রুচিশীল মানুষের প্রয়াণ

রফিকুন নবী

888sport live chatকলাজগতের কর্মচঞ্চল, সদা হাস্যোজ্জ্বল, নিজ কর্মে নিষ্ঠাবান, রুচিশীল, সব ক্ষেত্রের মানুষদের প্রিয় এবং বুদ্ধিদীপ্ত মানুষটি আচমকা হারিয়ে গেলেন। সবাইকে শোকসন্তপ্ত করে, বিমূঢ় আর বিস্মিত করে বিদায় নিলেন জগৎ-সংসার থেকে। তিনি 888sport live chatী কাইয়ুম চৌধুরী। একজন পরিশীলিত দক্ষ সৃষ্টিশীল 888sport live chatীকে হারালাম, শুধু তাই নয়, আমরা একজন অভিভাবককে হারালাম।

কাইয়ুম চৌধুরী, যিনি দেশময় কাইয়ুমভাই নামেই সমধিক অভিহিত হতেন এবং সেভাবেই পরিচিতিটাকে মনেপ্রাণে পছন্দ করতেন, তাঁর প্রয়াণোত্তর যে-শূন্যতা তা পূরণ হওয়ার নয়। শুধু খ্যাতিমান বরেণ্য 888sport live chatী বা 888sport live chatকলাজগতের একজন অপরিহার্য সদস্য ছিলেন যে, তা তো নয়, তাঁর পদচারণা ছিল দেশের পুস্তক প্রকাশনার ক্ষেত্রে, 888sport live football-সংস্কৃতির অঙ্গনসহ বহু সাংগঠনিক কর্মকান্ডেও। হঠাৎ করেই সবকিছু স্তব্ধ হয়ে গেল। এখন শুধু রয়ে গেল তাঁর কীর্তি আর 888sport sign up bonusর জগৎ।

তাঁর সান্নিধ্যে যাঁদের থাকার সুযোগ হয়েছিল, তাঁদের মধ্যে আমি একজন। শুধু সান্নিধ্যই নয়, অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ একটি গর্বিত হওয়ার মতো অবস্থান ছিল আমার। 888sport live chatকলাবিষয়ক কর্মকান্ডে, একত্রে দেশ-বিদেশ 888sport slot gameে, 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সহকর্মী হওয়ার সুবাদে, বই-পুস্তক-888sport live football-সংস্কৃতি-সংগীত ইত্যাদি বহুবিধ ক্ষেত্রে বিচরণের কারণে তাঁর কাছাকাছি যাওয়ার সুযোগ ঘটেছে ষাটের দশকের শুরু থেকে। এসব কারণে শুধু ঘনিষ্ঠতা নয়, স্নেহধন্য একজন 888sport live chatী হওয়ার গৌরব অর্জন করতে পেরেছিলাম।

তাঁর স্বভাবে এমন এক ধরনের হাসিখুশি-মাখানো আকর্ষণ ছিল যে, সবাইকে অভিভূত করে কাছে টেনে নিতে পারতেন। আমিও তেমনি একজন গুণগ্রাহী। তবে শুধু যে তাঁর স্বভাবই মুখ্য ছিল তা নয়, আমি ভক্ত হয়েছি তাঁর নিজস্বতায়, আঁকার ধরন, ছবির জগৎ নিয়ে একান্ত আপন ভাবনা, দেশের লোক888sport live chatের প্রতি ভালোবাসা এবং সেসবকে উচ্চাসনে দেখার মতো অনেক অনেক দিককে ধারণ করতে দেখে।

