অধুনা বিস্মৃত রবীন্দ্রসংগীত888sport live chatী বিজয়া চৌধুরীর জন্ম শ্রীভূমি সিলেটে। জীবনের উত্থানকালপর্বটি তিনি ইংল্যান্ড, জার্মানি প্রভৃতি দেশে কাটিয়েছেন বলে 888sport apps-ভারতের বাংলাভাষী মানুষের কাছে বিশেষ পরিচিত নন। তবে একেবারে অর্বাচীনও নন। তাঁর জীবনেতিহাস পাঠ করলে দেখা যায়, সংগীত888sport live chatী হিসেবে একসময় তিনি যথেষ্ট কীর্তিমতী এবং সমাদৃত হয়েছিলেন। এইচএমভি, মিউজিক ইন্ডিয়া ও 888sport app কোম্পানি থেকে তাঁর গাওয়া রবীন্দ্রসংগীত এবং কিছু হিন্দি ভজনের রেকর্ড বেরিয়েছিল, যেগুলি তখন বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল।
সংগীত888sport live chatী হিসেবে পরিচিতি লাভ করলেও বিজয়া চৌধুরীর যাত্রা শুরু হয়েছিল মূলত নৃত্য888sport live chatী হিসেবে। সে-সময়ে সিলেটে শারদীয় দুর্গাপূজায় পাড়ার ছেলেরা থিয়েটার করত। সেই থিয়েটারে শিশু888sport live chatীদের সঙ্গে নানা রঙের ওড়না পরে দলবেঁধে নাচতেন বিজয়া। এই নাচের সঙ্গে সাধারণত যে-গানটি পরিবেশিত হতো তা হলো – ‘মেঘেরা দল বেঁধে যায় কোন দেশে।’ এই সময়েই তাঁর গান গাওয়ার সূত্রপাত ঘটে। গান গাওয়ার জন্মগত প্রতিভা ছিল বিজয়ার। বাড়ির ঘরোয়া পরিবেশে ভাইবোন মিলে চলত গানের মহড়া। একদিন নিজস্ব হারমোনিয়ামও এসে হাজির হলো। এরপর গান গাওয়াটা যেন একটা নেশায় পরিণত হলো তাঁর। স্কুল থেকে ফিরে মেয়েরা যখন খেলতে যেত, বিজয়া তখন হারমোনিয়াম নিয়ে বসতেন নতুন গানের সুর তোলার জন্যে। স্কুলের বার্ষিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গানের প্রথম 888sport app download bdগুলি যেন ‘চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত’ হয়ে গেল তাঁর জন্য। বাড়িতে অভ্যাগত অতিথিরা এলে তাঁদের সামনেও গানের পরীক্ষা দিতে হতো তাঁকে। কানন দেবীর গাওয়া ‘ওগো সুন্দর মনের গহনে তোমার মূরতিখানি’ গানটি খুব প্রিয় ছিল তাঁর।
বিজয়ার সংগীত সাধনায় তাঁর মায়ের ছিল অকৃপণ উৎসাহ। সিলেট কন্যার আত্মকথা বইয়ে বিজয়া লিখেছেন – ‘একদিন আমি বসে রেণুকা দাশগুপ্তের বংশী বিনিন্দিত কণ্ঠের গাওয়া ‘তোমার সুরের ধারা ঝরে যেথায় তারি পারে’ এই রেকর্ডটি বাজিয়ে ওই গানটি তোলার কাজে মনঃসংযোগ করেই চলেছি, মা আমার দিকে তাকিয়ে হঠাৎ বললেন : ‘আচ্ছা খুকু, তুমি ওই গানটা ঠিক ওঁর মতো গাইতে পার কিনা দেখতো।’ মায়ের কথায় আমি মনোনিবেশ করে গানটি যত্নসহকারে গলায় তুলে নিলাম। আমার মুখে ওই গানটি শুনে মা বললেন, ‘বড় সুন্দর গাইলে তুমি, গানটা ওঁর মতোই গাইতে পেরেছো তুমি।’ মায়ের মুখের প্রশংসায় আনন্দ আর আমি চেপে রাখতে পারছিলাম না।’
