রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৬১-১৯৪১) মহৎ কবি, বাংলার কবিদের ভেতর তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ, বিশ্ব888sport live footballে গীতি888sport app download apkর ক্ষেত্রে এখনো অপ্রতিদ্বন্দ্বী, তাঁর সঙ্গে কাজী নজরুল ইসলামের (১৮৯৯-১৯৭৬) তুলনার কোনো প্রশ্নই ওঠে না; তবে লক্ষ্য করবার ব্যাপার থাকে যে নজরুলও মহৎ এবং বাংলা 888sport app download apkর ইতিহাসে প্রতিভা ও অর্জনের দিক থেকে রবীন্দ্রনাথের পরেই তাঁর স্থান। প্রথম ও দ্বিতীয়র মধ্যে দূরত্ব অবশ্য দুর্লঙ্ঘ্য। কিন্তু তাঁরা একে অপর থেকে পৃথক, মহত্ত্বই তাঁদেরকে পৃথক করে দিয়েছে; রবীন্দ্রনাথের মানদ– নজরুলকে বিচার করাটা ন্যায্য নয়, যে-ভুলটা অনেকে করেন, এবং দেখতে পান যে নজরুলের ভেতর সে-সব গুণ ছিল না যেগুলোর জন্য রবীন্দ্রনাথ অসামান্য। 888sport app download for androidে রাখা আবশ্যক যে নজরুলের সৃষ্টিশীল জীবন ছিল মাত্র ২২ বছরের, রবীন্দ্রনাথের সময়ের তিন ভাগের এক ভাগ।
কিন্তু এই দুই কবি অনেক বিষয়ে পরস্পরের কাছাকাছি ছিলেন; এবং সে-নৈকট্য কম তাৎপর্যপূর্ণ নয়। দু’জনেরই প্রধান পরিচয় যে তাঁরা কবি। নিজেদেরকে তাঁরা ওভাবেই দেখতেন, লোকেও তাঁদেরকে সেভাবেই দেখে। তাঁরা দু’জনেই আবার ছিলেন বহুমুখী; 888sport live footballের সব শাখাতেই তাঁদের কাজ আছে এবং তাঁরা দেশের রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন, সমাজের অগ্রগতি ও মানুষের মুক্তি নিয়ে তাঁদের চিমত্মা ছিল সার্বক্ষণিক। রবীন্দ্রনাথের মতোই নজরুলেরও ছিল সঙ্গীতের প্রতি গভীর আকর্ষণ এবং সঙ্গীতের ক্ষেত্রে দু’জনের অবদানই অসামান্য। হাজার হাজার গান তাঁরা রেখে গেছেন। গানে সুর দিয়েছেন, সুর সৃষ্টি করেছেন, সুরের মিশ্রণ ঘটিয়েছেন। নিজেরাও তাঁরা গান গাইতেন। বাংলা 888sport live footballে অন্য কোনো দু’জন কবি আমরা পাই নি যাঁরা সঙ্গীতে এতটা দক্ষ এবং এমন ভাবে সঙ্গীতমনস্ক ছিলেন। তাঁদের সব লেখাতেই, সে পদ্যই হোক কি হোক গদ্য, গান আছে। 888sport app download apkর সঙ্গে সঙ্গীতের এমন মৈত্রী তাঁদের দু’জনের বাইরে অন্য কোনো বাঙালী কবির রচনাতে পাওয়া যাবে না। তাঁরা দু’জনেই জানতেন যে তাঁদের গান বাঙালীকে অনেক কাল গাইতে হবে, এবং সে-ধারণা মিথ্যা প্রমাণিত হয় নি। দু’জনেই নাটক লিখেছেন, নাটকের নির্দেশনা দিয়েছেন, অভিনয় করেছেন। তাঁরা প্রতিষ্ঠান গড়েছেন। তাঁদের ছিল কৌতুকের অসাধারণ বোধ, এবং তাঁরা শিশুদের জন্য যা লিখেছেন তাও অতুলনীয়। বক্তৃতা করেছেন সভা-সমাবেশে। সম্পাদনা করেছেন পত্রিকা। দু’টি ক্ষেত্রে অবশ্য নজরুলকে দেখা যায় নি; একটি হচ্ছে চিত্রাঙ্কন, অন্যটি বিদেশ-888sport slot game।
তিরিশের যে কবিরা প্রত্যেকেই নজরুলের চেয়ে নিজেদের উঁচু স্তরের মনে করতেন, তাঁরা কিন্তু শুধু লিখেছেনই, তার বাইরে যা করেছেন তাও ওই 888sport live footballের পাঠ ও পঠনের সঙ্গেই যুক্ত। তথাকথিত 888sport live footballিক ও অ888sport live footballিক কাজের ভেতর এই দুই কবি ব্যবধান জানতেন না। দৃষ্টিভঙ্গি ও চেতনায় দু’জনেই রোমান্টিক; স্পর্শকাতরতা তাঁদের সংবেদনশীলতা কোনো ভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত করে নি। তাঁরা আবেগের সঙ্গে লিখেছেন, সে জন্য যা-লিখেছেন তাই হয়েছে প্রাণবন্ত; কিন্তু সেই সঙ্গে তাঁদের রচনাতে ছিল গভীর দার্শনিকতা, যদিও এক্ষেত্রে তাঁদের ভেতর বিস্তর পার্থক্য ছিল, যেটা সবারই জানা। রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, ‘‘আমি পৃথিবীর কবি যেথা যার যত ওঠে ধ্বনি/ আমার বাঁশির সুরে সাড়া তার জাগিবে তখনি’’। এবং যথার্থ কারণেই তাঁকে বিশ্বকবি বলা হয়েছে। নজরুলকে মনে হবে ভিন্ন রকমের, কারণ তিনি বলেছেন, তিনি শুধু বর্তমানেরই কবি, ভবিষ্যতের নবী নন, যেন তিনি কেবল তাঁর দেশেরই; কিন্তু সেটা সত্য নয়, তাঁরও রয়েছে আন্তর্জাতিক দৃষ্টিভঙ্গি। তবে তাঁর আন্তর্জাতিকতা রবীন্দ্রনাথের বিশ্বজনীনতা থেকে স্বতন্ত্র, কেননা তিনি নব-সৃষ্ট মেহনতী মানুষের আন্তর্জাতিকতায় আস্থাশীল হয়ে উঠেছিলেন। আদর্শবাদিতার দিক থেকে রবীন্দ্রনাথের মিল যদি হয় হেগেলের সঙ্গে তাহলে বলা চলে নজরুলের ঝোঁকটা মার্কসের দিকে। হেগেল যেমন বিশ্বব্রহ্মা- নিয়ে ভাবতেন, রবীন্দ্রনাথের আগ্রহও ছিল সে-রকমেরই; অপরদিকে হেগেলের শিষ্য মার্কসের ঐতিহাসিক বস্ত্তবাদের অন্তর্গত শ্রেণী দ্বন্দ্বকে নজরুল অত্যন্ত স্পষ্টভাবে দেখতে পেয়েছেন ও গ্রহণ করেছেন। মার্কসের মতোই নজরুলও তাঁর সৃষ্টিশীল জীবনের উজ্জ্বলতম কালে সর্বদাই বিপস্নবের কথা ভাবতেন ও বিপস্নবের পক্ষে কাজ করতেন। মার্কসের জীবনের সঙ্গে নজরুলের প্রথম জীবনের মিলটাও লক্ষ্য করবার মতো। মার্কস যেমন নজরুলও তেমনি, সংবাদপত্র প্রতিষ্ঠা ও সম্পাদনা করেছেন, এবং রাষ্ট্রের হাতে নিগৃহীত হয়েছেন। মার্কসকে রাষ্ট্রহীন হতে হয়েছিল, নজরুলও পরিণত হয়েছিলেন গৃহহীনে। দু’জনেরই জীবন কেটেছে স্বেচ্ছাগৃহীত দারিদ্রে্য। নজরুলের পক্ষে রবীন্দ্রনাথ হওয়া যেমন অসম্ভব ছিল, পলস্নীর কবি জসীমউদ্দীন হওয়াটা ছিল তেমনি চিমত্মার বাইরে।
রবীন্দ্রনাথ ও নজরুল উভয়েই গদ্য লিখেছেন প্রচুর; 888sport alternative link, নাটক, ছোটগল্প, 888sport live কোনো ধরনের রচনাতেই তাঁদের অনাকর্ষণ ছিল না। বক্তৃতা করেছেন সভা-সমাবেশে, প্রতিষ্ঠান গড়েছেন, এবং অবশ্যই যুক্ত ছিলেন রাজনীতির সঙ্গে, যদিও সমমাত্রায় নয়। দু’জনেরই ব্যক্তিগত জীবনে দুঃসহ দুঃখ ছিল, কিন্তু সেই দুঃখ তাঁদেরকে অন্যদের থেকে বিচ্ছিন্ন করে নি, উল্টো অন্যদের সঙ্গে সংলগ্ন করেছে; সকল মানুষের দুঃখকে তাঁরা মূর্ত করেছেন তাঁদের লেখায়। আবার তাঁদের দু’জনেরই রচনাতেই ছিল আনন্দের উজ্জ্বলতা; উচ্ছলতাও। তাঁদের ছিল স্বপ্ন, ব্যক্তিগত যতটা নয়, তার চেয়ে বেশী সমষ্টিগত। বাঙালীর সাংস্কৃতিক ও সামাজিক অগ্রগতির ক্ষেত্রে তাঁদের ভূমিকা অঙ্কের হিসাব দিয়ে দেখানো যাবে না।
888sport live footballের ক্ষেত্রে ১৯২০-এর দিকে নজরুলের যখন আগমন তখন রবীন্দ্রনাথ রয়েছেন তাঁর গৌরবের পূর্ণতায়। তিনি অপ্রতিদ্বন্দ্বী, তাঁর প্রভাব সর্বত্রগামী এবং প্রায় সবদিকেই
বিসত্মৃত। তিনি গুরুদেব, তাঁকে অতিক্রম করা অসম্ভব। নজরুল নিজেও ছিলেন অত্যন্ত উৎসাহী ও গভীর ভাবে রবীন্দ্রভক্ত। নজরুলের রচনাতে বহু জায়গাতে রবীন্দ্রনাথের গান, উদ্ধৃতি, বাক্য, বাক্যাংশ পাওয়া যাবে। গীতাঞ্জলির গানগুলো ছিল তাঁর মুখস্থ, রবীন্দ্রনাথের কয়েকটা বড় 888sport app download apkও 888sport sign up bonus থেকে উদ্ধার করতে পারতেন, অনায়াসে। রবীন্দ্রনাথের যত 888sport alternative link পেয়েছেন তা পড়ার ভেতর দিয়েই নজরুল লেখক হবার প্রস্ত্ততি নেন। তাঁর বাঁধনহারা পত্রোপন্যাসের নায়ক যোগ দিয়েছে ব্রিটিশ-ভারতীয় সেনাবাহিনীতে, বন্ধুমহলে সে কবি বলে পরিচিত। এক বন্ধু তাঁকে চিঠিতে লিখেছে সে যেন গুরুদেবের জন্য চ্যালেঞ্জ না হয়ে পড়ে, এবং তাঁকে নিশ্চিত করছে যে ওই সম্মান না পেলেও সে যে একজন অনুকারক কপি হবে তাতে সন্দেহ নেই। ‘আমার কৈফিয়ত’ 888sport app download apkয় নজরুল তাঁর নিজের কাজ বিষয়ে বলছেন যে, লোকের অভিযোগ তাঁর লেখাতে চিরকালের সেই বাণী নেই যেটা গুরুদেবের রচনাতে পাওয়া যায়, এবং গুরুদেব নিজেও বলেছেন যে, নজরুল তলোয়ার দিয়ে দাড়ি চাঁছা শুরু করেছে; নজরুল বলছেন যে, হ্যাঁ, তিনি কবিগুরুর মতো হতে পারেন নি, কিন্তু তাতে তাঁর কোনো দুঃখ নেই কারণ ‘রবি’ তো রয়েছেন, আছে তাঁর ‘সোনার শত ছেলে’। রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে নজরুলের কয়েকটি তাৎপর্যপূর্ণ 888sport app download apkও আছে। সৃজনশীল জীবনের একেবারে শেষ প্রামেত্ম এসেও ‘কিশোর রবি’ নামের একটি 888sport app download apkতে তিনি লিখেছেন যে তাঁরাই রবীন্দ্রনাথকে উপযুক্ত রূপে পাঠ করতে পারে যাদের ভেতর তারুণ্য রয়েছে, এবং তরুণদের জন্য রবীন্দ্রনাথ আশার উৎস। ‘ক্ষুধাতুর, উপবাসী
চির-নিপীড়িত জনগণ’কে কবি ‘কৈবল্য ভীতির গুহা’ থেকে নিয়ে আসেন ‘আনন্দনন্দনে’। এই 888sport app download apkটি যদিও তাঁর সৃষ্টিক্ষমতার যথার্থ সাক্ষী নয় কিন্তু দেখবার ভঙ্গিটা রয়ে গেছে আগের মতোই। তিনি যৌবনের কথা বলছেন, বলছেন ভীতির কথাও, এবং পীড়িত মানুষের প্রতি তাঁর সমবেদনার কথাও উলেস্নখ করতে ভোলেন নি। ‘অশ্রম্ন-পুষ্পাঞ্জলি’ নামের আরেকটি 888sport app download apk লিখেছিলেন তিনি রবীন্দ্রনাথের আশিতম জন্মদিনে, যাতে বলছেন, ‘‘একা তুমি জানিতে হে কবি, মহাঋষি, তোমারি বিচ্যুত-ছটা আমি ধূমকেতু।’’ 888sport app download apkটিতে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে, কবিকে আরেকবার 888sport apk download apk latest version জানাবার সুযোগ হয়তো আর তিনি পাবেন না।
তাঁর সেই শঙ্কা সত্য প্রমাণিত হয়েছিল। জীবিত কবিকে এরপরে 888sport apk download apk latest version জানাবার সুযোগ নজরুল আর পান নি। ১৯৪১-এ রবীন্দ্রনাথের মৃত্যু সংবাদে নজরুল শোকে বিহবল, বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। সেই অবস্থাতেই তিনি পরপর তিনটি 888sport app download apk লেখেন, একটিতে বলেন যে ‘‘দুপুরের রবি ঢলে পড়েছে অস্তপারের কোলে’’; অপরটির বক্তব্য ছিল কিছুটা ভিন্ন রকমের, ‘‘ঘুমাইতে দাও শ্রান্ত কবিরে জাগায়ো না জাগায়ো না/ সারাজীবন যে আলো দিল ডেকে তার ঘুম ভাঙায়ো না।’’ শোকানুভূতির দ্বৈত-প্রকাশ। প্রথম 888sport app download apkটি কলকাতার রেডিওতে আবৃত্তি করছিলেন, এবং আবৃত্তি করার সময়েই তাঁর দেহে রোগাক্রমণের লক্ষণ দেখা দেয়। আবৃত্তি তিনি সম্পূর্ণ করতে পারেন নি, তাঁর জিহবা আড়ষ্ট হয়ে গিয়েছিল।
নজরুল যাঁদেরকে সোনার শত ছেলে বলেছেন সেই নবীন কবিরা সচেতন ভাবে চেষ্টা করেছেন রবীন্দ্র-বলয় থেকে বের হয়ে যাবার; তাঁদের অনুভবটা ছিল এই রকমের যে বের হতে না পারলে মৌলিকতা দৃশ্যমান হবে না। তাঁদের ভেতর বিদ্রোহ ছিল; কিন্তু তাঁরা যথার্থ বিদ্রোহী ছিলেন না, কারণ তাঁদের লক্ষ্য ছিল কাব্যের মুক্তি, মতাদর্শের মুক্তি নয়, মতাদর্শের দিক থেকে তাঁরা রবীন্দ্র-বলয়ের ভেতরেই ছিলেন। ওই বলয় থেকে বের হয়ে যাবার জন্য নজরুলকে কিন্তু চেষ্টা করতে হয় নি। তিনি রবীন্দ্রনাথকে আত্মস্থ করে, সমৃদ্ধ হয়ে, অত্যন্ত স্বাভাবিক ভাবে সামনের দিকে এগিয়ে গেছেন, এবং ভিন্ন এক পথ ধরে এগিয়ে চলেছেন। কপালকু-লার সেই বিখ্যাত প্রশ্ন, ‘পথিক, তুমি কি পথ হারাইয়াছ’ নজরুলের জন্য একটি প্রিয় সুবচন ছিল। অন্যদের মতো নজরুল অপ্রধান ছিলেন না, ছিলেন প্রধানদের একজন। 888sport app download apkর ক্ষেত্রে অপ্রধানের সঙ্গে প্রধানের পার্থক্য এখানে যে, প্রধানরা কেবল 888sport live footballিক ভাবেই নয়, মতাদর্শিক ভাবেও ভিন্ন হয়ে থাকেন। সেই সঙ্গে প্রধান কবিরা নিজেদের পাঠকও তৈরী করে নেন। নজরুলের এই দুই ক্ষমতাই ছিল।
দুই
