রিমঝিম মাংসবিতান

রিমা-তরিক সদ্যবিবাহিত দম্পতি। নানা বিষয়ে তাদের অদ্ভুত মিল। এই মিলই হয়তো তাদের সম্পর্কটাকে সংসারে গড়িয়েছে। তবে সংসারের ব্যঞ্জনে একটু লবণ যেমন প্রয়োজন, তেমনি অমিলও দরকার পড়ে হয়তো কিছু। তাই আমরা দেখি দুজনের মধ্যে কিছু ব্যবধান মেরুসমুদ্রের মতো জাজ্বল্য। এই যেমন মাংস প্রসঙ্গে স্বামী-স্ত্রী দুজনের অবস্থান। মাংস যে তারা খুব ভালোবাসে তা নয়, তবে সপ্তাহে দু-একদিন তো খাওয়া পড়েই মাংস। তরিক মাংস-সংক্রান্ত কোনো ঝামেলায় যেতে চায় না। মীনাবাজার কিংবা স্বপ্ন থেকে রেডি মাংস প্যাকেট করে এনে ফ্রিজে রেখে দেওয়ায় স্বস্তি তার; কিন্তু রিমার তাতে ঘোর আপত্তি। মাংসে যদি রক্ত না থাকে তবে তা আর মাংস কিসে! দুজনের এই নিয়ে খিটিমিটি প্রচণ্ড। এক শুক্রবার সকালে শান্তশিষ্ট রিমা তো মাংস ইস্যুতে ধারণ করল তুমুল অগ্নিমূর্তি। বেসরকারি চাকুরে দুজনেরই সাপ্তাহিক বন্ধ শুক্রবার। এদিনটা একটু আয়েশ করে বাজার করে তরিক। আর রিমা কি-না তার আনা মাংসের প্যাকেটটা ছুড়ে ফেলে দিলো রাগে।

‘কতবার বলেছি তোমাকে এসব ডিজিটাল মাংস এক্কেবারে অপছন্দ আমার।’

তরিক তখন সদ্যবিগত অবিবাহিত প্রেমের 888sport sign up bonus রোমন্থন করে শোনায় রিমাকে, ‘একদিন আমার আঙুল কেটে সামান্য রক্ত বেরোনোয় তুমি আঁতকে উঠেছিলে আর আজ রক্ত ছাড়া মাংস তোমার তৃপ্তি জোগাতে পারছে না!’

রিমা তাতে খুব একটা 888sport sign up bonusসিক্ত না হয়ে বলল, ‘কিসের মধ্যে কী! তোমার গায়ের রক্ত আর গরুর রক্ত এক হলো নাকি?’

তরিক আর কথা বাড়াল না। কিন্তু রিমা ছেড়ে দেবে কেন! তরিকের আনা সাফসুতরো মাংসটা রান্নায় চাপাতে চাপাতে নিজের বিরক্তি প্রকাশ করতে লাগল সারাদুপুর।

কবি আহমেদ তরিক সোফায় বসে বসে চোখ বুজে ভাবে মাছ, মাংস ও মাৎসর্যের নানাবিধ রূপকথা। চোখ বন্ধ করতেই হালকা ঘুমমতো আসছিল
আর ঘুমের ভেতরমহলে মুহুর্মুহু হানা দিলো মাংসকেন্দ্রিক 888sport app download apk-পরিরা। জীবনানন্দ দিয়ে যার শুরু, তা বিস্তার পায় অধুনাতন বাংলা 888sport app download apkর বিশিষ্ট সব কণ্ঠস্বরে :

তবু কথা রাখেনি বরুণা, এখন তার

বুকে শুধুই মাংসের গন্ধ

এখনো সে যে কোন 888sport promo code!

সুনীলের এটুকু মাথায় আসতে বরুণাকে রিমা মনে হতে থাকে তরিকের।

একটি সোনার সিংহাসনকে দেখলাম

কুষ্ঠরোগীর মাংসের মতো গলে গলে পড়তে।

শামসুর রাহমানের 888sport app download apk মনে হতেই এই সময়, সংসার সবকিছু নিয়ে বিবমিষা তৈরি হয়। সত্যি তো, কুষ্ঠরোগীর মাংসের মতো সব গলে গলে পড়ছে ভীষণ।

