খায়রুন নেসার স্বামী ব্যবসায়ী। টাকা-পয়সার তেমন অভাব নেই। বেশ চমৎকার শাড়ি, গয়না কিনে ভালোই সময় কাটে তার। ছেলেমেয়েরা ভালো স্কুল-কলেজে পড়ে দুজনেই বিদেশে। খায়রুন নেসার আবার এক ভূতে পাওয়ার অভ্যাস আছে। সময় পেলেই লেখেন। খায়রুন নেসার নামের মতো লেখাগুলি অবশ্য অনাধুনিক নয়। বেশ চনমনে আধুনিক গল্প। মাঝে মাঝে নিবিড় 888sport app download apk। বেশ সুখী মনে হয় যখন তিনি লেখেন। কে এলো আর কে গেল, সে নিয়ে ভাবেন না। অবশ্য সে-লেখার কোনো প্রশংসা কেউ করেনি। কিচ্ছু এসে-যায় না তাতে। একধরনের অপার্থিব আনন্দ ভর করে। তিনি লেখেন। হাতে, নয় ল্যাপটপে। ছেলে বিদেশে চলে গেলে তার ল্যাপটপ তিনি ব্যবহার করতে শুরু করেন। বিএ অনার্সে মাত্র দুই বছর পড়েছিলেন। তাই অনার্স শব্দটা নামের শেষে লেখা যায় না। মোটামুটি বিএ পাশ খায়রুন নেসার সুতন্বী শিখতে তেমন সময় লাগলো না। খুব খুশি হলেন এই জাদুর বাক্সে গুটিগুটি লিখতে এবং ই-মেইল করে দু-একটা লেখা
এখানে-ওখানে পাঠানোও শিখে গেলেন।
স্বামী এই ভূতে পাওয়া অভ্যাসে তেমন খুশিও নন, আবার অখুশিও নন। খায়রুন নেসার মাংস রান্না আগের মতোই স্বাদে-গন্ধে ভালো এবং যা রাঁধেন সবকিছুই স্বামীর পছন্দ। ফলে লেখা নিয়ে সময় খরচ করার কোনো জটিল বিসম্বাদে পড়লেন না। মাঝে মাঝে এমন কমেন্ট – প্রেম-ট্রেম নিয়ে লিখছো নাকি? লোকটা কে?
ছেলেমেয়েরা এসবে তেমন কোনো উৎসাহ দেখালো না। হয়তো মনে মনে ভাবলো – ‘মাই মাম ইজ নট লাইক আদার মাম।’ এমনকি আত্মীয়স্বজনও কেমন একটু বাঁকা চোখে দেখতে শুরু করে। ওসব নিয়ে ভেবে কী হবে। তিনি লেখেন। একটা-দুটো বইও হলো। এসবের মাঝখানে হঠাৎ করে ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাকে স্বামী পরলোকে চলে গেলেন। একটা শূন্যতা গ্রাস করতে করতে, লেখার কারণে, তাকে ধরাশায়ী করতে পারে না। তিনি তখন একটা স্কুলে দুপুরে লাঞ্চ দেওয়ার কাজ করেন। বারোটা থেকে তিনটা। তারপর এই বাড়ি আর লেখালেখি। তার কয়েকটি বাড়ি ভাড়া এবং কিছু জমানো টাকা নিয়ে খারাপ থাকার কথা নয়। তাই মোটামুটি খেয়ে-পরে জীবন ঠিকই চলতে লাগলো। জায়গাটা লন্ডন থেকে পঁচিশ মাইল দক্ষিণে। সমুদ্র দূরে নয়। আর আকাশে অসংখ্য গাঙচিল! কখনো হয়ে যায় বন্ধু।
এমনিই যখন তাঁর জীবন, প্রথমেই একজন এলো তাদের বাড়িতে, যিনি বেশ বিদ্বান ও বুদ্ধিমান। প্রচুর পড়াশোনা নাকি করেন। ধরা যাক সেই ভদ্রলোকের নাম আবীর হোসেন। খানিক কথার পর খাবার টেবিলে কী মনে করে একটি নিজের লেখা গল্প আবীর হোসেনের সামনে ধরেন। বোধকরি তিনি ভেবেছিলেন এই বিদ্বান মানুষটি তাঁর লেখা নিয়ে ভালোমন্দ কিছু বলবেন। তিনি পাতা একটু উল্টে এক পাশে রাখলেন। খায়রুন নেসা তার মন্তব্য শোনার জন্য উদগ্রীব। এখনো তেমন কোনো শংসাবাণীতে অভিষিক্ত নন তিনি। আজকাল প্রশংসা যে শংসা হয়েছে সেটা তিনি জানেন।
– রাশেদভাই চলে গেলেন। তিনি একটু দুঃখ দুঃখ গলায় বললেন। খায়রুন নেসা কোনো জবাব দিলেন না। এর পরের কথাগুলি এমন –
– রাশেদভাই নিশ্চয় তোমাকে পথের ভিখারি করে যায়নি ভাবি?
