রক্তের রোশনাই

আমি বাহাদুর শাহ পার্ক। প্রাক্তন ভিক্টোরিয়া পার্ক। তারও আগে আন্টাঘর। আমি যেমন ব্রিটিশ-ভারত, পাকিস্তান আর 888sport apps নামের তিন রাষ্ট্রের ক্রমবাসিন্দা তেমনি আমার গায়ে আছে আর্মেনিয়ান, ইংরেজ আর এদেশের বিপ্লবী সিপাহিদের নিহত নিশ্বাস। খুলেই বলি তাহলে। আঠারো শতকের শেষদিকে এই 888sport app শহরে আর্মেনিয়ান সম্প্রদায়ের বিলিয়ার্ড খেলার ক্লাব ছিলাম আমি। এদেশের মানুষের মুখে তো সব জিনিসই একটা নতুন নাম পায়। তো, বিলিয়ার্ডের বল অনেকটা ডিমের মতো দেখতে বলে ‘আন্ডা’ ওরফে ‘আন্টাঘর’ বলে ডাকতে শুরু করল আমাকে। আমার এখানে বসে লোকে যেমন মজার খেলা খেলত তেমনি আমাকে নিয়েও তো কম খেলা হলো না! উনিশ শতকের গোড়ার কথা। ইংরেজরা কিনে নিল আমাকে। পুরনো ক্লাবঘর ভেঙেচুরে ময়দানের মতো করল। তখন লোকে আর একটু বড় করে ডাকতে থাকল আমাকে; ‘আন্টাঘরে’র বদলে ‘আন্টাঘর ময়দান’ নামে। আপনারা 888sport appর সিভিল সার্জন (১৮২৫-৩৫) জেমস টেলরের নাম জানেন নিশ্চয়ই। টপোগ্রাফি অব 888sport app (১৮৪০) বলে তাঁর বিখ্যাত বই তিনি অখ্যাত আমার সম্পর্কে লিখলেন – কয়েকটি রাস্তার মাঝে এক টুকরো খালি জায়গা, যার মাঝে আছে বৃত্তাকার একটি বাগান। বড় ময়দান আছে অনেকই কিন্তু বাগান থাকে কয়টার? আমি কিন্তু আকারে ছোট হলেও বাগান নিয়ে ছিলাম সবসময়। এখনো তো আপনারা তা-ই দেখেন; স্থপতি রফিক আজম এই সেদিন সংস্কার আর নতুন করে বিন্যাসের পরও। আমি এই 888sport appয় বসেও একদিন হঠাৎ কালাপানির পাড়ের বিলাতের রানি ভিক্টোরিয়া নামে বদলে যাই। ১৮৫৮-তে তাঁর ভারত শাসনভার গ্রহণের ঘোষণাপত্র পড়া হয় আমার এখানেই। সেই থেকে আমি ভিক্টোরিয়া পার্ক। না, রানি কখনোই আসেননি এই পার্কে, তিনি আদৌ জানতেনও কি না যে টেমসের পাড়ের তাঁর নামে দূর 888sport app নগরের বুড়িগঙ্গার পাড়ে একটা পার্ক আছে – সেটাতেই তো ঘোরতর সন্দেহ আমার! আমার অবস্থানটা একটু খুলে বলি। আমার পাশে সাধু থোমারের ক্যাথিড্রাল। একটু দূরে পাটুয়াটুলিতে ব্রাহ্মসমাজ মন্দির। কাছেধারে নারিন্দায় এক 888sport promo codeর নির্মিত 888sport appর ঐতিহাসিক বিনত বিবির মসজিদ। মোটমাট বলতে পারেন, একটা সেক্যুলার আবহে আমার বসবাস। আমাকে নিয়ে এখন যিনি গল্প শোনাচ্ছেন আপনাদের, তিনি তো দুধের শিশু; তার আগে বাংলা 888sport live footballের কত রথী-মহারথী যে এই পার্কের আশপাশে ঘোরাঘুরি করেছে তার ইয়ত্তা নেই কোনো। আমার গা ঘেঁষেই কলেজিয়েট স্কুল, বুদ্ধদেব বসু পড়েছেন এখানে। বেশিদূরে না একরামপুর, সেখানের স্কুলে পড়েছেন সমরেশ বসু; তাঁর একটা গল্প ‘আদাবে’র জমিনে এই এলাকাকে খুঁজে পাবেন আপনারা। কাছাকাছি সওগাত অফিস, বিউটি বোর্ডিং, ক্যাপিটালে তো এদেশের তাবড়-তাবড় কবি-লেখক আড্ডা দিয়েছেন দিনরাত। তারা তো তারা, স্বয়ং আপনাদের রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও বুড়িগঙ্গায় বোট থেকে নেমে এই অঞ্চলে এসেছেন। ওই যে দেখা যায় ব্রাহ্মমন্দির, ওইখানে জীবনানন্দ আর লাবণ্য বিয়ে করেন আর বিয়ের বাদ্যির পাশাপাশি খুনের দরিয়াও তো বয়ে গেছে আমার দৃষ্টিসীমানায়। ১৯৪২-এ সোমেন চন্দ নামে এক লেখক ফ্যাসিবাদী গুণ্ডাদের ভোজালির কোপে প্রাণ দিয়েছেন; ওই তো দেখা যায় জায়গাটা। এই আমি ভিক্টোরিয়া পার্ক, থুক্কু বাহাদুর শাহ পার্ক।
এতসব কথা বলে গল্পের প্রস্তাবনা করলাম কেবল। এইবার আসি মূল গল্পে। আসলেও কি গল্প?

