রায়পুরা থেকে ময়মনসিংহ

সাতচল্লিশ

২০১৬ সালের ডিসেম্বর মাসে আমাদের ছেলেমেয়েরা ছুটিতে দেশে এলে আমরা সবাই একসঙ্গে ভারতের বিভিন্ন জায়গায় বেড়াতে গিয়েছিলাম। ১৫-২০ দিন আমরা কলকাতা ছাড়াও আরো কয়েকটি জায়গায় গিয়েছি। এর মধ্যে অজয় রায়ের শৈশব-কৈশোরের 888sport sign up bonusজড়ানো বারানসও ছিল। প্রধানত আমরা বিমানে চলাচল করলেও অজয় রায় ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন। তাঁর শরীর লম্বা 888sport slot gameের ধকল বইতে পারছিল না। ছেলেমেয়েদের তিনি একাধিকবার বলেছেন, আমার বোধ হয় আর বেড়াতে আসা হবে না।

তবে তিনি একেবারে অসুস্থ হয়ে পড়েননি। পুরনো বন্ধু কিংবা পরিচিতজনদের সঙ্গে দেখা করে, কথা বলে বরং আনন্দ বোধ করেছেন বলেই আমার মনে হয়েছে। কারো কারো সঙ্গে তো তিনি দীর্ঘ সময় ধরে আড্ডা দিয়েছেন। পুরনো 888sport sign up bonus হাতড়ে এক ধরনের সুখ অনুভব করেছেন। পরিবারের সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে ঘোরা, সময় কাটানো – এসব তো বাস্তব কারণেই আমাদের খুব বেশি হয়ে ওঠেনি। তাই ওই 888sport slot gameটা ছিল সবদিক দিয়েই আলাদা এবং আনন্দের। তবে তখন কি আর সত্যি জানতাম যে, ওটাই হবে আমাদের সপরিবারে শেষ বেড়ানো!

ছেলেমেয়েদের ছুটি ফুরিয়ে আসায় এবং অজয় রায়ের শরীর কুলাচ্ছিল না বলে আমরা দেশে ফিরে এলাম। দেশে ফিরে কয়েকদিনের মধ্যে গোছগাছ করে ছেলে এবং দুই মেয়ে নিজ নিজ চাকরি বা অবস্থানের জায়গায় চলে গেল। আমরা দুজন আমাদের মতো থাকতে শুরু করলাম। এর মধ্যে হঠাৎ একদিন অজয় রায় বললেন, তাঁর জ্বর জ্বর লাগছে। এমনিতেই তিনি নিয়মিত ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে চলতেন। বয়সের কারণে কিছু সমস্যা দেখা দিলে ওষুধ খেয়ে আবার সুস্থ হয়ে উঠতেন।

স্বাভাবিক কাজকর্ম বন্ধ করতেন না, বড়জোর দু-চার দিন বিশ্রাম নিতেন। কিন্তু সেবার জ্বর কমছিল না। ছেলেকে  ফোন করে তাঁর অসুস্থতার কথা জানালেন। বললেন, আমার শরীরটা ভালো না। ছেলে তাড়াতাড়ি ডাক্তারের কাছে যাওয়ার তাগাদা দিলো। তাঁকে নিয়ে গেলাম ডা. মাহমুদুর রহমানের চেম্বারে। তিনি দেখেশুনে একটু চিন্তিতভাবেই দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দিলেন। হাসপাতালে যাওয়ার মানসিক প্রস্তুতি আমাদের তখনই ছিল না। তবু ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী বারডেমের ডাক্তার রশীদের তত্ত্বাবধানে অজয় রায়কে বারডেম হাসপাতালে সিসিইউতে ভর্তি করা হলো। কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ডাক্তার বললেন, অবস্থা বেশি ভালো নয়। ছেলেমেয়েদের তাদের বাবার অসুস্থতার কথা জানানো হয়। খবর পেয়েই বড় মেয়ে এবং ছেলে 888sport app চলে আসে। সিসিইউ থেকে তাঁকে আইসিইউতে নেওয়া হয়। ছেলেমেয়ে এবং আমি পালাক্রমে হাসপাতালে থাকি। আমাদের চোখে ঘুম নেই, মনে স্বস্তি নেই। শুধু দুর্ভাবনা, কখন কী হয়।

একদিন আমি দুপুরে বাসায় গিয়ে কেবল দুটো খেতে বসেছি, তখনই ফোন পেলাম আমাদের পারিবারিক বন্ধু, রাজনৈতিক সুহৃদ ডা. ওয়াজেদুল ইসলাম খানের। তিনি তাড়াতাড়ি আমাদের হাসপাতালে যেতে বললেন। রোগীর অবস্থা খারাপ। খাওয়া ফেলে মেয়ে পর্ণা এবং ছেলে জয়কে নিয়ে ছুটলাম বারডেমে। খবর দিলাম আমাদের আরেক রাজনৈতিক ও পারিবারিক নিকটজন, আমাদের ছেলেমেয়েদের পঙ্কজ মামা, প্রবীণ রাজনীতিবিদ পঙ্কজ ভট্টাচার্যকে।

হাসপাতালে গিয়ে দূর থেকে অজয় রায়কে দেখে বুকের মধ্যে মোচড় দিয়ে উঠলো। নাকেমুখে নল, নিথর পড়ে আছেন। ছেলেমেয়ের চোখের জল বাধা মানছে না। আমাদের কারো কিছু করার নেই। ডাক্তাররা চেষ্টা করে যাচ্ছেন। যমে মানুষে টানাটানি বলে একটা কথা শুনেছি। সেটাই যেন তখন চোখের সামনে দেখছিলাম।

চিকিৎসকদের অক্লান্ত চেষ্টায় অজয় রায় কিছুটা সুস্থ হয়ে ওঠেন। তাঁকে বেডে দেওয়া হলো। এই সময় হাসপাতালে তাঁকে অনেকেই দেখতে এসেছেন। পরিচিত রাজনীতিবিদরা এসেছেন, এসেছেন শিক্ষক, চিকিৎসক, সংস্কৃতিকর্মীসহ কতো জন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরসহ অনেককেই দেখেছি বলে মনে পড়ছে।

বেডে দেওয়ার পর অজয় রায় বাসায় ফেরার জন্য অস্থির হয়ে পড়লেন। কিছুতেই আর হাসপাতালে থাকতে চান না। আমাকে, ছেলেমেয়েকে চোখের আড়াল করতে চান না। আমি জরুরি প্রয়োজনে একটু বাইরে গেলেও ফোন করে আমাকে তাড়াতাড়ি হাসপাতালে যেতে বলতেন। এতো বড় ধাক্কা সামলেও তাঁর 888sport sign up bonus ছিল অতি সজাগ। মিতা হকের গান শুনতেন। পাঁচ-ছয়টি দৈনিক পত্রিকা পড়তেন। বালিশের নিচে কিছু টাকা এবং হাতের কাছে মোবাইল ফোন – এগুলো ছিল যেন তাঁর অবলম্বন, সহায়।

তাঁর অস্থিরতার কারণেই তাঁকে বাসায় নেওয়ার ব্যবস্থা করা হলো। ডাক্তাররা বলে দিলেন, বাসায় গেলেও তাঁকে হাসপাতালের মতোই থাকতে হবে। সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ প্রয়োজন হবে। বাসায় তাঁর রুমটিকে কার্যত একটি হাসপাতালের রুমে পরিণত করা হলো। অক্সিজেন সিলিন্ডার, স্যালাইনসহ প্রয়োজনীয় সব উপকরণ সংগ্রহ করা হলো। রাখা হলো দুজন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নার্স। ছেলেমেয়েও তাদের নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে ফিরে গেল। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে আমরা পড়লাম সার্বক্ষণিক উদ্বেগের মধ্যে। তাঁর শারীরিক অবস্থা এক রকম যায় না। দুদিন স্বাভাবিক থাকলে একদিন আবার কিছু না কিছু জটিলতা দেখা দেয়। শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়া অথবা অন্য কোনো সমস্যা।

