রচনা-পরিচয় : ভূঁইয়া ইকবাল
বিশ শতকের প্রথমার্ধের কথা888sport live footballিক ও ভাবুক প্রাবন্ধিক মোহাম্মদ হেদায়েতুল্লাহ্ (১৮৮০-১৯৪৬) সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের সাক্ষাৎ-পরিচয় ঘটেছিল বঙ্গভঙ্গ-আন্দোলনকালে। হেদায়েতুল্লাহ্ নেকনজর ও তাজিয়া (১৩৪৩) নামে দুটি 888sport alternative link এবং প্রদীপ ও চেরাগ (১৩৩২/৩৩) গল্পসংকলন প্রকাশ করেছিলেন। তিনি সৈয়দ এমদাদ আলী-সম্পাদিত নবনূর (১৯০৩-০৭) পত্রিকা প্রকাশনায় অন্যতম উদ্যোক্তা। বঙ্গদর্শন (নবপর্যায়), নবনূর, সওগাত, মোহাম্মদী ও প্রবাসী প্রভৃতি সাময়িকপত্রে তাঁর 888sport app download apk-গল্প-888sport live প্রকাশ পেয়েছে।
রবীন্দ্র-প্রয়াণের পর হেদায়েতুল্লাহ্ যে-888sport sign up bonusচারণ করেন তাতে কবির সঙ্গে তাঁর পরিচয়, সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি-সম্পর্কে উভয়ের মধ্যে আলোচনা এবং সম্পাদক রবীন্দ্রনাথের ‘দাবী’র পরিপ্রেক্ষিতে ‘সদ্ভাবের অন্তরায়’ 888sport live রচনা ও বঙ্গদর্শনে প্রকাশের উল্লেখ আছে। (দেখুন, মোহাম্মদ হেদায়েতুল্লাহ্, ‘বিশ্বপ্রেমিক রবীন্দ্রনাথ’, মাসিক মোহাম্মদী,
ভাদ্র, ১৩৪৮)।
এই 888sport liveে হেদায়েতুল্লাহ্ লিখেছেন :
…সাম্প্রদায়িক সাম্য লইয়া যখন খুব-একটা আন্দোলন চলিতেছিল, ‘নবনূর’ পত্রিকার পরিচালনাসম্পর্কে একদিন খেয়াল হইল মুখামুখি সদালাপে রবীন্দ্রনাথের অন্তর পরীক্ষা করার। সে আজ কিছু কম ৪০ বৎসরের পুরাতন কথা। একদিন সকালের দিকে রবীন্দ্রনাথের কলিকাতা আশ্রমে উপস্থিত হইলাম। একটু খটকা লাগিল – এমনভাবে দ্বারস্থ হইয়া পরিচয়-প্রয়াস সবসময়ে সৌষ্ঠবসম্মত নহে। কিন্তু খটকা ক্ষণস্থায়ী হইল। অচিরেই অন্দরের দিকে আহূত হইলাম। প্রাসাদপ্রতিম সৌধের একদিকে একটা কক্ষ – সাজসজ্জা সাদাসিধা রকমের। কবি বসিয়া আছেন একটা সাবেকী তক্তপোশ আশ্রয় করিয়া। কক্ষটির বৈশিষ্ট্য এই যে, টেবিল-চেয়ারের বাহুল্য দৃষ্টিগোচর হইল না। তক্তপোশের এক পার্শ্বে পুস্তকাদি রক্ষার উপযোগী একটা মঞ্চবিশেষ। আমি তক্তপোশের এক পার্শ্বে আসন প্রাপ্ত হইলাম। ‘মাথানত’ করিবার জন্য কোনো প্রেরণা আবশ্যক হইল না – কিংবা যিনি সম্মানযোগ্য তাঁহাতে অভিবাদনপ্রাপ্তির একটা কোন আকাক্সক্ষা পরিলক্ষিত হইল না। যেন কতদিনের পরিচয়। যিনি সকলকে আপন জ্ঞান করেন তাঁহার কাছে আমিও আপন – বিশেষতঃ আমার সাক্ষাৎ যে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত তাহা অবগত হইয়া তিনি নিতান্তই পরিচিতের মতো আলোচনায় রত হইলেন। সাম্প্রদায়িক বৈষম্য অভাবনীয় এবং তাহার সমূল বিনাশ সুদূর পরাহত নহে ইহা তিনি অনর্গল সহজ কথায় বেশী বুঝাইয়া দিলেন। আমিও সাধ্যমতো কিছু বাদানুবাদের অবতারণা করিলাম। কিন্তু বেশী আলোচনা বাহুল্য হইয়া পড়িল। তাঁহার যৌক্তিকতায় বেশ বুঝা গেল : যে পথে চলাচল অপরিহার্য্য তাহা কণ্টকময় হইলে নিরস্ত হইব কেন, কণ্টকবিদ্ধ চরণ আবশ্যকমত কণ্টকের সাহায্যেই নিষ্কণ্টক করিতে হয়। সতর্কবাণীর প্রচার আবশ্যক এবং তজ্জন্য সাময়িক পত্রে 888sport liveাদি প্রকাশ বাঞ্ছনীয়, ইহা তিনি বারবার বলিতে লাগিলেন। আমার নিকট এই সম্পর্কে মতামত