ধ্রুব এষ
লতাপাতা আসবে ৩টায়।
অধীর হয়ে আছেন।
লতাপাতা।
আসলে নাম কী মেয়েটার? লতা, না পাতা?
একদিন বলেছে লতা।
একদিন বলেছে পাতা।
এরকমই বলে এরা।
আজ কী বলবে?
লতাপাতা?
তৃতীয় দিন আজ।
বেজায় বৃষ্টি হয়েছে সকালে। বাতাসে সেই বৃষ্টির ঘ্রাণ আছে এখনো। তবে আর বৃষ্টি হবে না। আকাশে মেঘ নেই, রোদ এবং নীল রঙের দাপট। ঘর থেকে দেখা যায়।
সময় দেখলেন মোবাইলের ঘড়িতে।
২টা ১১।
রওনা দেওয়া যায় এখন?
না, আরেকটু পরে।
নারিন্দা খুব দূরের পথ না। দশ মিনিট লাগবে জ্যাম না থাকলে। আজ জ্যাম থাকার কথা না। সকাল-সন্ধ্যা হরতাল কর্মসূচি আছে। সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা। এই আরেক তামাশা হয়েছে। কিছু ঘটল কি না ঘটল হরতাল। দুদিন পরপর। ত্যক্ত হয়ে গেছে মানুষজন। কিন্তু কে কী করবে?
শুয়েছিলেন। উঠে বসলেন। কী করবেন? রওনা দেবেন?
কয়টা বাজল?
২টা ২৩। মাত্র।
এখন সময় কাটে কীভাবে?
ছেলেটা কোথায়? ছোট ছেলেটা?
স্কুলে যায়নি আজ। কেন যায়নি?
ও, হরতাল।
এখন সে কোথায়?
নিচে?
২টা ২৬-এ বউ ঘরে ঢুকল। ঝামটা মেরে বলল, ‘অ্যাই তোমার কী হইছে?’
‘কী হইব?’
‘খালি ঘর-বাইর করতেছো দেখি।’
‘ঘর-বাইর করতে কই দেখলা?’
‘কই দেখলাম? কই দেখলাম? তুমি মনে করো আমি কিছু বুঝি না? তোমারে আমি চিনি না? হাড়ে হাড়ে চিনি। তুমি হইলা একটা শয়তান। মিচকা শয়তান। ওরে আল্লা রে। এমন মানুষ আর আমি দেখি নাই!’
‘কী কও না কও?’ হাসলেন, ‘আমার মতন ভালো মানুষনি দেখছ?’
‘ভালো মানুষ! কে? তুমি? ওরে আল্লা রে! এমন কথা বলতে কি তোমার মুখে আটকায় না?’
‘বাদ দেও।’ আবার হাসলেন, ‘শোনো।’
‘কী?’
‘আইজ রাইতে কি তুমি আমারে কিছু সময় দিতে পারবা?’
‘না। আমার পোলায় আমারে ছাড়া ঘুমায় না, তুমি জানো না?’
‘চাইর-পাঁচ মিনিট?’
‘জি না। তুমি একটা কেমন মানুষ বলো তো? লজ্জা-শরম নাই? বুড়া তো কোন জনমে হইছ, ওইসব ছাড়া এখনো কিছু বোঝ না?’
বোঝেন না। কী করবেন?
আপাতত গম্ভীর হয়ে গেলেন।
বউ ঠিকই ধরল, ‘এই দেখো! আইচ্ছা তুমি কি এখনো ছেলেমানুষ আছোনি? কী করো এইসব? ছেলেরা বড় হইছে না? তারা দেখলে কী মনে করব?’
রাগ হলো।
‘তারা দেখলে কী মনে করবো! তারা কি দেখব আমরা কী করি!’
