রবিশঙ্কর
(১৯২০-২০১২)
গোলাম মুস্তাফা
মাত্র দুদিন আগে খবর প্রকাশিত হয়েছিল যে, ২০১৩ সালের গ্রামি 888sport app download bdের জন্য রবিশঙ্কর ও তাঁর কন্যা আনুশকা মনোনীতদের তালিকায় আছেন। কে পাবেন এই 888sport app download bd? রবিশঙ্কর বললেন, ‘আনুশকারই পাওয়া উচিত’; আর আনুশকার মতে ‘বাবাই পাবেন, এই 888sport app download bd।’ 888sport app download bdের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হওয়ার আগেই এলো দুঃসংবাদ – পণ্ডিত রবিশঙ্কর আর নেই। ১২ ডিসেম্বর বিরানব্বই বছর বয়সে যুক্তরাষ্ট্রের সান দিয়াগোর একটি হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। গ্রামি 888sport app download bdের মনোনয়ন চূড়ান্ত হওয়ার আগেই চলে গেলেন তিনি, কিন্তু গ্রামি কর্তৃপক্ষ এই কালজয়ী 888sport live chatীকে সম্মান জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। রবিশঙ্কর এখন জাগতিক স্বীকৃতি ও সম্মাননার অনেক ঊর্ধ্বে চলে গেছেন, তবু ২০১৩ সালের ১০ ফেব্র“য়ারি তাঁকে দেওয়া হবে আজীবন সম্মাননা 888sport app download bd।
রবিশঙ্করের পূর্বপুরুষদের আদি নিবাস ছিল 888sport appsের নড়াইলের কালিয়ায়, কিন্তু তিনি জন্মেছিলেন বেনারসের তিলেভণ্ডেশ্বর গলির এক ভাড়া বাড়িতে, ১৯২০ সালের ৭ এপ্রিল, এক ব্রাহ্মণ পরিবারে। তাঁদের পরিবারের পদবি ছিল চট্টোপাধ্যায়। মুসলমান শাসনামলে জমিদারির সঙ্গে চৌধুরি উপাধি পেয়েছিলেন রবিশঙ্করের পূর্বপুরুষগণ। সেই থেকে তাঁরা চৌধুরি পদবিই ব্যবহার করে আসছেন। জন্মের সময় রবিশঙ্করের নাম ছিল রবীন্দ্রশঙ্কর চৌধুরি। কুড়ি বছর বয়সে তিনি নিজেই তাঁর নাম সংক্ষেপ করে নেন – রবি। ছোটবেলায় অবশ্য তাঁকে সবাই রবু নামে সম্বোধন করতো। রবিশঙ্কররা ছিলেন সাত ভাই। এঁদের একজন জন্মেছিলেন প্রতিবন্ধী হয়ে; আরেকজন শৈশবেই, মাত্র দশ মাস বয়সে মারা যায়। কোনো বোন ছিল না তাঁদের। বিখ্যাত নৃত্য888sport live chatী উদয়শঙ্কর ছিলেন ভাইদের মধ্যে জ্যেষ্ঠ, রবি কনিষ্ঠ।
তাঁদের বাবা পণ্ডিত শ্যামশঙ্কর চৌধুরি খ্যাত ছিলেন তাঁর পাণ্ডিত্য, আভিজাত্য ও শৌখিনতার জন্য। তিনি ছিলেন প্রকৃত অর্থেই পণ্ডিত। সংস্কৃত ভাষা ও 888sport live footballে তাঁর অধিকার ছিল অসাধারণ মানের। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভের পর বিলেতের মিডল টেম্পল থেকে ব্যারিস্টারি পাস করেছিলেন। বিচিত্র জীবনচর্যায় আগ্রহী ছিলেন শ্যামশঙ্কর। গুহায় বসে একজন যোগীর কাছ থেকে যোগসাধনায় দীক্ষা নিয়েছিলেন। বেনারসে ও মহারাষ্ট্রে বৈদিক শ্লোক শিখেছেন, জেনেভায় গিয়ে রপ্ত করেছেন ফরাসি। ১৯৩১ সালে জেনেভা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি রাজনীতি888sport apkে অর্জন করেন ডক্টরেট ডিগ্রি। তাঁর অভিসন্দর্ভের বিষয় ছিল The Nature of the Political Relations between the Indian States and the British Imperial Government| ভারতীয়দের মধ্যে তিনিই প্রথম ফরাসি ভাষায় রচিত অভিসন্দর্ভের জন্য ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন।
পিএইচ.ডি ডিগ্রি লাভের পর শ্যামশঙ্কর জেনেভার League of Nations -এ আইনজীবী হিসেবে কাজ করেন কিছুদিন। পরে রোরিচ জাদুঘর (Roerich Museum) ও কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আমন্ত্রণে নিউইয়র্ক যান ভারতীয় দর্শন বিষয়ে শিক্ষকতার জন্য। বেশ কয়েকটি গ্রন্থও রচনা করেন তিনি। তাঁর দুটি বই Buddha and His Saying I Wit and Wisdom of India প্রকাশিত হয় যথাক্রমে ১৯১৪ ও ১৯২৪ সালে, বিলেত থেকে। তাঁর আরও দুটি অপ্রকাশিত পাণ্ডুলিপির কথা বলেছেন রবিশঙ্কর। এর একটি Light, Life, Law and Love অন্যটি The Religion and Philosophy of Universal Brotherhood| পাণ্ডিত্যের জন্য রবীন্দ্রনাথও শ্যামশঙ্করকে বেশ সমীহ করতেন, পণ্ডিত নামেই সম্বোধন করতেন। ১৯৩৩ সালে রবিশঙ্কর রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন শান্তিনিকেতনে। রবিশঙ্করকে আশীর্বাদ করে রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, ‘বাবার মতো হও, দাদার মতো হও।’ তাঁর দাদা উদয়শঙ্কর তখনই খ্যাতির চূড়ায়। পরবর্তীকালে রবিশঙ্কর এই সাক্ষাৎকার সম্পর্কে বলেছেন, ‘আমি জীবনে অনেক বিখ্যাত ব্যক্তির সান্নিধ্য পেয়েছি, কিন্তু রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে দেখা করার দিনটির মতো 888sport app download for androidীয় অভিজ্ঞতা আমার আর ঘটেনি।’
কণ্ঠসাধনায়ও শ্যামশঙ্করের আগ্রহ ছিল। স্বরপ্রক্ষেপণ বিষয়ে তিনি বিশেষ প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন, তবে তাঁর স্বরসাধনা ছিল পাশ্চাত্য রীতির। একবার জেনেভার একটি চ্যাপেলে রবিশঙ্কর তাঁর বাবার কণ্ঠে সামবেদের আবৃত্তি শুনে বিস্মিত হয়েছিলেন। পিতার এই গুণটির কথা তাঁর জানা ছিল না।
নানা বিষয়ে যোগ্য ও গুণী পিতার সান্নিধ্য কিন্তু রবিশঙ্কর পাননি। তাঁর পিতা-মাতার মধ্যকার সম্পর্কই এর কারণ। রবিশঙ্করের মাতা হেমাঙ্গিনী দেবীও ছিলেন জমিদার-তনয়া। বেনারস থেকে বেশ কিছূটা দূরে, নসরথপুরে, ছিল তাঁর পিতা অম্বিকা চক্রবর্তীর জমিদারি। পরিবারের একজনের বেহিসেবিপনার জন্য এই জমিদার পরিবারটি একসময় আর্থিক বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ে যায়। হেমাঙ্গিনী দেবী শিক্ষিতা ছিলেন না, ইংরেজি, বাংলা কিছুই পড়তে পারতেন না। শ্যামশঙ্কর প্রথমে হেমাঙ্গিনী দেবীকে বিয়ে করতে চাননি। পরিবারের চাপে পরে বিয়ে করতে বাধ্য হন।
