গুড়ুম! গুড়ুম! গুড়ুম!

বন্দুকের গুলির শব্দে অপরাহ্ণের রাজবিলাস জেগে ওঠে। হরেক রকম গাছের ঝোপ থেকে ঝাঁক-ঝাঁক পাখি সরবে উড়ে যায়। সেই উড়ালে গাছের ডালপালা ঝাঁকুনি খায়। পাকা আম থুপ্থাপ্ ঝরে পড়ে। সারি-সারি কড়ই গাছের ডালে কেহ্চকুমারী পোকার প্রিয় কচি পাতার কোনো কোনো ঝোপও কেঁপে ওঠে। এমন ঝলমলে দিনে বন্দুকের শব্দ বাজ পড়ার মতো চারদিক কাঁপিয়ে তোলে। রাজবিলাসের গাঙকূলে, উঠানে ধুমাদ্দুম শব্দে পটকা-বাজি ফাটে। সূর্য পশ্চিম আকাশে হেলানোর পথে চেহ্ঙে নদীর কূল জেগে ওঠে। গাঙকূলে, ছড়ায়, গ্রামে, ঘরে, মেঠোপথে, কোম্পানির গাড়িপথে, বাজারে, রাজবিলাসে শোরগোল ওঠে, ‘রাজাদাগি এতথন, রাজাবাবু-দাগি এতথন’ (‘রাজাদাগি আসছেন, রাজাবাবু-দাগি আসছেন’)।

রাঙ্গামাটির রাজঘাট থেকে একটা ছোট, দোতলা মোটরবোট বরগাঙের জোয়ার ধরে উত্তরে উজোয়। পুবপাড়ে রাজবাড়ির বাগান, হাতিশাল, কয়েকটা কুঁড়েঘর ছাড়িয়ে যতদূর দেখা যায় সব ধান ও ভুঁই আর পশ্চিম পাড়ে রাঙ্গামাটি শহর আর বাজার। নদীর স্রোত ধরে বোট তরতরিয়ে এগিয়ে যায়।

 বাজারের শেষ প্রান্তে, উত্তরে পাহাড়ের চুড়োয় ডিসি বাংলোর পুবে শিলপাথরের খাড়া, উঁচু পাড় ঘেঁষে রাঙামাত্যে মোড়। সেখানে বরগাঙের এক গভীর খাদ। সে ভয়ঙ্কর, কাজল কালো অতল খাদে পানির মাতাল ঘূর্ণিপাক। ভালো সাঁতারুও সেখানে নামার সাহস করে না। তার ওপারে, নদীর পুবকূল ধরে নৌকা দিয়ে যেতে লোকজন হামেশাই গঙা-মাকে 888sport app download for android করে।

রাজঘাটের বোট রাঙামাত্যে মোড়ের পুবকূলে নিশ্চিন্তে সাঁতরে, পশ্চিমকূলের পাত্থরঘাদা শহরতলিও ফেলে তরতরিয়ে বরগাঙের উজানে ধেয়ে যায়। পাত্থরঘাদার উত্তর-পশ্চিম ধারে খাড়া শিলপাহাড়ের চুড়োয় যেখানে বন বিভাগের রিজার্ভের শুরু, তার মুখে বিদেশি সাহেবদের গোরস্তান। সূর্য মধ্য আকাশ থেকে হেলে পড়েছে। বরগাঙ থেকে ভারী হাওয়া ছায়ায় 888sport app খাদ বেয়ে পাহাড়-চূড়ায় উঠে পশ্চিমে শ্মশানের ঢাল বেয়ে নিচে বয়ে যায়। রিজার্ভের পুবপ্রান্তে, খাদের নিচে সমতল ঘেঁষে বরগাঙ উত্তরে মাইলের মতো সোজা এগিয়ে, বেঁকে চলেছে পুবে।

মোটরবোট থেকে অবাক হয়ে খেয়াল করেন বাজারদিনের মতো এতগুলো নৌকো তিনি বরগাঙে কখনো দেখেননি। গ্রামের মেম্বারের সঙ্গে রাজবাড়ি থেকে নিমন্ত্রণ পেয়ে তিনি এই বোটে উঠেছেন। রাঙ্গামাটি থেকে বন্দুকভাঙা মৌজার চেহ্ঙে নদীর কূলে তাঁর খারেকখ্যঙের বাড়িতে হাঁটা পথ না ধরে, তিনি নদীপথে যাচ্ছেন। ষাট পেরিয়ে সত্তরের দিকে এগোনো সুগন্ধ গ্রামের বয়োজ্যেষ্ঠ মানি-বুড়োদের একজন। গত শীতের আগের শীতে তাঁদের গোষ্ঠীর লেখাপড়া জানা ভাইপোটি আইয়ুব খান সরকারের প্রবর্তিত ইলেকশনে জিতে ইউনিয়নের মেম্বার হয়েছে। চেহ্ঙেকূলে এরকম ভোটে জিতে মেম্বার হওয়ার ঘটনা এর আগে কখনো ঘটেনি।