তলব হইল। আমিও যথাসাধ্য পেশ করিলাম। কিভাবে তাহা গৃহীত হইল তাহাও সহজে হৃদয়ঙ্গম করিতে পারিলাম। কিন্তু সেই এক কথা : ভাই-ভাইএর কোন্দল যাহা কিছু হয় আপোশেই নিষ্পত্তি করিতে হইবে। সম্প্রীতি একেবারে স্বতঃসিদ্ধ। ‘নবনূরে’র মধ্য দিয়া যে-আলোচনার স্রোত চলিতেছিল তাহার উল্লেখ করিলাম। নির্দ্দেশ হইল, অন্য পক্ষের ভিতর দিয়া স্রোত বহাইতে হইবে। তিনি তখন ‘বঙ্গদর্শনে’র সম্পাদক। নিজ পত্রিকার জন্য 888sport liveের দাবী করিলেন। এই সূত্রে ‘বঙ্গদর্শনে’র জন্য আমার প্রথম 888sport live ‘সদ্ভাবের অন্তরায়’ তাঁহার নিকট পেশ করা হইল। লেখকের নানা রচনা তিনি যেরূপ আগ্রহসহকারে গ্রহণ ও প্রকাশিত করিলেন তাহাতে মনে হইল এই সমস্যার সমাধানে তিনি বিশেষ আগ্রহান্বিত। তাহার পর যখনই আলোচনা ঘটিয়াছে তখনই তিনি পুরাতন কথায় বলিয়াছেন, অভিন্ন আমরা – ঈশ্বর আমাদিগকে অভিন্ন রাখিবেন।…
১৯৩১-এ রবীন্দ্রনাথকে লেখা হেদায়েতুল্লাহ্র এক চিঠিতে উল্লেখ আছে যে, কলকাতায় ‘কড়েয়া মুসলমান পল্লীতে আপনারই আদেশে এক মহাসভার আয়োজন হইয়াছিল – নানারকমের উপদেশে আপনি আমাদিগকে উদ্বুদ্ধ করিয়া তুলিয়াছিলেন – আপনারই আদেশে ‘সদ্ভাবের অন্তরায়’ শীর্ষক 888sport live লিখিয়াছিলাম এবং ‘বঙ্গদর্শনে’ তাহা প্রকাশিত হইয়াছিল – তখন ‘বঙ্গদর্শন’ আপনার পরিচালনায় দৃপ্ত ছিল।’ (টালিগঞ্জ পৌরসভার ভাইস-চেয়ারম্যান হেদায়েতুল্লাহ্র ৮ এপ্রিল ১৯৩১ তারিখের এই চিঠিটি রবীন্দ্রভবনে সংরক্ষিত।) প্রদীপ ও চেরাগ এবং নেকনজর রবীন্দ্রনাথকে পাঠিয়েছিলেন লেখক কবির মতামত প্রার্থনা করে।
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়-প্রতিষ্ঠিত বঙ্গদর্শন (১৮৭২) নবপর্যায়ে রবীন্দ্রনাথ সম্পাদনা করেন প্রায় পাঁচ বছর (মে ১৯০১-মার্চ ১৯০৬)। রবীন্দ্রনাথের সম্পাদিত বঙ্গদর্শনের পঞ্চম বর্ষ একাদশ 888sport free betয় (ফাল্গুন ১৩১২) অর্থাৎ প্রায় একশ বছর আগে হেদায়েতুল্লাহ্র রচনাটি মুদ্রিত হয় (ফেব্রুয়ারি ১৯০৬)।
মোহাম্মদ হেদায়েতুল্লাহ্ সে-সময়ে বাংলার হিন্দু-মুসলমান সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্প্রীতির যেসব বাধা শনাক্ত করেছিলেন, সেসব এখনো প্রাসঙ্গিক বলে বিবেচিত হতে পারে।
রবীন্দ্রনাথের অনুরোধে রচিত কবির সম্পাদিত বঙ্গদর্শন থেকে প্রায় একশ বছর পর হেদায়েতুল্লাহর 888sport liveটি এখানে সংকলিত হলো। দু®প্রাপ্য বঙ্গদর্শন থেকে ‘সদ্ভাবের অন্তরায়’ 888sport liveের ফটোকপি সংগ্রহ করেছি রবীন্দ্রভবন গ্রন্থাগার থেকে।
সদ্ভাবের অন্তরায়
মোহাম্মদ হেদায়েত উল্লা[হ্]
হিন্দুমুসলমানে সদ্ভাবস্থাপন Ñ আজকাল আমাদের প্রায় সকল সর্ব্বজনীন সদনুষ্ঠানের অঙ্গীভূত হইয়াছে। দশে মিলিয়া দেশের কাজে রত হইতে হইলেই কতকটা শক্তি এই দিকে ব্যয়িত করিতে হয়। বর্ত্তমান স্বদেশীব্রতের উদযাপনসময়েও উদ্যমের কিয়দংশ এই দিকে নিয়োজিত রাখিতে হইয়াছে। কেন – তাহা ভাবিবার বিষয়।
