রিজিয়া রহমানের ঐতিহাসিক ও নৃতাত্ত্বিক 888sport alternative link

আফরোজা পারভীন
রিজিয়া রহমান একজন ব্যতিক্রমী কথা888sport live footballিক। আড়ালে থেকে অনেকটাই নিভৃতচারী জীবনযাপন করেন তিনি। 888sport live footballের কোনো আসর বা কোনো বক্তৃতামঞ্চে তাঁকে তেমনভাবে দেখা যায় না। তিনি বিশ্বাস করেন, লেখকের কাজ লেখা। আপনমনে তিনি লিখে গেছেন একের পর এক অনন্য বৈশিষ্ট্যপূর্ণ ভিন্নধর্মী লেখা। তাঁর প্রতিটি লেখাই আলাদা। নির্মাণভঙ্গি এবং বিষয়বৈচিত্র্য স্বতন্ত্র। এই কীর্তিমান লেখককে নিয়ে আজ আমার লেখার ক্ষুদ্র প্রয়াস।
রিজিয়া রহমানের জন্ম ওপার বাংলার কলকাতার ভবানীপুরে ১৯৩৯ সালের ২৮ ডিসেম্বর। তাঁর পারিবারিক নাম জোনাকী। পিতা আবুল খায়ের মোহাম্মদ সিদ্দিক ছিলেন চিকিৎসক। মা মরিয়ম বেগম গৃহিণী। দাদা মুন্সী আব্দুল খালেকের বইপড়ার অভ্যাস ছিল। তাঁর সেল্ফভর্তি ছিল ইংরেজি ও ফার্সি বই। বাবা সংগীত-অনুরাগী ছিলেন। এসরাজ ও বাঁশি বাজাতেন, উচ্চাঙ্গসংগীত শুনতেন। মা সায়গল, জগন্ময় মিত্র ও কাননবালার গান শুনতেন। দেশবিভাগের পর তাঁরা 888sport appsে চলে আসেন। তাঁর প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয় ফরিদপুরে। সে-সময় শখের বশে 888sport app download apk লিখতেন। ১৯৫০ সালে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ার সময় তাঁর লেখা গল্প ‘টারজান’ সত্যযুগ পত্রিকার ছোটদের পাতায় ছাপা হয়। ১৯৬০ সালে দৈনিক ইত্তেফাকের 888sport live footballপাতায় তাঁর লেখা গল্প ও সংবাদে 888sport app download apk ছাপা হয়। তাঁর প্রথম গল্পগ্রন্থ অগ্নিস্বাক্ষরা প্রকাশিত হয় ১৯৬৭ সালে। প্রথম 888sport alternative link ঘর ভাঙা ঘর প্রকাশিত হয় ১৯৬৭ সালে।
রিজিয়া রহমান অসাধারণ মানবিক শক্তিমত্তাধারী আর শেকড়সন্ধানী লেখক। তাঁর ঐতিহাসিক ও নৃতাত্ত্বিক 888sport alternative link নিয়ে আলোচনার প্রয়াস থাকবে আমার। তবে একটু ছুঁয়ে যাব তাঁর
সাড়াজাগানো 888sport alternative link রক্তের অক্ষরসহ আরো দু-একটি 888sport alternative link।
রিজিয়া রহমানের লেখার সঙ্গে আমার পরিচয় রক্তের অক্ষরের মাধ্যমেই। তারপর কাপড়ের ভাঁজ খোলার মতো তাঁর বইয়ের ভাঁজগুলো আমি খুলেছি। তাঁর লেখার বিষয়বৈচিত্র্য, অন্তর্দৃর্ষ্টি, জীবন-অন্বেষণ, ইতিহাসমনস্কতা, নৃতাত্ত্বিক বিশেস্নষণ, অতীত-অনুসন্ধান, বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর সম্মিলনে মুক্তিযুদ্ধ – আমাকে মুগ্ধ করেছে। তাঁর প্রজ্ঞা, মেধা ও জ্ঞানের গভীরতা আমাকে বিস্মিত করেছে। আর তিনি যে কত বড় মানুষ তা জেনেছি তাঁকে দেখেই। রিজিয়া আপা একদিন আমাকে বলেছিলেন, বড় মানুষ না হলে বড় লেখক হওয়া যায় না। তাঁকে দেখেই এ-কথার সত্যতা আমি পেয়েছি।
লেখার কথায় ফিরে আসি। আমার বাড়ি মফস্বল শহর নড়াইলে। বাড়িতে পড়াশোনার চল ছিল। ছিল নিজস্ব লাইব্রেরি। বাড়িতেই আমি পড়ি রক্তের অক্ষর। মনে আছে, পড়ার পর তিন-চারদিন স্থির হতে পারিনি। তার আগের ঘটনা একটু বলি। তখনকার দিনে চল ছিল টাটকা বাজার করে টাটকা খাওয়া। আমার আববা ছিলেন অ্যাডভোকেট। প্রতিদিন সকালে থলে হাতে তিনি বাজারে যেতেন। আমি অবধারিতভাবে তার সঙ্গে যেতাম। সেই যাওয়ার পথে বাঁদিকে বাজারে ঢোকার মুখে হঠাৎ করে ডানদিকে একটা জায়গা রাস্তা থেকে ঢালু হয়ে যেন গুহায় ঢুকে গিয়েছিল। সেখানে গেলেই সবাই তাদের সঙ্গে থাকা ছেলেমেয়েকে বলতেন, ‘এই ওদিকে তাকাস না।’ ওই যে ওদিকে তাকাস না, কেন তাকাব না – এই প্রশ্ন মনে ঘুরপাক খেত। তারপর একদিন আমার বন্ধু চুপিচুপি বলেছিল, ওখানে বাজারি মেয়েরা থাকে। বাজারি মেয়ে কী? তা তো জানি না। বাজারে ঢোকার মুখে থাকে বলে বোধহয় বাজারি মেয়ে বলে। ওর বুদ্ধি তো তখন আমারই মতো। এছাড়া ও কিইবা বলবে। আমার মন শান্ত হলো না। ওখানে গেলেই মন চঞ্চল হয়ে উঠত। একদিন আববার অগোচরে ঝুঁকে তাকালাম। আর তাকিয়ে দেখলাম অনেক মেয়ে একটা অপরিসর উঠোনের মতো জায়গায় বসে আছে, বিভিন্ন বয়সী। সবাই বেশ অসংবৃত চোখে রাতজাগার ক্লামিত্ম। কেউ চুল আঁচড়াচ্ছে, কেউ উকুন বাছছে। আর একজন মহিলা বুকের কাপড় উদোম করে বাচ্চাকে দুধ খাওয়াচ্ছে। সত্মনদুটো শুকনো। বাচ্চাটা প্রাণপণে টানছে, কিন্তু দুধ পাচ্ছে বলে মনে হয় না। মনে আছে, আমার খুব কষ্ট হয়েছিল সেদিন। তারপর ১৯৭১-এ মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানিরা ওই পলিস্নতেই প্রথম আগুন দিয়েছিল। ওরা অনন্যোপায় হয়ে জীবন-জীবিকার তাড়নায় ওই পেশায় এসেছে। কী ক্ষতি ওরা করেছিল পাকিস্তানিদের? সে-প্রশ্ন সেদিনও আমার ছিল, আজো আছে।
সেই বাজারি মেয়েদের নিয়ে রিজিয়া রহমান লিখলেন রক্তের অক্ষর। রাতের অন্ধকারে যারা মুখ ঢেকে ওখানে যায় আর দিনে সফেদ পাঞ্জাবি পরে দোয়া-দরুদ আওড়ায়, তাদের স্বরূপ উন্মোচন করলেন রিজিয়া রহমান। পতিতাপলিস্নর মেয়েদের আনন্দ, দুঃখ, বেদনা, হতাশা, অনিশ্চয়তা, অন্তর্দ্বন্দ্ব, অস্তিত্বের সংকট, একই সঙ্গে মুক্তির আর্তনাদ, প্রতিবাদ, দ্রোহ, আত্মবলিদান গল্পে খোদিত হলো রক্তের অক্ষরের পাতায় পাতায়। পলিস্নর মেয়েদের কষ্ট, যাতনা, ভালোবাসা, সহমর্মিতা যেমন পেলাম, তেমনি পেলাম ক্রেতা ও মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য, অত্যাচার। ইয়াসমিনের প্রতিবাদ, মেয়েদের পরস্পরের পাশে দাঁড়ানো আমাদের বাকরুদ্ধ করে দিলো। ইয়াসমিনের মুষ্টিবদ্ধ হাত আমাদের হাত মুষ্টিবদ্ধ করল। পতিতাদের গল্প প্রকাশ্যে এলো এক 888sport promo code-লেখকের হাত ধরে। সময়টাও আমাদের বিবেচনা করতে হবে। ১৯৭৮ সাল, রিজিয়া রহমানের বয়স ৩৪ বছর। তিনি ইয়াসমিন, কুসুম আর পলিস্নর অসহায় মেয়েগুলোকে এমনভাবে তুলে আনলেন যে ওদের প্রতি কোনো ঘৃণা বা অনীহার প্রশ্ন তো মনে এলোই না, মনে হলো ওরা আমাদের বোন, আমাদের ঘরের মেয়ে।
ঘর ভাঙা ঘর বস্তিবাসীর জীবন নিয়ে লেখা। শিলায় শিলায় আগুন ১৯৫৮ সালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বেলুচিস্তানের স্বাধীনতাকামী মানুষের বিদ্রোহ আর কারাতের যুদ্ধের পটভূমিকায় লেখা। বেলুচিস্তানের কাহিনির মধ্য দিয়ে তিনি পৃথিবীব্যাপী স্বাধীনতাকামী মানুষের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটিয়েছেন। একাল চিরকাল সাঁওতালদের জীবন নিয়ে লেখা। বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি যখন খনন করা হচ্ছিল তখন একজন 888sport promo code রিজিয়া রহমানকে প্রশ্ন করেছিল, তোমাদের এই খনি থেকে কি ভাত উঠবে? একথালা ভাতই যাদের আরাধ্য আর সেই একথালা ভাত যারা পায় না, সেই অমত্ম্যজ 888sport promo code-পুরুষ রয়েছেন রিজিয়া আপার লেখার বিরাট অংশ জুড়ে। জীবন-জীবিকার তাগিদে মানুষ নিজেকে বদলায়। তাকে পেশা বদলাতে হয়। শিকারি থেকে একজন সাঁওতাল কীভাবে কৃষক হলো আর কৃষক থেকে শ্রমিক – সেই ক্রমবিবর্তন উঠে এলো রিজিয়া রহমানের কুশলী কলমে। আসলে গরিব মানুষের বঞ্চনার ইতিহাস বদলায় না। সমাজ কাঠামোর জাঁতাকলে পড়ে এগিয়ে যায় একইভাবে।
সাপ্তাহিক বিচিত্রায় ছাপা হয়েছিল সূর্য সবুজ রক্ত। চা-বাগানের শ্রমিকদের জীবনের আনন্দ-দুঃখ, সংগ্রাম-বঞ্চনার গল্প। বিচিত্রার একই 888sport free betয় ছাপা হয়েছিল মহাশ্বেতা দেবীর চোট্টী মু-া ও তার তীর। মহাশ্বেতা দেবী আদিবাসীদের নিয়ে কাজ করতেন। আদিবাসীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য মামলা করে তিনি ভারডিক্টও পেয়েছিলেন। চোট্টী মু-া ও তার তীরও সাঁওতালদের জীবন নিয়ে লেখা। আমি একই সময় দুটো 888sport alternative link পড়েছিলাম। যদিও বিষয় ভিন্ন। কোনটি বেশি ভালো তা বিচার করতে পারিনি। একদিন মহাশ্বেতাদিকে বলেও ছিলাম সে-কথা।
রিজিয়া রহমানের বহুলপঠিত 888sport alternative link বং থেকে বাংলা। বিশালাকার এ-888sport alternative linkে তিনি বাংলা ভূখ–র জন্ম, জাতিগঠন, বাংলা ভাষা সৃষ্টি, ভাষার বিবর্তন থেকে শুরু করে স্বাধীন 888sport appsের অভ্যুদয় পর্যন্ত কাহিনির বিস্তার ঘটিয়েছেন। 888sport alternative linkের প্রধান দুটি চরিত্রের নামেও চমৎকারিত্ব আছে। আড়াই হাজার বছর আগের বং গোত্রের নাম থেকে বং আর এলা। এই নিয়ে বাংলা।
