গোরখোদক ও অন্য জ্যোৎস্না l হাসান অরিন্দম l বাংলানামা l 888sport app, ২০২০ l ১৮০ টাকা
সময়ের প্রবহমানতায় যোগসূত্র স্থাপনে সৃষ্টি হয় জ্ঞান। একমাত্র ত্রিকালদর্শী মানুষই এই প্রবহমানতায় অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের মধ্যে এরূপ সম্পর্ক স্থাপনে সমর্থ যা তাকে বাস্তব জীবনে সফলতা ও মুক্তির পথ দেখায়। আবার ত্রিকালদর্শী মানুষের তীক্ষè জীবনবোধ তার মনের গহিনকোণে এমন এক জীবন-যন্ত্রণা ও অস্তিত্ববাদী সংকটের সৃষ্টি করে যা তাকে প্রকৃতির সঙ্গে একটি দ্বান্দ্বিকতার সম্পর্কে দাঁড় করিয়ে দেয়। একদিকে জীবনের ক্ষণস্থায়িত্বের বোধ থেকে সৃষ্ট মানসিক যন্ত্রণা ও অন্যদিকে অমরত্বের আকাক্সক্ষা – এটাই দ্বান্দ্বিকতার উৎস। জীবন, মৃত্যু ও কাক্সিক্ষত অজ্ঞেয় অমরত্বের এই চিরকালীন অবিচ্ছেদ্য দ্বান্দ্বিক সম্পর্কের এক অপরূপ 888sport live chatভাষ্য দিয়েছেন কথাকোবিদ হাসান অরিন্দম তাঁর গোরখোদক ও অন্য জ্যোৎস্না নামক গল্পগ্রন্থে।
লেখকের প্রথম গল্প ‘সুবাসের দ্বিতীয় পক্ষে’র প্রধান চরিত্র অনিমেষকে আমরা আবিষ্কার করি একজন দ্বিধান্বিত ও স্বঘোষিত আত্মকেন্দ্রিক মানুষ হিসেবে, যে ভালো-মন্দ, ন্যায়-অন্যায়, দায়িত্ববোধ নির্ধারণে সর্বদা নিজের সঙ্গে যুদ্ধ করে চলেছে। নিজের বিবেক অনিমেষকে সত্য-সুন্দরের দিকে চালিত করে, কিন্তু সমাজের স্বার্থপর, কুৎসিত বাস্তবতা তার পথরোধ করে দাঁড়ায়। একদিকে বিবেকের তাড়না, অন্যদিকে সমাজের হীনরূপ তাকে পলায়নপর আত্মকেন্দ্রিক মানুষ হতে বাধ্য করে। কিন্তু স্বীয় বিবেক তার এই পলায়নপর সত্তাকে ভর্ৎসনা করতে থাকে। এভাবে জগৎ-জীবনের ব্যক্তিক ও সামষ্টিক পরিস্থিতি তাকে করণীয় নির্ধারণে এক চরম দ্বান্দ্বিকতার মুখোমুখি করে। তাই গভীর রাতে গলায় ফাঁস নেওয়া ঝুলন্ত সুবাসকে বাঁচাতে নিমেষেই এগিয়ে যায়, দড়ি কেটে পাঁজাকোলা করে তাকে মাটিতে নামায়। কিন্তু পরক্ষণেই পুলিশি ঝামেলার ভয়ে গুটিয়ে যায় এবং সুবাসকে ভ্যানে তুলে দিয়ে দ্রুত স্থান ত্যাগ করে। এখানে অনিমেষের ভাবনা ও প্রতিক্রিয়া, সুবাসের ফাঁস নেওয়া, পুলিশি ঝামেলা যেন আমাদের দৈনন্দিন জীবনবাস্তবতার এক মূর্ত প্রতীক হয়ে দাঁড়ায়!
