যতীন সরকার : সত্যনিষ্ঠ সাধক

এই লেখাটির একটি উপশিরোনাম হতে পারে, ‘যতীন সরকারকে কেন দরকার’। বস্তুত এই শিরোনামটি আমি দিতে বলেছিলাম তাঁর ৬০তম জন্মবার্ষিকীতে তাঁর সম্পর্কে কয়েকজন লেখক-888sport live footballিকের মন্তব্য নিয়ে করা সংবাদ পত্রিকার এক সাংবাদিকের 888sport world cup rateের। তিনি অবশ্য তাঁর মতো করেই একটা শিরোনাম দিয়েছিলেন, 888sport world cup rateটিও ছিল সংক্ষিপ্ত।

কিন্তু ওই শিরোনাম প্রস্তাব করার পেছনে আমার একটা কারণ ছিল, এবং তা ছিল যতীন সরকারের চিন্তাপ্রকাশের ক্ষেত্রে এক অসামান্যতার প্রতি ইঙ্গিত দেওয়া। তাঁর অনেক 888sport liveের শিরোনামই প্রচলিত অ্যাকাডেমিক 888sport liveচর্চা থেকে আলাদা। কখনো সেগুলি দীর্ঘ; কখনো বক্রোক্তিতে সাজানো, অথবা সরস; কখনো চমক সৃষ্টিকারী। দুটি শিরোনামের কথা মনে পড়ে – ‘ইকবাল আমাদের’ এবং ‘আমি দ্বিজাতিতত্ত্বে বিশ্বাস করি’। কিন্তু ধৈর্য্য নিয়ে লেখাদুটি পড়লে দেখা যাবে, কবি ইকবালের ওপর থেকে প্রতিক্রিয়াশীলতার আবরণ সরিয়ে তিনি তাঁর প্রত্যয়দীপ্ত 888sport app download apkগুলি পড়ার আহ্বান জানাচ্ছেন। দ্বিজাতিতত্ত্বের বিষয়টিও পরিষ্কার হয়, যখন তিনি বুঝিয়ে দেন, এটি মহামতি লেনিনের দ্বিজাতিতত্ত্ব। যেসব পাঠক যতীন সরকারের মার্কসবাদী চিন্তাচেতনার স্বরূপ সম্পর্কে জ্ঞাত, তাঁরা এই ঘোষণার আলোকে ওই দ্বিজাতিতত্ত্বের অনেক ব্যাখ্যা দিতে পারেন। যেমন, একদিকে বুর্জোয়াদের তৈরি জাতি বা ন্যাশন, যাতে শ্রমিক-কৃষকের কোনো প্রবেশাধিকার নেই : অন্যদিকে শ্রেণিসংগ্রামের সফল পরিণতিতে সৃষ্ট ন্যাশন, যাতে প্রবেশাধিকার সকলের জন্য উন্মুক্ত। আবার লেনিন যে পুঁজিবাদের অধীনে সৃষ্ট আন্তর্জাতিকতাবাদ বা ইন্টারন্যাশনালিজমের ধারণাটি নাকচ করে দিয়েছিলেন, বিশেষ করে প্রথম মহাযুদ্ধের পর সুবিধাবাদী প্রবণতার কারণে সেকেন্ড ইন্টারন্যাশনাল (১৮৮৯-১৯১৪) ভেঙে পড়ার পর, এবং আন্তর্জাতিক সমাজতন্ত্রের পরিচ্ছন্ন চর্চাকে সমুন্নত রাখার সংগ্রামে নেমেছিলেন, সে-বিষয়টিও গুরুত্ব পাবে। আমার মনে হয়েছে, যতীন সরকারের 888sport liveের শিরোনামগুলি ডায়ালেক্টিকধর্মী চিন্তার একটি অবতারণা করে, যা তাঁর পুরো লেখা জুড়েই থাকে। ডায়ালেক্টিকের অর্থই হচ্ছে নানা মত ও ধারণাকে ব্যাখ্যা ও পরীক্ষা করে, এবং নির্মোহ তদন্ত করে, সত্যের উন্মোচন। তিনি তাঁর সকল লেখালেখিতে এই কাজটি করেছেন। সেজন্য  আমার এই লেখার শিরোনামটিও যথার্থ – তিনি সত্যনিষ্ঠ এবং সত্যসন্ধ। তাঁকে বুঝতে হলে প্রথমত সত্যের ওপর আস্থা থাকতে হবে। আমরা জানি উত্তর-আধুনিক সময়ে সত্যকে আর একক-বিশিষ্ট, চির অপরিবর্তনশীল এবং অলঙ্ঘনীয় কোনো নির্মাণ হিসেবে দেখা হয় না, বরং বলা হয় এই একক-বিশিষ্ট বর্ণনার আড়ালে গড়ে ওঠা আধুনিকবাদের মহাবয়ানগুলিকে (প্রগতি, জ্ঞান, যুক্তি) বৈধতা দেওয়ার একটি হাতিয়ার হিসেবে। এই বৈধতাকে দুর্বল করে দেয় কেবল একটি প্রশ্ন : কার? কার প্রগতি, কার জ্ঞান, কার যুক্তি? দেখা যাবে এই প্রগতি ধনিক শ্রেণির, পুঁজিবাদী নানা প্রতিষ্ঠান ও যন্ত্রের; যুক্তিটাও তাদের, জ্ঞানটাও তাদের নানা জ্ঞানসূত্রে ও কেন্দ্রে উৎপাদিত।