বাস্তবে নজরুল এসেছিলেন প্রধান কবি ভূমিকা গ্রহণের প্রতিশ্রম্নতি নিয়েই, এবং সেই প্রতিশ্রম্নতি অত্যন্ত দ্রম্নত প্রকাশ পেয়েছে। এই তরুণ যে আলাদা সেটা প্রথম যাঁরা টের পান তাঁদের মধ্যে রবীন্দ্রনাথের স্থান শীর্ষে। নজরুলকে তিনি তাঁর বসন্ত নামের গীতিনাট্যটি উৎসর্গ করেন। ঘটনাটি উলেস্নখযোগ্য, কেননা কবি এই প্রথম অত্যন্ত আপনজনদের বাইরে একজন অপরিচিতকে বই উৎসর্গ করলেন, যে-ব্যক্তির তখন বয়স মাত্র ২৪; এবং সেই তরুণকে সম্বোধন করলেন কবি বলে। নিকটের লোকেরা কেউ কেউ আপত্তি করেছিলেন। তাঁদের একটা মন্তব্য ছিল এই রকমের যে, নজরুল জনপ্রিয় হয়েছেন চতুর্দিকে অস্ত্রের ঝনঝনানি চলছে বলে, সেটা কমে গেলে তাঁর জনপ্রিয়তা মিইয়ে যাবে। উত্তরে কবি বলেছেন, ‘‘জনপ্রিয়তা কাব্যবিচারের স্থায়ী নিরিখ নয়, কিন্তু যুগের মনকে যা প্রতিফলিত করে তা শুধু কাব্য নয়, মহাকাব্য’’১ – মন্তব্যটি তাৎপর্যপূর্ণ। প্রতিষ্ঠিত মহৎ স্বীকৃতি দিচ্ছেন উদীয়মান মহৎকে, অনেকেই যা দিতে প্রস্ত্তত ছিলেন না। নজরুল তখন জেলে; কয়েকদিন পরে তিনি অনশন ধর্মঘটে যান; তখন অবশ্য তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়। কলকাতায় জনসভা হয়েছে, তাতে সভাপতিত্ব করেছেন চিত্তরঞ্জন দাশ। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় যান কারাগারে নজরুলকে দেখতে; এ-সময়ের এক চিঠিতে শরৎচন্দ্র লিখেছেন, ‘‘দেখি যদি দেখা করিতে দেয় ও আমার অনুরোধে আবার খাইতে রাজী হয়। না হইলে আর কোনো আশা দেখি না। একজন সত্যিকার কবি, রবিবাবু ছাড়া এখন কেহ আর এত বড় কবি নাই।’’২ রবীন্দ্রনাথ নিজে তখন শিলঙে, সেখান থেকে তিনি একটি টেলিগ্রাম পাঠিয়েছিলেন যাতে বলা হয়েছিল, ‘‘অনশন ভঙ্গ করো, আমাদের 888sport live footballের এটা দাবী।’’ 888sport live footballের দাবীর কথাটাই কিন্তু বললেন, অন্যকোনো দাবীর নয়। রবীন্দ্রনাথ তখন সর্বত্র সম্মানিত, ব্যক্তি হিসেবে তিনি অনেক উচ্চে। নোবেল 888sport app download bd পেয়েছেন, নাইট খেতাবে ভূষিত হয়েছেন, জালিয়ানওয়ালাবাগের গণহত্যার পর সেই খেতাব পরিত্যাগও করেছেন, নজরুল তখন তরুণ এক কবি যিনি রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলায় বন্দী হয়ে জেলখানায় অনশন করছেন, 888sport live footballিক কারণে নয়, রাজনীতির কারণে। কবি হিসেবে এমন স্বীকৃতি তাঁর সমবয়স্ক অন্য কেউ তখন পায় নি। অথচ তাঁর সমবয়স্ক কবিরা প্রত্যেকেই ছিলেন শ্রেণী ও সামাজিক পরিচয়ে রবীন্দ্রনাথের কাছাকাছি মানুষ। নজরুল তো একেবারেই নামগোত্রহীন।
এঁদের মধ্যে পাঁচজন বিশেষভাবে উলেস্নখযোগ্য। এঁরা সবাই যে সমান প্রতিভার ছিলেন তা নয়, কিন্তু সবাই ছিলেন নজরুল থেকে স্বতন্ত্র। নজরুলের তুলনায় এঁদের সামাজিক অবস্থান ও প্রতিষ্ঠা ছিল উঁচুতে। নজরুল অবশ্য তখন অত্যন্ত জনপ্রিয়, কারণ তিনি সাধারণ মানুষের জন্য, তাদের অনুভূতি নিয়ে লেখেন। তাঁর অবস্থান অনেকটা একজন ‘জনকবি’র মতো। ওই পাঁচজন তরুণ কবি হচ্ছেন সুধীন্দ্রনাথ দত্ত (১৯০১-৬০), বুদ্ধদেব বসু (১৯০৮-৭৪), অমিয় চক্রবর্তী
(১৯০১-৮৭), বিষ্ণু দে (১৯০৯-৮২), এবং জীবনানন্দ দাশ (১৮৯৯-৫৪)। এঁদের আবাস ছিল কলকাতায়, এঁরা সকলেই ইংরেজী 888sport live footballে উচ্চ শিক্ষা লাভ করেছেন, এবং প্রত্যেকেই কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে শিক্ষকতা করতেন; পাঁচজনেরই শিক্ষকতা কলকাতাতে, তিনজন আবার করেছেন আমেরিকাতে গিয়ে। নজরুলের আর্থিক পটভূমি ছিল ভিন্ন রকমের। সম্প্রদায়গত পরিচয়টাও অন্যরকম। তিনি কলকাতাতে একবারই এসেছিলেন; আর্মিতে যোগদানের সময়ে; আর্মিতে যোগ দিয়েছেন সতের বছর বয়সে, এবং কলকাতায় থাকার জন্য এসেছেন যুদ্ধশেষে আর্মি ভেঙে দেওয়ার পরে; তখন তাঁর স্থায়ী কোনো ঠিকানা ছিল না, থাকতেন বন্ধুদের সঙ্গে, এখানে সেখানে। এক বুদ্ধদেব বসু ছাড়া অন্যকারো সঙ্গেই নজরুলের পরিচয় ঘটেছে বলে জানা যায় না। বুদ্ধদেব বসুর সঙ্গে পরিচয় ঘটেছিল, কারণ নজরুল 888sport appয় গিয়েছিলেন, এবং তরুণদেরকে মাতিয়ে তুলেছিলেন; বুদ্ধদেব তখন 888sport appয় থাকতেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র অবস্থায় বুদ্ধদেব বসু এক সময়ে ভীষণ হতাশায় ভুগছিলেন, যে-কথা তিনি তাঁর কলকাতার বন্ধু অচিমত্ম্যকুমার সেনগুপ্তকে জানিয়েছেন। বুঝতে পারছিলেন না কি করবেন; বন্ধুকে লিখেছিলেন যে ‘‘প্রচ- হতাশা থেকে মনে হয় ভয়ঙ্কর কিছু একটা করে ফেলি, চুরি, খুন বা বিয়ে, কিন্তু হায় – সেটুকু সৎসাহসও যদি থাকতো।’’৩ নজরুলের জন্য এমন ঘটনা কখনো ঘটে নি। ভয়ঙ্কর সঙ্কটের মধ্যে থেকেও তিনি আশা হারান নি। এটাও বোধ করি তাৎপর্যহীন নয় যে নজরুলের কোনো 888sport alternative link নিষিদ্ধ হয় নি, নিষিদ্ধ হয়েছে 888sport app download apk ও গদ্য রচনার বই; বুদ্ধদেব বসুর 888sport alternative link রাত ভর বৃষ্টি (১৯৬৭) কিন্তু নিষিদ্ধ হয়েছিল, তবে বৈপস্নবিক বক্তব্যের জন্য নয়, অশস্নীলতার দায়ে।
বুদ্ধদেবের রচনাতে যৌবনের বিদ্রোহ আছে, কিন্তু পীড়নটা সেখানে রাষ্ট্রীয় নয়, ব্যক্তিগত। তিনি যে ডিএইচ লরেন্সের অনুরাগী ছিলেন সেটা বোঝা যায়, কিন্তু সেই লরেন্সের নয়, পুঁজিবাদকে যিনি অভিশাপ দিতেন, অপর লরেন্সের যিনি নর888sport promo codeর সম্পর্ক বিষয়ে খোলামেলা লিখেছিলেন এবং অশস্নীলতার দায়ে অভিযুক্ত হয়েছিলেন। বুদ্ধদেবের প্রিয় কবি বদলেয়ার, নজরুল পছন্দ করতেন হুইটম্যানকে। বদলেয়ার-হুইটম্যানে দূরত্বটা অনতিক্রমণীয় বৈকি। ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস যখন ‘বন্দেমাতরম’কে জাতীয় সঙ্গীত করার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়ে, বুদ্ধদেব তখন বন্দেমাতরমের পক্ষে লিখেছেন, তা নিয়ে রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে মনোমালিন্য পর্যন্ত ঘটেছিল।
নজরুলের যেমন, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের (১৮৭৬-১৯৩৮) ভেতরও তেমনি কোনো হতাশা কাজ করে নি। শরৎচন্দ্র স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র তরুণদের পক্ষে লেখা তাঁর পথের দাবী 888sport alternative link নিষিদ্ধ হয়ে যায়, তখন রবীন্দ্রনাথকে তিনি অনুরোধ করেছিলেন প্রতিবাদ করার জন্য; রবীন্দ্রনাথের প্রতিক্রিয়াটা ছিল খুবই যুক্তিযুক্ত, যদিও তখনকার পরিস্থিতিতে কিছুটা নিষ্ঠুরই। তিনি বলেছিলেন যে, ইংরেজের ক্ষমার ওপর নির্ভর করে তাদের কাজের সমালোচনা করাটা নৈতিক ভাবে যথার্থ নয়; ইংরেজের বিরুদ্ধে অবশ্যই লিখতে হবে, কিন্তু লিখলে লিখতে হবে বিপদের ঝুঁকি নিয়েই। তাছাড়া বইটি নিষিদ্ধ যে হয়েছে তাতে তো এটাই বোঝা গেল যে, সেটি খুব শক্তিশালী রচনা। রবীন্দ্রনাথ অবশ্য এটাও বললেন যে, নানা দেশে ঘুরে তিনি যেসব বিদেশী শাসন দেখেছেন, তার ভেতর ইংরেজের শাসনই তুলনামূলক ভাবে অধিক সহনশীল। নজরুলের বইও নিষিদ্ধ হয়েছে, একটি নয়, পরপর ছয়টি; রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে তিনি নিজেও জেল খেটেছেন; কিন্তু প্রতিবাদের জন্য কাউকে কখনো অনুরোধ করেন নি। প্রতিবাদ যা ঘটেছে তার সবটাই ছিল স্বতঃস্ফূর্ত।
বিপস্নব সম্পর্কে শরৎচন্দ্রের ধারণা এবং নজরুলের ধারণাতেও বিস্তর ব্যবধান। শরৎচন্দ্রের সব্যসাচী চাইছিলেন ‘ভদ্রলোকের’ বিপস্নব, নজরুলের স্বপ্ন ছিল সামাজিক বিপস্নবের। ‘সব্যসাচী’ নামের একটি 888sport app download apkতে নজরুল ভদ্রলোক বিপস্নবীদেরকে নিয়ে বেশ হাসি-ঠাট্টা করেছেন। মৃত্যুক্ষুধাতে গরীব মানুষদের কথা বলতে গিয়ে লিখেছেন, ‘‘দুঃখের বোঝা যদি এদের এত বিপুল না হয়ে উঠত, তাহলে এরাও এতদিনে ভদ্রলোকের মতো মানুষ জাতির মহাশত্রম্ন হয়ে দাঁড়াত – বড় বড় যুদ্ধ বাধিয়ে দিত।’’ যে চিত্তরঞ্জনকে তিনি গভীর ভাবে 888sport apk download apk latest version করতেন, তাঁর উদ্যোগে গৃহীত বেঙ্গল-প্যাক্টের অমত্মঃসারশূন্যতাকে ব্যঙ্গ করে তিনি লিখেছেন যে, এটি হচ্ছে টিকি ও দাড়ির আগলা গেরো, টানাটানিতে যা বিপজ্জনকভাবে শক্ত হয়ে যাবে। 888sport app download for androidীয় যে বঙ্কিমচন্দ্রও সামাজিক বিপস্নবের বিপদ সম্পর্কে সোজাসুজি লিখে গেছেন। ভদ্রলোক বঙ্কিম এবং ভদ্রলোক শরৎচন্দ্র কৃষকের দুঃখে কাতর হতেন ঠিকই, কিন্তু কৃষক উঠে এসে সমাজটাকে বদলে দেবে এই সম্ভাবনায় ভয় পেতেন, ওদিকে নজরুল আগাগোড়াই ছিলেন কৃষকের পক্ষে। 888sport live footballিক জীবনের শেষ প্রামেত্ম এসেও তিনি চাষীর মুখে হাসি না দেখতে পেয়ে বলেছেন জেগে উঠতে, বিদ্রোহ করতে : ‘‘বাঁশের লাঠি পাঁচন তোর তাও কি হাতে নাই?/ না থাকে তোর দেহের রক্ত, হাড় ক’টাতো চাই।’’
ঈদ উপলক্ষে ‘কৃষকের ঈদ’ নামের 888sport app download apkয় জানতে চাইছেন ‘জীবনে যাদের হর রোজ রোজা ক্ষুধায় আসে নি নিদ/ মুমূর্ষু সেই কৃষকের ঘরে এসেছে কি আজ ঈদ?’ 888sport app download apkটি শেষ করেছেন আশার এই কথা বলে : ‘‘সমাধির পাশে গুণিতেছি দিন আসিবেন তিনি কবে/ রোজা এফতার করিব সকলে, সেই ক্ষণে ঈদ হবে।’’ স্বরাজ সম্পর্কে বলতে গিয়ে নজরুল মন্তব্য করেছেন, ক্ষুধাতুর শিশু স্বরাজ চায় না, চায় কিছু ভাত ও নুন। পেটি বুর্জোয়াদের বিপস্নবী আওয়াজে নজরুলের বিন্দুমাত্র আস্থা ছিল না।
নজরুলের ‘আধুনিক’ সমসাময়িকরা যে কৃষকের ভাগ্য নিয়ে দুশ্চিমত্মাগ্রস্ত ছিলেন এমনটা জানা যায় না। এঁদের ভেতর সবচেয়ে প্রতিভাবান কবি হলেন জীবনানন্দ দাশ; তাঁর সঙ্গে নজরুলের ব্যক্তিগত পরিচয়ের বিষয়ে জানা না-গেলেও নজরুলের 888sport app download apk যে তাঁর অজ্ঞাত ছিল না সেটা বোঝা যায় তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ঝরাপালক পাঠ করলে, যেখানে নজরুলের প্রভাব ভালোভাবেই উঁকিঝুঁকি দেয়। বাংলার মানুষ ও প্রকৃতি নিয়ে জীবনানন্দ অবি888sport app download for androidীয় 888sport app download apk লিখেছেন; পুঁজিবাদের কথা উলেস্নখ না-করলেও সে ব্যবস্থা মানুষের জন্য যে কেমন দুর্ভোগ নিয়ে এসেছে তা তিনি মর্মে মর্মে বুঝতেন; কলকাতার ট্রাম লাইনের বিসর্পিল বিস্তার তাঁকে প্রীত করতো না, এবং চলন্ত ট্রামের আঘাতে যে তিনি প্রাণ হারালেন,
এ-ঘটনার ভেতর একটা প্রতীক দেখতে চাইলে দেখতে পাওয়া যাবে বৈ কি, তবে যে বাংলার কথা তাঁর 888sport app download apkয় আছে তাতে মাঠের শস্য রয়েছে, কিন্তু কৃষক দৃশ্যমান নয়। আর আছে হতাশা। জীবনানন্দের প্রিয় ঋতু হেমন্ত, প্রিয় রং হলুদ; নজরুলের পছন্দ গ্রীষ্ম ও বর্ষা। হলুদ যে তাঁর 888sport app download apkয় নেই তা নয়, কিন্তু যে রং-এর কথা তাঁর লেখায় বারবার আসে সেটা লাল, যাকে তিনি এবং অন্যরাও বিপস্নবের রং বলেই জানেন। নজরুল সম্পর্কে বুদ্ধদেবের এই উক্তিটি বিখ্যাত যে বাইশ বছর ধরে, ওই কবি একজন প্রতিভাবান যুবকের মতোই লিখে গেলেন, বাড়লেন না; বুদ্ধদেবের যৌবন ও নজরুলের যৌবন অবশ্য এক রকমের নয়। নজরুলের 888sport app download apk জনপ্রিয় ও শুনতে ভালো হলেও তাঁর ভেতরে গভীর চিমত্মার অভাব থাকার দরুন তা মহৎ 888sport app download apk হয়ে উঠতে পেরেছে কি না সে নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন জীবনানন্দও। সভ্যতা যে গভীর এক অসুখে ভুগছে
এ-বিষয়ে জীবনানন্দের উপলব্ধি ছিল গভীর, তাঁর নিজের 888sport app download apkর দার্শনিকতার বিষয়েও সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই, তবে বলতেই হয় যে নজরুলের 888sport app download apkয় দার্শনিকতার অভাব এ-অভিযোগ তাঁরাই করতে পারেন যাঁরা তাঁর লেখা ভালো করে পড়েন নি বা তাঁর রচনার প্রতি সহানুভূতিশীল নন। আধুনিক কবিদের পাঁচজনের কারোই নজরুলের ব্যাপারে আগ্রহ ছিল না, সে জন্য তাঁরা তাঁকে বুঝতে চান নি, বুঝতে পারেনও নি; যেন এপার গঙ্গা ওপার গঙ্গা, মধ্যিখানে কিছু নেই। মূল অবস্থা ব্যবধান শ্রেণী ও সংস্কৃতির।
আধুনিকদের ভেতর মার্কসবাদে আগ্রহ ছিল একজনেরই; তিনি বিষ্ণু দে, কিন্তু তিনি আবার প্রভাবের ভেতর ছিলেন টিএস এলিয়টের, যাঁর দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গিকে তিনি অবৈজ্ঞানিক বলে জানতেন ঠিকই কিন্তু তবু ভাবতেন দর্শনের মার্কসের সঙ্গে 888sport app download apkর এলিয়টের মিলন ঘটানো অসম্ভব নয়। মার্কসবাদ সম্পর্কে সুধীন্দ্রনাথ দত্ত জানতেন, কিন্তু
