রবীন্দ্রনাথ ও 888sport apps

মৃত্যুকালে দ্বারকানাথ ঠাকুর যেমন অগাধ বিষয়সম্পত্তি রেখে গিয়েছিলেন, তেমনি রেখে গিয়েছিলেন প্রচুর ঋণ। সে-দেনা শোধ করতে দেবেন্দ্রনাথকে বিক্রি করে দিতে হয় বহু সম্পত্তি, এমনকি বাড়ির আসবাবপত্রও। তারপরও যা রয়ে যায়, তা সামান্য নয় : উড়িষ্যায় তিনটি এবং পূর্ববঙ্গে তিনটি জমিদারি। সম্পত্তি এজমালি, কিন্তু তত্ত্বাবধায়ক দেবেন্দ্রনাথ। এক সময়ে তিনি যখন আর নিজে জমিদারি দেখাশোনা করতে চাইলেন না, তখন সে-ভার দিলেন জ্যেষ্ঠ জামাতা সারদাপ্রসাদ গঙ্গোপাধ্যায়কে। রবীন্দ্রনাথের বিয়ের দিনে শিলাইদহে মৃত্যু হয় সারদাপ্রসাদের। এবারে দায়িত্ব পড়ে জ্যেষ্ঠপুত্র দ্বিজেন্দ্রনাথের ওপরে। তিনি দানধ্যান করে, খাজনা মওকুফ করে, লোকসান ঘটিয়ে আসেন এবং তাঁর পুত্র দ্বিপেন্দ্রনাথকে দেন জমিদারি দেখতে। দ্বিপেন্দ্রনাথ খুব গুছিয়ে কাজ করতে পারেননি। ১৮৯০ সালের দিকে দেবেন্দ্রনাথ স্থির করেন যে জমিদারি দেখাশোনার ভারটা রবীন্দ্রনাথকেই দেবেন।

সেই মুহূর্তে পরিবারের আর কাউকে এ-দায়িত্ব দেওয়া যেতো না। দ্বিজেন্দ্রনাথ আপনভোলা দার্শনিক। সত্যেন্দ্রনাথ আইসিএস, রাজকর্মে ব্যস্ত। হেমেন্দ্রনাথ মৃত। স্ত্রীবিয়োগের পর থেকে জ্যোতিরিন্দ্রনাথ একরকম সংসারবিরাগী। বীরেন্দ্রনাথ ও সোমেন্দ্রনাথ অসুস্থ। সুতরাং একমাত্র রবীন্দ্রনাথই আছেন সামনে। তাছাড়া রবীন্দ্রনাথের বয়স ত্রিশ হতে চলল, 888sport live footballচর্চা ছাড়া আর কিছুই করেন না। তাঁকেও একটা কাজে লাগাতে হয়!

পিতার আদেশে রবীন্দ্রনাথ অবাকই হয়েছিলেন। ‘আমি কবিমানুষ, পদ্যটদ্য লিখি, আমি এসবের কি বুঝি? কিন্তু বাবা বললেন – ‘তা হবে না; তোমাকে এ কাজ করতে হবে।’ কি করি? বাবার হুকুম, কাজেই বেরতে হ’ল।’

কলকাতায় সেরেস্তায় বসে জমিদারির কাজ শিখতে হলো তাঁকে – নিম্নতম কেরানির কাজ থেকে নায়েবের কাজ পর্যন্ত সবই। তারপর পাড়ি দিতে হলো পূর্ববঙ্গে। সেখানে তাঁদের তিনটি পরগনা : নদিয়া জেলায় বিরাহিমপুর, তার কাছারি শিলাইদহে; রাজশাহি জেলায় কালিগ্রাম, তার কাছারি পতিসরে; আর পাবনা জেলায় সাজাদপুর, তার কাছারি সাজাদপুর গ্রামেই। এতদিন বাড়ির অন্যদের মতো রবীন্দ্রনাথও মাসোহারা পাচ্ছিলেন দুশ টাকা, এখন তা উন্নীত হলো তিনশয়।

এর আগেও কনিষ্ঠ পুত্রকে জমিদারির কাজে বাঁধার চেষ্টা করেছিলেন দেবেন্দ্রনাথ, কিন্তু সফল হননি। রবীন্দ্রনাথ সুযোগ পেলেই পালিয়ে এসেছেন কলকাতায়। তবে পূর্ববঙ্গের নিসর্গ যে তাঁকে মুগ্ধ করেছিল, তা নিঃসন্দেহ। সম্ভবত ১৮৮৯ সালে রবীন্দ্রনাথ সপরিবারে এসেছিলেন পূর্ববঙ্গ ও উড়িষ্যায়। তখন শিলাইদহ থেকে ভ্রাতুষ্পুত্রী ইন্দিরা দেবীকে লিখেছিলেন, ‘পৃথিবী যে বাস্তবিক কী আশ্চর্য সুন্দরী, তা কলকাতায় থাকলে ভুলে যেতে হয়।’ এখন এসে পড়লেন সেই সুন্দরী পৃথিবীর একেবারে কোলের মধ্যে। এবারে লিখছেন : ‘পৃথিবী যে কী আশ্চর্য সুন্দরী এবং কী প্রশস্ত প্রাণ এবং গভীরভাবে পরিপূর্ণ তা এইখানে না এলে মনে পড়ে না।’ কবি থাকেন পদ্মা নামের বোটে – শিলাইদহ থেকে পদ্মা নদীতে বোট ভাসিয়ে চলে যান ইছামতীতে, সেখান থেকে চলনবিলে, আত্রাইয়ে, নাগর নদীতে, যমুনা পেরিয়ে সাজাদপুরের খাল বেয়ে সাজাদপুরে। এমনি করে পদ্মা নদীর সঙ্গে গড়ে ওঠে তাঁর নিবিড় সম্পর্ক, কবুল করেন, ‘বাস্তবিক পদ্মাকে আমি বড়ো ভালোবাসি।’