উত্তর-আধুনিকবাদ এজন্য সত্যকে বহুবচনে সাজায় – বলে, সত্য নয়, সত্যগুলি। যতীন সরকার
উত্তর-আধুনিকবাদকে কখনো বিবেচনায় আনেননি – এবং সংগত কারণেই, যেহেতু এটিও পশ্চিমের সৃষ্টি,
নব্য-পুঁজিবাদের সময়ে এর বিকাশ। কিন্তু এর যে কিছু ব্যতিক্রমী চিন্তা আছে – কেন্দ্রের আধিপত্য, কুলীন শ্রেণির প্রাধান্য, সংস্কৃতির উচ্চ-নিচ শ্রেণিকরণ, এমন কি আধুনিকতার ‘মানব’ সংজ্ঞা – এসবের বিপরীতে কিছু প্রতি-বয়ান তৈরির উদ্যোগ আছে, সেগুলির সঙ্গে বিরোধ থাকার কোনো কারণ নেই। ডায়ালেক্টিকের সুবিধা হলো এর মধ্য দিয়ে কিছু সত্যকে (যেগুলিকে আমরা মানবসত্য বলতে পারি) যৌক্তিক বলে গ্রহণ করে, অন্য অনেক সত্যের বা ধারণার পেছনের নির্মাণ-ইতিহাসটা উদ্ঘাটন করে সেগুলিকে প্রশ্নবিদ্ধ করা যায়। যেমন আধুনিকতার সৃষ্ট মানব। কিন্তু ওই মানব যে মূলত পুরুষ, শ্বেতাঙ্গ, কুলীন শ্রেণির, শিক্ষিত ও খ্রিষ্টধর্মের অনুসারী সেটি জানা হলে তাকে সকলের প্রতিনিধি কিভাবে বলি? আর যুক্তিতর্ক শুধু যে পশ্চিমের একার, ডায়ালেক্টিক সেই চিন্তাকেও তো হাস্যকর করে তোলে।

তাঁর ষাটতম জন্মবার্ষিকীতে যতীন সরকারকে আমি কেন ‘দরকার’ সেকথা বলেছিলাম তার একটা ব্যাখ্যা দেওয়ার আগে তাঁর কৌত‚হল জাগানো আরেকটি শিরোনামের উল্লেখ করতে চাই, যেহেতু ওই শিরোনামযুক্ত বইটির কারণে তাঁর সঙ্গে আমার প্রথম আলাপ, এবং আলাপ থেকে ঘনিষ্ঠতা হয়। এজন্য বইটিকে আমি একটি আলাদা গুরুত্ব দিই। শিরোনামটি হলো পাকিস্তানের জন্ম মৃত্যু-দর্শন। এ-বইটির জন্য তিনি প্রথম আলো বর্ষসেরা মননশীল গ্রন্থের 888sport app download bd পান। সেই বছর (১৪১১ সনে) সৃজনশীল বই হিসেবে আমার একটি গল্পগ্রন্থ পুরস্কৃত হয়, এবং এর ফলে 888sport app download bd প্রদান অনুষ্ঠানে তাঁর পাশে বসার সুযোগ হয়। আমি সুযোগটিকে কাজে লাগিয়ে তাঁর সঙ্গে কিছুক্ষণ নানা বিষয়ে (যেগুলির প্রতি আমার মনোযোগ, তাঁর মতো কিছু মনস্বী লেখকের কারণে, সুসংহত হয়েছে) কথা বলি। ওই বছর মননশীল বই হিসেবে হায়দার আকবর খান রনোর একটি বইও পুরস্কৃত হয়। তাঁকেও তাঁর পরিচ্ছন্ন রাজনীতি এবং লেখালেখির জন্য আমি 888sport apk download apk latest version করি। ওই সন্ধ্যায় বেশ কিছু সময় ওই দুজনের সান্নিধ্য পাওয়াটা ছিল আরেকটা 888sport app download bd পাওয়ার মতো। পরে ফেব্রæয়ারির বইমেলাতে প্রিয়ভাজন লুৎফর রহমান রিটনের উপস্থাপিত ও মেলা থেকে সরাসরি প্রচারিত একটা অনুষ্ঠানে মিনিট কয়েকের জন্য যতীন সরকারের সঙ্গে আমিও চ্যানেল আইয়ের পর্দায় ছিলাম। এরপর কিছুক্ষণ তাঁর সঙ্গ পেয়েছিলাম। আমার মনে আছে, প্রথম আলো 888sport app download bd হাতে নেওয়ার দিন তাঁর বইটির শিরোনাম দেখে আমি একটু অবাকই হয়েছিলাম। তাঁকে জিজ্ঞেস করতেই একটুখানি হেসে বলেছিলেন, কয়েক পৃষ্ঠা পড়লেই বুঝবেন। কবি সাজ্জাদ শরিফের বদান্যতায় সেদিনই বইটি পেয়েছিলাম। এবং পড়তে গিয়ে মনে পড়েছিল প্রশ্নটি তাঁকে করার আগেই কিভাবে যেন বুঝেছিলাম, শিরোনামটি তাঁর ‘ক্ষুদ্র’ ইতিহাস দিয়ে বৃহৎ ইতিহাসকে কুপোকাত করার একটি উপায়। ‘ক্ষুদ্র’ ইতিহাস হচ্ছে, তিনি যাকে ‘সামান্য মানুষ’ বলেন, অর্থাৎ তাঁর নিজের (এবং ডায়ালেক্টিকের নিয়ম অনুযায়ী, তিনি যে অসামান্য, সেই সত্যটিও শিগগির বেরিয়ে আসে) এবং সাধারণ মানুষের, এবং তথাকথিত বৃহৎ ইতিহাস হচ্ছে পাকিস্তানের, গোষ্ঠী-রাজনীতির, শ্রেণির ছলচাতুরির, যেসবের ফলে ‘ক্ষুদ্র’ মানুষের (প্রান্তিক চাষি, খেটে খাওয়া মানুষ, সাব-অল্টার্ন) ইতিহাস চাপা পড়ে যায়। কবি ডব্লিউ বি ইয়েটস, যিনি আইরিশদের উপনিবেশমুক্তির আন্দোলনে গভীরভাবে জড়িয়ে পড়েছিলেন, অথচ কৌলীন্যকে – অ্যারিস্টোক্র্যাসিকে – সমর্থন করতেন, তাঁর এক 888sport app download apkয় উপনিবেশী শক্তির বিরুদ্ধে ‘ক্ষুদ্র’ মানুষের প্রতিরোধে যে সহিংসতা এবং রক্তপাতের সূচনা হয়, তা দেখে মর্মাহত হয়ে লিখেছিলেন, এ যেন ছোট ছোট পথ (যেমন অলিগলি) নিজেদের রাজপথের উপর ছুড়ে দিচ্ছে। অলিগলি হচ্ছে ক্ষুদ্র মানুষ, রাজপথ হচ্ছে কুলীন সমাজ। যতীন সরকারের আত্মজৈবনিক বইটি এই রাজপথের ওপর গলিপথের আছড়ে পড়া, এবং রাজপথের পাতানো ন্যারেটিভকে ছিঁড়ে-খুঁড়ে শেকড়ের ইতিহাস (যেসব শিকড় রাজপথ তার পিচের নিচে ঢেকে দেয়) পুনঃবর্ণনার এক আয়োজন।

