888sport app download apk latest version : সম্পদ বড়ুয়া
ঝাড়ুদারনি সজনির মণিবন্ধে রুপার চুড়ি দেখার সঙ্গে সঙ্গে শ্রীমতী গোপী গলের মুখের কোনার রেখাগুলো আরো গভীর হয়ে ওঠে। তার ফ্যাকাশে চেহারা বিবর্ণ রূপ ধারণ করল, চকচকে ললাট সংকুচিত হয়ে ভ্রূকুটিতে পরিণত হলো।
বর্ষার সূচনা-মাস শ্রাবণের প্রথম দিনে স্বামীকে খুশি করার জন্য শ্রীমতী গোপী রান্নাঘরে মিষ্ট রুটি ভাজছিলেন। সেখান থেকে হঠাৎ ছুটে বেরিয়ে এলেন। বৈঠকখানার জালি দেওয়া জানালার পাশ থেকে ঘরের বারান্দা চোখে পড়ে; সেখানেই তিনি অবস্থান নিলেন। সজনির রুপার চুড়ি এ-বাড়ির মালিকের ওপর কী প্রভাব ফেলেছে সেটা দেখাই তার প্রধান উদ্দেশ্য।
সজনিকে দেখলেই তার মুখের দিকে তাকিয়ে তিনি হাসির প্রেতাত্মা খুঁজে পান। মাঝেমধ্যে মেয়েটার চোখের ভেতর এক ধরনের আলো খেলা করে, যাকে তিনি ভুলক্রমে অমঙ্গলজনক ঝিলিক হিসেবে গ্রহণ না করে পারেন না। একবার কি দুবার স্বামীকে হাতেনাতে কিংবা বলা যায় মাথায়-মাথায় ধরে ফেলেছিলেন কারণ তিনি তাঁর মুখনিসৃত ভেজা লালাঝরা কামুক ঠোঁট প্রসারিত করে অস্পৃশ্য মেয়েটার দিকে চোখ তুলে তাকিয়েছিলেন। এমনকি তিনি লোকসংগীতের ধ্বনি গুনগুন করে আওড়াতে থাকেন –
‘সজনি, আমি রাতে উষ্ণ ঘর্মাক্ত অবস্থা থেকে জেগে উঠেছি’।
অনেকটা অনুমানের ওপর ভর করে জানালায় দাঁড়িয়ে শ্রীমতী গোপী গল পরিষ্কার দেখলেন আর সজনির প্রতি স্বামীর আগ্রহের বিষয়টি নিশ্চিত হলেন। স্বামীর মুখে হাসি উপচে পড়ছে, চোখদুটো জ্বলজ্বল করছে, মুখে কুঞ্চনের রেখা। মেয়েটাকে দেখে মনের উল্লাস গোপন করার জন্য তিনি ধোঁকাবাজির আশ্রয় নিয়ে বলেন, ‘আসো সজনি, আসো। আজ সকালে দেরি করে ফেললে…।’
শ্রীমতী গোপী গল নিজের বুকের ভেতর ধুকধুকুনি অনুভব করলেন, যখন দেখেন এই ঝাড়ুদার মেয়েকে দেখার সঙ্গে-সঙ্গে স্বামীর কণ্ঠে আন্তরিকতার সুর বিশেষ করে তিনি যখন তার নাম মধুর লয়ে উচ্চারণ করেন – ‘স-জ-নি…’। মেয়েটির উত্তর শ্রীমতী গোপী শুনতে পেয়েছেন। সে লাজুক ভঙ্গিতে মাথার কাপড় মুখের একপাশে টেনে নামিয়ে আনল, অনাবৃত অন্য পাশের কথাও মনে আছে এ-আনন্দ বুকে চেপে বলে, ‘চেপে যে বৃষ্টি…’।
শ্রীমতী গোপী এই যুবতী মহিলার মুখটি ভালোভাবে পরীক্ষা করার চেষ্টা করলেন। আধা 888sport app আধা উন্মোচিত প্রতিকৃতির ভেতর একটা আনন্দের দীপ্তি তিনি খুঁজে পেয়েছেন, যা যৌবনের আকস্মিক উচ্ছ্বাস, একইভাবে তাকে মুগ্ধভাবে প্রশংসা করার আত্মশস্নাঘা, অর্থপূর্ণ অত্যুক্তি আর তার নাম উচ্চারণে গানের সুরের দ্যোতনা থেকে উৎসারিত।
‘ওহে মু-ু, ওদেরকে বল সজনিকে একটি মিষ্ট পুরা দিতে।’ বারান্দায় ঝাড়ু দিয়ে ঝাঁট দেওয়ার সময় মি. রাম গল ট্রিবিউন পত্রিকা থেকে তার দৃষ্টি সেই পরিপাটি কিন্তু গুটিসুটি মেরে থাকা ঝাড়ুদারনির দিকে ফেলতে-ফেলতে চাকর ছেলেকে নির্দেশ দেন।
‘তারা সজনিকে সব দেবে’ – শ্রীমতী গোপী মন্তব্য করেন।