বউ কেয়ার করলে তো রাগের। আরো রাগ উঠিয়ে হাসল।
বেকুব মহিলা। রসকষ নাই। সাতাশ বছরের বিবাহিত জীবন। তিন সন্তান জন্ম দিয়ে কাহিল হয়ে পড়েছে। তিনটাই ছেলে। বড়টা এখন থাকে জাপানের নাগোয়ায়। মেজোটা এমবিএ করছে। ছোটটার বয়স সবে আট বছর হয়েছে। গত এপ্রিলে। থলিঝাড়া সন্তান। বেজায় মা-ন্যাওটা হয়েছে। বড় দুটো বাপ-ন্যাওটা ছিল। এখনো আছে কিছুটা। বড়টা নাগোয়া থেকে দুই-তিন মাস পরপর টাকা পাঠায়। পঞ্চাশ হাজার টাকা পাঠাইছি আববু, তুমি দশ হাজার টাকা নিও। চল্লিশ হাজার টাকা পাঠাইছি আববু, তুমি ছয় হাজার টাকা নিও।
সানন্দে নেন এবং জমান না। খরচ করেন যতদিন থাকে পকেটে। নানাবিধ খাত আছে খরচের। আজ যেমন লতাপাতা খাত। খরচ হয় এই খাতেই বেশি। গড়ে দেড়-দুই হাজার টাকা চলে যায় মাসে।
‘আর শোনো,’ বউ একটা পান মুখে দিয়ে বলল, ‘তোমারে না আমি বলছি, অত যদি ইয়া থাকে, তুমি তোমার যেইখানে খুশি যাও, আমি তোমারে কিছু বলব না। কসম। আমার আর শরীরে দেয় না, মনেও দেয় না।’
যাবেন। যান।
‘যাব।’
‘যাও।’ নির্বিকার বউ বলল, ‘বললাম না আমি কিছুই বলব না। আমি পারি না, কী করব? চা খাইবা?’
কী এই মহিলা! কিসের মধ্যে কী, পান্তাভাতে ঘি না চা!
তবে চা খাওয়া যায় এক কাপ।
বললেন, ‘না।’
‘ক্যান? বানাইয়া দেই এককাপ। মেজোটা যে দার্জিলিং গেছিল, দার্জিলিঙের চা নিয়া আসছে তো।’
‘দেও আধকাপ।’
বউ চা বানিয়ে আনল।
‘এইটা কি? চা? এইরম রং ক্যান?’
‘এইটা গ্রিন টি। চিনি ছাড়া খায়।’
‘চিনি ছাড়া! চিনি দেও নাই?’
‘দিছি। দুই চামুচ দিছি।’
দুই চামচ চিনি দিয়েও দার্জিলিঙের সবুজ চা বিস্বাদ। আবার কেমন একটু, মন্দও না।
মেজো ছেলে ইন্ডিয়ায় গিয়েছিল। স্টাডি ট্যুরে কলকাতা, দার্জিলিং। পরশু ফিরেছে। ইন্ডিয়া থেকে যা যা এনেছে তার মধ্যে কিছু মেয়েলি জিনিসপত্র আছে। ব্যাগ খুলতে বেরিয়ে পড়েছিল। কার জন্য এসব? এ কি কিছুটা বাপের মতো হয়েছে? মেয়েবন্ধু অনেক। বড়টা এরকম হয়নি। বোকা কিছুটা। মায়ের জিনের আছর।
চা শেষ।
২টা ৪০।
ওঠা যায় এখন।
কখন যে কী মনে পড়ে মানুষের?
পোস্তগোলা শ্মশানে গেছেন অনেকবার। শবদাহ দেখেছেন। মড়া পোড়ায় আর ধ্বনি দেয় মানুষজন।
হরি বোল!
হরি বোল!
বোলো হরি!
হরি বোল!
এখন মাথায় তেমন করে বাজল।
লতা পাতা!
লতা পাতা!
পাতা লতা!
লতা পাতা!
উঠলেন। যাবেন।
বউ বলল, ‘তুমি কি বাইরে যাইতেছ?’
‘হ। ক্যান? কিছু লাগব?’
‘তোমার ছেলে ডোরেমন দেখব। ডোরেমনের সিডি নিয়া আসবা।’
‘কাইল না দুইটা আনলাম।’
‘তুমি তোমার ছেলেরে চিনো না? ওই দুইটা দেখতে বাকি আছে তার? এখনো নিচে গিয়া দেখ না, তিতলি, অথই, সুমু, শরমন, সবকয়টারে নিয়া কার্টুন দ্যাখতেছে।’
‘কাগো ঘরে?’