ওই মতবাদের দার্শনিকতা ও বাস্তবে তার প্রয়োগের ভেতর বিস্তর পার্থক্য দেখতে পেয়ে মার্কসবাদ বিরোধীই হয়ে পড়েন। তাঁর মতে, উটপাখি হয়ে বাঁচবার উপায় নেই বটে, তবে আশা নেই জনতার সঙ্গে মিতালীতেও, যেটুকু আছে তা আছে ব্যক্তিগত প্রেমে। অমিয় চক্রবর্তী প্রতিক্রিয়াশীল ছিলেন না, তবে রক্ষণশীল ছিলেন, এবং আশা করতেন কোনো এক শক্তি ঝড়ো হাওয়া এবং খোলা জানালার পোড়ো বাড়ীটাকে মিলিয়ে দেবে। এঁরা সবাই কিন্তু রবীন্দ্র বলয়ের ভেতরেই ছিলেন, যদিও রবীন্দ্রনাথের ধরনে কেউই লিখতেন না; কারণ যুগ ও রুচি বদলে গিয়েছিল। অমিয় চক্রবর্তী তো এক সময়ে রবীন্দ্রনাথের 888sport live football সচিব হিসেবে কাজই করেছেন, এবং গান্ধী যখন নোয়াখালীতে আসেন তখন স্বল্পসময়ের জন্য হলেও গান্ধীকে তিনি দেখতে যান। এটা বাস্তবিক সত্য যে গান্ধী ও রবীন্দ্রনাথের ভেতর মতাদর্শিক পার্থক্য ছিল, কিন্তু আবার মিলও যে ছিল না এমন নয়। সুধীন্দ্রনাথ দত্তের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের ব্যক্তিগত ঘনিষ্ঠতা ছিল; রবীন্দ্রনাথের জাপান ও আমেরিকা 888sport slot gameের সময় সুধীন্দ্রনাথ একবার সঙ্গে গিয়েছিলেন। ওদিকে নজরুল তো করাচীর বাইরেই কখনো যান নি।
আধুনিক কবিরা সবাই রবীন্দ্রনাথের কাছ থেকে প্রশংসার অপেক্ষায় থাকতেন; 888sport app download apk পাঠাতেন অনুমোদনের জন্য, এবং অনুমোদন যে সর্বদা পেতেন এমনও নয়। নজরুলের ক্ষেত্রে এমনটা ঘটার সুযোগ ছিল না। নজরুলের 888sport app download apk রবীন্দ্রনাথ সাময়িক পত্রিকায় পাঠ করেছেন এবং পাঠামেত্ম আপনজনদের কাছে রচনাশক্তির প্রশংসা করেছেন। আধুনিক কবিদের কারো কারো লেখা সম্পর্কে তাঁর অভিযোগ ছিল সহজবোধ্যতার অভাবের। কিন্তু এলিয়ট যে বলেছেন খাঁটি 888sport app download apkকে বুঝবার আগেই 888sport app download apk বলে চেনা যায়, সেই বক্তব্যটা নজরুলের ক্ষেত্রে যতটা সত্য এলিয়টভক্তদের কারো ক্ষেত্রেই ততটা সত্য ছিল না। তাঁরা সহজে লিখতে পারতেন না, এবং যা লিখতেন তা সবসময়ে সহজে বোঝা যেত না। নজরুলের লেখায় ছিল স্বতঃস্ফূর্ততা, কিন্তু সেইসঙ্গে ছিল 888sport live chatের কঠিন সংযম, যেটি গানের ভেতরে থাকে। সে জন্য তাঁর 888sport app download apk বোঝার আগেই হৃদয়ঙ্গম হয়ে যায় এবং হৃদয়ঙ্গম হবার পরে বোঝাটা আরো গভীর হয়।
রবীন্দ্রনাথ ইউরোপের আধুনিক কবিদের সম্পর্কে কোনো উচ্চধারণা পোষণ করতেন না। এলিয়টের বিষয়ে তাঁর মোটেই আগ্রহ ছিল না। তবে সাময়িক একটা সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল ডবস্নু বি ইয়েটসের সঙ্গে; দু’জনের মিলের জায়গাটা ছিল এই যে উভয়েই ছিলেন রোমান্টিক ধারার, প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা ছিল দু’জনেরই। আয়ারল্যান্ডের ইয়েটস আমেরিকা-থেকে-আগত এলিয়টের 888sport app download apkয় মধ্যবিত্ত জীবনের যে নির্বেদ ও একঘেয়েমি চিত্রিত হয়েছে সেটাকে পছন্দ করতেন না; রবীন্দ্রনাথের অপছন্দও ছিল ওই জায়গাতেই। তবে এলিয়টের ‘Journey of the Magi’ একটি ভিন্ন ধরনের 888sport app download apk। সেটির একটি 888sport app download apk latest version বিষ্ণু দে পাঠিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথের কাছে, দেখে দেবার জন্য; দেখতে গিয়ে রবীন্দ্রনাথ 888sport app download apkটির একটি আলাদা 888sport app download apk latest versionই করে ফেলেন। কিন্তু ওই পর্যন্তই।
নজরুলের সময়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছিল দু’টি সাময়িকী, কলেস্নাল এবং কালি-কলম। নজরুল এই পত্রিকার লেখকদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ছিলেন; তাঁদেরকে তিনি মাতিয়ে রাখতেন, তাঁকে তাঁদের মধ্যমণিই বলা চলে, আর কলেস্নাল যুগ বলে যদি কিছু থেকে থাকে তবে সেটা ছিল নজরুলেরই যুগ। কিন্তু কলেস্নাল-এর লেখকদের সঙ্গে নজরুলের একটা বড় পার্থক্য ছিল। তাঁরা অনেকেই সমাজ বাস্তবতার ছবি তুলে ধরতেন, কিন্তু কেউই নজরুলের মতো সমাজবিপস্নবী ছিলেন না। নজরুল যে ভাবে বলতেন মাথার ভেতর ‘চক্কর’ মারে বিপস্নবের বাজপাখি, কিংবা শুনতে পেতেন বিপস্নবের হ্রেষা, সেটা অন্যদের ক্ষেত্রে ঘটে নি। তাঁরা কেউই অতটা অগ্রসর হতে পারেন নি। আসল প্রতিবন্ধকটা ছিল কিন্তু পেটি বুর্জোয়া শ্রেণী-চরিত্র।
তিন
রবীন্দ্রনাথের পক্ষে পেটি বুর্জোয়া হওয়াটা ছিল অসম্ভব, কারণ তিনি ছিলেন কয়েক-পুরুষে প্রতিষ্ঠিত এক অভিজাত পরিবারের সদস্য; তবে নজরুল পেটি বুর্জোয়া হতে পারতেন, যদি ইচ্ছা করতেন। যুদ্ধে না-গিয়ে ছাত্রবৃত্তি ও স্ব-উপার্জনের সাহায্যে তাঁর পক্ষে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াটা কোনো কঠিন কাজ ছিল না, বিশেষ করে অসাধারণ রকমের প্রতিভাবান হওয়ার দরুন; কিন্তু সে-পথে তিনি যান নি। চলে গেলেন যুদ্ধে, চাকরীর খোঁজে নয়, অ্যাডভেঞ্চারের খোঁজে, হয়তো এই ধারণা থেকেও যে মাতৃভূমির জন্য লড়বেন, যেমনটা তাঁর ‘রিক্তের বেদন’ গল্পের নায়ক ভেবেছে। যুদ্ধশেষে আর্মির পরিচয় ব্যবহার করে অনায়াসে তিনি পুলিশে কিংবা ল্যান্ড-রেজিস্ট্রি অফিসে চাকরী পেতে পারতেন; কিন্তু সে আকাঙক্ষা তাঁর ভেতর মোটেই ছিল না। বস্ত্তগত বিবেচনায় জীবনের প্রাথমিক পর্যায়ে তাঁর সঙ্গে বুদ্ধদেব বসুর অবস্থানে যে খুব বড় একটা পার্থক্য ছিল তা নয়; কিন্তু তাঁদের গতি ছিল দু’টি ভিন্ন দিকে। ছাত্র অবস্থায় বুদ্ধদেব বসু প্রগতি নামে 888sport live footballবিষয়ক হাতেলেখা পত্রিকা বের করতেন, পরে অনেক সাধ্য সাধনায়, চাঁদা ও অনুদান সংগ্রহ করে সেটিকে ছাপিয়ে বের করেছিলেন; আর নজরুল যা করলেন তা সম্পূর্ণ অন্যরকমের কাজ। মুজফফ্র আহমদের সঙ্গে যোগ দিয়ে তিনি বের করলেন সান্ধ্য-দৈনিক নবযুগ; তার পরে সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টায় অর্ধ-সাপ্তাহিক ধূমকেতু। ধূমকেতু বিপস্নবের কথা বলতো, কিন্তু সে-বিপস্নবের চেহারাটা তখন পর্যন্ত স্পষ্ট হয় নি, যখন স্পষ্ট হয়েছে তখন ধূমকেতু পরিণত হয়েছে প্রথমে লাঙল-এ এবং পরে গণবাণীতে, কৃষক ও শ্রমিকদের বিপস্নবী আন্দোলনের মুখপত্রে। এসব পত্রিকায় যে 888sport live football অনুপস্থিত থাকতো তা নয়, নজরুলের 888sport app download apk তো থাকতোই এবং তাঁর ও অন্যদের গদ্যলেখাও হতো 888sport app download apkর মতোই প্রাণস্পর্শী।
রবীন্দ্রনাথ এবং নজরুলের পেটি বুর্জোয়া দৃষ্টিসম্পন্ন না হওয়াটা তাঁদেরকে কাছাকাছি এনেছে ঠিকই, কিন্তু শ্রেণীগত ভাবে দু’জনের দূরত্বটা 888sport app download for androidে না রাখলে তাঁদের সৃষ্টিকর্মের ব্যবধানটাকে সঠিকভাবে অনুধাবন করা যাবে না। মূল ব্যবধানটা অবশ্য এখানে যে নজরুল ছিলেন বিপস্নবী, রবীন্দ্রনাথ ছিলেন উদারনীতিক। এই দূরত্বটা তৈরীতে তাঁদের শ্রেণীগত পার্থক্যের ভূমিকাটা সামান্য নয়। নজরুল জন্মেছিলেন রবীন্দ্রনাথের ৩৮ বছর পরে; সময়ের এই দূরত্বটা বেশ বড়, কিন্তু অবস্থাগত দূরত্বটা ছিল অনেক বেশী প্রসারিত। রবীন্দ্রনাথের জন্ম ব্রিটিশ ভারতের রাজধানী কলকাতায়, সেই ঐতিহাসিক সময়টিতে ব্রিটিশরা যখন ভারতকে তাদের
জন্য সবচেয়ে মূল্যবান সম্পত্তি মনে করতো। ঠাকুর পরিবারের আদি-কর্তারা ভূমির খাজনা ও ব্যবসা থেকে প্রচুর বিত্ত অর্জন করেন, নীলের চাষও তাঁদের জন্য অজানা ছিল না। কলকাতা শহরে রবীন্দ্রনাথের পিতামহের একাধিক বাড়ী, অফিস, বাগানবাড়ী – এসব ছিল। পিতামহের দপ্তরে ইংরেজ ম্যানেজারও কাজ করতো। পিতামহ বিলেতে গেছেন দু’বার, এবং প্রথমবার গিয়ে চোখ-ধাঁধানো এত খরচপাতি করেছেন যে তাঁকে ‘রাজপুত্র’ (প্রিন্স) উপাধি দেওয়া হয়। দ্বিতীয়বার যাবার পর আর দেশে ফিরে আসেন নি, বিলেতে মৃত্যু হলে সেখানেই তাঁকে সমাহিত করা হয়। জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ী ছিল 888sport live chatচর্চার একটি প্রধান কেন্দ্র। রবীন্দ্রনাথের সময়ে ওই বাড়ী থেকে একাধিক পত্রিকা বের হতো। সঙ্গীতের চর্চা ছিল নিয়মিত। বাড়ীতে মঞ্চ ছিল যেখানে নাটক মঞ্চস্থ হতো। পরিবারের সদস্যরা লিখতেন, অভিনয় করতেন, আমন্ত্রিত অতিথিরা উপস্থিত থাকতেন। রবীন্দ্রনাথের পিতা দেবেন্দ্রনাথের উপাধি ছিল মহর্ষি, তিনি ব্রাহ্ম সমাজের সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত ছিলেন, তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা নামের গুরুত্বপূর্ণ সাময়িকী তাঁর ব্যবস্থাপনাতেই বের হতো। রাজনৈতিক মেলাও এখানে বসতো। শান্তিনিকেতনে তাঁদের পৃথক পারিবারিক আশ্রম ছিল, বিসত্মীর্ণ জমিদারী ছিল পূর্ববঙ্গে। রবীন্দ্রনাথ পিতামাতার চতুর্দশ ও শেষ সমত্মান। বড় ভাই ছিলেন দার্শনিক ও 888sport apkী; দ্বিতীয় ভ্রাতা প্রথম ভারতীয় আইসিএস-দের একজন। রবীন্দ্রনাথের বোনদের একজন ছিলেন ঔপন্যাসিক ও পত্রিকা সম্পাদক, ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের অধিবেশনে প্রথম যে অল্প কয়েকজন মহিলা উপস্থিত ছিলেন ইনি তাঁদেরও একজন। ঠাকুর বাড়ীর পুত্রবধূ ও মেয়েরা পোশাকে নতুন রীতি উপস্থিত করেছিলেন, স্বামীর সঙ্গে কেউ কেউ গড়ের মাঠে যেতেন, ঘোড়ায় চড়ে। রবীন্দ্রনাথের জন্য খুব উপকারে এসেছিল তাঁর ভ্রাতা জ্যোতিন্দ্রনাথের বন্ধুত্বপূর্ণ সাহচর্য; ইনি ছিলেন নাট্যকার ও সঙ্গীতজ্ঞ, তাঁর ছিল নানা ধরনের দেশপ্রেমিক চিমত্মা। জ্যোতিন্দ্রনাথের স্ত্রী কাদম্বরী দেবী ছিলেন রবীন্দ্রনাথের সমবয়স্ক, এবং তাঁর 888sport live footballচর্চার ক্ষেত্রে সহযোগী।
নজরুলের পারিবারিক পটভূমিতে এ ধরনের কোনো সুযোগ ও সুবিধাই ছিল না। তাঁর জন্ম বিহার সংলগ্ন প্রান্তিক, অত্যন্ত অনগ্রসর এক এলাকায়। ভূমিষ্ট হয়েছিলেন যে গৃহে সেটি ছিল খড় দিয়ে ছাওয়া এবং মাটিতে তৈরী। নয় বছর বয়সে তিনি তাঁর পিতাকে হারান। পিতার নাম কাজী ফকীর আহমদ, যে নাম আভিজাত্যের দ্যোতক নয়। তাঁর নিজের নাম দেয়া হয়েছিল দুখু মিয়া, কারণ পরিবারে অভাব ছিল সুখের, এবং সমত্মানরা বাঁচতোও না। জীবিকার জন্য শৈশবেই তাঁকে সংগ্রাম করতে হয়েছে; মসজিদের মোয়াজ্জিন, দরগার মোতাল্লি, এসব কাজ তিনি করেছেন। লেটোর দলে যোগ দিয়েছিলেন। রুটির দোকানে চাকরী করেছেন। নিজের বাড়ী থেকে অনেক দূরে ময়মনসিংহের এক দারোগা সাহেবের বাড়ীতে কিছু কাল থেকেছেন। কাজীরা মোগল আমলে হয়তো বিচারক ছিলেন, তাদের পরিবারে আরবী-ফার্সীর চর্চা থাকবার কথা; নজরুলের কালে সেসবের চিহ্ন কিছু ছিল, কিন্তু অভাব ছিল সারবস্ত্তর। তাছাড়া যে বাঙালী মুসলমান সমাজে নজরুলের জন্ম সেটিও প্রতিবেশী হিন্দু সমাজের তুলনায় ছিল কমপক্ষে পঞ্চাশ বছর পিছিয়ে। স্কুলের পড়াতে রবীন্দ্রনাথের কোনো আগ্রহ ছিল না; নজরুলও স্কুলের পড়া শেষ করতে পারেন নি; কিন্তু স্কুল ছেড়ে অল্পবয়সেই রবীন্দ্রনাথ গেছেন বিলেতে, একবার নয় দু’বার, প্রথমবার ছিলেন দেড় বছর, ভর্তিও হয়েছিলেন লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কলেজে; দ্বিতীয়বার গিয়েছিলেন তিন মাস; পরিবারের আশা ছিল ব্যারিস্টার হবেন অথবা আইসিএস, রবীন্দ্রনাথের আকাঙক্ষা ওই পথে এগোয় নি; তিনি জানতেন, অন্যকিছু নয়, তিনি কবি হবার জন্যই জন্মেছেন। নজরুলের জন্মও ওই কবি হবার দায় নিয়েই। তাঁর জন্য সুযোগ ছিল অত্যন্ত অল্প, কিন্তু সব সুযোগেরই তিনি সদ্ব্যবহার করেছেন; সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশে তাঁদের দুঃখ কষ্টে ও কল্পনার খবর পেয়েছেন, এবং তাদের পক্ষেরই একজন কবি হয়েছেন। সেনাবাহিনীতে গিয়ে শিখেছেন শৃঙ্খলা, পেয়েছেন একটি বড় জগতের দেখা। দারিদ্র্যকে জন্মাবধি জানতেন, কিন্তু দারিদ্র্য তাঁকে ভেঙে ফেলতে পারে নি, বিচ্ছিন্নও করে নি, সিক্ত করে নি আত্মকরুণায়, বরঞ্চ, যেমনটি তিনি তাঁর ‘দারিদ্র্য’ নামের 888sport app download apkটিতে বলেছেন, তাঁকে দিয়েছে অসংকোচ প্রকাশের দুরন্ত সাহস; তাঁর দৃষ্টিতে এনেছে স্বচ্ছতা, তাঁর শব্দকে করেছে তীক্ষন, এবং তিনি সুযোগ পেয়েছেন তাঁর বাঁশিকে তরবারিতে পরিণত করবার।
