যুদ্ধশিশুর মানবভূগোল

শায়ের ইকবাল
রৌদ্রবেলা ও ঝরাফুল  মাসুদ আহমেদ  অন্যপ্রকাশ
 888sport app, ২০১৬  ২৫০ টাকা

১৯৭১ সালের রক্তঝরা মার্চ। অধিকৃত পূর্ববাংলায় চলছে দখলদার পাকবাহিনীর নজিরবিহীন গণহত্যা, লুণ্ঠন ও দুর্বৃত্তায়ন। ৩১ মার্চ যশোরের শার্শা থেকে একদল বাঙালি তরুণীকে যশোর ক্যান্টনমেন্টে ধরে আনা হয়, যাঁদের একজন ছিলেন দেলজুয়ারা বেগম। ৪০ ফিল্ড রেজিমেন্টের সুবেদার মালিক তাসকিনউদ্দীন খানের পাশবিক লালসার শিকার হয়ে দেলজুয়ারা গর্ভবতী হন। যশোর মুক্ত হয় ডিসেম্বরের ৮ তারিখে। ১৯৭২ সালের জানুয়ারিতে স্থানীয় রেডক্রস হাসপাতালে দেলজুয়ারা জন্ম দেন অনাকাঙ্ক্ষিত যুদ্ধশিশু পেনরোজকে। লোকলজ্জা ও কলঙ্কের ভয়ে দেলজুয়ারা পরিত্যাগ করেন নিজ সন্তানকে। নিঃসন্তান সুইডিশ দম্পতি স্ট্রাউস ও এলেনা ওডারম্যান পেনরোজকে দত্তক নেন। সময় ও নদী চিরপ্রবহমান। কালপরিক্রমায় পঁচিশ বছর কেটে যায়। দত্তক সন্তানের পঁচিশতম জন্মদিনে স্ট্রাউস-ওডারম্যান দম্পতি কঠিন সত্য প্রকাশ করতে বাধ্য হন। ভিন্ন ভূগোল, ভিন্ন পরিবেশে বিকাশমান পেনরোজের মানসজগৎ এক অকল্পনীয় সংকটের মুখোমুখি হয়। তার মনে হয়, ‘ভয়ংকর এক সমুদ্রঝড়ে একটা জাহাজডুবি হচ্ছে। সেইসঙ্গে দুলছে সারা পৃথিবী। আর তাতে ও এক সাঁতার না জানা যাত্রী।’ প্রচ- মানসিক ধাক্কায় তার জীবনধারা এলোমেলো হয়ে যায়। সে নেমে পড়ে শেকড়ের সন্ধানে; জন্মবিস্মৃত জনক ও জননীর সন্ধানে। হয়তো তার অবচেতন মনেও অনুরণন জাগে –
মাকে আমার পড়ে না মনে।
শুধু কখন খেলতে গিয়ে হঠাৎ অকারণে
একটা কি সুর গুন্গুনিয়ে কানে আমার বাজে,
মায়ের কথা মিলায় যেন আমার খেলার মাঝে।
মা বুঝি গান গাইত আমার দোলনা ঠেলে ঠেলে –
মা গিয়েছে, যেতে যেতে গানটি গেছে ফেলে \
কথা888sport live footballিক মাসুদ আহমেদের রৌদ্রবেলা ও ঝরাফুল 888sport alternative linkের কাহিনি আবর্তিত হয়েছে এক ভাগ্যাহত যুদ্ধশিশু পেনরোজের আত্মপরিচয় সংকট, গর্ভধারিণী দেলজুয়ারা বেগমের তীব্র অনুশোচনা, গস্নানি ও মাতৃত্ববোধের বহুমাত্রিক অভিক্রিয়ার মধ্য দিয়ে। এখানে দুটি জীবন পাশাপাশি প্রবাহিত। একটি দেলজুয়ারা বেগমের, অন্যটি যুদ্ধশিশু পেনরোজের। 888sport alternative linkের কেন্দ্রীয় ও পার্শ্বচরিত্রগুলোর পারস্পরিক সম্পর্ক, দ্বন্দ্ব, অবিশ্বাস, ঘৃণা, সংগ্রাম, ষড়যন্ত্র, প্রেম ও হৃদয়ের রক্তক্ষরণ 888sport alternative linkের কাহিনিকে দিয়েছে গতিময়তা, যা পাঠককে নিয়ে যায় এক শ্বাসরুদ্ধকর, নাটকীয় ও হৃদয়বিদারক পরিণতির দিকে।