শ্যামশঙ্কর রাজস্থানের এক ক্ষুদ্র দেশীয় রাজ্য ঝালওয়ারের মহারাজার দরবারে দিওয়ানের চাকরি করেছেন; ১৯০৫ থেকে ১৯২০ সাল পর্যন্ত। সেখানে তিনি মিস মরেল নামের একজন ইংরেজ মহিলাকে বিয়ে করেন। এর ফলে হেমাঙ্গিনী দেবীর সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের অবনতি ঘটে। রবিশঙ্করের জন্মের কিছুদিন পূর্বে তাঁর পিতা ঝালওয়ার ছেড়ে চলে যান কলকাতায়, আইনব্যবসা করার জন্য। হেমাঙ্গিনী দেবীকে ঝালওয়ারে একটি বাড়ি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু শ্যামশঙ্কর চৌধুরি কলকাতায় চলে যাওয়ার পর হেমাঙ্গিনী দেবীও পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বেনারসে চলে যান। ১৯২৫ সালে ইংরেজ পতœী মরেলের মৃত্যু হলে শ্যামশঙ্কর দেশ ত্যাগ করেন। তাঁর জীবনের বাকি সময়টা কেটেছে পাশ্চাত্যে Ñ লন্ডন, জেনেভা ও নিউইয়র্কে। পরিবারের কোনো খবর রাখতেন না শ্যামশঙ্কর। ঝালওয়ারের দরবার থেকে দুশো টাকা মাসোহারা পেতেন হেমাঙ্গিনী দেবী, রাজদরবারের কর্মকর্তারা কিছুটা ‘পারিতোষিক’ নিতেন। বাকি টাকা দিয়েই চলতো সংসার। রবিশঙ্কর তাঁর পিতাকে প্রথম দেখেন আট বছর বয়সে। বেনারসে এসেছিলেন শ্যামশঙ্কর চৌধুরি, উঠেছিলেন নামি ও বিলাসী হোটেল দ্য প্যারিসে। তখন শ্যামশঙ্করের সঙ্গে ছিলেন তাঁর বান্ধবী মাদাম হেনি ও তাঁর প্রয়াত স্ত্রী মরেলের এক চাচাতো বোন, মিস জোনস্।
শ্যামশঙ্কর প্রতিদিন সকালে রবিশঙ্করকে তাঁর কাছে নিয়ে যেতেন, কিনে দিতেন নানা উপহার। কিন্তু রবিশঙ্কর বাবার প্রতি তখনও আকৃষ্ট হননি। মায়ের সঙ্গে বিচ্ছেদের জন্য অনেকটা ঘৃণাই করতেন বাবাকে। বাবার প্রতি তাঁর অনুরাগ ও সমীহ জন্মেছিলো অনেক পরে।
ঝালওয়ারের দরবারে সংগীতের আসর বসতো নিয়মিত। গওহর জান, মালকা জান, জোহরা বাঈ, কজ্জন বাঈয়ের মতো নামী 888sport live chatীরা নিয়মিত তাঁদের সংগীত পরিবেশন করতেন সেখানে। দরবারের অনুষ্ঠান শেষে মহারানীর জন্য জেনানা মহলে আবার তাঁরা আলাদা করে গাইতেন। হেমাঙ্গিনী দেবী ছিলেন মহারানীর বিশেষ প্রিয়ভাজন। তাঁরও সুযোগ হতো এই 888sport live chatীদের গান শোনার। পুরুষ 888sport live chatীরাও গাইতেন মহারানী ও তাঁর পারিষদবর্গের জন্য, কিন্তু তখন মহিলাদের থাকতে হতো পর্দার আড়ালে। হেমাঙ্গিনী দেবীর সংগীতবোধ ছিল বেশ প্রখর। নম্র ও মধুর কণ্ঠের অধিকারী ছিলেন তিনি। এই গুণী 888sport live chatীদের গান শুনে সেগুলো তুলে নিতেন তাঁর কণ্ঠে। লোকগীতি এবং ঠুমরি, দাদরা ও কাজরীর মতো অর্ধশাস্ত্রীয় সংগীতগুলো গাইতেন চমৎকারভাবে। চন্দ্রালোকিত রাতে, তেতলা বাড়ির ছাদে মায়ের কোলে মাথা রেখে, আকাশের দিকে তাকিয়ে থেকে রবিশঙ্কর শৈশবে শুনতেন তাঁর মায়ের গান। গান শোনাতে শোনাতে হেমাঙ্গিনী দেবী রবিশঙ্করকে তারা চেনাতেন, শোনাতেন পৌরাণিক গল্প। কল্পনার ডানায় ভাসা শুরু তাঁর তখন থেকেই।
বেনারসে থাকার সময়, দশেরা উৎসব উপলক্ষে যেসব নাটক মঞ্চস্থ হতো সেগুলো বেশ উপভোগ করতেন রবিশঙ্কর। বাল্যবয়সে বিল্বমঙ্গলের অভিনয় দেখে খুবই মুগ্ধ হয়েছিলেন তিনি । live chat 888sportও দেখা হতো নিয়মিত। তখন ছিল live chat 888sportের নির্বাক যুগ। কপালকুণ্ডলা, দুর্গেশনন্দিনী দেখে উৎফুল্ল হয়েছিলেন। হলিউডের ছবিও দেখতেন। সেই সময় থেকেই live chat 888sportের প্রতি তাঁর আকর্ষণের সূত্রপাত।
রবিশঙ্করকে বেশ আকর্ষণ করতেন তাঁর দাদা উদয়শঙ্কর। তাঁর কাছ থেকেই রবিশঙ্কর পেয়েছেন ভারতীয় সংস্কৃতি, 888sport live chat ও ঐতিহ্যের প্রথম পাঠ। উদয়শঙ্কর বিলেতে চিত্র888sport live chatী হিসেবে শুরু করেছিলেন তাঁর জীবন। শ্যামশঙ্কর চৌধুরি একটি ভারতীয় ব্যালে রচনা করেছিলেন The Great Moghul’s Chamber of Dreams নামে। ১৯২৩ সালে এই ব্যালের নৃত্য পরিচালনা এবং এতে উদয়শঙ্করের নৃত্যাভিনয় দেখে আন্না পাভলোভা মুগ্ধ হন। এই ব্যাপারে উদয়শঙ্করের পরামর্শক ছিলেন রয়্যাল কলেজ অব আর্টসের উইলিয়াম রোথেন্সটেইন। বাবা শ্যামশঙ্করের কাছ থেকেও মঞ্চায়নের ব্যাপারে পরামর্শ পেয়েছিলেন তিনি। আন্না পাভলোভা ভারতীয় নৃত্য নিয়ে কিছু কাজ করার ব্যাপারে আগ্রহী ছিলেন। উদয়শঙ্করকে তিনি দুটি ভারতীয় ব্যালেতে, তাঁর সঙ্গে কাজ করার আমন্ত্রণ জানালেন। উদয়শঙ্কর আগ্রহের সঙ্গে এই প্রস্তাব গ্রহণ করেন। ব্যালে নিয়ে আন্নার দলের সঙ্গে ঘুরে বেড়ালেন আমেরিকা ও কানাডা। ব্যালেতে উদয় হলেন কৃষ্ণ, আন্না হলেন রাধা।
১৯৩০ সালের দিকে উদয়শঙ্কর নিজের একটি নৃত্যদল গড়ার কথা ভাবলেন। তাঁর আত্মীয়-স্বজনদের সহযোগিতা চাইলেন এজন্য। হেমাঙ্গিনী দেবীকে অনুরোধ করলেন, প্যারিসে গিয়ে ঘর সামলাতে। ছেলের অনুরোধ উপেক্ষা করতে পারেননি তিনি। সঙ্গে রবুকেও যেতে হলো। রবু এই সুযোগ পেয়ে বেশ উচ্ছ্বসিত।
দেশে থাকতে বেনারসের বাঙালিটোলা স্কুলে বছর দুয়েক পড়েছিলেন রবিশঙ্কর। প্যারিসে গিয়ে ভর্তি হলেন একটি ক্যাথলিক স্কুলে। স্কুলের পড়ালেখায় খুব একটা অগ্রগতি না হলেও ফরাসি ভাষাটা এই সুযোগে রপ্ত করেছিলেন ভালোভাবেই। প্যারিসে নানা দেশের, নানা জাতির মানুষের সঙ্গে মিশতে শুরু করেন তিনি। জ্যাজ ও পাশ্চাত্য ধ্র“পদী সংগীতের সঙ্গে পরিচিত হতে থাকেন। ব্যালে ও ফ্ল্যামিংকো নর্তকীদের নাচও দেখার সুযোগ হলো তাঁর। নিয়মিত অপেরা দেখতে যেতেন দাদা উদয়শঙ্করের সঙ্গে। বিখ্যাত গিটারবাদক আন্দ্রে সেগোভিয়া, চেলোবাদক পাবলো কাসাল, পিয়ানোবাদক পাদেরউইস্কির বাদন শুনে শুনে পাশ্চাত্য সংগীত সম্পর্কে কিছুটা ধারণাও অর্জন করলেন তিনি। উদয়শঙ্করের প্যারিসের বাড়িতেও আসতেন অনেক 888sport live chatী। সেগোভিয়া, জর্জ ইনেস্কো, নুদমিলা পিতোয়েফ, মাইকেল চেখভের মতো 888sport live chatীর সঙ্গে যোগাযোগের ফলে বৈশ্বিক 888sport live chatচেতনায় সমৃদ্ধ হওয়ার সুযোগ ঘটলো তাঁর কৈশোরেই।
বারো বছর বয়স থেকেই উদয়শঙ্করের দলের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সংগীতে সহযোগিতা করতে থাকেন কিশোর রবি, তাঁকে নৃত্যও করতে হতো নিয়মিত। দলের সঙ্গে তিনি সেই বয়সেই ঘুরে বেড়িয়েছেন বলতে গেলে প্রায় সমগ্র ইউরোপ।
প্যারিসে গিয়ে রবিশঙ্কর তাঁর বাবাকে জানার সুযোগ পেলেন। শ্যামশঙ্কর তাঁর পরিবারের সদস্যদের জেনেভায় আমন্ত্রণ জানাতেন। রবিশঙ্কর এই সময় তাঁর বাবাকে কিছুটা বুঝতে পেরেছিলেন। পিতার মানবিক দুর্বলতাগুলোকে কিছুটা উদারভাবে দেখতে শিখেছেন এরই মধ্যে। শ্যামশঙ্করের পাণ্ডিত্য ও রুচি সম্পর্কে রবিশঙ্করের মনে 888sport apk download apk latest versionও জাগতে থাকে এই সময়।
ইউরোপ সফরের পর ১৯৩২ সালে উদয়শঙ্করের দলের সঙ্গে রবিশঙ্কর প্রথমবার গেলেন আমেরিকায়। ১৯৩২ থেকে ১৯৩৮-এর মধ্যে তাঁর চারবার সুযোগ হয়েছিলো আমেরিকা যাওয়ার। এই সফরে মার্কিন ছবি দেখার অবারিত সুযোগ হলো তাঁর। চ্যাপলিনের অভিনয়ে মুগ্ধ হয়ে গেলেন তিনি। বিনোদন 888sport live chatী উইল রজার্স, এদ্দি কানটোরের মতো বিখ্যাত 888sport live chatীদের অনুষ্ঠান দেখেও তখন তাঁর বিস্মিত হওয়ার পালা।