দুই কবির পশ্চাদভূমি, পরিস্থিতি ও লালন-পালনের ব্যবধান তাঁদের লেখা 888sport live footballে পড়বে না এমনটা তো সম্ভব ছিল না। আসলে নজরুলের মতো অবস্থা থেকে এর আগে বা পরে বাংলা 888sport live footballে অত বড় মাপের কোনো কবিরই অভ্যুদয় ঘটে নি। নজরুলের বিষয়বস্ত্ত, শব্দ, ছন্দ তার পটভূমির কাছ থেকে আনুকূল্য পেয়েছে। যে-নতুনত্ব তিনি নিয়ে এলেন তাতে পাঠক লেখক সবাই চমকে গেল। সত্য এটাও যে রবীন্দ্রনাথ বাংলা 888sport app download apkর উৎকর্ষকে এমন এক স্তরে পৌঁছে দিয়েছিলেন যে এরপরে অগ্রগতি মনে হচ্ছিল অসম্ভব।
পরিস্থিতিটা ছিল অনেকটা অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষে ইংরেজী 888sport app download apkর মতো। তখন ধারণা করা হচ্ছিল যে ইংরেজী ভাষায় কাব্যরচনার যে সম্ভাবনাগুলো ছিল আলেকজান্ডার পোপ তাদের সবগুলোই ব্যবহার করে ফেলেছেন, এর পরে 888sport app download apk নিয়ে আনাড়ির মতো নাড়াচাড়া করাটা হবে বিপজ্জনক, তাতে অগ্রগতির বদলে পশ্চাৎগমনই ঘটবে। বেস্নক, গ্রে, কুপারের মতো কবিরা নিজেদের মতো নতুন ধরনের 888sport app download apk লেখার চেষ্টা করেছেন কিন্তু নতুন ধরনের 888sport app download apk লিখবেন এমন শক্তি তাঁদের কারোই ছিল না। এর পর আবির্ভাব ঘটলো রোমান্টিক কবিদের; তাঁদের নিজেদের শক্তি তো ছিলই, পেছন থেকে বড় রকমের দু’টি বিপস্নবও তাঁদেরকে তাড়িত করেছে; একটি ফরাসী দেশের, অপরটি ইংল্যান্ডের। ফরাসী দেশেরটি সামাজিক, ইংল্যান্ডেরটি 888sport live chat-কারখানার। প্রথমটি অনুপ্রেরণায় এবং দ্বিতীয়টির ভীতিতে নতুন কবিরা ভাবে ও ভাষায় বিপস্নব নিয়ে এলেন; তাঁরা সম্পূর্ণ নতুন ধরনের 888sport app download apk রচনা শুরু করলেন। বাংলা 888sport app download apkও এ রকমের একটা পরিবর্তনের জন্য অপেক্ষা করছিল। নজরুলের রচনার ভেতর দিয়ে সেটাই ঘটলো; ইংরেজী কাব্যের বিপস্নবের মতো বড় মাপের নয় অবশ্যই, কিন্তু বড় এক পরিবর্তন বটে।
রবীন্দ্রযুগেই কয়েকজন কবি ভিন্ন ভাবে লিখছিলেন, কিন্তু কেউ-ই এতটা শক্তিশালী ছিলেন না যে নতুন একটা ধারা তৈরী করবেন। এঁদের মধ্যে দু’জন গুরুত্বপূর্ণ কবি হচ্ছেন মোহিতলালমজুমদার (১৮৮৮-১৯৫২) এবং সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত (১৮৮২-১৯২২)। এঁরা দু’জনেই কিন্তু নজরুলের আগমনের সঙ্গে সঙ্গেই টের
পেয়েছিলেন যে পরিবর্তনের এক ঘটনা ঘটে গেছে। মোহিতলাল মজুমদার 888sport live footballে শক্তির প্রকাশ দেখতে চাইতেন, তাঁকে দেহবাদীও বলা হয়; নিজে তিনি ফার্সী জানতেন এবং 888sport app download apkয় তথাকথিত মুসলমানী শব্দ ব্যবহার করতেন। অজানা এই তরুণের লেখা পড়ে তিনি তাতে ভাব ও ছন্দের মিল, ভেতরকার উদ্দীপনা ও আনন্দ, বিদ্রোহের প্রকাশ দেখে চমকে গিয়েছিলেন, এবং যে-পত্রিকায় নজরুলের 888sport app download apk ছাপা হচ্ছিল তার সম্পাদকের কাছে চিঠি লিখে এই নবীনকে 888sport live footballজগতে বরণ করে নেবার কথা বলেছিলেন। সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত পরিচিত ছিলেন ছন্দের জাদুকর হিসেবে, তাঁর
ছন্দ-ব্যবহারে ইংরেজ কবি সুইনবর্নের দক্ষতার সঙ্গে মিল দেখতে পেয়েছেন অনেকে; তিনি সাধারণ মানুষ ও সমসাময়িক বিষয়কে 888sport app download apkয় নিয়ে এসেছেন, তাঁর 888sport app download apkতেও আরবী-ফার্সী শব্দের ব্যবহার থাকতো। নজরুলের 888sport app download apkয় স্বচ্ছ দৃষ্টিভঙ্গির সাবলীলতা এবং হিন্দু-মুসলিম সংস্কৃতিকে পরস্পরের কাছে নিয়ে আসবার চেষ্টাকে তিনি অভিনন্দন জানিয়েছেন। নজরুলকে তিনি ব্যক্তিগতভাবেই জানিয়েছিলেন যে তাঁর 888sport app download apkর ওই দুই দিক রবীন্দ্রনাথকে প্রীত করেছে, এবং রবীন্দ্রনাথই তাঁকে নজরুলের 888sport app download apk পড়তে বলেছিলেন। সত্যেন্দ্রনাথ যে-খবরটা দিয়েছেন তাতে নজরুল বিশেষ ভাবে অনুপ্রাণিত বোধ করেছেন।৪ দুর্ভাগ্যক্রমে নজরুলের সঙ্গে দেখা হবার কয়েক মাসের মধ্যেই, ১৯২২ সালেই সত্যেন্দ্রনাথের মৃত্যু হয়। তাঁর মৃত্যুতে শোকাভিভূত নজরুল তিন তিনটি শোকগাঁথা লিখেছিলেন।
সমাজের বিভিন্ন অংশে কিন্তু বিরূপতা ছিল। দুই সম্প্রদায়কে কাছে আনবার সাংস্কৃতিক চেষ্টাকে অনেকেই পছন্দ করেন নি। হিন্দু মেয়েকে বিয়ে করাতে কট্টর হিন্দুত্ববাদীরা নজরুলের ওপর বিশেষ ভাবে ক্ষিপ্ত ছিলেন। ওদিকে আবার মুসলমান সমাজও হতাশ হয়েছে; মনে করেছে তিনি নাসিত্মক। মুসলমানী শব্দ ব্যবহারে হিন্দুত্ববাদীদের আপত্তি ছিল; এদের কয়েকজন রবীন্দ্রনাথকে পর্যন্ত এ ব্যাপারে বলবার জন্য উত্ত্যক্ত করেছে, যার ফলে তিনি ‘খুন’ শব্দ ব্যবহারে আপত্তি জানিয়ে বক্তব্য দিয়ে অবাঞ্ছিত এক বিতর্কের সৃষ্টি পর্যন্ত করেছিলেন। 888sport live footballের মধ্য দিয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠা সম্ভব বলে যে-শরৎচন্দ্র মনে করতেন তিনিও কিন্তু এমনকি ১৯৩৬ সালেও 888sport live footballে তথাকথিত মুসলমানী শব্দ ব্যবহারে আপত্তি জানিয়েছেন। প্রমথ চৌধুরী তাঁর নিজের লেখায়
আরবী-ফার্সী শব্দের অত্যন্ত সুন্দর ব্যবহারের জন্য খ্যাত; তিনিও তাঁর সবুজপত্রে নজরুলের প্রথম জীবনের একটি 888sport app download apk ছাপাতে রাজি হন নি; 888sport app download apkটি ছিল হাফিজের অনুকরণে লেখা। করাচী থেকে কলকাতায় এসে নজরুল তাঁর বাল্যবন্ধু শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে এক মেসে উঠেছিলেন, কিন্তু সেখানে থাকতে পারেন নি, ব্রাহ্মণ পাচকের আপত্তির কারণে। ১৯৪২ সালে মেদিনীপুরে 888sport promo codeদের এক সম্বর্ধনা সভায় নজরুলের গান শুনে অভিভূত হয়ে একটি মেয়ে মঞ্চে উঠে নিজের গলার হার খুলে নজরুলকে পরিয়ে দিয়েছিলেন, সেই অপরাধে তার ওপর যে সামাজিক চাপ পড়ে তাতে মেয়েটি শেষ পর্যন্ত আত্মহত্যা করে, বাঁচার জন্য। প্রমীলার সঙ্গে বিয়ের পরে হিন্দুপাড়ায় নজরুলের জন্য ঘর ভাড়া পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছিল।
888sport live footballিক মহলেও বিরূপ প্রতিক্রিয়া হয়েছে। শনিবারের চিঠি শুরু থেকেই তাঁর পিছনে লেগেছিল; সজনীকান্ত দাস একটি ব্যঙ্গ 888sport app download apkয় ‘ব্যাঙ’ বলে নজরুলকে চিত্রিত করেছেন, দেখিয়েছেন যে ব্যাঙটি খুব লাফায়। গোলাম মোস্তফা ‘নিয়ন্ত্রিত’ নামে 888sport app download apk লিখে নজরুলকে পরামর্শ দিয়েছেন বিদ্রোহ না করে বুদ্ধিমানের মতো আখের গুছিয়ে নেয়ার। নজরুল অবশ্য অতটা বুদ্ধিমান হতে পারেন নি।
চার
নজরুলের আগমন কেবল যে একটি চাঞ্চল্যকর ঘটনা ছিল তা নয়, এ ছিল নতুন একটি যুগের আগমন বার্তা। নজরুল নতুন যুগটাকে মূর্ত করে তোলেন। যুগের তিনি স্রষ্টা নন, যুগের মুখপাত্র। এই সত্যটা তখনকার বিশিষ্টজনেরা কেউ কেউ ঠিকই উপলব্ধি করেছিলেন। সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত সে-ভাবেই নজরুলকে দেখেছেন। ১৯২৯-এ নজরুলকে যে নাগরিক সম্বর্ধনা দেওয়া হয় তাতে সভাপতিত্ব করেন 888sport apkী প্রফুলস্নচন্দ্র রায়; তিনি বলেছিলেন, নজরুল একজন প্রতিভাবান মৌলিক কবি। ‘রবীন্দ্রনাথের আওতায় নজরুল প্রতিভা পরিপুষ্ট হয় নি। তাই রবীন্দ্রনাথ তাঁকে কবি বলে স্বীকার করেছেন।’ সভায় সুভাষচন্দ্র বসুও ছিলেন, তিনি বলেছিলেন, ‘আমরা যখন যুদ্ধ ক্ষেত্রে যাব তখন গাওয়া হবে নজরুলের গান, যখন কারাগারে যাব, তখনও গাইব নজরুলের গান।’ ভবিষ্যদ্বাণী সত্য হয়েছে। অভিনন্দনের উত্তরে নিজের ভূমিকা সম্বন্ধে নজরুল যা বলেছিলেন তাও তাঁর সম্পর্কে পুরোপুরি সত্য। বলেছিলেন, ‘বিংশ শতাব্দীর অসম্ভবের সম্ভাবনার যুগে আমি জন্মগ্রহণ করেছি। এরই অভিযান সেনাদলের তূর্যবাদক আমি।’৫
‘মাভৈঃ মাভৈঃ নবযুগ এলো ওই’ এই বাণী তাঁর 888sport app download apkয় ও গদ্যলেখায় প্রবল ভাবে রয়েছে। নিজের একটি 888sport live সঙ্কলনের নাম দিয়েছেন যুগবাণী। তাঁর দৈনিকের নাম ছিল নবযুগ। ‘বর্তমানের কবি আমি ভাই’, এই কথাটা খুব জোর দিয়ে বলেছেন। এই যুগটা রবীন্দ্রনাথের পরবর্তী; এটি ১৯১৭-এর রুশ বিপস্নবের পরের যুগ। ততদিনে স্বদেশী আন্দোলন শুরু হয়েছে। ১৯০৮ সালে তাঁর একটি 888sport liveে বেগম রোকেয়া লিখেছেন যে, বাঙালী পুরুষরা আর মেয়েলী নয়, তারা বেশ পুরুষসুলভ। বোঝা যায় রোকেয়ার দৃষ্টিতে পরিবর্তন আসার কারণ হলো এই যে ততদিনে ক্ষুদিরাম বসু ও প্রফুলস্ন চাকী স্বাধীনতার জন্য প্রাণ দিয়েছেন।
ওই নতুন যুগকে তথাকথিত রেনেসাঁসের পূর্ণতা লাভের কাল বলবার কোনো উপায় নেই। প্রথমত রেনেসাঁস বলতে তেমন কিছু ঘটেই নি; যা ঘটেছিল তার ভেতরে রক্ষণশীলতার বিস্তর উপাদান ছিল; কারণ আন্দোলনটি নতুন মধ্যবিত্ত শ্রেণী তৈরী করেছিল। তার আনুগত্য ছিল ব্রিটিশ শাসনের প্রতি এবং তার ভয় ছিল কৃষকের অভ্যুত্থানকে। ১৮৫৭-এর পরে এই শ্রেণী সামনে আসে; সিপাহী অভ্যুত্থানের এরা বিরোধিতা করেছে, কৃষক-নিষ্পেষক চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত যাতে বিদ্যমান থাকে তার জন্য
ফন্দি-ফিকির এঁটেছে। রামমোহন ছিলেন ওই যুগের প্রথম মুখপাত্র; তিনি অনেক ক্ষেত্রেই অসাধারণ মাত্রায় প্রগতিশীল, কিন্তু অন্যদিকে তিনি আবার সমর্থক ছিলেন ইংরেজের ঔপনিবেশিকতার। ধর্মে তিনি আগ্রহ হারান নি, হিন্দুধর্ম সংস্কার করে ব্রাহ্মধর্মের তিনিই প্রতিষ্ঠাতা। উলেস্নখযোগ্য আরেক ব্যক্তি; রাধাকান্ত দেব (১৭৭৩-১৮৬৭)। তাঁকে মনে করা হতো বেশ আধুনিক, হিন্দু কলেজ প্রতিষ্ঠায় যিনি সাহায্য করেন, বিভিন্ন ভাষা জানতেন,
মাতৃভাষার চর্চাকে উৎসাহ দিতেন। কিন্তু ডিরোজিওকে কলেজ থেকে বিতাড়িত করাতেও ভূমিকা রাখেন। সতীদাহ সমর্থন করতে এবং বিধবা-বিবাহের বিপক্ষে অবস্থান নিতে তিনি দ্বিধা করেন নি। শেষ বয়সে তিনি আশ্রয় নেন বৃন্দাবনে। ব্যক্তিগত জীবনে মাইকেল মধুসূদন প্রায় বিপস্নবীই ছিলেন, কিন্তু 888sport live footballে মুখের ভাষা চলবে না বলে জানতেন, এবং মেঘনাদ বধ কাব্যে প্রমীলাকে বীর হিসেবে উপস্থিত করে আবার স্বামীর সঙ্গে সহমরণে প্রেরণ করেছিলেন। বিদ্যাসাগর ধর্মকর্মে মোটেই উৎসাহী ছিলেন না। সমাজ সংস্কারে তাঁর অঙ্গীকার ছিল অবিচলিত, কিন্তু তাঁর জগৎ ছিল
কৃষকশূন্য এবং মধ্যবিত্তদের উপর আস্থা পুরোপুরি হারিয়ে ফেলে শেষ বয়সে কোনো কৃষকপলস্নীতে না গিয়ে সাঁওতাল এলাকায় থাকবেন বলে স্থির করেন। শেষ বয়সে বঙ্কিমচন্দ্রও ধর্মের আশ্রয়ে চলে যান এবং বৃন্দাবনে না গেলেও মহাভারতের শ্রীকৃষ্ণের দ্বারস্থ হয়েছিলেন।
রবীন্দ্রনাথ সামাজিক-সাংস্কৃতিক বিকাশের এই অগ্রসরমান ধারাটিকেই এগিয়ে নিয়ে গেছেন। এর তিনি উজ্জ্বলতম প্রতিনিধি। বাংলা 888sport live footballকে তিনি সাম্প্রদায়িকতা থেকে মুক্ত করেছেন, এনেছেন বিশ্বজনীন উপাদান; বাংলা ভাষা ও 888sport live footballকে পরিচিত করেছেন আন্তর্জাতিক বিশ্বে। তবে অসাধারণ প্রতিভাবান ও যুগসচেতন মানুষ ছিলেন বলেই এটা তাঁর জানা হয়ে গেছে যে নতুন এক যুগ এসেছে এবং সে-যুগের জন্য নতুন মুখপাত্র প্রয়োজন হবে। রাজনীতিতে যেমন দেখছিলেন গান্ধী নেতৃত্ব দিচ্ছেন কিন্তু সামলাতে পারছেন না, প্রয়োজন হচ্ছে সুভাষ বসুর, 888sport live footballেও নতুন সুর ও স্বর আনতে হলো, নতুন কবির যে প্রয়োজন তা বুঝেছিলেন।