রবীন্দ্রনাথ প্রকৃতির সৌন্দর্য দেখেন, বালবৃদ্ধ 888sport promo codeপুরুষকে অবলোকন করেন, পরিচিত হন তাদের জীবনযাত্রার সঙ্গে। তাঁর সৃষ্টিশীলতা লাভ করে এক আশ্চর্য গতিময়তা। রথীন্দ্রনাথ লিখেছেন, ‘বাবার গদ্য ও পদ্য দুরকম লেখারই উৎস যেমন খুলে গিয়েছিল শিলাইদহে, এমন আর কোথাও হয়নি।’ যে-বছর তিনি পূর্ববঙ্গে আসেন, সে-বছরেই কলকাতা থেকে প্রকাশিত হয় মাসিক হিতবাদী – তার সঙ্গে রবীন্দ্রনাথ যুক্ত হন 888sport live footballসম্পাদকরূপে। হিতবাদীতে পরপর লেখেন ছটি ছোটোগল্প – আর প্রকৃতপক্ষে তাতেই সূচনা হয় বাংলা ছোটোগল্পের – সেসব গল্পের বস্তু পূর্ববঙ্গের গ্রামজীবন থেকেই নেওয়া। সোনার তরী-চিত্রা-কণিকা-কথা-কাহিনি-কল্পনা-ক্ষণিকার বহু 888sport app download apk এখানেই লেখা। চিরকুমার সভা নাটক এবং চোখের বালি 888sport alternative linkেরও পত্তন এখানে। আর এখানে রচিত হয় অজস্র গান। যেমন, ‘পুষ্পবনে পুষ্প নাহি, আছে অন্তরে’ লেখা হয় শিলাইদহে; ‘ভালোবেসে, সখী, নিভৃত যতনে’ সাজাদপুরে; ‘বঁধু মিছে রাগ কোরো না’ পতিসরে। যমুনার স্রোতে ভাসতে ভাসতে লেখেন ‘কেন যামিনী না যেতে জাগালে না’, চলনবিলে ‘যদি বারণ করো তবে গাহিব না’, নাগর নদীতে ‘আমি চাহিতে এসেছি শুধু একখানি মালা’, পদ্মায় বোটে বসে লেখা হয় ‘বিশ্ববীণারবে বিশ্বজন মোহিছে’।

শুধু সৃষ্টিশীল রচনাই নয়, মননশীল লেখাও ছুটছে কলমে। দেশের রাজনীতি নিয়ে লিখছেন। পূর্ববঙ্গের অভিজ্ঞতা থেকে নতুন নতুন চিন্তা আসছে মাথায়। পল্লী-পুনর্গঠনের বিষয়ে ভাবছেন, সমবায়ের কথা ভাবছেন, যন্ত্র দিয়ে কৃষিকর্মের কথা ভাবছেন। কুষ্টিয়ায় বয়ন বিদ্যালয় স্থাপন করেন – তাঁত888sport live chatের উন্নতির উদ্দেশ্যে। পতিসরে কৃষি ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেন পরে – কৃষকদের মধ্যে ক্ষুদ্র ঋণ বিতরণ করবেন বলে। ১৮৯৮ সাল থেকে স্ত্রীপুত্রকন্যা নিয়ে শিলাইদহে বাস করতে থাকেন তিনি। ছেলেমেয়েদের শিক্ষার ব্যবস্থা করতে গিয়ে শিক্ষার নতুন দর্শনের সূচনা করেন।

তিরিশ বছর বয়সে জমিদারি দেখতে এসে দশটি বছর পূর্ববঙ্গে কাটিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। ইতিমধ্যে দেবেন্দ্রনাথ সংকল্প করেছেন, জমিদারি আর এজমালি রাখবেন না। ভবিষ্যতে বিষয়সম্পত্তি নিয়ে গোলযোগ এড়াতে তিনি বেঁচে থাকতেই যথাযথ ভাগ-বাটোয়ারা করে যেতে চান। তাতে পুত্র হেমেন্দ্রনাথের উত্তরাধিকারীদের হাতে চলে যায় উড়িষ্যার জমিদারি। তেমনি করে অনুজ গিরীন্দ্রনাথের পৌত্র গগনেন্দ্রনাথ, সমরেন্দ্রনাথ ও অবনীন্দ্রনাথের ভাগে পড়ে সাজাদপুর পরগনা। ওদিকে মৃণালিনী দেবী আর থাকতে চাইছিলেন না শিলাইদহে। মাধুরীলতার বয়স প্রায় চোদ্দ – তার বিয়ে দিতে হবে। রেণুকাকেই বা আর কদিন ঘরে রাখা যাবে! রথীন্দ্রনাথের এনট্রানস পরীক্ষার সময়ও চলে এলো। আবার লোকজনে ও কোলাহলে পরিপূর্ণ জোড়াসাঁকোর বাড়িতেও তিনি ঠাঁই নিতে চান না। রবীন্দ্রনাথকে তাই শান্তিনিকেতনে বসতি স্থাপন করতে হলো।

তাই বলে পূর্ববঙ্গের সঙ্গে তাঁর যোগসূত্র সম্পূর্ণরূপে ছিন্ন হলো না। বিষয়সম্পত্তি ভাগ-বাটোয়ারার পরও পূর্ববঙ্গের সবগুলি জমিদারিই দেখতে হয় তাঁকে। তারপরও শিলাইদহ-পতিসর দেখতে এসেছেন। রথীন্দ্রনাথকেও জমিদারি দেখার জন্যে প্রস্তুত করেছেন, নিজের হাতে সেরেস্তার কাজ শিখিয়েছেন। রাজনৈতিক সভা-সমিতি কিংবা 888sport live footballসভা-সম্মেলনের কাজে এসেছেন পূর্ববঙ্গে। এমনি করে, ১৯০৪ থেকে ১৯৩৭ সালের মধ্যে শিলাইদহ-পতিসর ছাড়াও তাঁকে আসতে হয়েছে বরিশাল, চট্টগ্রাম, পাবনা, সিলেট, 888sport app, ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, চাঁদপুর ও নারায়ণগঞ্জে – কোথাও কোথাও একাধিকবার। যখনই এসেছেন, যেখানেই গেছেন, তাঁর রচনার পালা অব্যাহত থেকেছে। গোরা 888sport alternative link ও রাজা নাটকের পত্তন এখানে; গীতাঞ্জলি-গীতিমাল্য-বলাকা- বৈকালীর অনেক 888sport app download apk এখানে লেখা। এর মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য এই যে, ১৯১২ সালে তাঁর বিলাতযাত্রা যখন পণ্ড হয়ে যায় অসুস্থতার কারণে, তখন তিনি শিলাইদহে এসে আশ্রয় নেন এবং সেখানে গান লেখার ফাঁকে ফাঁকে নিজের 888sport app download apk একটি-দুটি করে ইংরেজিতে 888sport app download apk latest version করতে শুরু করেন। এভাবেই সূচনা হয় ইংরেজি গীতাঞ্জলির।