জীবনের শেষ চার-পাঁচ মাস তাঁকে নিয়ে আমাদের হাসপাতাল আর বাসা করতে হয়েছে। ছেলেমেয়েদের বারবার ছুটে আসতে হয়েছে। তবে রোগশয্যায় থেকেও তাঁর চিন্তাশক্তি ছিল স্বাভাবিক। নিজে হাতে লিখতে না পারলেও ডিকটেশন দিয়ে একটি বই লেখা প্রায় শেষ করেছিলেন। বড় করে অধ্যাপক ড. অজয় রায়ের জন্মবার্ষিকী পালনের একটি ইচ্ছা তাঁর ছিল। রোগশয্যা থেকেও এই কাজটি করার তাগিদ তিনি নিয়মিত দিতেন। গণযোগাযোগ বিভাগের অধ্যাপক রুবায়েৎ ফেরদৌসকে দিয়ে অধ্যাপক অজয় রায়ের জন্মবার্ষিকীর অনুষ্ঠান করা হয়েছিল।

শেষবার হাসপাতালে নেওয়ার পরও খবর পেয়ে আমাদের ছেলে জয় দেশে এসেছিল। জয়কে দেখে তাঁর চোখেমুখে প্রশান্তির ছাপ দেখেছিলাম। কদিন পর আবার বাসায় ফিরলেন। জয়কে চলে যেতে হবে কর্মস্থলে। যাওয়ার আগের দিন অনেক রাত জেগে পিতা-পুত্র কথা বলেছে। জয়কে বেশ হাসিখুশিভাবে বিদায় জানালেন। আমি তাকে বিমানবন্দরে পৌঁছে নিতে যাবো কিনা জানতে চাইলে সম্মতি দিলেন। বিমানবন্দরে যাওয়ার পথে জয় আমাকে বারবার বললো, মা, মনটা শক্ত রেখো। বাবার অবস্থা আসলে ভালো বলে মনে হচ্ছে না। ছেলেকে বেশি দুর্ভাবনা না করতে বলে বিদায় দিয়ে বাসায় ফিরলাম। সেদিন ছিল ২০১৬ সালের ১৬ অক্টোবর।

পরদিন অর্থাৎ ১৭ অক্টোবর সকালে আমি বাইরে যাবো বলে ভেবেছিলাম। কিছু কেনাকাটার দরকার ছিল। বের হওয়ার আগে অজয় রায়ের ঘরে উঁকি দিয়ে দেখি তিনি ঘুমিয়ে আছেন। একটু অস্বাভাবিক লাগলো। খুব ভোরেই তো তাঁর ওঠার অভ্যাস। আজ ব্যতিক্রম হলো কেন? যে-নার্স দায়িত্ব পালন করছিল, তাকে জিজ্ঞেস করলে সে একটু অসহায় ভঙ্গিতে বললো, তিনি তো আমার ডাকে সাড়া দিচ্ছেন না। আমার মনে কু ডাকলো। তাড়াতাড়ি হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা করা হলো। জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক দেখেশুনে বললেন, তিনি ভোর সাড়ে চারটার দিকেই সব মায়ার বন্ধন ছিন্ন করেছেন। ডাক্তারের কথা শুনে আমি স্তব্ধ হয়ে গেলাম। আমার তখন কী করণীয় বুঝতে পারছিলাম না। ভেতরে গুমড়ে উঠছে কান্না কিন্তু বের হচ্ছে না। ছেলে আগের দিনই আমাকে শক্ত হতে বলেছে। তাই আমাকে তো এখন দুর্বল হলে চলবে না। মনে কি তখন ধ্বনিত হচ্ছিল বলতে পারবো না। হয়তো কবির কথায় বলা যায় :

যে কাঁদনে হিয়া কাঁদিছে সে কাঁদনে সেও কাঁদিলো

যে বাঁধনে মোরে বাঁধিছে সে বাঁধনে তারে বাঁধিল ॥

পথে পথে তারে খুঁজিনু মনে মনে তারে পূজিনু,

সে পূজার মাঝে লুকায়ে আমারেও সে সাধিল ॥

জীবনের একসঙ্গে পথ চলার শেষ হলো, কিন্তু তখন আর সেটা ভাবছি না। পরিচিত সবাইকে খবর দেওয়া হলো। খবর দিলাম ছেলে এবং দুই মেয়েকে। ছেলে তখন কেবল তার গন্তব্যের বিমানবন্দরে নেমেছে। ‘বাবা নেই শুনে বললো, আমি আসছি। আমরা না আসা পর্যন্ত বাবার শেষকৃত্য করো না। আমি শুধু বলি, তোমরা আসো বাবা।

খবরটা দ্রুত জানাজানি হয়ে যায়। দুঃসংবাদ নাকি বাতাসের আগে ছড়ায়। একে একে অনেকেই হাসপাতালে এসে জড়ো হতে থাকলেন। আমাদের আত্মীয়স্বজনের বাইরেও পরিচিতমণ্ডলীর অনেকেই এসেছিলেন। ডা. সারওয়ার আলী, ডা. ওয়াজেদুল ইসলাম খান, ডা. মাহমুদুর রহমান, ডা. নাজমুন নাহারসহ আরো অনেকেই এসে অজয় রায়ের প্রতি 888sport apk download apk latest version জানালেন। আমাকে সান্ত্বনা দিলেন, সমবেদনা জানালেন। পঙ্কজ ভট্টাচার্যসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, সামাজিক আন্দোলনের নেতাকর্মী ছাড়াও অজয় রায়ের পরিচিত অনেকের উপস্থিতি দেখে আমি ওই দুঃখের দিনেও এই ভেবে স্বস্তিবোধ করলাম যে, দীর্ঘ কর্মজীবনে অজয় রায় মানুষের ভালোবাসা অর্জন করতে পেরেছিলেন।

ছেলেমেয়েরা গভীর রাতে 888sport app এসে পৌঁছে যায়। অজয় রায়ের মরদেহ রাখা হয় বারডেম হাসপাতাল মর্গে। পরদিন সকাল ১১টায় সর্বস্তরের মানুষের 888sport apk download apk latest version জানানোর জন্য মরদেহ ঘণ্টা দুয়েকের জন্য শহীদ মিনারে রাখা হয়। সেখানে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার অসংখ্য 888sport promo code-পুরুষ সমবেত হয়ে ফুল দিয়ে অজয় রায়ের প্রতি শেষ 888sport apk download apk latest version নিবেদন করেন। 888sport appর জেলা প্রশাসক সালাহউদ্দিন আহমেদের ব্যবস্থাপনায় মুক্তিযোদ্ধা অজয় রায়কে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়।

আমি এবং ছেলেমেয়েরা উপস্থিত থেকে সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি। ছেলের সঙ্গে আলাপ প্রসঙ্গে অজয় রায় তাকে চিতায় না পুড়িয়ে বাংলার মাটিতে তার নশ্বর দেহ লীন করে দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। সে-কারণে সবাই মিলে আলোচনা করে ঠিক হলো, কিশোরগঞ্জে অজয় রায়ের পৈতৃক ভিটায় তাঁকে সমাহিত করা হবে। পঙ্কজ ভট্টাচার্য সব ব্যবস্থা করার দায়িত্ব নিলেন। কিশোরগঞ্জে আমাদের পারিবারিক সুহৃদ ও রাজনৈতিক নেতা অশোক সরকার সেখানে সশরীর উপস্থিত থেকে সব ব্যবস্থা করেন। কিশোরগঞ্জের পথে মরদেহ নিয়ে যাত্রাকালে আমার মনে কেবলই অনুরণিত হচ্ছিল :