‘বিবিজি, আমি অযোগ্য’ সজনি অনেকটা কৈফিয়তের সুরে বলে, ‘কর্তাই হচ্ছেন গরিবের রাজা…।’
শ্রীমতী গোপী এবার নিজেকে প্রশ্ন করেন, তার এবং রাম গলের মধ্যে বর্তমানে কোনো সংযোগ কি তিনি পুনঃস্থাপন করতে পেরেছেন? হৃদয়ের প্রতিধ্বনি থেমে গেলে নির্বাপিত অনুভূতি তাকে জানায় কোনো সংযোগ আদৌ সেখানে অবশিষ্ট নেই।
বিয়ের পর অনেকটা শাস্ত্রীয় আচার-অনুষ্ঠানের মাধ্যমে রাম গল শ্রীমতী গোপীকে নিয়ে এসেছেন। তাদের রক্ষণশীল পারিবারিক অবস্থান তাদেরকে অমৃতসরের এ-বাড়ির চত্বরে নিয়ে এসেছে। স্বামীর সঙ্গে প্রথম রাতে শ্রীমতী খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন। শরীরের মুখসহ যে-কোনো অঙ্গ প্রদর্শন করার লজ্জার বিষয়টি যা মায়ের মাধ্যমে ধীরে-ধীরে তার নিজের মনে সঞ্চারিত হয়েছিল, তা রক্তিম আভায় তার মুখের ওপর ঢেলে দিয়েছে। ঘামে তার কাপড় ভিজে ওঠে। তিনি চিৎ হয়ে শুয়ে থাকেন, কোনো বাধা দেন না, কোনোভাবে সাহায্যও করেন না। একসময় রাম গল পাশ ফিরে শুয়ে নাক ডাকতে শুরু করেন…। সেই থেকে গত পাঁচ বছর এ-আচার বারবার পুনরাবৃত্তি হয়ে আসছে। বুড়ো ক্রীড়নক পুতুলের অঙ্গভঙ্গির মতো স্বয়ংক্রিয়ভাবে কোনো কথার হস্তক্ষেপ ছাড়াই ব্যাপারটা পুরো যান্ত্রিকতার রূপ নেয়। রুটিনবাঁধা এ-জীবন সত্ত্বেও তাঁর শরীরে কিছু-কিছু অনুভূতি বিদ্যমান থাকে যা তাঁর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে উষ্ণ আর সমৃদ্ধ রাখে; নরকের সমুদ্রে এপার থেকে ওপারে ঠেলে দিয়ে কামনা-বাসনার ঘূর্ণায়মান প্রবাহবার্তা পাঠায়, তাপদগ্ধ দীপ্ত বাতাসে ভেসে রাতের বেলায় তাকে যন্ত্রণা দেয়। তিনি শায়িত অবস্থায় অবসাদের খোশামোদে ভীতিজনক বেদনাবোধহীনতায় এর জবাব দেন। এর ফলে তাঁর নিচের চোয়াল শক্ত হয়ে ওঠে, ঠোঁটদুটো ফাঁক হয়ে আসে যেন অনেকটা কম্পনের কারণে হয়েছে। তাঁর চোখ হয়ে পড়ে অভিক্ষেপ্ত। ভদ্রমহিলার ইচ্ছা করে, তিনি উভয়ের মোকাবেলা করবেন তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দাঁড় করিয়ে।
‘প্রেমিকেরা।’
শ্রীমতী গোপী কিন্তু জানেন তাঁর স্বামী নিপুন কপটচারীর মতো শান্তভাবে কৌশলে এড়িয়ে যাওয়া সরাসরি কোনো শব্দ গানের স্তবক বা 888sport app download apkর কোনো ছোট পরিপাটি ব্যঞ্জনা থেকে সরিয়ে রাখেন।
ঝাড়ুদার সজনির কোনো দীর্ঘশ^াস শোনা যায়নি, তথাপি নিশ্চিত হওয়ার জন্য রাম গল কারাগারের মতো জানালার পেছনে এ-মহিলার গোয়েন্দা শরীরকে ভালোভাবে জরিপ করলেন আর একটা সাজানো 888sport app download apkর আবৃত্তি শুরু করলেন –
‘হায়! এখানে পানি আর আমার মাঝে দাঁড়িয়ে আছে হতাশার ছায়া …’
‘তুমি কিসের কথা বলছ?… আমি বলতে এসেছি তুমি অফিসে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছো কি হচ্ছো না?… প্রাতরাশ তৈরি আছে… পুরাগুলো ঠান্ডা করার কোনো মানে হয় না !!!’