পৃথিবীর এক অদ্ভুত নিয়ম হলো যেখানে সুখ তার উলটো পিঠেই থাকে দুঃখ, যেখানে প্রেম তার উলটো পিঠেই থাকে ঘৃণা। হাত ধরাধরি করে চলে যেন ওরা। দেলজুয়ারার একপাশে রেডক্রসের মমতাময়ী নার্স সুনীতা কুলকার্নী, ডাক্তার ফ্রাংক বার্নার্ড, সংবেদনশীল চিফ অব প্রোগ্রাম, ডিরেক্টর ইরিনা সোরেনসেন; আবার অন্যপাশে ৪০ ফিল্ড রেজিমেন্টের শয়তান তাসকিনউদ্দীন। পেনরোজের একপাশে মহৎপ্রাণ স্ট্রাউস-এলেনা দম্পতি, কোমলমতি প্রোসারপিনা; অন্যপাশে সমাজরূপী কুসংস্কারের দানব, জন্মপরিচয় হন্তারক সুবেদার তাসকিনউদ্দীন, লোভী আবদুল্লাহ খান দুররানী। একদল দিলো ভালোবাসা, অন্যদল ছড়াল সন্দেহ, অবিশ্বাস ও ঘৃণা – বিষিয়ে দিলো জীবন, কেড়ে নিল সুখ। শেষমেশ প্রিয় সন্তানের সামনেও দাঁড়াতে পারলেন না দেলজুয়ারা। সমাজরূপী দানব দেয়াল হয়ে দাঁড়াল। প্রাণের দুঃখ প্রাণে রেখে একাকী দূরে চলে যাওয়ার আয়োজন করতে লাগলেন তিনি। তারপর?
রৌদ্রবেলা ও ঝরাফুল যুদ্ধোত্তর স্বদেশের দুঃখ, বঞ্চনা, ষড়যন্ত্র, গস্নানি, অভিশাপ ও সামাজিক-রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব-ভারাক্রান্ত এক মানবিক 888sport alternative link। বইটি পড়তে গেলে মনে হবে এ যেন গল্প নয়, চিরায়ত বাঙালি জীবনের এক অনাস্বাদিত কালপর্ব। 888sport alternative linkের কাহিনি যত না বিয়োগান্ত, সন্তানের কাছে জননীর চিঠি তার চেয়েও হৃদয়স্পর্শী। লেখকের গল্প বলার নিজস্ব শৈলী গল্পের সৌকর্য বৃদ্ধি করেছে। বইটি মনে করিয়ে দেয় যুদ্ধবিরোধী ধ্রম্নপদী 888sport alternative link All Quiet on the Western Front-এর কথা। এরিক মারিয়া রেমার্কের 888sport alternative linkটি যেখানে শেষ হয়েছে, রৌদ্রবেলা ও ঝরাফুল যেন শুরু হয়েছে সেখান থেকেই। উভয় কাহিনির নায়কের মধ্যেও আশ্চর্য মিল। প্রথমজন পল বোমার, দ্বিতীয়জন পেনরোজ। নামের আদ্যক্ষরেও রয়েছে মিল। দুজনই যুদ্ধতাড়িত, যুদ্ধবিধ্বসত্ম। নিয়তি একজনকে তাড়িয়ে নিয়ে গেছে মাতৃক্রোড় থেকে রণাঙ্গনে, অন্যজনকে রণাঙ্গন থেকে মাতৃক্রোড়ে। দুজনই মায়ের কাছে ফিরতে চেয়েছিল, পারেনি। প্রথমজন জীবন দিয়েছে যুদ্ধক্ষেত্রে। দ্বিতীয়জন ফিরে এলেও
মাতৃ-দর্শন পায়নি। সমাজরূপী দানব দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়েছে। 888sport alternative link সমাপ্ত হয়েছে দ্বৈত-সম্ভাবনার এক বিচিত্র দোলাচলে : উভয়ের সাক্ষাৎ হতেও পারে, আবার না-ও হতে পারে। গল্পের শেষে পাঠক সহসা আবিষ্কার করেন গল্পের দানব রয়ে গেছে অজেয়, অপরাভূত। ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে বাঙালি পাকিস্তানি দানবকে পরাজিত করলেও সমাজরূপী কুসংস্কারের দানবকে পরাজিত করতে পারেনি। 888sport alternative linkটি আমাদের এ নিষ্ঠুরতম সত্য উপলব্ধি করতে শেখায়।