এবার আমার সাঙ্গ ভবের খেলা

সময় হলো বাড়ি ফেরার পালা

যাবার বেলায় যা কিছু সব রইলো পড়ে

888sport sign up bonusর পাতায় মোরা বেদনা নিলাম ভরে।

কি পেলাম তার হিসাব থাক ধুলোর পরে

যদি কিছু দেবার ছিল বাকী

সময় যদি থাকে কিছু পরে

দেবো না কাউকে ফাঁকি।

অজয় রায়কে সমাহিত করার কাজে রাজনৈতিক মতাদর্শ নির্বিশেষে অনেকের সহযোগিতা আমরা পেয়েছি। অজয় রায়ের সঙ্গে এলাকার যে খুব একটা যোগাযোগ ছিল তাও নয়। তবে যেভাবেই হোক তাঁর নাম এলাকার অনেক মানুষেরই যে জানা ছিল সেটা বোঝা যায় তাঁর মৃত্যুর পর। তাঁদের পূর্বপুরুষের নামে প্রতিষ্ঠিত আনন্দকিশোর রায় স্কুলমাঠে কয়েক হাজার মানুষ সমবেত হয়েছিলেন অজয় রায়ের প্রতি 888sport apk download apk latest version জানাতে। স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা তাঁর মরদেহের প্রতি স্যালুট জানান। এদেশের মাটি ও মানুষকে গভীরভাবে ভালোবেসেছিলেন। তাই এই দেশের মাটিতে শেষ শয্যা নিয়েছেন। এলাকার মানুষ সশ্রদ্ধচিত্তে তাঁকে 888sport app download for android করেন আর স্থানীয় ভাষায় বলেন, ‘বাবুগো বাড়ির বাবুর বড় পোলা আমাগো গ্রামে শুইয়া আছেন।’

হ্যাঁ, তিনি শুয়ে আছেন। জীবন থেকে নিয়েছেন চিরদিনের মতো ছুটি। আমি আছি এখন অপেক্ষায়, আছি শেষের সেই ডাক শোনার জন্য। জন্মগ্রহণ করলে মরতে হবে। তাই অলস কোনো মৃত্যুচিন্তা হানা দেয় না সেটা নয়। মনে মনে গুনগুনিয়ে ওঠে :

জীবন যখন শুকায়ে যায়

করুণাধারায় এসো।

সকল মাধুরী  লুকায়ে যায়,

গীতসুধারসে এসো।

           কর্ম যখন প্রবল আকার

           গরজি উঠিয়া ঢাকে চারি ধার,

           হৃদয়প্রান্তে হে নীরবনাথ,

           শান্ত চরণে এসো॥

আটচল্লিশ

অজয় রায় চলে যাওয়ায় আমার জীবনে এক বিরাট শূন্যতা সৃষ্টি হয়। ৪৫-৪৬ বছরের দাম্পত্য জীবনে আমরা ছিলাম একে অপরের নির্ভরতা। সংসারী বলতে যা বোঝায় তিনি হয়তো পুরোদস্তুর তা ছিলেন না, কিন্তু তিনি ছিলেন বড় এক বটবৃক্ষের মতো। ছায়ায়-মায়ায় জড়িয়ে রাখতেন পরিবারের সদস্যদের।  সংসার চালানোর জন্য আয়-উপার্জনে তাঁর তেমন ভূমিকা ছিল না। যখন কমিউনিস্ট পার্টির সার্বক্ষণিক কর্মী ছিলেন তখন পার্টির পক্ষ থেকে নিয়মিত কিছু অর্থসহায়তা পেলেও আসলে সেটা দিয়ে সংসার চলতো না। সংসারের দায়িত্ব আমার কাঁধে আমি স্বেচ্ছায় নিয়েছিলাম। কিন্তু তার উপস্থিতি, তার পরামর্শ, তার নজরদারি, তার প্রতি অনেকের 888sport apk download apk latest version-ভালোবাসা আমাকে, আমাদের সন্তানদের সামনে প্রেরণার স্তম্ভ হয়ে বিরাজমান ছিল। তিনি চলে যাওয়ার ধাক্কা সামলে উঠতে কিছুটা বেগ পেতে হয়েছে বইকি! তবে মানুষের জীবনটা এমনই যে কোনো কিছুই কারো জন্য বসে থাকে না, থেমে থাকে না, অচল হয়ে পড়ে না। প্রিয়জন হারানোর ফলে বুকের মধ্যে যে শূন্যতা তৈরি হয়, সেটা পূরণের জন্য আমরা কতোকিছুই না করার চেষ্টা করি। চলে যাওয়া মানুষের 888sport sign up bonus ধরে রাখার চেষ্টাও সাধ্য-সামর্থ্য অনুযায়ী করে থাকে। আর কিছু না হলে একটি ছবি বাঁধিয়ে ঘরের দেয়ালে টানিয়ে রাখে। সারাক্ষণ না হলেও সময়মতো ছবির সামনে দাঁড়িয়ে প্রয়াত স্বজনকে 888sport app download for android করা একটি সাধারণ রীতি। যে-মানুষের কোনো ছবিও নেই, তাকেও মনের আয়নায় স্থান দিতে ভুল করে না প্রিয়জনেরা।

আমাদের ছেলেমেয়েরা বাবার সান্নিধ্য কম পেয়েছে। নানা বাস্তব কারণেই এটা হয়েছে। অজয় রায় ছিলেন তাঁর রাজনীতি নিয়ে ব্যস্ত। ছেলেমেয়ে তিনজনই লেখাপড়া করেছে দেশের বাইরে। তারপর চাকরি-স্থিতিও দেশে নয়। তাই ওরা বাবাকে ধারণ করতো বুকের গভীরে। ওরা জানতো, বুঝতো ওদের বাবা খুব সাধারণ মানুষ নন। তিনি একজন কৃতী মানুষ, তাঁর জ্ঞানগরিমাও সাধারণ নয়। তাঁর জীবন নিবেদিত মানবমুক্তির বৃহত্তর কাফেলায়। পিতার জন্য গর্ব ও গৌরব ছিল, আছে পুত্রকন্যাদের হৃদয় জুড়ে।

পিতার মৃত্যু স্বাভাবিকভাবেই ওদের মনে একটি অন্যরকম অনুভূতির জন্ম দিয়েছিল। তিনি দেশকে ভালোবাসতেন। দেশ মানে দেশের মাটি ও মানুষ। তাই জন্মভূমির মাটিতে শেষ শয্যা পাতার বাসনা পোষণ করেছিলেন। তিনি যেখানে চিরনিদ্রায় শায়িত সেখানে একটি 888sport sign up bonusস্তম্ভ বানানোর চিন্তা মাথায় আসে ছেলে এবং মেয়েদের। তাদের এই চিন্তা আমার মনেও দাগ কাটে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে অজয় রায়কে তুলে ধরার একটি ছোট উদ্যোগ হতে পারে একটি 888sport sign up bonusস্তম্ভ নির্মাণ।

কিন্তু আমাদের ছেলেমেয়েরা দেশের বাইরে থাকে। তাদের পক্ষে তো সম্ভব নয় এমন একটি কাজের জন্য সশরীরে উপস্থিত থেকে সময় দেওয়ার। বিষয়টি নিয়ে আমি কয়েকজনের সঙ্গে আলাপ করে যে-সাড়া পাই তাকে আমি এককথায় বলব অভূতপূর্ব। অজয় রায়ের প্রতি মানুষের যে গভীর 888sport apk download apk latest version ও ভালোবাসা তার বহিঃপ্রকাশ লক্ষ করলাম 888sport sign up bonusস্তম্ভ নির্মাণের কাজটি হাতে নিয়ে। এ ক্ষেত্রে প্রথমেই বলতে হয় স্থপতি ও কবি রবিউল হুসাইনের নাম। তিনি অত্যন্ত ব্যস্ত মানুষ। তারপরও খুব দ্রুততম সময়ের মধ্যে অজয় রায় 888sport sign up bonusস্তম্ভের একটি নকশা তিনি তৈরি করে দেন। এজন্য তিনি কোনো সম্মানী তো নেনইনি, উপরন্তু কাজটি যাতে ভালোভাবে সম্পন্ন হয়, সেদিকেও নজর রেখেছেন। কম খরচে একটি দৃষ্টিনন্দন স্তম্ভ করা হয়তো সম্ভব হতো না, যদি রবিউলভাইয়ের মতো মানুষের উদার সহযোগিতা আমরা না পেতাম।