এই যোগ একতরফা ছিল না। পূর্ববঙ্গের মানুষ ও প্রকৃতি যদি তাঁকে উদ্বুদ্ধ করে থাকে, পূর্ববঙ্গের মানুষও প্রেরণালাভ করেছে তাঁর সৃষ্টিসম্ভার থেকে। তারা কবিকে কৃতজ্ঞতাজ্ঞাপন করতে ভোলেনি। পূর্ববঙ্গে রবীন্দ্রনাথ যে-সংবর্ধনা লাভ করেছেন অনেক, তাতেও তার পরিচয় পাওয়া যায়। ১৯১৪ সালে পতিসরে, ১৯১৯-এ সিলেটে, ১৯২২-এ শিলাইদহে, ১৯২৬-এ 888sport app, ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, চাঁদপুর ও নারায়ণগঞ্জে এবং ১৯৩৭-এ পতিসরে তাঁর সংবর্ধনা হয়। সিলেটে ও 888sport appয় বিশেষ সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছিল যথাক্রমে ‘হিন্দুমুসলমান জনসাধারণের পক্ষ হইতে’ এবং ‘হিন্দু মোসলেম সেবাশ্রমের পক্ষ হইতে’। 888sport appয় বিশ্ববিদ্যালয়-পরিবার তাঁকে নানাভাবে সম্মান জানিয়েছিল। ১৯৩৭এ 888sport app বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে ডি. লিট্, উপাধি দেয়, তিনি অবশ্য নিজে এসে তা গ্রহণ করতে পারেননি।

পতিসরে দুবারই সংবর্ধনা দেওয়া হয় প্রজাদের পক্ষ থেকে, শিলাইদহে কাছারির কর্মচারীদের পক্ষ থেকে। পতিসরে শেষ সংবর্ধনার উত্তরে রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, ‘তোমাদের কাছে অনেক পেয়েছি, – কিন্তু কিছু দিতে পেরেছি বলে মনে হয় না।’আবারও বলেছিলেন, ‘তোমাদের জন্য কিছুই করতে পারিনি।’

 

তবে সংবর্ধনার কথা যতই বলা হোক না কেন, রবীন্দ্রনাথের বিরূপ সমালোচকের অভাব কখনো ছিল না, পূর্ববঙ্গেও তার অভাব হয়নি, বিশেষত উপনিবেশ-উত্তরকালে। ১৯৪৮ সালের গোড়ার দিকে ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টির দ্বিতীয় কংগ্রেসে যে-নীতি ও কর্মপন্থা গৃহীত হয় তার অনুসরণে ভবানী সেন দেন সাংস্কৃতিক তত্ত্ব। তাতে আরো অনেকের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথকে চিহ্নিত করা হয় প্রতিক্রিয়াশীল বলে। তারই প্রভাবে পূর্ব বাংলায় প্রগতি লেখক ও 888sport live chatী সংঘ রবীন্দ্রনাথকে গণ্য করলেন প্রগতিবিরোধী বুর্জোয়া হিসেবে। মুনীর চৌধুরী, আখলাকুর রহমান, আবদুল্লাহ আল-মুতী, আলাউদ্দিন আল আজাদ – এঁদের সবারই এই মত। দ্বিমত প্রকাশ করেন সংগঠনের সভাপতি অজিতকুমার গুহ – তিনি এখন সংঘ থেকে দূরে সরে গেলেন। কারাগারে নিরাপত্তা বন্দি বামপন্থি কর্মীদের মধ্যেও এ-নিয়ে বিতর্ক দেখা দিলো। সবাই ভবানী সেনের বিশ্লেষণের সঙ্গে একমত, কেবল দ্বিমত পোষণ করলেন রণেশ দাশগুপ্ত।

পূর্ব বাংলায় অবশ্য তখন কমিউনিস্ট পার্টির প্রভাব সামান্যই। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে, মুসলিম লিগের জয়জয়কার। তাঁরাও সংস্কৃতিবিষয়ে লাগসই তত্ত্ব খুঁজছেন। কিছুকাল পর সেটা দিলেন সৈয়দ আলী আহসান। তিনি বললেন, আমাদের সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্য এবং জাতীয় সংহতির প্রয়োজনে আমরা রবীন্দ্রনাথকেও অস্বীকার করতে প্রস্তুত। তবে পাঠক্রমে কিংবা রাষ্ট্রীয় বেতারে রবীন্দ্রনাথের স্থান এতে কোনোভাবেই পরিবর্তিত হয়নি। লেখক-888sport live chatী মজলিস কিংবা পাকিস্তান 888sport live football সংসদের মতো প্রতিষ্ঠানও রবীন্দ্র-জয়ন্তী পালনে কোনো বাধা অনুভব করেনি।

রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে পূর্ব পাকিস্তানে বড়রকম বিতর্ক দেখা দিলো ১৯৬১ সালে। সারা বিশ্বব্যাপী রবীন্দ্রজন্মশতবর্ষের আয়োজন হচ্ছে, কিন্তু পাকিস্তানের সামরিক শাসকেরা স্বদেশে তা করতে দিতে চায় না। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বলে বাংলা একাডেমীও এক্ষেত্রে কোনো উদ্যোগ নিলো না। রবীন্দ্রজন্মশতবর্ষ পালনের জন্যে 888sport appয় বেসরকারিভাবে তিনটি কমিটি গড়ে উঠল। একটি 888sport app হাইকোর্টের বিচারপতি সৈয়দ মাহবুব মুরশেদকে সভাপতি এবং 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের রিডার খান সারওয়ার মুরশিদকে সম্পাদক করে – 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা এতেই যোগ দেন। দ্বিতীয়টি গঠিত হয় সুফিয়া কামালের নেতৃত্বে – সংস্কৃতিসেবীদের অধিকাংশ ছিলেন তাতে। তৃতীয়টি হয় প্রেসক্লাবকে ঘিরে। শেষে অবশ্য তিনটি কমিটিই একযোগে কর্মসূচি স্থির করে।

এরই মধ্যে সরকারের গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন বিচারপতি মুরশিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বলে, রবীন্দ্রজন্মশতবর্ষের আয়োজনের পেছনে আছে 888sport appর ভারতীয় ডেপুটি হাই কমিশন, তারাই জোগান দিতে যাচ্ছে অর্থের। এমন একটি উদ্যোগের সঙ্গে কি বিচারপতির জড়িত থাকা সংগত হবে? বিচারপতি মুরশিদ জানান, কমিটির তহবিলে যাতে এ-ধরনের অর্থ সংগৃহীত না হয়, তিনি তা নিশ্চিত করবেন। কমিটির সদস্যদের চাঁদা তুলতে নিষেধ করে দিলেন তিনি, বললেন, প্রয়োজনীয় অর্থ নিজেই সংগ্রহ করে দেবেন। আমরা অবাক, বিচারপতি আবার কার কাছে টাকা চাইবেন? পরে জেনেছিলাম, পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল এ কে এম হাফিজউদ্দীনকে তিনি সেই অনুরোধ জানান, হাফিজউদ্দীনও কাজটি করে দিয়েছিলেন।