সুগন্ধের খুঁতখুঁতে মনে প্রশ্ন জাগে – ইলেকশনে তারা কী পেলেন? মানুষের যেন ঘরদোর ছাড়তে না হয়, জায়গা-জমি হারাতে না হয় – এমন সত্যিকারের কষ্ট ঘোচানোর কাজ তো সরকার করল না। মেম্বারবাবু সরকারের মানুষের মতো বুঝ দিয়ে বেড়ায় – ‘চিন্তা করো না, তোমরা জায়গার বদলে জায়গা পাবে, টাকা পাবে।’ কিন্তু সুগন্ধ মেম্বারবাবুর মুখে দুশ্চিন্তার ঘনঘটা দেখতে পান। রাজাবাবু মেম্বারবাবুসহ আরো কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে বোটের কেবিনে মিটিং করছেন।

লম্বা বা খাটো নয়, রোদেপোড়া, পাতলা, আগের মতো রথবল না থাকলেও সুগন্ধ এখনো বেশ শক্তসমর্থ। নতুন ঘর তোলার কাজে তার হাতের তালুতে এবড়োখেবড়ো ফুলে ওঠা কড়াগুলো আঙুলের মাথা দিয়ে পরখ করতে করতে বোটের মাথায় দাঁড়ালে, সুগন্ধের চোখ উত্তর-পশ্চিমের উঁচু ভূমির দিকে যায়। রাঙামাটির পাত্থরঘাদা শহরতলি ছাড়িয়ে, পাহাড়ের ওপরে রিজার্ভের মুখ ফেলে উত্তর-পশ্চিমের উঁচু ভূমির সমতলে নতুন পথ, বাজার, বসতি, অফিস-আদালত উঠে নতুন রাঙ্গামাটি শহর বিস্তৃত হচ্ছে। দূরে রিজার্ভের বন কেটে যে নতুন বাজারটা হচ্ছে তার নাম রিজার্ভ বাজার। তিনি উঁচু ভূমি থেকে চোখ নিচে ফিরিয়ে নিলে গাঙপাড়ে মাইলকে মাইল কাশ আর শনের বন তাঁর চোখের সামনে ভাসে। এমন চোখজুড়ানো সুন্দর সময়ে, অজান্তে সুগন্ধের মনে আসে – পানি আসছে, পানি আসছে। কাশ আর শনের বন সব ডুবে যাবে। তাদের বরগাঙ, চেহ্ঙেকূলের ঠিকানা হারানোর দিন কাছে ঘনিয়ে আসছে।

সরকার ইলেকট্রিসিটির জন্য রাঙ্গামাটির দক্ষিণে কাপ্তাইয়ের বরগাঙের মুখে পাহাড় সমান উঁচু বাঁধ বানিয়ে ফেলেছে বলে চারদিক থেকে নিয়ত সংবাদ আসছে। বাঁধের গেটগুলো বন্ধ করলে বরগাঙের পানি বাধা পেয়ে উঁচুতে উঠে বান আনবে। এ-বানে রাঙ্গামাটি শহর, বাজার, রাজবাড়ি, গ্রামকে গ্রাম, ছড়া, গাঙ, পাড়ের পলিতে উর্বর সমতলে শত শত একর ভুঁই, বাগান, পাহাড়, উঁচু পাহাড়ের কোলে বন-বাদাড়, জঙ্গলসহ বহু জুমও পানির নিচে তলিয়ে যাবে। হাজার হাজার মানুষের চিরচেনা পৃথিবী চিরতরে পানির নিচে হারিয়ে যাবে।

বোট পাত্থরঘাদা ফেলে যেতে সুগন্ধ তাদের ফেলে আসা, জৌলুস হারানো বাড়িটাকে যতক্ষণ দেখা যায় দেখতে থাকেন। কত যত্নে গোছানো এই ঘর। এখন কোথাও ঘরের ভিত ধসে পড়েছে, কোথাও দরজা, বেড়া। তবুও কেন যেন মনে পড়ে জীবনকে পূর্ণতায় পাওয়ার জন্যই ছিল এই ঘর। এ-বাড়ি তাঁর আর আনন্দময়ীর ছেলেমেয়ে, নাতি-নাতনিদের শহরে পড়াশোনা করার, শহুরে কাজ শিখে বেড়ে ওঠার ভিত। এ-বাড়ি তাঁদের বরগাঙকূলের শেষ নিশানা।

বোটের একঘেয়ে আওয়াজ সুগন্ধের চিন্তাকে তাঁদের বরগাঙককূলের এ-বাড়িটার মতো অসহায় বোধে আঁকড়ে ধরে। গত বছরের এক কালবৈশাখীর প্রচণ্ড ঝড়ে বেশ ক্ষতি হওয়া এ পাত্থরঘাদার বাড়ি আর ঠিক করা হয়নি। পানির তলে যখন তলিয়েই যাবে, সে-বাড়ি ঠিক করে আর কি হবে?