বিজয়া চৌধুরীর প্রথম সংগীতগুরু ছিলেন সিলেটের বিখ্যাত সংগীতব্যক্তিত্ব কুমুদরঞ্জন গোস্বামী। ওঁর কাছেই তিনি শাস্ত্রীয়সংগীত, রবীন্দ্রসংগীত এবং ভজনের তালিম নেন। এছাড়া নিজের চেষ্টায় তিনি কুন্দনলাল সায়গল, পঙ্কজকুমার মল্লিক, কনক দাস, মালতী ঘোষাল প্রমুখের গান হারমোনিয়াম বাজিয়ে কণ্ঠে তুলে নিতেন। বাড়িতে তখন রেডিও ছিল না। পাশের বাড়ির রেডিওর গান শুনেও তা শিখে নিতেন বিজয়া। সন্তোষ সেনগুপ্তের ‘কেন বাজাও কাঁকন কন কন’, ‘তার হাতে ছিল হাসির ফুলের হার’, কনক দাসের ‘চলে যায় মরি হায় বসন্তেরই দিন চলে যায়’, সুবিনয় রায়ের ‘তুমি ডাক দিয়েছো কোন সকালে’ কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘ওগো তুমি পঞ্চদশী’ প্রভৃতি গান ছিল বিজয়ার জন্যে অফুরান অনুপ্রেরণার উৎস।
বিজয়া যে-স্কুলের ছাত্রী ছিলেন, সে-স্কুল পরিদর্শনে এসেছিলেন বাংলার গভর্নর। তাঁকে আনুষ্ঠানিকভাবে অভ্যর্থনা জানানোর আয়োজন করেছিল স্কুল কর্তৃপক্ষ। গভর্নর যখন গাড়ি থেকে নেমে হেঁটে এগিয়ে এলেন, তখন সবটুকু দরদ ঢেলে বিজয়া গাইলেন – ‘আমায় ক্ষম হে ক্ষম, নমো হে নমো, তোমায় স্মরি হে নিরুপম।’ এই গান শুনে গভর্নর তাঁকে ‘গু-উ-উ-ড’ বলে ধন্যবাদ জানিয়ে কোলে তুলে নিলেন। সেদিন বিজয়ার সামনে সংগীতের প্রতি ভালোবাসার আরেক নতুন দুয়ার খুলে গেল।
বিজয়া প্রথম রেডিওতে গান করার সুযোগ পান ‘শিলং-গৌহাটি’ বেতার কেন্দ্রে। এটি তখন সবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। যথারীতি আবেদন করে, অডিশন দিয়ে মনোনীত হলেন তিনি। অডিশনে তাঁর গানটি ছিল – ‘আমার দোসর যে জন ওগো তারে কে জানে কে জানে।’ ১৯৪৮ সালের মাঝামাঝি তিনি অল ইন্ডিয়া রেডিও ‘শিলং-গৌহাটি’ কেন্দ্রে তালিকাভুক্ত 888sport live chatী হয়ে যান। বিজয়া লিখেছেন :
শুরু হলো গান খোঁজার পালা। শত সহস্র রবীন্দ্রসংগীত, তার মধ্যে আমি ‘পথহারা তুমি পথিক যেন গো সুখের কাননে’। এ নিবিড় সংগীতকানন থেকে মাত্র তিনখানা গান আহরণ করে নিতে হবে। পনেরো মিনিটের প্রোগ্রাম … বেতার কেন্দ্রে আমার গাওয়া প্রথম গান ছিল – ‘হিমের রাতে ঐ গগনের দীপগুলিরে’, ‘সেদিন আমায় বলেছিলে আমার সময় হয় নাই।’ তাছাড়া আরো একটি গান যার কথা আমার একটুও মনে নেই।