‘আর কই, দিদিগো ঘরে। তোমার ছেলে নিচের আর কোন ঘরে যায়? নিজের চাচার ঘরে পর্যন্ত যায় না। তোমার মতো হইছে।’
হোক, ভালো। নাকি ভালো না?
দিদি মানে নিচতলার ভাড়াটে। হিন্দু ফ্যামিলি। জামাই-বউ আর দুই ছেলেমেয়ে। মহিলা বউয়ের বয়সিনী। আঁসাঁট বাঁধুনি এখনো শরীরের। নাকের ওপর সিঁদুর পরে থাকে।
২টা ৪৭।
রওনা দেওয়া যায় এখন।
ফি আমানিল্লাহ।
ছোট ছেলে নিচ থেকে উঠছিল।
দেখা হয়ে গেল সিঁড়িতে।
‘কই যাও আববু?’
‘এই তো রে বাবা, বাইরে যাই। বাইরে, বাইরে।’
‘কখন ফিরবা আববু?’
‘ফিরব রে বাবা, ফিরব, ফিরব।’
‘আম্মু কি তোমারে বলছে আববু? ডোরেমনের সিডি নিয়া আসতে বলছে? নিয়া আইসো আববু? আগের দুইটা তো দেখা শেষ। টিটন ভাইয়া যে সিডিটা দিছে না, এইটা কিন্তু ল্যাপটপে চলে না, বুঝছ? সিডি এইসডি কি না দেইখা আনবা, বুঝছ?’
টরটর করে কথা বলে। পাখির মতো গলা। এই ছেলে জন্মের সময় সংশয় দেখা দিয়েছিল। কাঁদেনি অনেকক্ষণ।
‘বুঝছ, আববু?’
‘বুঝছিরে বাবা। ডিভিডি সিডি।’
‘ডিভিডি সিডি! উফ্ফ্! ডিভিডি সিডি না আববু। এইস ডি সিডি। ই এফ জি এইসের এইস, এইস ডি, বুঝছ?’
‘এইস নারে বাবা, এইটা এইচ। এইচ। কও তো এইচ।’
‘ওই তো এইচ। এইচ্চ্চ ডি সিডি। মনে থাকব? আইচ্ছা তুমি দোকানে গিয়া আম্মুর ফোনে কল দিও কেমন? আমিই বলব দোকানের লোককে। ঠিক আছে, আববু?’
‘ঠিক আছে বাবা।’
চমৎকৃত হওয়ার মতো বুদ্ধি। বোঝে এসব আববুর মাথায় ঢুকবে না। আসলেও। মোবাইল ফোন, কম্পিউটার, ইন্টারনেট, স্যাটেলাইট, অল্পদিনে ব্যাপক পালটে গেছে দুনিয়া। কত তাজ্জবের কান্ড যে ঘটছে। এই বয়সে এসবের সঙ্গে আর যুক্ত হতে ইচ্ছা করে না। মোবাইল ফোনই অপারেট করতে পারেন না ঠিকঠাক। কম্পিউটার চালানোর চেষ্টা করেছিলেন কিছুদিন। মেজো ছেলে মহানন্দে ট্রেনিংয়ের দায়িত্ব নিয়েছিল। তাও দুরস্ত হতে পারেননি।
গলিতে নেমে রিকশা পেলেন না।
মেইন রোডেও রিকশা কম।
হরতালের দিন।
ত্রিশ টাকার কমে কেউ যাবে না।
পঁচিশ টাকা ঠিক করে একটা ইঞ্জিনের রিকশায় উঠলেন। ইঞ্জিনের রিকশায় এর আগে ওঠেননি।
‘অ্যাকসিডেন্ট করবেন না তো মিয়া?’