স্ত্রীর গলার তীব্র ঝাঁঝালো স্বর রাম গলকে এখনো শান্ত রাখতে বাধ্য করেছে।
‘আমার মনের এই অন্ধকারাচ্ছন্নতায় অফিস নয়, কেবল 888sport app download apkই… অফিস নামের ওই কারাগারের চেহারাটাকেই আমি ঘৃণা করি…।’
‘888sport app download apk আমাদের খাবার জোগাবে না…’।
‘আহ! এই দুমুখো রমণীকে বশীকরণ করার কোনো পথ নেই দেখছি’; রাম গল অস্পষ্টভাবে বলে ওঠেন। পত্রিকার পাতা ভাঁজ করে তিনি সজনির দেহের সুগঠিত বাঁকগুলোর দিকে চোরাদৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন। তাঁর কর্তৃত্বপূর্ণ আত্মার সরল আনন্দের জন্য চোখ থেকে যা সরে গেছে তা মনে করতে হাই তুললেন এবং একসময় উঠে দাঁড়ালেন।
শ্রীমতী গোপী বিশ^াস করেন তার স্বামী যতবারই তার কাছে আসেন ততবারই তার কবি-আত্মার নগণ্য কিছু অংশ তার শরীরে জমা রেখে যান। এ জমার অংশ গোপী অন্য কারো কাছে সঁপে দেওয়ার ব্যাপারে সম্মতি প্রদান করেননি। বিশেষ করে সজনির শরীরে তো নয়ই, যার প্রতি রাম গল ইতোমধ্যে উদারচিত্তে আধা হাস্যরস আধা বিব্রতকর অবস্থায় তার ভালোবাসার কথা কৌশলে পরোক্ষভাবে বলতে চেয়েছেন। ভদ্রলোক ঝাড়ুদার মহিলার হাতের মুঠোয় মাঝেমধ্যে বখশিসও গুঁজে দিয়েছেন।
সজনি তার জন্য নিজের হাতে পুরা বানাতে বসল। সে খেয়াল করে, তার গোপন অনুভূতি তাকে লোকটার চাহনি, তাঁর কথাবার্তা-আলিঙ্গনের ওপর তার পূর্ণ অধিকার প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব তুলে দিয়েছে যা অন্য কেউ এ কায়েমি স্বার্থের অধিকারে ভাগ বসানোর সুযোগ পাবে না।
‘তুমি প্রতিবারই একটা পুরা বানানোর পর দ্বিতীয় পুরাটা পুড়িয়ে ফেলছ… তাছাড়া সেগুলো ঠান্ডাও হয়ে গেছে’ শ্রীমতী গল বললেন, ‘তার চেয়ে আমাকে বানাতে দাও…’ এ মুহূর্তে কাউকে ভৎর্সনা করার ইচ্ছা ছিল আর এজন্যেই কথাগুলো তিনি চাকর ছেলে মু-ুকে শুনালেন।
চাকর ছেলের সঙ্গে এসব বিরক্তিকর কথাবার্তায় তাঁর স্বামীর কাল্পনিক ধারণার প্রতি তাঁর প্রগাঢ় অনুরক্তি আরো তীব্রতর হলো। ফিসফিস করে তিনি বলতে থাকেন… ‘আমার ভেতরটা পুড়ে যাচ্ছে’।