– না। আমার তেমন কোনো অর্থকষ্ট নেই।
– লিখে তুমি কত পাও?
– কিছু পাই না। কেবল একবার ঈদ888sport free betর জন্য আড়াই হাজার টাকা পেয়েছিলাম।
– ও। আর বই লিখে?
– টাকা পেলাম কোথায়? প্রকাশক ছাপিয়ে দিয়েছেন। কিছু কপি আমি নিজে কিনে নিয়েছি। এ-ওকে দেওয়ার জন্য। এই তো। আমার অটোগ্রাফ তো কেউ নেয় না। আমি নিজে লিখে দিই। একটা কলম কিনেছি অটোগ্রাফ লেখার জন্য। বেশ পুরুষ্টু কলম। বেশ মোটা হয়ে অটোগ্রাফের শব্দগুলি জেগে ওঠে।
এসবের কোনো উত্তর না দিয়ে আবীর এবার বেশ চিন্তিত গলায় বলেন – তাহলে লেখাটা তোমার একটা খরচের ব্যাপার। সময় ব্যয় হয়। টাকা আসে না।
– তেমনই তো।
আবীর হোসেন এরপর বেশ ভালো করে খায়রুন নেসাকে দেখেন যিনি উদগ্রীব হয়ে আছেন কিছু শোনার জন্য। কখনো ভালো কথা কেউ তেমন বলেনি। আবীর হোসেন বলেন – শাহেদভাইয়ের ব্যবসাপত্র কে দেখে?
– কেউ না। ওসব আর নেই। ছেলে বা মেয়ে কেউ এসে হাল ধরতে চায়নি। কে সব বাদ দিয়ে ছাপাখানা সামলাবে? আমি বাড়ি ভাড়া দিয়ে চালিয়ে নিই।
– তার মানে তুমি তার ছাপাখানা থেকে বই করো না?
– না। আমার লেখার জগৎ তার জগৎ ছিল না। আমি একে-ওকে ধরে কোনোমতে চালিয়ে যাই। মেয়েদের লেখা বলে কোনো কোনো লেখক আমার লেখা প্রুফ রিডারকে পড়তে দেয়। যে ব্যাটা এক লাইনও 888sport live football বোঝে না। না হলে বাইন্ডারকে। ওরা যেন মস্ত এক এডিটর এমনসব মন্তব্য লেখেন –
– বুঝলাম। এরপর তিনি কী যেন ভাবছেন।
– কিন্তু এমনও কেউ থাকতে পারে, যিনি তোমার ব্যবসা আবার শুরু করে তাকে বেশ সমৃদ্ধ করতে পারেন।
এর পরের কথার জন্য খায়রুন নেসা চুপ করে বসে আছেন। একটু একটু বৃষ্টি পড়ছে। ব্যালকনির টবগুলিতে নানা ফুলের এলোমেলো খেলা।
খায়রুন নেসাকে গোলাপিমতো শাড়ি আর লাল ব্লাউজে একটু প্রসাধনে খারাপ লাগছে না। স্বামী নেই বলে সাদা পড়তে হবে – এমন জীবনদর্শন তাঁর নয়। তিনি এবার নিজেই বলেন – ‘এসো স্তব্ধতার গান শুনি’ কেমন লাগলো তোমার আবীর? অনেক আগে ‘সাউন্ড অফ সাইলেন্স’ নামে একটা গান শুনেছিলাম। গল্পটা –
এসবের কোনো উত্তর না দিয়ে বলেন আবীর – একজন ব্যবসায়ী গেছেন আর একজন আসতে চায়, ঘটনাটি কি তোমার ভালো লাগছে না? যে সবকিছুর হাল ধরতে পারে।
– কে আসতে চায়? বুঝেও না বোঝার ভান করতে হয়।
– মানে ধরো আমি।
– কীভাবে আসবে?
