কল্পাতি গণপতি সুব্রহ্মণ্যন
গত পঞ্চাশ বছরে একাধিকবার আমাকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চিত্রকর্ম সম্বন্ধে বক্তব্য রাখতে হয়েছে। সেই ১৯৬১ সালে কবিগুরুর জন্মশতবার্ষিকী থেকে এ-কাজ শুরু করি। তাঁর প্রতিষ্ঠিত ব্যতিক্রমী প্রতিষ্ঠানে শিক্ষালাভ করেছি বলেই আমার ওপর এই দায়িত্ব বর্তেছে। অবশ্য আমি আগে থেকেই স্বীকার করে নিতে চাই যে, এই বহুমুখী প্রতিভা ও ব্যক্তিত্বের কোনো দিক সম্বন্ধেই আমার অধীত পা–ত্য নেই। তাঁর 888sport live chatসৃষ্টি সম্বন্ধে আমার জ্ঞান তুলনামূলকভাবে অল্প ও সীমিত। তবে এ-কথাও স্বীকার করতে হবে যে, এই স্বল্পপরিচিতি থেকেই আমি নানাভাবে লাভবান হয়েছি। এবং আমি জানি, এই কথা শুধু আমার একার জন্য প্রযোজ্য নয়। আমার পরিচিত অনেকেই বিভিন্ন সময়ে একই কথা বলেছেন। আমার মতো অনেকের মনের নানা চিমত্মার না-ফোটা মুকুল রবিরশ্মির প্রখর আলোয় উন্মোচিত হয়েছে।
রবীন্দ্রনাথের চিত্র ও ড্রইংয়ের সমালোচনামূলক মূল্যায়নে গভীর ঝুঁকি রয়েছে। তাঁর সৃষ্টিশীলতার এই ধারাটির উন্মেষ তাঁর জীবনে বেশ দেরিতে ঘটে – তাঁর জীবনের শেষ ১৭ বছরে – এবং এই ধারাটি তাঁর সৃষ্টিশীলতার 888sport app ধারা থেকে বেশ আলাদা। সৃষ্টিশীলতার 888sport app ধারায় তিনি ছিলেন এক পরিশীলিত, আত্মসচেতন সৃষ্টিশীল মানুষ, যিনি এক পর্যায়ে তাঁর চেতনাকে দেখেছেন অন্তস্থ ‘জীবন-শক্তি’র (যাকে তিনি জীবনদেবতা বলেছেন) প্রতিচ্ছবি হিসেবে – এই শক্তি তাঁর সৃষ্টিশীল ক্ষমতায় প্রাণসঞ্চার করেছে, সেটাকে অর্থবহ ও সার্থক করে তুলেছে। কিন্তু ছবি আর ড্রইংয়ে তিনি নিজেকে উন্মুক্ত করে দিয়েছেন, কাজ করেছেন কোনো পূর্বপরিকল্পিত ধ্যান-ধারণার তোয়াক্কা না করেই, যেন অজানা সমুদ্রে পাড়ি দিয়েছেন। ১৯২৮ সালে তরুণ সুহৃৎ রাণী মহলানবীশকে এক চিঠিতে তিনি বিষয়টি ব্যাখ্যা করেন। চিত্র888sport live chatসৃষ্টিতে পূর্বপরিকল্পনার বাইরে স্বতঃস্ফূর্ত সম্ভাবনার যে-ইঙ্গিত রয়েছে, এই দিকটি কবিকে খুব আকৃষ্ট করেছে, যার ফলে শেষ পর্যন্ত তিনি দৃশ্যমান বিশ্বে নানা অবয়বের বিপুল সম্ভার প্রত্যক্ষ করতে প্রয়াসী হয়েছেন।
ফলে এই কর্মধারা কবির মনোভাবে আমূল পরিবর্তনের ইঙ্গিত বহন করে – এই পরিবর্তন ‘পদ্ধতিগত’। 888sport live chatকৃতির আর – সকল শাখায় তাঁর সৃষ্টিশীলতার কর্মধারা বাস্তব থেকে তার প্রতিফলনের দিকে অগ্রসর হয়েছে। সেই প্রতিফলন প্রক্রিয়ার সময় তিনি বাস্তবকে বিশেস্নষণ, পুনর্নির্মাণ বা পুনর্মূল্যায়ন করেছেন (যেমনটি তিনি লেখার সময় করেছেন)। চিত্র888sport live chatে কিন্তু এই প্রগমনের পরিবর্তে তিনি বিক্ষেপ্ত আঁকাআঁকির দৈবক্রমে লব্ধ সৃষ্টি থেকে বাস্তবতা সম্বন্ধে সচেতন হওয়ার মধ্যে দিয়ে তাঁর 888sport live chatসৃষ্টিকে এগিয়ে নিতে প্রয়াসী হয়েছেন। এই প্রক্রিয়া তাঁকে গভীরভাবে উৎসাহিত করেছে। এমনকি এই প্রক্রিয়ায় তিনি 888sport live chatচর্চার একটি নীতিধারা প্রত্যক্ষ করেছেন। পরের দিকে চিত্র888sport live chatী যামিনী রায়কে লেখা এক চিঠিতে তিনি এর রূপরেখা তুলে ধরেন :
বেশির ভাগ মানুষ তাদের চোখ ব্যবহার করতে জানে না, তা কাজেও লাগায় না। তারা তাদের ক্ষুদ্র কাজ নিয়ে ব্যস্ত, কোনদিকে দৃষ্টি নেই, কিছুতেই মন নেই। দৃশ্যমান বাস্তব জগৎ সরাসরি প্রত্যক্ষ করার যে আনন্দ, চিত্র888sport live chatীর কর্তব্য হলো সেটা অধিকাংশ অচেতন মানুষকে গ্রহণ করতে বাধ্য করা। চিত্র888sport live chatী গানও গায় না, নীতিকথাও বলে না। সে তার নিজের 888sport live chatকর্মকেই তার নিজের কথা বলতে দেয়, আর সেই 888sport live chatকর্মের বার্তা হলো : ‘দেখ, এই হলাম আমি – অহমহম ভো।’
ফলে তাঁর 888sport live footballকর্ম নিয়ে যেভাবে সে-কাজের উদ্দেশ্য ও পরিণতিলাভের নীতিধারা সম্বন্ধে আলোচনা ও মূল্যায়ন করা যায়, তাঁর চিত্র888sport live chat নিয়ে সেটা করা সম্ভব নয়, কারণ এই ক্ষেত্রে তিনি উদ্দেশ্য অথবা পরিণতির নীতিধারার ব্যাপারে উদাসীন। আনাড়ি ‘শৌখিন’ (অর্থাৎ যিনি শুধু ভালোবাসেন বলেই কোনো সৃষ্টিশীল কাজে হাত দেন) ব্যক্তির কাজ বলে এসব 888sport live chatকর্ম উদ্দেশ্য বা পরিণতিলাভের নীতিধারার দায়মুক্ত, এমনই তাঁর দাবি, ফলে এসব 888sport live chatকর্ম সুসংবদ্ধ বিশেস্নষণ-বিবেচনার অতীত।
অবশ্য কেউ-কেউ বলেন, রবীন্দ্রনাথ জীবনের প্রথমদিকে বৃত্তি হিসেবে চিত্র888sport live chat গ্রহণ করার কথা ভেবেছিলেন। তাঁর অন্তরঙ্গ অনুসারীদের মধ্যে অন্যতম ক্ষেতীশ রায় বলেছেন যে, তিনি রবীন্দ্রনাথের কিছু ড্রইং দেখেছেন যাতে এই মতের সমর্থন মেলে। ১৮৯৩ সালে তাঁর অল্পবয়স্কা ভ্রাতুষ্পুত্রী ইন্দিরা দেবীকে এক চিঠিতে তিনি এই আকাঙক্ষার কথা বলেন, তবে সেইসঙ্গে একথাও যোগ করেন যে, তখন তাঁর ৩২ বছর বয়স, সেটা চিত্র888sport live chatী হওয়ার কাজে হাত দেওয়ার জন্য বড্ড বেশি বয়স। তবে তাঁর আকাঙক্ষার কারণ সহজেই অনুমেয়। সে-সময় ঠাকুরবাড়িতে 888sport live chat ও 888sport live footballে পরীক্ষা-নিরীক্ষার যজ্ঞ চলছে – বাড়ির কেউ-কেউ 888sport app download apk বা নাটক লিখছেন, কেউবা গান গাইছেন, কেউ অভিনয় করছেন, কেউ ড্রইংয়ে হাত পাকাচ্ছেন, কেউ আঁকা শিখছেন, চিত্র888sport live chat সংগ্রহ করছেন, অথবা 888sport live chatী বা 888sport live chatামোদীদের সহায়তা করছেন বা বাড়িতে ডেকে আনছেন, তাঁদের সঙ্গে 888sport live chat-সংস্কৃতির নানা প্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনা করছেন। রবীন্দ্রনাথের বড়ো ভাই জ্যোতিরিন্দ্রনাথ (বয়সে তাঁর চাইতে ১৬ বছর বড়), যিনি