সত্যিকার অর্থে মাটির চুলার গরম আভা তার শরীরে আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে। তাকে তিনি স্বামীর জন্য মনের উষ্ণতা বলে ভুল করেছেন। ‘আমার জীবন’ শ্রীমতী বলেন, ‘সাজগোজের মধ্যেই শেষ হয়ে যাচ্ছে। তুমি আজ আয়নার সামনে বরের মতো দাঁড়িয়ে আছ।’
‘আবার বিয়ের পিঁড়িতে বসতে আমার আপত্তি নেই’ রাম হালকাভাবে উত্তর দিলেন।
‘কার সঙ্গে?’ শ্রীমতী প্রশ্ন করেন। কথার দুর্বোধ্যতায় বিরক্তির ভাব।
‘তোমার সঙ্গে’ কোণঠাসা হয়েই যেন রাম গল উত্তর দিলেন।
এ-কথা ভদ্রমহিলাকে আশ্বস্ত করল। একটুক্ষণের জন্য বিরতি নিলেন, সবকটি পুরা পাত্রে রাখলেন, গরম মাখন দিয়ে ভেজে নিলেন। তারপর গলা লম্বা করে দেখলেন তার স্বামীর মন্তব্য তাকে নাকি সজনিকে লক্ষ করে ছোড়া হয়েছে। তিনি খেয়াল করলেন ঝাড়ুদার মহিলা মূলত সে-কক্ষেই ছিল, যেখানে রাম গলের সঙ্গে আয়নায় তার মুখোমুখি দেখা হয়েছে।
শ্রীমতী গোপী ছিদ্রওয়ালা চামচ দিয়ে গরম তেল নাড়তে লাগলেন আর তার নিজের সাধারণ শান্ত স্বভাব ঢেকে রেখে নাটকীয় ভঙ্গিতে স্বীয় অধিকার জাহির করে বললেন, ‘প্রাণনাথ, আমরা তো এরই মধ্যে এক হয়ে আছি, তুমি তো আমাকে বদলে দিয়েছ, লজ্জাবতী থেকে অবাধ্য খেয়ালি… মিরার মতো, আমি তো আমার কৃষ্ণের গোপী…।’
‘তোমার জায়গায় আমি হলে এভাবে প্রভুকে ডাকতাম না’ অত্যন্ত ধূর্ততার সঙ্গে রাম গল বললেন, ‘এ-ধরনের আকাঙক্ষা বেদনা নিয়ে আসে…।’
‘কিন্তু আমার জীবন কিসের জন্য?’ শ্রীমতী প্রতিবাদ জানান, ‘আমি তোমার …’।
তিনি বলতে চাইলেন, ‘আমি তোমার দাসী’। কিন্তু ততক্ষণে মু-ুর উপস্থিতি তার এ-ধরনের অন্তরঙ্গ অথচ ক্রীতদাসসুলভ উচ্চারণে বাদ সাধল।
‘কেন, কেন কেন…’ রাম গল সুর করে শব্দগুলো বলতে থাকেন। চারদিকের পরিবেশকে প্রতারণার আবহে ঢেকে ফেলতে মরিয়া হয়ে ওঠেন। কারণ অফিস যাওয়ার আগে একবারের জন্য হলেও সজনির চোখে চোখ রাখার সুযোগের অপেক্ষায় থাকেন তিনি। এতে তার দিনটি আনন্দ আর কাব্যিক দ্যোতনা নিয়ে কাটবে, বিশেষ করে এই ভালোবাসাময় আবহাওয়ায় যখন মেঘদল শহরের ওপর ইতস্তত ঘুরে বেড়ায়, সবখানে স্বর্গের প্রশান্তি ছড়িয়ে থাকে আর যেখানে সবুজ তোতাপাখিদের আকাশের অবারিত সীমানায় তাড়িত করে উড়ে নিয়ে যায়।
‘কিন্তু কেন?’ মহিলা জিদ করে বলেন, ‘কেন আমার প্রার্থনা আরো বেদনা জাগাবে?’