এ-গ্রন্থে লেখকের দ্বিতীয় গল্প ‘ঘাসের নিচে মাটির ঘ্রাণ’, যার বিষয়বস্তু মানুষ-প্রকৃতি, জন্ম-মৃত্যুর দ্বান্দ্বিকতা। প্রকৃতি একদিকে মানুষকে অসীম সম্ভাবনাময় সত্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে, আবার প্রকৃতির রূঢ়তা ও কঠিন বাস্তবতার সামনে এই মানুষ অসহায় আত্মসমর্পণে বাধ্য হয়। জীবনের কাছে আত্মসমর্পণের এমনই এক করুণ হৃদয়বিদারক চিত্রের অবতারণা করেছেন লেখক আলোচ্য গল্পে, যা পাঠকমনে এক গভীর বেদনার উদ্রেক করে।
এ-গল্পে লেখক এমন এক হৃদয় বিদারক ঘটনার 888sport live chatরূপ দিয়েছেন যেখানে এক অসহায় পিতা আড়াই বছর বয়সী কন্যার আসন্ন অনিবার্য মৃত্যুশোক সয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন। ক্যান্সারে আক্রান্ত একমাত্র মেয়ে দেড় মাস পর পরপারে পাড়ি জমাবে, এই দুঃসহ যন্ত্রণা সইতে বুকে পাথর বেঁধে পিতা ইরফান কোদাল ঝুড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়েন মেয়ের কবর অগ্রিম খুঁড়তে। এ এক করুণ হৃদয় বিদারক দৃশ্য, যেখানে পিতা প্রতিদিন একটু একটু করে পরম মমতায় মেয়ের জন্য সমাধি গড়ে তোলেন। কলিজার টুকরা নিষ্পাপ মেয়েকে চিরতরে রেখে আসার জন্য এমন এক স্থান পিতা নির্ধারণ করেন যেখানে মেয়ে বৃক্ষ ও পুষ্পবেষ্টিত হয়ে পাখির কূজনে পরম শান্তিতে ঘুমবে। এ যেন কন্যার প্রতি পিতার ইহকাল, পরকাল ও অন্ততকালব্যাপী অকৃত্রিম ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ।
লেখক অরিন্দম পরম যত্নে এমন এক করুণ রস সৃষ্টি করেছেন যা অনুভূতিসম্পন্ন যে-কোনো পাঠকের অন্তরাত্মাকে নাড়িয়ে দিতে সমর্থ। ঘটনার রূপায়ণ এতোটাই বাস্তব যে, পাঠক মুহূর্তেই নিজেকে চরিত্রগুলোর সঙ্গে একাত্ম করে সমব্যথী হয়ে ওঠেন, যার রেশ গল্পটি শেষ হয়ে যাওয়ার পরও দীর্ঘক্ষণ থেকে যায়। মনে হয়, নিষ্পাপ মেয়েটির প্রতি প্রকৃতি কিংবা সৃষ্টিকর্তা চরম অবিচার করলেন, যা পিতা ইরফানের মতো পাঠকের মনেও একটা বিদ্রোহের আভা সৃষ্টি করে। সৃষ্টিকর্তা যা করেন ভালোর জন্যই করেন, যাকে ইচ্ছা নিজের কাছে টেনে নেন – এ-ধরনের সান্ত্বনা পিতা ইরফানকে স্বস্তি দেয় না। এসব কথায় তার বুকের ভেতরকার জমাট বরফগুলো গলে না কিছুতেই। প্রতি নিশ্বাসে ওই রক্তিম বরফেরা ফুসফুসের বায়ুপ্রবাহকে যেন রুখে দিতে চায়। ইরফান এক-দেড় মাস পরের কোনো ঘটনা ও দৃশ্য কিছুতেই ভাবতে চায় না। এ যেন সৃষ্টিকর্তার বিরুদ্ধে এক ধরনের বিদ্রোহ, প্রকৃতির বিধান উলটে দেওয়ার মনোভাব। কিন্তু মানুষ প্রকৃতির অমোঘ নিয়মের কাছে এতোটাই অক্ষম যে, অসহায় আত্মসমর্পণ ছাড়া এই নিদারুণ মনোবেদনা ও বিদ্রোহের আর কোনো পরিণতি হয় না।