ফুলের পোশাকে 888sport app শরীর, দারুণ মাংসভুক পাখি,

ওই শকুন, ওই হিংস্র গোপন নোখ জুড়ে থাকা শত্রু-

স্বভাব,

আমাদের দিন থেকে খেয়ে যাবে প্রিয়তম রোদের মাংস।

রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর 888sport app download apk-টুকরো ব্যক্তিগত বেদনার মধ্যেও ভুলতে দেয় না বৃহৎ মানুষের কথা। তরিকের মনে পড়তে থাকে জাতির পতাকা আর অস্তিত্বের মাংসভুক শকুনের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়-জীবনের ঝাঁঝাল মিছিল-দুপুরের কথা। আবার তো ওরা ইতিউতি তাদের ঘাতক ঠোঁট শানাচ্ছে – এই ভাবনায় একটু হতাশা আসতেই মনে পড়ে শহীদ কাদরীর 888sport app download apk –

মাংস, মাংস, মাংস … মাংসের ভেতরে শুধু

দৃঢ়মুখ সার্জনের রূঢ়তম হাতের মতন

খুঁজে নিতে হবে সব জীবনের রাঙা দিনগুলি…

হুম, যে যাই বলুক – মাংসের ভেতর থেকে ফুটে বেরিয়ে আসবেই জীবনের রাঙা দিনগুলি।

888sport app download apkর আশ্লেষে স্পৃষ্ট হতে না হতে বউয়ের ডাকে ভাঙে তরিকের অসময়ের ঘুম।

‘রান্না রেডি, গোসল করে খেতে বসো।’

যথাআজ্ঞা রিমা।

খেতে খেতেই প্রসঙ্গটা তোলে তরিক, ‘বুঝলে, আমি ভাবছি বাংলা 888sport live footballের মাংসময় সব 888sport app download apk এক করে একটা সংকলন করব। আর বইটা উৎসর্গ করব তোমাকে। উৎসর্গপত্রে লেখা থাকবে –

রিমাকে,

রক্ত ছাড়া মাংস যার ঘোর অপছন্দ।’

এতক্ষণের ঝগড়াখিন্ন মন হঠাৎ হাসিতে ভরে উঠল। ‘আর কোনো কাজ পেলে না… 888sport app download apk লেখো ভালো কথা। তাই বলে মাংস নিয়ে 888sport app download apk, তা নিয়ে আবার বই! লোক হাসাবে তো তুমি। এইটা আবার একটা 888sport app download apkর বিষয় হলো নাকি।’

‘কেন কেন, নয় কেন? একতাল রক্তমাংসের কাঠামোতেই তো দাঁড়িয়ে আছি আমরা সবাই। মানুষ আর 888sport app অনেক প্রাণী লাল রক্তেমাংসে গড়া আবার গাছপালার থাকে সবুজ রক্তমাংস। আকাশ-নদী-পাতাল সবকিছুরই নিজস্ব রক্তমাংস আছে। এ-বিষয়টা 888sport app download apkতে আসতে ক্ষতি কী?’

রিমা মাংসের ঝোলমাখা ভাতের শেষ লোকমাটা মুখে নিতে নিতে বলল, ‘কী জানি বাপু। অতশত বুঝি না; কিন্তু বলছি এই প্রজেক্ট ছাড়ো। আর সামনেরবার থেকে তুমি কিন্তু রক্তওয়ালা মাংস আনবে। ওই যে গলির মুখে একটা দোকান আছে – ‘রিমঝিম মাংসবিতান’। ভালো মাংস পাওয়া যায় ওখানে।’

আরে কী চমৎকার নাম – ‘রিমঝিম মাংসবিতান’। দোকানটা দেখেছে তরিক; কিন্তু এর আগে নামটা গভীরভাবে খেয়াল করেনি। দোকানটাতে যেতে হবে তবে। রিমার ফরমায়েশমাফিক রক্তওয়ালা মাংস কিনতে তো বটেই, সেই সঙ্গে নামটার পূর্বসূত্রও জানতে হবে।

উৎসাহ চাপা রাখতে না পেরে রাতেই দোকানটার দিকে গেল। তবে ঝাঁপ বন্ধ দেখে ফিরে এলো বাসায়।