‘কারণ, দুজনের একজন যদি চলে যাওয়ার বিষয়টি মাথায় নিয়ে রাখে আর হঠাৎ তুমি যদি অভিমান করে তোমার মায়ের বাড়ি চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকো তাহলে এর জন্য যে-ব্যথা তা অত্যন্ত ক্ষতিকর তীব্র এক অশান্তি।… একজনের জীবনে শূন্যতা থাকতে পারে। তবে যে-সাথি পিছিয়ে পড়ল তাকে চেষ্টা করতে হবে তার জীবন কলস আবার অমৃত সুধায় পূর্ণ করে তুলতে…’
এই গভীর আলংকারিক বক্তৃতা অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে হাসিখুশিভাবে উচ্চারিত হয়েছে আর শ্রীমতী এ মিষ্টি কথায় একেবারে গলে গেলেন।
ঠিক এসময় শ্রীমতী দেখলেন রাম গল একটি দশ পয়সার মুদ্রা সজনির হাতের তালুতে ঢুকিয়ে দিচ্ছেন। আসলে তিনি এই ঝাড়ুদার মহিলার খোলা হাতের মধ্যে পয়সাটা রাখতে চেয়েছিলেন, চেপে ধরতে চাননি। শ্রীমতী গলের অনুভূতিহীন কল্পনা এমন ধারণার জন্ম দিয়েছে যে, এ-ধরনের ভিক্ষা দান বা দয়া প্রদর্শন একটা চূড়ান্ত পর্যায়ে এ-দুজনের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করেছে। তার এমনও মনে হয়েছে, তিনি প্রত্যক্ষ করেছেন তাদের মধ্যে উল্কার মতো দৃষ্টিবিনিময় হয়েছে। তার ধারণা এ দুজন প্রেমিক-প্রেমিকার মাথার ওপর টগবগ করে ফোটানো ঘি-এর বড় কড়াই উল্টে পড়ে গেছে। তবে শ্রী রাম গলের প্রসন্ন মুখে অচঞ্চল প্রশান্ত ভাব এ-ধরনের উগ্র কর্মস্পৃহাকে নিসেত্মজ করে ফেলে। বরং শ্রীমতী নম্রভাবে তার মাথা নোয়ালেন আর একজন নিষ্পাপ প্রেমিকার মতো তার দিকে তাকিয়ে উলুধ্বনি দিলেন।
‘আমি তোমাকে পুরাগুলো দিতে চাচ্ছি যা আমি নিজ হাতে বানিয়েছি, মু-ু সেগুলো বানায়নি। তুমি কি লক্ষ করেছ নীচু শ্রেণির এ-মেয়েটির মণিবন্ধের ওপর রুপার চুড়ি রয়েছে? এই ঝাড়ুদারনি কীভাবে নিজেকে জাহির করছে! আমার মনে হয় সিনেমার তারকার নামে নাম এই মেয়েটির জায়গায় তার মা এসে আমাদের বাড়ির কাজগুলো করতে পারে।’
কথা শোনার সঙ্গে সঙ্গে শ্রী রাম গলের চোখের পাতা যেন কেঁপে উঠল। গরম পুরা মুখের মধ্যে চালান করে দিয়ে এমন ভান করলেন যেন গরমের আতিশয্যে জিহবা পুড়ে গেছে…। কৃত্রিম পরিহাসছলে তিনি তার চোখদুটো ঘুরিয়ে নিলেন যাতে তার সরলতা রক্ষা হয় আর বোকার স্বর্গবাসের 888sport app download apk থেকে ফিরে আসার সুযোগটা অন্তত পায়। বিয়েতে একধরনের মোহ থাকলে সেটি সদা প্রবহমান আর এতে শ্রীমতী গোপী গল ভাবলেন তিনি মি. রাম গলের একমাত্র ভালোবাসার পাত্র, তার অর্ধাঙ্গিনী।
‘যে রুপার চুড়ি তুমি পড়ে আছ সেগুলো কোথায় পেলে? তোমার কোনো ভালোবাসার নাগর সেগুলো তোমাকে দিয়েছে?’ পুলিশের উঁচু গলার মতো শ্রীমতী গোপী সজনিকে জিজ্ঞেস করলেন।
‘বিবিজি, আপনাদের দয়ায় আমরা বেঁচে আছি’ – বড় নম্র গলায় সজনি উত্তর দেয়।