হিন্দুমুসলমানের মধ্যে এদেশে বহু-কালাবধি অপূর্ব্ব সৌহার্দ্দ বিদ্যমান রহিয়াছে।* (*‘বঙ্গচ্ছেদে বঙ্গের ব্যবস্থা’) শুধু সৌহার্দ্দ কেন? দীর্ঘকালব্যাপী সংস্রব সম্পর্কের ফলে এই দুই জাতির প্রকৃতি, ব্যবহার ও ধর্ম্মগত বৈলক্ষণ্যের মধ্য হইতে এরূপ একটি সাম্য ও সামঞ্জস্য গঠিত হইয়া উঠিয়াছে, যাহা আবশ্যকমতো দুইকে সর্ব্বতোভাবে এক করিয়া ফেলিয়াছে – এই সামঞ্জস্যের নিকট হিন্দুর হিন্দুত্ব ন্যায্যরূপে কতকটা পরাজয় মানিয়াছে, মুসলমানের মুসলমানত্বও আপনাকে প্রয়োজনানুরূপ অবস্থান্তরিত করিয়া লইয়াছে। “হিন্দু ও মুসলমানের সমাজের মধ্যে এমন একটি সংযোগস্থল সৃষ্ট হইতে ছিল যেখানে সমাজের সীমারেখা মিলিয়া আসিতেছিল। কবীরপন্থা, নানকপন্থা ও নিম্নশ্রেণীর বৈষ্ণবসম্প্রদায় তাহার দৃষ্টান্তস্থল। এখনও ভিতরে ভিতরে এই সামঞ্জস্য সাধনের প্রক্রিয়া বন্ধ নাই” (‘স্বদেশী সমাজ’)। বস্তুত এই দুই সম্প্রদায়ের আভ্যন্তরীণ অবস্থায় সাম্য ও সম্পর্কসুলভ সদ্ভাবের অভাব নাই।
অপেক্ষাকৃত শক্তিহীনের উপর বল বত্তরের প্রভুত্ব-প্রতিষ্ঠা নিতান্তই স্বাভাবিক ও সম্ভবপর। ভারতের রাষ্ট্রীয় অবস্থায় বিশৃঙ্খলা উৎপাদিত হইয়া তদানীন্তন রাজশক্তিকে হীন করিয়া তুলিলেই ভারত রাজলক্ষ্মী অধিকতর শক্তিসম্পন্ন মুসলমানের আশ্রয়গামিনী হইয়াছিলেন, এই স্পষ্ট ঐতিহাসিক সত্য হিন্দু সহজেই বুঝিতে পারিয়াছিল – তাই আপনার চিরগৌরবময় সিংহাসনে মুসলমানশক্তি প্রতিষ্ঠিত করিয়া – বিজয়ীর বিজয়মণ্ডিত মুকুটে অভিষেকমাল্য পরাইয়া হিন্দু কখন আপনাকে ক্ষুণ্ন বিবেচনা করে নাই। যাহাতে মুসলমান রাজশক্তি ভারতে সুপ্রতিষ্ঠিত হইতে ও থাকিতে পারে, সেই উদ্দেশ্যে মুসলমানের সহিত হিন্দুও যথাসাধ্য আপনার শক্তিব্যয় করিতে কুণ্ঠিত হয় নাই। হিন্দুমুসলমান একই রূপপতাকার নিম্নে অবস্থান করিয়া হিন্দুমুসলমাননির্ব্বিশেষে রাজশত্রুর প্রতিকূলে অস্ত্রচালনা করিয়াছে, এরূপ দৃষ্টান্ত ভারতের ইতিহাসে বিরল নহে। হিন্দু, মুসলমানের হইয়া হিন্দুর বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ করিয়াছে, এরূপ ঘটনারও অভাব নাই। দৃষ্টান্তস্বরূপ মোগলশক্তির সহায়তায় রাজপুতের বিরুদ্ধে রাজপুতের অসিচালনার উল্লেখ করা যাইতে পারে। ইহা হইতেই উপলব্ধি করা যায়, ভারতে মুসলমানত্বের সহিত হিন্দুত্বের কতটা ঘনিষ্ঠতা সংস্থাপিত হইয়াছিল। এই একত্রাবস্থানজনিত অবশ্যম্ভাবী ঘনিষ্ঠতা উভয়ের মধ্যে ক্ষীণাদপি ক্ষীণ পার্থক্যের রেখাও মুছিয়া দিয়া তাহাদিগকে কি রাজ্যশাসনের মন্ত্রণাকার্য্য,ে কি দেশজয় ও রাজ্যরক্ষার যুদ্ধব্যাপারে, সর্ব্বত্রই একযোগে নিয়োজিত রাখিয়াছিল।
ভারতে হিন্দুশক্তির সহিত মুসলমানশক্তির অসদ্ভাবমূলক কোনো সর্ব্বনাশকারী সংঘর্ষ কখনো সংঘটিত হয় নাই। হিন্দু-মুসলমানে যে-সকল যুদ্ধবিগ্রহের কথা ইতিহাস
বিবৃত করে, তাহা রাজশক্তিলাভক্ষেত্রে প্রতিদ্বন্দ্বিতামাত্র। রাজকীয় ক্ষমতা-লাভের এই প্রতিদ্বন্দ্বিতাই রাজপুত ও মারাঠাশক্তির সহিত মুসলমানশক্তির সংঘাত ঘটাইয়াছিল Ñ হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে সদ্ভাব ও সমতার অভাব ছিল বলিয়া নহে। রাজশক্তি করকবলিত করিতে মুসলমানের সহিত মুসলমানের সংঘর্ষ যেমন ঘটিতে পারে, হিন্দুর সহিত হিন্দুর সংঘর্ষ যেমন সম্ভবপর, তেমনি মুসলমানের সহিত হিন্দুর সংঘর্ষ কোনো অংশেই বিচিত্র বিবেচিত হইতে পারে না। প্রাচীনকালের কথা ছাড়িয়া দি – রাঠোররাজ জয়চন্দ্রের সহিত চৌহান পৃথ্বীরাজের যে-সর্ব্বনাশকারী সমর হিন্দুশক্তির হীনতা সাধিত করিয়া ভারতে মুসলমানক্ষমতা স্থাপনার পথ সুগম