যতীন সরকারকে দরকার ছিল তাঁর ষাটতম জন্মদিনে, যখন গণতন্ত্রে ফিরেও দেশটা ডানপন্থা, ধর্মীয় উগ্রবাদ, সাম্প্রদায়িকতা এবং শ্রেণি শোষণ ও শাসনের পুনরাবৃত্তি দেখেছে। মন জাগানো, প্রশ্ন করা, প্রথা ও প্রতিষ্ঠান থেকে বেরিয়ে মানুষের মুক্তির পথগুলি অন্বেষণ ও তৈরি করা – এরকম অনেক অনিবার্যতাও ক্রমশ অপস্রিয়মাণ হচ্ছিল। আমার মনে হয়েছে – যতীন সরকারের লেখাগুলি মনোযোগ দিয়ে পড়লে অন্তত কয়েকটি ক্ষেত্রে পায়ের নিচে শক্ত ভূমি পাওয়া যাবে, যার ওপর দাঁড়িয়ে আমাদের প্রত্যয় জাগবে। এগুলোর মধ্যে আছে পুঁজিবাদের শাসন থেকে মুক্তি এবং ন্যায়ভিত্তিক একটি সমাজ গড়া, মুক্তবুদ্ধির বিকাশ ও চর্চা, আধুনিকতার নানা ভ্রান্তি ও চাকচিক্যের আড়ালে চলে যাওয়া লোকমনীষা, প্রজ্ঞা ও লোকজদর্শনের গুরুত্বকে উপলব্ধি করা; কুসংস্কার, ধর্মান্ধতা, অপবিশ্বাস এবং অপ888sport apkের বিরুদ্ধে 888sport apkমনস্কতার গুরুত্ব; মানবিকতা ও মানবপ্রগতিতে পূর্ণ আস্থা, এবং ব্যক্তি, সমাজ ও 888sport live footballবিচারে ফ্রয়েডীয় মনস্তত্ত্বের পরিবর্তে উত্তর-ফ্রয়েডীয় তথা ইভান পাভলভ ও অন্যদের বিহেভিয়রিস্ট বা  আচরণপন্থী মনস্তত্ত্বকে প্রাধান্য দেওয়া। 888sport apps স্বাধীন হওয়ার পর আমরা যে নতুন সমাজ ও রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখেছিলাম তা কেন দ্রুতই মিলিয়ে গেল, সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে দেখা যাবে, দেশ স্বাধীন হলেও উপনিবেশী চিন্তাভাবনা এবং প্রায় সকল প্রতিষ্ঠানের উপনিবেশী মডেলকে আঁকড়ে থাকা, পুঁজিবাদের ফাঁদে আমাদের স্বেচ্ছায় পা ফেলা এবং তার শক্তিবৃদ্ধিতে সায় দিয়ে যাওয়া, সমাজতন্ত্রের আদর্শকে কাগজে-কিতাবে তুলে রেখে বাস্তবে তার দিকে পিঠ ফিরিয়ে দেওয়া; ধর্মাশ্রয়ী রাজনীতি, অপসংস্কৃতি এবং সাম্প্রদায়িকতাকে ক্রমাগত বাড়তে দেওয়া; বৈষম্য, অন্যায় ও অনাচার এবং বিচারহীনতার বিরুদ্ধে মানুষকে সংগঠিত করার অক্ষমতা এবং আমাদের রাজনীতির দেউলিয়াত্ব। কারণ আরো আছে – আমাদের নগরকেন্দ্রিক, ‘আধুনিক’ জীবনযাত্রায় প্রান্তকে ক্রমাগত অদৃশ্য করে দেওয়া, বস্তুতান্ত্রিকতাকে শিরোধার্য করে পণ্যায়ন, লোভের সংস্কৃতি এবং দুর্নীতিকে বাধাহীনভাবে এগোতে দেওয়া, এবং যুক্তিতর্কের পরিবর্তে পেশিশক্তি এবং সহিংসতাকে প্রাধান্য দেওয়া। আমি জানি, তালিকাটি আরো দীর্ঘ। কিন্তু আপাতত এই কয়েকটি বিষয়ের দিকে আমাদের দৃষ্টি নিবদ্ধ করলে দেখতে পাব, যতীন সরকারও সেই সত্তরের দশক থেকেই এসবের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করে গেছেন, আমাদের সতর্ক করেছেন, আদর্শ থেকে দূরে গেলে কী পরিণতি হতে পারে, সে-সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা দিয়েছেন। আমি স্বীকার করি, তাঁর লেখালেখির সমৃদ্ধ ভাণ্ডারের বেশ কিছুটাই আমার অগোচরে রয়ে গেছে। কিন্তু সেই আশির দশকের শুরু থেকে পত্রপত্রিকায় তাঁর লেখা চোখে পড়লে আগ্রহ নিয়ে পড়েছি, তাঁর কয়েকটি বইও আমার সংগ্রহে আছে। তাঁর কিছু বক্তৃতা শুনেছি, পত্র-পত্রিকায় দেওয়া সাক্ষাৎকারও পড়েছি। ফলে তাঁর বিষয়-আশয়, তাঁর রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং জীবনদর্শন, তাঁর 888sport live football ও নন্দনচিন্তা ও তাঁর মার্কসবাদী বীক্ষণ সম্পর্কে আমার মোটামুটি একটা পরিষ্কার ধারণা আছে। একটি বিষয় অবশ্য আমাকে অবাক করে – এবং তা হলো তাঁর ভাবনাচিন্তায় মৌলিক কোনো পরিবর্তন বা বিবর্তন আমার চোখে পড়েনি। যা বরং স্পষ্ট হয়েছে, তা হচ্ছে, তাঁর প্রতিজ্ঞা, প্রত্যয় এবং চিন্তা দৃঢ় থেকে দৃঢ়তর হওয়া। এর কারণ হচ্ছে, জীবনের একটা পর্যায়ে এসে (মার্কসবাদী দর্শনে – দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদে – তাঁর আস্থাস্থাপনের পর থেকেই) তিনি তাঁর বিশ্বাসের ও আদর্শের ঘর গুছিয়েছেন। সেই ঘরে মানুষ ও সমাজ নিয়ে তাঁর ভাবনাগুলিই তাদের নানা প্রকাশসহ ঠাঁই নিয়েছে। 888sport appsের সমাজ ও রাজনীতিতে কত পরিবর্তন হলো, কত অদলবদল ও মোড় ফেরার ঘটনা ঘটল; কিন্তু তিনি তাঁর আদর্শে ও বিশ্বাসে অটল থাকলেন।

