‘সে দাঁড়িয়ে ছিল ওপরে ওঠার সিঁড়ির নিচে, দোতলার দিকে প্রত্যাশিত ভীতচোখে। কতক্ষণ, তা সে জানে না। কখনো-বা সামনের দিকে তাকিয়ে দেখছিল, একজন আদিবাসী মহিলার হাতে ঝুল খাচ্ছে পাটের আঁশ দিয়ে তৈরি তিন হাত লম্বা ভেজা, লুটিয়ে পড়া ঝাড়ন; যেটা দিয়ে সে হাতের অপূর্ব মুনশিয়ানায় ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে পরিষ্কার করছে মোজাইক করা সিঁড়ির নিচতলা। মহিলার বুকের সামনে রঙিন আঁচলের ঝাঁপি। ঘের দিয়ে শাড়ি পরা। নাকে পিতলের নাকফুল। সে মন দিয়ে দেখছিল তার কাজ।’
রাফিজা নামে যে-মেয়েটি ওপরে ওঠার সিঁড়িতে এভাবে অপেক্ষা করছে, লেখক তার নাম দ্রুতই আমাদের জানান না। আমরা শুধু জানতে পারি, হোস্টেল থেকে আসা একজন তরুণী অপেক্ষা করছে তার পছন্দের লেখকের দেখা পাওয়ার জন্য। অপেক্ষা করতে থাকা তরুণীর বর্ণনা দিতে গিয়ে এরকম একটি অনুচ্ছেদ লেখা হয়েছে। যেখানে অচেনা জায়গার অনাকাক্সিক্ষত ভবিষ্যৎ নিয়ে রয়েছে ‘ভীতচোখ’। আছে অপেক্ষা করতে থাকা স্থির চোখে দেখা অন্যজনের কর্মকাণ্ডের ফিরিস্তি। ঝুল ঝাড় দেওয়ার কাজে ‘আদিবাসী’ 888sport promo codeর উপস্থিতিও আমাদের চোখ এড়ায় না। এই অনুচ্ছেদ গল্পের কোনো ইশারা না দিলেও নাগরিক জীবনের এমন ছবি দেখায়, যা আমাদের বেশ পরিচিত।
বাংলা ভাষার 888sport live footballে 888sport promo code চরিত্রের উপস্থাপন বেশ ঘোলাটে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই যেসব 888sport promo code চরিত্রের অবতারণা করা হয়, সেগুলো কোনো 888sport promo code লেখেন না। তাই রসবোধে মোড়া বাক্য ধার করে বলতে হয়, পুরুষেরা 888sport promo code নিয়ে কত লিখল, অথচ 888sport promo codeরা কেউ পুরুষ নিয়ে লিখল না। এতে অন্তত জানা যেত, 888sport promo codeরা পুরুষদের নিয়ে কী ভাবে!
তবে 888sport promo codeদের কলমে পুরুষের চরিত্রায়ণের চেয়ে 888sport promo code চরিত্রায়ণ বেশি রহস্যময় বলেই বোধ করি। কারণ ৮০ বছরের কোনো 888sport promo code যদি একজন তরুণী নিয়ে গল্প লেখেন, সেক্ষেত্রে কি তিনি সেই তরুণী চরিত্রে নিজের ছাপ দেখতে পান? নাকি তিনি যেই জীবন চেয়েও পাননি, তারই নির্মাণ থাকে তাঁর চরিত্রে। 888sport promo code চরিত্র গঠন নিয়ে এই আলাপে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছেন কথা888sport live footballিক আনোয়ারা সৈয়দ হক।
২০২৪ সালে অমর 888sport cricket BPL rateে বইমেলায় প্রকাশিত আনোয়ারা সৈয়দ হকের লেখা ছোটগল্পের বই নিঃসঙ্গ পিরামিড পড়লে মূল চরিত্র হিসেবে 888sport promo code চরিত্রায়ণের আধিক্য দেখা যায়, যেটি আমাদের 888sport live footballের গল্প বলার প্রচলিত ধারণার খানিক হলেও বাইরে।