এই 888sport sign up bonusস্তম্ভ বানানোর কাজে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আমি পাশে পেয়েছি প্রবীণ রাজনীতিবিদ পঙ্কজ ভট্টাচার্যকে। তাঁর কথা আগেও বলেছি। তিনি দীর্ঘদিন ধরেই আমাদের পারিবারিক বন্ধু। অজয় রায়ের রাজনীতির সহযোদ্ধা। একসঙ্গে তাঁরা কত কাজের সঙ্গে যুক্ত থেকেছেন, তার সব আমিও জানি না। সুখে-দুঃখে আমরা একসঙ্গে ছিলাম, এখনও আছি। মৃত্যু ছাড়া আমাদের এই বন্ধন ছিন্ন হবে বলে মনে হয় না। এ প্রসঙ্গে আমি আরও একজনের নাম বলব। কিশোরগঞ্জের পরিচিত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, আইনজীবী, বীর মুক্তিযোদ্ধা অশোক সরকার। অশোক ছাত্র ইউনিয়ন থেকে শুরু করে কমিউনিস্ট পার্টিও করেছেন। অজয় রায়কে তিনি রাজনৈতিক গুরু হিসেবে মানেন। অজয় রায়ের সব উদ্যোগের সঙ্গেই অশোক সরকার একাত্ম থেকেছেন। কিশোরগঞ্জের মানুষ তাদের যে-কোনো প্রয়োজনের সময় অশোক সরকারকে পাশে পায়। আমিও পেয়েছি। অজয় রায়কে সমাহিত করা এবং তাঁর 888sport sign up bonusস্তম্ভ নির্মাণের কাজেও অশোক সরকার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতা পাওয়া থেকে ঠিকাদার, মজুর জোগাড় – সবকিছু তত্ত্বাবধান করেছেন অশোক। তাঁর বড় ভাই গৌতম সরকার ঠিকাদারি করেন। গৌতম বিনা লাভে 888sport sign up bonusস্তম্ভ বানিয়ে দিয়ে আমাদের পরিবারের কৃতজ্ঞতাভাজন হয়েছেন।

কিশোরগঞ্জের নবগ্রামের পৈতৃক জমিতে এই 888sport sign up bonusস্তম্ভটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের দিন স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাসহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। কেউ কেউ অজয় রায়ের প্রতি গভীর 888sport apk download apk latest version জানিয়ে দু-চার কথা বলেওছেন। অজয় রায় যে দেশ এবং দেশের মানুষকে ভালোবাসতেন, সেটা 888sport app download for android করেছেন। নির্মাণসামগ্রী রক্ষণাবেক্ষণে সহযোগিতা করেছেন আনন্দকিশোর উচ্চ বিদ্যালয়ের নৈশপ্রহরী। স্থানীয় লোকজনের সমর্থন-সহযোগিতা না পেলে কাজটি শেষ করা আমাদের জন্য দুরূহ হতো।

স্বল্পতম সময়ে নির্মাণকাজ শেষ করে অজয় রায় 888sport sign up bonusস্তম্ভটি উদ্বোধন করা হয়েছে ২০১৮ সালে। স্থানীয় সংসদ সদস্য ও সাবেক আইজিপি নূর মোহাম্মদ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে অজয় রায়ের প্রতি 888sport apk download apk latest version জানিয়েছেন। স্থানীয় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা থেকে শুরু করে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ এবং বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীর উপস্থিতিতে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি হয়েছিল আনন্দমুখর। 888sport sign up bonusস্তম্ভের গায়ে অজয় রায়ের একটি ম্যুরাল তৈরি করে দিয়েছেন আমাদের আর এক সুহৃদ, বিশিষ্ট 888sport live chatী শ্যামল চৌধুরী। শ্যামলও অজয় রায়ের একজন গুণমুগ্ধ এবং প্রগতিশীল চিন্তার মানুষ।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে 888sport app থেকেও অজয় রায়ের রাজনৈতিক এবং অন্য কাজের সহযোদ্ধাদের অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। পঙ্কজ ভট্টাচার্য, শেখর দত্ত, মুহম্মদ হিলালউদ্দিনের নাম এই মুহূর্তে মনে পড়ছে। তাছাড়া দৈনিক ইত্তেফাকের সম্পাদক তাসমিমা হোসেন, বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের কর্ণধার লুভা নাহিদ চৌধুরীসহ আরো কেউ কেউ উপস্থিত থেকে আমাদের কৃতজ্ঞতাপাশে আবদ্ধ করেছেন।

888sport sign up bonusস্তম্ভের ডিজাইনার স্থপতি রবিউল হুসাইনকে কাছে পেয়ে দু-একজন জানতে চেয়েছিলেন, 888sport sign up bonusস্তম্ভের শীর্ষে একটি গোলাকার বৃত্ত দিয়ে কী বোঝানো হয়েছে। রবিউলভাই বলেছিলেন, গোল বৃত্ত আসলে একটি সূর্য। সূর্য আলো দেয়, অন্ধকার দূর করে, আবার এটা আশার প্রতীক। অজয় রায় সংগ্রাম করেছেন একটি আলোকিত 888sport appsের জন্য। অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক, সমতার 888sport apps তিনি দেখতে চেয়েছিলেন। সূর্য যখন উদিত হয় তখন তার রোদ থেকে কাউকে বঞ্চিত করে না। গোল বৃত্ত আবার মানুষের জীবনরহস্যের একটি বিশেষ দিকের প্রতীকী রূপ। মানুষ শূন্য থেকে এসে আবার শূন্যে মিলিয়ে যায়। রবিউল  হুসাইনের ব্যাখ্যা সবাই মুগ্ধ হয়ে শুনেছে।

এখন অজয় রায়ের 888sport sign up bonusস্তম্ভ দেখার জন্য অনেকেই সেখানে যান। কিছুক্ষণ সময় কাটান। তাঁর জন্ম ও মৃত্যুদিন ছাড়াও 888sport cricket BPL rateে ফেব্রুয়ারি এবং অন্য জাতীয় দিবসে ছাত্র-শিক্ষকরা ফুল দিয়ে 888sport apk download apk latest version নিবেদন করেন। অজয় রায় 888sport app download for androidে কিছু আলোচনাও করা হয়। অজয় রায়ের পূর্বপুরুষের নামে স্থানীয় আনন্দ কিশোর হাই স্কুলের ১৪ জন শিক্ষার্থীকে আমরা পরিবারের পক্ষ থেকে প্রতিবছর বৃত্তি দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি। ৩০ ডিসেম্বর অজয় রায়ের জন্মদিনে এই বৃত্তির অর্থ শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। নগদ অর্থ ছাড়াও বৃত্তিপ্রাপ্তদের ভালো কোনো লেখকের লেখা বইও উপহার দেওয়া হয়।

