আবু সাঈদ তুলু
888sport appর নাট্যাঙ্গন নতুন আনন্দে মেতে উঠেছিল গত ঈদুল আজহার ছুটিতে। কোনো নাটক ঘিরে এমন উচ্ছ্বাস-আগ্রহ ইতিপূর্বে কখনো দেখা যায়নি। নাটকটি দেখতে আসা দর্শকে যেন জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছিল 888sport live chatকলা একাডেমি প্রাঙ্গণ। ‘নাটবাঙলা’ নামে এক নবীন সংগঠন রিজওয়ান নামে এক নতুন নাটকের দশ দিনব্যাপী প্রদর্শনী নিয়ে আয়োজন করেছিল নাট্যোৎসব। নাটকটি কাশ্মিরের বিধ্বস্ত জীবন-বাস্তবতা নিয়ে। নির্দেশনা দিয়েছেন 888sport appsের প্রথিতযশা নির্দেশক অধ্যাপক সৈয়দ জামিল আহমেদ। ঈদের দিন থেকে টানা দশদিন প্রতিদিন দুটি করে প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছিল। ঈদ ঘিরে নাটকের উৎসব 888sport appsের নাট্য-ইতিহাসে এই প্রথম। আয়োজক সূত্রে জানা যায়, ঈদ শুধু ধর্ম হিসেবে পালন নয়, মূলত সংস্কৃতি হিসেবে পালনের একটি অন্যতম উদ্দেশ্য হিসেবেই তাদের এ-আয়োজন। আয়োজক ‘নাটবাঙলা’ 888sport apps গ্রম্নপ থিয়েটার ফেডারেশনভুক্ত নাট্যদল নয়। বছরতিনেক ধরে কয়েকটি নাট্য কর্মশালার মাধ্যমে এ-সংগঠনের পরিচিতি। নির্দেশক সৈয়দ জামিল আহমেদের প্রাক্তন ছাত্ররা এ-দলের নেতৃত্বে। রিজওয়ান নাটকটি তাঁদের প্রথম দলীয় প্রযোজনা। প্রায় তিন মাস পরিশ্রম করে নাটকটি মঞ্চে এনেছেন তাঁরা। এ-নাটকে নির্দেশকের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের প্রাধান্য থাকলেও ভিন্ন দলের নাট্যকর্মীরাও সম্পৃক্ত। একক উৎসবে উপস্থাপিত এ-নাটক সাধারণ দর্শকের কাছে এক ভিন্ন অভিজ্ঞতা হয়ে দাঁড়ায়। ফলে ক্রমশ দর্শককে ঘিরে ইতিবাচক-নেতিবাচক নানামুখী উচ্ছ্বাস বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হতে থাকে। গত ৬ সেপ্টেম্বর রাত ৮টায় প্রদর্শনীর ওপর ভিত্তি করে নাট্যবস্তুর সূত্র, নাট্যায়ন/ নাট্য পরিবেশনা, উপস্থাপন কৌশল, মনস্তত্ত্ব, সমকালীন নাট্যে অবস্থান, নান্দনিকতা, দর্শক উচ্ছ্বাসের পরিপ্রেক্ষিত এবং সাধারণ উপযোগিতার স্বরূপ অনুসন্ধানই এ-লেখার উদ্দেশ্য।
রিজওয়ানের কাহিনি ফুটে উঠেছে মৃতাত্মা ফাতেমার বর্ণনায়। ভারতের কাশ্মিরে জীবন যখন সংকটে নিমজ্জমান তখন ‘রিজওয়ান’ নামে একটি চরিত্রের জীবনবাস্তবতার ঘাত-প্রতিঘাতের দোলাচলের রূপই এ-নাটকের আখ্যান। ‘রিজওয়ান’ শব্দের অর্থ স্বর্গের দ্বাররক্ষক। বাবা-মা চাইলেও কাশ্মিরি ভূস্বর্গের দ্বাররক্ষকের বিপরীতে বিধ্বস্ত নারকীয় কাশ্মিরি জীবন-পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে জীবন পরিক্রমণ রিজওয়ানের। একসময় সৈনিকরা হত্যা করে রিজওয়ানের বাবা-মাকে। ধর্ষণ করে হত্যা করে তার বোন ফাতেমাকে। রিজওয়ান যখন তার স্বজনদের লাশের সামনে তখন সৈনিকরা তাদের হত্যার দায়ে দোষী করে রিজওয়ানকেও হত্যা করে। ছোট্ট এ-কাহিনি নির্দেশকের কল্পনা, 888sport live chatবোধ ও নান্দনিকতার প্রযত্নে মহাকাব্যিক ব্যঞ্জনায় বিধৃত হয়েছে।
রিজওয়ান এমন একধরনের পরিবেশনা বা পারফরম্যান্স, যা দেশীয় নাট্যের বর্ণনাকৌশলে ছোট ছোট দৃশ্য ইমেজের মাধ্যমে মেটাফোরিক্যালি কাশ্মিরি জীবনবাস্তবতার অমানবিক রূপকেই চিত্রিত করেছে। ফাতেমা নামে এক মৃতাত্মার কথন ও নাট্যিক বাস্তবতায় কাহিনি আবর্তিত। অপঘাতে বিধ্বস্ত একটি পরিবারের সদস্যদের কথোপকথনে একটি জনপদের ভয়ঙ্কর বাস্তবতার চিত্র ফুটে ওঠে এতে। রাষ্ট্রযন্ত্রের নিপীড়নে ঠিকানাহীন জীবন-অভিজ্ঞতা নাটকের গভীরে প্রোথিত। এতে আছে মৃত্যু-পরবর্তী জীবনের 888sport sign up bonusচারণায় দুর্বিষহ অতীতের দুঃসহ জীবনের কথা। অধিবাস্তবিক ঘটনাবিন্যাসে এর উপস্থাপন। চতুর্মাত্রিক আয়তন বিন্যাসে অনবদ্য জাদুকরী উপস্থাপনের চমৎকারিত্বে নাটকটি 888sport appsের নাট্যাঙ্গনকে আলোড়িত করেছে। অভিনয়, ইলাস্ট্রেশন, শারীরিক কসরত, মুভমেন্ট, মিউজিক, আলো প্রভৃতি মিলিয়ে ইমেজারি প্রক্রিয়ায় অনবদ্য এ-উপস্থাপনা। নাটকে নানা ধরনের ম্যাজিক তৈরি হয়েছে।
নির্দেশক কাশ্মিরি জাতিগোষ্ঠীর যন্ত্রণার মহাকাব্যিক ব্যঞ্জনাকে ক্ষুদ্র সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বিশেষে প্রকাশ করেছেন। আবার ফাতেমা-রিজওয়ান শীর্ষক ছোট্ট ঘটনার বিশেষে বিশ্বজনীন মানবতাবাদী মহাকাব্যিক রূপায়ণে প্রচেষ্ট ছিলেন। কাহিনি খুবই ছোট্ট। গতানুগতিক নাটকের মতো নির্দেশক কোনো একক ঘটনার বা ধারণার অনুভূতি দিতে চাননি। অমত্মঃব্যঞ্জনায় কোনো ভূসীমা না রেখে সর্বজনীন নৈর্ব্যক্তিক ভাষা ও ভাববিন্যাসের প্রকাশে তৎপর ছিলেন। নাটকে লিখিত পা-ুলিপির চেয়েও প্রাধান্য পেয়েছে প্রাণান্তর, বৈচিত্র্যপূর্ণ ও বহুমাত্রিকতার সুসংহত ইম্প্রোভাইজেশন। বর্ণনা বা সংলাপের চেয়েও নির্দেশক ইমেজ সৃষ্টিতে তৎপর ছিলেন। কখনো একক চরিত্র কিংবা দলবদ্ধ প্রক্রিয়ায় নৈর্ব্যক্তিকভাবে অবৈক্তিক ভাব, ভাষা ও ইমেজকে উপস্থাপন করেছেন। চতুর্মাত্রিক মঞ্চ, বৈচিত্র্যপূর্ণ অভিনয়ে স্থান, বহুমাত্রিক আলো, সংগীত ইত্যাদি সবকিছুর সমন্বিত গতি ঐক্যবদ্ধ সুরে ফুটে উঠেছে কাশ্মিরি জীবন-প্রকৃতি-বাস্তবতা। নাটকে সৃষ্ট এ-বাস্তবতা নতুন নানা উপলব্ধিকে উদ্ভাসিত করে। নির্দেশক চিন্তনের নতুন এক যোগসূত্র তৈরি করেছেন এ-উপস্থাপনায়।