তাঁর মানসিক পরিণতিলাভের প্রতি বিশেষ যত্নবান ছিলেন, তিনি নিজেই বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী ছিলেন। রেখাঙ্কনে অসামান্য দক্ষতা ছিল তাঁর, তাঁর আঁকা সূক্ষ্ম প্রতিকৃতিচিত্র তাঁর আশপাশে অনেককেই মুগ্ধ করেছিল, এমনকি লন্ডনে তাঁর কাজের সীমিত সংস্করণও প্রকাশিত হয়েছিল। সুতরাং এই পথটি রবীন্দ্রনাথের কাছে অনেক আগে থেকেই খোলা ছিল। কিন্তু তাঁর 888sport live footballিক যশ সবকিছু অতিক্রম করে যায়। তাঁর বয়স ত্রিশের কোঠায় থাকাকালেই তিনি বাংলা 888sport live footballজগতে প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিত্ব হয়ে গেছেন। তাঁর 888sport live footballিক রচনাসম্ভারও বিপুলভাবে সমৃদ্ধ হয়ে উঠছে। দেশের সাংস্কৃতিক পুনর্জাগরণের নানা বিষয়ে তাঁর সম্পৃক্ততাও উত্তরোত্তর বাড়ছে। এর পর ১৯১৩ সালে তিনি 888sport live footballে নোবেল 888sport app download bd পেলেন – এশিয়া মহাদেশ থেকে তিনিই প্রথম এই সম্মাননা পেলেন। এতে সারাবিশ্বে তাঁর নাম ছড়িয়ে পড়ল। তাঁর চেতনার পরিধিও আরো প্রসারিত হলো। তিনি বহু দেশ 888sport slot game করলেন, নানা আন্তর্জাতিক বিষয়ে – বিশেষ করে ক্ষয়িষ্ণু মানবিকতাবোধে আক্রান্ত বিশ্বে মানবতার অসিত্মত্ব রক্ষার বিষয়ে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। এ ছাড়া যেখানেই গেছেন, সেখানেই তিনি এই প্রতীতির আলোকে মানবস্বভাবের মূল প্রকৃতি ও মানুষের অভিজ্ঞতা সম্বন্ধে নিজের মত প্রকাশ করেছেন, মানুষের নিয়তি এবং মানুষের পূর্ণাঙ্গ উত্তরণ ও বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় শর্ত কী, সেই সম্বন্ধে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেছেন।
তবে ভারতের বর্ধিষ্ণু চিত্র888sport live chatজগৎ সম্বন্ধে তাঁর আগ্রহ অব্যাহত ছিল। সেখানে তখন তাঁর দুই প্রতিভাধর ভাইপো (বয়সে তাঁর চাইতে মাত্র কয়েক বছরের ছোট) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। তাঁর আগ্রহ এত গভীর ছিল যে, ভাইপোরা কী করছে বা করছে না, তিনি তার পুঙ্খানুপুঙ্খ খোঁজ রাখতেন, তাঁদের কাজে কোথায় সার্থকতা, কোথায় গলদ, সেটা দেখিয়ে দিতেন, এমনকি বারবার তাঁদের আত্মতুষ্ট কূপম-ূক জগৎ থেকে বেরিয়ে বাইরের পৃথিবীর দিকে চোখ মেলে চেয়ে দেখার তাগাদা দিতেন। ১৯১৬ সালে জাপানে 888sport slot gameের সময় তিনি জাপানের যেই বিষয়টি লক্ষ করে চমৎকৃত হন, তা হলো, একদিকে সেই দেশের প্রচলিত জাপানি জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সর্বব্যাপী নান্দনিক সচেতনতা, অন্যদিকে এই পরম্পরা থেকে উৎসারিত বলিষ্ঠ চিত্র888sport live chat আন্দোলন যা আধুনিক সময়ের মেজাজের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলছে। তাঁর অভিমত ছিল এই যে, জাপানি চিত্র888sport live chat-আন্দোলনের প্রাণশক্তি, মাত্রা ও শৈল্পিক গুণপনা থেকে তৎকালীন ভারতীয় চিত্র888sport live chatীদের জন্য শিক্ষণীয় অনেক কিছু ছিল। তিনি জাপানি চিত্র888sport live chatীদের উদাহরণ দিয়ে ভারতীয় 888sport live chatীদের আকুল চিঠি লিখেছেন; এমনকি জাপান থেকে তিনি কিছু ফরমায়েশি চিত্রকর্ম তৈরি করিয়ে উদাহরণ হিসেবে দেশে নিয়ে এসেছিলেন তাঁর বক্তব্য ব্যাখ্যা করার জন্য (সেসব চিত্র এখন বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগ্রহে রয়েছে।) এ ছাড়া তিনি জাপান থেকে একজন গুণী চিত্র888sport live chatী সঙ্গে নিয়ে আসেন।
জাপানে যাওয়ার আগেই তিনি কলকাতায় তাঁর বাড়িতে একটি 888sport live chat-888sport live footballের গোষ্ঠী প্রতিষ্ঠা করেন – তার নাম বিচিত্রা ক্লাব। তাঁর আশা ছিল এই গোষ্ঠী ভারতের সংস্কৃতিজগতের পুনর্জাগরণের একটি কর্মচঞ্চল প্রাণকেন্দ্র হয়ে উঠবে। এই ক্লাব আশানুরূপ বিকাশলাভে ব্যর্থ হয় এবং সেটা তাঁর জন্য গভীর মর্মপীড়ার কারণ হয়। তবে তিনি আশা ছাড়েননি। পরবর্তী চার বছরে তিনি ক্লাবের তরুণ চিত্র888sport live chatী সহযোগীদের মধ্য থেকে কিছু ব্যক্তিকে শামিত্মনিকেতনে তাঁর অনন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়ে আসতে সমর্থ হন, এবং এঁদের এমন একটি নতুন ধরনের চিত্র888sport live chat শিক্ষাক্রম চালু করতে উদ্বুদ্ধ করেন যেটা আয়তনে ও প্রভাবে আরো বড়ো হয়ে পরবর্তীকালে তাঁর দ্বারা প্রতিষ্ঠিত বিশ্বভারতীর শিক্ষাক্রমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে।
এর থেকে বোঝা যায়, রবীন্দ্রনাথ তথাকথিত পেশাদারি চিত্র888sport live chatজগতের প্রয়োজন ও আয়তন সম্বন্ধে বেশ সচেতন ছিলেন। তিনি মোটেও অশিক্ষেত-আনাড়ি ছিলেন না। বহুদেশ 888sport slot game করেছেন, স্বনামধন্য বন্ধুদের নিয়ে তাঁর বিস্তৃত সুহৃদগোষ্ঠী ছিল। যেসব দেশে গেছেন, তার 888sport live chat-সংস্কৃতিজগৎ সম্বন্ধেও তিনি যথেষ্ট ওয়াকিবহাল ছিলেন। জীবনের ছয়টি বছর তিনি যেসব দেশ 888sport slot game করেছেন, প্রাচ্য ও প্রতীচ্যের সভ্যজগতের একটা বড়ো অংশ জুড়ে তার বিস্তার। এসব স্থানে 888sport slot gameের সময় তিনি সব জায়গা থেকে 888sport live chatগুণসম্পন্ন অমূল্য উপহার পেয়েছিলেন, এবং বইয়ের একটা বড়ো সংগ্রহও পেয়েছিলেন – যেসব বইয়ে বিশ্বব্যাপী চিত্র888sport live chat ও সে-সম্বন্ধে চিমত্মাভাবনার সকল দিক নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সে-সময়ে বিশ্ব যেসব প্রশ্ন নিয়ে বিশেষভাবে আন্দোলিত হচ্ছিল, তা নিয়ে তিনি নানা জায়গায় বক্তৃতা দিয়েছেন – এর মধ্যে বিশ্বায়িত পৃথিবীতে শৈল্পিক সৃষ্টিশীলতার বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত ছিল।