রবীন্দ্রনাথের সচেতনতা ও অগ্রসরমানতা দু’টোই অসামান্য। ১৮৯৩-তে তিনি 888sport app download apk লিখেছেন ‘এবার ফিরাও মোরে’ নামে, তাতে বলছেন মানুষের মূঢ় মস্নান মূক মুখে ভাষা দিতে হবে, শ্রন্ত শুষ্ক ভগ্ন বুকে ধ্বনিত করতে হবে আশা। তাঁর ‘দুই বিঘা জমি’তে ভূমি থেকে কৃষকের উৎপাটনের কথা আসছে, ছিন্নপত্রাবলীতে কৃষক পরিবারের দুর্দশার ছবি উঠে এসেছে; কিন্তু তিনি জানেন যে কৃষককে তিনি 888sport live footballে নিয়ে আসতে পারেন নি। ১৯৩১-এ ‘প্রশ্ন’ 888sport app download apkয় জানাচ্ছেন যে তিনি দেখেছেন প্রতিকারহীন শক্তের অপরাধে বিচারের বাণী কীভাবে নীরবে নিভৃতে কাঁদছে; বলেছেন, ‘আমি যে দেখিনু, তরুণ বালক উন্মাদ হয়ে ছুটে/ কী যন্ত্রণায় মরেছে পাথরে নিষ্ফল মাথা কুটে’; প্রশ্ন করছেন ভগবানকে, এই শোষণ-নিপীড়নের জন্য যারা দায়ী ‘তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কে বেসেছো ভালো?’ ইতিমধ্যে তিনি সোভিয়েত ইউনিয়নে সমাজ বিপস্নবের অসাধারণ সাফল্য দেখে এসেছেন। কি করতে হবে এ প্রশ্নের জবাব তাঁরা দিয়ে দিয়েছে। কিন্তু যে উদার মানবতাবাদের তিনি প্রতিনিধি সেটির পক্ষে ওই পথকে মেনে নেওয়াটা সম্ভব হয় নি। ১৯৪১-এ লেখা ‘ওরা কাজ করে’ 888sport app download apkয় মেহনতীদের কথা প্রচুর মমতাসহ লিখেছেন; তিনি দেখেছেন যে, ‘‘ওরা চিরকাল/ টানে দাঁড়, ধরে থাকে হাল/ ওরা মাঠে মাঠে বীজ বোনে পাকা ধান কাটে’’। সভ্যতা আসে যায়; ‘‘শত সাম্রাজ্যের পরে/ ওরা কাজ করে।’’ সভ্যতা ওদেরই শ্রমে তৈরী হয়। কিন্তু নিজের উদারনৈতিক অবস্থানের কারণে বলতে পারেন নি ওদের মুক্তি কি ভাবে সম্ভব। নতুন যুগের কবি নজরুলের কিন্তু জানা হয়ে গেছে যে মুক্তির পথটা হচ্ছে সমাজ বিপস্নব। নতুন কবি প্রশ্ন করেন নি, সরাসরি জবাব দিয়ে দিয়েছেন। তাঁর প্রথম 888sport app download apkর বই অগ্নি-বীণার প্রথম 888sport app download apk, ‘প্রলয়োলস্নাস’; তাতে যে-জয়ধ্বনি তোলা হয়েছে সেটা রুশ বিপস্নবের পক্ষেই, যদিও
সে-কথা উলেস্নখ করা হয় নি; সম্ভব ছিল না উলেস্নখ করা। একটা গল্পে ‘লাল ফৌজ’ লিখেছিলেন, পত্রিকায় প্রকাশের সময় ‘লাল ফৌজ’ কেটে মুজফ্ফর আহমদ বসিয়ে দিয়েছিলেন ‘মুক্তিসেবক সৈন্যদল’। টিকটিকিরা ভয় দেখাত।
স্থবির থাকা অসম্ভব ছিল রবীন্দ্রনাথের জন্য। তাঁর চিমত্মার অগ্রগতির অসংখ্য নিদর্শন রয়েছে। নাটকের দিকে তাকালে অগ্রগমনটা সহজেই দৃশ্যগোচর হয়। ১৮৯৬-তে তিনি নাটক লিখেছেন বিসর্জন; সেখানে ধর্মের নামে মানুষ ও পশুহত্যার বর্বরতাকে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। ১৯১২-তে লিখেছেন ডাকঘর, যে নাটকে ব্যক্তি স্বাধীনতার বিষয়টা এসেছে। একই বছরে লেখা অচলায়তন। সেখানে ব্যক্তির সঙ্গে সমষ্টির স্বাধীনতার প্রশ্নটিও যুক্ত হয়েছে। এই তিনটি নাটকেই ক্ষমতার অপপ্রয়োগের বিষয়টি রয়েছে। ১৯২২ সালে লেখা নাটক মুক্তধারাতে নদীতে বাঁধ দিয়ে উপরের এলাকার ক্ষমতাবানরা নীচের এলাকার মানুষদের নিপীড়ন করছে, ছবিটা এই রকমের। অত আগেই কবি দেখতে পাচ্ছিলেন নদী কী ভাবে ক্ষমতা-লোলুপতার শিকার হবে। ১৯২৬-এ এলো রক্তকরবী। সে-নাটকে দেখানো হয়েছে পুঁজিবাদী ব্যবস্থা কেমন করে প্রকৃতির প্রাণ এবং মেহনতী মানুষের শ্রমশক্তিকে শোষণ করছে। উদারনৈতিক দ্বিধার কারণেই হবে, দ্বন্দ্বটিকে তিনি পুঁজিবাদী বলে চিহ্নিত করে দেন নি। বলেছেন বিরোধ চলছে কর্ষণজীবীদের সঙ্গে আকর্ষণজীবীদের। ১৯৩২-এ রবীন্দ্রনাথ লেখেন কালের যাত্রা নামের নাটক। সেখানে দেখা যাচ্ছে ইতিহাসের চাকা অচল হয়ে গেছে; কারণ রাজা, ব্রাহ্মণ, সৈনিক এইসব মানুষগুলো নিজ নিজ শ্রেণী স্বার্থের সেবা করেছে, মানুষ ও প্রকৃতির দিকে তাকায় নি, ফলে ইতিহাসের রথের চাকা এক দিকে হেলে পড়েছে, চাকা গেছে দেবে, চারদিকে অভাব ও দুঃখ দেখা দিয়েছে। রথকে চালু করা চাই, নইলে সর্বনাশ ঘটে যাবে। একে একে সবাই চেষ্টা করলো, রথ নড়লো না; খবর পেয়ে চলে এসেছে মেহনতী মানুষ, তারা এসে হাত লাগাতেই রথ চালু হয়ে গেল। মেহনতীদেরকে রবীন্দ্রনাথ অবশ্য সরাসরি মেহনতী বলছেন না, বলছেন শূদ্র; তা সত্ত্বেও এ নাটকে ১৯১৭-পরবর্তী সময়ের চেতনার প্রতীকী তাৎপর্যটা বেশ সুদৃঢ়। বোঝা যাচ্ছে ইতিহাসের চাকাকে শেষ পর্যন্ত মেহনতী মানুষই চালু রাখবে, অন্যকেউ পারবে না। তবু, এখানেও, উদারনীতির সতর্কতার বাণীটা আছে। নাটকে একজন কবি রয়েছেন, যিনি সবটা বোঝেন; তিনি জানাচ্ছেন অতীতের শাসকেরা ছিল একপেশে, সবকিছু তারা নিজের দিকে টেনেছে; ভবিষ্যতে রথের চালক শূদ্ররাও যদি একপেশে হয় তবে রথের চাকা আবারও দেবে যাবে। অসামান্য কল্পনাক্ষমতা রবীন্দ্রনাথের, কিন্তু তিনিও এমন একটা ব্যবস্থার কথা ভাবতে পারেন নি যেখানে শ্রেণী থাকবে না এবং অবসান ঘটবে ব্যক্তিগত সম্পত্তির। পরবর্তী নাটক তাসের দেশ, তাতে দেখানো হয়েছে যে একটি দেশের সব মানুষ তাস হয়ে গেছে। তারা আইনের শাসন মানে, অন্যকিছু জানে না, মানে না। তাসেরা অবশ্য শেষ পর্যন্ত মানুষ হলো, স্বাধীনতার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ভিনদেশের এক রাজপুত্রের আগমনের ফলে। দ্বিতীয় সংস্করণে তাসের দেশ নাটকটি উৎসর্গ করা হয় সুভাষচন্দ্র বসুকে। অর্থাৎ একজন ব্যক্তি নায়ককে। রবীন্দ্রনাথ নায়ক হিসেবে ব্যক্তিকেই দেখতে পছন্দ করতেন, জনসমষ্টিকে নয়। সে জন্যই রক্তকরবীতে নিপীড়নবাদী রাজ্যের যে-পতন ঘটলো সেটা জন-অভ্যুত্থানে নয়। রাজ্যে অসমেত্মাষ দেখা দিয়েছিল, আরেকটু সময় পেলে নিপীড়িত মানুষ অভ্যুত্থান ঘটিয়ে ফেলতো; কিন্তু তেমন কিছু ঘটলো না। নন্দিনী নামের একটি মেয়ে রাজাকে তার স্বশাসিত অন্ধ গুহা থেকে বের করে আনলো। ব্যবস্থা বদলালো, রাজাও বেঁচে গেলেন। পরিবর্তনটা একটি মেয়েই ঘটালো। কিন্তু তাতে ব্যবস্থার ভেতরকার পিতৃতান্ত্রিকতার যে অবসান হলো এমন নয়; বোঝা যাচ্ছে রাজা রাজাই থাকবেন, যদিও ভিন্ন ভাবে। যারা বিদ্রোহ করবে বলে মনে হচ্ছিল রবীন্দ্রনাথ
কিন্তু তাদেরকে শ্রমিক বলেন নি, কৃষকও নয়; নাম দিয়েছেন কারিগর।
রবীন্দ্রনাথের 888sport alternative linkেও চিমত্মার উদারনৈতিক বিস্তার দেখা যাবে। গোরার (১৯১০) নায়ক ব্রাহ্মণ্যবাদের প্রতিষ্ঠা চায়, এবং ভারতের হিন্দু ঐক্যে বিশ্বাস করে। এই নায়কের সকল প্রচেষ্টার অমত্মঃসারশূন্যতা নির্মম ভাবে উদ্ঘাটিত হয়ে পড়ল যখন দেখা গেল যে গোরা নিজে ব্রাহ্মণ তো দূরের কথা, ভারতীয়ই নয়; তার জন্ম সিপাহী অভ্যুত্থানের সময়, তার মাতা ও পিতা উভয়েই আইরিশ, সিপাহীদের সঙ্গে সংঘর্ষে যাঁদের মৃত্যু ঘটে। ঘরে-বাইরে (১৯১৬) এবং চার অধ্যায় (১৯৩৪) ভারতের জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে নিয়ে লেখা, যে আন্দোলনে সহিংসতার প্রবেশকে রবীন্দ্রনাথ পছন্দ করেন নি। 888sport alternative link দু’টিতে আন্দোলনের নেতাদের ব্যক্তিগত স্বার্থই আন্দোলনের নিয়ামক হয়ে দাঁড়ায় এমনটা দেখানো হয়েছে। যোগাযোগ (১৯২৯) 888sport alternative linkের কেন্দ্রে আছে একটি শ্রেণি দ্বন্দ্ব; পতনের সম্মুখবর্তী এক জমিদারের সঙ্গে এক উঠতি মুৎসুদ্দী বণিকের দ্বন্দ্ব। দ্বন্দ্বটির পরিণতি করুণ হতে পারতো জমিদারটি যদি বণিকটির কাছে নত হতে অসম্মত হতো।
রবীন্দ্রনাথের পক্ষে যে এই নতুন যুগের মুখপাত্র হওয়া সম্ভব নয়, এটা তিনি মেনে নিয়েছেন। সে-কথাটা মৃত্যুর অনতিপূর্বে লেখা ‘ঐকতান’ 888sport app download apkতে আছে। তিনি বলছেন যে তিনি পৃথিবীর কবি, কিন্তু ‘বিপুলা বিশ্বের’ কতটুকুই বা জানেন। বিশেষ ভাবে জানা হয় নি নিজ দেশে কৃষকদের জীবনকথা। তাই তিনি প্রতীক্ষায় থাকবেন সেই কবির বাণীর জন্য কৃষাণের জীবনের যে শরিক হয়েছে, কর্মে ও কথায় যে ‘সত্য আত্মীয়তা করেছে অর্জন’। এর অল্প কয়েকদিন পরে লেখা ‘সভ্যতার সংকট’ 888sport liveে তিনি বলেছেন যে প্রয়োজন একজন নেতার। এই নেতা সম্পর্কে তাঁর ধারণা, ‘সভ্যতার দৈববাণী সে নিয়ে আসবে, মানুষের চরম আশ্বাসের কথা সে শোনাবে’। এবং আসবে সে পূর্ব দিগন্ত থেকে। নেতা কবি হতে পারেন, নায়কও হতে পারেন, দু’জনে মিলেমিশে একজন হওয়াও অসম্ভব নয়। নায়কে এই আস্থা উদারনীতিক রবীন্দ্রনাথ যে কখনোই হারান নি তাঁর 888sport live footballে তার বহু প্রমাণ মিলবে। যথার্থ নায়কের সন্ধান পাওয়া সেকালে কঠিন ছিল। অল্পকিছু সময়ের জন্য হলেও ফ্যাসিবাদী মুসোলিনীও তো তাঁর কাছে নায়ক হিসেবে দেখা দিয়েছে। উদারনীতির জগতে লেনিন অবশ্য পুরোপুরি অপ্রাসঙ্গিক।
রবীন্দ্রনাথ যার জন্য অপেক্ষায় ছিলেন সেই চাহিদা কি নজরুল মেটালেন? না, সেটা বলা যাবে না। যতই হোক নজরুল অতবড় নায়ক ছিলেন না যাতে তিনি বিপস্নবে নেতৃত্ব দেবেন। তাঁর শ্রেণী ও পরিবেশ তাঁকে সমর্থন দেয় নি। মুজফ্ফর আহমদরা যেমন বিপস্নবের নেতা হন নি, নজরুলের বেলাতেও সেই একই কথা সত্য। অন্য বিবেচনার সঙ্গে এটাও দেখতে হবে যে এঁরা ব্যক্তি নেতৃত্বে আস্থাশীল ছিলেন না, এঁদের চেষ্টা ছিল দল গড়বার, মানুষকে সচেতন ও উদ্বুদ্ধ করবার। ব্যক্তি নেতারা যে শেষ পর্যন্ত জনতার সাথে থাকে না এটা তাঁদের জানা হয়ে গিয়েছিল। তবে নজরুল যে নতুন যুগের বিপস্নবী আকাঙক্ষার একজন মুখপাত্র ছিলেন তাতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে নজরুলের মূল ব্যবধানটা আসলে যুগেরই, বাংলা 888sport live footballে তাঁরা দুই ভিন্ন যুগের প্রতিনিধি; একটি তখন শেষ হচ্ছে, অন্যটির শুরু। নজরুল নতুন যুগের মর্মবাণীটি ধরতে পেরেছিলেন, নইলে কেবল প্রতিভার জোরে অতবড় হতে পারতেন না।
যুগের ব্যবধান নানা ক্ষেত্রে ধরা পড়ে। ধরা যাক আমেরিকার প্রতি দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাপার, ১৯১৬-এর শেষে এবং ১৯১৭ এর শুরুতে রবীন্দ্রনাথ আমেরিকায় তাঁর Nationalism বক্তৃতায় জাতীয়তাবাদের কঠিন সমালোচনা করেন। যে-জাতীয়তাবাদের নিন্দা করেছেন সেটি অবশ্য সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধী জাতীয়তাবাদ নয়, সেটি হচ্ছে সাম্রাজ্যবাদী জাতীয়তাবাদ। ব্যাপারটাকেখুব স্পষ্ট বোঝা যেত তিনি যদি আমেরিকা ও ইউরোপের Nationalism-কে ভিন্ন নামে না ডেকে সরাসরি পুঁজিবাদী জাতীয়তাবাদ বলতেন। সেটা কিন্তু বলেন নি। উদারনীতিই তাঁকে নিবৃত্ত করেছে। 888sport app download for androidীয় যে উদারনীতি কিন্তু পুঁজিবাদ-বিরোধী নয়, তার শত্রম্নতা সমাজতন্ত্রের সঙ্গেই।
১৯১৬-১৭-তে আমেরিকা যখন সাম্রাজ্যবাদী ভূমিকা গ্রহণের জন্য ভীষণ ভাবে প্রস্ত্তত, এবং রুশ দেশ প্রস্ত্তত হচ্ছে বিপস্নবের জন্য, কয়েক মাস পরেই যেটা ঘটবে, রবীন্দ্রনাথ তখন আমেরিকাকে বলছেন পশ্চিমের বিপন্ন সভ্যতার পতাকা বহনকারীর ভূমিকা নিতে। বলছেন,
…I connot but think that it is the special mission of America to fulfil this hope of God and man. You are the country of expectation […] America is destined to justify Western civilisation to the East.৬
এই আমেরিকা কিন্তু মোটেই নজরুলের আমেরিকা নয়; নজরুল যে আমেরিকাকে পছন্দ করতেন সেটি হুইটম্যানের; সেটি গণতন্ত্রাভিমুখী এবং সাধারণ মানুষের অগ্রযাত্রায় কোলাহলে মুখর। ইংরেজদেরকে বিদায় করে আমেরিকানদের দ্বারস্থ হতে হবে এমন চিমত্মা নতুন বিপস্নবী যুগের প্রতিনিধির পক্ষে ধারণ করা সম্ভব ছিল না।
888sport app download for androidীয় যে রবীন্দ্রনাথ যখন বিশ্বরাজনীতিতে আমেরিকাকে প্রবেশের জন্য আহবান জানাচ্ছেন ততদিনে সাম্রাজ্যবাদী বিশ্বযুদ্ধে সে অতিপ্রত্যক্ষরূপে যুক্ত হয়ে গেছে। অল্পবয়সে রবীন্দ্রনাথ আমেরিকার মনোভূমিতে সহিংসতার উপস্থিতি বিষয়ে ছোট ছোট দু’টি 888sport live লিখেছিলেন; তাতে ওই সহিংসতার জন্য দাস ব্যবস্থা ও আদিবাসীদের ওপর নিষ্ঠুরতাকে অভিযুক্ত করা হয়েছিল; বিশ্বযুদ্ধে প্রবেশের কালে ও পরবর্তীতে আমেরিকার শাসক শ্রেণী কিন্তু সহিংসতাকে ত্যাগ করে নি, বরং আরও বিকশিত করেই তুলেছিল।
ধরা যাক তাদের দু’জনের জীবনের সূচনাপর্বের চাঞ্চল্যকর দু’টি 888sport app download apkর কথা : রবীন্দ্রনাথের নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ এবং নজরুলের বিদ্রোহী। 888sport live chatমূল্যের নয়, আমরা বক্তব্যের পার্থক্যটা দেখবো। রবীন্দ্রনাথের 888sport app download apkর বিষয় পাহাড়ী ঝর্ণার স্বপ্নভঙ্গ, নজরুলের বিষয় জাগ্রত মানুষের বিদ্রোহ। রবীন্দ্রনাথ বলছেন বিশ্বময় তিনি করুণার ধারা ঢালবেন, নজরুল সর্বদাই করুণার পক্ষে, কিন্তু তিনি বলতে চাইছেন করুণা যথেষ্ট নয়, অবসান ঘটনো চাই অত্যাচারী শাসনের।