আমাদের সময়ে এরকম মানুষ কি হাতের কয়েকটি আঙুলেই গুণে ফেলা যায় না?

তাঁর লেখালেখির শৈলী, চিন্তা প্রকাশে যথাশব্দের প্রয়োগ, বক্রোক্তি-আয়রনি-রসবোধ এবং পাঠককে গভীরতার দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য একটুখানি চমকের ব্যবহার – এ সবই আছে আগের মতো। তার মানে তিনি স্থির আছেন – এখনো মার্কসবাদ থেকে সরে যাননি, এখনো সাংস্কৃতিক বিপ্লব সম্পর্কে তিনি আশান্বিত, এখনো বিশ্বাস করেন মানুষ জাগবে। স্থির থাকা আর স্থবিরতা এক জিনিস নয়, কারণ যতীন সরকারের মনের ও চিন্তার ভুবন চিরজঙ্গম, গতিশীল। সেই গতিশীলতা তিনি ছড়িয়ে দেন পাঠকের মধ্যে।

যতীন সরকারের 888sport apkমনস্কতার পরিচয় পাওয়া যায় যুক্তি-তর্কে, সূক্ষ্ম বিচার-বিশ্লেষণে তাঁর আস্থা থেকে; কোনো বিষয়ের গভীরে যাওয়ার, কয়েক দৃষ্টিকোণ থেকে বিষয়টিকে দেখে একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর তাঁর প্রয়াস থেকে। তিনি পশ্চিমের 888sport apkকে গ্রহণ করেছেন, কিন্তু পশ্চিমকেই একমাত্র ধ্রুব মানেননি, এর আধুনিকতাকেও প্রশ্ন করেছেন। 888sport apk যে সতত উদ্ভাবনশীল চিন্তার একটি সম্মিলিত প্রকাশ, যাতে নতুন তথ্য ও জ্ঞান এবং উদ্ভাবন পরিবর্তন আনতে পারে, তিনি তা মনে করেন। পশ্চিমা আধুনিকতার প্রাবল্যে আমাদের লৌকিক মনীষা ও দর্শনের শক্তি কিছুতেই খর্ব হয় না, তার ধার ও গভীরতা কোনোক্রমেই ম্লান হয় না, তিনি তা বিশ্বাস করেন। আরজ আলী মাতুব্বরকে তিনি একজন আধুনিক দার্শনিক মনে করেন, কারণ মাতুব্বরের দর্শন লোকাশ্রিত চিন্তা ও চেতনায় জারিত, নিকষিত। এবং তা সম্মুখদর্শী। আধুনিকতা বলতে যদি চলমান সময়কে ধরে এগিয়ে যাওয়া এবং নতুনের সন্ধান করা বোঝায়, তবে মাতুব্বরের দর্শন তো তাই করেছে।