নাটকের প্রচারপত্রেই উলেস্নখ করেছেন সৈয়দ জামিল আহমেদ রিজওয়ান নাটকটির কাহিনিসূত্র গ্রহণ করেছেন উর্দু কবি আগা শহীদ আলীর কাব্যগ্রন্থ The Country Without a Post Office অবলম্বনে ভারতের অভিষেক মজুমদারের রচনা থেকে। আগা শহীদ আলী (১৯৪৯-২০০১) কাশ্মিরি বংশোদ্ভূত যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী কবি। তাঁর কাব্যগ্রন্থগুলোর মধ্যে ১৯৯৭ সালে প্রকাশিত The Country Without a Post Office অন্যতম। প্রথমে নাম ছিল ‘Kashmir Without a Post Office’। যে-কাব্যটি দ্বারা সালমান রুশদি পর্যন্ত প্রভাবিত হয়েছিলেন। প্রায় বিশটির অধিক 888sport app download apkসমৃদ্ধ এ-কাব্যগ্রন্থের নাম-888sport app download apk ‘The Country Without a Post Office’। ১৯৯০ সালে পৃথিবীর মানুষের অজানা কাশ্মিরের গণহত্যার বীভৎসতার অনুভূতি তুলে ধরেছেন কবি এ-গ্রন্থে। 888sport app download apkগুলো ১৯৯১ থেকে ১৯৯৫ সালের মধ্যে রচিত। শহিদ আলি বিভিন্ন 888sport app download apkয় উপস্থাপন করেছেন যোগাযোগবিচ্ছিন্ন কাশ্মিরি জীবন-বিধ্বস্ততাকে। এ-গ্রন্থের দ্বিতীয় 888sport app download apk ‘I See Kashmir from New Delhi at Midnight’। এ-888sport app download apkতে রিজওয়ানের নামটি উঠে আসে। যখন রিজওয়ানকে সৈনিকরা স্বজন হত্যার দায়ে দোষীসাব্যস্ত করছে। এ-কাব্যগ্রন্থের প্রতিটি পরতে জড়িয়ে আছে কাশ্মিরিদের জীবনযন্ত্রণা, গণহত্যা-বিধ্বস্ততার হৃদয়ছোঁয়া বর্ণনা, অত্যন্ত সহজ-সরলভাবে। এ-গ্রন্থের উলেস্নখযোগ্য অন্য 888sport app download apkগুলো হলো – ‘Farewell, The Last Saffron’, ‘I Dream I Am the Only Passenger on Flight 423 to Srinagar’, ‘A Pastoral’, ‘The Floating Post Office’, ‘A Fate’s Brief Memoir’, ‘At the Museum’, ‘A History of Paisley’, ‘A Footnote to History’, ‘Son et Lumiere at Shalimar Garden’, ‘First Day of Spring’, ‘Death Row’, ‘The City of Daughters’, ‘Muharram in Srinagar’, ‘1992’, ‘A Villanelle’ ইত্যাদি। উর্দু কবি আগা শহিদ আলির ইংরেজিতে লেখা A Walk Through the Yellow Pages, The Half-Inch Himalayas, A Nostalgist’s Map of America, Rooms Are Never Finished, Call Me Ishmael Tonight (গজল) কাব্যগ্রন্থগুলোও আলোচিত।
The Country Without a Post Office কাব্যগ্রন্থটি অবলম্বনে কাশ্মিরি জীবনবাস্তবতায় নাটকটি রচনা করেছেন ব্যাঙ্গালুরুর তরুণ নাট্যকার অভিষেক মজুমদার। কাব্যগ্রন্থের কিছু 888sport app download apk ও কাব্যভাবনার নিরিখে কাশ্মির পরিপ্রেক্ষিত সামনে রেখেই তাঁর নাটকটি রচনা। অভিষেক মজুমদারের কাশ্মিরি জীবনযন্ত্রণার ট্রিলজির এটি একটি। তাঁর রচনা থেকে বাংলা 888sport app download apk latest version করেছেন কলকাতার ঋদ্ধিবেশ ভট্টাচার্য। সৈয়দ জামিল আহমেদ এককে সীমাবদ্ধ না থেকে সামগ্রিকতায় পরিবেশনাটি তৈরিতে সচেষ্ট ছিলেন।
কাশ্মির-সমস্যার সূত্রপাত অনেক পূর্বে। ভূ-প্রাকৃতিক দিক থেকে অত্যন্ত ঐশ্বর্যশালী ভূমি কাশ্মির। পাকিস্তান ও ভারতের উত্তর-পশ্চিম ঘেঁষা এ-জনপদ ভূস্বর্গ হিসেবে পৃথিবীখ্যাত। আঠারো শতকের পূর্ব পর্যন্ত হিমালয়, পীর পঞ্জল পর্বতমালার উপত্যকাকে ভৌগোলিকভাবে কাশ্মির ভূমি হিসেবে চিহ্নিত করা হতো। রাজতরঙ্গিণী গ্রন্থে অতীত সমৃদ্ধির পরিচয় বহন করে কাশ্মির। প্রাকৃতিক দিক থেকে এ অনন্যসাধারণ ভূমি একসময় ভারতের মোগল শাসকরা অবকাশকেন্দ্র বা বিনোদনকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করতেন। কাশ্মিরজুড়ে রয়েছে সুউচ্চ পর্বতমালা, সমতলভূমি, হ্রদ, সবুজ মাঠ, বিচিত্র বৃক্ষসমৃদ্ধ অরণ্য, নিম্ন জলাভূমি, ঝিল ও নদী।
কিন্তু ব্রিটিশদের দেশবিভাজন রাজনীতিতে কাশ্মির ভিন্ন রূপ নেয়। পাকিস্তান অংশের মধ্যে অবস্থিত অংশটি আজাদ কাশ্মির (গিলগিত, বালতিস্তান, আজাদ কাশ্মির)। আর ভারতের অংশের মধ্যে জম্মু ও কাশ্মির (জম্মু, কাশ্মির ভ্যালি, লাদাখ)। দেশবিভাজনের সময় কাশ্মিরের জন888sport free betর প্রায় আশি শতাংশ ছিল মুসলমান। অনেকেরই দাবি ছিল দেশবিভাজনের সময় মুসলিম অধ্যুষিত হিসেবে পাকিস্তানের পক্ষে থাকতে। কিন্তু সে-সময় কৌশলগত কারণে মহারাজা হরি সিং ভারতের সঙ্গে যোগ দেন। ১৯৪৭ সালের ২৬ অক্টোবর চুক্তি স্বাক্ষরের পরপরই ভারতীয় সৈন্যরা কাশ্মিরে অবস্থান নেয়। নানা কারণেই সাঁড়াশি আক্রমণ শুরু করে। রাজনীতির পরিপ্রেক্ষেতেজাতিসংঘ তখন পাকিস্তান ও ভারতের উভয়ের দখলকৃত ভূমি স্থগিতাদেশ করে গণভোটের আয়োজন করতে বললেও ভারত তা মেনে না নিয়ে গণভোট প্রত্যাহার করে। এভাবেই দুদেশের দখলকৃত ভূমি নিয়ে দ্বন্দ্ব-সংঘাত শুরু হয়। বৃহত্তর কাশ্মির ১৯৬২ সাল থেকে পাকিস্তান (৩০ শতাংশ), ভারত (৬০ শতাংশ) ও চীন (১০ শতাংশ, আকসাই চীন) শাসন করে আসছে। ভারত ও পাকিস্তান ১৯৬৫, ১৯৭১ সালে দু-দুবার ভয়ংকর যুদ্ধের দিকে যায়। ১৯৯৯ সালে কারগিল যুদ্ধে দুদেশের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। দুদেশের মধ্যে ভূখ–র অধিকার নিয়ে সংঘাতপূর্ণ সম্পর্ক থাকলেও ১৯৫৩ সালে প্রথম এবং ১৯৬৭ সাল থেকে কাশ্মিরবাসী দাবি করে আসছে স্বাধীনতার। ভারত-অধিকৃত জম্মু কাশ্মিরের অন্যতম প্রধান শহর শ্রীনগর। কাশ্মিরে শুরু হওয়া সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, সেনা অভিযান, দ্বন্দ্ব-সংঘাত এখন কাশ্মিরবাসীর নিত্যসঙ্গী। ভূস্বর্গখ্যাত কাশ্মির ১৯৯০ সালে হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গায় ভূ-নরকে পরিণত হয়েছিল। ১৯৯০ সালে ভারতের জারি করা সামরিক আইনের প্রতিবাদ করলে সেখানে সেনাবাহিনী নির্বিবাদে চালায় হত্যা, ধর্ষণ ও ধ্বংসযজ্ঞ। বাড়িঘর পুড়িয়ে ফেলা হয়। সে-সময় পোস্ট অফিস বন্ধসহ সারা পৃথিবীর সঙ্গে সবরকম যোগাযোগ প্রায় বন্ধ ছিল। নির্বিবাদে গণহত্যা চালাতে থাকে সেনারা। প্রসঙ্গত, আজো দাঙ্গা-দমন-পীড়ন-হত্যা সেখানকার প্রায় প্রতিদিনেরই ব্যাপার। এখনো কাশ্মিরে দখলদার ভারতের সেনা পৃথিবীর যে-কোনো দখলকৃত জায়গার তুলনায় বহুগুণ বেশি।