আনোয়ারা সৈয়দ হকের 888sport promo code চরিত্রগুলোর আর্থ-সামাজিক অবস্থা বোঝাতে তিনি এমন ধরনের বিষয় সামনে এনেছেন, যা মনোযোগী পাঠকের কাছে দুর্দান্ত ‘ইমেজ’ তৈরি করতে পারে। যেমন ‘নিঃসঙ্গ পিরামিড’ গল্পে শিক্ষার্থী রাফিজা চরিত্র বই পড়ে। আর্নেস্ট হেমিংওয়ে তার পছন্দের লেখক, দ্য ওল্ড ম্যান অ্যান্ড দ্য সি কিংবা ফর হুম দ্য বেলস টোলস বইগুলো পড়ে তার মন নাড়া দেয়। আবার অন্যদিকে অন্য গল্পে জলি চরিত্রটি বেশ সাজানো-গোছানো থাকে। পড়াশোনা করতে চাওয়ার প্রচণ্ড ক্ষুধার পাশাপাশি সে তার বৈবাহিক জীবন সামলায়। আমরা তাকে দেখি আগ্রহের সঙ্গে গল্পকথককে শাড়ি পরার পদ্ধতি বাতলে দিতে। কীভাবে তেরোটি সেফটিপিনের সাহায্যে জলি শাড়ি গায়ে জড়ায়, তার কথা বারবার জানায় সে। দুই গল্পের চরিত্রই খানিকটা একই বয়সী হলেও তাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থান ও মনস্তত্ত্বের বিচিত্রতা বোঝা যায় সহজেই।
বইটিতে লেখক প্রতিটি গল্পে আলাদা সময়কে ধরার চেষ্টা করেছেন। বইটির নামগল্পের সময়কাল মুক্তিযুদ্ধের ঠিক আগে আগে। গল্পে সে-সময়কার রাজনৈতিক আন্দোলনগুলো না থাকলেও এক ধরনের অস্থিরতা আছে। আছে সে-সময়ের সিলেবাসে মুসলিম লেখকদের অপ্রতুল বর্ণনা। আবার ‘১৩টি সেফটিপিন’ গল্পের সময়কাল নির্দিষ্ট করে উল্লেখ না থাকলেও, দশম শ্রেণির মেয়ের বিবাহের স্বাভাবিকতা গল্পটির সময়কাল সাম্প্রতিকের দিকে নির্দেশ করে না। মনে হতে থাকে, নব্বইয়ের দশক বা তার ঠিক আগে-পরের কোনো সময়, যখন মেয়েরা উচ্চশিক্ষায় ভর্তি হচ্ছে আবার বিয়েও করছে ম্যাট্রিকের আগেই। এই দুটো গল্পের বাইরে ‘নীললোহিত’ করোনা মহামারির সময়কে উপজীব্য করে লেখা। ভিন্ন ভিন্ন সময়ের গল্পের নান্দনিকতার বাইরেও বইটিতে গল্পের সূচি সময়ের এক অদৃশ্য ধারাবাহিকতা প্রকাশ করে। যা বোধ করি, বইটিকে নিছক ছোটগল্পের সংকলন থেকেও এক ধাপ উঁচুতে নিয়ে গেছে।
দুই
আনোয়ারা সৈয়দ হক নিঃসঙ্গ পিরামিড বইটিতে প্রতিটি চরিত্রকেই আলাদা ধরনের দোলাচলে ফেলার চেষ্টা করেছেন। শুধুমাত্র ভালো কিংবা মন্দের গ্যাঁড়াকলে চরিত্রগুলোকে না ফেলে এমন সংকট তৈরি করেছেন, যা চরিত্রগুলোকে ফেলে দিয়েছে বাস্তবিক ও মনস্তাত্ত্বিক দোলাচলে। ‘নীললোহিত’ গল্পের মূল চরিত্র সাবা তার প্রেমিককে অচেনা একটি মেয়ের সঙ্গে দেখে ফেলে, যেখানে মেয়েটি কাঁদছে ও আন্তরিকভাবে সান্ত্বনা দিচ্ছে তার প্রেমিক আদিত্য।
করোনা মহামারির ঘরবন্দি সময়ের ঘোষণার পরপরই যখন সবাই ফিরে যাচ্ছে নিজের নীড়ে, ঠিক সেই মুহূর্তে সাবা দৃশ্যটা দেখে। তবে তার আগে আমরা দেখি তারা প্রেম করে নদীর ধারে গিয়ে, যেখানে তারা দেখে নৌকার চলাচল। কিন্তু ক্রমেই লেখক আমাদের জানান, নদীটা ছিল মরা নদী। তবু তাতে ঢেউ খেলত মাঝেমধ্যে। গল্পে আমরা এই নদীটির কথা আর দেখতে পাই না, দেখতে পাই অন্য আরেকটি নদী, যেটার পরিণতি ভয়ংকর।
সাবা ফিরে যায় বাড়িতে এবং আদিত্য হাসানের সঙ্গে সে আর কথা বলে না। তার প্রেমিক আদিত্য মোবাইল ফোনে তাকে জানানোর চেষ্টা করে, ওটা ছিল তার খালাতো বোন, আর তার খালা সেদিনই মারা গিয়েছিল। এই কথায় সাবার মনের চিড়ে ভেজে না, তার অভিমান আরো বাড়ে। সে তার প্রেমিকের ফোন আর ধরে না।
এর বহুদিন পর, যখন মহামারি চলছে জোরালোভাবে, ঠিক সে-সময় সাবা ফোন পায় তার আরেক বান্ধবীর কাছ থেকে। যেখানে সে জানতে পারে, তার প্রেমিক আদিত্য করোনায় মারা গেছে, যে বহুবার তার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও সাবার অভিমানে সেটা আর ধরা হয়নি।