– তুমি কি একেবারে বৃদ্ধা। কামনা ব্যথা কি কখনো জানান দেয় না কিছু। নাকি নক্ষত্রেরা চুরি করে নিয়ে গেছে তার। ফিরায়ে দেবে না তাকে আর।
তিনি বুদ্ধিমান শিক্ষিত। এসব বলবেন তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। এছাড়াও তিনি গুণী এবং মোটামুটি আলোকিত – এমন কথা তো বলতেই পারেন।
এবার খায়রুন বলেন – মানে তুমি? তুমি কেন আসবে?
– বউ মারা গেছে। একজন তো আসতেই পারে। সেটা তোমার মতো কেউ –
খায়রুন নেসা বলেন, আমার জীবন নিয়ে তেমন কোনো পরিকল্পনা নেই। আমি এই লেখালেখি, পড়া আর কখনো গান শোনা নিয়ে ভালোই আছি।
আবীর এবার ওর হাত তুলে নেন নিজের হাতে। তিনি একটি নরম হাতের স্পর্শ পান। বলেন – বয়স তো পঁয়ষট্টি, এখনই সন্ন্যাস নেবে?
খায়রুন নেসা এবার হাত সরিয়ে নেন। বলেন – ঠিক তাই। এর বাইরে আমি আর কিছু ভাবছি না।
আবীর একটু নরম মাংসময় হাতের স্পর্শ পেয়েছেন। যে হাসলে এখনো গালে টোল পড়ে এবং যার চোখ কাজল ছাড়াই গভীর। বলেন আবার – তোমার গায়ের রংকে বিদেশে বলে অলিভ। তোমার মতো রং পাওয়ার জন্য ওদেশের লোকজন পাগল। ট্যান করতে হাজার হাজার পাউন্ড খরচ করে। তুমি লাকি।
– তুমি তো আমার গল্প পড়লে না আবীর। আমি কেমন লিখি, তুমি জানতেও চাওনি। কেবল আমার চামড়ার রং, টোল, চোখ। কেন নিজের পছন্দের কাজে কেউ তো জুয়া খেলে, ঘোড়ার পেছনে টাকা রাখে, কুকুরের পেছনে। কেউ কেউ সর্বস্ব হারায় এই করতে করতে। আমি লিখতে ভালোবাসি। আপাতত এতে তেমন আয় নেই, ব্যয় আছে। সেটা নিয়ে এত কথা বলছ কেন? আমার বাড়িতে কি কেউ না খেয়ে থাকে, আমার বাড়ি কি অপরিষ্কার, আমি কি টাকার জন্য কারো কাছে হাত পাতি, আমি কি অতিথি এলে দূর দূর করে তাড়িয়ে দিই? তাহলে আমার লেখাকে এমন তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করার মানেটা কী? এসব বাদ দিয়ে কী করতে বলো আমাকে?
আবীর একটু চুপ করে থাকে। তারপর বলে একটু দম নিয়ে – লেখা। লিখে হবেটা কী? ওসব মেয়েলি প্যানপানানি।
– আই বেগ ইয়োর পার্ডন। না পড়েই বুঝে ফেললে সবকিছু। একটু রাগলে তিনি এমন দু-একটা ইংরেজি বলেন।
– পড়লেও নতুন কি পেতাম? একজন স্বামীহারা 888sport promo codeর হৃদয়ের আকুতি, এই তো।
খায়রুন নেসা গল্পটি উঠিয়ে নেন টেবিল থেকে। বলেন, ঠিক তাই। একজন স্বামীহারা 888sport promo codeর আকুতি। তুমি বোধকরি সন্ধ্যার ট্রেনে চলে যাবে?
আবীর ওঠে। আমি যেতে পারলেই বাঁচো। এই তো।
– একটা ভয়ানক প্লট এসেছে। আজ রাতে না লিখলে মাথা থেকে চলে যাবে। গল্পটার নামও চলে এসেছে। ‘দরজা খোলা রেখো আমি আসতে চাই।’
আবীর গনগনে চোখে চলে যায়। দরজায় টোকা? সেটা যে দু-একবার শুনিনি তা মনে করো না। তোমাদের টেস্ট? মাংস।
– তোমার শরীরটা কি রক্তমাংস দিয়ে তৈরি না?