শুনেছি, তখন পূর্ব পাকিস্তান সরকারের চিফ সেক্রেটারি নাকি রবীন্দ্রজন্মশতবর্ষের আয়োজন সম্পর্কে সুফিয়া কামালের কাছে জানতে চান, ‘এসব কী হচ্ছে?’ সুফিয়া কামাল জবাবে বলেছিলেন, ‘সারা পৃথিবীতে যা হচ্ছে, তাই।’

পূর্ব পাকিস্তানের সর্বত্র যে কবির জন্মশতবর্ষ উদযাপিত হলো, তা অতটা আশ্চর্যের বিষয় নয়, যতটা আশ্চর্যের বিষয় যে-তীব্রতার সঙ্গে সে-আয়োজনের বিরোধিতা করা হয়। দৈনিক আজাদ পত্রিকার পাতায় মাসের পর মাস ধরে সম্পাদকীয় মন্তব্যে, সম্পাদকীয় পাতার নিবন্ধে, 888sport liveে, সম্পাদককে লিখিত পত্রে জন্মশতবর্ষ পালনের বিরুদ্ধে লেখা হলো, বিষোদ্গার চলল রবীন্দ্রনাথের বিরুদ্ধে। রবীন্দ্রনাথ অঙ্কিত হলেন হিন্দু ভারতের স্বপ্নদ্রষ্টা, সাম্প্রদায়িক মানুষ, সাম্রাজ্যবাদের বন্ধু (প্রিন্স অফ ওয়েল্সের সম্মানে গান লিখেছেন), মুসলমানের প্রতি বিরূপ (ইতিহাসের পটে লেখা 888sport app download apkয় বিশেষ করে) রূপে। বলা হলো, রবীন্দ্রনাথ তাঁর রচনায় মুসলিম-জীবনকে অবজ্ঞা করেছেন, এমনকি বাংলায় ফারসি শব্দব্যবহারেও আপত্তি জানিয়েছেন। তাঁর ধ্যানধারণা ছিল পাকিস্তানের আদর্শের সম্পূর্ণ বিরুদ্ধে। তাই বাঙালি মুসলমানের কাছ থেকে 888sport apk download apk latest versionলাভের অধিকার তাঁর নেই এবং তাঁর শতবর্ষ-উদযাপনও পাকিস্তানে বিশ্বাসী কারো পক্ষে সমর্থনযোগ্য নয়। একথাও বলা হলো যে, এই উদযাপনের প্রয়াসের সঙ্গে দুই বাংলাকে একীভূত করার ষড়যন্ত্র ক্রিয়াশীল,    তার লক্ষ্য পাকিস্তানের আদর্শের মূলে কুঠারাঘাত করা এবং  পাকিস্তানিদের সাংস্কৃতিক জীবনকে বিপদাপন্ন করা।

রবীন্দ্রনাথের বিরুদ্ধে অভিযোগের সপক্ষে তাঁর যেসব রচনার সাক্ষ্য তাঁরা মানলেন, তার মধ্যে ছিল ‘বন্দী বীর’, ‘ভারততীর্থ’, ‘মানী’, ‘শিবাজী-উৎসব’ ও ‘হোরিখেলা’ 888sport app download apk; ‘দালিয়া’, ‘দুরাশা’, ‘রীতিমতো নভেল’ ও ‘সমস্যাপূরণ’ গল্প; ‘কৌতুকহাস্যের মাত্রা’, ‘প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য’, ‘ব্রাহ্মণ’ ও ‘রাজসিংহ’ 888sport live; বাঙ্গালার কথা পত্রিকায় প্রকাশিত (৪ পৌষ ১৩৩৪ / ১৯২৭), প্রেসিডেন্সি কলেজে প্রদত্ত ভাষণ; ‘জনগণমন অধিনায়ক’ গান; এবং চার অধ্যায় 888sport alternative link।

দৈনিক ইত্তেফাক এবং সংবাদ অবশ্য সরাসরি প্রবৃত্ত হয় আজাদের আক্রমণের জবাব দিতে। রবীন্দ্রনাথের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ খণ্ডন করে এ-দুটি পত্রিকায় সম্পাদকীয় মন্তব্য, সম্পাদকীয় পাতায় নিবন্ধ, অন্যত্র 888sport live এবং সম্পাদককে লিখিত পত্র প্রকাশ পেলো। রবীন্দ্রনাথ মুসলমানের বিরুদ্ধে নয়, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন; সর্বোপরি তিনি ছিলেন মানবতাবাদী; আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে তিনি জড়িত আছেন, তিনি সর্বদা আছেন আমাদের ভাবনায় ও অনুভূতিতে। রবীন্দ্রনাথের রচনা, আমাদের 888sport app download for android করিয়ে দেওয়া হলো, নিষিদ্ধ করা হয় হিটলারের জার্মানিতে, অর্থাৎ ফ্যাসিস্টরাই কেবল তাঁর বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে পারে। পত্রিকাদুটি শতবর্ষ-উপলক্ষে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করে এবং পূর্ব পাকিস্তানের সবচেয়ে মর্যাদাবান 888sport live footballপত্র, সিকানদার আবু জাফর-সম্পাদিত সমকাল, প্রকাশ করে বিশেষ 888sport free bet।

যাঁরা রবীন্দ্রনাথের পক্ষ অবলম্বন করেছিলেন, তাঁরা তাঁর বিরোধীদের মনোভাব ভালোই জানতেন। তাঁরা অনেকটা প্রয়াস নিয়েছিলেন বিরুদ্ধপক্ষের যুক্তি খণ্ডন করতে। সুতরাং তাঁরা সানন্দে ঘোষণা করেন যে, রবীন্দ্রনাথের পূর্বপুরুষের বাড়ি ছিল পূর্ববঙ্গে; তিনি বহুবছর এই অঞ্চলে কাটিয়েছেন; তাঁর রচনাবলির অনেকাংশের ভিত্তি হলো পূর্ব বাংলার মানুষ ও প্রকৃতি। আরো বলা হলো, রবীন্দ্রনাথ হিন্দু নয় একেশ্বরবাদী ব্রাহ্ম ছিলেন; তাঁর ওপরে সুফিবাদের প্রভাব ছিল; তাঁর চিত্রিত মুসলিম-চরিত্র কৃষ্ণবর্ণে রঞ্জিত নয়। সেদিন যে-ধরনের আপত্তি রবীন্দ্রনাথের বিরুদ্ধে ধ্বনিত হয়েছিল, তার প্রকৃতি ভিন্ন হলে, হয়তো আরো স্বাধীনভাবে এবং অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে তাঁর বিচার হতে পারত।