অজয় রায়ের একটি ইচ্ছা ছিল তাঁদের এলাকার বিখ্যাত ব্যক্তিদের 888sport app download for androidে একটি 888sport sign up bonusসৌধ নির্মাণের। আনন্দকিশোর হাই স্কুলের সামনে এই সৌধ নির্মাণের ভাবনা তাঁর মাথায় ছিল। তিনি চেয়েছিলেন উপেন্দ্রকিশোর রায়, সুকুমার রায়, সত্যজিৎ রায়, নীরদ সি চৌধুরী, ড. প্রমথনাথ রায় (অজয় রায়ের বাবা), চিত্রকর এম এন মজুমদার, 888sport live chatাচার্য জয়নুল আবেদীন এবং মুক্তিযুদ্ধকালে প্রবাসী সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি এবং জেলের ভেতর নিহত চার জাতীয় নেতার একজন সৈয়দ নজরুল ইসলাম – কিশোরগঞ্জের অন্তত এই আট খ্যাতিমান মানুষের 888sport app download for androidে একটি 888sport sign up bonusসৌধ নির্মিত হলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম জানতে পারবে তাদের এলাকায় কত বড় মাপের সব মানুষ জন্মগ্রহণ করেছিলেন।

এই আকাক্সক্ষা পূরণের আগেই অজয় রায় পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে গেছেন। এখন আমাদের ছেলেমেয়েরা তাদের বাবার ইচ্ছাপূরণের চেষ্টা করতে আগ্রহী। স্থানীয় মানুষের সহযোগিতা পেলে এই কাজটি করা সম্ভব হবে বলে আমি বিশ্বাস করি।

ঊনপঞ্চাশ

সেই স্কুলজীবনের শেষদিকে ছাত্র ইউনিয়নের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছিলাম। কার প্রভাবে, কীভাবে ছাত্র ইউনিয়নের সদস্য হয়েছিলাম, তা এখন আর মনে নেই। তবে ছাত্র ইউনিয়ন যে আমার চোখ খুলে দিয়েছিল, জীবন ও জগৎকে দেখার দৃষ্টিভঙ্গি বদলে দিয়েছিল, সেটা বেশ মনে আছে। তখন পাকিস্তানি আমল। আইযুব খান পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট। গত শতকের ষাটের দশক রাজনীতির জন্য এক বিশেষ কালপর্ব। একদিকে শেখ মুজিবের নেতৃত্বে বাঙালি জাতীয়তাবাদ ক্রমে নতুন একটি শক্তি হিসেবে দানা বাঁধছে। অন্যদিকে, বামপন্থিরাও একটি শোষণমুক্ত সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা তথা কৃষক-শ্রমিকের রাজনৈতিক শক্তিকে বিকশিত ও সংহত করতে তৎপরতা চালাচ্ছে। শেখ মুজিবুর রহমান যেমন বাঙালির অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়ে লড়াই-সংগ্রাম করতে গিয়ে আইয়ুব খান তথা পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর রোষানলে পড়ে জেল-জুলুম সহ্য করছেন, তেমনি বাম প্রগতিশীলরাও সমাজ প্রগতির লড়াই করতে গিয়ে গরিব কৃষক-শ্রমিকের পক্ষে কথা বলতে গিয়ে জেল-জুলুম সহ্য করছেন।

ছাত্রদের মধ্যে এই দুই ধারার রাজনীতির প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন ছিল ছাত্রলীগ এবং ছাত্র ইউনিয়ন। তখন মেধাবী ছাত্রছাত্রীরা ছাত্র ইউনিয়নের দিকে বেশি ঝুঁকত। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় ছাত্রলীগ এবং ছাত্র ইউনিয়নের প্রভাব ছিল প্রায় সমান সমান। কোথাও ছাত্রলীগ ছিল এক নম্বরে, কোনো জায়গায় আবার ছাত্র ইউনিয়ন বেশি শক্তিশালী। আমি ছাত্র ইউনিয়ের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে ঠিক কী কারণে যুক্ত হয়েছিলাম তা আজ আর নিশ্চিত করে বলতে পারব না।

তবে আমার বড় ভাই ছাত্র ইউনিয়ন করতো বলে তার কিছুটা প্রভাব আমার ওপর পড়েছিল হয়তো। যাদের ছাত্র ইউনিয়নের নেতা হিসেবে দেখতাম তাদের ব্যক্তিগত আচার-ব্যবহার, চালচলনও আমাকে আকর্ষণ করতো। ছাত্র ইউনিয়নের সদস্য ও কর্মীরা ছিল সংস্কৃতিমনা। ছাত্র ইউনিয়নের হাতে লেখা পোস্টারও ছিল খুব সুন্দর। পড়াশোনার প্রতিও ছাত্র ইউনিয়নের সবার বেশ মনোযোগ লক্ষ করতাম।

মতিয়া চৌধুরীর নামও হয়তো আমাকে আকৃষ্ট করে থাকতে পারে। শিক্ষাজীবনে ছাত্র ইউনিয়নের সঙ্গে আমার সংশ্লিষ্টতা নিয়ো আগেও কিছু কথা বলেছি। ছাত্রজীবনেই অজয় রায়ের মতো ডাকসাইটে কমিউনিস্ট নেতার সঙ্গে পরিচয়, গোপন কমিউনিস্ট পার্টির কিছু কাজের সঙ্গে জড়িয়ে পড়া এবং এক পর্যায়ে অজয় রায়ের প্রতি প্রেম-প্রণয়ের কথাও আগে বলেছি। আসলে ছাত্র ইউনিয়নের সঙ্গে জড়িত হয়ে আমার এই সামান্য জীবনের মোড় পরিবর্তন হয়েছে। আমি ছাত্র ইউনিয়ন না করলে, আমাদের পরিবারে অজয় রায়ের উপস্থিতি না ঘটলে কিংবা তাঁর সঙ্গে আমি জীবন বেঁধে না নিলে কী হতো, সেটা এখন কল্পনার বিষয়। কী হতো সেটা আর এখন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ও নয়। কী হয়েছে সেটাই এখন বিষয়।

আমি অজয় রায়ের সঙ্গে জীবন জড়িয়েই 888sport appsের মুক্তিযুদ্ধের মতো বড় ঘটনার সঙ্গে যুক্ত হতে পেরেছি। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আজ আমার যে-পরিচয় সেটা অন্য পথে হাঁটলে সম্ভব না-ও হতে পারতো। আমি রাজনীতি করবো – এমন ভাবনা কখনোই ছিল না। তবে দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য কিছু করতে পারার আগ্রহ ভেতরে ভেতরে ছিল। অজয় রায়ের জীবনসঙ্গী হওয়ার পর সব হিসাবেই কিছু পরিবর্তন আনতে হয়। এসব নিয়েও আগে কিছু কথা বলেছি। অজয় রায়ের রাজনৈতিক জীবন মসৃণ করার জন্য আমাকে সংসারের দায়িত্ব নিতে হয়েছিল একেবারে শুরুতেই। ফলে আমি কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যপদ নিইনি। ১৯৭৩ সালে 888sport appয় স্থায়ীভাবে আসার পর আমি মহিলা পরিষদের কাজের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ি। কবি সুফিয়া কামালসহ মহিলা পরিষদের নেত্রীদের সঙ্গে আমার পরিচয় ঘটে। দেশে 888sport promo code নির্যাতন প্রতিরোধ, 888sport promo codeর ওপর শারীরিক-মানসিক অত্যাচার বন্ধ করার জন্য মহিলা পরিষদ শুরু থেকেই নানা ধরনের তৎপরতার সঙ্গে জড়িত। একদিকে সমাজে 888sport promo codeর অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য সচেতনতা তৈরির জন্য প্রচারমূলক কাজ, অন্যদিকে নির্যাতনের শিকার 888sport promo codeদের আইনি সহায়তা দেওয়ার কাজটি মহিলা পরিষদ যথেষ্ট আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে করেছে। 888sport promo codeদের জন্য এখন কাজ করছে অনেক ধরনের সংগঠন। 888sport promo codeর ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে বিদেশি অনুদান নিয়ে কাজ করা সংগঠনের 888sport free betও এখন একাধিক। কিন্তু এক্ষেত্রে মহিলা পরিষদ পাইওনিয়ারের ভূমিকা পালন করেছে। এই কাজে শুরু থেকে যাঁরা জড়িত ছিলেন, তাঁরা আসলে একটি পথ  তৈরি করেছেন। এর জন্য তাঁরা সরকার বা দেশের বাইরের কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে কোনো অর্থ-সহায়তা পাননি। নিজেরা স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে কাজ করতেন। অফিস ভাড়া, কর্মসূচি পালন, প্রচারপত্র ছাপানো কিংবা দৈনন্দিন ব্যয় নির্বাহের জন্য শুভানুধ্যায়ী ও দরদিদের কাছে হাত পাততে হতো। কেউ কেউ ছিলেন যাঁরা কাজে সময় দিতে না পারলেও মহিলা পরিষদকে নিয়মিত চাঁদা দিয়ে উৎসাহিত করতেন। আমিও এরকম দুয়েকজনের কাছে চাঁদা সংগ্রহ করেছি।