এই হলো তার স্বামী মারা যাওয়ার পরের বছর পঁয়ষট্টির কথা।
তিনি লিখেই চলেছেন। দশ বছরে দশটি বই হয়েছে। অনেক লেখাও। বেশ লাগছে। যেন তিনি নিজেকেই নানাভাবে দেখছেন। নানাভাবে জানতে পারছেন জীবন ও সময়ের অভিলাষ। জন ফাওলস বলেছিলেন না – ‘হোয়েন ইউ রাইট, দিস রাইট বেসিক্যালি টু নো হু ইউ আর।’ আত্মা বা নফস কী? নিজে? নিজেকে নিয়ে ভাবা। নিজের কাছে ফিরে যাওয়া। জন ফাওলসের কোটেশন বড় বড় করে লিখে দেয়ালে আঠা দিয়ে লাগিয়ে রেখেছেন। জন ফাওলসের একটা বই কোনোমতে পড়েছেন। তবে কোটেশনটি বেশ।
স্বামীর আর এক বন্ধু একদিন অনেক সওদাপাতি করে বাড়িতে আসেন। খায়রুন নেসা ঠিক বুঝতে পারেন না কারণ কী। দীর্ঘদিন বিদেশে থাকার ফলে তিনি খায়রুনকে এক বিশাল হাগ করেন। খায়রুন কোনোমতে নিজেকে ছাড়িয়ে নেন। বলেন দম নিতে নিতে, আবিদভাই কী মনে করে?
তিনি বলেন – কী আবার, দেখতে এলাম। শাহেদ চলে গেছে। পাঁচ বছরে কেমন আছেন আপনি?
– আমি ভালো আছি। তবে ডায়াবেটিস, ব্লাডপ্রেসার সেসব তো আছেই।
– বেশ ভালো লাগছে আপনাকে দেখতে। বুঝতেও পারা যায় না আপনার বয়স। তিনি আবার হাগ করবেন বলে হাত বাড়িয়ে দেন। খায়রুন এবার সরে দাঁড়ান। ওসব হাগ-টাগ তার কাছে হাগুর মতো।
– কী নিয়ে সময় কাটে আপনার?
সরল উত্তর – লেখালেখি।
এই বিষয় যে মোটেই কোনো বলার মতো ঘটনা নয়, তেমন মুখ করে তিনি বলেন – লেখালেখি? ওতে কত টাকা পান?
– তেমন কিছু না।
– তাই তো বলছি। ওসব ছাইপাঁশ লিখে হবেটা কী?
– জানি না। সময় বেশ কাটে।
এখন তিনি পিয়ানোর রিডের মতো কম্পিউটারের কি-বোর্ডে দ্রুত আঙুল চালাতে শিখেছেন। নতুন ল্যাপটপ কিনেছেন এবং এতে বেশ ভালো বোধ করেন। বলেন, একেবারে ছোট বালিকার মতো – আপনি আমার বই দেখবেন আবিদভাই?
– বই? কতগুলি লিখেছেন।
– অনেক। গল্প, 888sport alternative link, 888sport live নানা কিছু।
তিনি বই দেখবেন মনে হয় না। খায়রুন নেসা এতদিনে জেনে গেছেন সকলে বই লেখা বড় কোনো কাজ মনে করে না। আর সে-লেখা যদি 888sport promo codeর হাত থেকে সৃষ্টি হয়। তিনি বলেন – সে দেখা যাবে। আসুন গল্প করি।
তিনি বলেন আমেরিকার বড় বাড়ির কথা। বাগানের কথা। নানাসব ফুলের কথা এবং ঘন ঘন 888sport slot gameে যাওয়ার কথা।
– এখন একা যেতে হয়। রুমানা নেই। ছেলেমেয়েরা তো আর কেউ সঙ্গে যেতে চায় না।
– আপনার ছেলেমেয়েরা সঙ্গে যায়? তিনি প্রশ্ন করেন।
– ইউ মাস্ট বি জোকিং! কথার ভেতর এমন একটু-আধটু ইংরেজি বলতে ভালো লাগে কি না কে জানে কিন্তু তিনি বলেন। অনেকটা অভ্যাস। স্কুলের তিন ঘণ্টাই বোধহয় কারণ। ওরা কেন সঙ্গে যাবে। ছেলে যায় ওর বান্ধবীর সঙ্গে। আর মেয়ে যায় যার সঙ্গে থাকে তাকে নিয়ে।