বিবর্তনের বর্ণিল পথে মানবসভ্যতা যতই বিকশিত হয়েছে, ততই তার কাছে দৃশ্যমান জীবন ও জগৎ প্রাধান্য পেয়েছে। জৈবিক তৃপ্তির উপযোগ, ভৌত অবকাঠামো, পুঁজি ও উৎপাদনের মালিকানা তার কাছে শ্রেষ্ঠত্বের মাপকাঠি হয়েছে। দর্শনের উপজীব্যও হয়েছে দৃশ্যমান ভৌতজগৎ। তারপর একসময় কারো কারো মোহভঙ্গ হয়েছে। যুগসন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে কেউ কেউ উপলব্ধি করেছেন, এটা সভ্যতার বিকাশ নয়, এটা সভ্যতার অধঃপতন। মানবাত্মার বিকাশ (spiritual development) ছাড়া সভ্যতার কোনো বিকাশ হতে পারে না। যুগসন্ধিক্ষণের এ-মিছিলেরই পুরোধা ছিলেন ভিক্টর হুগো, আর্নেস্ট হেমিংওয়ে, এরিক মারিয়া রেমার্ক। জাগতিক পঙ্কিলতার মাঝেও তাঁরা মানবাত্মার অনুসন্ধান করেছেন; জীবনের পরম সত্যকে জেনেছেন গভীর মমতায়। এ-মমতারই প্রতিধ্বনি যেন পাই রৌদ্রবেলা ও ঝরাফুল 888sport alternative linkের মধ্যে।
বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় চলছে এক গ্রহণের কাল। একদিকে চরম নৈরাজ্য ও অস্থিরতা, অন্যদিকে নিয়ন্ত্রণহীন ভোগের পাপরাজত্ব। এ দুয়ের সম্মিলনে বিশ্বমানবতা দিকভ্রান্ত, সংশয়গ্রসত্ম ও যন্ত্রণাকাতর। দুটি বিশ্বসমর তাকে দিয়েছে কেবল ধ্বংস আর হতাশা। এ হতাশা যখন ব্যক্তিজীবনকেও গ্রাস করে, যখন দুয়ারগুলো একে একে বন্ধ হয়ে যায়, যখন পৃথিবীর সব আলো নিভে যায়, সব সুর থেমে যায়, দুচোখের জানালায় খেলা করে শুধু অন্ধকার আর অন্ধকার, তখন ডুবন্ত মানুষ খড়কুটো আঁকড়ে ধরতে চায়, মানবজীবনের চিরায়ত সম্পর্কগুলো আঁকড়ে ধরতে চায়। এ বিশ্বজগতে মা তো তেমনি এক চিরায়ত সম্পর্ক, যার কোনো জাতি-বর্ণ-গোত্র-সম্প্রদায় নেই; কোনো শিরোনাম নেই। যে-পরিচয়েই তাকে বন্দি করা হোক, শেষমেশ সে হয়ে থাকবে বিশ্বজনীন। আকাশ ও সূর্যের যেমন কোনো জাতিভেদ থাকে না।
রৌদ্রবেলা ও ঝরাফুল বাঙালি জীবনের সেই চিরায়ত সম্পর্কের ছবি, যেখানে বাঙ্ময় হয়ে উঠেছে হারিয়ে যাওয়া মা ও সন্তানের পরস্পরকে ফিরে পাওয়ার তীব্র আকুতি ও হাহাকার। বাংলার নিসর্গ, ফুল, পাখি, নদী ও মৃত্তিকার বর্ণনা, যশোরের শার্শা গ্রামের 888sport sign up bonusকাতর বর্ণনা সে-আবেগকে আরো প্রাণবন্ত করেছে। মুক্তিযুদ্ধ বাঙালির চিরকালের অহংকার, যে-মুক্তিযুদ্ধ বাঙালিকে দিয়েছে একটি স্বাধীন ভূখ-। বিনিময়ে কেড়ে নিয়েছে তিরিশ লাখ প্রাণ, দুই লাখ 888sport promo codeর সম্ভ্রম। রৌদ্রবেলা ও ঝরাফুল পাঠক-হৃদয়ে স্বদেশ, মুক্তিযুদ্ধ ও মানবিক সম্পর্কের স্মারক হয়ে থাকবে।