গ্রন্থটির তৃতীয় গল্পের নাম ‘পারাপারে সায়’। গল্পের প্রধান চরিত্র দেবেন্দ্র নিজেকে নতুনভাবে আবিষ্কার করে অন্তরে এক অনির্বচনীয় আনন্দ অনুভব করেন। এ যেন দেবেন্দ্রর ব্যক্তিজীবনে সক্রেটিসের সেই ‘নিজেকে জানো’ নীতিবাক্যের সার্থক রূপায়ণ।
এ-গল্পে লেখক রূপকের আশ্রয়ে মানুষের পরম মুক্তির দিশা দিয়েছেন। এক্ষেত্রে লক্ষণীয় যে, জগতের চাকচিক্যময় আচারসর্বস্ব ধর্মে লেখকের অনাস্থা চূড়ান্ত। তাই মুক্তির প্রশ্নে তাঁর বক্তব্য হলো, আমরা একটি অঙ্গতার পর্দার অন্তরালে আটকা পড়েছি, যা আমাদের প্রকৃত সত্য থেকে বিচ্ছিন্ন করেছে। জগতের অধিকাংশ মানুষই এই মিথ্যা অবভাসের জগৎকে সত্য মেনে ভোগবিলাসে মত্ত থাকেন। লেখক এখানে দার্শনিক প্লেটোর মতো দুটো জগতের চিত্র রূপায়ণ করেছেন – অবভাসের জগৎ ও সত্তার জগৎ। তিনি বলছেন, আমাদের সামনে থেকে যখন অঙ্গতার পর্দা সরে যাবে তখনই আমরা প্রকৃত সত্তার জগতের সন্ধান পাবো, আর এতেই মানুষের অমরত্ব ও প্রকৃত মুক্তি নিহিত। তবে এই মুক্তির পথে অনেক অন্তরায় ও বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করতে হয়, এবং মহাকালের পথে যাত্রাসঙ্গী হিসেবে তেমন কাউকেই পাশে পাওয়া যায় না, কারণ সবাই বিষয়-ঐশ্বর্য, নামযশ, ক্ষমতা-প্রতিপত্তি ইত্যাদি জাগতিক জীবন-সমুদ্রের মিথ্যে তুচ্ছ বিষয় নিয়ে ব্যস্ত থাকে। আত্মবিশ্বাস ও মুক্তির আকাক্সক্ষা প্রবল হলেই কেবল এই তরঙ্গসংকুল সমুদ্র পাড়ি দিয়ে কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব।
গ্রন্থের চতুর্থ গল্পের নাম ‘বাদুড়ের আঁকাবাঁকা আকাশের মতো’। এখানে অরিন্দম প্রধান চরিত্র আরমানের বয়ানে মূলত কবি জীবনানন্দ দাশের যাপিত জীবনের ধূসর বাস্তবতার চিত্র তীক্ষè মনোবেদনা নিয়ে ফুটিয়ে তুলেছেন। গল্পের প্রতিটি লাইনে লেখক করুণ আর্তনাদে জীবনানন্দের যাপিত কষ্টকাতর দিনগুলোর 888sport sign up bonusচারণ করেছেন, যা পাঠকের হৃদয় ছুঁয়ে যায়। লেখক শব্দের পর শব্দ সাজিয়ে কবি-জীবনের যে-আবহ আলোচ্য গল্পে সৃষ্টি করেছেন তাতে লেখকের পরিপার্শ্ব-সচেতনতা স্পষ্টভাবে পাঠকের কাছে ধরা দেয়। ধর্মের ভিত্তিতে দেশভাগ কীভাবে মানুষের জীবনে দুর্বিষহ যন্ত্রণা বয়ে এনেছিল তা লেখক কবির জীবন বাস্তবতার আলোকে তুলে ধরেছেন।