– তাহলে তো ভাবি আপনি বড় একা।
– নট কোয়ায়েট। আমার লেখা আছে না। খায়রুনের খুব ইচ্ছা করছে ম্যাজিক রিয়েলিজম নিয়ে যে-গল্পটি তিন দিন তিন রাত ধরে তিনি লিখেছেন সেটা তাকে পড়ে শোনাবেন। গল্পটিতে আছে 888sport slot game আর বাগানবিলাস। কখন যে বাগানের গাছগুলি জীবন্ত হয়ে গেছে আর 888sport slot gameের গাড়িটা কেমন করে পানির ওপর দিয়ে ভেসে চলে গেছে – এসব লেখা। আর একজন 888sport slot gameের মানুষ জুতো পায়ে নদী পার হয়ে গেছে। এমনি সব ভুতুড়ে গল্প। অবশ্য বর্তমান ‘জনরোতে’ তার নাম ম্যাজিক রিয়েলিজম, যেটা আগেও ছিল। আরব্য 888sport alternative linkেও ছিল। তাকে কেউ এমন নামে ডাকেনি। জাদুবাস্তবতা না বলে বলেছে – জাদুর কার্পেট। সেই যে অনার্সে পড়েছিলেন ‘মেঘের দেশ থেকে চিঠি সেই মেঘদূত – সবই জাদুবাস্তবতা।’ খামোকা সব ক্রেডিট নিলেন মার্কেজ নামের এক ভুতুড়ে মানুষ। এর সঙ্গে আর এক শব্দ সুররিয়ালিজম। তাঁর খুব ইচ্ছা করছে গরম চা এবং এমনসব চমৎকার বিষয়ে কথা বলতে। কিন্তু আবিদভাই সেসব গল্প করেন না। এই টাকা, বাড়ি, গয়নাগাটির বাইরে তেমন কিছু নয়। মেয়েদের শাড়ি কেনা, জুতো কেনা – এইসব। বলেন – শাড়ি কিনতে গেলে আমি কখনো টাকার হিসাব করি না। ডিলন টমাসের পর তাঁর স্ত্রী বিয়ে করলে সে স্বামী তাঁকে সাতাশ জোড়া জুতো কিনে দিয়েছিলেন, আমি অনেকটা তাঁরই মতো। তখন ক্যাটেলিন ম্যাকনামারা বুঝেছিলেন সত্যিকারের প্রেম কী। বসার ঘরের শেলফেই তো ছিল তাঁর কয়েকটি বই। ‘তুমি ডাক দিয়েছো কোন সকালে’, ‘আবার এসেছে আষাঢ়’ এবং ‘নিশুতি রাত’। তিনি নামগুলি পড়েন কেবল। তারপর হাসেন। যেন তিনি যে-সন্ধানে এসেছেন এই বাড়ির শেলফেই থরে থরে তা সাজানো। বলেন – ‘নিশুতি রাতে’র একাকিত্ব নিয়ে বই লিখেছেন তাই না?
একটা কথা বলার বিষয় পেয়ে গেছেন ভেবে খায়রুন বলেন – না। কখনো আমরা আর একটা পৃথিবীতে বেড়াতে যাই। ‘নিশুতি রাতে’ তেমন কোনো প্লট বা ভাবনা। আর একটা পৃথিবী। রেললাইনের মতো এই পৃথিবীর পাশাপাশি চলে।
তিনি বলেন এবার – জীবন তো শেষ হয়ে গেল আপনার।
– তা তো যাবেই।
– ‘তুমি ডাক দিয়েছো কোন সকালে’ নিশ্চয়ই প্রেমের গল্প।
– তেমন কোনো প্রেম নয়। কে ডাক দিয়েছিল তেমন কিছু।
– কে ডাক দিয়েছিল?
– সেই জগৎটা, যা রেললাইনের মতো, পাশাপাশি চলে।
এরপর এটা-সেটা। তিনি তাকে ডিনারে নিয়ে যেতে চান, তিনি রাজি হন না। খানিক পর এটা-সেটা খেয়ে তিনি চলে যাবেন বলে ঠিক করেন। তারপর আবার দু-হাত বাড়িয়ে তাঁকে সজোরে হাগ করেন। তাঁর বাথরুম পেয়ে যায়। বলেন – কী নরম কী নরম আপনি!
– আমি মানে আমার মাংস, এই তো।
– একই কথা।
– আমি আর আমার মাংস একই কথা?