এই কয়েক বছরে জ্যাজ সংগীত শোনার সুযোগও ছাড়েননি রবিশঙ্কর। লুই আর্মস্ট্রং, ডিউক এলিংটন, কাউন্ট ব্যাসির পরিবেশনা শোনার জন্য নিয়মিত যেতে থাকলেন কটন ক্লাবে। সেই সময়ে জ্যাজ সংগীত তাঁর মনে যে আকর্ষণের সৃষ্টি করেছিল, পরবর্তীকালে তাঁর সংগীত জীবনকে তা অনেকখানি প্রভাবিত করেছিলো Ñ এই কথা তো সকলেরই জানা। বিশেষ করে সেই যুগের জ্যাজ সংগীতকে রবিশঙ্করের মনে হতো নিষ্পাপ এবং জীবন ও আত্মা সমৃদ্ধ।
১৯৩৩ সালে উদয়শঙ্করের দল ভারতে এলো অনুষ্ঠান করতে। এই সময় ভারতীয় সংগীতের প্রতি রবিশঙ্করের আগ্রহ বাড়তে থাকে। দাদার দলে তিমির বরণ ছিলেন, তাঁর বাজনার অনুরাগী হয়ে উঠেছিলেন; দলে সেতারবাদক বিষ্ণুদাস শিরালির বাজনাও তাঁকে অনুপ্রাণিত করত। এরমধ্যে কলকাতায় তিমির বরণের ভ্রাতুষ্পুত্র ভোম্বল বাবুর (অমিয় কান্তি ভট্টাচার্য) বাজনা শুনে এতটাই মুগ্ধ হয়ে গেলেন যে, ভোম্বল বাবুর গুরু উস্তাদ ইনায়েত খানের শিষ্যত্ব গ্রহণে উতলা হয়ে উঠলেন। ভাবলেন পরের বছর ভারত সফরে এলে উস্তাদ ইনায়েত খানের কাছে শিষ্যত্বের গাণ্ডা বাঁধবেন। এর মধ্যে পণ্ডিত গোকুল নাগ যোগ দিলেন উদয়শঙ্করের দলে। তাঁর বাজনা শুনে রবিশঙ্করের সেতার শেখার ইচ্ছা দুর্দমনীয় হয়ে উঠলো। পরের বছর, ১৯৩৪ সালে, উদয়শঙ্কর ও রবিশঙ্কর এলেন নিখিলবঙ্গ সংগীত সম্মেলনে যোগ দিতে। এখানেই রবিশঙ্কর প্রথম দেখলেন উস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁকে।
সেই সংগীত সম্মেলনে ছিলেন আগ্রা ঘরানার উস্তাদ ফৈয়াজ খাঁ। তাঁর পরিবেশনায় সবাই মুগ্ধ হয়ে গেলেন। আলাউদ্দিন খাঁর ছিল দুটি পরিবেশনা। প্রথম রাতে ছিল মাইহার ব্যান্ডের পরিবেশনা; Ñ এই মাইহার ব্যান্ডের স্রষ্টাও তিনি। ভারতীয় ও পাশ্চাত্যের অনেক বাজনার সমন্বয়ে ছিল সেই বাদন-অনুষ্ঠান। আলাউদ্দিন খাঁ নিজে বাজিয়েছিলেন বেহালা। পরের দিন আলী আকবর খাঁকে নিয়ে মঞ্চে উঠলেন তিনি। সেদিন বোধহয় মেজাজে ছিলেন না আলাউদ্দিন খাঁ। আলী আকবরও বাজিয়েছিলেন সাদামাটা। তিমির বরণ আলাউদ্দিন খাঁর প্রতিভা সম্পর্কে খুব উঁচু ধারণা পোষণ করতেন। অনেকটা এই কারণেই সম্মেলনের পর, উদয়শঙ্কর আলাউদ্দিন খাঁকে তাঁদের দলে যোগ দিতে বললেন। ১৯৩৫ সালে আলাউদ্দিন খাঁ যোগ দিলেন উদয়শঙ্করের দলে। মুম্বাই থেকে জাহাজে করে দলের সবাই রওনা হলেন ইউরোপের উদ্দেশে। জাহাজেই আলাউদ্দিন খাঁ রবিশঙ্করকে তালিম দিতে শুরু করেন। আলাউদ্দিন খাঁ ছিলেন কড়া মেজাজের মানুষ। কিন্তু জাহাজে তাঁর ব্যবহার ছিল খুবই মধুর। রবিশঙ্করকে এরই মধ্যে তিনি পুত্রবৎ øেহ করতে শুরু করেছেন। ইসরাইল, গ্রিস, যুগোশ্লাভিয়া, বুলগেরিয়া, রুমানিয়া, চেকোশ্লোভাকিয়া, অস্ট্রিয়া, জার্মানি হয়ে পৌঁছুলেন প্যারিসে। সেখান থেকে গেলেন বিলেতে। বিলেতে ছিলেন তাঁরা তিন মাস। এই সময় রবিশঙ্কর অবিরাম তালিম পেয়েছেন উস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর কাছ থেকে। লন্ডনে অনেক বিশিষ্ট 888sport live chatীর কাজের সঙ্গে পরিচয়ের সুযোগ ঘটে রবিশঙ্করের। মাইকেল চেখভের বক্তৃতা শুনে মুগ্ধ হয়েছেন। এইসময় রবিশঙ্কর প্রথমবারের মতো চিত্র সেন নামে একটি নৃত্য পরিচালনার দায়িত্ব পালন করেন। কত্থক আঙ্গিকের এই পরিবেশনাটির উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন জন মার্টিন নিউইয়র্ক টাইমসে।
বিলেতে বসে আলাউদ্দিন খাঁ খবর পেলেন তাঁর পুত্র আলী আকবর নিয়মিত রেওয়াজ করছেন না। উতলা হয়ে তিনি মাইহারে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন। আলাউদ্দিন খাঁ চলে যাওয়ার পর, রবিশঙ্কর বেশ দ্বিধায় পড়ে গেলেন। আলাউদ্দিন খাঁর কাছে কিছুদিন তালিম পেয়ে তিনি ভারতীয় সংগীতের প্রতি অনেকটাই ঝুঁকে পড়েছেন। অন্যদিকে নৃত্য888sport live chatী হিসেবে তিনি প্রশংসিত হচ্ছিলেন। কিন্তু কানে বারবার বাজছিলো আলাউদ্দিন খাঁর একটি কথা, ‘এক সাধে সব সাধে, সব সাধে সব যায়ে’ Ñ একটি বিষয়ের সাধনা করলে সব বিষয়ের সাধনা করা হয়, সবকিছুর সাধনা করতে চাইলে সব কিছুই হারিয়ে যায়। এর পরের কয়েক বছর রবিশঙ্কর ঘুরে বেড়িয়েছেন ইউরোপের নানা জায়গায়। প্যারিসের নৈশ জীবনসহ নানা দিকের প্রতি আকর্ষণ অনুভব করতে থাকেন। আলাউদ্দিন খাঁ রবিশঙ্করের এই নানামুখী জীবনতৃষ্ণার বিষয়টি টের পেয়েছিলেন। মাইহারে ফেরার আগে তাঁকে বলে গেলেন, ‘তুমি যদি সব ছেড়ে আসতে পার, তবে আমি তোমাকে তালিম দেব।’
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দামামা বাজতে শুরু করেছে; এই অবস্থায় উদয়শঙ্কর তাঁর দল ভেঙে দিয়ে, ভারতে ফিরে গিয়ে একটি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নিলেন। রবিশঙ্করেরও এখন সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময়। তিনি শেষপর্যন্ত ঠিক করলেন মাইহারেই যাবেন, আলাউদ্দিন খাঁর কাছে। ভারতীয় সংগীত 888sport live chatীদের মধ্যে তিনিই প্রথম পাশ্চাত্যে গিয়ে সেই সমাজের জীবন ও সংস্কৃতি সম্বন্ধে ব্যাপক অভিজ্ঞতা অর্জন করেছিলেন। এই অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ ছিলেন বলেই হয়তো তিনি পরবর্তীকালে ভারতীয় সংগীতের সার্থকতম দূতে পরিণত হয়েছিলেন।
১৯৩৮ সালের মে মাসে রবিশঙ্কর ও দলের সবাই ফিরে এলেন ভারতে। দেশে ফিরেই মাইহারে যাওয়ার কথা জানালেন দাদা উদয়শঙ্করকে। উদয়শঙ্কর প্রথমে ভেবেছিলেন রবিশঙ্কর হয়তো কয়েক মাসের জন্য যেতে চাইছেন, পরে এসে তাঁর সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে নৃত্য888sport live chatী হিসেবে কাজ করবেন। কিন্তু রবিশঙ্কর জানতেন, তিনি আর ফিরবেন না, সংগীতের অতলজলের আহ্বান শুনতে পেয়েছেন তিনি। মাইহারে যাওয়ার অনুমতি চেয়ে চিঠি লিখলেন আলাউদ্দিন খাঁকে। খুশি মনেই অনুমতি দিলেন আলাউদ্দিন খাঁ।