করিয়া দিয়াছিল, তাহা কি হিন্দুত্বের
উপর হিন্দুত্বের বিদ্বেষপ্রসূত? পক্ষান্তরে, মোসলেমশক্তিকেন্দ্র আরব-তুরস্কের কথা দূরে থাক – এই ভারতবর্ষেই মুসলমানের সহিত মুসলমানের সংঘাত-দৃষ্টান্তেরও অভাব নাই। শেরশূরের দুর্ধর্ষ আক্রমণে অব্যবস্থিত হইয়া মোগলসম্রাট হুমায়ুনকে পথে পথে ফিরিতে হইয়াছিল – সেটি কি মুসলমানের উপর মুসলমানের বিদ্বেষের ফলে, না এক রাজশক্তির উপর অন্য রাজশক্তির প্রভুত্বস্থাপনের চেষ্টায়? স্বভাবত রাষ্ট্রীয়শান্তিপ্রিয় আকবরকেও আহম্মদনগরের বীররমণী চাঁদসুলতানার বিরুদ্ধে অভিযান প্রেরণ করিতে হইয়াছিল কেন? মুসলমানপুঙ্গব সম্রাট আওরঙ্গজিব, মুসলমান বিজাপুর ও গোলকুণ্ডারাজের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ করিয়া কি মুসলমানের সহিত মুসলমানের অসদ্ভাবের পরিচয় দিয়াছেন, না মোগলের রাজকীয় গৌরব অক্ষুণ্ন রাখিবার জন্যই তাহাকে ঐরূপ করিতে হইয়াছিল? ফলত রাজ্য বা রাজশক্তিলাভের যে-আকাক্সক্ষা, তাহা স্বজাতিগত বা বিজাতিগত সাম্য বৈলক্ষণ্যের বিচার করিয়া অসিগ্রহণ করে না। তাই, ভারতে হিন্দুমুসলমানের যে-সকল সংঘর্ষ ঘটিয়াছিল তাহা মুসলমানদের উপর হিন্দুত্বের আক্রমণ নহে Ñ তদানীন্তন রাজশক্তি হস্তান্তরকরণের প্রয়াসমাত্র। রাজশক্তি তখন মুসলমানের হস্তে স্তম্ভ ছিল বলিয়াই হিন্দুকে মুসলমানের সহিত যুদ্ধ করিতে হইয়াছিল – অন্যথা হিন্দুর সহিত হিন্দুর সংঘর্ষের কথাই শুনা যাইত। বস্তুত, বিগ্রহধর্ম্মের যে-নীতি মুসলমান শেরখাঁকে মুসলমান হুমায়ুনের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ করিতে প্রণোদিত করিতে পারে, রাজপুত ও মারাঠাশক্তি সেই নীতির অনুসরণ করিয়া মুসলমানশক্তির বিরুদ্ধে দণ্ডায়মান হইলে তাহা কখনো বিজাতিবিদ্বেষের দৃষ্টান্ত বলিয়া বিবেচিত হইতে পারে না।
ভারতে মুসলমানভাগ্যবিপর্যয়ের শেষ দৃষ্টান্ত হইতেও হিন্দুমুসলমানের সমপ্রাণতা ও একযোগ কার্য্যকারিতার বেশ একটা (মর্ম্মস্পর্শী!) স্পষ্ট পরিচয় পাওয়া যায়। হিন্দুর সহিত আপনার শক্তি মিলিত করিয়া, রাজকার্য্যে হিন্দুর আন্তরিক সহায়তা লাভ করিয়া, যে মুসলমান ভারতে আপনার রাজকীয় মহিমা পর্ব্বতপ্রমাণ উন্নত করিয়াছিল, নিদারুণ অধঃপতনের সময়েও মুসলমান সেই হিন্দুসহযোগী হইতে বিচ্ছিন্ন হইয়া কার্য্যে আগুয়ান হয় নাই। তাই ভ্রান্তমতি মিরজাফর যখন সিরাজের মস্তক হইতে মুকুট কাড়িয়া লইয়া ইংরাজের শিরে পরাইবার উপক্রম করিল, তখনও সে তাহারই মতো কুহকমুগ্ধ কতকগুলি হিন্দুপ্রধানের সহায়তা গ্রহণ করিতে অবহেলা করে নাই। পক্ষান্তরে, প্রভুভক্ত হিন্দুশক্তি মোহনলাল ও মিরমদন প্রমুখ বিশ্বস্ত বীরের আশ্রয়গ্রহণপূর্ব্বক মোসলেমপ্রভুত্ব অক্ষুণ্ন রাখিতে যথাসাধ্য চেষ্টা করিয়াছিল। হিন্দুমুসলমানের একযোগ সহায়তা গ্রহণ করিয়াই ইংরাজ হিন্দুমুসলমানের প্রভু হইতে পারিয়াছে, তাই ভারতের তাজ আজ – মুসলমানেরও নয় হিন্দুরও নয় – ইংরাজের শির শোভিত করিতেছে। হিন্দুমুসলমান উভয়েরই এইরূপে মতিচ্ছন্ন না হইলে আজ ভারতের ইতিহাস অন্য আকার ধারণ করিত না, কে বলিতে পারে?