বং থেকে বাংলা বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জের ইংরেজ জমিদার মোরেলদের কাহিনি। মোরেলগঞ্জে তাদের আধিপত্য বিস্তার, জমিদার হয়ে-ওঠা আর শেষাবধি এদেশ ছেড়ে পালানোর কাহিনি। লর্ড কর্নওয়ালিশের ১৭৯৩ সালের চিরস্থায়ী বন্দোবসেত্মর সুবাদে ৯৯ বছরের জন্য জমি লিজ নেয় মি. মোরেল, উচ্চাকাঙ্ক্ষী স্ত্রী মার্গারেট মোরেলের প্ররোচনায়। কয়েক বছর পর মি. মোরেল মারা গেলে মিসেস মোরেল দুর্দমনীয় হয়ে ওঠেন। ছেলে রবার্ট মোরেল ও হেনরি মোরেলকে সঙ্গে নিয়ে সুন্দরবন কেটে আবাদ শুরু করেন। প্রজাদের ওপর আবওয়াব, তহরি-মহরি এমন হাজার রকম খাজনার ওপর খাজনা বসান। রূপকথাকে হার মানায় এমন বিলাসী জীবনযাপন করতেন তাঁরা। হরিণের চামড়ায় মোড়া আরামকেদারা, মাথার ওপর সারাক্ষণ টানা-পাখা দোলে। তারা হাঁটলে সঙ্গে ছাতা নিয়ে হাঁটে দাস-দাসী। দৌড়ালে তারা ছাতা নিয়ে দৌড়ায়। দাঁত মাজা, চুল বাঁধা, কাপড় পরানো থেকে সব করে দেয় দাস-দাসীরা।
দাস-দাসী মানে আমাদের দেশের মানুষ। এদেরই চাকর বানিয়ে রেখেছে তারা। পান থেকে চুন খসলে অসম্ভব রকম কঠিন শাস্তি পেতে হয়। বেতের বাড়ি ছিল সর্বনিম্ন শাস্তি। পৌষের শীতে গলাপানিতে ডুবিয়ে রাখা, সারারাত চেয়ারের নিচে মাথা দিয়ে রাখা, হাত-পা বেঁধে নাভির ওপর গরম পানির বাটি দিয়ে রাখা, চোখ-মুখে মরিচের গুঁড়া ছিটানো – এমনসব নির্মম শাস্তি আবিষ্কৃত হতো
দাস-দাসীদের জন্য, যারা একসময় এদেশের, এ-জমির মালিক ছিল। জমিদারের বশংবদ নায়েব দুর্গাচরণ আর বৃন্দাবন দাস ছিল দেশের শত্রম্ন। যেমন পাকিস্তানিদের দোসর এদেশের রাজাকার দালালরা ছিল।
ছেলে রবার্ট, হেনরি, রবার্টের বউ বারবারা সবারই এক চরিত্র। বারবারা ইংল্যান্ডের এক কৃষকের মেয়ে। এদেশে এসে সে জমিদার বনে গেছে। সে মনে করে চিৎকার করাই অ্যারিস্টোক্রেসি। ব্যতিক্রম শুধু মেয়ে অ্যানা। তাকে নিয়ে বড় দুঃখ মিসেস মোরেলের। মেয়েটাকে তিনি জমিদার বানাতে পারলেন না। অ্যানা এদেশীয় নেটিভ দুর্গাচরণের সঙ্গে কথা বলে, কথা বলে অন্যদের সঙ্গে। এটা মিসেস মোরেলসহ কারো পছন্দ নয়, এতে তাদের জাত যায়; কিন্তু অ্যানা বোঝে না, যখন রাতের আঁধারে মেইড হেনরির ঘর থেকে বেরিয়ে আসে তখন এদের জাত যায় না কেন!
প্রথম গোল বাধল বহু বছর ধরে চলে আসা কালাচাঁদ ফকির বা প্যাগান ফকিরের মেলা বন্ধ করার আদেশ দেওয়ায়। এক পাদ্রির নির্দেশে মেলা বন্ধ করার কথা প্রচার করল মোরেলরা। এ-মেলা এলাকাবাসীর ঐতিহ্য। রহিমউল্লা প্রতিবাদী যুবক, কৃষকনেতা। সে বাধা দিলো। মেলা হলো; কিন্তু কৌশলগত কারণে এ-ঘটনা ইংরেজরা মেনে নিলেও এটাকে তারা পরাজয় হিসেবে নিল। ভেতরে ক্ষক্ষাভ রয়েই গেল।
ইংরেজরা এমনই অত্যাচারী আর দাম্ভিক ছিল যে, তারা যখন রাস্তা দিয়ে যেত রাস্তা ছেড়ে দিতে হতো। একদিন হেনরির সাদা ঘোড়া হাওয়ার্ডের সামনে পড়ল জোহরার পালকি। পালকি সরাতে দেরি হয়েছিল। উপর্যুপরি বেত পড়ল পালকির ওপর। বেরিয়ে এলো জোহরা। ছিলে ছড়ানো ধনুকের মতো ঝলসে উঠল। কথা হলো হেনরির সঙ্গে। হেনরি রাগল; কিন্তু মুগ্ধ হলো। একবার যে-888sport promo codeর ওপর তার চোখ পড়ে তাকে তার চাই।
মাঝে মাঝেই জঙ্গল কেটে আবাদের জন্য সুন্দরবন যেত হেনরি। এবারো গেল আর সেখানে দুর্গাচরণের সঙ্গে পরামর্শ করে রহিমউল্লার সঙ্গে জোহরার নাম জড়িয়ে বদনাম রটিয়ে জোহরার স্বামীকে ভুল বুঝিয়ে জোহরাকে পালকিতে তুলে আনল ম্যানেজার হ্যানের বাংলোয়। আর সারারাত মদ খেয়ে চুর হয়ে জোহরাকে ভোগ করল। তার সুন্দরবন থেকে আসার সময় অ্যানের জন্য একটা হরিণশাবক আনার কথা ছিল। সে-হরিণশাবক হ্যানের বাংলোয় আছে জেনে পরদিন সকালে অ্যানা হরিণশাবক আনতে গিয়ে জোহরাকে দেখে ছেড়ে দিলো। জোহরা আত্মহত্যা করল। দাবানলের মতো জ্বলে উঠল গ্রাম। গ্রামবাসী মোরেল কুঠি আক্রমণ করল। সারারাত অনিশ্চয়তার মধ্যে কাটাল মোরেলরা। শেষাবধি