গভীরভাবে পরিশীলিত এই লেখক ও চিমত্মাবিদ 888sport live footballের প্রতিটি শাখায় কিছু-না-কিছু কাজ রেখে গেছেন। তাঁর দুই সহস্রাধিক গান বাংলা সংগীতে তাঁর জন্য চিরস্থায়ী আসন রচনা করেছে এবং সে-গানে মানুষের নিজেকে জানার ও প্রকৃতির নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার মর্মস্পর্শী বিবরণ বিধৃত। তিনি অত্যন্ত বাঙ্ময় সব নাটক লিখেছেন, যা শোষক ও অত্যাচারী শক্তির বিরুদ্ধে মানুষের মুক্তির সংগ্রামের কথা বলেছে, এবং সেসব নাটকের অভিনব মঞ্চায়ন করেছেন। এই সব ধরনের 888sport live chatচর্চায় এমন একজন মানুষকে আমরা পাই যিনি তাঁর অভীষ্টের ব্যাপারে নিশ্চিত, বিভিন্ন মাধ্যমের ওপর যাঁর বুদ্ধিদীপ্ত দখল রয়েছে, এবং যাঁর 888sport live chatবোধের আন্দাজ গভীর। এই মানুষ কেন তাঁর জীবনের শেষ ১৭ বছর কাটাকুটি-আঁকাআঁকির নেশায় বুঁদ হয়ে এতটা সময় অতিবাহিত করলেন? এ যে তাঁর নেশা ছিল সেটা তর্কাতীত; তিনি তাঁর খাতায়, তাঁর চিঠি লেখার প্যাডে, বাড়িতে লেখার ডেস্কে, জাহাজে 888sport slot gameের সময় কেবিনের টেবিলে – সর্বত্র আঁকতেন। তাঁর ভ্রাতুষ্পুত্র চিত্র888sport live chatী অবনীন্দ্রনাথ একে আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের সঙ্গে তুলনা করেছেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, ওই কয়েক বছরে তিনি ২০০০-এর বেশি চিত্রকর্ম সৃষ্টি করেন। এ-কাজে তিনি নির্ভর করেন তাঁর সহজাত প্রবণতা ও 888sport live chatচেতনার ওপর – প্রয়োজনীয় অঙ্কনদক্ষতা অর্জনের কোনো সুসংবদ্ধ প্রচেষ্টা তিনি পরিহার করেছেন। স্থায়িত্ব সংশয়াতীত নয়, এমন কালি বা রং ব্যবহার করে নানা অপ্রচলিত মাধ্যমে এই যে তিনি নেশাগ্রসেত্মর মতো আঁকার কাজে মত্ত হলেন, এটাই তো আশ্চর্য ব্যাপার। কারণ চরিত্রগতভাবে তাঁর স্বভাব এমন ছিল যে, তিনি মুখভঙ্গি, কথাবার্তা, বাড়ির ভেতর-বাইরে চালচলন সকল ক্ষেত্রে নিয়ম ও পরিশীলিত রুচির খুব গুরুত্ব দিতেন। তাঁর হাতের লেখা তো প্রায় উচ্চাঙ্গের চারুলিপির সমপর্যায়ভুক্ত। অদ্ভুত ব্যাপার হলো, তাঁর বার্ধক্যের এই স্বভাববিরুদ্ধ 888sport live chatচর্চাও নিয়ম ও পরিশীলনের প্রতি গভীর অনুরাগ থেকে উৎসারিত।
১৯২৪ সালে রবীন্দ্রনাথ পেরুর উদ্দেশে সমুদ্রপথে যাত্রা শুরু করেন, কিন্তু অসুস্থতার কারণে তাঁকে বুয়েনোস আয়রেসে (Buenos Aires) থামতে হয়। সেখানে তিনি তাঁর অনুরাগী আর্জেন্টিনার কবি ভিক্টোরিয়া ওকাম্পোর আতিথ্য গ্রহণ করেন। সেখানে থাকাকালে তিনি একটি খাতায় একগুচ্ছ 888sport app download apk নিয়ে কাজ করেন। (পরে সেসব 888sport app download apk ‘পূরবী খাতা’ হিসেবে অভিহিত হয়, এবং সে-888sport app download apkগুলো ‘পূরবী’ নামে প্রকাশিত হয়।) এই খাতায় তিনি প্রাথমিক খসড়া রচনায় কিছু সংশোধন করেন, কিছু লাইন কেটে দেন, কোথাও-কোথাও নতুন সংযোজন করেন; তাঁর খুঁতখুঁতে স্বভাবের কারণে এই অবিন্যস্ত সংশোধন তাঁকে পীড়া দেয়। তখন তিনি আরো কিছু রেখার মায়াজালে সেই অবিন্যস্ত পাতাকে অলংকৃত করে তোলেন, ঠিক যেভাবে একজন সেলাই888sport live chatী সেলাইয়ের কোনো অসুন্দর মেরামতি বা জোড়ার কাজ বাড়তি সূচিকর্ম দিয়ে আড়াল করার চেষ্টা করে। তাঁর নিজের ভাষায় খাতার এই প্রাথমিক সংশোধন ‘পাপীর উদ্ধারলাভের আকুতি নিয়ে আর্তনাদ করে ওঠে’ এবং তাঁকে সাড়া দিতে বাধ্য করে। তাঁর প্রচেষ্টার ফলে এসব অবিন্যস্ত সংশোধন-জড়ানো লতাপাতাসদৃশ গতিময় রৈখিক আনাগোনার রূপ নেয়; এর থেকে জন্ম নেয় 888sport app আকৃতির অবয়ব। এসব তাঁর ভাষায় ‘স্বাভাবিক রৈখিক বাছাই প্রক্রিয়া’ অনুসরণ করে নানা অবয়ব সৃষ্টি করেছে – পাখি, জন্তু-জানোয়ার, মানবদেহের 888sport live chatায়িত চিত্ররূপ, কিংবা এসবের সম্মিলিত চিত্র। এই কাজকে তিনি ব্যাখ্যা করেছেন তাঁর সহজাত ছন্দবোধের স্বাভাবিক বহিঃপ্রকাশ হিসেবে। তিনি বলেছেন : ‘আমি গভীর আগ্রহ নিয়ে লক্ষ্য করি আমার আঁকা রেখাগুলো নানা ছন্দঃস্পন্দে পরস্পর যুক্ত হয়ে প্রাণ পায়, তাদের স্বভাব তৈরি হয়, আর তারা নানা আকারে-ইঙ্গিতে পরস্পরের সাথে কথা বলে।’ এখান থেকে তিনি নতুন-নতুন আবিষ্কার আর সৃষ্টির দিকে অগ্রসর হয়েছেন, সেখান থেকে রাশি-রাশি মিশ্র রেখাচিত্রের সৃষ্টি হয়েছে, যার সঙ্গে আদিম নৃতাত্ত্বিক নিদর্শনের সাদৃশ্য রয়েছে। সেখানে জীবের সঙ্গে জড়ের যোগ ঘটেছে, মানবসদৃশ গুণাবলির সঙ্গে মিলেছে জান্তব গুণাবলি – পাত্র-পাখি, সারস-জলপাত্র, কচ্ছপ-চৌকি, সর্প-পানপাত্র, পাষাণ-মুখচ্ছবি, বীজ-মুখ, কাঠি-মূর্তি, প্রস্তর-মূর্তি, এ-ধরনের কত-না সৃষ্টি। কিন্তু এ তো সবে শুরু। তাঁর আঁকার বিষয়বস্ত্ত আরো বিস্তৃত হলো; তার কিছুটা তাঁর অবচেতন থেকে উৎসারিত, কোনোটার উৎস আগে-দেখা শৌখিন 888sport live chatসামগ্রীর ঝাপসা 888sport sign up bonus। তাঁর পরিপার্শ্ব – বস্ত্ত, মানুষ, প্রাকৃতিক দৃশ্য – এসবের পর্যবেক্ষণলব্ধ উপলব্ধি প্রতিক্ষেত্রে তাঁর পরিশীলিত বোধে সমৃদ্ধ হয়ে নবরূপে নতুন প্রাণশক্তিতে উজ্জীবিত হয়ে প্রকাশিত হয়েছে, কখনো আলাদা-আলাদা চিত্রে, কখনো নজরকাড়া চিত্রগুচ্ছ হিসেবে। চিত্র888sport live chatের ইতিহাসবিদ পৃথ্বীশ নিয়োগী রবীন্দ্রনাথের জন্মশতবার্ষিকীর বছরে লন্ডনের গ্যানিমিড প্রেস (Ganymed Press) থেকে তাঁর চিত্র888sport live chatের কোলোটাইপ মুদ্রণে ছাপা সংকলন প্রকাশনার তত্ত্বাবধান করেছিলেন। এ-কাজ করতে তাঁকে যে বিপুল পরিমাণ চিত্রকর্ম ঘাঁটতে হয়েছে তিনি তার এক বিশদ তালিকা দিয়েছেন। এতে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে প্রাণবন্ত রঙের ফিতা, ফুল-পাখির যুগ্মচিত্র, আদিম জীবজন্তু, শেস্নষময় দুষ্টুস্বভাবের চরিত্র, শারীরিক কসরতরত সরীসৃপ, বিশালাকৃতির যান, মায়াময় স্বপ্নিল বাড়ি, অতিকারুকার্যময় আসবাবে উপবিষ্ট অদ্ভুত নগ্নমূর্তি, চন্দ্রাকৃতি মুখম-লের মোহিনী চোখের মেয়ে, রুদ্র বা নিমগ্ন মেজাজের নাটকীয় দৃশ্যাবলি (এসব তাঁরই বর্ণনা) – এ এক অবিশ্বাস্য বিচিত্ররূপিণী মিছিল। এসব তাঁর চিত্রকে বৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ করেছে বলে ধরে নেওয়া সমীচীন। একদিকে তাঁর অবচেতন থেকে ছবিগুলো উঠে এসেছে, অন্যদিকে নানা সাংস্কৃতিক পরিম-লের সঙ্গে তাঁর যে নিবিড় সান্নিধ্য ঘটেছিল, তাঁর নাটক-888sport app download apk থেকে যেসব বিষয়বস্ত্ত উঠে এসেছে, উপরন্তু তার আশপাশের যেসব নানা জিনিস তাঁর দৃষ্টিকে উজ্জীবিত করেছে, তাঁর চিত্র সেগুলোকেও ধারণ করেছে। ১৯২৪ সালের পর থেকে (অর্থাৎ যে-সময়ে তিনি প্রাথমিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর্যায় অতিক্রম করে এসেছেন) ইত্যাকার গুণ তাঁর কাজের পাশাপাশি উপস্থিত। ১৯৩০ সালে প্যারিসের গ্যালারি পিগ্যালে তাঁর চিত্রকর্মের যে প্রথম বড়ো প্রদর্শনী হয় (এতে বিভিন্ন ধরন ও মাপের প্রায় ৪০০ চিত্রকর্ম স্থান পায়), তাতে এই বৈচিত্র্য পরিলক্ষেত হয়। তাঁর 888sport sign up bonusর বারান্দা দিয়ে যেন নানা রকমের অবয়ব ফল্গুধারার মতো বেরিয়ে এসেছিল, সেসবে সাড়া দিয়ে বা পরিবর্ধন করে তিনি যা সৃষ্টি করেছিলেন, তা-ই প্রদর্শনীতে উঠে এসেছে। এর সবটাই তাঁর অনন্য সৃষ্টি। ১৯২৪ সালে তিনি লিখেছিলেন : ‘অনেক কিছুর 888sport sign up bonusই আমার চেতনার উপরিভাগ থেকে হারিয়ে যায়। ওরা যেন মূল মঞ্চ ছেড়ে নিচের গ্রীনরুমে চলে যায়, সেখানে তারা তাদের চরিত্র ও বেশভূষা ইচ্ছামতো পালটাতে পারে। আমার স্রষ্টা আমার মনটা রঙ্গমঞ্চ হিসেবেই বানিয়েছেন, জাদুঘর হিসেবে নয়।’ এখানে তিনি বলতে চেয়েছেন যে, মঞ্চের অভিনেতাদের মতো তাঁর চিত্রের উৎস যে-888sport sign up bonusমালা, তারও অনবরত ক্রমরূপান্তর ঘটছে। যত সময় গেছে রঙ্গমঞ্চের এই ধারণাটা আরো তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বিষয়টি আরেকটু ব্যাখ্যা করার জন্য আমার পূর্বোলিস্নখিত একটা নিবন্ধ থেকে খানিকটা উদ্ধৃতি দিচ্ছি :
শুরুতে তাঁর অঙ্কিত অধিকাংশ জীব-জন্তু যেন এক পাতাল জগতের বাসিন্দা। তাদের শরীরের নড়াচড়া ছিল অবিন্যস্ত, তাঁর পাখিরা যেন রুচি ও সৌষ্ঠবের খ-চিত্র, তাঁর আঁকা মানবমূর্তি নীরব অথচ চঞ্চল, বা যেন কোনো অজ্ঞাত মূকাভিনয়ে অংশ নিচ্ছে। সময়ের সাথে সাথে তাঁর অঙ্কনশৈলীর বিকাশের সাথে সাথে এইসব রূপ নতুন মাত্রা নিচ্ছে, যেন নিজস্ব ভাষালাভ করছে, এবং বাস্তব বা কল্পিত জীবনের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করছে। জন্তুগুলি ডেকে উঠছে, হুড়োহুড়ি করছে বা দুষ্টুমি করছে; মানব চেহারাগুলো যেন নতুন, নিজস্ব চরিত্র গ্রহণ করছে। ওই মুখকালো করা ভাবনাজাগানো মুখটি কি নতুন বৌঠানের? ওই ভুতুড়ে চেহারার মুখগুলো কি রান্নাঘরের পাচকদের চেহারা, বা ওই বিষণ্ণ ভাবলেশহীন বিস্ফারিত-চক্ষু 888sport promo codeমুখ কি অন্দরমহলের পরিচারিকাদের চিত্র? খোঁচা-খোঁচা দাড়িওয়ালা লোকগুলো বা গাঁট্টাগোঁট্টা 888sport promo code-পুরুষ, এরা কি তাঁর প্রাত্যহিক জীবনের আশেপাশের লোক? তাঁর চিত্রমালার মধ্যে একটি অপূর্ব স্কেচ রয়েছে – যাকে ঠাট্টা করে তিনি নাম দিয়েছেন ‘সত্ত্ব-রজঃ-তমঃ’, সেখানে দুই শয়তানি-ভরা খিটখিটে বৃদ্ধা (মার-এর কন্যা?) মধ্যবর্তী এক নির্লিপ্ত (নাকি করুণ?) বুদ্ধমূর্তি নিয়ে বচসায় মত্ত; এখানে কি কোনো ব্যক্তিগত সংকটের আভাস দেওয়া হয়েছে? এসবই নিঃসন্দেহে আমাদের আন্দাজ। তবে তাঁর আঁকা মুখ ও দেহের চিত্রগুলোর যে সুস্পষ্ট নিজস্ব চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে, সেকথা তর্কাতীত; সেটা কাকতালীয় না ইচ্ছাকৃত, তা আমরা জানি না।
এই ব্যাপারটাই আমাদের আকৃষ্ট করে, আমাদের সারাক্ষণ ধাঁধায় রাখে, তাঁর অঙ্কনশৈলীর সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও আমাদের মনোযোগ ধরে রাখে। এই ব্যাপারটি দেশের ভেতরে আর বাইরে অনেকের বেলায়ই ঘটেছে। এই প্রসঙ্গে গত আট দশকে তাঁর চিত্র888sport live chatের প্রতি মানুষের প্রতিক্রিয়ার বিচিত্র ওঠানামা নিয়ে খানিকটা আলোচনা করা যাক।
তাঁর ছবির ব্যাপারে রবীন্দ্রনাথের নিজের প্রতিক্রিয়া বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রকম ছিল। প্রথম দিকে তিনি এ-বিষয়ে বেশ সংকোচ প্রকাশ করেছেন। অঙ্কন888sport live chatে কখনোই তিনি কোনো দখল দাবি করেন নাই। একটা বিষয়েই তিনি নিজের কিছুটা দখল রয়েছে বলে দাবি করতে পারতেন – তা হলো কথা ও ধ্বনির ছন্দ সম্বন্ধে তাঁর একটি সহজাত, সূক্ষ্মবোধ। অর্থাৎ তিনি যে জনসাধারণকে তাঁর চিত্রকর্ম দেখাতে সাহসী হয়েছিলেন, সেই সাহস একজন আনাড়ি বা বেখেয়াল ব্যক্তির সাহস। পরে প্যারিসের গ্যালারি পিগ্যালে (Gallerie Pigalle) তাঁর চিত্রপ্রদর্শনী যখন বিপুলভাবে সংবর্ধিত হলো, তখন তিনি তাঁর পুত্রবধূ (এবং আরো অনেককে) লিখতে প্রবৃত্ত হলেন যে, কবি হিসেবে রবি যদি-বা খানিকটা মেঘাচ্ছন্ন, চিত্র888sport live chatী হিসেবে সে দেদীপ্যমান। এর কিছুদিনের মধ্যেই জার্মানিতে তাঁর চিত্রকর্ম প্রদর্শনী হলো ও ভূয়সী প্রশংসালাভ করল, তাতে তাঁর আত্মবিশ্বাস অনেকটা বেড়ে গেল, যার বহিঃপ্রকাশ দেখতে পাই কিছুদিন পর তাঁর লন্ডনের ইন্ডিয়া সোসাইটিতে প্রদত্ত অভিভাষণে। মস্কোতে তাঁকে একজন