যতীন সরকার বাংলা 888sport live footballের ছাত্র ও শিক্ষক হলেও 888sport apkের যুক্তিগুলি নানান ক্ষেত্র থেকে আহরণ করেছেন, এবং সমাজদর্শন ও মনো888sport apkের আধুনিক তত্ত¡ ও বিচারের খোঁজখবর তিনি রাখেন। তিনি মনোস্তত্ত্ববিদ ও মনোচিকিৎসাবিদ সিগমুন্ড ফ্রয়েডের অবচেতনের ধারণাগুলির সঙ্গে পরিচিত ছিলেন, কিন্তু তাঁর মার্কসবাদী দর্শন ফ্রয়েডকে সর্বতোভাবে গ্রহণ করাকে সমর্থন করেনি। তার কারণ ফ্রয়েডীয় মনোবীক্ষণে অবচেতনের (এবং অবচেতনের সঙ্গে সচেতন-অহংয়ের দ্বন্দ্বের, এবং এর ফলে সৃষ্ট অবচেতনের নানা প্রকাশের) যে প্রভাব দেখা যায়, ব্যক্তির আচরণের পেছনেও কার্যকর, তা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণযোগ্য নয় বলে তিনি তার পরিবর্তে আচরণের পাভলভীয় মতগুলিকেই গ্রহণ করেছেন, যেহেতু সেসব পরীক্ষাগারে প্রমাণযোগ্য। আমরা জানি, শেষ পর্যন্ত মনোবিশ্লেষণের কোনো ধারণাই শতভাগ প্রমাণযোগ্য এবং অকাট্য নয়, তা সম্ভবও নয়, এবং নানা মনো888sport apkীর নানা মত থাকাই এখানে যুক্তিযুক্ত। কার্ল ইয়ুং থেকে নিয়ে পাভলভ, বিএফ স্কিনার এবং জাক লাকাঁর মনোবিশ্লেষণ ফ্রয়েড থেকে অনেকটাই পৃথক। পাভলভ মনে করতেন, ব্যক্তির আচরণ সবটাই অবচেতনের প্রভাবে তৈরি হয় না, বরং তাতে বাইরের উত্তেজক বা স্টিমুলাইয়ের একটা বড় প্রভাব রয়েছে। এজন্য আচরণ পরিবর্তন করা যায়, শেখানোও যায়। তবে মার্কসবাদীরা যে-কারণে ফ্রয়েড অপেক্ষা পাভলভকে বেছে নিয়েছেন, তা হচ্ছে অবচেতনের প্রসঙ্গে ফ্রয়েডের যৌনতা বা সেক্সকে প্রাধান্য দেওয়া, এবং ব্যক্তিকে সমষ্টি থেকে বিচ্ছিন্ন করা। পাভলভ তার ‘ধ্রæপদী গড়ন’ বা ‘ক্ল্যাসিকাল ফর্মেশন’ তত্তে¡ দেখিয়েছেন, আচরণ স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাইরের উত্তেজক দ্বারা প্রভাবিত। পাভলভ সম্পর্কে যতীন সরকারের চিন্তাভাবনা গড়তে সহায়তা করেছেন মনো888sport apkী ও মনোচিকিৎসক ধীরেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁর মানবমন নামের ত্রৈমাসিক পত্রিকায় যেসব 888sport live ছাপা হতো সেগুলিতে দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদ ও পাভলভীয় চিন্তার প্রভাব সুস্পষ্ট। ধীরেন্দ্রনাথ ১৯৮৮ সালে ৮৭ বছর বয়সে মারা যান, কিন্তু মনোবিশ্লেষণেও কিভাবে দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদ একটা ভিত্তি জোগাতে পারে, তার এক চমৎকার উদাহরণ তাঁর লেখালেখিতে তিনি রেখে গেছেন। ফ্রয়েডের চিন্তার সঙ্গে রবীন্দ্রনাথও যে দ্বিমত পোষণ করতেন, তাও যতীন সরকারকে অনুপ্রাণিত করেছিল। তার প্রত্যয় প্রতিজ্ঞা প্রতিভা গ্রন্থে সংকলিত ‘ঠাকুরের চিকিৎসা-ভাবনা ও সিংহ রায়ের বই’ শীর্ষক 888sport liveে (যা আসলে ২০১৮ সালে প্রকাশিত সুভাষ সিংহ রায়ের রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চিকিৎসা ভাবনা শীর্ষক বইয়ের ওপর একটি আলোচনা, যদিও যতীন সরকার তাঁর স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে এই আলোচনায় তাঁর নিজস্ব অনেক অনুধাবন ও মত তুলে ধরেছেন)। তিনি ১৩৩৫ বঙ্গাব্দে প্রবাসীতে প্রকাশিত রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে ফ্রয়েডপন্থী এক ডাক্তার সরসীলালের একটি ‘কথোপকথনের’ উল্লেখ করেছেন। রবীন্দ্রনাথ বলেছেন :

Freud-এর School-এর সঙ্গে এইখানেই আমার প্রধান ঝগড়া। আমি বলি, Sex-instinct একেবারে গোড়ার কথা নয়। আরো গোড়ার কথা হচ্ছে Self-assertion, এই শেষোক্ত instinct Sex-instinct অপেক্ষা বেশি পুরাতন এবং ওতপ্রোতভাবে আমাদের জীবনের ওপর প্রভাব বিস্তার করে রেখেছে।

এরপর রবীন্দ্রনাথ ইগো বা অহংজ্ঞান কিভাবে নিজেকে ঘোষণা দিতে গিয়ে বিফলও হচ্ছে এবং কিভাবে আত্মসংরক্ষণ ও আত্ম-প্রসার ওই self-assertion-এর বিকাশ হয়ে দাঁড়ায় তার একটা ব্যাখ্যা দেন। ইয়ুং, পাভলভ প্রমুখের মতো রবীন্দ্রনাথও ফ্রয়েডের সেক্সনির্ভর ব্যাখ্যাকে গ্রহণ করেননি। তবে যতীন সরকারের ক্ষেত্রে যে-কথাাটি গুরুত্বপূর্ণ, তিনি পাভলভের আচরণতত্ত্বের আলোকে 888sport live footballের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের ওপর জোর দিয়েছেন। এর ফলে ব্যক্তির মনস্তত্ত্বের গভীরে, তার অবচেতনে সব আলো ফেলার পরিবর্তে পরিপার্শ্ব, সমাজ ও ব্যক্তির বাইরের ক্রিয়াশীল জগৎটি অনেক বেশি গুরুত্ব পায়, কারণ এই জগৎটি মানুষকে তৈরি করে, তাকে ক্রিয়াশীল অথবা প্রতিক্রিয়াশীল করে।