রাত-গভীরে ঘুমের প্রহরে রক্তমাংসের রিমাকে জড়িয়ে ধরলে কেবল দূর-স্বপ্নলোকের, অতি-স্বপ্নলোকের শেহরজাদির কথা মনে হতে লাগল তরিকের। পুরাকালের সেসব রক্তমাংসের 888sport promo codeরা পচে-গলে ভূতিনী হয়ে যেন আজ নিশ্চুপ রাগিণীর মতো রিমার রূপে আলতো জেগে উঠছে তরিকের মনের মঞ্জিলে। বিড়বিড় করে স্বগতোক্তির মতো কী যেন বলছিল সে। রিমা বিরক্ত হয়ে ওর হাত ছাড়িয়ে পাশ ফিরে ঘুমোতে গেল।

না, ঘুম আসছে না। 888sport app download apk আসছে। আর মনে হচ্ছে এখনই না লিখলে ছুটে যাবে। কিন্তু বিছানা থেকে উঠতেও মন চাচ্ছে না। অগত্যা মোবাইলে ড্রাফট লিখতে লিখতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়ল। সকালে ঘুম ভেঙে 888sport app download apkটায় চোখ বুলোতে গিয়ে দেখে মাঝরাতেও মাংস হানা দিয়ে গেছে অক্ষরের আকারে। না হয় কেন লিখবে সে এমন মাংসভারাতুর 888sport app download apk –

যেদিকে কসাইখানা,

সেদিকেই ফুলের বাজার।

রক্ত আর পাপড়ির পাহাড়।

প্রতিদিন ওদিকে যাই।

ব্যাগ ভরে কিনে আনি

মাংস ও গোলাপ।

খবরের কাগজেও তো

একদিন খুনখারাবি

আরেকদিন গণধর্ষণ।

কিন্তু আমি রোজ মাংস খাচ্ছি,

গোলাপের গন্ধ শুঁকছি।

 

মাংসে-গোলাপে সফল হচ্ছে

মানুষজীবন।

888sport app download apkটি মোবাইলের ড্রাফট থেকে ল্যাপটপে তুলতে গিয়ে রিমাকে পড়ে শোনাতে ইচ্ছে করছিল; কিন্তু সে তো তখনো ঘুমে নিঃসাড়। যেন সাদত হাসান মান্টোর গল্পের মতোই ঠান্ডা গোশতের পাহাড় … মুহূর্তেই একটা কোলাজ খেলে গেল মনে – ঈশ্বর সিং, কুলবন্ত কাউর, লুটতরাজ আর খুনখারাবির শহর, পরপর ছয়জনকে নিজ
কৃপাণে খুন করা রোমহর্ষক জবানবন্দি দিতে থাকা ঈশ্বর সিং। ঘুমন্ত রিমাকে সামনে রেখে তরিক নিজেই যেন একবার কুলবন্ত আর একবার ঈশ্বর সিং হয়ে যায়।

মান্টোর গল্পের শেষ লাইনটা ভূতগ্রস্তের মতো অধিকার করে বসে তরিককে –

তখন তার হাত বরফের চেয়ে অধিক ঠান্ডা, যেন ঠান্ডা গোশত।

মানুষ 888sport app download apkর লাইন বা গানের চরণ মুখস্থ রাখে আর আমাদের তরিকের এই গল্পটা যেন মুখস্থ হয়ে যায় পুরোটা, নিদ্রিত রিমার সামনে দাঁড়িয়ে আওড়াতে থাকে বারবার।

‘ঠান্ডা গোশত’ এই শেষ শব্দটা কানে যেতেই রিমার ঘুম ভাঙে। হাসতে হাসতে বলে, ‘হুঁ, দিন যত যায় তত বউ বরের কাছে ঠান্ডা গোশতই হয়ে যায়। তখন পুরুষেরা উষ্ণ রক্তমাংসের সন্ধানে দূরাগত সাইবেরিয়ার শীতের পাখির মতোই এদিক-সেদিক ঘুরে বেড়ায়। তোমারও কি তাই হলো নাকি?’