রহিমউল্লার সঙ্গে সন্ধি হলো। সন্ধির অন্যতম শর্ত, হেনরিকে দেশ ছাড়তে হবে। মার্গারেট মোরেল, বারবারা, অ্যানা ইংল্যান্ডে চলে গেল। এরপরও গুপ্তচরের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত খবরে অতর্কিতে রাতে হামলা করে রহিমউল্লাকে হত্যা করল হেনরি। মোরেলদের বিরুদ্ধে মামলা হলো। হেনরি ম্যানেজার হ্যানকে নিয়ে চলে গেল গভীর জঙ্গলে। আর একটু একটু করে দুর্গাচরণ তাদের জমি কুক্ষক্ষগত করতে লাগল। এভাবে ঘটনার পর ঘটনার বিস্তার ঘটল। রবার্ট মোরেল মামলা করতে করতে নিঃস্ব হলো। এই পর্যায়ে বঙ্কিমচন্দ্র খুলনার ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট হয়ে এলেন। মোরেলদের মামলার তদন্তভার পড়ল তার ওপর। বিচার হলো ইংরেজের আদালতে। কিন্তু ইংরেজের করা আইনে বাঙালির শাস্তি হলো। রিজিয়া রহমানের ভাষায়, ‘কালো দেশে সাদা আদমীর করা আইনে কালোরাই সাজা পেলো।’ বসন্ত হওয়ায় হ্যানকে কেউ চিনতে পারল না। বোম্বেগামী জাহাজে চড়ে ইংল্যান্ডে চলে গেল। আর হেনরি মোরেল পাগল সেজে চলে গেল ইংল্যান্ডে।
ইতিহাসাশ্রয়ী এ-888sport alternative linkে ইংরেজদের এদেশের জনগণের ওপর অকথ্য বর্বরতা, 888sport promo codeলুণ্ঠন, বিলাসিতা আর বাঙালির প্রতিবাদের যে-চিত্র ফুটে উঠেছে তা অনন্য। ভাষা তীর্ষক, তরতরে, বেগবান। দু-একটি উল্লেখ না করলেই নয়।

নারকেলগাছের পাতাগুলো থেকে সাদা মুক্তোর মতো পানির ফোঁটা ঝরছে।
মানুষের আর্তনাদের বাতাসের মধ্যে দম্ভের মহিমা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে মোরেল কুঠি।
জোহরার মুখ অন্ধকারে সাদা আলো হয়ে জ্বলছে।
জোনাকির ঝাঁক আলোর ফুলের মতো জ্বলছে, নিভছে।

আমার শুধু একটা আপত্তি আছে। রহিমউল্লার একটা সংলাপ আছে, ‘মেয়োনুষের মতো কাঁদতে লজ্জা করে না।’ যে-মেয়েমানুষের বুদ্ধিতে দুর্দান্ত মোরেল সাম্রাজ্য সৃষ্টি হয় আর যে-মেয়েমানুষের আত্মাহুতির ফলেই ইংরেজের ভিত কেঁপে যায়, তাদের সাম্রাজেরে পতন হয়,
সে-মেয়েমানুষ কি শুধুই কাঁদে? তারপরও এ-সংলাপ দেওয়া হলো এমন একজন মানুষের মুখে যিনি রহিমউল্লা, কৃষকনেতা, প্রতিবাদী মানুষ। এখানেই আমার আপত্তি।
আলবুর্জের বাজের কাহিনি দশম শতকের শেষার্ধ থেকে একাদশ শতকের মধ্য পর্যন্ত বিস্ত‍ৃত। কাহিনি সুদূর মরুর দেশ দামেস্ক মাজেন্দ্রান সিরিয়া সিরাজ। যেসব দেশের কথা আমাদের অজানা। উত্তর ইরানের আলবুর্জ পর্বতমালায় শিয়া সম্প্রদায়ের একটা দল গুপ্তহত্যা, আত্মঘাতী, চরমপন্থি একটা দল গড়ে তুলেছিল। তাদের বলা হতো হাশাশিন বা হাশিশ। তারা গঠন করেছিল সুইসাইড স্কোয়াড। জেহাদি আর শহিদ হওয়ার নামে তারা অপরিণত বুদ্ধি, সুঠামদেহী বারো থেকে বিশ বছরের ছেলেদের তুলে আনত বিভিন্ন জায়গা থেকে। তারপর ওই গুহায় রেখে প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের এমনভাবে তৈরি করত যে, তারা শহিদ হয়ে বেহেশত পাওয়ার জন্য উন্মাদ হয়ে উঠত। লেখক উল্লেখ করেছেন, মার্কো পোলোর লেখা দ্য ট্রাভেলস অব মার্কো পোলো পড়ে তিনি এ-লেখায় অনুপ্রাণিত হন। মার্কো পোলো সিল্ক রুট ধরে চীনে যাওয়ার সময় আলামুত দুর্গ দেখতে পান।
এই হাশিশরা মাজেন্দ্রান থেকে তুলে আনে কারা তুগানকে। কারা তুগান এক দুর্ধর্ষ তুর্কি যুবক। বাজপাখি সামনে ছেড়ে দিয়ে ঘোড়ায় চড়ে ছোটা তার নেশা। সে যোদ্ধা, লড়াকু। সে চায় উড়ন্ত ঈগল আর দ্রম্নতগামী চিতা শিকার করতে। হাশিশরা তুলে নিয়ে যায় তার বোন গুলেআককে, মা উর্দুজাকে আর খুঁজে পাওয়া যায় না। বাবা কার্দুন চুবান তখন গিয়েছিলেন বাণিজ্যে। তাই হামলা থেকে বেঁচে যান। ঘরে ফিরে তিনি তার পরিবারের কাউকে পাননি। উন্মাদপ্রায় কার্দুন চুবান দুনিয়াব্যাপী তালাশ করে ফিরেছেন মেয়ে গুলেআক, স্ত্রী উর্দুজা আর প্রাণাধিক প্রিয় সন্তান কারা তুগানকে।