এখানকার বেশিরভাগ পরিবার নতুন বাজার, রিজার্ভ বাজার যাওয়ার পথে বাম ধারে ঝাড় কেটে উঁচু টিলায় নতুন পাত্থরঘাদা পত্তন করছে। এই নতুন বসতির নিচে, সমতলে ধানের মাঠ ফেলে সুগন্ধ তাঁর পরিজন নিয়ে আরো পশ্চিমে চলে গেছেন। সেখানে এক গর্জন গাছে ভরা টিলায় ঝাড়, জঙ্গল কেটে নতুন বাড়ি বানাতে এ-পুরনো বাড়ির কিছু বেড়া আর বাড়িতে ঢোকার বড় দরজাটা তিনি কাজে লাগিয়েছেন। কিন্তু সার্ভেয়ার বাবুরা বললেন, পানির লেভেল কতদূর উঠবে তা যাচাইয়ে তারা ভুল করেছেন। এই গর্জনতলির টিলাও প্রায় ডুবে যাবে। সুগন্ধদের এ-ভিটা ফেলে আরো উঁচু জায়গায় সরে যেতে হবে, পরঙি হতে হবে অন্য জায়গায়। এত ঘন-ঘন জায়গাবদল আর বাড়ি তুলতে থাকলে গৃহস্থের সামর্থ্য আর কত থাকে?

গ্রামের বাড়ি চেহ্ঙেকূল ফেলে তাঁদের পরঙি হতে হচ্ছে কাজলঙকূলের রিজার্ভ ফরেস্টে। চেহ্ঙেকূলে প্রজন্মের পর প্রজন্মের কাজ, ঘাম ও নিষ্ঠায় গড়ে তোলা বাড়িঘর, গৃহস্থালি, ভুঁই, বাগান। তার বদলে কাজলঙকূলের রিজার্ভে ঘন বন কেটে গৃহস্থালি পাতা। আর সে-রিজার্ভ ফরেস্টে ভুঁই, বাগান বানানো যে কি অসম্ভব কাজ তা সুগন্ধ ছেলে ও নাতিদের নিয়ে দেখে এসেছেন।

গভীর বনের কাজলঙ রিজার্ভ। সেখানে না আছে স্কুল, না আছে তার খাহরেখ্যঙ গ্রামের ধারের বাকছুরি বাজার। না আছে দুই-আড়াই ঘণ্টার কোম্পানিপথে হাঁটার দূরত্বে বা গাড়িতে রাঙ্গামাটি শহর। তিন কুড়ি বছরেরও বেশি বয়সের সুগন্ধের শরীরে-মনে পরঙের অবর্ণনীয় বেদনা, কষ্ট আর কত নিতে হবে? রাঙামাত্যে মোড়ে গভীর পানির প্রচণ্ড ঘূর্ণিপাকের মতো তাঁর দুশ্চিন্তা অদমনীয় হয়ে ওঠে।

বরগাঙ, চেহ্ঙে, মেগেনি, কাজলঙ পাড়ের মানুষের জীবন উলটেপালটে যাচ্ছে। যে যেখানে পারে উঁচু জায়গায় উঠে যাচ্ছে। কেউ জিনিসপত্রের গাটরি বাঁধছে, কেউ এখনো জায়গা খুঁজছে, কেউ ধান, পাট, শস্য, গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি নিয়ে কী করবে দিশা পাচ্ছে না। কেউ ঘাড় ত্যাঁড়া করে জন্মের ভিটা, গৃহস্থালি ছাড়ছে না। কিন্তু সুগন্ধের চোখের সামনে এত বড় রাঙ্গামাটি শহর ধীরে ধীরে জনমানবহীন হতে চলেছে। গাঙকূলের বাড়ন্ত গ্রামগুলোও সব ঝিমিয়ে পড়ছে।

বুড়ো-বুড়িরা হা-পিত্যেশের দীর্ঘশ্বাস ফেলে গেঙখুলির হারিয়ে যাওয়া ‘চাদিগাঙ ছারাহ্’ পালার নাম 888sport app download for android করেন। চাদিগাঙ ছাড়তে বাধ্য হওয়ার ইতিহাস নিয়ে লেখা এ-পালা, প্রাচীন প্রথা মেনে লোকালয়ে গাওয়া মানা। লোকালয়ের বাইরে, যেখানে চার পথের মিলন, সেখানে শুধু গেঙখুলিরা এই পালা গাইতেন। সময়ের স্রোতে
সে-দুঃখের ইতিহাস হারিয়ে বেঁচে আছে শুধু পালাটির নাম। এখন আবারো চাদিগাঙ ছাড়ার মতো তাদের শিকড়সহ উপড়ে ঘর, গৃহস্থালি, গ্রাম, শহর ছাড়তে বাধ্য করা হচ্ছে।

এমন একাকিত্বে সুগন্ধের নিজের কাছে নানান প্রশ্ন জাগে। ‘এই কাপ্তাই বাঁধের বানে তাদের ঘর, গৃহস্থালি, গ্রাম, শহর ছাড়তে বাধ্য হওয়ার ইতিহাস কি গেঙখুলি, নয় ঋষি কবি শিবচরণের মতো কেউ লিখবেন? এই ইতিহাস কি মানুষ মনে রাখবে? পড়বে, শুনবে, গাইবে? নাকি সব হারিয়ে যাবে?’