চাকরি এবং সংসার সামলে আমি যে খুব বেশি সময় পেতাম তা হয়তো নয়। তবু আমার চেষ্টা থাকতো মহিলা পরিষদের জন্য সপ্তাহে কিছুটা সময় বের করা। ছাত্র ইউনিয়নের কাজ করে যেমন আনন্দ পেতাম, মহিলা পরিষদের কাজেও সেরকমই ভালো লাগা একটি বোধ কাজ করতো, এখনো করে। আমৃত্যু হয়তো মহিলা পরিষদের সঙ্গে এই ভালো লাগার বন্ধনটি ছিন্ন হবে না। সরকারি চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পর আমি আরো কয়েকটি সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত হয়েছি। এই সংগঠনগুলোর তেমন দৈনন্দিন কাজ থাকে না তবে নির্দিষ্ট যেসব উপলক্ষ বা কর্মসূচি থাকে সেগুলোতে অংশ নেওয়া বা উপস্থিত থাকার চেষ্টা করি। আমি একা বা বিচ্ছিন্ন নই, আরো অনেকের সঙ্গে অনেকের সুখে-দুঃখে পাশে থাকতে পারার আনন্দ থেকে বঞ্চিত না হওয়ার জন্যই ওইসব সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত আছি।

আমি বর্তমানে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সহসভাপতির দায়িত্ব পালন করছি। এর আগে পাঁচ বছর ছিলাম মহিলা ঐক্য পরিষদের সভাপতি। এছাড়া পূজা উদযাপন পরিষদের সঙ্গেও আছি। 888sport free betলঘুদের সমস্যা, তাদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন হলে এই সংগঠনগুলো প্রতিবাদী ভূমিকা পালন করে। মূলত অসহায় মানুষের পাশে থাকার দায়বোধ থেকেই আমি এই সংগঠনগুলোর সঙ্গে যুক্ত আছি। এছাড়াও চট্টগ্রামভিত্তিক বীরকন্যা প্রীতিলতা 888sport sign up bonus কমিটিরও আমি আজীবন সদস্য। প্রীতিলতার দেশপ্রেম, তার আত্মাহুতির ঘটনা নতুন প্রজন্মের সামনে তুলে ধরার জন্য এই সংগঠনটি কাজ করে যাচ্ছে। জামালপুরের মেলান্দহের গান্ধী আশ্রমের কথা আগে বলেছি। আমি গান্ধী আশ্রমেরও আজীবন সদস্য। স্থানীয়ভাবে বিভিন্ন সামাজিক কাজকর্মে গান্ধী আশ্রম সাধ্যমতো কাজ করে যাচ্ছে। সমাজে যখন ভোগবাদী মানসিকতা প্রবল হয়ে উঠেছে, মানুষের কাছে যখন আপন স্বার্থ ছাড়া অন্য সব কিছু গুরুত্বহীন হয়ে পড়ছে, তখন এই সংগঠনগুলো সীমিত পরিসরে হলেও পরার্থপরতার নীতি নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে দেখে আমি অনুপ্রেরণা বোধ করি। ‘মানুষ মানুষের জন্য/ জীবন জীবনের জন্য/ একটু সহানুভূতি কি মানুষ পেতে পারে না’ – ভূপেন হাজারিকার এই কালজয়ী গানের মর্ম যদি অল্প মানুষের মনেও স্থায়ী থাকে তাহলে তো ক্ষতি নেই কোনো।

আমি কোনো ভালো 888sport live chatী নই। তবে গান আমার ভালো লাগে। বিশেষ করে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গান আমার জীবনে উজ্জীবনী মন্ত্রের মতো কাজ করে। আমি ছায়ানটে অধ্যাপক ড. সন্জীদা খাতুনের কাছে গান শেখার চেষ্টা করেছি। রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদের সঙ্গেও আমি জড়িত আছি – এটা আমার জন্য একটি বড় আনন্দ। এর বাইরে ‘বিশ্ববীণা’ নামের একটি সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত আছি। এই সংগঠন থেকে ভারতে গিয়েও আমরা অনুষ্ঠান করেছি। গানের জগতে থাকতে আমার ভালো লাগে।

এক সময় সমাজ বদলের স্বপ্ন দেখেছি। স্বপ্ন দেখেছি একটি সমতাভিত্তিক অসাম্প্রাদায়িক গণতান্ত্রিক 888sport appsের। কিন্তু জীবনের এই শেষ সময়ে এসে কখনো কখনো বিষাদে মন ভরে ওঠে যখন দেখি সাম্প্রদায়িক শক্তি ফণা তুলে ছোবল হানে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার গায়ে। 888sport free betলঘু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, উপাসনালয় হয় আক্রমণের শিকার, তখন প্রশ্ন তাড়া করে, এই 888sport apps কি আমরা চেয়েছিলাম? ধর্মের নামে বিদ্বেষ ছড়ানো, বিভেদ উস্কে দেওয়ার অপচেষ্টা বন্ধ না করে বরং প্রশ্রয়ের মনোভাব দেখলে বেদনাহত হই। তারপরও আশা ছাড়ি না। ভাবি, একটি সুন্দর ও সব মানুষের জন্য নিরাপদ দেশের যে-স্বপ্ন বুকে পুষে রেখেছি তা একদিন পূরণ হবেই। আমি থাকি আর না থাকি সুন্দরের সাধনা সফল হবেই।

মনের মধ্যে গুনগুনিয়ে ওঠে – মেঘ দেখে তুই করিস নে ভয়, আড়ালে তার সূর্য হাসে।

নদীর সঙ্গে জনপদ গড়ে ওঠার একটি নিবিড় সম্পর্ক আছে। নদী বহমান কিন্তু জনপদ স্থবির। নদী বয়ে চলে, জনপদ এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকে। নদীর সঙ্গে তাই জীবনের সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর। প্রাচীনকালে পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় নদীকেন্দ্রিক সভ্যতা গড়ে উঠেছে। পরে কোনো কোনো জায়গায় নদী হয়তো শুকিয়েছে কিংবা ক্ষীণকায় বা সংকীর্ণ হয়েছে, কিন্তু নগর-জনপদ টিকে আছে। কেন নদীর তীরেই মানুষ বসতি গড়ে তুলেছিল সে-সম্পর্কে যেটুকু জানা যায় তা হলো :

আদিম মানুষ দেখেছিল যে, নদীতে প্লাবনের ফলে তীরবর্তী এলাকায় পলিমাটি ছড়িয়ে পড়ে এবং তাতে জমির ফসল উৎপাদনের ক্ষমতা বাড়ে।