– কেন আপনি নিজেকে মাংসবিহীন কঙ্কাল মনে করেন নাকি?
– মাংস আর মন। এরা কিন্তু আলাদা। আচ্ছা আপনি এত বিট রাউন্ড দ্য বুশ করছেন কেন? প্রশ্ন করতে পারেন – উড ইউ লাইক টু ম্যারি মি?
– উত্তর কী হবে?
– নো। আই উড নট। আমার নফস বা আত্মা আর কাউকে মাংস খেলায় ডাকবে না। আমার ভেতরটা বদলে গেছে। আপনি নরম ও নিরুপায় হরিণী মাংসের সন্ধানে এই তো?
তিনি কোট পরতে পরতে বলেন – 888sport promo codeমাংসে স্বাদুতা থাকবে, কোমলতা
থাকবে – সেটাই তো স্বাভাবিক। আপনি তো আর ব্যায়ামবিশারদ নন।
আবিদ হাসান চলে যান। তাকে কোনো অটোগ্রাফ দেওয়া বই দেওয়া হয় না। দিতে চেয়েছিলেন – ‘এসো করো স্ন্নান’। এটা অবশ্য একটি পাগল মেয়ের গল্প। যে সময় পেলেই কল ছেড়ে দিয়ে ঝাঁঝরির তলায় গান করত। সে-গান যেন কখনো শেষ না হয়, তাই এক ঘণ্টার আগে ঝাঁঝরির নিস্তার ছিল না।
প্রায় আশিটি বই হয়ে গেছে তার। নানা ধরনের। নানা ঘ্রাণের। নানা স্বাদের। মিষ্টি, তেতো, টকঝাল, নুনভরা। তিনি তাঁর বইগুলিকে ওই নামেই ডাকেন। নুন ভরা বইয়ে সমুদ্র আছে। ডেড সিতে আছে ভেসে থাকা 888sport promo code। তেতো মানে 888sport promo code-পুরুষের নানা অমিলের গল্প। কখনো উপকারী অমিল, আবার কখনো বাজে অমিল। মিষ্টি মানে যে-লোক বুড়ো বয়সেও মা মা করে তেমন সব বালকপুরুষের গল্প। আর
যে-মেয়েরা একটু আহ্লাদী আহ্লাদী কথা বলে এবং একটু প্রশংসাতেই একেবারেই গলে জল, তাদের মতো কেউ। তিনি বুঝতে পারেন না তিনি কোন স্বাদের। বোধকরি কষা। ছেলেমেয়ে দুজনেই বিয়ে করেছে। ওদের সঙ্গে মাঝে মাঝে দেখা হয়। এখনো একা এবং চলিষ্ণু এবং বয়স আশি হতে ছয় মাস বাকি। লিখছেন। লেখায় হাসছেন। লেখায় কাঁদছেন। লেখায় কখনো যৌনতাকেও ডাকছেন। না হলে কখনো আরো নানা কিছু। মহিলা সমিতি থেকে একটা 888sport app download bd পেয়েছেন। লম্বা কালো একটা স্ট্যাচুর মতো কিছু। পুরুষ লেখক হলে হয়তো আরো দু-একটা বেশি হতো। সে নিয়ে ভেবে আর কী হবে? ফুটবলার যেমন পায়, তেমন একটা মেডেল যদি কেউ গলায় পরিয়ে দেয়! ভাবেন
দু-একবার।
– আপু আছেন? ফোন।
– ওরে বাবা সাব্বির তুমি? কোথা থেকে।
– তোমার শহরেই। দেখা করতে আসতে পারি?