কারা তুগানকে আলামুত দুর্গে আনা হয়। দুর্গের সর্বময় ক্ষমতাধারী ব্যক্তি ‘শায়খ উল জাবান’, যাকে বলা হয় ‘সায়েদানা’ বা ‘আমাদের প্রভু’, তিনি তুলে আনা ছেলেদের মধ্য থেকে কারা তুগানকেই পছন্দ করেন। তার নাম দেওয়া হয় চাউস মেহেদি। অস্ত্রশিক্ষা, বিদ্যাশিক্ষা সবই চলে কারা তুগানের ওপর। সঙ্গে চলে হাশিশের নেশা। কিন্তু হাশিশের নেশা দিয়ে কারা তুগানকে আচ্ছন্ন করতে পারে না, পারে না বশীভূত করতে। তার মাঝে সবসময় কে যেন বলে, ‘জেগে ওঠো কারা তুগান।’ এক-একবার তাকে সায়েদানার সামনে নেওয়া হয়। প্রশ্ন করলে সে নিজের মতো করে উত্তর দেয়। ওদের শেখানো একটা কথাও বলে না। সায়েদানা বিরক্ত হয়। সায়েদানার নির্দেশে তুগানকে নিক্ষেপ করা হয় নকল বেহেশতে, যেখানে আছে নকল হুরেরা। মনজিল-ই-বুলবুল, মনজিল-ই-নূর, মনজিল-ই-ইয়াকুত নামে তিনটে বেহেশতে হুরেরা নাচে, গায়, দেহসঙ্গী হয়। আকণ্ঠ হাশিশ পান করানো হয় তুগানকে। নাচে-গানে রূপের মোহে আচ্ছন্ন করে ফেলা হয় তাকে। সেখানে নসুবা বাসিরাদের দেখা পাই আমরা। ইরানের মেয়ে এখানকার হুর দিলশাদ খাতুনের প্রেমে পড়ে যায় তুগান। দিলশাদও বুঝি তাকে ভালোবেসে ফেলে। কিন্তু এ-জীবনে দিলশাদও সুখী নয়। এক অসতর্ক মুহূর্তে নিজের কিছু বেদনার কথা বলে ফেলে সে তুগানকে। সে-কথা শুনে ফেলে গুপ্তচর। শাস্তিস্বরূপ ছালায় বেঁধে পাহাড় থেকে নিচে ছুড়ে ফেলা হয় দিলশাদকে। আরো অনমনীয় হয়ে ওঠে কারা তুগান। একদিকে পরিবার, নিজের নাম আর সঙ্গে দিলশাদকে হারিয়ে সে বেপরোয়া হয়ে ওঠে। অন্যদিকে ‘মঞ্জিলে খাতুনে’ কাজ করা প্রতিবাদী যুবক জালাল উদ্দীন মারঘেয়ীর কৌতূহল ছিল এ-দুর্গ সম্পর্কে। দুর্গকে ঘিরে এলাকায় রহস্যের জালও ছিল। অন্যদের মতো জালাল উদ্দীনকে দুধ দিতে আসতে হতো আলামুত দুর্গে। এ-দুর্গে দুধ দিয়ে সবাই যেন ধন্য হতো। দুধ দিতে এসে দুর্গে আটকে যায় জালালউদ্দীন। নানান ঘটনার মধ্য দিয়ে তার দেখা হয় কারা তুগানের সঙ্গে।
দামেস্ক নগরীর আল-খাদরা বাজারসহ বিভিন্ন স্থানে
শিয়া-সুন্নি দাঙ্গা চরমে ওঠে। হাশিশরা কোনো চিন্তাবিদ, উদ্ভাবককে সহ্য করতে পারত না। ধর্মের নামে তারা রাজনৈতিক সন্ত্রাস চালায়। প্রকৃত ইসলাম ধর্মাবলম্বীরাও এ-সন্ত্রাসের শিকার হয়। দুর্গে প্রাসাদ ষড়যন্ত্র শুরু হয়। একসময় প্রাসাদ ষড়যন্ত্রে শায়খ আর জাবালের প্রিয় দেহসঙ্গী জানজিকা বিষ দিয়ে হত্যা করে শায়খকে। আর জালাল উদ্দীন মারঘেয়ীর সহায়তায় দুর্গ থেকে বেরিয়ে আসে কারা তুগান।
বিস্ময়ের ব্যাপার এটাই যে, বেহেশতের বর্ণনা, খানাপিনা, হুর যেভাবে রিজিয়া রহমান সৃষ্টি করেছেন তাতে মনে হয় সত্যিকারের বেহেশতেই আছে কারা তুগান। বরং কারা তুগানকে তখন বোকা মনে হয়। সে-সময়ের ইরানের জীবনযাত্রা, বাসন-কোসন, কাঠের বারকোশ, জোয়ারের জাউ, ঘোল বানানোর দড়িটানা লাঠি, 888sport promo codeর পোশাক ঘাঘরা, কুর্তা, বাজুবন্দ, পোশাকে তামার মুদ্রা এত নিখুঁতভাবে এঁকেছেন, যা সত্যি অবাক করে। জানি না তিনি কতদিন, কতটা রিসার্চ করেছেন।
সংলাপের কথা আর কী বলব। বাগদাদের খলিফার সঙ্গে দেখা করা প্রসঙ্গে গালিচা-বিক্রেতার উক্তি, ‘মাটির ঢিল থেকে সপ্তর্ষিম-ল তো অনেক দূরে। আমি সামান্য এক গালিচা-বিক্রেতা আর খলিফা তো আসমানের তারা।’ দিলশাদের রূপ বর্ণনা করতে গিয়ে লিখেছেন, ‘আনারের ভেতর লুকানো গোলাপি আনার দানার মতোই আনকোরা স্পর্শহীন। বেহেশত সৃষ্টির পর থেকেই রয়েছি আপনারই প্রতীক্ষায়।’
ভিন দেশের, ভিন্ন ভাষা, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি আর দূরের অচেনা মানুষের জীবনাচারের কাহিনি বলেছেন অপরিসীম সাহসিকতায়। সার্থকও হয়েছেন। পৃথিবীব্যাপী ধর্মের নামে সন্ত্রাস আজো চলছে। আজো শহিদ হওয়ার টোপ ফেলে অসংখ্য যুবককে একশ্রেণির ধর্মব্যবসায়ী ব্যবহার করছে। সেই পরিপ্রেক্ষক্ষতে রিজিয়া রহমানের এই 888sport alternative link আজো সমানভাবে প্রাসঙ্গিক।
একটি কথা বলার লোভ সংবরণ করতে পারছি না। রিজিয়া রহমান আলবুর্জের বাজ লেখেন ২০১০ সালে। কতটা রোমান্টিক তিনি ছিলেন বা এখনো আছেন যে নকল হুর বাসিরাকে নসুবার মুখ দিয়ে বলান, ‘নাচের সময় বুকের ওপর থেকে সোনালি জরির উড়নাটা ছুঁড়ে ফেলতে ভুলবি না যেন।’