বিজিত ও বিজেতার মধ্যে সাম্য ও সদ্ভাব সংস্থাপিত না হইলে, বিজয়ী শক্তি যতই বিপুল হউক না, রাজধর্ম্ম কখনো তাহাকে দীর্ঘকালের জন্য কোথাও প্রতিষ্ঠান্বিত থাকিতে দেয় না। মুসলমান ও হিন্দুর মধ্যে রাজাপ্রজাসম্বন্ধ স্থাপিত হইবার পর যদি ক্রমে তাহারা পরস্পর পরস্পরের প্রতি আকৃষ্ট ও অনুরক্ত না হইত, তাহা হইলে মুসলমান আপনাকে ভারতীয় রাজতক্তে এতদিন অভিষিক্ত রাখিতে পারিত কিনা, সন্দেহ। সুতরাং হিন্দু ও মুসলমানের মধ্যে সাম্প্রদায়িক সাম্যের জন্য বস্তুতই কোনো নতুন সরঞ্জাম করিতে হইবে না।
হিন্দুমুসলমানে সদ্ভাব সংস্থাপিত করিতে হইবে – উদ্দেশ্যটা যতই সাধু ও সরল হউক না কেন, যে পক্ষ হইতে প্রথম এই সুরটা তোলা হয়, তাহাকে কখনোই ভারতের হিতাকাক্সক্ষী বলিয়া বোধ হয় না – আমাদের মনে হয়, আমাদের ক্ষতি সাধিতেই কোনো শত্রুপক্ষ আমাদের মধ্যে এইরূপ ধুয়া ছাড়িয়া দিয়াছে। সদ্ভাবের অভাব ঘটিলেই সদ্ভাবস্থাপন আবশ্যক হইয়া পড়ে – সদ্ভাব যেখানে স্বতঃসিদ্ধ, সেখানে সদ্ভাবস্থাপনচেষ্টার সার্থকতা নাই। কোনো সৌম্য-শান্ত নির্ব্বিঘ্ন-নিশ্চিত পল্লীর মধ্যে কোথাও কিছু নাই, যদি হঠাৎ শান্তিরক্ষার ঘটা পড়িয়া যায় তাহা হইলে তাহা সেই পল্লীবাসীগণের মনে কল্পিত আশঙ্কা সঞ্চারিত করিয়া দিয়া যেমন তথায় একটা উগ্র অশান্তি ও
বৈষম্য উৎপাদন করে, সেইরূপ আবহমানকাল হইতে প্রীতিবদ্ধ হিন্দু ও মুসলমানের মধ্যে প্রীতিস্থাপনের চেষ্টাও তাহাদিগের মধ্যে প্রীতির অমূলক অভাবজ্ঞান উৎপাদিত করিয়া তাহাদিগকে উত্ত্যক্ত করিয়া তোলে, ইহা বিচিত্র নহে। অক্ষত অঙ্গে প্রশমন-প্রলেপের আয়োজনে শরীরধর্ম্ম স্বভাবতই আপনার ব্যাধিহীনতায় সন্দিহান হইয়া পড়ে। দুঃখের বিষয়, হিন্দু-মুসলমানে প্রীতিস্থাপনের এই চীৎকারও সম্পর্কিত সমাজদ্বয়ের ভিতর একটা অশান্তির ভাব আনয়ন করিয়াছে। রাজশক্তি তৃতীয় হস্তে না থাকিলে অবস্থা ভিন্নমূর্ত্তি গ্রহণ করিতে পারিত, কিন্তু যে-সময়ে হিন্দুমুসলমান তুল্যরূপে একই বিজাতীয় শাসনচক্রের আবর্ত্তনবিবর্ত্তনের মধ্যে পতিত, সেই সময়ে এই প্রীতিস্থাপনের প্রয়াসে অপেক্ষাকৃত শক্তিসম্পন্ন প্রজা হীনবল অপর প্রজাটির প্রতি আপনার সঙ্গত যথাযথ ব্যবহারে সন্দিহান হইয়া পড়িয়াছে। (বর্ত্তমান সময়ে বিদ্যা, বুদ্ধি, চিত্ত, সর্ব্ববিষয়েই হিন্দু মুসলমান অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ, তাহাতে বোধ হয় দ্বিমত নাই।) তাই, যেমনি এই দুয়ের মধ্যে কল্পিত অপ্রিয় ব্যবহারের প্রতিকারপন্থী পরিগৃহীত হইল, অমনি অপেক্ষাকৃত উন্নত হিন্দু মনে করিল, সে হয়ত হীনবল মুসলমানের প্রতি অসদ্ব্যবহার করিয়াছে। লুপ্তবিবেক মুসলমান ভাবিল, তবে বাস্তবিকই হিন্দু তাহার প্রতি অত্যাচার করিয়াছে – নচেৎ প্রতিকারের চেষ্টা আবশ্যক হইল কেন? ফলে ইহাই হইয়াছে যে, শিক্ষা-মহীয়ান উদীয়মান সমাজের কিছু-বা লজ্জিত কিছু-বা অনুতপ্ত হইয়া ভবিষ্যদ্ব্যবহারে সতর্কতা অবলম্বনপূর্ব্বক যতই চিত্ত ও বিদ্যাবলহীন অন্য সম্প্রদায়টিকে আপনার প্রীতিপ্রসারিত বাহুদ্বয়ে বেষ্টিত করিতে যাইতেছে, ততই সে আপনার বিবেকহীনতার ফলে আপনাকে দূরে অপসারিত করিতে চেষ্টা করিতেছে – নিয়তির অনুল্লঙ্ঘনীয় নিয়মে অধুনা তাহার ভাগ্য যে উহার সহিত একই শৃঙ্খলে আবদ্ধ, উহা হইতে আপনাকে বিচ্ছিন্ন করা যে নিতান্তই অসম্ভব, এ-কথা উপলব্ধি করিবার হৃদয় তাহার নাই। আশা এই যে, রাজদ্বারে তাহার জন্য বিশিষ্টভাবে ভিক্ষাদানের বন্দোবস্ত হইবে। কিন্তু একবার নয়, বারবার যে সে আপনার বর্ত্তমান ভাগ্যদেবতার দ্বার হইতে শূন্য ভিক্ষাভাণ্ড হস্তে করিয়া ফিরিয়া আসিয়াছে, তাহার মজ্জাগত জড়তা এ-কথা তাহাকে আদৌ 888sport app download for android করাইতে পারিতেছে না। সুশিক্ষার অরুণকিরণ যতদিন না এই জড়তার আবেশ ভাঙিতে পারে, ততদিন পর্য্যন্ত মুসলমানের চেতনা হইবে না।
সুতরাং হিন্দুমুসলমানে প্রীতিস্থাপনপ্রয়াস অন্যমুখ হইয়া ভিন্ন আকার ধারণ করিলেই আশানুযায়ী ফল পাওয়া যাইবে বলিয়া মনে হয়।
রাজশক্তি মুসলমানহস্তচ্যুত হইলে নূতন অভ্যাগতের কুহকমন্ত্রে হিন্দু যেমন আপনাকে ভুলিয়াছিল, তেমনি সে মুসলমানের দিকেও লক্ষ্য করিতে পারে নাই – এ-কথা সুধী হিন্দুও অস্বীকার করিবে না। যুগপৎ রাজশক্তি ও হিন্দুর সহায়তা হারাইয়া মুসলমানকে একেবারেই অবসন্ন ও হীনবল হইতে হইয়াছে। এখন মোহ কাটিয়া হিন্দুর চক্ষু ফুটিয়াছে, তাই আত্মশক্তির পুনর্বিকাশের পথে স্বাবলম্বন ও আত্মনির্ভরতার আবশ্যকতা অনুভূত হইতেছে – কিন্তু এদিকেও জঞ্জাল বাধিয়াছে। এখন দেখা যাইতেছে, কোনো প্রতিকূল শক্তির আক্রমণ হইতে রক্ষার চেষ্টায় এক হাত উঠে, অন্যটি উঠিতে পারে না; – সেটা যেন শিথিলতা ও জড়তায় অবসন্ন – এই ব্যাধির চিকিৎসা আবশ্যক। রীতিমতো শিক্ষাফল না পাইলে মুসলমান কখনো হিন্দুর সহিত আত্মোন্নতি-উদ্যমে যোগদান করিতে পারিবে না। হিন্দুমুসলমানে প্রীতিস্থাপনাকাক্সক্ষী আগ্রহের কতকটা এইদিকে পরিচালিত হওয়া নিতান্তই আবশ্যক। দুইটা হাতই সবল থাকিলে হনন ও রক্ষণ উভয় কাজই চলিতে পারে, কিন্তু একটা বলহীন হইলেই, হনন ত সম্ভবপর হয় না, রক্ষণও দুরূহ হইয়া পড়ে।
বাঙালি বিভক্ত হইল অর্থাৎ বাঙালিকে ভাগ করা হইল – অন্য কথায়, হিন্দু হইতে মুসলমান এবং মুসলমান হইতে হিন্দু কতকটা বিচ্ছিন্ন হইল – একের উন্নতি অন্যের উদ্যম-অনুশীলনের বিষয়ীভূত রহিল না – একের অবনতিতে অন্যের শক্তি ব্যয়িত করিবার আবশ্যকতা ঘুচিয়া গেল – সমগ্র বাঙালির সমস্ত হিন্দুমুসলমান লইয়া একটা বাঙালিজাতি (Bengalee Nation) গঠনের সম্ভাবনা রহিল না। এখন সম্ভব হয়, নতুন ব্যবস্থায়, নতুন ধরনে, হিন্দু, তুমি আপনাকে একটা স্বতন্ত্র জাতি (Nation) রূপে পরিণত কর – আর মুসলমান, তুমিও তোমার মধ্যে স্বতন্ত্রভাবে জাতীয়তাসৃষ্টির সরঞ্জাম করিতে থাক। সোজা ও সরল কথায় এই ব্যবচ্ছেদের বন্দোবস্ত এইরূপ। এখন ভাবিয়া দেখিতে হইবে, এমন সোজা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে এরূপ তীব্র প্রতিবাদ উঠিল কেন? হিন্দু বাঙালি বুঝিল, মুসলমান হইতে বিচ্ছিন্ন হইয়া স্বতন্ত্রভাবে শক্তিশালী হইবার যে-কল্পনা, তাহা নিতান্তই অসার ও ভিত্তিশূন্য – সহস্রাধিকবর্ষব্যাপী সংস্রব ও সম্পর্কজনিত সাম্যের সূত্র ছিন্ন করিয়া দিয়া একেবারে স্বাতন্ত্র্য অবলম্বন করা সম্ভবপর বা বাঞ্ছনীয় হইতে পারে না। মুসলমানের মধ্যে যাঁহারা শিক্ষিত বা অন্যবিধ উপায়ে কতকটা প্রকৃতিস্থ, তাঁহারাও বুঝিলেন, এরূপ পার্থক্যের রেখা টানিয়া আলাহিদা থাকা তাহার পক্ষে যুক্তিযুক্ত বা প্রশস্ত নহে, বরঞ্চ ইহা মুসলমানের পক্ষেই বিশিষ্টরূপে অনিষ্টকর। সরকারবাহাদুর কিন্তু বরাবরই ইহার উল্টা বুঝিতেছেন ও বলিতেছেন – (সরকারি হিসাবে) হিন্দুও অবুঝ, মুসলমান ত (অশিক্ষিত, সুতরাং) অজ্ঞ আছেই।