দুই
সিপাহি বিপ্লবের কথা তো আপনারা সবাই জানেন। ১৭৫৭-তে পলাশীর প্রান্তরে ভারতবর্ষের স্বাধীনতাসূর্য অস্তমিত হওয়ার ঠিক ১০০ বছর পর ১৮৫৭-তে স্বাধীনতা সংকল্পে বিদ্রোহ করে এদেশের হিন্দু-মুসলিম সিপাহিদল। জাতিধর্মবর্ণ-বিভক্ত ভারতে এই বিদ্রোহকে দূর জার্মানে বসে কার্ল মার্কস ঠিকই ধরতে পেরে বলেছিলেন, ‘ভারতের প্রথম ঐক্যবদ্ধ জাতীয় সংগ্রাম।’ নতজানু হওয়ার কালে শির-উঁচু করা বিদ্রোহের ঝান্ডা উড়িয়েছে সিপাহিরা। শোর তুলেছে – ‘দরিয়া মে তুফান ভারি। দূর ইংলিশস্থান জলদি হটো, জলদি হটো ফিরিঙ্গি বেইমান।’ দিল্লি-লখনৌ, মিরাট, বেরিলি, 888sport app – একাকার হয়ে যায় বিদ্রোহের আগুনে। ঝাঁসির রানি-তাঁতিয়া টোপে-ফৈজাবাদের মৌলবি-কানপুরের নানাসাহেব, চাটগাঁর হাবিলদার রজব আলী – সব এসে মেলে মুক্তির মোহনায়। দেওয়ান-ই-আম, দেওয়ান-ই-খাস ভেদ করে চাঁদনী চক আর তারার ছাউনি উজিয়ে চলে জোরকদম পল্টন। বিদেশি বণিকদের অত্যাচার আর নিপীড়নে নিস্তব্ধ যখন ভারতের গ্রামনগর তখন সে সুরহারা সকাল আর শাপগ্রস্ত শর্বরীর গোড়া ধরে টান দেয় সোনার ছেলে সিপাহি। দুর্ভাগ্য সে-জাতির যে-জাতির এক সেরা শায়ের গালিব কাবাব-রুটি আর সুরার সম্মোহনে তাঁর গজল গায়েব করে দেয় তখতের তাঁবেদারে। কিন্তু সৌভাগ্য সে-জাতির যে-জাতির স্বাধীনতার সম্মান সমুন্নত রাখতে সাধারণ সিপাহিরা কবুল করে মৃত্যুসুধা পানের দাওয়াত, সানন্দে কুচকাওয়াজ করে চলে মওত-মঞ্জিলের দিকে। নিজেরা আগুনের জৌলুসে আহুতি দিয়ে তাঁরা নিশ্চিত করে দেশমাতার দিগন্তভূমিতে জ্যোৎস্নার পলি। তাঁদের ত্যাগী রক্তের নহরেই গোলাপের দরবার আজো এতটা লালাভ, জীবনের বিশাল প্রান্তরে মৃত্যু এক মুহূর্তের মুসাফির-মাত্র!