১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধের সময়ে রেডিও পাকিস্তান এবং পাকিস্তান টেলিভিশন থেকে ‘ভারতীয় উৎসে’র সাংস্কৃতিক পণ্যের প্রচার রহিত হয়। রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টিকর্ম পড়ে যায় ওই শ্রেণিতে। যুদ্ধ শেষ হলে একটু একটু করে রবীন্দ্র-সংগীত ফিরে আসতে থাকে প্রচার-মাধ্যমে। এই সময়ে, ১৯৬৭ সালের জুন মাসে, পাকিস্তানের তথ্য ও বেতার মন্ত্রী খাজা শাহাবউদ্দীন জাতীয় পরিষদকে জানান যে, রবীন্দ্রনাথের যেসব গান পাকিস্তানের আদর্শবিরোধী, বেতার ও টেলিভিশন থেকে তার প্রচার বন্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং রবীন্দ্রনাথের 888sport app গানের প্রচারও ক্রমশ হ্রাস করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর প্রতিবাদে পরদিনই উনিশজন নাগরিকের একটি বিবৃতি প্রকাশিত হয়, তাতে রবীন্দ্রনাথকে ‘বাংলাভাষী পাকিস্তানীর সাংস্কৃতিক সত্তার অবিচ্ছেদ্য অংশ’রূপে দাবি করে বলা হয় যে, ‘সরকারী নীতিনির্ধারণের সময়ে এই সত্তার গুরুত্বকে মর্যাদা দান করা অপরিহার্য’। বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন মুহাম্মদ কুদরাত-এ-খুদা, কাজী মোতাহার হোসেন, জয়নুল আবেদিন, সুফিয়া কামাল, মালিক আবদুল বারী, মুহম্মদ আবদুল হাই, মুনীর চৌধুরী, খান সারওয়ার মুরশিদ, সিকানদার আবু জাফর, মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, আহমদ শরীফ, নীলিমা ইব্রাহিম, শামসুর রাহমান, হাসান হাফিজুর রহমান, ফজল শাহাবুদ্দীন, আনিসুজ্জামান, রফিকুল ইসলাম, মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান ও শহীদুল্লা কায়সার।

অনেক সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান, ছাত্র-সংগঠন, রাজনৈতিক দল এবং বিশিষ্ট ব্যক্তি তথ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিবাদে যোগ দেন। অন্যপক্ষে সরকারি নীতির সমর্থনে এবং উনিশজন নাগরিকের বক্তব্যের বিরুদ্ধে বিবৃতি প্রদান করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, উলেমা, ছাত্র-সংগঠন ও রাজনৈতিক দল। তাঁদের অনেকের বক্তব্য ছিল এমন যে, পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার  দিন থেকেই রবীন্দ্রসংগীত নিষিদ্ধ হওয়া উচিত ছিল, কেননা রবীন্দ্রসংগীতের ভাব, ভাষা ও সুরের সঙ্গে পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের কোনো সংযোগ নেই। তাঁদের মতে, রবীন্দ্রনাথ সর্বদাই হিন্দু সংস্কৃতিকে সমুন্নত রেখেছেন; সংস্কৃতি সম্পর্কে তাঁর ধারণায় যে ভারতীয় উপাদান আছে – যেমন, ইন্দ্রিয়পরায়ণতা – তা সংস্কৃতি সম্পর্কে যথার্থ পাকিস্তানি ধারণার সম্পূর্ণ বিরোধী। রবীন্দ্রসংগীতের পক্ষে সাম্প্রতিক বিবৃতি নিয়ে ভুল ধারণার সৃষ্টি হতে পারে, এমনকি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রচারের ক্ষেত্রে তা ব্যবহৃত হতে পারে বলে তাঁরা আশঙ্কা প্রকাশ করেন।  যে-সাংস্কৃতিক বৈষম্যের ভিত্তিতে পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠা ঘটে, ওই বিবৃতিতে তা অস্বীকার করা হয়েছে বলে অভিযোগ আনেন তাঁরা।

এই বিতর্ক পূর্ব পাকিস্তানে এমন ঝড় তোলে যে সরকার এ-বিষয়ে বিবৃতিপ্রকাশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। তবে সভা-সমিতি বা অনুষ্ঠানের ওপর সরকার বাধানিষেধ আরোপ করতে পারেনি। সরকারি প্রতিষ্ঠান ইসলামিক একাডেমীর পরিচালক আবুল হাশিম রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে সরকারি নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ভূমিকা গ্রহণ করেন। সরকার-পৃষ্ঠপোষিত পাকিস্তান লেখক সংঘের পূর্বাঞ্চল শাখার সম্পাদক হাসান হাফিজুর রহমানের উদ্যোগে কিছুকাল পরে ‘মহাকবি 888sport app download for androidোৎসব’ অনুষ্ঠিত হয়। মহাকবিদের মধ্যে ছিলেন গালিব ও ইকবাল, মাইকেল মধুসূদন দত্ত ও নজরুল ইসলাম, কিন্তু অনুষ্ঠানমালার সূচনা হয়েছিল রবীন্দ্রনাথকে দিয়ে।