১৯৩৮ সালের জুলাই মাসে তাঁর মেজদাকে সঙ্গে করে গেলেন মাইহারে। নৃত্য888sport live chatী ছিলেন বলে দামি পোশাকের অভাব ছিল না তাঁর, তাছাড়া বেশ শৌখিনও ছিলেন তিনি। মাইহার যাওয়ার জন্য সব ছেড়ে কিনলেন খদ্দরের কুর্তা-পাজামা, একটি সস্তা টিনের ট্রাঙ্কে সেগুলো ভরে হাজির হলেন মাইহারে। রবিশঙ্করকে দেখে জড়িয়ে ধরলেন আলাউদ্দিন খাঁ। অশ্র“সিক্ত কণ্ঠে বললেন, ‘বোম্বাই থেকে জাহাজে চড়ার আগে তোমার মাকে আমি কথা দিয়েছিলাম, তোমাকে আমি নিজের ছেলের মতোই গ্রহণ করবো। তুমি আমার কাছে সেভাবেই থাকবে।’
মাইহারে সাত বছর ধরে কঠোর শৃঙ্খলার মধ্যে চললো তাঁর তালিম। এর আগে যে জীবনযাপন করেছেন তিনি, তার সঙ্গে এই কঠোর জীবনের মিল নেই। কাজটি সহজ ছিল না। কিন্তু রবিশঙ্কর জানতেন ভারতীয় সংগীত শিক্ষার ঐতিহ্যে গুরুর কাছে নিজেকে নিঃশর্তভাবে সমর্পণ না করলে সাধনায় সিদ্ধি লাভ করা যায় না।
নিজের পুত্র আলী আকবরের সঙ্গেই রবিশঙ্করকে তালিম দিতেন আলাউদ্দিন খাঁ। ইতিমধ্যে আলী আকবর খাঁ সরোদ বাদনে বেশ পারদর্শী হয়ে উঠেছেন। পুত্র ঠিকভাবে রেওয়াজ করছে না জেনে প্যারিস থেকে মাইহারে ফিরে এসেই কঠোর শাসনে তাঁকে শিক্ষা দিতে লাগলেন। পিতার প্রবাসকালে আলাউদ্দিন live chat 888sportের চটুল গানের প্রতি ঝুঁকে পড়েছিলেন। সেখান থেকে তাঁকে আবার শাস্ত্রীয় সংগীতে ফিরিয়ে আনার জন্য বেশ কঠোর হতে হয়েছিল আলাউদ্দিন খাঁকে। আলী আকবর খাঁ অবশ্য রবিশঙ্করের বন্ধু হয়ে উঠলেন, তিনি এখন তাঁর আলু ভাই। আলাউদ্দিন খাঁকে রবি ডাকতেন বাবা, তাঁর স্ত্রী হয়ে গেলেন তাঁর মা। প্যারিসে থাকার সময়ই রবিশঙ্কর তাঁর মাকে হারান।
রবির তালিম চলছিলো ভালোভাবেই, তবে আলাউদ্দিন খাঁর মেজাজ মাঝে-মধ্যে অসহনীয় মনে হতো। একবার রবিশঙ্কর ঠিকমতো বাজাতে পারছিলেন না বলে আলাউদ্দিন খাঁ রেগে বললেন, ‘যাও বাজার থেকে চুড়ি কিনে পরে থাকো।’ অপমানিত বোধ করে রবিশঙ্কর পরের ট্রেনেই মাইহার ছাড়ার জন্য গোছাতে শুরু করেন। আলী আকবর খাঁ জানতে পেরে, রবিশঙ্করকে বললেন, ‘বাবা শুধু তোমার গায়েই হাত তোলেন না। আমাকে তিনি গাছের সঙ্গে বেঁধে মারতে থাকেন।’ রবিশঙ্কর চলে যাওয়ার ব্যাপারে অনড় ছিলেন। বিদায় নেওয়ার জন্য আলাউদ্দিন খাঁর স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে গেলে তিনি বললেন, ‘তোমার বাবার সঙ্গে দেখা করে যাও।’ আলাউদ্দিন খাঁ তাঁকে দেখেই বললেন, ‘তোমার মাকে আমি বলেছিলাম, তুমি আমার বড় ছেলে, তুমি যেতে চাইলে যাও, কিন্তু আমি খুব কষ্ট পাব।’ এরপর রবিশঙ্কর আর মাইহার ছেড়ে যেতে পারলেন না।
১৯৩৯ সালে রবিশঙ্করের সেজদা, বৌদি, তাঁদের ছেলে অরুণ মাইহারে বেড়াতে যান। একদিন পারিবারিক আড্ডার সময় বউদি সবার সামনেই আলী আকবর খাঁকে বললেন, ‘আলু, রবু ও অন্নপূর্ণার বিয়ে দিলে কেমন হয়?’ আলাউদ্দিন খাঁর কন্যা অন্নপূর্ণাকে রবিশঙ্করের বেশ আকর্ষণীয় মনে হতো, কিন্তু বিয়ের কথা ভাবতে পারছিলেন না। এর মধ্যে উদয়শঙ্কর তাঁর সাংস্কৃতিক কেন্দ্র মোটামুটি দাঁড় করিয়ে ফেলেছেন। তাঁর কেন্দ্রের সংগীত বিভাগের দায়িত্ব গ্রহণের জন্য আহ্বান জানালেন আলাউদ্দিন খাঁকে। আলাউদ্দিন খাঁর সঙ্গী হলেন রবিশঙ্কর। আলমোরার সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে এসে রবিশঙ্কর অনেকদিন পর দেখা পেলেন নৃত্য888sport live chatী উজরার। প্যারিসে থাকার সময়ই উজরার প্রতি প্রবলভাবে আকৃষ্ট হয়েছিলেন তিনি। এই সুযোগে তাঁর এই আকর্ষণ আরও তীব্র হয়ে উঠলো। কিন্তু অন্নপূর্ণার সঙ্গে তাঁর বিয়ের কথাও চালাতে থাকেন সেজ বউদি। উদয়শঙ্করও এই বিয়ের ব্যাপারে উৎসাহী হয়ে ওঠেন। পরে অন্নপূর্ণার সঙ্গে রবিশঙ্করের বিয়ের সম্ভাবনার কথা জেনে উজরা দল ছেড়ে চলে যান। বিয়ের ব্যাপারে রবিশঙ্করের কোনো উৎসাহই ছিল না। কিন্তু নিয়তির বিধানের মতোই তাঁকে এটা মেনে নিতে হলো।
আলাউদ্দিন খাঁ নিষ্ঠাবান মুসলমান ছিলেন, কিন্তু বিয়ের সময় তিনি অন্নপূর্ণাকে হিন্দুধর্মে দীক্ষিত হতে বললেন। বিয়ের দিন, ১৯৪১ সালের ১৫ এপ্রিল সকালবেলায় অন্নপূর্ণা আর্যসমাজের উদ্যোগে হিন্দুধর্ম গ্রহণ করেন। সেদিনই সন্ধ্যায় হিন্দুশাস্ত্রের বিধানানুযায়ী তাঁদের দুজনের বিয়ে সম্পন্ন হয়। বিয়ের পরও উজরার প্রতি রবির আকর্ষণ কমে যায়নি। তবে এই সংকট কাটিয়ে ওঠার জন্য রবিশঙ্কর অন্নপূর্ণার প্রতি মনোযোগী হতে থাকেন। বিয়ের দুমাসের মধ্যে অন্নপূর্ণা সন্তান সম্ভবা হলে রবিশঙ্কর বেশ চিন্তিত হয়ে পড়েন। উদয়শঙ্কর ইতিমধ্যে সাংস্কৃতিক কেন্দ্র থেকে দেয় পারিশ্রমিক তাঁকে পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছেন। ঘরে নতুন অতিথি এলে আর্থিক সংকটে পড়তে হবে Ñ এই চিন্তায় রবিশঙ্কর বিমর্ষ হয়ে পড়েন। বেতারে অনুষ্ঠান করে কিছু উপার্জনের কথা ভাবছিলেন। আলাউদ্দিন খাঁ তাঁর কোনো শিষ্যকেই শিক্ষা সম্পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত বেতারে বাজানোর অনুমতি দিতেন না। এখানে রবিশঙ্করের জন্য তিনি তাঁর নিয়ম শিথিল করলেন। অল ইন্ডিয়া রেডিওর লখনউ কেন্দ্রে মাসে দুটি অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা হলো আলাউদ্দিন খাঁর সুপারিশেই। বেতারে অনুষ্ঠান করতে গিয়েই রবীন্দ্রশঙ্কর চৌধুরি হয়ে গেলেন রবিশঙ্কর। তাঁর মনে হয়েছিল রবীন্দ্রশঙ্কর নামের মধ্যে বাঙালিত্ব প্রকট হয়ে ওঠে, আর রবিশঙ্কর নামের মধ্যে একটি সর্বভারতীয় দ্যোতনা আছে। 888sport live chatী হতে হলে নামের দ্যোতনায় প্রসারতা দরকার।
বিয়ের পর অন্নপূর্ণা ও রবিশঙ্করকে একসঙ্গেই তালিম দিতেন আলাউদ্দিন খাঁ। সেইসময় রবিশঙ্কর ও অন্নপূর্ণা দুজনই বাজাতেন সুরবাহার। আলী আকবর খাঁও যোগ দিতেন তাঁদের সঙ্গে। রবিশঙ্কর যখন সেতার শিখতেন তখন আলাউদ্দিন খাঁ মাঝে-মধ্যে সরোদ বাজিয়ে শিক্ষা দিতেন। এইজন্য রবিশঙ্করকে তাঁর সেতারের সুর নতুন করে বাঁধতে হতো। এই অভিজ্ঞতা পরবর্তীকালে আলী আকবর খাঁর সঙ্গে সেতার-সরোদের যুগলবন্দীতে সাহায্য করেছে। প্রশিক্ষণের পাশাপাশি আলাউদ্দিন খাঁর সঙ্গে সফরেও যাওয়া হতো নিয়মিত। গুরুর সঙ্গে রবি ও আলী আকবর বাজাতেন মঞ্চে, তবে সেটা ছিল নেহায়েত সঙ্গত করা।
রবিশঙ্কর ও আলী আকবরের প্রকৃত অর্থে স্বাধীনভাবে মঞ্চে পরিবেশনা শুরু হয় ১৯৩৯ সালে এলাহাবাদে। প্রথম দিনের অনুষ্ঠানে তাঁরা দুজন বাজিয়েছিলেন মিয়া কি টোড়ি। আলী আকবর ১৯৪০ সালে বেতারের লখনউ কেন্দ্রে কিছুদিন সংগীত তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। রবিশঙ্কর লখনউ বেতারে বাজাতে গেলে তাঁরা দুজন মিলে লখনউ, কানপুর ও এলাহাবাদে একসঙ্গে অনুষ্ঠান করতেন। তাঁদের বাজনা শ্রোতারা উপভোগ করতেন। দুজনের একসঙ্গে বাজানোর এই রীতি থেকেই যুগলবন্দী কথাটা সংগীতের পরিভাষায় ঠাঁই করে নিল।