বড়োমাপের চিত্র888sport live chatী হিসেবে স্বাগত জানিয়ে তাঁর চিত্রকর্মকে যে-সংবর্ধনা দেওয়া হলো সেটা যখন এর আগের সব সংবর্ধনাকে ছাড়িয়ে গেল, তখন তিনি কিছুদিন পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে আর এ-কথা বলতে দ্বিধা করলেন না যে, সেখানে তিনি কবি বা দার্শনিক হিসেবে নয়, একজন চিত্র888sport live chatী হিসেবেই এসেছেন। তাঁর আশা ছিল, যে-দেশের মানুষের চিমত্মাভাবনায় মনের উদারতার সুনাম রয়েছে সেখানে হয়তো তিনি খানিকটা আর্থিক সাফল্যও লাভ করতে পারবেন, তাতে তাঁর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আর্থিক দুর্গতি লাঘব হবে, এমনকি দেশে ফিরে তিনি নিজের জন্য একটা ছবি আঁকার স্টুডিও তৈরি করতে পারবেন। কয়েক মাসেই তাঁর নিজের সম্বন্ধে ধারণা পালটে গেল – নিজেকে ভাবতেন ভীরু আনাড়ি, এখন হয়ে গেলেন এমন একজন আত্মবিশ্বাসী 888sport live chatী, যিনি বিশ্বের দরবারে অন্যদের সঙ্গে সমকক্ষ হিসেবে তাল রেখে চলতে পারেন। এই অবস্থায় তিনি দেশে দর্শকের মান সম্বন্ধে বিরূপ মন্তব্য করেন এবং দেশে ফিরে সেখানে তাঁর ছবি দেখানোর ব্যাপারে অনীহা প্রকাশ করেন। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে তিনি আশানুরূপ সাড়া পেলেন না, আশা-আনন্দের যে রঙিন ফানুস গত পাঁচ মাসে ফুলে-ফেঁপে উঠেছিল তা মুহূর্তেই চুপসে গেল। এরপর ১৯৩৮ সালে লন্ডন ছাড়া তাঁর জীবদ্দশায় তাঁর চিত্রকর্ম আর পাশ্চাত্যে প্রদর্শিত হয়নি।
রবীন্দ্রনাথ কিন্তু জীবনের শেষাবধি ছবি এঁকে গেছেন। শুরুতে পশ্চিমের স্ত্ততি তাঁকে খানিকটা উৎসাহিত করে থাকলেও পরের দিককার উপেক্ষা বা বিরূপ সমালোচনা তাঁকে দমাতে বা থামাতে পারেনি। তাঁর ছবি আঁকার তাগিদ অটুট ছিল। তাঁর ছবি তাঁর সঙ্গে দৃশ্যমান জগতের সম্পর্ক রক্ষা করত, জগতের সজীবতা আর রহস্যময়তার জয়গান গাইত; ঠিক একই কাজ যেমন তিনি ভিন্ন মাত্রায় তাঁর 888sport app download apk আর গানে করেছেন। রাণী চন্দকে তিনি বলেছেন :
আমি যখন ছবি আঁকতে শুরু করি তখন নিজের মধ্যে একটা পরিবর্তন লক্ষ্য করলাম। গাছ ও তার শাখা আর লতাপাতায় আমি নানারকমের অদ্ভুত জীব-জন্তুর মূর্তি দেখতে শুরু করলাম। এসব আমি আগে কখনো দেখিনি। আগে দেখতাম এই বসন্ত এল, শাখায়-শাখায় ফুল ফুটে উঠছে – এই ধরনের জিনিস। দৃশ্য জগতের এই ঐশ্বর্য মানুষের চারপাশে ছড়ান রয়েছে। যখন তুমি কিছু দেখে ‘বাহ’ বলে ওঠ তখন সেটা তার সৌন্দর্য দেখে নয়, চোখের সামনে তার দৃশ্যমান উপস্থিতিতে তোমার উল্লাস। এইসব আমাদের দৃষ্টির ভা-ার পূর্ণ করে। যা কখনো দেখিনি, সেটা যখন দেখি, তখন আমাদের মন বিস্ময়ে অভিভূত হয়। তাই তো কোনো কিছু দেখাতেই এত আনন্দ।
আগের একটা চিঠিতে তিনি বলেছেন যে, একেবারে শৈশব থেকেই দৃশ্যমান তথ্য তাঁকে মোহিত করত। তবে সেদিকে তিনি আর অগ্রসর হননি, কারণ তিনি যাকে ‘ভাবে ও কর্মে নিজেকে প্রকাশ করা’ বলে অভিহিত করেছেন, সেই কাজে নিজেকে উৎসর্গ করেছেন। কিন্তু বয়সের ভার যখন বাড়ল আর জীবনীশক্তি হ্রাস পাওয়ার সঙ্গে-সঙ্গে ‘ক্লামিত্মর ধূসর গোধূলি’ তাঁকে কাবু করে ফেলল, তখন তিনি ‘নিজেকে ছুটি দিতে চাইলেন’ :
ঠিক এই সময়ে আমার কর্মকা–র কোন এক ছিদ্রপথে আঁকা ও ড্রয়িং-এর প্রচ- নেশা প্রবেশ করলো – এইসব সৃষ্টি ভাল কি মন্দ সেটা অবান্তর। আসল কথা হলো এই সব বর্ণ আর রেখা থেকে কোন একটা অবয়ব সৃষ্টি হয়েছে। নাই-বা থাকলো তার কোন নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য। আমি বিন্দুমাত্র আশা করি না এইসব সৃষ্টি আমার জন্য কোন 888sport app download bd বা যশ বয়ে আনবে – তবুও এই অবয়ব আবিষ্কারের খেলার যে নেশা, সেটা রয়েই যায়। আমার জীবন পুরো বৃত্ত ঘুরে আবার সেই বেপরোয়া বাল্যকালে চলে এসেছে যখন আমার চোখ অবয়বের জগতের জন্য উদগ্রীব হয়ে উঠতো, আর আমি, এক ছোট্ট বালক, নিজের খেলনার জগতে মশগুল হতাম।
তাঁর জীবনের পরের দিকে রবীন্দ্রনাথ নিজের মধ্যে এবং তাঁর পরিপার্শ্বে যে পরিবর্তন ঘটছিল সেই সম্বন্ধে গভীরভাবে সচেতন ছিলেন মনে হয়। 888sport live football, সংগীত, চিত্র888sport live chat – সৃষ্টিশীলতার বিভিন্ন রূপের মধ্যে কোনটা তুলনামূলকভাবে কতদিন টিকবে, সেটা নিয়ে তিনি জল্পনা-কল্পনা শুরু করলেন। 888sport live footballে নিজের অভিজ্ঞতা বিধৃত করতে গেলে একটা নির্দিষ্ট যুগের ভাষা ও ভাবনাচিমত্মার ওপর নির্ভর করতে হয় বলে 888sport live football তাড়াতাড়ি সেকেলে হয়ে যায়; যতই সময় যায়, 888sport live footballসৃষ্টি অস্বচ্ছ ও দূরবর্তী হতে থাকে। গান আর সংগীত আমাদের শ্রম্নতির সহজাত অনুভূতির সঙ্গে জড়িত বলেই বোধহয় টেকেও বেশিদিন, আর অত সহজে সেকেলে হয় না। তবে দৃশ্যমান 888sport live chatকর্ম যেহেতু আমরা যা দেখি তার সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত বা তার কথা মনে করিয়ে দেয়, তাই সেই 888sport live chatের স্থায়িত্বের সম্ভাবনা তাঁর কাছে বেশি মনে হয়।