আবে রওয়াঁ মসলিনের বিস্তারের গল্প। ইছামতীপাড়ের আলাবালি গ্রামের মসলিনের সুতাকাটুনি মেয়েদের নিয়ে এ-গল্প। একইসঙ্গে এ-গল্প 888sport app শহরের বিস্তার, গড়ে ওঠা আর সারা পৃথিবীর বণিকদের মসলিন, শঙ্খ, সোরার খোঁজে 888sport appমুখী হওয়ার গল্প। আবে রওয়াঁ মসলিনের এক নাম। এমন আরো নাম আছে – বেগম খাশ, কাসিদা, শবনম, সরবতি, জঙ্গলখাস। সম্রাট জাহাঙ্গীরের বেগম নূরজাহান মসলিন পছন্দ করতেন। তিনি এক ধরনের উন্নতমানের মসলিনের নাম দিয়েছিলেন আবে রওয়াঁ। আবে রওয়াঁ মানে ‘চলমান জল’ বা ‘বয়ে চলা জল’।
আলাবালি গ্রাম জুড়ে কার্পাস ঢেউ খেলে। সখিনা মসলিন সুতার কাটুনি। সখিনার বাবা হাতেম মসলিনের নামকরা ওস্তাগর। এখন বৃদ্ধ হয়েছে। সখিনা নামকরা কাটুনি। তার হাত ঘোরে বাতাসের মতো। নিত্যপ্রসাদ সুতার ঠিকাদার। সুতা কাটে হরিসুন্দরী, কমলাসহ আরো অনেকে। নিত্যপ্রসাদ বলে, মসলিনের কাটুনিরা খানদানি, বিলের শাপলার মতো নরম, পৌষের শেষরাতের ওসের মতো আসেত্ম চলে, আসেত্ম ফিরে আসেত্ম কথা কয়। সখিনার ব্যবহারও নম্র ভদ্র বিনয়ী। জোরে কথা বললে, রাগ করলে হাত শক্ত হয়। তখন সুতা হয় সুপারির ডগার ছালের মতো।
একদিকে আলাবালি গ্রামে সখিনা সুতো কাটে আর একদিকে গল্পকার ছড়িয়ে দেন 888sport app শহরের ইতিহাস। ঢাকেশ্বরী মন্দির প্রতিষ্ঠা, বল্লাল সেন, মান সিংহ, ইসলাম খাঁ হয়ে শায়েস্তা খানের সময়ে এসে গল্প ডালপালা ছড়ায়। 888sport app তখন এক সমৃদ্ধ নগরী। সারা পৃথিবীর বেনিয়ারা ব্যবসা করতে ছুটে আসছে 888sport appয়। আসছে ফরাসি, পর্তুগিজ, স্প্যানিশ, আর্মেনিয়ান, আরব, ইংরেজ। এসেছে ফরাসি চার্লস, ইংরেজ রিচার্ড, স্প্যানিশ আলফানসোসহ আরো অনেকে। সবারই ছোট-বড় কুঠি আছে। ব্যবসার সন্ধানে ঘুরছে তারা। অনেকে ব্যবসা করে ফুলেফেঁপে উঠছে। ব্যবসার মূল লক্ষ্য মসলিন। সঙ্গে আছে তামা, কাঁসা, পিতল, শঙ্খ, সোরা, সুপারি। মসলিন এক ভুবনমোহিনী বস্ত্র, যেন কুয়াশা, অধরা, এতই সূক্ষ্ম।
শায়েস্তা খানের আদরের মেয়ে পরীবিবি। তার খাস বাঁদি আসমানি। মহলের সবচেয়ে বয়সী বাঁদি গোলাপবাহার। আসমানি চটপটে, সুন্দর, সে নেচে-নেচে চলে। তার গায়ের রং ফর্সা, চোখের রং বাদামি। আসমানির ধারণা, এজন্যই পরীবিবি তাকে পছন্দ করে। ও চায় সবসময় আমোদে-আহ্লাদে থাকতে। চকবাজারের বাঁদির হাট থেকে তাকে কিনে এনেছিল নহবতখানার শায়ের খোদাবখশ একটা সিক্কা আর পঞ্চাশ দামড়ি দিয়ে। সেজন্য তার কোনো দুঃখ নেই। অতীত তাকে টানে না। পরীবিবি হাসলে ওর মন ভালো হয়ে যায়, পরীবিবির মন খারাপ হলে ওর মন খারাপ হয়। পরীবিবিই যেন ওর অস্তিত্ব। দিলিস্ন থেকে পয়গাম আসে শাহজাদা আজমের সঙ্গে পরীবিবির বিয়ের। সেই পয়গামের খানাপিনার দিন নওয়ারার বহরে আলো সাজানো হয়, আতশবাজি পোড়ে। গজলের মুশায়েরা বসে। সেদিন পরীবিবি আসমানিকে একটা মসলিনের কুর্তা দেয়। সে-কুর্তা পরে একদিন শায়েস্তা খানের খাস খাতুনের সামনে পড়ে গিয়েছিল আসমানি। খাতুন তাকে অনেক গালাগাল করেছিল। আর খানাপিনার দিন সেই কুর্তা পরেই অতিথিদের শরাব দিয়েছিল আসমানি। সেদিন সবাই বিরূপ হলেও শায়েস্তা খান তাকে প্রশ্রয় দিয়েছিল।
ওদিক কুট্টিপাড়ার সুলতানের ইচ্ছা পরিব্রাজক হওয়ার। তার বাবা মোরগের খেলা দেখায় আর মা নান বেচে। সুবেদার আজম যখন জাহাজ থেকে নামে কুট্টিপাড়ার সুলতান সেখানে গান গায়। নানা হাত ঘুরে নিজের অজামেত্মই সে জড়িয়ে যায় গুপ্তচরবৃত্তিতে। নির্মমভাবে হত্যা করা হয় তাকে। শাহজাদা আজমকে বিয়ে করার ইচ্ছা ছিল না পরীবিবির। কিন্তু ইচ্ছা না থাকলেও রাজি হতে হয়েছিল তাকে। পরীবিবি আসমানিকে বলেছিল, ‘নবাবের মেয়েদের নিজের ইচ্ছেয় বিয়ে হয় না, বিয়ে হয় তখতের ইচ্ছেয়।’