রবীন্দ্রসংগীত-সম্পর্কিত এই বিতর্ক শুরু হওয়ার আগেই আমি রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে পূর্ব পাকিস্তানের লেখকদের 888sport liveের একটি সংকলনের কাজে হাত দিয়েছিলাম। তথ্যমন্ত্রীর বিবৃতির পরে আমার সে-প্রয়াস অন্য মাত্রা নিলো। আমার প্রস্তাবিত লেখকদের কেউ কেউ সরকারি কর্মকর্তা হওয়ায় তাঁরা এতে লিখবার ঝুঁকি নিতে রাজি হলেন না, কিন্তু অন্য অনেকে আবার বেশ উৎসাহী হয়ে উঠলেন। পরিকল্পিত সংকলনটি সরকারি নীতির উপযুক্ত প্রতিবাদ হিসেবে গণ্য হলো। আমি জয়নুল আবেদিনকে ধরলাম বইটির জন্যে রবীন্দ্রনাথের একটি প্রতিকৃতি এঁকে দিতে। তিনি আমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, আমি কি তাঁকে প্রতিকৃতি-888sport live chatী মনে করি? বললাম, তা নয়; যে-মনোভাব নিয়ে তিনি সরকারি নীতির বিরুদ্ধে বিবৃতিতে স্বাক্ষর দিয়েছেন, সেই মনোভাব থেকেই যদি ছবিটা এঁকে দেন! তিনি আর দ্বিধা করলেন না। মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ – তখন তাঁর বয়স ৮২ – রবীন্দ্রসংগীত-বিষয়ে বিতর্ক এড়িয়ে গেছেন এ-যাবত। তাঁর কাছে যখন আমার সংকলনের জন্যে লেখা চাইলাম, তিনি বললেন, তিনি মুখে-মুখে বলে যাবেন, আমি যেন শ্রুতিলিপি নিই। একদিন তাঁর বাড়িতে, একদিন 888sport app বিশ্ববিদ্যালয় কলাভবনে তাঁর অফিসকক্ষে বসে কাজটা করলাম। পরে তিনি সংশোধন করে দিলে সংকলনের গোড়ায় সেটা ছাপলাম। যতদূর জানি, এটাই শহীদুল্লাহ্র শেষ লেখা। তিরিশজন প্রাবন্ধিকের লেখা নিয়ে রবীন্দ্রনাথ বের হলো ১৯৬৮ সালে। এর প্রকাশনা-অনুষ্ঠানে যেমন জনসমাগম হলো, পত্রপত্রিকায় তেমনি তার খবর বের হলো গুরুত্বের সঙ্গে। পরের বছরেই তো শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ঘটল গণ-অভ্যুত্থান, বাঙালি জাতীয়তাবাদের ঢেউ তুঙ্গে উঠল। সভা-সমিতিতে ‘আমার সোনার বাংলা’ গাওয়া প্রায় রেওয়াজ হয়ে দাঁড়াল।

পূর্ব পাকিস্তানে রবীন্দ্রনাথের রাজনৈতিক মাত্রা তাঁর 888sport live footballিক বা সাংস্কৃতিক মাত্রা থেকে কোনো অংশে কম ছিল না। তবে এটা মনে করা অসংগত হবে যে, রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে বিবেচনা ছিল কেবল রাজনৈতিক। রবীন্দ্রনাথের জীবন ও কর্মের নানাদিক জানার ও বোঝার আগ্রহ ছিল আন্তরিক ও গভীর। তাঁর আধ্যাত্মিকতা সম্পর্কে নতুন প্রজন্মের আগ্রহ ছিল না, কিন্তু পার্থিব জীবন ও মানবিক সম্পর্কের জটিলতা নিয়ে তাঁর বোঝাপড়ার বিষয়ে তাদের ঔৎসুক্য ছিল গভীর। তিনি যে সর্বত্র সংগতি রক্ষা করে চলেননি, তাতে তারা উদ্বিগ্ন হয়নি, কেননা তাদের কাছে তা ছিল একান্ত মানবিক। দূর থেকে তারা তাঁকে অর্ঘ দিতে চায়নি, তারা জীবনসংগ্রামে তাঁকে কাছে পেতে চেয়েছে বন্ধু ও সাথি হিসেবে।

 

888sport appsের মুক্তিযুদ্ধের সময়ে ‘আমার সোনার বাংলা’ এতই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল যে, তখন বহু জায়গায় তা অশুদ্ধ উচ্চারণে ও ভুল সুরে কিন্তু সত্যিকার আবেগ দিয়ে গাইতে শুনেছি। দেশ স্বাধীন হওয়ার প্রায় সঙ্গে সঙ্গে এর প্রথম দশ চরণ 888sport appsের জাতীয় সংগীতরূপে গৃহীত হয়। রবীন্দ্রসংগীতের জনপ্রিয়তার কারণে তা শিক্ষাদানের লক্ষ্যে নতুন নতুন প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে। 888sport apps থেকে বহু শিক্ষার্থী বিশ্বভারতীর সংগীতভবনে শিক্ষালাভ করে ফিরে আসে – তাদের কেউ কেউ রবীন্দ্রসংগীতের সর্বকালীন শ্রেষ্ঠ 888sport live chatীদের মধ্যে আসন করে নেয়। রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন-পরিষদ প্রতি বছর সম্মেলনের আয়োজন করে – তাতে রবীন্দ্রসংগীতের চর্চা দেশব্যাপী ছড়িয়ে যায়।

১৯৬৭ সালের বিতর্কের সময়ে যাঁরা স্বেচ্ছায় বা বাধ্য হয়ে সরকারের পক্ষ নিয়েছিলেন, তাঁদের কেউ কেউ এখন রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে 888sport free bet login প্রকাশ করেন যাতে প্রমাণ হয় যে, তাঁদের অন্তরটা ঠিক জায়গায়ই আছে। অন্যেরাও রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে লিখতে থাকেন এবং প্রচুর পরিমাণে। রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টিসম্ভারের প্রায় সকল দিক নিয়েই সোৎসাহ আলোচনা-গবেষণা শুরু হয়। আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের মতো তরুণ রবীন্দ্রনাথের দুর্বলতা অনুসন্ধান করতে থাকেন, আবদুল মান্নান সৈয়দ রবীন্দ্রনাথের রচনার পাঠঘনিষ্ঠ আলোচনা শুরু করেন, সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বামপন্থী দৃষ্টিভঙ্গি থেকে রবীন্দ্র-সমালোচনায় প্রবৃত্ত হন, রবীন্দ্রনাথের পূর্ববঙ্গবাস নিয়ে গবেষণা করেন আহমদ রফিক। রবীন্দ্রনাথ আমাদের সংগ্রামী চেতনার উৎস হতে পারেন কি না, তা নিয়ে সাপ্তাহিক বিচিত্রায় ধারাবাহিক আলোচনা চলে অনেকদিন ধরে। রবীন্দ্রনাথের ১২৫তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলা একাডেমী থেকে প্রকাশিত হয় আবুল হাসনাত-সম্পাদিত দুটি 888sport live-সংকলন, নানা রবীন্দ্রনাথের মালা ও রবীন্দ্রনাথ, একটি 888sport app download apkসংগ্রহ, রবীন্দ্রনাথকে নিবেদিত 888sport app download apkগুচ্ছ, এবং 888sport appsে ১৯৪৭ থেকে ১৯৮৫ পর্যন্ত রবীন্দ্রবিষয়ক রচনার গ্রন্থপঞ্জি, 888sport appsে রবীন্দ্রচর্চা। এ-সময় থেকে 888sport apps সরকার নজরুল, মধুসূদন ও লালনের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের জন্মবার্ষিকী সরকারিভাবে উদ্যাপন করতে শুরু করে।