বোটের হর্নের অকস্মাৎ শব্দে সুগন্ধের চিন্তার স্রোত বাধা পায়। সুগন্ধ টের পাননি তাঁরা কখন হাজারিবাঁক ফেলে চেহ্ঙের মুখে পৌঁছেছেন। তাঁদের উল্টো পথে রাঙ্গামাটির যাত্রী নিয়ে চলা, হর্ন বাজানো বড় বোটটি দ্রুত বেগে ছুটে আসছে। সেই বোটের দোতলার ডেকে মানুষের ভিড়। সে-ভিড়ে চোখে পড়ার মতো একজন – কানের লতি পর্যন্ত লম্বা চুল, ডোরাকাটা লুঙ্গির ওপর লম্বা সাদা জামা গায়ে – দু-হাত জোড় করে সালাম দেয়। সুগন্ধ এদিক-সেদিক চেয়ে বুঝে নেন এ-লোক তাঁকে সালাম দিচ্ছে। সালাম ফেরাতে মানেক চৌধুরির লোকটাকে তিনি চিনতে পারেন। কিন্তু নামটা তাঁর মনে পড়ে না। মানেক চৌধুরি সিলেটের বাঙালি। সে কাজলঙ রিজার্ভে কাটা গাছ হাতি দিয়ে টেনে, নদীতে ভাসিয়ে রাঙ্গামাটি, কাপ্তাই শহরে নিয়ে যায়। মানুষটার মুখ মিষ্টি, আদব-কায়দায়ও ভালো। সিলেট থেকে শ্রমিক এনে সে তাদের কাজ দিচ্ছে। কিছু শ্রমিক খেদায় বন্দি হাতিদের কানে বশীভূত করার মন্ত্র পড়ে, একগুঁয়েমি ছেড়ে পোষ মানতে বলে। মানেক চৌধুরির লোকটাসহ রাঙ্গামাটি যাত্রা করা বোটটা বড় ঢেউ তুলে রাজার ছোট বোটটাকে মাতালের মতো দুলিয়ে দিলে সুগন্ধ সামনে, পিছে, পাশে দুলে কোনোমতে তাল সামলে দাঁড়িয়ে থাকেন।

বরগাঙ থেকে চেহ্ঙে নদীতে ঢুকতে এ-দুর্দিনেও সুগন্ধের মন প্রশান্তিতে ভরে ওঠে। পলিতে উর্বর চেহ্ঙের দুই পাড়ের ধান ভুঁই কি সবজির মাঠ সব প্রতিবছর লক্ষ্মী-মার ধনে পূর্ণ হয়। বাঁধের পানি আসার আগে ফসলের আশায় বারিঝে খুন্দের ধানের আবাদ হচ্ছে। কোনো কোনো অংশে বাঙালি শ্রমিকরা কাজ করছে, জালা তুলছে, ধান লাগাচ্ছে। কোনো অংশে নতুন ধানের চারাগুলো সজীব হয়ে উঠেছে। বাতাস চেহ্ঙের পানি নাচিয়ে, কূলের কচি ধানের ভুঁইয়ে ঢেউ তুলে বয়ে যায়। আনন্দময়ীর মুখ মনে এলে, বুকভর্তি নিশ্বাস নিলে মনমরা সুগন্ধের পরানেও সুখের বাতাস বয়ে যায়।

হাজারিবাঁক মৌজায় লাগোয়া চাকমা রাজদের খাস মৌজা বন্দুকভাঙা। চেঙের মুখ থেকে সাত মাইল উজানে বন্দুকভাঙায় রাজাদের চেহ্ঙেকূলের বাড়ি আর দরবারের নাম ‘রাজবিলাস’। সুগন্ধদের খারেকখ্যভ থেকে বেশি দূর নয় রাজবিলাস। এ-ভিটায় রাজপরিবারের প্রশ^স্ত চালে 888sport app বারান্দাসহ বারো কামরার পুবদুয়ারি বাড়ি। পুবে পাহাড়, পশ্চিমে চেঙে। বাড়ির সামনে বড় পরিসরের উঠানের উত্তরে রান্নাবাড়ি। তার আশেপাশে দরবার চালানো কর্মচারীদের ঘরবাড়ি।