রবীন্দ্রনাথের বীর শিশু তার মা’কে পাহারা দেবে, লড়বে সে দস্যুদের সঙ্গে; নজরুলের শিশু বলছে রাত্রিশেষে মা’কে সে জাগিয়ে দেবে; কেবল মা’কে নয়, জাগাবে সবাইকে, সবাই না জাগলে সকাল হবে কি করে? রবীন্দ্রনাথের শিশুটি যদি হয় জাতীয়তাবাদী বীর, তবে নজরুলের শিশু সমাজতন্ত্রীদের দলভুক্ত। রবীন্দ্রনাথের উপেনের তাও বিঘে দুই ভূমি ছিল, নজরুলের কৃষকের কোনো জায়গা-জমি নেই, সে এখন কুলি-মজুর। এই কুলি-মজুর যে বাউন্ডেলের মতো ঘুরে বেড়াবে তা নয়, তারা কাজ করবে শোষকদের অধীনে এবং শেষ পর্যন্ত শোষকদের কাছ থেকে তারা পাওনা আদায় করে নেবে, কেবল বাংলার ভূমিতে নয়, সারা বিশ্বে। এরা শ্রেণীসচেতন, অত্যাচারীর কাছে এরা ঋণী নয়, অত্যাচারীরাই এদের কাছে ঋণী, কারণ এদের শ্রমের ওপর ভর করেই অত্যাচারীরা দালান তুলেছে, বাষ্পশকটে-আকাশযানে চলাফেরা করছে। এরা বিচ্ছিন্ন থাকবে না, সংগঠিত হবে।
রবীন্দ্রনাথের রক্তকরবী এবং নজরুলের সেতু-বন্ধ প্রায় একই সময়ে লেখা; দুটিতেই মানুষ ও প্রকৃতির ওপর পুঁজিবাদী অত্যাচারের কথা রয়েছে। 888sport live chatমূল্যে রচনা দু’টির তুলনার প্রশ্নই ওঠে না। কিন্তু বক্তব্যের ক্ষেত্রে পার্থক্যটা লক্ষ্য করবার মতো। রক্তকরবীর রাজা এখনও মানুষই আছে, সেতু-বন্ধের রাজা কিন্তু মানুষ নয়, সে একটি যন্ত্র, তার নামই যন্ত্ররাজ। রক্তকরবীর রাজ্য চলে ধনসম্পত্তির দেবতা কুবেরের আদর্শে; সেতু-বন্ধের যন্ত্ররাজ্যের চালক নেপথ্যচারী কুটিল অর্থনীতিবিদ কৌটিল্য। যন্ত্ররাজার সিংহাসনের পেছনে সাম্য মৈত্রী স্বাধীনতা কথাগুলো কেটে দিয়ে লেখা রয়েছে বিদ্বেষ শোষণ পেষণ। রবীন্দ্রনাথের নাটকে রাজা মুক্ত হয় নন্দিনীর ডাকে, নজরুলের নাটকে যন্ত্ররাজ পদ্মার জলে নিক্ষিপ্ত হয় প্রকৃতির শক্তি এবং ভারবাহী মানুষ ও পশুর মিলনে। উভয় রাজত্বেই নেতৃত্ব 888sport promo codeর, তবে রক্তকরবী নাটকের শেষে পিতৃতান্ত্রিকতার যে অবসান ঘটবে এমন নয়; নতুন ব্যবস্থায় পুরুষই আবার রাজা হবে। সেতু-বন্ধের রাজা বলে সে আবার ফিরে আসবে; প্রকৃতির প্রতিনিধি পদ্মানদী, সে জানায় যতবারই সে আসুক ততবারই সে নদীতে নিক্ষিপ্ত হবে।
পিতৃতান্ত্রিকতার বিরুদ্ধে নজরুলের মতো স্পষ্ট ও অনমনীয় অবস্থান এর আগে বাংলা ভাষায় দেখা গেছে কি না সন্দেহ। সেটা অবশ্য সম্ভবও ছিল না। কেননা পিতৃতান্ত্রিকতার কেন্দ্রে রয়েছে যে ব্যক্তি-মালিকানা তাকে প্রত্যাখ্যানের যুগটা এর আগে আসে নি। সাম্যবাদী 888sport app download apkগুচ্ছের ‘888sport promo code’ 888sport app download apkয় বলা হচ্ছে ‘‘সাম্যের গান গাই -/ আমার চক্ষে পুরুষ-রমণী কোনো ভেদাভেদ নাই।/ বিশ্বের যা-কিছু মহান সৃষ্টি চির-কল্যাণকর/ অর্ধেক তার করিয়াছে 888sport promo code অর্ধেক তার নর।’’ আরও বলা হচ্ছে, ‘‘সে যুগ হয়েছে বাসি,/ যে যুগে পুরুষ দাস ছিল না ক’, 888sport promo codeরা আছিল দাসী/ বেদনার যুগ, সাম্যের যুগ আজি,/ কেহ রহিবে না বন্দী কাহারও, উঠিছে ডঙ্কা বাজি।’’ 888sport promo codeকে উদ্দেশ করে বেগম রোকেয়ার মতোই নজরুলও বলছেন, ‘‘চোখে চোখে আজ চাহিতে পার না; হাতে রুলি, পায়ে মল/ মাথায় ঘোমটা, ছিঁড়ে ফেল 888sport promo code, ভেঙে ফেল ও শিকল।’’ তাঁর ওই 888sport app download apkয় আছে, ‘‘ভেঙে যমপুরী নাগিনীর মত আয় না পাতাল ফুড়ি।/ আঁধারে তোমায় পথ দেখাবে মা তোমারি ভগ্ন-চুড়ি!/ পুরুষ যমের ক্ষুধার কুকুর মুক্ত ও পদাঘাতে/ লুটিয়ে পড়িবে চরণ-তলে দলিত যমের সাথে।’’ অসাধারণ 888sport app download apk ‘বারাঙ্গনা’; তাতে আছে ‘‘সেরেফ পশুর ক্ষুধা নিয়ে হেথা মিলে নর888sport promo code যত,/ সেই কামনার সমত্মান মোরা/ তবুও গর্ব কত।/ শোন ধর্মের চাই -/ জারজ কামজ সমত্মানে দেখি কোনো সে প্রভেদ নাই।’’
নজরুল 888sport live footballে এমন কিছু 888sport promo code চরিত্র আছে যাদেরকে ভোলা কঠিন। যেমন মৃত্যুক্ষুধার মেজ-বউ। মৃত্যুক্ষুধার জগৎটা দুঃখপ্রধান, যে জন্য 888sport promo codeরাই সেখানে আধিপত্য করে, অভাবের পীড়নটা তাদের উপর দিয়েই চলে বেশী। মেজ-বউদের পরিবারে বাবারা সবাই মারা গেছে, ছোট ছোট সমত্মানের 888sport free bet এক ডজন। সম্পত্তি বলতে কানাকড়ি নেই, জীবনের যে সংগ্রাম তাতে দুঃখিত হবারও সময় পায় না। নজরুল কিন্তু কেবল দুঃখ দেখাচ্ছেন না, প্রতিকারের উপায়ও বলছেন। সে জন্য বলশেভিক আনসারকে নিয়ে এসেছেন। আনসার যেমন ঠিক তেমনি, সমান-মাপে, উজ্জ্বল মেজ-বউ। রবীন্দ্রনাথের 888sport alternative link পড়লে এমন একটা ধারণা তৈরী হতে পারে যে, সশস্ত্র বিপস্নবীরা নিজেদের প্রবৃত্তির তাড়নাতেই পরিচালিত, নজরুলের কুহেলিকা কিন্তু সে ধারণা দেয় না। তাঁর বিপস্নবীরা আত্মত্যাগী, বিশেষ করে মেয়েরা। চম্পা ও তার মা জয়তী দু’জনই অসাধারণ; চম্পা জানে যে বিপস্নবীদের কারো কারো ভেতরে পশুত্ব রয়েছে, কিন্তু বিপস্নবী দলে সে পশুত্ব আবার প্রয়োজনও, শত্রম্ন-হননের জন্য। দলে নতুন আগন্তুক জাহাঙ্গীরকে তারই সমবয়স্ক চম্পা বলছে, ‘‘তোমাদের মনের পশুকে একেবারে মেরে ফেললে তোমাদের দেবত্ব বা মনুষ্যত্ব দিয়ে আর যাই হোক – আমাদের যে মন্ত্র, যে সাধনা তার কিছুই হবে না।’’ কথাটা শুনে ‘‘জাহাঙ্গীর উঠিয়া আসিয়া চম্পার দুই হাত চাপিয়া ধরিয়া বলিল, ‘চম্পা, এমন কথা তো কেউ কোনো দিন বলে নি।
প্রমত-দা’ও নয়’।’’ ‘প্রমত-দা’ অসাধারণ। দলের কর্মীদের সঙ্গে তার সম্পর্ক পিতার মতো নয়, মাতার মতো; কিন্তু দৃষ্টির স্বচ্ছতার ব্যাপারে সেও পিছিয়ে রয়েছে, চম্পার তুলনায়।
চিমত্মার ক্ষেত্রে নজরুল অত্যন্ত দ্রম্নতগতিতে এগিয়ে গেছেন। নবযুগ পত্রিকায় বিপস্নবের কথা নেই, ধূমকেতুতে তা এসে গেছে; কিন্তু ধূমকেতুর বিপস্নবটা কিছুটা নৈরাজ্যিক, সেই দুর্বলতা সংশোধন করে এলো লাঙল। কৃষকের কথা তখন অন্যদের অধিকাংশই সেভাবে ভাবছে না, যে ভাবে নজরুল ভাবছেন। আসলে মধ্যবিত্ত ছিল কৃষকবিদ্বেষী। নজরুল নিয়ে এলেন কৃষকের কথা; করুণা প্রকাশ করার জন্য নয়, বিপস্নবের মূল শক্তি হিসেবে। লাঙল-এর পরে এলো গণবাণী, যেখানে কৃষক আছে, রয়েছে শ্রমিকও। তাঁর 888sport app download apkর বইয়ের নাম দাঁড়াচ্ছে সাম্যবাদী এবং সর্বহারা। তিনি লিখছেন শ্রমিক, কৃষক, ধীবর, ছাত্র, 888sport promo code, চোর-ডাকাত সকলকে উদ্বুদ্ধ করবার জন্য। 888sport appয় তাঁর তরুণ বন্ধুরা যখন বিশ্ববিদ্যালয়-কেন্দ্রিক মুসলিম 888sport live football সমাজ গড়ছেন নজরুল তখন কৃষ্ণনগরে ব্যস্ত রয়েছেন
কৃষক ও শ্রমিকদেরকে নিয়ে সাম্যবাদী রাজনৈতিক দলের পত্তনে। কেবল বুদ্ধির মুক্তির জন্য নয়, কাজ করছেন হৃদয়বান বুদ্ধি ও বুদ্ধিমান হৃদয়কে প্রশিক্ষিত ও ঐক্যবদ্ধ করতে। দেশে সাম্প্রদায়িকতা যখন রক্তাক্ত হয়ে উঠছে, নজরুল তখন গান গেয়ে ডাক দিচ্ছেন সকল সম্প্রদায়কে মূল শত্রম্ন ব্রিটিশের বিরুদ্ধে লড়বার জন্য; বলছেন, হিন্দু না মুসলিম জিজ্ঞাসা করো না, বলো ডুবছে সমত্মান মোর মা’র, জানে না সে সন্তরণ।
ধূমকেতু এবং লাঙল দুই পত্রিকার জন্যই রবীন্দ্রনাথ বাণী লিখেছিলেন। বাণী দু’টি তাৎপর্যপূর্ণ। ধূমকেতুর জন্য লিখেছেন, ‘‘আয়রে চলে আয়রে ধূমকেতু/ আঁধারে বাঁধ অগ্নিসেতু/ দুর্দিনের এই দুর্গশিরে/ উড়িয়ে দে রে তোর বিজয় কেতন/ অলক্ষুণের তিলকরেখা রাতের ভালে হোক না লেখা/ জাগিয়ে দে রে চমক মেরে আছে যারা অচেতন।’’ পত্রিকার ব্যাপারে নজরুলের সঙ্গে তাঁর কোনো আলাপ হয় নি, কিন্তু তিনি বুঝে নিয়েছেন ধূমকেতু কি চায়। আঁধারে আলো আনা, অচেতনকে চমকে দিয়ে জাগিয়ে তোলা – এই কাজ এই
অর্ধ-সাপ্তাহিকের। লাঙল-এর বাণীটিতেও জাগরণের কথা আছে, রয়েছে প্রাণ ও শক্তিদানের কথাও; লক্ষ্য করবার মতো নতুন বক্তব্যটি হচ্ছে ‘স্তব্ধ করো ব্যর্থ কোলাহল’। কোলাহল তো চলছিলই, কিন্তু কোনো কোলাহলই সফল হয় নি, রবীন্দ্রনাথ আশা করছেন নতুন পত্রিকাটি অর্থহীন কোলাহলকে স্তব্ধ করে দিয়ে নতুন বাণী নিয়ে আসবে।
লাঙল এবং গণবাণী নতুন বাণী নিয়ে এসেছিল বৈকি। সেটা হচ্ছে সমাজব্যবস্থায় বৈপস্নবিক পরিবর্তনের। লাঙল-এর প্রথম 888sport free betর বিষয়সূচীর দিকে তাকালেই ব্যাপারটা বোঝা যাবে। ছিল সাম্যবাদী নামে নজরুলের 888sport app download apkগুচ্ছ; সঙ্গে ম্যাক্সিম গোর্কির 888sport alternative link মা-এর ধারাবাহিক 888sport app download apk latest version; কার্ল মার্কসের সংক্ষিপ্ত জীবনী, বাংলার প্রজাস্বত্ব আইন নিয়ে আলোচনা, এবং একটি ছবি যাতে দেখা যাচ্ছে একজন শ্রমিক কীভাবে মালিকের দ্বারা নিগৃহীত হচ্ছে। দ্বিতীয় 888sport free betতে ছিল মার্কস ও তাঁর অর্থনৈতিক চিমত্মার ওপর একটি 888sport live; তৃতীয় 888sport free betতে লেনিন ও সোভিয়েত ইউনিয়নের ওপর একটি আলোচনা। পঞ্চম 888sport free betয় ছাপা হয়েছিল কমিউনিজম ও বলশেভিজম নিয়ে একটি বক্তৃতার 888sport app download apk latest version। পরবর্তী একটি 888sport free betতে ব্রিটিশ ইতিহাস সম্পর্কে মার্কসের বক্তব্যের বিশেস্নষণ দেওয়া হয়েছিল। পঞ্চদশ 888sport free bet থেকে লাঙল-এর প্রচ্ছদে হাতুড়ি ও কাসেত্মর প্রতীক থাকতো; এর আগে উপমহাদেশে অন্যকোনো পত্রিকা এই প্রতীক ছাপে নি। ১৯২২ সালে যে নজরুল বলেছিলেন
স্বরাজ-টরাজ বোঝেন না, ওর অর্থ একেকজন একেক ভাবে করেন, তিনি চান ভারতের এক পরমাণু অংশও ব্রিটিশের অধীনে থাকবে না, সে-নজরুল ১৯২৬-এ এসে একজন পরিপূর্ণ মার্কসবাদী-লেনিনবাদীতে পরিণত হয়েছিলেন। ইন্টারন্যাশনাল নামে যে গানটি সারা পৃথিবীর কমিউনিস্টরা গেয়ে থাকে, নজরুল সেটির বাংলা 888sport app download apk latest version করেছিলেন। কোনো ভারতীয় ভাষায় এটিই ওই গানের প্রথম 888sport app download apk latest version। গানের সুর জানা ছিল না, ইংরেজী 888sport app download apk latest versionের কপি সংগ্রহ করা হয়েছিল একটি আমেরিকান নাটকে-দেওয়া উদ্ধৃতি থেকে। লাঙল-এর নাম বদলে গণবাণী হিসেবে প্রকাশিত হয় ১৯২৬-এর ১২ আগস্ট। প্রথম 888sport free bet থেকেই পত্রিকার নামের ওপরে লেখা থাকত, ‘দুনিয়ার মজদুর এক হও।’৭
পাঁচ
নতুন বাণী আনার কাজটিই ছিল নজরুলের লক্ষ্যবস্ত্ত। নতুন যুগের চারটি প্রশ্ন প্রধান হয়ে দেখা দিয়েছে। প্রশ্ন চারটি আগেও ছিল; কিন্তু নজরুলের সময়ে এরা মীমাংসার জন্য বিশেষভাবে সামনে চলে আসে। প্রশ্ন চারটি হচ্ছে, জাতি, রাষ্ট্র, শ্রেণী এবং 888sport promo code-পুরুষ সম্পর্ক।
তাঁর সময়ে জাতীয়তাবাদীরা ছিল প্রধান রাজনৈতিক শক্তি; এবং জাতীয়তাবাদীরা এদলে ওদলে বিভক্ত ছিল সত্য, কিন্তু সবাই ছিল পুঁজিবাদে বিশ্বাসী। ব্রিটিশের কারসাজি এবং নিজেদের শ্রেণীগত স্বার্থ পরিপুষ্টির অভিসন্ধি একত্রযোগে তৈরী করে দেয় সাম্প্রদায়িকতার রাজনীতি। ব্রিটিশ-বিরোধিতাকে পেছনে ঠেলে দিয়ে সাম্প্রদায়গত প্রতিদ্বন্দ্বিতাই প্রধান হয়ে ওঠার দিকে এগুতে থাকে। ভারতের জাতি-সমস্যার সমাধান নিহিত ছিল ধর্মের জায়গাতে ভাষাকে জাতীয়তাবাদের ভিত্তি হিসেবে স্থাপন করার ভেতরে। নজরুলের রচনাবলী পাঠ করলে দেখা যাবে যে বাঙালীদেরকে তিনি একটি স্বতন্ত্র জাতি হিসেবেই দেখতেন। ভারতীয় পরিচয়টাকে তিনি অস্বীকার করেন নি, সে-পরিচয়টা বিশেষভাবে দরকার ছিল ব্রিটিশের বিরুদ্ধে সংগ্রামের ক্ষেত্রে। ১৯৪০-এর পর থেকে তাঁর নিকটজনেরা কেউ