নদীসংলগ্ন এলকায় বসবাস করলে  ফসলি জমিতে সেচের সুবিধা পাওয়া যায়। নদীতে বাঁধ দিয়ে এবং খাল কেটে কৃষিজমিতে জলসেচ করা সহজ হয়। ফসলের জন্য সেচ খুবই উপকারী। কৃষি উৎপাদনের সুবিধার জন্যই মানুষ দলবদ্ধভাবে বিভিন্ন নদী-তীরবর্তী অঞ্চলে বসতি গড়ে তুলেছিল।

নদী-তীববর্তী এলাকায় তৃণভূমির সহজ বিস্তার ঘটতো। মানুষের গৃহপালিত পশুর অধিকাংশ ছিল তৃণভোজী। পশুপালন ও চারণ সহজ হওয়ার কারণে নদীর কাছাকাছি বসবাস ছিল সুবিধাজনক।

আগের দিনে স্থলপথে দূরদূরান্তে যাতায়াত বা পণ্য পরিবহনের সুযোগ ছিল অতি সীমিত। নদীর তীরে বসবাস করলে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাওয়া-আসা এবং পণ্য পরিবহনে বিশেষ সুবিধা হতো। নৌপথ ছিল সহজ এবং বিস্তৃত। মানুষ এই সুবিধার কথা উপলব্ধি করেই নদীর কাছে বসতি গড়তে উৎসাহী হয়েছিল।

আদিম মানুষ যখন যাযাবর জীবন ছেড়ে কৃষিকাজে অভ্যস্ত হলো তখন পশু শিকার করে মাংস সংগ্রহ কমতে থাকায় মাছ ধরে আমিষের ঘাটতি পূরণে মনোযোগী হয়। নদীতে মাছ শিকার তেমন কঠিন ছিল না। নদীতে প্রচুর মাছ পাওয়া যেতো। তাই খাদ্য সমস্যা দূর করতে নদীতীরের জীবন বেছে নিতে কারো দ্বিধা ছিল না।

শিকার, সম্পদ সংগ্রহ ও আরো কিছু কারণে মানুষের কাছে নিরাপত্তার বিষয়টিও ছিল গুরুত্বপূর্ণ। বিস্তীর্ণ স্থলভাগে বসবাস করলে এক গোষ্ঠীর ওপর অন্য গোষ্ঠীর আক্রমণের শঙ্কা ছিল। কিন্তু নদীর জলরাশি অতিক্রম করে সহসা আক্রমণ করা সহজ ছিল না বলে নদীতীরকে মানুষ বসবাসের জন্য নিরাপদ মনে করেছে।

নদীতীরের আবহাওয়াও তুলনামূলকভাবে আরামদায়ক। জলাশয়ের নিকটবর্তী অঞ্চলে আবহাওয়া নাতিশীতোষ্ণ হয়। তাই অতি গরম বা অতি ঠান্ডা থেকে বাঁচার তাগিদেও মানুষ নদীর কাছাকাছি বসবাস বেছে নিয়েছে।

সবচেয়ে বড় কথা, মানুষের জীবন ধারণের জন্য জল হলো একটি অপরিহার্য উপাদান। আর এক সময় নদীর জলই ছিল মানুষের তৃষ্ণা নিবারণের একমাত্র উৎস। তাই মানুষের জীবনের প্রয়োজনেই মানুষ ঘর বেঁধেছে নদীতীরে।

আজ জীবনের পড়ন্ত বেলায় এসে বিস্ময়ের সঙ্গে এটা লক্ষ করি যে, আমার জীবনকে ঘিরেও রয়েছে নদী। আমি আমার জীবনের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত নদীর বয়ে চলার মতো নিজের জীবনতরীকেও বয়ে নিয়ে চলেছি। এক নদী থেকে আরেক নদীতে। নদীর  চলার শেষ নেই কিন্তু জীবন অবিরাম বয়ে চলে না। মানুষের চলার শেষ আছে, ইতি আছে। তবে মানুষের নানা অবিমৃশ্যকারিতার জন্য নদীও এখন তার স্বাভাবিক প্রবাহ ধরে রাখতে পারছে না।

আমার শিশুকাল কেটেছে মেঘনা নদীর কোল ঘেঁষে। বর্তমান নরসিংদী জেলার রায়পুরায় আমাদের পৈতৃক বাড়ি থেকে মেঘনা ছিল খুবই কাছে। মেঘনার জলে সাঁতরে আমি আমার জীবননদী পাড়ি দেওয়ার প্রাথমিক পাঠ নিয়েছি। বালিকাবেলার সেসব মধুর 888sport sign up bonusর কথা আগেই বলেছি। কী উত্তাল ছিল সে-সময় মেঘনা। এখন আর আগের মতো দুরন্ত নেই মেঘনা। সে যেন আজ আমার মতোই বয়সের ভারে নত, ক্লান্ত। অনেক কিছু দিয়েছে মেঘনা তার তীরের মানুষদের। কিন্তু প্রতিদানে মানুষ তার ওপর অত্যাচার চালিয়েছে। তাই হয়তো অভিমানে মেঘনা এখন মুখ ভার করে থাকে কিংবা নিজেকে গুটিয়ে নিচ্ছে নিজের মধ্যেই।

আমার জীবনের বয়োবৃদ্ধির কাল কেটেছে আর এক নদীর তীরে। আমি শিক্ষা লাভ করেছি ময়মনসিংহ শহরে। দাদুর বাড়িতে থেকে। এমনকি জীবনসঙ্গী অজয় রায়কেও পেয়েছি ময়মনসিংহেই। আর ময়মনসিংহ হলো ব্রহ্মপুত্রতীরের এক ঐতিহ্যবাহী জনপদ। ময়মনসিংহ এবং ব্রহ্মপুত্র মিলিতভাবে আমাকে আলোকিত করেছে, আমার মধ্যে যতটুকু মানবিক মূল্যবোধ তৈরি হয়েছে তা তো ব্রহ্মপুত্রের তীরে বসবাসকালেই অর্জন করেছি। আমার মধ্যে যতটুকু সমাজ ও রাজনীতি সচেতনতা তৈরি হয়েছে, মানুষকে তার ধর্ম দিয়ে নয় কর্ম দিয়ে বিচার করার যে বোধ তা-ও তো ওই শহর ও নদীতীরে থেকেই। নদীর মধ্যে যে উদারতা, পক্ষপাতমুক্ত বহতা আমি দেখেছি, তাই হয়তো আমার মানস গঠনে ভূমিকা রেখেছে।

তারপর আমি 888sport app আসার পর আর এক নদী ঘিরে পথচলা শুরু হয়। বুড়িগঙ্গা। হ্যাঁ। 888sport app শহর যে এত মানুষকে তার বুকে ঠাই দেয়, সে তো ওই বুড়িগঙ্গার কারণেই। বুড়িগঙ্গা তার নাব্যতা হারিয়েছে, বুড়িগঙ্গার জল আজ আর নিরাপদ নয়, সেটা তো বুড়িগঙ্গার দোষ নয়। এটাও আমাদের দোষে হয়েছে। মানুষের দোষে হয়েছে। মানুষ অমিতাচারী, মানুষ অকৃতজ্ঞ। তাই মানুষ প্রকৃতির সঙ্গে বৈরিতা করে, স্বেচ্ছাচারিতা করে প্রকৃতি ও পরিবেশকে নিজেদের প্রতিপক্ষ বানিয়ে ফেলেছে। আমি এখন বেদনার সঙ্গে পেছনে ফিরে তাকাই আর ভাবি, কোথায় ছিলাম আর কোথায় এলাম।

এই 888sport app শহরে জীবনের একটি বড় অংশ কাটিয়ে দিলাম। কত মানুষের সঙ্গে জানাশোনা, পরিচয়, কত রকম কাজের সঙ্গে যুক্ত হওয়া – জীবন ও জীবিকা সবই তো এই 888sport app শহরেই। 888sport app শহর আমার কাছে শুধু 888sport sign up bonusর শহর নয়, এই শহর আমাকে আমি হিসেবে গড়ে তুলেছে।