‘নিশ্চিন্ত থাকেন।’
কী নিশ্চিন্ত থাকবেন? অ্যাকসিডেন্ট করবে, নাকি করবে না? নিশ্চিন্ত থাকলেন। অ্যাকসিডেন্ট করল না। দশ মিনিট পর গৌড়ীয় মঠের কাছে ইঞ্জিনের রিকশা থামল। ৩টা ১২। নারিন্দা এলাকা। একটা ঠেক আছে এখানে। দেলোয়ারের ঘর। ‘মালা আর্ট প্রেসে’র মেশিনম্যান দেলোয়ার। দীর্ঘদিন ধরে সম্পর্ক। সমীহ করে এবং বিশ্বস্ত। দেলোয়ারের দুই বউ থাকে দ্যাশে। নিয়মিত সে দ্যাশে যায় এবং দুই বউয়ের সেবাযত্ন করে। এক বউয়ের তিন বাচ্চা, এক বউয়ের চার বাচ্চা। দুই বউই আবার পোয়াতি।
দেলোয়ার নেশাখোর। গাঁজা, মদ, চন্ডু যা পায় খায়। কল্কে বানাচ্ছিল। দেখে হাসি দিয়ে বলল, ‘আপনের লতাপাতায় তো এখনো আইল না ওস্তাদ। ভালো সিদ্ধি পাইছি। কেল্লাশার মাজারের জিনিস। দিবেননি একটান?’
‘না দেলোয়ার। দম পাই নারে, ভাই।’
‘তা ঠিক। বয়েস তো হইছে।’
বয়স? তা না। কম কী করেছেন। সিদ্ধি, চরস, আফিম, ধান্যেশ্বরী। ধান্যেশ্বরী হলো ধেনো। চোলাই মদ। হাটখোলার তেলেগু কলোনিতে বানাতো। উৎকৃষ্ট দ্রব্য। মাথা ধরত না, খোঁয়ারি হতো না। কিন্তু সব ধরেছেন এবং ছেড়েছেন। নেশার বিবরে পড়েননি কখনো। পড়তেই পারতেন।
৩টা ২৯।
‘কী দেলোয়ার? আয়ে না দেখি, মিয়া!’
‘আইব। ফোন কচ্ছিলাম। রিশ্কায় উঠছে।’
‘হরতালের দিন মিয়া কত্খন লাগে?’
‘কামরাঙ্গীরচর কি কম দূর ওস্তাদ?’
‘হেয় কি কামরাঙ্গীরচরে থাকেনি?’
‘হ।’
দেলোয়ার কল্কে ধরাল।
দেলোয়ারের এ-বাসাটা শত্রুসম্পত্তি। জবরদখল না ভাড়া কে জানে? দেলোয়ার একতলায় দুটো ঘর নিয়ে থাকে। ছুটা বুয়া বদলায় কয়দিন পরপর। এক বুয়া ঝামেলা করেছিল একবার, তিন-চার বছর আগে, বিয়ে করবে বলে ফুঁসলিয়ে দেলোয়ার তার পেটে বাচ্চা দিয়েছে। লাভ হয়নি কিছু। এলাকা ছাড়তে হয়েছে সেই সতীলক্ষ্মী বুয়াকে। দেলোয়ার বহালতবিয়তে আছে। থাকবে।
৩টা ৫৮।
৪টা ১১।
৪টা ২৯।
৪টা ৩০ বাজলেও যখন লতা বা পাতা এলো না, সামান্য অস্থির হলেন।
‘কী মিয়া দেলোয়ার? কই তোমার লতা না পাতা?’
একা এক কল্কে উড়িয়ে দিয়েছে, দেলোয়ারের দুই চোখ জুড়ে দুটো রক্তজবা ফুল ফুটে আছে, ট্রেডমার্ক হাসি দিয়ে সে বলল, ‘ফোন করতেছি, ফোন তো ধরে না ওস্তাদ।’
‘কও কী মিয়া? তাইলে কি আইব না? আবার একটা কল দিয়া দেখ দেখি। কইলা মিয়া ৩টায় আইব। এখন ৩টা গিয়া, চাইট্টা গিয়া, বাজে হইল তোমার সাড়ে চাইট্টা। ফোন দেও মিয়া। আইব কিনা জিগাও!’
ফোন দিলো দেলোয়ার এবং হতাশ, ‘উঁহু, ধছ্ছে না ওস্তাদ! ধরে না!’
‘ধরে না? ধরে না ক্যান? কি হইছে মিয়া? দেলোয়ার?’
‘দেখছি ওস্তাদ।’
‘কী করো না করো মিয়া! তোমার কল সে ধরব না ক্যান? আকাম-কুকাম কিছু করছনি?’
‘এইটা আপনে কী কইলেন ওস্তাদ! শ্যরিম্যান হইলাম।’
‘শ্যরিম্যান! শ্যরিম্যান কী মিয়া?’