দেশাত্মবোধ ছিল তাঁর অনবরত সৃষ্টিশীল কাজে নিয়োজিত থাকার প্রধান দিক। তাঁর সঙ্গে বহু দেশ 888sport slot game করেছি। কিন্তু অতসব দেখার পরও নিজ দেশকে, দেশের মানুষকে, দেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে অতুলনীয় বলে সবার ঊর্ধ্বে রাখতেন। এ ব্যাপারে পূর্বসূরি 888sport live chatাচার্য জয়নুল আবেদিনের অনুসারী ছিলেন। তাঁর প্রতি অকৃত্রিম 888sport apk download apk latest versionও পোষণ করতেন। বলতে দ্বিধা করতেন না যে, ছবি আঁকা শেখার পাশাপাশি দেশটাকে, দেশের সৌন্দর্যকে দেখার চোখ তৈরি করে দিয়ে গেছেন আবেদিন স্যার। তবে আমি প্রত্যক্ষ করেছি বা বলা যায় উপলব্ধি করেছি যে, তিনি তাঁর চিত্রকলায় দেশকে উপস্থিত করেছেন আরো আধুনিক চোখে দেখে।

এই আধুনিক চোখের অবলোকনটি ছিল একান্তই তাঁর নিজস্ব উদ্ভাবন। চেনা বিষয়কে আপন আঙ্গিকে রূপান্তরিত করে সাজাতেন এমন রসোত্তীর্ণতা মিশিয়ে যে, তাতে লোকজ মোটিফ, বাস্তব আকার-আকৃতি, রং, স্পেস, রেখায় অন্য এক বৈশিষ্ট্যের চিত্রভাষা তৈরি হতো। এবং তা তিনি করতে পারতেন অবলীলায়, অকপটে সহজিয়া করে। মূলত রং এবং বলিষ্ঠ ড্রইংকেই তিনি প্রাধান্য দিতেন। এভাবে অসাধারণ দক্ষতায় নিত্যনতুন চিত্রমালা রচনা করলেও নিজে কখনোই তৃপ্ত হতেন না। বলতেন, ‘দূর, হইতাছে না। যা করতে চাই তা আসলো না।’ শেষ দিকে এসে আক্ষেপ করে বলতেন, ‘সারাজীবন কম তো কাজ করলাম না। করতেই আছি। কিন্তু যা করতে চাই তা তো হইতাছে না। সময় তো শেষ হইয়া আসতাছে।’

আমরা জানি কয়েক বছর ধরে তিনি লোকজ নকশার ফর্মকে ভেঙে বেশি বেশি ডিটেইলকে পরিহার করে, অঢেল স্পেসের বিস্তৃতিতে বিন্যাস করে চওড়া তুলির কাজে মনোযোগী হয়েছিলেন। পর্যায়টি নিরীক্ষাধর্মিতার। বলতেন, ‘একটু হাত খুইলা কাজ করি। দেখি কী হয়, কেমন দাঁড়ায়।’ কখনো কখনো জিজ্ঞেসও করতেন – কেমন হলো তা জানার জন্যে। বলতেন, ‘সিনসিয়ারলি বলবা কিন্তু। মনে হয় জমলো না। মনে হয় শেষ হইলো না। আরো একটু কাজ করলে মনে হয় শেষ হইতো!’

বলেছিলাম। ‘ফার্স্ট থট ইজ অলওয়েজ দ্য বেস্ট থট’ – এই প্রচলিত কথায় বিশ্বাস করলে তো মনে হয় এই স্টেজে শেষ ভাবাই যায়। আমার তো ধারণা খুব সুন্দরভাবে শেষ হইছে।

তিনি ছবিটির কাজ ছেড়ে দিয়েও আবার কিছুক্ষণ পর টেনে এনে বলেছিলেন – ‘এই জায়গায় আর একটু কাজ বাকি। করি একটু।’ এই অতৃপ্ততার সঙ্গে মিল খুঁজে পাই তাঁর অকস্মাৎ মৃত্যুর সঙ্গেও। তিনি বেঙ্গল-আয়োজিত উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসবে সেদিন প্রধান বক্তা ছিলেন। নির্ধারিত সময়ে চমৎকার বক্তব্য শেষ করে নিজ আসনে বসে আবার অনুমতি নিয়ে ফিরে এসে মাইক হাতে বলেন আর একটি কথা বলা -। তিনি কী কথা বলতে চেয়েও আর শেষ করতে পারেননি। মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছিলেন’ ছবির মতোই বক্তৃতার ক্ষেত্রটিতেও যেন অতৃপ্তিই বোধ করেছিলেন।