নির্দেশক সৈয়দ জামিল আহমেদ কাশ্মির-সমস্যার কারণ হিসেবে ধর্ম নিয়ে দ্বন্দ্বকে নাটকে উপস্থাপন করতে চাননি। মূল টেক্সটকে ভিত্তি করে মানবিক দৃষ্টিভঙ্গিতে কাশ্মিরি জীবন-বিধ্বস্ততার উপস্থাপনই ছিল তাঁর মূল লক্ষ্য। নাটকে নববইয়ের সময়কাল প্রাধান্য পেলেও সমূহ জীবনযন্ত্রণার রূপভাষ্য প্রকাশ পেয়েছে। সৈয়দ জামিল আহমেদের কাজে-চিমত্মায় নতুনত্ব নাট্যমহলে সুবিদিত। 888sport appsের মাস্টার-নির্দেশক হিসেবে সবাই তাঁকে প্রণতি করে থাকেন। তিনি বিষাদসিন্ধু নাট্যনির্মাণের মাধ্যমে 888sport appsের নাট্যচর্চায় যুগান্তর এনেছিলেন। ইতিপূর্বে তাঁর নির্দেশিত বেহুলার ভাসান 888sport appsের নাট্য-ইতিহাসে মাইলফলক। এছাড়া তাঁর প্রতিটি নাটকই নানাদিক থেকে নানাভাবে আলোচিত এবং দর্শকনন্দিত। তাঁর নির্দেশিত চাকা, কমলারানীর সাগরদিঘি, সং ভং চং ইত্যাদি সর্বজন প্রশংসিত। বিদেশে নির্দেশিত নাটকগুলোও প্রশংসিত। এজন্য রিজওয়ান নিয়ে দর্শকের আগ্রহ বেশি থাকাটাই স্বাভাবিক। যদিও দীর্ঘদিন ধরে নাটকটির প্রচারে উলেস্নখ করা হচ্ছিল – সৈয়দ জামিল আহমেদ এ-নাটকের মাধ্যমে দীর্ঘদিন পর মূলধারায় নির্দেশনা দিচ্ছেন। এক্ষেত্রে ‘নাটবাঙলা’ মূলধারার চর্চিত দল কি না, তা প্রশ্নবিদ্ধ। এটি তাদের প্রথম প্রযোজনা। গ্রম্নপ থিয়েটার ফেডারেশনভুক্ত দলও নয় এটি। তবে সৈয়দ জামিল আহমেদ বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠপ্রযোজনার বাইরে অনেকদিন পর নাট্যনির্দেশনা দিচ্ছেন সত্য।
ঈদুল আজহার আগের দিন সন্ধ্যায় 888sport appর সেগুনবাগিচার 888sport live chatকলা একাডেমির এক্সপেরিমেন্টাল হলে রিজওয়ানের উদ্বোধনী প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। ঈদের ছুটিতে নাট্যকর্মী ও নাট্যদর্শকের অধিকাংশই 888sport appর বাইরে থাকায় তাঁরা নাটকটি দেখতে পারেননি। 888sport appsের নাট্যচর্চায় সাধারণত ঈদের ছুটিতে নাটক মঞ্চস্থ হতে দেখা যায় না। এটাই সম্ভবত প্রথম। সবার ধারণা ছিল, নাটকে হয়তো কোনো দর্শকই পাওয়া যাবে না। 888sport live chatকলা কর্তৃপক্ষও হল বরাদ্দের ক্ষেত্রে সে-ধরনের ভাবনাই হয়তো ভেবেছিল। কিন্তু উদ্বোধনী প্রদর্শনীতে দর্শক কম হলেও পরদিন থেকে ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। এর কারণ সম্ভবত উদ্বোধনী প্রদর্শনীর পর থেকেই বিভিন্ন যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্নজনের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা। 888sport live chatকলা একাডেমি চত্বর উপচেপড়া দর্শকে মুখরিত হয়ে ওঠে তৃতীয় দিনের প্রদর্শনী থেকেই।
নাটকটিতে প্রথম দিন আমন্ত্রিত অতিথির জন্য অনুদান নির্ধারণ করা হয়েছিল এক হাজার টাকা। পরদিন থেকে দর্শকদের জন্য প্রবেশমূল্য নির্ধারণ করা হয় পাঁচশো ও তিনশো টাকা। সাধারণত গ্রম্নপ থিয়েটারভুক্ত দলগুলোর নাটকের প্রবেশমূল্য থাকে পঞ্চাশ, একশ ও দুশো টাকা। 888sport apps 888sport live chatকলা একাডেমিতে প্রদর্শিত নাটকগুলোর দর্শনীমূল্য এত উঁচু হয় না। এর পেছনে আরেকটি কারণও প্রধান রূপে বিদ্যমান। 888sport live chatকলা একাডেমি গ্রম্নপ থিয়েটার ফেডারেশনভুক্ত দল ও বিশেষ নাট্যপ্রদর্শনীর ক্ষেত্রে বিশেষ রেওয়াতি সুযোগ প্রদান করে থাকে। মূল ভাড়ার প্রায় দুই-তৃতীয়াংশের বেশি টাকা ছাড় দেয়। রিজওয়ান বন্যার্তদের সাহায্যার্থে প্রদর্শনসহ নানা কারণে এ-নাটকের প্রদর্শনীমূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে বলে আয়োজক সূত্রে জানা যায়।
রিজওয়ান নিয়ে ইতিবাচক-নেতিবাচক নানা মন্তব্য আর উচ্ছ্বাসে গমগম করছিল প্রদর্শনীর দিনকয়েক। প্রায় প্রতিদিনই অসংখ্য দর্শক টিকিট না পেয়ে আফসোস করতে করতে ফিরে যাচ্ছিলেন। ৬ সেপ্টেম্বর রাত ৮টার প্রদর্শনীর টিকিট অনেক আগেই বিক্রি হয়ে গিয়েছিল। টিকিট কেনার সময় একটি স্যুভেনির দিয়েছিল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু তাতে নাটকের গল্প, দৃষ্টিভঙ্গি কিংবা নাটকের সারাৎসার কিছু নেই বললেই চলে। সেখানে ছিল নাটক-সম্পর্কিত কিছু দার্শনিক ভাষ্য ও ক্রেডিট লিস্ট। ফলে দর্শক শুধু আবেগ, আগ্রহ ও উৎসাহ নিয়েই হলে প্রবেশ করেন। সাড়ে ৭টার দিকে হলে প্রবেশ করে দেখা যায় প্রচ- ভিড়ে লবিতেও দাঁড়ানো কষ্টকর হয়ে উঠেছে। হলে প্রবেশের আগেই লবিতে সাউন্ড বক্সে রেলস্টেশনের মাইকের ঘোষণামতো সতর্কতামূলক ঘোষণা বাজছে। বারবার মনে হচ্ছিল আমরা বোধহয় ট্রেনে কাশ্মির যাচ্ছি। দীর্ঘ প্রতীক্ষার হলে প্রবেশ করে দেখা গেল গতানুগতিক কোনো মঞ্চ নয়। মাঝখানে খোলা স্থান। দুপাশে মুখোমুখি দুটো সারি, দর্শকদের জন্য। পাঁচশো টাকার টিকিটের দর্শকের জন্য দুপাশের ওপরের দুই সারি বরাদ্দ আর তিনশো টাকার টিকিটধারীদের নিচের দুপাশের দুই সারি। পাঁচশো টাকার দর্শককে আগে হলে প্রবেশ করার মাঝে বসার সুবিধার বিষয়টি জড়িত থাকলেও এতে শ্রেণিগত বৈষম্যও ফুটে উঠেছিল। দেখা যায় – ওপরে লাইট বাঁধার সারিগুলো দিয়ে অভিনেতা-অভিনেত্রীরা হাঁটছেন। সময় গড়িয়ে যায় দর্শকের আগ্রহ বাড়তে থাকে। কী আছে নাটকে? বারবার আর্মি স্টাইলের অনুশাসনে সহকারীরা দর্শকদের সতর্ক করে দিচ্ছেন – নাটক চলাকালে মোবাইল বন্ধ রাখতে হবে, ক্যামেরায় ফ্ল্যাশ ব্যবহার করা যাবে না এবং নাট্যপ্রদর্শন চলাকালে কোনোভাবেই বাইরে বেরোনো যাবে না ইত্যাদি। অবশেষে দর্শক নিশ্চুপ হলে নাটক প্রদর্শন শুরু হয়।