যাহা হউক, অবুঝ হিন্দুমুসলমান বুঝিল না, তাই বাঙালি বিভক্ত হইলেও যাহাতে তাহাদের মধ্যে কোনো অমিল না ঘটে, যাহাতে তাহাদের মধ্যে সাম্যশক্তি ক্ষুণ্ন হইয়া কলহবিবাদের অবতারণা না করে, সে-বিষয়ে ভিন্ন ভিন্ন উপায় ও পন্থা উদ্ভাবিত হইতেছে। গত অগ্রহায়ণ888sport free betর বঙ্গদর্শনে ‘বঙ্গচ্ছেদে বঙ্গের ব্যবস্থা’র শ্রদ্ধেয় লেখক ‘হিন্দুমুসলমানে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা জাগাইবার আয়োজনে’র প্রতিবিধানকল্পে কয়েকটি সুচিন্তাপ্রসূত অবলম্বনীয় ব্যবস্থার নির্দ্দেশ করিয়াছেন। ব্যবস্থাগুলি প্রবীণ লেখকের পরিপক্ব বুদ্ধির উপযুক্ত হইয়াছে, সন্দেহ নাই। তবে তাঁহার নির্দ্দিষ্ট উপায়গুলি অবলম্বিত হইবার পথে শিক্ষিত ব্যক্তিকেই উপলব্ধি করিতে হয়। লেখক বলিতেছেন, ‘হিন্দুমুসলমানে বিবাদ হইবার এক সূত্র সরকারি চাকুরি’ – ‘কুক্কুরপরিত্যক্ত উচ্ছিষ্ট মাংসখণ্ড’-জ্ঞানে ‘ইংরেজের উচ্ছিষ্ট সামান্য রাজকর্ম্মলাভের লোভ’কে জয় করিতে হইবে। কথাটা প্রবীণতাসুলভ সুযুক্তির পরিচায়কই বটে। কিন্তু মুসলমানের মধ্যে শিক্ষিতের 888sport free bet বৃদ্ধি না পাইলে কখনো এই উপায় ফলপ্রসূ হইতে পারে না। চাকুরির লোভেই হউক বা যেজন্যই হউক, বিদ্যার্জ্জন করিতে যত্নবান হইয়া হিন্দু যতটুকু শিক্ষা পাইয়াছে, তাহাতে অন্তত তাহার এই জ্ঞানটুকু জন্মিয়াছে যে, ডিগ্রিলাভ করিলেই চাকুরিলাভ ঘটে না – ভারতে ইংরাজের রাজত্বে ইংরাজি বিদ্যা মাত্রই অর্থকরী নহে, সে-বিদ্যারও ভিন্ন ভিন্ন আকার আছে। তাই হয়ত এখন শিক্ষিতবহুল হিন্দুসমাজ সরকারি চাকুরিকে ঘৃণার চক্ষে দেখিতে শিখিয়াছে। মুসলমানের মধ্যেও যখন শিক্ষা সম্যক প্রসারলাভ করিবে – যখন মুসলমান বুঝিবে, বি.এ. পাশ করিলেই ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট হওয়া যায় না – যখন ৩০ টাকা বেতনের কোনো রাজকর্ম্মে শতজন এম.এ. হিন্দুর সঙ্গে অন্তত পঞ্চাশজন মুসলমান এম.এ-রও আবেদন পড়িবে, তখন আর কাহাকেও কিছু বলিতে হইবে না – তখন মুসলমানের লোলুপদৃষ্টি আপনা হইতেই সরকারি চাকুরির দিক হইতে প্রত্যাবত হইয়া অন্যত্র পতিত হইবে। এখন যে মুষ্টিমেয় শিক্ষিতমুসলমান রাজকার্য্যপ্রাপ্তির প্রলোভনে মুগ্ধ হয়, সেটি অস্বাভাবিক বা বিচিত্র নহে।
উক্ত শ্রদ্ধেয় লেখকের মতে, হিন্দুমুসলমানে বিবাদ বাধিবার অপর সূত্র : – ‘সরকারি অবৈতনিক সম্মানার্হ পদ ও খ্যাতি’। অতএব ‘রাজার খেলাতখেতাব আমরা দাসত্বের চিহ্ন বলিয়া ঘৃণার চক্ষে দেখিব’। এই সূত্রে হিন্দুর সহিত মুসলমানের বিশেষ কোনো বিবাদের সম্ভাবনা আছে বলিয়া বোধ হয় না, তাহার কারণ আছে। প্রথমত আমাদের দেশে রাজতহবিলে টাকার প্রবাহ না ঢালিলে রাজখেতাব পাইবার সম্ভাবনা খুব কম – মুসলমানের অর্থাভাব