কূলে জড়ো হওয়া মানুষের ভিড়ে শিশু-কিশোরদের মাঝে পাতলা, লম্বা ছেলে দেখলে সুগন্ধের তাঁর পুতি বরুণকে মনে পড়ে। মানুষের ভিড়ে তাঁর নাতিপুতি কেউ আছে কি না সুগন্ধ ঠিক ধরতে পারেন না। কিন্তু রাজবিলাস ভিটায় ধবধবে সাদা ধুতিতে দীর্ঘদেহী কেরুকে বহুদূর থেকেও চিনতে পারেন।

কেরু রাজবিলাসে সান্তাল কর্মীদের চেলা। কেরু কথায় কম, কাজে বড় ধরনের মানুষ। তার ছোটবেলায় কেরুর বাবা-মা বরকল থেকে রাজবিলাসে এসেছেন। বাবা-মা তাদের উত্তর দেশের জ্ঞাতি-গুষ্টির আখ থেকে বানানো মদের বিদেশি সাহেবদের দেওয়া নাম অনুসারে ছেলের নাম রেখেছিলেন কেরু। দীর্ঘদেহী, সরল মেরুদণ্ড, টানটান দিঘল পিঠ, পেশিবহুল বাহু নিয়ে কেরু যৌবনে পা দিয়েছিল। তার বয়স এখন চার কুড়ির মতো হলেও কবে থেকে তা তিন কুড়িতে আটকে আছে তা কেরুর কি রাজপরিবারের কেউ মনে করতে পারেন না।

কেরু ভালোই জানে তার মতো দীর্ঘদেহী, শক্তসমর্থ বুড়ো এ-রাজ্যে কমই আছে। নিজেকে নিয়ে এ-ধরনের গর্বে লজ্জায় তার ঝোলাগুড় রঙের মুখে বয়সের ভাঁজগুলো বিলীন হয়ে ভাঁজহীন হতে চায়। সে-লাজ ভাঙতে হঠাৎ করলাবির চঙ মনে পড়লে তার ঢেঁকি শাকের আগার মতো কোঁকড়ানো একমাথা সাদা চুলের ভেতর লুকিয়ে থাকা কয়েকটা কালো চুল সোজা হতে চায়।

বর্ষার পরেও যৌবনে মাতাল চেহ্ঙে। চেহ্ঙের উজানে যেতে, বোটটার উঁচু খুঁটির মাথায় আত্মহারা সাদা পতাকাটা লাগামহীন ওড়ে। পতাকাটার মাঝখানে গোলা-বারুদ নিয়ে নিশানা তাক করা একটা কামান। কামানটা ঘিরে শুঁড় বাড়িয়ে লাফ দেওয়ার ভঙ্গিতে মুখোমুখি দাঁড়ানো একজোড়া হাতি। তার ওপরে তির্যকে আড়াআড়ি হয়ে থাকা একজোড়া তরবারির মাথার মাঝখানে জায়গা নিয়েছে এক রাজমুকুট। পতাকাটায় কিছু একটা লেখাও আছে। কিন্তু কেরু কখনো তা পড়তে শেখেনি। বোটটা অনেক আগে দেখলেও পতাকাটা স্পষ্ট দেখতে পেলে কেরু নিশ্চিন্ত হয় রাজাদাগি আসছেন। পতাকাটা উঁচুতে উড়ছে মানে রাজাবাবু, কর্তাবাবু বোটে আছেন।

শিশুর মতো সারাদিনের অপেক্ষা থামিয়ে, রাজবিলাসের দরবারে জমায়েত হওয়া বন্দুকভাঙা ও হাজারিবাঁক মৌজার নামী মানুষদের ভিড়ে কেরু রওনা দেয়। তার অপেক্ষায় থাকা শুকনা, পাতলা মহাজনকে কেরু খোঁজে। দু-হাত জোড়ে ঝু জানালে, মহাজন তার সে ঝু ফেরালে কেরু সংবাদ দেয়, ‘কর্তাবাবু আসছেন।’

মহাজন তার বন্দুক কাঁধে ঝুলিয়ে বসা থেকে দাঁড়িয়ে, গলা খাঁকারি দিয়ে একটু সময় নেন। সবার মনোযোগ পেলে, তিনি দু-হাত একত্রে ঝু জানিয়ে গলা চড়িয়ে বলেন, ‘গুরুজন, মা-বাবা, ভাই-বোনেরা, রাজাদাগি আসছেন।’ এরপর কয়েক মুহূর্ত থেমে বলেন, ‘সরকারের মানুষ যা বলার বলুক, যা করার করুক, বেঁচে থাকতে আমরা
বাপ-দাদাদের রীতি বন্দুকভাঙায় টিকিয়ে রাখতে চাই।’

