূত্র ধরে নানা জটিলতায় নগরী-রাজ্যের অবক্ষয় শুরু হয়। ৭৫০ থেকে ৮০০ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে অভ্যন্তরীণ সংঘাতের ফলে তেওতিহানের অবলুপ্তির সূচনা হয়। ঐতিহাসিক ও প্রত্নতাত্ত্বিকরা ২৫০ থেকে ৯০০ খ্রিষ্টাব্দকে চিহ্নিত করেছেন ক্লাসিক পিরিয়ড হিসেবে। সে-সময়কালে মেক্সিকো আর মায়া অঞ্চলের অধিবাসীরা সমৃদ্ধ সভ্যতা গড়ে তুলেছিল।
তেওতিহানের অধিবাসীরা যেসব দেবদেবীকে মান্য করত, তাদের মধ্যে রয়েছে বৃষ্টির দেবতা, জাগুয়ার, জলদেবী, অগ্নিদেব, সূর্যদেব, চন্দ্রদেবী এবং পালকওয়ালা সাপ, যাকে পরবর্তীকালে আজটেকরা কোয়াটজেকোল বলে অভিহিত করত। এই কোয়াটজেকোলই ছিল আমাদের কংগ্রেসের প্রতীক, কারণ এই দেবতা শিক্ষা ও 888sport live chatকলার প্রবর্তন করেছিলেন। পুরাণে কথিত আছে প্রাচীন তেওতিহানে দেবতারা মিলিত হতেন। তাদের সংগীতে আছে :
যদিও তা ছিল রাত্রি
যদিও তা ছিল না দিন
যদিও ছিল না কোনো আলো
তাঁরা মিলিত হয়েছিলেন
দেবতারা মিলেছিলেন
সেই তেওতিহানে।
দেবতাদেরই একজন হয়ে গেলেন সূর্য। অন্যরা আর দেবলোকে ফিরে গেলেন না, মানবের কল্যাণে নিজেদের উৎসর্গ করলেন। সেখানে সরকার প্রতিষ্ঠিত হলো। তেওতিহানের নৃপতিরা ছিলেন জ্ঞানী ও জ্যোতিষশাস্ত্রজ্ঞ। যখন তাঁরা দেহত্যাগ করতেন, তাঁদের দেহাবশেষের উপর নির্মাণ করা হতো পিরামিড। পিরামিডগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় সূর্য ও চন্দ্রের পিরামিড, যা অতিকায় মানবের হাতে তৈরি বলে মনে করা হয়। নইলে এত বিশাল বিশাল পাথরের উপর পাথর বসিয়ে কী করে নির্মিত হলো এসব পিরামিড?
সূর্যদেবতার পিরামিড পাশে ৭০০ ফুট চওড়া ও ২০০ ফুট উঁচু। একদিকের সিঁড়ি বেয়ে এখনো পর্যটকরা পিরামিডের শীর্ষে আরোহণ করতে পারেন। চন্দ্রদেবীর পিরামিড আকার ও উচ্চতায় কিছুটা ছোট। আজটেকরা বিশ্বাস করে যে সূর্য, চন্দ্র ও পৃথিবীর সৃষ্টি হয়েছিল এই তেওতিহানেই। ৬০০ খ্রিষ্টাব্দে তেওতিহান ছিল পৃথিবীর ষষ্ঠ বৃহত্তম নগরী। এখনো এখানে প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণা ও খননকাজ চলছে।
তেওতিহানের ৪০ মিটার প্রশস্ত সবচেয়ে বড় রাস্তার নাম এভিনিউ অব দ্য ডেড। এর একপ্রান্তে চন্দ্রের পিরামিড। এখনো দুই কিলোমিটারের মতো দীর্ঘ এ-সড়কটি। চমৎকারভাবে জ্যামিতিক আকারে সাজানো অন্য সব ঘরবাড়ি, মন্দির ও পিরামিড। মাঝে মাঝেই প্লাজা বা স্কোয়ার। আরো দুটো দর্শনীয় নিদর্শন হচ্ছে কোয়াটজেকোলের প্রাসাদ এবং জাগুয়ারদের প্রাসাদ।