খোদাবখশ আসমানিকে কন্যাসম আদর করত। সে তাকে একটা কাঁঠালচাঁপার চারা দিয়েছিল। সে-কাঁঠালচাঁপার ফুলের গন্ধ নিতে গিয়ে শায়েস্তা খান আর তার ছেলে বুজুর্গ উমীদ খানের সামনে পড়ে যায় আসমানি। ছেলেরা তাকে শাস্তি দিতে তৎপর হলে এবারও শায়েস্তা খান তাকে বাঁচিয়ে দেয়। বরং বলে, ও হচ্ছে গুলদস্তানি চম্পা, চম্পাবিবি। এরপর এক রাতে তার কাছে খানচা ভরে মসলিন আর অলংকারাদি আসে। গোলাপবাহার তাকে ডেকে তুলে গোসল করায়। সেই রাতে শায়েস্তা খান তাঁর মহলে আসমানিকে দাওয়াত দিয়েছে। আসমানি আর জাবেল পরস্পরকে ভালোবাসত। জাবেলের সামনে দিয়েই শায়েস্তা খানের কামরায় ঢুকে পড়ে আসমানি। সে এখন আর আসমানি নয়, সে গুলদস্তানি চম্পা। জাবেলের মোবারকবাদের জবাবে সে বলে যায়, ‘শোন জাবেল, আমি আর আসমানি নই, পরীবিবির নাদান বান্দি নই। আমি এখন চম্পা, চম্পাবিবি। আসমানি কুরবান হয়ে গেছে।’
সে-সময় 888sport app শহর মাতানো বাঈ রওশন বিভিন্ন বিদেশি বণিকের নানান সমস্যার মধ্যস্থতা করত টাকার বিনিময়ে। সুবেদার আযম ফরাসি পণ্যের জাহাজ শীতলক্ষ্যায় আটকে দিয়েছিল। বিদেশি বণিকদের মসলিনের দাদন নেওয়া আর নিজস্ব ফ্যাক্টরিতে মসলিন তৈরি বন্ধের উদ্যোগ নেয়। একে তো ‘সওদায় আম’, ‘সওদায় খাস’ এসব কর ছিলই, তারপর এই ব্যবস্থায় ক্ষতিগ্রসত্ম বণিকরা রওশন বাঈয়ের দ্বারস্থ হয়। দিনে দিনে রওশন বাঈয়ের লোভ-লালসা বেড়ে যাচ্ছিল। দুর্মর হয়ে উঠছিল সে। তাই একদিন শায়েরার আয়োজন করে তাকে ডেকে আনা হয় সুবেদারের বজরায়। আর সে-বজরা থেকে নদীতে ফেলে দেওয়া হয় তাকে।
অন্যদিকে ইংরেজদের বজরার সামনে পড়ে যাওয়াতে সখিনাকে জরিমানা করে ইংরেজরা – এক সিক্কা আর দুখানা কাসিদা। জরিমানার হাত থেকে সখিনাকে বাঁচাতে পারে না হরিপ্রসাদ। তবে কিছুটা সময় নিয়ে দেয়। অনেক কষ্টে হাতেম সেই মসলিন বোনে। প্যাঁটরা থেকে বের করে মসলিন দেখছিল সখিনা। তখনই ঝড় ওঠে। ঝড়ে ঘরের চালা ভেঙে যায়। সে-ঝড়ে উড়ে যায় সখিনা, পরির মতো ডানা মেলে উড়ে যায় মসলিন। ঝড়ের পর এক চর থেকে ফরাসি বণিক চার্লসের নাবিকরা তাকে উদ্ধার করে। তখন তার শরীরে কোনো কাপড় ছিল না। তবে উদ্ধারের পর দেখা যায় তার শরীরে লেপটে আছে একখ- স্বচ্ছ মসলিন। সেই মসলিনখ- চার্লসকে দিয়ে দেয় সখিনা। বলে, ‘এটা আমার। এর নাম আবে রওয়াঁ।’ ডেকে দাঁড়িয়ে সেই বহুমূল্য মসলিন দেখার সময় বাতাসের ঝাপটায় হাত থেকে উড়ে বুড়িগঙ্গায় পড়ে ডুবে যায় সে-মসলিন।
যে-মসলিনকে ঘিরে সারা পৃথিবীতে আমাদের পরিচয় সেই মসলিনের কারিগরদের দুঃখী, অভাবী, কষ্টকর জীবনের চিত্র এঁকেছেন রিজিয়া রহমান। একই সঙ্গে তুলে এনেছেন নবাবদের ভোগ-বিলাসিতা, স্বেচ্ছাচারিতা, মানব-অবদমন ও নৃশংসতার চিত্র। তাঁর এ-888sport alternative linkের মাধ্যমে অনেক অজানা কথা আমরা জানতে পেরেছি। জানতে পেরেছি ডাকপাড়ুনিদের কথা। যারা ডেকে ডেকে ঘুম থেকে তুলত সুতাকাটুনিদের।
পবিত্র 888sport promo codeরা 888sport alternative linkে পাহাড়ি আদিম এক জনপদে 888sport promo codeর শাসন, একইসঙ্গে 888sport promo codeর অপমানও দেখানো হয়েছে। সিঞ্জিনা গোত্রপ্রধান। তার আদেশ-নির্দেশেই চলে গোত্র। তার কথার ওপর কথা বলার সাহস কারো নেই। একইভাবে গোত্র রক্ষা করার দায়িত্বও তার। গোত্রের মানুষের খাবার-দাবার-পোশাকের ব্যবস্থা করার দায়িত্বও তার। অপদেবতা ভূত-প্রেত-দস্যু-দানো থেকে তাদের রক্ষা করার দায়িত্বও তার। আর তা যদি সে না করতে পারে গোত্রে বিদ্রোহ হবে। তাকে হত্যা করবে গোত্রের মানুষ। ছুড়ে দেবে চিতাবাঘের সামনে। আবার এই গোত্রপ্রধান 888sport promo code গোত্রের সব পুরুষের। সব পুরুষই ভোগ করতে পারবে তাকে। জন্ম দেবে অনেক সন্তানের। বাড়াবে গোত্রের জন888sport free bet। এমনই এক আদিম গোষ্ঠীর গল্প পবিত্র 888sport promo codeরা। রুমিতা পনেরো বছরের এক অপূর্ব সুন্দরী বুদ্ধিমতী মেয়ে। তার বাবা কে, তা জানে না সে। তবে তার মা একবার বলেছিল, তার বাবা হান। কেন জানি হানকে দেখলে তার বাবা বাবাই মনে হয়। হানও তাকে আগলে রাখে। বাবার স্নেহ, ভালোবাসা পাওয়ার পিপাসা রুমিতার মধ্যে আছে। সে অসম সাহসী। একবার মৌচাক ভাঙতে গিয়ে বিপদে পড়েছিল। হানই তাকে উদ্ধার করেছিল। সেদিন রুমিতাকে দেওয়া হয়েছিল বীরের মর্যাদা। ডংকা বাজানো হয়েছিল তার জন্য।