তাহাকে হিন্দুর সহিত এক্ষেত্রে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দণ্ডায়মান হইতে দিবে না। তাছাড়া, রাজসম্মানলাভের প্রতিদ্বন্দ্বিতা অতি সংকীর্ণসীমায় আবদ্ধ থাকে, তাহাতে সাধারণের মধ্যে কলহ বা মনোমালিন্য উৎপন্ন হইবার সম্ভাবনা থাকে না। যে দুইচারিজন লোক রাজখেতাবের জন্য লালায়িত হন, তাঁহাদিগকে ঘৃণার চক্ষে দেখা কেন – তাঁহাদিগের প্রতি একেবারে চক্ষু মুদ্রিত করিলেও চলিতে পারে। এতদ্ব্যতীত মোটের উপর বিবেচনা করিলে, রাজার খেলাতখেতাবকে ঘৃণার চক্ষে দেখা সামান্য শিক্ষাবলের কার্য্য নহে – ইহার অনুরূপ শিক্ষাবল মুসলমানের হইয়াছে বলিয়া বোধ হয় না।
‘মুসলমানহিন্দুর এই প্রাচীন সৌখ্য নষ্ট করিবার চেষ্টা’র প্রতিরোধ করে, “বঙ্গচ্ছেদে বঙ্গের ব্যবস্থা”র লেখক আরও বলিতেছেন – “হিন্দুদিগের মধ্যে মুসলমানের ও মুসলমানের মধ্যে হিন্দুর 888sport live football ও সাধনার সম্যক প্রচার করিয়া উভয় সম্প্রদায়ের শিক্ষিত ভদ্রমণ্ডলীকে পরস্পরের প্রতি 888sport apk download apk latest versionবান করিতে হইবে।” এই সারবান উপায়ের সার্থকতা উপলব্ধি করিয়া আমরাও ইতিপূর্ব্বে এ-কথা বারবার বলিয়া আসিয়াছি। কিন্তু এখানেও ‘শিক্ষিত ভদ্রমণ্ডলী’ লইয়া কথা। অধুনা হিন্দুর চক্ষে আপনাকে জগতের শিক্ষাগুরুরূপে ধরিতে পারে, এমন ক্ষমতা মুসলমানের নাই – শিক্ষার সঙ্গে তাহার এই শক্তি আসিবে, আশা করা যায়। মুসলমানের এই চিত্র খুঁজিয়া লইতে হিন্দু একটু চেষ্টাবান হইলে ভালো হয়। এই উদ্দেশ্যে অন্তত একটুকু পারশীশিক্ষা আবশ্যক হইয়া পড়ে। বারান্তরে এ-বিষয়ে আলোচনা করিবার বাসনা রহিল।
প্রাচ্যের প্রবীণ বিদ্যামন্দির ধূলিসাৎ করিয়া অধুনা ভারতে পাশ্চাত্যধরনে যে নবীন শিক্ষামন্দির প্রতিষ্ঠিত করা হইয়াছে, তাহার প্রাঙ্গণে পাঠরত বিদ্যার্থীর বিদ্যা সম্পূর্ণতা লাভ করিতেছে না – তাহার অভ্যন্তরে প্রবেশ করিয়াও সে আপনাকে সম্যক সমুন্নত করিতে পারিতেছে না – লোকশিক্ষার সহিত লোকপ্রকৃতির যে-সামঞ্জস্য থাকা আবশ্যক বর্ত্তমান শিক্ষাপ্রণালি সে সামঞ্জস্যের দিকে লক্ষ্য রাখে না – আমাদের শিক্ষা সর্ব্বাঙ্গীণ পূর্ণতাপ্রাপ্ত হয় না – তাই আমাদের উপযোগী, শিক্ষার নতুন অনুষ্ঠানের প্রয়োজন হইয়াছে। এই অসম্পূর্ণ শিক্ষাপ্রণালি যদি ভারতে হিন্দুর উন্নতির অন্তরায় ঘটাইয়া থাকে, তাহা হইলে ইহা মুসলমানের মধ্যে আরও শোচনীয়রূপে আপনার অনিষ্টের বীজ উপ্ত করিবে। মুসলমানের শিক্ষিতজীবনের এখনও বাল্যাবস্থা – সুতরাং শিক্ষার এই নতুন অনুষ্ঠানে মুসলমানের শিক্ষার কোনো বিশিষ্ট ব্যবস্থা নিতান্তই বাঞ্ছনীয়। মুসলমানপক্ষ হইতে এরূপ একটা দাবি হয়ত অন্যায় আবদার বলিয়া বিবেচিত হইতে পারে – কিন্তু যেখানে প্রতিকারপ্রাপ্তির আশা থাকে অভাবজনিত দীনতা সেখানে সঙ্কোচ ও লজ্জার শির চর্ব্বণ করিয়া আপনার অভাব ব্যক্ত করিতে কুণ্ঠাবোধ করে না – করিলেও চলে না। জাতীয় শিক্ষাসমিতি এখনও গঠনের পথে Ñ যথাসময়ে এ-বিষয়ের বিহিত ব্যবস্থা নির্দ্দেশ করা যাইবে।
[বঙ্গদর্শন, ৫ম বর্ষ একাদশ 888sport free bet, ফাল্গুন]


Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.