– এসো।
তিনি এখন একটা লম্বা জামার ওপর থোকা থোকা ফুলের নকশা দেওয়া একটা ড্রেসিং গাউন পরেন। মাথায় উলের টুপি। বেশ শীত পড়েছে। শাড়ি? তিনি বলেন – টু মাচ টু হ্যান্ডল।
জবরদস্ত একখানা বই লিখছেন। নাম ‘প্রেম’। চোখের ছানি দুবার কাটানো হয়েছে। ম্যাকুলার হোল মেরামতি একবার। পড়ার চশমা, লেখার চশমা, দেখার চশমা নিয়ে ভালোই আছেন। ম্যাকুলার হোল কাটার ডাক্তারকে একটা বই উৎসর্গ করেছেন। সুন্দর করে লিখেছেন ‘যিনি আমার একটি চোখ দান করেছেন এবং সমস্ত জীবন।’ বেশ একটু প্রেম প্রেম অনুভূতি হয়েছিল তাঁর। চোখ কি সবাই রক্ষা করতে পারে? – ‘প্রেম’ নামের ঢাউস বইটা শেষ করবেন। প্রেম বিষয়টি তাঁকে চিরকালই ভাবিয়েছে, জ্বালিয়েছে। উল্লিখিত ব্যক্তি ছাড়াও আরো দু-একজন দেশি-বিদেশি তাঁকে প্রায় নিষিদ্ধ ফল ভক্ষণ করিয়েই ছাড়ে। সেসব এখন আর নেই। মনে মনে বেশ নিশ্চিন্ত। সাব্বির ওঁর দূরসম্পর্কের মামাতো ভাই। উনিও বিদেশে ছিলেন এখন এসেছেন। একটা মেয়ের সঙ্গে লিভ টুগেদার করতেন তিনি। এখন মনে হয় সেই চিড়িয়া আর নেই। তাঁর বয়স যদি আশি ধরো ধরো হয়, তবে সাব্বিরের বয়স পঁচাত্তর হতেই পারে। মন বেশ চনমনে লাগছে। সাব্বির লেখালেখি করে। তবে এখনো পড়া হয়নি ওকে। ও আবার ইংরেজিতে 888sport app download apk লেখে। ‘এ ওয়ার্ল্ড বিয়োন্ড’। 888sport app download apkর বই। মন্দ নয়।
– হ্যালো মাই লাভ? হাগসহ উচ্ছ্বাস।
– হ্যালো মাই পোয়েট। তিনি হাগমুক্ত হয়ে হাসছেন।
– মাই গড আপু তুমি কী খাও? এখনো শেষ বিকেলের রোদের মতো একটুখানি গ্ল্যামার কোথায় যেন লেগে আছে।
– আছে নাকি? সকালে খুব করে অলিভ অয়েল মেখেছি। তাই।
দুজনে প্রাণ খুলে হাসে।
এবার এ-কথা সে-কথার পর সাব্বির বলে – চলো আমার সঙ্গে। তোমার একটা নাম দিয়েছিলাম না?
– সে তো অনেক আগে। কণা! আলোর কণা।
– তা কণা চলো বেরিয়ে পড়ি। মনে আছে একবার সাহেদভাইয়ের সঙ্গে ঝগড়া হয়েছিল তোমার। বলেছিলে – এমন জায়গায় চলে যাব, কেউ আর আমাকে খুঁজে পাবে না। এবার চলো। পৃথিবীতে হারানোর জায়গা নেই সেটা সত্যি। তারপরও –
নেহায়েতই দুষ্টুমি মনে করে খায়রুন বলে – আগে আমার দু-একটা লেখা দেখো। ভাবো আমার মন কী বলছে।
– লেখা। সে দেখবখন।
– তোমার সেই সঙ্গিনী কোথায়?
– চলে গেছেন। একজন বক্সারের সঙ্গে। ও খুব বেশি মাংসাশী ছিল। কার্নিভর যাকে বলে।
অনেক গল্প করে ও। খানিকটা আমেরিকান 888sport live football খানিকটা ওর 888sport live football। তারপর বলে – আমার ইংরেজিটা একেবারে আমেরিকান হয়ে গেছে, তাই না?
– যাচ্ছেতাই। ব্রিটিশ ইংরেজি সবচেয়ে ভালো। বিশেষ করে বিবিসির ইংরেজি।
ও বেশ মজা করে আমেরিকান ইংরেজির কথা বলে। – জানো তো একবার এলিজাবেথ টেলরকে সাংবাদিক প্রশ্ন করেছিল – আপনি কি আমেরিকান, না ব্রিটিশ? উনি উত্তর দিয়েছিলেন – হাফ আর হ্যা আ ফ। দুজনে আবার হাসতে থাকে। বলে – খায়রুন তোমাদের ওই হ্যাফের সঙ্গেই ব্রিটিশদের পার্থক্য।
– তাহলে তুমি যাবে না?
– কোথায়?
– আমার সঙ্গে।
– পায়ে প্রচুর ব্যথা। বাত যাকে বলে। হাঁটতে গেলে হাঁটু জানান দেয়। চোখদুটো দয়া করে আলো জ্বলায়। এখন এই বোঝা কে টানবে? সাহস তো তোমার কম না?