কাশ্মিরের ভূপ্রকৃতির নান্দনিক বিন্যাসে মঞ্চ। এক্সপেরিমেন্টাল হলের অভ্যন্তর সমস্তটাই নৈর্ব্যক্তিক বিন্যস্ত। সেই ঝিলম নদী, নদীর বোট, জনপদ ও সুউচ্চ পাহাড় নাট্যবিষয়ী জীবনের অঙ্গাঙ্গী। রবীন্দ্রনাথ তো সেখানকার সুউচ্চ পর্বতকে মেঘ হয়ে উড়ে যাওয়ার কল্পনাই করেছেন। তাঁর গতিতত্ত্বের প্রাণ প্রতিষ্ঠাই পেয়েছিল কাশ্মিরের শ্রীনগরের প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যে। 888sport appsে অন্য কোনো নির্দেশক এ-বিষয়কেন্দ্রিক নাটক-নির্দেশনা দিলে হয়তো মঞ্চে সে-জনপদকে ডিজিটাল ছবি কিংবা নানা নৈর্ব্যক্তিক সাজেশন বা ভিন্ন নান্দনিক মাত্রায় আনতে তৎপর হতেন। কিন্তু সৈয়দ জামিল আহমেদ এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম; পুরো মঞ্চে কাশ্মিরের ভূপ্রকৃতি ও জীবনযাত্রার নৈর্ব্যক্তিক বা প্রতীকী বিন্যাস করেছেন। সামনের নিচের গ্রাউন্ডকে কখনো কখনো মনে হয়েছে ঝিল, ঝিলম নদী কিংবা কখনো ঢালু উপত্যকার সমভূমি। ওপর থেকে আত্মা যখন নেমে আসে তখন গ্রাউন্ডটি মর্ত্যলোক বলেই প্রতীয়মান হয়। ওপরের লাইট বাঁধার স্থানকে কখনো মনে হয় স্বর্গলোক, আত্মাদের নিবাস, কখনোবা রাষ্ট্রীয় ওপরশক্তি সেনাবাহিনীর স্থল। মঞ্চমধ্যের শূন্যস্থানের এক পাশ থেকে আরেক পাশ পর্যন্ত পাহাড়ি পর্যটকদের ব্যবহারের মতো ট্রাভেল ট্রলি। দুপাশের করিডোর হাসপাতাল, রিজওয়ানদের বাড়ি এবং চারপাশের পুরো করিডোর রাস্তা হিসেবে ব্যবহৃত। এক্সপেরিমেন্টাল মঞ্চের এযাবতকালের সর্বোচ্চ ব্যবহার দেখা গেছে এ-নাটকে। পুরো মঞ্চই যেন অভিনয়ক্ষেত্র; যেন কাশ্মিরি জনপদ। স্বর্গ-মর্ত্যও নৈর্ব্যক্তিক প্রকাশ করেছেন নির্দেশক। মঞ্চ ব্যবহারে তাঁর অনবদ্য সৃজনশীলতার পরিচয় পাওয়া যায়।
ধীরে ধীরে ফগের মাধ্যমে সৃষ্ট ধোঁয়া ওপর থেকে ভেসে আসতে থাকে। এক পিনপতন নীরবতা। ক্রমশ ধোঁয়ায় ভরে ওঠে মঞ্চ। লাইটের রং পরিবর্তন হয়। নীরবতাও যেন এক ভাষা তৈরি করে। কোনো একটি জনপদের বাড়িঘর ধ্বংস, জীবন বিনষ্ট কিংবা জনপদের বিধ্বস্ততার ইঙ্গিত করে। ক্রমশ আলো উজ্জ্বল হয়ে উঠতে থাকে। ধোঁয়ার মধ্যে বর্ণিল আলোর অপরূপ আলো-আঁধারি ঘোরের তৈরি করে। আলোর বিভিন্ন রং পরিবর্তন হতে থাকে। ধোঁয়া কমে গেলে ক্রমশ মেঝেতে আলোর প্রক্ষেপণ স্পষ্ট হয়ে ওঠে। মেঝেতে পানির ঢেউ ভেসে ওঠে। দর্শকের বুঝতে অসুবিধা হয় না যে, কাশ্মিরের ঝিলম নদী। কিংবা নাট্যবস্তুর কাশ্মিরি ঝিল। দৃশ্য ইমেজের মাধ্যমে নির্দেশক শুরুতেই জনপদের অনুভূতি স্পষ্ট করে তোলেন। নাটক শুরুর ঘণ্টা বাজে। আবহ সংগীত বেজে ওঠে।
ওপরে লাইট বাঁধা সিঁড়িগুলোতে হাঁটাহাঁটি করতে থাকা অভিনেতা-অভিনেত্রীরা একে একে নেমে আসতে থাকেন। চরিত্রগুলো নানা জায়গায় ফ্রিজ বা স্থির দাঁড়িয়ে থাকে। সংগীতের সঙ্গে সঙ্গে ওপর থেকে সিঁড়ি নামতে শুরু করে। চলতে শুরু করে ট্রাভেল ট্রলি। স্থিরতার মধ্যে এ ক্রিয়াশীলতা নাট্যপ্রাণ তৈরি করে। ধ্বংস হয়ে যাওয়া জনপদের এরা কি মৃত আত্মা, যারা আবার পুনর্জীবনে এসেছে? কিংবা নির্দেশক শুধু বৈচিত্র্য সৃষ্টির জন্যই অভিনেতা-অভিনেত্রীদের ওপর থেকে এভাবে এনেছেন। নাটকের সর্বত্রই নানা ভাবনার রহস্যে মোড়া। প্রতিটি চরিত্রের পোশাক প্রায় একই। চতুর্মাত্রিক আয়তনে দর্শক একধরনের রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হন।
সামনে নিচের ভূমিতে সুফিবাদি নৃত্য শুরু হয়। গতি বাড়ে নৃত্যের। সুফিবাদী নৃত্যের সঙ্গে শোকের আবহ সংগীত যেন ইসলামি ধর্মবিশ্বাস সাধনমার্গের জীবনচিত্র উদ্ভাসিত করে তোলে। বিমূর্ত দৃশ্য ইমেজে স্পষ্ট হয়ে ওঠে নাটকে বর্ণিতব্য জনপদের জীবন ও সংস্কৃতি। ঠিক তখন ওপর থেকে রক্তমাখা জামা পরা এক কিশোরী নেমে আসতে থাকে। এ-ই নাটকের প্রধান চরিত্র ফাতেমা। রক্তমাখা ফাতেমা যেন আবেগে উদ্বেলিত করে তোলে দর্শকদের। সংগীত, আলো ও অভিনয় এক ঐকতানিক অনবদ্যতায় ধরা দেয়। ফাতেমা দেখতে থাকে জনপদের বিধ্বস্ততা। ওপর থেকে ঝোলানো সিঁড়ি শিফট করে ট্রাভেল ট্রলিতে চলে যায় ফাতেমা। ফাতেমা বর্ণনা করতে থাকে – ‘আজ রাতের চাঁদ উঠেছে। ঝিলের অতল জলে।’ তখন নিচের গ্রাউন্ডে নৌকার প্রতীকী মুভমেন্ট। তখন অধিবাস্তবিক নানা ভাবনার প্রকাশ পায় – ‘একখানি নৌকা দুইখানি দ্বার।’ ফাতেমার মৃতাত্মা যেন পুনরায় জনপদের বিধ্বস্ত জীবনকে অবলোকন করছে। তখন আরো স্পষ্ট হয়ে ওঠে এ-মৃতাত্মা ফাতেমা। ফাতেমার নানা 888sport sign up bonusচারণে অনবদ্য রূপে ধরা দেয় জনপদের জীবনযাত্রা। কোরাস দল যেন সে-জনপদের দৃশ্য রূপায়ণের আধার। ঠিক তখন দূর থেকে আরেক অতৃপ্ত আত্মার কণ্ঠস্বর ভেসে আসে – ‘আসসালামু আলাইকুম। আপনারা কেমন আছেন।’ এ যে ফাতেমার ছোট ভাই রিজওয়ানের কণ্ঠস্বর। ডানপাশের করিডোরে অত্যন্ত আকুতিভরা কণ্ঠস্বর রিজওয়ানের। রিজওয়ান শোয়া অবস্থায় শুধু ল্যাংটি পরিহিত খালি গায়ে ট্রলিতে এগিয়ে আসতে থাকে। করুণ আকুতিভরা দুই ভাইবোনের আবারো মিলিত হওয়ার গল্পের নৈর্ব্যক্তিক নিরিখে নাটকের কাহিনিতে প্রবেশ করে দর্শক।
গল্পটি তখন ফাতেমা-রিজওয়ানের মাধ্যমে এগিয়ে গেলেও এটি আর একক কোনো গল্প থাকে না; হয়ে ওঠে বীভৎস কাশ্মিরি জনপদের প্রতিচ্ছবি। এনিগমার মতো অদৃশ্য ব্যঞ্জনার আবহে সংগীতে ফুটে ওঠে জীবনের যন্ত্রণা। আলোর অপরূপ কারিশমায় ভাইবোন দুজনের আত্মার পুনর্মিলনে যখন প্রকৃতি আন্দোলিত, ঠিক তখন যেন বিচ্ছেদের সুর ছুঁয়ে যায় সর্বত্র। মঞ্চের দুটো ট্রাভেল ট্রলি দুজনকে নিয়ে দুদিকে চলে যায়। ফ্ল্যাশব্যাকের মতো কাহিনি এগিয়ে চলে। দর্শক পুরোপুরি প্রবেশ করে নাটকের কাহিনিতে। ওপর থেকে রশির সিঁড়িতে নেমে আসা এবং উঁচু হাইটে ট্রলিতে দাঁড়িয়ে অভিনয় অত্যন্ত কষ্টসাধ্য হলেও এই ঝুঁকিপূর্ণ কাজগুলো যেন অনায়াসেই করে যাচ্ছেন তাঁরা। নির্দেশক অভিনেতার সর্বোচ্চ মানসিক ও শারীরিক শক্তি ব্যবহার করেছেন। আবেগ ও ঘটনার এমন উদ্দীপক তৈরি করেছেন, যা কোনো চরিত্র-সৃষ্টির ভয়ংকর হলেও পূর্ণ বিকাশী। 888sport appsের নাট্যচর্চায় এরকমের দুঃসাধ্য কাজ সাধারণত দেখা যায় না। তবে 888sport appsে কামালউদ্দীন নিলু, রেজা আরিফ এবং ভারতের কিছু নির্দেশক বিশেষত রতন থিয়ামের কাজের মধ্যে কখনো কখনো দেখা যায়।