প্রত্যয় প্রতিজ্ঞা প্রতিভা গ্রন্থটির প্রসঙ্গ যখন এলো, এর কিছু বৈশিষ্ট্য নিয়ে এখন আলাপ করা যাক। একটু আগে আমি বলেছি, যতীন সরকার সমাজ, রাজনীতি, সংস্কৃতি ও 888sport live football বিষয়ে সারাজীবন একনিষ্ঠ থেকেছেন, তাঁর অবস্থান বদল করেননি। এর কারণে তাঁর আদর্শ ও বিশ্বাসের ভিত্তিটি মজবুত। এই গ্রন্থটি এই পর্যবেক্ষণের পক্ষে সাক্ষ্য দেয়। এর বিষয়বস্তু বিচিত্র হলেও অধিকাংশই তাঁর দীর্ঘদিনের মনোযোগের কেন্দ্রে রয়েছে। যেমন ভাষা ও মাতৃভাষা, বাঙ্গালির লোকজ উৎসব, লোক888sport live football, রবীন্দ্রনাথ, দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদী মনো888sport apk, সত্যনিষ্ঠা ও মুক্তচিন্তা, শ্রমিকের অধিকার, পুঁজির শাসন ও পৃথিবীর দখলদারি, বিপ্লব, কমিউনিস্ট আন্দোলন, ধর্মতন্ত্রী মৌলবাদ ও জঙ্গিবাদ, সমাজের মুখ্য-ঊণ বিভাজন, ফ্যাসিবাদ এবং উপভাষায় রচিত 888sport alternative link। কিন্তু প্রতিটি বিষয়ে তাঁর বক্তব্য একেবারেই তাঁর নিজস্ব। তিনি অন্যের উদ্ধৃতি দেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত নিজের বক্তব্যটিই তুলে ধরেন। এই অর্থে তাঁর চিন্তাভাবনা মৌলিক। তিনি চিন্তক, কিন্তু প্রথাগত গবেষক নন, যেহেতু প্রথাগত (এবং অ্যাকাডেমিক) গবেষণার নিয়মকানুন তিনি খুব একটা গ্রাহ্য করেন না। তাঁর লেখা উদ্ধৃতি ও পাদটীকায় ভারাক্রান্ত নয়। এজন্য তাঁর 888sport live পড়ার স্বাদটাই আলাদা।

তাঁর চিন্তার নিজস্বতার কয়েকটি উদাহরণ দিই। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস নিয়ে লেখা 888sport liveে তিনি জানাচ্ছেন, ‘পরভাষার আধিপত্য’ থেকে মুক্ত না হলে ‘সাম্রাজ্যবাদী বিশ্বায়নের চরণে’ নতমস্তক থাকলে মাতৃভাষাকে সমুন্নত রাখা যায় না। একই সঙ্গে ক্ষুদ্রজনগোষ্ঠীর মাতৃভাষাকেও রক্ষা করার তিনি জোর দাবি জানান। অথচ 888sport cricket BPL rateে ফেব্রæয়ারি আমরা শুধু বাংলার পক্ষে কথা বলি। ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর ওপর বাংলাভাষা চাপিয়ে দিয়ে বাংলাকে আমরা কি সম্মান দেখালাম, নাকি এটিকে এক আধিপত্যবাদী ভাষায় রূপান্তরিত করলাম,  এ-প্রশ্নটি সম্প্রতি উত্থাপিত হচ্ছে, অথচ যতীন সরকার এ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ভাবছেন।

মে দিবস নিয়ে তাঁর লেখাটির শিরোনামে আছে চমক, ‘স্বার্থপর হতে চাই।’ লেখাটা পড়লে অবশ্যই বোঝা যায়, স্বার্থপরতা বলতে তিনি কী বোঝাচ্ছেন। তিনি বলছেন, আমাদের শেখানো হয়েছে, স্বার্থপরতা নিন্দনীয়, নিঃস্বার্থতাই উত্তম। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, একটা মহলের – প্রভু মহলের – স্বার্থ ঠিকই রক্ষিত হচ্ছে। ‘সচেতনভাবে আমাদের যে দেশসেবা, জনসেবা, সমাজসেবা – এর সবই আসলে প্রভুসেবা’, তিনি বলেন, এবং জানান, এসব করতে গিয়ে ‘আমাদের প্রকৃত স্বার্থ সম্পর্কেই আমরা অসচেতন।’ যদি আমাদের, খেটে খাওয়া মানুষের, শ্রমিক-কিষানের প্রকৃত স্বার্থ আমরা আদায় এবং রক্ষা করতে পারতাম, তাহলে প্রভুদের বিত্তবৈভব ও খবরদারিতে টান পড়ত। তিনি বলেন, ‘শ্রমজীবী শ্রেণীর স্বার্থ সম্পর্কে মুদিতদৃষ্টি থাকলে আমাদের স্বার্থ ষোলো আনাই হারাতে হবে।’ লেখাটা তিনি ময়মনসিংহ কারাগারে বসে লিখেছেন, ১৯৭৬ সালে, অথচ তাঁর প্রতিটি কথা এখনো সমান বৈধ। সেজন্য এ-গ্রন্থে এটি ছাপিয়ে তিনি একটি ‘পুনশ্চ’ যোগ করেছেন, তাতে ২০১৭ সালের এপ্রিলে লিখেছেন –