১৯৪৯ সালে দিলীপকুমার রায় এলেন শিলংয়ে। পন্ডিচেরির শ্রী অরবিন্দ আশ্রমের জন্য গান গেয়ে তহবিল সংগ্রহ করতে। দিলীপকুমার ডুয়েট করার জন্য সুকণ্ঠী একজন গায়িকার খোঁজ করছিলেন। ঊষা ভট্টাচার্যের কল্যাণে দিলীপকুমারের সঙ্গে যোগাযোগ হলো বিজয়ার এবং একেবারেই নতুন 888sport live chatী হিসেবে তাঁর সঙ্গে গান গাওয়ার বিরল সুযোগ ও সম্মান লাভ করলেন বিজয়া। গানটি ছিল ‘বিফল প্রাণ হরিণাম বিনা’। অনেক অনুষ্ঠানে দ্বৈতকণ্ঠে গীত হয়েছিল এই গানটি। বিজয়ার কণ্ঠমাধুর্যে মুগ্ধ হয়ে দিলীপকুমার একদিন সস্নেহে বললেন, ‘আমি তোমায় বিজয়া বলে ডাকবো না, তোমার নাম আমি দিলাম ভিক্টোরিয়া।’ ডুয়েট গান করার জন্যে বিজয়াকে কলকাতা যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন তিনি। যদিও শেষ পর্যন্ত তা আর হয়ে ওঠেনি।
বিজয়ার পিতৃ-পদবি নন্দী মজুমদার। নগেশ চৌধুরীর সঙ্গে বিয়ের পর তিনি বিজয়া চৌধুরী হন। নগেশ ও বিজয়ার বিয়ে হয় লন্ডনে। নগেশ চৌধুরী চাকরি করতেন চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টসি ফার্মে। বিয়ের পর বিজয়া চাকরি নেন ইন্ডিয়ান হাই কমিশনে। এখানেও তাঁর গান গাওয়ার ব্যাপারটি জানাজানি হতে বেশি সময় লাগল না। ফলে বিভিন্ন অনুষ্ঠান থেকে আমন্ত্রণ আসতে থাকে। অল ইন্ডিয়া রেডিওর সংবাদপাঠিকা নীলিমা সান্যাল তখন লন্ডনপ্রবাসী। তিনি বিজয়াকে ধরে নিয়ে গেলেন লন্ডনের পেডিংটনের একটি বিশাল হলঘরে সরস্বতী পূজার অনুষ্ঠানে গান গাইতে। বিজয়া গাইলেন – ‘ওরে গৃহবাসী, খোল দ্বার খোল।’ গানটি এত চমৎকার হয়েছিল যে, বিবিসি গানটি সম্প্রচার করেছিল। উল্লেখ্য, বিবিসি এই গানটি প্রচার করার পর লন্ডনের হিন্দিভাষীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছিল হিন্দি গান প্রচার না করে বাংলা গান প্রচার করার জন্যে।
লন্ডনে তখন বিজয়া চৌধুরীর বিপুল পরিচিতি। তাঁকে বাদ দিয়ে বাংলা গানের কোনো অনুষ্ঠানের কথা ভাবাই যেত না। একবার সস্ত্রীক হেমন্ত মুখোপাধ্যায় এলেন লন্ডনে – ইন্ডিয়া হাউসে গান্ধী জয়ন্তীর অনুষ্ঠানে যোগ দিতে। যথারীতি বিজয়া চৌধুরীরও ডাক পড়ল। এই অনুষ্ঠানে তিনি হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে একটি ডুয়েট এবং এককভাবে কবীরের ‘একনাম হ্যায় রাম – এক নীর হ্যায় গঙ্গাজি’ ভজনটি পরিবেশ করেন। ভজনটি শ্রোতাদের দারুণভাবে মুগ্ধ করেছিল। পাশাপাশি বিজয়লক্ষ্মী পণ্ডিতের প্রশংসা ছিল বিজয়ার জন্যে সবচেয়ে বড় 888sport app download bd। এর কিছুদিন পরে এশিয়ার মিউজিক সার্কেলের চেয়ারম্যান মি. আঙ্গাদির সুপারিশে ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের কিংস কলেজের এক অনুষ্ঠানে গান গাইতে যান তিনি।