সামনের সারিতে বসা অনেক মান্যজন ও নতুন মেম্বারদের মাঝে গদিওয়ালা চেয়ারে মাথা উঁচু করে বসা, খাটো কিন্তু প্রশস্ত শরীরের কারবারির ফর্সা মুখ মুহূর্তে মরিচরাঙা হয়ে ওঠে। কারবারি পান চিবানো থামিয়ে, তাঁর চওড়া কাঁধের ওপর শক্ত করে বসা খাটো গলাখানা মহাজনের দিকে ঘুরিয়ে ভাবেন, এ মহাজন যে-কোনোভাবে তাঁকে ডোবাতে চায়। মানুষ আপ্যায়নে কৃপণ হলে কি হবে, মানুষকে নিচে নামানোর চিন্তায়, কথায় মহাজনের কোনো কার্পণ্য নেই। কারবারির একটু দ্বিধা হলেও অনুমান করেন যে, তিনি নিজে যদি বন্দুকের গর্জনে রাজাবাবুর রাজবিলাসে আগমনসংবাদ না জানান, তবে মহাজন নিজেই সে-কাজ করবে। মহাজন কি অযথা তার বন্দুক নিয়ে সভায় এসেছে!

কারবারি উঠানভর্তি রাজার জন্য প্রজাদের আনা উপঢৌকনের স্তূপ ছাড়িয়ে, একধারে হুঁকা টানতে থাকা ইজি চেয়ারে বসা তাঁর স্ত্রী কারবারনিকে আড়চোখে ঠাহর করে দেখেন। কারবারনি তাঁর কানের পাতাভরা ঝুঙুলি ঝলকিয়ে, হরিণীর মতো গলা-কান উঁচিয়ে মহাজন থেকে কারবারির দিকে নজর ফেরাচ্ছেন। কারবারি মনে মনে জ্বলতে থাকেন, ‘শালার মহাজন, কারবারনির সামনেও সে তাঁর মান-সম্মান নিয়ে টানাটানি করছে।’ সংশয়ে ভোগা কারবারির কপালের দুই ধারের রগ নীল হয়ে ফুলে ওঠে।

মাস দুই আগে কারবারি, হেডম্যানদের সঙ্গে মতবিনিময়ে সরকারের কিছু কর্মচারী নানান কথার ভেতরে একটা কথা তুলেছিল। তারা ইনিয়েবিনিয়ে বলেছিল, গ্রামে জনসাধারণের নিরাপত্তার স্বার্থে রাজার আগমনে বন্দুকের গুলি ছুড়ে আপ্যায়নের ঐতিহ্যবাহী রীতি বন্ধ করার কথা। কারবারির স্কুলের লেখাপড়া না থাকলেও, আর তাঁর চেয়ে অভিজ্ঞ ও লেখাপড়া জানা বহু কারবারি ও উঁচু পদধারী সব হেডম্যান নিশ্চুপ থাকলেও তিনি গোঁয়ার্তুমি দেখিয়ে উত্তর দিয়েছেন, ‘বন্দুকের ব্যবহার জানি দেখেই তো আমাদের বন্দুকের লাইসেন্স আছে।’ কারবারির একরোখা উত্তর আর পাহাড়ি নেতাদের জোটবাঁধা অভিব্যক্তি দেখে সরকারের সেই কর্মচারীরা আর কথা বাড়ায়নি।

রাজাদাগির বন্দুকভাঙা দরবারে আগমনে বন্দুক গর্জিয়ে যে আপ্যায়নের রীতি তা কারবারির পূর্বসূরিরা আজীবন করে এসেছেন। এ খাস মৌজায় রাজা নিজেই হেডম্যান হওয়াতে, এ অঞ্চলের নামী কারবারিরা বেশি বেশি সম্মান প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে পেয়ে এসেছেন। পানি আসার আগে, চেহ্ঙেকূলের শেষ দিনগুলোতে কারবারি সেই রীতি, ঐতিহ্য কেমনে ফেলে দেবেন? দরবার চালানোর চাইতে রাজাদাগি রাজবিলাসে ছুটিই বেশি কাটান। এ-দরবার রাজাদাগির চেয়েও বেশি তাঁর, কারবারির নিজের। এবারই হয়তো-বা রাজাদাগির সঙ্গে রাজবিলাসে তাঁর শেষ দরবার, সে-চিন্তা করতে তাঁর বুকভাঙা কষ্ট হয়।

অন্যদিকে কারবারির মনের খুঁতখুঁতও যায় না। তাঁর নিজের, গ্রামের মানুষের ডুবতে যাওয়া জায়গা-জমিন বদলে নিতে, মানুষের পুনর্বাসনে, সবার হক গুছিয়ে পেতে সরকারের এসব কর্মচারীর সঙ্গে তাঁকে কাজ করতে হচ্ছে। তাদের রাগানোরও তাঁর ইচ্ছে হয় না।

কারবারি এ-সংশয় দূর করতে নানা গ্রামে কারবারি, হেডম্যান, মুরুব্বিদের মতামত যাচাই করে আসছিলেন। কেউ খোলে লুকানো শামুকের মতো বলেছেন, ‘দিন বদলাচ্ছে, সরকারের সঙ্গে তালিমালি না করলে হয়।’ কেউ বলেছেন, ‘আমাদের জায়গায়, আমাদের রীতিতে তারা হাত দেওয়ার কে?’ কেউ শুধু বলেছেন, ‘ব্রিটিশ, পাকিস্তান সব সরকারই এক, সবাই শুধু আমাদের দাবাতে চায়।’