এভিনিউ অব দ্য ডেড জুড়ে রয়েছে বিভিন্ন হস্ত888sport live chat ও ভাস্কর্যের ফেরিওয়ালাদের উৎপাত। তারা আপনার সঙ্গে হাঁটতে থাকবে এবং আস্তে আস্তে দাম কমাতে শুরু করবে। তাদের 888sport live chatকর্মের প্রতি একটু আগ্রহ দেখালেই বিপদ। নাছোড়বান্দার মতো আপনার সঙ্গে লেগে থাকবে। তাছাড়াও আছে নানা জায়গায় সারি সারি দোকান। প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটক এখানে আসেন। সুতরাং তাদের কথা মনে রেখে এখানে গড়ে উঠেছে বিশাল পর্যটন-বাণিজ্য।
ঘণ্টাতিনেক গাইডের সঙ্গে তেওতিহান ঘুরে আমরা ক্লান্ত হয়ে এলাম এক রেস্টুর্যান্টে। পরম তৃপ্তির সঙ্গে লাঞ্চ খেয়ে আবার ফিরে এলাম মেক্সিকো শহরে। আমরা শনিবার আর রবিবার মেক্সিকোতে ছিলাম বলে ভিড়ের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযোগ পাইনি। তবে বায়ুদূষণ আমাদের 888sport appর চেয়ে বেশি বলে মনে হলো না। য়নেই। তাই আমরা দুজন কংগ্রেস শেষ হওয়ার পরদিন ভোরবেলা টামপিকো থেকে মেক্সিকো সিটির ফ্লাইট ধরলাম। পঞ্চাশ মিনিটের মতো লাগে সেখানে পৌঁছাতে। দুদিন একরাত মেক্সিকো সিটি দেখে আবার টামপিকো এলাম দেশে ফেরার জন্যে।
মেক্সিকোর সবচেয়ে বড় আকর্ষণ ছিল তেওতিহান। দেবতাদের নগরী বলে খ্যাত আমেরিকা মহাদেশের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন তেওতিহান। মেক্সিকো সিটি থেকে ৪০ কিলোমিটার উত্তরপূর্বে প্রশস্ত সড়ক ধরে ৪৫ মিনিটেই আমরা পৌঁছে গেলাম এ-অপূর্ব সুন্দর জায়গাটিতে।
তেওতিহানের পত্তন শুরু হয়েছিল সেই ৫০ খ্রিষ্টাব্দে। ৩৫০ থেকে ৪৫০ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও ধর্মীয় ব্যবস্থাদি প্রবর্তন করে রাষ্ট্রকাঠামো গড়ে তোলা হয়। পরবর্তী আরো একশ বছর ধরে তেওতিহানের অর্থনীতি সমৃদ্ধ হয়, রাজ্যের সীমানা
বিস্তৃত হয়। সামাজিক ও ধর্মীয় বিধি-ব্যবস্থার চিত্র অঙ্কিত হয় মুরাল চিত্রকলায়। এরপরই জন888sport free betবৃদ্ধির সূত্র ধরে নানা জটিলতায় নগরী-রাজ্যের অবক্ষয় শুরু হয়। ৭৫০ থেকে ৮০০ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে অভ্যন্তরীণ সংঘাতের ফলে তেওতিহানের অবলুপ্তির সূচনা হয়। ঐতিহাসিক ও প্রত্নতাত্ত্বিকরা ২৫০ থেকে ৯০০ খ্রিষ্টাব্দকে চিহ্নিত করেছেন ক্লাসিক পিরিয়ড হিসেবে। সে-সময়কালে মেক্সিকো আর মায়া অঞ্চলের অধিবাসীরা সমৃদ্ধ সভ্যতা গড়ে তুলেছিল।
তেওতিহানের অধিবাসীরা যেসব দেবদেবীকে মান্য করত, তাদের মধ্যে রয়েছে বৃষ্টির দেবতা, জাগুয়ার, জলদেবী, অগ্নিদেব, সূর্যদেব, চন্দ্রদেবী এবং পালকওয়ালা সাপ, যাকে পরবর্তীকালে আজটেকরা কোয়াটজেকোল বলে অভিহিত করত। এই কোয়াটজেকোলই ছিল আমাদের কংগ্রেসের প্রতীক, কারণ এই দেবতা শিক্ষা ও 888sport live chatকলার প্রবর্তন করেছিলেন। পুরাণে কথিত আছে প্রাচীন তেওতিহানে দেবতারা মিলিত হতেন। তাদের সংগীতে আছে :