‘তোমার মনের আগুনের ওপর ভগবান ঘৃণা বর্ষণ করছে। যদি সতর্ক না হও তোমার নিজের বানানো নরকে জ্বলেপুড়ে মরার জন্য তোমাকে অভিশাপ দেবে।’ শ্রীমতী গোপী মেয়েটাকে চ্যালেঞ্জ করে বসলেন।
‘হায় বিবিজি… আমি কি করলাম?’ ঝাড়ুদারনি দীর্ঘশ্বাস ফেলল। তাকে বড় বিমর্ষ দেখাল।
‘তুমি কী করোনি? তোমার মুচকি হাসিতে আশপাশের সকল পুরুষকে প্রলুব্ধ করেছ। যতসব নষ্টের মূল তুমি। কিছুই জানো না এমন ভাব করে বলছ – আমি কি করেছি।’
রান্নাঘরের গরম উত্তপ্ত বাতাস থেকে শ্রীমতী গোপীর নীল ক্রোধ আগুনের ঝিলিকের মতো বের হয়ে এলো আর তা সজনির কম্পমান শরীরের ওপর ধোঁয়ার মালার মতো বাতাসে ঝুলে রইল।
‘আমার মা রুপার চুড়িগুলো এনেছে… আমার বাগদানের প্রথম উপহার’। অস্পৃশ্য মেয়েটি ব্যাখ্যা করল। তারপর মেয়েটি গিন্নির দিকে তাকাল, তার নাকটি ঘেমে উঠেছে। তার খোলা কপাল একবারে স্বচ্ছ, চোখদুটো নিষ্পাপের জলে ভেজা, যা অন্য কারো অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত।
‘মিথ্যা দিয়ে কাউকে সৎ বানানো যাবে না’ শ্রীমতী গোপী বলেন, ‘দেখি, এগুলো আমার বাড়ি থেকে খোয়া গিয়েছে কিনা।’
সজনি তার হাতটা সামনে বাড়িয়ে দিলো। ‘আমি কীভাবে নিশ্চিত হবো যে, আমার এই উড়নচণ্ডী স্বামীটি তোমার প্রতি উদার হয়ে সেগুলো আমার স্বর্ণের বাক্স থেকে বের করে এনে তোমাকে দেয়নি …’।
‘বিবিজি!’ সজনি প্রতিবাদ করে।
কোনো কিছু না শুনেই শ্রীমতী উত্তর দিতে থাকেন। ‘আমি এক ধরনের প্রেমিক-প্রেমিকাদের জানি, যারা দেখতে মনে হয় সংযোগচ্যুত কিন্তু বিদ্রূপাত্মক 888sport app download apkর অদৃশ্য শব্দে তারা আকর্ষিত হয়, মানিয়ে না নিয়েই যোগাযোগের সকল অসংযমে জড়িয়ে পড়ে…’।
‘আমি তো কেবল বাবুজির কথা শুনতে চেয়েছি’… মেয়েটি বলে,
‘তিনি একজন জ্ঞানী লোক; অনেক সুন্দর সুন্দর কথা বলেন…’।
‘তুমি কি আমাকে চেন না? তাঁর সুন্দর কথাগুলো যা তুমি শুনতে চাও তা কি আমাকে বলতে পারো না!! কেবল পারো সেসব রুপার চুড়ি খসাতে, যা সে আমার বাক্স থেকে গোপনে সরিয়ে তোমাকে দিয়েছে।’
সজনির স্বপ্নভঙ্গ চাহনির সামনে রাম গলের কথার সৌরভ শূন্যে মিলিয়ে যেতে থাকে। সে বুঝতে পেরেছে, এ-বাড়ির কর্তার প্রতি মুগ্ধতা প্রকাশ করা তার ঠিক হয়নি। একবার তাদের চোখাচোখি হয়েছিল। কিন্তু দোষ তো তার নয়। সজনির মাথা ঘুরে উঠল। মেঝের ওপর আছড়ে পড়ে সে মূর্ছা গেল।
‘ওঠ, বেরিয়ে যা, এ-বাড়িতে আর কখনো আসবি না। ছোটলোক কোথাকার। তুই মাথা আকাশে তুলে ফেলেছিস, হাতে পরেছিস রুপার চুড়ি!!! তুই জানিস না, দক্ষিণে অস্পৃশ্যরা আদৌ রুপার জিনিস পরে না…। সস্তা সিনেমার তারকার মতো ভাব দেখাস, যা, সর।’