তিন
বিপ্লব সফল হলে বিপ্লবীদের গলায় ফুলের মালা আর ব্যর্থ হলে ফাঁসির দড়িখানা। সিপাহি বিপ্লবও সফল হয়নি আপাতত, তাই বিপ্লবী সিপাহিদের পবিত্র লোহুতে ভেসে যায় গোটা ভারত। ভেসে যায় বাংলা, ভেসে যায় 888sport app, ভেসে যাই এই আমি; ভিক্টোরিয়া পার্ক। অনেক পরে এই দেশের এক লেখক আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের চিলেকোঠার সেপাই 888sport alternative linkের বিবরবাসী ওসমানও ভেসে যায় আমার আঙিনায় টপটপ করে পড়া বিপ্লবী সিপাহিদের বীর রক্তধারায় – ‘লালমুখো সাহেবদের লেলিয়ে-দেওয়া নবাব আবদুল গনি-রূপলাল মোহিনীমোহনের শ্বাদন্তের কামড়ে – ক্ষতবিক্ষত লালবাগ কেল্লার সেপাইরা আসে, ভিক্টোরিয়া পার্কের পামগাছ থেকে গলায় দড়ি ছিঁড়ে নেমে আসে মীরাটের সেপাই, বেরিলির সেপাই, স›দ্বীপ-সিরাজগঞ্জ-গোয়ালন্দের সেপাই।’

চার
সাল ১৮৫৭।
‘বৃহস্পতিবার সকালে, ঠিক সাতটার সময় চারজন বিদ্রোহী, যাঁদের ধরা হয়েছিলো রোববার অপরাহ্ণে এবং জজ এবারকোম্বি যাঁদের মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছিলেন, তাঁদের ফাঁসিতে ঝোলানো হয়েছিল গির্জার উলটোদিকে ফাঁকা জায়গায় তৈরি ফাঁসিকাষ্ঠে। ফাঁসির মঞ্চের ডানদিকে ছিল নাবিকরা, সামনের দিকে ছিল স্বেচ্ছাসেবী পদাতিক ও অশ্বারোহী বাহিনী। তিনজন বিদ্রোহী নিজেরাই গলায় দড়ি ঝুলিয়ে মৃত্যুবরণ করলো সাহসের সঙ্গে। তাঁদের আহত বন্ধুদের হাসপাতাল থেকে নিয়ে আসা হয়েছিলো এ-দৃশ্য দেখার জন্য। যাঁরা ছিল বিশ্বস্ত তাঁরাও ছিল সেখানে। পুরো ব্যাপারটি সম্পন্ন হয়েছিল ‘উইথ দি আটমোস্ট ডিসেন্সি অ্যান্ড ইন কমপ্লিট সাইলেন্স’।’
‘888sport app, শুক্রবার ২৭ নভেম্বর ১৮৫৭। ৭৩-এর (রেজিমেন্ট নং) একজন সুবাদার ও একজন নায়েককে আজ সকালে গির্জার উলটোদিকে ফাঁসিকাষ্ঠে ঝোলানে হল।’
‘আরেকজন সিপাহিকে মঙ্গলবার সকাল সোয়া সাতটায় গির্জার উলটোদিকে ঝোলানো হল।’ (১৮৫৭ সালে 888sport app থেকে প্রকাশিত ইংরেজি পত্রিকার 888sport world cup rate। সংগ্রহ ও 888sport app download apk latest version : মুনতাসীর মামুন)

পাঁচ
মৃত্যুরে লভিল অমৃত করি। এই দেশের সিপাহিসুন্দরেরা। আর চেয়ে চেয়ে দেখল বাকি সবাই। দেখল বুড়িগঙ্গার জল। দেখল সদরঘাটের রাস্তার ধূলিবালি। দেখল পুরান 888sport appর রৌদ্রমেঘকুয়াশা আর আমি ভিক্টোরিয়া পার্ক, হ্যাঁ, অপমৃত সিপাহিদের বিদেহী ভূত। রাষ্ট্রবিপ্লবকে দমন করতে পারে কিন্তু বিপ্লবীর ভূত তাকে তাড়া করে ফেরে। খুলেই বলি তাহলে।