ফ্ল্যাশব্যাকের মতো বিন্যাসে একে একে ফাতেমা-রিজওয়ানের পুরো পরিবারসহ কাশ্মিরি সমাজের নানা ঘটনার ব্যাখ্যা হতে থাকে। শুরু হয় রিজওয়ানের জন্মপালা। এক্সিপেরিমেন্টাল মঞ্চের প্রবেশমুখের ভেতরের করিডোর ধরে হাসপাতালের দৃশ্য। উচ্ছ্বাস তৈরি হয় শিশু জন্মের। 888sport appsের আবহমান সঙযাত্রার মতো কৌতুকপূর্ণ হাসপাতালের দৃশ্যটি। চরিত্রগুলোর চরিত্রায়ন স্পষ্ট নয়। কিছু পোশাকের নৈর্ব্যায়নে চরিত্রায়নে প্রচেষ্টা থাকলেও সব চরিত্রই কার্টুন কার্টুন টাইপের একই। হাস্যরসের সুযোগ থাকলেও বিষয়টি খুবই সিরিয়াস ভেবে নিতে হয়েছিল। মাঝখানের মঞ্চে ওপর থেকে শিকড় উলটো করে ঝোলানো ফুলের গাছ নেমে আসে। এ-যেন বিধ্বস্ত গোলাপ বাগান। এ-শিকড় উলটো ফুলের প্রতীকে নির্দেশক কাশ্মিরি মানুষের জীবনের বিধ্বস্ত বাস্তবতাকেই ব্যাখ্যা করেছেন। বিষয়টি সরল হলেও প্রতীকী তাৎপর্যে পৃথিবীর স্বর্গখ্যাত ফুলতুল্য সুশোভিত জনপদের বিপরীত জনজীবনকেই ইঙ্গিত করে। ডানপাশে বাড়ির করিডোর। একপাশে হাসপাতাল, মঞ্চে কাশ্মিরি জনপদ, ডানপাশে ফাতেমাদের বাড়ি – তিনটি জোনে একসঙ্গে অভিনয় হতে থাকে। দর্শক একসঙ্গে ভিন্নমাত্রার এতগুলো জোনের অভিনয়ে অভিভূত হয়ে পড়ে। ইম্প্রোভাইজেশনাল প্রক্রিয়ায় নির্মিত নাট্যবাস্তবতায় এমনটা খুবই সহজাত। তখন মাঝখানের গ্রাউন্ডে অনেকগুলো শিশু। প্রতীকী তাৎপর্যের মাধ্যমে অত্যন্ত চমৎকারভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে জনপদের জীবন ও জীবনের বিকাশকে। অভিনয়ে একসঙ্গে একাধিকজনের কথা, হচপচ না করে সুনির্দিষ্ট উপস্থাপন আরো হৃদয়স্পর্শী হতো। একাধিক শিশুর নৈর্ব্যক্তিকতা জীবনবিকাশের নানা ভাবনায় উদ্দীপিত করে।
ফাতেমা তখন যেন ফিরে গেছে তার অতীত জীবনে। ফাতেমা এখন জীবন্ত চরিত্র। আরেক ভাই ফরহাদকে ঘিরে কী অভিনব বাল্যকাল ফাতেমার। কৌতুকের মতো সংগঠিত অভিনয়ে স্পষ্ট হয় ফাতেমার আরেক ভাই আসবে দুনিয়ায়। জনপদের মানুষের সে কি আনন্দ। হাস্যরসও নাটকে স্থান পায়। শিশুটি যে স্বর্গের দরজায় আটকে গেছে। অবশেষে এ-পৃথিবীতে আসে ফাতেমার ভাই। ফাতেমার বাবা-মা নতুন সমত্মানের কী নাম রাখবে। শেষ পর্যন্ত নাম রাখে ‘রিজওয়ান’। রিজওয়ান শব্দের অর্থ ‘স্বর্গের দ্বাররক্ষক’ – এ কাশ্মির ভূস্বর্গকে যেন রক্ষার দায়িত্ব রিজওয়ানের। অথচ সৈনিকদের কাছ থেকে নিজের ঘরও সে রক্ষা করতে পারেনি। ওপরে ডানপাশের করিডোরে তিনজন মা তিনটি শিশুকে কোলে নিয়ে কথা বলতে থাকে, তখন নৈর্ব্যক্তিকভাবে কাশ্মিরের হাজারো মায়ের প্রতীকী রূপই যেন ভেসে ওঠে। তখন সাবজেক্টকে বিভিন্নভাবে বিভক্ত করে দেখানো হয়। সবাই যেন রিজওয়ানের মতোই স্বভূমিজ ও স্বজাতিপ্রেমী সমত্মান কামনা করেন। অপরদিকে ফুলের উলটো গাছগুলো বিধ্বস্ত জনপদকে প্রতিভাত করে। ফুলের প্রতীকে বিধ্বস্ত সৌন্দর্য ও মানবিকতাহীন জনপদে কি নতুন কোনো স্বজাতিপ্রেমী উত্তরসূরি আসবে না। সমত্মান কোলে মায়েরা যখন ফোক গান গায় তখন মাটির ঘনিষ্ঠতা ভেসে ওঠে চোখের সামনে। জনপদের দৃশ্যে চরিত্রায়নগুলোতে আলাদা স্পেসিফিকেশন প্রয়োজন ছিল। উলটো ফুলগুলো ওপরে উঠে যেতে থাকে, সঙ্গে সঙ্গে দৃশ্যান্তর ঘটতে থাকে। আলাদা আলাদা তিনটি চরিত্রে অখ- মা তৎকালীন জীবন বিকাশের প্রতিবন্ধকতার যন্ত্রণাকেই প্রকাশ করে। নাটকে যখন বারবার বলে – ‘মানুষ যখন মরে যায় তখন কেবল দেহটাই শেষ হয় কিন্তু বেঁচে থাকলে অন্য কিছু হওয়া যায়।’ তখন যেন মনে ভেসে ওঠে বিপস্নবী হওয়াই জীবনের শ্রেয় কাজ।
নাটকটিতে বর্ণনাত্মক অভিনয়রীতির সঙ্গে চরিত্রাভিনয়ের মিশ্রণ ঘটেছে। ফাতেমার (মহসিনা আক্তার) অভিনয় অতি বাস্তব করতে গিয়ে কখনো কখনো হালকায় পর্যবসিত হয়েছে। রিজওয়ান (তিতাস জিয়া) চরিত্রের অভিনয়ে কখনো কখনো অতি অভিনয় মনে হয়েছে। তবে সাত্ত্বিক ভাব প্রকাশে যথেষ্ট তৎপর ছিলেন। মা চরিত্রের (এনাম তারা সাকি) অভিনয়ের চরিত্রের বিশ্বাসযোগ্যতা দর্শকের হৃদয়কে অনেকটা স্পর্শ করলেও সংলাপে আরো মনোযোগ দাবি করে। বিভিন্ন চরিত্রের অভিনয়ের মধ্যে চরিত্রায়ন খুবই কম ছিল। চরিত্র, ভাষা, ঘটনার আরো সুস্পষ্টতা জরুরি ছিল সেই দিনের শোতে। 888sport app চরিত্রে অভিনয় করেছেন – মিতালী দাশ, মো. সোহেল রানা, সুশান্ত কুমার সরকার, মু. সাজিদুর রহমান, মো. আবদুর রাহিম খান, মো. সাইফুল ইসলাম ম-ল, অভি প্রামাণিক, কৌশিক বিশ্বাস, মো. রাববী শেখ, আদনান অভি, তানভীর আহমেদ সিদ্দিকী, ইভানা শারমীন মেঘলা প্রমুখ।