‘দুঃখিত, ওস্তাদ।’
‘ও। তুমি আবার দুঃখিত ক্যান মিয়া?’
‘আপনে কি কথাটা কইলেন ওস্তাদ! হায় হায়রে! আকাম-কুকাম আমি করি না কই না। করি। কিন্তু আপনের জিনিসের লগে! গজব পড়ব না কন মাথায়?’
৪টা ৫৪।
‘ধুর মিয়া! আমি যাইগা। ৩টায় আইব ক্যান কইছিলা কও তো?’
‘আইব ওস্তাদ।’
‘রাখো মিয়া! আর আইছে! ক্যান? আমার সময়ের দাম নাই কুনু? আগে জানলে মিয়া আইতামই না। আমু না আর! ধুর, ধুর! সময় নষ্ট, রিকশা ভাড়া নষ্ট! ছিঃ! … ছিঃ! ছিঃ!’
‘আরে ওস্তাদ রাগ কচ্ছেন! কইল তো আইতাছে।’
‘আর মিয়া আইতাছে। আমি যাইগা।’
কাঠঠোকরার মতো কেউ টোকা দিলো দরজায়।
ঠুক! ঠুক!
ঠুক! ঠুক! ঠুক!
দেলোয়ার দরজা খুলল।
কাঠঠোকরা না, লতা বা পাতা।
মুহূর্তে ঠান্ডা।
‘এত দেরি করলা যে গো?’
‘কী করব, ঘরে মানুষ।’
‘কারা গো?’
‘আপনের চিনপরিচিত না। দিলু ভাই, আমার নাকফুল কই?’
‘দিমু গো বইন। দিমু দিমু।’
‘আর দিছেন! এখন এট্টু চা কি খাওয়াইতে পারবেন?’
‘চা? কুক ফানটা পেপসি সেগেনাফ খাও।’
‘না, আমার ঠান্ডা লাগছে। আদা দিয়া রং-চা খাওয়াইতে পারবেন?’
‘আদা দিয়া? তুমি কইলে বাঘের দুধ দিয়া তোমারে চা খাওয়াইতে পারি গো বইন। তুমি কও আদা! হায়রে আমার কপাল!’
‘কী করব কন? বাঘের দুধ দিয়া বানান চা যে আমার খাইতে ভালো লাগে না।’
‘কও কী বইন? বাঘের দুধের চা তুমি খাইছ?’
‘কত খাইছি। হিঃ! হিঃ! হিঃ!’
এই মেয়ের হাসি সুন্দর।
কিন্তু দেরি হয়ে যাচ্ছে।
চা খাবে, কী করা আর?
ফোন করে চা আনাল দেলোয়ার। আদা চা। তিন কাপ। চিনি সামান্য বেশি দিয়েছে কিন্তু দার্জিলিংয়ের সবুজ চায়ের চেয়ে ঢের ভালো এই চা।
৫টা ১৮। ১৯। ২০।
৫টা ২১।
লতা বা পাতাকে নিয়ে নির্দিষ্ট ঘরে ঢুকলেন। বাইরে থেকে দরজা আটকে দিলো দেলোয়ার। ডাকলে আর খুলবে।
ঘরে আবছা আলো না অন্ধকার? আবছা আলোও বলা যেতে পারে। আবার আবছা অন্ধকারও বলা যেতে পারে। তবে কোথায় কী আছে বোঝা যায়। একটা ক্যাম্পখাট আর একটা চেয়ার। সুইচ কোথায় জানে লতা বা পাতা। ফ্যানের সুইচ অন করল।
‘আইজও কি বাত্তি জ্বালাইবা না গো?’
‘না। আমি আন্ধাইরে দেখি, আপনেরে কই নাই?’
‘তুমি দেখো গো। আমি তো দেখি না।’
‘আপনের দেখনের কী দরকার? হিঃ! হিঃ! হিঃ! কী দেখবেন?’
‘তোমারে দেখতাম।’
‘আমারে কি আপনে দেখেন নাই? শরীর দেখবেন? শরীর দেখেন নাই?’