হয়তো এ-বিষয়ে তাঁর ভাবনা পুরোপুরি সঠিক ছিল না। সন্দেহ নেই, ভাষায় প্রকাশিত সৃষ্টি প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা থেকে একধাপ দূরবর্তী এবং 888sport app download apk latest version করলে আরো দূরবর্তী হয়ে যায়, এবং ধ্বনি আর দৃষ্টি আরো প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা। কিন্তু পাঠক, শ্রোতা বা দর্শক কতটুকু রস গ্রহণ করতে পারবেন, সেটা নির্ভর করে তাঁর সহজাত বা চর্চিত বোধশক্তির ওপর, এবং ওই 888sport live chatসৃষ্টির সঙ্গে পরিচিতির মাত্রার ওপর। কাজেই ব্যাপারটা এত সরল নয়। তবে ১৯৪০-এর দিকে চিত্র888sport live chat মহলে একটা ধারণা তৈরি হয় যে, আরো আন্তর্জাতিক যোগাযোগের ফলে একটা প্রমিত বিশ্বজনীন (আজকের যুগে যাকে ‘আন্তর্জাতিক’ বলা হয়) চিত্র888sport live chatের মান তৈরি হবে। রবীন্দ্রনাথ সারাবিশ্ব চষে বেড়িয়েছেন, সুতরাং এরকম ভাবনায় তাঁর প্রভাবিত হওয়ার কথা। সে যা-ই হোক, চিত্র888sport live chatী হিসেবে তাঁর আত্মবিশ্বাস তুঙ্গে থাকা অবস্থাতেও তিনি তাঁর ছবিকে তাঁর লেখা বা গানের সমান উচ্চাসনে বসাতে রাজি ছিলেন কি না সন্দেহ। বরঞ্চ যেটা আরো বিশ্বাস্য, তা হলো যে তাঁর ‘সৃষ্টিশীলতার ঐক্য’ তত্ত্বের অনুসরণে তিনি ঈশ্বরদত্ত সকল সুকুমারবৃত্তিসুলভ গুণ সাধ্যমতো পূর্ণাঙ্গভাবে বিকশিত করতে প্রয়াসী হয়েছেন, এবং এর মধ্যে আঁকার আগ্রহও অন্তর্ভুক্ত।
জুলাই ১৯৩৯-এ তাই তাঁর রাণী চন্দকে বলার সৎসাহস ছিল : ‘তুমি জান আমি চিত্র888sport live chatী নই। যাই আঁকি না জেনেশুনেই আঁকি। ভেবেচিমেত্ম আঁকা বা কোনো সুনির্দিষ্ট রূপ দেবার অভিপ্রায়ে সচেতনভাবে আঁকা আমার পক্ষে অসম্ভব। আমার কাজে নানা ইতস্তত আঁকাআঁকি থেকে কোনো এক পর্যায়ে একটা অবযব রূপ ধারণ করে। এমন লোককে কি 888sport live chatী বলা চলে?’ নিশ্চয়ই বলা চলে, যদি এই কথা আমরা মনে রাখি যে, এই 888sport live chatী সুসংবদ্ধ কোনোরকম ‘খোঁজ’ ছাড়াই ‘পাওয়ার’ আশায় আঁকেন, ফলে তাঁর প্রাপ্তিতে ভালোমন্দের বেশ বড়ো হেরফের রয়েছে।
পাশ্চাত্যে রবীন্দ্রনাথের ছবির প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া কী হয়েছিল, সেটা তৎকালীন পাশ্চাত্যের চিত্র888sport live chat মহলের পরিস্থিতির আলোকে বিচার করতে হবে। সেখানে তখন দস্ত্তরমতো একটা বিপ্লব ঘটে যাচ্ছে। চিত্র888sport live chatের প্রকৃতি কী – তার প্রেরণা, উদ্দেশ্য, এমনকি সেটা হৃদয়ঙ্গম করার প্রক্রিয়া – এই সবকিছুর প্রচলিত ধ্যান-ধারণা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছিল। বাস্তবতার প্রতি নিষ্ঠা আর প্রশ্নাতীত থাকল না। আবির্ভাব ঘটল নানা বিকল্প কল্পরূপের, যা 888sport live chatীর ব্যক্তিগত অনুভবজাত প্রবণতা থেকে উদ্ভূত বা বাস্তব জগতের প্রতি তাঁর নানা প্রতিক্রিয়া থেকে উৎসারিত। এর মধ্যে কিছু প্রবণতা, বিশেষ করে জার্মান এক্সপ্রেশনিস্টদের আবেগাশ্রয়ী 888sport live chatকর্মের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের স্বতঃস্ফূর্ত চিত্র888sport live chatের মূল্যবোধের একটা যোগসূত্র ছিল। কিন্তু রবীন্দ্রনাথের চিত্র888sport live chatকর্ম তাঁদের 888sport live chatকৃতির যুক্তিধারা থেকে স্বতন্ত্র ছিল, রবীন্দ্রনাথের চিত্র888sport live chatের ভিত্তি আরো সরল ছিল – এই চিত্র888sport live chatের উৎস জন্মসূত্রে পাওয়া এক অস্বচ্ছ আকুতি, সেটা কোনো প্রচলিত ধ্যান-ধারণা থেকে উঠে আসেনি। সমালোচকরা সবাই এ-কথা জানতেন; তাঁর চিত্রকর্মের তারিফ করার সময়ও তাঁরা দূরত্ব বজায় রেখেছেন – তাঁদের জোর দিয়েছেন একজন প্রতিষ্ঠিত 888sport live footballিক ও চিমত্মাবিদের অন্য কোনো এক 888sport live chatে অসামান্য প্রতিভার ওপর, এবং সমসাময়িক কিছু চিত্র888sport live chatীর কাজের সঙ্গে তাঁর কাজের সাদৃশ্যের ওপর। তবে তাঁদের প্রতিক্রিয়ার গুরুত্ব কতখানি, সে-কথা বলা শক্ত। ওঁর বার্লিনে প্রদর্শনী নিয়ে ব্যাপকভাবে পত্রিকায় লেখালিখি হয়েছিল। সেখানকার জাতীয় গ্যালারি তাঁর কিছু 888sport live chatকর্ম ক্রয় করার আগ্রহ প্রকাশ করেছিল, কিন্তু প্রয়োজনীয় অর্থ জোগাড় করতে পারেনি। ওদের আগ্রহ রবীন্দ্রনাথের হৃদয় স্পর্শ করে, তিনি সেসব চিত্রকর্ম গ্যালারিকে দান করেন। কিন্তু কিছুদিন আগে তার খোঁজ করেও কোনো হদিস পাওয়া যায়নি, এবং তাদের নথিপত্রে কোথাও রবীন্দ্রনাথের এই উপহারের কোনো উলেস্নখ পাওয়া যায় না। যুক্তরাষ্ট্রে রবীন্দ্রনাথের চিত্রপ্রদর্শনী উদ্বোধন করেন আনন্দ কুমারস্বামী ও স্টেলা ক্রামরিশ (Stella Kramrisch)। রবীন্দ্রনাথের খুব আশা ছিল, প্রদর্শনী ভালো সাড়া পাবে, কিন্তু সাড়া মোটেও ভালো ছিল না, অংশত দেশে জালিয়ানওয়ালাবাগে গণহত্যার বিপক্ষে তাঁর অনড় অবস্থানের জন্য। বিলেতে প্রতিক্রিয়া বরাবরই মিশ্র। ১৯৩০ সালে বার্মিংহামের চিত্রপ্রদর্শনী ইতিবাচক সাড়া পায়, কিন্তু একজন সমালোচক কেইন্স স্মিথ (Kaines Smith) লেখেন : ‘রবীন্দ্রনাথের ড্রয়িং-এর বিচারে চিত্র888sport live chat সমালোচনার স্বাভাবিক মানদ- ব্যবহার করা অসম্ভব। এই ড্রয়িংগুচ্ছ দেখে ভারি আনন্দ হয়, তথাপি এ-কথাও সত্যি রূপসৃষ্টির যে-বীজ থেকে চিত্র888sport live chatীর যাত্রা শুরু হয়েছে, সেটা নেহায়েতই কাকতালীয়ভাবে লব্ধ।’ বিলেতের চিত্র888sport live chatামোদী মহল বরাবরই প্রচলিত ধ্যান-ধারণার প্রতি অনুগত এবং রৈখিক অঙ্কনশৈলীর ওপর খুব গুরুত্ব দিয়ে থাকে। ইউরোপীয় মূল ভূখ–র সমসাময়িক চিত্রামোদীদের মতো ওরা অতটা গতানুগতিকতার বাইরে যেতে আগ্রহী ছিল না। ১৯৮৬ সালে যখন লন্ডনের টেগোর সোসাইটি স্থানীয় কিছু ভারতপ্রেমীর সহায়তায় রবীন্দ্রনাথের ১২৫তম জন্মবার্ষিকী উদ্যাপন করে, তখন বার্বিকান (Barbican) গ্যালারিতে তাঁর চিত্রকর্মের এক বিশাল প্রদর্শনী আয়োজিত হয়। পত্রিকায় তার সমালোচনা বের হয়। সানডে টাইমস (Sunday Times) পত্রিকায় মারি ভেইজি (Marie Vaizey) লেখার সময় কবির 888sport live footballে অবদানের তারিফ করেন, যেখানে তাঁর লেখায় ফটোগ্রাফারের দৃষ্টির তীব্রতা রয়েছে, 888sport app download apkয় ‘মরমি সত্তা সম্বন্ধে একধরনের বিবরণ’ রয়েছে, কিন্তু তাঁর অতিসরল শিশুসুলভ ড্রইং আর চিত্রকর্ম সমালোচকের কাছে অসাধারণ মনে হয়েছে নিজগুণে ততটা নয়, যতটা না 888sport live chatীর চেতনার আয়না হিসেবে। স্পেক্টেটর (Spectator) পত্রিকায় লেখার সময় জাইলস অডি (Giles Audy) কবিগুরুর চিত্র888sport live chatকর্মের সঙ্গে আলফ্রেড ওয়ালিস (Alfred Wallis), (কর্নিশ অঞ্চলের একজন প্রাকৃত 888sport live chatী) এডভার্ড মাঞ্চ (Edvard Munch), স্যামুয়েল পালমার (Samuel Palmer), এই ধরনের 888sport live chatীদের কাজের তুলনা করেন, কিন্তু এই সিদ্ধামেত্ম উপনীত হন : ‘একথা বলা বাঞ্ছনীয় যে গত শতাব্দীতে রবীন্দ্রনাথের চিত্র888sport live chat ওঁর 888sport live chatচর্চায় বহুমুখী সৃষ্টিশীল প্রতিভার একটি লক্ষণীয় দিক, কিন্তু এর অবস্থান ঐ সৃষ্টিশীলতার প্রাণকেন্দ্রে নয়।’ মার্ক কারা (Mark Currah) ভিজুয়াল আর্টস (Visual Arts) সাময়িকীর এক নিবন্ধে তাঁকে চিরকালীন সর্বজনীন মানুষ বলে অভিহিত করেছেন, কিন্তু অক্সফোর্ডের মিউজিয়াম অব মডার্ন আর্টে তাঁর চিত্রপ্রদর্শনীর ওপর মন্তব্য করতে গিয়ে বলেছেন : ‘888sport live chatী হিসেবে তিনি খুব গুণী নন – বড্ড বেশি ভাবলেশহীন মুখ, বড্ড বেশি অবিন্যস্ত অবয়ব, অতিকারুকার্যময় কালির কাজ – কাজ দেখে আগ্রহ জাগে, কিছু কাজ তো অসাধারণ। কিন্তু যেখানে গোটাছয়েক 888sport live chatকর্ম দিয়েই কাজ সারা যেত, সেখানে ১২৪টা 888sport live chatকর্ম দেখানোর কি দরকার ছিল?’ অবজারভার পত্রিকায় উইলিয়াম উইভার (William Weaver) শুরু করেন এভাবে :
স্ট্রিন্ডবার্গ (Strindberg) আর শ্যোনবার্গের (Schoneberg) মতো রবীন্দ্রনাথও একজন বড়োমাপের 888sport live chatী ছিলেন, তাঁর প্রতিভার বহুমুখী ব্যাপ্তি চিত্রাঙ্কন ও ড্রয়িং অবধি স্পর্শ করেছিল। অনেক ভারতীয় চিত্র888sport live chatী রবীন্দ্রনাথকে তাঁদের দেশের আধুনিক 888sport live chatীদের মধ্যে অগ্রগণ্য মনে করেন যিনি গতানুগতিকতা থেকে বেরিয়ে স্বতঃস্ফূর্ত যোগসূত্রের মাধ্যমে প্রাচ্য ও প্রতীচ্যের মধ্যে মেলবন্ধন রচনা করেছেন। চিমত্মাভাবনার আকর হিসেবে বা তাঁর রচনার সূত্র হিসেবে তাঁর চিত্র বাঙ্ময়, দ্যুতিময়। কিন্তু শুধু নিজগুণে বিচার্য হলে এই ছবি আরো গভীর পর্যবেক্ষণ দাবি করে। একের পর এক আম্রবর্ণের সূর্যাস্ত, একই ধরনের অভিব্যক্তিহীন মুখাবয়ব – এসব নকশা উদ্দেশ্যহীন আঁকাআঁকির বেশি কিছু মনে হয় না।
সবাইকে অবশ্য টেক্কা দিয়েছেন ব্রায়ান সুওয়েল (Brian Sewell)। তিনি স্ট্যান্ডার্ড পত্রিকায় লেখেন, তাঁর চিত্রকর্ম দুর্বোধ্য, তা পরিশীলিত নয়। তাঁর মতে, রবীন্দ্রনাথ এক বিরক্তি উদ্রেককারী বৃদ্ধ, তিনি সারা পৃথিবী চষে বেড়িয়েছেন, এখানে-ওখানে নানা মানুষের চিত্র আর ড্রইং থেকে ভাব চুরি করে তাঁর বৃদ্ধবয়সে চর্বিতচর্বণ পরিবেশন করেছেন। ‘চর্বিতচর্বণ’ই বটে। (ছবিগুলো) অতি নিকৃষ্টমানের। কাটাকুটি, আঁচড়, কালির ছোপ দিয়ে যতটাই বা খাটাখাটুনি করা হয়েছে, সৃষ্টি তেমনি অকিঞ্চিৎকর।
অন্যত্র অবশ্য আরো ইতিবাচক সাড়া মিলেছে। চিত্র888sport live chatী ও চিত্রসমালোচক টিমোথি হাইম্যানের (Timothy Hyman) লেখায় আরো উন্নত বিবেচনা ও স্বীকৃতি রয়েছে। অ্যান্ড্রু রবিনসন রবীন্দ্রনাথের চিত্রকর্ম নিয়ে বই প্রকাশ করেন, তাঁর লেখায় আরো গভীর উপলব্ধির পরিচয় পাই।
এত কথা বলার উদ্দেশ্য একটাই – বিদেশি প্রতিক্রিয়া যে কী পরিমাণ দোদুল্যমান ছিল, এবং তা যে মোটেও নির্ভরযোগ্য ছিল না, সেই কথাটা পরিষ্কার করার জন্য। প্রথম দিকে খুব অল্প সময়ের জন্য রবীন্দ্রনাথ পাশ্চাত্যের ইতিবাচক প্রতিক্রিয়ায় প্রীত হয়েছিলেন, এবং ঘনিষ্ঠজনকে একথাও বলেছিলেন যে, যা-কিছু তিনি লিখেছেন তা দেশের মানুষের জন্য, আর তাঁর চিত্রকর্ম বিদেশি দর্শকের জন্য। তবে দেশের ভেতর তাঁর চিত্রকর্মের এক বিশাল প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয় ক্যালকাটা আর্ট স্কুলে ১৯৩২ সালে। স্কুলের অধ্যক্ষ মুকুল দে তাঁর চিত্রকর্মের একটি বৃহৎ পরিচিতিমূলক নিবন্ধ পাঠ করে প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন, আর চিত্র888sport live chatী মহলের মনোযোগী পর্যবেক্ষক ও.সি গাঙ্গুলি সেই সম্পর্কে মন্তব্য করেন। কিন্তু ভারতবর্ষে রবীন্দ্রনাথের বহুমুখী প্রতিভা, চিমত্মাবিদ ও সাংসৃকতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে যে-খ্যাতি, তার ফলে তাঁর চিত্র888sport live chatের প্রতি প্রতিক্রিয়া ম্রিয়মাণ হয়ে গিয়েছিল, ফলে তাঁর চিত্রকর্মের বিশেস্নষণ করার প্রয়াস খানিকটা দুর্বল ও উপরভাসা ছিল।
কেউ-কেউ তাঁর ছবি-আঁকার নেশার কারণ হিসেবে লেখনীর সাময়িক বন্ধ্যত্বকে দায়ী করেছেন। কেউ-বা তাঁর আঁকার নেশায় ভিন্ন দৃশ্যমান জগৎ আবিষ্কারের প্রয়াস লক্ষ করেছেন। তাঁদের মতে, তাঁর গীতিকাব্য সুশৃঙ্খল, রুচিস্মিত সৌন্দর্যের জয়গান গেয়েছে, তাঁর চিত্রকর্ম তাঁর মনের গহিন থেকে উৎসারিত রগরগে অস্থির ভুতুড়ে অবয়বকে রূপায়িত করেছে। এমনকি কেউ-কেউ তাঁর চিত্রকর্মের বিশিষ্টতার কারণ হিসেবে তাঁর দৃষ্টির অস্বাভাবিকতাকে চিহ্নিত করেছেন। ব্রিটিশ জার্নাল অব এস্থেটিক্স (খ- ২৭, 888sport free bet ১, শীত ১৯৮৭) আর.এন রিকফর্ড ও ডা. জে. বোস (রবীন্দ্রানুরাগী ভারতীয় চক্ষুবিশেষজ্ঞ) রচিত একটি 888sport live প্রকাশ করে। সেখানে লেখকরা এই সিদ্ধামেত্ম আসেন যে, রবীন্দ্রনাথ প্রোটানোপ (protanope) ছিলেন। (তিনি নীল আর বেগুনি রং দেখার সময়ে লাল রঙের সঙ্গে গাঢ় খয়েরি বা কালো রং গুলিয়ে ফেলতেন, এবং কমলা, হলুদ ও সবুজ রংকে একই বর্ণের ভিন্ন-ভিন্ন গাঢ়তায় দেখতেন) বছরছয়েক পরে স্বনামধন্যা বাঙালি কবি ও ঔপন্যাসিক কেতকী কুশারী ডাইসন ডা. অ্যাড্রিয়ান হিল (Adrian Hill) নামে একজন দৃষ্টি বিশেষজ্ঞের (optometrist) সহযোগে একই ধরনের গবেষণা করেন। ডবিস্নউ.