শরীরে পেশি সঞ্চালনের শক্তি সজনি হারিয়েছে, তবে মনের জোর হারায়নি। বারান্দার এক কোণে অসংযতভাবে বসে সে ফুঁপিয়ে-ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকে। তার গলার প্রতিটি ওঠানামা ছুরির খোঁচার মতো। এতে কান্নার বেগ প্রবলতর হলো, মনে হচ্ছে তার মূর্ছার অবস্থা হিসটিরিয়া রোগীর পর্যায়ে চলে গেছে। পেটের ভেতর থেকে কান্না বের হয়ে আসছে, বছরের পর বছর যে-অপমান সেখানে জমে ছিল এখন তা ছুরির মতো তার দুপাশ থেকে ঠেলে বেরিয়ে আসতে চাইছে।
ঝাড়ুদার মহিলার কষ্ট শ্রীমতী গোপীকে আরো ক্রুদ্ধ করে তুলল।
‘যা, বেরিয়ে যা, আর কখনো এ-বাড়িতে আসবি না, চোর! তুই শুধু রুপার চুড়ি চুরি করিসনি, তুই আমার…।’
রূঢ় কথাটা শেষ করার সাহস হলো না, কারণ সজনির কাছে স্বামী হারানোর কথা কবুল করাটার অর্থ হচ্ছে যা সত্যিকারভাবে ঘটেছে তা নিশ্চিত করা। আর ওটা হবে অমঙ্গলজনক কারণ এটা একবার উচ্চারিত হলে প্রায়শই তা ঘটে…।’
সজনি তার মাথাটা তুলে আনে যেন একটা ঘুঘুপাখি বিক্ষুব্ধ বাতাসে ভীত হয়েও দূর উপত্যকায় উড়ে যাওয়ার জন্য আকাশে ডানা মেলেছে।
মুল্করাজ আনন্দ্ : ভারতীয় লেখক মুল্করাজ আনন্দ্ ১২ ডিসেম্বর ১৯০৫ সালে পেশোয়ারে জন্মগ্রহণ করেন। যে কয়জন ভারতীয় ইংরেজিতে লেখালেখি করেন তাঁদের মধ্যে তিনি অন্যতম। ভারতের নিমণশ্রেণির লোকদের জীবন, তার বঞ্চনা, বৈষম্য আর দারিদ্র্য নিয়ে তিনি সারাজীবন লেখালেখি করেছেন। 888sport alternative link ও গল্পের জন্য তিনি সমধিক জনপ্রিয়। প্রথম 888sport alternative link Untouchable (১৯৩৫) এবং অপর 888sport alternative link Coolie (১৯৩৬) জাতভেদ এবং নিমণশ্রেণির মানুষের জীবন নিয়ে রচনা যা তাঁকে খ্যাতির শীর্ষে এনে দেয়। 888sport app উলেস্নখযোগ্য 888sport alternative link The village (১৯৩৯), Across the Black Waters (১৯৩৯), The Sound and the Sickle (১৯৪২), আত্মজীবনীমূলক রচনা The Private Life of an Indian Prince (১৯৫৩)। গল্প লিখেছেন প্রচুর।
888sport live footballপত্রিকা Marg-এর প্রতিষ্ঠাতা তিনি। কেমব্রিজ বিশ^বিদ্যালয়ে দর্শনের ওপর পিএইচডি করেছেন, বিভিন্ন বিশ^বিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেছেন। 888sport live football অকাদেমি 888sport app download bd পেয়েছেন। পদ্মভূষণ সম্মাননা পেয়েছেন। ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০০৪ সালে ৯৮ বছর বয়সে ভারতের পুনায় মারা যান এই গুণী লেখক। ‘রুপার চুড়ি’ গল্পটি মুল্করাজ আনন্দে্র The Greatest Short Stories (২০১৩) বইয়ে অন্তর্ভুক্ত The Silver Bangles গল্পের বাংলা 888sport app download apk latest version। r

Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.