সমাজে সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠাকে লক্ষ্যবিন্দুতে রেখেই দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদকে জীবনদর্শনরূপে গ্রহণ করেছিলাম ছাত্রজীবনে – বিগত শতকের পঞ্চাশের দশকে। সে-দর্শনের সত্যতা সম্পর্কে আমার মনে সন্দেহের উদ্রেক ঘটেনি কোনোদিনই।

দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদ যে এখন কিছু রাজনৈতিক দলের কথায় ও কাগজে সীমাবদ্ধ, সাম্যবাদও পুঁজিবাদ ও বিশ্বায়নের আঘাতে পথভ্রষ্ট সে-কথা যতীন সরকারও জানেন। শ্রেণিবিপ্লবের সম্ভাবনাও যে ক্রমশ বিলীয়মান, সে-বিষয়টি নিয়েও তিনি  নিশ্চয় ভাবেন। কিন্তু হতাশ হন না, বরং 888sport apkমনস্ক একজন মানুষ হিসেবে একটা সম্ভাবনা দেখেন বিপ্লবের ব্যাকরণ মেনে মানুষের ঘুরে দাঁড়ানোর। রুশ বিপ্লবের শতবর্ষ উপলক্ষে লেখা তাঁর 888sport live – ‘বিপ্লবের ব্যাকরণ ও ইতিহাসের দ্বন্দ্বতে তিনি লেখেন, ‘বিপ্লবের ব্যাকরণশাস্ত্র মানে “দ্বন্দ্বমূলক ও ঐতিহাসিক বস্তবাদ”।’ সেই শাস্ত্রই আমাদের জানায় যে, সঠিক ক্ষণটি না-এলে কোনোমতেই জোর করে বিপ্লব ঘটানো যায় না। তবে বিপ্লবের প্রয়োজনে ‘জোর খাটানো’কেও ব্যাকরণ মেনে নেয়। তিনি বিপ্লবীদের সব শাস্ত্রবিধান জানতে ও মানতে আহ্বান জানান। অর্থাৎ চর্চার। অনুশীলনের। ক্ষেত্র প্রস্তুতের। মানুষের সঙ্গে মিলে কাজ না করলে, তাদের আস্থায় নিজেকে না আনতে পারলে বিপ্লব দূরেই থেকে যাবে। তত্তে¡র সঙ্গে চর্চা ও অনুশীলনের নিকট সম্পর্কটিকে আরেকবার তিনি তরুণদের সামনে তুলে ধরেন।

প্রত্যয় প্রতিজ্ঞা প্রতিভার সংক্ষিপ্ত ভূমিকাটিতে অল্পকথায় যতীন সরকার তাঁর জীবনদর্শনের দুটি দিকে আলোকপাত করেছেন। তিনি লিখেছেন, ‘এই বইটিতে যে প্রত্যয়ের কথা বলেছি, সেই প্রত্যয়ের প্রতিষ্ঠাই আমার প্রতিজ্ঞা।’ প্রথম 888sport liveটির শিরোনাম ‘বর্ষশুরুর প্রত্যয় ও প্রতিজ্ঞা’। 888sport liveের শেষদিকে তিনি জানাচ্ছেন : ‘মানবশত্রু দানবদের বিরুদ্ধে সংগ্রামের প্রস্তুতি গ্রহণ করার তাগিদ নিয়েই আসে আমাদের পয়লা বৈশাখ।’ এই দানবদমনের প্রত্যয়টিই তিনি আজীবন সমুন্নত রেখেছেন। দানব কারা? যারা মানবতার শত্রু ‘ধর্মের আবরণে ধূর্ততা ও কপটতাকে’ যারা ঢেকে রাখে, এবং যারা ‘মানবপীড়নের মহামারী’ সৃষ্টি করে।

এরপর যতীন সরকার লিখেছেন, ‘দ্বান্দ্বিক ও ঐতিহাসিক বস্তুবাদ – সাধারণভাবে যা মার্ক্সবাদ বা মার্ক্সীয় দর্শনরূপে পরিচিত – সেটিই আমার জীবনদর্শন। এই দর্শনের আলোকেই জীবন ও জগতের সবকিছুই আমি অবলোকন করতে চাই।’ এটিও তাঁর এক প্রত্যয় ও প্রতিজ্ঞা। দেখা যায়, দুটি প্রত্যয়ই তাঁর জীবনের গতিপথ ও কাজের ক্ষেত্র তৈরিতে ভ‚মিকা রেখেছে। তাঁর অনেক বক্তব্য আশাবাদী মনে হবে, বর্তমান বিশ্ব ও 888sport appsের সমাজ ও রাজনৈতিক বাস্তবতার আলোকে নেহাত আদর্শিক মনে হবে \ কিন্তু সময়ের বিবর্তনে অনেক কিছুই তো বদলায়। এখন বিশ্ব যে অনিশ্চয়তার ভেতর দিয়ে যাচ্ছে, তাতে দশ বছর পর কী হবে, নিশ্চিতভাবে তা বলা যাবে না। এই যে কোভিড মহামারি বিশ্বটাকে বিপর্যস্ত করে দিলো, ২০২০ সালের শুরুতে কেউ কি তা ভাবতে পেরেছিল? আধুনিকতার, যুক্তিবাদের এবং আলোকায়ন যুগের তীর্থকেন্দ্র পশ্চিম ইউরোপ যে মধ্যযুগীয় যুক্তিহীনতার দিকে চলে যাবে, চরম ডানের আত্মপ্রকাশ ঘটবে এর রাজনীতি ও সমাজে, সে-সম্পর্কেও কোনো পণ্ডিতকে কুড়ি বছর আগেও কিছু বলতে শুনিনি। অথবা এই ইতালি যে বেনিতো মুসোলিনির পর একজন পাক্কা ডানপন্থী প্রধানমন্ত্রী পেলো, আবার দেশটিতে যে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন শক্তি সঞ্চয় করতে শুরু করল, কয়েক বছর আগেও রাজনৈতিক ভাষ্যকাররা তার আন্দাজ করতে পারেননি। একইভাবে, পুঁজির শাসনে মানুষ বিপর্যয়ের শেষ প্রান্তে পৌঁছে যে ঘুরে দাঁড়াবে না, দানবের শাসন শিথিল হতে শুরু করবে না, মনুষ্যত্বের জয় সূচিত হবে না, সে-সম্পর্কে নিশ্চিতভাবে পুঁজিবাদের ঠাকুরশ্রেণিও কিছু বলতে পারবে না। যতীন সরকারের আশাবাদ যে একদিন বাস্তবে অবয়ব মেলে দাঁড়াবে – এ-কথাটি তাই নির্যাতিতের সান্ত¡না শুধু নয়, ইতিহাসের একটা কাক্সিক্ষত মোড় ফেরার সম্ভাবনাকেও তুলে ধরে।