কয়েক বছর ধরে তীব্র শীত পড়ছে এই এলাকায়। জমিয়ে রাখা খাবারে টান পড়েছে। অনেক মানুষ মারা গেছে। অনেককে ছুড়ে ফেলতে হয়েছে নিচে চিতাবাঘের সামনে। তাই সিঞ্জিনার ইচ্ছা দক্ষিণের চিরবসমেত্মর দেশের দিকে যাত্রা করার; কিন্তু কোনোভাবেই সেটা কার্যকর করতে পারছে না। তার মধ্যে মৃত্যুভীতি ঢুকে গেছে। সে যদি এদের খাবার দিতে না পারে, বাঁচাতে না পারে এরা তাকে বাঁচতে দেবে না। তাই সিঞ্জিনা তখন মনে মনে ঠিক করে, সে আর গোত্রপ্রধান থাকবে না। রুমিতা প্রচ- সাহসী। সে বনে-জঙ্গলে গিয়ে মধুর চাক ভেঙে খাবার জোগাড় করে। ভয়ডর কম তার। তাকেই সে গোত্রপ্রধান বানাবে। সে-কথা সে রুমিতাকে বলে। শিখিয়ে দেয় ঘোষণার দিন দক্ষিণে যাওয়ার কথা বলতে।
একদিন খাবার সংগ্রহ করতে গিয়ে রুমিতা দেখে, পাহাড়ের গা বেয়ে কতগুলো ঘোড়াকে তাড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে এক লোক। প্রথমে মনে করেছিল চোখের ধাঁধা; কিন্তু একসময় সে বোঝে ঠিকই দেখেছে; কিন্তু কথাটা সে কাউকে বলে না। একে একে ওই ঘোড়সওয়ারকে ঘোড়া, বুনোগাই তাড়িয়ে নিয়ে যেতে দেখে আরো দু-একজন। বিষয়টা জানাজানি হয়। সিঞ্জিনা একদিন ভূত-প্রেতকে সন্তুষ্ট করার জন্য পুজোর আয়োজন করে। তার আগেই সে রুমিতাকে সব বুঝিয়ে রাখে। আর সেই পুজো শেষে সে ঘোষণা করে, এর পরের গোত্রপতি রুমিতা। রুমিতা তখন মদের নেশায় চুর। নেশাগ্রসত্ম অবস্থায় সে বলে, তারা যুদ্ধ করবে ওই ঘোড়সওয়ারদের বিরুদ্ধে। আর তা না পারলে দক্ষিণে যাত্রা করবে। দক্ষিণে যাওয়ার কথা ছিল; কিন্তু ঘোড়সওয়ারের বিরুদ্ধে যুদ্ধের কথা ছিল না। সিঞ্জিনা রুমিতাকে থামানোর চেষ্টা করে, পারে না। রুমিতা তখন উন্মত্ত আর সবার নজর রুমিতার দিকে। ততক্ষণে পুরুষদের মধ্যে বলস্নম খেলা শুরু হয়ে গেছে। এ-খেলায় যে জিতবে সে-ই আজ রুমিতাকে পাবে। সিঞ্জিনার মনে হয় সে গোত্রের ক্ষতি করেছে। যে গুপ্ত দরজা এই গোত্রের মানুষকে সুরক্ষেত রাখে, সেই দরজার পাথর সরিয়ে নিচে ঝাঁপিয়ে পড়ে সিঞ্জিনা। আর সঙ্গে সঙ্গে একটা চিতাবাঘ লাফিয়ে পড়ে তার ওপর। হান তাকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেও পারে না। অনেক কৌশল করার পর ওরা দক্ষিণে যাত্রা করে, রুমিতারা। কিন্তু পথে সেই ঘোড়সওয়ার বাহিনীর দ্বারা আক্রান্ত হয়। ওদের সবকিছু লুটে নেয় ওরা। ধর্ষণ করে মেয়েদের। রুমিতাকেও ধর্ষণ করে হত্যা করে। ওকে পাহাড়ের ওপর থেকে নিচে ছুড়ে ফেলে। আসেত্ম আসেত্ম ওর হাতের বর্শাটি বরফের নিচে 888sport app পড়ে। অর্থাৎ শেষ হয়ে যায় 888sport promo codeশক্তি।
রিজিয়া রহমান অসামান্য দক্ষতায় এই আদিম গোষ্ঠীর জীবনযাত্রা, পোশাক-আশাক, খাবার-দাবারের বর্ণনা দিয়েছেন। বাজপাখির ঝলসানো মাংস, চমরী গাইয়ের চামড়ার পোশাক। লোম দিয়ে বোনা চাদর। বাজপাখির ঝালর দেওয়া মুকুট। হরিণের হাড়ের অলংকার, হরিণের পায়ের হাড় দিয়ে বানানো ঢোলে বাড়ি দেওয়ার লাঠি – এমন আরো অনেক কিছু। বলস্নম, পাথর ছোড়ার দড়ি, ঘাসে বোনা ফাঁদ, মশাল, শিকারে যাওয়ার আগে শিকারিদের মঙ্গলের জন্য আগুন-দেবতার পুজো করা, শিকারের ছবি আঁকা, সবই ফুটে উঠেছে নিপুণভাবে। আগুন এদের দেবতা। তাই সারাক্ষণ আগুনের কু- জ্বেলে রাখে এরা। বিপদে পড়লে সাংকেতিক শব্দ ব্যবহার করে।
রিজিয়া রহমান তাঁর এই ইতিহাসাশ্রয়ী ও নৃতাত্ত্বিক 888sport alternative linkগুলো রচনা করেছেন ইতিহাস এবং নৃতত্ত্বের ওপর ভিত্তি করে; কিন্তু এগুলো ইতিহাস বা নৃতত্ত্ব নয়, 888sport alternative link। আর সেই 888sport alternative link বয়নে তিনি দারুণভাবে সার্থক। কাহিনি, সংলাপ, বুনন, শায়ের, গজলসহ সবকিছুতেই তিনি সময়কালকে ধরে রাখার চেষ্টা করেছেন। এ-888sport alternative linkগুলো তাঁর অসামান্য মেধা, বোধ, সৃজনশীলতা ও অনেক পড়াশোনা এবং কঠিন গবেষণার ফসল।
রিজিয়া রহমানের এই 888sport alternative linkগুলো বাংলা 888sport live footballে এক বিরল সংযোজন। আমার বিশবাস, এ-লেখাগুলো তাঁকে অমরত্ব দেবে।