১৯৪১ সালে রবিশঙ্করের মেজদা বিয়ে করলেন লক্ষ্মী শাস্ত্রীকে। লক্ষ্মীর ছোটবোন সরস্বতীর সঙ্গে পরিচয়ের পর রবিশঙ্কর তাঁর প্রতি আকর্ষণ বোধ করেন। সরস্বতীর বয়স তখন মাত্র তেরো বছর। সরস্বতীর আরেক নাম কমলা। অন্নপূর্ণা এতে বিচলিত হয়ে পড়েন। সন্দেহপ্রবণ হয়ে ওঠেন। তখন রবিশঙ্কররা থাকতেন মুম্বাইয়ে। অন্নপূর্ণা ছেলে শুভকে নিয়ে চলে গেলেন মাইহারে। পরে কমলার অন্যজনের সঙ্গে বিয়ে হয়ে গেলে অন্নপূর্ণা ফিরে আসেন। ততদিনে রবিশঙ্কর বম্বে ছেড়ে মুম্বাইয়ের শহরতলি আন্ধেরিতে বাস করতে শুরু করেছেন। এই সময় তিনি ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টির সাংস্কৃতিক ফ্রন্ট ইন্ডিয়ান পিপলস্ থিয়েটার অ্যাসোসিয়েশন Ñ ভারতীয় গণনাট্য সংঘে যোগ দেন।
ভারতীয় গণনাট্য সংঘে যোগ দেওয়ার পর তিনি এই সংগঠনের সকল মঞ্চ পরিবেশনার সংগীতের দায়িত্ব লাভ করেন। পারিবারিক অশান্তি থেকে মুক্তি খোঁজার জন্য সৃজনশীল কাজে নিমগ্ন হয়ে পড়ার এই সুযোগটি রবিশঙ্কর হাতছাড়া করতে চাননি। বেশ কয়েকটি ব্যালে তিনি পরিচালনা করেছিলেন গণনাট্য সংঘের জন্য। বৃটিশপূর্ব ভারতের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ইতিহাস নিয়ে রচিত তাঁর Immortal India – অমর ভারত নৃত্যনাট্যটি বেশ সমাদৃত হয়। এর নৃত্যাংশের পরিচালনা করেছিলেন তাঁর বন্ধু শান্তি বর্ধন।
গণনাট্য সংঘের এই অভিজ্ঞতা পরে live chat 888sport-সংগীত রচনার কাজে লেগেছিল। এইসময়েই তিনি খাজা আহমদ আব্বাসের ধরতী কি লাল এবং চেতন আনন্দের নীচা নগর ছবি দুটোর জন্য সংগীত রচনা করেন। ১৯৪৫-৪৬ সালে চিত্রিত এই দুটো ছবিই গণনাট্য সংঘের সহযোগিতায় নির্মাণ করা হচ্ছিল। ছবি দুটো ছিল বাস্তবজীবনধর্মী। সংগীত রচনা করার সময় শোষিত-বঞ্চিত মানুষের জীবনসংগ্রাম ও তাঁদের বেদনার কথা মনে রেখেছিলেন রবিশঙ্কর। ছবির পটভূমির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে প্রধানত লোকজ সুরের প্রয়োগ করা হয়েছিল। কিছুটা অর্ধশাস্ত্রীয় আমেজও ছিল।
গণনাট্য সংঘের কাজে বেশিদিন করতে পারেননি তিনি। কমিউনিস্ট পার্টির নির্দেশানুযায়ী করতে গিয়ে অনেক কাজই হয়ে যাচ্ছিল নেহায়েত প্রচারধর্মী। রবিশঙ্কর অনুভব করতে থাকেন, এতে তাঁদের সৃজনক্ষমতা ব্যাহত হচ্ছে এবং তিনি 888sport live chatী হিসেবে তাঁর স্বাধীনতা হারাচ্ছেন। রবিশঙ্করের অমর ভারত সফল প্রযোজনা হিসেবে সফল হয়েছিল, ভারতের অনেক জায়গাতেই এর মঞ্চায়ন হয়। কিন্তু দলের আধিপত্যমূলক আচরণে বিরক্ত হয়ে তিনি ১৯৪৬ সালে গণনাট্য সংঘ ছেড়ে দেন।
গণনাট্য সংঘে কাজ করার সময় তাঁকে ইকবালের ‘সারে জাঁহা সে আচ্ছা, হিন্দুস্তাঁ হামারা’ গানটির নতুন করে সুরারোপ করার অনুরোধ করা হয়। রবিশঙ্কর এই গানটির জন্য নতুন যে সুর সৃষ্টি করেন সেটি এখন বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
রবিশঙ্কর ক্রমশ সংগীতে নিজস্ব কিছু সৃষ্টির কথা ভাবতে থাকেন। ১৯৪৫ সালে তিনি সৃষ্টি করেন তাঁর প্রথম রাগ নটভৈরব। গণনাট্য সংঘ ছাড়ার পর তিনি বরিভলিতে গিয়ে বসবাস করতে থাকেন। অন্নপূর্ণা, পুত্র শুভ এবং তাঁর দুই ভাইয়ের পরিবারসহ বেশ আনন্দে কাটছিলো সেইসময়। এই আনন্দময় পরিবেশে তিনি নেহরুর The Discovery of India- র অপেরারূপ রচনার কাজ শুরু করেন। ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের নাট্যশাখা ভারতের জাতীয় থিয়েটারের প্রযোজনায় আড়াই ঘণ্টার এই অপেরায় অন্নপূর্ণা সুরবাহার বাজিয়েছিলেন। অন্নপূর্ণা সাধারণত মঞ্চে বাজাতে চাইতেন না। ভারতের জাতীয় থিয়েটারের উদ্যোগে এই অপেরাটি দিল্লিতে অনুষ্ঠিত এশীয় সম্মেলনে পরিবেশিত হয়। গান্ধী, নেহরু, প্যাটেল, রাধাকৃষ্ণণসহ ভারতের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা এই অপেরার উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছিলেন। এই অপেরাতে রবিশঙ্করের সৃজনক্ষমতার আরেকটি দিক উন্মোচিত হলো, বোঝা যাচ্ছিল, তিনি ধীরে ধীরে অনেক পরিণত হয়ে উঠেছেন।
১৯৪৮ সালের শেষদিকে আকাশবাণীর সংগীত পরিচালকের পদে যোগদানের আহ্বান পান তিনি। এই পদের নিয়মিত কাজ ছাড়াও যন্ত্রসংগীত বিভাগের সংগীত রচয়িতা ও পরিচালকের দায়িত¦ পালনের কথাও বলা হয় তাঁকে। ১৯৪৯ সালে তিনি দিল্লিতে গিয়ে আকাশবাণীর উল্লিখিত পদে যোগদান করেন। এর আগে অবশ্য বি.বি.সিতে যোগদানের আহ্বান পেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু অন্নপূর্ণার অসম্মতির কারণে সেই চাকরিতে যোগদান করতে পারেননি রবিশঙ্কর।
প্রায় সাতবছর কাজ করেছেন রবিশঙ্কর আকাশবাণীতে। তাঁর এই সাতবছর ছিল সৃজনশীলতায় পরিপূর্ণ। বুদ্ধের জন্ম , বুদ্ধত্বলাভ ও নির্বাণ নিয়ে একটি সংগীতালেখ্য রচনা করেছিলেন পূর্ণিমাত্রয়ম নামে। রবীন্দ্রনাথের নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ ও শিশুতীর্থ 888sport app download apk দুটিরও অর্কেস্ট্রা-সংগীত সৃষ্টি করেছেন তিনি। মিয়া তানসেনের জীবনভিত্তিক একটি সংগীত-888sport world cup rateও তৈরি করা হয়েছিল এই সময়ে। আলাউদ্দিন খাঁর গুরু উস্তাদ ওয়াজির খাঁ ছিলেন তানসেনের বংশধর। এই কারণে সেনিয়া-বীণাকার ঘরানা সম্পর্কে রবিশঙ্করের ধারণা ছিল বেশ ভালোই। কাজেই তানসেনের জীবন নিয়ে সংগীত-888sport world cup rate তৈরি করতে তাঁর খুব একটা অসুবিধে হয়নি।
তিনবছর পর, রবিশঙ্করকে দেওয়া হলো আকাশবাণীর অভ্যন্তরীণ সম্প্রচারের অর্কেস্ট্রা বাদ্যবৃন্দের দায়িত্ব। এই দায়িত্ব পেয়ে সৃজনশীলতা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার নতুন সুযোগ পেয়ে গেলেন তিনি। তরুণ বয়সে পাশ্চাত্য সংগীতের সঙ্গে তাঁর যে পরিচয় ঘটেছিল তার সম্পূর্ণ সদ্ব্যবহার করার সুযোগ এলো এবার। সেতার, বীণা, চেলো, ক্লারিনেট Ñ এইসব বাদ্যযন্ত্রকে একসঙ্গে কাজে লাগিয়ে সংগীত সৃষ্টির নব নব পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু হলো। ভারতের ঐতিহ্যময় বাদনশৈলীর সঙ্গে জ্যাজ ও ফ্লামিংকো সংগীতের ধ্বনির সমন্বয়ে সৃষ্টি হতে লাগল নতুন ধরনের বাদনরীতি। বেতার কর্তৃপক্ষও তাঁকে অবাধ স্বাধীনতা দিয়েছিলেন। কাজের ফাঁকে ফাঁকে, ছুটি নিয়ে, live chat 888sport-সংগীত রচনার সুযোগও করে দিতেন। এই সুযোগ পাওয়ার ফলেই তাঁর পক্ষে সত্যজিৎ রায়ের ছবিগুলোর জন্য সংগীত রচনা করা সম্ভব হয়েছিল।