তবে সেই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হলে যতীন সরকার যে-ব্যাকরণের কথা বলেছেন – তা বিপ্লবের হোক, সমাজচর্চার হোক, রাজনৈতিক ক্রিয়াশীলতার হোক – সেদিকেও নজর রাখতে হবে। আগেই বলেছি, তিনি তত্ত্বকে যতটা গুরুত্ব দেন, তার থেকে বেশি দেন চর্চাকে, অনুশীলনকে। এই অনুশীলনের ভিত্তি গড়ে শিক্ষা, সাধনা, অগ্রসর চিন্তা, মানব কল্যাণের প্রতিজ্ঞা এবং দানববিনাশের প্রত্যয়। এই চর্চাটা তিনি নিজের জীবনে প্রতিনিয়ত করে যাচ্ছেন, তাঁর সীমিত সাধ্য দিয়ে, তাঁর লেখালেখিতে। এজন্য তাঁর লেখা পড়লে একটা শক্তিও পাওয়া যায়, চিন্তার ও কাজের সক্রিয়তার শক্তি। একজন লেখকের পক্ষে এটি এক বিশাল অর্জন।

দুই

কাকতালীয়ভাবে, যতীন সরকারের সঙ্গে আমার প্রথম সাক্ষাৎ প্রথম আলোর সেই 888sport app download bd প্রদান অনুষ্ঠানে, শেষ দেখাটাও আরেক 888sport app download bd প্রদানের অনুষ্ঠানে – এবার (?)

সমকাল-ব্র্যাক ব্যাংক 888sport live football 888sport app download bd। মঞ্চে যতীন সরকারের সঙ্গে আমিও ছিলাম, ছিলেন এক তরুণ লেখক ও গবেষক পিয়াস মজিদ। 888sport app download bd হাতে নিয়ে আমাকে কাছে টেনে তিনি হাসিমুখে ছবি তুলেছেন, রসিকতা করে বলেছেন, আমাদের দুজনকে একসঙ্গে পুরস্কৃত করাটা 888sport app download bdদাতাদের একটা অভ্যাসে দাঁড়িয়ে গেল দেখছি। কিছুক্ষণ কথা বলেছি, সিদ্ধান্ত নিয়েছি পিয়াস আর আমি মিলে তাঁর একটা দীর্ঘ সাক্ষাৎকার নেব। কিন্তু তিনি থাকেন নেত্রকোনা, আমরা 888sport appয়। চাইলেই যাওয়া হয় না। একসময় কোভিড মারি হানা দিলো। তারপর তো সব পরিকল্পনাই ভেস্তে গেল। তবে মহামারি-অন্তে এই সাক্ষাৎকারটা নেওয়ার একটা সুযোগ নিশ্চয় পাওয়া যাবে।

আমি নিশ্চিত সত্যসাধক যতীন সরকারকে সময়ও সমীহ করে। তাঁর জীবন দীর্ঘ হবে। একদিন সারাদিন তাঁর সঙ্গে কাটানোর সুযোগটা নিশ্চয় সময়ই করে দেবে, শিগগিরই। ৎ

যতীন সরকার

প্রগতিবাদী চিন্তাবিদ, লেখক ও শিক্ষাবিদ। জন্ম ১৯৩৬ সালের ১৮ই আগস্ট নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার চন্দপাড়া গ্রামে। বাবা জ্ঞানেন্দ্র সরকার, মা বিমলা বালা সরকার। ১৯৬৩ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও 888sport live footballে এমএ পাশ করেন। কর্মজীবন কেটেছে বাংলা ভাষা ও 888sport live footballের শিক্ষকতায়। অসাধারণ বাগ্মিতার জন্য সর্বজনপ্রিয়। সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে নিবেদিতপ্রাণ। বর্তমানে সাংস্কৃতিক সংগঠন উদীচী 888sport live chatী গোষ্ঠীর সভাপতি। বিভিন্ন পত্রপত্রিকা সম্পাদনাও করেছেন। সম্মাননা : স্বাধীনতা পদক, বাংলা একাডেমি 888sport app download bd, খালেকদাদ চৌধুরী 888sport live football 888sport app download bd প্রভৃতি। উল্লেখযোগ্য প্রকাশনা – পাকিস্তানের জন্ম মৃত্যু-দর্শন, 888sport appsী কবি গান, 888sport live footballের কাছে প্রত্যাশা, বাঙ্গালী সমাজতন্ত্র ঐতিহ্য, মানব স্বপ্ন এবং সমাজ বিপ্লব ইত্যাদি।