নিজের প্রথাবিরোধী ভাবমূর্তির সঙ্গে সংগতি রেখে তখনই রবীন্দ্র-বিরোধিতায় এগিয়ে এলেন আহমদ শরীফ। ১৯৭৩ সালেই তিনি ঘোষণা করেছিলেন যে, রবীন্দ্র-888sport live football আর আমাদের অনুপ্রেরণার উৎস হতে পারে না। এখন বাংলা একাডেমীর উত্তরাধিকার পত্রিকায় ‘রবীন্দ্রোত্তর তৃতীয় প্রজন্মে রবীন্দ্র-মূল্যায়ন’ নামে একটি 888sport liveে রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে যেসব অভিযোগ তিনি তুললেন, তার তালিকা দীর্ঘ। রবীন্দ্রনাথকে গুরুদেব বা কবিগুরু বলার ঔচিত্য নিয়ে তাঁর প্রশ্নের শুরু। তারপর তিনি বলেন, রবীন্দ্রনাথ উনিশ শতকী কবি এবং বিশ শতকী বুদ্ধিজীবী, তবে তাঁর রচনায় এমন কিছু নেই যা পাশ্চাত্য চিন্তা ও সংস্কৃতিতে ছিল না; নোবেল 888sport app download bdপ্রাপকরূপে নিজের সুনাম অক্ষুণ্ন রাখতে তিনি বিশ্বজনীন মানবিক চিন্তার কথা বলেছেন; রবীন্দ্রনাথ উপনিষদের ভুল ব্যাখ্যাতা, পৌরাণিকতার মোহে আচ্ছন্ন, ব্রাহ্মমতের যথাযথ অনুধাবনে অপারগ – তিনি ব্রাহ্মদের হিন্দু আখ্যা দিয়েছেন এবং আস্থা স্থাপন করেছেন প্ল্যানচেটে; প্রাচীন পৌরাণিক ঘটনা নিয়ে এবং বৌদ্ধ, রাজপুত ও শিখ আখ্যান নিয়ে তিনি 888sport app download apk লিখেছেন, কিন্তু মুসলিম শাসক ও দরবেশ নিয়ে কিছু লেখেন নি – তাতে মনে হয়, মুসলমানদের প্রতি তিনি বিদ্বিষ্ট ছিলেন অথচ ইংরেজ শাসকদের প্রতি তাঁর অপরিমেয় অনুরাগ, গভীর আস্থা ও নিবিড় 888sport apk download apk latest version দেখা যায়; তাঁর গল্পে-888sport alternative linkে গণমানবের স্থান হয়নি, তিনি তাদের কল্যাণকামী ছিলেন না; তাঁর মনের গভীরে ছিল সামন্তবাদের প্রতি মোহ অথচ উপনিবেশে তাঁর ঘৃণা ছিল না; তিনি জমিদারি উচ্ছেদের বিরোধী ছিলেন, নিজেও ছিলেন নিপীড়ক জমিদার।

রবীন্দ্রনাথের জমিদারি সম্পর্কে আহমদ শরীফের নিন্দার – তাঁদের কোনো দানধ্যান তো ছিলই না, বরঞ্চ গ্রামবার্ত্তা-প্রকাশিকার বিবরণ-অনুসারে স্বার্থপরবশ হয়ে তাঁরা গ্রামও ধ্বংস করে দিয়েছেন – ভিত্তি ছিল তাঁর কাছে লেখা আবুল আহসান চৌধুরীর পত্র। আবুল আহসান চৌধুরী জানিয়েছিলেন যে, ওই ঘটনা সম্পর্কে তাঁর সংগৃহীত গ্রামবার্ত্তা-প্রকাশিকায় তিনি কিছু পাননি, তবে কাঙ্গাল হরিনাথের মৃত্যুর পরে 888sport live football পত্রিকায় (সনতারিখ বা 888sport free bet দেননি) তাঁর সম্পর্কে লিখতে গিয়ে অক্ষয়কুমার মৈত্রেয় এ-কথা বলেন। তাতে রবীন্দ্রনাথ এতই বিরক্ত হন যে, নাটোরের মহারাজাকে বলে অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়ের রাণী ভবানী বইটি প্রকাশের জন্যে প্রতিশ্রুত সাহায্য বন্ধ করে দেন। ঠাকুর এস্টেটের প্রজাদের ওপর কুঠির কর্মচারীদের অত্যাচারের ঘটনা উল্লেখ করে আবুল আহসান চৌধুরী আরো জানিয়েছিলেন যে, এর কিছু কিছু ঘটে রবীন্দ্রনাথেরই ইঙ্গিতে, তবে এই কথার সপক্ষে কোনো প্রমাণ তিনি দাখিল করেননি।

আহমদ শরীফের 888sport liveের ক্ষুব্ধ প্রতিবাদ করেন হায়াৎ মামুদ। উত্তরাধিকার পত্রিকার পরের 888sport free betয় একই শিরোনামের লেখায় তিনি আহমদ শরীফের রচনাটিকে রবীন্দ্রনাথের চরিত্রহননের প্রয়াস বলে অভিহিত করেন। রবীন্দ্রনাথ দানে পরাঙ্মুখ কিংবা সাম্প্রদায়িক কিংবা অত্যাচারী জমিদার ছিলেন বলে যে-দাবি করা হয়েছে, তাঁর জানা তথ্য (যদিও সেসব তথ্যের বিবরণ তিনি দেননি) তার বিপরীত সাক্ষ্য দেয়। পাশ্চাতের আটজন লেখক ও দার্শনিকের উল্লেখ করে তিনি বলেন, কারো ব্যক্তিগত জীবন ও 888sport live chatসিদ্ধি পৃথকভাবে গণ্য করা দরকার এবং এ-দুয়ের মধ্যে সৃষ্টিশীলতার প্রশ্নটিই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি এ-বিষয়ে নিঃসন্দেহ যে, রবীন্দ্রনাথ কেন মার্কসবাদী হলেন না বা সমাজপরিবর্তনের দায় স্বীকার করেন নি কেন কিংবা তাঁর রচনায় মুসলিম-চরিত্র কেন অনুপস্থিত, এসব প্রশ্ন বর্তমান প্রজন্মের জন্যে প্রাসঙ্গিক নয়। তিনি পাঠকদের মনে করিয়ে দিলেন যে, যাঁর সম্পর্কে আলোচনা করা হচ্ছে, তিনি নিজের পার্থিব ও পরিবেশগত সীমা ছাড়িয়ে একটি সংস্কৃতিকে তার শ্রেষ্ঠ রূপ দান করেছিলেন।