রিমার কথায় একটু লজ্জাই পেল যেন তরিক। উত্তরে কৈফিয়ত-জাতীয় কিছু বলার আগেই রিমার প্রাভাতিক নির্দেশ কানে আসে ‘ফ্রেশ হয়ে রেডি হও। নাশতা বানাচ্ছি। ছুটির দিন শেষ, অফিস যেতে হবে তো আজ।’

অফিসের জন্য রেডি হয়ে চা খেতে খেতে টিভিতে চোখ রাখার অভ্যাস তরিকের। ওই একটু সময়ই টিভি দেখার ইচ্ছা হয় তার। বিদেশি এক চ্যানেলে দেখাচ্ছে একটা ডকুমেন্টারি। কোনো এক জায়গায় মানুষ মানুষকেই বন্দি করে পর্যায়ক্রমে হত্যা করে খুবলে খায় মানুষেরই মাংস। আতঙ্কে সকালের চা-টা শেষ করতে পারে না তরিক। রিমার চোখে পড়ে ব্যাপারটা। চ্যানেলটা পালটে বলে, ‘এতে অবাক হওয়ার কী আছে! এদেরকে সভ্যতাবিবর্জিত ভাবছ আর যারা দেশে দেশে যুদ্ধ বাধিয়ে মানুষ মারছে তারাও কি কম মাংসখেকো? মানুষকে মানুষ না, বরং মাংসের পুতুল ভাবলেই নির্বিকার যুদ্ধ বাধিয়ে মানুষ মারা যায়।’

হঠাৎ রিমার মুখে দার্শনিক কথাবার্তা শুনে ভালো লাগল তরিকের। সত্যিই তো, এই সিস্টেমে আমরা তো মাংসের পুতুলের বেশি কিছু না। অফিসে যেতে যেতেই খালি চোখে ভাসছিল ম্যান-ইটার মানুষদের হিংস্র আর শিকারে পরিণত হওয়া মানুষদের নিরীহ-অসহায় মুখমণ্ডল।

বাসা থেকে বেরিয়ে অফিসের গাড়ি মিস করে ধরতে হলো পাবলিক বাস। তাও আবার সিট খালি ছিল না। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বাস888sport slot game তরিককে মনে করিয়ে দিলো কৈশোরকালে প্রতিবেশী নাদিমের বাবার বলা গল্পটা। কয়েক বছর বিদেশ বাস করে দেশে ফিরে প্রতি সন্ধ্যায় তিনি ছেলেমেয়েদের শোনাতেন প্রবাসের গল্প। দূর-পৃথিবীর গন্ধ পেয়ে তরিকও যেত গল্প শুনতে। একদিন তিনি বলছিলেন সেই গা শিউরে-ওঠা মাংসের গল্প। হোটেল ব্যবস্থাপনার কাজে ছিলেন তিনি। মাঝরাতে এক কাস্টমারকে খাবার দিতে গিয়ে বাবুর্চির চিৎকারে ছুটে গেলেন রান্নাঘরে। গিয়ে দেখেন, মাংসের বিশাল হাঁড়িতে ভাসছে মানুষের একটা আস্ত আঙুল। বাবুর্চি ভয়ে অজ্ঞান।

নাদিমের বাবা বললেন, ‘ওই দৃশ্য দেখে আমিও অসুস্থ হয়ে পড়লাম। হোটেলের কাজ ছেড়ে দিলাম সে-রাতেই। হতে পারে অপঘাতে মরা কোনো মানুষের লাশ অদৃশ্য করে দিতে খুনিরা টুকরো টুকরো দেহের বিভিন্ন অংশ ছড়িয়ে দিয়েছিল বিভিন্ন জায়গায়।’

সেদিনের সেই গল্প এক ভয়ংকরের মুখোমুখি করেছিল কিশোর তরিককে। আজ এতো বছর পর বাসে দাঁড়িয়ে অফিস যেতে যেতে আবার সে-গল্প মনে হয়ে বমি পেতে লাগল। কোনোমতে চেপে রেখে অফিসের কাছাকাছি স্টপেজে নেমে পড়ল বাস থেকে। অফিসের কাজেও সারাদিন মন বসল না।

পরের কয়েকটা দিন এভাবেই ঢিমেতালে গড়িয়ে গেল।

আবার ছুটির দিন। মাংস কেনার দিন।

রিমঝিম মাংসবিতানে যাওয়ার কথা ভুলেই গিয়েছিল তরিক। আজ আর রিমার নির্দেশনার অপেক্ষায় না থেকে সকাল সকাল নিজেই গেল গলির মোড়ের সেই মাংসের দোকানে। ছুটির দিনে বেজায় ভিড়। অপেক্ষায় থাকে তরিক ভিড় কমার, কারণ সে তো শুধু মাংস কিনবে না, দোকানটার নাম-রহস্যও জানতে চাইবে দোকানির কাছে। ভিড় কমলে দোকানি নিজেই ডাকল তরিককে, ‘ভাই মাংস লাগবে নাকি। টাটকা মাংস কিন্তু।’

তরিক এগিয়ে গিয়ে পছন্দমতো মাংস কিনল। টাকা দিতে দিতে বলল, ‘ভাই, একটা প্রশ্ন ছিল। আপনার দোকানের নামটা কী ভেবে দেওয়া?’