বি আর্চার একসময়ে ভিক্টোরিয়া অ্যান্ড অ্যালবার্ট মিউজিয়ামের ভারতীয় সংগ্রহের তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন। তিনি আধুনিক চিত্র888sport live chatের গভীর অনুরাগী ছিলেন। তিনি অমৃতা শেরগিল ও যামিনী রায়ের সঙ্গে-সঙ্গে রবীন্দ্রনাথকেও আধুনিক ভারতীয় 888sport live chatকলার অন্যতম পথিকৃৎ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তিনি সম্ভবত ভারতীয় চিত্র888sport live chatের অগ্রযাত্রায় তিনটি দিক চিহ্নিত করতে চেয়েছেন – একদিকে 888sport live chatী দেশের শৈল্পিক ঐতিহ্য অনুসরণে দেশের বাস্তবতাকে নতুনভাবে রূপায়িত করার প্রয়াস পেয়েছেন, আর একদিকে 888sport live chatী দেশের জনপ্রিয় 888sport live chatকলা থেকে 888sport live chatসৃষ্টির মাল-মশলা জোগাড় করেছেন, আবার আরেকদিকে 888sport live chatী তাঁর অবচেতন অনুভব থেকে 888sport live chatসৃষ্টির উপাদান সংগ্রহ করেছেন। অমৃতা শেরগিল আর যামিনী রায় প্রথমোক্ত দুই ধরনের প্রতিভূ, আর আর্চারের বিচারে রবীন্দ্রনাথ বিশেষ করে তাঁর প্রথমদিককার 888sport live chatকর্মে শেষোক্ত ধরনের অনুসারীর প্রকৃষ্ট উদাহরণ। রবীন্দ্রনাথের পরের দিককার কাজ অবশ্য আর্চারকে হতাশ করেছিল। এমনকি আর্চার একথাও বলেছিলেন যে, বিদেশের প্রশসিত্ম রবীন্দ্রনাথকে বিভ্রান্ত করেছে, তাঁকে অতিসচেতন করে তাঁর আগেকার 888sport live chatসৃষ্টির উৎসমুখ অনেকটাই রুদ্ধ করে দেয়। রবীন্দ্রনাথের চিত্রকর্ম ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায় যে, তাঁর পরের দিককার কিছু কাজ প্রথম দিকের কাজের মতোই আকৃষ্ট করার ক্ষমতা রাখে, এবং এতে আর্চারের যুক্তি যে দুর্বল, সেটা বোঝা যায়। তাছাড়া সময়ের সঙ্গে-সঙ্গে 888sport live chatসৃষ্টির নানা মানসিক প্রক্রিয়ার ভেদাভেদ আর অতটা সুস্পষ্ট থাকে না। সব স্বাভাবিক মানুষের ক্ষেত্রেই এসব বিভিন্ন প্রক্রিয়া একে-অপরের ওপর প্রভাব বিস্তার করে, সেটা না-করলেই অস্বাভাবিকতার সূত্রপাত হয়।
পথিকৃৎ হোন বা না হোন, রবীন্দ্রনাথ ভারতীয় চিত্র888sport live chatীমহলে প্রভাব বিস্তার করেন। চিত্র888sport live chatের প্রকৃতি কী – সে-বিষয়ে তাঁর অভিমত এবং বাইরের নানা সংস্কৃতির প্রভাব সম্বন্ধে উদারমনস্ক হওয়ার পক্ষে তাঁর ঘোষণা, বিশেষ করে তাঁর আশ্চর্য চিত্র888sport live chatকর্মের জন্য তিনি 888sport live chatীমহলের তরুণ অংশের ওপর প্রভাব বিস্তার করেন। ১৯৩০ থেকে ১৯৪০ সালের মধ্যে তাঁর চিত্র888sport live chatের সঙ্গে ভারতীয় জনগণের মাত্র একটা ক্ষুদ্র অংশের পরিচিতি ছিল – সেই পরিচিতি ভারত ও বিদেশে যারা তাঁর আশপাশে ছিল তাদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। ১৯৪০ সালে বিশ্বভারতী প্রকাশনার ‘চিত্রলিপি’ নামে একটি ছোট্ট প্রকাশনা যখন পাশাপাশি তাঁর চিত্রকর্ম ও ছোট-ছোট 888sport app download apk ছাপতে শুরু করে, তখন থেকেই তাঁর চিত্রকর্ম বৃহত্তর জনসাধারণের গোচরে আসে। ভারতের তরুণ চিত্র888sport live chatীদের কাছে সেটা যেন নতুন দিগন্ত উন্মোচন করল। রীতিগত গোঁড়ামিতে রুদ্ধ জগতে রবীন্দ্রনাথের চিত্রকর্ম নতুন করে তাদের সাংস্কৃতিক সম্পদ পুনর্মূল্যায়ন করতে উদ্বুদ্ধ করল, তাদের আপন ক্ষমতা সম্বন্ধে উপলব্ধি করতে শেখাল। তাঁর চিত্রকর্মে কোনো শিক্ষাতাত্ত্বিক পা–ত্যের দাবি ছিল না, এবং তাঁর কাজ কোনো ওপর থেকে চাপানো 888sport live chatরীতির অনুশাসনেরও ধার ধারেনি। এই চিত্রাঙ্কন রীতিতে নেই কোনো অঙ্কনশালার ধরাবাঁধা নিয়ম। প্রথাগত সকল 888sport live chatরীতির নিগড়ের প্রতি অতিরিক্ত আনুগত্য থেকে মুক্তি পেয়ে তরুণ প্রজন্মের ভারতীয় 888sport live chatীরা যেন অন্তরের ডাককেই প্রাধান্য দেওয়ার স্বাধীনতা লাভ করলেন। চিত্র888sport live chatের ধারণা হয়ে গেল আরো উন্মুক্ত। বাস্তব আর কল্পনা, ধরা আর অধরা – এই নিয়ে নানা বিকল্প প্রকাশরীতি যে সম্ভব, সেটা প্রতীয়মান হলো। যে-সময়ে বিশ্বের নানা স্থানে চিত্র888sport live chatীরা দৃশ্যমান বাস্তবের খ–ত অবরোহণের মাধ্যমে চিত্রের রূপায়ণে চিত্রাঙ্কনের গন্তব্যে পৌঁছানোর কথা ভেবেছেন, রবীন্দ্রনাথ চিত্রাঙ্কনকে দেখেছেন বিমূর্ত চিহ্ন থেকে জীবন্ত অবয়বে সমৃদ্ধতর উত্তরণের প্রক্রিয়া হিসেবে। চিত্র888sport live chatের প্রকৃতি এবং ব্যক্তিমানসের বিকাশ সম্বন্ধে তাঁর ভাবনা চিত্রের প্রকৃতির উৎস এবং মানুষের চিত্তের বিকাশের পরিধি সম্বন্ধে তাঁর চিমত্মাভাবনার পরিপ্রেক্ষিত প্রশস্ত করেছে। তাঁর চিত্রকর্ম এবং এ-বিষয়ে তাঁর চিমত্মাভাবনার মধ্য দিয়ে এক অর্থে তিনি আমাদের জন্য নতুন দিগন্ত উন্মোচিত করেছেন। তাঁকে 888sport apk download apk latest versionঞ্জলি জানিয়ে এক সুবেদী বক্তব্যে নন্দলাল বসু যথার্থই বলেছেন : যখন প্রচলিত প্রথার অতি-আত্মবিশ্বাসী, অতিহিসেবি প্রভাবে চিত্র888sport live chat (এবং 888sport live football) চর্চা কখনো-কখনো তার গতিশীলতা ও প্রাণস্ফূর্তি হারাতে বসে, তখন এ-ধরনের প্রথাজালছিন্নকারী নবপ্রাণসঞ্চার যেমন সময়োপযোগী, তেমনি প্রয়োজনীয়।
[ছায়ানট-আয়োজিত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চিত্রকর্ম প্রদর্শনী উদ্বোধন উপলক্ষে ২১ জানুয়ারি, ২০১১ তারিখে ছায়ানট সংস্কৃতি-ভবন, 888sport appয় প্রদত্ত বক্তৃতা।] r
ভাষান্তর : আশফাক স্বপন

Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.