‘দগ্ধ চাঁদ ও অচেনা উপগ্রহের গল্প’ নামক রচনাটি পাঠ শেষ করে অবাক বিস্ময়ে লক্ষ করছি গল্পকার দার্শনিক দক্ষতায় মানুষের স্বপ্ন ও বাস্তবতার দ্বন্দ্বের প্রশ্নটি অবতারণা করেছেন। যে-প্রশ্নটি একটি মৌলিক দার্শনিক সমস্যা হিসেবে উপস্থাপন করেছিলেন আধুনিক পাশ্চাত্য দর্শনের জনক রেনে দেকার্ত। অন্য যে-প্রশ্নটিও মনে আসছে তা হলো, গল্পকার অরিন্দম কি সচেতনভাবেই গল্পচ্ছলে এই গূঢ় দার্শনিক প্রশ্নটি সামনে আনলেন? মনে মনে ভাবলাম, গল্পকার অরিন্দম তো 888sport live footballের মানুষ, আর 888sport live footballের ধরন হিসেবে যিনি জাদুবাস্তবতা ও পরাবাস্তবতার প্রতি ভীষণ আগ্রহী তাঁর পক্ষে 888sport live footballের ছলে এ-ধরনের চিন্তাশীল দার্শনিক প্রশ্নের অবতারণা খুবই স্বাভাবিক।
লেখক 888sport live footballিক নিপুণতায় গল্পের প্রধান চরিত্র রাইয়ানকে গভীর রাতে এমন এক ঘটনার মুখোমুখি করেছেন যেখানে রাইয়ান বুঝতে পারছে না সে বাস্তবে আছে, না স্বপ্ন দেখছে। সোনার থালা, কাঁসার প্লেটের মতো দৃশ্যমান পশ্চিম আকাশে উদিত বিশাল ও উজ্জ্বল দ্বিতীয় চাঁদের কোনো ব্যাখ্যা সে 888sport apk, ভূগোল, এমনকি মহাকাশবিদ্যা দিয়েও করতে পারছে না। হাতে চিমটি কেটে দেখছে সে বাস্তবেই আছে; কিন্তু ঘটমান পরিস্থিতি তার কাছে ব্যাখ্যাতীত।
আলোচ্য গল্পটি পাঠের মাধ্যমে পাঠক নিশ্চিতভাবেই এরকম একটি রোমাঞ্চকর দার্শনিক ভাবনার জগতে প্রবেশ করবেন, যেখানে তার মনে হয়, ‘ভবিষ্যতে কোনদিন এমন অনুভূতি হওয়া কি নিতান্তই অসম্ভব যে, আমার অতীতের যাপিত গোটা জীবনটাই একটা স্বপ্ন ছিল।’
সদ্য বিশ্ববিদ্যালয় পাশ প্রগতিশীল যুবক মুনতাসির শামস লেখকের পরবর্তী গল্প ‘গোরখোদক ও অন্য জ্যোৎস্না’র প্রধান চরিত্র। আলোচ্য গল্পে লেখক অসাধারণ দক্ষতায় শামসকে দুটো পরিস্থিতির মুখোমুখি করেছেন, যেখানে 888sport live footballের ধরন হিসেবে জাদুবাস্তবতা ও পরাবাস্ততার সার্থক প্রয়োগ ঘটেছে। বিষণ্ন প্রকৃতির মেধাবী যুবক শামস বন্ধুদের সঙ্গে পিকনিকে গিয়ে দলছুট হয়ে নির্জন গভীর জঙ্গলে আনমনে হাঁটতে থাকে। এই জঙ্গলেই শামস এমন দৃশ্য দেখে যা তার নিজের চোখেই অবিশ্বাস্য ঠেকে। বিরানভূমিতে অদ্ভুত-দর্শন দুজন মানুষ মাটির গভীর থেকে এক-একটি মানুষের মস্তক কোদালসদৃশ ধারালো অস্ত্রে কেটে চুল ধরে টেনে তুলছে, মৃদু হেসে সেগুলো একে একে চটের বস্তায় পুরছে। একে একে সে তার পিতামহ, দাদা, বাবা-মা, এমনকি নিজের খণ্ডিত মস্তক তাদের হাতে দেখতে পায়, যা তার পক্ষে কল্পনা করাও অসম্ভব। মধ্যগগনের দীপ্তিমান সূর্য, শাল-সেগুনের