নুয়োআদামের বুড়ো মাস্টারমশাই পঁয়ত্রিশ-চল্লিশ বছর আগের ডিসি স্টিফেন্সের কথা পাড়লেন। স্থানীয়রা স্টিফেন্সের নাম উচ্ছারণ বা মনে রাখতে না পেরে, হাতে তার শে^তির ছোপের জন্য তাঁকে ‘কুর-আহ্দা সাহ্ব’ নামে চিনতেন। নানান কারবারি, হেডম্যানের আপত্তিতেও স্টিফেন্স বরগাঙের পূর্বপাড়ের রাজবাড়ির ঘণ্টা ঘড়ির কাঁটায় কাঁটায় বাজানো বন্ধ করেছিলেন। স্টিফেন্সের একটাই কথা, রাঙ্গামাটি শহরে শুধু একটা ঘণ্টা, ডিসির ঘণ্টা গাঙের পশ্চিম পারের কোতোয়ালি থানা থেকে বাজবে। মাস্টারমশাইয়ের বন্ধু রাজমোহন দেওয়ান এসব নিয়ে বিরোধিতা করলে, তাঁর শনখোলার বন্দোবস্তি বাতিল করে বছরে চল্লিশ হাজার টাকার আয় শেষ করে দেওয়া হয়। পরে কুমিল্লায় বদলি হলে, স্টিফেন্স তার কোর্ট থেকে ব্রিটিশবিরোধী চাকমা যুবকদের রাঙ্গামাটি কোর্টে পাঠান, যেখানে দুজনের জেল সাব্যস্ত হয়। সেই কুমিল্লা কোর্টে চৌদ্দ ও ষোলো বছর বয়সী দুই বিপ্লবী 888sport promo codeর গুলিতে স্টিফেন্স মারা গেছেন বলে শোনা গেছে। এভাবে প্রতিবাদ ও কৌশলে বিপ্লবীরা ব্রিটিশ সরকারকে ভারত ছাড়তে বাধ্য করেন। কিন্তু দেশবিভাগে এই রাজ্য ভারতের সঙ্গে থাকার বিবেচনায় থাকলেও জোর করে পাকিস্তানের সঙ্গে লাগানো হলো। কথা শেষে মাস্টার এটাও মনে করিয়ে দিলেন, ‘এ সরকার কি করছে তা ভেবে দেখার আছে।’

শেষ মত নেওয়ার জন্য রাজবিলাসে সেদিনের সভার সবচেয়ে বয়োজ্যেষ্ঠ, সুগন্ধদের গোষ্ঠীর বড়জন সত্যেন্দু বুড়োর দিকে দু-হাত বাড়িয়ে কারবারি তাঁকে কথা বলার আহ্বান জানান। সত্যেন্দু লাঠিতে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে কারবারিকে তারিফ করে বলে ওঠেন, ‘ও কারবারি, তুমি ঠিকই আছো, তোমার মনের কথা বুঝেই মহাজন সবার সামনে কথাটা তুলেছে।’

সত্যেন্দু কাকার কথা শেষ হতেই কারবারি খেয়াল করেন কথাবার্তায় জেগে ওঠা রাজবিলাস একেবারে মানুষবিহীন ভিটার মতো নিশ্চুপ হয়ে গেছে। কারবারি আরো খেয়াল করেন, মহাজন, কারবারনিসহ সভার সব মানুষ তাঁর দিকে চেয়ে আছে। কারবারনির দৃষ্টিতে শানিত প্রশ্ন, ‘এখনো নড়ছো না কেন?’ এদিকে রাজাকে নিয়ে ধেয়ে আসা বোটের শব্দ স্পষ্ট থেকে স্পষ্টতর হচ্ছে।

কান, গণ্ডদেশ সব রাঙা, বিমূঢ় কারবারির টানটান শরীরে কড়া মাড়ে ইস্তিরি করা জামা, চিকন সবুজ পাড়ের রসুন খোসার মতো সাদা ধুতি আরো কড়কড়া হয়ে ওঠে। আলমারির মতো প্রশস্ত বুকের কারবারি তাঁর বন্দুক কাঁধে নিয়ে উঠানের সভা ছেড়ে নদীর দিকে হাঁটলে, সবাই বেশ দূরত্ব রেখে পিছু নেয়। বোটের দিকে এক পলক চেয়ে, গাঙকূলের আকাশ তাক করে কারবারি বন্দুকের গুলির তিন হিয়াঙসিকে রাজাকে অভিবাদন জানালে, চারদিক থেকে পটকা-বাজি ফুটতে থাকে। সেই সঙ্গে সামনে এগোতে থাকা বোট থেকে তিনবার হর্ন বাজিয়ে অভিবাদন নেওয়া হলে, রাজবিলাস, চেহঙেকূল কলরবে মেতে ওঠে।