ছয়
আমি তো নেহায়েত একটা পার্ক। ফাঁসির ঘটনার পরও আমি ঠায় আমার অবস্থানেই ছিলাম। না না, ভূত-টূতে আমি বিশ্বাস করি না। তবে কি জানেন, সন্ধ্যার পর থেকেই আমি যেন কাদের আনাগোনা আঁচ করতাম আমার আঙিনায়। কারা যেন গাইত – ‘কদম কদম বাঢ়ায়ে যা, খুশি কে গীত গায়ে যা, এ জিন্দেগি হে কওম কি তু কওম পে লুটায়ে যা।’ আমি ভালো করে বোঝার চেষ্টা করি, কারা আমার এখানে! আরে, এরা তো দেখি সিপাহি বিদ্রোহে আমার এখানে ফাঁসিতে ঝোলা সিপাহিরা। তাঁরা কাঁদছে তো কাঁদছেই। আমি তো অবাক। যে সিপাহিরা মরণপণ যুদ্ধ করল, কেউ কেউ নিজেরাই সাহসের সঙ্গে ফাঁস পড়ল গলায়, তাঁরা কেন কাঁদছে? আমি তো একটা জড়বস্তু পার্ক, যারা জ্যান্ত তাদের দেখছি, শুনছি দিনের বেলা জটলা বেঁধে আলাপ করছে। কারা তারা? – কলতাবাজার, বাংলাবাজার, শাঁখারীবাজারের মানুষ। তারা বলাবলি করছে, ‘না, না, সন্ধ্যার পর আর আসা যাবে না এই পার্কে।’ কেন, কেন? তারা নাকি ভুতুড়ে কান্না শুনেছে পার্কের পাশে। কথা তো সত্যি, আমিই তো তাঁদের কাঁদতে শুনেছি, দেখেছি। আরে বাবা, তাই তো সন্ধ্যার পর দেখি আগেকার মানুষে মানুষে সয়লাব পার্ক পড়ে থাকে বিরান।। আমি এবার বেজায় চটে যাই। রাতের বেলা আবারো অপমৃত সিপাহিরা রোদনের আসর বসালে কান্নার কারণ জিজ্ঞেস করি; কিন্তু বেবাক চুপচাপ, সুনসান। এর মধ্যে দিন গড়ায়, রাতও ফুরায়, দেখতে দেখতে ১৮৮৪ সাল আসে। আমি দেখি, ইংরেজদের খয়ের খাঁ নবাব আবদুল গনির নাতি হাফিজুল্লাহ মরলে পর তার ইংরেজ বন্ধুরা চাঁদা তুলে আমার বুকে হাফিজুল্লাহর 888sport sign up bonusস্তম্ভ তোলে। তার আরো অনেক পর ১৯৫৭-তে সিপাহি বিদ্রোহের ১০০ বছর হলে আমার নামই পালটে যায়। ভারতবর্ষের শেষ স্বাধীন মোগল সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফরের নামে আমার নতুন নাম হয় ‘বাহাদুর শাহ পার্ক’। সিপাহিদের ফাঁসি দেওয়ার জায়গাটায় 888sport sign up bonusসৌধ গড়ে ওঠে আর আমি আপনমনে ভাবি, মায়ের মাটিতে দুগজ জমিন পায়নি বলে যে বাহাদুর শাহ হাহাকার করেছিল, তাঁর নামে সৌধ হয় তাঁর শুয়ে থাকা রেঙ্গুন থেকে কতদূরে! 888sport appর মাটিতে।

সাত
আমি সব দেখি। সিপাহি বিদ্রোহ, এরপর ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম, ভারত-পাকিস্তান, বাংলা ভাষা-আন্দোলন, গণঅভ্যুত্থান, মুক্তিযুদ্ধ; সব দেখি। রক্তের স্রোতে ভেসে যায় জনপদ। তারপর ওঠে সূর্য। ওঠে চাঁদ। নতুন দিনের নতুন মানুষদের মুখে কত হাসির ফোয়ারা! সেই বিদ্রোহী সিপাহিদের কান্না আজকের আপসকামী দরদালানের ভিড়ে কোথায় যে মিলিয়ে যায়! ভোর থেকে রাত – হরদম এ-পার্কে চলে আড্ডা। শুধু আমি শুনি তাঁদের কান্না। ভেজালের এই বাস্তবে নির্ভেজাল অশ্রুর ধারায় সিক্ত হই এখনো প্রতিরাতে।