হঠাৎ করেই ওপর থেকে কে যেন দেখে ফেলে। সৈনিক দল ওপরে দৌড়াতে শুরু করে। জুতার বুটের শব্দে মঞ্চ প্রকম্পিত হয়ে উঠতে থাকে। ফাতেমার 888sport sign up bonusতে ফুটে উঠতে থাকে রিজওয়ান। বর্ণনায় ফুটে ওঠে রিজওয়ানের মৃত্যুর কথা। পরক্ষণেই হঠাৎ জলের শব্দ। মঞ্চের ডানপাশের সাজঘরে প্রবেশের খোলা জায়গাটির মুখ থেকে পর্দা উন্মোচিত হয়। এ-যেন মৃতলোক, আত্মা বা রুহের জগৎ। ধোঁয়া আর আলোয় এক অপরূপ রহস্যময় রূপ সৃষ্টি হয়েছে। দুই বৈঠাওয়ালা নৌকায় একজন মাঝি হাত বাড়িয়ে এগিয়ে আসতে থাকে। তবে ইতিপূর্বে বেহুলার ভাসান প্রযোজনাতেও এরকম পেঁচানো কাপড়ের প্রতীকী নৌকা তৈরি করেছিলেন নির্দেশক। নৌকার সাজেশনটি বেশ নাটকীয়। এ-নৌকার মাঝি সারাক্ষণ হাত বাড়িয়ে থাকে। কী যেন নিয়ে যেতে এসেছে। অনবদ্য আবহে দৃশ্যটি যেন নতুন আরেক মাত্রা তৈরি করে। নৌকার মাঝির কাছে যেন চিঠি। মৃতাত্মা নিয়ে যাওয়াই যেন তার কাজ। কিন্তু একটি চিঠি ঠিকানাহীন। অসাধারণ অভিনয়, আলো ও সংগীতে প্রাণদীপ্ত এ-দৃশ্য। মাঝি চরিত্রে প্রাণবন্ত অভিনয় হৃদয় ছুঁয়ে যায়। রবীন্দ্রনাথের ডাকঘরের মতোই যেন রাজার চিঠি দেয়। ডাক, ডাকপিয়ন, মাঝি নানা প্রতীক জীবন-মৃত্যু ব্যাখ্যাত। শেষ পর্যন্ত মাঝি রিজওয়ানকে বাচ্চার মতো খেলনা দিয়ে ভুলিয়ে নিয়ে চলে যেতে থাকে মৃত্যুলোকে। নৌকার গায়ে সুফিবাদি চাকা নৃত্যের ছাপ ইসলামি ভাবাদর্শে পরমাত্মার কাছে আত্মা প্রত্যাবর্তনই ইঙ্গিত করে। অনবদ্য প্রাণবন্ত মেধাদীপ্ত অভিনয়ে যেন জীবন্ত হয়ে ওঠে দৃশ্যটি। তখন একসঙ্গে মাঝে গ্রাউন্ড ফ্লোর ও ওপরের ট্রলিতে অভিনয়-ক্রিয়া সংগঠিত হতে থাকে। ফাতেমা তখন চলমান ট্রলিতে দাঁড়িয়ে বিশেস্নষণ করতে থাকে – ‘যদি জান্নাত থেকে থাকে তা এ মাটিতেই।’ যদিও এ-স্বর্গ এখন নরকে পরিণত হয়েছে। তখন হঠাৎ যেন দৃশ্যটি অন্যদিকে মোড় নেয়। ডিজের মিউজিকের মতো মিউজিক বাজতে থাকে। ফাতেমা ওপরের ট্রলিতে তার বাবার মৃত্যুর করুণ বর্ণনা দিতে থাকে। নিচের কোরাসগুলোর ইশারা ও গুলি লেগে পড়ে যাওয়ার প্রতীকী রূপে নির্বিবাদে গণহত্যা সংঘটনই সম্ভবত তুলে ধরতে চেয়েছেন নির্দেশক। সব কোরাসের মধ্যে তাল, লয় ও মাত্রাজ্ঞান দর্শককে অভিভূত করে।
মধ্য-সিঁড়ি বেয়ে ফাতেমার বাবা যেন পৌঁছে যাচ্ছে ওপরে আত্মালোক/স্বর্গলোকে। নির্মম মৃত্যুর আত্মযন্ত্রণায় পীড়িত। লাইটের অপূর্ব কারুকাজে অনবদ্য জীবন্ত হয়ে ওঠে দৃশ্যটি। বাকি থাকা জিজ্ঞাসায় বাবা ফাতেমার মৃত্যু নিয়ে প্রশ্ন করে। কীভাবে মৃত্যু হয়েছে জানতে চায়। প্রাকৃতিক মৃত্যুর কথা বলেও ফাতেমা আত্মকষ্ট থেকে বের হতে পারে না। ‘প্রাকৃতিকভাবে মৃত্যু’ শব্দবন্ধটি প্রতীকী। ফাতেমা কোনোভাবেই ধর্ষণের প্রসঙ্গটি আনতে চায় না। ধর্ষণ প্রসঙ্গটি অত্যন্ত পরিমিতবোধ ও 888sport live chatসৌন্দর্যে ফুটে ওঠে। আজকের এ-ভূখ– যেন প্রাকৃতিক মৃত্যুর নিশ্চয়তা পর্যন্ত নেই কারো। তখন যেন উচ্চতর বোধ ও 888sport live chatসৌন্দর্যে এক মানবীয় জটিলতার উন্মোচন ঘটে। কোরাসের মাধ্যমে অত্যন্ত চমৎকার মনোভঙ্গিতে ধর্ষণ প্রসঙ্গ ফুটে ওঠে। নাটকে দেখানো হয় – কোরাসের তিন চরিত্র হামাগুড়ি দিচ্ছে। পেছন থেকে একজন নিচে দিয়ে চলে যায়। তিনজন যন্ত্রণালব্ধ তিনদিকে ছুড়ে পড়ে। পরক্ষণেই ফাতেমার অতৃপ্ত আত্মার প্রতিশোধ-প্রবণতা ফুটে ওঠে। নির্দেশক অত্যন্ত চমৎকারভাবে পালটা ধর্ষণ দেখান। এ যেন কাউন্টার ডিসকোর্স। এর মাধ্যমে কিছুটা হলেও ফাতেমার আত্মা শান্তি পাবে। ফাতেমার মৃত্যুর কথা শেষ না হতেই বাবা ওপরে আত্মালোকে পৌঁছে গেছে। পালটা ধর্ষণে মৃত সৈনিককে নিয়ে অন্য সৈনিকরা চলে যায়। কোরাস, অভিনয়, সংগীত ও ভাব-ভাষায় অনবদ্য প্রাণ পায় দৃশ্য।
অন্ধকারে দুটো চাকা চলতে থাকে। আলো জ্বললে দেখা যায় রিজওয়ান স্কুটার চালাচ্ছে। আলো-আঁধারের এ-খেলাটি যেন দর্শকহৃদয়কে স্পর্শ করে। যেন সেই কৈশোর বয়সে ফিরে গেছে রিজওয়ান। দীর্ঘদিনের ইচ্ছা অভিপ্রায়সুলভ রিজওয়ান স্কুটারে ফাতেমাকে নিয়ে চারপাশ ঘোরায়। ইন্তেকাল হওয়ার পরও কি গুলি যন্ত্রণা দেয় রিজওয়ানকে – ফাতেমা জানতে চায়। তখন মঞ্চের পাশের করিডোরও রাস্তা হিসেবে ব্যবহৃত হয়। নাটক আরেকটি নতুন মাত্রা পায়। এই জান্নাতের আর ডাকঘরের প্রয়োজন নেই। আত্মা নিতে ডাকপিয়ন মাঝি আসে। ফাতেমাকে নিয়ে চলে যায়। আবারো প্রতীকী জনপদের উলটো ফুলগুলো ওপর থেকে নেমে আসে মঞ্চে। মাঝি চলে গেলে রশির নির্মিত তিনটি সিঁড়ি নেমে আসে ওপর থেকে। একই গেটআপে তিনজন বুড়ো উলটো গোলাপকে নিয়ে নানা ব্যঙ্গ করতে থাকে। রূপক বিধ্বস্ত জনপদের নানা বাস্তবতাকে তুলে ধরে। রিজওয়ান দেখতে পায় এ যে তারই দাদাজান। কাশ্মির জীবন-সভ্যতার পরম্পরা। রিজওয়ানকেই এই ফুলবাগান রক্ষার দায়িত্ব দিতে চায়। কাশ্মির স্বর্গরক্ষার দায়িত্ব যে রিজওয়ানের হাতেই দিতে চায়। কিন্তু আজকের কাশ্মির যে বিধ্বস্ত, এ গোলাপনগরী। এর চারদিকে গণহত্যা, সহিংসতা ও সামরিক স্বৈরাচারী আচরণ।
পরক্ষণেই ডানপাশের করিডোরে রিজওয়ানের ঘরের দৃশ্য ফুটে ওঠে। রিজওয়ান দোলনায় দুলছে। পাশেই তার মা সেলাইয়ের কাজ করছে। পেট ছিঁড়ে রিজওয়ান হয়েছে। জাতিসত্তায় রিজওয়ান বীরের প্রতীক। নানাভাবে রিজওয়ানের শৌর্যবীর্যকে ব্যাখ্যা করেন নির্দেশক। কৈশোরের উচ্ছলতা প্রকাশে সমস্ত মস্তকটাতেই দৌড়াতে থাকে রিজওয়ান। ট্রলির মাধ্যমে গতি ও শৌর্যবত্তা নতুন ব্যাখ্যা পায়। মা রিজওয়ানকে দেশপ্রেমিক বানাতে চেয়েছে। তখন রিজওয়ানের মায়ের মৃত্যু অত্যন্ত নাটকীয় মুহূর্ত তৈরি করে। রিজওয়ানের গালে মা চড় মারার পরক্ষণে মাকে জড়িয়ে ধরলেই মা মারা যায়। জনপদের দায়িত্ব-কর্তব্য যেন উপেক্ষার উপায় নেই রিজওয়ানদের। অত্যন্ত চমৎকার নান্দনিকতায় মায়ের মৃত্যুকে তুলে ধরেছেন নির্দেশক। মায়ের লাশ কোলে করে নিয়ে এগিয়ে যায় মৃত্যুগহবরের বা মৃত্যুলোকের দিকে। পরিবারের অন্য মৃত্যুগুলোও এগিয়ে যেতে থাকে আত্মালোক/মৃত্যুলোকের দিকে। প্রতীকী নৌকা নেমে আসে ওপর থেকে। মৃত্যু নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। সবাই মৃত্যুনৃত্য করতে থাকে। এ-যেন ইউরোপীয় ডান্স অব ডেথ। এ-যেন মৃত্যু উৎসব। কখনো তা বীভৎস শোক; কখনো মৃত্যু উৎসব। অত্যন্ত চমৎকার গতি, আলো, সংগীত ও অভিনয়ের বিপরীতমুখী কারিশমায় অনবদ্য হয়ে ওঠে দৃশ্যটি। কাশ্মিরের চৌকোনা নৌকার প্রতীকে মৃত্যুনৌকা তখনো ঝুলতে