সত্যজিৎ রায় পথের পাঁচালীর শুটিং প্রায় শেষ করে রবিশঙ্করকে ছবিটির জন্য সংগীত রচনার অনুরোধ করেন। ছবির রাশপ্রিন্ট দেখে রবিশঙ্কর এতটাই মুগ্ধ হয়ে যান যে, প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই রাজি হয়ে যান। মাথার মধ্যে সবসময় গুনগুন করতে থাকে ছবিটির স্মারক-সুরটি। একদিন সত্যজিৎকে সেটি গেয়ে শোনালেন। সত্যজিৎ কোনো দ্বিধা করেননি, অনুমোদন করে ফেললেন। পথের পাঁচালী, অপরাজিত ও অপুর সংসার Ñ এই তিনটি ছবির সংগীত রচনাই সত্যজিৎকে সন্তুষ্ট করেছিল। পরে রবিশঙ্কর কেন আর সত্যজিতের ছবিতে সংগীত পরিচালনা করেন নি, তা রহস্যাবৃতই রয়ে গেল। এই নিয়ে রবিশঙ্করের খানিকটা অভিমানও ছিল। পথের পাঁচালীর পর তপন সিংহের কাবুলিওয়ালার সংগীত পরিচালনা করেছিলেন তিনি।
বিদেশি চিত্রপরিচালকদের ছবির জন্যও সংগীত রচনা করেছেন রবিশঙ্কর। কানাডার নরমান ম্যাকলারেনের A Chairy Tale- এর কথা মনে পড়ছে। একজন মানুষের সঙ্গে তার চেয়ারের মান-অভিমান নিয়ে একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য ছবি নির্মাণ করেছেন ম্যাকলারেন। অভিমানী ও অবাধ্য চেয়ারকে তাঁর মালিক কীভাবে তোষামোদ করে শেষপর্যন্ত বশীভূত করেন তার একটি অত্যন্ত রসগ্রাহী বিবরণ এই ছবি। চেয়ারটির গতি এখানে নিয়ন্ত্রণ করেছে রবিশঙ্করের সেতারের সুর ও চাতুরলালের তবলার তাল। সুইডিশ পরিচালক আরনে সুকডরফের The Flute and the Arrow ছবিটিরও সংগীত রচনা করেছেন তিনি। ভারতের মধ্যপ্রদেশে চিত্রায়িত এই ছবির বিষয় মুরুয়া আদিবাসীদের বিশেষ ধরনের প্রাচীন রীতি-নীতি ও জীবনচর্যা। তাঁর সেতারবাদন ও সেইসঙ্গে একজন তবলচি ও বিলেতের কয়েকজনমাত্র যন্ত্র888sport live chatী নিয়ে এই ছবির সংগীত নির্মিত হয়েছে। হিন্দি ছবির জন্যও সংগীত সৃষ্টি করেছেন তিনি। হৃষিকেশ মুখোপাধ্যায়ের অনুরাধা ছবির সংগীত পরিচালনার কাজ করে বেশ আনন্দ পেয়েছিলেন । সংগীতবহুল এই ছবিটি রাষ্ট্রপতি 888sport app download bd অর্জন করেছিল। প্রেমচন্দের কাহিনি নিয়ে নির্মিত গোদান ছবির সংগীত পরিচালনা করেও বেশ তৃপ্ত ছিলেন তিনি। লতা মুঙ্গেশকর এই ছবির সংগীতের জন্য রবিশঙ্করের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছিলেন। রিচার্ড এটনবোরোর গান্ধী ছবির সংগীত পরিচালনার আমন্ত্রণ পেয়ে রবিশঙ্কর খুব উৎফুল্ল হয়েছিলেন। কিন্তু যখন শুনলেন, তাঁর সঙ্গে আরেকজন, জর্জ ফেন্টন, থাকবেন সংগীত পরিচালনার দায়িত্বে, তখন তিনি বেশ চিন্তিত ও ক্ষুণœ হন। পরিচালক তাঁকে বললেন, পশ্চিমা দর্শকের কথা ভেবে আবহসংগীতে অর্কেস্ট্রার ব্যবহার করা প্রয়োজন। এই অংশটুকু করবেন জর্জ ফেন্টন, তবে মূল সংগীতাংশ রবিশঙ্করই করবেন। গান্ধীর মৃত্যুর পর ভারতীয় বেতারের মুম্বাই কেন্দ্র থেকে তাঁকে একটি বিষাদময় রাগের শুধু আলাপটুকু বাজানোর অনুরোধ করা হয়েছিল। কী বাজাবেন এটা ভাবতে ভাবতে তাঁর মনে হলো গান্ধী নামের বর্ণগুলো দিয়ে একটি রাগ তিনি সৃষ্টি করবেন। গা-নি ও ধা দিয়ে তাৎক্ষণিকভাবেই সৃষ্টি করলেন সেই রাগটি। এই রাগটির সঙ্গে মালকোষের মিল আছে। গান্ধীর নামের প্রথমাংশ মোহনচাঁদ। এই বিবেচনায় রবিশঙ্কর রাগটির নাম দিয়েছিলেন মোহনকোষ। সেই রাগ দিয়েই তিনি ছবিটির স্মারক-সংগীত রচনা করতে চাইলেন। শেষ পর্যন্ত তা-ই করলেন। ছবিটির সংগীত সকলের হৃদয় স্পর্শ করেছিল। তবে এককভাবে সংগীত সৃষ্টি করতে না পারার দুঃখ তিনি ভুলতে পারেননি। ১৯৯০ সালে The Tiger and the Brahmin নামে একটি এনিমেশন ছবির সংগীত সৃষ্টি করেন তিনি। পঞ্চতন্ত্রের একটি গল্প অবলম্বনে নিউইয়র্কের একটি প্রতিষ্ঠান এর নির্মাতা। ছবিটি নির্মিত হওয়ার আগেই এর সংগীত রচনা করতে হয় রবিশঙ্করকে। ছবিটিতে বেন কিংসলির সংলাপ ছিল। সংলাপ শুনে এবং দুটি চরিত্রের তৎপরতার মধ্যবর্তী সময়কে অনুমান করে নিয়ে সংগীত সৃষ্টি করতে হয়েছিল তাঁকে। তবে শেষপর্যন্ত ছবিটি শেষ হওয়ার পর দেখা গেল, সব মিলিয়ে চমৎকার কাজ হয়েছে।
১৯৫৬ সালে রবিশঙ্কর ও অন্নপূর্ণার সম্পর্কে আবার চিড় ধরে। এই সময় রবিশঙ্কর আকাশবাণীর চাকরি থেকে ইস্তফা দেন। এই অবস্থায় তিনি বিদেশে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। সুযোগও এসে যায়। লন্ডনের একজন সংগীত আয়োজক, জন কোস্ট, তাঁকে ইউরোপের কয়েকটি স্থানে সংগীত পরিবেশনের আমন্ত্রণ জানান। সেই বছরের সেপ্টেম্বরে তিনি লন্ডনে যান। কয়েকটি কনসার্ট করেছিলেন বিলেতের বিভিন্ন স্থানে। তখনও ভারতীয় সংগীতের ততটা সমাদর সেখানে শুরু হয়নি। এরপর জার্মানিতে কয়েকটি কনসার্ট করে ফিরে গেলে লন্ডনে। এই সফরের সময় তাঁর বাজানো তিনটি রাগ নিয়ে Ravi Shankar Plays Three Classical Ragas নামে একটি লংপ্লে রেকর্ড প্রকাশিত হয়, লন্ডন থেকে। পাশ্চাত্য থেকে প্রকাশিত এটিই রবিশঙ্করের প্রথম লংপ্লে রেকর্ড। এরপর তিনি পাড়ি জমালেন আমেরিকায়। বন্ধুদের সহযোগিতায় নিজের উদ্যোগেই আয়োজন করলেন কনসার্টের। এই সময় তাঁর সঙ্গে পরিচয় হয় রিচার্ড বোক নামের জ্যাজ সংগীতের এক রসিক গুণগ্রাহীর সঙ্গে। জ্যাজ সংগীত রেকর্ড করার জন্য তিনি The World Pacific নামে একটি প্রতিষ্ঠান চালু করেছিলেন। রবিশঙ্করের একটি রেকর্ড তিনি তাঁর ওখান থেকে প্রকাশ করতে চাইলেন। কলম্বিয়া রেকর্ডস থেকেও তাঁর লংপ্লে রেকর্ড প্রকাশের ব্যাপারে আরেকজন জ্যাজ অনুরাগী, জর্জ এভাকিয়ান, উদ্যোগ গ্রহণ করলেন।
১৯৫৮ সালে তিনি রচনা করলেন Melody and Rhythm| এই সৃষ্টিকে রবিশঙ্কর তাঁর Magnum Opus নামে অভিহিত করেছেন। ধ্র“পদ-ধামার, খেয়াল-টপ্পা, তারানা-ঠুমরি থেকে শুরু করে বর্তমানকালের ভারতীয় ধ্রুপদী সংগীতের একটি সাংগীতিক ইতিহাস রচনা করেছেন রবিশঙ্কর Melody and Rhythm-এ। দিল্লিতে এর পরিবেশনার সময় একদিন জওহরলাল নেহরু এসেছিলেন এই পরিবেশনা দেখতে-শুনতে, তাঁর শত ব্যস্ততার মধ্যেও। একটি ঘুমপাড়ানি গানও আছে এতে, গেয়েছেন লক্ষ্মী শঙ্কর। ঘুমপাড়ানি গানটি শুনতে শুনতে নেহরু ঘুমিয়ে পড়েছিলেন, স্পষ্ট শোনা যাচ্ছিল তাঁর নাসিকাগর্জন।