কেউ যখন ‘পাকিস্তান’ দাবীর পক্ষে বলে গেছেন, নজরুল তখন পাকিস্তানকে ফাঁকিস্তান বলেছেন, এবং বাকহারা হবার আগের একটি লেখাতে বাঙালীর জয়ের পক্ষে বলেছেন, বলেছেন জয়ের জন্য ঐক্য প্রয়োজন, এবং তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে উলেস্নখ করেছেন যে, ওই বাংলায় বিদেশী রামা ও গামাদের জায়গা থাকবে না, বাংলা হবে বাঙালীর। তখনকার লেখকদের অনেকের ভেতরই জাতীয় পরিচয় নিয়ে দ্বিধা ছিল, নজরুলের মধ্যে সেটা ছিল না। রবীন্দ্রনাথও নিজেকে একই সঙ্গে বাঙালী ও ভারতীয় মনে করেছেন, নজরুল তা করতেন না। নজরুলের ওই ধারা যদি প্রধান হয়ে উঠতো তা হলে ১৯৪৭-এর দেশ ভাগের মতো ট্র্যাজেডি ঘটতো না, পাঞ্জাবও ভাগ হতো না। ভারতীয় উপমহাদেশ সুযোগ পেত বহুজাতির একটি দেশে পরিণত হবার, বাস্তবে যেটি সত্য ছিল। ভারত বহুজাতির দেশ হিসেবে নিজেকে চিনে ফেলুক এটা ব্রিটিশরা চায় নি। ভারতীয় বণিকেরাও চায় নি, চায় নি এমনকি উদারনীতিক রাজনীতিকরাও। এমনকি কমিউনিস্ট পার্টিও জোরগলায় দেশভাগের বিরোধিতা করতে পারে নি, তাদের দৃষ্টিভঙ্গিতে বিভ্রান্তি ছিল। নজরুল ব্যাপারটাকে স্বচ্ছ দৃষ্টিতে দেখতে পাচ্ছিলেন, কিন্তু তাঁর পক্ষে কী-ই বা করবার ছিল।
সব মিলিয়ে নজরুলের যে পরিচয়টি ফুটে ওঠে সেটা হলো বাংলা 888sport live footballে তিনিই ছিলেন পরিপূর্ণ অর্থে প্রথম বাঙালী লেখক। বঙ্কিমচন্দ্র একদা বলেছিলেন যে ঈশ্বর গুপ্ত হচ্ছেন খাঁটি বাঙালী কবি; তাতে বোঝা যায় মধ্যবিত্ত শ্রেণীকেই তিনি জাতি বলে মেনে নিয়েছিলেন; অন্যরা আবার শ্রেণীকে নয় সম্প্রদায়কেই জাতি ভাবতেন। নজরুলই প্রথম বাঙালী যিনি হিন্দু মুসলমান খ্রিস্টান বৌদ্ধ নির্বিশেষে সকল বাঙালীকে 888sport live footballে একত্রে নিয়ে এসেছেন, সেই সঙ্গে এনেছেন সকল শ্রেণীকে; ভেঙে দিয়েছেন 888sport promo code-পুরুষের বৈষম্য। এমনটি আগে কখনো ঘটে নি। জীবনানন্দ দাশও খাঁটি বাঙালী কবি, বয়সে সমসাময়িক হলেও কাব্যক্ষেত্রে নজরুলের তিনি পরবর্তী; তদুপরি তিনি ততটা বিসত্মৃত ও সর্বজনীন নন, নজরুল যতটা ছিলেন।
সমাজ যে শ্রেণীতে বিভক্ত এটা বোঝা তো কোনো কষ্টের ব্যাপার নয়। কিন্তু সেই রূঢ় বাস্তবতাকে আচ্ছাদিত করে রাখা হয়েছিল জাতি প্রশ্নের অন্তরালে। আর জাতি হিসেবে তখন দাঁড় করানো হয়েছিল সম্প্রদায়কেই। নজরুল শ্রেণী বুঝতেন। 888sport live footballে শ্রেণীর কথা তিনি যে ভাবে তুলে ধরেছেন তখনকার অন্য কোনো লেখক তেমনটা করতে পারেন নি; উদারনীতিকরা তো ধারে কাছেও ছিলেন না। রবীন্দ্রনাথের বক্তব্য ছিল ভারতের সমস্যাটা রাজনৈতিক নয়, সামাজিক। নজরুলের কাছে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল যে রাজনৈতিক সমস্যাকে উপেক্ষা করবার কোনো উপায়ই নেই; এবং ব্রিটিশের রাষ্ট্রীয় শাসন আছে বলেই সমাজ মুক্ত হতে পারছে না। রাষ্ট্রকে তাই বদলাতে হবে, তবে ধনীর স্বার্থে নয়, জনগণের স্বার্থে – এই ছিল তাঁর উপলব্ধি। রাষ্ট্র যে কত বড় শত্রম্ন সে তো নজরুল বুঝেছেন তাঁর নিজের ওপর রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন দেখেই; জেলখানায়-বসে-লেখা এবং আদালতে দাঁড়িয়ে-পাঠ-করা ‘রাজবন্দীর জবানবন্দী’তে নজরুল বলেছেন যে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ রাজদ্রোহের, এবং তিনি যে সেটা অস্বীকার করছেন না। তাঁর ‘আজ চাই কি’ 888sport liveে রাষ্ট্রপরাধীনতাকে রক্তচোষা রাক্ষসীর সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। রবীন্দ্রনাথ তাঁর প্রথম জীবনে আমেরিকার সমাজে বিদ্যমান সহিংসতার ওপর দু’টি ছোট 888sport live লিখেছিলেন, তাতে উলেস্নখ ছিল যে ওই সহিংসতার উৎস হচ্ছে আদিবাসীদের ওপর অত্যাচার ও দাস-ব্যবস্থা; সেই আমেরিকা যখন সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে তখন সে যে তার ওই সহিংসতাকে সঙ্গেই রাখবে এই সত্যটা পরে স্থূল ভাবেই ধরা পড়েছে, রবীন্দ্রনাথের উদারনীতি যদিও
সে-ব্যাপারটি দেখে নি।
তৃতীয় বিষয় 888sport promo code-পুরুষ সম্পর্ক। এই সম্পর্কের ভেতর প্রেম থাকে, কামও থাকে; উভয় প্রবণতার সত্যই নজরুল তাঁর লেখাতে নিয়ে এসেছেন; কিন্তু যেখানে তিনি নতুন যুগের মুখপাত্র সে জায়গাটা হলো 888sport promo code-পুরুষে সাম্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা। এ কাজে নজরুল কখনো পরিশ্রান্ত হন নি। আর তিনি যেটা চাইছিলেন তা হলো 888sport promo code-পুরুষ বৈষম্যের আসল যে নিয়ন্ত্রক, পিতৃতান্ত্রিকতা, তার অবসান; যে-পিতৃতান্ত্রিকতা দাস ব্যবস্থায় ছিল, ছিল সামন্ত ব্যবস্থাতে, এবং যার অবসান ঘটে নি পুঁজিবাদেও। এবং আমরা তো দেখছিই এই ‘সুসভ্য’ বিশ্বে পিতৃতান্ত্রিকতা 888sport promo codeকে কিভাবে লাঞ্ছিত করছে।
ছয়
কিন্তু নজরুল তো চুপ হয়ে গেলেন ১৯৪২-এ এসেই। চুপ হয়ে যান নি, আসলে তাঁকে চুপ করিয়ে দেওয়া হয়েছে। এমনও মন্তব্য করা হয়েছিল যে বিদ্রোহী কবি রণক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন। সেটাও সত্য নয়। ক্লান্ত হন নি, দাবিয়ে দেওয়া হয়েছিল। শত্রম্নপক্ষের ভেতরে প্রথম ছিল ব্রিটিশ রাষ্ট্র। হেন নির্যাতন নাই রাষ্ট্র যা নজরুলের ওপর চালায় নি। দ্বিতীয়ত ছিল অর্থনৈতিক সঙ্কট। নজরুলের কোনো ব্যক্তিগত সম্পত্তি ছিল না, ছিল না এমনকি স্থায়ী বাসগৃহও। শরৎচন্দ্রও নজরুলের মতোই জীবিকার জন্য 888sport live footballের ওপর নির্ভরশীল ছিলেন; লেখক হিসেবে দু’জনই ছিলেন অসম্ভব রকমের জনপ্রিয়। কিন্তু শরৎচন্দ্র লিখতেন 888sport alternative link ও গল্প, তাদের কাটতি থেকে এবং live chat 888sportায়ন থেকেও যে আয় হতো 888sport app download apkর বই থেকে সে আয় আসবার কথা নয়। আসেও নি। তাছাড়া নজরুলের ছয়টি বই ছিল নিষিদ্ধ। অভাবের কারণে কোনো কোনো বইয়ের গ্রন্থস্বত্ব তিনি বিক্রি করে দিয়েছিলেন। তাই দেখা যায় শরৎচন্দ্র যখন কলকাতা শহরে চমকার একটি বাড়ী তৈরী করেছেন নজরুল তখন পুরোপুরি উদ্বাস্ত্ত। অর্থব্যবস্থাপনায় নজরুলের না ছিল দক্ষতা না আগ্রহ। সখ করে এক সময়ে তিনি একটি মোটর গাড়ি কিনেছিলেন, কিন্তু রাখতে পারেন নি। 888sport app download apk ও গদ্য চর্চা ছেড়ে নজরুল যে একসময়ে পুরোপুরি গানের জগতে চলে গিয়েছিলেন তার পেছনেও অর্থনৈতিক কারণ ছিল। গ্রামোফোন কোম্পানী থেকে ভালো আয় হতো, যে আয় অন্যকোনো ভাবে সম্ভব ছিল না। এক সময়ে রেকর্ডের দোকান খুলবেন ভেবেছিলেন, উদ্যোগ নিয়েছিলেন কিন্তু সফল হন নি।
নজরুল ভয়ঙ্কর ভাবে আক্রান্ত হয়েছিলেন শোক ও ব্যাধির দ্বারা। চুপ হয়ে যাবার পেছনে সেটা একটা বড় কারণ। অত্যন্ত আদরের সমত্মান বুলবুলকে হারিয়ে তিনি ভেঙে পড়েছিলেন। তাঁর স্ত্রী প্রথমে বাতে আক্রান্ত হন, পরে পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়েন। চিকিৎসার ব্যবস্থা করা সম্ভব হয় নি। স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য বন্ধুদের পরামর্শে তিনি এক আধ্যাত্মিক ‘বন্ধু’র শরণাপন্ন হয়েছিলেন, অবধারিত রূপেই তাতে অবস্থার উন্নতি না হয়ে অবনতিই ঘটেছিল।
আর ছিল অতিরিক্ত মানসিক পরিশ্রম। অবিশ্বাস্য দ্রম্নতগতিতে লিখতেন, নিজের মসিত্মষ্ককে কোনো প্রকার বিশ্রাম দিতেন না। সেই পরিশ্রম তাঁর মসিত্মষ্কের ওপর এমন চাপ ফেলেছিল যেটা তাঁর মতো অসাধারণ প্রতিভার পক্ষেও বহন করা সম্ভব হয় নি। তদুপরি তাঁর যথার্থ চিকিৎসা হয় নি; যেটুকু হয়েছে তাও ছিল বিলম্বিত ও অপর্যাপ্ত।
ছিল রাজনৈতিক হতাশা। যে রাজনীতির তিনি প্রতিষ্ঠা চেয়েছিলেন নানা কারণে সেটি এগুতে পারে নি। মৃত্যুক্ষুধার বলশেভিক নায়ক আনসার যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়েছে, ফলে বেঁচে থাকতে পারে নি; কমরেড মুজফফর আহমদকে কারাগারে, অন্তরীণে ও আত্মগোপনে থাকতে হয়েছে, তাঁরও যক্ষ্মা হয়েছিল, মারা যেতে পারতেন। বাংলায় সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের সূচনা যাঁরা ঘটিয়ে ছিলেন তাঁরা অবস্থাপন্ন ছিলেন না, সকলেই দরিদ্র ছিলেন, নজরুলের মতোই। পার্টি পরে বিভ্রান্তিতেও পড়েছিল। রাষ্ট্রীয় নিষ্পেষণ তো ছিল অমানুষিক। আন্দোলনের দৈন্যদশা তাঁকে দুঃখ-ভারাক্রান্ত করে থাকবে। আর এটাও সত্য যে পার্টি যে তাঁর চিকিৎসার ব্যাপারে যত্ন নেবে, তাও করে নি।
নজরুলের এই নিশ্চুপীকরণ একটি ব্যক্তিগত ঘটনা নয়; এর ভেতরে সমষ্টিগত দুঃখ ও ব্যর্থতা রয়েছে। দুঃখ ও ব্যর্থতা কেবল প্রতীক হিসেবে নয়, বাস্তবিক অর্থেও। স্বাধীনতার যে-আন্দোলন চলছিল তার পরিণতি সমাজ বিপস্নবে ঘটবে এমন একটি মহাকাব্যিক সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল, সেটি পরিণত হলো ট্র্যাজেডিতে। দেশ ভাগ হলো, পশ্চিমবঙ্গ হয়ে গেল ভারতের একটি অঙ্গরাজ্য; পূর্ববঙ্গ চলে গেল পাকিস্তানের কব্জায়, যেখান থেকে বের হয়ে আসতে পূর্ববঙ্গের মানুষকে রীতিমত যুদ্ধে যেতে হয়েছে। কলকাতা হাতছাড়া হয়ে গেল পূর্ববঙ্গের, সেই শহর ক্রমে ক্রমে চলে গেল অবাঙালীদের দখলে। দু’দিকেই প্রতিষ্ঠিত হলো পুঁজিবাদে দীক্ষিতরা। কাটা পড়লো নদী,
ভাগ করা হলো প্রকৃতিকে, দুর্বল হলো দু’দিকেরই অর্থনীতি; ভয়ঙ্কর ক্ষতি হলো 888sport live football, live chat 888sport, নাটক, চিত্রকলার, এক কথায় সমগ্র সংস্কৃতির। বিভক্ত অবস্থায় মস্ত বড় বিপদ দেখা দিল সমাজ-পরিবর্তনের রাজনীতির। বামপন্থীদের ভাগ করে ফেলা হলো, এবং উভয় বঙ্গে তাদের ওপর চলল ব্রিটিশ আমলের চেয়েও ভয়াবহ নিপীড়ন। মোট কথা, এপার বাংলা ওপার বাংলার ফাঁকে পড়ে আসল বাংলার দশাটা দাঁড়াল জবুথবু; নজরুল যে বাংলার মুখপাত্র ছিলেন সে-বাংলা এগুতে পারল না।
স্পেনের কবি গার্সিয়া লোরকার কথা 888sport app download for androidে আসে। একই বছরে জন্ম নজরুল ও লোরকার; উভয়েই ছিলেন বিপস্নবের চেতনায় সর্বক্ষণ উদ্বুদ্ধ। মানুষের ওপর রাষ্ট্র ও সমাজের নিপীড়নের বিষয়ে লিখতেন। স্পেনের গৃহযুদ্ধে ফ্যাসিস্টদের বিরুদ্ধে লোরকা অস্ত্রহাতে অংশ নেন এবং প্রাণ দেন। নজরুলও যুদ্ধে ছিলেন; তাঁকে হত্যা
করা হয় নি, কিন্তু স্তব্ধ করে দেওয়া হয়েছিল।
জয় হয়েছে উদারনীতির। ইংরেজী 888sport live footballে রোমান্টিক বিপস্নবের কথা উলেস্নখ করেছি; সে-বিপস্নবও কিন্তু সিত্মমিত হয়ে গেছে উদারনীতির আশ্রয় পেয়ে। ঊনবিংশ শতাব্দীতেই পুঁজিবাদ নানা রকমের ছাড় দিয়েছে। শাসক শ্রেণী কয়েকটি সংস্কার আইন পাস করেছে যার ফলে পার্লামেন্টে জনপ্রতিনিধিত্বের পরিসর বেড়েছে, উপনিবেশ থেকে ছিনিয়ে-আনা সম্পদের সামান্য কিছু হলেও যাতে চুঁইয়ে পড়তে পারে শ্রমিকদের ভেতর তার ব্যবস্থা করেছে, সংস্কারের নানা রকমের চিমত্মার প্রচার ঘটিয়েছে। ফলে বিপস্নব ঘটেনি। ভারতে যে বড় দুই দল স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছিল, তাদের নিজেদের ভেতর ঝগড়া ছিল, কিন্তু দুই দলই ছিল পুঁজিবাদে দীক্ষিত এবং বিপস্নব-বিরোধী। তারাই জয়ী হয়েছে। স্বাধীনতার নামে ডমিনিয়ন স্ট্যাটাস পাওয়া গেছে, এবং কেটে দু’টুকরো করা হয়েছে দেশকে।
নজরুলের পরে মার্কসবাদী ধারায় দু’জন প্রধান লেখক এসেছিলেন, সুকান্ত ভট্টাচার্য (১৯২৬-৪৭) এবং মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় (১৯০৮-৫৬)। দু’জনের কেউই দীর্ঘজীবন লাভ করেন নি। মানিক তবু বেঁচে ছিলেন ৪৮ বছর, সুকামেত্মর জীবনকাল মাত্র ২১ বছরের, কাব্যচর্চার সুযোগ পেয়েছেন ৭ বছর, যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়ে চলে গেলেন সে বছরই, যে বছর দেশভাগ হলো, নিজের প্রথম 888sport app download apkর বইটির প্রকাশনাও তিনি দেখে যেতে পারেন নি।