সাবা এক বিকেলে শান্ত হয়ে এগিয়ে যায় এক নদীর দিকে। আমরা গল্পে আবার নদীর দেখা পাই। ‘নদীর এপার থেকে ওপার কালো মসৃণ জলে ভর্তি দেখা যায়।’ নদীর ওপারে জঙ্গল, সেই জঙ্গলে ফরেস্ট অফিসারের খালি বাড়ি। কিছুদিন আগে বাঘের আক্রমণের পর থেকে ফরেস্ট অফিসার আর সেই বাড়িতে থাকেন না। সাবা নদীতে সাঁতার কেটে এগিয়ে যায় ফরেস্ট অফিসারের খালি বাড়ির দিকে, সে অপেক্ষা করতে থাকে কোনো বাঘ আসার, যেখান থেকে সাবা আর ফিরতে পারবে না। গল্পটা এখানেই শেষ হয়।
এখানে সাবা চরিত্রটির পরিণতির দিকে ধাবিত হওয়ার বিষয়টি দেখা গেলেও, তার ভেতরের দোদুল্যমান অস্থিরতা পাঠকের মনেও ছড়িয়ে যায়। যেমন ছড়িয়ে যায় জলি চরিত্রের অস্থিরতা। যে-গল্পে জলিকে তার স্বামী মারে কিন্তু তাকে উচ্চশিক্ষা থেকে বঞ্চিত করে না। তিন সন্তানের জননী জলি তার পাশের বাসার আপাকে গায়ের কালসিটে দাগ দেখায়, সঙ্গে এও বলে যে, সে তার স্বামীর প্রতি কৃতজ্ঞ কারণ শাশুড়ির অনিচ্ছা সত্ত্বেও তাকে এখনো পড়তে দিচ্ছে। তবে লেখক জলিকেও পরিণতির দিকে ধাবিত করেন, জলি একদিন বিদেশ থেকে বৃত্তি পায় এবং ছয় মাসের জন্য বিলেত পাড়ি দিয়ে আর ফিরে আসে না। তখন চরিত্রের মতো পাঠকও দোলাচলে পড়ে যায়। পাঠক ভাবতে থাকে, আদৌ জলির এহেন কাজ করাটা ঠিক হলো কি না। তার কি স্বামীর কালো হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য এ-রকমটা করা উচিত ছিল? নাকি তিনটে সন্তান রেখে চলে যাওয়াটা, মা হিসেবে এক ধরনের প্রতারণা? এই দোলাচলের উত্তর আমরা জানি না।
888sport live chat-888sport live footballের অশ্লীল বিষয় হলো বাহুল্য। সেই বিচারে আনোয়ারা সৈয়দ হক তাঁর 888sport live footballে অশ্লীলতা আনেননি; বরং গল্পগুলো মেদহীন। ‘এভাবেই তবে হোক’ গল্পে রাত ও দিনের চক্র পরপর চলতে থাকার একঘেয়েমিতাকে তিনি বলেন এক বাক্যে – ‘মনে হয়, এ জীবন বুঝি এভাবেই যাবে’। কিংবা করোনার ইতিহাস, বৈশিষ্ট্য ও প্রবহমানের ইঙ্গিত দিয়ে দেন সরল বাক্যে – ‘বাতাসে ভাসতে ভাসতে মানুষের ঘাড়ে চড়ে এই খতরনাক ভাইরাস এসে হাজির হয়েছে 888sport appsে’।
তবে নয়টি গল্পের সংকলনে কেন যেন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে একাকিত্ব। মহামারির ঘরবন্দি সময়ে আটকে থাকা কিংবা ভাইরাসহীন কোলাহলপূর্ণ জীবনে স্থির হয়ে যাওয়ার মতো গল্পগুলো একধরনের নিঃসঙ্গতার দীর্ঘশ^াস শোনায়। প্রবীণ 888sport live footballিক আনোয়ারা সৈয়দ হক যে বিশাল এক জীবন পাড়ি দিয়ে এসেছেন, সেই প্রবহমান জীবনের দিকে ফিরলে হয়তো দেখা যায় জীবনটা মূলত মানুষের নিঃসঙ্গ হওয়ার আয়োজন। একসময় সৈয়দ শামসুল হকের মতো প্রথিতযশা লেখক ছিলেন সঙ্গী। অথচ আজ তাঁর পরিচয় বয়ে বেড়ালেও তিনি নেই। তাই হয়তো এই বইয়ের শেষ গল্পের ইতি টানা হয় এমন বাক্য দিয়েই, ‘তারপর একসময় কখন কোথায় ভেসে চলে যায়। খুব দূরে একটা আবছা ‘নেই নেই’ শব্দ শোনা যায়। হয়তো ভুল শোনা যায়।’

Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.