এরপর থেকে ভারতে ও বিদেশে রবিশঙ্করের চাহিদা অনেক বেড়ে গেল। বিলেতে এশীয় সংগীতের প্রসারের জন্য কাজ করছিল Asian Music Circle নামে একটি সংগঠন। ইহুদি মেনুহিন এর নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। তাদের আমন্ত্রণে রবিশঙ্কর নিয়মিত বিলেতে ভারতীয় সংগীত পরিবেশন করতে থাকেন। জন কোস্টও আয়োজন করতেন এরকম অনুষ্ঠানের। ১৯৫৮ সালের অক্টোবরে জন কোস্টোর উদ্যোগে রবিশঙ্কর, আল্লা রাখাকে সঙ্গে নিয়ে, রয়েল ফেস্টিভেল হলে অনুষ্ঠান করলেন। এবার হল ছিল পরিপূর্ণ।
অনুষ্ঠানের পর ভারতে ফিরে এলেন। এইসময় অন্নপূর্ণা আবার ফিরে আসেন রবিশঙ্করের কাছে। অন্নপূর্ণা ছেলে শুভকে সেতার শেখানোর কাজে মনোনিবেশ করলেন, কিন্তু রবিশঙ্করের সঙ্গে তাঁর ছিন্ন সম্পর্কের তারে আর জোড়া লাগছিল না। রবিশঙ্করের মনে তখন আবার পুরোনো বন্ধু কমলার জন্য আকুলতা তৈরি হয়েছে। দিল্লি ও মুম্বাইতে একসঙ্গে কিছুদিন থাকার পর, ১৯৬৭ সালে রবি ও অন্নপূর্ণা বিচ্ছিন্ন হলেন চিরদিনের জন্য।
এর মধ্যে দাদা উদয়শঙ্করের সঙ্গে যোগাযোগও ক্ষীণ হয়ে এসেছিল, উভয়ের ব্যস্ততার কারণে। কলকাতায় একবার দুইভাইয়ের দেখা হলে, রবিশঙ্কর দুজনে মিলে একটা কিছু করার ইচ্ছে প্রকাশ করলেন। উদয়শঙ্করও রাজি হলেন। ১৯৬১ সালে, রবীন্দ্র শতবার্ষিকী উপলক্ষে সৃষ্টি হলো রবীন্দ্রনাথের সামান্য ক্ষতির নৃত্যরূপ।
১৯৬১ সালে রবিশঙ্কর আবার গেলেন আমেরিকায়। এতদিনে রবিশঙ্কর বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন সেই দেশে। আলী আকবর খাঁও তখন সেখানে, ম্যাকগ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভারতীয় সংগীতের পাঠদান করছেন। আমেরিকায় তখন ভারতীয় সংগীতের পাঠদান করা হতো Ethnomusicology -র অন্তর্ভুক্ত বিষয় হিসেবে। রবিশঙ্কর এর প্রতিবাদ করেন। ভারতীয় সংগীতের মৌলিকত্ব বিচার করলে এই শ্রেণীকরণ যুক্তিসঙ্গত নয়। রবিশঙ্করের এই প্রতিবদের ফলে, পরে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগে ভারতীয় সংগীতকে বিশ্ব সংগীতের অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
এই সফরের সময় জ্যাজ সংগীত888sport live chatীদের সঙ্গে রবিশঙ্করের একসঙ্গে কাজ করার সুযোগ ঘটে। ধানী রাগের ওপর ভিত্তি করে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের সংগীতের একটি সমন্বিত রচনা তৈরি করেন রবিশঙ্কর। তাঁর সৃষ্টিকে রূপায়িত করেন ডেনিস বুদিমার, গেরি পিকক, লুই হেইস, বাড শান্ক, কানাই দত্ত, হরিহর রাও ও নাদুর মতো প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের সংগীত888sport live chatীরা। জ্যাজ সংগীতের সমন্বয়ে এটাই ছিল রবিশঙ্করের প্রথম পরীক্ষা।
ভারতীয় সংগীত নিয়েও তাঁর পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও সৃষ্টিশীলতার বিরাম ছিল না। Melody and Rhythm-এর পর রবীন্দ্রনাথের চণ্ডালিকার একটি ব্যালেরূপ সৃষ্টি করলেন। বাদ্যবৃন্দ নিয়ে কাজ করার সময় পাশ্চাত্যের বাদ্যযন্ত্র ভারতীয় সংগীতে ব্যবহারের যে প্রয়াস করছিলেন, তারই প্রয়োগ করলেন চণ্ডালিকায়। সংগীতের কাজটি রবিশঙ্কর করেছিলেন, নৃত্য পরিচালনা করেছিলেন বৈজয়ন্তিমালা; মূল ভূমিকায়ও অভিনয় করেছিলেন তিনি।
১৯৬৪ সালে আরেকটি বড়মাপের কাজ শুরু করলেন রবিশঙ্কর, সম্পূর্ণ এক নতুন সৃষ্টি উপহার দিলেন এবার নবরসরঙ্গ নামে। অনেকটা Melody and Rhythm-এর মতোই এর পরিকল্পনা। আদিকাল থেকে বর্তমান সময় শব্দ সম্পর্কে মানুষের ধারণা ও অভিজ্ঞতার বিবর্তনের ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে নবরসরঙ্গে। পাখির কিচির-মিচির, করতালি, পদাঘাতের শব্দ ও কণ্ঠস্বর কীভাবে ক্রমশ বৈদিক শ্লোক, জাতি-গণ ও সংস্কৃত ছন্দ্র 888sport liveে রূপান্তরিত হলো তার ধারাবাহিক বর্ণনা দিয়ে শুরু এই রচনার। এরপর নম-তম, আলাপন, ধ্র“পদ, ধামার, খেয়াল, টপ্পা, ঠুমরি ও অর্কেস্ট্রার ধ্বনি দিয়ে সংগীতের বৈচিত্র্য প্রদর্শন করেছেন তিনি।
সংগীত নিয়ে রবিশঙ্করের মনোযোগ ও সৃজনশক্তির সম্পূর্ণ আলোচনা একটি রচনায় সম্ভব নয়। আমরা তাঁর প্রতিভা ও সৃষ্টিশীলতার কিছু পরিচয় তুলে ধরার চেষ্টা করেছি মাত্র। প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য সংগীতের সমন্বয় সাধন করে ইহুদি মেনুহিনের সঙ্গে রবিশঙ্কর সংগীতের যে নবরূপ সৃষ্টির প্রয়াস করেছেন তা বোদ্ধাদেরও বিস্মিত করে। ইহুদি মেনুহিনের সঙ্গে রবিশঙ্করের দেখা হয়েছিল প্যারিসে, ইহুদির বয়স তখন সতের এবং রবিশঙ্করের বয়স তের বছর। কিন্তু তাঁরা পরস্পরকে ভালো করে জানতে শুরু করেন ১৯৫২ সালে; ইহুদি সে-বছর ভারতে এসেছিলেন। রবিশঙ্কর তাঁর সম্মানে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সেতার বাজিয়েছিলেন। এরপর থেকে নিয়মিত যোগাযোগ হয়েছে দুই সংগীতগুরুর মধ্যে। একসময় উভয়েই অনুভব করলেন, তাঁদের দুজনের একসঙ্গে কাজ করা দরকার। তাঁদের সেই ইচ্ছে বাস্তবায়িত হলো ১৯৬৬ সালে। ইহুদি জার্মান পিয়ানোবাদক পিটার ফয়েশট ওয়াঙ্গারকে অনুরোধ করেছিলেন সেতার ও বেহালার দ্বৈতবাদন উপযোগী একটি সংগীত রচনা করতে। পিটার তাঁর রচনায় ভারতীয় রাগ তিলঙ্গ-এর স্বরবিন্যাস ব্যবহার করেছিলেন। রবিশঙ্করের মনে হয়েছিল, এটি সেতারে বাজানোর উপযোগী হয়নি। পরে, ইহুদি মেনুহিনের অনুরোধে, রবিশঙ্করই আরেকটি রচনা তৈরি করলেন তিলঙ্গ রাগের ওপর ভিত্তি করেই। বাথ সংগীত উৎসবে এই দুই সংগীত-কিংবদন্তি মিলে যখন সেতারে ও বেহালায় এই নবসৃষ্ট সংগীতটি পরিবেশন করলেন তখন শ্রোতাদের পক্ষে উচ্ছ্বাস সংযত রাখা সম্ভব হয়নি।