জীবনাচারে অত্যন্ত সৌখিন ছিলেন। রুচিশীল পোশাক-আশাক পরতে পছন্দ করতেন। শুদ্ধ সংগীত শোনা ছিল তাঁর নিত্যদিনের সঙ্গী। এসবের সংগ্রহ করাসহ 888sport live football এবং সু-live chat 888sportে প্রগাঢ় অনুরাগ-হেতু সেসবেরও বিশাল সংগ্রহ ছিল অবিশ্বাস্য। 888sport app download apk পড়তেন, নিজে লিখতেনও। দেশ-বিদেশ 888sport slot game করতে ভালোবাসতেন। এবং তা করতে গিয়ে যখন যেখানে যেতেন, সেখানকার মানুষ, প্রকৃতি, দর্শনীয় স্থানগুলির স্কেচ করতেন খাতায়। এরকম ছবির খাতা তাঁর অসংখ্য। এসব নিয়ে বলতেন, – ‘মাঝে মাঝে খাতায় স্কেচগুলো দেখতে ভালো লাগে। 888sport slot gameের, বিভিন্ন জায়গার, মানুষের কথা মনে পড়ে, এমনকি বহু ঘটনাও।’ বলতেন, ‘এগুলো তো খাতার পাতা না, 888sport sign up bonusর পৃষ্ঠা। দেখতে থাকলে চোখের সামনে সবকিছু ভাসে। ওইসব জায়গায় আর কোনোদিন যাওয়া হয় কিনা, খাতাবন্দি তো থাকছে।’

তাঁর এসব স্কেচের ড্রইংয়ের অপূর্বতায় মুগ্ধ হতাম। আমার সঙ্গে বসেও কত যে এসব এঁকেছেন। এই একটা দারুণ অভ্যাস ছিল তাঁর। সবসময় স্কেচ খাতা সঙ্গেই রাখতেন আর অনবরত এঁকে যেতেন। এই দিকটা ছিল তাঁর ছাত্রজীবন থেকে রপ্ত করা।

এই অভ্যাসের অন্তর্গত হয়ে পঞ্চাশের দশকের শেষ নাগাদ 888sport appর সদরঘাট, মুন্সীগঞ্জ ইত্যাদি জায়গায় গিয়ে নদী ও নৌকা স্টাডি করেছিলেন। সেটা করার সময় বিশাল গয়না নৌকার ছবি আঁকতে গিয়ে গলুইয়ের সুদৃশ্য নকশা দেখে চমৎকৃত হন। বিস্ফারিত চোখ আর তার চারপাশে পিতল আর রঙের লোকজ নকশায় আকৃষ্ট হন। তিনি নৌকার ফর্মকে ভেঙে গলুইয়ের নকশাকে প্রাধান্য দিয়ে কিছু ছবি আঁকেন নদীর বিস্তৃতিকে স্পেস হিসেবে ব্যবহার করে। আবিষ্কৃত হয় একটি স্টাইলের। এই সিরিজের ছবি অচিরেই স্বীকৃতি পেয়ে যায় অসাধারণ সেই স্টাইলের কারণে। 888sport live chatীর ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ডপ্রাপ্তি ঘটে। শুরু হয় তাঁর আধুনিক চিত্রকলা চর্চার অধ্যায়। ষাটের দশকের মাঝামাঝিতে ত্রিদেশীয় আন্তর্জাতিক আরসিডি প্রদর্শনীতে লাভ করেন শ্রেষ্ঠ 888sport app download bd।