১৯৬৪ সালে বিজয়া চৌধুরী তল্পিতল্পাসহ লন্ডন থেকে ফিরে এলেন কলকাতায়। এবার শুরু হলো তাঁর প্রকৃত সংগীত সাধনা – প্রকৃত 888sport live chatীজীবন। প্রথমেই তিনি রবীন্দ্রসংগীতের অন্যতম পুরোধা দেবব্রত বিশ্বাসের শরণ নিলেন। শুরু হলো নতুন করে গান শেখা। দেবব্রত বিশ্বাসের কাছে তালিম নেওয়া প্রথম গানটি ছিল – ‘পাগল যে তুই কণ্ঠ ভরে জানিয়ে দেরে।’ পরের গানটি ছিল – ‘ক্লান্তি আমার ক্ষমা কর প্রভু।’ বিজয়া চৌধুরী রবীন্দ্রসংগীত রেকর্ড করার ইচ্ছা সর্বপ্রথম প্রকাশ করেন দেবব্রত বিশ্বাসের কাছে। রবীন্দ্রসংগীতের আরেক পুরোধা সন্তোষ সেনগুপ্ত তখন এইচএমভির একজন কর্মকর্তা। দেবব্রত বিশ্বাস পরামর্শ দিলেন ওঁর সঙ্গে যোগাযোগ করতে। একদিন সন্তোষবাবুর বাড়িতে গিয়ে হাজির হলেন বিজয়া। ‘কাঁদালে তুমি মোরে ভালোবাসার ঘায়ে’ – গানটি গেয়ে শোনান তাঁকে। ‘সুরমন্দির’ নামে সন্তোষবাবুর একটি সংগীত একাডেমি ছিল। সেখানেই তিনি গান শেখাতেন। বিজয়া ভর্তি হলেন একাডেমিতে। এরপর সন্তোষবাবু বাড়িতে এসে বিজয়াকে গান শেখাতে রাজি হলেন। এরই মধ্যে হঠাৎ করে সন্তোষবাবু এইচএমভির রেকর্ডিংয়ের 888sport live chatী নির্বাচক পদে নিযুক্ত হলেন। বিজয়াকে দিয়েই শুরু হলো তাঁর এবারের যাত্রা। প্রথম রেকর্ডিংয়ে রিহার্সালের সময় বিজয়ার পাশে ছিলেন চিন্ময় চট্টোপাধ্যায় এবং সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। আর রেকর্ডিংয়ের দায়িত্বে ছিলেন দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়। বিজয়ার প্রথম রেকর্ড করা গান দুটি ছিল – ‘সন্ধ্যা হল গো’ এবং ‘দুঃখের বেশে এসেছ বলে, তোমায় নাহি ডরিব হে’। সেদিন দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়ের মন্তব্য ছিল – ‘খুব ব্রাইট গলা, অনেক তৈরি আর্টিস্টের চাইতে ফিনিশ ভালো।’ প্রথম রেকর্ড বাজারে আসার সঙ্গে সঙ্গেই বেশ সাড়া পড়ে গেল। এর পরে এইচএমভি থেকে পর্যায়ক্রমে বিজয়ার গাওয়া রবীন্দ্রসংগীতের অনেক ক্যাসেট বের হয়। পরিচিতির পরিধি ব্যাপক বিস্তৃত না হলেও রবীন্দ্রসংগীতের 888sport live chatী হিসেবে বিজয়া চৌধুরী মোটামুটি একটি অবস্থান সৃষ্টি করতে পেরেছিলেন। তাঁর সম্ভাবনার অকালমৃত্যু ঘটেছিল স্বামীর বদলির চাকরিসূত্রে কলকাতা থেকে বোম্বে চলে যাওয়ায়। সেখানে রবীন্দ্রসংগীত গাওয়ার সুযোগ ছিল খুবই কম। বিশিষ্ট রবীন্দ্রসংগীতজ্ঞ দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়ের মন্তব্য দিয়েই বলা যায়, ‘কলকাতায় থেকে বিজয়া যদি শুধু রবীন্দ্রসংগীত চর্চাই করতেন তবে আরও বেশি নাম করতে পারতেন।’
তথ্যসূত্র : সিলেট কন্যার আত্মকথা,বিজয়া চৌধুরী, অনুষ্টুপ, কলকাতা, ২০০৪।


Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.