হঠাৎ দোকানির হাসিমুখ চেহারা পালটে গেল। বিমর্ষ চোখে-মুখে, জড়ানো গলায় বলল, ‘ভাই সে-কথা আর বইলেন না। আমার একমাত্র মাইয়াটার নাম রাখছিলাম রিমঝিম। মাংসের তরকারি ওর খুব পছন্দ ছিল। বারো বছর বয়সে ডেঙ্গু জ্বরে মারা গেল মাইয়াটা আমার। মরার আগের দিনে মাংস খাইতে চাইছিল খুব; কিন্তু ওষুধপত্র কিনতেই হিমশিম খাইতেছিলাম তখন। মাংস কেনার মুরোদ ছিল না। মাইয়াটা চইলা গেল। আগে অন্য কাজ করতাম, পরে বহু কষ্টে এই দোকানটা দাঁড় করাইছি। মাইয়াটার কথা মনে রাইখা নাম দিছি – ‘রিমঝিম মাংসবিতান’। মাংসের দোকানে কত মানুষের কাছে মাংস বেচি কিন্তু নিজে একটুকরা মাংস মুখে দিতে পারি না। খালি মাংস খাইতে না পারা মাইয়াটার মুখ চোখে ভাসে।’

এরপর আর কোনো কথা তো থাকতে পারে না কন্যা-শোকগ্রস্ত পিতার সঙ্গে। তরিক আনমনে মাংসের ব্যাগটা হাতে নিয়ে বাসার দিকে চলে।

রক্তমাখা টাটকা মাংস পেয়ে রিমা খুশি খুব আজ। তরিকের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। কিন্তু এসব কিছুই স্পর্শ করে না তরিককে। সে শুধু ভাবছিল অকালগত মেয়েটা আর তার বাবার কথা। খাদ্যবস্ত্ত মাংস কীভাবে রক্তমাংসের সম্পর্কে ঐন্দ্রজালিক বিভা যোগ করে সেটাও ভাবছিল বারবার।

দুপুরে খেতে খেতে রিমার সঙ্গে শেয়ারও করে বিষয়টা। রিমার মনটা কেমন হয়ে যায় শুনে।

ছুটির দিন বিকেলে ভার হয়ে আসা মন ভালো করতেই রিমা জোর করে বলে বেড়াতে বেরোনোর কথা। কিছুই ভালো লাগছিল না তরিকের। তাও রাজি হলো। একটা ট্যাক্সি নিয়ে লালবাগ কেল্লার লাইট অ্যান্ড সাউন্ট শো দেখতে রওনা হলো পুরান 888sport appর উদ্দেশে। খুব বেশিদূর যেতে পারল না। যানজটের রাস্তায় একটা বাসের জোর ধাক্কা; তারপর ঘুরতে যাওয়ার বিকেলই হয়ে গেল রিমার কাছে জীবনের গভীর রাত। ড্রাইভারসহ তরিক স্পট ডেড। রিমা অজ্ঞানই ছিল অনেকটা সময়। জ্ঞান ফিরলে উৎসুক মানুষ-পুলিশ-অ্যাম্বুলেন্স সবকিছুর ভিড় গলিয়ে দেখে তরিক জাপটে ধরে আছে তাকে; রক্তমাংসে একাকার ছিন্নভিন্ন সারাশরীর তার।

জটলা থেকে কে যেন বলে, ‘অ্যাক্সিডেন্ট বুঝে বউটারে বাঁচাইতে চাইছিল মনে হয় লোকটা। তাই এভাবে ধইরা রাখছিল।’ আহত রিমা অসহ্য যন্ত্রণায় কাতরাতে কাতরাতে ভাবছে কী করে এখন সে তরিকের বন্ধন থেকে নিজেকে মুক্ত করবে? তার ভাবনাকে এলোমেলো করে দিয়ে এই কদিনের বৃষ্টিহীন 888sport appর আকাশ হঠাৎ সজল স্বরে কথা বলে উঠল – রিম ঝিম রিম।