বন, পাখির কিচির-মিচির, পায়ে বিষ-পিঁপড়ের দংশনের জ্বলুনির অনুভূতিতে শামস বুঝতে পারে সে দুঃস্বপ্নে নিমজ্জিত নয়, আছে নিরেট বাস্তবতায়। জাদুময়ী কল্পনায় অভিজ্ঞতার অতীত এমনই এক অসম্ভব বাস্তবতাকে লেখক পাঠকের সামনে হাজির করেছেন। আসলে অবচেতন মনে আমরা যে আমাদের পূর্বপুরুষ, মৃত্যু, পরকাল, দেবদূত ইত্যাদি নিয়ে চিন্তিত, পাঠক তা উপলব্ধি করবেন এই গল্পে। গল্পের পরিণতিতে লেখক দেখাচ্ছেন শামস অ্যাম্বুলেন্সে অবচেতন অবস্থায় আকাশে চমৎকার চাঁদ দেখতে পাচ্ছে, যা তার তিনজন সঙ্গীর কেউই দেখতে পাচ্ছে না। ‘আমাদের ইন্দ্রিয়নির্ভর চেতন নয়, বরং অবচেতন মনই জ্ঞানের উৎস’ – পরাবাস্তববাদীদের এই বক্তব্যকেই লেখক এখানে তুলে এনেছেন।
গ্রন্থের সর্বশেষ গল্পের নাম ‘আমি আসছি ব্রহ্মময়ী’। গল্পের প্রধান চরিত্র গিরিশচন্দ্রের পার্থিব জগতেই পরম মুক্তি লাভের যে অনির্বচনীয় অনুভূতি তাই এ-গল্পের উপজীব্য। গিরিশ অনুধাবন করেন যে, পার্থিব জগৎ একটি মায়ামাত্র, এ-জগতের সুখ-দুঃখ সবকিছুই ক্ষণস্থায়ী। তাই এ-জগতের রূপ-রসে মত্ত থেকে জীবনের প্রকৃত অর্থ উপলব্ধি করা সম্ভব নয়। গিরিশচন্দ্র তাঁর নিজের জীবন বাস্তবতার আলোকে উপলব্ধি করেন যে, পারলৌকিক মুক্তিই আসল মুক্তি, যা চিরস্থায়ী এবং কেবল এক ঈশ্বরে বিশ্বাস স্থাপন করে এই ইহজগতেই সেই মুক্তির সাধ লাভ করা সম্ভব। প্রাণান্ত চেষ্টায় সমগ্র পৃথিবী যেখানে ন্যায়-অন্যায়ের একটি সামগ্রিক মানদণ্ড নির্মাণে ব্যস্ত, সেখানে গভীর সংবেদনশীল আত্মবিশ্বাসী গল্পকার হাসান অরিন্দম দৃপ্ত কণ্ঠে উচ্চারণ করেন, ‘পৃথিবী ন্যায়বিচারের জায়গা নয়, কাজেই এরপর আরেকটি জগৎ থাকতেই হবে।’ তাই দেখি লেখকের সৃষ্ট প্রতিটি চরিত্র জীবনানন্দ দাশের ‘বোধ’ নামক চেতনার বীজ ধারণ করায় এই আধুনিক সমাজের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারে না; পারে না নিজের সঙ্গে প্রতারণা করতে। অসীম মহাকালের চেতনা ধারণ করে চরিত্রগুলো তাই পারলৌকিক সমুদ্রের জলে সাঁতারের স্বপ্নে অনেক বেশি স্নিগ্ধতা ও অর্থবহতা খুঁজে পায়। বর্তমান গ্রন্থে ইতিহাসের সঙ্গে জীবন, জীবনদৃষ্টির সঙ্গে বাস্তবতাবোধ ও অন্তর্দৃষ্টি মিলেমিশে এক পরম মূল্যের সন্ধান লাভপ্রয়াস লক্ষণীয়। গল্পসমূহের গভীর ও গম্ভীর বিষয়বস্তুর সঙ্গে সংগতিপূর্ণ প্রাঞ্জল ও ব্যঞ্জনাবহ ভাষা গোরখোদক ও অন্য জ্যোৎস্নাকে একটি গুরুত্বপূর্ণ গল্পগ্রন্থ করে তুলেছে।

Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.