থাকে। লাইটের প্রক্ষেপণেও মৃত্যুমুখোশ মেঝেতে ফুটে ওঠে। রিজওয়ান বর্ণনা করতে থাকে তার জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনা; মৃত্যুর কথা। রিজওয়ান টুপিসহ নানা পোশাকের উপকরণ এনে মা, বাবা, দাদা, ফরহাদ চরিত্রকে স্পষ্ট করে তোলে। নায়লা আজাদের কোরিওগ্রাফি ও পোশাক-পরিকল্পনাটি সবার চোখে নতুন মাত্রায় স্পষ্ট হয়ে ওঠে। মৃত্যুলোকের দিকে ক্রমশ এগিয়ে যাওয়া চরিত্রগুলোর সম্পর্ক ও বৈশিষ্ট্য স্পষ্ট হয়ে ওঠে। লাশগুলো সাজিয়ে রাখতে থাকে রিজওয়ান। কিন্তু আত্মা যেন চিরধাবমান। ধীরে ধীরে মৃতাত্মাগুলো এগিয়ে যায় মৃত্যুপুরী বা রুহের জগতের দিকে। বর্ণনা করতে থাকে সেই 888sport sign up bonus, সেই অনুভব, সেই ঘটনা। নাটকে এ-দৃশ্য অত্যন্ত নাট্যিক ও নান্দনিক মাত্রায় উদ্ভাসিত। অত্যন্ত স্পর্শকাতর। পরক্ষণেই পুতুলের নৈর্ব্যক্তিকতায় রিজওয়ান সেদিনের ঘটনা ব্যাখ্যা করতে থাকে। হঠাৎই সৈনিকের খোঁজাখুঁজি বেড়ে যায়। ওপর থেকে রশি দিয়ে সৈনিকরা নামতে থাকে। তারপরও খুঁজতে থাকে। এখানে টর্চলাইটের কাজগুলো অসাধারণ আরেক ভিন্নমাত্রা তৈরি করে। বাড়িটা নিয়ে নেয় সৈনিকরা। যখন বাবা-মা, ফরহাদ, দাদা সবার লাশ সাজিয়ে রাখছিল, তখন সৈনিকরা এসে রিজওয়ানকে ধরে ফেলে। নাটকে দৃশ্যটি এভাবে তুলে ধরেন নির্দেশক – পুতুলগুলো নিয়ে যখন রিজওয়ান করিডোরে বসা, ঠিক তখন সৈনিকরা দৌড়ে এসে রিজওয়ানকে ধরে ফেলে করিডোরের ওপর থেকে মাঝের ফ্লোরে ফেলে দেয়। অর্থাৎ রিজওয়ানকে হত্যা করে। থিয়েটার গেমসের টাচ গেমসের মতো নিচ থেকে ধরে ফেলে। তখন আলো, সংগীত ও অভিনয়ে এক করুণ আবহ তৈরি হয়। শেষ দৃশ্যে দেখা যায় মৃতাত্মা রিজওয়ান ট্রলিতে। ফাতেমার সঙ্গে দেখা হয়। নাটকটি শুরুর সেই প্রথম দৃশ্যটিই আবার ফিরে আসে। রিজওয়ান তখন আক্ষক্ষপের সুরে বলতে থাকে – ‘বাবাকে বলো না আমি মারা গেছি। আমাকে বলো না বাবা মারা গেছেন।’ এ-দৃশ্যটা এতই হৃদয়স্পর্শী, যেন হৃদয় কেঁদে ওঠে। বাবা-সমত্মান, জীবন সম্পর্ক এক অনবদ্য চিরন্তন অনন্য আবেগী 888sport live chatবাস্তবতায় সৃষ্টি হয়। বাবা যেন নিজ সমত্মানের মৃত্যুসংবাদ কখনো না শোনে। এ-শোক বড় ভয়াবহ – কোনো সভ্যতায় কারো কাম্য নয় এটি। স্বর্গরক্ষার প্রতিশ্রম্নতিও যেন উবে গেছে। একটি চরিত্রের আবেগ যেন চিরন্তন রূপরেখায় উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে। ফাতেমা যখন বলতে থাকে – ‘তুমি যদি শুধু আমার হতে, তাহলে আমাদের পক্ষে কিছুই অসম্ভব ছিল না।’ তখন ওপর থেকে রশিতে রিজওয়ানের লাশ ওপরের টানে উঠে চলে যেতে থাকে। ফাতেমার মানসিক বিধ্বস্ততা বাড়তেই থাকে। এভাবেই পরিবেশনাটির পরিসমাপ্তি ঘটে।
রিজওয়ানকে একধরনের পরিবেশনা বা পারফরম্যান্স বলাটাই বোধহয় বেশি যৌক্তিক। ইউরোপীয় দেশগুলোতে নানা ধরনের নানা বৈচিত্র্যে এ-ধরনের পোস্টমডার্ন অ্যাপ্রোচ লক্ষ করা যায়। বিভিন্ন মাধ্যম বিশেষত ইলাস্ট্রেশন আর্ট, শারীরিক কসরত, মুভমেন্ট, ডান্স, মিউজিক, অভিনয়, বিষয়বস্তু সবকিছু মিলিয়ে ইমেজারি টেকনিকে পরিবেশনার প্রয়াস খুবই প্রচলিত। এ-নাটকে দেশীয় নাট্যের বর্ণনাকৌশলে ছোট ছোট দৃশ্য ইমেজ সৃষ্টিতে কখনো মূর্ত, কখনো বিমূর্তভাবে কাশ্মিরি গণহত্যার অমানবিক রূপকেই স্পষ্ট করে তুলে ধরা হয়েছে। নানা নাট্যমুহূর্ত, আলো ও মঞ্চবিন্যাসে নানা ধরনের ম্যাজিক সৃষ্টি হয়েছে। নাটক উপস্থাপনে দেশীয় নাট্যের বর্ণনাত্মক কৌশলে বাস্তববাদী রীতির সঙ্গে প্রতীকীবাদী ইমেজধারার মিশ্রণ ঘটেছে।
দর্শক তার চেনাজানা কোনো মঞ্চে দেখেননি রিজওয়ান। নাটকের অভিনয় সম্পাদিত হয়েছে গ্রাউন্ড ফ্লোরে। মিডল লেভেল উঁচু ট্রাভেল ট্রলিতে। দুপাশের করিডোরের মধ্যে। ওপরে লাইট বাঁধার হাঁটার সিঁড়িতে। 888sport appর দর্শকরা সাধারণত সামনের মঞ্চে নাটক অভিনীত হতে দেখেন। সেটা প্রসেনিয়ামই হোক কিংবা এরিনা। ভিউ পয়েন্টের অপূর্ব খেলায় দর্শক বিস্মিত হতে বাধ্য। সঙ্গে আলো ও সংগীতের সমন্বয় তো আছেই। কাশ্মিরি ভূপ্রকৃতি ও জীবনবিন্যাস অনুসারে এক্সপেরিন্টাল মঞ্চের অভ্যন্তরের সর্বোচ্চ স্থানই ব্যবহৃত হয়েছে এ-নাটকে। তবে থিয়েটারে এ ধরনের চরিত্র খুব অচেনা নয়। ট্রাভেল ট্রলি পাহাড়ি পর্যটন অঞ্চলে খুবই পরিচিত একটি জিনিস। এখানে সেই পাহাড়ি অঞ্চলে মৃতাত্মার ক্ষেত্রে ব্যবহার করেছেন।
তবে এ-ধরনের এক্সপেরিমেন্ট 888sport appsে অনেক হয়েছে। এই নাটকের নির্দেশক সৈয়দ জামিল আহমেদ তাঁর বিষাদসিন্ধু উপস্থাপনায় 888sport appর মহিলা সমিতির প্রসেনিয়াম আর্চ ভেঙে দর্শকমধ্য অভিনয়ের মাধ্যমে নতুন মাত্রা তৈরি করেছিলেন। ইতিপূর্বে অভিনয়স্থান নিয়ে নিরীক্ষার মধ্যে ‘888sport app থিয়েটার’ মহিলা সমিতির প্রথাগত মঞ্চই ভেঙে দিয়েছিল। মহাকাল নাট্যসম্প্রদায়ের নীলাখ্যান নাটকে অভিনয়স্থান ভিন্ন। লাইট বাঁধার ওপরের স্থানও ব্যবহার করেছেন। ‘প্রাচ্যনাট’ তাদের নাটকে দর্শকমধ্য প্রসারিত মঞ্চ তৈরি করেছে। ‘পালাকার’ 888sport promo codeরা নাটকে হলের করিডোর পর্যন্ত অভিনয়ে স্থান করেছে। পদাতিকসহ অনেক নাট্যদলই নাট্যগৃহের সর্বত্র অভিনয় করিয়েছে। আরণ্যক, বটতলা, সাধনা, স্বপ্নদল, লোকনাট্যদলসহ অসংখ্য দল নানাভাবে মঞ্চকে ভেঙেছে। অনেকে মঞ্চ ভেঙে পালামঞ্চ তৈরি করেছে। ‘সিএটি’ তার নাটকে লাশ ওপরে ঝুলিয়ে রেখেছে দীর্ঘক্ষণ। পেছনের সাজঘর পর্যন্ত অভিনয় স্পেস তৈরি করেছে। থিয়েটার স্কুল তাদের প্রযোজনায় ওপর থেকে চরিত্রকে নামিয়েছে-উঠিয়েছে। আরশীনগর মঞ্চের ওপর, দর্শকমঞ্চসহ চারপাশই ব্যবহার করেছে। প্রপসের ব্যবহার নিয়েও নানা নিরীক্ষা হয়েছে। 888sport appsের অসংখ্য দলই নানাভাবে মঞ্চ নিরীক্ষা করেছে এ পর্যন্ত। তবে রিজওয়ান নাটকে এমন সর্বত্রই কেউ ব্যবহার করেননি। নাটকটির ডিজাইনই যেন দাঁড়িয়েছে এমন চতুর্মাত্রিক। দর্শকের ভিউ পয়েন্টের এমন এক গোলকধাঁধা তৈরি হয়েছে। বৈচিত্র্যের বিহবলতায় বিস্মিত হতে বাধ্য।