পটকা-বাজির ধুমো-ওড়া উঠানে তমক ঢোল গলায় ঝোলাতে গিয়ে কেরু দেখে তার পুরু সাদা ধুতিতে
সবুজে-নীলে মনি পাথরের মতো ঝিলমিলে এক কেহ্চকুমারী পোকা। কেরু মনে মনে বলে, ‘আহ্! ও লক্ষ্মী পোকা, কি দুঃখে সবুজ পাতার ঘর ছেড়ে, এই খসখসে কাপড়ে ঘর খোঁজো?’ সে পোকাটাকে না তাড়িয়ে, চুপিচুপি বলে, ‘থাকো, লক্ষ্মী পোকা থাকো, চেহঙেকূলের মানুষের সঙ্গে থাকো।’

মহাজন, সত্যেন্দু দাদার কথা আর কারবারির রাজাকে হিয়াঙসিকে আপ্যায়ন করা, এসব কেরুর ললিতদলির মহাভারত অভিনয়ের মতো খুব মনে ধরেছে। সামনে কী দিন আসছে সে দুশ্চিন্তায় ডুবে থাকার দিনেও কেরু তার সারা জীবনের অভ্যাস আর মনগাঙের বহতা থামিয়ে রাখতে পারে না। 888sport sign up bonusর জোয়ারে কেরুর এ-রাজাসহ তিন পুরুষ চোখে ভাসে। রাজা ভুবন মোহন দীপালি লঞ্চের ডেকে বসে রাজবিলাসে আসছেন। সঙ্গে তাঁর রানি, রাজাদাগির আদরের ভাই – ছোট রাজা। পরে আরো কত রাজকুমার, রাজকুমারিদের আসা-যাওয়া। ভালো, খারাপ অনেকের মুখও তার চোখে ভাসে। কেরুর মনে পড়ে, রাজা ভুবনের চোখ-মন জুড়ানো ছেলে রাজা নলীনাক্ষ কর্তাকে। বাপ রাজা, ছেলে রাজা, তাঁরা সবাই স্বর্গত। আর সে, কেরু চৌকি দিচ্ছে মেদেনির স্বর্গ রাজবিলাস। আহা! এ রাজবিলাসও তো ডুবে যাবে।

কেরুর বুকে কষ্টের মন্থন। তার বদনিও মারা গেছে আজ বারো বছর। নোনা পানির বাঁধভাঙা স্রোত ঠেকিয়ে, কেরুর চোখে দূর বরগাঙের বিরুদ্ধ-স্রোতের জোয়ার আসে। কেরুর তমক ঢোলের তালে, যৌবনে ভরপুর বদনির কড়া চা রঙের মসৃণ গায়ে চেহ্ঙের ঢেউ নেচে উঠত। সুন্দরী বদনি গানে উসকিয়ে, মিষ্টি হাসি আর চোখের ঠাহরে যুবক কেরুর মাথা ঘুরিয়ে দিত। গাঙকূলে তার পরানের বদনির তালে নাচের বান তুলে কেরু তার তমক ঢোলে মস্ত তাল তোলে, ‘রাজাদাগি এতথন, রাজাবাবু-দাগি এতথন।’

(গল্পে ব্যবহৃত চাকমা শব্দাবলি : চেহ্ঙে – চেঙ্গি নদী; চেহ্ঙেকূল – চেঙ্গি নদীর তীর; বরগাঙ – কর্ণফুলী নদী; রাঙামাত্যে – রাঙ্গামাটি; পাত্থরঘাদা – পাথরঘাটা; পরঙ – স্থানান্তর; মেগেনি – মাইনি নদী; কাজলঙ – পার্বত্য চট্টগ্রামের উত্তর-পূর্বের এক নদী; গেঙখুলি – চারণ কবি, সুরকার ও গায়ক; শিবচরণ – চাকমাদের অষ্টাদশ শতাব্দীর এক ঋষি কবি, যিনি ১৭৭৭ খ্রিষ্টাব্দে ‘গোজেন লামা’ রচনা করেন; কারবারি – গ্রামপ্রধান; কারবারনি – কারবারির স্ত্রী; ঝুঙুলি – কানের লতির উপরের অংশে সার বেঁধে ঝুলিয়ে পরার দুল; ঝু – নমস্কার; হেডম্যান – প্রশাসনিক ব্যবস্থায় কয়েকটি গ্রামের সমন্বয়ের প্রধান, যার অধীনে একাধিক গ্রামের কারবারিরা কাজ করেন; পিনন – চাকমা 888sport promo codeর কোমর বেনে বোনা দুই পর্বের পোশাকের নিচের অংশ; আদাম – গ্রাম; হিয়াঙসিক – আনন্দ বা জয়সূচক কোনো ধ্বনি; ললিত দলি – দেশ বিভাগের আগে, ব্রিটিশ শাসনামলে পার্বত্য অঞ্চলের জনপ্রিয় যাত্রা দল)