আমি যখন আর্ট কলেজে ভর্তি হই ১৯৫৯ সালে, তিনি ছিলেন শিক্ষক। সবাই বলতো এই লেখাপড়া মানেই জীবনটাকে অনিশ্চয়তায় ফেলে দেওয়া। রোজগারের ব্যাপারে ভূত-ভবিষ্যৎ বলতে কিছু নেই। বিভ্রান্ত এবং নিরুৎসাহিত বোধ করার মতো এ-ধরনের নানান কথা শুনতে হতো। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই জেনে গিয়েছিলাম যে, অনেক 888sport live chatীই পুস্তক প্রকাশনা এবং পত্র-পত্রিকার সঙ্গে জড়িত। প্রচ্ছদ এবং ইলাস্ট্রেশনে সুনাম ছিল 888sport live chatী কামরুল হাসান, মোহাম্মদ ইদ্রিস, আবদুর রউফ প্রমুখের। এক্ষেত্রে সবচেয়ে ব্যস্ততম 888sport live chatী ছিলেন কাইয়ুম চৌধুরী। শুধু তাই নয়, তাঁর প্রচ্ছদের ক্যালিগ্রাফি, নকশা এবং রং বিন্যাসের গ্রাফিকশৈলী এতটাই ব্যতিক্রমী যে, দেশের সব প্রকাশক-লেখকের পক্ষে তাঁর কাজকে বাদ দিয়ে কিছু ভাবা কঠিন ছিল। সব মিলিয়ে তিনি তখন ব্যস্ততম 888sport live chatী। নামে-সুনামে, আর্থিক দিকে, অসংখ্য 888sport app download bdে ভূষিত হওয়া একজন সফল 888sport live chatী। তিনি তখন আমার সামনে ভূত-ভবিষ্যতের ব্যাপারে দুশ্চিন্তাহীন থাকার অনুপ্রেরক 888sport live chatী। একসময় তাঁর অনুসারীও হয়ে যাই। একই সময় তিনি ‘চৌকা’ নামে কার্টুনেও খ্যাতিমান ছিলেন। মোটকথা তাঁর বহুবিধ কর্মকান্ডে নিয়োজিত থাকাকে, জনপ্রিয় পত্র-পত্রিকার সঙ্গে জড়িত থাকাকে এবং দেশের খ্যাতিমান কবি-888sport live chatী-888sport live footballিকদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতাকে প্রত্যক্ষ করে নিজেকে সেভাবে তৈরির ব্যাপারটি স্থির করেছিলেন। এবং বলতে দ্বিধা নেই, সেভাবে নিজেও ওই ক্ষেত্রগুলোতে মন  দিয়ে ফেলি।

পরবর্তীকালে তো তাঁর ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্য পেয়ে আমি নানাভাবেই আলোকিত হয়েছি। তবে তাঁর অবিশ্বাস্য কর্মব্যস্ততার দিকটিকে কখনোই ধারণ করতে পারিনি। একাধারে অসংখ্য ছবি আঁকা, প্রচ্ছদ-পোস্টার-লোগো-ইলাস্ট্রেশনসহ প্রতিনিয়ত দেশ নিয়ে, সমাজ-সংস্কৃতি নিয়ে, দেশের 888sport live chatকলা চর্চার গতিপ্রকৃতি নিয়ে ভাবা এবং নিজের ধারণাকে বক্তব্যের মাধ্যমে জনসমক্ষে উপস্থিত করার অপরিসীম ব্যস্ততাকে অবশ্যঅনুসরণ করার চেষ্টা থেকে বিরত থেকেছি। কারণ তাঁর মতো প্রাণশক্তি ধারণ সহজ নয়।

সেই তিনি চলে গেলেন। স্তব্ধ হয়ে গেল অসম্ভব সৃষ্টিশীল কর্মচঞ্চল মানুষটির সকল জগৎ। তাঁর অন্তর্ধানে যে-শূন্যতা বিরাজমান হলো, তা তো কোনোভাবেই আর পূরণ হওয়ার নয়। আমি তাঁর বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করছি।