আবছা অন্ধকার বা আবছা আলো এতোক্ষণে চোখে সয়ে এসেছে। মোটামুটি স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে সব। চেয়ারে লতা বা পাতার নীল রঙের সালোয়ার, লাল রঙের কামিজ, সাদা রঙের ওড়না। অন্তর্বাস কামিজের নিচে রেখেছে। কমলা রঙের।
ফর্সা না, শ্যামলা মেয়েটা। বয়স কত হবে? বিশ-888sport cricket BPL rate। সমানুপাতিক শরীর। চোখদুটো মায়াময় এবং কাজল দেয়। আশ্চর্য একটা ঘ্রাণ আছে শরীরে। সস্তা স্নো পাউডার সেন্টের ঘ্রাণ না, শরীরের ঘ্রাণ। এমন আর পাননি।
‘ও আমার মিঠা মিঠা হৃৎপিন্ড!’
‘কী-কী-কী? কী-কী? হিঃ! হিঃ! হিঃ!’
‘বোঝো নাই? ইংলিশে ও মাই সুইট হার্ট কয় না হেই কথার বাংলা আর কী। ও আমার মিঠা-মিঠা হৃৎপিন্ড।’
‘আপনের কথা বড় মিঠা মিঠা। হাওয়াই মিঠাইয়ের মতনি মিঠা। আসেন, আমার যাওন লাগব।’
‘দেখি না গো আরেকটু তোমারে।’
‘দেখেন। হিঃ! হিঃ! হিঃ! কী দেখেন?’
‘দেখি তুমি লতা না পাতা?’
‘আমি লতাও না পাতাও না। হিঃ! হিঃ! হিঃ!’
তা তো অবশ্যই। লতাও না, পাতাও না। এখন যা বলবে সেটাও না। কী বলবে?
‘তাইলে কেডা গো তুমি? কোন কাননের ফুল?’
‘মায়াকাননের। হিঃ! হিঃ! হিঃ!’
মায়াকানন!
এ কী মায়াকাননে থাকে? না। কামরাঙ্গীরচরে। চর থেকে এখানে এসেছে। দেলোয়ার একটু আগে বলেছে। মায়াকানন থেকে এ আসেনি।
‘কী ফুল তুমি, কও গো?’
‘আমি রাশনা। মায়াকাননের রাশমিনার মেয়ে রাশনা।’
কী?
????
কী করে?
মায়াকাননের রাশমিনা!
এ মায়াকাননের রাশমিনার মেয়ে?
রাশমিনার মেয়ের সঙ্গে???
ছিঃ!
রাশমিনা এটা করেছে!
কেন?
লতায়-পাতায় কত ঘটনা। রাশমিনা। ভুলে গিয়েছিলেন।
‘আমার প্যাটে তোমার সন্তান।’
‘কী কও না কও? সন্তান মানে?’
‘সন্তান মানে বোঝো না!’
‘বুঝি। কয়দিন?’
‘দুই মাস।’
দুই মাস? তাহলে চিন্তা করার কী আছে এত?
‘ফেলাইয়া দেও।’
‘কী?’
‘নষ্ট কইরা ফেল এইটারে। ট্যাকা দিতেছি। কত ট্যাকা লাগব? হাজার-বারোশো? দুই হাজার ট্যাকা দিতেছি।’
‘না।’
‘কী? কী না?’
‘আমি এইটারে নষ্ট করব না। এক কোটি ট্যাকা দিলেও না।’
‘তোমার কি মাথা খারাপ হইছে?’
‘না। তুমি আমারে বিয়া করবা না?’
‘এইটারে নষ্ট না করলে করব না?’
‘এইটারে আমি নষ্ট করব না…!’
কত বছর আগের ঘটনা? বিশ-888sport cricket BPL rate। রাশনার বয়স? বিশ-888sport cricket BPL rate! এর মানে কী। এর… মানে… কী…?
????????
আবছা আলো আবছা অন্ধকার।
রাশনার ঘ্রাণ আর শরীর।
রাশমিনার মেয়ে রাশনা!
মায়াকাননের রাশমিনা!
বরফযুগ আবার শুরু হয়ে যাচ্ছে। পত্রিকায় পড়েছিলেন কবে। সেই যুগ কী শুরু হয়ে গেছে?
এত যে ঠান্ডা ঘরে!

Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.