পত্রিকার পরের 888sport free betয় সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম লিখলেন যে, আহমদ মরীফ ও হায়াৎ মামুদ দুই চরম অবস্থান গ্রহণ করেছেন। আহমদ শরীফের মতো প্রতিষ্ঠিত গবেষক যে যাচাই না করা তথ্যের ওপর এতখানি নির্ভর করেছেন, তাতে তিনি বিস্মিত। আহমদ শরীফ তৃতীয় প্রজন্মের প্রতিনিধি নন এবং সেই প্রজন্মের কারো কথাও তিনি তুলে ধরেননি। ব্যক্তিগত জীবন নয়, 888sport live chatই হওয়া উচিত আলোচনার বিষয়। সমাজতন্ত্রী বা সমাজসংস্কারক না হওয়ায় কিংবা ভারতে মুসলিম শাসনের প্রসঙ্গ না-আনায় অথবা বিংশ শতাব্দীর মনোভাব আয়ত্ত না করায় রবীন্দ্রনাথের 888sport live footballকর্মের কী ক্ষতি হয়েছে, আহমদ শরীফ তা দেখান নি। রবীন্দ্রনাথের আবেদন পাঠকের নান্দনিক বোধের কাছে, আর 888sport live chatীর সামাজিক দায়িত্বের প্রশ্নটি তো চূড়ান্তভাবে মীমাংসিত হয়নি। তবে রবীন্দ্রনাথ গণমানবের কল্যাণকামী ছিলেন না বললে সত্যের অপলাপ হয়।

এই পর্যায়ে সম্পাদক এ-বিষয়ে আলোচনা বন্ধ করে দেন, কিন্তু আরো দীর্ঘকাল এ-নিয়ে অন্যক্ষেত্রে লেখালিখি চলে। শওকত ওসমান, খান সারওয়ার মুরশিদ, শামসুর রাহমান, হুমায়ুন আজাদ তাতে অংশগ্রহণ করেন এবং আহমদ শরীফের রচনাটিকে সৈয়দ শামসুল হক চিহ্নিত করেন ‘রবীন্দ্রনাথের জন্মের একশ পঁচিশতম বার্ষিকীতে 888sport appsে আমাদের সবচেয়ে কলঙ্কিত কাজ’ বলে।

তবে রবীন্দ্রনাথের প্রতি বিরূপতা প্রকাশের ঘটনা মাঝেমাঝেই ঘটে থাকে। ১৯৭৫ সালের পরে পাকিস্তান-আমলের কিছু প্রশ্ন নতুন করে উত্থাপিত হয় এবং রবীন্দ্র-অনুরাগীদের সমালোচনার নামে রবীন্দ্রনাথকেও আক্রমণ করা হয়। গত কয়েক বছরের মধ্যে একজন রাজনীতিবিদ বললেন, যে-দেশে তিরিশ লক্ষ লোক স্বাধীনতার জন্যে প্রাণ দেয়, সে-দেশের জাতীয় সংগীত রচনা করার মতো একজনও কি নেই যে, কোথাকার কোন রবীন্দ্রনাথের গানকে আমাদের জাতীয় সংগীত করতে হয়! কিংবা একজন সার্বক্ষণিক অধ্যাপক ও খণ্ডকালীন রাজনীতিবিদ দাবি করলেন যে, ব্রিটিশ ভারতে বঙ্গভঙ্গ-আন্দোলনের সময়ে রচিত গান 888sport appsের জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে পারে না, সুতরাং আমাদের জাতীয় সংগীত পরিবর্তন করা হোক। এসব কথার যে-ব্যাপক প্রতিবাদ হয়, তা থেকেই কিন্তু বোঝা যায় যে, সাধারণ মানুষের কাছে রবীন্দ্রনাথের আসনটি ভালোবাসা ও 888sport apk download apk latest version দিয়ে গড়া। রবীন্দ্রনাথের সার্ধশত জন্মবর্ষের প্রাক্কালে 888sport appsে তার বহুতর প্রকাশ আমরা দেখছি।

 

গ্রন্থপঞ্জি

আহমদ রফিক, 888sport appsে রবীন্দ্রনাথ (888sport app, ২০০৭)।

গোলাম মুরশিদ, রবীন্দ্রবিশ্বে পূর্ববঙ্গ / পূর্ববঙ্গে রবীন্দ্রনাথ (888sport app, ১৯৮১)।

প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়, রবীন্দ্রজীবনকথা (কলিকাতা, ১৩৬৬)।

–  রবীন্দ্রজীবনী, প্রথম খণ্ড (চতুর্থ সং; কলিকাতা, ১৩৭৭), দ্বিতীয় খণ্ড (তৃতীয় স; কলিকাতা, ১৩৮৬), তৃতীয় খণ্ড (কলিকাতা, ১৩৫১), চতুর্থ খণ্ড (কলিকাতা, ১৩৬৩)।

প্রমথনাথ বিশী, রবীন্দ্রনাথের ছোটগল্প (কলিকাতা, ১৩৬১)।

বদরুদ্দীন উমর, পূর্ব বাঙলার ভাষা-আন্দোলন ও তৎকালীন রাজনীতি, প্রথম খণ্ড (888sport app, ১৯৭০)।

ভূঁইয়া ইকবাল, 888sport appsে রবীন্দ্র-সংবর্ধনা (888sport app, ১৯৯৩)।

মনিরা কায়েস, 888sport appsে রবীন্দ্রচর্চা / মূল্যায়নের রূপান্তর (888sport app, ১৯৯৯)।

রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর, পিতৃ888sport sign up bonus (সং; কলিকাতা, ১৩৭৮)।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, ছিন্নপত্রাবলী (কলিকাতা, ১৯৬০)।

উত্তরাধিকার, চতুর্দশ বর্ষ, ২-৪ 888sport free bet (১৯৮৬)।

ছবিঃ ফরিদা জামান

(এ লেখাটি কালি ও কলমের রবীন্দ্র সার্ধজন্মশতবার্ষিকী 888sport free betয় প্রকাশিত)