পাশ্চাত্য সংগীতের সঙ্গে ভারতীয় সংগীতকে সমন্বিত করার কাজ রবিশঙ্কর অনেক করেছেন। গত শতকের সত্তরের দশকের শেষদিকে তিনি দূরপ্রাচ্যের দিকে দৃষ্টি ফিরিয়েছিলেন। এইসময় জাপানি সংগীত 888sport live chatীদের সঙ্গে কাজ করার আগ্রহ জাগে তাঁর মনে। জাপানের একজন কোতো বাদকের বাদন শুনে তিনি মুগ্ধ হয়েছিলেন, ১৯৫৮ সালে। জাপানের শাকুহাছি বাজনা সম্পর্কেও তাঁর উৎসাহ ছিল। জাপানের চতুর্দশ শতকের কিছু গানের মধ্যে তিনি ভারতীয় বৈরাগী, গুণকলি ও শিবরঞ্জনীর অনুরণন শুনেছিলেন। ভূপালি ও দুর্গার সন্ধানও পেয়েছিলেন কিছু গানে। জাপানের সংগীতের ব্যাপারে তাঁর আগ্রহের কথা জেনে ১৯৭৮ সালে তাঁর জাপান সফরের ব্যবস্থা করে পলিগ্রাম নামে একটি সংগঠন। আল্লা রাখাকে নিয়ে তিনি জাপান গেলেন। দুজন জাপানি সংগীত888sport live chatীর কথা তিনি আগেই উদ্যোক্তাদের বলে রেখেছিলেন। এঁদের কোতো ও শাকুহাছি বাদন শুনেছিলেন তিনি। তাঁরা ঐতিহ্যবাহী জাপানি সংগীতের পাশাপাশি জ্যাজ ধারায়ও বাদনে পারদর্শী। শাকুহাছির জন্য রবিশঙ্কর শিবরঞ্জনী রাগ বেছে রেখেছিলেন, কোতোর জন্য দুর্গা। রবিশঙ্করের জন্য জাপানি সংগীত 888sport live chatীরা নির্বাচন করেছিলেন চতুর্দশ শতকের একটি ঐতিহ্যবাহী জাপানি সুর রকুদান। এই পরিকল্পনা অনুযায়ী রবিশঙ্কর ও জাপানি 888sport live chatীদের বাদন পরিবেশিত হলো, শ্রোতাদের সমাদরও পেল। এই বাদন অনুষ্ঠানের রেকর্ড প্রকাশিত হয় East Greets East নামে। পাশ্চাত্য সংগীত ও ভারতীয় সংগীতের একটি রেকর্ড এর আগে প্রকাশিত হয়েছিল West meets East নামে। রবিশঙ্কর এভাবে সারাজীবন ধরেই সংগীত নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও উদ্ভাবন করে গেছেন। এখানেই তিনি অনন্য।
১৯৮২ সালে দিল্লিতে অনুষ্ঠিত নবম এশীয় অলিম্পিকের সূচনা ও সমাপনী সংগীত রচনার সৌভাগ্য অর্জন করেছিলেন রবিশঙ্কর। পণ্ডিত নরেন্দ্র শর্মা রচিত স্বাগত সংগীত ‘স্বাগতম, শুভ স্বাগতমে’র সুরটি ছিল অনবদ্য। অতিথিদের স্বাগত জানানোর সঙ্গে তাদের কল্যাণ কামনার যে ভারতীয় ঐতিহ্য আছে Ñ রবিশঙ্করের সুরের মূর্ছনায় তা যেন মূর্ত হয়ে উঠেছিল।
888sport appsের মুক্তিযুদ্ধের সময় রবিশঙ্করের ভূমিকা আমাদের ইতিহাসের অংশ হয়ে গেছে। 888sport appsে পাকিস্তানি বাহিনীর বর্বরতার কথা জেনে তিনি বিচলিত হয়ে পড়েছিলেন। এই সময় তিনি 888sport appsের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বাংলায় দুটি গান লিখে রেকর্ড করেছিলেন। এর একটি ‘জয়বাংলা’, অন্যটি ‘ও ভগবান খোদাতালা’। 888sport appsের মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্যের জন্য একটি কনসার্ট করার কথাও তাঁর মনে হয়। এই ব্যাপারে তিনি জর্জ হ্যারিসনের সাহায্য প্রার্থনা করলেন। জর্জ রাজি হয়ে বললেন, ‘আমাদের অবশ্যই কিছু একটা করা উচিত।’ জর্জ তখনই লিখে ফেললেন ‘888sport apps 888sport apps’ গানটি। ১৯৭১-এর পহেলা আগস্ট মেডিসন স্কয়ারে অনুষ্ঠিত এই কনসার্ট শুরু হয়েছিল আলী আকবর ও রবিশঙ্করের সরোদ ও সেতার বাদন দিয়ে। জর্জ হ্যারিসন গাইলেন ‘888sport apps 888sport apps’ গানটি। বব ডিলান, এরিখ ক্ল্যাপটন, বিল্লি প্রেস্টন এবং আরও বেশ কয়েকজন 888sport live chatী সেদিন 888sport appsের মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। প্রথমে ভাবা হয়েছিল, একটি কনসার্ট হবে। কিন্তু শ্রোতার 888sport free bet এত বেশি ছিল যে, একই দিনে দুটো কনসার্ট করতে হয়েছিল; একটি বিকেলে, অন্যটি সন্ধ্যায়।
রবিশঙ্করের সৃষ্টি যেমন বিপুল, তাঁর অর্জনও তেমনি অপরিমেয়। পাশ্চাত্যে ভারতীয় সংগীতের প্রধান প্রতিনিধি তিনি। live chat 888sportে যেমন সত্যজিৎ, সংগীতে তেমনই রবিশঙ্কর Ñ প্রাচ্যে ও পাশ্চাত্যে সমান আদৃত। সংগীতের জন্য অন্যতম সেরা 888sport app download bd গ্রামি পেয়েছেন, সম্মানিত হয়েছেন ভারতের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় 888sport app download bd ভারতরতœ অর্জন করে।
সেতার বাদনে তাঁর পারদর্শিতা প্রশ্নাতীত। আলাউদ্দিন খাঁর কঠোর তালিমের পাশাপাশি নিজের নিষ্ঠা তাঁকে পারদর্শী করে তুলেছে। তবে পারদর্শিতাই একজন 888sport live chatীকে 888sport app download for androidীয় করে না। পারদর্শিতার সঙ্গে সৃজনশীলতার সমন্বয় থাকা চাই। সৃজনশীলতার সঙ্গে প্রয়োজন সংবেদনশীলতার। সংগীতে তাঁর সৃজনশীলতার প্রমাণ আছে নানা ক্ষেত্রে। সেতারেরও কিছুটা সংস্কার করেছেন তিনি। তার ও সুর বাঁধায় বেশ পরিবর্তন এনেছেন তিনি। এর ফলে সেতারের ধ্বনি অনেক সুরেলা হয়েছে। বাদনশৈলীতেও তাঁর উদ্ভাবনী শনাক্ত করা যায়। সুরবাহারের কিছু কিছু বৈশিষ্ট্য তিনি প্রয়োগ করেন আলাপ ও জোড়ে। অতি বিলম্বিত থেকে দ্রুত বাদনে তালের বৈচিত্র্য সৃষ্টি করে সেতারের উপভোগ্যতাকে অনেক সম্ভাবনাময় করে তুলেছেন। রবিশঙ্করের বাদন বৈশিষ্ট্যকে কি শঙ্কর ঘরানা নামে অভিহিত করা যায়? এই প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন তিনি নিজেই। তাঁর মতে, তাঁর বাদনশৈলীকে হয়ত রবিশঙ্কর বাজ নামে অভিহিত করা যেতে পারে। আলী আকবর খাঁর বাদনরীতিও হয়ত একসময় আলী আকবরী বাজ নামে অভিহিত হবে। বাজ হলো কোনো এক অনুষ্ঠানে পরিবেশিত বাদনবৈশিষ্ট্য। কিংবা কোনো ঘরানার ব্যক্তি বিশেষের বাদন বৈশিষ্ট্য। কণ্ঠসংগীতে যেমন গায়কি।
রবিশঙ্করকে একবার জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, ‘আপনি যদি জন্মান্তরে বিশ্বাস করে থাকেন, তবে এর আগের জন্মে কী ছিলেন বলে মনে হয়?’ রবিশঙ্করের সহাস্য উত্তর, ‘আমারও জানতে ইচ্ছে করে। তবে মাঝে-মধ্যে বসে বসে ভাবি, আমি নিশ্চয়ই কোনো না কোনো 888sport live chatকর্মের সঙ্গেই যুক্ত ছিলাম। সংগীত কিংবা নৃত্য, এমনকি চিত্রকলার সঙ্গেও হতে পারে। কল্পনার যে গভীর অনুভূতি আছে আমার মধ্যে, তাতে মনে হয় আমি কোনো না কোনো 888sport live chatসাধনাতেই নিমগ্ন ছিলাম।’ আবার তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হলো, ‘পুনর্জন্ম গ্রহণ করার সুযোগ থাকলে আপনি কী হতে চাইবেন?’ রবিশঙ্কর এবার উত্তর দিলেন একটু গম্ভীরভাবেই, ‘আমি একজন জাতিস্মর হয়ে জন্মাতে চাই, যাতে আমি এই জীবনে যা শিখেছি তা মনে করতে পারি; নতুন করে যেন অ-আ থেকে আবার শুরু করতে না হয়। আমি ডক্টরেট পর্যায় থেকে আমার সেই জীবন শুরু করতে চাই।’
পুনর্জন্মে আমাদের বিশ্বাস নেই। থাকলেও কি লাভ হতো? জন্মান্তরের রবিশঙ্করের বাদন শোনার সৌভাগ্য তো হতো না।

Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.