সুকান্ত নজরুলের মতোই অনেক কাজে নিযুক্ত ছিলেন; 888sport app download apk লিখতেন, গান লিখেছেন, ছোটদের জন্য তাঁর রচনা আছে। ছিল তাঁর কৌতুকের বোধ যা দিয়ে ব্যঙ্গবিদ্রূপ করেছেন শত্রম্নপক্ষকে। সুকান্ত কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য হয়েছিলেন, পার্টির মুখপত্র দৈনিক স্বাধীনতায় কাজ করতেন। ছাত্র ফেডারেশনের কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, কিশোর বাহিনীতে তাঁর সাংগঠনিক দায়িত্ব ছিল। নজরুলের সাতাশ বছর পরে তাঁর জন্ম, কিন্তু তখন নতুন কোনো যুগ তৈরী হয় নি, সমাজে তখন বিপস্নবী ধারাটা আছে, কিন্তু বুর্জোয়া রাজনীতির ধারাটাই আগের মতো প্রধান হয়ে রয়েছে। তৎপর রয়েছে পুঁজিবাদী সেই শক্তিগুলো যারা নজরুলকে স্তব্ধ করে দিতে সক্ষম হয়েছিল। নজরুলের সঙ্গে সুকামেত্মর বিশেষ নৈকট্য এই ক্ষেত্রে যে তিনিও পুরোপুরি বাঙালী এবং সার্বক্ষণিক বিপস্নবী। তাঁর সময়ে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ভয়াবহ মাত্রা নিয়েছে,
১৯৪৬-এ কলকাতার দাঙ্গায় কমপক্ষে দশ হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছে, ১৯৪৩-এর মন্বন্তরে ত্রিশ লক্ষ মানুষের মৃত্যু ঘটেছে বলে ধারণা করা হয়; কিন্তু সেসব ঘটনা তাঁকে দমিয়ে দিতে পারে নি। তিনি উদ্দীপ্ত হয়েছেন চতুর্দিকে বিদ্রোহ দেখে এবং বিপস্নবের সম্ভাবনা অনুভব করে। সুকান্ত মেহনতী মানুষদের পক্ষে লিখেছেন, তে-ভাগা আন্দোলনে
কৃষকদের যে অভ্যুত্থান ঘটেছে এবং কলকাতায় শ্রমিকদের যে বিক্ষোভ দেখেছেন তাতে 888sport appsকে সাবাস দিয়েছেন, নিজেকে দেখতে পেয়েছেন বিপস্নবের একজন সৈনিক হিসেবে। চারদিকে দামামা বাজছে বিপস্নবের, একজন মার্কসবাদী-লেনিনবাদী হিসেবে ‘বিপস্নব-স্পন্দিত বুকে’ মনে হচ্ছে তিনিই লেনিন। ধূর্ত মধ্যবিত্তকে তিনিও ঘৃণা করেন, ইংরেজের বিরুদ্ধে বসিত্মর আলীজানের লড়াই আর তাঁর লড়াই অভিন্ন হয়ে ওঠে। নজরুলের মতোই তিনিও জানেন মেহনতীরা তাদের পাওনা সুদে ও আসলে কড়ায় গণ্ডায় আদায় করে নেবে। তিনিও ইতিহাস-সচেতন, ইতিহাসকে সম্বোধন করে বলেছেন, ‘জানি নীরব সাক্ষী তুমি/ আমরা চেয়েছি স্বাধীন স্বদেশ ভূমি’, এবং নিজের ভূমিকা সম্বন্ধে তাঁরও বক্তব্য, ‘ইতিহাস! নেই অমরত্বের লোভ, আজ রেখে যাই আজকের বিক্ষোভ’। নজরুলের মতোই তিনিও রবীন্দ্রনাথের ধারা থেকে স্বতন্ত্র, এবং নজরুলের মতোই রবীন্দ্রনাথকে তিনি আত্মস্থ করে তবেই এগিয়েছেন। তাঁর স্বল্পসংখ্যক রচনার মধ্যে তিন তিনটি 888sport app download apk আছে রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে। ‘প্রথম বার্ষিকী’ 888sport app download apkটিতে রবীন্দ্রনাথের মৃত্যুর পরের বছর যে-পৃথিবীকে সুকান্ত দেখতে পাচ্ছেন সেখান মুখ্য সত্য হচ্ছে আতঙ্ক। ‘রবীন্দ্রনাথের প্রতি’ 888sport app download apkয় নিজেকে বলছেন ‘দুর্ভিক্ষের কবি’; আর ভীষণ অন্ধকারের ভেতরেও ভরসা পাচ্ছেন রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টিরা আছে বলে। তৃতীয় 888sport app download apkটির নাম ‘পঁচিশে বৈশাখের উদ্দেশে’। রবীন্দ্রনাথের জন্মদিনকে সম্বোধন করে তিনি বলছেন, ‘আর একবার জন্ম দাও রবীন্দ্রনাথের’; তাঁর আশা পরিবর্তিত পৃথিবীতে
যে-রবীন্দ্রনাথের ভূমিকা হবে ভিন্ন রকমের, এবং নিজে অনুভব করছেন চারদিকে দিনবদলের যে দামামা বাজছে তাতে দ্বিতীয় রবীন্দ্রনাথের আগমন অনিবার্য। কিন্তু ঈপ্সিত রবীন্দ্রনাথের তো আর দ্বিতীয়বার আসা সম্ভব ছিল না; এসেছেন তাঁর উদারনীতির ধারার নতুন প্রতিনিধিরা যাঁরা বিপস্নববিরোধী, এবং গোপনে তো বটেই প্রকাশ্যেও যাঁরা পুঁজিবাদের সমর্থক। এই 888sport live footballিকরাই শক্তিশালী, কিন্তু এঁরা জনগণের পক্ষে অবস্থান নেন না, নিতে পারেন না।
ইংরেজী 888sport live footballে রোমান্টিক বিপস্নবের বিষয়ে উলেস্নখ করেছি। সে-বিপস্নবও কিন্তু সিত্মমিত হয়ে গেছে উদারনীতির আগ্রাসনে। ঊনবিংশ শতাব্দীতেই পুঁজিবাদ নানা ধরনের ছাড় দিয়েছে। শাসক শ্রেণী কয়েকটি সংস্কার আইন পাস করেছে যাদের দরুন পার্লামেন্টে জনপ্রতিনিধিত্বের প্রসার বেড়েছে; উপনিবেশ থেকে লুণ্ঠন করে-আনা সম্পদের কিছুটা যাতে মেহনতীদের জীবনে চুঁইয়ে পড়তে পারে তার ব্যবস্থা নিয়েছে; সমাজ ও অর্থনীতিতে নানা রকমের চিমত্মার প্রচার ঘটিয়ে। ফলে বিপস্নব ঘটে নি। ভারতে যে বড় দুই দল স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছিল তাদের নিজেদের ভেতর ভীষণ ঝগড়া ছিল ঠিকই, কিন্তু দুই দলই ছিল পুঁজিবাদে দীক্ষিত এবং সে-কারণে বিপস্নব-বিরোধী। এরাই জয়ী হয়েছে। স্বাধীনতার নামে ডমিনিয়ন স্ট্যাটাস পাওয়া নিয়ে, এবং দু’টুকরো করা হয়েছে মাতৃভূমিকে। জয় হয়েছে কথিত উদারনীতিরই।
নজরুলের স্তব্ধ হয়ে যাওয়া, সুকামেত্মর দ্রম্নত প্রস্থান, অনেকটা সমাজতান্ত্রিক বিশ্বের ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ার মতোই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা; কিন্তু তা ছিল অনিবার্যও। পৃথিবী স্থির থাকে না, বিপস্নব না এগুলে প্রতিবিপস্নব তো এগুবেই।
888sport live football আরো অনেককিছুর ভেতর একটা রুচিও তৈরী করে দেয়। উদারনীতিক সেই রুচির সবচেয়ে উজ্জ্বল প্রতিনিধি হচ্ছেন রবীন্দ্রনাথ, 888sport live football ক্ষেত্রে ওই রুচিই স্থায়ী হয়ে আছে। নজরুল যে একটা ভিন্ন রুচি সৃষ্টি করতে চেয়েছিলেন সেটি পেছনে হটে গেছে। 888sport live football ভদ্রলোকরাই লেখেন এবং তাঁরাই পড়েন; শিক্ষা সর্বজনীন হয় নি, এবং শিক্ষিত ব্যক্তিরা যতটা না মানবিক হতে চেয়েছে তার চেয়ে বেশী চেষ্টা করেছে ভদ্রলোক হবার; ভদ্রলোকদের রাজত্বে নজরুলের গান তবুও চলে, তাঁর 888sport live football কদর পায় না, মনে হয় কেমন যেন গরীব গরীব, আবার উচ্চকণ্ঠও, অর্থাৎ অভদ্র। পিতৃতান্ত্রিক এই ব্যবস্থায় বিপস্নব যা করবার শরৎচন্দ্রের সব্যসাচীরাই করেছে, নজরুলের সব্যসাচীরা পারে নি। পরাজয়টা নজরুলের একার নয়, দেশের শতকরা আশিজন সুযোগবঞ্চিত মানুষেরই।
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় দরিদ্র নিম্নবিত্তের মানুষদের নিয়ে লিখেছেন, প্রথম জীবনে মানুষকে তিনি দেখতেন নানাবিধ শক্তির হাতে পুতুল হিসেবে, পরে মার্কসবাদী দৃষ্টিতে বিচার করতে গিয়ে দেখতে পেয়েছেন মূল নিয়ন্ত্রক অর্থনীতি। পরবর্তী জীবনের কথা888sport live footballে ওই সত্যটির যে উন্মোচন তিনি ঘটিয়েছেন তেমনটা অন্যকোনো কথা888sport live footballিক করতে পারেন নি। কিন্তু তিনি এটাও দেখতে পেয়েছেন যে তাঁর কালের মার্কসবাদীরা; সমাজের মন বোঝে নি, ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি সম্পর্কে ডাইরিতে ছোট্ট করে লিখেছিলেন সিপিআই ভারতের মন বোঝে না; সেই অভিযোগ মিথ্যা ছিল না। ওই না-বোঝার দরুনই পরে সিপিআই দু’টুকরো হয়েছে, বুদ্ধিজীবীরা অধিকাংশই রয়ে গেছেন সিপিআই-এর সঙ্গে, কিন্তু অধিক শক্তিশালী হয়ে উঠেছে সিপিএম; এবং সিপিএমও যখন বিপস্নবী ভূমিকা পালনে ব্যর্থ হয়েছে তখন বিদ্রোহ করে শত শত মেধাবান তরুণ যোগ দিয়েছে নকশালবাড়ীর বিপস্নব-স্পন্দিত আন্দোলনে; এবং নৃশংস বর্বরতায় প্রাণ হারিয়েছে জাতীয়তাবাদী কংগ্রেসীদের হাতে।
নজরুল-পরবর্তীদের ভেতর সমর সেন (১৯১৬-৮৭) মার্কসবাদী ধারায় 888sport app download apk লিখবেন বলে ঠিক করেছিলেন, কিন্তু বেশী দূর এগুতে পারেন নি, ১৯৪৭-এ এসে 888sport app download apk লেখাই থামিয়ে দিয়েছেন। এটা সেই সময় যখন সুকান্ত লিখেছেন যে 888sport app download apkকে তিনি ছুটি দেবেন, কেননা ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময় হয়ে পড়েছে। 888sport app download apk ছাড়বেন কিন্তু তাই বলে যে আন্দোলন ছাড়বেন এমন বক্তব্য সুকামেত্মর ছিল না; সমর সেনও 888sport app download apk ছেড়েছেন কিন্তু আন্দোলনে থেকেছেন, কেবল থাকেনই নি, নজরুলের মতোই স্ব-উদ্যোগে ও সম্পাদনায় ফ্রন্টিয়ার নামে সাপ্তাহিক বের করে বিপস্নবী ভূমিকাকে প্রসারিত করতে সচেষ্ট থেকেছেন, এবং আজীবন মার্কসবাদীই রয়ে গেছেন। সেটা কিন্তু সুভাষ মুখোপাধ্যায় (১৯১৯-২০০৩) করতে পারেন নি। কমিউনিস্ট হিসেবে জীবন শুরু করে জীবন শেষ করেছেন কংগ্রেসী হিসেবে। 888sport appয় তিনি একাধিকবার এসেছেন। শেষ বার এসেছিলেন এরশাদের রাজত্বকালে, রাজকীয় 888sport app download apk উৎসবে যোগ দিতে। তাঁর সহপাঠী ফররুখ আহমদের (১৯১৮-৭৪) ভেতরও ছাত্রজীবনে বিলক্ষণ বামপন্থী-প্রবণতা ছিল, কিন্তু তিনিও জীবন শেষ করেছেন পাকিস্তানপন্থী হিসেবে। নীচে নামার পথ সব সময়েই প্রশস্ত।
সমরেশ বসু (১৯২৪-৮৮) এক সময়ে কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য পর্যন্ত হয়েছিলেন। পার্টির কর্মী হিসেবে কারাবরণও করেন, তাঁর 888sport alternative linkে মেহনতী মানুষের জীবনের মর্মস্পর্শী ছবি আছে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনিও নিজের অবস্থানে টিকে থাকতে পারেন নি।
সাত
ভরসা কিন্তু নজরুলের ওই পুঁজিবাদবিরোধী ধারাই। কেবল 888sport appsে নয়, সারা বিশ্বেই পুঁজিবাদের নৃশংসতা আজ মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে, তার চরিত্র এখন পুরোপুরি ফ্যাসিবাদী। এর বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী সংগ্রাম চলছে, মতাদর্শিক সৈনিক হিসেবে তাতে নজরুল উপস্থিত থাকবেন, যেমন থাকবেন তাঁরই সমসাময়িক লোরকা। থাকবেন পূর্বসূরী রবীন্দ্রনাথ, অনুপ্রেরণা জোগাবেন তিনি পরিবর্তনকামীদের।
888sport apkীরা বলছেন ধরিত্রীকে যে গতিতে তপ্ত করা হচ্ছে সেটা থামানো না গেলে এই গ্রহ মনুষ্য বসবাসের উপযুক্ত থাকবে না।
কথাটা কিন্তু নজরুলও বলেছিলেন, সেই ১৯২১ সালে, তাঁর বয়স যখন ২২। 888sport liveের নাম ‘‘রোজ-কেয়ামত বা প্রলয়-দিন’’; প্রথম বাক্যটা এই রকমের, ‘‘একজন বহুদর্শী বিজ্ঞ বৈজ্ঞানিক সম্প্রতি সিদ্ধান্ত করিয়াছেন যে, আমাদের পৃথিবীর ধ্বংস (প্রলয় বা রোজ-কেয়ামত) হইবার দিন যত দূর মনে করি বাস্তবিক তত দূর নয়।’’ মূল কারণ বিষাক্ত গ্যাসের নির্গমন। 888sport liveে বলা হয়েছে যে, ‘‘প্রত্যেক কয়লার চাপ, প্রত্যেকটি দেশলাই যাহা চালানো হয়, তাহা প্রত্যহ আমাদের দরকারী অমস্নজান বাষ্প নিঃশেষ করিতেছে।’’ পৃথিবীতে যে বিশেষ ধরনের বিপদ ঘনিয়ে আসছে তা নিয়ে রবীন্দ্রনাথের উদ্বেগ ছিল, ১৯৩১-এ লেখা ‘প্রশ্ন’ 888sport app download apkয় যার প্রকাশ আছে, যেখানে বায়ুকে বিষাক্ত করে তোলার কথা রয়েছে; সেই বিপদ কিন্তু এখন আরও এগিয়ে এসেছে, 888sport apkীরা সময় দিয়েছেন বার বছর। তবে পৃথিবী নিশ্চয়ই ধ্বংস হয়ে যাবে না; মানুষ রুখে দাঁড়াবে। আশা করা যায় সে-ব্যাপারে মানুষকে সচেতন করবেন কবি ও বুদ্ধিজীবীরা। সকলে যে করবেন বা পারবেন তা অবশ্য নয়।
প্রাণ ও গানের কথা রবীন্দ্রনাথ বারবার বলেছেন, বলেছেন নজরুলও; গান না থাকলে বুঝতে হবে প্রাণ নেই। আজকের
পৃথিবীতে ধ্বনি আছে বহু, আছে হুঙ্কার ও আর্তনাদ, অভাব গানের। গানের ফেরত আসা চাই; কিন্তু সে তো আসবে না প্রাণ যদি শক্তিশালী না হয়। প্রাণ বাঁচানোর সংগ্রামে বিশ্বকে ব্যক্তি মালিকানার বৃত্ত থেকে সামাজিক মালিকানার স্তরে নিয়ে যাওয়ার কাজ করাটাই এখন মুখ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশ্বের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে এই কাজের ওপরই। 888sport live football বিষয়ে আমাদের এই আলোচনার উপসংহারও দাঁড়াচ্ছে সেটাই।
তথ্যসূত্র
১. উদ্ধৃত, চির উন্নত শির, সম্পাদক মানিক মুখোপাধ্যায়, সারা বাংলা নজরুল শতবর্ষ কমিটি, কলকাতা ২০০১, পৃ ৯৭।
২. ঐ, পৃ ১০৩।
৩. অচিমত্ম্যকুমার সেনগুপ্ত, কলেস্নাল যুগ, কলকাতা, এম সি সরকার অ্যান্ড সন্স, ১৯৫০, পৃ ১০৭।
৪. পবিত্র গঙ্গোপাধ্যায়, চলমান জীবন (দ্বিতীয় পর্ব), কলকাতা, কলকাতা বুক ক্লাব, ১৯৫৩, পৃ ২৮৮-৯০।
৫. চির উন্নত শির, প্রাগুক্ত, পৃ ১৮৪-৮৬।
৬. Rabindra Oeuvre, Dhaka, Pathok Samabesh, ২০১৩, vol xx, পৃ ৪৩৯।
৭. চির উন্নত শির, প্রাগুক্ত, পৃ ১৩০-৪০।


Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.