হাজার বছরের ঐতিহ্যের ধারায় বাংলা নাটক চারদিকে দর্শকবেষ্টিত মধ্যমঞ্চে পরিবেশিত হয়ে থাকে। নিরীক্ষার নামে ঐতিহ্যের ধারা যেন অবদমিত না হয়। নিজস্বতার বিকাশ ঘটুক, এটা আমাদের সবার প্রত্যাশা। অন্তত নির্মাণ কৌশলের জন্য হলেও প্রত্যেক নাট্যকর্মীর এ-নাটক দেখা প্রয়োজন।
রিজওয়ান নাটকের টিমওয়ার্ক অসাধারণ। প্রায় তিন মাস টানা মহড়াসহ ঈদে পারিবারিক আনন্দ বিসর্জন দিয়ে যাঁরা টানা দশ দিনব্যাপী প্রতিদিন দুটো করে শো করেছেন তাঁরা নিঃসন্দেহে বড় ধরনের ত্যাগ স্বীকার করেছেন। ঈদ পারিবারিকভাবে কাটানোর রেওয়াজকে ভেঙে দিয়ে নাট্যোৎসব নিঃসন্দেহে প্রতিশ্রম্নতিশীলতার উৎকৃষ্ট প্রমাণ বহন করে। অভিনেতা-অভিনেত্রীরা সার্কাসের মতো যে ওপরে ওঠানামাসহ, ছোটাছুটি, দলগত নানা ভঙ্গিমা তৈরিসহ ঝুঁকিপূর্ণ নানা কুশলী দেহভঙ্গিতে নানাভাবে প্রাণান্তর শ্রম দিয়েও অভিনয়ে প্রাণবন্ততা ধরে রেখেছেন, তা শুধুই কৃতিত্বের নয়; রীতিমতো বিস্ময়ের। নির্দেশক প্রতিটি কর্মীর বচন-দেহ-মনের সামর্থ্যের চূড়ান্ত ব্যবহার করেছেন। প্রতিটি দৃশ্যের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম প্রতিটি কর্মই যথার্থভাবে পালন করে গেছেন। এত বড় পরিসরে জটিল বহুমাত্রিক অভিনয়ে স্থান অর্থাৎ সমস্ত এক্সপেরিমেন্টাল হলটিকেই যথার্থভাবে কুশীলবরা ব্যবহার করেছেন। প্রদর্শনীতে দৃশ্যক্রম-ঘাটতি, বিলম্ব কিংবা কোনো কিছুতেই দায়িত্বহীনতার পরিচয় পাওয়া যায়নি। তাঁরা চেয়েছেন প্রতিদিনই নতুন এক থিয়েটার তৈরি করতে। সবার মধ্যেই তাল-লয় কিংবা গতির কোনো খামতি ছিল বলে চোখে পড়েনি। উলটো নাটকে কোনো কোনো দৃশ্যে গতি নিয়েই বিশেষ কাজ ছিল। দলগত দৃশ্যায়নগুলোতে সংলাপ স্পষ্ট ছিল না। সংলাপ ও স্পেসিফিকেশনে জোর দেওয়া প্রয়োজন ছিল। টানা দশ দিন দুটি করে এত বড় হলে উচ্চৈঃস্বরে অভিনয় করার পরও যে কুশীলবরা সুমেজাজে যথার্থ অনুভূতি প্রকাশে কথা বলতে তৎপর ছিলেন, তা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। আবহ তৈরির জন্য রেকর্ডেড মিউজিক ব্যবহৃত হয়েছে। তবে মিউজিকগুলোর অধিকাংশই ছিল বিদেশি।
এ-নাটকের উৎসবের আর একটি বড় দিক হচ্ছে দর্শক সমাগম। 888sport appয় আশি-নববইরের দশকে যখন বেইলি রোডের মহিলা সমিতি কিংবা গাইড হাউসে নাটক হতো তখন নাটকের এতই দর্শক হতো যে, কখনো কখনো তিন-চার দিন আগেই টিকিট বিক্রি হয়ে যেত। তৎকালীন জনপ্রিয় নাট্যদলের হাউসফুল দর্শকে নাটক প্রদর্শনী ছিল একটি নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। 888sport app থিয়েটার, আরণ্যক, থিয়েটার, নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়সহ অসংখ্য দলের নাটকে শোর দিন টিকিট পাওয়া বাঘের চোখ পাওয়ার মতোই অনেকাংশে দুষ্প্রাপ্য ছিল। ২০০৬-০৭ সালের দিক থেকে নানা উৎসবসহ নিয়মিত নাট্যপ্রদর্শনী হয় 888sport appর 888sport live chatকলায়। কিন্তু বিভিন্ন উৎসবে কিংবা জনপ্রিয় নাট্যদলগুলোর নাটকেও সাধারণত হাউসফুল দর্শক হয় না। দীর্ঘদিন পরে ‘নাটবাঙলা’র রিজওয়ান নাটকই প্রথম প্রায় প্রতিটি শো হাউসফুল দর্শক আনতে সমর্থ হয়েছে। তাও আবার ঈদের মতো গ্রামের বাড়িফেরা ছুটির মধ্যে। দর্শক আকৃষ্টের দিক থেকে নিঃসন্দেহে নাটকটি কৃতিত্বের।
রিজওয়ান নাটকটি অত্যন্ত শৈল্পিক একটি প্রযোজনা। মঞ্চ ব্যবহারের বৈচিত্র্যে নাটকটি ঘিরে সমকালীন নাট্যমহলে যে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে তা ইতিবাচক। তবে নাটকের উপস্থাপনে যা দেখানো হয়েছে তাতে নামকরণ খুবই গোলমেলে। ফাতেমার বর্ণনায় কাশ্মিরি বিধ্বস্ত জীবন-বাস্তবতা যেখানে প্রধান, সেখানে একটি চরিত্রভিত্তিক নাম খুব সার্থকতার ইঙ্গিত দেয় না। টিকিট-পোস্টার কিংবা বিজ্ঞাপনে নাটকের নামকরণ শব্দে যেভাবে আরবি ক্যালিগ্রাফি ব্যবহৃত হয়েছে তাতে নাটক ধর্মীয় বিষয়ঘনিষ্ঠ হিসেবেই বিধৃত করে। কিন্তু প্রকৃত অর্থে নাটকে ধর্মের কোনো বিষয়ই নেই। মানবিকবোধতাড়িত নাটক। সমস্ত নাটক মিলে কাশ্মিরি বিধ্বস্ত বাস্তবতার করুণ অনুভূতির প্রচেষ্টা থাকলেও চতুর্মাত্রিক স্থান ব্যবহারে চমৎকৃত বোধই বেশি ক্রিয়াশীল। সমস্ত উপস্থাপনার চমৎকারিত্ব, বৈচিত্র্য ও সৃজনশীলতা সত্যিই বিস্ময়-জাগানিয়া। ট্রাভেল ট্রলিতে দুটি মৃতের কথোকথনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় নাটক। কোরাস শ্রেণির মাধ্যমে বিভিন্ন বিমূর্ত চিত্রপরম্পরায় নাটকটি গতিমান। নৌকা, ডাকঘর, সিঁড়ি, ফুল, মাঝি, হুইল ডান্স ইত্যাদি প্রতীকে ব্যাখ্যাত নাট্যের ভাববস্তু। নাটকে অনেক দৃশ্যই অত্যন্ত স্পর্শকাতর। নাটকের শেষে ফাতেমা ছোটভাই রিজওয়ানকে যখন বলে – ‘তুমি যদি আমার হতে, শুধু আমার। তাহলে এ-পৃথিবীর কিছুই অসাধ্য ছিল না।’ কথাটি কেন বলে একজন মুসলিমবিশ্বাসী বোন তা স্পষ্ট নয়। একধরনের অধিবাস্তবিক জিজ্ঞাসা নিয়েই নাটকের সমাপ্তি ঘটে। 888sport appsের নাট্যাঙ্গনে এটি নতুন ধারায় নতুন মাত্রার নতুন এক উপস্থাপন। নাট্যকর্মীসহ সবার জন্যই এটি এক অনন্য অভিজ্ঞতা। সর্বোপরি অসাধারণ নান্দনিক প্রযোজনা রিজওয়ান। বাংলা নাটকের উত্তরোত্তর জয় হোক। বিশ্বসভ্যে ছড়িয়ে পড়ুক বাংলা নাটক। আত্মপরিচয়ে উদ্ভাসিত হোক বাংলা নাটকের পদচারণা – এ আমাদের সবার কাম্য।


Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.