তারপর আরো দুই কাপ চা খেয়ে সাব্বির যাবে বলে ঠিক করে। খায়রুন বলে – কি আমার লেখা শুনবে না?
– আর একদিন।
– তোমাদের, পুরুষদের, এত ছোঁকছোঁক কেন বলো তো?
– ও এই কথা। আসলে মনে রেখো সব পুরুষই মাংসাশী। কোনো ‘হার্ভিভর’ পেলে জানাব। আপাতত এই ‘অমনিভর’কে পেতে হয়তো? এরপর আর কোনো ভর তোমার ওপর ভর করবে না।
খায়রুন ‘প্রেম’-এর পর যে-বই লিখবে বলে ঠিক করেছে – তার নাম হয়তো রাখবে ‘মাংসাশী’। মাংসের প্রেম। বেশ একটু মডার্ন মডার্ন হবে। ওই যে ছেলেটা একটা বই লিখেছে – মানুষের মাংসের রেস্তোরাঁ। তেমন কোনো। তবে থিমটা একটু আলাদা হবে।
একা ঘরে হাসে একটু। পাগল সাব্বির ওর জন্য ‘হার্ভিভর’ এনে দেবে। ও বলেছে, ও নিজে নিজে ‘অমনিভর’। সে যাই হোক কিছু সময় হেসেকেটে গেল। এবার ‘প্রেম’ নামের 888sport alternative link তিনশো তিন পাতায় লেখে – প্রেম আসলে -। তারপর পিয়ানোর রিডে ওর দ্রুত লেখা। ও আসলে কী? এখনো কি জানে?
আমার হার্ভিভর সময়। এসে হাত ধরো অসময়। তারপর একদিন কার্নিভর জামার বোতাম খুলে বলবে – এখনো সময় আছে। এইসব হাবিজাবিতে রাত প্রায় একটা। ও তখনো লিখছে। সেই গল্প – আমার হার্ভিভর সময়।
তখন ও একা এবং আনন্দিত।
সেই যে নতুন গ্রেভইয়ার্ড, লাল ফুল, ফুলগাছটার নিচে এক টুকরো জমি কেনা আছে। দুটো মানুষের পাশাপাশি কবরের জন্য। খায়রুন কেন কবরটার কথা ভাবছে কে জানে।
অনেক রাতে ঘুম ভেঙে যায়। মনে পড়ে আবার, স্বামীর পাশে এক টুকরো মাটি আছে তার জন্য। শিউরে ওঠে ও। ‘যে-জীবন দোয়েলের ফড়িংয়ের’ নামে একটা গল্প ছিল না। যখন একজন অসুস্থ মানুষের সঙ্গ এমন একটা গল্প লিখতে বাধ্য করেছিল। ওখানে আবার দুজনের জীবনযাপন? কলম নেই, কাগজ নেই, ল্যাপটপ নামের সেই সুহৃদ নেই। কী হবে যখন ওরা আবার ঝগড়া করবে? কোথায় যাবে তখন? কোন গাছের নিচে? কোন পাতার আড়ালে? খায়রুন ওঠে। টয়লেট ঘুরে চোখে পানি দিয়ে আসে। আলমারি খুলে উইলটা বের করে। লেখে পরিষ্কার অক্ষরে নতুন করে – ‘আমার মৃত্যুর পর আমাকে আমার স্বামীর কবরে নয়, দূরের চেরি অরচার্ডে যেন কবর দেওয়া হয়। জায়গাটা আমার পছন্দের। দামটা আমার টাকা থেকে যাবে। ছেলেমেয়ে ওই ছয় হাজার টাকায় কষ্টে থাকবে না। পুরো বাড়িটাই তো তখন ওদের।’
একাকিত্ব এবং সময় কাটানোর সেই গোপন কাজ, বাড়ির বাগান, ল্যাপটপ, নিজের বানানো চরিত্রগুলি! আহা ওদের সঙ্গে কখনো হাসা, কখনো কাঁদা! আর কী চাই। হে আমার সুহৃদ ল্যাপটপ, আমার প্রিয়তম বন্ধু, তুমি কেবল আমাকে নাও। নীলচে আলোতে সেই বিশেষ সুহৃদ! ও পাশ ফেরে স্বস্তিতে।
সকাল হতে আর দেরি নেই।


Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.