আট
একরাতে জিজ্ঞেস করে বসি বিদ্রোহী সিপাহিদের ভূতেদের, ‘আরে বাবারা, এত বছর হয়ে গেল তোমাদের ফাঁসির। ২০০ বছরের কাছাকাছি। তোমরা এখনো কান্দ ক্যান?’ ওই ১৮৫৭-তে কয়েকজন সিপাহির নিজ হাতে নিজ গলায় ফাঁস পরানোর সংবাদ তো আপনাদের এই গল্পের শুরুতে দিয়েছিলাম, তো তাঁদেরই একজন আমাকে বলে, ‘কাঁদি রোশনাই নাই বলে।’ বিস্মিত আমি বলি, ‘বলো কী! ইংরেজ গেল, পাকিস্তানিরা গেল। স্বাধীন স্বদেশ কায়েম হলো। এত রোশনাই, এত তারাবাজি, এত আলো ঝলমল সবখানে!’ আমার কথা শুনে কান্নার বদলে সমবেত সিপাহিরা হেসে ওঠে কোরাসে বলতে লাগল, ‘আমাদের রক্ত ছিল উপনিবেশের বিরুদ্ধে, সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে। আমরা আগে কাঁদতাম এই দেশের আর এখানের মানুষের পরাধীন জনম দেখার দুঃখে। ভাবলাম স্বাধীনতা এলে আমাদের কান্না থামাতে পারব।
আফসোস, নানা দফায় তোমরা স্বাধীন হয়েছ ঠিকই কিন্তু উপনিবেশ আর সাম্রাজ্যবাদের শত্রু-গলায় রোজ রোজ দিচ্ছ আত্মঘাতী ফুলের মালা। তোমরা বাস করো এদেশে তবে খোয়াব দেখো বিলাতের, মার্কিন মুলুকের। তোমরা গরিবের ছেলেপুলেকে বাংলা শিখতে বলো আর বড়লোকের ছাওয়াল-পাওয়ালকে পড়তে পাঠাও সেই সাম্রাজ্য আর উপনিবেশের খোঁয়াড়ে। এই পার্কে আমাদের ফাঁসি হলো এদেশকে ভালোবাসার অপরাধে আর সেই পার্কে বসে আজকালকার ছেলেমেয়ে দেখি বিপ্লবের বদলে পালানোর প্রস্তুতি নেয়। ভিসা ফরম পূরণ করতে করতে বলে, ‘এইবার ১টা ভিসা অন্তত লেগে যাক। তারপর এই মরার দেশে আর থাকব না, হয় লন্ডন, না-হয় মেরিকা চলে যাব।’ সিপাহিরা এবার কোরাসে কাঁদতে কাঁদতে বলে, ‘শুনে আমাদের গা মোচড় দিয়ে ওঠে। বলে কী! এই দেশ মরার দেশ! তাহলে আমরা জীবন দিলাম কার জন্য, কার জন্য, কার জন্য?’ এতক্ষণ শুনছিলাম শুধু। আমি আবেগহীন এক জড়-পার্ক, আমারও কান্না চলে আসে। বিদ্রোহী সিপাহিদের ভূতেরা বলতে থাকে, ‘আমাদের ফাঁসিকাষ্ঠ থেকে সেদিন টপ টপ করে রক্ত ঝরছিল। আমরা হাসি হাসি পরেছি ফাঁসি, দেখেছে দেশবাসী। সেদিনের হাসি ছিল এই স্বপ্নে যে আমাদের রক্তের রোশনাই দেশের সব মানুষের রক্তেও জ্বালাবে অনন্ত রোশনাই। কিন্তু কোথাও রোশনাই না দেখে ঘুটঘুটে এমন অন্ধকারে এখনো আমরা কাঁদছি। সেই ১৮৫৭ থেকে কাঁদছি এখনো। কান্না নিরবধি। কোনোদিন যদি জাতির রক্তে রোশনাই জ্বলে ওঠে তাহলে থেমে যাবে আমাদের কান্না। প্রায় দুশো বছরের কান্নাক্লান্ত আমরা একটু শান্তিতে ঘুমোব তখন।’

Published :

,

Comments

Leave a Reply