যদিও তা ছিল রাত্রি
যদিও তা ছিল না দিন
যদিও ছিল না কোনো আলো
তাঁরা মিলিত হয়েছিলেন
দেবতারা মিলেছিলেন
সেই তেওতিহানে।
দেবতাদেরই একজন হয়ে গেলেন সূর্য। অন্যরা আর দেবলোকে ফিরে গেলেন না, মানবের কল্যাণে নিজেদের উৎসর্গ করলেন। সেখানে সরকার প্রতিষ্ঠিত হলো। তেওতিহানের নৃপতিরা ছিলেন জ্ঞানী ও জ্যোতিষশাস্ত্রজ্ঞ। যখন তাঁরা দেহত্যাগ করতেন, তাঁদের দেহাবশেষের উপর নির্মাণ করা হতো পিরামিড। পিরামিডগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় সূর্য ও চন্দ্রের পিরামিড, যা অতিকায় মানবের হাতে তৈরি বলে মনে করা হয়। নইলে এত বিশাল বিশাল পাথরের উপর পাথর বসিয়ে কী করে নির্মিত হলো এসব পিরামিড?
সূর্যদেবতার পিরামিড পাশে ৭০০ ফুট চওড়া ও ২০০ ফুট উঁচু। একদিকের সিঁড়ি বেয়ে এখনো পর্যটকরা পিরামিডের শীর্ষে আরোহণ করতে পারেন। চন্দ্রদেবীর পিরামিড আকার ও উচ্চতায় কিছুটা ছোট। আজটেকরা বিশ্বাস করে যে সূর্য, চন্দ্র ও পৃথিবীর সৃষ্টি হয়েছিল এই তেওতিহানেই। ৬০০ খ্রিষ্টাব্দে তেওতিহান ছিল পৃথিবীর ষষ্ঠ বৃহত্তম নগরী। এখনো এখানে প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণা ও খননকাজ চলছে।
তেওতিহানের ৪০ মিটার প্রশস্ত সবচেয়ে বড় রাস্তার নাম এভিনিউ অব দ্য ডেড। এর একপ্রান্তে চন্দ্রের পিরামিড। এখনো দুই কিলোমিটারের মতো দীর্ঘ এ-সড়কটি। চমৎকারভাবে জ্যামিতিক আকারে সাজানো অন্য সব ঘরবাড়ি, মন্দির ও পিরামিড। মাঝে মাঝেই প্লাজা বা স্কোয়ার। আরো দুটো দর্শনীয় নিদর্শন হচ্ছে কোয়াটজেকোলের প্রাসাদ এবং জাগুয়ারদের প্রাসাদ।
এভিনিউ অব দ্য ডেড জুড়ে রয়েছে বিভিন্ন হস্ত888sport live chat ও ভাস্কর্যের ফেরিওয়ালাদের উৎপাত। তারা আপনার সঙ্গে হাঁটতে থাকবে এবং আস্তে আস্তে দাম কমাতে শুরু করবে। তাদের 888sport live chatকর্মের প্রতি একটু আগ্রহ দেখালেই বিপদ। নাছোড়বান্দার মতো আপনার সঙ্গে লেগে থাকবে। তাছাড়াও আছে নানা জায়গায় সারি সারি দোকান। প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটক এখানে আসেন। সুতরাং তাদের কথা মনে রেখে এখানে গড়ে উঠেছে বিশাল পর্যটন-বাণিজ্য। ঘণ্টাতিনেক গাইডের সঙ্গে তেওতিহান ঘুরে আমরা ক্লান্ত হয়ে এলাম এক রেস্টুর্যান্টে। পরম তৃপ্তির সঙ্গে লাঞ্চ খেয়ে আবার ফিরে এলাম মেক্সিকো শহরে। আমরা শনিবার আর রবিবার মেক্সিকোতে ছিলাম বলে ভিড়ের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযোগ পাইনি। তবে বায়ুদূষণ আমাদের 888sport appর চেয়ে বেশি বলে মনে হলো না।


Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.