জীবনের কাটিয়ে আসা কালপর্বে সমাজে, রাজনীতিতে কম উত্থান-পতন দেখলাম না। দেশের স্বাধীনতার জন্য মানুষের জীবনমরণ যুদ্ধ দেখেছি। আবার স্বাধীনতার মূল স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করতেও দেখেছি। সব মানুষের সমান অধিকার নিশ্চিত করার জন্য, সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য একদল মানুষকে চরম আত্মত্যাগ করতে যেমন দেখেছি, তেমনি সমাজতান্ত্রিক বিশ্বব্যবস্থা ভেঙে পড়তেও দেখেছি। ধর্মভিত্তিক সাম্প্রদায়িক পাকিস্তান রাষ্ট্র ভেঙে ধর্মনিরপক্ষ অসাম্প্রদায়িক 888sport apps রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার যে-গৌরবের অধ্যায় তার সঙ্গে থাকার সৌভাগ্য যেমন হয়েছে, তেমনি আবার ধর্ম নিয়ে রাজনৈতিক খেলাও দেখতে হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে 888sport appsের এগিয়ে যাওয়া যেমন দেখছি, তেমনি কিছু কিছু বিষয়ে 888sport appsের পীড়াদায়ক পশ্চাদপসরণও দেখতে হচ্ছে। তবে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত এই বিশ্বাসে দৃঢ় থাকতে চাই যে : মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহীয়ান।

তিন জন মানুষের কাছে আমার ঋণ ও দায়বদ্ধতার শেষ নেই। এই তিনজন মানুষের প্রভাব আমার জীবনকে বর্তমান পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। আমি অবাক হয়ে ভাবি – তিনটি নদী এবং তিনজন মানুষ কীভাবে জীবনের পথ বেঁধে দিতে পারে!  মেঘনা, ব্রহ্মপুত্র এবং বুড়িগঙ্গা নদী এবং আমার মা, আমার দাদু এবং অজয় রায় – এই তিনজন মানুষ আমাকে প্রভাবিত ও জীবনতরী বাইবার মতো শক্তি, সাহস এবং প্রেরণা জুগিয়েছেন। এই তিন জনের একজনের অভাব ঘটলেই হয়তো আমি আর আজকের আমি হয়ে উঠতাম না।

আমি হয়তো আসলে তেমন কিছুই হইনি, কিন্তু তারপরও একটি ভিন্ন জীবনদৃষ্টি নিয়ে মানুষ এবং চারপাশকে দেখার সামান্য একটু ক্ষমতা যে অর্জন করেছি, সেটাকে আমি আমার পরম পাওয়া বলে মনে করি।

আমার জীবন এখন নিঃসঙ্গ। যার সঙ্গে জীবনের জুটি বেঁধেছিলাম তিনি, অজয় রায় আমাকে একা রেখে বাংলার মাটতে তাঁর শেষ শয্যা পেতেছেন। আমার এক পুত্র এবং দুই কন্যাও তাদের জীবনের প্রয়োজনে আমার থেকে দূরে। তারা আমাকে তাদের কাছে নিয়ে যেতে চায় কিন্তু আমি আমার এই 888sport sign up bonusর শহর, নাড়ি পোতা মাটির মায়া ছেড়ে দূর দেশে গিয়ে থাকতে চাই না। কত শ্রমে, কত সময় দিয়ে যাদের সঙ্গে বন্ধন ও মৈত্রী গড়ে তুলেছি তাদের সঙ্গসুখের জন্য আমার কাতরতার শেষ নেই। হয়তো আমার এই আবেগ মূল্যহীন। কিন্তু এই আবেগ বুকে নিয়েই যে আমি চিরনিদ্রায় যেতে চাই।

যখনই একা হই, যখন একটু নিরিবিলি সময় হয়, তখন আমার কানে বাজে একটি গানের সুর ও কথা।

ও নদীরে একটি কথা শুধাই শুধু তোমারে

বলো কোথায় তোমার দেশ?

তোমার নেই কী চলার শেষ?

তোমার কোনো বাঁধন নেই, তুমি ঘর ছাড়া কি তাই?

এই আছো ভাটায়, আবার এই তো দেখি জোয়ারে

এ কূল ভেঙে ও কূল তুমি গড়ো

যার একূল ওকূল দুকূল গেল, তার লাগি কী করো?

আমায় ভাবছো মিছেই পর, তোমার নাই কী অবসর?

সুখ-দুঃখের কথা  কিছু কইলে না হয় আমারে।

এই গানের কথার মধ্যে আমি যেন আমার জীবনের ছবি দেখতে পাই। কোথায় ছিলাম, কীভাবে এলাম, কীভাবে জীবনে যোগ হলো নতুন জীবন, তৈরি হলো কত আপনজন, এ-ঘাট থেকে ও-ঘাটে তরী ভিড়িয়ে চলার যেন শেষ নেই। আসলে তো শেষ আছে, কিন্তু সেই শেষটা আমি দেখবো না। শূন্য থেকে এসে মিলিয়ে যাবো শূন্যেই।

 মাঝখানে বেয়ে গেলাম একটি ভরা নৌকা, স্বজন নিয়ে পরিজন নিয়ে। নদী কূল-কিনারাহীন ঠিকই কিন্তু কূলের সন্ধান তা বলে থেমে থাকে না। সেই গানের কথাও কানে বাজে :

মাঝি বাইয়া যাও রে

অকুল দরিয়ার মাঝে আমার ভাঙা নাও রে।

মাঝি হিসেবে সবাই সমান দক্ষ না হলেও সংসারনদীতে সবাইকে জীবনতরী বাইতেই হয়। আমিও তা বেয়েছি, এখনো বেয়ে চলেছি।

জীবনের সব কথা হয়তো বলা যায় না। জীবনকথা লেখার জন্য যে-জ্ঞান বা অভিজ্ঞতা থাকতে হয়, আমার হয়তো তাও নেই। তবু প্রাণের বেদনা, প্রাণের আবেগ প্রকাশ হতে চায়। তাই চেষ্টা করলাম কিছু বৃত্তান্ত সবার সঙ্গে ভাগ করে নিতে। জীবনের ধন আসলে কিছুই ফেলনা নয়। আমার জীবনের কথা কারো কোনো উপকারে লাগবে বলেও মনে করি না। তারপরও অলস সময়গুলো একটু কাজে লাগাতে চেষ্টা করলাম 888sport sign up bonusর দুয়ার খুলে যতটুকু দেখা যায় ততটুকু দেখতে। জীবনের একটি বড় অধ্যায় কাটলো 888sport appয়। জীবনের কিছু কথাও হয়তো 888sport app পড়ে থাকলো। থাক না কিছু না বলা কথা। সব বলায় কি বিশেষ কোনো আনন্দ আছে? আমার তো মনে হয়, হৃদয় খুঁড়ে বেদনা না জাগানোই ভালো।

 কবির সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে এটাই আমার শেষ মিনতি :

জীবন যখন শুকায়ে যায়

      করুণাধারায় এসো

সকল মাধুরী লুকায়ে যায়,

     গীতসুধারসে এসো।

                কর্ম যখন প্রবল-আকার,

                গরজি উঠিয়া ঢাকে চারি ধার

                হৃদয়প্রান্তে, হে জীবন নাথ,

                       শান্ত চরণে এসো।

আপনারে যবে করিয়া কৃপণ

কোণে পড়ে থাকে দীনহীন মন,

দুয়ার খুলিয়া, হে উদার নাথ,

      রাজ সমারোহে এসো।

               বাসনা যখন বিপুল ধুলায়

               অন্ধ করিয়া অবোধে ভুলায়,

               ওহে পবিত্র, ওহে অনিদ্র,

               রুদ্র আলোকে এসো। (সমাপ্ত)